জাতীয়

বর্তমানে সরকারি চাকরিতে ১৯ লাখ ১৯ হাজার ১১১টি অনুমোদিত পদের মধ্যে কর্মরত রয়েছেন ১৪ লাখ ৫০ হাজার ৮৯১ জন। ফলে ফাঁকা রয়েছে ৪ লাখ ৬৮ হাজার ২২০টি পদ, যা মোট পদের প্রায় ২৪ দশমিক ৪০ শতাংশ।

সোমবার (৩০ জুন) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় প্রকাশিত ২০২৪ সালের সরকারি কর্মচারীদের পরিসংখ্যানে এই তথ্য উঠে এসেছে।

পরিসংখ্যানে আরও দেখা যায়, গত কয়েক বছরে শূন্যপদের সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। ২০১৮ সালে ফাঁকা ছিল ৩ লাখ ৯৩ হাজার ২৪৭টি পদ, ২০১৯ সালে ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৩৩৮টি, ২০২০ সালে ৩ লাখ ৮০ হাজার ৯৫৫টি, ২০২১ সালে ৩ লাখ ৫৮ হাজার ১২৫টি, ২০২২ সালে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৪ লাখ ৮৯ হাজার ৯৭৬টিতে এবং ২০২৩ সালে ছিল ৪ লাখ ৭৩ হাজার ১টি।

এখন সরকারি চাকরিতে প্রথম থেকে নবম গ্রেডের (আগের প্রথম শ্রেণি) ২ লাখ ৫৯ হাজার ৬৫৭টি অনুমোদিত পদ রয়েছে। এসব পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন এক লাখ ৯০ হাজার ৭৭৩ জন। ফাঁকা আছে ৬৮ হাজার ৮৮৪টি পদ।

১০ থেকে ১২তম গ্রেডে (আগের দ্বিতীয় শ্রেণি) ৩ লাখ ৬২ হাজার ২৮৯টি পদের বিপরীতে কাজ করছেন ২ লাখ ৩৩ হাজার ৭২৬ জন। ফাঁকা রয়েছে এক লাখ ২৯ হাজার ১৬৬টি পদ।

১৩ থেকে ১৬তম গ্রেডে (আগের তৃতীয় শ্রেণি) ৭ লাখ ৬০ হাজার ৬৩৪টি পদ রয়েছে। এসব পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ৬ লাখ ১৩ হাজার ৮৩৫ জন। ফাঁকা আছে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৭৯৯টি পদ।

অন্যদিকে, ১৭ থেকে ২০তম গ্রেডে (আগের চতুর্থ শ্রেণি) ৫ লাখ ১৯ হাজার ৮১২টি পদ রয়েছে। এসব পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ৪ লাখ ৪ হাজার ৫৭৭ জন। ফাঁকা রয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার ২৩৫টি পদ।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সরকারি দফতরে নির্ধারিত ও অন্যান্য কাজের জন্য ১৬ হাজার ১১৬টি পদ থাকলেও এসব পদের বিপরীতে কাজ করছেন ৭ হাজার ৮৯০ জন। ফাঁকা রয়েছে ৮ হাজার ১৩৬টি পদ।

প্রথম থেকে ১২তম গ্রেডের গেজেটেড পদগুলোতে নিয়োগ দেয় সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। আর ১৩ থেকে ২০তম গ্রেডের পদে সরাসরি নিয়োগ দেয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ।

সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে ৬ হাজার ৬৪টি এবং অধিদফতর ও পরিদফতরে ২ লাখ ৯৬ হাজার ১১২টি পদ ফাঁকা রয়েছে। আর বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ১৫ হাজার ২৯টি এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন করপোরেশনে ফাঁকা রয়েছে এক লাখ ৫১ হাজার ১৫টি পদ।

রাজনীতি

গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে ‘ঐক্য বজায় রাখার’ ডাক দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। মঙ্গলবার (১ জুলাই) বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে বিএনপি আয়োজিত জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের শোক ও বিজয়ের প্রথম বর্ষপূর্তির বিশেষ অনুষ্ঠানে এ আহ্বান জানান তিনি।

গুলশানের বাসা ’ফিরোজা’ থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে দেওয়া বক্তৃতায় তিনি গুম, খুন ও বিচারভহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়ার তাগিদ দেন।

