আন্তর্জাতিক
অর্থনীতি

শুধু খেতেই মজা নয়, রয়েছে নানান স্বাস্থ্যোপকারিতা।

শীতের সময় যে কয়টি খাবারের কদর বাড়ে, সেগুলোর মধ্যে গুড়ও আছে।

পিঠা কিংবা চায়ে- গুড়ের ব্যবহারে অনন্য স্বাদ দিতে পারে। তবে শুধু জিহ্বার প্রশান্তি নয়। গুড়ের রয়েছে নানান স্বাস্থ্যগুণ।

প্রাকৃতিক পরিষ্কারক

শ্বাসনালী, ফুসফুস, অন্ত্র, পাকস্থলী এবং খাদ্যনালী অত্যন্ত কার্যকরভাবে পরিষ্কার করতে পারে গুড়।

এই তথ্য জানিয়ে ভারতের ম্যাক্স হেলথকেয়ার ইন্সটিটিউট’য়ের জ্যেষ্ঠ পুষ্টিবিদ মানজারি চন্দ্র টাইমসঅফইন্ডিয়া ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “তাই দুষিত পরিবেশে কাজ করেন এমন কর্মী যেমন কারখানা কিংবা কয়লা খনির শ্রমিকদের গুড় খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।”

এতে থাকে প্রচুর লৌহ, ফলে রক্তশূন্যতা দূর করতে গুড় আদর্শ প্রাকৃতিক সমাধান। পাশাপাশি রক্ত সঞ্চালনেও উন্নতি ঘটায়।

শরীরে পটাসিয়ামের মাত্রা বাড়ানো এবং পানিশোষণ ক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে গুড়।

সর্দি-কাশির চিকিৎসা

দস্তা ও সেলেনিয়াম’য়ের মতো অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও খনিজে ভরপুর থাকে গুড়। যা শরীরের মুক্ত-মৌলজনীত ক্ষয় কমায় এবং রোগ সংক্রমণের বিরুদ্ধে রক্ষাকবচ তৈরি করে।

কুসুম গরম পানিতে গুড় গুলে নিয়ে পান করা যায়। চায়ে চিনির পরিবর্তেও গুড় ব্যবহার উপকারী।

হাঁপানির চিকিৎসায়

গুড়ের অ্যালার্জিরোধী উপাদান হাঁপানির চিকিৎসায় আদর্শ।

৫ চা-চামচ হলুদ, ১ চা-চামচ মাখন এবং ছোট এক টুকরো গুড় একসাথে মিশিয়ে নিতে হবে। হাঁপানির কষ্ট কমাতে এই মিশ্রণ প্রতিদিন তিন থেকে চারবার খেতে হবে।

ভালো মানের গুড় চেনার পন্থা

গুড়ের গুণগত মান বুঝতে হবে এর রং দেখে।

রং যত গাঢ়, গুড় ততই খাঁটি। হলদে আভা থাকলে বুঝতে হবে এতে রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে।

স্টার্চ বা মাড় মেশানো হয় গুড়ে। পানিতে অল্প পরিমাণ গুড় গোলাতে হবে। যদি কোনো অবশিষ্টাংশ মিশে না যায় তবে বুঝতে হবে এতে মাড় মেশানো হয়েছে।

গুড়ে আলাদা চকচকেভাব ও মসৃণ দেখাতে তেল মেশানো হয়। এটা বোঝার জন্য অল্প গুড় আঙ্গুলে নিয়ে ঘষতে হবে। যদি তেলতেলে ভাব আঙ্গুলে লাগে তবে বুঝতে হবে গুড়ে উচ্চ মাত্রায় খনিজ তেল মেশানো হয়েছে।

গুড়ের প্রাকৃতিক রং হয় গাঢ় বাদামি। দিতে দেখতে কালচে বা বেশি হালকা মনে হয় তবে বুঝতে হবে এই গুড়ে কৃত্রিম রং মেশানো হয়েছে।

রাসায়নিক দ্রব্যও মেশানো হয় গুড়ের স্বাদ গন্ধ বাড়াতে। আসল গুড় মিষ্টির সাথে মাটির গন্ধ মিশ্রিত ঘ্রাণ পাওয়া যাবে। এছাড়া অন্য কোনো গন্ধ পেলে বুঝতে হবে কোনো রাসায়নিক দ্রব্য মেশানো আছে।

গুড় ধরলে এক গুঁড়া গুঁড়া অনুভত হয়। এর কারণ হল আখের আঁশ। যদি বেশ মসৃণ মনে হয় তবে বুঝতে হবে কোনো না কোনো পদ্ধতিতে গুড়ে পরিবর্তন ঘটানো হয়েছে।

খাঁটি গুড়ে ঘনত্ব বেশি থাকে। যদি মনে হয় বেশি শক্ত বা নরম তবে ধরে নিতে হবে আলাদা উপকরণ মেশানো হয়েছে।

গুড়ের স্বাদে আলাদা উচ্চ অনন্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে। বেশি মিষ্টিও না আবার পানসেও নয়। এর বাইরে অন্য রকম স্বাদ মনে হলে বুঝতে হবে গুড়টা হয়ত খাঁটি নয়।

রাজনীতি

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) আজ ৪৩৭.০৭ কোটি টাকায় চট্টগ্রাম কর ভবন নির্মাণসহ ৪,২৪৬.৭২ কোটি টাকার ১০টি প্রকল্প অনুমোদন করেছে।

চলতি অর্থবছরে একনেকের ৬ষ্ঠ এবং অন্তর্বর্তী সরকারের ৫ম বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। আজ বুধবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

একনেক চেয়ারপারসন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড.মুহাম্মদ ইউনূস সভায় সভাপতিত্ব করেন।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক ও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, শিল্প, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ, সড়ক পরিবহন, সেতু ও রেলপথ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান, ডাক, টেলিযোগাযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি, তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম, যুব ও ক্রীড়া এবং এলজিআরডি উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, নৌপরিবহন, শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন, ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন।

একনেক সভা শেষে এনইসি সম্মেলনকক্ষে সাংবাদিকদের এসব বিষয়ে অবহিত করেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। এ সময় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ও কমিশনের সচিব ও সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, মোট প্রকল্প ব্যয় ৪ হাজার ২৪৬.৭২ কোটি টাকার মধ্যে ৩,৬৩২.০১ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকারের অংশ থেকে, ২০৫.৭৯ কোটি টাকা প্রকল্প সহায়তা হিসেবে এবং ৪০৮.৯২ কোটি টাকা সংশ্লিষ্ট সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে সংস্থান করা হবে।

