জাতীয়

মুসলিম দেশগুলো ঐক্যবদ্ধ না হলে ফিলিস্তিন মুক্ত করা সম্ভব নয়। আর মুসলমানদের ঐক্য সৃষ্টি না হওয়ার পেছনে কারণ হলো, দেশগুলোতে ইসলামপন্থী সরকার না থাকা।

যদি দেশগুলোতে ইসলামপন্থী সরকার থাকতো, তবে মুসলমানরা একতাবদ্ধ হওয়ার সুযোগ লাভ করতো।
শুক্রবার (১ নভেম্বর) ফিলিস্তিন-লেবাননে ইসরায়েলের অব্যাহত বর্বর হামলার প্রতিবাদে এক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। আল-কুদস কমিটি বাংলাদেশের উদ্যোগে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) মিলনায়তনে ‘মহান নেতা ইসমাঈল হানিয়া, সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ ও ইয়াহিয়া ইবরাহীম হাসান আস সিনওয়ারসহ শীর্ষ নেতাদের শাহাদাত ও গাজা-ফিলিস্তিনকেন্দ্রিক প্রতিরোধ অক্ষের অর্জন’-শীর্ষক এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের চেয়ারম্যান ও আল কুদস কমিটি বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক ড. শাহ্ কাউসার মুস্তাফা আবুলউলায়ীর সভাপতিত্বে সভায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইরানের আল মুস্তফা (সা.) আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলেমিন শাহাবুদ্দীন মাশায়েখী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সিনিয়র প্রফেসর ড. কেএম সাইফুল ইসলাম খান, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব অধ্যাপক ড. আহমদ আব্দুল কাদের, সাংবাদিক অধ্যক্ষ মুহাম্মাদ শওকাত হোসেন, ইসলামী শিক্ষা উন্নয়ন পরিষদ বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যক্ষ ড. একেএম মাহবুবুর রহমান। আলোচনা সভায় প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক জামাল উদ্দিন বারী।

হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলেমিন শাহাবুদ্দীন মাশায়েখী বলেন, ৭০ বছরের অধিক সময় ধরে জায়নবাদী ইসরায়েল ফিলিস্তিনের জনসাধারণের ওপর নির্যাতন চালিয়ে আসছে এবং তাদের ভূখণ্ড জবরদখল করে যাচ্ছে। আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে পরাজয়ের পর প্রথমে মিশর ও জর্ডান এবং এরপর আরব বিশ্বের দেশগুলো ইসরায়েলমুখী হয়ে পড়ে। কিন্তু গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের আক্রমণের পর পরিস্থিতি সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তিত হয়ে যায়। যেখানে আরব বিশ্ব মাত্র কয়েক দিনে পরাজিত হয়েছিল সেখানে ফিলিস্তিনের যোদ্ধারা মাসের পর মাস তাদের প্রতিরোধ সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। ফিলিস্তিনের পাশে লেবাননের হিজবুল্লাহ, ইয়েমেনের হুথি, ইরাকের প্রতিরোধযোদ্ধারা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করছে। আর ইরান সরাসরি ইসরায়েলের সামরিক স্থাপনাগুলোতে আক্রমণের মাধ্যমে ইসরায়েলকে কোণঠাসা করে ফেলেছে। এসব আক্রমণে ইসরায়েলের সামরিক শক্তি ও তাদের তথাকথিত শক্তিশালী এয়ার ডিফেন্সের দুর্বলতা স্পষ্টভাবে ধরা পড়ছে। প্রতিরোধযোদ্ধাদের মোকাবিলায় ইসরায়েলের অর্থনীতিতে চরম ধস নেমেছে। প্রবৃদ্ধির হার নিম্নগামী হয়ে পড়েছে। সামরিক ব্যয় মেটাতে তাদের অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। আতঙ্কে ইহুদিরা ইসরায়েল ত্যাগ করে অন্য দেশে চলে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, কিছু কিছু দেশ মৌখিকভাবে ফিলিস্তিনকে সমর্থন করার কথা বলে ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে। ইসরায়েল ও তার দোসরদের নিজেদের ভূমি ব্যবহার করে ফিলিস্তিন ও প্রতিরোধ আন্দোলনের জন্য সংগ্রামরত দেশগুলোতে আক্রমণের সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে। এরকম কপটতা পরিহার করে যদি সত্যিকার অর্থে মুসলমানরা একতাবদ্ধ হয়ে জায়নবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে তাহলেই মুসলমানরা সফল হতে পারে।

ড. আহমদ আব্দুল কাদের বলেন, গত বছরের অক্টোবর মাসের আগে আরব বিশ্বের পরিস্থিতি এমন হয়ে পড়েছিল যে, কতিপয় আরব দেশ ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়ার চিন্তা করতে থাকে। কিন্তু অক্টোবর মাসের যুদ্ধ সব হিসাব নিকাশকে বদলে দেয়। আরব দেশগুলো নিজেদের পরিকল্পনা থেকে দূরে সরে আসতে বাধ্য হয়।

তিনি বলেন, মুসলিম দেশগুলো ঐক্যবদ্ধ না হলে ফিলিস্তিন মুক্ত করা সম্ভব নয়। আর মুসলমানদের ঐক্য সৃষ্টি না হওয়ার পেছনে কারণ হলো দেশগুলোতে ইসলামপন্থী সরকার না থাকা। যদি দেশগুলোতে ইসলামপন্থী সরকার থাকতো তবে মুসলমানরা একতাবদ্ধ হওয়ার সুযোগ লাভ করতো।

তিনি ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের উদাহরণ টেনে বলেন, ইরানে বিপ্লব হওয়ার কারণেই তাদের পক্ষে সম্ভব হয়েছে মজলুম ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়ানোর।

