বিনোদন

গত রোববার সকালে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিএম) নেতা তন্ময় ভট্টাচার্যের সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে লাঞ্ছনার শিকার হন এক সাংবাদিক।

তরুণী সেই সাংবাদিক ফেসবুক লাইভে তাকে কোলে বসার অভিযোগ করেন তন্ময় ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে। নারী সাংবাদিকের এমন অভিযোগের পরই সিপিএম নেতাকে সাসপেন্ডও করেছে তার দল।

তন্ময়ের বিরুদ্ধে এমন গুরুতর অভিযোগ উঠতেই সোচ্চার হয়েছেন অভিনেত্রী ও বরানগরের সংসদ সদস্য সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি এই অপমানের সুষ্ঠ তদন্ত করে অভিযুক্তকে শাস্তির দাবি জানান।

সায়ন্তিকার প্রশ্ন, ‘এবার আপনারা পথে নামবেন তো?’ এই ইস্যুতে সায়ন্তিকা বলেন, ‘আমাদের একটাই প্রশ্ন, যারা আরজি করের নির্যাতিতার জন্য বিচার চেয়েছিলেন… আমরা সকলেই আরজি করের নির্যাতিতার জন্য বিচার চেয়েছিলাম… এখনও চাইছি… তারা এবারও মানববন্ধন করবেন তো? তারা এইবারেও রাত দখল করবেন তো? তারা এইবারেও বিচার চাইবেন তো?’

উল্লেখ্য, বরানগর বিধানসভা উপনির্বাচনে তন্ময় ভট্টাচার্য ছিলেন সায়ন্তিকার প্রতিদ্বন্দ্বী। সেই তন্ময়ের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠতেই পথে নামছেন সায়ন্তিকা।

সায়ন্তিকা বলেন, আরজি করের নির্যাতিতাকেও তার কর্মক্ষেত্রেই ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছিল। এক্ষেত্রে একজন নারী সাংবাদিককে তার কর্মক্ষেত্রে তার সঙ্গে অশ্লীল আচরণ করা হয়েছে। এটাকে নির্দিষ্টভাবেই একটা ‘পোটেনশিয়াল রেপ’-এর প্রথম ধাপ বলা যেতে পারে। আমরা মণিপুরের ঘটনায় সরব ছিলাম। আমরা আরজি করের ঘটনায়ও সরব ছিলাম, আছি। এবারও আমরা প্রত্যেকেই সরব থাকব।

এ প্রসঙ্গে তন্ময় ভট্টাচার্য বলেছেন, আমি আসলে মজা করে এমনটি করেছি। তিনি জানান সবার সাথেই এমনটি করে থাকেন তিনি।

এ ঘটনায় সোমবারই তন্ময়কে বরানগর থানায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। পাশাপাশি অভিযোগকারিণীরও বয়ান নেওয়া হয়েছে।

তন্ময় বলেন, ভদ্রমহিলার ওজন ৪০ কেজির বেশি নয়, আমার ওজন ৮৩ কেজি। ৮৩ কেজি ওজনের এক পুরুষ যদি ৪০ কেজি ওজনের এক মহিলার কোলে বসে পড়েন তাহলে সেই মহিলা শারীরিকভাবে ফিট থাকে কিনা আমি জানি না। এটা পরিকল্পিত কুৎসা।

তন্ময় আরও বলেন, ভদ্রমহিলা আমার বাড়ি থেকে বেরিয়েছেন আনুমানিক ১০টা ৪০ মিনিটে। আমার পাশের বাড়ির এক যুবক আমায় রাতে জানিয়েছে যে মেয়েটি হাসতে হাসতেই বাড়ি থেকে বেরোচ্ছিলেন। মেয়েটি ফেসবুক লাইভে বলেছেন যে উনি শারীরিক ও মানসিকভাবে বিধ্বস্ত। আমার বক্তব্য হল যে সময়ের ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করা হচ্ছে, তারপর মেয়েটি প্রায় ২৫ মিনিট আমার সাক্ষাৎকার নিয়েছে। এরপর আমার বাড়ি থেকে বেরিয়ে সল্টলেকে সাক্ষাৎকার নেওয়ার কথা ছিল। যিনি এতটা ট্রমাটাইজ হয়ে রয়েছেন তার পক্ষে কি এত কাজ করা সম্ভব?