অনুমোদিত ১০টি প্রকল্পের মধ্যে ছয়টি নতুন এবং চারটি সংশোধিত প্রকল্প রয়েছে।

পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, তারা এখন প্রক্রিয়া করছেন এবং এইভাবে দ্রুত পদ্ধতিতে উন্নয়ন প্রকল্পের অনুমোদন দিচ্ছেন যদিও অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর তাদের প্রকল্পগুলো যাচাই-বাছাই করতে হয়েছে।

তিনি জানান যে এখন নতুন প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে এবং পরিকল্পনা কমিশন স্থানীয় পর্যায়ের প্রকল্পগুলোতে অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছে।

সামষ্টিক অর্থনীতির সূচক প্রসঙ্গে ড. মাহমুদ বলেন, রপ্তানি আয় আবার বাড়ছে এবং রেমিট্যান্সের অভ্যন্তরীণ প্রবাহেও গতি এসেছে।

পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, এর ফলে স্থানীয় পর্যায়ে আরও তহবিল সংগ্রহ করা হচ্ছে এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডও ক্রমবর্ধমান প্রবণতায় রয়েছে।

এছাড়া তিনি উল্লেখ করেন যে অভ্যন্তরীণ রেমিট্যান্সের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব রয়েছে। এটি অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে।

ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডকে ‘সুযোগের জানালা’ হিসেবে উল্লেখ করে ড. মাহমুদ বলেন, আগামী ১০ থেকে ১৫ বছরে বাংলাদেশ এ ধরনের সুবিধা পূর্ণ মাত্রায় উপভোগ করতে পারবে।

তিনি আরও জানান যে সরকার পরিসংখ্যান আইন সংশোধন করতে পারে যা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোকে (বিবিএস) সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় জিডিপি, মুদ্রাস্ফীতি, কর্মসংস্থান ও মজুরি হার সম্পর্কিত নিজস্ব তথ্য প্রকাশের অনুমতি দিতে পারে।

আজকের সভায় অনুমোদিত অন্যান্য প্রকল্পগুলো হল: মংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলে ১,৫৩৮.১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে সংরক্ষণ ড্রেজিং, অতিরিক্ত ১৬৯.৩১ কোটি টাকা ব্যয়ে মংলা বন্দরের জন্য সহায়ক জাহাজ সংগ্রহ (১ম সংশোধিত), ১১৩.৮৫ কোটি টাকার অতিরিক্ত ব্যয়ে গ্লোবাল মেরিটাইম ডিস্ট্রেস এন্ড সেফটি সিস্টেম এবং ইন্টিগ্রেটেড মেরিটাইম নেভিগেশন সিস্টেম (ইজিআইএমএনএস) স্থাপন (৪র্থ সংশোধিত), ২৬৫.৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ে মসুর ডাল ও তৈলবীজ উৎপাদনের মাধ্যমে টেকসই পুষ্টি নিরাপত্তা জোরদার করা, ৪৯৯.৯৯ কোটি টাকা ব্যয়ে সিলেট বিভাগে ভূ-পৃষ্ঠের পানি ব্যবস্থাপনা ও ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, অতিরিক্ত ৪৩৯.৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের দক্ষিণ অঞ্চলে লোহার সেতু পুনর্নির্মাণ/পুনর্বসন (২য় সংশোধিত), ৬৪৬.৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ডুপিটিলা-১ ও কৈলাশটিলা-৯ কূপ (অন্বেষণ কূপ) অনুসন্ধান প্রকল্প, ৬৮.০৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নেপালের লুম্বিনি সংরক্ষণ এলাকায় বাংলাদেশ বৌদ্ধ মঠ কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্প এবং অতিরিক্ত ৬৮.৫৭ কোটি টাকা ব্যয়ে আধুনিক খাদ্য সংরক্ষণাগার নির্মাণ (চতুর্থ সংশোধিত)।

এছাড়া পরিকল্পনা উপদেষ্টা কর্তৃক ইতোমধ্যেই অনুমোদিত নয়টি প্রকল্পের বিষয়েও একনেক সভায় অবহিত করা হয়।

সভায় সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টারা এবং পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ও সচিবরা উপস্থিত ছিলেন।

রাজনীতি

যশোরের রাজনীতিতে এখন আলোচিত মানুষ এসকেন্দার আলী জনি। তিনি জাতীয়তাবাদী যুবদলের যশোর জেলা কমিটির বহিষ্কৃত প্রচার সম্পাদক।

তিনি নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লাইভে এসে অভিযোগ করেছেন, পতিত সরকারের সেতুমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে ভারতে নিরাপদে পার করে দিয়েছেন যশোর জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আনসারুল হক রানা।

এরপর থেকেই যশোরের রাজনীতিতে টক অব দ্য টাউনে পরিণত হয়েছেন এসকেন্দার আলী জনি। কয়েকটি মিডিয়া ওই ভিডিও’র সূত্র ধরেই সংবাদ প্রকাশ করায় তা আরও প্রচারিত হয়।

বিষয়টিকে আজগুবি ও আষাঢ়ে গল্প বলে অভিহিত করেছেন বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত। তিনি বলেছেন, এমন একটি ঘটনা ফ্যাসিবাদ-উত্তর বাংলাদেশে ঘটে যাবে আর তা অন্য কেউ জানবে না, বিষয়টি খুবই হাস্যকর। এ ঘটনায় মিডিয়ার আরও দায়িত্বশীল হওয়া উচিত ছিল বলে মনে করেন তিনি।

জেলা যুবদল নেতারা বলছেন, দলীয় কার্যালয়ের ‘টি-বয়’ থেকে সংগঠনের পদ-পদবী লাভ করার ভার সামলাতে না পেরে মাথা খারাপ হয়ে গেছে এসকেন্দার আলী জনির। এ কারণে তিনি মাঝেমধ্যে উল্টাপাল্টা কথা বলতেন। তাই জেলা বিএনপির সুপারিশে কেন্দ্রীয় যুবদল জনিকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করে। তারপর থেকেই তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে গেছেন। এবার তিনি যা বলেছেন, তা কোনো বিবেচনাতেই মানুষের সুস্থ মস্তিষ্কপ্রসূত নয় বলে মনে করেন যুবদল নেতারা।

