আন্তর্জাতিক

ডনাল্ড ট্রাম্পের জয়ে ‘সংকট ও অশান্তি’ থেকে মুক্তি আসবে বলে প্রত্যাশা প্রবাসীদের।

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে রিপাবলিকান ডনাল্ড ট্রাম্পের জয়-জয়কারের মধ্যে চার বাংলাদেশি আমেরিকানেরও বিজয় ঘটেছে।

তারা হলেন- শেখ রহমান, আবুল বি খান, নাবিলা ইসলাম এবং মো. মাসুদুর রহমান।

তারা সবাই যুক্তরাষ্ট্রে স্টেট পর্যায়ে সর্বোচ্চ পদমর্যাদায় নির্বাচিত প্রতিনিধি। তবে এখন পর্যন্ত কোনো বাংলাদেশি-আমেরিকান ফেডারেল পর্যায়ে (নেনেট অথবা কংগ্রেস) নির্বাচিত হতে পারেননি।

এর মধ্যে নিউ হ্যাম্পশায়ার স্টেটের রিপ্রেজেনটেটিভ হিসেবে সপ্তম মেয়াদের জন্য জয়ী হয়েছেন আবুল বি খান (রিপাবলিকান)। এছাড়া ডেমোক্র্যাটিক পার্টি থেকে চতুর্থ মেয়াদের জন্য জয়ী হয়েছেন জর্জিয়া স্টেটের সেনেটর শেখ রহমান।

একই স্টেটে সেনেটর হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য বিজয়ী হয়েছেন ডেমোক্র্যাট নাবিলা ইসলাম। কানেকটিকাট স্টেট সেনেট ডিস্ট্রিক্ট-৪ থেকে দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য জয়ী হয়েছেন ডেমোক্র্যাট মো. মাসুদুর রহমান।

পিরোজপুরের সন্তান আবুল খান রকিংহাম মোট ভোটের ৬৭% পেয়েছেন। অপরদিকে, জর্জিয়া স্টেট সেনেট ডিস্ট্রিক্ট-৫ থেকে কিশোরগঞ্জের সন্তান শেখ রহমান ৬৭.৬% ভোট পেয়েছেন।

একই স্টেটের সেনেট ডিস্ট্রিক্ট-৭ থেকে ৫৫% ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন নোয়াখালীর সন্তান নাবিলা ইসলাম। কানেকটিকাট সেনেট ডিস্ট্রিক্ট-৪ থেকে ৬৪.৮% ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন চাঁদপুরের সন্তান মো. মাসুদুর রহমান।

৪ বাংলাদেশি-আমেরিকানের জয়ে প্রবাসীরা তাদের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। নির্বাচনে বাংলাদেশি-আমেরিকান ভোটারের উপস্থিতি বেড়েছে বলে অভিমত তাদের।

প্রবাসীরা জানান, গাজা-লিবিয়ায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে তারা ডনাল্ড ট্রাম্পকে বিজয়ী দেখতে চেয়েছিলেন। রিপাবলিকান পার্টির বিজয়ে ‘অর্থনৈতিক সংকট ও অশান্তি’ থেকে মুক্তি আসবে বলে প্রত্যাশা তাদের।

রাজনীতি

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের প্রথম শহিদ আবু সাঈদের দুই ভাই বুধবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।

শহিদ আবু সাঈদের দুই ভাই প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসকে তাদের পিতামাতার ‘সালাম’এবং শুভকামনা পৌঁছে দেন।

তারা জানান, গত সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে অধ্যাপক ইউনূস যখন তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণে আবু সাঈদ ও ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের অন্য শহিদদের আত্মত্যাগের কথা উল্লেখ করেন তখন শহিদ আবু সাঈদের বাবা-মাসহ তারা সকলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন।

আবু সাঈদের বড় ভাই রমজান আলী অধ্যাপক ইউনুসকে বলেন, ‘আপনি প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার একদিন পর রংপরে আমাদের গ্রামে গিয়ে আমাদের সাথে দেখা করেছেন এবং আপনি জাতিসংঘে তাবু সাঈদসহ বিপ্লবের শহিদদের বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা তুলে ধরেছেন এজন্য আমরা অত্যন্ত সম্মানিত বোধ করেছি।

প্রেসিডেন্সিয়াল গার্ড রেজিমেন্ট (পিজিআর) প্রধান উপদেষ্টাকে গার্ড স্যালুট দেয়। এসময় দুই ভাই অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে একই মঞ্চে ছিলেন।

শহিদ আবু সাঈদের অপর ভাই আবু হোসেন বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার সাথে যখন আমরা মঞ্চে দাঁড়িয়েছিলাম এবং সৈন্যরা আমাদেরকে স্যালুট দিয়ে সম্মান জানায় তখন আমাদের কেমন লেগেছিল তা আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।’

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে তারা আবু সাঈদ হত্যা মামলার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করে বলেন, তারা হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

দুই ভাই তাদের শহিদ ভাইয়ের নামে একটি ফাউন্ডেশন গঠন করবেন উল্লেখ করে বলেন, তারা তাদের শহিদ ভাইয়ের স্মরণে তাদের গ্রামে একটি ‘মডেল মসজিদ’ এবং একটি মেডিকেল কলেজ প্রত্ষ্ঠিা করতে চান এবং তারা এ বিষয়ে সহায়তার জন্য দুটি মন্ত্রণালয়ের কাছে আবেদন করেছেন।

আবু হোসেন বলেন, ‘এ ফাউন্ডেশন দরিদ্র জনগোষ্ঠী এবং জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের আহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য কাজ করবে।’

অধ্যাপক ইউনূস আবু সাঈদের পরিবারের জন্য সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার পুলিশকে তার হত্যার তদন্ত দ্রুত শেষ করার এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছে।

তিনি বলেন, ‘শহিদ আবু সাঈদ জাতির জন্য যা করেছেন তা বাংলাদেশ কখনো ভুলবে না। তার আত্মত্যাগ স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থানে বিরাট ভূমিকা রেখেছে।’

তিনি তার পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, তাদের জন্য তাঁর দরজা সবসময় খোলা থাকবে।

তিনি দুই ভাইকে তাদের বাবা-মাকে তাঁর ‘সালাম’ পৌঁছে দিতে বলেন এবং সবসময় তাদের সাথে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন।

অধ্যাপক ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার ঠিক একদিন পর ৯ আগস্ট রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুর গ্রামে আবু সাঈদের বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করেন।

প্রধান উপদেষ্টা শহিদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করেন ও ফাতেহা পাঠ করেন।

রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ গত ১৬ জুলাই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে পুলিশের গুলিতে বুক পেতে দিয়ে শহিদ হন।

রাজনীতি

 

৭ নভেম্বর যথাযোগ্য মর্যাদায় ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ পালনের আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান।

বুধবার (৬ নভেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতি এ দাবি করেন তিনি।

বিবৃতি তিনি বলেন, ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস। বাংলাদেশের ইতিহাসে এ দিনটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং দেশের বিরুদ্ধে সকল ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত মোকাবিলায় ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সকল মুক্তিকামী জনতা রাজপথে নেমেছিল।

তিনি আরও বলেন, ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর মেজর জে. খালেদ মোশাররফ পাল্টা সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনার ষড়যন্ত্র করেছিলো। তখন আমাদের দেশপ্রেমিক সিপাহী ও জনতা ঐক্যবদ্ধভাবে ৭ নভেম্বর নারায়ে তাকবির আল্লাহু আকবার স্লোগান দিয়ে রাজপথে নেমে খালেদ মোশাররফের ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত প্রতিহত করে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে হেফাজত করেছিল।

জামায়াত আমীর বলেন, আমাদের দেশপ্রেমিক সামরিক বাহিনী বারবার দেশকে বিদেশী আধিপত্যবাদী ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা করেছে। ৫ আগস্ট দেশের ছাত্র-জনতা অনেক তাজা প্রাণ ও রক্তের বিনিময় দেশকে সাড়ে ১৫ বছরের আওয়ামী ফ্যাসিবাদের কবল থেকে মুক্ত করেছে এবং দেশের সামরিক বাহিনী ছাত্র-জনতার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। আমরা এমনি এক সময় ৭ নভেম্বর পালন করতে যাচ্ছি যখন জাতি নানা সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। জাতিকে আবার ফ্যাসিবাদের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য নানামুখি চক্রান্ত শুরু হয়েছে। জাতি আবার ফ্যাসিবাদের পদধ্বনি শুনতে পাচ্ছে। ফ্যাসিবাদীরা পুনরায় ফিরে আসলে জাতি এক মহাসঙ্কটে নিপতিত হবে। এ অবস্থায় জাতিকে রক্ষা করার জন্য দেশপ্রেমিক ছাত্র-জনতা এবং বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাসী দল-মত-নির্বিশেষে এবং বর্তমান সরকার ও সামরিক বাহিনীকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।

শফিকুর রহমান বলেন, সকল প্রকার ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত দৃঢ়ভাবে মোকাবেলা করে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করার দীপ্ত শপথ গ্রহণের মাধ্যমে ৭ নভেম্বর ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস, যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করার জন্য আমি জামায়াতের সকল শাখা ও দেশপ্রেমিক ছাত্র-জনতার প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান তিনি।

জাতীয়

সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে স্বার্থান্বেষী মহলের হামলা-ঘেরাওয়ের হুমকি, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে নির্বিচারে মামলা ও হেনস্তার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

সংস্থাটি বলেছে, গণমাধ্যমের ওপর উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আক্রমণ, হামলা ও হুমকি বৈষম্যবিরোধী চেতনার পরিপন্থি। ভিন্নমত ও মুক্ত গণমাধ্যমের ঢালাও নিয়ন্ত্রণ এবং নিরাপত্তাহীনতা মূলত কর্তৃত্ববাদের পুনরাগমনের পথ সৃষ্টি করবে।

বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই উদ্বেগের কথা জানায় টিআইবি। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কি ফাঁকা বুলি- এমন প্রশ্ন তুলে সংস্থাটি বলেছে, মুক্ত সাংবাদিকতার পরিবেশকে বাধাগ্রস্ত করার প্রবণতার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। গণমাধ্যম ও সংবাদকর্মীদের জন্য ভয়ডরহীন পরিবেশ সৃষ্টির উদ্যোগ নিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। সেই সঙ্গে গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতার ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ করে দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার চর্চা নিশ্চিতের জন্য সংশ্লিষ্ট অংশীজনের প্রতিও আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

বিভিন্ন গণমাধ্যম ঘেরাওয়ের হুমকি, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে নির্বিচার মামলা ও হেনস্তার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, পতিত কর্তৃত্ববাদী সরকারের শাসনামলে মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে ১৪ বছরে ৪২ ধাপ নেমেছিল বাংলাদেশ। এ সময়ে গণমাধ্যমের স্বাধীনতাসংক্রান্ত সব মানদণ্ডেই বাংলাদেশের ক্রমাবনতি হয়েছে। ছাত্র-জনতার নজিরবিহীন প্রাণহানি ও রক্তের বিনিময়ে অর্জিত নতুন বাংলাদেশে এ অবস্থান থেকে উত্তরণের অভ‚তপূর্ব সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকেও বারবার সাংবাদিকতার স্বাধীনতা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে- উল্লে­খ করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘কিন্তু আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি স্বার্থান্বেষী বিভিন্ন মহল দেশের কোনো কোনো গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা, হামলা, ঘেরাওয়ের হুমকিসহ নানা আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। দৃশ্যত অতিক্ষমতায়িত কোনো কোনো মহলের স্বার্থের বাইরে গেলেই গণমাধ্যমকে আক্রমণ ও সাংবাদিক হেনস্তা, গণমাধ্যমকে দখল বা খেয়ালখুশিমতো পরিচালনার প্রচেষ্টা চলছে, যা আসলে মুক্ত গণমাধ্যমের সম্ভাবনার জন্য অশনিসংকেত।’

গণমাধ্যমের ওপর এ ধরনের আঘাত নতুন বাংলাদেশের অভীষ্টের জন্য মোটেই সুখকর নয় উলে­খ করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, নির্বিচার হুমকি, হামলা, ঘেরাও, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত ক্ষোভের বশীভ‚ত হয়ে যথেচ্ছ মামলা বা ঢালাওভাবে অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করা প্রকারান্তরে জনবিরোধী কর্তৃত্ববাদের পরিচায়ক। টিআইবি মনে করে, পতিত কর্তৃত্ববাদী সরকারের মতো গণমাধ্যমকে নিজের পোষ্যের মতো ব্যবহারের চেষ্টা ছাত্র-জনতার নজিরবিহীন ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত ‘নতুন বাংলাদেশ’-এর মুক্তচিন্তা ও বৈষম্যবিরোধী চেতনার পরিপন্থি।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, অবিলম্বে দেশে স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য ভয়ডরহীন উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টিতে সুস্পষ্ট ও কঠোর পদক্ষেপ নেবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। অন্যথায় গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ফাঁকা বুলিতে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়।’

ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, টিআইবি বিশ্বাস করে, সাংবাদিকের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট কোনো ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ থাকলে বা যারা সরাসরি কর্তৃত্ববাদের দোসরের ভ‚মিকা পালন করেছেন, তাদের বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত। কিন্তু পতিত কর্তৃত্ববাদী সরকারের সহযোগী ‘ট্যাগ’ দিয়ে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে যথেচ্ছ মামলা, তথ্য অধিদপ্তরের দেওয়া স্থায়ী ও অস্থায়ী প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল, হুমকি ও বরখাস্ত করার মতো ঘটনা দেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতার সপক্ষে কোনো ইতিবাচক বার্তা দিচ্ছে না। বরং ভিন্নমতের কারণেই ‘স্বৈরাচারের দোসর’ অভিযোগ তোলার পেছনে স্বার্থান্বেষীদের দুরভিসন্ধি কাজ করছে। শুধু সাংবাদিকতার জন্য কোনো সাংবাদিককে কখনোই শাস্তি দেওয়ার সুযোগ নেই। পতিত সরকারের দোসর অভিযোগে ‘উইচ হান্টিং’ করে সাংবাদিক হয়রানির চলমান চর্চা অবিলম্বে বন্ধের উদ্যোগ নিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

জাতীয়

আজ ৭ নভেম্বর। ঐতিহাসিক জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস। বাংলাদেশের রাজনীতিতে দিনটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৯৭৫ সালের এই দিনে সিপাহি-জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লব ঘটেছিল, যা দেশের তৎকালীন রাজনীতির গতিধারা পালটে দিয়ে দেশ ও জাতিকে নতুন পরিচয়ে অভিষিক্ত করেছিল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পরবর্তী সেনা অভ্যুত্থান ও পালটা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশে যখন চরম নৈরাজ্যজনক পরিস্থিতি বিরাজ করছিল, তখন সিপাহি-জনতার মিলিত ঐক্যের বিপ্লব দেশ ও জাতিকে অনাকাঙ্ক্ষিত শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি থেকে মুক্তি দিয়েছিল। অভূতপূর্ব সেই বিপ্লব-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সাময়িক বন্দিদশা থেকে মুক্ত হন স্বাধীনতার ঘোষক তৎকালীন সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান। বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো ৭ নভেম্বরকে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস হিসাবে পালন করে আসছে। বিএনপি সরকারের আমলে এ দিনটিতে সরকারি ছুটি ছিল। আওয়ামী লীগ সরকার এ ছুটি বাতিল করে। আওয়ামী শাসনামলে দিবসটি স্বচ্ছন্দে উদযাপনও করতে পারেনি দলটি। এবার দিনটিকে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের সব ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে। ঘোষণা করেছে ১০ দিনের কর্মসূচি। দিবসটি উপলক্ষ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পৃথক বাণী দিয়েছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই পটপরিবর্তনের পর রাষ্ট্রপতি জিয়ার নেতৃত্বে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব প্রভাবমুক্ত হয়ে শক্তিশালী সত্তা লাভ করে। গণতন্ত্র অর্গলমুক্ত হয়ে অগ্রগতির পথে এগিয়ে যায়। এই দিন থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের যাত্রা শুরু হয়। মানুষের মনে স্বস্তি ফিরে আসে।

সাবেক সেনাপ্রধান লে. জেনারেল মাহবুবুর রহমানের লেখা ‘কিছু স্মৃতি কিছু কথা’ বইয়ে তিনি উলে­খ করেন, ‘৭ নভেম্বর গোটা দেশজুড়ে সৈনিক-জনতার স্বতঃস্ফূর্ত এক অভূতপূর্ব উত্থান ঘটে। আর জেনারেল জিয়া সে অভ্যুত্থানের উত্তাল তরঙ্গমালার শৃঙ্গে আরোহণ করে উঠে আসেন জাতীয় নেতৃত্বে পাদপ্রদীপে।’ ৭ নভেম্বরের বিপ্লব সম্পর্কে তদানীন্তন দৈনিক বাংলার রিপোর্টে বলা হয়, ‘সিপাহি ও জনতার মিলিত বিপ্লবে চার দিনের দুঃস্বপ্ন শেষ হয়েছে। মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়েছেন। ৭ নভেম্বর ভোরে রেডিওতে ভেসে আসে, ‘আমি মেজর জেনারেল জিয়া বলছি।’ জেনারেল জিয়া জাতির উদ্দেশে ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে যথাস্থানে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান। ওইদিন রাজধানী ঢাকা ছিল মিছিলের নগরী। পথে পথে সিপাহি-জনতা আলিঙ্গন করে একে অপরকে। সাধারণ মানুষ সেনাবাহিনীর ট্যাঙ্কের নলে পরিয়ে দেন ফুলের মালা। এই আনন্দের ঢেউ রাজধানী ছাড়িয়ে দেশের সব শহর-নগর-গ্রামেও পৌঁছে যায়।’

বাণী : দিবসটি উপলক্ষ্যে এক বাণীতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, ৭ নভেম্বরের ঐতিহাসিক বিপ্লব অত্যন্ত তাৎপর্যমণ্ডিত। ৭ নভেম্বরের চেতনায় সব জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণতন্ত্রের পথচলাকে অবারিত এবং জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা এই মুহূর্তে অত্যন্ত জরুরি। পৃথক বাণীতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই মহান দিনে দেশবাসী সবাইকে আহ্বান জানাই, এখনো দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার চূড়ান্ত উত্তরণ হয়নি। অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন, নাগরিক স্বাধীনতা ও রাষ্ট্রের প্রতিটি সেক্টরে গণতান্ত্রিক চেতনার বিকাশ সাধন করতে হবে।

তিনি ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরে আমরা স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলাম, সেই একই চেতনা বুকে ধারণ করে বহুদলীয় গণতন্ত্র নিশ্চিত করা, স্বাধীনতার সুফল তথা অর্থনৈতিক মুক্তি, শান্তি-শৃঙ্খলা, সাম্য, ন্যায়বিচার ও মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।

কর্মসূচি : মহান জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষ্যে দশ দিনের কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। এ উপলক্ষ্যে বুধবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে বিএনপির উদ্যোগে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। আজ সকাল ৬টায় নয়াপল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং সারা দেশে দলীয় কার্যালয়গুলোতে দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল সাড়ে ১০টায় দলের সাবেক রাষ্ট্রপতি শহিদ জিয়াউর রহমান বীরউত্তমের মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ। এদিন জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) উদ্যোগে বিকাল ৪টায় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) গেটসংলগ্ন বহিরাংশে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। আগামীকাল ৮ নভেম্বর দুপুর ৩টায় ঢাকায় ও জেলায় জেলায় র‌্যালি এবং বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে আলোচনা সভা ও অন্যান্য কর্মসূচি পালন করবে। এছাড়া পোস্টার ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। দেশব্যাপী বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে স্থানীয় সুবিধা অনুযায়ী আলোচনা সভাসহ অন্যান্য কর্মসূচি পালনের কথা জানিয়েছে।

এদিকে এক বিবৃতিতে ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করার জন্য জামায়াতে ইসলামীর সব শাখা ও ছাত্র-জনতার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান। দিবসটি উপলক্ষ্যে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি এলডিপি, ১২ দলীয় জোটসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোও নানা কর্মসূচি পালন করবে।

বিনোদন

কালীপূজার রাতে প্রসাদ খাওয়ার পরই অসুস্থ বোধ করেন অভিনেত্রী অঙ্গনা রায়। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে অভিনেত্রীকে দক্ষিণ কলকাতার এক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

খাদ্যে বিষক্রিয়ার জেরেই অঙ্গনা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
অভিনেত্রীর মা লাজবন্তী রায়ও মেয়ের অসুস্থতার খবর নিশ্চিত করেছেন সংবাদমাধ্যমের কাছে।

হাসপাতাল থেকে অঙ্গনা জানান, কালীপূজার রাতে প্রসাদ খাওয়ার পর থেকেই অসুস্থবোধ করেন তিনি। বিষক্রিয়ার জেরে শরীরে রক্তচাপও কমে যায়। এমনিতেই তার রক্তচাপ একটু কমই থাকে। তবে এদিন শরীর বেশ দুর্বল হয়ে পড়ায় হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয় তাকে।

অভিনেত্রীর এমন মন্তব্য, প্রসাদ খাওয়ার ফলে যে এমন মারাত্মক পরিস্থিতি হতে পারে, তেমন ধারণা ছিল না। ডাক্তার বলেছেন, এটা ভীষণই কমন একটা ব্যাপার। আমার পাশের বেডে যিনি রয়েছেন, তিনিও প্রসাদে বিষক্রিয়ার জেরেই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে গত কয়েকদিনের তুলনায় এখন অনেকটাই ভালো রয়েছি। সব ঠিক থাকলে বুধবার হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাব।

চিকিৎসকের পরামর্শমতো বেশ কয়েকটি পরীক্ষা-নিরিক্ষাও আপাতত করাতে হবে অঙ্গনা রায়কে। সেগুলো ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে।

অর্থনীতি

বাংলাদেশের অন্যতম সমস্যা অর্থ পাচার। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মোটা অঙ্কের অর্থ পাচার হয়েছে। আর পাচারের অর্থ ফেরানো নতুন সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। তবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়তা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বিশ্বব্যাংক। প্রতিষ্ঠানটির মতে, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৪ শতাংশ। তবে সংস্কার কার্যক্রম সঠিকভাবে করতে পারলে ২০২৬ সালে তা ৫ শতাংশ ছাড়াবে।

বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক আলোচনা সভায় বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটানের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুলায়ে সেক এসব কথা বলেন। দেশের সাবেক কূটনৈতিকদের সংগঠন ‘অ্যাসোসিয়েশন অব ফরমার অ্যাম্বাসেডর (আওফা)’ এই আলোচনা সভার আয়োজন করে। আলোচনার বিষয় ছিল : ‘বাংলাদেশ-বিশ্বব্যাংক সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার উপায়।’ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের বিশেষ ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান। আওফার সভাপতি রাষ্ট্রদূত আব্দুল্লাহ আল হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক এএফএম গাউসূল আজম সরকার, ভাইস প্রেসিডেন্ট সাহেদ আখতার, সহকারী সাধারণ সম্পাদক মাশফি বিনতে শামস এবং রাষ্ট্রদূত রিয়াজ হামিদুল্লাহ প্রমুখ। এ সময়ে বক্তারা প্রকল্প অর্থায়নের পরিবর্তে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে বাজেট সহায়তা চেয়েছেন।

আবদুলায়ে সেক বলেন, বিশ্বব্যাংকের কাছে বাংলাদেশের পোর্টফোলিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শুরু থেকেই এ দেশকে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। বর্তমানে দেশটি কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি। এখানে বড় কয়েকটি সমস্যার মধ্যে অন্যতম দেশ থেকে অর্থ পাচার। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার পাচার করা টাকা ফিরিয়ে আনতে সহায়তা চেয়েছে। তবে এক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংক সহায়তা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ ব্যাপারে ইতোমধ্যে সরকারের প্রতিনিধি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কথা হয়েছে। সেখানে আমরা সহায়তা দেওয়ার কথা বলেছি। তবে অর্থ ফেরানো কঠিন। কারণ অনেক আইনকানুনের ব্যাপার রয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে অনেক কথা আছে। অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও তাদের পূর্বাভাস দিয়েছে। তবে আমাদের মতে, চলতি অর্থবছর অর্থাৎ ২০২৫ সালে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৪ শতাংশ। কিন্তু ইতোমধ্যে বাংলাদেশ বেশকিছু খাতে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। এই সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন হলে ২০২৬ সালে প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশ ছাড়াতে পারে।

চলতি অর্থবছরের বাজেটে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল সরকার।

সংস্কার ইস্যুতে এক প্রশ্নের জবাবে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর বলেন, অন্যান্য খাতের পাশাপাশি বাংলাদেশে বাণিজ্য খাতে সংস্কার খুব গুরুত্বপূর্ণ। সরকার চাইলে বিশ্বব্যাংক এখানেও সহায়তা দিতে পারে। রোহিঙ্গা সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই সমস্যাটির টেকসই সমাধান দরকার। আর এর টেকসই সমাধান হলো রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো। বিশ্বব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এ বিষয়ে কাজ করছে। এছাড়া সংস্থাগুলো তাদের সহায়তাও অব্যাহত রেখেছে। এই ইস্যুতে তারা বাংলাদেশের পাশে রয়েছে।

ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে ছাত্র-জনতা সম্মিলিতভাবে বিশাল ত্যাগের মাধ্যমে ৫ আগস্ট বড় একটি অর্জন করেছে। এটিকে আমরা ধরে রাখতে চাই। আমরা চাই আমাদের সেই অতীত, ভবিষ্যতে আর যাতে ফিরে না আসে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। স্বাধীনতার পর থেকে প্রতিষ্ঠানটি আমাদেরকে ৪৫ বিলিয়ন ডলার (এক বলিয়ন ডলার সমান ১২ হাজার কোটি টাকা) সহায়তা দিয়েছে। তবে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের দাতা নয়, উন্নয়ন অংশীদার। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অন্যতম সমস্যা বৈষম্য। দেশের নিম্ন আয়ের ৫ শতাংশ এবং উচ্চ আয়ের ৫ শতাংশের মধ্যে সম্পদের পার্থক্য বিশাল। বিশ্বব্যাংকও বিষয়টি বারবার বলে আসছে। আগস্টের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এটা আরও পরিষ্কারভাবে সামনে এসেছে। আরেকটি বিষয় হলো অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক নিয়ে সরকারের প্রকাশিত তথ্যের সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের তথ্যের পার্থক্য রয়েছে। এরমধ্যে জিডিপি প্রবৃদ্ধি, দারিদ্র্য বিমোচন এবং মূল্যস্ফীতি অন্যতম। তার মতে, বতর্মানে বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতির অন্যতম কারণ ডলারের দাম বেড়েছে। এর ফলে বেড়েছে আমদানি ব্যয়। ৩ বছর আগেও এক ডলারের দাম ছিল ৮৬ টাকা। বর্তমানে সেটি ১২০ টাকায় উন্নীত হয়েছে। এছাড়াও বর্তমানে বাংলাদেশের দরিদ্র মানুষের হার ৪ শতাংশ।

পাচারের অর্থ ফেরানোর ব্যাপারে তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে যেসব অর্থ বিদেশে পাচার হয়েছে, তা ফেরানো অত্যন্ত কঠিন। কারণ যে সব দেশে গেছে, ওই দেশের আইনকানুন, আন্তর্জাতিক আইন এবং তদন্ত প্রক্রিয়া এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু বিশ্বব্যাংক চাইলে তা সম্ভব। কারণ তাদের তদন্ত সক্ষমতা এবং ফরেনসিক সাপোর্টসহ সব ধরনের সক্ষমতা আছে। ড. মোস্তাফিজ বলেন, বাংলাদেশের আরেকটি বড় সমস্যা অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ একেবারে কম। বর্তমানে দেশের রাজস্ব আয় জিডিপির ৮ দশমিক ২ শতাংশ। এর মধ্যে প্রত্যক্ষ আয় এক-তৃতীয়াংশ। আর বাকি দুই-তৃতীয়াংশই পরোক্ষ আয়। তিনি বলেন, দেশে যে পরিমাণ রাজস্ব আয় হয়, পুরোটাই রাজস্ব ব্যয়। অর্থাৎ রাজস্ব আয়ের পুরো টাকাই সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতায় চলে যায়। আর উন্নয়নের অর্থ পুরোটাই ঋণ করে আনতে হয়। ফলে এই উন্নয়ন টেকসই নয়। এ অবস্থার উন্নয়নে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। সংস্কারের ব্যাপারে তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কারে ব্যাপক গুরুত্ব দিয়েছে। ইতোমধ্যে বড় ৬টি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে। এছাড়া ব্যাংকিং খাতে টাস্কফোর্স এবং শ্বেতপত্র প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছে। তবে সংস্কারের জন্য অর্থ এবং কারিগরি সহায়তা জরুরি। এক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংক সহায়তা দিতে পারে। তবে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে প্রকল্প সহায়তার পরিবর্তে বাজেট সাপোর্টে জোর দেন তিনি। তার মতে, বর্তমানে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকটে রয়েছে। বাজেট সহায়তা পেলে রিজার্ভ বাড়বে। অর্থনীতির অন্যান্য সূচকেও এর প্রভাব পড়বে। এছাড়াও বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে সুনির্দিষ্ট সহায়তা চেয়েছেন তিনি। সিপিডির এই বিশেষ ফেলো বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের আদানি গ্র“পের কাছ থেকে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ আমদানি নিয়ে একটি জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। কেউ কেউ বিদ্যুতের দাম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তবে ভবিষ্যতে তাদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি করলে অন্যান্য দেশের সঙ্গে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতের দাম নিয়ে তুলনা করা যেতে পারে। কিন্তু আগে যে চুক্তি করা হয়েছিল, আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে সেই বিল পরিশোধ না করার বিকল্প নেই।

রাজনীতি

দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে অন্তর্র্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ করে দিতে পলাতক স্বৈরাচারের দোসরদের ষড়যন্ত্র থেমে নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, মাফিয়া সরকার বিনা ভোটে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার সময়ে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে জঙ্গি রাষ্ট্র হিসাবে পরিচিত করার অপকৌশলে লিপ্ত ছিল। ক্ষমতা হারিয়ে ৫ আগস্টের অপশক্তি এখনো আবার বিশ্বে বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসাবে পরিচিত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। পরাজিত অপশক্তির ষড়যন্ত্র রুখে দিতে অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের পাশাপাশি অবশ্যই বাংলাদেশের পক্ষের সব শক্তিকে সজাগ এবং সতর্ক থাকতে হবে।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, এই সরকারের মেয়াদ ৩ মাস পূর্ণ হতে যাচ্ছে। একটি সরকারের সাফল্য কিংবা ব্যর্থতা মূল্যায়নের জন্য ৩ মাস যথেষ্ট সময় নয়। কিন্তু মনে রাখা দরকার, বাজারে দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে যুদ্ধ করতে গিয়ে প্রতিদিন জনগণকে হার মানতে হয়। ৩ মাস সময় তাদের (জনগণ) কাছে মনে হতে পারে ৩ বছরের সমান। বিশেষ করে কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুর ও স্বল্প আয়ের মানুষের প্রতিদিনের দুঃখ-দুর্দশা লাগব করতে কঠোর হাতে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত জরুরি। দ্রব্যমূল্য জনগণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আনতে ব্যর্থ হলে অন্তর্র্বর্তী সরকারের সব কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।

বুধবার বিকালে রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষ্যে আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সভায় একটি ডকুমেন্টারি দেখানো হয়। বিএনপির পক্ষ থেকে একটি বইও প্রকাশ করা হয়। দেশ ও জনগণের স্বাধীনতা রক্ষা করতে হলে জাতীয়তাবাদী শক্তির বৃহৎ ঐক্যের বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেন তারেক রহমান। সংস্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাষ্ট্র মেরামত তথা প্রচলিত বিধিবিধান সংস্কারের জন্য অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার কার্যক্রম শুরু করেছে। সংস্কার একটি ধারাবাহিক ও চলমান প্রক্রিয়া। যা এরই মধ্যে বিভিন্ন সময় বিএনপি ও সমাজের বহু মানুষ উল্লেখ করেছেন। বিএনপি সংস্কারের পক্ষে, তবে রাষ্ট্রীয় কিংবা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের প্রথাগত সংস্কারের চেয়ে জনগণের রাজনীতিক ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে রাজনীতি, রাজনৈতিক দল ও কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে গুণগত পরিবর্তন সংস্কার বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনায় শেষ পর্যন্ত রাজনীতিকদের দ্বারাই রাষ্ট্র পরিচালিত হয়। বর্তমান সংবিধানে আছে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হতে হবে। সংবিধানে লেখা থাকার পরেও মাফিয়া সরকার মানেনি। গত ১৫ বছর জনগণের ভোট ছাড়াই, তথাকথিত জনপ্রতিনিধিকে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছে। দেশের সর্বোচ্চ আদালতকে প্রকাশ্যে ফ্যাসিবাদের পক্ষ অবলম্বন করতে দেখা গেছে। এজন্য জনগণের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন প্রয়োজন।

অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, দেশে জনগণের আদালত এবং রাষ্ট্রীয় আদালত তথা বিচার বিভাগ শক্তিশালী ও স্বাধীন থাকলে ফ্যাসিবাদ কখনোই জনগণের স্বাধীনতা, ভোটের অধিকার কেড়ে নিতে সক্ষম হবে না। জনগণের আদালত কিন্তু মব জাস্টিজ নয়, এর অর্থ কোনো ব্যক্তি কিংবা রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাবান কিংবা ক্ষমতাহীন করার চূড়ান্ত ক্ষমতা জনগণের হাতে ন্যস্ত থাকা। রাষ্ট্রে রাজনীতিক বন্দোবস্ত এমন হওয়া প্রয়োজন যেখানে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শুরু করে জাতীয় সংসদ, যে পর্যায়ের প্রতিনিধি হোক না কেন, নাগরিকদের প্রত্যক্ষতা ছাড়া কোনোভাবেই একজন ব্যক্তি বা রাজনৈতিক কর্মী জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হতে সক্ষম হবেন না। এমনকি রাজনৈতিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা গেলে নিশিরাতের আয়োজন কিংবা ডামি প্রার্থী হিসাবে জনপ্রতিনিধি হওয়ার পথ স্বাভাবিকভাবে রুদ্ধ হয়ে যাবে।

তারেক রহমান বলেন, কোনো ব্যক্তি বা রাজনৈতিক কর্মী জনপ্রতিনিধি হতে চাইলে জনগণের বিশ্বাস এবং ভালোবাসা অর্জন করে ভোটের জন্য জনগণের কাছে যেতে হবে। প্রার্থীকে জনগণের আদালতে দ্বারস্থ হতে হবে। বিজয়ের জন্য জনগণের আদালতের রায় পেতে হবে। একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসাবে বিশ্বাস করি, রাষ্ট্রে জনগণের আদালত ও রাষ্ট্রীয় আদালত এই দুটি কার্যক্রম শক্তিশালী করা গেলে রাষ্ট্রীয় ও রাজনীতির উল্লেখযোগ্য সংস্কার নিশ্চিত করা যাবে। জনগণের ভোট প্রয়োগের অধিকার নিশ্চিত করা গেলে কোনো রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তিকে নিষিদ্ধ কিংবা প্রশ্নবিদ্ধ করার মতো অপ্রিয় কাজের দ্বায় রাষ্ট্রকে বহন করতে হবে না। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের সংস্কার কার্যক্রমের পাশাপাশি অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন কার্যক্রম শুরু করেছে। জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন তথা জনগণের লুণ্ঠিত ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের যাত্রাপথের এটি একটি শুরু মাত্র। সংস্কার কার্যক্রম এবং নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের ধারাবাহিকতা যথানিয়মে নির্বাচনি কার্যক্রম শুরু হবে।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, জনগণের বিশ্বাস ভালোবাসা অর্জন করুন। জনগণের সঙ্গে থাকুন, সঙ্গে রাখুন। জনগণ পছন্দ করেন না এমন কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখুন।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ৭ নভেম্বর শুধু একটি দিন নয়, দিবস নয়। ৭ নভেম্বর দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করেছিল। নতুন সত্তা পেয়েছিল। নতুন ইতিহাসের সূচনা হয়েছিল। সেই ইতিহাসের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। ২৪-এর ৫ আগস্ট আরেকটি বিপ্লব ও অভ্যুত্থান ঘটেছে। পরাজিত করেছে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে (শেখ হাসিনা)। ফ্যাসিবাদের কবল থেকে মুক্ত হয়েছি। এখন ভবিষ্যতে সতর্কতার সঙ্গে পার হতে পারে। অন্তর্বর্তী সরকার অতি অল্প সময়ে মধ্যে প্রয়োজনীর সংস্কার শেষে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করবে। জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠিত করতে তারা সাহায্য করবে। নির্বাচন ইস্যুতে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে। তিনি অতি দ্রুত সেই সংস্কারগুলো করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দেবেন এবং জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠা করবেন বলে প্রত্যাশা করি।

স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা দিতে হবে। অন্যথায় আমরা রাজপথে ছিলাম, আছি। আমরা মাঠ ছাড়িনি। স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আজকে আবার সেই গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তনের সম্মুখীন হয়েছি। গণতন্ত্রের পথে যে লক্ষ্য তার সম্মুখীন হয়েছি। যুগপৎ আন্দোলনের দলগুলোকে নিয়ে তারেক রহমানের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনকে আবারও সফল করতে হবে। নতুন করে আর বয়ান শুনতে চাই না। আমরা গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে চাই। স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, শক্তিশালী সমাজ বিনির্মাণের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কারের কথা বলছে। সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন সংস্কারের মধ্যে দিয়ে যাবে। সেই সংস্কারকে বর্তমান সরকারের কাছে যদি হয় একমাত্র কর্তব্য তাহলে ভুল হবে। স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। সরকার চাইলে মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচন দিতে পারে। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় সরকার এখনো নির্বাচনের রোডম্যাপ দেয়নি। নির্বাচন কমিশন গঠন করেনি। নির্বাচিত সরকারই পারে সংবিধান সংশোধন করতে।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে এবং প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্যে দেন স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মির্জা আব্বাস, অর্থনীতিবিদ ড. মাহবুব উল্লাহ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কামরুল আহসান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, কেন্দ্রীয় নেতা আহমেদ আযম খান, আবদুস সালাম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের রফিকুল আলম মজনু, উত্তরের আমিনুল হক, যুবদলের আব্দুল মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানী, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, ছাত্রদলের রাকিবুল ইসলাম রাকিব প্রমুখ। এছাড়া সভায় বিএনপি এবং এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

খেলাধুলা

২৩৬ রানের লক্ষ্যটা একদিনের ক্রিকেটে আহামরি কিছু নয়। তবে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের এমনই দশা-এই রান করতেই ত্রাহি অবস্থা। আফগান স্পিনারদের সামনে অসহায় আত্মসমর্পণে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ৯২ রানে হেরেছে বাংলাদেশ।

অথচ শারজা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে রানতাড়ায় বাংলাদেশের শুরুটা মন্দ ছিল না। একসময় ১২০ রানে দুই উইকেট তুলে ফেলেছিল নাজমুল হোসেন শান্তর দল। ক্রিজে অধিনায়ক নিজে ছিলেন, মেহেদী হাসান মিরাজ তাকে সঙ্গ দিচ্ছিলেন।

কিন্তু সেখান থেকেই ধসের শুরু। দলীয় রান যখন ১২০, তখন মোহাম্মদ নবীর বলে প্যাডল সুইপের চেষ্টা করেন শান্ত। কিন্তু টাইমিংয়ের গরমিলে তাকে শর্ট ফাইন লেগে হাশমতউল্লাহ শহীদির ক্যাচ হতে হয়। ৪৭ রানে সাঙ্গ হয় তার ইনিংস। শেষ পর্যন্ত এটাই হয়ে থাকে দলীয় সর্বোচ্চ ইনিংস।

শান্ত ফেরার পর মিরাজ, মাহমুদউল্লাহ, মুশফিকুর রহিমের মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটাররা একে একে নিজেদের উইকেট বিলিয়ে দেন। ব্যাটিং অর্ডারের শেষ ছয় ব্যাটার মিলে সাকুল্যে করেন ৭ রান।

আফগান বোলারদের মধ্যে নিজের ষষ্ঠ ওয়ানডে খেলতে নেমে ৬ উইকেট তুলে নেন অফ স্পিনার এএম গাজানফার। তানজিদ তামিমকে ফিরিয়ে শুরু করেন এই স্পিনার, আর শেষটা শরিফুল ইসলামের স্টাম্প গুঁড়িয়ে দিয়ে।

এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় আফগানিস্তান। মোস্তাফিজুর রহমান-তাসকিন আহমেদের পেস তোপে ৭১ রানেই পাঁচ উইকেট হারিয়ে বসেছিল তারা।

তবে ষষ্ঠ উইকেটে ১০৪ রানের জুটি গড়ে আফগানদের চাপমুক্ত করেন অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার মোহাম্মদ নবী ও অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহীদি। ৪ চার ও ৩ ছক্কায় ৮৪ রান করেন নবী, শহীদির ব্যাটে আসে ৫২ রান।

বাংলাদেশের পক্ষে সমান চারটি করে উইকেট শিকার করেন মোস্তাফিজ ও তাসকিন।

আগামী ৯ নভেম্বর দ্বিতীয় ওয়ানডে এখন বাংলাদেশের জন্য সিরিজ বাঁচানোর লড়াই।

সংক্ষিপ্ত স্কোর: 

আফগানিস্তান: ৪৯.৪ ওভারে ২৩৫ (গুরবাজ ৫, সেদিকউল্লাহ ২১, রেহমাত ২, শাহিদি ৫২, ওমারজাই ০, নাইব ২২, নাবি ৮৪, রাশিদ ১০, খারোটে ২৭*, ফাজানফার ০, ফারুকি ০; শরিফুল ৯.৪-০-৩৪-১, তাসকিন ১০-০-৫৩-৪, মুস্তাফিজ ১০-০-৫৮-৪, মিরাজ ১০-০৩০-০, রিশাদ ৮-০-৪৪-০, মাহমুদউল্লাহ ২-০-১১-০)

বাংলাদেশ: ৩৪.৩ ওভারে ১৪৩ (তানজিদ ৩, সৌম্য ৩৩, শান্ত ৪৭, মিরাজ ২৮, হৃদয় ১১, মাহমুদউল্লাহ ২, মুশফিক ১, রিশাদ ১, তাসকিন ০, শরিফুল ১, মুস্তাফিজ ৩*; ফারুকি ৪-০-২২-০, গাজানফার ৬.৩-১-২৬-৬, নাবি ৪.২-০-২৩-১্, ওমারজাই ৪.৪-০-১৬-১, নাইব ১-০-৯-০, রাশিদ ৮-০-২৮-২, খারোটে ৬-০-১৬-০)

আন্তর্জাতিক

বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী কমলা হ্যারিসের পর ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নির্বাচনে জয়ের জন্য অভিনন্দন জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও। খবর এপি’র।

ফোনকলের মাধ্যমে ট্রাম্পকে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়ে আলাপের জন্য হোয়াইট হাউজে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট।

হোয়াইট হাউজের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শিগগিরই হোয়াইট হাউজে ট্রাম্প-বাইডেন বৈঠকের দিনক্ষণ জানানো হবে।

এদিকে নির্বাচনের পর বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে বাইডেনের।

২০২০ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পকে হারিয়েই হোয়াইট হাউজে জায়গা করে নিয়েছিলেন বাইডেন। এবারের নির্বাচনেও ট্রাম্পের বিরুদ্ধে তার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা ছিল, তবে ট্রাম্পের সঙ্গে বিতর্কে হতাশাজনক পারফরম্যান্সের পর দলের পরামর্শে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান তিনি।

নির্বাচনে বাইডেনের বদলে ডেমোক্রেটদের প্রার্থী হন বর্তমান সরকারে তার ডেপুটি কমলা হ্যারিস। তবে ট্রাম্পের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পেরে উঠলেন না তিনি। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ৫৩৮টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটের মধ্যে ২৯২টিই গিয়েছে ট্রাম্পের পকেটে, ২২৪ ভোট পেয়েছেন কমলা। প্রেসিডেন্ট হতে অবশ্য ২৭০ ভোটই যথেষ্ট।