রাজনীতি

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, সবাই আমরা একমত পতিত স্বৈরাচার- মাফিয়া সরকারের বেনিফিশিয়ারিদের রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রেখে অন্তর্বর্তী সরকারের লক্ষ্যে পৌঁছানো সহজ নয়।

মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রাজধানীর ইস্কাটন লেডিস ক্লাবে শুভেচ্ছা মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

সনাতন সম্প্রদায়ের সঙ্গে শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে শুভেচ্ছা বিনিময়ের আয়োজন করে হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। এ অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তারেক রহমান বলেন, নিজেদের চরিতার্থ স্বার্থ হাসিল করতে পতিত পরাজিত শক্তি দেশে সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতো। সারা দেশে সনাতন সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনের কোনো একটি ঘটনার বিচার করেনি তারা।

গত ১৫ বছরে তাঁবেদার সরকারের সময় সন্ত্রাসীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, যারা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। ধর্মপ্রাণ মানুষদের রাখা হয়েছিল উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায়।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর স্বৈরশাসক পালানোর পর দেশের মুসলমান, হিন্দুসহ সব ধর্মের মানুষ এখন আয়নাঘরের ভীতিমুক্ত। আজ আমরা স্বাধীনভাবে এখানে একত্রিত হতে পেরেছি। তবে বিভিন্ন ধর্ম গোষ্ঠীর স্বার্থকে পুঁজি করে বা তাদের ব্যবহার করে বা কোনো ধর্মকে ব্যবহার করে পলাতক স্বৈরাচারের রেখে যাওয়া দোসররা যাতে কোনো ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করতে না পারে, সে ব্যাপারে আপনাদের ও আমাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।

ভবিষ্যতে সব ধর্মের মানুষ যেন তার ধর্ম নিশ্চিন্তে উদযাপন করতে পারে তেমন একটি দেশ ও সমাজ বিনির্মাণে বাংলাদেশের পক্ষের শক্তি আজ ঐক্যবদ্ধ জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, ধর্ম যার যার, কিন্তু নিরাপত্তা পাওয়ায় অধিকার সবার।

তারেক রহমান বলেন, মাফিয়া সরকারের রেখে যাওয়া ভঙ্গুর রাষ্ট্রকে মেরামত করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার ইতোমধ্যে বিভিন্ন সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। ১৫ বছরের জঞ্জাল শেষ করে চলমান সংস্কার কার্যক্রম শেষ করা বিশাল কর্মযজ্ঞ। তবে একটি বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি, এই বিশাল কর্মযজ্ঞ সম্পাদন করতে গিয়ে জনগণের প্রতিদিনের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব করা না গেলে জনগণের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতা নিশ্চিত করার বিষয়টি উপেক্ষিত থাকলে, অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রম প্রশ্নের মুখে পড়বে। ফলে এ সরকারের কার্যক্রম অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এজেন্ডাভিত্তিক করা অত্যন্ত জরুরি।

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ করে দিতে পরাজিত অপশক্তি প্রশাসনে থাকা তাদের দোসররা নানা কৌশলে ষড়যন্ত্র করছে। এ কারণে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের ভিন্ন ভিন্ন কর্মসূচি থাকলেও একটি বিষয় বিএনপিসহ সবাই আমরা একমত- মাফিয়া সরকারের বেনিফিশিয়ারদের রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রেখে অন্তর্বর্তী সরকারের লক্ষ্যে পৌঁছানো সহজ নয়।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে পর একটা যে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারি নাই। এবার ৫ আগস্টের পর আবার একটা নতুন সম্ভাবনা এসেছে, আসুন আমরা সবাই মিলে একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তুলি। আসুন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান স্বপ্ন বাস্তবায়ন করি।

