অর্থনীতি

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ ব্যাংককে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী হরিণী আমারাসুরিয়ার সাথে বৈঠক করেছেন।

এসময় দুই নেতা পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার বন্ধু প্রতিম দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও সহযোগিতা সম্প্রসারণের অঙ্গীকার করেছেন।

শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী চুরি হওয়া অর্থ উদ্ধারে তার দেশের প্রচেষ্টার কথা বর্ণনা করেন।

তিনি বলেন, শ্রীলঙ্কার সংসদ পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার জন্য একটি নতুন আইন অনুমোদন করেছে।

প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া কোটি কোটি ডলার ফিরিয়ে আনার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রচেষ্টায় শ্রীলঙ্কার সমর্থন চেয়েছেন।

দুই নেতা জুলাইয়ের বিদ্রোহের বিভিন্ন দিক নিয়েও আলোচনা করেন এবং দুই দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগের গুরুত্বের উপর জোর দেন।

অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার এজেন্ডা এবং আগামী ডিসেম্বর থেকে আগামী বছর জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানে তার প্রশাসনের পরিকল্পনা বর্ণনা করেন।

বৈঠকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, এসডিজি সমন্বয়কারী লামিয়া মোরশেদ এবং পররাষ্ট্র সচিব জসিম উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।

জাতীয়

বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া ৮ লাখ রোহিঙ্গার তালিকা থেকে প্রথম ধাপে ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তনের জন্য চিহ্নিত করেছে সে দেশের কর্তৃপক্ষ। একইসাথে তাদেরকে ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশকে নিশ্চয়তা দিয়েছে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ।

২০১৮ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ছয়টি ধাপে এই মূল তালিকা মিয়ানমারের কাছে হস্তান্তর করে বাংলাদেশ।

আরো ৭০ হাজার রোহিঙ্গাকে চূড়ান্ত যাচাই বাছাইয়ের জন্য ছবি ও নাম মিলিয়ে দেখার কাজ চলমান রয়েছে।

আজ ব্যাংককে বিমসটেকের ষষ্ঠ সম্মেলনের ফাঁকে মিয়ানমারের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইউ থান শিউ এই তথ্য বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমানকে জানান।

এই প্রথম মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ একটি নিশ্চিত প্রত্যাবর্তনের তালিকা প্রদান করল, যা রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি।

মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ আরও জানিয়েছে, মূল তালিকায় থাকা বাকি ৫ লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গার যাচাই দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করা হবে।

বৈঠকে ড. খলিলুর রহমান মিয়ানমারে ভূমিকম্পে নিহতদের প্রতি সমবেদনা জানান এবং বলেন, দুর্যোগকবলিত মানুষের জন্য বাংলাদেশ অতিরিক্ত মানবিক সহায়তা পাঠাতে প্রস্তুত রয়েছে।

বিনোদন

‘ডাব্বা কার্টেল’ সিনেমাতে অঞ্জলি আনন্দের অভিনয় দর্শকের নজর কেড়েছিল। ‘রকি অউর রানি কি প্রেম কাহানি’তে রণবীর সিংয়ের বোনের ভূমিকাতেও দেখা গিয়েছিল অঞ্জলিকে।

সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে অভিনেত্রী নিজের জীবনের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা শুনিয়েছেন। শৈশবে লাগাতার হেনস্তার শিকার হয়েছেন এবং সেই স্মৃতি আজও এই অভিনেত্রীকে তাড়া করে বেড়ায়।

সাক্ষাৎকারে অঞ্জলি জানিয়েছেন, মাত্র আট বছর বয়সে তিনি তার বাবাকে হারিয়েছেন। এরপরই তার নৃত্যগুরু তাদের পরিবারকে নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করেন। এমনকী তার শৈশবও সেই গুরুর হাতে বন্দি হয়ে যায়। সেই গুরুর কাছেই লাগাতার যৌন হেনস্তার শিকার হয়েছেন অভিনেত্রী।

অঞ্জলি বলেন, আমি বুঝতে পারছিলাম না তখন কী করা উচিত। সেই সময় আমার বয়স মাত্র আট বছর। বাবার মৃত্যুর পর আমার নৃত্যগুরু বলতে শুরু করেন তিনিই নাকি আমার বাবা। শিশু বয়সে সেই কথা আমি বিশ্বাসও করেছিলাম। তাছাড়া আমার কোনও উপায় ছিল না।

এরপর তিনি যোগ করে বলেন, সেই গুরু এরপর থেকে ধীরে ধীরে আমায় স্পর্শ করতে শুরু করেন। একদিন হঠাৎ আমার ঠোঁটে চুমু খেয়ে বলেন, বাবারা এমনই করেন। এরপর আমার জীবন অনেকটাই তিনি নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করেন। নিজের সেই দুর্বিষহ অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে আজও শিউরে উঠি।