ভিডিওবার্তায় এসকেন্দার আলী জনি যা বলেছেন

৭ জানুয়ারি মঙ্গলবার ফেসবুক লাইভে এসে এসকেন্দার আলী জনি দাবি করেন, ‘আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ভারতে পালিয়ে গেছেন। তাকে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেন যশোর জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আনসারুল হক রানা। ’

তার দাবি, যশোর ক্যান্টনমেন্টে লুকিয়ে ছিলেন ওবায়দুল কাদের। ৫ তারিখের পর (কোন মাসের ৫ তারিখ তা উল্লেখ করেননি তিনি) তাকে ভারতে যেতে সহযোগিতা করেছেন যুবদলের জেলা সেক্রেটারি রানা। এসকেন্দার আলী জনির অভিযোগ, শুধু ওবায়দুল কাদের নন, যুবদল নেতা রানা আওয়ামী লীগের আরও অনেক নেতাকে ভারতে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছেন।

জনির ফেসবুক লাইভ ছিল ২৭ মিনিটের। তিনি তার অভিযোগের তদন্ত চেয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে। পাশাপাশি এসব বিষয় নিয়ে তিনি সাংবাদিক সম্মেলন করারও হুমকি দিয়েছেন।

কে এই এসকেন্দার আলী জনি?

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসকেন্দার আলী জনির বাড়ি যশোর সদর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের বালিয়াডাঙ্গায়। তিনি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামের জীবদ্দশায় দলের যশোর জেলা কার্যালয়ে টি-বয় হিসেবে যোগদান করেন। তিনি জেলা বিএনপি কার্যালয়ে আগতদের আপ্যায়ন করতেন এবং রাতে কার্যালয়েই থাকতেন। সে সুবাদে তিনি দলের নেতাকর্মীদের আস্থাভাজন হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করতে সক্ষম হন।

সেই সূত্রে জেলা ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ের অনেক নেতার সঙ্গে তার সখ্য গড়ে ওঠে। এভাবেই তিনি জিয়া পরিষদের কমিটিতে যুক্ত হন। পরে তাকে প্রথমে জেলা যুবদলের সদস্য ও পরে প্রচার সম্পাদকও করা হয়। এরইমাঝে তিনি জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার জন্যে নিজের নাম প্রচার করতে থাকেন। বিষয়টিতে কেউ পাত্তা না দেওয়ায় তিনি বিভিন্ন সময় নেতাদের বিরুদ্ধে ফেসবুকে মনগড়া ও অশ্লীল কথাবার্তা লিখতেন ও বলতেন।

এসকেন্দার আলী জনি বর্তমানে ঢাকাতে অবস্থান করে কোনো ব্যবসায়ের সাথে যুক্ত বলে জানা গেছে।

বিএনপি ও যুবদল নেতৃবৃন্দ যা বলছেন

বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বুধবার (০৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় বাংলানিউজকে বলেন, ওবায়দুল কাদেরের মতো একজন মানুষকে যে কেউ ভারতে পার করে দেবেন, তা অন্য কোনো সংস্থা বা সাংবাদিকেরা জানবেন না, এটি অসম্ভব। যিনি এই অভিযোগ করেছেন তিনি একজন অসুস্থ মানুষ। তার আষাঢ়ে ও আজগুবি গল্পের কোনো সত্যাসত্য যাচাই না করেই একটা ছেলের বিরুদ্ধে নিউজ করে দেওয়া হলো। একবারও ভেবে দেখা হলো না, যিনি এই অভিযোগ করছেন তার রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থান কী, তিনি যা বলছেন বাস্তবতার সাথে তার কোনো মিল থাকতে পারে কি না।

অনিন্দ্য ইসলাম আরও বলেন, অসুস্থ কোনো ব্যক্তির মন্তব্য নিয়ে দায়িত্বশীল কোনো মিডিয়া এভাবে নিউজ করতে পারে, তা ফ্যাসিবাদ-উত্তর বাংলাদেশে কল্পনা করা যায় না।

এই ধরনের সংবাদ প্রকাশের আগে অন্তত দায়িত্বশীলদের কাছ থেকে যাচাই করে সংবাদ পরিবেশনের আহ্বান জানান বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক।

যশোর জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আনসারুল হক রানা বাংলানিউজকে বলেছেন, জনি বিভিন্ন সময় বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের নিয়ে ফেসবুকে বিতর্কিত মন্তব্য করতেন। নেতাদের অশ্লীল ভাষায় আক্রমণ করতেন। সে কারণে যশোর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু গত বছরের ৩০ নভেম্বর জেলা যুবদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বরাবর দলীয় প্যাডে একটি চিঠি দেন। ওই চিঠিতে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জনির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতেও বলেছিলেন।

রানা আরও জানান, জেলা বিএনপির চিঠি কেন্দ্রীয় যুবদলের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। যার ভিত্তিতে যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম নয়ন সংগঠনের যশোর জেলা কমিটি থেকে জনিকে বহিষ্কার করেন, যা সংগঠনের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক নুরুল ইসলাম হোসেল ২০২৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছিলেন। মূলত সংগঠন থেকে বহিষ্কারের পর থেকেই বেপরোয়া হয়ে যান জনি।

যশোর জেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও নগর কমিটির আহ্বায়ক মো. আরিফুল ইসলাম আরিফ বাংলানিউজকে বলেছেন, শৃঙ্খলা ভঙ্গ, দলের সিনিয়র নেতাদের চরিত্র হনন এবং বিকৃত মানসিকতার পরিচয় দেওয়ায় এসকেন্দার আলী জনিকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়। তার সাথে সংগঠনের কোনো যোগাযোগ নেই। ফলে তার বিষয়ে এখন সংগঠন কোনো দায়দায়িত্ব নেবে না।

তিনি বলেন, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আনসারুল হক রানা বা অন্য যে কেউ যদি ওবায়দুল কাদেরকে ভারতে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করতেন তাহলে এতদিন মিডিয়ায় চলে আসতো। জনির কাছ থেকে শুনতে হবে কেন?

