জাতীয়

বাংলাদেশের একজন সাবেক রাষ্ট্রপতি হিসেবে বঙ্গভবনের দরবার হল থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সরানো উচিত হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, ইতিহাসে যার যতটুকু অবদান তা বিএনপি স্মরণ করতে চায়।

মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) সকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প ও রক্তদান কর্মসূচির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে এ রক্তদান কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, খন্দকার মোশতাক আহমদ রাষ্ট্রপতি হয়ে বঙ্গভবন থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সরিয়েছিলেন। তবে পরবর্তীতে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সেই ছবি পুনরায় স্থাপন করেছিলেন।

জনগণের জন্য কাজ করতে বেশিদিন সময় প্রয়োজন নেই মন্তব্য করে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, রাষ্ট্র পরিচালনায় দরকার অন্তর্গত তাগিদ।

বর্তমান স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ও স্বাস্থ্য সচিব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী চিকিৎসকদের সাথে ভালো ব্যবহার করেননি বলে অভিযোগ করেন রিজভী।

এ সময় বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, অধ্যাপক ডা. সিরাজ উদ্দিন আহমেদ, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, সহ-স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ডা. এস এম রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, ডা. পারভেজ রেজা কাকন, অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম, সহ-পরিবার কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ডা. রফিক আল কবির লাবু, নির্বাহী কমিটির সদস্য ডা. শহীদ হাসান, ড্যাবের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. একেএম আজিজুল হক, বর্তমান যুগ্ম মহাসচিব ডা. মনোয়ারুল কাদির বিটু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি ডা. জাহেদুল কবির জাহিদ, যুবদলের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. সায়েম আল ফাইজি, সহ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. তাজুল ইসলাম, ডা. জাহাঙ্গীর হোসেন, ছাত্রদলের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. সাইফুল আলম বাদশাসহ অন্য চিকিৎসকরা উপস্থিত ছিলেন।

দেশের আট বিভাগে একযোগে এই মেডিক্যাল চলছে।

রাজনীতি

ওলামাদের রুহানি ঐক্য প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। সোমবার (১১ নভেম্বর) পূর্ব লন্ডনের মায়েদা গ্রিল হলে অনুষ্ঠিত ব্রিটেনের সর্বদলীয় ওলামা সংগঠন ‘বাংলাদেশি উলামা মাশায়েখ ইউকে’ কর্তৃক আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন তিনি।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ওলামাদের রুহানি ঐক্য প্রয়োজন। রুহানি ঐক্য হলে আমরা আল্লাহর পক্ষ থেকে অবারিত বারাকা লাভ করব। আমরা ঐক্য চাই। আবার বিভিন্ন শর্ত দিয়ে বসে থাকি। একজন শর্ত দিলে তো অন্যজনও শর্ত দেবেন। এভাবে শর্তের বেড়াজালে শেষ পর্যন্ত ঐক্য প্রক্রিয়া কঠিন হয়ে যায়।

তিনি বলেন, আমাদের দেশে আলেম ওলামার মধ্যে ছোট-খাটো বিষয়ে কিছু মতানৈক্য রয়েছে। সবার চিন্তা ও কর্মপরিধি একই ধরনের নয়। কিন্তু যারা জীবনের পাথেয় হিসেবে কোরআনকে কবুল করেছেন, হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নেতৃত্বকে অকুণ্ঠচিত্তে গ্রহণ ও স্বীকৃতি দেন এবং সাহাবায়ে কেরামকে (রা.) আল্লাহ ও রাসুল (সা.)-এর আনুগত্যের ক্ষেত্রে বাস্তব মডেল মনে করেন, এই তিন জায়গা ঠিক থাকলে আমাদের মধ্যে ঐক্য হওয়া সম্ভব।

জামায়াতের আমির বলেন, দ্বীন সবার। সুতরাং আমরা সবাইকে নিয়ে দ্বীনের জন্য লড়াই চালিয়ে যাব। কেউ আমাদের স্বীকৃতি বা মর্যাদা দিল কি না আমরা তার পরওয়া করব না। আমরা সবাইকে ভাই ও বন্ধু মনে করে সামনে আগানোর চেষ্টা করব, ইনশাআল্লাহ।