অধ্যাপক ড. শাহ্ কাউসার মুস্তাফা আবুলউলায়ী বলেন, মুসলিম বিশ্বে বর্তমানে যে সংকট বিরাজ করছে তা মোকাবেলায় মুসলমানদের ঐক্যের বিকল্প নেই। মুসলিম দেশসমূহ ঐক্যবদ্ধ হওয়ার মাধ্যমেই কেবল দানবীয় ইহুদিবাদী আগ্রাসনকে প্রতিহত করা সম্ভব। ন্যাটোর ন্যায় মুসলিম দেশগুলোর একটি সামরিক জোট গঠন করা এখন সময়ের দাবি। ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো অর্থনৈতিক জোট গঠন করে মুসলিম দেশসমূহ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করতে পারে।

অধ্যক্ষ ড. একেএম মাহবুবুর রহমান বলেন, ইমাম খোমেইনী (রহ) মুসলমানদের দুর্বলতার অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন যে, মুসলমানরা তাদের শত্রু-মিত্র চিনতে পারে না। আর যারা চিনতে পারে তারা শাসনক্ষমতাকে আঁকড়ে থাকার লোভে ইসলামের শত্রুদেরকে সহযোগিতা করে। তাই আমাদের প্রয়োজন শত্রু-মিত্রকে চেনা। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে ফিলিস্তিন প্রসঙ্গ আসা দরকার যাতে তরুণ প্রজন্ম এ বিষয়ে জানতে পারে, সচেতন হতে পারে।

প্রফেসর ড. কেএম সাইফুল ইসলাম খান বলেন, মুসলমানরা নিজেদের কর্মের দ্বারাই নিজেদের পরিচয় হারিয়ে ফেলেছে। মহান আল্লাহ বলেন, তোমরাই বিজয়ী হবে যদি তোমরা মুমিন হও। অথচ আমাদের ইমান দুর্বল হয়ে গেছে। আমরা বস্তুগত বিষয় নিয়ে এত ব্যস্ত হয়ে পড়েছি যে, মূল বিষয় ছেড়ে অন্য বিষয়ে মত্ত হয়ে পড়েছি। ইয়েমেনের অর্থনীতি দুর্বল হওয়া সত্ত্বেও সেদেশের জনগণ ইমানের বলে বলীয়ান হয়ে ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়িয়েছে। অথচ আরব বিশ্ব নীরব। আল্লাহ আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন একতাবদ্ধ হওয়ার জন্য, কিন্তু আমরা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছি। এর পেছনে ইসরায়েলের ষড়যন্ত্রও সবার কাছে স্পষ্ট। আর আল্লাহ তাআলার আদেশের বিপরীতে গিয়ে সফল হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই।

সাংবাদিক জামাল উদ্দিন বারী বলেন, ইসরায়েলি আগ্রাসনে গত ১৩ মাসে মুসলমানদের পূণ্যভূমি ফিলিস্তিনের গাজা শহরকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করা হয়েছে। নির্বিচার হত্যা করা হয়েছে প্রায় ৪৫ হাজার ফিলিস্তিনিকে। এদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। ইসরায়েলি বোমায় লক্ষাধিক ফিলিস্তিনি আহত হয়েছে। গাজা উপত্যকার বিশ লাখের বেশি মানুষকে উদ্বাস্তু বানানোর পাশাপাশি চরম খাদ্য সংকট, দুর্ভিক্ষ ও মানবেতর জীবনে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। সেখানে ইরান ছাড়া আর কোনো আরব দেশকে সামরিক-অর্থনৈতিক সহায়তা নিয়ে ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়াতে দেখা যাচ্ছে না। এ এক বিস্ময়কর বাস্তবতা। বিশ্বজনমত ফিলিস্তিনিদের পক্ষে থাকলেও আরব শাসকরা এখনো ইঙ্গ-মার্কিনিদের কৃত্রিম দোস্তি ত্যাগ করে আল আকসা ও আরব ফিলিস্তিনিদের রক্ষায় দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে পারেনি।

আলোচনাসভার শুরুতেই ফিলিস্তিনের ওপর এক প্রামাণ্যচিত্র দেখোনো হয়। সভা শেষে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে একটি প্রতিবাদ মিছিল বের হয়ে তা জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে গিয়ে শেষ হয়।

খেলাধুলা

দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের মাঝপথেই খবর বের হয়, অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিতে চান নাজমুল হোসেন শান্ত। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে সিরিজই হওয়ার কথা ছিল তার জন্য শেষ।

তবে শান্তকে অধিনায়ক করেই আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের জন্য স্কোয়াড ঘোষণা করেছে বিসিবি।
এই সিরিজে সহ অধিনায়ক হিসেবে থাকবেন মেহেদী হাসান মিরাজ। স্কোয়াডে থাকছেন না লিটন কুমার দাস। জ্বরে ভোগায় দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টের একাদশেও ছিলেন না তিনি। ওই অসুস্থতা থেকে সেরে না উঠায় আফগানদের বিপক্ষে নেই এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার।

টেস্ট স্কোয়াডে বেশ কিছুদিন ধরে নিয়মিত নাহিদ রানা এবার সুযোগ পেয়েছেন ওয়ানডেতেও। এই সিরিজের স্কোয়াডে রাখা হয়েছে নাসুম আহমেদকে। গত বছর ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর এই প্রথম সুযোগ পেলেন তিনি।

আগামী শনি ও রোববার দুই ভাগ হয়ে দুবাইয়ে রওনা হবে বাংলাদেশ দল। ৬, ৯, ১১ নভেম্বর শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে তিন ম্যাচ খেলবে দুই দল।