এ বিষয়য়ে জানতে বাংলানিউজের পক্ষ থেকে জনির সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

খেলাধুলা

কদিন আগে রাগঢাক না রেখেই তামিম ইকবাল জানিয়েছিলেন, জাতীয় দলে ফিরছেন না। আচমকা অবসর নেওয়া এবং অবসর ইস্যুতে আগেও কয়েকবার নাটকের জন্ম দেওয়া তামিম কি আদৈৗ ফিরবেন? বহুল কাঙ্ক্ষিত উত্তরটি মিলতে পারে আজ। বুধবার সকালে ঢাকা থেকে সিলেটে এসেছেন প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ লিপু।

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে তামিম খেলবেন কি খেলবেন না, সেই সিদ্ধান্ত জানতে তার সঙ্গে বসবেন একটি পাঁচ তারকা হোটেলে। আগে থেকেই আছেন আরেক নির্বাচক হান্নান সরকার। অবসর ভেঙে বিশ্বকাপের আগে ফেরা তামিমকে আট জাতির চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে পাওয়া যাবে কিনা, আজই আসতে পারে সিদ্ধান্ত।

২০২৩ সালের জুলাইয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলেন তামিম। পরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুরোধে ফেরেন ক্রিকেটে। তারপর দুটি ওয়ানডে খেললেও যাননি ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলতে। এরপর থেকেই জাতীয় দলের বাইরে আছেন তারকা এই ব্যাটার। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকে আনুষ্ঠানিক অবসর নিলেও এখনও টেস্ট ও ওয়ানডে ক্রিকেটের সঙ্গে আছেন তামিম। তবে তার সিদ্ধান্ত জানতেই সিলেটে এখন বিসিবি নির্বাচকরা।

এ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহর মাঝেই আইসিসিকে জানাতে হবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দল। বিসিবি সূত্রের খবর, তামিমের পাশাপাশি সাকিব আল হাসানকেও চায় টিম ম্যানেজমেন্ট।

জাতীয়

২০২৪ সাল নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম ঘটনাবহুল বছর। নির্বাচন দিয়ে শুরু হয়েছিল বছর, এরপর ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনের অবসান হয়েছে। এছাড়া আরও ছোট-বড় বিভিন্ন ঘটনায় সারা বছর সরব ছিল দেশ। এসময় ভুল ও অপতথ্যও বেড়েছে প্রায় ৫২ শতাংশ।

বিগত বছরে একক ব্যক্তি হিসেবে সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্য ছড়ানো হয় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে জড়িয়ে।

বাংলাদেশের স্বাধীন ফ্যাক্টচেকার প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানারের প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। বুধবার প্রতিষ্ঠানটি ‘২০২৪ সালের ভুল তথ্যের পরিসংখ্যান’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও দেশের গণমাধ্যমে ছড়ানো ভুল তথ্য নিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, একক ব্যক্তি হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে ছড়ানো সবচেয়ে বেশি, ২০৮টি ভুল তথ্য শনাক্ত হয়। এই তালিকায় পরের অবস্থানে রয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তাকে নিয়ে ছড়ানো ১১৬টি ভুল তথ্য শনাক্ত হয়। তৃতীয় অবস্থানে থাকা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে নিয়ে ছড়ানো ৯৮টি অপতথ্য শনাক্ত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দিক দিয়েও এই তিনজন শীর্ষে।

জাতীয় ক্ষেত্রে অবশ্য অধ্যাপক ইউনূসের পরে আছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্যে আসিফ নজরুলও রয়েছেন এ তালিকায়। ধর্মীয় দিক থেকে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে জড়িয়ে ছড়ানো ভুল তথ্য সবচেয়ে বেশি শনাক্ত হয়েছে।

রাজনীতি

চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যের ‘দ্য লন্ডন ক্লিনিক’-এ ভর্তি করা হয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে। সেখানে ব্রিটিশ চিকিৎসক অধ্যাপক প্যাট্রিক কেনেডির তত্ত্বাবধানে তার চিকিৎসা শুরু হয়েছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন।

দ্য লন্ডন ক্লিনিকের ওয়েবসাইটে দেওয়া ডক্টরস প্রোফাইলের তথ্য অনুযায়ী, অধ্যাপক কেনেডি একজন স্বনামধন্য লিভার বিশেষজ্ঞ। লিভারের ভাইরাসজনিত রোগ নিয়ে কাজের জন্য তিনি বিশ্বজোড়া খ্যাতি রয়েছে তার। ইউনিভার্সিটি কলেজ ডাবলিনে প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর তিনি লন্ডনে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেন। ২০০৯ সালে বার্টস অ্যান্ড দ্য লন্ডন স্কুল অব মেডিসিন অ্যান্ড ডেন্টিস্ট্রিতে জ্যেষ্ঠ প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন।

অধ্যাপক কেনেডি ক্রনিক হেপাটাইটিস বি (সিএইচবি) রোগ নিয়ে গবেষণা করেছেন। তার এই গবেষণার প্রধান লক্ষ্য ছিল লিভারের ভাইরাসজনিত রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিশেষ পদ্ধতির বিকাশ ঘটানো। এ বিষয়ে প্রায় দুই শতাধিক গবেষণাপত্র, একশর কাছাকাছি পিয়ার রিভিউয়েড আর্টিকেলসহ একাধিক বইও লিখেছেন তিনি।

অধ্যাপক কেনেডি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) একজন বিশেষজ্ঞ উপদেষ্টা এবং এইচবিভি ক্লিনিক্যাল গাইডলাইন সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য। এ ছাড়া ইউরোপীয় লিভার রিসার্চ অ্যাসোসিয়েশনের এইচবিভি ক্লিনিক্যাল প্র্যাকটিস গাইডলাইন কমিটির সদস্য হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি। ইউনাইটেড কিংডম অ্যাডভাইজরি প্যানেলের (ইউকেএপি) হয়ে রক্তের ভাইরাস রোগ নিয়ে বিশেষজ্ঞ মতামত দিয়ে থাকেন অধ্যাপক কেনেডি। তিনি ব্রিটিশ ভাইরাল হেপাটাইটিস গ্রুপের বর্তমান চেয়ারম্যান।

দ্য লন্ডন ক্লিনিকের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রফেসর কেনেডির রোগী দেখার ফি ৩৫০ পাউন্ড বা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৫৩ হাজার টাকা। আর রোগীর ফলোআপে ফি নেন ২৫০ পাউন্ড বা ৩৭ হাজার ৫৩৫ টাকা।