পতিত শক্তি নানা ধরনের উসকানি দিয়ে যাচ্ছে, কোনোভাবে এ উসকানির ফাঁদে পা না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আসুন নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে কাজ করি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা জাতীয়তাবাদীতে বিশ্বাসী, সবাই মিলে শান্তিতে বসবাস করতে চাই। ধর্ম যার যার দেশটা আমাদের সবার। ৫ আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর একটা প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে, আসুন আমরা সবাই মিলে একটি ঐক্যবদ্ধ ও কল্যাণকর রাষ্ট্র গঠন করি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির মির্জা আব্বাস বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সেই হিন্দুদের রক্ষার বহমান প্রক্রিয়া এখনো চলছে। আগে হিন্দুদের পূজার সময় কোনো মন্দির পাহারা দিতে হতো না, এখন দেখি এসব! কেন? কোনো মুসলমান হিন্দুদের মন্দির ভাঙতে পারে না, এটি কে করছে? যত ধরা পড়ছে সব আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ আর যুবলীগ। আমার এলাকায় হিন্দুদের যত জমি দখল করেছে সব আওয়ামী লীগের নেতা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান বলেন, মা আসেন প্রতি বছর ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য। ৫ আগস্ট এদেশ থেকে অসুর পালিয়ে গেছে। সত্যের জয় হয়েছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমরা একটি রেইনবো জাতি গঠন করতে চাই, এটি বিএনপির দর্শন, চিন্তা থেকে এর প্রতিফলন। এটি নিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান চিন্তা প্রতিফলনে কোনো সন্দেহ নেই। ধর্মকে মূলধন করে অনেকে নেতা হয়ে যান, তারা নিজেরা লাভবান হচ্ছেন, এমনকি যাদের নিয়ে লাভবান হচ্ছেন তাদের নিয়ে কোনো ভাবনা নেই এ ধর্ম ব্যবসায়ীদের মধ্যে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, বিএনপিতে গোত্র ধর্ম নির্বিশেষে সবাই সমান। এটি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের দল।

শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সুব্রত বড়ুয়া, বিএনপির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জামাল, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ও শ্রেণি এবং পেশাজীবীরা।

আন্তর্জাতিক

সত্যিকারের গণতন্ত্র নবায়ন ও পুনরুজ্জীবিত করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য এখন এক ঐতিহাসিক সুযোগ রয়েছে। এমনটি মনে করেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে এখন গভীরভাবে সংস্কার, সত্য ও ন্যায়ের একটি প্রক্রিয়া শুরু করা প্রয়োজন, যেন উন্নয়নের সুফল সব মানুষ ভোগ করতে পারে।

মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে দেওয়া এক বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।

জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের কথা তুলে ধরে ভলকার তুর্ক বলেন, অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মাদরাসা, কলেজ ও স্কুলের শিক্ষার্থী, সারা দেশের মানুষের সঙ্গে আপনারা ন্যায়বিচার ও সমতার পক্ষে দাঁড়ানোর দুর্দান্ত সাহস দেখিয়েছেন। আজ এখানে কথা বলতে পেরে সত্যিই নিজেকে সম্মানিত বোধ করছি।

তিনি বলেন, আমি আপনাদের সাহসিকতা, সংহতি এবং মানবাধিকারের প্রতি অঙ্গীকারের গল্পে অনুপ্রাণিত, যেখানে ছাত্ররা আহত বিক্ষোভকারীদের সাহায্য করেন, রিকশাচালকেরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আন্দোলনকারীদের সহযোগিতা করেন। নারী শিক্ষার্থীরা তাদের ছাত্রাবাসের তালা ভেঙে প্রতিবাদ করতে রাস্তায় নামেন এবং লাখ লাখ মানুষকে অনুপ্রাণিত করেন।

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক এ হাইকমিশনার বলেন, আজ এখানে আমাদের উপস্থিতি বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন সূচনা, শিক্ষার্থীদের সাহসের প্রমাণ এবং তাদের আত্মত্যাগের একটি স্মারক। আসুন তাদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে কিছুক্ষণের জন্য নীরবতা পালন করি।

