জাতীয়

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বয়স এরই মধ্যে পাঁচ মাস পার হয়ে গেছে। গঠিত হয়েছে দুই ধাপে মোট ১১টি সংস্কার কমিশন। এরই মধ্যে সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, দুর্নীতি দমন কমিশন ও পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা হয়েছে। তবে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গঠিত এই সরকার কতদিন দায়িত্ব পালন করবে, রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় সংস্কার কবে নাগাদ সম্পন্ন হবে, কবে নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা হবে-এ প্রশ্ন এখন সবার। বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সন্তোষজনক পর্যায়ে না থাকা, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, বিনিয়োগে মন্দা, প্রশাসনে অস্থিরতা, পরাজিত শক্তির নানা অপকৌশল-এসব কারণে সরকারের ওপর দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার চাপ প্রবল হয়ে উঠেছে। দেশের রাজনৈতিক দলগুলো ছাড়াও এ ইস্যুতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের চাপ বাড়ছে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর। তবে বহির্বিশ্বের চাপে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি পরিবর্তনের দিন শেষ বলে মনে করেন জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা।

কূটনৈতিক সূত্র বলছে, ড. ইউনূসের সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বেশির ভাগ দেশই সরকারের সংস্কারপদ্ধতির জোর সমর্থন দিচ্ছে। হাসিনা সরকারের দুর্নীতির বিষয়ে সরকারকে সমর্থন করে। তবে আন্তর্জাতিক মহল শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সংস্কারের পাশাপাশি নির্বাচনের কথা বলে। সংস্কার ইস্যুতে সরকারের সময় নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি বিদেশিরা। প্রয়োজনীয় সময়ের পক্ষেই ছিল তাদের অবস্থান। কিন্তু দুই মাস ধরেই সংস্কারের পাশাপাশি দ্রুত নির্বাচনের বিষয়ে কূটনৈতিক চ্যানেলে আলাপ-আলোচনা জোরালো হচ্ছে।

এদিকে, দেশের অভ্যন্তরে ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকেও দ্রুত নির্বাচনের ব্যাপারে চাপ বাড়ছে। বিএনপি ও তার মিত্র ছয়দলীয় গণতন্ত্র মঞ্চ, এলডিপি, ১২ দলীয় জোট, ১১ দলীয় জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, গণফোরাম, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যসহ অন্তত ৪৮টি রাজনৈতিক দল অন্তর্বর্তী সরকারের যাত্রার শুরুতে যৌক্তিক সময়ে নির্বাচন দেওয়ার আহ্বান জানালেও এখন দ্রুত নির্বাচনি রোডম্যাপ চাইছে। চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়েই জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্ভব বলেও মনে করছে এসব দল। একই মত ছয়দলীয় বাম গণতান্ত্রিক জোটেরও। পাশাপাশি জামায়াত, গণ-অধিকার পরিষদ ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টও (এনডিএম) দ্রুত নির্বাচনের কথা বলছে।

রাজনীতিসংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে একের পর এক সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন মহলের ষড়যন্ত্রের কথা বলা হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারকে সাময়িক হিসাবেই সবাই বিবেচনা করছে। নির্বাচন দিতে দেরি হলে বিভিন্ন বিষয়ে সমালোচনা বাড়বে এবং বর্তমান সরকারের প্রতি সমর্থনও কমে যেতে পারে।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বিদেশিরা তাদের নিজস্ব মতামত, নিজস্ব ধারণা দেবে। তাদের একেক রকম চিন্তাভাবনা, আমাদের বিচন্তাভাবনা হলো বাংলাদেশের জনগণের চিন্তাভাবনা। তিনি বলেন, আমরা তো প্রথম থেকেই বলে আসছি এই সরকার হলো অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। কোনো অন্তর্বর্তীকালীন সরকারই অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্ষমতায় থাকতে পারে না। সরকার জনগণকে কথা দিয়েছে তাদের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য ক্ষমতা নিয়েছে। অতএব যত দ্রুত নির্বাচন করতে পারে এবং জনগণের প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে পারে ততই এই সরকার এবং দেশের জন্য মঙ্গল। আমাদের মহাসচিব (মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর) বিএনপির মতামত জানিয়েছেন, আগামী জুলাই-আগস্টের মধ্যেই নির্বাচন করা সম্ভব। নির্বাচন কমিশনের সে প্রস্তুতি আছে। এটা সম্ভব। তাই আশা করি সরকার যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন দিয়ে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে। তাদের ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে একটি জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে। এই স্বল্পকালীন সরকারের পক্ষে সংস্কার প্রস্তাবগুলো সব সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। তাই যারা নির্বাচিত হবে তারা বাকি কাজগুলো সম্পন্ন করবে এটাই প্রত্যাশা।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ন্যূনতম সংস্কার করতে যেটুকু সময়, যৌক্তিক সে সময়টুকু নিয়ে সংস্কার কাজ শেষ করে নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণা করা উচিত। যৌক্তিক সময় যেটুকু লাগে সে সময়টুকু সরকারকে দেওয়া উচিত। তবে খুব লম্বা সময় দরকার নেই। তা হলে নির্বাচনটা নিরপেক্ষ ও জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের মতো হবে বলে আমরা মনে করি।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, মার্কিন নির্বাচনে জো বাইডেনের দলের পরাজয়ের পর থেকে বাংলাদেশ ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের সঙ্গে ভারতের আলোচনা বাড়ে। এর আগে বর্তমান সরকার ও বাংলাদেশে দ্রুত নির্বাচনের প্রতি ভারতের আগ্রহই বেশি দেখা গেছে। শেখ হাসিনা ইস্যুতে ঢাকা-দিল্লির কূটনৈতিক সম্পর্ক নিয়েও ওয়াশিংটন মাথা ঘামায়নি। কিন্তু সম্প্রতি বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র আলোচনা করেছে বলে জানান ভারতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত এরিক গারসেটি। এছাড়া আঞ্চলিক দুই প্রভাবশালী দেশ ভারত, চীনসহ আরও কয়েকটি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বিদেশিদের নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে আগ্রহের বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয় ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদীর মন্তব্যে। গত সোমবার দিল্লিতে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সম্পর্ক নিয়ে নির্বাচিত সরকারের সময় কথা হওয়া উচিত।’ যদিও বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে কথা বলার মতো তিনি যথাযথ লোক নন।

