জাতীয়

নরসিংদীর শিবপুরে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই ভাইকে কুপিয়ে হত্যা করেছে আপন চাচা ও চাচাতো ভাইয়েরা। বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে উপজেলার চক্রধা ইউনিয়নের বৈলাব গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত দুই ভাই হলেন, চক্রধা ইউনিয়নের বৈলাব গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য আসাদুজ্জামান মন্টুর ছেলে সোহাগ (৪০) ও রানা (৩৫)।

পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, বৈলাব গ্রামের বাসিন্দা দিদার ও বিদ্যুৎ এর বাড়ির ব্যবহৃত টিউবওয়েলের পানি চাচাতো ভাই সোহাগদের বাড়ির ওপর দিয়ে নামাকে কেন্দ্র করে দুই পরিবারের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। এরই জেরে ঘটনার দিন বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে উভয় পরিবারের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে চাচা মামুন ও তার দুই ছেলে দিদার ও বিদ্যুৎ ছুরি, বল্লম, শাবল নিয়ে সোহাগ ও তার ছোট ভাই রানার ওপর হামলা চলায়। এ সময় প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে ঘটনাস্থলেই রানা নিহত হয় এবং সোহাগ গুরুতর আহত হয়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় সোহাগকে শিবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

নিহতদের মা শামীমা আক্তার জানান, দিদারদের টিউবওয়েলের পানি আমাদের বাড়িতে আসে, এতে আমাদের চলাচল করতে সমস্যা হয়। এ নিয়ে আমার ছোট ছেলে রানা তার চাচা মামুনকে জানালে সে ও তার দুই ছেলে দিদার ও বিদ্যুৎ আমার ছোট ছেলে রানাকে ছুরি দিয়ে পেটে গাই মারে। এ সময় রানার চিৎকারে আমার অপর ছেলে সোহাগ দৌড়ে আসলে দিদার ও বিদ্যুৎ তাকেও লাঠি দিয়ে পেটাতে থাকে। এ সময় সে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে তাকে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। আমার ছেলেদের হত্যাকারীদের বিচার চাই।

এ ব্যাপারে শিবপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফজাল হোসেন জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। দুই পরিবারের পারিবারিক বিরোধের জেরে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। দুটি লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় কাউকে আটক করা যায়নি। এ ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন আজ আশ্বস্ত করেছেন যে, জাতীয় ফুটবল দলের সদস্যসহ নেপালে আটকে পড়া সকল বাংলাদেশি নিরাপদে আছেন এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই তারা ফিরে আসতে পারবেন।

আজ বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “যতক্ষণ না পরিস্থিতির উন্নতি না হয়, ততক্ষণ আমরা কিছুই করতে পারি না। ঢাকা ও কাঠমান্ডুর মধ্যে বিমান চলাচল স্বাভাবিক হলেই তাদের ফিরে আসা সম্ভব হবে।”

ভারত দিয়ে তাদের ফিরিয়ে আনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়ে তৌহিদ বলেন, তাদের কারও কাছেই ভারতীয় ভিসা নেই। “তাই, আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।”

উপদেষ্টা বলেন, অস্থিরতার সময় একটি ইতিবাচক ইঙ্গিত দেখা গেছে। বিক্ষোভকারীরা রাজনৈতিক নেতাদের জন্য হোটেল তল্লাশি করার সময় বাংলাদেশি ফুটবলারদের মুখোমুখি হয়েছিল এবং তারা তাদের বিরক্ত না করেই চলে গিয়েছিল।

অস্থিরতার মধ্যেও নেপালে বাংলাদেশি নাগরিকরা নিরাপদে থাকবেন বলে আশ্বাস দিয়ে তৌহিদ বলেন, “আমাদের প্রতি তাদের কোনও নেতিবাচক মনোভাব নেই এবং আমি কোনও সংকটের আশঙ্কা করছি না।”

তিনি উলে¬খ করেন যে, কাঠমান্ডুর দূতাবাস আটকে পড়াদের সাথে যোগাযোগ বজায় রেখেছে। “আমরা আশা করি সবাই নিরাপদে ফিরে আসবে, তবে এতে কিছুটা সময় লাগবে।”

তৌহিদ বলেন, জাতিসংঘ যদি রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে একটি বাফার জোনে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী মোতায়েনের চেষ্টা করে, তবে বাংলাদেশ ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানাবে।

তৌহিদ বলেন, এটি জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়। আমরা আশা করি উভয় পক্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরতি হবে এবং কেবল তখনই জাতিসংঘ সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে যাবে।

বিশ্বব্যাপী শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশের দীর্ঘস্থায়ী অবদানের কথা তুলে ধরে উপদেষ্টা আরও বলেন, “আমাদের অভিজ্ঞতা বিবেচনা করে, যদি এমন পরিস্থিতি দেখা দেয়, তাহলে আমরা অবশ্যই অংশগ্রহণ করতে চাই।”

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত যৌথ নদী কমিশন (জেআরসি) বৈঠক সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, তিনি এখনও কোনও আপডেট পাননি।

তিনি আরও বলেন, “তথ্য পেলে, আমি আপনাদের জানাবো।”

অর্থনীতি

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুসারে সেপ্টেম্বরের প্রথম  ৯ দিনে রেমিট্যান্স প্রবাহ ২২.৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১ হাজর ১৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। গত বছর একই সময়ে দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ ছিল ৮৩৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রবাসীরা ৫ হাজার ৯১৮ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৪ হাজার ৯৭১ মিলিয়ন ডলার।