খালেদা জিয়া বলেন, আমাদের সামনে যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে নতুন করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার তা আমাদের দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সর্বোপরি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করতে হবে। যেকোনো মূল্যে বীরের এই রক্তস্রোত, মায়ের অশ্রুধারা যেন বৃথা না যায় তা নিশ্চিত করতে হবে। ঐক্য বজায় রাখতে হবে। আসুন আমরা সবাই মিলে শহীদ জিয়ার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করি। বাস্তবায়িত করি কোটি মানুষের নতুন বাংলাদেশের নির্মাণের স্বপ্নকে।

সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের শুরুতে তিনি বলেন, রক্তস্নাত জুলাই-আগস্ট একবছর পর আমাদের মাঝে ফিরে এসেছে। দীর্ঘ ১৬ বছর ফ্যাসিস্টদের নির্মম অত্যাচার, নির্যাতন, গ্রেপ্তার, হত্যা ও খুনের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে এবং একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চিরস্থায়ী করতে চেয়েছিল আওয়ামী শাসক গোষ্ঠী। ছাত্র-জনতার সম্মিলিত অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদের পতন ঘটেছে। সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে নতুন করে বাংলাদেশকে গড়বার।

গুম-খুন-বিচারবর্হিভূত হত্যার শিকার ব্যক্তিদের তালিকা করার প্রতি জোর দিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, গুম-খুন-বিচারবর্হিভূত হত্যার শিকার যারা হয়েছেন তাদের তালিকা প্রস্তুত করতে হবে। দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে এবং রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিটি পরিবারের সন্মান এবং তাদের পুনর্বাসন এবং তাদের নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে হবে।

খেলাধুলা

বাংলাদেশের নতুন ওয়ানডে অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজের কাঁধে এখন বড় দায়িত্ব। আইসিসির র‌্যাঙ্কিংয়ে ১০ নম্বরে থাকা বাংলাদেশ দলকে আবার জয়ের ধারায় ফেরাতে হবে তাকে। তবে মিরাজের সামনে চ্যালেঞ্জ এই একটাই নয়।  অনেক দিকেই এখন মিরাজের নজর দেওয়া দরকার।

১। দলকে এক সুতোয় গাঁথা–

প্রথমেই মিরাজকে দলকে একত্রিত রাখতে হবে। এখন দলে বড় অস্থিরতা চলছে। শান্ত ওয়ানডে অধিনায়কত্ব হারিয়েছেন এবং টেস্ট অধিনায়কত্ব থেকেও পদত্যাগ করেছেন। শান্ত বলেছিলেন, তিন ফরম্যাটে তিন অধিনায়ক থাকা ভালো নয়। তার মন খারাপ থাকাটাই স্বাভাবিক। তাই মিরাজকে ড্রেসিংরুমের ভেতরের অস্বস্তি দূর করে দলকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে।

২। নিজের ব্যাটিং পজিশন ঠিক করা–
মিরাজকে নিজের ব্যাটিং পজিশন ঠিক করতে হবে। এখন পর্যন্ত তাকে একেক ম্যাচে একেক পজিশনে ব্যাট করতে দেখা গেছে। কিন্তু অধিনায়ক হিসেবে নিজের জন্য নির্দিষ্ট পজিশন ঠিক করতে হবে তাকে। সেক্ষেত্রে বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করতে হবে, কোথায় তার গড় আর স্ট্রাইকরেট সবচেয়ে ভালো থাকবে, পারফর্ম্যান্স দিয়ে সবচেয়ে বেশি প্রভাব রাখতে পারবেন, কোথায় ব্যাট করলে আবার তার বোলিংয়েও প্রভাব ফেলবে না, সেসব দিকেও দেখতে হবে তাকে।

৩। ওপেনিং ধাঁধার সমাধান–
তানজিদ হাসানকে ওপেনার হিসেবে ধরে নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তার সঙ্গে কে ওপেন করবেন তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। লিটন দাস ও মোহাম্মদ নাঈম আছেন দলে। লিটনের সাম্প্রতিক ফর্ম ভালো নয়, শেষ পাঁচ ইনিংসে তার রান মাত্র ৬। তবে তার অভিজ্ঞতা ও কিপিং দক্ষতা তাকে এগিয়ে রাখতে পারে। শান্ত তিন নম্বরে ফিরতে পারেন, যদিও শেষ ওয়ানডেতে ওপেন করে ৭৭ করেছিলেন।