গত শনিবার কলকাতায় আমেরিকান সেন্টারে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের মধ্য দিয়ে ভারতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত এরিক গারসেটির বক্তব্যের দুদিন পর ভারতের সেনাপ্রধানের বক্তব্যকে ঘিরে আলোচনা শুরু হয়। এরিক গারসেটি বলেন, বাংলাদেশে দ্রুত সময়ে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারত আলোচনা করেছে। সম্প্রতি দুই দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পর্যায়ে একটি বৈঠক হয়, যেখানে বাংলাদেশে সম্ভাব্য নির্বাচনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হয়। গত বৃহস্পতিবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ডব্লিউআইওএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এরিক গারসেটি আবারও জানান, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র দ্রুত সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে নির্বাচন চায়। তিনি বলেন, গণতন্ত্র ও নির্বাচন বাংলাদেশে নতুন অধ্যায় খুলতে সহায়ক হবে। মার্কিন এই কূটনীতিক বলেন, ‘আমরা উভয়ই (ভারত-যুক্তরাষ্ট্র) যত দ্রুত সম্ভব বাংলাদেশে গণতন্ত্র এবং গণতান্ত্রিক নির্বাচন দেখতে চাই। আর এটি বাংলাদেশে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে সহায়তা করবে।’

এমন মন্তব্যের মাধ্যমে দিল্লিতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত এবারই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে কথা বললেন। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র একক নীতিতে বিশ্বাস করে। সেটি হলো, উভয় দেশই শান্তিপূর্ণ দক্ষিণ এশিয়া দেখতে চায়। এই মুহূর্তে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ হয়ে কাজ করছে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র।’

এদিকে নির্বাচন ও সংস্কারের বিষয়ে বিএনপিসহ অংশীজনদের কী অবস্থান, তা জানতে ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার রোববার বিএনপি ও অন্য দলগুলোর সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন। একই সঙ্গে চীনের রাষ্ট্রদূত গত সোমবার বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে বৈঠক করেন।

নির্বাচনে কারিগরি সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) বাংলাদেশে কাজ শুরু করছে। ইউএনডিপির একটি প্রতিনিধি দল এ বিষয়ে গত মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৈঠক করেছে। নির্বাচনে সহায়তা চেয়ে নির্বাচন কমিশন জাতিসংঘকে চিঠি দিয়েছিল, এটি জানিয়ে ঢাকায় সংস্থাটির আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনে কী সহায়তা প্রয়োজন, তা মূল্যায়ন করা হবে। এ বিষয়ে অংশীজনদের সঙ্গে কথা বলে ইউএনডিপি কী সহায়তা দিতে পারে, তা জানানো হবে। এছাড়া জাতিসংঘের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফরের সময় নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। সেখানেও কারিগরি সহায়তার বিষয়টি উঠে আসে। ফলে বাংলাদেশে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের একটা চাপ বিদেশিদের পক্ষ থেকে তৈরি হচ্ছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা।

অবশ্য জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন মনে করেন, বহির্বিশ্বের চাপে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি পরিবর্তন হওয়ার দিন শেষ। এখানে আগে আমরা দেখেছি, যুক্তরাষ্ট্রে স্যাংশনের দিকে তাকিয়ে থাকত, নির্বাচনের আগে ভারত কী বলল সেদিকে তাকিয়ে থাকত। বাংলাদেশে এই দিন আর ফেরত আসবে না। আমরা মনে করি, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অভ্যন্তরীণভাবেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বাংলাদেশের মানুষের মতামতের ভিত্তিতেই এখানে নির্বাচন কবে হবে এবং কী ধরনের নির্বাচন হবে, কারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কী করবে না-এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। পৃথিবীর সব দেশেই নানা ধরনের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আছে। আমরা যেমন কারও রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সম্পৃক্ত হই না, শুধুমাত্র মানবাধিকার ইস্যু বাদে। আমরা মনেও করি না যে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক এবং নির্বাচনিব্যবস্থায় কারও হস্তক্ষেপ দেশের মানুষ মেনে নেবে। কারণ এর বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষ গণ-অভ্যুত্থান করেছে। নতজানু পররাষ্ট্রনীতি আমরা আর বাংলাদেশে দেখতে চাই না। এটি পরিবর্তনের জন্য আমরা লড়াই করব বলে মানুষকে কথা দিয়েছি। সুতরাং এটি আমরা করব।

আন্তর্জাতিক

আল কাদির ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের স্ত্রী বুশরা বিবিকে সাত বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন দেশটির একটি আদালত। শুক্রবার রায়ের পরপরই গ্রেফতার করা হয় তাকে। খবর দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের।

১৯ কোটি পাউন্ডের দুর্নীতির এ মামলায় সাবেক ক্রিকেটার ইমরান খানকে ১৪ বছরের সাজা দেওয়া হয়েছে।

রাওলপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতকক্ষে বিচারপতি নাসির জাভেদ রানা এ রায় ঘোষণা করেন। এর আগে তিনবার রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণ করেও তা পেছানো হয়েছিল। আর সবশেষ এক বছর ধরে এই কারাগারেই রয়েছেন পিটিআই প্রতিষ্ঠাতা।

জেলের পাশাপাশি জরিমানাও করা হয়েছে ইমরান-বুশরা দম্পতিকে। ইমরান খানকে ১০ লাখ ও বুশরাকে পাঁচ লাখ অর্থদণ্ড করা হয়েছে। জরিমানা না দিলে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে অতিরিক্ত ছয় মাস কারাগারে থাকতে হবে। আর বুশরাকে থাকতে হবে তিন মাস।

দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন বলছে, বাড়তি নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে এ রায় দেওয়া হয়। রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন বুশরা বিবি। রায়ের পর সেখান থেকেই তাকে গ্রেফতার করা হয়।

