আন্তর্জাতিক

আফ্রিকার দ্বীপরাষ্ট্র মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনা দেশ ছেড়ে গেছেন বলে জানিয়েছে ফরাসি রেডিও আরএফআই। প্রতিবেদনে বলা হয়, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর সঙ্গে এক চুক্তির পর রাজোয়েলিনাকে ফরাসি সামরিক বিমানে করে দেশ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

সোমবার (১৩ অক্টোবর) রয়টার্স জানিয়েছে, গত দুই সপ্তাহ ধরে দেশটিতে দুর্নীতি, দারিদ্র্য এবং সরকারের ব্যর্থতার বিরুদ্ধে হাজারো তরুণের বিক্ষোভ চলছিল। এ সময় সেনাবাহিনীর একটি গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট ‘ক্যাপসাট’ প্রেসিডেন্টের বিরোধিতা করে বিক্ষোভকারীদের পাশে দাঁড়ায়। ফলে রাজোয়েলিনা ক্রমশ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন।

এই বিক্ষোভের সূত্রপাত হয়েছিল গত ২৫ সেপ্টেম্বর। রাজধানী আন্তানানারিভোতে পানি ও বিদ্যুৎ সংকট নিয়ে জেন-জিদের বিক্ষোভ শুরু হলেও অল্প সময়েই তা রূপ নেয় বৃহত্তর অসন্তোষে। দুর্নীতি, খারাপ প্রশাসন ও মৌলিক সেবার অভাবের বিরুদ্ধে এটি একটি গণ-আন্দোলনে রূপ নেয়।

বিরোধীদলীয় নেতা সিতেনি র্যান্দ্রিয়ানাসোলোনিয়াইকো জানিয়েছেন, সংসদের বিরোধী সদস্যরা রাজোয়েলিনার বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রক্রিয়া শুরু করতে যাচ্ছেন।

রোববার প্রেসিডেন্ট সতর্ক করেছিলেন, ক্ষমতা দখলের একটি ষড়যন্ত্র চলছে। কারণ সেনাবাহিনীর যে ‘ক্যাপসাট’ ইউনিট ২০০৯ সালে তাকে ক্ষমতায় আনতে সাহায্য করেছিল, সেই ইউনিট এবার তার বিরোধিতায় নেমেছে।

ক্যাপসাট ইউনিট দাবি করেছে, তারা সেনাবাহিনীর দায়িত্ব নিয়েছে এবং নতুন সেনাপ্রধান নিয়োগ দিয়েছে। একই সঙ্গে প্যারামিলিটারির একটি অংশও বিক্ষোভকারীদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।

এদিকে জনরোষের মুখে সিনেট সভাপতিকে বরখাস্ত করে জ্যাঁ আঁদ্রে ন্দ্রেমাঞ্জারিকে সাময়িকভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সংবিধান অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট অনুপস্থিত থাকলে সিনেট সভাপতি অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন।

রাজধানীর কেন্দ্রে সোমবার হাজারো মানুষ জড়ো হয়ে ‘প্রেসিডেন্টকে এখনই পদত্যাগ করতে হবে’ স্লোগান দেন। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ২২ বছর বয়সি এক হোটেলকর্মী জানান, মাসে ৩ লাখ আরিয়ারি (৬৭ ডলার) আয় করে তার শুধু খাবার জোটানোই কঠিন। তিনি বলেন, ‘১৬ বছরে সরকার শুধু নিজেদের ধনী করেছে, আর তরুণ প্রজন্ম সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছে।’

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ২৫ সেপ্টেম্বরের পর থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত অন্তত ২২ জন নিহত হয়েছেন। এই ধরনের ক্ষোভ মাদাগাস্কার ছাড়াও নেপাল, কেনিয়া ও মরক্কোর তরুণদের আন্দোলনেও প্রতিধ্বনিত হয়েছে।

প্রায় ৩ কোটি জনসংখ্যার মাদাগাস্কারে গড় বয়স ২০ বছরেরও কম। দেশটির তিন-চতুর্থাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। স্বাধীনতার পর থেকে মাথাপিছু জিডিপি ৪৫ শতাংশ কমেছে। ভ্যানিলা উৎপাদনের জন্য বিশ্বজুড়ে পরিচিত মাদাগাস্কারের অর্থনীতি টিকে আছে নিকেল, কোবাল্ট, বস্ত্র ও চিংড়ি রপ্তানি করে।

উল্লেখ্য, জেন-জির এমন বিক্ষোভের মুখে সরকার পতন ঘটে শ্রীলঙ্কা ও নেপালেও।

রাজনীতি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আসন ভাগাভাগি নিয়ে মিত্রদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করেছে বিএনপি। যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নেওয়া সহযোগী রাজনৈতিক দলগুলো ইতিমধ্যে ২১৭টি আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা জমা দিয়েছে দলটির কাছে। তবে বিএনপি এবার কৌশলগতভাবে সর্বোচ্চ ৪০টি আসন মিত্রদের ছেড়ে দিতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, গণতন্ত্র মঞ্চ ১৩৮টি, ১২ দলীয় জোট ২১টি, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ৯টি, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) ১৩টি, জাতীয় পার্টি (বিজেপি) ৫টি, গণফোরাম ১৫টি, বাংলাদেশ লেবার পার্টি ৬টি ও জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম) ১০টি আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা জমা দিয়েছে বিএনপির কাছে।

এর মধ্যে বেশ কয়েকটি দল সরাসরি লন্ডনে গিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে প্রার্থীদের নাম হস্তান্তর করেছে। দলীয় সূত্র বলছে, মিত্রদের আসন ছাড় নিয়ে এখন চলছে দরকষাকষি ও তীব্র আলোচনা।

২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শরিকদের ৫৮ আসনে ছাড় দিয়েছিল বিএনপি। এর মধ্যে ২২টি আসন গিয়েছিল জামায়াতে ইসলামীকে। এবার জামায়াতের সঙ্গে কোনো প্রকার জোট বা সমঝোতায় না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। ফলে নতুন শরিকদের মধ্য থেকেই আসন ছাড়ের হিসাব কষছে দলটি।