প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় রাত পৌনে ১১টার দিকে ঢাকা বিমানবন্দর থেকে কাতারি আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে লন্ডনের উদ্দেশে যাত্রা করেন খালেদা জিয়া। বুধবার বাংলাদেশ সময় বেলা ৩টার দিকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি হিথ্রো বিমানবন্দরে অবতরণ করে। সেখানে দীর্ঘ সাত বছর ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা হয় খালেদা জিয়ার। এরপর তারেক রহমান নিজেই গাড়ি চালিয়ে মাকে দ্য লন্ডন ক্লিনিকে নিয়ে যান।

বিনোদন

বলিউড অভিনেত্রী অনন্যা পাণ্ডে। এ সময়ের সবচেয়ে ব্যস্ত অভিনেত্রী অনন্যা একের পর এক সিনেমা ও ওয়েব সিরিজে কাজ করছেন।

আদিত্যের সঙ্গে ব্রেকআপের পর থেকে এক মডেলের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িছেন অনন্যা। অনন্ত আম্বানি-রাধিকা মার্চেন্টের বিয়েতেও দুজনকে একসঙ্গে দেখা গেছে। সেখান থেকেই গুঞ্জন শুরু হয়।

এক সাক্ষাৎকারে বিয়ে ও সন্তান নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন অভিনেত্রী।

আগামী পাঁচ বছরে নিজেকে কোথায় দেখতে চান- এর জবাবে অনন্যা বলেন, এখন থেকে পাঁচ বছর পর আমি নিজেকে সুখী বিবাহিত জীবনে দেখতে চাই। আমার নিজস্ব বাড়ি প্রয়োজন, সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে।

অনন্যা কাজের পরিসর সম্পর্কে বলেন, এ মুহূর্তে আমি পুরোপুরি কাজের দিকে মনোনিবেশ করছি। আমার কাজেও উন্নতি করেছি।

২০১৯ সালে মাত্র ২১ বছর বয়সে করণ জোহরের হাত ধরে ‘স্টুডেন্টস অব দ্য ইয়ার ২’-এর মাধ্যমে চলচ্চিত্র জগতে পা রাখেন অনন্যা। এ সিনেমায় টাইগার শ্রফ এবং তারা সুতারিয়া ছিলেন সহ-অভিনেতা।

আন্তর্জাতিক

অন্তর্বর্তী সরকার আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পাশাপাশি স্থানীয় সরকার নির্বাচনেরও প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

বুধবার (০৮ জানুয়ারি) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের ভাইস-প্রেসিডেন্ট নিকোলা বিয়ারের সঙ্গে সাক্ষাতে এ কথা বলেন তিনি।

সাক্ষাৎকালে পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন প্রধান উপদেষ্টা।

ড. ইউনূস বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার একইসঙ্গে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে যেন স্থানীয় সরকার সত্যিই স্থানিক থাকে এবং একটি স্থানীয় সরকার নিশ্চিত করা যায়।

ইউরোপীয় বিনিয়োগ ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট নিকোলা বিয়ার সরকারের গৃহীত গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার বাস্তবায়নে সহায়তার আশ্বাস দেন।

দুর্নীতি প্রতিরোধ সংস্কারসহ নানা পরিকল্পনায় ইআইবি’র সহযোগিতা চান প্রধান উপদেষ্টা।

এ সময় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, বিডা চেয়ারম্যান আশিক মাহমুদ চৌধুরী এসডিজি বিষয়ক সিনিয়র সচিব লামিয়া মোরশেদসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।

জাতীয়

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ পরিবারের সদস্যদের সহায়তা এবং আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনে গঠিত ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’-এর কার্যক্রম ও ফাউন্ডেশনের সম্পাদক সারজিস আলমের ভূমিকা নিয়ে ফেসবুকে তুমুল সমালোচনা শুরু হয়েছে। শহীদের তালিকায় নাম ওঠাতে হয়রানির শিকার, শহীদ পরিবারের সদস্যদের ক্ষতিপূরণ না পাওয়া এবং আহতদের যথার্থ চিকিৎসা সহায়তা না পাওয়ায় খোদ এক সমন্বয়কই সারজিসের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। শুধু তাই নয়, জুলাই ফাউন্ডেশনকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর দাবি জানিয়েছেন ওই সমন্বয়ক। অনেকেই আবার ফাউন্ডেশনের দায়িত্ব থেকে সারজিসকে অব্যাহতি দেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন।

বুধবার জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম ও সারজিসের ভূমিকা নিয়ে প্রথম প্রশ্ন তোলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক রিফাত রশীদ। নিজের ফেসবুক ওয়ালে সারজিসকে উদ্দেশ করে তিনি লেখেন- ‘জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনকে এক সপ্তাহের মাঝে ফাংশনাল করুন। অন্যথায় আপনাদের বিরুদ্ধে আমরা সর্বস্তরের জনগণ কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলব।’

আরেক পোস্টে রিফাত লেখেন- ‘জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের জন্য ফুলটাইম কাজ করবে এমন বড় একটা এক্সপার্ট টিম অবিলম্বে নিয়োগ দিতে হবে। প্রতি শুক্রবার একটা জেলা সফরের ফালতু ট্রেন্ড বাদ দিতে হবে।’

রিফাতের স্ট্যাটাসের জবাবে সারজিস লিখেছেন- ‘আন্দোলন করা লাগবে না, কাল থেকে তুই দায়িত্ব নে।’

প্রত্যুত্তরে রিফাত বলেন, ‘আমি কেন দায়িত্ব নেব? আপনি এক্সপার্ট লোকজন আনতেছেন না কেন? মেডিকেল, হেলথ ইকোনমিকসহ এই সেক্টরের এক্সপার্ট মানুষজন আনেন। সারা দেশে অসংখ্য গ্রুপ আর্কাইভ ও স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে স্টাবলিস হয়েছে। এদের ইনক্লুড করেন। টিমটা বড় করেন। ভেরিফিকেশনের শেল্টারে আরও বড় করেন’।

সারজিসের সমালোচনা করে চীনের গুইলিন ইউনিভার্সিটি অব ইলেকট্রনিক টেকনোলজির বাংলাদেশি শিক্ষার্থী জিহাদী ইহসান বলেন, যে দায়িত্ব নেওয়ার যোগ্যতা নাই সে দায়িত্ব নিয়েছো কেন? ছোটলোকের সবচেয়ে বড়ো সমস্যা হলো পাইলে সব খাইতে চায়, হজম করার কথা ভুলে যায়। কত বড় আহাম্মক হলে রিফাতকে বলে- ‘তুই কাল থেকে দায়িত্ব নে’।