ভলকার তুর্ক বলেন, মানবাধিকার ও আইনের শাসন আপনাদের রোডম্যাপ ও দিকনির্দেশক হতে পারে। কারণ, আপনারা অতীতের সহিংসতা পেছনে ফেলে এক নতুন সমাজ ও ভবিষ্যতের দিকে এগোচ্ছেন।

এ সময় অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান উপস্থিত ছিলেন। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক মঙ্গলবার বাংলাদেশে দুই দিনের সফরে আসেন।

রাজনীতি

সিটি করপোরেশন-পৌরসভার মতো অপসারিত হচ্ছেন না ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা। যমুনা টেলিভিশনকে এ কথা জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, সাড়ে চার হাজার ইউপিতে দায়িত্বরতরাই পদে থাকছেন। প্রাথমিকভাবে প্রশাসক নিয়োগের কথা হলেও সাড়ে ৬৯ হাজার চেয়ারম্যান, মেম্বার ও সংরক্ষিত সদস্যের বিকল্প সরকারি কর্মকর্তা পাচ্ছে না মন্ত্রণালয়।

সূত্র আরও জানায়, সারা দেশে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান চার হাজার ৫৭১ জন। মেম্বার বা সদস্য ৪১ হাজার ১৩৯। আর ১৩ হাজার ৭১৩ জন সংরক্ষিত সদস্য। আওয়ামী লীগের পতনের পর থেকে ইউপিতে অনুপস্থিত ছিল এক হাজার ৪১৬ চেয়ারম্যান। এর মধ্যে অনেকে যোগদান করায় সাড়ে ৩০০ ইউপি এখন পরিচালিত হচ্ছে প্রশাসক বা কমিটির মাধ্যমে।

তবে সাড়ে ৬৯ হাজার চেয়ারম্যান, মেম্বার ও সংরক্ষিত সদস্যের বিকল্প সরকারি কর্মকর্তা পাচ্ছে না মন্ত্রণালয়। সব ইউপিতে প্রশাসক নিয়োগ দিতে হলে ৫৪ হাজারের মতো সরকারি কর্মকর্তা প্রয়োজন। যা বাস্তবে কঠিন হওয়ায় ইউপির জনপ্রতিনিধিদের বহাল রাখার পথে হাঁটছে সরকার।

বাস্তবতা স্বীকার করে সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ বলেন, সাড়ে ৩০০ মতো ইউপিতে দায়িত্বশীল কেউ ছিল না। সেখানে প্রশাসককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি কমিটিও গঠন করে দেওয়া হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ বাতিল করার কোনো সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। বাতিল করলে গ্রাম পর্যায়ে সেবাপ্রাপ্তিতে ধাক্কা লাগবে। কেননা, একটি গ্রাম নিয়েও ওয়ার্ড গঠিত। সেজন্য ইউপি ভেঙে দিয়ে গ্রাম পর্যায়ে সেবা পৌঁছে দেওয়ায় ব্যাঘাত হোক সেটি চায় না সরকার।

আপাতত প্রশাসক পরিচালিত সিটি-পৌরসভা-উপজেলা ও জেলা পরিষদে নির্বাচনের কোনো পরিকল্পনা হয়নি বলেও জানিয়েছেন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, জনগণের সঙ্গে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারণ করা হবে নির্বাচন কখন হবে। নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে আগে। তাছাড়া সংসদ নির্বাচনের আগে কোনো স্থানীয় সরকার নির্বাচন হবে কিনা, তা নিয়ে এখনো পরিকল্পনা করেনি অন্তর্বর্তী সরকার।

এলজিআরডি উপদেষ্টা বলেন, প্রশাসক পরিচালিত হলেও স্থানীয় সরকারের সেবা নিশ্চিতে কোনো ছাড় দেবে না মন্ত্রণালয়।