আফগানিস্তান সিরিজের স্কোয়াড: সৌম্য সরকার, তানজিদ হাসান তামিম, জাকির হাসান, নাজমুল হোসেন শান্ত (অধিনায়ক), মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, তাওহীদ হৃদয়, জাকের আলি অনিক, মেহেদী হাসান মিরাজ (সহ অধিনায়ক), রিশাদ হোসেন, নাসুম আহমেদ, তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান, শরিফুল ইসলাম, নাহিদ রানা ।

আন্তর্জাতিক

যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে অবস্থান করছে বলে মন্তব্য করেছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। মার্কিন নির্বাচনের আর বাকী মাত্র চার দিন। এমন সময় এ কথা বললেন তিনি।

শুক্রবার তুরস্কের গণমাধ্যম হুররিয়াত ডেইলিকে এক সাক্ষাৎকারে ল্যাভরভ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া ‘সরাসরি সামরিক সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার’ খুব কাছাকাছি রয়েছে।

তিনি বলেন, বর্তমান প্রেসিডেন্টের (জো বাইডেন) অধীনে আমাদের দেশগুলো সরাসরি সামরিক সংঘাতের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে।

আগামী সপ্তাহে অনুষ্ঠেয় মার্কিন নির্বাচনে ডেমোক্রেট প্রার্থী কমলা হ্যারিসের বিরুদ্ধে সাবেক রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বিতা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে ল্যাভরভ বলেন, এই ফলাফল রাশিয়ার জন্য খুব একটা প্রভাব ফেলবে না।

তিনি বলেন, আমাদের কোনো অগ্রাধিকার নেই। ট্রাম্প প্রশাসন ক্ষমতায় থাকাকালে পূর্বসূরিদের তুলনায় সবচেয়ে বেশি রুশবিরোধী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

নির্বাচনে যেই জিতুক না কেন, আমরা মনে করি না যুক্তরাষ্ট্রের রুশবিরোধী মনোভাব পরিবর্তন হতে পারে।

যদিও ট্রাম্প এর আগে রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুতিনের প্রতি তার অনুরাগের কথা স্পষ্ট করেছেন, তবে এই দুই ব্যক্তি ঘনিষ্ঠ নন এবং ইচ্ছাকৃতভাবে অস্পষ্ট সম্পর্ক বজায় রেখেছেন।

আন্তর্জাতিক

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের নাম ও লোগো ব্যবহার করে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে একটি সংবাদের ছবি (স্ক্রিনশট) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে দাবি করা হয় বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ও সেনা কর্মকর্তাদের অপসারণের তালিকা চূড়ান্ত হয়েছে। তবে ওয়াশিংটন পোস্ট এমন কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি বলে নিশ্চিত হয়েছে তথ্য যাচাইকারী (ফ্যাক্ট চেকার) প্রতিষ্ঠান রিউমার স্ক্যানার।  বৃহস্পতিবার রিউমার স্ক্যানারের এক প্রতিবেদনে এ কথা জানানো হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে গত ০৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ০৮ আগস্ট অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীনকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে। এর পর থেকেই বাংলাদেশের এই রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক নিয়ে ইন্টারনেটে বিভিন্ন সময় নানা দাবি প্রচার হয়ে আসছে। সম্প্রতি মার্কিন পত্রিকা দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের নাম ও লোগো ব্যবহার করে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে একটি সংবাদের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

কথিত ওই প্রতিবেদনের দাবি অনুযায়ী, আমেরিকান সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক জ্যাকলিন আলেমানি এটি লিখেছেন। প্রতিবেদনে মূলত দাবি করা হয়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানসহ ৬৭ জন সিনিয়র সেনা কর্মকর্তা এবং ৩ হাজার ৮৭২ জন সামরিক কর্মীকে বরখাস্তের একটি তালিকা চূড়ান্ত করেছে।

প্রতিবেদনটির সারসংক্ষেপ অনুযায়ী, চলমান রাজনৈতিক সংকটের কারণে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশত্যাগে বাধ্য হন এবং ১০ আগস্ট প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান পদত্যাগ করেন। এরপর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সেনাবাহিনীতে বড় ধরনের পুনর্গঠন শুরু করে। এতে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানসহ ৬৭ জন সিনিয়র সেনা কর্মকর্তা এবং ৩ হাজার ৮৭২ জন সামরিক কর্মীকে বরখাস্তের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়। এই পদক্ষেপকে সামরিক বাহিনীতে বড় পরিবর্তন এবং বেসামরিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে, বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, এই পুনর্গঠন সামরিক বাহিনীর মধ্যে অসন্তোষ এবং দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও বৃদ্ধি করতে পারে।

রিউমার স্ক্যানারের ফ্যাক্টচেক

রিউমার স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা গেছে, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকারসহ ৬৭ জন জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তা এবং ৩ হাজার ৮৭২ জন সামরিক কর্মীকে বরখাস্তের তালিকা চূড়ান্ত করেছে বলে দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি। বরং পত্রিকাটির নাম ও লোগো ব্যবহার করে ছড়িয়ে পড়া ছবিটি সম্পূর্ণ ভুয়া বলে দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট-এর দক্ষিণ এশিয়ার ব্যুরোপ্রধান গেরি শিহ রিউমার স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছেন।

ছড়িয়ে পড়া সংবাদের ছবিটি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এতে লেখক হিসেবে আমেরিকান সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক জ্যাকলিন আলেমানির নাম ব্যবহার করা হয়েছে এবং প্রতিবেদনের তারিখ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ২১ অক্টোবর। বিষয়টির সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে জ্যাকলিন আলেমানির এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্ট এবং দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট-এর ওয়েবসাইটে তাঁর লেখক প্রোফাইল খতিয়ে দেখা হয়। তবে সেখানে এমন কোনো প্রতিবেদনের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।