রাজনীতি

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন আন্তর্জাতিক গণিত ও জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে পদকজয়ী দেশের ছয়জন শিক্ষার্থী।

আজ সোমবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তারা এ সাক্ষাৎ করেন।

অলিম্পিয়াডে পদকজয়ী শিক্ষার্থীরা হলেন- ৩৬তম আন্তর্জাতিক জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড ২০২৫ এ ব্রোঞ্জপদক বিজয়ী সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী আরিজ আনাস, নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী হা-মিম রহমান ও মাস্টারমাইন্ড ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের শিক্ষার্থী ফারাবিদ বিন ফয়সাল এবং ৬৬তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড ২০২৫ এ ব্রোঞ্জপদক বিজয়ী চট্টগ্রাম বাকলিয়া সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী জিতেন্দ্র বড়ুয়া, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী জাওয়াদ হামীম চৌধুরী, ময়মনসিংহ জেলা স্কুলের শিক্ষার্থী তাহসিন খান। তারা প্রত্যেকেই আন্তর্জাতিক অলিম্পিয়াডে ব্রোঞ্জ পদক বিজয়ী।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার, বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সভাপতি, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিস্টিংগুইশড অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ ও কমিটির সাধারণ সম্পাদক এ এ মুনির হাসান, বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড কমিটির সভাপতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ড. রাখহরি সরকার ও কমিটির সাধারণ সম্পাদক বুয়েট অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ তারিখ আরাফাত।

সাক্ষাৎকালে ছয় শিক্ষার্থীর কাছে তাদের অভিজ্ঞতা শোনেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তাদের কাছে সমস্যা সম্পর্কেও জানতে চান তিনি।

এ সময় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘তোমাদের কথা শুনে খুবই আনন্দিত হলাম। তোমরা নিজেরা আগ্রহী হয়ে এতদূর এগিয়ে গেছো। তোমাদের উৎসাহ ও আগ্রহ থেকে আমরাও অনুপ্রাণিত হলাম।’

আন্তর্জাতিক অলিম্পিয়াডগুলোতে ২০ বছরের কম বয়সী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়নি এমন শিক্ষার্থীরা প্রতিযোগিতা করেন।

শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার বলেন, ‘১১১ দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে বাংলাদেশের একজন শিক্ষার্থী ম্যাথ অলিম্পিয়াডে গোল্ড পেয়েছে। এটা আমাদের জন্য গর্বের। অনেকেই গণিত, জীববিজ্ঞানসহ অন্যান্য বিষয়ে আন্তর্জাতিক লেভেলে প্রতিযোগিতা করে ব্রোঞ্জ জিতেছেন। এসব অলিম্পিয়াডে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা একটি বড় নেটওয়ার্কে যুক্ত হন। যার কারণে তারা আরও উৎসাহী হন। অনেকে শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে যান। আমাদের শিক্ষার্থীদের আরও যত্ন নেওয়া হলে, উৎসাহ দেওয়া হলে তারা অনেক ভালো করবে।’

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, ‘অনেক দুর্গম এলাকা থেকেও শিক্ষার্থীরা ঢাকায় এসে প্রতিযোগিতা করেন। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুতি সম্পন্ন করেন। অনেক ছেলে-মেয়ে আছে যারা মেধাবী, কিন্তু আর্থিক অবস্থা ভালো না। অনেক সময় অনেকে নির্বাচিত হলেও ঢাকায় আসতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা এসব অলিম্পিয়াডে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেন। পরীক্ষার খাতা দেখেন, প্রশ্নপত্র প্রস্তুত করেন, আয়োজক হিসেবে কাজ করেন।’

বৈঠকে অলিম্পিয়াড কমিটির কাছে তাদের অভিজ্ঞতা ও কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চান প্রধান উপদেষ্টা।

বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ বলেন, ‘এ বছর প্রথম রাউন্ডে সারাদেশ থেকে প্রায় ৭০ হাজার শিক্ষার্থী অংশ নেয়। অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে প্রায় ২৫ হাজার শিক্ষার্থী পাস করে পরের ধাপে উঠে আসে। পরের ধাপগুলোতে ঢাকায় এনে ক্যাম্পিং আয়োজন করে শিক্ষার্থীদের প্রবলেম সলভিং ক্লাস করানো হয়, যাতে তারা প্রস্তুত হতে পারে। এভাবে ছয়জনকে চূড়ান্ত করে আন্তর্জাতিক ম্যাথ অলিম্পিয়াডে পাঠানো হয়। আন্তর্জাতিক অলিম্পিয়াডে সাড়ে ৪ ঘণ্টা করে দুদিন পরীক্ষা হয়। এর জন্য প্রস্তুতির প্রয়োজন পড়ে।’

রেজিস্ট্রেশন ফি, থাকা-যাতায়াতসহ আনুষঙ্গিক সকল খরচ নিজেরা ব্যক্তি উদ্যোগে জোগাড় করেন বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, ‘একটি বেসরকারি ব্যাংক আমাদের আর্থিকভাবে সহযোগিতা করলেও সেটি যথেষ্ট নয়।’

একই কথা জানান বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. রাখহরি সরকার।