অভিনেত্রী জানিয়েছেন এই নৃত্যগুরুর হাত থেকে মুক্তি পেতে তাকে ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। অবশেষে তার প্রথম প্রেমিক এসে নাকি তাকে এই নৃত্যগুরুর কবল থেকে উদ্ধার পেতে সাহায্য করে।

আন্তর্জাতিক

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপ নিয়ে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিওটিও) মামলা করেছে চীন। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে অতিরিক্ত ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে দেশটি।

খবর বিবিসির।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেন, মার্কিন শুল্ক বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়মের গুরুতর লঙ্ঘন। পাশাপাশি এই শুল্ক সংস্থার সদস্যদের বৈধ অধিকার ও স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং বহুপক্ষীয় বাণিজ্য ব্যবস্থা ও আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক শৃঙ্খলাকে দুর্বল করে।

তিনি আরও বলেন, এটি একপাক্ষিক প্রভাবশালী আচরণ, যা বিশ্ব বাণিজ্য ও অর্থনীতির স্থিতিশীলতাকে বিপদে ফেলছে। চীন এর তীব্র বিরোধিতা করছে।

চীনের অর্থ মন্ত্রণালয় জানায়, তাদের আরোপ করা ৩৪ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক ১০ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে। দেশটির এমন পদক্ষেপ বাণিজ্য সংকটকে আরও গভীর করবে বলে মনে করা হচ্ছে।

বুধবার ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছিলেন, চীনের ওপর নতুন করে ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। চলতি বছরের শুরুতে তিনি ২০ শুল্ক আরোপ করেছিলেন। ফলে মোট শুল্কের মোট হার হবে ৫৪ শতাংশ।

অর্থনীতি

সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারগুলোতে শাক, সবজি ও মুরগির দাম কমেছে। একই সঙ্গে আলু আগের দামে বিক্রি হলেও পেঁয়াজের দাম কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়েছে।

তবে সপ্তাহ ব্যবধানে মাছের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে।

শুক্রবার (০৪ এপ্রিল) রাজধানীর তালতলা ও শেওড়াপাড়া বাজার ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।

সবজি-মুরগির দাম কমার কারণ হিসেবে ক্রেতা-বিক্রেতারা বলছেন, প্রথমতো, এবার রমজানে ও ঈদে বাজার ছিল বেশ স্থিতিশীল। তার ওপর গত সোমবার (৩১ মার্চ) ছিল ঈদুল ফিতর। ঢাকা থেকে লাখ লাখ মানুষ দেশের বিভিন্ন জেলায় ঈদ উদযাপন করতে গেছেন। তাদের অনেকেই এখনো ফেরেননি। এ কারণে এখন ঢাকার বাজারগুলোতে নিত্যপণ্যের চাহিদা কিছুটা কম।

রাজধানীর বাজারগুলোতে গিয়ে দেখা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে গ্রীষ্মকালীন সব ধরনের সবজি কেজিতে ২০ থেকে ৪০ টাকা কমেছে।

এসব বাজারে গ্রীষ্মকালীন সবজি কেজি প্রতি বেগুন প্রকারভেদে ৬০ থেকে ৮০ টাকা, করলা ৭০ থেকে ৮০ টাকা, বরবটি ৯০ টাকা, পটল কেজিতে ৪০ টাকা কমে ৬০ টাকা, ধুন্দল ৭০ টাকা, চিচিঙ্গা কেজিতে ২০ টাকা কমে ৬০ টাকা, কচুর লতি কেজিতে ৪০ টাকা কমে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এসব বাজারে সজনে কেজিতে ২০ টাকা কমে ১৪০ টাকা ঝিঙ্গা ৭০ টাকা, কাঁচা আম ১৪০ টাকা এবং কাঁচা মরিচ ৬০ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে পেঁপের দাম কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি ৭০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।

এসব বাজারে শিম ৬০ টাকা কেজি, ফুলকপি ৬০ টাকা পিস, বাঁধা কপি ৫০ টাকা পিস, প্রতিটি লাউ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে। তবে পাকা টমেটো কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, গাজর ৫০ টাকা, মুলা ৬০ টাকা, শসা কেজিতে ৪০ টাকা কমে ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।

এসব বাজারে লেবুর হালি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, ধনে পাতা ১৪০ টাকা কেজি, কাঁচা কলা হালি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়, চাল কুমড়া ৬০ টাকা পিস, ক্যাপসিকাম ১২০ টাকা এবং মিষ্টি কুমড়া ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এসব বাজারে সব ধরনের শাকের দাম কমেছে। বাজারগুলোতে লাল শাক ১০ টাকা আঁটি, লাউ শাক ৩০ থেকে ৪০ টাকা, পালং শাক ১০ টাকা, কলমি শাক ৩ আঁটি ২০ টাকা, পুঁই শাক ৩০ টাকা এবং ডাটা শাক দুই আঁটি ৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে সপ্তাহ ব্যবধানে বাজারগুলোতে মুরগির দাম কেজিতে ১০ টাকা কমেছে। এসব বাজারে সোনালি কক মুরগি কেজিতে ১০ টাকা কমে ৩২০ এবং সোনালি হাইব্রিড ২৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লাল লেয়ার মুরগি ৩০০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৯০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি ২১০ টাকা এবং দেশি মুরগি ৬৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এসব বাজারে আলুর দাম স্থিতিশীল রয়েছে। আলু ২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারগুলোতে দেশি পেঁয়াজ কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়ে ৪৫ টাকা এবং ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ ৩৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