এ ছাড়া দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট-এর ওয়েবসাইট ও সামাজিক মাধ্যমের প্রোফাইলগুলোতেও এমন কোনো প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরে রিউমার স্ক্যানারের পক্ষ থেকে ২১ অক্টোবরের দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট-এর মূল সংস্করণ (প্রিন্ট) সংগ্রহ করা হয়, সেখানেও এমন কোনো প্রতিবেদনের অস্তিত্ব মেলেনি।

এই বিষয়ে জানতে রিউমার স্ক্যানারের পক্ষ থেকে দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট-এর দক্ষিণ এশিয়ার ব্যুরোপ্রধান গেরি শিহের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, ‘এটি ভুয়া।’ পাশাপাশি তিনি রিউমার স্ক্যানারকে পত্রিকাটির মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।

পরে রিউমার স্ক্যানার যোগাযোগ করে দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট-এর মুখপাত্রের সঙ্গে। ই–মেইলের মাধ্যমে এই বিষয়ে মুখপাত্রের প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয়। তবে এই প্রতিবেদন প্রকাশের সময় পর্যন্ত তাদের পক্ষ থেকে কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে রিউমার স্ক্যানার।

শেষে রিউমার স্ক্যানারের প্রতিবেদনে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকার সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানসহ ৬৭ জন জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তা এবং ৩ হাজার ৮৭২ জন সামরিক কর্মীকে বরখাস্তের তালিকা চূড়ান্ত করেছে দাবি করে দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের নাম ও লোগো–সংবলিত প্রতিবেদনের ছবিটি সম্পূর্ণ ভুয়া ও বানোয়াট।

সূত্র : প্রথমআলো, আজকের পত্রিকা

বিনোদন

ঐতিহ্যবাহী সংগঠন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি (বাচসাস)-এর দ্বিবার্ষিক সাধারণ সভা ও ২০২৪-২৬ মেয়াদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে শুক্রবার (১ নভেম্বর)। এদিন জাতীয় প্রেস ক্লাবে কাল ১০টায় দ্বিবার্ষিক সাধারণ সভা ও দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলে।

শুক্রবার নির্বাচন হয় সভাপতি ও সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে। এবার সভাপতি পদে নির্বাচন করছেন তিন জন─কামরুল হাসান দর্পণ, কাজী ফারুক বাবুল ও অঞ্জন রহমান। আর সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে লড়ছেন দুজন─আবু সুফিয়ান রতন ও আহমেদ তেপান্তর। এদের মধ্যে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন কামরুল হাসান দর্পণ আর সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে আবু সুফিয়ান রতন জয় লাভ করেছেন।

অন্যদিকে ভোট ছাড়াই নির্বাচিত হয়েছেন সহ-সভাপতি লিটন রহমান ও সালাম মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক রাহাত সাইফুল, অর্থ সম্পাদক ইরানী বিশ্বাস, সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তফা মতিহার, আন্তর্জাতিক ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক আবু হুরায়রা মুরাদ, সমাজকল্যাণ ও মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ইসরাত জাহান স্বর্ণা, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সম্পাদক আনিসুল হক রাশেদ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুর ইসলাম লিটন, দফতর সম্পাদক রুহুল আমিন ভূঁইয়া এবং কার্যনির্বাহী সদস্য নিয়াজ মোর্শেদ শুভ, পান্থ আফজাল, মহিব আল হাসান, শফিউল্লাহ সুমন, শাকিল হোসেন, সাজু আহমেদ, সেলিম কামাল, হাফিজ রহমান ও রুহুল সাখাওয়াত।

তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বাচসাসের নতুন সভাপতি কামরুল হাসান দর্পণ বলেন, যতটা প্রত্যাশা করেছিলাম তার চেয়ে বেশি ভোটার সমাগম ঘটেছে। জাতীয় প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে ভোটারদের প্রাণবন্ত উপস্থিতিতে একটি সৌহার্দ্যপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। ভোটাররা যে গুরু দায়িত্ব অর্পণ করেছেন সেই দায়িত্ব যাতে সঠিকভাবে পালন করতে পারি সেই প্রত্যাশা ব্যক্ত করছি।

সাধারণ সম্পাদক রাহাত সাইফুল বলেন, একটি উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্যে দিয়ে ভোটারদের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি আমাদের অনেক বেশি দায়বদ্ধ করেছে। একই ছাতারা নিচে বাচসাস পরিবারের এই মিলনমেলায় আমরা উচ্ছ্বসিত। সবার সহযোগিতায় এই কমিটি সমৃদ্ধ বাচসাস গঠনে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে বলে আমি আশা প্রকাশ করছি।

এবার বাচসাস’র নির্বাচনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আলিমুজ্জামান। কমিশনে আরও ছিলেন আমিনুল ইসলাম রাজু, এরফানুল হক নাহিদ, হাফিজুর রহমান সুরুজ ও আবুল হোসেন মজুমদার।

প্রসঙ্গত, বাচসাস ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। জন্মলগ্নে এর নাম ছিল ‘পাকিস্তান চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি’। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর নাম পরিবর্তন করে হয় ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি’, সংক্ষেপে ‘বাচসাস’।

রাজনীতি

জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে ঐক্যবদ্ধ জাতিকে বিভক্ত করার কঠিন ষড়যন্ত্র চলছে বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।

তিনি বলেন, এই ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় রাজনৈতিক দলের নেতাদের সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে। বিভক্ত জাতি কখনো রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণকর নয়। আগামীর বাংলাদেশ গঠনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

