খেলাধুলা

চেন্নাই সুপার কিংসের বিরুদ্ধে ৫৯ বল বাকি থাকতে জয় তুলে নিল কলকাতা নাইট রাইডার্স। আর এতে আইপিএলের পয়েন্ট টেবিলে ষষ্ঠ থেকে তৃতীয় স্থানে উঠে এলো কেকেআর।

শুক্রবারের ম্যাচের আগে কেকেআর ছিল ষষ্ঠ স্থানে। চেন্নাইকে ৮ উইকেটে হারিয়ে আজিঙ্কা রাহানেরা উঠে এলেন তৃতীয় স্থানে।

মূলত, কলকাতা নাইট রাইডার্সের কাছে কার্যত অসহায় আত্মসমর্পণ করল চেন্নাই সুপার কিংস। ৯ ওভার বাকি থাকতেই ৮ উইকেটের ব্যবধানে হেরে গেছে সিএসকে। এ নিয়ে টানা পঞ্চম ম্যাচে হারল ধোনির দল সিএসকে।

শুক্রবার টস জিতে চেন্নাইকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানান কলকাতা অধিনায়ক আজিঙ্কা রাহানে। কেকেআরের বোলিংয়ের সামনে ধসে যায় চেন্নাইয়ের ব্যাটিং। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে মঈনের হাতে বল দেন রাহানে। চেন্নাইকে প্রথম ধাক্কা দেন মঈন আলী। আউট করেন আগের ম্যাচে অর্ধশতরান করা ডেভন কনওয়েকে। সেই শুরু। আরও একটি ম্যাচে ব্যর্থ রাচিন রবীন্দ্র।

আইপিএলের ইতিহাসে ঘরের মাঠে সবচেয়ে কম রানে অলআউট হয় চেন্নাই সুপার কিংস। ৯ উইকেট হারিয়ে সর্বসাকুল্যে স্কোরবোর্ডে ১০৩ রান তুলতে পারে স্বাগতিকরা। জবাবে ১০ দশমিক ১ ওভারেই জয় তুলে নেয় ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন কেকেআর।

কেকেআরের তিন স্পিনার মঈন, সুনীল নারাইন ও বরুণ চক্রবর্তীর সামনে এদিন কিছুই করতে পারেননি না চেন্নাইয়ের ব্যাটাররা। ১২ ওভারে মাত্র ৫৫ রান তুলতে পেরেছিল চেন্নাই। এর মধ্যেই উইকেটের পতন হয় ৬টি। পরে ৭৯ রানে ৯ উইকেটের পতন ঘটে চেন্নাইয়ের। সেখান থেকে অংশুল কম্বোজ এবং শিবম দুবের শেষ বেলায় লড়াইয়ের কারণে ১০৩ রানে পৌঁছায় তারা।

১০৪ রান তাড়া করে জিততে যে কেকেআরের বিশেষ সমস্যা হবে না তা বোঝা যাচ্ছিল। কিন্তু যেভাবে কলকাতা জিতল তা হয়তো কেকেআরের সমর্থকেরাও আশা করেননি।

এদিকে আইপিএলের পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে রয়েছে গুজরাত টাইটান্স। পাঁচটি ম্যাচ খেলে চারটিতে জয় পেয়ে তাদের পয়েন্ট ৮। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে দিল্লি ক্যাপিটালস। চার ম্যাচের সবকটিতে জিতে তাদের পয়েন্ট ৮। পয়েন্ট তালিকায় তৃতীয় স্থানে উঠে এলো কলকাতা। ছয় ম্যাচ খেলে তৃতীয় জয় পেলেন রাহানেরা। তাদের পয়েন্ট ৬।

৬ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের চতুর্থ স্থানে রয়েছে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। পঞ্চম স্থানে রয়েছে পঞ্জাব কিংস। শুক্রবারের ম্যাচের পর ষষ্ঠ স্থানে থাকল লখনৌ সুপার জায়ান্টস। সপ্তম স্থানে রাজস্থান রয়্যালস।

পয়েন্ট তালিকায় অষ্টম স্থানে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স, নবম স্থানে চেন্নাই সুপার কিংস আর ১০ম স্থানে রয়েছে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ।

জাতীয়

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের গণহত্যার প্রতিবাদে ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচি দিয়েছে ‘প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট বাংলাদেশ’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম। দলমত নির্বিশেষে শেষে কর্মসূচিতে বিপুল লোকসমাগমের আভাস মিলছে।

পুলিশ বলছে, শনিবার (১২ এপ্রিল) একটি বড় সমাবেশ হতে যাচ্ছে। এই সমাবেশ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হয়েছে। সজাগ রয়েছেন গোয়েন্দারাও।

শুক্রবার (১১ এপ্রিল) রাতে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বাংলানিউজকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, বিভিন্ন সংগঠনের আয়োজনে ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিকে ঘিরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক পুলিশের পাশাপাশি পৃথক ট্রাফিক পরিকল্পনাও গ্রহণ করা হয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ও গোয়েন্দা প্রধান (ডিবি) রেজাউল করিম মল্লিক বাংলানিউজকে বলেন, বিভিন্ন সংগঠনের আয়োজনে ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিকে ঘিরে গোয়েন্দারা সজাগ রয়েছেন। পাশাপাশি কর্মসূচির নিরাপত্তার জন্য অলরেডি আমাদের সাইবার টিম কাজ শুরু করেছে। এছাড়া ডিবির ৪২টি টিম কাজ করছে। সুন্দরভাবে যেন এই কর্মসূচি সফল হতে পারে সেজন্য যতরকম গোয়েন্দা নজরদারি আছে সব জোরদার করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, আজ শনিবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচি। ওই গণজমায়েতে উপস্থিত থাকবেন ইসলামিক স্কলার শায়েখ আহমাদুল্লাহ। তিনি সবার উদ্দেশ্যে পাঁচটি নির্দেশনা দিয়েছেন।

শুক্রবার (১১ এপ্রিল) সকালে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে এসব নির্দেশনা দেন তিনি।

