অর্থনীতি

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) শিল্পবান্ধব সহায়ক নীতি ও কর সহায়তাকে দেশীয় শিল্পোদ্যাক্তারা সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে দেশের ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তিপণ্য শিল্পখাতকে এগিয়ে নিয়েছে উৎপাদনশীলতার দিকে। এতে বিকশিত হয়েছে ফ্রিজ, এসি, টিভির মতো ইলেকট্রনিক্স পণ্যের পুরোপুরি উৎপাদনমুখী দেশীয় শিল্পখাত।

শুধু তাই নয়, দেশীয় রেফ্রিজারেটর, ফ্রিজার ও এয়ার কন্ডিশনার উৎপাদনখাতের শিল্পোদ্যাক্তারা বিশাল অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করে কারখানায় ব্যাপক পরিসরে অত্যাধুনিক সব মেশিনারিজ স্থাপনের মাধ্যমে আনুষঙ্গিক প্রায় সব উপকরণ ও খুচরা যন্ত্রাংশ এখন দেশেই তৈরি করছে। তারপরেও উৎপাদনমুখী স্থানীয় ফ্রিজ ও এসি শিল্পে তৈরি করা সমজাতীয় উপকরণ ও খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানির ক্ষেত্রে সমুদয় সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার করেছে এনবিআর।

শিল্পখাত সংশ্লিষ্টদের মতে, এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ফলে স্থানীয় ইলেকট্রনিক্স উৎপাদন শিল্পে দেশীয় শিল্পোদ্যাক্তাদের বিদ্যমান কয়েক হাজার কোটি টাকার বিশাল বিনিয়োগই শুধু নয়, লক্ষাধিক লোকের কর্মসংস্থানও ঝুঁকির সম্মুখীন হবে। বাধাগ্রস্ত হবে সম্পূর্ণ উৎপাদনমুখী দেশীয় ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তিপণ্য শিল্পখাতের টেকসই বিকাশ। ইলেকট্রনিক্সখাতে উদ্ভাবনী ও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতায় বাংলাদেশের অগ্রগতি থমকে যাবে। তৈরি হয়েছে উৎপাদন শিল্পের আড়ালে আমদানি নির্ভর সংযোজন শিল্প বিকাশের পথ।

২৭ মে মাসে দেশীয় রেফ্রিজারেটর, ফ্রিজার ও এয়ার কন্ডিশনার উৎপাদন শিল্পে ব্যবহৃত প্রয়োজনীয় যেসব উপকরন ও খুচরা যন্ত্রাংশ দেশে উৎপাদিত হয় না সেসব পণ্য আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার করে প্রজ্ঞাপন (এস.আর.ও. নং-১৭৬-আইন/২০২৫/৩০৪-মূসক) জারি করে এনবিআর।

এই শুল্ক নীতিমালাকে সাধুবাদ জানান দেশীয় ফ্রিজ ও এসি উৎপাদন খাতের শিল্পোদ্যাক্তারা।

কিন্তু ২৪ জুনের আগের ওই এস.আর.ও এর সংশোধনী আরেকটি এস.আর.ও নং-২৭৪-আইন/২০২৫/৩১৭-মুসক জারি করেছে এনবিআর।

সংশোধিত ওই এস.আর.ও তে ৮৪ দশমিক ১৮ শিরোনাম সংখ্যার অধীনে এইচ.এস কোড: ৮৪১৮ দশমিক ৯৯ দশমিক শূন্যের আওতায় দেশীয় রেফ্রিজারেটর ও ফ্রিজার উৎপাদন শিল্পে ব্যবহৃত উপকরণ ও খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহারের তালিকায় বর্তমানে দেশে উৎপাদিত হচ্ছে, এমন বেশ কয়েকটি নতুন যন্ত্রাংশ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে থাকছে, স্টোপার ব্লক, ডিয়োডোরেন্ট ব্লক, পিপি বটম প্লেট, ক্রিস্পার কভার, ড্রেইনেজ পাইপ কভার, কভার অফ কম্প্রেসার হাউজ, সাপোর্ট অব ক্রিস্পার কভার, কটন প্যাড ফর শেলফ, রেফ্রিজারেটর/ফ্রিজার শেলফ, পিপি বেল্ট এবং ডাম্পিং ব্লক।

এ ছাড়া শিরোনাম সংখ্যা ৮৫ দশমিক ৩৬ এর অধীনে এইচ.এস কোড- ৮৫৩৬ দশমিক ৬১ দশমিক শূন্যের অধীনে লাইট হোল্ডার যন্ত্রাংশ আমদানিতেও সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে।

ফ্রিজের পাশাপাশি দেশীয় এয়ার কন্ডিশনার উৎপাদন শিল্পের ক্ষেত্রেও শিরোনাম সংখ্যা ৮৪ দশমিক ১৫ এর অধীনে এইচ.এস. কোড- ৮৪১৫ দশমিক ৯০ দশমিক ৯০ এর আওতায় দেশে উৎপাদিত হচ্ছে এমন বেশ কয়েকটি উপকরণ ও খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানির ক্ষেত্রেও সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ফ্যান ব্লোয়ার, কানেকটিং পাইপ, এক্সিয়াল ফ্যান, ক্যাসিং ফর ইনডোর, এয়ার গাইড প্লেট, টিউব প্লেট, এয়ার ফিল্টার, আইডিইউ প্যানেল, ডিস্ট্রিবিউশন পাইপ এবং ক্রস ফ্লো ফ্যান।

ফ্রিজ ও এসি উৎপাদন শিল্পখাতের সংশ্লিষ্টরা জানান, সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার তালিকায় সংশোধিত এস.আর.ও তে রেফ্রিজারেটর, ফ্রিজার ও এসির যেসব উপকরণ ও খুচরা যন্ত্রাংশ নতুনভাবে যুক্ত করা হয়েছে তার প্রত্যেকটি পণ্যেই এখন দেশীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো তৈরি করছে। যদিও সংশোধনীর আগে জারি করা প্রথম এস.আর.ও এর শর্তাবলিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ফ্রিজ ও এসি সংযোজনকারী প্রতিষ্ঠান খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহারের এই সুবিধা পাবে না।

এ খাতের দেশীয় শিল্পোদ্যাক্তাদের প্রশ্ন, যেসব দেশীয় ফ্রিজ ও এসি প্রতিষ্ঠান আমদানি বিকল্প উপকরণ ও খুচরা যন্ত্রাংশ তৈরি করছে ও উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় মেশিনারিজ এবং প্ল্যান্টস রয়েছে তবে কেন এবং কাদের স্বার্থে ওইসব যন্ত্রাংশ আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার করা হলো? এই শুল্ক নীতিমালা দেশীয় ফ্রিজ, এসি উৎপাদন শিল্পের জন্য কতটুকু সহায়ক? এই সিদ্ধান্তে এ খাতে খুচরা যন্ত্রাংশের আমদানি কি বাড়বে না? উৎপাদন শিল্পের আড়ালে কি সংযোজন শিল্প বিকাশের পথ তৈরি হয়নি? এসব বিষয়গুলো গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে স্থানীয় ফ্রিজ, এসি উৎপাদন শিল্পের তৈরি করা সমজাতীয় উপকরণ ও খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহারের সুবিধা বাতিল করার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছে আহ্বান জানাচ্ছেন দেশীয় শিল্পোদ্যোক্তারা।

শিল্প বিশেষজ্ঞদের মতে, ফিনিশড গুডসের পাশাপাশি আনুষঙ্গিক উপকরণ ও খুচরা যন্ত্রাংশ তৈরিতে দেশীয় শিল্পকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যেই তো এত দিন ওইসব পণ্য আমদানিতে নিয়ন্ত্রণমূলক সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশীয় ফ্রিজ, এসি উৎপাদন শিল্পের উদ্যোক্তারা বিশাল অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করে অত্যাধুনিক মেশিনারিজ ও প্রোডাকশন প্ল্যান্টস আনুষঙ্গিক প্রায় সব খুচরা যন্ত্রাংশ তৈরি করছে।

এ খাতে প্রচুর লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। দেশীয় শিল্পোদ্যাক্তাদের এই বিশাল বিনিয়োগ সুযোগ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ প্রসারিত করতে যেখানে সরকারের উচিৎ স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত সমজাতীয় খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানিতে নিয়ন্ত্রণমূলক সম্পূরক শুল্কের হার আরও বাড়ানো; তার পরিবর্তে উল্টো সম্পূরক শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করেছে। কোনো যুক্তিতে এবং কাদের স্বার্থে দেশীয় শিল্প বিকাশের পরিপন্থি, এমন এক আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো।

উপকরণ ও খুচরা যন্ত্রাংশ তৈরির প্রয়োজনীয় মেশিনারিজ ও প্রোডাকশন প্ল্যান্টস থাকা সত্ত্বেও যেসব প্রতিষ্ঠান ওইসব পণ্য আমদানি করবে তাদের সঙ্গে সংযোজনকারী প্রতিষ্ঠানের আর কোনো পার্থক্যেই থাকবে না।

তাদের আশঙ্কা, এত দিন যেসব দেশীয় উৎপাদকরা ফ্রিজ ও এসির আনুষঙ্গিক উপকরণ ও খুচরা যন্ত্রাংশ তৈরি করে আসছে, সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার করায় তাদের কাছে ওইসব যন্ত্রাংশ উৎপাদনের চেয়ে বরং আমদানি করাই বেশি লাভজনক হয়ে উঠবে। তাই তারা এখন আমদানি প্রতি ঝুঁকবেন। ফলে বাড়বে আমদানি ব্যয়, চাপে পড়বে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ।

এ ছাড়া এ খাতের খুচরা যন্ত্রাংশ উৎপাদনেও আসবে না নতুন কোনো বিনিয়োগ। ফলে শুধু এ খাতের ভবিষ্যত বিনিয়োগই নয়, কর্মসংস্থান সৃষ্টির পথও সংকুচিত হবে। তাই দেশীয় প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে ফ্রিজ ও এসির যেসব খুচরা যন্ত্রাংশ তৈরি হচ্ছে সেসব পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহারের বিষয়টি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের গুরুত্ব সহকারে পুনর্বিবেচনা করে তা বাতিল করা উচিৎ বলে অভিমত জানিয়েছেন শিল্প সংশ্লিষ্টরা।

দেশীয় শিল্প সংশ্লিষ্টদের অভিমত, দেশীয় উৎপাদনমুখী ইলেকট্রনিক্স শিল্পখাতের টেকসই বিকাশের স্বার্থে এবং এ খাতের দেশীয় শিল্পোদ্যোক্তাদের বিশাল বিনিয়োগ সুরক্ষা নিশ্চিতকল্পে ফ্রিজ, এসির যেসব খুচরা যন্ত্রাংশ এখন দেশেই উৎপাদিত হচ্ছে সেসব আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক অব্যাহতির সুবিধা বাতিল করে আগের মতো সন্তোষজনক হারে সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা অত্যন্ত জরুরি।

আন্তর্জাতিক

তুরস্ক আবারও যুক্তরাষ্ট্রের এফ-৩৫ জয়েন্ট স্ট্রাইক ফাইটার প্রোগ্রামে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। আর এজন্য সম্ভবত রাশিয়ার এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে তারা বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

গত সপ্তাহে হেগে অনুষ্ঠিত ন্যাটো সম্মেলনে আঙ্কারা জানায়, তারা আবারও এফ-৩৫ জেট প্রকল্পে যোগ দিতে ইচ্ছুক এবং যুক্তরাষ্ট্র এ ঘোষণায় ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। সম্মেলনে তুরস্ক তাদের বহুস্তরবিশিষ্ট আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘স্টিল ডোম’ সম্প্রসারণের ঘোষণা দিয়েছে যেখান থে কে বাদ পড়তে যাছে রাশিয়ান এস-৪০০ সিস্টেম।

সম্মেলন শেষে বিমানযাত্রায় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেন, ‘স্টিল ডোম’ একটি একক ব্যবস্থা নয়, বরং এটি একটি বহুস্তরবিশিষ্ট প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যা ক্ষেপণাস্ত্র হুমকি মোকাবেলায় কার্যকর প্রতিরক্ষা দেবে।

যদিও ‘স্টিল ডোম’ বেশ কিছুদিন ধরেই পরিকল্পনায় রয়েছে, কিন্তু সম্প্রতি মে মাসে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ এবং ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ আবারও দেখিয়ে দিয়েছে, একটি শক্তিশালী আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা একটি দেশের নিরাপত্তার জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

তুরস্কের ‘স্টিল ডোম’ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-নির্ভর, সম্পূর্ণ একীভূত নেটওয়ার্ক, যা দেশীয় অস্ত্র ও সেন্সরগুলোর মধ্যে তাৎক্ষণিক তথ্য আদান-প্রদান নিশ্চিত করবে। তবে ২০১৯ সালে কেনা রাশিয়ান এস-৪০০ মিসাইল সিস্টেমটি এই ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়নি। বিশ্লেষকদের মতে, এস-৪০০ একটি বিদেশি প্রযুক্তি হওয়ায় এটি স্টিল ডোমের তথ্য বিনিময় প্রক্রিয়ায় অন্তরায় হতে পারে।

তবে তুরস্কের নতুন ‘স্টিল ডোম’ আকাশ প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্ক থেকে ২.৫ বিলিয়ন ডলারের রুশ নির্মিত এস-৪০০ মিসাইল সিস্টেমকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তটিকে অনেকেই যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন এফ-৩৫ ফাইটার জেট প্রোগ্রামে পুনরায় যুক্ত হওয়ার একটি কৌশলগত পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন।

হেগে অনুষ্ঠিত ন্যাটো সম্মেলনের পর তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান জানিয়েছেন, তুরস্ক এখনো এফ-৩৫ প্রকল্পে ফেরার আগ্রহ হারায়নি এবং এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রযুক্তিগত পর্যায়ের আলোচনা শুরু হয়েছে। তিনি আরও জানান, সম্মেলনের ফাঁকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গেও এই বিষয়ে ব্যক্তিগতভাবে আলোচনা হয়েছে।

২০১৯ সালে এফ-৩৫ প্রোগ্রাম থেকে তুরস্কের বহিষ্কারের পাঁচ বছর পরেও, তুরস্কের এ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ (টুসাস) এখনও সংবেদনশীল এফ-৩৫ উৎপাদন সরঞ্জাম সংরক্ষণ করছে। বহিষ্কারের আগে, টুসাস এফ-৩৫ ফাইটারের ফিউজেলাজ বা মাঝের অংশ তৈরি করত, যার উৎপাদন ২০২২ পর্যন্ত চালু ছিল। ২০২৩ সালে, এফ-৩৫ ফাইটারের মূল প্রতিষ্ঠান নর্থরপ গ্রুম্যান জার্মানির রেইনমেটাল কোম্পানির সঙ্গে অংশীদারিত্ব করে জার্মানির উইজে শহরে একটি নতুন অ্যাসেম্বলি লাইন স্থাপন করছে যা ২০২৫ সালের মাঝামাঝি চালু হওয়ার কথা। তুরস্কের কোম্পানিগুলো আগে এফ-৩৫ এর ১,০০০-এর বেশি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান সরবরাহ করত।

এদিকে, মার্কিন রাষ্ট্রদূত টম ব্যারাক ২৯ জুন জানান, এস-৪০০ কেনার কারণে তুরস্কের প্রতিরক্ষা খাতে যুক্তরাষ্ট্র যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল তা ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ তুলে নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধানেরা তাদের শীর্ষ কূটনীতিকদের বিষয়টি সমাধানের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।

সব কিছু বিবেচনায় দেখা যাচ্ছে তুরস্ক বছরের শেষ নাগাদ আবারও এফ-৩৫ প্রোগ্রামে যুক্ত হতে পারে, আর এস-৪০০ হয়তো কোনো তৃতীয় দেশকে বিক্রি করে দেওয়া হবে অথবা চিরতরে নিষ্ক্রিয় অবস্থায় তুরস্কে পড়ে থাকবে।

তুরস্কের সাবেক প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হুলুসি আকার নিশ্চিত করেছেন, এস-৪০০ এখনো সক্রিয় নয় এবং একটি অজ্ঞাত স্থানে সংরক্ষিত রয়েছে। সাবেক মন্ত্রী চাভিত চাগলার এই এস-৪০০ বিক্রি করে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন, যেখানে পাকিস্তান বা ভারতকে সম্ভাব্য ক্রেতা হিসেবে উল্লেখ করেন, যদিও এ বিষয়ে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

সবমিলিয়ে আঙ্কারা এখন নিজস্ব প্রযুক্তিনির্ভর, বহুস্তরবিশিষ্ট আকাশ প্রতিরক্ষা কৌশল বাস্তবায়নের পথে এগোচ্ছে, যেখানে এস-৪০০ এর ব্যবহার হচ্ছে না বলেই আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

বিনোদন

বলিউড সিনেমার ইতিহাসে চিরন্তন এক নাম ‘শোলে’। ১৯৭৫ সালে মুক্তি পাওয়া রমেশ সিপ্পির এই কালজয়ী সিনেমা শুধু এক দশক নয়, পেরিয়ে এসেছে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম। ‘জয়-বীরু’, ‘ঠাকুর’, ‘গব্বর’ কিংবা ‘সুন্নি’র মত চরিত্র ও সংলাপ আজও মানুষের মুখে মুখে ফেরে।

চলতি বছর সিনেমাটির মুক্তির ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ইতালির বোলোনিয়া শহরে ‘ইল সিনেমা রিট্রোভাতা’ উৎসবে ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হচ্ছে ‘শোলে’র নতুন ‘আনকাট’ সংস্করণ। এই সংস্করণে থাকবে সেই আসল সমাপ্তি, যা এক সময় সেন্সর বোর্ডের আপত্তিতে বাদ দেওয়া হয়েছিল।

সেন্সরে কাটা সেই দৃশ্য ফিরল

মূল সংস্করণে ছিল ডাকাত গব্বর সিংয়ের মৃত্যুদৃশ্য—ঠাকুর তার কাঁটা লাগানো জুতা দিয়ে পিষে হত্যা করেন গব্বরকে। কিন্তু সেন্সর বোর্ড এই দৃশ্য ‘অত্যন্ত নিষ্ঠুর’ এবং ‘আইন হাতে তুলে নেওয়ার দৃষ্টান্ত’ বলে তা বাদ দিতে বলে। তখনকার জরুরি অবস্থার সময় সেন্সর বোর্ড ছিল বেশ কঠোর। বাধ্য হয়ে পরিচালক সিপ্পি সমাপ্তি দৃশ্য নতুন করে ধারণ করেন, যেখানে গব্বরকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

শোলে’র মূল ৭০ মিমি প্রিন্ট ও নেগেটিভ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সিনেমাটির পূর্ণ সংস্করণ ফিরিয়ে আনতে তিন বছর লেগেছে। রমেশ সিপ্পির ছেলে শেহজাদ সিপ্পি ফিল্ম হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, মুম্বাইয়ের একটি গুদামে পুরনো কৌটায় কিছু ক্যামেরা ও সাউন্ড নেগেটিভ পাওয়া গেছে। সেগুলোর সঙ্গে যুক্তরাজ্য ও ইতালি থেকে উদ্ধার করা রিল জুড়ে তৈরি করা হয় পূর্ণ সংস্করণ। পুনরুদ্ধারে সহায়তা করেছে লা ইমাজিনে রিট্রোভাতা, বিশ্বের অন্যতম সেরা ফিল্ম রিস্টোরেশন কেন্দ্র।

প্রথম সপ্তাহে ‘শোলে’র প্রতিক্রিয়া ভালো ছিল না। দর্শকেরা চুপচাপ বসে থাকতেন, সমালোচকেরাও বলেছিলেন সিনেমাটি ব্যর্থ। ইন্ডিয়া টুডে ম্যাগাজিন একে বলেছিল ‘নিভে যাওয়া কয়লা’, আর ফিল্মফেয়ার–এ লেখা হয়েছিল এটি ‘ভারতীয় সংস্কৃতিতে একটি ব্যর্থ ওয়েস্টার্ন রূপান্তর।’