১৯ কোটি পাউন্ড তছরুপের অভিযোগে তার ও বুশরা বিবির বিরুদ্ধে আল-কাদির ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা করেছিল পাকিস্তানের ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টাবিলিটি ব্যুরো (এনএবি)। মামলায় ২০২৩ সালের মে মাসে ইমরানকে গ্রেফতার করা হয়। আর সাধারণ নির্বাচনের পরপর গত বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি মামলায় ইমরান ও বুশরাকে অভিযুক্ত করা হয়।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, ইমরান ও বুশরা বাহরিয়া টাউন লিমিটেডের কাছ থেকে কোটি কোটি রুপি এবং অনেক জমি নিয়েছিলেন। ইমরানের নেতৃত্বাধীন পূর্ববর্তী পিটিআই সরকারের সময় যুক্তরাজ্য পাকিস্তানকে যে পাঁচ হাজার কোটি রুপি অর্থ ফেরত দিয়েছিল, তা বৈধ করতে এসব লেনদেন করা হয়েছে।

গত ২৩ ডিসেম্বর ইসলামাবাদের অ্যাকাউন্টাবিলিটি আদালতে মামলার রায় ঘোষণার কথা ছিল। তবে শীতকালীন ছুটির কারণে ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত রায় স্থগিত করা হয়। ৬ জানুয়ারি বিচারপতি নাসির জাভেদ রানা ছুটিতে থাকায় সেদিনও রায় ঘোষণা করা হয়নি। এরপর ১৩ জানুয়ারি রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু ইমরান ও বুশরা আদিয়ালা কারাগারে স্থাপিত আদালতকক্ষে হাজির হতে পারেননি উল্লেখ করে সেদিনও রায় স্থগিত করা হয়। অবশেষে আজ রায় ঘোষণা করা হলো।

চল্লিশোর্ধ্ব বুশরা গত বছর রাজধানী ইসলামাবাদে হাজার হাজার পিটিআই সমর্থকদের একত্রিত করে বিশ্বব্যাপী গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছিলেন। কঠোর নিরাপত্তা ব্যারিকেড ভেঙে ফেলেছিলেন বিক্ষোভকারীরা। দেশটির পার্লামেন্টের অদূরে তিনি ডি-চকের ঐতিহাসিক চত্বরের কাছে একটি ট্রাকের ছাদ থেকে জনতার উদ্দেশে ভাষণ দেন এবং ইমরান খানের মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত তাদের অবস্থান করার আহ্বান জানান।

কয়েকদিনের প্রাণঘাতী সংঘর্ষের পর মধ্যরাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের পর অবশেষে বিক্ষোভকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। দলীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বুশরা নিকটবর্তী পিটিআইয়ের শক্ত ঘাঁটি খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে পালিয়ে যান, যেখানে তিনি শুক্রবার আদালতে হাজির হওয়ার আগ পর্যন্ত ছিলেন।

আন্তর্জাতিক

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় দীর্ঘ ১৫ মাসের যুদ্ধের পর ইসরাইল এবং হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতির চুক্তি কিছুটা আশাবাদ জাগিয়েছে। এই চুক্তি ইসরাইলি বন্দিদের মুক্তি এবং ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তির সম্ভাবনা তৈরি করেছে।

তবে এই চুক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বেশ কিছু বিশ্লেষক। তাদের আশঙ্কা, চুক্তিটি পরিকল্পনা অনুযায়ী কার্যকর হবে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, যুদ্ধবিরতির চুক্তিটি তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত করা হয়েছে। এই বিভাজনটিই মূলত চুক্তির শর্ত ভঙ্গ বা বিশেষ করে, চুক্তি থেকে ইসরাইলের পিছিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাকে উস্কে দিতে পারে।

এই চুক্তির প্রথম পর্যায়ে ৪২ দিন ধরে কারাগারে বন্দি ও জিম্মিদের মুক্তি, ইসরাইলি সৈন্যদের জনবহুল এলাকা থেকে সরিয়ে নেওয়া এবং মানবিক সহায়তার পরিমাণ বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। পরবর্তী পর্যায়ে আরও কিছু সংখ্যক বন্দি বিনিময়, গাজা থেকে ইসরাইলি বাহিনীর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার এবং একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতির ব্যবস্থা করা হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গত কয়েক মাস ধরেই এই যুদ্ধবিরতির বিরোধিতা করে আসছেন। এমনকি হামাসের সঙ্গে মীমাংসা করার পরিবর্তে তাদের ধ্বংস করতে চেয়েছেন। যে কারণে তিনি বন্দিদের মুক্তির পর হয়তো হামাসের বিরুদ্ধে পুনরায় আক্রমণ শুরু করতে পারেন।

এছাড়া সাম্প্রতিক এই পদক্ষেপটি তার রাজনৈতিক অবস্থানকে শক্তিশালী করার জন্য হতে পারে। কারণ নেতানিয়াহুর জন্য একাধিক চ্যালেঞ্জ রয়েছে।

রাজনৈতিক চাপ এবং নেতানিয়াহুর অবস্থান

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নেতানিয়াহু এবং তার সরকার যুদ্ধবিরতি বিরোধী পদক্ষেপ নিতে পারে। কারণ তার রাজনৈতিক অবস্থান দুর্বল হতে পারে এবং ইসরাইলের ইহুদিবাদী মন্ত্রীরা, বিশেষ করে অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোটরিচ এবং জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন গাভির এই যুদ্ধবিরতির বিরোধিতা করেছেন। তারা নেতানিয়াহুকে যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে সম্মত না হতে চাপ দিচ্ছেন। যার ফলে ইসরাইলে সরকার ভেঙে যেতে পারে এবং নতুন নির্বাচন হতে পারে।

যুদ্ধবিরতির শর্তে অস্পষ্টতা

এদিকে বিশেষজ্ঞরা এই চুক্তির বিষয়টিকে ‘একটি তাত্ক্ষণিক বিরতি’ হিসেবে দেখছেন, যা দীর্ঘমেয়াদী শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