মতবিনিময় সভায় তিনি উপস্থিত ওলামা মাশায়েখদেরকে উদ্দেশে বলেন, জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য যত ইসলামি সংগঠন ও মারকায রয়েছে, আপনারা আমাদের মধ্যে কোনো ভুল দেখলে আমাদেরকে সোজা করে দেওয়ার চেষ্টা করবেন। আপনারা সহযোগিতা করলে আমাদের জন্য দ্বীনের পথে চলা অনেক সহজ হয়ে যাবে।

তিনি আলেমদের ভুল ধরিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব পালন করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, আপনাদের ও আমাদের মধ্যে পারস্পরিক দোয়া, ভালোবাসা ও সহযোগিতা থাকলে আমরা এগিয়ে যেতে পারব।

তিনি আরও বলেন, ব্রিটেনকে বিশ্বের বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এমন একটি পরিবেশে আপনারা আছেন যেখানে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশের চেয়েও বেশি স্বাধীনতা ভোগ করছেন। এখানে আপনাদের মেধার বিকাশের ক্ষেত্রে কেউ বাধা দেয় না, যেমনটি বাংলাদেশে বিভিন্নভাবে দেওয়া হয়। এখানে মেধার চর্চা বেশি হওয়ার কারণে আপনাদের ওপর আমাদের হকও বেশি। আপনারা সে হক আদায় করবেন ইনশাআল্লাহ।

‘বাংলাদেশি উলামা-মাশায়েখ ইউকে’র সভাপতি মাওলানা এ কে মওদুদ হাসানের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি মাওলানা শাহ মিজানুল হক ও মাওলানা এফ কে এম শাহজাহানের পরিচালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন ‘কাউন্সিল ফর মস্ক’ ও ‘ইশায়াতুল ইসলাম’-এর চেয়ারম্যান মাওলানা হাফেজ শামসুল হক, খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির অধ্যাপক মাওলানা আব্দুল কাদির সালেহ, বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ মুফতি শাহ সদরদ্দীন, দাওয়াতুল ইসলাম ইউ কের আমীর শায়খ আব্দুর রহমান মাদানী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম এর কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা ডক্টর শুয়াইব আহমদ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক মাওলানা ফয়েজ আহমদ প্রমুখ।

মতিবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন শেখ ইসহাক আল মাদানী, অধ্যাপক মুফিজুর রহমান, মাজাহিরুল উলুম মাইল্ড এর প্রিন্সিপাল শেখ ইমদাদুর রহমান মাদানী, ড. আব্দুস সালাম আজাদী, বাংলাদেশি ওলামা-মাসায়েখের সাবেক সভাপতি মাওলানা সিরাজুল ইসলাম, মাওলানা রেজাউল করীম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ইউ কের সহসভাপতি আলহাজ্ব মাওলানা আতাউর রহমান, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম ইউকে’র সহসভাপতি মাওলানা সৈয়দ তামীম আহমদ, মসজিদে আয়েশা টটেনহামের খতীব মাওলানা খিজির হোসেন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ইউকে’র সেক্রেটারি মুফতি সালেহ আহমদ, জমিয়তে উলামা ইসলাম ইউ কের সেক্রেটারি মাওলানা সৈয়দ নাঈম আহমদ, খেলাফত মজলিস ইউকে সাউথের সহসেক্রেটারি মাওলানা আব্দুল করিম, বাংলাদেশি ওলামা মাশায়েখ ইউকে’র অর্থ সম্পাদক মাওলানা মুমিনুল ইসলাম ফারুকী, মাওলানা রফিক আহমদ রফিক, বাংলাদেশি ওলামা মাশায়েখ ইউকে’র প্রচার সম্পাদক মাওলানা তায়ীদুল ইসলাম, দারুল উম্মাহ মসজিদের ইমাম মাওলানা আবুল হাসানাত চৌধুরী, খেলাফত মজলিস লন্ডন শাখার সহ সম্পাদক মাওলানা দিলাওয়ার হোসেন প্রমুখ।

জাতীয়

নতুন তিন উপদেষ্টার শপথ গ্রহণের সময় ছবি রাষ্ট্রপতির বাসভবন বঙ্গভবনের দরবার হলে থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সরিয়ে ফেলা হয়েছে।

সোমবার (১১ নভেম্বর) আজ বেলা ১২টার দিকে নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে এ তথ্য জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নতুন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম।