শুক্রবার (১ নভেম্বর) কাকরাইলের ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইডিইবি) মিলনায়তনে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াতের নবনির্বাচিত আমিরের শপথ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, জামায়াতে ইসলামীর মতো আর কারো ওপর বিচারের নামে জুলুম না হোক। যে যার কর্মের ফল বিচারের মাধ্যমে পেলেই বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব হবে। ফলে ভুক্তভোগী মজলুম ন্যায়বিচার পাবে। আওয়ামী লীগ মানুষকে পশুর মতো হত্যা করেছে। শিশু-কিশোর, নারী-পুরুষ কেউ তাদের গণহত্যা থেকে রক্ষা পায়নি। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগ কেবলমাত্র চারদলীয় জোটের ঐক্যের ফাটল সৃষ্টি করে নিজেদের ক্ষমতায় যাওয়ার পথ পরিষ্কার করতে লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে মানুষ হত্যা করে। যারা কথায় কথায় সংবিধানের দোহাই দেয় তারা নিজেদের তৈরি করা সংবিধান নিজেরাই মানেনি। কোনো হত্যা মামলা বাদীর সম্মতি ব্যতীত প্রত্যাহার বা বাতিল করার ক্ষমতা কারো নেই। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতা দখল করেই ২৮ অক্টোবরের ঘটনায় হওয়া হত্যা মামলা বাতিল করে দিয়েছে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি এখান থেকেই শুরু হয়েছে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতা দখল করেই পিলখানা হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করেছে। তাদের ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করতেই ৫৭ জন দেশপ্রেমিক সেনা সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ তাদের ফ্যাসিবাদের মুখোশ উšে§াচন করেছে। শফিকুর রহমান বলেন, গণমাধ্যম সত্যিকার অর্থে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভের ভূমিকা পালন করলে কেউ জালিম হতে পারবে না।

তিনি গণমাধ্যম কর্মীদের বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ উপস্থাপন ও পরিবেশন করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সাদাকে সাদা এবং কালোকে কালো বলতে হবে। সাংবাদিকতা একটি মহান দায়িত্ব। এই দায়িত্ব জনগণের আমানত। সেজন্য জনগণের আমানত রক্ষায় সঠিক দায়িত্ব পালন করতে হবে। কোনো ব্যক্তি বা দলের হয়ে কাজ করা যাবে না। জামায়াতে ইসলামী যদি কোনো ভুল করে থাকে সেটিও তুলে ধরতে হবে। আবার জনগণের স্বার্থে যেসব কাজ করে থাকে তাও তুলে ধরতে হবে।

অনুষ্ঠানে দলটির সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, দ্বীনের পথে যারা থাকে তারাই পরস্পর ভাই ভাই। এই সম্পর্ক পৃথিবীর সব সম্পর্কের ঊর্ধ্বে। আগামী দুই বছর দায়িত্বশীলদের পূর্বের সব পরীক্ষার চেয়ে কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে। সামনে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নানামুখী সংকট, সংঘর্ষ, দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র, এই দায়িত্বশীলদেরই মোকাবিলা করতে হবে।

দক্ষিণের আমির মো. নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় শপথ অনুষ্ঠানে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ ইজ্জত উল্লাহ বক্তব্য রাখেন। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণের নায়েবে আমির আব্দুস সবুর ফকির, অ্যাডভোকেট হেলাল উদ্দিন, সহকারী সেক্রেটারি মো. দোলোয়ার হোসেন, মু. কামাল হোসাইন, ড. মুহাম্মদ আব্দুল মান্নান, কর্মপরিষদের সদস্য মো. কামাল হোসেন, মোহাম্মদ ফরিদ হোসাইন, অধ্যাপক মোকাররম হোসাইন খান, সহ-দপ্তর সম্পাদক এবং প্রচার ও মিডিয়ার সমন্বয়ক আবদুস সাত্তার সুমন প্রমুখ।

রাজনীতি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবি জোরালো হচ্ছে। আন্দোলনে নেমেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন মহল। পদত্যাগের দাবিতে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটামও দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তবে রাষ্ট্রপতি নিজ থেকে পদত্যাগ না করলে কীভাবে অপসারণ করা হবে, তা নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো কী ভাবছে, তার ওপর ভিত্তি করে দুয়েক দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে পারে অন্তর্বর্তী সরকার।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে অপসারণের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো ‘সিদ্ধান্ত হয়নি’ বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেছেন, এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হলে তা সাংবাদিকদের জানানো হবে।

বুধবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরাকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির প্রতিনিধি দলের বৈঠকের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন শফিকুল আলম।

রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের বিষয়ে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের বক্তব্য এবং সরকারের একমত পোষণের পরবর্তী ধাপে সরকারের কী পদক্ষেপ নিচ্ছে জানতে চাইলে প্রেস সচিব বলেন, ‘এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে আমাদের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’

বুধবার (২৩ অক্টোবর) বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, কেউ যেন কোনোভাবে দেশে নতুন করে সাংবিধানিক বা রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি করতে না পারে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। এ ধরনের সংকট তৈরির চেষ্টা করা হলে ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করা হবে। রাষ্ট্রপতির বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না, এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলেও তিনি তা এড়িয়ে যান।

বিএনপি এই মুহূর্তে রাষ্ট্রপতির অপসারণ চায় না বলে জানিয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। বিএনপির গুলশান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি পদ শূন্য হলে সাংবিধানিক সংকট তৈরি হবে। এতে নির্বাচন বিলম্বিত হবে। তাই বিএনপি এই মূহুর্তে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ চায় না।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘শিক্ষাজীবনে ছাত্রলীগ করা রাষ্ট্রপতি পলাতক শেখ হাসিনাকে পুনর্বাসিত করার চেষ্টা করছেন’।

অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীর মুখপাত্র মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, রাষ্ট্রপতি নিজেই বলেছিলেন যে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগপত্র তিনি পেয়েছেন আর পরে সাংবাদিকদের বলছেন পাননি। এর অর্থ হলো এখন তিনি মিথ্যা বলছেন, যা শপথ ভঙ্গের নামান্তর। এর মাধ্যমে তিনি ওই পদে থাকার অধিকার হারিয়েছেন,’

গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, রাষ্ট্রপতি দেশের প্রধান অভিভাবক। কিন্তু তার ভূমিকা রাজনৈতিক ও নৈতিক স্খলনের শামিল। এমনকি শপথ লঙ্ঘনের শামিল। আমরা মনে করি তার এ পদে থাকা উচিত নয়।

বাম গণতান্ত্রিক জোট ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (মার্ক্সবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা বলেন, আমরা মনে করি এটি মীমাংসিত বিষয়। গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন এবং পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়া হয়েছে। শপথ গ্রহণ করে উপদেষ্টারা দায়িত্ব নিয়েছেন। আমরা মনে করি অন্তর্র্বর্তী সরকার ও রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব হবে সংবিধানের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা। সংস্কারের বিষয়ে একমত হয়ে নির্বাচনে যাওয়াটা জরুরি মনে করি।

গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা এবং রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে অপসারণের দাবি জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও মহাসচিব সাজেদুর রহমান। তাঁরা বলেছেন, আগে রাষ্ট্রীয় ভাষণে রাষ্ট্রপতি সাবেক অবৈধ প্রধানমন্ত্রীর কথিত পদত্যাগপত্র প্রাপ্তির কথা দেশবাসীর সামনে স্বীকার করলেও সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি তা অস্বীকার করেছেন। এটা স্ববিরোধিতা এবং তাতে তিনি শপথ ভঙ্গ করেছেন।

তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম বলেছেন, রাষ্ট্রপতি থাকবেন-কি থাকবেন না এ প্রশ্নটি এই মুহূর্তে বাংলাদেশে আইনি বা সাংবিধানিক প্রশ্ন নয়। এটি একেবারেই একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত।

রাষ্ট্রপতিকে কীভাবে সরানো সম্ভব?

সংবিধানে রাষ্ট্রপতি অভিশংসন বা পদত্যাগের বিধান রয়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে দুটি উপায়েই জটিলতা আছে। সংবিধানের ৫২(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, জাতীয় সংসদকে রাষ্ট্রপতির অভিশংসনের ক্ষমতা দেওয়া আছে। কিন্তু ৬ আগস্ট সংসদ বিলুপ্ত করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সুতরাং সেখানে বাধা আছে।

অন্যদিকে সংবিধানের ৫৩(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি চাইলে স্পিকারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেবেন। তা গ্রহণের পরে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করবেন স্পিকার।

কিন্তু গত ২ সেপ্টেম্বর স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীও পদত্যাগ করেছেন এবং ডেপুটি স্পিকারও কারাগারে থাকায় সেটি সম্ভব হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ বা অপসারণ সংবিধান অনুযায়ী হওয়া সম্ভব নয় বলেই মনে করেন সিনিয়র আইনজীবী শাহদীন মালিক।

জাতীয়

বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন।। সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থানের পর প্রশাসন, বিচার বিভাগ, পুলিশসহ প্রায় সব জায়গায়ই পরিবর্তন আনা হয়েছে। বাদ থাকছে না পাঠ্যপুস্তকও। সেই জায়গায়ও আসছে বড় কিছু পরিবর্তন।

আগামী বছরের প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের পাঠ্যপুস্তকে আসছে বড় পরিবর্তন। নতুন পাঠ্যপুস্তকে যুক্ত হচ্ছে জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের গ্রাফিতি। বাদ দেওয়া হচ্ছে বইয়ের প্রচ্ছদে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবিসংবলিত উক্তি।

একই সঙ্গে বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাসে যার যা ভূমিকা তা সেভাবে সন্নিবেশিত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান জানান, ইতিহাসে যার যেমন ভূমিকা সেভাবেই সেসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতার ইতিহাসে যারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন তাদের বিষয় যুক্ত হচ্ছে।

আগামী বছরের পাঠ্যপুস্তক ২০২৪ সালের বিদ্যমান পাঠ্যক্রমে নয় বরং ২০১২ সালের পাঠ্যক্রমে হচ্ছে বলে জানান এনসিটিবির চেয়ারম্যান।

তিনি বলেন, ‘যে কারিকুলামটা বিদ্যমান ছিল ২০২৪-এর জন্য সেটাতে না গিয়ে ২০২৫ সালের জন্য ২০১২ সালের কারিকুলাম অনুযায়ী পাঠ্যপুস্তক প্রণীত হচ্ছে, যেটা ২০২২ সালে সর্বশেষ গিয়েছিল।’

বিভিন্ন শ্রেণির বেশ কিছু পাঠ্যপুস্তকে দেশের গণ-অভ্যুত্থানের চেতনার প্রতিফলন থাকবে। আরো বেশ কয়েকটি পরিবর্তন আসছে পাঠ্যপুস্তকে।

যুক্ত হচ্ছে গণ-অভ্যুত্থানের গ্রাফিতি

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে গড়ে ওঠা শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফরম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মূল দাবি একসময় সরকার পতনের এক দফায় রূপ নেয়। এ আন্দোলনে বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে দেয়াল চিত্রকে বেছে নেয়।

শেখ হাসিনার সরকার পতনের পরও পুরো ঢাকা শহরের বিভিন্ন দেয়ালে দেয়ালে শিক্ষার্থীরা গ্রাফিতি আঁকে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বহু ভবনের দেয়াল, সীমানাপ্রাচীর, সড়ক-দ্বীপ, মেট্রো রেলের স্তম্ভ, উড়াল সড়কের স্তম্ভ কোনো কিছুতেই নিজেদের অর্থে গ্রাফিতি আঁকতে বাদ রাখেননি শিক্ষার্থীরা।