ফিলিস্তিনি আইনজীবী ডায়ানা বুটু বলেছেন, চুক্তির শর্তাবলী খুবই অস্পষ্ট, বিশেষ করে গাজা থেকে ইসরাইলের সেনা প্রত্যাহার প্রসঙ্গে। একটি শর্তে বলা হয়েছে, ইসরাইল গাজার সীমান্ত থেকে ৩০০ মিটার দূরে সরে যাবে। কিন্তু এটি ১৯৬৭ সালের সীমান্তে ফিরে যাবে কিনা, তা পরিষ্কার করা হয়নি। এ ধরনের অস্পষ্ট ভাষা ইসরাইলকে যুদ্ধবিরতি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেবে।

ইহুদিবাদী মন্ত্রীদের প্রভাব এবং ইসরাইলের রাজনৈতিক অস্থিরতা

নেতানিয়াহুর সরকারের মধ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোটরিচ এবং জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন গাভিরের মতো অতি ইহুদিবাদী মন্ত্রীরা ইসরাইলের যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে মত দিয়ে যাচ্ছেন। তাদের এই অবস্থান ইসরাইলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং তারা আবারও যুদ্ধবিরতির বিরুদ্ধে হুমকি দিচ্ছেন।

এর ফলে, নেতানিয়াহু তার রাজনৈতিক স্থিতি রক্ষা করতে হয়তো যুদ্ধবিরতির চুক্তি বাতিল করতে বাধ্য হতে পারেন।

গাজার ভবিষ্যৎ এবং একক রাষ্ট্রের ধারণা

এই চুক্তির ফলে গাজার সার্বিক পরিস্থিতি কতটা পরিবর্তিত হবে, তা নিয়ে অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। গাজার ওপর ইসরাইলের নিয়ন্ত্রণ থাকলে হামাস তাদের ক্ষমতা পুনর্গঠন করতে পারে। আর ইসরাইলও যেকোনো পরিস্থিতিতেই গাজার নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে চাইবে।

যেমনটা নেতানিয়াহু আগেই বলেছিলেন যে, ইসরাইলকে গাজা উপত্যকায় ‘সর্বাত্মক নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ’ রাখতে হবে। আর এটাই ভবিষ্যতে রাজনৈতিক সমাধানকে বাধাগ্রস্ত করবে।

মার্কিন পরিকল্পনা ও ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) ভূমিকা

এই যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র ফাতাহ তথা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে (পিএ) গাজায় ফিরিয়ে আনার পক্ষে কথা বলছে। যা গাজার পুনর্গঠন এবং রাজনৈতিক পুনঃসংযুক্তির দিকে একটি পদক্ষেপ হতে পারে।

তবে ইসরাইল এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করছে। কারণ এই পরিকল্পনা ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে, যা নেতানিয়াহু চান না। দখলদার ইসরাইল মনে করে, যদি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ বা ফাতাহ আবার গাজায় ফিরে আসে, তাহলে তারা রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী হবে। যা ইসরাইলের জন্য চাপ সৃষ্টি করবে।

স্থায়ী শান্তির জন্য

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, গাজায় একটি স্থায়ী শান্তির জন্য একটি রাজনৈতিক কাঠামোর প্রয়োজন। যা বর্তমান যুদ্ধবিরতির চুক্তি পূর্ণ করতে সাহায্য করবে। তাদের মতে, স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য একতরফা যুদ্ধবিরতির চেয়ে অনেক বেশি কিছু প্রয়োজন। যেমন– রাজনৈতিক সমাধান এবং দীর্ঘমেয়াদী নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সূত্র: আল-জাজিরা

রাজনীতি

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, এ দেশ হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সবার। কাজেই সুন্দর দেশ গড়তে সবার সহযোগিতা লাগবে।

তিনি বলেন, আমরা এমন একটা দেশ গড়তে চাই যেখানে ব্যবসায়ীদের কাছে কেউ চাঁদাবাজি করবে না, হুমকি-ধমকি দিবে না, কেউ দখলবাজি করবে না, ঘুসখোররা ঘুস খাবে না। আর এমন দেশ গড়তে গেলে কুরআনের আইন চালু করতে হবে। আমাদের সন্তানেরা যারা জীবন দিয়েছে, আহত হয়েছে, পঙ্গু হয়েছে তারা এমন বৈষম্যমুক্ত দেশ চায়। আমাদের সন্তানেরা যে স্বপ্ন নিয়ে প্রাণ দিয়েছে, সে স্বপ্ন পূরণে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই স্বপ্ন পূরণে আমরা কারো কাছে মাথা নত করব না। আমরা কখনও কোন দুরাচারের সাথে আপস করব না। যতক্ষণ পর্যন্ত বাংলাদেশ একটা মানবিক দেশ না হবে, দুর্নীতিমুক্ত, দু:শাসনমুক্ত, বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ না হবে ততদিন পর্যন্ত আমাদের লড়াই চলতেই থাকবে। এ লড়াইয়ে দেশের মানুষকে আমরা পাশে চাই।

শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় চুয়াডাঙ্গা থেকে রাজশাহী যাওয়ার পথে নাটোরের বড়াইগ্রামের বনপাড়া বাইপাস চত্বরে আয়োজিত পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডা. শফিকুর রহমান এসব কথা বলেন।

এ সময় জেলা জামায়াতের আমির ড. মীর নুরুল ইসলাম, জেলা অ্যাস্টিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অধ্যাপক আব্দুল হাকিম, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক আবুল হোসাইন, নাটোর শহর আমীর রাশেদুল ইসলাম রাশেদ, উপজেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা হাবিবুর রহমান, সেক্রেটারি আবু বকর সিদ্দিক এবং উপজেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি নাজমুল ইসলামসহ বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে জামায়াতের আমির উপজেলার রাজাপুর বাজার ও ধানাইদহ বাজারে পৃথক পথসভায় বক্তব্য রাখেন। শনিবার তিনি রাজশাহীতে জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে বক্তব্য রাখবেন।