৪। পরবর্তী মুশফিক মাহমুদউল্লাহদের খুঁজে বের করা–
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো মিডল অর্ডার ঠিক করা। মুশফিকুর ও মাহমুদউল্লাহ অবসর নিয়েছেন। সাকিব চ্যাম্পিয়নস ট্রফিকে বিদায় ম্যাচ ভাবছিলেন, কিন্তু রাজনীতির কারণে তার ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত। ফলে মিডল অর্ডারে প্রায় ৭৬০ ওয়ানডে ম্যাচের অভিজ্ঞতার শূন্যতা তৈরি হয়েছে। তাওহিদ হৃদয়, জাকের আলি ও শামিম হোসেন আছেন। তবে তাদের অভিজ্ঞতা কম। আফিফ, নুরুল হাসান সোহান বা মোসাদ্দেকের মতো বিকল্পকেও বিবেচনা করা যেতে পারে।

৫। স্পিন আক্রমণের ধার ফেরানো–
স্পিন আক্রমণ নিয়েও মিরাজের কাজ আছে। সাকিবের শেষ ওয়ানডে খেলার পর থেকে বাংলাদেশের স্পিনাররা ১৫ ম্যাচে ৬৫.৬৯ গড়ে ২৩ উইকেট পেয়েছেন। মিরাজ নিজেই ৭১ গড়ে ৯ উইকেট পেয়েছেন। রিশাদ বা নাসুমও ধারাবাহিক নন। নতুন মুখ তানভীর ইসলাম এখনো ওয়ানডে খেলেননি। ফলে স্পিনের ধার ফেরানো নিয়েও ভাবতে হবে তাকে।

৬। ওয়ানডে স্পেশালিস্ট পেসার খুঁজে বের করা–
স্পিন ভালো না করলে পেস আক্রমণের উপর ভরসা রাখতে হবে। তাসকিন আহমেদ ও মোস্তাফিজুর রহমানের ফেরায় শক্তি বাড়বে। হাসান মাহমুদ, নাহিদ রানা ও তানজিম হাসান ভালো করছেন। তবে মিরাজকে ঠিক করতে হবে কে আসলে ওয়ানডে স্পেশালিস্ট।

৭। র‍্যাঙ্কিংয়ে উন্নতি–
র‌্যাঙ্কিংয়ে উন্নতি করাও জরুরি। শ্রীলঙ্কাকে হারাতে পারলে বাংলাদেশ এক ধাপ উপরে উঠতে পারে। সরাসরি ২০২৭ বিশ্বকাপের কোয়ালিফাই করার জন্য এই পয়েন্ট গুরুত্বপূর্ণ বেশ।

মিরাজের জন্য সময় কম, কাজ বেশি। বাংলাদেশের ওয়ানডে ফরম্যাটে ভালো ইতিহাস আছে। শেষবার তামিমের নেতৃত্বে জয়ের হার ভালো ছিল। সাকিব ও শান্ত সেটা ধরে রাখতে পারেননি। এখন মিরাজকে এই কঠিন সময়ে দলকে আবার জয়ের রাস্তায় ফেরাতে হবে।

অর্থনীতি

দেশের মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩১ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব অনুযায়ী, এখন দেশে রিজার্ভ বিপিএম-৬ হিসেবে দাঁড়িয়েছে ২৬ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলার।

মঙ্গলবার (১ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এ তথ্য জানিয়েছেন।

গত রোববার দেশে রিজার্ভ বিপিএম-৬ হিসেবে ছাড়িয়েছিল ২৬ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে দেশের মোট রিজার্ভ ৩১ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার দেশে রিজার্ভ বিপিএম-৬ হিসেবে ছিল ২৫ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে দেশের মোট রিজার্ভ ছিল ৩০ দশমিক ৫১ বিলিয়ন ডলার।

আরিফ হোসেন খান জানান, আইএমএফের হিসাব অনুযায়ী আজ দেশে রিজার্ভ বিপিএম-৬ হিসেবে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৬৬৬ কোটি ৩৬ লাখ ৬০ হাজার ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে দেশের মোট রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ১৬৮ কোটি ৩৬ লাখ ৬০ হাজার ডলার। তবে ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ এক হাজার ৮০০ কোটি ডলারের বেশি।