জাতীয়

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও অন্যান্য কমিশনার নিয়োগের সুপারিশ তৈরি করতে ছয় সদস্যের সার্চ কমিটির প্রধান হিসেবে আপিল বিভাগের বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীকে মনোনীত করেছেন প্রধান বিচারপতি।

এছাড়া সদস্য হিসেবে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামানকে মনোনীত করা হয়েছে।

ইতোমধ্যে এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) সচিবালয়ে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠনে আজ-কালের মধ্যে সার্চ কমিটি গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। সার্চ কমিটি হয়ে গেলে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে। নির্বাচন কমিশন গঠন করা হলে ভোটার তালিকা নিয়ে কাজ করা হবে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২ এর ৩ ধারা অনুযায়ী, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের শূন্য পদে নিয়োগ দেওয়ার যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের নাম সুপারিশ করার উদ্দেশ্যে ৬ (ছয়) জন সদস্যের সমন্বয়ে একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করবেন রাষ্ট্রপতি। সদস্যের মধ্যে থাকবেন- প্রধান বিচারপতি কর্তৃক মনোনীত আপিল বিভাগের একজন বিচারক, যিনি অনুসন্ধান কমিটির সভাপতিও হবেন, প্রধান বিচারপতি কর্তৃক মনোনীত হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারক, বাংলাদেশের মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান এবং রাষ্ট্রপতি কর্তৃক মনোনীত ২ (দুই) জন বিশিষ্ট নাগরিক, যাদের একজন হবেন নারী।

অনুসন্ধান কমিটি তার সভার কার্যপদ্ধতি নির্ধারণ করবে। তিন সদস্যের উপস্থিতিতে অনুসন্ধান কমিটির সভার কোরাম গঠিত হবে। সভায় উপস্থিত সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে এবং ভোটের সমতার ক্ষেত্রে সভায় সভাপতিত্বকারী সদস্যের দ্বিতীয় বা নির্ণায়ক ভোট দেওয়ার ক্ষমতা থাকবে। এই কমিটি গঠনের ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশ রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করবে।

অনুসন্ধান কমিটির দায়িত্ব ও কার্যাবলি

আইনের ৪ ধারায় কমিটির দায়িত্ব ও কার্যাবলি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, অনুসন্ধান কমিটি স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার নীতি অনুসরণ করে দায়িত্ব পালন করবে এবং এই আইনে বর্ণিত যোগ্যতা, অযোগ্যতা, অভিন্নতা, সততা ও সুনাম বিবেচনা করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগ দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগের উদ্দেশ্যে এই আইনে বর্ণিত যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের অনুসন্ধান করবে এবং এজন্য রাজনৈতিক দল এবং পেশাজীবী সংগঠনের কাছ থেকে নাম আহ্বান করতে পারবে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য প্রতিটি শূন্য পদের বিপরীতে রাষ্ট্রপতির কাছে দুইজন ব্যক্তির নাম সুপারিশ করবে কমিটি।

রাজনীতি

পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী পলাতক শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবন পরিদর্শন করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ‌

এসময় তিনি জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতি হিসেবে গণভবনে জাদুঘর নির্মাণ দ্রুত শেষ করার নির্দেশনা দেন।

একইসঙ্গে এখানে আয়নাঘরের একটি রেপ্লিকা নির্মাণ করতে বলেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, সোমবার (২৮ অক্টোবর) গণভবন পরিদর্শনে গিয়ে ড. ইউনূস এ নির্দেশনা দেন। পলাতক শেখ হাসিনা গত ১৫ বছর এই গণভবনে বসবাস করেছিলেন, বিপ্লবোত্তর বাংলাদেশে এটি দমনপীড়ন ও নৃশংস শাসনের প্রতীক হয়ে উঠেছে।

ধ্বংসাবশেষ পরিদর্শনকালে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জাদুঘরে শেখ হাসিনার দুঃশাসনের ইতিহাস এবং জনগণ যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিল, যখন তারা তাকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করেছিল সেই‌‌ স্মৃতি সংরক্ষণ করা উচিত।