‘তুমি দায়িত্ব নিয়েছো কেন? শহিদের রক্তের সঙ্গে তামাশা করতে’- বলেন জিহাদী।

রিফাতের মন্তব্যে সারজিস যে জবাব দিয়েছেন তার সমালোচনা করেছেন কবি হাসান রোবায়েত। তিনি বলেন, অ্যাকাউন্টিবিলিটি (জবাবদিহিতা) নাই অথচ অভিমান আছে। বাহ! শুধু এই দায়ীত্বজ্ঞানহীন রিপ্লাই দিয়ে দায়িত্বে অবহেলার জন্য ইমিডিয়েট তার রিজাইন/স্যাক দেওয়া/করা উচিত।

আরেক পোস্টে হাসান রোবায়েত বলেন, ‘জুলাই ফাউন্ডেশনে হেল্প পাইতে সুপারিশ লাগবে কেন? একজন যোদ্ধার ক্ষতস্থানই কি তার সুপারিশের জন্য এনাফ নয়? সুপারিশকারীরাই কি তাহলে নয়া পাওয়ার হাউস? বাংলাদেশের সবচেয়ে অথর্ব ফাউন্ডেশন কি জুলাই ফাউন্ডেশন?’

জুলাই ফাউন্ডেশন ও সারজিসকে নিয়ে দেওয়া রিফাতের বক্তব্য সমর্থন করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার স্থানীয় সরকারের পলিসি ও প্ল্যানিং প্রফেশনাল দিলশানা পারুল। রিফাতের পোস্ট শেয়ার করে তিনি লেখেন, ‘আমি তার এই বক্তব্য সত্যিই পছন্দ করেছি। তার দাবি সুস্পষ্ট এবং খুবই গণতান্ত্রিক। তারা প্রকাশ্যে জবাবদিহি চাইছে’।

আরেক পোস্টে দিলশানা পারুল লেখেন, জুলাই ফাউন্ডেশন নিয়ে আমার সীমিত যোগাযোগ থেকে যা জানতে পেরেছি, তা হলো- জুলাই ফাউন্ডেশনের ওয়েবপেজে ফাউন্ডেশনের নিজস্ব কোনো সংখ্যার ভিত্তি নেই। মিনিস্ট্রি যতজনকে ভেরিফাই করে, ফাউন্ডেশন সেই সংখ্যাটাই ভেরিফায়েড হিসেবে গ্রহণ করে। সরকার যাদের ভেরিফাই করেনি, ফাউন্ডেশন তাদের টাকা দিতে পারে না। যদি সরকারের দ্বারা ভেরিফাইড না হওয়া কেউ ফাউন্ডেশনে আসে, তাহলে ফাউন্ডেশন সেটা ভেরিফিকেশনের জন্য হেলথ মিনিস্ট্রিকে পাঠায়। মিনিস্ট্রি সেটা জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠায়। জেলা প্রশাসক সরেজমিনে তথ্য নিয়ে ভেরিফাই করে সেটি হেলথ মিনিস্ট্রিতে পাঠান। হেলথ মিনিস্ট্রি তথ্য ইনফরমেশন সিস্টেমে দিলে তখন ফাউন্ডেশন সেই ব্যক্তিকে টাকা দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করতে পারে।

এখানে আমলারা অনেক সময় দেরি করেন। সরকারের নিয়ম অনুযায়ী এই ভেরিফিকেশন ৪ দিনের মধ্যে করা উচিত, কিন্তু আমি শুনেছি এটি ৪ দিনে কখনই সম্পন্ন হয় না।

এছাড়া ফাউন্ডেশনে আবেদন করার সময় আহতদের অনেকগুলো চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজপত্র সত্যায়িত করতে হয় (এটা মনীষা আপার পোস্ট থেকে আগেই জেনেছি)। এই প্রক্রিয়াটি পরিবর্তন করে ফাউন্ডেশন নিজেই কাগজগুলো অথেনটিক কিনা যাচাই করতে পারত। এটি হাসপাতালগুলোকে ফোন করে খুব সহজেই করা সম্ভব। কিন্ত যতদূর জানলাম মন্ত্রণালয় এ দায়িত্ব এখনো ছাড়েনি বা ছাড়তে রাজি নয়।

বর্তমানে আহতদের নিজ উদ্যোগে মেডিকেল ডকুমেন্টগুলো হাসপাতাল থেকে সত্যায়িত করে জমা দিতে হয়, যা তাদের জন্য খুব কষ্টসাধ্য। ফাউন্ডেশনের উচিত এ প্রক্রিয়াটি সহজ করে আহতদের কাগজপত্র নিজেই যাচাই করে নেওয়া।

আমরা কোভিডের সময়ই বুঝতে পেরেছি আমাদের হেলথ মন্ত্রণালয়টা আসলে কী জিনিস। এখন মনে হচ্ছে, মন্ত্রণালয় জুলাই ফাউন্ডেশন তৈরি করেছে যেন তাদের উপর কোনো অতিরিক্ত দায়িত্ব না পড়ে এবং সহজে অন্যদের ঘাড়ে দোষ চাপানো যায়।

সাংবাদিকদের অনুরোধ জানাই, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে গিয়ে রিপোর্ট করুন- —কেন আহতদের চিকিৎসা নিয়ে এমন অবস্থা? আহতরা কেন এমন ভোগান্তির শিকার?’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিডিয়া সেলের সম্পাদক আল মাশনূন বলেন, ‘সারজিস ভাই একসঙ্গে অনেক দায়িত্ব নিয়ে ফেলেছেন, কতটা মেটাতে পারবেন জানি না, তবে জুলাই ফাউন্ডেশনের মতো পবিত্র একটা জায়গায় কাজ ভালোভাবে না করতে পারলে তার উচিত কাজ আমাদের দিয়ে দেওয়া!আমরা আমাদের জীবনের সব কিছু ত্যাগ করে এখানে পুরোটা সময় দিয়ে দিতে আগ্রহী। মানুষের গালি, অভিশাপ, কান্না দেখে আর শুনে রাতে ঘুমাতে পারি না। মাঝে-মধ্যে মনে হয় আমার যে ভাইয়েরা শহীদ হয়েছেন তারা রক্ষা পেয়েছেন, এখন তাদের স্বপ্নের মতো দেশ সংস্কার করার কাজে যে আমরা বিবেকের কাছে আটকে টিকে আছি তার চেয়ে শহীদ হওয়া উত্তম ছিল!’