জাতীয়

দেশের রাষ্ট্রপতি পদে নির্দলীয় ব্যক্তিকে দেখতে চান দেশের ৬৮ শতাংশ মানুষ। বিপরীতে প্রায় ২৯ শতাংশ মানুষ চান রাষ্ট্রপতি হবেন দলীয় ব্যক্তি। জনগণের সরাসরি ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করার পক্ষে মত দিয়েছেন প্রায় ৮৩ শতাংশ মানুষ। আর সংসদ-সদস্যদের ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পক্ষে মত দিয়েছেন ১৩ শতাংশ।

আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন করার বিষয়ে সমর্থন জানিয়েছেন ৬৫ শতাংশ মানুষ। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের জন্য তৈরি জাতীয় জনমত জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) জরিপটি পরিচালনা করে। ২০-২২ ডিসেম্বর জরিপটি পরিচালনা করে বিবিএস।

জরিপের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র সংগঠন থাকার বিষয়টি সমর্থন করেন না ৬৩ শতাংশ মানুষ। তবে ৩১ শতাংশ মানুষ এটিকে সমর্থন করেন। প্রায় ৫ শতাংশ মানুষ বলেছেন, এ বিষয়ে জানেন না।

জরিপে রাষ্ট্রপতি হিসাবে প্রত্যাশিত ব্যক্তির ধরন সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। এখানে চারটি উত্তর থেকে যে কোনো একটি বেছে নেওয়ার সুযোগ ছিল। সেগুলো হলো নির্দলীয়, জানি না ও উত্তর দিতে ইচ্ছুক নই। উত্তরদাতাদের ২৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ দলীয় ব্যক্তির পক্ষে, ৬৮ দশমিক ২৮ শতাংশ নির্দলীয় ব্যক্তির পক্ষে মতামত দিয়েছেন। ২ দশমিক ৩৯ শতাংশ বলেছেন, তারা এ বিষয়ে জানেন না। আর ১ শতাংশের কিছু কম মানুষ উত্তর দিতে ইচ্ছুক নন বলে জানান।

জরিপে নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্য রোধে প্রধান দায়িত্ব কার বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। এখানেও চারটি উত্তরের একটি বেছে নেওয়ার সুযোগ ছিল। এর মধ্যে ৪৭ দশমিক ৮২ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, এই দায়িত্ব রাজনৈতিক দল বা তাদের প্রার্থীর। ৪৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ বলেছেন, এই দায়িত্ব জনগণের।

এ প্রশ্নের জবাবে ‘জানি না’ বলেছেন ৬ দশমিক ৭৩ শতাংশ উত্তরদাতা। আর শূন্য দশমিক ৮৭ শতাংশ বলেছেন, তারা উত্তর দিতে ইচ্ছুক নন। এছাড়া নির্বাচনে ‘না’ ভোট জয়ী হলে পরাজিত প্রার্থীদের বাদ দিয়ে নতুন নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে মত দেন ৭৮ শতাংশ মানুষ। এর বিপক্ষে ছিলেন প্রায় ১৭ শতাংশ। সংস্কার কমিশনও তাদের সুপারিশে এটি রেখেছে।

নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসাবে নিয়োগ দেওয়ার পক্ষে মত দেন প্রায় ৪৭ শতাংশ উত্তরদাতা। আর ৪৪ শতাংশ জেলা প্রশাসকদের রিটার্নিং কর্মকর্তা করার পক্ষে মত দেন। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনো আসনে প্রদত্ত ভোট ৫০ শতাংশের কম হলে ওই আসনে পুনর্নির্বাচনের পক্ষে মত দেন ৭৮ শতাংশ মানুষ। বিপক্ষে মত দেন ১৭ শতাংশ। সংস্কার কমিশন তাদের সুপারিশে ৪০ শতাংশের কম ভোট পড়লে পুনর্নির্বাচন আয়োজনের সুপারিশ করেছে।

জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন ১০০টিতে উন্নীত করে নির্দিষ্ট নির্বাচনি এলাকা থেকে সরাসরি ভোটে নির্বাচনের পক্ষে মত দেন প্রায় ৭৪ শতাংশ। আর প্রায় ২০ শতাংশ ছিলেন বিপক্ষে। জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র সংগঠন থাকার বিষয়টি সমর্থন করেন না ৬৩ শতাংশ মানুষ। আর প্রায় ৩১ শতাংশ এটিকে সমর্থন করেন।

প্রায় ৫ শতাংশ বলেছেন, এ বিষয়ে জানেন না। বিদেশে রাজনৈতিক দলের শাখা রাখার বিষয়টিকে সমর্থন করেন না ৫০ শতাংশ উত্তরদাতা। আর ৪২ শতাংশ উত্তরদাতা বিদেশে দলের শাখা থাকার বিষয়টিকে সমর্থন করেন। ৮৭ শতাংশ মানুষ প্রবাসীদের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে ইলেকট্রনিক ভোট আয়োজনের পক্ষে মত দিয়েছেন।

সূত্র জানায়, জরিপে নমুনায়নের মাধ্যমে ৪৬ হাজার ৮০টি সাধারণ খানা (পরিবার বা যারা এক চুলায় রান্না করেন) থেকে উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়। প্রতিটি খানা থেকে ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সি নাগরিকদের মধ্যে ‘কিশ গ্রিড সিলেকশন’ পদ্ধতিতে একজন নির্বাচিত উত্তরদাতার কাছ থেকে নির্ধারিত প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়। ৪৬ হাজার ৮০ জন মানুষ এই জরিপে অংশ নিয়েছেন।

অর্থনীতি

চীনসহ উপমহাদেশের বিভিন্ন দেশে ‘হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস’ (এইচএমপিভি)-এর প্রাদুর্ভাব এবং এর তীব্রতা উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। ১৪ বছরের কম বয়সি শিশু এবং ৬৫ বছর বা এর বেশি বয়সি ব্যক্তিদের মধ্যে এ রোগের সংক্রমণ বেশি দেখা যাচ্ছে।

বিশেষ করে ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, কিডনি রোগ, সিওপিডি, অ্যাজমা, ক্যানসারের মতো জটিল রোগীদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি বেশি। ফলে কোমরবিডিটি (বিভিন্ন ধরনের দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত) রোগীদের বিশেষভাবে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