৫ আগস্ট বিক্ষোভকারীরা গণভবনের দেয়াল ও কক্ষে গ্রাফিতি এঁকে এবং খুনি হাসিনাসহ নানা প্রতিবাদ নোট লিখে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ‌‌ প্রধান উপদেষ্টা এসব নোটও সংরক্ষণ করার নির্দেশ দেন‌।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আয়নাঘর, যেখানে হাসিনার কুখ্যাত নিরাপত্তা সংস্থাগুলো গোপনে শত শত ভিন্ন মতাবলম্বী ও বিরোধী কর্মীকে আটক রেখেছিল, তার একটি রেপ্লিকাও গণভবনের জাদুঘরে নির্মাণ করা উচিত।

তিনি বলেন, আয়নাঘর দর্শনার্থীদের গোপন বন্দিদের নির্যাতনের কথা মনে করিয়ে দেবে।

পরিদর্শনকালে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ছিলেন উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ।

ড. ইউনূস উপদেষ্টাদের জাদুঘর বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করতে বলেন। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে জাদুঘরের জন্য প্রস্তাব চূড়ান্ত করতেও নির্দেশনা দেন তিনি।

বিপ্লবের ছাত্রনেতা ও উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, ২০০৯ সাল থেকে শুরু হওয়া হাসিনা শাসনের অপকর্মগুলো জাদুঘরে যত্ন সহকারে সংরক্ষণ করা হবে।

তিনি বলেন, আমরা অন্য দেশের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করছি। কীভাবে তারা বিপ্লব ও বিদ্রোহের স্মরণে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করেছে তা জানার চেষ্টা করছি।

এসময় তার সঙ্গে ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম।

জাতীয়

বাতিল করা হচ্ছে সারা দেশে ৩০টি সাইলো নির্মাণ প্রকল্প। চার বছর পেরিয়ে গেলেও বাস্তবায়ন অগ্রগতি নেই বললেই চলে। এখন নতুন করে সাইলোর সংখ্যা কমিয়ে প্রকল্পটি সংশোধনীর প্রস্তাব করে খাদ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু এতে সায় না দিয়ে প্রকল্পটি বাতিল করার পক্ষে সুপারিশ দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। শিগগিরই এ বিষয়ে চিঠি দেওয়া হবে।

এক্ষেত্রে বর্তমান আর্থিক সংকট এবং প্রকল্পের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। সম্পূর্ণ অর্থই সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে খরচ করার কথা। ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য ছিল খাদ্য অধিদপ্তরের।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে খাদ্য অধিদপ্তরের পরিদর্শন, উন্নয়ন ও কারিগরি সেবা বিভাগের পরিচালক (চ.দা.) মো. তাজল ইসলাম সোমবার  বলেন, হ্যাঁ, প্রকল্পটি বাতিলের সুপারিশ দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। তবে কী কারণে এটি বাতিল করা হচ্ছে, সেটি বলতে পারছি না। কেননা আমি প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় উপস্থিত ছিলাম না। এছাড়া বাতিলের কোনো চিঠিপত্রও এখনো হাতে পাইনি। প্রকল্পটি বাতিল হচ্ছে, সেটি শুধু শুনেছি। এ বিষয়ে আর বিস্তারিত কিছু বলতে পারছি না।