তিনি লিখেছেন, ৭১ পরবর্তী ফ্যাসিস্ট শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি দরবার হল থেকে সরানো হয়েছে। ৫ আগস্টের পর বঙ্গভবন থেকে তার ছবি সরাতে পারিনি, এটা আমাদের জন্য লজ্জার।

আমরা ক্ষমাপ্রার্থী, মানুষের জুলাইয়ের চেতনা বেঁচে থাকা পর্যন্ত তার ছবি কোথাও দেখা যাবে না।

গতকাল অন্তর্বর্তী সরকারের নতুন তিন উপদেষ্টা দরবার হলে শপথ পাঠ করেন। এ সময় তাদের পেছনে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি ছিল। এ নিয়ে প্রতিবাদ করে পোস্ট করেন সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ।

তিনি লিখেন, ‘আমরা সারাদিন লীগ তাড়াবো আর বলবো, ‘মুজিববাদ, মুর্দাবাদ। ’ আর তারা মুজিবের ছবি পেছনে টানিয়ে করে শপথ পাঠ। ’ এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানান অনেকে।

জাতীয়

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেওয়া নতুন তিনজনের মধ্যে দুইজনকে দপ্তর বণ্টন এবং বর্তমান উপদেষ্টাদের মধ্যে সাতজনের দায়িত্ব পুনর্বণ্টন করা হয়েছে। তবে শপথ নেওয়া নতুন উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের বিষয়ে কোনো মন্ত্রণালয় বা বিভাগের কথা উল্লেখ করা হয়নি।

রোববার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের দেওয়া এক প্রজ্ঞাপন থেকে এই তথ্য জানা গেছে।

নতুন উপদেষ্টাদের মধ্যে শেখ বশিরউদ্দীনকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আর সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আর সালেহ উদ্দিন আহমেদ অর্থ মন্ত্রণালয়; ড. আসিফ নজরুল আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়; হাসান আরিফ ভূমি মন্ত্রণালয় এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়; আলী ইমাম মজুমদার খাদ্য মন্ত্রণালয়; আসিফ মাহমুদ সজীব ভূইয়া যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়; ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকছেন।

রাজনীতি

আজারবাইজানের বাকুতে অনুষ্ঠিতব্য কপ-২৯ জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দিতে আজ  সোমবার দেশটিতে সফরে যাচ্ছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আজ  বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে ঢাকা ত্যাগ করবেন তিনি।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বাসস’কে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দিতে প্রধান উপদেষ্টা ১১ থেকে ১৪ নভেম্বর আজারবাইজানে রাষ্ট্রীয় সফর করবেন।’ প্রেস সচিব জানান, এই সফরে প্রধান উপদেষ্টা অত্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করবেন। জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ বাকুতে নিজেদের দাবি-দাওয়া এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ যে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে-সেসব বিষয় তিনি বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরবেন।

তিনি বলেন, অধ্যাপক ইউনূস কপ-২৯ জলবায়ু সম্মেলনের বিভিন্ন ফোরামে বক্তব্য রাখবেন এবং সেখানে অংশগ্রহণকারী গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে তার বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। বাংলাদেশ যে বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে, সেটিও তুলে ধরা হবে এই সম্মেলনে।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেয়ার পর এটি ড. ইউনূসের দ্বিতীয় সফর। তার প্রথম সফর ছিল নিউইয়র্কে জাতিসংঘের ৭৯তম সাধারণ অধিবেশন উপলক্ষে।

জাতীয়

নরওয়ে ও বাংলাদেশের মধ্যে সরাসরি পণ্যবাহী জাহাজ চালু করতে দেশটির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন নৌপরিবহণ এবং বস্ত্র ও পাট উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, নরওয়েতে সরাসরি নৌ যোগাযোগ স্থাপিত হলে চট্টগ্রাম থেকে নরওয়ের যেকোনো বন্দরে ১৫ দিনের মধ্যে পণ্য পৌঁছানো সম্ভব। এ জন্য বাংলাদেশ ও নরওয়ের মধ্যে একটি বিশেষ নৌ-চুক্তি স্বাক্ষরের প্রয়োজনীয়তার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন তিনি। রোববার নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত নরওয়ের রাষ্ট্রদূত হকোন অ্যারাল্ড গুলব্র্যান্ডসেন সাক্ষাৎ করতে এলে নৌ উপদেষ্টা এ আহ্বান জানান।