তিনি বলেন, ‘আমরা প্রথম ধাপে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক মিলিয়ে ১০ হাজার শিক্ষার্থী নিয়ে শুরু করি। পরীক্ষা দিয়ে ধাপে ধাপে সর্বশেষ চারজনকে চূড়ান্ত করা হয়। তারাই আন্তর্জাতিক অলিম্পিয়াডে অন্যান্য দেশের প্রতিযোগীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করেন। এ বছর ৮০টি দেশ অংশ নিয়েছে। আমাদের দেশ থেকে শিক্ষার্থীরা ব্রোঞ্জ পদক বিজয়ী হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের বাছাইকরণ, পরীক্ষা, প্রস্তুতি সবকিছুই আমাদের স্বেচ্ছাসেবকরা নিজ উদ্যোগে করেন। নিজেরা চাঁদা তুলেই সকল ব্যয় বহন করতে হয়।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনারা স্বেচ্ছায় এ ধরনের উদ্যোগ নিয়েছেন, কাজ করছেন এটা খুবই ইতিবাচক ঘটনা। মেধাবীদের বিশ্বমণ্ডলে তুলে ধরতে এবং আরও উৎসাহিত করতে সরকারের পক্ষ থেকে কী ধরনের সহযোগিতা করা যায়, সেসব খতিয়ে দেখা হবে।’

রাজনীতি

বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার কমিটির কার্যক্রমের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, প্রায় সব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল সেখানে অংশগ্রহণ করেছে। তারা বিভিন্ন বিষয়ে তাদের মতামত দিয়েছেন।

তিনি বলেন, সেখানে যে বিষয়গুলোতে আমরা একমত হতে পারিনি, আসুন- জনগণের ওপর যদি বিশ্বাস রাখেন, জনগণের ওপর যদি আস্থা রাখেন, তাহলে জনগণের ওপর ছেড়ে দিন।

লন্ডন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

সোমবার ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, দিনশেষে রাজনীতিতে আমাদের আস্থা, আমাদের বিশ্বাস বাংলাদেশের জনগণ।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বর্তমানে আল্লাহর রহমতে বিএনপি বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল। তিনি এর জন্য দেশের মানুষ এবং তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা প্রত্যেকে এক একজন পোড়খাওয়া রাজনৈতিক কর্মী। নিশ্চয়ই আপনারা বুঝতে পারছেন কোথাও হয়তো কেউ কোনো কিছু করার চেষ্টা করছে। যার মাধ্যমে জনগণের সেই প্রস্তাবিত গণতান্ত্রিক যে যাত্রা সেই যাত্রা ব্যাহত হতে পারে।

তিনি সবাইকে সচেতন থাকার আহ্বান জানান এবং বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে আমাদের ওপর দায়িত্ব যে গণতন্ত্রের প্রতি যে কোনো হুমকিতে আমরা মোকাবিলা করব।

রাজনীতি

কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম বলেছেন, আমার বাড়ি ধ্বংস করে দিয়ে যদি দেশে শান্তি হয় আমি তাতেই রাজি। এখন আমার ৮০ বছর বয়স হয়েছে, আমি এখন চলে যেতে পারলে আরও খুশি। সেজন্যই সরকারকে বলছি, যারা আন্দোলন করে শেখ হাসিনার পতন ঘটিয়েছিলেন- শেখ হাসিনার পতন আর মুক্তিযুদ্ধের পতন এক কথা না, শেখ হাসিনার পতন আর বঙ্গবন্ধুর পতন এক কথা না, শেখ হাসিনার পতন আর স্বাধীনতার পতন এক কথা না। এই জিনিসগুলো এখন কেউ কেউ বুঝতে চাচ্ছেন না।

সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকালে পূর্ব ঘোষিত কাদেরিয়া বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধাদের জরুরি সমাবেশ শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।

কাদের সিদ্দিকী বলেন, আমার জ্বলন ওখানেই, যারা চব্বিশে বিজয়ী হয়েছে, তারা যদি এখন এইভাবে ব্যর্থ হয়, ভবিষ্যতে যদি কেউ স্বৈরাচার হয়, তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার জন্য সাধারণ মানুষ এগিয়ে আসবে না। সেটা আমার ভয়। সেই জন্য তাদের সফর হওয়া উচিত ছিল।

টাঙ্গাইলের বাসাইলে ১৪৪ ধারা জারি করার বিষয়ে তিনি বলেন, যেখানে আমরা মুক্তিযোদ্ধার মিটিং করতে চেয়েছিলাম। দেখে গেলাম জীবনে বেঁচে থেকে অনেক দিন যে মুক্তিযোদ্ধাদের মিটিংয়েও বাধা দেওয়া হয়- সেই দেশে, যে দেশকে পয়দা দিয়েছে মুক্তিযোদ্ধারা। সরকারের প্রধান কাজ হচ্ছে দেশে সুস্মৃতি ফিরিয়ে আনা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগকে যে স্বৈরাচার বলা হচ্ছে, সেই স্বৈরাচারী এখন চলবে না। আমার বাসায় আক্রমণ করেছে যদি এটা সম্ভব হয় তাহলে এ দেশের সবার বাসায় আক্রমণ করা সম্ভব। কারো নিরাপত্তা নাই। দেশ যদি পাকিস্তান হয়ে যেত আমি পাকিস্তান ভেঙেছিলাম- তাহলে আইনানুগ আমার ফাঁসি হয়ে যেত। এতে আমার কোনো আপত্তি ছিল না, এখনো নাই। সেজন্যই বলছি দেশে আইনশৃঙ্খলা নাই।

খেলাধুলা

আগামীকাল থেকে আরব আমিরাতে শুরু হবে এশিয়া কাপ। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের এই টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী ম্যাচে আফগানিস্তানের মুখোমুখি হবে হংকং। ১১ সেপ্টেম্বর এই হংকংয়ের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল।