তবে তৃতীয় সপ্তাহ থেকে শুরু হয় ঘুরে দাঁড়ানো। দর্শকেরা সংলাপ মুখস্থ বলতে থাকেন, দ্বিতীয়বার সিনেমা দেখতে আসেন। এক মাস পর যখন একটি সংলাপ রেকর্ড প্রকাশিত হয়, তখন থেকেই চরিত্রগুলো হয়ে ওঠে আইকনিক। গব্বর সিং হয়ে ওঠেন ভয়ংকর জনপ্রিয়।

‘শোলে’ টানা পাঁচ বছর মুম্বাইয়ের মিনার্ভা হলে চলেছে—তিন বছর পূর্ণ দৈর্ঘ্যে, দুই বছর ম্যাটিনি শোতে। প্রায় ১৮ কোটি টিকিট বিক্রি হয়েছিল, এমনকি ২৪০তম সপ্তাহেও শো ছিল হাউসফুল। ২০১৫ সালে এটি মুক্তি পায় পাকিস্তানেও।

সিনেমার প্রভাব ও জনপ্রিয়তা

‘শোলে’ কেবল একটি সিনেমা নয়—এটি হয়ে উঠেছে ভারতীয় সংস্কৃতির প্রতীক। এর সংলাপ বিয়ের মঞ্চে, রাজনীতির বক্তৃতায় এমনকি বিজ্ঞাপনেও ব্যবহৃত হয়েছে। সেলিম-জাভেদ জুটির লেখা চিত্রনাট্য ও সংলাপ, পশ্চিমা ও জাপানি সিনেমা থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে একদম ভারতীয় মাটির গল্প হয়ে উঠেছে ‘শোলে’।

চলচ্চিত্র বিশ্লেষক ও সমালোচকরা একে বলেন ‘ভারতীয় সিনেমার মিলেনিয়াম ফিল্ম।’ বিবিসি ইন্ডিয়ার এক জরিপে এটিকে ‘ফিল্ম অব দ্য মিলেনিয়াম’ ঘোষণা করা হয়, আর ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউটের এক ভোটে এটি হয় সর্বকালের সেরা ভারতীয় সিনেমা।

ধর্মেন্দ্র বলেন, ‘শোলে হচ্ছে বিশ্বের অষ্টম আশ্চর্য।’

অমিতাভ বচ্চনের কথায়, ‘এই সিনেমার শুটিং আমার জীবনের স্মরণীয় ঘটনা। তখন বুঝিনি এটি একদিন এমন কিংবদন্তি হবে।’

৫০ বছর পর এই সিনেমার আবেদন এখনো এতটাই অটুট কেন—এই প্রশ্নের উত্তরে অমিতাভ বলেন, ‘শোলে-তে দর্শক ন্যায়ের বিজয় দেখেছেন মাত্র তিন ঘণ্টায়। সেটা এমন কিছু, যা আমরা বাস্তবে হয়তো আজীবনেও দেখতে পাব না।’

সত্যিই, ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে ‘শোলে’ শুধু এক সিনেমা নয়—এটি একটি অধ্যায়। পঞ্চাশ বছর পর সেই অধ্যায় ফিরে এল আরও পরিপূর্ণ রূপে।

রাজনীতি

ঠাকুরগাঁওয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) গাড়িবহরের একটি মাইক্রোবাসে ভাঙচুর ও ধাক্কা-মারামারির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার জেরে এক হোটেল কর্মচারীকে আটক করে পরে জিম্মায় ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ।

শুক্রবার (৪ জুলাই) দুপুরে শহরের টাঙ্গন ব্রিজ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, শহরের আর্ট গ্যালারিতে দলীয় কর্মসূচি শেষে মডেল মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা। পরে পীরগঞ্জের উদ্দেশে যাত্রাকালে মসজিদ থেকে কিছু দূরে টাঙ্গন ব্রিজ অতিক্রমের সময় পেছন দিক থেকে একটি আন্তঃজেলা বাস এসে তাদের বহরের একটি মাইক্রোবাসে ধাক্কা দেয়।

এতে গাড়ির জানালার কাঁচ ভেঙে যায় এবং এনসিপির এক কর্মীসহ চালক সামান্য আহত হন। ঘটনার পর এনসিপি নেতাকর্মীরা গাড়ি থামিয়ে বাসচালক ও হেলপারের সঙ্গে কথা বলতে গেলে বাগবিতণ্ডা শুরু হয়।

এ সময় ইরফান (২৮) নামে এক যুবক পরিস্থিতি থামাতে গিয়ে উত্তেজিত হয়ে পড়েন এবং এনসিপির একটি মাইক্রোবাসের চাবি খুলে নিয়ে যান। কিছু সময় পর আবার সেটি ফেরত দেন।

ইরফান বর্তমানে গাউছিয়া হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টে কর্মরত, তবে আগে বাসশ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। পুলিশ পরে তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং এনসিপির এক নেতার জিম্মায় তাকে ছেড়ে দেয়।

এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরোয়ার আলম খান বলেন, ঘটনার পরপরই আমরা ঘটনাস্থলে যাই এবং ইরফান নামে এক যুবককে আটক করি। পরে এনসিপির এক নেতার জিম্মায় তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।

এনসিপির ঠাকুরগাঁও জেলা মুখপাত্র মোহাম্মদ রায়হান অপু বলেন, ঘটনাটি অনাকাঙ্ক্ষিত ছিল। ইরফান মূলত ভুল বোঝাবুঝিতে জড়িয়ে পড়ে, পরে নিজেই বিষয়টি বুঝে চাবি ফিরিয়ে দেন।

জাতীয়

সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) সংস্কারের দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে ‘ব্লকেড’ কর্মসূচি পালনকালে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হন চাকরিপ্রত্যাশী শিক্ষার্থীরা।

পরে তারা শাহবাগ মোড় থেকে ব্লকেড তুলে নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রাজু ভাস্কর্যে অবস্থান নেন।

তারা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

শুক্রবার (৪ জুলাই) বিকেল ৬টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

এর আগে বিকেল ৪টায় মিছিল নিয়ে ঢাবির কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার থেকে তারা শাহবাগ মোড়ে যান।

সংঘর্ষের বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম বলেন, শাহবাগে ব্লকেড পালন করা আন্দোলনকারীদের আমরা প্রথমে অনুরোধ করেছি, তারা যেন মানুষের যাতায়াতে বিঘ্ন না ঘটান। পরে তাদের কয়েক দফা সময় দিয়েছি। হঠাৎ করে কয়েকজন ছেলে পুলিশের বেশ কয়েকজন সদস্যকে আহত করে।

মাসুদ আলম আরও বলেন, আমরা বারবার বলি যে কারো দাবি দাওয়া থাকতেই পারে। শাহবাগে এসে ১০ মিনিট থেকে চলে যেতে পারে। কিন্তু এখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা থেকে তো লাভ নেই।

আন্দোলনরত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী সালেহীন সিয়ন বলেন, আমরা শাহবাগ থেকে রাজু ভাস্কর্যের দিকে চলে আসছিলাম। হঠাৎ পুলিশ পেছন থেকে ধাক্কা দেওয়া শুরু করে। এতেই সংঘর্ষ শুরু হয়।

আন্দোলনকারীরা রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এসে ঘোষণা দেন, ৪৪তম বিসিএস-এ পদ সংখ্যা বৃদ্ধি, চূড়ান্ত ফলাফলের সাথে লিখিত ও ভাইভার নম্বর প্রকাশ, চূড়ান্ত ফলাফল প্রদানের পূর্বে ক্যাডার চয়েস সংশোধনের সুযোগ দান, একই ক্যাডারে একই ব্যক্তিকে দ্বিতীয়বার সুপারিশ না করা, নন-ক্যাডার বিধিমালা-২০২৩ বাতিল বা সংশোধনপূর্বক ভাইভায় উত্তীর্ণ সব প্রার্থীকে চাকরি প্রদান, যেসব প্রার্থীর স্নাতকে পঠিত বিষয়ের বিষয় কোড নেই, তাদেরও সংগতিপূর্ণ নন-ক্যাডার পদে আবেদনের সুযোগ প্রদানসহ বিভিন্ন দাবি না মানলে রাজু ভাস্কর্যে রাত-দিন অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে।

খেলাধুলা

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের জন্য ১৬ সদস্যের দল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।

এই সিরিজ দিয়ে লম্বা সময় পর টি-টোয়েন্টি দলে ফিরেছেন নাঈম শেখ। ঘরোয়া ক্রিকেটে পারফর্ম করার পুরস্কার হিসেবেই জাতীয় দলে প্রত্যাবর্তন তার।

এদিকে চোট কাটিয়ে আবারও দলে ফিরেছেন পেস বিভাগের দুই গুরুত্বপূর্ণ সদস্য তাসকিন আহমেদ ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন।

তবে ফর্মহীনতায় বাদ পড়েছেন সাবেক অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। ২০২৪ সালের মার্চের পর এই ফরম্যাটে কোনো পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস নেই তার। এছাড়া পেসার নাহিদ রানারও দলে জায়গা হয়নি।

ওয়ানডে সিরিজ শেষ করে আগামী ১০ জুলাই থেকে শুরু হবে কুড়ি ওভারের লড়াই। সেদিন পাল্লেকেলেতে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা। সিরিজের বাকি দুই ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে যথাক্রমে ডাম্বুলা এবং কলম্বোতে। সবগুলো ম্যাচ শুরু হবে বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়।

বাংলাদেশ দল

লিটন দাস (অধিনায়ক), তানজিদ তামিম, পারভেজ ইমন, নাঈম শেখ, তাওহীদ হৃদয়, জাকের আলী, শামিম পাটোয়ারী, মেহেদী মিরাজ, রিশাদ হোসেন, শেখ মেহেদী, নাসুম আহমেদ, তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান, শরিফুল ইসলাম, তানজিম সাকিব ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন।

আন্তর্জাতিক

মাত্র এক টুকরো সিগারেটে তিন দিন জ্বলেছে গ্রিসের চিওস দ্বীপ। পুড়ে ছাই হয়ে গেছে ১০ হাজার একর জমি। রোববার শুরু হওয়া এ দাবানল গ্রাস করেছে বণভূমি, চারণভূমি, জীববৈচিত্র্যসহ এক বিস্তৃত অঞ্চল। বুধবার আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও অঞ্চলজুড়ে শত শত দমকলকর্মী আগুনের পুনঃপ্রজ্বালন ঠেকাতে কাজ করছেন। মঙ্গলবার রাতে আগুনের সূত্রপাত ঘটানোর সন্দেহে এক জর্জিয়ান নারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

ফায়ার সার্ভিসের দুই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রত্যক্ষদর্শীরা দেখেছেন, তিনি একটি সিগারেট ফেলে দেন, যা থেকেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এদিকে এ ভয়াবহ পরিস্থিতি সামাল দিয়ে উঠতে না উঠতেই বুধবার বিকালে দেশটির আরেক দ্বীপেও ছড়িয়ে পড়ে ভয়াবহ দাবানল। বৃহস্পতিবার দেশটির দমকল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগুন ক্রমেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তারা। একইভাবে পুড়ছে ইউরোপের আরেক দেশ স্পেনও। বিবিসি, রয়টার্স, দ্য গার্ডিয়ান, এপি।

ইউরোপজুড়ে গরমের তীব্রতা বেড়েছে। যার জেরে ছড়িয়ে পড়ছে দাবানল। বুধবার গ্রিসের জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য ক্রিট দ্বীপে দাবানল ছড়িয়ে পড়ায় স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকদের সরিয়ে নেওয়া হয়। দাবানলে কিছু বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রায় তিন হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে রাখা হয়েছে।

গ্রিক দমকল পরিষেবা জানিয়েছে, ২৩০ জনের বেশি দমকলকর্মী ক্রিটের একাধিক স্থানে আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ করছেন। ৩৮টি ইঞ্জিন ও পানিবাহী ট্রাক নিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে। এছাড়া গ্রিসের হালকিদিকি অঞ্চলেও নতুন একটি দাবানল দেখা গেছে। যেখানে ১৬০ জন দমকলকর্মী ও ৪৯টি ফায়ার ট্রাক আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শক্তিশালী ঝড়ো হাওয়ার কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এবং নেভানোর কাজকে জটিল করে তুলছে। বিভিন্ন অংশে নিয়ন্ত্রণে আনার পরও আবার আগুন জ্বলে ওঠায় পরিস্থিতি সংকটজনক হয়ে পড়ে। দমকল বাহিনী জানিয়েছে, অতিরিক্ত সাহায্যবাহী দল ও বিমান রাজধানী এথেন্স থেকে পাঠানো হচ্ছে। এর আগে রোববার ভয়াবহ দাবানলের কবলে পড়ে গ্রিসের চিওস দ্বীপ। ইতোমধ্যে এ আগুনের সূত্রপাত ঘটানোর সন্দেহে এক জর্জিয়ান নারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

ফায়ার সার্ভিসের দুই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ওই নারী অনিচ্ছাকৃত অগ্নিসংযোগের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন। প্রতিবছরই গ্রীষ্মকালে দাবানলের মুখোমুখি হয় দক্ষিণ ইউরোপের দেশ গ্রিস। তবে এবার জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আগুনের মাত্রা ও ধ্বংস অনেক বেশি মারাÍক হয়ে উঠেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

দাবানলের প্রভাব শুধু গ্রিসেই সীমাবদ্ধ নয়। জার্মানির সাক্সনি রাজ্যেও একটি বনভূমিতে আগুন লেগেছে। এতে অন্তত দুইজন গুরুতর আহত হয়েছেন। রাজ্য থেকে শতাধিক মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। স্পেনেও দাবানলের খবর পাওয়া গেছে। দেশটির কাতালোনিয়া অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া দাবানলে দুইজন কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। পুড়ে ছাই হয়ে গেছে ১৬ হাজার একর জমি।

এপির খবরে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাতে এই দাবানলের সূচনা হয় এবং বুধবার তা আরও ভয়াবহ রূপ নেয়। আগুনের কারণে আকাশে ছড়িয়ে পড়ে ১৪ হাজার মিটার (৪৫ হাজার ফুট) উচ্চতার ছাই ও ধোঁয়ার একটি বিশাল কুণ্ডলী। এটি কাতালোনিয়ায় রেকর্ড করা অন্যতম বৃহৎ দাবানল বলে জানিয়েছে দেশটির ফায়ার সার্ভিস। এ বছর তীব্র দাবদাহে বিপর্যস্ত ইউরোপের জনজীবন।

বিনোদন

গত বছরের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রাজপথে সক্রিয় ছিলেন অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন। কেবল সোশ্যাল মিডিয়ায় নয়, সরাসরি আন্দোলনের ময়দানে নেমে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন তিনি। ঐতিহাসিক জুলাই আন্দোলনের এক বছর পূর্তিতে আবারও নিজের অবস্থান স্পষ্ট করলেন তিনি।

আজ বর্ষপূর্তির দিনে ইংরেজিতে একটি আবেগঘন পোস্ট দেন বাঁধন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘জুলাই আন্দোলন ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এই আন্দোলন আমাকে আশার আলো দেখিয়েছিল, সাহস দিয়েছিল সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর।’

তিনি আরও লেখেন, ‘সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্তটি সহজ ছিল না। তবুও আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম এবং সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলাম।’

বাঁধন বলেন, ‘আমরা এক হয়েছিলাম এমন একটি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যে রাষ্ট্র নিজের জনগণের টাকায় কেনা অস্ত্র তাক করেছিল তার জনগণের দিকে। কোনো কারণ ছাড়া মানুষকে গ্রেফতার করা হচ্ছিল। নির্দোষ মানুষ প্রাণ হারাচ্ছিল। রিয়া মণির মতো ছোট ছোট শিশুরা জীবন দিয়েছিল। কিন্তু তারা বুঝেই উঠতে পারেনি কেন জীবন দিচ্ছে।’

অভিনেত্রী আরও বলেন, ‘আন্দোলনের সময় আমরা এক হয়েছিলাম আমাদের অধিকার আর দেশকে ভালোবেসে। সেটা ছিল স্মরণীয় মুহূর্ত। আমরা স্বপ্ন দেখেছিলাম ভালো কিছুর। আমি সেই আশা সবসময় বুকে ধারণ করেই চলব।’

রাজনীতি

জুলাই আন্দোলনের সবার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, জুলাই অভ্যুত্থান স্মরণে মাসব্যাপী যে কর্মসূচি ঘোষণা করছি সেটা শুধু সূচনা নয় বরং একটি নতুন শপথ। গত বছরের জুলাইয়ে দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের যে ঐক্য ছিল, আমরা চাই সেই ঐক্য এই জুলাইয়ে আবারও সুসংহত হোক। কর্মসূচির মূল লক্ষ্য জনগণকে গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে সচেতন করা, রাজনীতির প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা জানানো এবং রক্তের ত্যাগ না ভোলা।

মঙ্গলবার সকালে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে জুলাই অভ্যুত্থান স্মরণে মাসব্যাপী কর্মসূচির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

ড. ইউনূস বলেন, আমাদের সামনের পথ অনেক কঠিন, কিন্তু মস্তবড় সম্ভাবনাও আছে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, জনগণ যখন জেগে উঠে কোনো শক্তিই তাকে রুখে দিতে পারে না। এই জুলাইকে সবার গণজাগরণ ও ঐক্যের মাসে পরিণত করুন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জুলাই আন্দোলনের মর্মবাণী ছিলো ফ্যাসিবাদ বিলোপ করে নতুন বাংলাদেশ গঠন। সে লক্ষ্য বাস্তবায়নে কাজ করছে সরকার; যাতে স্বৈরাচার আর মাথাচাড়া না দিতে পারে।

তিনি বলেন, ১৬ বছর পর আমরা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলাম। এর মাধ্যমে তাৎক্ষণিক আমরা আমাদের টার্গেট পূরণ করতে পেরেছি। কিন্তু তার প্রথমেই ছিল নতুনভাবে রাষ্ট্রব্যবস্থা বিনির্মাণের একটি বিরাট স্বপ্ন। আমরা প্রতিবছর এই সময়টা উদযাপন করব। যাতে পরে এই দিন উদযাপনের জন্য আরও ১৬ বছর অপেক্ষা না করতে হয়। স্বৈরাচারের কোনো চিহ্ন দেখা গেলে তাৎক্ষণিকভাবে যাতে বিনাশ করতে পারি।

ড. ইউনূস বলেন, শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে আমাদের মুক্তির স্বাদ দিয়েছে। জুলাই গণতান্ত্রিক আন্দোলনের এক অমোঘ ডাক, যার উদ্দেশ্য ছিল ফ্যাসিবাদের বিলুপ্ত করে জনগণের হাতে রাষ্ট্র ফিরিয়ে দেওয়া।

আন্তর্জাতিক

আগামী সপ্তাহের যেকোনো সময় গাজায় যুদ্ধবিরতি হতে পারে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মঙ্গলবার সাংবাদিকদের তিনি বলেন, সামনের সপ্তাহে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে হোয়াইট হাউসে গাজা ও ইরানে আমরা যে অসাধারণ সাফল্য পেয়েছি সেগুলো নিয়ে আলোচনা করব। আমরা জিম্মিদের ফেরত পেতে চাই। খবর আল-জাজিরার।

গাজা যুদ্ধের অবসানে মার্কিন প্রচেষ্টার মাঝে আগামী সপ্তাহে ওয়াশিংটন সফরে যাচ্ছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। সেখানে ৭ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ মার্কিন শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে তার।

খবরটি এমন সময় এলো যখন ইসরাইলের জন্য ৫১০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের অস্ত্র চুক্তির অনুমোদন দিল ট্রাম্প প্রশাসন।

ইরানের সঙ্গে ১২ দিনের প্রাণঘাতী যুদ্ধের পর প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী। ওয়াশিংটন সফরের তথ্য নিশ্চিত করে নেতানিয়াহু বলেছেন, তিনি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের উদ্দেশে আগামী সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাবেন।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলের বিভিন্ন অবৈধ বসতি লক্ষ্য করে হামলা চালায় ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। এরপর ওইদিন থেকেই গাজায় বর্বরতা শুরু করে ইসরাইল। আড়াই বছর ধরে চলা এ যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৫৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন লাখ লাখ মানুষ। এছাড়া ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে আছেন হাজার হাজার ফিলিস্তিনি। ইসরাইলি সেনাদের অব্যাহত হামলার কারণে স্তূপে আটকে থাকা মানুষদের উদ্ধার করা যায়নি।