সূত্র জানায়, ২০২১ সালের ৮ জুন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পায় ‘দেশের বিভিন্ন স্থানে ধান শুকানো, সংরক্ষণ ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক সুবিধাদিসহ আধুনিক ধানের সাইলো নির্মাণ’ (প্রথম ৩০টি সাইলো নির্মাণ পাইলট প্রকল্প) প্রকল্পটি। কিন্তু নানা কারণে এটি বাস্তবায়নে গতি ছিল না। প্রায় চার বছরের মধ্যে এর আওতায় খরচ হয়েছে ৯ কোটি টাকার মতো। এ অর্থে ডিজাইন, ড্রইংসহ অনান্য কার্যক্রম করা হয়েছে। পরে প্রকল্পটি সংশোধন করে সাইলো সংখ্যা কমিয়ে প্রস্তাব দেওয়া হয় পরিকল্পনা কমিশনে। প্রকল্পের মাধ্যমে একেকটি সাইলো নির্মাণে অনুমোদিত ব্যয় ছিল ৪৫ কোটি টাকা। কিন্তু সংশোধনী প্রস্তাবে প্রতিটি সাইলো নির্মাণের ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০০ কোটি টাকা।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত পিইসি সভায় বিষয়টি নজরে আসে পরিকল্পনা কমিশনের। এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। এরপর সভায় উপস্থিত সবার মতামতের ভিত্তিতে প্রকল্পটি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) প্রকল্পটির অনুকূলে বরাদ্দ রয়েছে ২৪ কোটি টাকা। এছাড়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ৪ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।

এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রধান মো. ছায়েদুজ্জামান বলেন, বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে প্রকল্প অনুমোদন ও সংশোধনের ক্ষেত্রে কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকার। আমরা বিচারবিশ্লেষণ করে দেখেছি প্রকল্পটির পেছনে এখন পর্যন্ত যে সমান্য অর্থ ব্যয় করা হয়েছে, এতে এ অবস্থায় এটি বাতিল করা হলে খুব বেশি ক্ষতি হবে না। এছাড়া যা খরচ হয়েছে, তা দিয়ে যে নকশা তৈরি বা অন্যান্য প্রাথমিক কার্যক্রম করা হয়েছে, সেগুলো পরবর্তী সময়ে কাজে লাগানো যাবে। তাই এটি বাতিল করে দেওয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, কীটনাশক ছাড়া দীর্ঘসময় ধান সংরক্ষণের প্রকল্প ছিল এটি। প্রকল্পটি গ্রহণের উদ্দেশ্য হচ্ছে, কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ধান ক্রয়ের মাধ্যমে উৎপাদিত ধানের ন্যায্যমূল্য দেওয়া, সরকারি খাদ্য ব্যবস্থাপনায় ১ দশমিক ৫০ লাখ টন ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি করা এবং সরকারি খাদ্য ব্যবস্থাপনায় আধুনিক প্রযুক্তির অভিযোজন, কীটনাশকবিহীন মজুতব্যবস্থার মাধ্যমে ২ থেকে ৩ বছর শস্যের পুষ্টিমান বজায় রাখা। আরও আছে, আর্দ্রতা ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মজুত শস্যের মান নিয়ন্ত্রণ করা এবং নিরাপদ ও পুষ্টিগুণসম্পন্ন খাদ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা।

প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রম ছিল, ধান ঝাড়াই, বাছাই, শুকানো, আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রকব্যবস্থা ও আনুষঙ্গিক সুবিধাদিসহ প্রতিটি ৫ হাজার টন ধারণক্ষমতার ৩০টি ধানের সাইলো নির্মাণ করা। এছাড়া সাইলোতে ট্রাক ও বাল্ক ওজন যন্ত্র, কনভেয়িং, বাকেট এলিভেটর সিস্টেম সংযোজন করা, ৩০টি সাইলোর সিভিল ফাউন্ডেশন, মাল্টিপারপাস ভবন নির্মাণ (প্রতিটি ১৮৫ দশমিক ৮৭ বর্গমিটার), ৩০টি বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন স্থাপন (মোট ৩০টি) এবং ৩০টি কেন্দ্রে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ (প্রতিটিতে ৩৫৫ দশমিক ০৮ মিটার) করা।

প্রকল্পটি গ্রহণের সময় সংশ্লিষ্টরা বলেছিলেন, এটি বাস্তবায়িত হলে দেশের বিভিন্ন স্থানে ৩০টি ধানের সাইলো নির্মাণ করা হবে। সাইলোগুলো নির্মাণ হলে ৩ বছরের মধ্যে ১ দশমিক ৫০ লাখ টন ধান সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে। এসব সাইলো নির্মাণ করা হলে সারা বছর কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ধান ক্রয়ের সুযোগ সৃষ্টি হবে। কৃষক সহজেই সরকারি খাদ্যগুদামে ধান বিক্রয় করতে উৎসাহিত হবেন। উৎপাদিত ধানের ন্যায্যমূল্য পাবেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