দেশে এইচএমপিভি আক্রান্ত একজনের মৃত্যু হওয়ায় ভাইরাসটি নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। যদিও চিকিৎসকদের দাবিÑএইচএমপিভি নয়, অন্য রোগের কারণে ওই রোগী মারা গেছেন।

চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা জানান, এইচএমপিভি একধরনের ‘আরএনএ’ ভাইরাস, যা সাধারণত মানুষের শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণ ঘটায়। এটি নতুন কোনো ভাইরাস নয়। অন্যসব ফ্লু যেমন: ইনফ্লুয়েঞ্জা রেস্পিরেটরি সিনসাইশিয়ালের মতো একটি ভাইরাস। সাধারণত শীত ও বসন্তকালে এ রোগের সংক্রমণ বেশি দেখা যায়। আক্রান্তদের সাধারণ ফ্লুর মতো লক্ষণ প্রকাশ পায়, যা ৫ থেকে ৭ দিনের মধ্যে এমনিতেই সেরে যায়। তবে কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে যেমন: বয়স্ক, ক্যানসার আক্রান্ত, একসঙ্গে একাধিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে ক্ষতিকর হতে পারে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ আরাফাত বলেন, এইচএমপিভি আক্রান্ত ব্যক্তি সাধারণত জ্বর, কাশি, নাক বন্ধ, গলাব্যথার লক্ষণ নিয়ে চিকিৎসকের কাছে আসে। চামড়ায় র‌্যাশ এবং কখনো কখনো শ্বাসকষ্ট হতে পারে। শিশু, বয়স্ক এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়Ñএমন কোনো ওষুধ সেবনকারীদের (কেমোথেরাপি, স্টেরয়ড সেবনকারী) আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্ক বেশি থাকে। হাঁপানি বা ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ, গর্ভবতী নারী এবং দুর্বল রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তির জন্য উচ্চঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে।

অধ্যাপক ডা. আরাফাত আরও বলেন, ভাইরাসটি সাধারণত আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি ও কাশির ড্রপলেটের মাধ্যমে ছড়ায়। তাই কিছু নিয়ম মেনে চললে সহজে এর বিস্তার রোধ করা সম্ভব। যেমন: বাইরে গেলে মুখে মাস্ক ব্যবহার করা, সাবান, পানি দিয়ে ঘনঘন হাত ধোয়া, হাঁচি-কাশি দেওয়ার সময় টিসু দিয়ে মুখ ঢেকে রাখা, টিসু না থাকলে হাতের কনুই ভাঁজ করে সেখানে মুখ গুঁজে হাঁচি-কাশি দেওয়া। আক্রান্ত ব্যক্তির কাছ থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা এবং জনসমাগম বা ভিড় এড়িয়ে চলা।

বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শাহিনুল আলম বলেন, এইচএমপিভি নিয়ে অনেকে ভয় পান। মনে করেন, কোভিড চলে এসেছে কি না! কিন্তু ভাইরাসটি আগে থেকেই দেশে ছিল, এখনো আছে। কিছুটা হয়তো বেড়েছে। এর ভয়াবহতা ও মৃত্যুহার করোনাভাইরাসের চেয়ে কম। তাই আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকতে হবে। ভাইরাসটি শনাক্তকরণের পরীক্ষা ও আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসার জন্য বিএসএমএমইউর সব রকমের প্রস্তুতি রয়েছে। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাদের সিজনাল ভ্যাকসিন বা ইনফ্লুয়েঞ্জা ও নিউমোনিয়ার ভ্যাকসিন দেওয়া যেতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা জানান, এখন পর্যন্ত এ ভাইরাসের কোনো সুনির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ বা ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত হয়নি। অন্যসব সাধারণ সর্দিজ্বরের মতো হওয়ায় আলাদা কোনো চিকিৎসার দরকারও নেই। শুধু লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা নিলেই আক্রান্তরা সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যায়। যেমন: জ্বর হলে প্যারাসিটামল, সর্দিকাশি হলে অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ সেবন করতে হয়। পাশাপাশি রোগীকে পর্যাপ্ত পরিমাণে তরল খাবার (পানি, ফলের রস) ও পুষ্টিকর খাবার দেওয়া এবং রোগীকে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নিতে হবে।

বিনোদন

বান্দ্রার মতো অভিজাত এলাকায় ‘ছোট নবাবের’ ওপর হামলার খবরে উদ্বিগ্ন পুরো চলচ্চিত্র জগৎ ও তার ভক্তরা। এ হামলা মুম্বাইয়ের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি পুলিশ সূত্রের বরাত দিয়ে পুরো ঘটনা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

সে প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, পুরো ঘটনা ছিল ৩০ মিনিটের। বলিউড অভিনেতা সাইফ আলী খানের ওপর হামলার দুই ঘণ্টা আগে বাড়িতে কারও প্রবেশের কোনো চিহ্ন খুঁজে পায়নি পুলিশের ফরেনসিক বিভাগ। বাড়ির সিসিটিভি ফুটেজেও কারও প্রবেশের দৃশ্য ধরা পড়েনি এ সময়ে।

পুলিশ জানিয়েছে, অভিনেতার বাড়িতে চুরি করার জন্যই প্রবেশ করেছিল এক বা একাধিক দুর্বৃত্ত। এমনকি অভিনেতার ভবনের সব প্রবেশপথ ও বাড়ির নকশা সম্পর্কে আগে থেকেই জানা ছিল তাদের। ‘ফায়ারস্পেস’ দিয়ে সাইফ-কারিনার বাড়িতে তারা প্রবেশ করে। এরপর ভবনের পেছনের দিকের সিঁড়ি বেয়ে অভিনেতা যেখানে থাকেন, সেখানে পৌঁছায় দুর্বৃত্তরা।

বাড়ির সিসিটিভি ফুটেজে তৈমুর আর জেহর ঘরে প্রবেশ করতে দেখা গেছে অনুপ্রবেশকারীকে। প্রথমে একজনকে অভিনেতার ছোট ছেলে জেহর ঘরে দেখা যায়। জেহর আয়া এলিয়ামা ফিলিপ জানান, তিনি রাত ২টার দিকে অনুপ্রবেশকারীকে দেখতে পান এবং তার মুখোমুখি হন।