উপদেষ্টা বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর দেশের অর্থনীতির সোনালি প্রবেশদ্বার। সরকার চট্টগ্রাম বন্দরসহ অন্যান্য সমুদ্রবন্দরের মাধ্যমে বহির্বিশ্বের সঙ্গে সফলভাবে নৌ-বাণিজ্য পরিচালনা করে আসছে। বাংলাদেশ থেকে রপ্তানির গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্য হচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশসমূহ। বাংলাদেশের বিভিন্ন পণ্য বিশেষ করে তৈরি পোশাক (আরএমজি) রপ্তানি ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের আরএমজি পণ্য ইতোমধ্যে নরওয়ের বাজারে গুরুত্বের সঙ্গে স্থান করে নিয়েছে। বর্তমানে ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশসমূহে কার্গো পৌঁছাতে ৪০ থেকে ৪৫ দিন বা তার বেশি সময় লাগে। যেখানে নরওয়েতে সরাসরি নৌ-যোগাযোগ স্থাপিত হলে চট্টগ্রাম থেকে নরওয়ের যেকোনো বন্দরে পণ্য পৌঁছানোর ক্ষেত্রে গড়ে ১৮ থেকে ২৩ দিন কম সময় লাগবে এবং মালামাল বহন খরচও উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে।

নরওয়ের রাষ্ট্রদূত উপদেষ্টার প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্ক, উন্নয়ন সহযোগিতা ও বাণিজ্যিক সম্পর্কের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। নরওয়ের বিভিন্ন কোম্পানি জাহাজ শিল্পসহ অন্যান্য সেক্টরে বাংলাদেশে কাজ করতে আগ্রহী।

ড. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে বিনিয়োগের অত্যন্ত অনুকূল পরিবেশ বিরাজ করছে। ভূ-কৌশলগত সুবিধাজনক অবস্থানের কারণে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ হাবে পরিণত হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর ছাড়াও আমাদের মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দর দুটি অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। মোংলা বন্দরকে একটি গ্রিনপোর্ট হিসেবে তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও, মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করা হচ্ছে। এ দুটি বন্দরের ডকইয়ার্ড নির্মাণে নরওয়ে কারিগরি ও আর্থিকভাবে বিনিয়োগ করতে পারে। উপদেষ্টা ২০২৫ সালে অনুষ্ঠেয় আইএমও নির্বাচনে বাংলাদেশের পক্ষে নরওয়ের সমর্থন প্রত্যাশা করেন। জবাবে রাষ্ট্রদূত বলেন, নরওয়ে সবসময় বাংলাদেশের পাশে আছে। এ সময় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আব্দুর রউফ, নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব দেলোয়ারা বেগম, মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

খেলাধুলা

বাংলাদেশ ক্রিকেট যাচ্ছিল মন্দ সময়ের মধ্যে দিয়ে। সেখানে খানিকটা হলেও সুবাতাস বইয়ে আনবে আফগানিস্তানের বিপক্ষে পাওয়া দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৬৮ রানের জয়। এ জয়ে সিরিজ যেমন বেঁচেছে; তেমনটি এখন স্বপ্ন দেখা যাচ্ছে সিরিজ জয়েরও। বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর কণ্ঠেও সন্তুষ্টির ছাপ। আগামীতেও যেকোনো পরিস্থিতি থেকে জিতব, এই বিশ্বাস রাখতে চান তিনি।

সিরিজে ঘুরে দাঁড়ানোর পর এখন কি ভাবছে বাংলাদেশ। তা জানিয়ে শান্ত বলেন, ‘বেশ কিছু জায়গায় চিন্তা করতে হবে। আজকে যেভাবে সবাই কাজে লাগিয়েছে প্ল্যান, তবে আমি মনে করি আমরা এর থেকেও ভালো দল। স্বস্তির জায়গা অবশ্যই, সিরিজ শেষ হয়নি। পরের ম্যাচে আবার কীভাবে প্ল্যান করে আসতে পারি এটা জরুরি ব্যাপার।’