মার্চ ফর গাজায় অংশগ্রহণকারীদের জন্য জরুরি নির্দেশিকা জানিয়ে ওই পোস্টে আহমাদুল্লাহ বলেছেন, ‘সকল শ্রেণিপেশা-দল-মতের মানুষের অংশগ্রহণে বাংলাদেশের ইতিহাসে আক্ষরিক অর্থেই অভূতপূর্ব এক গণজমায়েতের দ্বারপ্রান্তে আমরা। এই উদ্যোগকে সাফল্যমণ্ডিত করতে কিছু নির্দেশনা আমরা সবাই অনুসরণের চেষ্টা করব বলে অঙ্গীকার করতে চাই। ’

নির্দেশনার বিষয়ে আহমাদুল্লাহ বলেন-

১.সহযোগিতাপূর্ণ স্বেচ্ছাসেবী মনোভাব রাখব। অনুষ্ঠানটা আমার, একে সফল করার দায়িত্বও আমিই পালন করব—এই সংকল্প নিয়েই ঘর থেকে বের হব।

২. আসার পথ কিংবা মার্চ শেষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশস্থল আমরা নিজ দায়িত্বে পরিচ্ছন্ন রাখব। পানি, ছাতা, মাস্কসহ অন্যান্য ব্যক্তিগত প্রয়োজনীয় জিনিস সঙ্গে রাখব। মেডিক্যাল ইমার্জেন্সিতে উপস্থিত স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে মেডিক্যাল টিম এবং অ্যাম্বুলেন্সের সহযোগিতা নেব।

৩. যেকোনো পরিস্থিতিতে উত্তেজনা পরিহার করব, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সচেষ্ট হব, অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো পরিস্থিতি তৈরি হলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং স্বেচ্ছাসেবকদেরকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করব।

৪. শান্তিপূর্ণ এই বিক্ষোভ কর্মসূচিতে এমন কোনো প্রদর্শনী করব না যা দেশের ভাবমূর্তি নষ্টের কারণ হতে পারে। কোনো দল বা গোষ্ঠীর প্রতীক এড়িয়ে সৃজনশীল ব্যানার, প্ল্যাকার্ড এবং কেবলমাত্র বাংলাদেশ ও ফিলিস্তিনের পতাকা বহন করার মাধ্যমে সংহতি প্রকাশ করব।

৫. জনগণের জানমালের ক্ষতিসাধনকে যারা প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তাদেরকে ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে চিহ্নিত করব। দুষ্কৃতিকারীদেরকে প্রতিরোধে সম্মিলিতভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা নেব। আর মনে রাখব, জুলুমের প্রতিবাদ আরেক জুলুম দিয়ে করা যায় না।

শাহবাগ থেকে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট বাংলাদেশ নামের একটি প্ল্যাটফর্মের ডাকা এ কর্মসূচি।

আন্তর্জাতিক

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি চীনের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য যুদ্ধ শেষ করতে চুক্তি করতে আগ্রহী। বৃহস্পতিবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে এমন মন্তব্য করেন ট্রাম্প।খবর রয়টার্সের।

সংবাদমাধ্যমের জন্য উন্মুক্ত মন্ত্রিসভার ওই বৈঠকে মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেন, দেশগুলোর সঙ্গে চুক্তি করতে পারলে বাণিজ্য নীতিতে আরও স্থিরতা আসবে।

এ সময় ট্রাম্প বলেন, চীনের সঙ্গে চুক্তি করতে পারলে ভালো লাগবে।

চলমান আলোচনা নিয়ে বলতে গিয়ে ট্রাম্প আরও বলেন, মনে হয় উভয় দেশের জন্য ভালো কিছু একটা করা সম্ভব হবে।

ট্রাম্প ইউক্রেনের যুদ্ধ সম্পর্কেও মন্তব্য করেছেন। বলেছেন, সংঘাতের অবসানের অগ্রগতি হচ্ছে। আমরা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করার বিষয়ে অনেকটা এগিয়ে গেছি।

এদিকে, তার ট্রেড পলিসি নিয়ে বলতে গিয়ে ট্রাম্প বলেন, শুল্ক থেকে প্রাপ্ত রাজস্ব জাতীয় ঋণ পরিশোধে ব্যবহার করা যেতে পারে।

এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা তার মন্ত্রিসভার বৈঠকে ভাষণ দিতে গিয়ে ট্রাম্প বলেন, তার প্রশাসন প্রথম দেশ হিসেবে চুক্তি করার ‘খুব কাছাকাছি’ রয়েছে। তিনি আরও বলেন, তিনি এমন চুক্তি করতে চান যা তার দেশের জন্য উপকারী।

বৈঠকে ট্রাম্প সতর্ক করে বলেন, যদি চুক্তি না করা হয়, তাহলে ৯০ দিনের বিরতির পর উচ্চতর শুল্ক আবারও বলবৎ করা হবে। তিনি বলেন, তার সরকার কোনো দেশ বা কোম্পানিকে ছাড় দেওয়ার কথা বিবেচনা করছে না।

এর আগে চীনা পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ক্ষেত্রে ১৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন ট্রাম্প। এ ছাড়া অনেক দেশের ওপর নতুন শুল্ক আরোপ ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করে যুক্তরাষ্ট্র।

এদিকে শুক্রবার শুল্ক নিয়ে মুখ খুলেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। তিনি বলেছেন, বাণিজ্য যুদ্ধে কোনো পক্ষই জয়ী হয় না।

সবশেষ দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের ওপর ১২৫ শতাংশ শুল্ক ঘোষণা করেছে।

জাতীয়

চাষ করতে হয় না, নেই উৎপাদন খরচও। তারপরও কয়েক বছর ধরে নাগালের বাইরে ইলিশের দাম। আর বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন ‘পহেলা বৈশাখ’ এলেই ব্যবসায়ের উপলক্ষ্য হয় এই মাছ। বিক্রেতারা বাড়তি মুনাফা করতে নেমে পড়ে প্রতিযোগিতায়। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। নববর্ষের দুই দিন আগেই খুচরা বাজারে ইচ্ছামতো দাম হাঁকানো হচ্ছে। পরিস্থিতি এমন- বড় আকারের প্রতি কেজি ইলিশ সর্বোচ্চ ৩৫০০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। এতে পান্তার সঙ্গে ইলিশ খেতে উচ্চবিত্তরা শখ করে কিনলেও মধ্য ও নিম্নআয়ের মানুষের পাতে তোলা যেন বড় দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শুক্রবার ঢাকা, চট্টগ্রাম ও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের খুচরা বাজার ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