রাজনীতি

বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে “স্থলবন্দরের অগ্রগতি, অর্থনীতির সমৃদ্ধি” এই স্লোগানকে সামনে রেখে ৩০জুন ২০২৫ তারিখে সকাল ১০.০০ টায় বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান কার্যালয়ে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।

উক্ত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সম্মানিত সিনিয়র সচিব জনাব মোহাম্মদ ইউসুফ এবং সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জনাব মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান।

প্রধান অতিথি মাননীয় উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “দেশের স্বার্থে বন্দর ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে যথেষ্ট পরিমাণ বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে, যা দূরীকরণে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত। বাংলাদেশের স্থলবন্দরগুলো দেশের সীমান্তবর্তী হওয়ায় দেশের নিরাপত্তার সাথে বন্দরসমূহ সরাসরি জড়িত। এজন্য স্থলবন্দর ব্যবস্থাপনা ও অন্যান্য নীতি নির্ধারণের বিষয়ে দেশের স্বার্থ বিবেচনা করে আরোও কৌশলী হতে হবে।”

আলোচনা সভায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জনাব মোহাম্মদ ইউসুফ স্থলবন্দরগুলোর আধুনিকায়নে যথাসময়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব প্রদান করেন। এছাড়া তিনি বেনাপোল ও ভোমরা স্থলবন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনার প্রশংসা করে স্থলবন্দরগুলোতে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান।

এছাড়া আলোচনা সভার সমাপনী বক্তব্যে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জনাব মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান বন্দর ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালুর করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এছাড়া তিনি বলেন, “আমদানি-রপ্তানি ক্ষেত্রে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে স্থলবন্দর দিয়ে রপ্তানি পণ্যের বৈচিত্র্যকরণে উদ্যোগ গ্রহন করতে হবে।”

এছাড়া সমুদ্র বন্দরের ন্যায় স্থলবন্দরের মাধ্যমে অধিক পণ্যের আমদানি-রপ্তানি অনুমোদনের বিষয়টি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বিবেচনায় নেওয়া প্রয়োজন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, রিয়ার এডমিরাল মাসুদ ইকবাল, এনপিপি, এনডিসি, পিএসসি; বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্পোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) চেয়ারম্যান জনাব মোঃ সলিম উল্লাহ; বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান কমোডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফাসহ বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা কর্মচারীবৃন্দ।

জাতীয়

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, বন ও প্রাকৃতিক সম্পদ শুধু পরিবেশের জন্য নয়, অর্থনীতি, জীববৈচিত্র্য এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিরাপত্তার ভিত্তি। তাই এই সম্পদ ব্যবস্থাপনায় সব অংশীজনের সম্মিলিত অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।

শনিবার রাজধানীতে এক কর্মশালায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে পরিবেশ উপদেষ্টা প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

‘ওয়ার্কশপ ফর সেকেন্ড সাইকল অব দ্য ন্যাশনাল ফরেস্ট ইনভেন্টরি অব বাংলাদেশ অ্যান্ড ন্যাশনাল ভ্যালিডেশন অ্যান্ড ওয়ার্কশপ অন দ্য জেনারেশন অব দ্য ল্যান্ড কাভার অ্যান্ড ন্যাচারাল ক্যাপিটাল ম্যাপ অ্যান্ড ডেভেলপিং ইন্টিগ্রেটেড কোলাবোরেটিভ ফরেস্ট ম্যানেজমেন্ট প্ল্যানস’ শীর্ষক এই কর্মশালার আয়োজন করে বন অধিদপ্তর।

বন বিভাগের প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমির হোসাইন চৌধুরী সভায় সভাপতিত্ব করেন। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ; বাংলাদেশে এফএও প্রতিনিধি জিয়াওকুন শি; পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. কামরুজ্জামান এবং সিইজিআইএসের নির্বাহী পরিচালক মালিক ফিদা এ খান বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, বনকে কার্বন ট্রেডিংয়ের দৃষ্টিভঙ্গিতে না দেখে অক্সিজেন সরবরাহকারী ও জীববৈচিত্র্যের আশ্রয়স্থল হিসেবে দেখতে হবে। উন্নত বিশ্ব যদি শুধু কার্বন ক্রেডিট কেনে, তারা প্রকৃতপক্ষে নির্গমন কমাবে না। ডিগ্রেডেড বন পুনরুদ্ধার, কমিউনিটি-ভিত্তিক ব্যবস্থাপনা ও বাস্তবসম্মত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে।

আন্তর্জাতিক

গাজা যুদ্ধের পর থেকে এখন পর্যন্ত ইসরাইলের আগ্রাসনে প্রায় ১ লাখ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এটি ভূখণ্ডটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪ শতাংশ। শুক্রবার এমন তথ্য জানিয়েছে ইসরাইলি দৈনিক হারেৎজ।

এই সংখ্যা গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ঘোষিত নিহতের সংখ্যার চেয়েও অনেক বেশি। গাজার মন্ত্রণালয়টি জানায়, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ৫৬,৩০০ ছাড়িয়েছে।

হারেৎজ জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় সরাসরি নিহত ছাড়াও বহু মানুষ পরোক্ষভাবে প্রাণ হারিয়েছেন— যেমন ক্ষুধা, ঠান্ডা ও রোগে আক্রান্ত হয়ে। এর কারণ গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে ফেলেছে ইহুদিবাদী ইসরাইল।

দৈনিকটি আরও বলেছে, ইসরাইলি মুখপাত্র, সাংবাদিক ও প্রভাবশালীরা গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত নিহতের সংখ্যা দেখে প্রায়শই সেটিকে বাড়িয়ে বলা হয়েছে বলে মনে করেন। তবে ক্রমে আরও বেশি আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ এই সংখ্যাকে নির্ভরযোগ্য বলে মেনে নিচ্ছেন— এমনকি বাস্তব পরিস্থিতির তুলনায় এটি হয়তো রক্ষণশীল হিসাবও হতে পারে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, লন্ডনের ইউনিভার্সিটি অফ হোলোওয়ের অর্থনীতিবিদ এবং সংঘর্ষকালীন মৃত্যুর ওপর আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মাইকেল স্প্যাগ্যাট গাজায় মৃত্যুর পরিসংখ্যান নিয়ে একটি সমীক্ষা পরিচালনা করেছেন।

এই সমীক্ষায় গাজার ২,০০০টি পরিবারকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যার মধ্যে প্রায় ১০,০০০ মানুষ ছিল।

সমীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত গাজা যুদ্ধে আনুমানিক ৭৫,২০০ জন ইসরাইলি সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছেন, যার সিংহভাগই ইসরাইলি গোলাবারুদের কারণে।

হারেৎজ বলছে, নিহতদের মধ্যে ৫৬ শতাংশই শিশু (১৮ বছর বয়স পর্যন্ত) এবং নারী— যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর অধিকাংশ যুদ্ধের তুলনায় ব্যতিক্রমী।

গবেষক স্প্যাগ্যাট বলেন, এই সমীক্ষার তথ্য গাজা যুদ্ধকে একবিংশ শতাব্দীর অন্যতম রক্তক্ষয়ী সংঘাত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে। যদিও সিরিয়া, ইউক্রেন ও সুদানের সংঘাতে মোট নিহতের সংখ্যা গাজার চেয়ে বেশি হতে পারে, তবে গাজা যুদ্ধটি সবচেয়ে বেশি বেসামরিক মানুষের মৃত্যু ঘটিয়েছে যুদ্ধে জড়িত সামরিক সদস্যদের তুলনায়। আর এটি জনসংখ্যার অনুপাতে মৃত্যুহার বিবেচনায় শীর্ষে রয়েছে।

তথ্য অনুযায়ী, গাজায় সহিংসভাবে নিহত নারী ও শিশুর অনুপাত অন্যান্য সাম্প্রতিক যুদ্ধের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি— যেমন কসোভো (২০%), উত্তর ইথিওপিয়া (৯%), সিরিয়া (২০%) এবং সুদান (২৩%)।

স্প্যাগ্যাট বলেন, আমার ধারণা, গাজার প্রায় ৪ শতাংশ জনসংখ্যা ইতোমধ্যেই নিহত হয়েছেন। ২১’শ শতাব্দীতে আর কোনো সংঘাতে এত বেশি অনুপাতে মৃত্যু ঘটেছে কিনা, আমি তা জানি না।

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরাইলি সেনাবাহিনী গাজায় ভয়াবহ অভিযান চালিয়ে আসছে। আন্তর্জাতিক মহল বারবার যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানালেও, মানবতাবিরোধী এ বাহিনীটি কোনো তোয়াক্কা করছে না।

গত বছরের নভেম্বর মাসে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের দায়ে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে।

এছাড়াও গাজায় সংঘটিত গণহত্যার অভিযোগে ইসরাইলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) আরেকটি মামলা চলমান রয়েছে।

খেলাধুলা

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ শেষ। এবার তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের পালা। এই সিরিজে অংশ নিতে গতকাল ৮ ক্রিকেটার দেশ ছেড়েছিলেন। এর একদিন পর আজ (শনিবার) বিমানে চড়েছেন নাঈম শেখ এবং তাসকিন আহমেদ।

দেশ ছাড়ার আগে বিমানবন্দরে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপাকালে তাসকিন জানিয়েছেন সিরিজ জয়ের কথা। তাসকিন বলেন, ‘একজন টিম ম্যান হিসেবে আমি আমার দলের জয়ে ভূমিকা রাখতে চাই। আর ইনশাআল্লাহ আমার বিশ্বাস আমরা সিরিজ জিতব। আমি অনেক উদগ্রীব হয়ে আছি। আজকে বের হওয়ার সময় অনেক ভালো লাগছে যে মাঝখানে প্রায় তিন মাসের মতো খেলার সুযোগ হয়নি। খেলতে পারিনি। ‘

সিরিজে নিজের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে এই তারকা পেসার যোগ করেন, ‘আল্লাহর কাছে শুকরিয়া যে আমি আবার দলে ফিরলাম। যাচ্ছি তো এখন একটাই প্রত্যাশা যাতে জয়ের পেছনে যাতে আমার ভূমিকা থাকে।’

চোটের সঙ্গে দীর্ঘ লড়াই প্রসঙ্গে তাসকিন বলেন, ‘যে কোনো প্লেয়ারের জন্যই এটাই অনেক দুঃখজনক যে মাঠের বাইরে থাকা ইনজুরির কারণে। এটা আসলে জীবনেরই অংশ, বিশেষ করে ফাস্ট বোলারদের অনেক ইনজুরি হয়। তো এটাই আমার জন্য এখন খুশির ব্যাপার যে আল্লাহর রহমতে আমি আবার ফিরেছি। তো আশা করি ভালো কিছু করব।’

লঙ্কানদের বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ০-১ ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ। তবে সাদা বলের দুই সিরিজেই জয়ের স্বপ্ন দেখছেন তাসকিন, ‘ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি দুই ফরম্যাটেই জিততে চাই, মানে হারজিত তো থাকবেই, কিন্তু ইনশাআল্লাহ আমরা সেরাটা দিব, আমার বিশ্বাস আছে।’

প্রসঙ্গত, আগামী ২ জুলাই কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা। এরপর ৫ জুলাই একই মাঠে দ্বিতীয় ও ৮ জুলাই পাল্লেকেলেতে তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে মাঠে নামবে দুই দল। তিনটি ওয়ানডেই শুরু হবে বাংলাদেশ সময় বেলা ৩ টায়।

অর্থনীতি

দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম আরও কিছুটা কমানো হয়েছে। রোববার থেকে নতুন দাম কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)।

শনিবার বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিং কমিটি বৈঠক করে এ দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরে কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমানের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের মূল্য ২,৬২৪ টাকা কমিয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৭০ হাজার ২৩৬ টাকা। স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের (পাকা স্বর্ণ) মূল্য কমার পরিপ্রেক্ষিতে এ দাম কমানো হয়েছে।

দাম কমানোর কারণ হিসেবে বাজুস বলছে, স্থানীয় বাজারে তেজারি স্বর্ণের মূল্য কমেছে, তাই সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এনে স্বর্ণের দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এখন সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের মূল্য ২ হাজার ৬২৪ টাকা কমিয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৭০ হাজার ২৩৬ টাকা। ২১ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের মূল্য ২ হাজার ৪৯৬ টাকা কমিয়ে ১ লাখ ৬২ হাজার ৫০৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এছাড়া ১৮ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের ২ হাজার ১৩৫ টাকা কমিয়ে নতুন দাম ১ লাখ ৩৯ হাজার ২৯১ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের মূল্য ১ হাজার ৮৩২ টাকা কমিয়ে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার ১৭০ টাকা।

এর আগে গত ২৫ জুন ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ১ হাজার ৬৬৮ টাকা কমিয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ৭২ হাজার ৮৬০ টাকা। ২১ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ১ হাজার ৫৯৮ টাকা কমিয়ে ১ লাখ ৬৪ হাজার ৯৯৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

এছাড়া ১৮ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ১ হাজার ৩৭৬ টাকা কমিয়ে নতুন দাম ১ লাখ ৪১ হাজার ৪২৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আর সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ১ হাজার ১৬৬ টাকা কমিয়ে দাম নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ১৭ হাজার ২ টাকা। আজ শনিবার পর্যন্ত এ দামে স্বর্ণ বিক্রি হয়েছে।

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ থেকে স্থলবন্দর দিয়ে ৯ ধরনের পণ্য আমদানিতে ভারতের নতুন নিষেধাজ্ঞার পর দেশটিতে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে স্থলবন্দর ব্যবহার করে পোশাকের পর এবার পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানির সুযোগ বন্ধ হওয়ার কারণে বাংলাদেশই বেশি ক্ষতির শিকার হতে পারে বলে বিশ্লেষকদের কেউ কেউ ধারণা করছেন। খবর বিবিসির

বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশনের ডিরেক্টর ও রাজবাড়ী জুট মিলসের চেয়ারম্যান শেখ শামসুল আবেদিন বলেন, ভারতের নতুন সিদ্ধান্তের প্রভাব দেশের পাটশিল্পে কতটা পড়বে সেটি তারা বিশ্লেষণ করছেন।

তিনি আরও বলেন, কাঁচাপাট রপ্তানি বন্ধ হবে হয়ত। তবে স্থলবন্দর না হলে নৌপথে কীভাবে রপ্তানি চালু রাখা যায় সে আলোচনা এর মধ্যেই শুরু হয়েছে।

ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিটিসি) সাবেক সদস্য ও বাণিজ্য বিশ্লেষক মোস্তফা আবিদ খান বলছেন, স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানি বন্ধ হলে সেটি নৌপথে রপ্তারি করে পোষানো খুবই কঠিন বিষয় হবে।

সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, রাজনৈতিক টানাপোড়েনের কারণেই এসব পালটিপালটি পদক্ষেপ হচ্ছে, যা বাংলাদেশের জন্যই বেশি ক্ষতিকর হবে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ থেকে পোশাকের পর পাট রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হলো। আমার মনে হয় আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া উচিত আমাদের স্বার্থেই।

যদিও ভারতের সবশেষ পদক্ষেপের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের দিক থেকে এখনো কোনো বক্তব্য আসেনি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজী হননি।

প্রসঙ্গত, গত বছর ৫ আগস্ট বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কের অবনতি ঘটে।

এরপর বিভিন্ন ইস্যুতে দুই পক্ষের মধ্যে কয়েক মাস ধরে বাকযুদ্ধের পর ভারত ও বাংলাদেশ একে অপরের বিরুদ্ধে বেশ কিছু বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে শুরু করে।

ফলে দুই দেশের রাজনৈতিক সম্পর্কের টানাপোড়েন এখন সরাসরি ব্যবসা বাণিজ্যে প্রভাব ফেলেছে, যা দ্রুত সমাধান করা দরকার বলে মনে করেন মোস্তাফিজুর রহমান।

ভারতের ঘোষণায় কী বলা হয়েছে

শুক্রবার ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্য অধিদপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ থেকে স্থলবন্দর দিয়ে নয় ধরনের পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞার কথা প্রকাশ করা হয়।

যদিও ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এসব পণ্য মুম্বাইয়ের নহ্ভা সেভা বন্দর দিয়ে ভারতে যেতে পারবে।

স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি নিষিদ্ধ করা এসব বাংলাদেশি পণ্যে মূলত পাট ও পাটজাত পণ্য বেশি। এর মধ্যে কাঁচা পাট, পাটের রোল, পাটের সুতা, একাধিক ভাঁজের বোনা কাপড়, একক শণ সুতা, পাটের একক সুতা ও বিশেষ ধরনের কাপড় রয়েছে এ তালিকায়।

ভারত এ ধরনের যে নয়টি পণ্যের ওপর স্থলবন্দর নিয়ে আমদানি নিষিদ্ধ করেছে, এসব পণ্য থেকে ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ছিল প্রায় পনের কোটি ডলারের কাছাকাছি, যার প্রায় সবটাই স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পাঠানো হয়েছিল।

রাজস্ব বোর্ডের হিসেবে, এই পনের কোটি ডলারের রপ্তানির মধ্যে মাত্র বিশ লাখ ডলারের রপ্তানি স্থলবন্দর দিয়ে হয়নি।

তবে ভারতীয় বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের মধ্য দিয়ে নেপাল ও ভুটানে ওই নয় ধরনের পণ্য রপ্তানিতে কোনো বিধিনিষেধ নেই।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হিসাবে, ভারতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১৫৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশে, যা দেশটির মোট রপ্তানি আয়ের ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ।

অন্যদিকে ভারত থেকে বাংলাদেশ নয়শ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করে। মূলত ভারতীয় ভোগ্যপণ্যের বড় বাজার হলো বাংলাদেশ।

ভারতে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হতো পোশাক এবং এরপর পাট ও পাটজাত পণ্যই দেশটিতে বেশি যায় বাংলাদেশ থেকে।

এছাড়া প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানিতেও বাংলাদেশ ভালো করছিল। এর ওপরে আগেই বিধিনিষেধ দিয়েছে ভারত।

বাংলাদেশে কেমন প্রভাব পড়বে

শুক্রবার স্থলবন্দর দিয়ে নয়টি পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানিতে তিন মাসে তিন দফায় বিধিনিষেধ দিল ভারত।

এর আগে গত ১৭ মে স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে তৈরি পোশাক, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক, কাঠের আসবাব, সুতা ও সুতার উপজাত, ফল ও ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয় প্রভৃতি পণ্য আমদানিতে বিধিনিষেধ দিয়েছিল।

তারও আগে গত ৯ এপ্রিল ভারতের কলকাতা বিমানবন্দর ব্যবহার করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির সুবিধা প্রত্যাহার করেছিল দেশটি।

এর আগে আটই এপ্রিল অন্য দেশে পণ্য রপ্তানির জন্য বাংলাদেশকে দেয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করেছিল ভারত।

এরপর ১৫ এপ্রিল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে সূতা আমদানি বন্ধ করে ঘোষণা করে বাংলাদেশ।

অর্থনীতিবিদ মোস্তাফিজুর রহমান বলছেন, ভারত অনেক দিন ধরে বাংলাদেশকে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়ার কারণে দেশটিতে বাংলাদেশের রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় দুই বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি চলে গিয়েছিল।

তিনি বলেন, কিন্তু এখনকার পালটিপালটি ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি সংকট তৈরি করছে। এটা কারও জন্যই ভালো নয়। বাংলাদেশ ভারতের ওপর অনেক পণ্যের ক্ষেত্রেই নির্ভরশীল। আবার ভারতীয় পণ্য রপ্তানির জন্য বাংলাদেশের উপরেও নির্ভরশীলতা আছে। তাই দুই পক্ষই যত দ্রুত সমাধানে পৌঁছাতে ততই দুই দেশের বাণিজ্য ও অর্থনীতি উপকৃত হবে।

ব্যবসায়ীরা বলেন, তৈরি পোশাকের পরে ভারতে পাট ও পাটজাত পণ্যই বেশি যাচ্ছিল সাম্প্রতিক বছরগুলোতে। যদিও ২০১৭ সালে দেশটি বাংলাদেশি পাটপণ্যে ‘অ্যান্টি ডাম্পিং’ শুল্ক আরোপ করে, যা ২০২৩ সালে আরও পাঁচ বছর বাড়ানো হয়।

শেখ শামসুল আবেদিন বলছেন, ওই শুল্ক আরোপের কারণেও বাংলাদেশের পাট ও পাটজাত দ্রব্য ভারতের রপ্তানিতে কিছুটা সমস্যা তৈরি হয়েছিল কিন্তু তারপরেও বাংলাদেশের পাট ভালো করছিল।

তিনি বলেন, এখন হয়তো কাঁচাপাট রপ্তানি সংকটে পড়বে। তবে একই সঙ্গে দেশে পাটের ফিনিশড গুড উৎপাদন আরও বাড়ানো সুযোগ আছে। যদিও নৌপথে ভারতের রপ্তানির সুযোগ এখনো আছে। সেটি কতটা কাজে লাগানো যায় তা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।