কঠিন সময়ে এমন জয়ে খুশি শান্ত। তবে উন্নতির জায়গা দেখছেন আরও। শান্ত বলেন, ‘আমার মনে হয় খুব কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলাম। ক্রিকেট খেলাটা মোমেন্টামের ব্যাপার। মোমেন্টামের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। অপেক্ষা বলব না, কষ্ট করছিলাম আসলে যেন আমরা মোমেন্টামটা পাই। আলহামদুলিল্লাহ আগের দিন আমরা যেরকম প্ল্যানটা করেছি সবাই সেটা মাঠে কাজে লাগিয়েছে। ১০০% দেওয়ার চেষ্টা করেছে। এখানে আরও উন্নতির জায়গা আছে। যে প্ল্যান ছিল তার খুব কাছাকাছি সফল হতে পেরেছি।’

ভারতের মাঠে টি-টোয়েন্টি এবং টেস্ট হারের পর দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ঘরের মাঠে সিরিজ হার। সময়টাকে কীভাবে দেখছেন শান্ত, ‘কঠিন ছিল আসলে গত কয়েক ম্যাচে আমরা যেভাবে খেলছিলাম সব মিলে খুব একটা ভালো অবস্থানে ছিলাম না। যেভাবে আজকে সবাই কামব্যাক করেছে। বিশ্বাস রেখেছে যে আমরা ভালো করতে পারি। সবাই সবার প্রসেস ঠিক রেখেছে।’

শান্ত আরও বলেন, ‘কঠিন ছিল তবে সবার বিশ্বাস ছিল যে আমরা ম্যাচটা ভালো ভাবে শেষ করতে পারি। সবচেয়ে ভালো লেগেছে আগের দিন যে প্ল্যানটা করেছি সবাই সেখানে ছিল। খুবই খুশি যে সবাই প্রসেসটা ফলো করেছে।’

নিয়মিত ম্যাচ জিততে কি করতে হবে সেটাও জানিয়েছেন শান্ত। বলেন, ‘আমরা যেরকম দল, সেরকম ভালো করছি না হয়ত। তবে আমাদের সামর্থ্য রয়েছে। আমাদের বোলিং বিভাগ আছে, আমরা যদি তাদের কম রানে আটকে দেই তাহলে চেইজ করার সেই সামর্থ্য রয়েছে। শুধু সেই আত্মবিশ্বাসটা দরকার, নিজেদের মধ্যে বিশ্বাসটা দরকার যে যেকোনো অবস্থা থেকে আমরা জিতব।’

বাংলাদেশের পরের ম্যাচ আগামীকাল বিকেল ৪ টায়। যেখানে জয়ী দলের হাতে উঠবে সিরিজ জয়ের ট্রফি। আর সেই ট্রফিটা নিয়েই দেশে ফিরতে চায় নাজমুল হোসেন শান্তর দল।

আন্তর্জাতিক

গাজা এবং লেবাননে ইসরাইলের চলমান আগ্রাসনের প্রেক্ষাপটে আরব এবং মুসলিম দেশগুলোর নেতারা সোমবার সৌদি আরবে একটি সম্মেলনে মিলিত হবেন।

সৌদি প্রেস এজেন্সি (এসপিএ) রোববার এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে।

এসপিএ-র বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনি এবং লেবাননি ভূখণ্ডে বাড়তে থাকা সহিংসতা, বিশেষ করে ইসরাইলের নৃশংস আগ্রাসন আরব ও ইসলামিক নেতাদের জরুরি পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করেছে।

সম্মেলনটি গত বছরের নভেম্বরের আরব-ইসলামিক সম্মেলনের পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সেই সম্মেলনে রিয়াদে গাজাসহ পুরো ফিলিস্তিন অঞ্চলের বিপজ্জনক ও অভূতপূর্ব পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল।

এসপিএ জানিয়েছে, ‘এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় আরব এবং ইসলামিক দেশগুলোর ঐক্যের প্রয়োজন’।

সোমবারের এই সম্মেলনে সৌদি আরব, জর্ডান, মিশর, কাতার, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, নাইজেরিয়া, এবং ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা উপস্থিত থাকবেন। এছাড়াও যোগ দেবেন আরব লিগ এবং ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) মহাসচিবরাও।

তারা গাজায় যুদ্ধ বন্ধ এবং স্থায়ী ও ব্যাপক শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবিলম্বে আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য কাজ করার উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।

এ উপলক্ষ্যে রোববার সৌদি রাষ্ট্র পরিচালিত সংবাদ মাধ্যম আল-আখবারিয়া নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা তিনুবু এবং লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতির রিয়াদে পৌঁছানোর দৃশ্য সম্প্রচার করেছে। সূত্র: আরব নিউজ