তিনি বলেন, বাথরুমের দরজা খোলা এবং আলো জ্বলতে দেখে আমি ধরে নিয়েছিলাম হয়তো কারিনা কাপুর। তবে এরপরই কিছু একটা সমস্যা টের পেয়ে বিষয়টি দেখতে যখন এগিয়ে যাই, তখন একজন লোককে বাথরুম থেকে বেরিয়ে তৈমুর এবং জেহর ঘরে প্রবেশ করতে দেখি।

৫৬ বছর বয়সি গৃহকর্মী জানান, তিনি যখন ওই লোকের মুখোমুখি হন, তখন তার কাছে এক কোটি রুপি দাবি করা হয়। ওই দুর্বৃত্তকে তাড়ানোর চেষ্টার সময় তিনি আহত হন। একই ঘরে থাকা আরেক গৃহকর্মী জুনু তখন সাইফের ঘরে ছুটে যান এবং অভিনেতাকে জাগিয়ে তোলেন।

অভিনেতা অনুপ্রবেশকারীদের মুখোমুখি হলে তাকে ছয়বার ছুরিকাঘাত করে। এ সময় গীতা নামের বাড়ির আরেক গৃহকর্মী সাইফকে হামলাকারী অনুপ্রবেশকারীকে পরাস্ত করতে এবং তাকে একটি ঘরে আটকে রাখতে সাহায্য করেন। এরপর সবাই বাড়ির উপরের তলায় চলে যান; কিন্তু ততক্ষণে অনুপ্রবেশকারী পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।

পুলিশ সূত্র মতে, ষষ্ঠতলার সিসিটিভি ক্যামেরায় তার পালানোর দৃশ্য ধরা পড়ে। তবে এরপর তার আর কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি, এমনকি লবি এলাকার সিসিটিভিতেও তাকে দেখা যায়নি। পুলিশের সন্দেহ, ‘ফায়ারস্পেস’ ব্যবহার করে নিচতলায় পৌঁছে পেছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে যায় সে। পুরো ঘটনার স্থায়িত্ব ৩০ মিনিটের।

মেরুদণ্ডে একটিসহ ছয়টি আঘাতের কারণে রক্তে ভাসছিল সাইফ। এমন সময় কোনো গাড়ি বের হওয়ার জন্য প্রস্তুত না থাকায় তাড়াহুড়ো করে সাইফকে অটোরিকশায় চাপিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যান বড় পুত্র ইব্রাহিম। অভিনেতার বাড়ি থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দূরেই হাসপাতাল।

ঘটনার পর রক্তাক্ত অবস্থায় অভিনেতাকে দ্রুত কাছের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অস্ত্রোপচার শেষে তিনি এখন বিপদমুক্ত।

বলিউড অভিনেতা সাইফ আলী খানের ওপর হামলার সঙ্গে সঙ্গেই জোর তদন্তে নেমে পড়েছে মুম্বাই পুলিশ। এর মধ্যে ৩৫টি পৃথক দল গঠন করে তদন্তের কাজ শুরু করেছেন তারা। এ মামলায় সন্দেহভাজন একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সাইফ-কারিনার বাসার এক পরিচারিকাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয় পুলিশ স্টেশনে।

অর্থনীতি

ভারত থেকে আমদানীকৃত ২৬ হাজার ৯৩৫ মেট্রিক টন চাল বহনকারী এমভি এসডিআর ইউনিভার্স জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেছে।

এক তথ্য বিবরণীতে এ কথা জানানো হয়।

উন্মুক্ত দরপত্র চুক্তির আওতায় ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের কাকিনাডা বন্দর থেকে ২৬ হাজার ৯৩৫ মেট্রিক টন চাল নিয়ে এমভি এসডিআর ইউনিভার্স জাহাজটি আজ রাত ৭টা ১৫ মিনিটে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছায়। এটি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে ভারত থেকে আমদানিকৃত চালের দ্বিতীয় চালান।

জাহাজে আসা চালের নমুনা সংগ্রহপূর্বক ভৌত পরীক্ষা শেষে দ্রুত খালাসের কাজ শুরু হবে।

রাজনীতি

সিলেট কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল উদ্বোধন করা হয়েছে। আজ শনিবার দুপুরে হাসপাতালটি উদ্বোধন করেন অন্তবর্তী সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস মানবিক এই উদ্যোগের জন্য ভিডিও বার্তা দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তিনি কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতালের সাফল্য কামনা করেন। যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে ১০তলা ভবনের কিডনি ফাউন্ডেশনের যাত্রা শুরু করল তিনি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) মাধ্যমে ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নগরীর তেমুখী-বাদাঘাট-বাইপাস সংলগ্ন নাজিরেরগাঁওয়ে ১০তলা ভবনের এই হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছে।

উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শারমীন এস মুরশিদ বলেছেন, ‘অনেকগুলো আলোকিত উদ্যোগী প্রাণ মানুষ সেবা করার মন-মানসিকতা নিয়ে কিডনি ফাউন্ডেশন সিলেটে মিলিত হয়েছেন। সম্মিলিত ইচ্ছা শক্তির মাধ্যমে সৃষ্টি এই প্রতিষ্ঠান সেবায় রোলমডেল হয়ে উঠবে বলে বিশ্বাস করি। দেশের মানুষকে এই ভালো উদাহরণগুলো রীতিতে পরিণত করতে হবে। তাহলে সহজেই বাংলাদেশ তার গন্তব্যে পৌঁছে যাবে।’

দায়িত্বের জায়গা থেকে এই অসাধারণ কাজের সঙ্গে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে যুক্ত হওয়া একটা বড় পাওয়া বলে উল্লেখ করেন শারমীন এস মুরশিদ।