এশিয়া কাপে বাংলাদেশের সম্ভাবনা নিয়ে ভারতের জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকার হার্শা ভোগলে বলেছেন, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিমদের মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের ছাড়াই লিটন দাসের নেতৃত্বে দল কেমন করে তা দেখতে মুখিয়ে আছি। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশের তরুণ ক্রিকেটাররা এই টুর্নামেন্ট ঝলক দেখাতে পারলে ভালো কিছু করা সম্ভব।

নিজের ইউটিউব চ্যানেলে হার্শা ভোগলে বলেন, ‘শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান এবং বাংলাদেশ সবসময় এক গ্রুপে থাকে। আমি বাংলাদেশের দলটি দেখছিলাম, যাদের জন্য এটা একটা বড় পরিবর্তন সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম এবং অন্যদের যুগ শেষে। তো এটা খুব আগ্রহজনক হবে যে লিটন দাসের অধীনে এই দলটা কীভাবে খেলে।’

হার্শা ভোগলে আরওর বলেন, ‘আর যদি তারা বড় কিছু করতে চায়, তাহলে তানজিদ হাসান, তানজিম হাসানের মতো খেলোয়াড়দের জন্য এটা একটা ব্রেকআউট টুর্নামেন্ট হতে হবে। আমি রিশাদ হোসেন সম্পর্কে শুনেছি, সময়ে সময়ে তার ভালো পারফরম্যান্স দেখেছি। তো এটাও তাদের জন্য একটা বড় টুর্নামেন্ট। পারভেজ হোসেন আরেকজন খেলোয়াড়, যাকে নিয়ে ক্রিকেটিং মহলে আলোচনা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘আর তাওহীদ হৃদয়, সে একজন আকর্ষণীয় খেলোয়াড় কারণ তাকে পরবর্তী বড় তারকা হিসেবে মনে করা হয়েছিল। কিন্তু এখনো পর্যন্ত এটা ঘটেনি। তবে যারা তাকে দেখেছে তারা জানে তার মধ্যে সেই প্রতিভা আছে।’

বাংলাদেশ দলের অলরাউন্ডার মেহেদি হাসান মিরাজ প্রসঙ্গে হার্শা বলেন, ‘এটা ইন্টারেস্টিং যে মেহেদি হাসান মিরাজ, একজন চমৎকার অফ স্পিনার, উপরের দিকে ব্যাটিং করছিল। তবে এই দলে মেহেদি হাসান মিরাজ নেই।’

জাতীয়

সম্প্রতি দেশে ‘মব জাস্টিস’ বা সংঘবদ্ধ অপরাধ উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। কিন্তু শুক্রবার জুমার নামাজের পর রাজবাড়ীতে যে ঘটনা ঘটেছে, তা দেশের ইতিহাসে ন্যক্কারজনক দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

কথিত মাজার ও বাড়িতে হামলার পাশাপাশি সেখানে লাশ তুলে পোড়ানোর মতো ঘটনা ঘটেছে। মরদেহ নির্যাতনের এই ঘটনা সভ্য সমাজে অকল্পনীয় বলছেন অপরাধ বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, কবর থেকে লাশ তুলে তা পোড়ানো সভ্যতাবিরোধী সংকট, এটি গোটা মানবজাতির মর্যাদায় আঘাত।
ঘটনাটি ঘটেছে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার জুড়ান মোল্লাপাড়ায়। নুরাল হক ওরফে ‘নুরাল পাগলা’র কবরকে কেন্দ্র করে কয়েক দিন ধরেই আলোচনা ও উত্তেজনা চলছিল সেখানে। গত ২৩ আগস্ট তার মৃত্যুর পর নুরাল পাগলাকে দাফনের কবর নিয়ে নানান প্রশ্ন ও অভিযোগ ওঠে।

স্থানীদের ভাষ্যে, আশির দশকের শেষ দিকে নিজেকে ‘ইমাম মাহদী’ দাবি করে আলোচনায় আসেন রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলা। ওই সময় তার দাবিকে কেন্দ্র করে জনরোষ তৈরি হলে এক পর্যায়ে মুচলেকা দিয়ে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হন তিনি। কিন্তু কিছুদিন পর আবার ফিরে এসে তিনি গোয়ালন্দ পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডে নিজ বাড়িতে কথিত ‘দরবার শরিফ’ গড়ে তোলেন এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সেটি পরিচালনা করতে থাকেন।

গত ২৩ আগস্ট বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় রাজধানীর একটি হাসপাতালে নুরাল পাগল মারা যান। মৃত্যুর পর তার মরদেহ দরবারের ভেতরে মাটি থেকে প্রায় ১২ ফুট উঁচুতে বিশেষ কায়দায় দাফন করে কাবা শরিফের আদলে সাজানো হলে স্থানীয় জনতা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। লোকজন এটিকে ‘শরিয়তবিরোধী’ বলে তখন থেকেই প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলেন। তারা কবর সমতল করাসহ কয়েকটি দাবি জানান।

এরপর গত ২ সেপ্টেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে নুরাল পাগলার আস্তানায় অনৈতিক কার্যকলাপের অভিযোগ করে উপজেলা ‘ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটি’। তারা ৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে দাবি পূরণের আলটিমেটাম দেয়। অন্যথায় ৫ সেপ্টেম্বর শুক্রবার জুমার নামাজের পর গোয়ালন্দ আনসার ক্লাব মাঠে বিক্ষোভ সমাবেশ ও পরে ‘মার্চ ফর গোয়ালন্দ’ কর্মসূচি পালন করার ঘোষণা দেয়।

ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী শুক্রবার জুমার নামাজের পর আনসার ক্লাব চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে উপজেলা ‘ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটি’। কর্মসূচিতে একদল লোক শাবল, বড় হাতুড়ি ও লাঠিসোঁটা নিয়ে হাজির হয়। এ সময় উপস্থিত আলেম-ওলামা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করলেও উত্তেজনা ছড়িয়ে ওই লোকজন মিছিল নিয়ে নুরুল হকের বাড়ির দিকে রওনা হয়। তখন পুলিশের দুটি গাড়ি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। মিছিল নিয়ে প্রথমে নুরাল পাগলার আস্তানার ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করে। তখন দরবারের লোকজন ইটপাটকেল ছুঁড়লে অপর পাশ থেকেও ইটপাটকেল ছোড়া হয়। একপর্যায়ে কয়েকশ লোক দেয়াল টপকে ভেতরে ঢুকে দরবারে হামলা চালায়। এ সময় ভক্তদের কয়েকজনকে বেধড়ক পেটানো হয় এবং নুরাল পাগলার বাড়িতেও ভাঙচুর চালানো হয়। পরে তার লাশ কবর থেকে তুলে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের গোয়ালন্দ বাসস্ট্যান্ডের অদূরে পদ্মার মোড় এলাকায় নিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। হামলায় উভয় পক্ষের অন্তত অর্ধশত লোক আহত হন। একজন হাসপাতালে মারা যান।

কবর ভেঙে লাশ বের করে আনা ও পুড়িয়ে দেওয়ার এরকম ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার ঝড় ওঠে। ভিডিওতে দেখা যায়, একদিকে আগুন জ্বলছে, আর কিছু মানুষ উল্লাস করছে। খোদ অন্তর্বর্তী সরকারই নিন্দা জানায়। এটিকে গভীর সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয়ের ইঙ্গিত বলে অনেকে উল্লেখ করেন।

অন্তর্বর্তী সরকার বলেছে, ‘এই অমানবিক ও ঘৃণ্য কাজটি আমাদের মূল্যবোধ, আমাদের আইন এবং একটি ন্যায়ভিত্তিক ও সভ্য সমাজের মৌলিক ভিত্তির ওপর সরাসরি আঘাত। এ ধরনের বর্বরতা কোনো অবস্থাতেই সহ্য করা হবে না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আইনের শাসন সমুন্নত রাখতে এবং প্রতিটি মানুষের জীবনের পবিত্রতা, জীবদ্দশায় এবং মৃত্যুর পরেও রক্ষা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ’

অন্যদিকে বর্তমানে দেশের সবচেয়ে বড় দল বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘আজ আমরা নিজেরা দ্বিধাবিভক্ত। আমরা কারো মাজার ভাঙছি। কোনো লাশ পুড়িয়ে দিচ্ছি। এটা তো রাসুলের (সা.) শিক্ষা নয়। ’

শনিবার নয়াপল্টনে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে আয়োজিত মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের ঘটনায় তৌহিদি জনতার নামে দেশে যে উৎপাত ও নৈরাজ্য শুরু হয়েছে, এর পেছনে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র রয়েছে। বিএনপির আমলে যেমন শেখ হাসিনা দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে চক্রান্ত করছিল, আবারও সে রকম ষড়যন্ত্র চলছে কি না অন্তর্বর্তী সরকারকে তা খুঁজে বের করার আহ্বান জানান তিনি।

কবর থেকে লাশ তুলে পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি। এ ঘটনায় প্রশাসনের ব্যর্থতা ও বিএনপি ও জামাতের ‘সংশ্লিষ্টতার’ ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছে এনসিপি। একইসঙ্গে এই ‘মব সন্ত্রাসে’ জড়িতদের বিচারের দাবি জানিয়েছে তারা।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বিবৃতি বলেছে, “লাশ উঠিয়ে পুড়িয়ে ফেলার অনুমতি ইসলাম দেয় না। এটি মানবতা এবং ধর্মীয় মূল্যবোধের গুরুতর লঙ্ঘন। আমরা এই ঘটনার বিরুদ্ধে তীব্র উদ্বেগ এবং নিন্দা জানাই। ” ধর্মীয় ও মানবিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে এই কার্যকলাপকে নিন্দনীয় ও অগ্রহণযোগ্য হিসেবে দেখছে দলটি।

হেফাজতে ইসলামের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসলামে লাশ পোড়ানো নিষিদ্ধ। এটি মানবিক মর্যাদার প্রশ্ন। ইসলাম-প্রদত্ত এই মর্যাদা কেড়ে নেওয়ার অধিকার কারও নেই। ফলে নুরাল পাগলার লাশ পোড়ানো নিন্দনীয় ও অগ্রহণযোগ্য কাজ। একটি অন্যায় রোধ করতে গিয়ে আরেকটি অন্যায় করার সুযোগ নেই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আইনজীবী বলেন, এমন আচরণ বাংলাদেশের আইনে স্পষ্টভাবে ফৌজদারি অপরাধ। মৃত ব্যক্তির মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করা এবং লাশের সঙ্গে এমন আচরণ করা দণ্ডনীয়। এ ঘটনায় যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এমন সাহস করতে না পারে। এছাড়া ইসলাম শান্তির ধর্ম, যেখানে মৃত ব্যক্তিকেও সম্মানের সঙ্গে দাফনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অথচ এখানে ধর্মের নামে একজনের মৃতদেহ পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে।

এ বিষয়ে সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক তৌহিদুল হক বলেন, মৃতদেহ কবর থেকে তুলে আগুনে পুড়িয়ে ফেলা—এটিকে শুধু একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখা যায় না, বরং এটি সমাজে বিদ্যমান নৈতিক অবক্ষয়, আইনশৃঙ্খলার দুর্বলতা এবং সহিংস জনমতের উত্থানের উদ্বেগজনক চিহ্ন হিসেবে চিহ্নিত। কবরস্থ একটি মৃতদেহকে অপমান করা, কবর থেকে লাশ উত্তোলন ও দাহ—শুধু একটি ব্যক্তির নয়, গোটা মানবজাতির মর্যাদার বিরুদ্ধে আঘাত।

পৃথিবীর ইতিহাসে যুদ্ধকালীন সময় বা বর্বর জাতিগোষ্ঠীর মধ্যেও এমন দৃষ্টান্ত বিরল উল্লেখ করে তিনি বলেন, সভ্য সমাজে মৃত ব্যক্তির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা একটি মৌলিক নৈতিকতা এবং মানবিকতার স্তম্ভ। এই সীমালঙ্ঘন শুধু সামাজিক ব্যর্থতা নয়, মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। ঘটনাটি যে জঘন্য তা যেমন সত্য, তেমনি গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে—এই কাজটি যারা সংঘটিত করেছে, তারা কীভাবে এতটা সাহস পেল? আমরা দেখেছি, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশে ‘মব জাস্টিস’ বা গণবিচারের প্রবণতা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। যখন মানুষ মনে করে, আইনের মাধ্যমে ন্যায়বিচার পাওয়া সম্ভব নয়, তখন তারা নিজেরাই বিচারকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়, যা অত্যন্ত বিপজ্জনক সামাজিক সংকেত। কোনো একটি ঘটনা ঘটার পর তা ঠেকানো না গেলেও, ঘটনার পরপরই কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব। কিন্তু এ ধরনের সহিংসতা যদি বারবার ঘটে এবং অপরাধীরা শাস্তির মুখোমুখি না হয়, তবে এটি ভবিষ্যতে আরও বড় বিপদের ইঙ্গিত দেয়।

‘এ ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র যদি কঠোর অবস্থান না নেয়, তবে আইন ও শৃঙ্খলার প্রতি জনগণের আস্থা আরও দুর্বল হয়ে পড়বে’—সতর্ক করেন এই অপরাধ বিশেষজ্ঞ।

তিনি বলেন, এই ঘটনায় ধর্মীয় ব্যাখ্যা ও ফতোয়ার দোহাই দিয়ে সহিংসতা ঘটানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ধর্মীয় অনুভূতি অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি বিষয় এবং সেটিকে ভুলভাবে ব্যবহার করে জনমনে ঘৃণা ছড়ানো এক ধরনের ‘হেইট ক্রাইম’ বা বিদ্বেষমূলক অপরাধ। ধর্মকে রাজনৈতিক কিংবা প্রতিশোধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করলে সমাজে ধর্মের প্রকৃত বার্তা চাপা পড়ে যায়। এই ঘটনার মাধ্যমে উঠে এসেছে আরেকটি অন্ধকার দিক—মানবিক সহানুভূতির চরম অভাব। একটি সমাজে সহানুভূতি, সহনশীলতা এবং আইনের প্রতি শ্রদ্ধা যত কমে যায়, সহিংসতা ততটাই স্বাভাবিক হয়ে ওঠে। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী সামাজিক অবক্ষয়ের ফল, যা শুধুমাত্র আইন প্রয়োগ করেই নয়, শিক্ষা, সচেতনতা ও সংস্কৃতির মাধ্যমে প্রতিরোধ করতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক তৌহিদুল হক বলেন, এই ঘটনাটি আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে আমরা কোথায় এসে দাঁড়িয়েছি। সভ্যতার মুখোশ পরে আমরা যেন আবার অসভ্যতার দিকে ফিরে যাচ্ছি। এখনই যদি কঠোর আইনগত ও সামাজিক পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে এমন বর্বরতা ভবিষ্যতে আর বিরল থাকবে না, এটি নৈমিত্তিক হয়ে উঠবে।

অর্থনীতি

দেশের ব্যাংক খাতের বিশাল অঙ্কের টাকা আটকে আছে অডিটফাঁদে। ঋণ জালিয়াতি, খেলাপিদের বেআইনি সুবিধা, প্রতিবেদনে অসঙ্গতিসহ নানা অনিয়ম চিহ্নিত করে এক লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকার অডিট প্রতিবেদন তৈরি হয়েছে। টাকার এ অঙ্ক জাতীয় বাজেটের প্রায় এক-চতুর্থাংশের সমান। রাষ্ট্রায়ত্ত আটটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ ১০০টি অডিট রিপোর্টে বিপুল অঙ্কের টাকা দীর্ঘদিন আটকে আছে। অদৃশ্য মহলের চাপে এসব নিষ্পত্তি হচ্ছে না। এতে ভয়াবহ আর্থিক সংকটে পড়েছে ব্যাংক ও আর্থিক খাত। এই সংকট সর্বকালের রেকর্ড অতিক্রম করেছে।

বড় অঙ্কের এ অর্থ আদায়ে ‘বিশেষ ক্র্যাশ প্রোগ্রাম’ নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ কার্যক্রম বাস্তবায়নে কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সিইওদের। ইতোমধ্যে সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ (এফআইডি)। পর্যায়ক্রমে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বৈঠকের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