রাজনীতি

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ঢাকার নিযুক্ত সিঙ্গাপুরের অনাবাসিক হাইকমিশনার ডেরেক লো।

রোববার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ঘণ্টাব্যাপী এই বৈঠক হয়। এতে দুই দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়াদি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করা হয়।

তারা বলেন, দু’দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডসহ বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে নির্বাচিত সরকার সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। নির্বাচিত সরকার ছাড়া অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড এগিয়ে নেওয়া সম্ভব না।

বৈঠককালে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য এনামুল হক চৌধুরী, আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক কমিটির সদস্য শামা ওবায়েদ। হাইকমিশনের চ্যার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স মিচেল লো, সিঙ্গাপুর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ডেস্ক অফিসার রাহুল আব্রাহাম।

বৈঠক শেষে আমির খসরু বলেন, ‘দক্ষ শ্রমশক্তি কীভাবে আমরা সেখানে (সিঙ্গাপুরে) পাঠাতে পারি সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। যেমন- সিঙ্গাপুরে প্রচুর নার্স দরকার, অন্যান্য ক্ষেত্রে দক্ষ শ্রমিক নিতে তাদের উৎসাহ আছে। আমাদের শ্রমশক্তিকে আরও দক্ষ করার জন্য সিঙ্গাপুর বিভিন্ন ইনস্টিটিউশনের মাধ্যমে বিনিয়োগ করতে চায়, টেকনিক্যাল সহযোগিতা দিতে চায়।’

তিনি বলেন, ‘সিঙ্গাপুরে বন্দর ব্যবস্থাপনায় অত্যন্ত দক্ষ। তারা আমাদের দেশের বন্দরগুলো কার্যকর করতে সহযোগিতা করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, জাহাজ নির্মাণ শিল্পেও সিঙ্গাপুর সহযোগিতা করতে চায়। এনার্জি ও ফাইনান্সিয়াল সেক্টারেও তারা কাজ করার কথাও বলেছে।’

এদিকে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আমির খসরু মাহদুদ চৌধুরী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয়ও আওয়ামী লীগের ফিরে আসার চেষ্টায় প্রভাব ফেলছে।

আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ডের বিষয়ে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে কেন ট্রাম্পের বেশে আসতে হবে? কেন তারা রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে এই অবস্থায় পৌঁছাল? আমরা আবারও বলছি তারা এখন দেউলিয়া হয়ে বিভিন্ন মোড়কে আসার চেষ্টা করছে। তাদের (আওয়ামী লীগ) তো নিজের বেশেই ফিরে আসতে হবে। কিন্তু তাদের সে সাহস নাই। সেই সাহস তারা হারিয়ে ফেলেছে। আসলে তাদের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে, এটা হচ্ছে তাদের রাজনৈতিক দৈন্যতা। তারা যে রাজনৈতিকভাবে ধ্বংস হয়েছে এটাই তার প্রমাণ।’

রাজনীতি

কথা ছিল বেলা ৩টার মধ্যে রাজধানীর জিরো পয়েন্টে (নূর হোসেন চত্বর) নেতাকর্মীরা জড়ো হবেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের এই ডাকে সাড়া দেননি দলীয় নেতাকর্মীরা। ঘর থেকে বের হননি সহযোগী ও অঙ্গসংগঠনের কর্মীরাও।

৫ আগস্ট সরকার পতনের পর প্রথমবারের মতো এই কর্মসূচি ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ। তবে সেখানে ছিল না কোনো মঞ্চ। দলীয় নির্দেশের পরও চোখে পড়েনি কোনো পর্যায়ের একজন নেতাকর্মীও।

গত কয়েকদিন থেকে শহিদ নূর হোসেন দিবসে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার’র দাবি জানিয়ে রোববার দলীয় নেতাকর্মীদের ঢাকার জিরো পয়েন্টে জমায়েত হওয়ার নির্দেশ দেয় আওয়ামী লীগ। দলটির মুখপত্র হিসাবে ব্যবহূত ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ থেকে এ নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মীকে জিরো পয়েন্টে উপস্থিত হতেও দেখা যায়নি। দিনভর সেখানে আওয়ামী লীগের একটি প্ল্যাকার্ডও চোখে পড়েনি। কোথাও শোনা যায়নি তাদের দলীয় স্লোগান। তবে সকালে রাজধানীর মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে একটি ঝটিকা মিছিল বের করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের কয়েকজন মিলে। কয়েক মিনিট মিছিল করে দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন তারা।

এছাড়া দুপুরে জিরো পয়েন্টের পাশে পল্টনের দিকে ফাঁকা রাস্তায় আওয়ামী লীগের কয়েকজন কর্মী একটি ঝটিকা মিছিল বের করেন। পাশাপাশি গুলিস্তান বাসস্ট্যান্ডে ব্যানার নিয়ে আরেকটি মিছিল বের করেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী। তবে এসব মিছিলে অংশ নেওয়া নেতাকর্মীরা জিরো পয়েন্ট কিংবা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যাওয়ার সাহস করেননি।

গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন ঘুরে আরও দেখা যায়, আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ মিছিল প্রতিহত করতে শনিবার রাত থেকেই জিরো পয়েন্ট, গুলিস্তান এলাকা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ছাত্রদল ও শিবিরের নেতাকর্মীরা। সারা রাত পাহারা বসিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন তারা।

রোববার সকাল থেকে জিরো পয়েন্ট ও এর আশপাশে আরও শক্ত অবস্থান নেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। অপরদিকে গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে অবস্থান নেয় বিএনপি, যুবদলসহ দলটির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।

এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সদস্যরা ছিলেন সতর্ক অবস্থানে। রোববার সকাল থেকে রাজধানীর প্রবেশপথগুলোতে অবস্থান নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট ও বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পাশাপাশি জিরো পয়েন্টে একটি জলকামান এবং বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে একটি জলকামান ও রায়ট কার মোতায়েন ছিল। সচিবালয়সহ পুরো এলাকা টহল দিতে দেখা গেছে বিজিবি সদস্যদের।

আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের ২৪ জনকে পুলিশে সোপর্দ: শহিদ নূর হোসেন দিবসকে কেন্দ্র করে গুলিস্তানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আওয়ামী নেতাকর্মী ও সমর্থকদের গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করছেন বিএনপির নেতাকর্মী ও ছাত্র-জনতা। রোববার বিকাল ৪টা পর্যন্ত ২৪ জনকে মারধর করে বিএনপি, যুবদল ও ছাত্র-জনতা। পরে তাদের পুলিশে সোপর্দ করা হয়। তবে রাত পর্যন্ত মোট কতজনকে গ্রেফতার বা আটক করা হয়েছে এ বিষয়ে মুখ খোলেনি পুলিশ। পল্টন থানার ওসি কাজী নাছিরুল আমিন রোববার বিকালে বলেন, কিছু লোক আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়েছিলেন। ছাত্র-জনতা তাদের ধরে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হয়েছে। পুলিশের একটি সূত্র জানায়, বিকাল ৪টা পর্যন্ত ২৪ জনকে পল্টন থানায় আনা হয়।

আওয়ামী লীগের শতাধিক নেতাকর্মী গ্রেফতার

সারা দেশে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে নাশকতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগ রয়েছে। আটক ব্যক্তিরা বিভিন্ন মামলার তালিকাভুক্ত পলাতক আসামি। শনিবার গভীর রাত থেকে রোববার সকাল পর্যন্ত তাদের গ্রেফতার করা হয়। আটক ব্যক্তিদের কয়েকজন বৈষ্যম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে সরাসরি হামলার সঙ্গে জড়িত। তাদের মধ্যে ৬ ইউপি সদস্যও রয়েছেন। ব্যুরো, স্টাফ রিপোর্টার ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

নাটোর, সিংড়া ও লালপুর :  নাটোরে আওয়ামী লীগের ৩৩ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে রয়েছেন বড়াইগ্রাম পৌরসভার সাবেক মেয়র পৌর আওয়ামী লীগের সদস্য আব্দুল বারেক, নাটোর সদরের বড়হরিশপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সদর থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ওসমান গনি, নলডাঙ্গা পৌরসভার সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র ও পৌর আওয়মী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি সাহেব আলী। পুলিশ জানায়, ২৪ ঘণ্টায় নাটোর সদরে ১৮, সিংড়ায় ৫, লালপুরে ৪, নলডাঙ্গা ও বাগাতিপাড়ায় দুইজন করে এবং বড়াইগ্রাম ও গুরুদাসপুরে একজন করে ৩৩ জনকে আটক করা হয়েছে।

রাজশাহী :  রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএ) বিপুল কুমার সরকারসহ ২৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জেলা ও মহানগর পুলিশের মিডিয়া উইং রোববার দুপুরে এ তথ্য জানিয়েছে। তাদের মধ্যে জেলায় ১০ জন এবং মহানগরীতে ১৪ জন রয়েছেন। গ্রেফতার ব্যক্তিদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) :  মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে হামলাকারী জয়চণ্ডী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দর রব মাহবুবসহ ৩ আওয়ামী লীগ নেতাকে আটক করেছে পুলিশ। রোববার ভোরে কুলাউড়া উপজেলার জয়চণ্ডী ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থান থেকে তাদের আটক করা হয়।

কুমারখালী (কুষ্টিয়া) :  কুষ্টিয়ার খোকসায় বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় খোকসা পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম ব্যারিস্টারসহ ৮ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। তাদের রোববার আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

রাণীনগর (নওগাঁ) :  নওগাঁর রাণীনগরে নাশকতা মামলায় শনিবার রাতে আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের দুই নেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তারা হলেন উপজেলার পারইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জিল্লুর রহমান এবং ছাত্রলীগের কাশিমপুর ইউনিয়ন কমিটির সহসভাপতি সাগর হোসেন।

হালুয়াঘাট (ময়মনসিংহ) :  হালুয়াঘাটে শনিবার রাতে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম শহীদসসহ ৩ জনকে আটক করেছে পুলিশ।

দিরাই (সুনামগঞ্জ) :  সুনামগঞ্জ সদর থানায় একটি মামলায় সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা হাফিজুর রহমান তালুকদার (হাফিজুর মাস্টার)-সহ দুইজনকে আটক করেছে পুলিশ।

ভেড়ামারা (কুষ্টিয়া) :  কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার ধরমপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাবুল আলম লালু, উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শফি এবং ভেড়ামারা উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মানিক মিয়াকে আটক করেছে পুলিশ।

বড়লেখা (মৌলভীবাজার) :  বড়লেখা পৌরসভার সাবেক প্যানেল মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞানবিষয়ক সম্পাদক আলী আহমদ চৌধুরী জাহিদসহ ৩ নেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রোববার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

ফুলপুর (ময়মনসিংহ) :  ময়মনসিংহের তারাকান্দায় ৫ ইউপি সদস্যকে যৌথ বাহিনী আটক করেছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক বালিখা ইউপি চেয়ারম্যান শামছুল আলমের বাড়ি থেকে রোববার তাদের আটক করা হয়। তারা হলেন বালিখা ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি ইউপি সদস্য ফয়সাল আহমেদ সফির, ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম, নুরুল আমিন সরকার, শফিকুল ইসলাম ও হামিদুল হক।

দাউদকান্দি (কুমিল্লা) :  দাউদকান্দি পৌরসভার ২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কৃষ্ণপুর এলাকার বাসিন্দা খাজা মিয়াকে শনিবার রাতে দাউদকান্দি মডেল থানা পুলিশ আটক করেছে।

ধামরাই (ঢাকা) :  বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ঢাকার ধামরাইয়ে পুলিশের গুলিতে শহিদ কলেজছাত্র মো. আফিকুল ইসলাম সাদ হত্যা মামলায় তিন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হলেন-৭নং গাংগুটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৮নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. হাজী মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান, কুল্লা ইউনিয়ন বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের সভাপতি মোহাম্মদ আবুল বাশার ও রোয়াল ইউনিয়ন পরিষদের ৩নং ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি মোহাম্মদ ফয়সাল হোসেন।

কুড়িগ্রাম :  কুড়িগ্রামে ছাত্রলীগের সাবেক তিন নেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। জেলা শহর ও উলিপুর উপজেলা থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।

ভাঙ্গা (ফরিদপুর) :  ফরিদপুরের ভাঙ্গায় আলগী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ম.ম. সিদ্দিক মিয়াকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রোববার বিকালে তাকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) :  ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার বোকাইনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হেলিমকে গ্রেফতার করে রোববার জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) :  মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ৫নং সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হান্নানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।