তিনি বলেন, ‘সরকারি ব্যবস্থাপনায় অনেক সীমাবদ্ধতার কারণে ভালো কাজের সঙ্গে সংযুক্ত হতে চাইলেও সহজে হওয়া যায় না। সরলরেখায় শুধু পিপিপি হলেই সিলেট কিডনি ফাউন্ডেশনের মতো চমৎকার কিছু ঘটবে এমনটি কিন্তু নয়। কয়েককজন অসাধারণ মানুষের তীব্র ইচ্ছার কারণে এ হাসপাতালটি বাস্তব চিত্রটা পেয়েছে।’

সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় নিবন্ধিত ছিয়াত্তর হাজার প্রতিষ্ঠানকে সুব্যবস্থাপনায় আনা একটা বিশাল চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘একটি প্রতিষ্ঠানকে সুগঠিত করতে হলে কয়েকজন সুগঠিত মানুষ লাগে। কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল সিলেটকে এত উজ্জ্বলভাবে উপস্থাপন করার জন্য এধরনের নিবেদিত প্রাণ নিরলস শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন।’

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী। অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন, কিডনি ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন-উর রশিদ, মেজর জেনারেল আজিজুর রহমান, বীর উত্তম, অধ্যাপক ডা. জিয়াউদ্দিন আহমেদ, কিডনি ফাউন্ডেশন সিলেটের সাধারণ সম্পাদক কর্নেল এম এ সালাম (অব.) প্রমুখ।

হাসপাতাল ভবনটি নির্মাণে ৮০ শতাংশ অর্থাৎ ২০ কোটি টাকা দিয়েছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, ভবন নির্মাণ ছাড়াও হাসপাতালের যন্ত্রপাতিসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনার অর্থ বিভিন্ন অনুদান থেকে ব্যয় করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য সিলেটের ব্যবসায়ী জুবায়ের আহমদ চৌধুরী প্রায় ৮ কোটি টাকা মূল্যের ১১০ শতক ভূমি বিনামূল্যে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দান করেছেন।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, হাসপাতাল চালু হওয়ায় কিডনি রোগীরা সিলেটেই আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন চিকিৎসা সেবা পাবেন। তাদেরকে চিকিৎসার জন্য আর দেশের বাইরে যেতে হবে না। গরীব ও দুঃস্থ রোগীরা স্বল্পমূল্যে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিনামূল্যেও চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।

জাতীয়

বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার শক্তিশালী অর্থনৈতিক দেশে রূপান্তরের লক্ষ্যে ১১ রোডম্যাপ বা প্রস্তাব বাস্তবায়নের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। শনিবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের মওলানা আকরম খাঁ হলে ‘অ্যা পেনিনসুলা ডেভেলপমেন্ট ডায়ালগ ইনিশিয়েটিভ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেছেন বক্তারা। সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ‘জুলাই ৩৬ ফোরাম’।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রোডম্যাপ নির্ধারণে ১১টি মৌলিক বিষয়ের ওপর আলোকপাত করা হয়, যা দেশকে দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক শক্তি কেন্দ্র এবং বিশ্বে ‘নেক্সট ১১ অর্থনৈতিক শক্তি’ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে সহায়তা করবে।

বক্তারা বলেন, ৫৩ বছরে বাংলাদেশ নানা সংকট পেরিয়েছে। তবে সঠিক নেতৃত্বের মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে ট্রিলিয়ন ডলারের জিডিপি অর্জনের সম্ভাবনা রয়েছে।

জুলাই ৩৬ ফোরামের আহ্বায়ক মোহাম্মদ এ নাজীর শাহীন বলেন, এখনই সঠিক রোডম্যাপ কার্যকর করার সময়, অন্যথায় সম্ভাবনাগুলো হাতছাড়া হবে।

বক্তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, রাষ্ট্র পরিচালনা, বিনিয়োগ প্রস্তুতি এবং প্রশাসনিক কার্যক্রম বিশ্লেষণ করে বলেন, ২০০৮ সালে বিশ্বখ্যাত গোল্ডম্যান সার্চের প্রজেকশন অনুযায়ী বাংলাদেশ ১১তম অর্থনৈতিক অবস্থানে থাকার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু বর্তমানে দেশটি বহুমুখী চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন।

প্রস্তাবিত রোডম্যাপ/১১ দফা হলো-

এক. অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক গতিশীলতা আনয়নে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, বিশ্লেষক এবং থিঙ্কট্যাঙ্কগুলোর মাধ্যমে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ, দুই. ইনফ্রাস্ট্রাকচার উন্নয়নে রেল, উচ্চগতির ট্রেন, গভীর সমুদ্রবন্দর এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পের মাধ্যমে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার হাব হিসাবে গড়ে তোলা, তিন. কৌশলগত প্রতিরক্ষায় ব্লু ইকোনমি ও রণতরী সংযোজনের মাধ্যমে আঞ্চলিক প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বৃদ্ধি, চার. বহুজাতিক সম্পর্কে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে কার্যকর সম্পর্ক এবং চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সমন্বয়, পাঁচ. প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন নিশ্চিত করে সুন্দরবন ডকট্রিন ও অন্যান্য পরিবেশগত সম্পদ রক্ষা, ছয়. আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণে জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে জোরালো ভ‚মিকা নিয়ে ইউএন নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যপদ অর্জন, সাত. কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ এবং ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড ব্যবহার করে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, আট. ক্রীড়া অবকাঠামো উন্নয়নে ২০৩৮ সালে ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপ আয়োজনসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার উদ্যোগ গ্রহণ, নয়. প্রশাসনিক সংস্কারে দুর্নীতি দমন ও জবাবদিহির মাধ্যমে প্রশাসনকে জনমুখী করা, দশ. প্রধান উপদেষ্টা নোবেল লরিয়েট ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রণীত থ্রি-জিরো : দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও শূন্য কার্বন নিঃসরণসহ দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি এবং এগারো. বিশ্বমঞ্চে অবস্থান তৈরির ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে একটি স্মার্ট ডেল্টা নেশন হিসাবে ব্র্যান্ডিং।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তৃতা করেন সুব্রত ঘোষ সুমন, নাওয়দি হোসাইন, মারুফী হাসান, কনক ইসলাম, এসএম লিমন এবং আরিয়ান নাজীর প্রমুখ।