বিএনপির একাধিক টিম এখন শরিক দলগুলোর প্রার্থীদের নিজ নিজ আসনে জনপ্রিয়তা যাচাই করছে। আগের নির্বাচনে শরিকদের দেওয়া আসনগুলোর অনেকগুলো এবারও ছাড় দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে যেসব মিত্র এবার মনোনয়ন পাবেন না, তাদের সংসদের উচ্চকক্ষে (উপরের কক্ষ) মূল্যায়নের উদ্যোগ নিতে পারে বিএনপি।

বিএনপির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, নির্বাচনে মিত্রদের ভূমিকা তারা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছেন। তবে আসন ছাড়ের ক্ষেত্রে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনাকেই প্রধান মানদণ্ড হিসেবে ধরা হচ্ছে।

দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘সংসদ নির্বাচনে বিএনপি মিত্রদের কত আসন ছাড়বে, সেটি আলোচনার বিষয়। এমন আসনেই শরিকদের প্রার্থী দেওয়া হবে, যেগুলোতে জয়লাভের বাস্তব সম্ভাবনা রয়েছে।’

সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘যেসব দল অতীতে রাজপথে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে, আমরা তাদের সঙ্গে রাষ্ট্র পুনর্গঠনের কাজে একসঙ্গে থাকতে চাই। সবার মতামত নিয়েই রাষ্ট্র গঠন করতে চাই।’

সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম

সূত্র জানায়, পাঁচটি জরিপ ও নিজস্ব গোয়েন্দা টিমের তথ্য বিশ্লেষণের পর কয়েকজন নেতাকে আসন্ন নির্বাচনে সবুজ সংকেত দেওয়া হতে পারে।

এর মধ্যে রয়েছেন—

• জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার (পিরোজপুর–১)

• এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম (লক্ষ্মীপুর–১)

• বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা (কিশোরগঞ্জ–৫)

• নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না (বগুড়া–২)

• গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি (ব্রাহ্মণবাড়িয়া–৬)

• এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ (ঢাকা–১৩)

• বিএনপি (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ (ঢাকা–১৭)

• এলডিপি মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ (কুমিল্লা–৭)

• এনপিপি চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ (নড়াইল–২)

বিএনপির সূত্র বলছে, এদের মধ্যে কয়েকজনকে মৌখিকভাবে নিজ নিজ এলাকায় গণসংযোগ বাড়ানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এদিকে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-র সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলছে বিএনপি। নির্বাচনকেন্দ্রিক অনানুষ্ঠানিক বৈঠকও হয়েছে দুই দলের মধ্যে। যদিও এনসিপির কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, তারা ৩শ আসনেই প্রার্থী দিতে চান এবং বিএনপি বা জামায়াতের সঙ্গে সরাসরি জোটে যেতে চান না।

তবে বিএনপির নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, এনসিপির সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ‘ইতিবাচক’ এবং ভবিষ্যতে পারস্পরিক সহযোগিতার সুযোগ রয়েছে।

বিএনপি সূত্র জানিয়েছে, মিত্রদের কত আসন ছাড় দেওয়া হবে তা চলতি মাসের মধ্যেই জানা যাবে। যেসব শরিকদের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে, তাদের বিএনপির হাইকমান্ড থেকে ‘সবুজ সংকেত’ দেওয়া হবে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর প্রার্থিতা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করবে দলটি।

যদিও মিত্রদের দাবি অনেক বেশি, বিএনপির নীতিনির্ধারকরা স্পষ্ট করে জানাচ্ছেন—এবার আসন ছাড়ের সীমা সর্বোচ্চ ৪০টির বেশি হবে না। কারণ, দলটির নিজস্ব সম্ভাব্য প্রার্থীর সংখ্যা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপির এই সীমিত আসন ছাড় নীতি মিত্রদের সঙ্গে ভবিষ্যতে সমন্বয়ের ক্ষেত্রে নতুন ধরনের রাজনৈতিক সমীকরণ তৈরি করতে পারে।

জাতীয়

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেছেন, বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর যে ১৫ জন সেনা কর্মকর্তা এখন সেনাবাহিনীর হেফাজতে রয়েছেন, তাদের অবশ্যই আদালতে আনতে হবে।

১৫ সেনা কর্মকর্তাকে হেফাজতে নেওয়ার কথা জানিয়ে সেনাসদরের সংবাদ সম্মেলনের এক দিন পর (১২ অক্টোবর) ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে এ কথা বলেন তাজুল ইসলাম।

সেনাসদর সংবাদ সম্মেলন করলেও বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রাইব্যুনালকে জানানো হয়নি জানিয়ে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের কাছে যেহেতু আনুষ্ঠানিকভাবে ডকুমেন্টারি পদ্ধতিতে কেউ বলেননি যে, আটক রাখা হয়েছে। মিডিয়াতে যেটা এসেছে, আমরা সেটা আমলে নিচ্ছি না। যেহেতু আমরা জানি না, তাই এ বিষয়ে আমি মন্তব্য করব না। আমাদের যদি বলা হয় যে আটক রাখা হয়েছে, তাহলে আইন অনুযায়ী তাকে অবশ্যই আদালতের কাছে আনতে হবে। এটাই বিধান।’

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তিনটি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়া ২৫ কর্মকর্তার মধ্যে ১৫ জন এখনো সেনাবাহিনীতে কর্মরত। তাদের মধ্যে একজন বাদে বাকি ১৪ জনকে এবং অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটিতে (এলপিআর) থাকা একজনকে হেফাজতে নেওয়ার কথা শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন সেনাবাহিনীর অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল মেজর জেনারেল মো. হাকিমুজ্জামান।

বিগত আওয়ামী শাসনামলে গুম-নির্যাতনের দুটি এবং জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় রামপুরা ও বনশ্রী এলাকায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনার একটি মামলায় গত ৮ অক্টোবর তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

এরপর তুমুল আলোচনা এবং তাদের গ্রেফতারের দাবি উঠলে সেনাসদর এ বিষয়ে তাদের অবস্থান প্রকাশ করে জানায়, সেনাবাহিনী ন্যায়বিচারের পক্ষে। হেফাজতে থাকা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলামের কাছে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সংবিধানে আছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের আইনেও আছে, ফৌজদারি কার্যবিধিতেও আছে যে, যেখানেই গ্রেফতার করা হোক, তাকে আদালতের জন্য যতটুকু সময় ব্যয় হবে, সেটুকু ছাড়া ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে উপস্থিত করতে হবে। এটাই আইনের বিধান।’

বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘এটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইন নয়, সংবিধানেও এটি স্বীকৃত যে গ্রেফতার করে ২৪ ঘণ্টার বেশি কাউকে আটক রাখা যায় না। যদি আদালত আপনাকে আটক করার অথরিটি দেন, কেবল তখনই আটক করতে পারবেন। যাকে যখনই গ্রেফতার করা হবে, আদালতের বিধান হচ্ছে, তখনই তাকে আদালতে আনতে হবে। আদালত তাকে আটক রাখতে বললে আটক রাখা হবে। আদালত তাকে জামিন দিয়ে ছেড়ে দিতে পারেন। সুতরাং সিদ্ধান্ত নেওয়ার কর্তৃত্ব (অথরিটি) তখন আদালতের কাছে চলে যায়। এটাই হচ্ছে আইনি ব্যাখ্যা।’

এর আগে, সেনাসদরের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছিল, সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে তারা তা পায়নি। তবে তার আগেই চাকরিরত ওই কর্মকর্তাদের হেফাজতে নেওয়ার পদক্ষেপ নেয় তারা।

রাজনীতি

ওয়ার্ল্ড ফুড ফোরামের ফ্ল্যাগশিপ ইভেন্টে যোগ নিতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আজ রোববার স্থানীয় সময় বিকেল ৫টায় ইতালির রাজধানী রোম পৌঁছেছেন। রোম পৌঁছালে ইতালিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এ টি এম রকিবুল হক প্রধান উপদেষ্টাকে স্বাগত জানান। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং বাসসকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

সফরসূচি অনুযায়ী অধ্যাপক ইউনূস ফোরামের মূল অধিবেশনে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে ভাষণ দেবেন। পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এসব বৈঠকে খাদ্য নিরাপত্তা, দারিদ্র্য নিরসন ও টেকসই উন্নয়নসহ বিভিন্ন বৈশ্বিক ইস্যু নিয়ে আলোচনা হবে।

ওয়ার্ল্ড ফুড ফোরাম জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) আয়োজিত একটি বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্ম, যেখানে বিশ্বের নীতিনির্ধারক, গবেষক ও উদ্যোক্তারা খাদ্য ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ নিয়ে মতবিনিময় করেন। এবারের ইভেন্টটি ১০ থেকে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত রোমে এফএও সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

প্রধান উপদেষ্টার এই সফরকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের সক্রিয় কূটনৈতিক উপস্থিতির একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। ১৫ অক্টোবর প্রধান উপদেষ্টার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।

রাজনীতি

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, প্রস্তাবিত প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (পিআর) পদ্ধতি সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব নয়, বরং কয়েকটি রাজনৈতিক দলের দাবি থেকেই এসেছে।

তিনি বলেন, এই পিআর পদ্ধতি জনগণ চায় না।

জনগণ চায় সরাসরি ভোটের মাধ্যমে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে।

রোববার (১২ অক্টোবর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট আয়োজিত এক স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ১৫ বছর পর আমরা এক ফ্যাসিস্ট শাসনকে সরিয়ে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম, যেন তিনি দ্রুত একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনেন। তিনি চেষ্টা করেছেন, সংস্কার কমিশন গঠন করেছেন এবং নতুন কিছু সংস্কার উদ্যোগ নিয়েছেন। আগামী ১৭ অক্টোবর সেসব প্রস্তাবে সই হওয়ার কথা।

মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি সবসময়ই সংস্কারের পক্ষে ছিল। কিন্তু এখন কেউ কেউ বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে যে বিএনপি সংস্কার চায় না। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর। বিএনপি নিজেই সংস্কার আন্দোলনের ফসল।

কিছু রাজনৈতিক দল বিএনপিকে নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে অভিযোগ তুলে তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, আমরা চাই ফেব্রুয়ারিতেই জাতীয় নির্বাচন হোক। জনগণ এখনই নির্বাচন চায়। আমরা চেষ্টা করছি নতুন করে বাংলাদেশকে জাগিয়ে তোলার, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার এই সুযোগটি যেন হারিয়ে না যায়।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের প্রধান সমন্বয়ক ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ।

রাজনীতি

“বাংলাদেশের কোনো হাসপাতালে ১৫০০ টাকায় চিকিৎসা হয় না,” বলেন তিনি

অন্তর্বর্তী সরকারকে ‘মোনাফেক’ আখ্যায়িত করে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের রাজপথ না ছাড়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ।

রোববার বিকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থানরত শিক্ষক-কর্মচারীদের সঙ্গে সংহিত প্রকাশ করে হাসনাত বলেন, “প্রিয় শিক্ষক সমাজ, যতক্ষণ পর্যন্ত না আপনাদের দাবি করা বাড়ি ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা এই মোনাফেক অন্তর্বর্তী সরকার মেনে নেবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আপনারা রাজপথ ছাড়বেন না।

“এটা রাষ্ট্রের কাছে কোনো ভিক্ষা নয়, এটা রাষ্ট্রের কাছে আপনাদের অধিকার।”

দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষকদের শহীদ মিনার না ছাড়ারও আহ্বান জানান তিনি।

বাড়িভাড়াসহ বিভিন্ন ভাতা বাড়ানোর দাবিতে এদিন ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অব্স্থান কর্মসূচি শুরু করেন এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা।

দুপুর ১টা ৫৫ মিনিটে পুলিশ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সড়ক থেকে শিক্ষকদের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে চলে যেতে বলে। কিন্তু শিক্ষকদের একটা অংশ তা মানতে রাজি হয়নি। তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ভুয়া ভুয়া বলতে থাকে। একপর্যায়ে পুলিশ পর পর বেশ কিছু সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে ও লাঠিপেটা করে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের সড়ক থেকে শিক্ষকদের সরিয়ে দেয়। প্রেস ক্লাবের সামনে জলকামানও আনা হয়।

বিকালে শহীদ মিনারে শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচিতে উপস্থিত হয়ে এনসিপি নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, “শিক্ষকদের যেভাবে পেটানো হয়েছে এটা কোনো সভ্য রাষ্ট্রীয় চরিত্র হতে পারে না। অনতিবিলম্বে এই হীন কাজের জন্য তাদেরকে ক্ষমা চাইতে হবে।

“আর যাদের আপনারা (পুলিশ) গ্রেপ্তার করেছেন, তাদের সূর্য ডোবার আগে ছেড়ে দিতে হবে।”

গত ৩০ সেপ্টেম্বর এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়া ৫০০ টাকা বাড়ায় সরকার। কিন্তু তা প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনের ডাক দেন শিক্ষক-কর্মচারীরা।

এরপর ৬ অক্টোবর এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া অন্তত দুই হাজার বা তিন হাজার টাকা করার প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী বেতন পান। তারা মূল বেতনের সঙ্গে মাসে ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান। আর ১ হাজার টাকা বাড়িভাড়া পেতেন, যা বাড়িয়ে ৫০০ টাকা করা হয়েছে।

এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা আগে বছরে ২৫ শতাংশ হারে বছরে দুটি উৎসব ভাতা পেতেন। এখন পান ৫০ শতাংশ হারে।

তারা এখন ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া, ১ হাজার ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা এবং ৭৫ শতাংশ উৎসব ভাতা দাবি করছেন।

শিক্ষক-কর্মচারীদের ১ হাজার ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতার দাবি নিয়ে তিনি বলেন, “আপনাদের চাওয়াতো কত কম, রিপোর্টটা দেখাইতে ১৫০০ টাকা ভিজিট দিতে হয়। বাংলাদেশের কোনো হাসপাতালে ১৫০০ টাকায় চিকিৎসা হয় না। বাংলাদেশি পোশাক

“স্বাস্থ্য উপদেষ্টা আমরা বানাইসি দেশের স্বাস্থ্য সংস্কার করার জন্য। কিন্তু উনি যখন অসুস্থ হন উনি চিকিৎসা নিতে যান সিঙ্গাপুর। এর থেকে লজ্জার কি আছে?

“উচিত ছিল, আমার জনগণ যতক্ষণ না পর্যন্ত সুচিকিৎসা পাচ্ছে, আমি যেহেতু এই চিকিৎসার দায়িত্বে রয়েছি, আমি নিজেও এই চিকিৎসা কার্যক্রমের অংশ হবো; কিন্তু আমরা দেখলাম তারা নির্লজ্জের মত সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা নিতে যায়।”

প্রশাসনে পদয়ান-পদোন্নতি নিয়ে সিন্ডিকেট গঠন কর হয়েছে বলে অভিযোগ করে হাসনাত বলেন, “আমরা কখনই শিক্ষকদের গলা চেপে ধরতে দেখি নাই রাষ্ট্রের।

“তাদের এই মিটিংয়ের প্রতি সম্মান জানাইয়া আমরা রাষ্ট্রের কাছে অনুরোধ করতে চাই, দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাদের বাড়ি ভাড়া ২০ শতাংশ করতে হবে।”স্বাস্থ্য বীমা

শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচিতে এসে বক্তব্য দেন এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন।

মূল বেতনের ২০ শতাংশ বাড়ি ভাড়া ভাতার দাবিতে কর্মবিরতির কর্মসূচি এক দিন এগিয়ে এনে সোমবার থেকে পালনের ঘোষণা দিয়েছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা।

লাগাতার অবস্থানরত শিক্ষকদের ওপর পুলিশে হামলার প্রতিবাদে মঙ্গলবারের পরিবর্তে সোমবার থেকেই এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লাগাতার কর্মবিরতি পালন করবেন তারা।

একই সঙ্গে তারা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজী৷

বিনোদন

অনুষ্ঠানটি একেবারেই ঘরোয়া ছিল।

বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন শুরু করলেন জীবনের নতুন ইনিংস; পাত্রী ব্যারিস্টার নুসরাত খান সাবেক মন্ত্রী নূর মুহাম্মদ খানের মেয়ে।

শুক্রবার রাতে তাদের আংটি বদল হয় বলে জানিয়েছেন নূর মুহাম্মদ খান।

তিনি শনিবার বিকালে বলেন, বারিধারায় তার বাসায় বাগদান সম্পন্ন হয়েছে।

“আমার বড় মেয়ে নুসরাত খান; গত রাতে নতুন জীবনে যাত্রা শুরুতে আংটি পরানো হয়েছে। ওদের জন্য দোয়া করবেন, সবার কাছে দুজনার জন্য আশীর্বাদ চাই।”

অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক হোসেন যুক্তরাজ্যের হার্টফোর্ডশায়ার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী।

বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক ২০২০ সালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। পট পরিবর্তনের পর ঢাকার নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল তাকে মেয়র ঘোষণা করলেও ‘আইনি জটিলতায়’ শেষ পর্যন্ত তিনি দায়িত্ব নিতে পারেননি।

কনে নুসরাত খান লন্ডন থেকে এলএলবি ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর ইনার টেম্পল থেকে ব্যারিস্টার হন তিনি। এরপর ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি ও অক্সফোর্ড ইউনির্ভাসিটি থেকে আইনের উচ্চতর কোর্স সম্পন্ন করেছেন নুসরাত। বর্তমানে তিনি ঢাকায় ব্রিটিশ স্কুল অব ল-এর ভাইস প্রিন্সিপাল।

রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও বিচারপতি আবদুস সাত্তারের মন্ত্রিসভার সদস্য নূর মোহাম্মদ খানের তিন মেয়ের মধ্যে নুসরাত বড়। বাকি দুই মেয়ে নিশাত খান ও নাফিসা খান লন্ডন থেকে আইন শাস্ত্রে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন।

ছাত্রজীবনে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের চীনপন্থি নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন নূর মুহাম্মদ খান। ১৯৭৯ সালে মওলানা ভাসানীর ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি বিলুপ্ত হলে জিয়াউর রহমানের জাতীয়তাবাদী দলে যোগ দেন তিনি। পরবর্তী সময়ে তিনি টাঙ্গাইল-৬ আসন থেকে দুই মেয়াদে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার স্ত্রী সাবিহা সুলতানা সাম্মী খান নাগরপুর ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন।বাংলাদেশি পোশাক

নূর মুহাম্মদ খান জানান, বাগদান অনুষ্ঠানটি একেবারেই ঘরোয়া ছিল। বাইরের কাউকেই আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। অনুষ্ঠানে ইশরাকের মা ইসমত আরা হোসেন, ভাই ইশফাক হোসেনসহ স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন।

আন্তর্জাতিক

ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিকল্পনায় অনুমোদন দিয়েছেন আগ্রাসনবাদী ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।

শুক্রবার (১০ অক্টোবর) নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে প্রকাশিত বিবৃতিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

খবর বিবিসির।
যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত এই পরিকল্পনাকে একটি ‘গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি’ বলে অভিহিত করে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন নেতানিয়াহু।

যুদ্ধবিরতি ও হামাসের কাছে থাকা জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার পাশাপাশি এই চুক্তির আওতায় প্রথম ধাপে ইসরায়েলও শত শত ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দেবে। গাজার কিছু অংশ থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার করা শুরু করবে এবং গাজায় প্রতিদিন ত্রাণ সামগ্রীবাহী ট্রাক প্রবেশ করবে বলে কথা রয়েছে।

এদিকে, গাজায় যুদ্ধবিরতির বিষয়ে নজর রাখতে বহুজাতিক সেনা মোতায়েন করা হবে বলে মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তবে তারা গাজায় প্রবেশ করবে না। যুদ্ধবিরতি এবং অন্যান্য লঙ্ঘন হচ্ছে কি না সেই বিষয়ে নজর রাখবে।

অবশ্য ফিলিস্তিনের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পরও গাজার ‘অনেক জায়গায়’ দখলদার ইসরায়েলের বিমান হামলা অব্যাহত রয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে বিবিসি জানিয়েছে, শুক্রবার সকালে খান ইউনিসে বিমান হামলা হয়েছে। উত্তরে নেটজারিম করিডোরের আশেপাশেও হামলার খবর মিলেছে। এছাড়া আল-সাব্রা এবং তাল আল-হাওয়া এলাকায় গোলাবর্ষণের কথা জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।

রয়টার্সের ফুটেজে স্থানীয় সময় আনুমানিক ভোর ৫টা ৫৫ মিনিটের দিকে আলোর ঝলক এবং তারপরে একটি বিস্ফোরণের দৃশ্য ধরা পড়েছে।

যুদ্ধবিরতির তথ্য প্রকাশ্যে আসার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় আনন্দের মুহূর্ত চোখে পড়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেও আনন্দের বার্তা এসেছে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, গাজায় যুদ্ধবিরতি হবে এবং সেখান থেকে ইসরায়েলি সেনাদের ধাপে ধাপে একটি নির্দিষ্ট এলাকা পর্যন্ত প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। গাজায় সহায়তা ও ত্রাণ সামগ্রীবাহী ট্রাক ঢুকতে দেওয়া হবে।

হামাসের হাতে থাকা জিম্মি ও ইসরায়েলের হেফাজতে থাকা ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হবে। দুপক্ষই মৃতদেহ ফিরিয়ে দেবে।

গাজায় রয়েছেন এমন ৪৮ জন জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে, যাদের মধ্যে ২০ জন এখনো জীবিত রয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে । এই পরিকল্পনার হাত ধরেই ইসরায়েল ১ হাজার ৭০০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেবে।

বিবিসি জানিয়েছে, চুক্তি অনুমোদনের ২৪ ঘণ্টা পর শনিবার (১১ অক্টোবর) ভোরে গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে।

হামাসের নির্বাসিত গাজা প্রধান খলিল আল-হাইয়া বলেছেন, তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং মধ্যস্থতাকারীদের কাছ থেকে এই বিষয়ে নিশ্চয়তা পেয়েছেন যে যুদ্ধ শেষ হয়ে গিয়েছে।

রাজনীতি

পিআর পদ্ধতিকে জুলাই জাতীয় সনদের অন্তর্ভূক্ত করে গণভোটের দাবিসহ ৫ দফা দাবিতে তৃতীয়বারের মতো কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদশ জামায়াতে ইসলামী।

রোববার (১২ অক্টোবর) সংগঠনের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানান।

জামায়াতের ৫ দফা দাবি হচ্ছে- জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশের মাধ্যমে গণভোট প্রদান করে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজন করা; আগামী জাতীয় নির্বাচনে উভয় কক্ষে পিআর পদ্ধতিকে জুলাই জাতীয় সনদের অন্তর্ভূক্ত করে গণভোট প্রদান করা; অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সকলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা; ফ্যাসিস্ট সরকারের সকল জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা ও স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।

বিবৃতিতে অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘৫ দফা দাবির প্রেক্ষিতে গত ১ থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত সারা দেশে গণসংযোগ কর্মসূচি, ১০ অক্টোবর ঢাকাসহ সকল বিভাগীয় শহরে গণমিছিল এবং ১২ অক্টোবর জেলা প্রশাসকদের নিকট স্মারকলিপি পেশের কর্মসূচি সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এসব কর্মসূচিতে জনগণের সর্বাত্মক অংশগ্রহণ প্রমাণ করেছে, জামায়াতের দাবির প্রতি দেশবাসীর পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। সরকারের উচিত জনগণের মতামতকে শ্রদ্ধা করে অবিলম্বে জামায়াতের ৫-দফা দাবি মেনে নিয়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথ সুগম করা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত দেশের জনগণ রাজপথ ছাড়বে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘সরকার এখন পর্যন্ত আমাদের দাবিগুলো মেনে না নেওয়ায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী তৃতীয় দফা কর্মসূচি ঘোষণা করছে।’

তৃতীয় দফা কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগরী উত্তর ও দক্ষিণ জামায়াতের যৌথ উদ্যোগে ১৪ অক্টোবর যাত্রাবাড়ী মোড় থেকে মৎস্য ভবন হয়ে গাবতলী বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হবে। যাত্রাবাড়ী মোড়, মৎস্য ভবন ও গাবতলী পয়েন্টের মানববন্ধনে জামায়াতের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগরীর শীর্ষ নেতারা উপস্থিত থাকবেন।

এদিন দেশের সকল বিভাগীয় শহরেও মানববন্ধন করবে দলটি। পরদিন ১৫ অক্টোবর দেশের সকল জেলা শহরে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হবে।

ঢাকাবাসীসহ সারাদেশের জনগণ এবং জামায়াতের সকল জনশক্তিকে এসব কর্মসূচি সর্বাত্মকভাবে সফল করার আহ্বান জানিয়েছেন মিয়া গোলাম পরওয়ার।

জাতীয়

অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর হঠাৎ করেই নিত্যপণ্যের বাজার আবার উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকলেও বাজারে পণ্যের দামে লাগা আগুন এখন নিত্য-নৈমিত্তিক।

এতে সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। খেটে খাওয়া মানুষদের ইচ্ছে থাকলেও উচ্চমূল্যের কারণে তারা সাধ্যের মধ্যে মাছ-মাংস কিনতে পারছেন না। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে, নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ডাল, ভাত আর সবজি জোগাড় করাই এখন স্বপ্নের মতো। পুষ্টির চাহিদা মেটাতে একমাত্র ভরসা হয়ে উঠেছে ডিম; কিন্তু সেটিও এখন অনেকের নাগালের বাইরে। ক্রমবর্ধমান দামের চাপে নিম্নবিত্তের মতো মধ্যবিত্তরাও পড়েছেন বেকায়দায়।

নিত্যপণ্যের দাম সামলাতে গিয়ে সাধারণ মানুষ এখন তাদের খাদ্যতালিকা ছোট করে ফেলছে। প্রয়োজনের তুলনায় কম কিনে কোনোভাবে বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। শুধু বাজার খরচই নয়, নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে চিকিৎসা, শিক্ষা ও যাতায়াতসহ প্রায় সব খাতে। সব মিলিয়ে পণ্যের দাম মেটাতে গিয়ে অনেক প্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন মধ্যবিত্তরা। আর সাধারণ ও নিম্নবিত্ত মানুষ চুলায় হাঁড়ি তুলতেই হিমশিম খাচ্ছে।

বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, বাংলাদেশে কৃষিপণ্য এখনো পুরোপুরি সংরক্ষণনির্ভর নয়। তাই কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মৌসুমি ঘাটতি বা পরিবহন সংকট দেখা দিলেই সরবরাহে বিঘ্ন ঘটে। এই অস্থিরতার বড় কারণ হলো মধ্যস্বত্বভোগীরা। তারা কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে পণ্য কিনে শহরের বাজারে অনেক বেশি দামে বিক্রি করেন। এ ছাড়া ডলারের উচ্চ বিনিময় হারও দামের ওপর বড় প্রভাব ফেলে। কারণ ডাল, ভোজ্যতেল, মসলা ও কিছু ফল আমদানি নির্ভর পণ্য। ডলারের দাম বাড়লে এসব পণ্যের দামও বেড়ে যায়।

তারা আরও জানান, ব্যবসায়ীদের গোপন সমন্বয় বা অঘোষিত চুক্তির মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে পণ্যের ঘাটতি তৈরি করে দাম বাড়ানো হচ্ছে, এমন অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু এদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান ব্যবস্থা খুবই সীমিত। এমনকি জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযানও অনেক সময় স্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারছে না।

এদিকে সরকারি পর্যায়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বাজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে বিভিন্ন টিম কাজ করছে এবং যেখানে সমস্যা ধরা পড়ছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তবে বাস্তবে ভোক্তারা এর তেমন সুফল পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। দাম ওঠানামার কারণ হিসেবে ভোক্তা, ব্যবসায়ী ও বিশ্লেষকরা উল্লেখ করছেন— দুর্বল মনিটরিং, সরবরাহ চেইনের সমস্যা, পরিবহন সংকট, জ্বালানি তেলের বাড়তি খরচ, বাজার সিন্ডিকেট এবং কারসাজিকে।

রাজধানীর সূত্রাপুর, রায়সাহেব বাজার, নয়াবাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে সংশ্লিষ্ট ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন এই প্রতিবেদক। তিনি সরেজমিনে দেখেছেন, প্রতিদিনই শাক-সবজি, চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজ, রসুন, মসলা, সবজি, ডিম, মুরগি ও মাছের দাম পরিবর্তন হচ্ছে। বাজারে কোনো নির্দিষ্ট দামের নিশ্চয়তা নেই। একেক দিন একেক দোকানে ভিন্ন ভিন্ন দাবে পণ্য বিক্রি হচ্ছে। কোনো দোকানে হয়ত কিছু কমে, আবার কোনো দোকানে বাড়তি দামে নিত্যদিনের জিনিস বিক্রি হচ্ছে।

সবজির বাজারে এখন প্রতিদিনই এমন অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। চালের দামও হয়ে উঠেছে অসহনীয়। গরিবের মোটা চাল কেজিতে ৬০ টাকা, আর সরু চালের দাম পৌঁছেছে ৯০ টাকায়। মসুর ডালের কেজি এখন ১৬০ টাকা। অন্যদিকে, ডিমের দাম কিছুদিন কম থাকলেও আবার বাড়তে শুরু করেছে; প্রতি হালি ৫০ টাকা। ব্রয়লার মুরগির দামও স্থিতিশীল নয়, প্রায়ই ওঠানামা করছে।

সবজির বাজারে দামের উত্তাপ যেন কমছেই না। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি বরবটি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, ধুন্দুল ও কাঁকরোল প্রতি কেজি ৮০ টাকা করে। শসা বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়, পটোল ৮০ টাকায়। এছাড়া প্রতি কেজি পেঁপে ৩০ টাকা, প্রতি পিস লাউ ৬০ টাকা, মুলা ৮০ টাকা, টমেটো ১৪০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, গোল বেগুন ১৪০ টাকা, লম্বা বেগুন ১০০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৬০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৮০ টাকা, কচু ৬০ টাকা এবং গাজর ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মাছ-মুরগির দোকানেও একই পরিস্থিতি। সপ্তাহের ব্যবধানে চাষের রুই, তেলাপিয়া ও পাঙাশের দাম ২০–৫০ টাকা বেড়ে গেছে। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি চাষের রুই ও কাতলা বিক্রি হচ্ছে ৩৫০–৪৫০ টাকায়। তেলাপিয়ার দাম প্রতি কেজি ২২০–২৬০ টাকা, আর পাঙাশের দাম ২০০ থেকে সর্বোচ্চ ২৫০ টাকায়। চাষের চিংড়ির কেজি দাম ৭৫০–৮০০ টাকা, এবং নদীর চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ১০০০–১২০০ টাকায়।

খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৭০–১৮০ টাকায়। সোনালি জাতের মুরগির দাম প্রতি কেজি ৩০০–৩২০ টাকা। ফার্মের ডিম প্রতি ডজন সর্বোচ্চ ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গরুর মাংস প্রতি কেজি ৭৫০–৮০০ টাকা, আর খাসির মাংসের সর্বোচ্চ দাম ১২৫০ টাকা।

বাজারের ক্রেতা-বিক্রেতারা বলছেন, অদৃশ্য এক সিন্ডিকেট নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করছে। ক্রেতাদের অভিযোগ, পাইকারি থেকে খুচরা পর্যায়ে দামের বিশাল ব্যবধান তৈরি করে সিন্ডিকেটের সদস্যরা কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে অতিরিক্ত মুনাফা করছে।

রায় সাহেব বাজারের ক্রেতা সাইফুল ইসলাম বলেন, আগে মাসে কয়েকবার দেশি মুরগি কিনতাম, এখন সেটা স্বপ্ন হয়ে গেছে। মাছ কিনতেও প্রায় দ্বিগুণ দাম গুনতে হচ্ছে। বাজারের দাম আর আয়-রোজগারের সঙ্গে কোনো মিল নেই। অসাধু চক্রের সদস্যরা অদৃশ্য থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

আরেক ক্রেতা মো. তুষার বলেন, বাজারে যে জিনিসের দাম কম, সেটাই কেনার চেষ্টা করি। কখন যে কোনটার দাম বাড়বে, বলা যায় না। টিসিবির লাইনে দাঁড়িয়ে কিছু পণ্য আনতেও হয়। সরকারের পক্ষ থেকে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে এই দুরবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়।

সূত্রাপুর এলাকায় গৃহপরিচারিকার কাজ করেন মোরশেদা আক্তার। পাঁচ বাসায় কাজ করে মাসে ১৫ হাজার টাকা বেতন পান তিনি। এই অর্থ দিয়েই তিনি তার সংসার চালান। স্বামী যে অর্থ উপার্জন করেন, সেটি দিয়ে ঘর ভাড়া, সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ করেন। বর্তমান পরিস্থিতি তাদের ঘরেও টানাপোড়েন শুরু করেছে। মোরশেদা ও তার স্বামীর আয় দিয়ে সংসারের খরচ এখন খুবই কঠিন। তিনি বলেন, মাসের শুরুতে বাজার কইরা কূল পাই না। বাজেটে মিলে না। খাওন-পরনের লাইগা আগে যা কিনতাম, হেডির অদ্দেকও (অর্ধেক) কিনতে পারি না।

বাসের হেলপারি করেন রহমত। তিনি তার সংসারের একক উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। যে অর্থ আয় করেন, সেটি দিয়ে সংসার চালাতে তার প্রতিনিয়ত হিমশিম খেতে হচ্ছে। গত কয়েকমাসে রহমত ভালো কোনো খাবার খেতে পারেননি। ভাত আর ডিম দিয়ে চলছে তার দৈনিক খাবার।

রিকশাচালক নূরউদ্দিন বলেন, রাইতের মতো এহন দিনেও গরু-খাসির মাংস খাওনের স্বপ্ন দেখতে হয়। মুরগির মাংসও খাইতে পারি না বৌ-পোলাপান নিয়া। মাছও এহন বিলাসি খাওন হইয়া যাইতাসে। ডিম, ডাইল (ডাল) দিয়া ভাত খাইতাম। এহন এডিও দাম বাইড়া গেছে। ভাড়া ১০ টাকা বেশি চাইলে মাইনষে গালি দেয়। কেমনে সংসার চালামু? আমাগো কথা কেউ হুনেও না, আমাগোরে কেউ দেহেও না।

খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারি বাজার থেকেই দামের পরিবর্তন হচ্ছে। অনেক সময় পণ্য কমে আসে, আবার কোনো সময়ে পরিবহন সমস্যার কারণে সরবরাহে বিঘ্ন দেখা দেয়। এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগেও বাজারে দামের ওপর প্রভাব পড়ে। ফলত প্রতিদিনই দামের ব্যবধান তৈরি হয়।

সূত্রাপুর বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. আব্দুলাহ বলেন, সবজির দাম সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। মুলা, কচুর লতি, চিচিঙ্গা, গোল বেগুন, করলা, লম্বা বেগুন, পটোল, ধনেপাতা, ঢেঁড়শ, বরবটি সহ সব ধরনের সবজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। শীতের আগাম সবজিও বাজারে এসেছে, কিন্তু দাম রীতিমতো আকাশছোঁয়া। এর মধ্যে শিম ২০০ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে। টানা বৃষ্টির কারণে কাঁচামরিচের দাম বেড়ে গেলেও এখন কিছুটা হাতের নাগালে এসেছে, ১৮০-২০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মন্ডলের সঙ্গে কথা হলে ‘নিত্যপণ্যের বাজারে অভিযান থেমে নেই’ বলে জানান। তিনি বলেন, অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নির্দেশে প্রতিদিন বাজারে তদারকি করা হচ্ছে। অসাধু পন্থায় দাম বাড়ালে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে পণ্যের দাম সহনীয় করা হচ্ছে। ভোক্তার স্বার্থে অধিদপ্তরের কার্যক্রম চলবে।

এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের গবেষণা পরিচালক ড. মাহফুজ কবীর বলেন, বাজারে নিত্যপণ্যের দামের যে অস্থিরতা চলছে তা শুধু একটি শ্রেণিকে নয়, পুরো সমাজ ব্যবস্থাকেই প্রভাবিত করছে। এটি শুধু ভোক্তার জন্য নয়, সরকারের জন্যও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বাজারে এই লাগামহীন দামের অস্থিরতা না থামলে জনজীবনে চাপ আরও বাড়বে। পরিকল্পিত বাজার ব্যবস্থাপনা, আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় ও ভোক্তা স্বার্থে কঠোর পদক্ষেপ ছাড়া এই পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।

তিনি বলেন, পণ্যের সরবরাহ চেইনে অসঙ্গতি, পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি, ডলারের বিনিময় হার এবং স্থানীয়ভাবে গঠিত বাজার সিন্ডিকেট—এসবই এই অস্থিরতার মূল কারণ। এছাড়া বাজারে পর্যাপ্ত নজরদারি না থাকায় ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো দাম নির্ধারণ করছে। এছাড়া সরকারের নীতিগত দুর্বলতা ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অভাব বাজার ব্যবস্থাকে আরও অনিয়ন্ত্রিত করে তুলেছে। শুধু তাৎক্ষণিক অভিযান নয়, প্রয়োজন পণ্যের উৎপাদন থেকে ভোক্তা পর্যন্ত পুরো ব্যবস্থাপনাকে আধুনিক ও স্বচ্ছ করা।

এ বিষয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির ভূইয়া বলেন, বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতাসহ আমরা খুব খারাপ অবস্থার মধ্যে আছি৷ এই খারাপ অবস্থা হওয়ার কারণ, বাজার মনিটরিং না হওয়া। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যে সংস্থাগুলো বাজারে অভিযান চালাতো, এখন নাই। অর্থাৎ সরকারের তদারকিটা একেবারে বাজারে নাই। সরকারকে আমরা অনুরোধ করব, তদারকি যদি না বাড়ানো হয়, তাহলে জিনিসপত্র দাম আরও বাড়বে। এমন কোনো পণ্য নাই; চাল, ডাল, মাছ, মাংস, ডিম, পেঁয়াজসহ সব পণ্যের দাম বেড়েছে। শুধুমাত্র আলু আর পেঁপে ছাড়া আর কোনো সবজি ১০০ টাকার নিচে কিনতে পারে না কেউ। এভাবে চলতে পারে না।

তিনি আরও বলেন, মানুষ একটা অস্বস্তিকর অবস্থার মধ্যে আছে। যারা মধ্যবিত্ত ছিল, তারা নিম্ন মধ্যবিত্ত হয়ে গেছে। দিন যত যাচ্ছে ততই মানুষের অবস্থা খারাপ হচ্ছে। সরকারকে এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। বাজার থেকে সিন্ডিকেটটা যতক্ষণ না পর্যন্ত ভাঙতে পারবে ততক্ষণ পর্যন্ত ভোক্তা পর্যায়ে স্বস্তি আসবে না। এর বিপরীতে সরকারের তরফ থেকে কোনো স্থায়ী পদক্ষেপ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এমনকি নেই কোনো বাজার তদারকির পরিকল্পনা। ফলে বছরের পর বছর বাজারে ভোক্তা নিষ্পেষিত হচ্ছে। সরকারের উচিত হবে অন্যান্য সংস্কারের পাশাপাশি বাজার ব্যবস্থাপনায় কঠোর নজর দেওয়া। একই সঙ্গে মানুষ কিন্তু খুব কষ্টের মধ্যে আছে এবং থাকবে। এজন্য সরকারের কাছে ক্যাবের পক্ষ থেকে বলতে চাই, সংশ্লিষ্ট এজেন্সিগুলোতে দ্রুত সক্রিয় করা হোক।

সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে কথা বলেন এ প্রতিবেদক। সচিব তাকে বলেন, ভোক্তার মাধ্যমে প্রত্যেকদিনের বাজার মূল্যের তথ্য নিচ্ছি। চিনি ও চালের দাম কমেছে। তবে শাব-সবজির বাজারে দাম খানিক চড়া। আলুর দাম আবার কম। পেঁয়াজের দাম বেড়ে গিয়েছিল, আমরা আমদানির অনুমতি দিয়েছি; এ পণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে এসেছে। এছাড়া অন্যান্য ভোগ্যপণ্য বার্ষিকী হিসেবে ঠিক আছে।

তাহলে এখন নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার কারণ কি? উত্তরে বাণিজ্য সচিব বলেন, সবজির দামে সারা বছরই এমন হয়ে আসছে। বিশেষ করে ট্রানজিশন সিজনে। বর্ষার শস্য শেষ হবে, সামনে শীতকালীন সবজি বাজারে উঠবে। ফলে সংশ্লিষ্ট বাজারে একটা ক্রাইসিস থাকবে, এতে দাম বাড়বে। পূজার কয়েকদিন আগে থেকে টানা বৃষ্টির কারণে দাম বেড়েছে। গত সপ্তাহ থেকে আজকের দিন পর্যন্ত বাজার একটু আনস্টেবল হয়েছে। বিশেষ করে সবজির বাজারে। ডিমের বাজারে আমরা আবার মনিটরিং জোরদার করবো।

তিনি আরও বলেন, কিন্তু অন্য কিছু আইটেমের, যেমন চাল, ডাল, তেলের দাম কমেছে। চালের দাম গড়ে দুই থেকে তিন টাকা কমেছে। তেল বাড়ানোর জন্য একটি প্রস্তাব এসেছে, আমরা এখনো সেটা গ্রহণ করিনি, তাই খুচরা দাম এখনো বাড়েনি। ডালের দাম আমাদের রেকর্ড অনুযায়ী কমেছে। চিনির ওপর যখন ডিউটি কমানো হলো—স্পেসিফিক ডিউটি ৬০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকায় আনা হলো— তারপর থেকে চিনির দাম বেশ সহনীয় হয়েছে। আমার কাছে গতদিনের রিপোর্ট আছে, সেখানে ডিমের দাম ৪২ থেকে ৪৫ টাকার মধ্যে দেখানো হয়েছে।

সরকারের পক্ষ থেকে কী উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, প্রধানত আমরা যা করি, তা হলো হোলসেল বাজারে গিয়ে সরবরাহ পরিস্থিতি যাচাই করা এবং অফিসারদের সেই জায়গায় পাঠানো। এটি করলে দাম মোটামুটি স্বাভাবিকের দিকে আসে। তবে চলমান ১৫ দিনের মতো বৃষ্টি কাঁচা সবজি ও ডিমের দামের ওপর প্রভাব ফেলেছে।

বাজার বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান সময়ে নিত্যপণ্যের দাম ক্রমশ বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবার, দৈনন্দিন খাবার ও পুষ্টির চাহিদা মেটাতে সমস্যার মুখে পড়েছে। বাজারে কৃত্রিম সংকট ও সিন্ডিকেটের উপস্থিতি দামের অস্থিরতার বড় কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে। সরকারি পর্যবেক্ষণ ও হোলসেল বাজারে সরবরাহ যাচাইয়ের মাধ্যমে কিছুটা স্বাভাবিকতা আনা সম্ভব হলেও প্রাকৃতিক দুর্যোগ, পরিবহন সমস্যা ও আমদানির ওপর নির্ভরতা দাম কমানোর ক্ষেত্রে সীমিত প্রভাব ফেলছে। দামের এই অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণ করতে কার্যকর পদক্ষেপ এবং সিন্ডিকেট বিরোধী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।