সূত্র মতে, অডিট আপত্তি নিষ্পত্তির মাধ্যমে টাকা আদায়ের একটি ছক করছে এফআইডি। সেখানে অর্থ আদায় ও মনিটরিংয়ের বিষয়টি উল্লেখ আছে। গত এক মাসে এ প্রক্রিয়ায় অডিট রিপোর্ট নিষ্পত্তির মাধ্যমে ৩৪৪ কোটি টাকা আদায় হয়েছে। এর আগে প্রতি মাসে গড়ে আদায়ের অঙ্ক ছিল ৪০ থেকে ৪৪ কোটি টাকা।

জানতে চাইলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের (এফআইডি) সচিব নাজমা মোবারেক জানান, অডিট আপত্তিগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে ব্যাংকগুলোকে। আপত্তিগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি না হওয়ার কারণ, মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে করণীয় এবং কী করলে সমাধান পেতে পারি সে পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। এফআইডির সচিব আরও বলেন, পর্যালোচনায় দেখা গেছে, দীর্ঘদিন বড় অডিট রিপোর্ট থেকে অর্থ আদায়ে ব্যাংকগুলোর কোনো ফলোআপ ছিল না। এ সংক্রান্ত আইনের ঘাটতিও রয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। এসব ঘাটতি চিহ্নিত করে দ্রুত নিষ্পত্তির নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে ব্যাংকের এমডিদের।

জানা গেছে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কমপক্ষে ৪০ হাজারের বেশি অডিট আপত্তি রয়েছে। এর মধ্যে আটটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মোট শীর্ষ ১০০টি রিপোর্ট নিয়ে বিশেষ ক্র্যাশ প্রোগ্রাম শুরু করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এর সঙ্গে অর্থ জড়িত প্রায় এক লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা।

অডিট রিপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সহযোগী ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠান হলেও নতুন করে সাড়ে ৪০০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে ব্যাংক। এ ঋণ এখন অনাদায়ী। গুদামে পাট নেই কিন্তু ঋণ দেওয়া হয়েছে পৌনে ২০০ কোটি টাকা। এছাড়া গ্রাহকের সিসিএ হিসাব থেকে দুর্নীতির মাধ্যমে দেড়শ কোটি টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছে ব্রোকার হাউজ। এছাড়া রূপালী ব্যাংক নিয়ম ভেঙে আড়াইশ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। সে ঋণ আর ফেরত পাওয়া যাচ্ছে না। একইভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের শর্ত ভেঙে ঋণ পুনঃতফসিলি করেছে ১২৫ কোটি টাকা। সেটি এখন অনাদায়ী। রিপোর্ট পর্যালোচনায় আরও দেখা গেছে, গ্যারান্টি ছাড়া ঋণ দেওয়া হয় ৮০০ কোটি টাকা। সে টাকা গ্রাহকের কাছ থেকে আদায় সম্ভব হচ্ছে না। এদিকে ঋণখেলাপি হওয়া সত্ত্বেও ফের সাড়ে ৫০০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয় গ্রাহককে। সেটি এখন অনাদায়ী। একাধিক প্রকল্পে বারবার পুনঃতফসিল সুবিধা দেওয়ায় ৩০০ কোটি টাকার ঋণ আটকে যায়। এক ঋণ নিয়ে অন্য ঋণ পরিশোধ এমন ঘটনায় এক হাজার ৭১ কোটি টাকা অনাদায়ী হয়ে পড়েছে। গ্রাহক ঋণখেলাপি, তাকে পুনরায় ৪০৯ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়। ওই টাকা আর ফেরত পায়নি ব্যাংক।

এফআইডির প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, জনতা ব্যাংকের শীর্ষ ১০টি অডিট রিপোর্টে জড়িত ৫৪ হাজার ৮৯৫ কোটি টাকা । বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের শীর্ষ ১০টি রিপোর্টে জড়িত ৪৪ হাজার ৮১৪ কোটি টাকা। এছাড়া শীর্ষ ১০টি করে অডিট রিপোর্টে সোনালী ব্যাংকের ৩২ হাজার ২৩ কোটি টাকা, রূপালী ব্যাংকের ১৮ হাজার ৯২২ কোটি টাকা, অগ্রণী ব্যাংকের ৯ হাজার ২২৭ কোটি টাকা জড়িত। আর বেসিক ব্যাংকের পাঁচ হাজার ১১৪ কোটি টাকা, আইসিবির তিন হাজার ৬০৬ কোটি টাকা এবং বিএসইসির ৬০৬ কোটি টাকা।

ক্র্যাশ প্রোগ্রামের আওতায়, শীর্ষ অডিট রিপোর্ট দ্রুত নিষ্পত্তির মাধ্যমে টাকা আদায়ের জন্য এখন থেকে প্রতি মাসে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করতে ব্যাংকের এমডি ও সিইওদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এরপর ওই বৈঠকের অগ্রগতি প্রতিবেদন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে পাঠাতে হবে। আবার অগ্রগতি প্রতিবেদন নিয়ে প্রতি তিন মাস অন্তর ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বৈঠক করবে এফআইডি। সেখানে এমডি ও সিইওদের কাছে টাকা আদায়ের অগ্রগতি জানতে চাওয়া হবে। তবে পদক্ষেপের অগ্রগতি বৈঠকের তিন দিন আগেই প্রতিবেদন আকারে জমা দিতে হবে এফআইডিতে।

এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত এফআইডির অডিট ও আইন অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. আহসান কবীর জানান, আগে অডিট রিপোর্ট নিষ্পত্তি করতে মন্ত্রণালয়, ব্যাংক এবং অডিট বিভাগ মিলে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হতো। সে পদ্ধতি ছিল খুবই দুর্বল। বৈঠকে রিপোর্ট নিষ্পত্তিসংক্রান্ত কোনো আগাম প্রস্তুতি থাকত না। ফলে ৫০টি আপত্তি উত্থাপনের পর পর্যালোচনায় সময় চলে যেত। সব মিলিয়ে দেখা গেছে মাত্র নিষ্পত্তি হতো তিনটি। এখন ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের আগে একটি প্রি-ত্রিপক্ষীয় বৈঠক করা হচ্ছে।

সরকারের এ উদ্যোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বেসিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মো. কামরুজ্জামান খান জানান, ব্যাংক খাতের কর্তৃপক্ষ হিসাবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ যে সিদ্ধান্ত নেবে সেটি প্রতিপালন করতে বাধ্য। শীর্ষ একশ অডিট রিপোর্ট নিয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ যে মনিটরিংয়ের উদ্যোগ নিয়েছে সে বিষয়ে আমি অবহতি হয়েছি। এ বিষয়ে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক

সরকারের অবাধ দুর্নীতি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জেন জি প্রজন্মের ভয়াবহ বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে নেপালে। সোমবার সকালে শুরু হওয়া দেশটির হাজারও তরুণের এই আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে অন্তত ১৯ জন নিহত ও কয়েকশ আহত হয়েছেন।

সম্প্রতি নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি নেতৃত্বাধীন সরকার ফেসবুক, ইউটিউবসহ ২৬টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এর প্রতিবাদে রাজধানী কাঠমান্ডুতে শুরু হওয়া বিক্ষোভ এখন দেশটির অন্যান্য এলাকাতেও ছড়িয়ে পড়েছে।

বিক্ষোভ দমনে দেশটির পুলিশ বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে রাবার বুলেট, টিয়ার গ্যাস এবং জলকামান নিক্ষেপ করেছে।

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া তরুণ এক বিক্ষোভকারী অন্যদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ভেতর থেকে কিছু স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী জনতার আন্দোলনে উসকানি দিচ্ছে। তিনি বলেন, আজ আমরা ইতোমধ্যে জয়ী হয়েছি।

বৃহস্পতিবার নেপালের ক্ষমতাসীন সরকার ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামসহ বেশ কিছু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ করে। দেশটির যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধন করতে ব্যর্থ হওয়ায় এসব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এর আগে, দেশটির সরকারি এক নোটিশে বলা হয়েছিল, আগস্ট ২৮ থেকে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে দেশে সচল সব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে নিবন্ধন করতে হবে। কিন্তু নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে মেটা (ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ), ইউটিউব, এক্স, রেডিট এবং লিংকডইনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর কেউই আবেদন জমা দেয়নি।

গত বছর নেপালের সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া এক নির্দেশনা অনুযায়ী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিবন্ধনের সময়সীমা নির্ধারণ করে দেয় দেশটির সরকার। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কোম্পানিগুলোকে দেশটিতে নিজেদের অফিস এবং একজন অভিযোগ নিষ্পত্তি ও কমপ্লায়েন্স কর্মকর্তা নিয়োগ করতে বলা হয়েছিল।

বর্তমানে টিকটক, ভাইবার, উইটক, নিম্বাস এবং পোপো লাইভ দেশটিতে নিবন্ধন করেছে। এসব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নেপালে সচল রয়েছে। এছাড়া টেলিগ্রাম ও গ্লোবাল ডায়েরির নিবন্ধনের আবেদন পর্যালোচনা করছে সরকার।

দেশটির সংবাদমাধ্যম দ্য কাঠমান্ডু পোস্ট বলেছে, নেপালে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৩৫ লাখ এবং ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারী প্রায় ৩৬ লাখ। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করেন।

নেপালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ হওয়ার পর প্রথমে ক্ষতিগ্রস্তরা বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষেধাজ্ঞা-বিরোধী আন্দোলন থেকে দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়।

কাঠমান্ডুর ২৪ বছর বয়সি শিক্ষার্থী ইউজান রাজভাণ্ডারি ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর নিষেধাজ্ঞা থেকে আমাদের আন্দোলনের সূচনা হয়েছে। তবে এটাই একমাত্র কারণ নয়। আমরা এখানে একত্রিত হয়েছি। আমরা নেপালে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছি।

ইক্ষামা তুমরোক নামের ২০ বছর বয়সি আরেক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা সরকারের কর্তৃত্ববাদী মনোভাবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছি। আমরা পরিবর্তন দেখতে চাই। অন্যরা সরকারের এমন আচরণ মেনে নিয়েছে। কিন্তু এটি আমাদের প্রজন্মের মাধ্যমে শেষ হওয়া উচিত।

রোববার দেশটির সরকারি এক বিবৃতিতে বলা হয়, সরকার মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে সম্মান করে এবং এ ধরনের স্বাধীনতার সুরক্ষার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরির বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

এর আগে দেশটির সরকার অনলাইন প্রতারণা ও মানি লন্ডারিংয়ের কাজে ব্যবহারের অভিযোগে টেলিগ্রাম নিষিদ্ধ করে। গত বছর নেপাল সরকার টিকটক নিষিদ্ধ করেছিল। তবে আগস্টে টিকটক নেপালের আইন মানতে সম্মত হওয়ায় নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।