রাজধানীর কাওরান বাজার, নয়াবাজার, মালিবাগ কাঁচাবাজার ও শান্তিনগর কাঁচাবাজার ঘুরে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৮০০ থেকে ২৪০০ টাকায়। ৮০০-৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১৬০০-১৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৫০০-৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের জন্য গুনতে হচ্ছে ১৩০০-১৫০০ টাকা। এছাড়া দেড় কেজি ওজন ও তারও বেশি ওজনের ইলিশ ২৭০০ থেকে ৩৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে ১ কেজি ৩০০ গ্রামের ইলিশ ২৫০০-২৬০০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে চট্টগ্রামে ‘রুপালি ইলিশের’ দাম আকাশচুম্বী। খুচরা ব্যবসায়ীরা আধাকেজি ওজনের ইলিশের দাম হাঁকাচ্ছেন কেজিপ্রতি ২০০০ থেকে আড়াই হাজার টাকা। আর এক কেজি বা তারও বড় আকারের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে তিন হাজার টাকার ওপরে।

রাজধানীর কাওরান বাজারের মাছ বিক্রেতা মো. শুক্কুর আলী বলেন, প্রতিবছর পহেলা বৈশাখ এলেই ইলিশের চাহিদা বাড়ে। বাজারে বেশির ভাগ বড় আকারের ইলিশ হিমাগারে মজুত ছিল। সেগুলো এখন বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি ছোট আকারের যেগুলো পাওয়া যাচ্ছে তা সাগরের ধরা মাছ।

কাওরান বাজারে ইলিশ কিনতে আসা আরমান বলেন, নববর্ষে পান্তা-ইলিশ খাওয়া এক ধরনের নিয়মে পরিণত হয়েছে। তাই পরিবারের জন্য দেড় কেজি ওজনের দুটি ইলিশ কিনে বাড়ি ফিরছি। তবে গত বছরের তুলনায় দাম কিছুটা বেশি।

একই বাজারে মাছ কিনতে এসেছেন মো. জসিম। তিনি বলেন, বিক্রেতাদের কারসাজিতে কয়েক বছর ধরে ইলিশের দাম বাড়ছে। মূল্য বাড়িয়ে বিক্রেতারা ইচ্ছা করে ইলিশ উচ্চবিত্তের খাবারে পরিণত করেছে। এজন্য স্বাভাবিকভাবেই ইলিশ কিনতে পারছি না। আর পহেলা বৈশাখ ঘিরে একটি মাছ কিনতে এসে দেখি দাম আকাশচুম্বী। এজন্য ইলিশ না নিয়েই বাড়ি ফিরছি।

এদিকে পহেলা বৈশাখে পান্তা-ইলিশ খাওয়ার চর্চা ‘বাঙালি সংস্কৃতির অংশ নয়’ বলে মন্তব্য করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। তিনি বলেন, পহেলা বৈশাখে ইলিশ খায় কেমন করে, পহেলা বৈশাখে তো ইলিশ পাওয়ার কথা নয়। আসলে পহেলা বৈশাখে পান্তা-ইলিশ আমাদের সংস্কৃতির অংশ নয়। তবুও ঢাকায় এটা চালু করা হয়েছে।

অন্যদিকে রাজধানীর খুচরা বাজারে একাধিক সবজি কেজিপ্রতি ফের ৬০ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে। কিছু সবজির কেজি ১০০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ঢেঁড়স বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা, পটোল ৮০ টাকা, করলার কেজি ৮০ টাকা, গাজর ৬০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া প্রতি কেজি ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি প্রতি কেজি টমেটো ৪০-৫০ টাকা, কচুরলতি ১০০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, বেগুন প্রতি কেজি ৯০ টাকা, পেঁপে ও শিম ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি কাঁচামরিচ ৮০ টাকা, শসা ৬০ এবং শজিনে ৮০-১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাড়তি বিভিন্ন মাছের দামও। শুক্রবার রাজধানীর খুচরা বাজারে দেশি চিংড়ি প্রতি কেজি বিক্রি হয় ৮০০-১০০০ টাকা। যা দুই সপ্তাহ আগেও ৭০০-৮৫০ টাকা ছিল। চাষের চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ৬৫০-৭৫০ টাকা। প্রতি কেজি টেংরা মাছ বিক্রি হচ্ছে ৬০০-৭০০ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগে ৫০০-৬০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি দেশি শিং বিক্রি হচ্ছে ৮৫০-৯০০ টাকা, শোল ৮০০-৮৫০ টাকা, পুঁটি ৬০০-৮০০ টাকা। বড় আকারের রুই প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০-৪০০ টাকা, মাঝারি আকারের রুই ৩০০-৩৫০ টাকা, পাঙাশ ও তেলাপিয়া বিক্রি হচ্ছে ২০০-২২০ টাকা।

রাজনীতি

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ব্যাংককে শুক্রবার দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছেন। দক্ষিণ এশিয়ার প্রধানতম দুই দেশের সরকার প্রধান পারস্পরিক শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে খোলামনে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

দুই সরকার প্রধানের ৪০ মিনিটব্যাপী আলোচনা ছিল খোলামেলা, ফলপ্রসূ এবং গঠনমূলক।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়। আমাদের দুটি দেশের বন্ধুত্ব সুদৃঢ় ইতিহাস, ভৌগলিক নৈকট্য এবং সাংস্কৃতিক সাদৃশ্যের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। ১৯৭১ সালের আমাদের কঠিন সময়ে ভারত সরকার ও জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থনের জন্য আমরা চিরকৃতজ্ঞ।’

যদিও এটি দুই নেতার প্রথম সরাসরি বৈঠক, তবে অধ্যাপক ইউনূস জানান, গত আট মাসে দুই দেশের মধ্যে বহুবার দ্বিপাক্ষিক যোগাযোগ হয়েছে।

দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দুই দেশের জনগণের কল্যাণে সম্পর্ককে সঠিক পথে এগিয়ে নিতে আমরা আপনার সঙ্গে একযোগে কাজ করতে চাই।’

বিমসটেকের নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে অধ্যাপক ইউনূস সাত সদস্য দেশের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির জন্য ভারতের সমর্থন চান। তিনি গঙ্গা পানিবণ্টন চুক্তি নবায়নের আলোচনা এবং তিস্তা পানিবণ্টন চুক্তির চূড়ান্তকরণের আহ্বান জানান।