এসব গ্রাফিতিতে ওই সময়টুকুকে ধারণ করার চেষ্টা করা হয়েছে। অভ্যুত্থানে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের প্রতিকৃতি ও তাদের প্রতি শ্রদ্ধা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে গ্রাফিতিতে।

পাশাপাশি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, রাষ্ট্র-সমাজের সংস্কার, ঘুষ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, স্বৈরতন্ত্রের অবসান, বাকস্বাধীনতা, অধিকার নিশ্চিত করা থেকে শুরু করে সব ধরনের অন্যায়–অবিচারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ আর প্রতিরোধের উক্তিও ফুটে উঠেছে এসব গ্রাফিতিতে।

এনসিটিবির কর্মকর্তারা জানান, জুলাইয়ের গ্রাফিতি যে সবগুলো বইয়ে যাবে তা নয়, কিছু কিছু বইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

একই সঙ্গে যেহেতু ২০২৪-এর জুলাইয়ের অভ্যুত্থানের বিষয়টি একেবারেই সাম্প্রতিক এবং তা নিয়ে লেখা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। এ বছর সময়ও একেবারেই কম, ফলে লেখা হিসেবে না রেখে কিছু পাঠ্যবইয়ে অভ্যুত্থানের গ্রাফিতি বা দেয়ালে আঁকা ছবি রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনসিটিবি।

এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেন, ‘২৪-এর জুলাইয়ের ঘটনাবলি, এজাতীয় যেসব লেখা রয়েছে তা আসলে কতটা মানসম্পন্ন আর লেখাগুলো তৈরি করাও বেশ সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তার পরও কিছু বিষয় যেতে পারে কিন্তু সেটা মন্ত্রণালয়ের অনুমতি প্রয়োজন। এখনো অনুমোদন আমরা পাইনি।’

তিনি বলেন, ‘তবে কিছু কিছু বইয়ের ব্যাক কাভারে কিছু গ্রাফিতি যাচ্ছে, বাচ্চারা দেয়ালে যে চিত্রাঙ্কন এঁকেছে বা মনীষীদের বাণী ওই জাতীয় বিষয় যাচ্ছে।’

বাংলা, ইতিহাস, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ের মতো কিছু বইয়ের প্রচ্ছদে বা বইয়ের কোনো কোনো অংশে এসব গ্রাফিতি বা দেয়ালে আঁকা ছবি যুক্ত করা হবে।

শেখ হাসিনার উক্তি বাদ দেওয়া হবে

এখন বেশ কয়েকটি শ্রেণির পাঠ্য বইয়ের পেছনের প্রচ্ছদে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যেসব ছবি ও উদ্ধৃতি রয়েছে সেগুলো বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনসিটিবি।

অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেন, ‘বইয়ের শেষ পৃষ্ঠায় থাকা শেখ হাসিনার এসব উক্তিকে অপ্রাসঙ্গিক। সেগুলো থাকবে না। শিক্ষার্থীদের মনে যাতে রাজনৈতিক কোনো ধারণার উদ্রেক না হয় সে কারণে এসব বাদ দেওয়া হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘ওগুলো আসলে পাঠ্য বইতে যাওয়ার মতো নয় বা প্রয়োজন নেই। পাঠ্য বইয়ের কভার পৃষ্ঠা থেকেই শুরু হয় শিক্ষার্থীর শিক্ষামূলক কার্যক্রম। এগুলো দেখে তাদের মধ্যে অন্য রকম ধারণা না তৈরি হয় যে এটা একটা রাজনৈতিক প্রচারণার অংশ। এটা যেন না হয়।’

বইয়ের পেছনের প্রচ্ছদে শেখ হাসিনার উদ্ধৃতির পরিবর্তে চিরন্তন কিছু বাণী যুক্ত করা হবে বলে জানান তিনি।

ইতিহাস বিষয়ক যেসব পরিবর্তন হচ্ছে

বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন শ্রেণির বইয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকাকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন ইতিহাস নির্ভর বিষয়েও কিছু কাটছাঁট করা হচ্ছে। একই সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে জিয়াউর রহমানসহ অন্যদের ভূমিকাও।

এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘ইতিহাসের বিষয় আছে, যেগুলোতে যার যার ভূমিকা সেটা সঠিকভাবে ছিল না। এ রকম অভিযোগ আছে। আমরাও পেয়েছি। সেগুলো দেখা হচ্ছে। যার যতটুকু ভূমিকা সেভাবে দেওয়া হবে। যেমন : মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ইতিহাসের অন্যান্য যারা পিলার তাদের বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন- এমন বিষয়ও যুক্ত হচ্ছে আগামী বছরের পাঠ্য বইয়ে।’

তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার ঘোষণায় আমাদের তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান একাধিক ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেগুলো সেভাবেই আসবে আশা করছি। এ ছাড়া মাওলানা ভাসানী, তাজউদ্দীন আহমদ, জেনারেল আতাউল গণি ওসমানী যার যা ভূমিকা এগুলো ইতিহাসের অংশ হিসেবে যুক্ত করা হবে।’

গণ-অভ্যুত্থানে নিহতদের কথা অন্তর্ভুক্ত হবে

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের প্রাথমিক পর্যায়ে গত ১৬ জুলাই রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদ নিহত হন। পুলিশের গুলির বিপরীতে বুক পেতে দাঁড়িয়ে যান তিনি।

বিভিন্ন ভিডিওতে পুলিশ গুলি করার পর সাঈদকে ঢলে পড়তে দেখা যায়। পরে মারা যান তিনি। যদিও পুলিশ যে মামলা করে তাতে ভিন্ন বক্তব্য থাকায় তা নিয়ে চলে তুমুল সমালোচনা। সাঈদের এ মৃত্যু সে সময় তোলপাড় তোলে দেশে।