তিনি আরও বলেন, দায়িত্ব দিয়ে দেন বলতে আমাকে বা কোনো গোষ্ঠীকে দিতে হবে বিষয়টা এমনও না। আমরা সবাই মিলে নির্বাচন করি- কে ভালো হবে তাকেই বসাই, তবুও কাজ হোক।

ফারদিন হাসান বলেন, আজকে হঠাৎ জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ উঠায় কিছু তথ্য চেক করতে তাদের ওয়েবসাইটে গেলাম। তাদের অ্যাবাউটস সেকশনে গিয়ে আমি যা দেখি তাতে আমি কিছুক্ষণের জন্য বাকরুদ্ধ হয়ে যাই। আমরা যখন ব্যস্ত একাত্তরে ৩০ লাখ নাকি ৩ লাখ শহীদ সে হিসাব নিয়ে, জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন তখন আমাদের জুলাইয়ের শহীদদের সংখ্যা দুই হাজার থেকে সাতশ’ বানিয়ে দিয়েছে। কিছুদিন আগে যখন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা এই আজগুবি সংখ্যাটা বললেন তখনো বুঝি নাই এর ভিত্তি কী? এখন তো দেখছি এই অকাজের পেছনে ফাউন্ডেশন নিজে।

‘সারজিস ও স্নিগ্ধ কি দায়িত্বশীল হিসেবে শহীদদের অস্বীকার করার দায়ভার নেবে? তেরোশর অধিক শহীদকে অস্বীকার করে তারা কি নিজেদের পদে বহাল তবিয়তেই থাকবে? আই এম সরি, বাট এইটা রক্তের সঙ্গে বেইমানি ছাড়া আর কিছুই না’, বলেন তিনি।

কাজী ওয়ালী উল্লাহ নামে একজন লেখেন- একজন শহীদ পরিবার বা আহত জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে এর চেয়ে ভালো ব্যবহার পায় না, আমরা বিভিন্ন সরকারি অফিসে গেলে হাসিনার আমলে যেমন ব্যবহার পেতাম! এই কারণে যাদের কিছুটা সামর্থ্যও আছে, ওই টাকার জন্য যায় না। যারা গেছেন, দ্বিতীয়বার যেতে না হওয়ার জন্য দোয়া করে।

শহিদের স্ত্রীদের প্রায়ই শুনতে হয়, ‘বয়স কম, আরেকটা বিয়ে করে ফেলবে, তাদের টাকা লাগে কেন’! যেই স্ত্রীর বাচ্চা নাই, তাকে তো ধুর-ধুরই করে।

যারা এগুলোর প্রতিবাদ করে তাদের এমন চোখে দেখা হয় যেন তারা কোনো অপরাধী! এই হইলো জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন। আমরা কেন এই ফাউন্ডেশন নিয়ে কথা বলা শুরু করছি ধীর ধীরে আরও ভালো বুঝতে পারবেন।

বাংলাদেশ নদী অধিকার সংরক্ষণ কমিউনিটির আহ্বায়ক ইবরাহিম মাহমুদ বলেন, স্মৃতি ফাউন্ডেশনের জন্য যে ৬৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল, তার প্রোপার হিসাব বুঝিয়ে দিয়ে ওনারা পদত্যাগ করতে পারেন। আমি মনে করি এটা তাদের জন্য অসম্মানের কিছু না। বরং মাল্টিপল কাজের প্রেশার একসঙ্গে নিতে না পারাই উপদেষ্টাসহ প্রত্যেকের সেক্টর বেইজড ফেইল করার মূল কারণ। সারজিস আলমের উচিত ন্যাশনাল পলিটিক্সে মনোনিবেশ করা। জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন এই পথের পাথওয়ে হতে পারতো যদি না এইটা ওয়ার্ক করতো ঠিকঠাক। সে সম্ভাবনা আর নাই। এখন অন্যভাবে মুভ করা উচিত।

জিয়া মাহমুদ মির্জা নামে একজন লেখেন- নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক জনাব সারজিস আলমকে জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যেখানে জুলাই ফাউন্ডেশনের উদ্দেশ্য ছিল দ্রুত সম্ভব আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত করা, আহত ও শহীদ পরিবারকে অর্থ সহায়তা পৌঁছে দেওয়া। সেখানে সারজিস সাহেব জুলাই ফাউন্ডেশনের কাজ ফেলে রেখে নিজের সংগঠনের কাজে ব্যস্ত থাকে। অর্থ সহায়তা দেওয়ার নাম করে জেলা সফর আর রাজনৈতিক সমাবেশ করে বেড়াচ্ছে। সে কোন শহরে কবে যাবে তার ওপর ভিত্তি করে যদি সহায়তা দেওয়া হয় তাহলে ততদিন কি এই ভুক্তভোগী পরিবাররা বসে থাকবে?

তার দাবি, জুলাই ফাউন্ডেশনের দায়িত্ব থেকে সারজিসকে অব্যাহতি দিতে হবে। জুলাই ফাউন্ডেশনের জন্য নিবেদিত হয়ে কাজ করতে পারবে এমন যোগ্য লোকের কাছে ফাউন্ডেশনের দায়িত্ব দিতে হবে।

এম জে ফেরদৌস নামে এক ব্যক্তি লেখেন- খুনিদের ঠিকঠাক বিচার না হলে আর শহীদ পরিবার যথাযথ সম্মান ও ক্ষতিপূরণ না পেলে এবং আহতরা যথার্থ চিকিৎসা না পেলে এর খেসারত আমাদের ভবিষ্যতে দিতে হবে, জাতিগতভাবেই।

ইমরানুল হক আকিব বলেন, এটা আমি স্বচক্ষে দেখে আসলাম। এরকম একটা দায়বদ্ধতার কাজ কত অবহেলায় পড়ে আছে তা দুঃখজনক। আন্দোলনে আহতদের নিয়ে কাজ করাতে নিজের কাছেই লজ্জা লাগে। ওদের কত প্রত্যাশা, কত প্রশ্ন! কী বলব আর।

মুজাহিদুল ইসলাম জাহিদ বলেন, পুরাই ফাজলামি চলতেছে চিকিৎসা আর জুলাই ফাউন্ডেশন নিয়ে।

মীর হুযাইফা আল-মামদূহ লেখেন- আমরা যাদের ডাকে সাড়া দিয়ে গুলি খাইলাম, তারা আমাদের ডাকে একবারও আসে নাই। জুলাইয়ে আহত মোশাররফ ঢামেকে ভর্তি। ওদিকে সারজিসের সাইনের জন্য জুলাই ফাউন্ডেশনের কোনো চেক হচ্ছে না। সেখান থেকে বলে দেওয়া হয়েছে, সে নাকি বিদেশে গেছে।

আরেক পোস্টে তিনি বলেন, আমার আগের পোস্ট দেওয়ার দুই মিনিটের মাথায় হাসনাত আব্দুল্লাহ, তারেক রেজারা কমেন্ট করে জানাইছে- ‘আমি নাকি মিথ্যাচার করছি, অতিরিক্ত করছি’। অথচ সারজিস বিদেশে এ-ই দাবি আমি করি নাই। আহতের স্ত্রী ৫ বার জুলাই ফাউন্ডেশনে গিয়েও টাকা পান নাই। সেখান থেকে তাকে বলা হইছে- ‘সারজিসের সাইনের জন্য চেক হচ্ছে না, সে বিদেশে’। এই লোক (মোশাররফ) বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাবে, রানের নার্ভ শুকিয়ে গেছে, দুই মাস কোনো চিকিৎসা ছাড়া পড়ে আছে। দুই মাস আগেই ঢাকার ডাক্তাররা বলে দিয়েছেন, বিদেশে নিতে হবে। চিকিৎসার খরচ হচ্ছে, সরকার দিচ্ছে। কিন্তু তার নিজে চলার জন্য, দুটো মেয়ের খরচ চালাবার জন্য কোনো পয়সা নেই। আগস্টে কিছু টাকা পাইছে, তারপর আর কেউ খোঁজও নেয় নাই, এইটা বলতে বলতেই তারা কাঁদছিল। প্রতিদিন ৫০০ টাকার বেশি খরচ হচ্ছে। ধার করে, নানা মানুষের টাকায় এটা জোগাড় হচ্ছে।

জুলাই ফাউন্ডেশনে গত মাসের শুরুতে কাগজ জমা দিয়েছে, সেই টাকাটা পায়নি, সেই টাকা পেলে, তাও চলা যেত কিছুদিন। ভেরিফিকেশন হয় নাই শুনেছি অনেক দিন। আজকে শুনলাম, সাইনের জন্য চেক আটকা।

সারজিসের বিদেশ যাওয়া না যাওয়ার ইনফরমেশন নিয়ে এরা যতটা চিন্তিত, আহতদের টাকা পাওয়া নিয়ে ততটাও না। অথচ সেখানেই আটকা চেক। সেখানেই আটকা যাবতীয় ভেরিফিকেশন। এটাই বাস্তব। হা হা হা।

সারজিসকে কটাক্ষ করে মো. সাব্বির হোসাইন লেখেন- সার্ভিস আলম ভাই তার দল গোছানো আর অ্যাকাউন্ট ভরা নিয়ে বিজি আছে…। তার কাছে কিসের জুলাই আর কিসের শহীদ?

মোহাম্মদ আব্দুর রহমান বলেন, ওনার উচিত রিফাত রশিদের পোস্টের কমেন্টের জন্য অ্যাটলিস্ট মুচলেকা দিয়ে রিজাইন করা।

এদিকে দেশের একটি জাতীয় দৈনিকে আজ বুধবার জুলাই ফাউন্ডেশনের সমালোচনা করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, শহীদের তালিকায় নাম ওঠাতে পরিবার হয়রানির শিকার হচ্ছে। আবেদন করা হলেও নাম তালিকাভুক্তিতে গড়িমসি করা হচ্ছে, মিলছে না সরকারি সহায়তাও।

উল্লেখ্য, গত ৪ জানুয়ারি শহীদ মিনারে জুলাইয়ের শহীদ পরিবার ও আহতদের নিয়ে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ নাগরিক সমাবেশের আয়োজন করে। সেখানে হামলার ঘটনায় গণঅধিকার পরিষদের নেতা ফারুক হাসানসহ জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের বেশ কয়েকজন আহত হন। এ হামলায় জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ করেন জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের আহ্বায়ক খোমেনী ইহসান। শুধু তাই নয়, ওই সমাবেশে শহীদ পরিবারের সদস্যদের না যাওয়ার জন্য ফোন করেন সারজিস। ওই ফোনের একটি রেকর্ড অন্তর্বর্তী সরকারকেও দেওয়া হয়।

হামলার ঘটনায় শাহবাগ থানায় একটি মামলা হয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় হামলাকারীদের পরিচয় প্রকাশের পর পুলিশ মোহাম্মদ আবীর আহমেদ শরীফ ও কোরবান শেখ হিল্লোলকে গ্রেফতার করে; কিন্তু গ্রেফতারের ১১ ঘণ্টার মাথায় তাদের জামিন দেন আদালত। এ মামলার অপর দুই আসামি সাইফুল ইসলাম ও তন্ময়কে এখনো গ্রেফতার করেনি পুলিশ।

অপরদিকে হামলার পরদিন ৫ জানুয়ারি হামলাকারীরা জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের দোতলায় সংবাদ সম্মেলন করে। সেই সংবাদ সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য শহীদ মিনারে হামলার নেতৃত্বে থাকা আসামি মোহাম্মদ আবীর আহমেদ শরীফের সঙ্গে সাংবাদিকদের যোগাযোগের অনুরোধ করেন সারজিস। ‘জুলাই মুভমেন্ট জার্নালিস্ট’ নামক হোয়াটসআপ গ্রুপে সারজিসের শেয়ার করা ওই পোস্টটি মুহূর্তেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। ফলে শহিদ মিনারে হামলায় সারজিস জড়িত কিনা তা নিয়ে নানা প্রশ্ন শুরু হয়। গণমাধ্যমে এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর সোশ্যাল মিডিয়ায়ও জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম ও সারজিসের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনার পাশাপাশি মুখ খুলতে শুরু করেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত অনেকেই।

গত ১০ সেপ্টেম্বর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ পরিবারের সদস্যদের সহায়তা এবং আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনে অন্তর্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সভাপতি এবং আন্দোলনে শহীদ মুগ্ধর যমজ ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধকে সম্পাদক করে সাত সদস্যের ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’ গঠন করা হয়। এর এক সপ্তাহ পর কমিটিতে পরিবর্তন আনা হয়। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলমকে। আর মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধকে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।