বিমসটেকের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করায় অধ্যাপক ইউনূসকে অভিনন্দন জানান এবং ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেন, ভারত সবসময় বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে।

তিনি উল্লেখ করেন, দুই প্রতিবেশী দেশের ইতিহাস বাংলাদেশ সৃষ্টির সময় থেকেই অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত।

প্রধানমন্ত্রী মোদি অধ্যাপক ইউনূসের আন্তর্জাতিক মর্যাদার কথা স্মরণ করে বলেন, ভারত সর্বদা একটি প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের পক্ষে থাকবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ভারত বাংলাদেশে কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করে না আমাদের সম্পর্ক জনগণের সঙ্গে।

অধ্যাপক ইউনূস শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের বিষয়ে ভারতের অবস্থান জানতে চান। তিনি বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী মিডিয়ার মাধ্যমে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন, যা ভারতের আতিথেয়তার অপব্যবহার বলে মনে হয়। শেখ হাসিনা অন্তর্বর্তী সরকার সম্পর্কে মিথ্যা ও উসকানিমূলক অভিযোগ করে চলেছেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা ভারত সরকারকে অনুরোধ করছি যে, আপনার দেশে অবস্থানকালে তাকে এ ধরনের বক্তব্য থেকে বিরত রাখার জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।

অধ্যাপক ইউনূস জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করেন, যা ২০২৪ সালের ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত নিরাপত্তা বাহিনী ও সশস্ত্র আওয়ামী লীগ কর্মীদের দ্বারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ দিয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা জানান, প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- গণঅভ্যুত্থানের সময় ১ হাজার ৪০০ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে প্রায় ১৩ শতাংশই শিশু। প্রতিবেদনটি এটাও জানায়- হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন এবং অমানবিক কার্যকলাপের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে।

জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী নিজে নিরাপত্তা বাহিনীকে আন্দোলনকারীদের হত্যা ও ‘নেতাদের গ্রেফতার করে লাশ গুম করার’ নির্দেশ দেন।

প্রধানমন্ত্রী মোদি শেখ হাসিনার বক্তব্য নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, ভারতের সম্পর্ক কোনো ব্যক্তি বা দলের সঙ্গে নয়, বরং দেশের সঙ্গে।

অধ্যাপক ইউনূস সীমান্তে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টিও উত্থাপন করেন এবং বলেন, এ ধরনের মৃত্যু রোধে যৌথভাবে কাজ করলে তা শুধু পরিবারগুলোর বেদনা কমাবে না, বরং দুই দেশের মধ্যে আস্থা ও সম্পর্ক আরও দৃঢ় করবে।

তিনি বলেন, ‘আমি প্রতিবার এসব মৃত্যুতে কষ্ট অনুভব করি’। তিনি অনুরোধ জানান, ভারত যেন এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে উপায় খুঁজে বের করে।

প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, ভারতীয় সীমান্তরক্ষীরা শুধুমাত্র আত্মরক্ষার জন্য গুলি চালায় এবং মৃত্যুর ঘটনাগুলো ভারতের ভেতরেই ঘটে। উভয় নেতা বিষয়টি নিয়ে একসঙ্গে কাজ করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

বিমসটেকের বাংলাদেশের চেয়ারম্যানশিপের বিষয়ে অধ্যাপক ইউনূস আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিমসটেকের দৃশ্যমানতা বাড়াতে চায় এবং এই সংস্থাকে একটি কার্যকর ও প্রাণবন্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে চায়, যা এই অঞ্চলের জনগণের প্রত্যাশা পূরণে সহায়তা করবে এবং বিশ্বব্যাপী পণ্য আমদানি-রপ্তানির একটি দক্ষ পথ তৈরি করবে।

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদির উদ্বেগের জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার যেসব প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, তা অনেকটাই অতিরঞ্জিত এবং ‘এর বেশিরভাগই ভুয়া খবর’। যেসব হামলার অভিযোগ এসেছে, তা স্বচক্ষে যাচাই করার জন্য তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে সাংবাদিক পাঠানোর অনুরোধ জানান।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তিনি দেশে ধর্মীয় ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার প্রতিটি ঘটনা নজরদারির আওতায় আনতে একটি কার্যকর ব্যবস্থা প্রচলন করেছেন এবং তার সরকার এমন যেকোনো ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।

দুই নেতা তাদের খোলামেলা ও ফলপ্রসূ সংলাপের সমাপ্তি টানেন পরস্পরের সুস্বাস্থ্য ও মঙ্গল কামনা করে এবং উভয় দেশের জনগণের শান্তি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির জন্য শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

বৈঠকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমান, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালসহ অন্যান্য জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা।

শেখ হাসিনাকে ফেরত দিন

সীমান্ত হত্যা, গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তির নবায়ন ও তিস্তা নিয়ে আলোচনা * জনগণের কল্যাণে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে চান ড. ইউনূস * সম্পর্ক খারাপ হয়, এমন বক্তব্য পরিহারের আহ্বান নরেন্দ্র মোদির

অনেক জল্পনাকল্পনার পর অবশেষে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রথম দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়েছে বাংলাদেশ। এছাড়াও ভারতে বসে হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্য, সীমান্ত হত্যা, গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তির নবায়ন, তিস্তার পানিবণ্টনসহ বিভিন্ন বিষয় আলোচনায় তুলেছেন ড. ইউনূস। বৈঠকে বাংলাদেশের সঙ্গে একটি ইতিবাচক ও গঠনমূলক সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ভারতের আকাঙ্ক্ষার কথা জানিয়েছেন মোদি। পাশাপাশি তিনি সীমান্ত সুরক্ষা, অবৈধ অনুপ্রবেশ প্রতিরোধ, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা এবং তাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত সহিংস ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দেন। নরেন্দ্র মোদি গণতান্ত্রিক, স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ, প্রগতিশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ গঠনে ভারতের সমর্থনের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।

থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের সাংরিলা হোটেলে শুক্রবার বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। দুই প্রতিবেশী দেশের সরকারপ্রধান আধা ঘণ্টারও বেশি সময় দুদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন। বৈঠকে ড. ইউনূস ১০ বছর আগের কথা মনে করিয়ে মোদিকে একটি ছবি উপহার দিয়েছেন।