এ আন্দোলনে ঢাকায় ১৮ জুলাই নিহত হয়েছেন এমন একজন মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ। বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের ছাত্র মুগ্ধ উত্তরায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। আন্দোলনকারীদের পানি সরবরাহ করছিলেন মুগ্ধ। উত্তরাতেই বাসা তার।
গণ-অভ্যুত্থানে নিহত এ দুজনের কথা পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে ইতিমধ্যেই আলোচনা হয়েছে বলে জানান এনসিটিবির চেয়ারম্যান। তবে এখনো মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে অনুমোদন পাওয়া যায়নি।

তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এটা এখনো সিদ্ধান্ত আসে নাই। আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে সিদ্ধান্ত আসলে আমরা বলতে পারব। এখনো সিদ্ধান্ত পাইনি তো, এ জন্য যুক্ত করার কথা বলা যাবে না।’

মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত দেরিতে এলেও আগামী বছরের বইতে শেষ মুহূর্তেও এ বিষয় বইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব জানিয়ে মি. হাসান বলেন, ‘ছাপাখানায় কিছু বই চলে গেছে, কিছু বই এখনো যাওয়ার অপেক্ষায় আছে। জানুয়ারিতে বই দেওয়ার জন্য আমাদের প্রিন্টারদের সঙ্গে আমাদের কথা হচ্ছে। বই দেওয়ার জন্য তাদের প্রস্তুতিও আছে। এখন তারা যদি সব সহযোগিতা করে তাহলে তা সম্ভব, কঠিন হলেও অসম্ভব নয়।’

মূল্যবোধের বিষয় যুক্ত হবে

আগামী বছরের পাঠ্য বইয়ে যাতে কোনো গোষ্ঠী, সম্প্রদায় বা কারো প্রতি আঘাত না করা হয় সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রেখে সব বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে বলে জানান এনসিটিবির চেয়ারম্যান এ কে এম রিয়াজুল হাসান।

তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের মূল্যবোধ, ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধের সাথে সাংঘর্ষিক কোনো কিছু পাঠ্য বইয়ে থাকবে না।’

সতর্কতার জন্য এটা করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কোনো ধর্মীয় গোষ্ঠী বা সামাজিক ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী তারা যেন আহত না হয় বা তাদের বিষয়ে যাতে বিরূপ কোনো মন্তব্য না থাকে সেটা দেখা হয়েছে। কাউকে আঘাত যেন করা না হয় সে বিষয়টি দেখা হচ্ছে।’

জাতীয়

সব বিষয়ে পূর্ণ নম্বর ও সময়ে দেশের বড় দুই পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা বোর্ড কর্মকর্তারা।

আগামী বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা হবে এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে, আর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা হবে জুন মাসের শেষের দিকে।

সব বিষয়ে পূর্ণ নম্বর ও সময়ে দেশের বড় দুই পাবলিক পরীক্ষা হবে বলে শিক্ষা বোর্ড কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, “চলতি বছরের মত আগামী বছরের (২০২৫) এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা হবে পূর্ণাঙ্গ সিলেবাসে। সব বিষয়ে পূর্ণ নম্বর ও সময়ে এ পরীক্ষা হবে। ঈদুল ফিতরের পর এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি এ পরীক্ষা শুরুর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।”

এদিকে এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ শুরু হবে আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে। সেজন্য আগামী ২৭ নভেম্বরের মধ্যে এসএসসির নির্বাচনি বা টেস্ট পরীক্ষার ফল প্রকাশ করতে বলা হয়েছে মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুলগুলোকে।

এসএসসি পরীক্ষার মাস দুয়েক পর জুনের শেষ দিকে উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন তপন কুমার সরকার।

তিনি বলেন, “২০২৫ সালের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা হবে ২০২৩ সালের সংক্ষিপ্ত বা পুনর্বিন্যাসকৃত সিলেবাসে, সব বিষয়ে পূর্ণ নম্বরে ও পূর্ণ সময়ে।”

আন্তঃশিক্ষা বোর্ড পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক উপকমিটির আহ্বায়ক এবং ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক আবুল বাশারও একই তথ্য জানিয়েছেন।

স্বাভাবিক নিয়মে এসএসসি ও এইচএসসিতে প্রতিটি বিষয় বা পত্রের পরীক্ষা হয় তিন ঘণ্টা। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) নম্বর বিভাজন অনুযায়ী, প্রতিটি পত্রে মোট ১০০ নম্বরের পরীক্ষা হবে।

বাংলা, অর্থনীতি, হিসাববিজ্ঞান বা ইসলামের ইতিহাসের মত তত্ত্বীয় বিষয়গুলোতে প্রতি পত্রে ৩০ নম্বরের বহুনির্বাচনি ও ৭০ নম্বরের সৃজনশীল প্রশ্ন হবে। তবে ইংরেজির প্রতিটি পত্রে মোট ১০০ নম্বরের সৃজনশীল পরীক্ষা হবে।

আর পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বা ভূগোলের মত ব্যবহারিক বিষয়গুলোর প্রতি পত্রে ২৫ নম্বরের ব্যবহারিক পরীক্ষা ও ৭৫ নম্বরের তত্ত্বীয় পরীক্ষা হবে। এ বিষয়গুলোতে তত্ত্বীয় অংশে ২৫ নম্বরের বহুনির্বাচনি ও ৫০ নম্বরের সৃজনশীল প্রশ্ন হবে।

মোট তিন ঘণ্টার মধ্যে প্রথম ৩০ মিনিট বহুনির্বাচনি প্রশ্নের উত্তর করতে হবে। আর বাকি ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিট সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সুযোগ পাবেন পরীক্ষার্থীরা।

আন্তর্জাতিক

“বাংলাদেশ এখন পুরোপুরি বিশৃঙ্খল”, বলেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট