জাতীয়

সচিবালয়ে অনিবার্য কারণবশত আগামীকাল মঙ্গলবার দর্শনার্থী প্রবেশ বন্ধ থাকবে। সোমবার রাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের মুহাম্মদ আবদুল্যাহ আল জাবেদ স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়।

এতে বলা হয়, অনিবার্য কারণবশত ২৭ মে (মঙ্গলবার) সচিবালয়ে সব ধরনের দর্শনার্থী প্রবেশ বন্ধ থাকবে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করা হয়েছে।

এদিকে ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ অনুমোদনের প্রতিবাদে টানা তৃতীয় দিনের মতো সচিবালয়ের ভেতরে ও বাইরে বিক্ষোভ করেছেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মচারীরা।

গত দুই দিনের মতো সোমবার দুপুরেও আন্দোলনরত কর্মচারীরা সচিবালয়ের ভেতরে প্রধান ফটকের কাছে অবস্থান নেন। এ সময় তারা ফটক বন্ধ করে দেন।

সচিবালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চলমান আন্দোলনের মধ্যেই এ নির্দেশনা এলো।

আন্তর্জাতিক

বিমান থেকে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। এসময় হঠাৎ ক্যামেরায় ধরা পড়ল এক অদ্ভুত দৃশ্য। বিমানের দরজার একপাশ থেকে কেউ যেন তাকে চড় মারলেন! পরিষ্কার বোঝা গেল, লাল পোশাক পরিহিত কেউ একজন কাজটি করেছেন। একটু পরই দেখা যায়, সেই লাল পোশাক পরিহিতা ফরাসি প্রেসিডেন্টের স্ত্রী ব্রিজিত।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সফরের অংশ হিসেবে ভিয়েতনামে পা রেখেছেন ম্যাক্রোঁ। সেখানকার হ্যানয় বিমানবন্দরে এই ঘটনা ক্যামেরায় ধরা পড়ে। মুহূর্তেই চড়-কাণ্ডের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

সে ঘটনার পর অবশ্য একসঙ্গেই বিমান থেকে নেমেছেন ম্যাক্রো ও তার স্ত্রী ব্রিজিত। তবে বিমানের সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় স্ত্রীর হাত ধরেননি প্রেসিডেন্ট। এ বিষয়টিও উপস্থিত অসংখ্য ক্যামেরার দৃষ্টি এড়ায়নি।

ম্যাক্রোঁর দপ্তর প্রথমে ভিডিওটি ‘ভুয়া’ দাবি করলেও পরে এর সত্যতা নিশ্চিত করেছে। যদিও ফরাসি প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠ সূত্র ঘটনাটিকে স্বামী-স্ত্রীর মধ্য ‘সামান্য ঝগড়া’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।

আন্তর্জাতিক

সম্প্রতি ইউক্রেনে রুশ হামলা নিয়ে পুতিনকে ‘পাগল’ বলে কটাক্ষ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে তার এ প্রতিক্রিয়াকে ‘আবেগের মাত্রাতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া’ বলে খোঁচা দিয়েছে ক্রেমলিন।

ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সোমবার মস্কোতে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ইউক্রেনে সর্বশেষ রুশ বিমান হামলা নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া ‘মাত্রাতিরিক্ত আবেগ’-এর ফল।

ট্রাম্প রোববার নিজের ট্রুথ সোশ্যাল হ্যান্ডেলে লেখেন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ‘পুরোপুরি পাগল হয়ে গেছেন’, কারণ টানা তৃতীয় রাতেও রাশিয়া ইউক্রেনে বিমান হামলা চালিয়েছে।

ট্রাম্প বলেন, ‘আমি সবসময় বলে এসেছি, কেবল একটি অংশ নয়, তিনি (পুতিন) পুরো ইউক্রেন চান। হয়তো সেটাই সত্যি প্রমাণিত হচ্ছে। তবে যদি তিনি (পুতিন) তেমনটা করেন, তাহলে তা রাশিয়ার পতনের ডেকে আনবে!’

এক পৃথক বক্তব্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ‘আমি যা দেখছি, তাতে আমি মোটেও খুশি নই। আমি জানি না ওঁর (পুতিন) কী হয়েছে। কী সর্বনাশটাই না করছে! অনেক মানুষকে হত্যা করছে, এটা আমি একদমই পছন্দ করছি না’।

এর আগে ইউক্রেনের বিমান বাহিনী জানিয়েছে, রাশিয়া শনিবার রাতভর ৩৫৫টি ড্রোন ও ৯টি ‘খ-১০১’ ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালায়। যার মধ্যে তারা ২৮৮টি ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করেছে।

এদিকে ট্রাম্পের বক্তব্য প্রসঙ্গে রুশ প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ‘এটা নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত এবং এটা সবার আবেগঘন প্রতিক্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত। আবেগ মাত্রাতিরিক্ত হয়ে পড়ছে— সেটাও স্বাভাবিক’।

মস্কো সব প্রতিক্রিয়া নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে উল্লেখ করে তিনি জানান, প্রেসিডেন্ট পুতিন ‘রাশিয়ার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন’।

এ সময়, রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে প্রত্যক্ষ আলোচনা শুরু হওয়াটাকে ‘একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অর্জন’ হিসেবে দেখা হচ্ছে উল্লেখ করে পেসকভ বলেন, এ আলোচনা আয়োজনের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে।

তার ভাষায়, ‘এই আলোচনার প্রক্রিয়া শুরু করতে সহায়তা করার জন্য আমরা সত্যিই কৃতজ্ঞ—যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি এবং ব্যক্তিগতভাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রতিও’।

তবে দ্বিতীয় দফার আলোচনার সময় ও স্থান নিয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি বলেও জানান ক্রেমলিন মুখপাত্র।

এদিকে তুরস্কের উদ্যোগে দুই পক্ষের মধ্যে প্রথম দফার আলোচনা অনুষ্ঠিত হয় গত ১৬ মে। তিন বছর বিরতির পর ইস্তাম্বুলে হওয়া সেই বৈঠকে উভয় পক্ষ সম্মত হয় যে, প্রত্যেকে ১,০০০ বন্দি বিনিময় করবে এবং যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা অব্যাহত রাখবে।

এ সময় পেসকভ এ আলোচনার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য তুরস্কের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে তিনি জানান, একটি সম্ভাব্য শান্তি চুক্তির খসড়া নিয়েও কাজ চলছে। সূত্র: আনাদোলু

রাজনীতি

আজ শনিবার বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীকে বৈঠকের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শুক্রবার দল দুটির পক্ষ থেকে পৃথকভাবে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বিএনপি এবং রাত ৮টায় জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধান উপদেষ্টা।

তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য শুক্রবার রাতে জানিয়েছেন, বিএনপির বৈঠকে যোগদানের বিষয়টি পরে জানানো হবে।

এর আগে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় চেয়েছিল জামায়াতে ইসলামী। মৌখিকভাবে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে শনিবার রাতে বৈঠকের বিষয়টি জানানো হয়। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের।

তিনি জানান, চলমান বিষয় নিয়ে আলাপচারিতার জন্য তারা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করবেন।

সূত্র জানায়, জামায়াত মনে করে প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ কোনো সমাধান নয়। তারা চায় ড. ইউনূসের নেতৃত্বেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক।

এর আগে, উদ্ভূত পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে একটি সর্বদলীয় বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছিলেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান।

সূত্র মতে, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিসহ নানা ইস্যুতে আলোচনা হবে। এর মধ্যে নির্বাচন, বিচার, সংস্কার, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষের রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐক্য ফিরিয়ে আনার বিষয় বিশেষভাবে গুরুত্ব পাবে।

আন্তর্জাতিক

জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিকত্ব লাভ রোধে আরও কঠোর হচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন। এখন থেকে দেশটিতে ভ্রমণের উদ্দেশে যেতে চাওয়া ব্যক্তিদের ভিসার আবেদন পর্যালোচনায় মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তারা আরও খুঁটিয়ে ভিসাপ্রার্থীদের তথ্য যাচাই-বাছাই করবেন। সন্দেহজনক মনে হলেই বাতিল করবেন ভিসার আবেদন।

শুক্রবার এক বিবৃতিতে এমনটাই জানিয়েছে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস।

বিবৃতিতে বলা হয়, মার্কিন দূতাবাস কর্মকর্তারা যদি মনে করেন যে ভ্রমণের প্রাথমিক উদ্দেশ্য হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সন্তান জন্মদান এবং সন্তানের জন্য মার্কিন নাগরিকত্ব অর্জন করা, তাহলে তারা পর্যটন ভিসার আবেদন প্রত্যাখ্যান করবেন। এটি অননুমোদিত।

দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম দিনই জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিকত্ব বাতিলসহ একগুচ্ছ নির্বাহী আদেশে সই করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের ইতি টানার চেষ্টায় নিম্ন আদালতগুলোতে বার বার ধাক্কা খেয়ে পরে সুপ্রিমকোর্টের দ্বারস্থও হন তিনি। ট্রাম্প এ সংক্রান্ত নির্বাহী আদেশে সই করার পর তার আদেশের বিরুদ্ধে প্রথম মামলা করে অভিবাসীদের সংগঠন যুক্তরাষ্ট্রের সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন। এরপর দেশটির বিভিন্ন প্রদেশেও এই আদেশ বাধার মুখে পড়ে।

কেউ যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করলে তিনি জন্মসূত্রে দেশটির নাগরিকত্ব পান। এই বিধান বাতিলের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। শপথ নেওয়ার পর এ সংক্রান্ত নির্বাহী আদেশে সই করেন ট্রাম্প। তবে শুধু নির্বাহী আদেশ দিয়েই এই নীতি পরিবর্তন করা কঠিন। কারণ, মার্কিন সংবিধানেই জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে।

জাতীয়

সন্ত্রাসী দিয়ে ভয়-ভীতি দেখিয়ে দরপত্র অংশগ্রহণে বাধা দেওয়ার অ‌ভি‌যোগ উঠেছে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি ২৮ নম্বর ওয়ার্ড পূর্ব আগারগাঁও ইউনিট সহ-সভাপতি মো. হাবিবুর রহমান পান্নার বিরু‌দ্ধে।

বৃহস্পতিবার (২২ মে) শেরে বাংলা নগরের পর্যটন করপোরেশন ভবনে এ ঘটনা ঘটে।

এ‌ বিষয়ে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান বরাবর লি‌খিত অ‌ভি‌যোগ দি‌য়ে‌ছেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা।
ভুক্ত‌ভোগী‌দের অ‌ভি‌যোগ, কক্সবাজারের হোটেল শৈবালের আওতাধীন গলফ মাঠের ষোল একর বিরাশি শতাংশ উন্মুক্ত জমি পর্যটন শিল্প সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এক বছরের জন্য লিজ দেওয়ার লক্ষ্যে আগ্রহী ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে দরপত্র আহ্বান করে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন। এ দরপত্র আহ্বানের শেষ তা‌রিখ ছি‌ল ২২ মে সকাল সা‌ড়ে ৯টা থে‌কে দুপুর ২টা পর্যন্ত। দরপত্রে অংশগ্রহণ কর‌তে পর্যটন করপোরেশনে আসেন কক্সবাজারের স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটন ব্যবসায়ীরা। এ দরপত্রে ৩১টি শিডিউল বিক্রি করা হয়। তার মধ্যে তিনটি দরপত্র জমাদা‌নের সু‌যোগ দেওয়া হয়। বাকি ২৮ জনকে স্থানীয় সন্ত্রাসী দিয়ে ভয়-ভীতি দেখিয়ে কর‌পো‌রেশ‌নে প্রবেশ কর‌তে দেওয়া হয়‌নি। প‌রে এ বিষ‌য়ে পর্যটন করপোরেশন চেয়ারম্যানের কা‌ছে লি‌খিত অ‌ভি‌যোগ দেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা।

ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী মেসার্স আইল্যান্ড এন্টারপ্রাইজের মালিক আলমগীর হোসেন বাবু বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের টেন্ডারের শিডিউল ড্রপ করতে দেয়নি হাবিবুর রহমান পান্না। ৩১ জনের মধ্যে ২৮ জন শিডিউল ড্রপ করতে পারেনি। কক্সবাজার থেকে ঢাকার আগারগাঁওয়ে এসে টেন্ডার ড্রপ করতে পারিনি বিএনপির ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা পান্নার কারণে। তার লোকজন হুমকি দিয়েছেন, পান্নার সঙ্গে কথা বলা ছাড়া টেন্ডার জনা দেওয়া যাবে না।

তিনি আরও বলেন, এখন যদি টেন্ডার ড্রপ করতে না পারি, বলার কিছু নেই। আমরা চাচ্ছি পুনরায় টেন্ডার হোক। যেখানে সবাই টেন্ডার জমা দিতে পারবো। যে ভালো রেট দেবে, সে যেন পায়। পান্না যে রেট দিচ্ছেন তার থেকে অন্যরা আরও বেশি রেট দিতে পারতেন। এর ফলে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাতে যাচ্ছে। ধরেন গত বছর ডাক ছিল ৯৬ লাখ টাকা। পান্না এখন এক কোটি ২০ লাখে টেন্ডার ড্রপ করেছে। অন্য কেউতো আরও বেশি ২ কোটি টাকার টেন্ডার ড্রপ করতে পারতো। তিনি আমাদের বাধা দিয়ে টেন্ডার ড্রপ করতে দিল না।

আরেক ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী নাদিয়া এন্টারপ্রাইজের মালিক হামিদুল ইসলাম ব‌লেন, সন্ত্রাসী পান্না আমাকে টেন্ডার জমা দিতে দেয়নি। পান্নার সঙ্গে যোগাযোগ করে তিনজন টেন্ডার জমা দিয়েছেন। আগারগাঁও এলাকার বিএনপির ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা পান্না। পান্না বলেন, ‘আপনারা কেউ টেন্ডার জমা দেবেন না। আমরা তিনটি টেন্ডার জমা করবো। টেন্ডার জমা দিতে গেলে অসুবিধা হবে। ’

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি ২৮ নম্বর ওয়ার্ড পূর্ব আগারগাঁও ইউনিট সহ-সভাপতি অভিযুক্ত মো. হাবিবুর রহমান পান্না বাংলানিউজকে বলেন, আমি একজন বিএনপি কর্মী। আমি ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব আগারগাঁও ইউনিট সহ-সভাপতি। আমি নিজেই টেন্ডার জমা দিতে পারিনি। তিনদিন হয়ে গেল টেন্ডারের বিষয়ে কিছুই জানতে পারছি না।

তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করে পান্না বলেন, আমার নামে প্যাঁচ লাগানো বা ভুল বোঝানোর চেষ্টা করছে কেউ। আমিও এই ব্যবসা দীর্ঘ ২০ বছর ধরে করি। এই কারণে আমি নিজেও শিডিউল কিনেছি। এখন আমি নিজেও জানি না শিডিউলের টাকা ফেরত পাবো কিনা।

বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান সায়েমা শাহীন সুলতানা বাংলানিউজকে বলেন, ভুক্তভোগী কোম্পানিগুলো অভিযোগ দিয়েছে, পেয়েছি। আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেব। টেন্ডারের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের টেন্ডার কমিটিকে অভিযোগটি দেওয়া হয়েছে। যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রাজনীতি

১০ মাস পার করার আগেই মারাত্মক সংকটের মধ্যে পড়েছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। সংকটটা এমন পর্যায়ে গেছে যে, প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের ভাবনার কথাও প্রকাশ পেয়েছে।

আর ড. ইউনূসের পদত্যাগের ভাবনায় সরকারও নড়বড়ে হয়ে পড়েছে।এদিকে ১০ মাস না যেতেই অন্তর্বর্তী সরকার কেন এই সংকটে পড়লো তা নিয়েও জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তবে এই সংকটের জন্য রাজনৈতিক চাপকেই প্রধান কারণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে। এই রাজনৈতিক চাপ তৈরির জন্য অন্তর্বর্তী সরকার নিজেই দায়ী। আর সেটি হলো নির্বাচন প্রশ্নে সরকারের দৃশ্যমান পদক্ষেপ না থাকা বলে অনেকে মনে করেন।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। এরপর ৮ আগস্ট নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়। এই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান দায়িত্ব একটি সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যবস্থা করা। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অভিযোগ, সরকার সেদিকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নজর দিচ্ছে না। যদিও প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, চলতি বছরের ডিসেম্বর অথবা আগামী বছরের জুনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু সরকারের এই বক্তব্যে রাজনৈতিক দলগুলো আশ্বস্ত হতে পারছে না। কারণ এখন পর্যন্ত সরকার নির্বাচনের রোডম্যাপ ও সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করেনি। সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে প্রধান এবং সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি দীর্ঘদিন ধরেই নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ও রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি করে আসছে। কিন্তু সরকারের দিক থেকে এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ এখনো দৃশ্যমান নয়। এর মধ্যেই সংকটে পড়লো অন্তর্বর্তী সরকার। আর অন্তর্বর্তী সরকারের এই সংকট তখনই তৈরি হলো যখন রাজপথের কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলনে নামে বিএনপি।

বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র পদে শপথ পড়ানোর দাবিতে টানা আটদিন ধরে আন্দোলন চলে। বৃহস্পতিবার (২২ মে) অন্তর্বর্তী সরকারকে ৪৮ ঘণ্টা আল্টিমেটাম দিয়ে এই আন্দোলন আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। এদিন ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া গেজেটের বৈধতা নিয়ে এবং তাকে শপথ পড়ানো থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা চেয়ে করা রিট খারিজ করে দেন হাইকোর্ট।

এদিকে গত কয়েকদিন ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার বিচার ও হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে গত কয়েকদিন ধরে শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলন চালিয়ে আসছে ছাত্রদল। বৃহস্পতিবার অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত করা হলেও দ্রুত দাবি আদায় না হলে আগামীতে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।

এর আগের দিন বুধবার সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বাহিনীর কর্মকর্তাদের নিয়ে এক বৈঠকে নির্বাচন, রাখাইনের জন্য মানবিক করিডোর প্রসঙ্গ এবং মব সৃষ্টিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন। বৈঠকে সেনাবাহিনী প্রধান চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন। রাখাইনের মানবিক করিডোরবিষয়ক সিদ্ধান্ত একটি নির্বাচিত সরকারের থেকে আসতে হবে এবং তা বৈধ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে হতে হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

বিভিন্ন সূত্র থেকে গণমাধ্যমে এ বিষয়গুলো এসেছে।

এই প্রেক্ষাপটে বৃহস্পতিবার রাতে শোনা যায়, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগ করার কথা ভাবছেন। এদিন সকালে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে তিনি তার এই ভাবনার কথা জানান। পরে রাতে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামও তার সঙ্গে সাক্ষাতের পর গণমাধ্যমকে ড. ইউনূসের পদত্যাগের ভাবনার কথা জানান।

সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, পদত্যাগের কারণ হিসেবে ড. ইউনূস বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর নানামুখী চাপ, অনৈক্য, নানা ইস্যুতে তার বাসভবন ঘিরে আন্দোলন, তার বিরুদ্ধে দেশ বিক্রির অভিযোগ, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের জন্য বিএনপির অব্যাহত চাপ, বিভিন্ন দাবিতে একের পর এক আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে জিম্মি করার চেষ্টা ইত্যাদি কারণে তিনি আর দায়িত্ব পালন করতে চান না। উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে তিনি এ বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন।

যদিও শুক্রবার (২৩ মে) প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক মন্ত্রণালয়) ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব জানিয়েছেন, প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করবেন না।

তিনি বলেন, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ক্ষমতা প্রয়োজন নেই, কিন্তু বাংলাদেশের জন্য, বাংলাদেশের শান্তিপূর্ণ ডেমোক্রেটিক ট্রানজিশনের (গণতান্ত্রিক রূপান্তর) জন্য ড. ইউনূস স্যারের দরকার আছে।

অন্তর্বর্তী সরকারকে এই ধরনের সংকটে পড়ার প্রধান কারণ দ্রুত নির্বাচনকে অগ্রাধিকার না দিয়ে অন্য বিভিন্ন কাজে জড়িয়ে পড়া, যা এই সরকারের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না বলে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা মনে করছেন।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান বাংলানিউজকে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার অনেক লোড কাঁধে নিচ্ছে, যা তাদের নেওয়ার কথা ছিল না। হত্যাকাণ্ডের বিচার হোক এটা মানুষ চায়। কিন্তু সব ধরনের কাজ হাতে নিয়েছে। সংস্কার, বন্দর ব্যবস্থাপনা বিদেশিদের হাতে দেওয়া, রাখাইনের করিডোর দেওয়াসহ বিভিন্ন কাজে হাত দিয়েছে। ক্ষমতায় পাঁচ বছর থাকতে চায় এ রকম কথাও শোনা যাচ্ছে। অথচ এত লোড নেওয়ার কথা ছিল না। এ কারণে সংকটগুলো তৈরি হচ্ছে।

এদিকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগ বিএনপির কোনো দাবি নয় বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেছেন, এটি সম্পূর্ণ ড. ইউনূসের ব্যক্তিগত বিষয়। আমরা (বিএনপি) কখনও তার পদত্যাগ দাবি করিনি। নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা না করে যদি তিনি দায়িত্ব ছেড়ে দিতে চান, সেটিও তার ব্যক্তিগত ব্যাপার।

বিএনপির এই গুরুত্বপূর্ণ নেতার বক্তব্য থেকে এটাই স্পষ্ট হয় যে, বিএনপির প্রধান দাবি নির্বাচনের রোডম্যাপ। দলটি প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ না চাইলেও এই বছরের মধ্যে নির্বাচনের জন্য রোডম্যাপ ঘোষণা না করলে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি তাদের অব্যাহত সমর্থন আর না থাকার সম্ভাবনাই বেশি।

এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের যে উপদেষ্টারা একটি নতুন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত তাদের অব্যাহতি দেওয়ার দাবি জানিয়েছে বিএনপি। একইসঙ্গে সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানকেও অব্যাহতি দেওয়ার দাবি জানিয়েছে দলটি ৷ বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে দলটির পক্ষ থেকে এ দাবি জানানো হয়। সবমিলিয়ে অন্তর্ভুক্তি সরকারের ওপর থেকে বিএনপির সমর্থন উঠে যাওয়ার আশঙ্কাই জোরালো হচ্ছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্যেও এ ধরনের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বলে গুঞ্জন রয়েছে। বিএনপির সমর্থন না থাকলে এই সরকারকে টিকে থাকা অত্যন্ত কঠিন বলেই তারা মনে করছেন। আর বিএনপি শুধু একা নয়, এই দলটির সঙ্গে ডান বাম অনেক রাজনৈতিক দলও রয়েছে। সরকার সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। এই পরিস্থিতিতে ড. ইউনুসের পদত্যাগের ভাবনায় সরকার নড়বড়ে হয়ে পড়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের পানিসম্পদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের বক্তব্যের মধ্য দিয়েও সরকারের চিন্তিত হওয়ার একটি ইঙ্গিত উঠে এসেছে। তিনি বলেছেন, চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন, এর বাইরে একদিনও এদিক-সেদিক যাওয়ার সুযোগ নেই।

শুক্রবার (২৩ মে) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

রিজওয়ানা হাসান বলেন, বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের সভার পর অনেক সময় আমরা আলোচনা করেছি। আমাদের তিনটি কঠিন দায়িত্ব- একটি সংস্কার, অন্যটি বিচার, আরেকটি নির্বাচন। শুধু নির্বাচন করার জন্য আমরা দায়িত্বটা নেইনি। আমাদের আরও দুটি দায়িত্ব রয়েছে। কিন্তু আমরা সেগুলো পালন করতে পারছি না।

রাজনীতি

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে তার দল সরকার গঠন করতে পারলে বন্ধ হয়ে যাওয়া ২৫টি পাটকল আবারও চালু করতে কাজ করবে।

বগুড়া শহরের পাঁচ তারকা হোটেল মম ইন কনভেনশন হলে ‘কৃষি উন্নয়ন, পরিবেশ রক্ষা ও নাগরিক সমস্যা নিয়ে তারুণ্যের ভাবনা’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় আজ তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘অনেক দল অনেক কথাই বলবে। তাদের অতীত ইতিহাস দেখে তাদের বিশ্বাস করবেন। এক্ষেত্রে দেশের অধিকতর উন্নয়নের স্বার্থে সবার প্রথমে বিএনপিকে সবাই বেছে নিবে।’

সেমিনারে এক শিক্ষার্থীর পাটকল বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে নজরুল ইসলাম বলেন, “বিএনপি উৎপাদন ও উন্নয়নে বিশ্বাসী। কোন কিছু বন্ধ করা বিএনপির রাজনীতি নয়। তাই সরকার গঠন করতে পারলে বন্ধ হয়ে যাওয়া ২৫টি পাটকল আবারও চালু করতে কাজ করবে বিএনপি। একই সাথে শ্রমিকদের সকল বকেয়াও পরিশোধ করবে। ”

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের এই সেমিনারে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন— জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের চেয়ারম্যান ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ববি হাজ্জাজ৷

তিনি বলেন, ‘তারেক রহমানের ৩১ দফা ভবিষ্যৎ রাজনীতির দর্শন।দেশে বিগত বছরগুলো বেশি নির্যাতিত হয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমান। আমরা সবার আগে ভোটের অধিকার চাই। আমরা চাই নির্বাচিত সরকার ভোটের মাধ্যমে দেশ পরিচালনা করুক।’

আরও বক্তৃতা করেন অস্ট্রেলিয়ার ওয়াটার স্ট্র্যাটেজিক অ্যানালিস্ট ড. ফয়সাল কবীর শুভ, বিশিষ্ট গণমাধ্যমকর্মী কাজী জেসিন, আবহাওয়া গবেষক ও সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের মোস্তফা কামাল পলাশ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ’র অধ্যাপক ড. রিদওয়ানুল হক, এইচআর বিশেষজ্ঞ শারমিন সুলতানা জয়া এবং নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক জুলকারনাইন জাহাঙ্গীর।

সেমিনারে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার পাঁচ শতাধিক দল নিরপেক্ষ নাগরিক অংশগ্রহণ করেন। উপস্থিত তরুণ ও অংশগ্রহণকারীরা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বক্তাদের প্রশ্ন করেন ও মতামত জানান।

সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু ও মাহবুবুর রহমান, রংপুর বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু, রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন শওকত, বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরহাদ হোসেন আজাদ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম ওবায়দুর রহমান চন্দন (রাজশাহী), এম এ খালেক ও অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম (রংপুর), বিএনপির সাবেক ক্রীড়া বিষয়ক সহ-সম্পাদক রায়হান আমিন রনি, বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন, গাইবান্ধা জেলা বিএনপির সভাপতি ডা. মইনুল হাসান সাদিক, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য জিএম সিরাজ, কাজী রফিক, মাহবুবুর রহমান, ভিপি সাইফুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম (রংপুর জেলা আহ্বায়ক), যুবদলের সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না ও সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী ও সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান, ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসির।

জাতীয়

দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে নানা সময়ে পারস্পরিক দ্বন্দ্ব দেখা গেছে। যতই দিন যাচ্ছে, দ্বন্দ্ব যেন ক্রমশ বাড়ছেই।

এমন পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, যত দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা যাবে, ততই দেশের জন্য মঙ্গল।

গণঅভ্যুত্থানে সামনের সারিতে থাকা শিক্ষার্থীদের নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপি দলটি গঠনের পর থেকেই জামায়াতে ইসলামী বা ছাত্র শিবিরের সঙ্গে এক ধরনের রাজনৈতিক মিত্রতাও ছিল। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতেও দল দুটি এক মঞ্চে ছিল। পরে জামায়াত ইস্যু ঘিরে উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের স্ট্যাটাস ঘিরে দল দুটির মধ্যে এক ধরনের টানাপোড়েনও তৈরি হয়।

তখন ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল নুরুল ইসলাম সাদ্দাম বলেন,  ‘উপদেষ্টা মাহফুজ আলম সংবিধানবিরোধী যে কাজটি করেছেন তাতে তিনি শপথের ভায়োলেশন করেছেন। কোনো রাগ বা বিরাগের বশবর্তী হয়ে কাউকে হুমকি দেওয়া বা কোনো বিষয়ে তার দায়িত্ব থাকাকালীন সময় এটা তার জন্য মানায় না। ’

জানা যায়, উপদেষ্টা পরিষদে থাকলেও দলের নেতাদের ওপর মাহফুজ আলমের প্রভাব রয়েছে। এ কারণে তার ওই ফেসবুক স্ট্যাটাসের পর দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিবৃতিও দেওয়া হয়েছিল।

এদিকে, ইশরাক হোসেনের শপথ নেওয়ার আন্দোলন থেকে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলমের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা। এদিকে বিএনপি তাদের দাবিতে বলছে, অন্তর্বর্তী সরকারের যে উপদেষ্টারা ‘সরাসরি বা পরোক্ষভাবে নতুন একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত’, তাদের অব্যাহতি দিতে হবে।

নির্বাচন ও সংস্কার ইস্যুতেও বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির বিরোধ রয়েছে। বিএনপি শুরু থেকেই দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কথা বলে আসছে। জামায়াতে ইসলামী চাইছে, সংস্কার শেষে ‘যৌক্তিক সময়ের’ মধ্যে নির্বাচন। আর এনসিপি আগে চাইছে ইসি পুনর্গঠন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন।

এনসিপি-জামায়াত বিরোধ

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে এনসিপি নেতা হাসনাত আবদুল্লাহর নেতৃত্বে আন্দোলন শুরু হয় প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে। ওই রাতেই একে একে আন্দোলনে যুক্ত হয় ছাত্র শিবির, হেফাজতে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলনসহ বেশ কিছু রাজনৈতিক ও ছাত্র সংগঠন।

পরে অবস্থান কর্মসূচির স্থান পরিবর্তন করে শাহবাগে নিয়ে যাওয়া হয়। শাহবাগে জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমসহ বেশ কয়েকজন নেতার নাম ধরে বিতর্কিত কিছু স্লোগান ও জাতীয় সংগীত গাওয়ার সময় বাধা দেওয়ার ঘটনাও ঘটে। পরে সেই বিষয়গুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে।

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে টানা আন্দোলনের মুখে শনিবার রাতেই জরুরি বৈঠকে বসে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। বৈঠকে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের কথা জানানো হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে। আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের পর তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম তার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি স্ট্যাটাস দেন।

সেখানে তিনি লেখেন, ৭১র প্রশ্ন মীমাংসা করতেই হবে। যুদ্ধাপরাধের সহযোগীদের ক্ষমা চাইতে হবে। বাংলাদেশে রাজনীতি করতে হলে পাকিস্তানপন্থা বাদ দিতে হবে। পাকিস্তান এ দেশে গণহত্যা চালিয়েছে। সহযোগীদের ইনিয়ে বিনিয়ে গণহত্যার পক্ষে বয়ান উৎপাদন বন্ধ করতে হবে। জুলাইয়ের শক্তির মধ্যে ঢুকে স্যাবোটাজ করা বন্ধ করতে হবে। সাফ দিলে আসতে হবে।

পরে আরেকটি পোস্ট দিয়ে সেটি সরিয়ে ফেলেন তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। তবে তার পোস্টের স্ক্রিনশট দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। একই মঞ্চে আন্দোলন করে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সফলতা আসার পর কেন হঠাৎ জামায়াত শিবিরকে ইঙ্গিত করে এই ধরনের পোস্ট দেন মাহফুজ আলম, সেটি নিয়েও প্রশ্ন জামায়াত ও শিবিরের শীর্ষ নেতাদেরও। জামায়াত ও শিবির বিষয়টি নিয়ে নিজেদের মধ্যে একাধিক বৈঠকও করেছে। সেখানে কেউ কেউ মাহফুজ আলমের পদত্যাগের দাবিও তোলেন।

এনসিপি-বিএনপি বিরোধ

৫-আগস্ট রাজনীতিতে পরবর্তী বিএনপি ছিল কিছুটা ধীর-স্থির ভূমিকায়। তবে দলের চেয়ারপারসনের চিকিৎসা শেষে দেশে ফেরার পর বিএনপির সব স্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যে নতুন করে উদ্দীপনা দেখা যায়। একপর্যায়ে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের শপথ নিয়ে বিলম্ব করায় মাঠে নামেন বিএনপি সমর্থকেরা। পরে আদালতের আদেশের মাধ্যমে সেই আন্দোলনে পূর্ণতা আসে। ফলে এখন রাজনীতির মাঠে এনসিপি-জামায়াতকে ছাপিয়ে অনেকটা সামনে চলে এসেছে বিএনপি।

এই প্রেক্ষাপটে বিএনপি কয়েকটি দাবি উত্থাপন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে—অন্তর্বর্তী সরকারের যে উপদেষ্টারা ‘সরাসরি বা পরোক্ষভাবে নতুন একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত’, তাদের অব্যাহতি, সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানকে অপসারণ এবং ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জাতীয় সংসদ গঠনের লক্ষ্যে অবিলম্বে একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি।

ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোর দাবিতে কয়েকদিন ধরে আন্দোলন করছিলেন তার সমর্থকেরা। টানা নগর ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে পরে বুধবার থেকে মৎস্য ভবন, কাকরাইল ও যমুনার সামনের রাস্তায় অবস্থান করছিলেন তারা। হাইকোর্টে সেই রিট খারিজ করে দিলে বৃহস্পতিবার বিকেলে অবশ্য ৪৮ ঘণ্টার জন্য আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করেন ইশরাক।

ইসির সামনে বিক্ষোভ সমাবেশে নির্বাচন কমিশনকে ‘বিএনপির দলীয় আখড়া’ বলে অভিহিত করেন এনসিপি নেতা নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। তিনি বলেন, ‘এই যে ইসি গঠন করা হয়েছে এটা কোনো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে এখন অ্যাকটিভ করে না। এটা বিএনপির একটি দলীয় কার্যালয় হিসেবে উপস্থিত হয়েছে। এটা বিএনপির মুখপাত্র হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ’

বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদের বিরুদ্ধে ‘ভারতের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী মুজিববাদী সংবিধান রাখতে চায়’ বলে অভিযোগ তোলেন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনই হবে। আমরা যতদিন বেঁচে আছি এই ইসি পুনর্গঠন করেই ছাড়ব। ইসি পুনর্গঠন না হলে বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন জাতীয় নাগরিক পার্টি করতে দেবে না।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের যে উপদেষ্টারা একটি নতুন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িত বলে সবাই জানে ও বুঝে; উপদেষ্টা পরিষদে তাদের উপস্থিতি সরকারের নির্দলীয় নিরপেক্ষ পরিচিতিকে ক্রমাগত প্রশ্নবিদ্ধ করে চলেছে বলেই সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে তাদের অব্যাহতি দেওয়া প্রয়োজন। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার বুধবারের বক্তব্য আবারও নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে তাকে অব্যাহতি দিতে হবে।

সম্প্রতি ‘আওয়ামী লীগের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বিএনপি চলে’—জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা হাসনাত আবদুল্লাহর এমন বক্তব্যের কড়া প্রতিক্রিয়া জানান বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। তিনি বলেন, ‘বিএনপি নেতারা যদি একত্রে প্রস্রাব করেন, তাহলে এই প্রস্রাবের তোড়ে ভেসে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়বা। এমন কোনো কথা বলবা না যে কথার দায়িত্ব নিতে পারবা না। বিএনপির সম্পর্কে যে অভিযোগ করছ, সেই অভিযোগের জবাবে বিএনপি যদি শুধু থুথু ফেলে, সেই থুথুর মধ্যে তোমাকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। ’

হাসনাত আবদুল্লাহর উদ্দেশে দুদু বলেন, ‘কথা বলার আগে একটু চিন্তাভাবনা করে বলতে হয়। এভাবে কথা বললে তোমাদের সম্বন্ধে মানুষের ধারণা কোথায় যাচ্ছে, একটু চিন্তা করো। এমন কোনো কথা বলবা না যে কথার দায়িত্ব নিতে পারবা না। হিসাব করে চলা, বলা ও গণতন্ত্রের রীতিনীতি না মানলে ফ্যাসিস্ট হিসেবে চিহ্নিত হবা। এ রকম প্রতিহিংসামূলক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে রাজনীতি করা যাবে না। ’

জামায়াত-বিএনপি দূরত্ব

দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক মিত্র ও নির্বাচনের সঙ্গী বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যেও তৈরি হয়েছে দূরত্ব। বিভিন্ন সময়ে নেতাদের কথায় তা স্পষ্ট। লন্ডনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমানের সাক্ষাতের পর সম্পর্কে দূরত্ব কমবে বলে মনে করা হয়েছিল। তবে দলীয় আদর্শ আর কৌশলের রাজনীতি তাদের দূরত্ব আরও বাড়িয়েছে।

গত বছরের ৫ আগস্ট অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয় আওয়ামী লীগ। সেই থেকে রাজনীতির মাঠে নানা বিষয়ে এই দুই দলের মধ্যে স্পষ্ট মতবিরোধ দেখা দেয়। তৃণমূল থেকে শীর্ষ নেতাদের বক্তব্যেও তা স্পষ্ট হয়। দুই দলের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা, সরকারের সংস্কার প্রস্তাব, নির্বাচনের দিনক্ষণ, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক, প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে দলীয় লোকের বদলি, পদায়ন, নিয়োগ, দখল-চাঁদাবাজির মতো বিষয় নিয়ে বিরোধ রয়েছে।

সবশেষ একটি ঘটনার দিকে তাকানো যাক। পাবনার আটঘরিয়ায় একটি কলেজের পরিচালনা পর্ষদের অভিভাবক সদস্যপদ নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতের নেতা–কর্মীদের মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়েছে। বিরোধের জের ধরে দুই পক্ষ একে অপরের ওপর হামলা, দলীয় কার্যালয় ভাঙচুরের অভিযোগ তুলেছে।

ভুল পদক্ষেপে অন্য কারো লাভ?

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের ভেতরে একটি অংশ দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকার পক্ষে, তাই পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। শুধু রাজনৈতিক দলগুলো নয়, গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারদের মধ্যেও বিভক্তি স্পষ্ট হয়ে পড়েছে। এই ঘোলাটে পরিস্থিতিতে তৃতীয় পক্ষ সুযোগ নিতে পারে।

তারা বলছেন, বিভক্তিতে পতিত আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনেরও আশঙ্কা রয়েছে। এমন বাস্তবতায় সরকার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিএনপি ও এনসিপি কোনো একটি পক্ষের ভুল পদক্ষেপ পরিস্থিতি শোচনীয় করে তুলতে পারে। এতে চূড়ান্ত বিচারে লাভবান হবে গণঅভ্যুত্থানের পরাজিত ও পতিত শক্তি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ইশরাক হোসেনের মেয়র পদের ইস্যুকে জাতীয় ইস্যুতে পরিণত করে বিএনপি শক্তি প্রদর্শনের রাজনীতি দেখাচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দলটি বরাবারই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ দাবি করে আসছে। এনসিপি-বিএনপির মধ্যে মূলত শক্তির পরীক্ষা চলছে। তাদের পারস্পরিক দ্বন্দ্ব গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তিগুলোর মধ্যে বিভেদ বাড়াবে। এতে অস্থিরতাও বাড়বে।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ‘পদত্যাগ করতে চান’ চান বলেও খবর সামনে এসেছে। এমন পরিস্থিতিতে আগের সব ‘বিভাজনমূলক বক্তব্য ও শব্দচয়নের’ জন্য দুঃখ প্রকাশ করে তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম দেশপ্রেমিক শক্তির ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন। তার সঙ্গে সুর মিলিয়ে একই আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। আরও কয়েকটি দল ঐক্যের কথা বলছে।

রাজনীতিবিদ-বিশ্লেষকরা কী বলছেন

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, ইশরাক হোসেনের মেয়র পদে শপথ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার সম্পূর্ণ প্রতিহিংসামূলক কাজ করছে। ভারত ও আওয়ামী লীগের মতো এখনো প্রতিহিংসার রাজনীতি চলছে। জনগণের নির্বাচিত সরকার ছাড়া পরিস্থিতি স্থিতিশীল করা সম্ভব নয়। তাই যত দ্রুত সম্ভব অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত হবে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করে জাতিকে আশ্বস্ত করা।

রাষ্ট্রচিন্তক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী  বলেন, দেশের চলমান আইনশৃঙ্খলা ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতির জন্য যত দ্রুত সম্ভব জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া জরুরি। সে কারণে বিএনপিসহ জুলাই বিপ্লবের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলগুলোকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা জরুরি। প্রয়োজনে নিজেদের ছাড় দেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। আশা করি, নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর হলে পরিস্থিতি উন্নতির দিকে যাবে।

আন্তর্জাতিক

বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তির ক্ষমতা বাতিল করার সিদ্ধান্তে ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাচীনতম হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়। শুক্রবার বোস্টনের ফেডারেল আদালতে মামলাটি করা হয়। মামলায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ উল্লেখ করেছে, ট্রাম্প প্রশাসনের এ পদক্ষেপ আইনের ‘স্পষ্ট লঙ্ঘন’। বিবিসি, রয়টার্স।

এর আগে বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হার্ভার্ড আর কোনো বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করতে পারবে না। বর্তমানে যেসব বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি রয়েছেন, তাদের অবশ্যই স্থানান্তর করতে হবে। না হলে তারা আইনগত বৈধতা হারাবেন।

এছাড়া দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টি নোম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক বার্তায় জনিয়েছেন, হার্ভার্ড ‘আইন মেনে না চলায়’ তাদের স্টুডেন্ট অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ভিজিটর প্রোগ্রাম সনদ বাতিল করা হয়েছে। তিনি আরও লেখেন, ‘এটি দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য সতর্কবার্তা হিসাবে বিবেচিত হোক।’

এ সিদ্ধান্তকে বেআইনি বলে মন্তব্য করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘আমরা হার্ভার্ডে বিদেশি শিক্ষার্থী ও গবেষকদের চাই। এ ব্যাপারে আমরা সম্পূর্ণ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ১৪০টিরও বেশি দেশ থেকে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসে তারা। হার্ভার্ড এবং এ দেশকে অসামান্যভাবে সমৃদ্ধ করে এ শিক্ষার্থী ও গবেষকরা।’

হার্ভার্ডের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, আমরা দ্রুত আমাদের কমিউনিটির সদস্যদের জন্য প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা ও সহায়তা দিতে কাজ করছি। এ প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ হার্ভার্ড কমিউনিটি ও আমাদের দেশের ওপর গভীর ক্ষতির হুমকি তৈরি করেছে। পাশাপাশি হার্ভার্ডের শিক্ষা ও গবেষণা মিশনকেও দুর্বল করছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের এ সিদ্ধান্তের ফলে হার্ভার্ডে অধ্যয়নরত হাজারো বিদেশি শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় পড়তে পারে। এ সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদেশি শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছালে তাদের মধ্যে আতঙ্ক ও হতাশা তৈরি হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, গত শিক্ষাবর্ষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে প্রায় সাত হাজার বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছিলেন। এটি গত শিক্ষাবর্ষে ভর্তি মোট শিক্ষার্থীর ২৭ দশমিক ২ শতাংশ।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসাবে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় বসার পর হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়কে দেওয়া কেন্দ্রীয় সরকারের তহবিলে কাটছাঁট শুরু করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।