অধ্যাপক ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়। আমাদের দুটি দেশের বন্ধুত্ব সুদৃঢ় ইতিহাস, ভৌগোলিক নৈকট্য এবং সাংস্কৃতিক সাদৃশ্যের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। ১৯৭১ সালে আমাদের কঠিন সময়ে ভারত সরকার ও জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থনের জন্য আমরা চিরকৃতজ্ঞ।

দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বেশকিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দুই দেশের জনগণের কল্যাণে সম্পর্ক সঠিক পথে এগিয়ে নিতে আমরা আপনার সঙ্গে একযোগে কাজ করতে চাই। বিমসটেকের নতুন চেয়ারম্যান হিসাবে অধ্যাপক ড. ইউনূস সাত সদস্য দেশের মধ্যে মুক্তবাণিজ্য চুক্তির জন্য ভারতের সমর্থন চান। তিনি গঙ্গা পানিবণ্টন চুক্তি নবায়নের আলোচনা এবং তিস্তা পানিবণ্টন চুক্তি চূড়ান্তকরণের আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিমসটেকের চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করায় অধ্যাপক ড. ইউনূসকে অভিনন্দন জানান এবং ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা জানান। নরেন্দ্র মোদি বলেন, ভারত সবসময় বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। তিনি উল্লেখ করেন, দুই প্রতিবেশী দেশের ইতিহাস বাংলাদেশ সৃষ্টির সময় থেকেই অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।

প্রধানমন্ত্রী মোদি অধ্যাপক ইউনূসের আন্তর্জাতিক মর্যাদার কথা স্মরণ করে বলেন, ভারত সর্বদা একটি প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের পক্ষে থাকবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ভারত বাংলাদেশে কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করে না। আমাদের সম্পর্ক জনগণের সঙ্গে।

অধ্যাপক ইউনূস শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের বিষয়ে ভারতের অবস্থান জানতে চান। তিনি বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী মিডিয়ার মাধ্যমে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন, যা ভারতের আতিথেয়তার অপব্যবহার বলে মনে হয়।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, শেখ হাসিনা অন্তর্বর্তী সরকার সম্পর্কে মিথ্যা ও উসকানিমূলক অভিযোগ করে চলেছেন। তিনি বলেন, আমরা ভারত সরকারকে অনুরোধ করছি যে, আপনার দেশে অবস্থানকালে তাকে এ ধরনের বক্তব্য থেকে বিরত রাখার জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।

অধ্যাপক ইউনূস জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করেন, যা ২০২৪ সালের ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত নিরাপত্তা বাহিনী ও সশস্ত্র আওয়ামী লীগ কর্মীদের দ্বারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ দিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শেখ হাসিনার বক্তব্য নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, ভারতের সম্পর্ক কোনো ব্যক্তি বা দলের সঙ্গে নয়, বরং দেশের সঙ্গে।

অধ্যাপক ইউনূস সীমান্তে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টিও উত্থাপন করেন এবং বলেন, এ ধরনের মৃত্যু রোধে যৌথভাবে কাজ করলে তা শুধু পরিবারগুলোর বেদনা কমাবে না, বরং দুই দেশের মধ্যে আস্থা ও সম্পর্ক আরও দৃঢ় করবে। তিনি বলেন, আমি প্রতিবার এসব মৃত্যুতে কষ্ট অনুভব করি। তিনি অনুরোধ জানান, ভারত যেন এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে উপায় খুঁজে বের করে।

প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, ভারতীয় সীমান্তরক্ষীরা শুধু আত্মরক্ষার জন্য গুলি চালায় এবং মৃত্যুর ঘটনাগুলো ভারতের ভেতরেই ঘটে। উভয় নেতা বিষয়টি নিয়ে একসঙ্গে কাজ করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদির উদ্বেগের জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার যেসব প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, তা অনেকটাই অতিরঞ্জিত এবং ‘এর বেশির ভাগই ভুয়া খবর’।

যেসব হামলার অভিযোগ এসেছে, তা স্বচক্ষে যাচাই করার জন্য তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে সাংবাদিক পাঠানোর অনুরোধ জানান।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তিনি দেশে ধর্মীয় ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার প্রতিটি ঘটনা নজরদারির আওতায় আনতে একটি কার্যকর ব্যবস্থা প্রচলন করেছেন এবং তার সরকার এমন যে কোনো ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।

বৈঠকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমান, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালসহ অন্য জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, দুই দেশের সরকারপ্রধানের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকটি অত্যন্ত গঠনমূলক ও ফলপ্রসূ হয়েছে। তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট যত ইস্যু আছে, এর সবকটি নিয়ে কথা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা আমাদের সব বিষয় আলোচনায় তুলেছেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ, ভারতে বসে তিনি যেসব উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন সে প্রসঙ্গ, সীমান্ত হত্যা বন্ধ, গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তির নবায়ন, তিস্তা চুক্তির প্রসঙ্গ এসেছে।

বৈঠক নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রিও। তিনি জানান, ড. ইউনূসের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ওই সময় মোদি বাংলাদেশে হিন্দুসহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিয়ে ভারতের উদ্বেগের বিষয়টি উত্থাপন করেছেন। এর পাশাপাশি শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন বিক্রম মিশ্রি।

ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদি গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল, শান্তিপূর্ণ, স্থিতিশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক, বাংলাদেশের প্রতি তার সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি অধ্যাপক ইউনূসকে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের ইতিবাচক ও গঠনমূলক সম্পর্ক তৈরির আকাঙ্ক্ষার কথা জানিয়েছেন। এছাড়া (দুই দেশের সম্পর্কে প্রভাব ফেলে) এমন কথাবার্তা এড়িয়ে চলার অনুরোধ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

দুই নেতার মধ্যে সীমান্ত নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলেও জানান বিক্রম মিশ্রি। তিনি বলেছেন, সীমান্তের নিরাপত্তা রক্ষায় সীমান্ত আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকানো জরুরি বলে জানান মোদি।

শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ নিয়ে আলোচনা হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে মিশ্রি বলেন, বাংলাদেশ এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক পত্র দিয়েছে। তবে এ মুহূর্তে এর চেয়ে বেশি বলা তার জন্য ঠিক হবে না বলে মন্তব্য করেন ভারতীয় এ কূটনীতিক।

এদিকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মোদি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের প্রতি ভারত সরকারের জনগণকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গির কথা উল্লেখ করে বলেছেন, দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা জনগণের জন্য বাস্তবসম্মত সুফল বয়ে এনেছে। এমন কোনো বক্তব্য বা প্রচার এড়িয়ে চলা উচিত, যা পরিবেশকে নষ্ট করতে পারে। সেই সঙ্গে সীমান্ত সুরক্ষার বিষয়ে তিনি জোর দিয়ে বলেন, আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করা এবং বিশেষ করে রাতে অবৈধ অনুপ্রবেশ প্রতিরোধ করা জরুরি। দ্বিপাক্ষিক সংলাপের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো পর্যালোচনা এবং সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য বিদ্যমান প্রক্রিয়া সক্রিয় রাখা যেতে পারে। পাশাপাশি নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সংঘটিত সহিংস ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের প্রয়োজনীয়তার ওপরও গুরুত্ব দেন তিনি।

মোদিকে ছবি উপহার ড. ইউনূসের : প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে এক দশক আগের স্মৃতিময় একটি ছবি উপহার দিয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানিয়েছেন, ছবিটি ২০১৫ সালের ৩ জানুয়ারি মুম্বাইয়ে অনুষ্ঠিত ১০২তম ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসে অধ্যাপক ইউনূসকে স্বর্ণপদক প্রদানের সময়কার।

খেলাধুলা

ব্যাট শুনছিল না কথা, সায় দিচ্ছিল না শরীর। রোহিত শর্মা ধুঁকছিলেন। চাপ বাড়ছিল। তাকে বাদ রেখেই দল সাজানোর পরিকল্পনা কষেছিল মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। সেটিই একটু ভিন্ন উপায়ে হয়ে গেল। ক্রিকেটভিত্তিক ওয়েবসাইট ক্রিকইনফো জানিয়েছে, আইপিএলে লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসের বিপক্ষে ম্যাচটি খেলতে পারবেন না রোহিত। চোট পেয়েছেন মুম্বাইয়ে খেলা ভারতের অধিনায়ক।

ক্রিকইনফো জানিয়েছে, অনুশীলনের সময় হাঁটুতে চোট পেয়েছেন রোহিত। ইনজুরির অবস্থা পুরোপুরি জানাতে না পারলেও, চোট যে গুরুতর তা বাদ রাখার সিদ্ধান্তে বোঝা যায়। রোহিতের চোট কতটা গুরুতর, তা অবশ্য জানা যায়নি।

টসের সময় মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়া তেমন কিছু রোহিতের ব্যাপারে বলেননি। ঠিক কি কারণে বাদ পড়েছেন, সেটিই সামনে এনেছেন। তবে হার্দিক আশার কথা শুনিয়ে বলেছেন, ‘সে (জাসপ্রিত বুমরাহ) খুব দ্রুতই ফিরবে।’ তবে কবে নাগাদ, তা বলেননি।

রোহিত শর্মা এমন একসময় বাদ পড়েছেন, যখন তাকে নিয়ে বিতর্ক চলছে। দুদিন আগে অনুশীলনের সময় জহির খান ও রিশভ পান্তের সঙ্গে কথোপকথনের সময় রোহিত নেতৃত্ব নিয়ে কিছু বলছিলেন। যা নিয়েই চলছে আলোচনা-সমালোচনা। অনেকেই ভারতের বর্তমান ও মুম্বাইয়ের সাবেক অধিনায়কের পিণ্ডি চটকিয়েছেন। কেউ কেউ রোহিতের খেলার মান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।

বিনোদন

ঢাকাই সিনেমার নায়িকা পরীমনি কাজের চেয়ে বরং ব্যক্তিজীবন নিয়েই বেশি আলোচনায় থাকেন। এবার গৃহকর্মীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী সেই গৃহকর্মী পরীমনির বিরুদ্ধে থানায় জিডিও করেছেন।

জানা গেছে, পরীমনির এক বছরের দত্তক মেয়ে সন্তানকে খাবার খাওয়ানোকে কেন্দ্র করে গৃহকর্মীকে মারধর করেন তিনি। এ ঘটনায় পিংকি আক্তার নামের সেই গৃহকর্মী ঢাকার ভাটারা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন।

বৃহস্পতিবার (৩ এপ্রিল) এই জিডিটি করেন পিংকি আক্তার। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ভাটারা থানা পুলিশ।

ভাটারা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মাজহারুল ইসলাম বলেন, চিত্রনায়িকা পরীমনির বাসার এক গৃহকর্মীকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে ওই গৃহকর্মী থানায় একটি জিডি করেছে। বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখছি।

প্রসঙ্গত, এর আগেও নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য পরীমনির বিরুদ্ধে একাধিক মামলা আদালতে চলমান রয়েছে।

২০২১ সালের ৬ জুলাই ঢাকার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাজীব হাসানের আদালতে ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ বাদী হয়ে পরীমনিসহ তিনজনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। মামলায় নাসিরউদ্দিন উল্লেখ করেন, পরীমনি ও তার সহযোগীরা অ্যালকোহল সেবনে অভ্যস্ত। তারা সুযোগ বুঝে বিভিন্ন নামিদামি ক্লাবে ঢুকে অ্যালকোহল পান করেন এবং পার্সেল নিয়ে মূল্য পরিশোধ করেন না। পরীমনি তার পরিচিত পুলিশ কর্মকর্তাদের দিয়ে মিথ্যা মামলা করিয়ে হয়রানির ভয় দেখান।

বাদী মামলায় আরও উল্লেখ করেন, পরীমনি ও তার সহযোগীরা তাকে (নাসির উদ্দিনকে) মারধর ও হত্যার হুমকি দিয়েছেন ও বোট ক্লাবে ভাঙচুর করেছেন। এ ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য পরীমনি সাভার থানায় বাদী নাসির উদ্দিনসহ দুজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণচেষ্টা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ তুলে মামলা করেন।