বাজারগুলোতে আদা ১২০ থেকে ২৮০ টাকা, রসুন দেশি ১০০ টাকা এবং ইন্ডিয়ান ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা, দেশি মসুর ডাল ১৪০ টাকা, মুগ ডাল ১৮০ টাকা, ছোলা ১১০ টাকা, খেসারির ডাল ১৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এসব বাজারে মিনিকেট চাল প্রকারভেদে ৮২ থেকে ৯২ টাকা এবং নাজিরশাইল ৮৪ থেকে ৯০ টাকা, স্বর্ণা ৫৫ টাকা এবং ২৮ বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা দরে।

অন্যদিকে সপ্তাহ ব্যবধানে মাছের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। এসব বাজারে এক কেজি শিং মাছ চাষের (আকারভেদে) বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকায়, প্রতি কেজি রুই মাছের দাম বেড়ে (আকারভেদে) ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকায়, দেশি মাগুর মাছ ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা, মৃগেল ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়, চাষের পাঙ্গাস ২০০ থেকে ২৩০ টাকায়, চিংড়ি প্রতি কেজি ৭৫০ থেকে ১২০০ টাকায়, বোয়াল মাছ প্রতি কেজি ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায়, বড় কাতল ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকায়, পোয়া মাছ ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়, পাবদা মাছ ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায়, তেলাপিয়া ২২০ টাকায়, কৈ মাছ ২২০ থেকে ২৩০ টাকায়, মলা ৫০০ টাকা, বাতাসি টেংরা ১৩০০ টাকায়, টেংরা মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাচকি মাছ ৫০০ টাকায়, পাঁচমিশালি মাছ ২২০ টাকায়, রূপচাঁদা ১২০০ টাকা, বড় বাইন মাছ ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা, দেশি কৈ ১২০০ টাকা, শোল মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, আইড় মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, বেলে মাছ ৮০০ টাকা, কুড়াল মাছ ৭০০ টাকা, কাজলি মাছ ৮০০ টাকা এবং কাইক্ক্যা মাছ ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এসব বাজারে গরুর মাংস কেজি প্রতি ৭৮০ টাকা, গরুর কলিজা ৮০০ টাকা, গরুর মাথার মাংস ৪৫০ টাকা, গরুর বট ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা এবং খাসির মাংস কেজি প্রতি ১১৫০-১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজারগুলোতে এক ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়, হাঁসের ডিম ২২০ টাকায়, দেশি মুরগির ডিমের হালি ৯০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।

রাজনীতি

ব্যাংককে বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রথম দ্বিপক্ষীয় বৈঠককে ‘আশার আলো’ হিসেবে দেখছে বিএনপি।

দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিমসটেকে সাইডলাইন বৈঠক হয়েছে, এটা (বৈঠক) খুব আনন্দের কথা। আমরা মনে করি যে, ভূ-রাজনীতি এবং বর্তমান বিশ্ব রাজনীতির যে প্রেক্ষাপট এবং বাংলাদেশ-ভারতের এ অঞ্চলের যে প্রেক্ষাপট, সেই প্রেক্ষাপটে আমাদের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সাহেবের বৈঠকটা আমাদের সামনে একটা আশার আলো তৈরি করেছে।

শুক্রবার সন্ধ্যায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলটির মহাসচিব সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দুই দেশের শীর্ষ নেতাদের বৈঠক নিয়ে এরকমই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।

তিনি বলেন, ভারত এবং বাংলাদেশের সম্পর্কের মধ্যে যে একটা বিটারনেস (তিক্ততা) তৈরি হয়েছিল, সেটি যেন আর বেশি সামনে না যায় অথবা এটা যেন কমে আসে। সেখানে একটা সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমি যতদূর দেখেছি, তাতে করে আমার মনে হয়েছে এ ব্যাপারে দুজনই যথেষ্ট আন্তরিক এবং এটা নিসন্দেহে বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশের মানুষেরই উপকার করবে।

শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুরে ব্যাংককে বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর প্রথম দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়। আধা ঘণ্টা স্থায়ী ওই বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণসহ বিভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় তুলে ধরা হয় বলে বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।

এদিকে গুলশান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার আগে ক্রীড়াঙ্গনের কর্মকর্তা, সংগঠন এবং ক্রীড়াবিদদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন বিএনপি মহাসচিব। এ সময়ে মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক ও জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শরীফুল আলম উপস্থিত ছিলেন।

সংগঠন ও ক্রীড়াবিদদের মধ্যে ছিলেন- মাহবুবুল আনাম, রফিকুল ইসলাম বাবু, রুম্মন বিন ওয়ালি সাব্বির, নিয়ামুর রশীদ রাহুল, মো. আশরাফুল, হাবিবুল বাশার সুমন, রিয়াজ আহমেদ, ইমতিয়াজ আহমেদ নকীব, আবু দাউদ শামসুদ্দোজা চৌধুরী ডন, মাইশিকুর রহমান রিয়াল, ফাহিম সিনহা, কাজী মহিউদ্দিন বুলবুল, সেলিম শাহেদ, সৈয়দ বোরহানুল হোসেন পাপ্পু, আকরাম হোসেন সবুজ, ইব্রাহিম খলিল প্রমুখ।

জাতীয়

মেহমানদারি নবী-রাসুলদের আদর্শ। কেউ কারো মেহমান হলে মেজবানের দায়িত্ব মেহমানকে আপ্যায়ন করা, এটি নবীজির সুন্নত। মেজবানের কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার সময় মেহমানেরও একটি দোয়া পড়া সুন্নত।

রাসুলুল্লাহ (সা.) কারও বাড়িতে দাওয়াত খেতে গেলে মেজবানের জন্য দোয়া না করে ফিরতেন না।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- মানুষের প্রতি যে কৃতজ্ঞ হয় না, সে তো আল্লাহর প্রতিও কৃতজ্ঞ হয় না। -সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৪৮১৩

এ কৃতজ্ঞতা-প্রাপ্তি মেজবানের অধিকার। তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হবে এবং তার জন্যে দোয়া করতে হবে। কখনো দোয়ার মধ্য দিয়েও কৃতজ্ঞতার প্রকাশ হতে পারে।

এ প্রসঙ্গে প্রিয় নবীজী থেকে বর্ণিত দুটি দোয়া-

اللّهُمّ أَطْعِمْ مَنْ أَطْعَمَنِيْ، وَاسْقِ مَنْ سَقَانِيْ.

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আতয়িম মান আতয়ামানি, ওয়াসকি মান সাকানি

অর্থ: হে আল্লাহ! আমাকে যে খাইয়েছে তুমিও তাকে খাওয়াও, আমাকে যে পান করিয়েছে তুমিও তাকে পান করাও। -মুসনাদে আহমাদ, হাদিস ২৩৮০৯

أَفْطَرَ عِنْدَكُمُ الصّائِمُونَ، وَأَكَلَ طَعَامَكُمُ الأَبْرَارُ، وَصَلّتْ عَلَيْكُمُ الْمَلاَئِكَةُ.

উচ্চারণ: ‘আফতারা ইনদাকুমুস সা-ইমুন, ওয়া আকালা তা-আমাকুমুল আবরার, ওয়াসাল্লাত আলাইকুমুল মালাইকা’।

রোজাদারেরা তোমাদের নিকট ইফতার করুক, নেককার লোকেরা তোমাদের খাবার গ্রহণ করুক আর ফেরেশতারা তোমাদের জন্যে দোয়া করুক। -সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৩৮৫৬

আবুল হায়ছাম রা. নামের এক সাহাবী একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এবং তার সঙ্গীদের খাবারের দাওয়াত দিলেন।

খাবার শেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : এবার তোমরা তোমাদের ভাইকে প্রতিদান দাও। সাহাবায়ে কেরাম জানতে চাইলেন- ইয়া রাসূলাল্লাহ! তার প্রতিদান কী? তিনি বললেন-

إِنّ الرّجُلَ إِذَا دُخِلَ بَيْتُهُ فَأُكِلَ طَعَامُهُ وَشُرِبَ شَرَابُهُ فَدَعَوْا لَهُ فَذَلِكَ إِثَابَتُهُ.

কারও বাড়িতে গিয়ে যখন তার খাবার-পানীয় গ্রহণ করা হয়, এরপর (দাওয়াতগ্রহীতাগণ) তার জন্য দোয়া করে, তা-ই তার প্রতিদান। -সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৩৮৫৫

কোনো সাহাবির বাসায় দাওয়াত খেলে নবিজি অনেক সময় এ দোয়াটিও করতেন,

‏ اللَّهُمَّ بَارِكْ لَهُمْ فِيمَا رَزَقْتَهُمْ وَاغْفِرْ لَهُمْ وَارْحَمْهُمْ

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা বারিক লাহুম ফিমা রাজাকতাহুম ওয়াগফির লাহুম ওয়ারহামহুম।

অর্থ: হে আল্লাহ! তাদের যে রিজিক দিয়েছ তাতে বরকত দান করুন, তাদেরকে ক্ষমা করুন এবং তাদের প্রতি দয়া করুন।

আন্তর্জাতিক

জুলাই অভ্যুত্থানের সময় নারী আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা চালানো হয়, যার মধ্যে শারীরিক নির্যাতন, কিছু নথিভুক্ত ঘটনায় ধর্ষণের হুমকি এবং শারীরিক যৌন নিপীড়নও অন্তর্ভুক্ত ছিল। এসব হামলা ঘটিয়েছে আওয়ামী লীগের লোকেরা।

কিছু নারীকে বেআইনিভাবে আটক, নির্যাতন ও অমানবিক আচরণের শিকার হতে হয়। মূলত, নারীদের ভয় দেখিয়ে আন্দোলন থেকে দূরে রাখা এবং আন্দোলনে তাদের ভূমিকা দুর্বল করাই এসব সহিংসতার উদ্দেশ্য ছিল।
বাংলাদেশে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের (ওএইচসিএইচআর) তথ্যানুসন্ধানে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

গত ১২ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ করা এই প্রতিবেদন বাংলা ভাষাভাষী পাঠকদের সহজবোধ্যভাবে বোঝার সুযোগ করে দিতে অনলাইন নিউজপোর্টাল ইংরেজি থেকে হুবহু বাংলায় অনুবাদ করেছে। বাংলায় অনূদিত সেই প্রতিবেদনটি ধারাবাহিকভাবে পাঠকদের কাছে সংবাদ আকারে তুলে ধরা হচ্ছে। আজ থাকছে সেই প্রতিবেদনের ষষ্ঠ পর্ব।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সমানতালে বিভিন্ন বয়সী নারীরাও অংশ নিয়েছিলেন। এর মধ্যে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থী ছিলেন উল্লেখযোগ্য। এসব নারী শিক্ষার্থীর ওপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় হামলা করেছিল ছাত্রলীগের সশস্ত্র কর্মীরা। নারীদের ওপর এমন অনেক সহিংসতার বিষয়ে তথ্যানুসন্ধান করেছে ওএইচসিএইচআর।

প্রতিবেদনের সারাংশে বলা হয়, বিক্ষোভের প্রথম দিকে অগ্রভাগে থাকার কারণে নারী ও মেয়েরা নিরাপত্তা বাহিনী এবং আওয়ামী লীগের সমর্থকদের হামলার শিকার হন। তারা বিশেষভাবে যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার শিকার হন, এর মধ্যে লিঙ্গভিত্তিক শারীরিক সহিংসতা, ধর্ষণের হুমকিও ছিল। কিছু নথিভুক্ত ঘটনা অনুসারে, আওয়ামী লীগের সমর্থকরা যৌন নির্যাতনও চালিয়েছেন। ওএইচসিএইচআর প্রতিশোধমূলক সহিংসতা হিসেবে যৌনসহিংসতা এবং ধর্ষণের হুমকি সম্পর্কিত অভিযোগও পেয়েছে। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংবেদনশীলতা এবং বাংলাদেশে যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা সম্পর্কিত তথ্য কম জানানোর যে চর্চা তার পরিপ্রেক্ষিতে ওএইচসিএইচআর মনে করে যে, তাদের পক্ষে যৌন সহিংসতার সম্পূর্ণ তথ্য নথিভুক্ত করা সম্ভব হয়নি। সংস্থাটি মনে করে, এ ধরনের ঘটনার পুরো বিস্তৃতি নির্ধারণ করতে এবং এর প্রভাব অনুসন্ধানে আগামীদিনে এর গভীর তদন্ত প্রয়োজন। একই সঙ্গে ভিকটিমদের যেন প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া যায়।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা সময়কালে সংঘটিত এসব মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো সামগ্রিকভাবে রাষ্ট্রের একটি পরিকল্পিত ও বিস্তৃত দমননীতির প্রমাণ দেয়। এর মধ্যে বেআইনিভাবে শক্তি প্রয়োগ, চিকিৎসাসেবায় বাধা দেওয়া, বেআইনি গ্রেপ্তার, বিচারিক প্রক্রিয়া ব্যাহত করা এবং কিছু ক্ষেত্রে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা অন্তর্ভুক্ত ছিল। এসব কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল না; বরং আন্দোলন দমন, জনগণকে ভয় দেখানো এবং রাজনৈতিক ও নাগরিক বিরোধীদের সংগঠিত হয়ে প্রচলিত শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর বিষয়টিকে ঠেকানোর সুপরিকল্পিত কৌশলের অংশ ছিল।

ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নারীদের ওপর সহিংসতা নিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, নারী বিক্ষোভকারীরা সরকারি নিরাপত্তাবাহিনী এবং আওয়ামী লীগ-সমর্থিত অস্ত্রধারী ব্যক্তিদের হামলা থেকে রেহাই পায়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ইডেন কলেজের নারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার পাশাপাশি রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, উত্তরা, ধানমন্ডি, মিরপুরসহ অন্যান্য এলাকায় এবং কুমিল্লা, সাভার, সিলেট ও রংপুরের মতো শহরেও নারী বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। উপরন্তু নারীদের নির্বিচারে গ্রেপ্তার, নির্যাতন ও অন্যান্য অমানবিক আচরণের শিকার হতে হয়।

সহিংসতা চালানোর সময় নারীদের সঙ্গে কী ধরণের আচরণ করা হতো সে বিষয়ে সংস্থাটি বলছে, নারী বিক্ষোভকারীদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার সময় হামলাকারীরা মুখ, বুক, তলপেট ও নিতম্বের মতো নির্দিষ্ট অঙ্গগুলোর ওপর আঘাত করে, যা শুধু শারীরিক যন্ত্রণা দেওয়ার উদ্দেশ্যে ছিল না, বরং লাঞ্ছিত ও হেয় প্রতিপন্ন করার লক্ষ্যে পরিচালিত হয়েছে। এসব হামলার সময় নারীদের উদ্দেশ করে (অপ্রকাশযোগ্য গালি) ইত্যাদি অবমাননাকর শব্দ ব্যবহার করা হয়। আওয়ামী লীগ/ছাত্রলীগের সদস্য ও পুলিশ কর্মকর্তারা নারীদের ধর্ষণ, জোরপূর্বক নগ্ন করা এবং অন্যান্য যৌন সহিংসতার হুমকি দেন।

ওএইচসিএইচআর বিশ্বস্ত সূত্র থেকে আওয়ামী লীগের লোকদের চালানো যৌন সহিংসতার বেশ কয়েকটি ঘটনার তথ্য পাওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলেছে, আগস্টের শুরুতে ঢাকায় এক ঘটনায়, বাঁশের লাঠি হাতে একদল ব্যক্তি এক নারীকে আটকে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করে তিনি বিক্ষোভকারী কি না। তার ব্যাগ ও মোবাইল ফোন তল্লাশি করে তারা বাংলাদেশি পতাকা খুঁজে পেলে তাকে শারীরিকভাবে আক্রমণ করা হয়। তারা তার চুল টেনে ছিঁড়ে, শার্ট ছিঁড়ে ফেলে, এবং বুকে ও নিতম্বে হাত দেয়, পাশাপাশি তার বুকে আঁচড় দেয় ও যৌন নিপীড়নমূলক মন্তব্য ছোড়ে। জুলাই মাসে ঢাকায় অন্য এক ঘটনায় দুই ছাত্রলীগ কর্মী এক নারী বিক্ষোভকারীকে, তার মা-সহ পরিবারের সব নারী সদস্যকে ধর্ষণের হুমকি দেয় এবং তাকে শারীরিকভাবে নিপীড়ন করে, যার মধ্যে ছিল বুকে ও যৌনাঙ্গে হাত দেওয়া এবং অশ্লীল মন্তব্য করা। ঘটনার পর ওই নারী ফোনে ধর্ষণের হুমকি পেতে থাকেন, যা তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য ছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানিয়েছেন যে, ছাত্রলীগ সমর্থকরা কুমিল্লায় বেশ কয়েকজন নারীকে লাঞ্ছিত করে, যার মধ্যে দুজন ছাত্রীও আছে, যাদের তারা আটক করে শরীরে অযাচিত হাত দেয় এবং পরে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে।

তবে সামাজিক কারণে সহিংসতার শিকার নারীরা তা প্রকাশ করতে আগ্রহী হন না উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে যৌন ও লিঙ্গ ভিত্তিক সহিংসতার শিকার নারীরা প্রায়শই অভিযোগ জানাতে অনাগ্রহী থাকেন। কার্যকর রাষ্ট্রীয় প্রতিকার ব্যবস্থা না থাকা, প্রতিশোধের ভয় (বিশেষ করে অপরাধীরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হলে) এবং সামাজিক কলঙ্ক নিয়ে আশঙ্কার কারণে তারা অভিযোগ করতে চান না। ভুক্তভোগীরা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা, মনোসামাজিক সহায়তা ও আইনি সেবা পান না। যারা অভিযোগ করতে ইচ্ছুক তাদেরও যথাযথ সুরক্ষা, সম্মান ও স্বনির্ভরতা দেওয়া হয় না।

ওএইচসিএইচআরের মতে, নথিভুক্ত ঘটনাগুলোর চেয়ে বাস্তবে আরও অনেক বেশি সহিংসতা সংঘটিত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। তাই যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার ঘটনাগুলোকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে আরও গভীর ও লিঙ্গ-সংবেদনশীল তদন্ত পরিচালনার সুপারিশ করা হয়।

আন্তর্জাতিক

অবশেষে ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করলেন নরেন্দ্র মোদি। বাংলাদেশের নিকটতম প্রতিবেশী এবং প্রায় চৌদিক বেষ্টন করে থাকা ভারতের সঙ্গে আমাদের সমস্যা, দেনাপাওনা ও লেনদেন সবচে’ বেশি। বাংলাদেশ সব সমস্যার সমাধান গায়ের জোরে নয়, আলোচনায় চায়। ক্ষমতাচ্যুত হাসিনা রেজিমের সঙ্গে গভীর বন্ধনে আবদ্ধ ছিল ভারত। সে সম্পর্ক অধীনতামূলক মিত্রতা বলে সমালোচিত ছিল। ছাত্রগণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হাসিনা এখনো ভারতেই আশ্রিত এবং এই পটপরিবর্তনকে মন থেকে মানতে পারেনি ভারতের মোদি সরকার।

বাংলাদেশ তার নোবেল লরিয়েট সরকার প্রধানের সঙ্গে মোদিকে একটা বৈঠকে বসাতে গোড়া থেকেই জোর দেনদরবার ও কূটনীতি চালিয়ে এসেছে। আট মাসের মাথায় সে চেষ্টা ফলবতী হলো। মুখ না দেখতে গোঁ ধরা সিদ্ধান্ত পালটে ভারতের প্রধানমন্ত্রী অবশেষে ব্যাংককে বিমসটেক সামিটের সাইডলাইনে প্রায় পৌনে এক ঘন্টার বৈঠক করলেন তার বাংলাদেশি কাউন্টারপার্ট এর সঙ্গে। এই শীর্ষ সম্মেলনেই বাংলাদেশের ইউনূস বিমসটেক এর চেয়ারম্যান পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন।

শুরু থেকেই বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি কোষ্ঠকাঠিন্য চেহারা নিয়ে থাকা ভারত-পক্ষকে বৈঠকে বেশ সৌজন্যময় মনে হয়েছে। মিটিংয়ের ভেন্যুতে ড. ইউনূস গিয়ে পৌঁছালে সেখানে আগে থেকেই মোতায়েন থাকা পুরো ভারতীয় টিম দাঁড়িয়ে সসম্মানে তাঁকে বরণ করে নেন।

এই বৈঠকের ফলাফল সম্পর্কে চটজলদি কোনো মতামত না দিয়ে আমি শুধু প্রাপ্ত বিবরণটুকুই পেশ করতে চাই এ লেখায়। ড. ইউনূস বিমসটেকের চেয়ারম্যান পদে অধিষ্ঠিত হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী মোদি তাঁকে অভিনন্দন জানান এবং সদ্য বিগত ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন।

ড. ইউনূসের আন্তর্জাতিক খ্যাতি ও মর্যাদার কথা উল্লেখ করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, নয়াদিল্লি সব সময় প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের প্রতি সমর্থন জানিয়ে যাবে। নয়াদিল্লি সব সময় ঢাকার সঙ্গে সম্পর্ককে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের সময় থেকেই দু’দেশের ইতিহাস জটিল গ্রন্থিতে আবদ্ধ।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের বিশেষ কোনো দলকে ভারত সমর্থন করে না। আমাদের সম্পর্ক হচ্ছে জনগণের সঙ্গে জনগণের।

দুই নেতার মধ্যকার প্রথম এ বৈঠকে ড. ইউনূসও ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে বাংলাদেশ অতি মূল্যবান মনে করে বলে উল্লেখ করেন। অভিন্ন ইতিহাসের শরিকানা, ভৌগলিক নৈকট্য ও সাংস্কৃতিক কুটুম্বিতার মাধ্যমে স্থাপিত হয়েছে দু’দেশের গভীর বন্ধুত্ব। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সহায়তার জন্যও তিনি ধন্যবাদ জানান। তিনি দু’দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিরাজমান সমস্যাবলীর কথা উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, উভয় দেশের জনগণের কল্যাণে এ সম্পর্ককে সঠিক খাতে ফিরিয়ে আনতে আমরা একত্রে কাজ করতে চাই।

বিমসটেকের সাত সদস্য দেশের মধ্যে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির ব্যাপারে ভারতের সমর্থন কামনা করেন ড. ইউনূস। তিনি গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তির নবায়ন ও তিস্তার পানি ভাগাভাগির চুক্তি সম্পাদনেরও আহ্বান জানান।

শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে দিতে বাংলাদেশের অনুরোধের ব্যাপারে কদ্দুর কী হলো তাও ড. ইউনূস জানতে চান নরেন্দ্র মোদির কাছে। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা বিভিন্ন মিডিয়া আউটলেটে উত্তেজনাকর কথা বলছেন এবং বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছেন। এসব কার্যকলাপের মাধ্যমে তিনি ভারত তাকে যে আশ্রয় দিয়েছে সেই সুযোগের অপব্যবহার করছেন। হাসিনা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও উসকানিমূলক অভিযোগ একটানা করেই চলেছেন।

ড. ইউনূস বলেন, ভারতে বসে বাংলাদেশে হাঙ্গামা সৃষ্টিকারী প্রচারণা চালানো থেকে হাসিনাকে বিরত করার ব্যাপারে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে আমরা ভারত সরকারের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।

বাংলাদেশে জুলাই অভ্যুত্থান দমনে বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনী ও আওয়ামী লীগের লোকদের গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপারে জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থার রিপোর্টের কথা তুলে ধরে ড. ইউনূস বলেন, তাদের হিসেবেই ১৪শ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, যার ১৩ শতাংশ শিশু। সে সময় খুন, নির্যাতনসহ মানবতার বিরুদ্ধে গুরুতর সব অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। জাতিসংঘ রিপোর্টেই বলা হয়েছে, তখনকার প্রধানমন্ত্রী নিজে নিরাপত্তা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন আন্দোলনকারী নেতাদের আটক করে তাদেরকে খুনের পর লাশ গুম করে ফেলতে।

হাসিনার মন্তব্যের ভিত্তিতে উত্তেজনা সৃষ্টির জন্য ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী সোশ্যাল মিডিয়াকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, আমাদের সম্পর্ক দেশের সঙ্গে, কোনো বিশেষ ব্যক্তি বা দলের সঙ্গে নয়।

ড. ইউনূস সীমান্তে হত্যার প্রসঙ্গ তুলে সম্পর্ক উন্নয়নের স্বার্থে এ হত্যা বন্ধে একত্রে কাজ করার আহ্বান জানান। মোদি বলেন, ভারতের সীমান্তরক্ষীরা আত্মরক্ষায় বাধ্য হয়ে গুলি চালায় এবং হতাহতের ঘটনাগুলো ভারতীয় সীমানার ভেতরেই ঘটে থাকে। তবে তিনি সীমান্তে হত্যার ঘটনা হ্রাসে একত্রে কাজ করতে সম্মতি জানান।

বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী মোদির উদ্বেগের ব্যাপারে ড. ইউনূস বলেন, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ব্যাপারে প্রচারিত সংবাদ অনেকটাই অতিরঞ্জিত। এ ছাড়া একেবারে ভুয়া সংবাদও ছড়ানো হচ্ছে। তিনি সাংবাদিক পাঠিয়ে সরেজমিনে প্রতিটি ঘটনা খতিয়ে দেখার আহ্বান জানান ভারতীয় নেতাদের প্রতি। তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেন, ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা ও নারী নিবর্তনের প্রতিটি অভিযোগ তদারকের জন্য তার সরকার কার্যকর ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে এবং সংখ্যালঘুদের ওপর যেকোনো সহিংসতা রোধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

পারস্পরিক সাফল্য ও কল্যাণ কামনা করে সমাপ্ত বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমান, ভারতের বিদেশমন্ত্রী জয়শংকর ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল।

বৈঠক পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি জানান, শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে আর কিছু বলা সম্ভব নয়।

আমার মন বলছে বৈঠকের যেটুকু বিবরণ ও বয়ান আমি দিলাম তা পড়েই বিজ্ঞ পাঠকেরা বুঝতে পারবেন বরফ কতোটা গললো, লাভক্ষতির পাল্লা কোন্ দিকে ভারি হলো এবং অনমনীয়তার ওপর কূটনীতি কতটুকু বিজয় অর্জন করলো।

মারুফ কামাল খান: সিনিয়র সাংবাদিক ও লেখক

ই-মেইল: [email protected]

জাতীয়

জুলাই আন্দোলনের গুলিবিদ্ধ ৭ বছরের শিশু বাসিত খান মুসাকে দেখতে ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) যান বাংলাদেশ নৌবাহিনী পরিবার কল্যাণ সংঘের (বিএনএফডব্লিউএ) প্রেসিডেন্ট নাদিয়া সুলতানা।

তিনি হাসপাতালে পৌঁছে মুসার শারীরিক অবস্থার খোঁজ নেন। এ সময় তিনি সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে চিকিৎসার অগ্রগতি সম্পর্কে খবর নেন। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। শুক্রবার আইএসপিআর এ তথ্য জানিয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জুলাই আন্দোলনের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত ৭ বছরের শিশু বাসিত খান মুসা দীর্ঘ ৫ মাস সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা শেষে বৃহস্পতিবার রাতে দেশে ফিরেছে। শুক্রবারই সিএমএইচ ছুটে যান বিএনএফডব্লিউএর প্রেসিডেন্ট নাদিয়া সুলতানা।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ১৯ জুলাই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর মেরাদিয়া হাট এলাকায় নিজ বাসার নিচে দাদির সঙ্গে আইসক্রিম কিনতে যায় মুসা। এ সময় দাদি মায়া ইসলামসহ দুজনই গুলিবিদ্ধ হন। পরদিনই তার দাদি মারা যান। মুসার মাথার এক পাশ দিয়ে গুলি ঢুকে আরেক পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়। গুলিবিদ্ধ মুসাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। ২৬ আগস্ট তাকে সিএমএইচ ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ২২ অক্টোবর এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়। সেখানকার ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে দীর্ঘ ৫ মাস চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে শিশু মুসা।