এছাড়া, ২০২১ সালের ৪ আগস্ট বিকালে রাজধানীর বনানীর ১২ নম্বর সড়কে পরীমনির বাসায় অভিযান চালায় র‌্যাব। এ সময় ওই বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য জব্দ করা হয়। মাদকের মামলায় পরীমনির সে বছরের ৫ আগস্ট চারদিন ও ১০ আগস্ট দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

রাজনীতি

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার কার্যক্রম শুরু করেছে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের তরুণ প্রজন্ম ও দেশবাসী বাংলাদেশের ভবিষ্যত নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করতে অসাধারণ সংকল্প ও শক্তি প্রদর্শন করেছে। জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধারে আমরা গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছি।’

প্রধান উপদেষ্টা আজ বৃহস্পতিবার চীনের হাইনানে বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া (বিএফএ) সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে ভাষণ দেওয়ার সময় এ কথা বলেন।

চলমান সংস্কার কর্মসূচির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘স্বাধীন কমিশন গঠন করা হয়েছে যাতে নির্বাচনী ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, বেসামরিক প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে সংস্কার আনা যায়।’

এই সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়িত হলে আমাদের জাতির একটি মৌলিক রূপান্তর সাধিত হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা যখন একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে যাচ্ছি, তখন এশিয়ার অন্যান্য দেশের মতো আমরাও একাধিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছি।’

বিশ্বব্যাপী আর্থিক বাজারের অস্থিরতা, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, কূটনৈতিক উত্তেজনা এবং বাণিজ্য বিঘ্নতা বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতা তৈরি করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘সুদের হার বৃদ্ধি ও ঋণ পরিষেবা ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় এশিয়ার ঋণ সংকট আরও গভীর হচ্ছে।’

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে ধীরগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী ২০৩০ এজেন্ডার প্রতি প্রতিশ্রুতি থাকা সত্ত্বেও অগ্রগতি খুব ধীর গতিতে হচ্ছে। এখন পর্যন্ত মাত্র ২৪ শতাংশ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জিত হয়েছে।’

তিনি বলেন, উন্নয়নশীল এশীয় দেশগুলো প্রতি বছর ২.৫ থেকে ৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার এসডিজি অর্থায়নের ঘাটতির সম্মুখীন হচ্ছে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এসডিজি অর্থায়নের বাইরেও এশিয়াকে ব্যাপক পরিমাণে অবকাঠামো বিনিয়োগ ও দায়িত্বশীল অর্থায়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক বৈচিত্র্য আনতে হবে।

দুর্নীতি ও আর্থিক অপচয় রোধের আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে দুর্নীতি ও অবৈধ অর্থপ্রবাহের শিকার।

তিনি উল্লেখ করেন, এই ধরনের দুর্নীতি ও আর্থিক অনিয়মের কারণে উন্নয়নশীল দেশগুলো প্রতি বছর প্রায় ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতির সম্মুখীন হয়, যা তারা আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহায়তা হিসেবে যে অর্থ পায় তার চেয়ে বহুগুণ বেশি।

তিনি বলেন, ‘এশিয়াকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সম্পদ পুনরুদ্ধার ও পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার জন্য একটি বহুপাক্ষিক মধ্যস্থতা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।’

প্রধান উপদেষ্টা আরো বলেন, ‘খাদ্য নিরাপত্তা ক্রমবর্ধমান চাপে রয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়ার কারণে নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো কঠিন সময় পার করছে।’

তিনি আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ এই সংকটকে আরও গভীরতর করছে। ‘খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থা শক্তিশালী করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ,’ তিনি উল্লেখ করেন।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘জ্বালানি নিরাপত্তা গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষত জ্বালানি আমদানিকারক উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য। জ্বালানি সরবরাহ ব্যাহত হলে মূল্যস্ফীতি, অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং ঋণ সংকট বৃদ্ধি পায়।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই টেকসই জ্বালানি সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। নবায়নযোগ্য শক্তিতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।’

প্রধান উপদেষ্টা মানবসম্পদ উন্নয়নে স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় বিনিয়োগের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

তিনি বলেন, ‘যেসব দেশ সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবায় বিনিয়োগ করে, তারা অর্থনৈতিক উৎপাদনশীলতার দিক থেকে ভালো ফল পায়।’

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমাদের তরুণ প্রজন্মকে ভবিষ্যতের চাকরির বাজারের জন্য প্রস্তুত করতে ডিজিটাল শিক্ষা ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের প্রসার ঘটাতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তন তীব্রতর হচ্ছে, ঋণের বোঝা অসহনীয় হয়ে উঠছে এবং মানবিক সংকট বাড়ছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘উন্নয়ন সহযোগিতার জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা দুর্বল হয়ে পড়ছে, এবং বিশ্ব এখন সম্মিলিত পদক্ষেপের অভাবের কারণে একটি বিপজ্জনক পরিস্থিতির সম্মুখীন।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বিশ্বের ৬০ শতাংশ জনসংখ্যা এবং ৫৫ শতাংশ বিশ্ব জিডিপি ধারণকারী এশিয়া এই পরিবর্তনগুলোর কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।’

‘নতুন নিয়ম, বিধিনিষেধ এবং প্রযুক্তি সরকার পরিচালনা ও অর্থনৈতিক নীতিকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করছে,’ তিনি বলেন।

তিনি আরও বলেন, ‘এক দশক আগে যে নীতিগুলো কার্যকর ছিল, সেগুলো আর প্রাসঙ্গিক নয়। আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা এখন আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি প্রয়োজন।’

সম্মেলনে বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়ার মহাসচিব ঝাং জুন, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব ও বোয়াও ফোরামের চেয়ারম্যান বান কি-মুন এবং চীনের স্টেট কাউন্সিলের নির্বাহী উপ-প্রধানমন্ত্রী ডিং জুয়েশিয়াং বক্তব্য রাখেন।

জাতীয়

বাংলাদেশ আগামী দুই বছরের জন্য বিমসটেকের সভাপতিত্ব গ্রহণ করতে যাচ্ছে। এর লক্ষ্য দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াজুড়ে আঞ্চলিক সংযোগ, অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং উন্নয়ন বৃদ্ধি করা। কারণ, এই ব্লকটি ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মধ্যে বৃহত্তর সংহতকরণের চেষ্টা করছে।

থাইল্যান্ডের ব্যাংককে চলমান ষষ্ঠ বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের শেষে এই হস্তান্তরটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে সাত সদস্যের আঞ্চলিক ব্লক: বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, মিয়ানমার, নেপাল, শ্রীলঙ্কা এবং থাইল্যান্ডের নেতারা ‘সমৃদ্ধ, স্থিতিস্থাপক এবং উন্মুক্ত বিমসটেক’ থিমের অধীনে গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করতে একত্রিত হয়েছেন।

যারা এই বছরের শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করেছে, বাংলাদেশ সেই থাইল্যান্ডের কাছ থেকে সভাপতিত্বের দায়িত্ব গ্রহণ করবে।

এই স্থানান্তর অনুষ্ঠানটি একটি আনুষ্ঠানিক হস্তান্তর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে চিহ্নিত করা হবে। সেখানে থাই প্রধানমন্ত্রী তার সমাপনী বক্তব্য রাখবেন এবং বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা তার মেয়াদকালে ব্লকের জন্য দেশের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরবেন।

বিমসটেকের সনদ অনুসারে, সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে চেয়ারম্যানের পদ বর্ণানুক্রমিকভাবে আবর্তিত হয়।

আজ শীর্ষ সম্মেলন শুরু হয় অংশগ্রহণকারী নেতাদের একটি প্রতীকী গ্রুপ ছবির মাধ্যমে। এরপর থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী, বিদায়ী বিমসটেক সভাপতি স্বাগত ভাষণ দেন।

মিয়ানমার এবং থাইল্যান্ডে সাম্প্রতিক ভূমিকম্পে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

এরপর, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং অন্যান্য বিমসটেক নেতারা আঞ্চলিক সহযোগিতার বিষয়ে তাদের দেশের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে বিবৃতি প্রদান করেন।

সকালে, প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ইউনূস থাই বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রাতঃরাশের বৈঠকে যোগ দেন। সেখানে বিমসটেক কাঠামোর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক এবং বহুপাক্ষিক অংশীদারিত্ব জোরদার করার বিষয়ে আলোচনা হয়।

১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত বিমসটেক আঞ্চলিক সহযোগিতার জন্য বিশেষ করে বাণিজ্য, প্রযুক্তি, পরিবহন, জ্বালানি এবং সন্ত্রাসবাদ দমনের ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমানভাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

ঢাকার বিআইএমএসআরইসি সচিবালয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেছেন, আগামী দুই বছরের জন্য বাংলাদেশ নেতৃত্বের দায়িত্বে থাকায়, দেশটি সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য সুবিধা, অবকাঠামোগত সংযোগ এবং জলবায়ু সহিষ্ণুতা বৃদ্ধির ওপর মনোনিবেশ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, নতুন বিমসটেক চেয়ার এখন সংগঠনের এজেন্ডা পরিচালনার জন্য কাজ শুরু করবে, যাতে নিশ্চিত করা যায় যে, আঞ্চলিক ব্লকটি বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং স্থিতিশীলতা বৃদ্ধিতে কৌশলগত ভূমিকা পালন করে চলেছে।

আন্তর্জাতিক

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রার কাছে দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশটি ভ্রমণকারী বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

ব্যাংককে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে থাই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতকালে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এই বিষয়টি উত্থাপন করেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ঢাকাস্থ থাই দূতাবাসের আরো বেশি ভিসা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার সক্ষমতা নেই, ফলে থাইল্যান্ড ভ্রমণের জন্য অপেক্ষমাণ বাংলাদেশিদের দীর্ঘ বিলম্ব এবং লম্বা লাইন ধরতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে থাই প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা করে ড. ইউনূস বলেন, ‘বাংলাদেশিরা যারা থাইল্যান্ডে চিকিৎসা নিতে আসেন তারা অনেকে ভিসা জটিলতার সম্মুখীন হন।’

থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা প্রধান উপদেষ্টাকে আশ্বস্ত করে বলেছেন যে তিনি বিষয়টি দেখবেন।

ড. ইউনূস এসময় দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, জাহাজ চলাচল এবং সমুদ্র সম্পর্ক এবং বিমান যোগাযোগ সম্প্রসারণেরও আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, চট্টগ্রাম থেকে ফ্লাইট চালু করলে বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ড ভ্রমণের সময় কমাতে পারে।

প্রধান উপদেষ্টা এক দশকেরও বেশি সময় আগে চট্টগ্রাম থেকে থাইল্যান্ডের পর্যটন শহর চিয়াং মাইয়ের মধ্যে ফ্লাইট চালু করার সময় এয়ার এশিয়ার প্রভাবের কথা স্মরণ করেন।

বিমসটেকের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করায় প্রফেসর ইউনূসকে অভিনন্দন জানিয়ে থাই প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের নেতৃত্ব এই আঞ্চলিক জোটে নতুন গতিশীলতা সঞ্চার করবে।

বৈঠকের শুরুতে ড. ইউনূস বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী এবং চমৎকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের কথা তুলে ধরেন।

তিনি প্রয়াত রাজা ভূমিবলের প্রতি শ্রদ্ধা জানান, যিনি ১৯৭২ সালে থাইল্যান্ডের স্বাধীন বাংলাদেশের প্রাথমিক স্বীকৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।

আলোচনার বিষয়বস্তুতে বিনিয়োগ প্রধান্য ছিল, এসময় ড. ইউনূস আগামী সপ্তাহে ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য বিনিয়োগ শীর্ষ সম্মেলনে থাই কোম্পানিগুলোকে যোগদানের জন্য আমন্ত্রণ জানান। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধির সুবিধার্থে দুই দেশের মধ্যে রেল, সড়ক, সামুদ্রিক এবং বিমান যোগাযোগ উন্নত করার গুরুত্বও তিনি তুলে ধরেন।

এ প্রসঙ্গে তিনি পরামর্শ দেন, পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে থাইল্যান্ড, ভারত ও মিয়ানমারকে অন্তর্ভুক্ত করে ত্রিপক্ষীয় মহাসড়ক প্রকল্পে বাংলাদেশ অংশ নিতে চায়।

প্রধান উপদেষ্টা প্রস্তাব করেন উভয় দেশই যত দ্রুত সম্ভব একটি দ্বিপক্ষীয় মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) তৈরির জন্য একটি যৌথ সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শুরু করবে, যাতে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করা যায়।