রাজনীতি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের পক্ষে ‘সাফাই’ গেয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সারজিস আলম।

তার দাবি, ঢাবির হলগুলোতে ছাত্রলীগের যে কমিটি হতো তাতে প্রায় ৮০ ভাগ শিক্ষার্থী থাকতেন বিভিন্ন সুবিধার জন্য। আর তারাই আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। শুধু তাই নয়, ছাত্রলীগের এসব পোস্টেড ও নন পোস্টেড নেতারা ১৫ জুলাই পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে না নিলে ৫ আগস্ট কখনো সম্ভব হতো কিনা সন্দেহ আছে৷

সোমবার রাতে ‘একটা বিষয়ে স্পষ্ট দ্বিমত প্রকাশ করতে চাই’ শীর্ষক শিরোনামে লেখা দীর্ঘ একটি স্ট্যাটাসে এমন মতামত প্রকাশ করেন সারজিস।

এই সমন্বয়ক এমন সময় এ মন্তব্য করলেন যার পাঁচদিন আগেই সন্ত্রাসী কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের এই ছাত্র সংগঠনের বিরুদ্ধে কোটা সংস্কার ও সরকার পতন আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতা হত্যা ও অসংখ্য মানুষের জীবন বিপন্ন করা এবং বিভিন্ন সময় সন্ত্রাসী কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে।

সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনের সময় গত ১৫ জুলাই প্রথম শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে ছাত্রলীগ। এতে তিন শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। তাদের মধ্যে অনেক ছাত্রীও ছিলেন। আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার একপর্যায়ে ধারালো অস্ত্র, রড ও লাঠিসোটা হাতে থাকা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর দখলে চলে যায় ক্যাম্পাস। সংঘর্ষের সময় অনেককেই আগ্নেয়াস্ত্র হাতে দেখা গেছে। হামলার প্রতিবাদে পরদিন সারা দেশে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে শুরু হলে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশের গুলিতে নিহত হন আবু সাঈদ। এরপর থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের হামলায় সহস্রাধিক ছাত্র-জনতা শহিদ হন।

স্ট্যাটাসে সারজিস আলম বলেন, বিষয়টা শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে৷ যেহেতু অন্য ক্ষেত্র নিয়ে আমার ক্লিয়ার আইডিয়া নেই। তাই সেসব রিলেট না করার জন্য আহবান করছি৷ এবার আরেক প্রসঙ্গে আসি৷ হলের যে ছাত্রলীগের কমিটি হতো এখানে প্রায় ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী কমিটিতে থাকত কিছু কারণে। যেমন- ভালো একটা রুম বা সিট যেন পাওয়া যায়, যেন চাকরি হওয়া পর্যন্ত হলে থাকা যায়, অন্যরা যেন তার ওপর অন্যায় না করে বা ট্যাগ না দেয়, বাকি ২০ শতাংশের মধ্যে অনেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করত, অনেকে ভিন্নমতের লোকদের ওপর অত্যাচার করত, অনেকে নেতা হওয়ার জন্য প্রার্থী হতো, অনেকে একটু ফাপর নিয়ে চলত৷

তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক এই প্রথম ধাপের ১৬-১৭ দিনের আন্দোলনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে ওই ৮০ ভাগ স্টুডেন্ট ৷ তারা যেমন পোস্টেড ছিল তেমনি হলের তুলনামূলক ক্লিন ইমেজ প্রভাব রাখা ফেস ছিল৷ তারা হল থেকে ব্যানার নিয়ে আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধভাবে নেমেছিল বলেই অন্য নন-পোস্টেড সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের সঙ্গে বের হয়ে আসতে পেরেছিল এবং এ কারণেই ক্যান্ডিডেটরা হল থেকে প্রোগ্রাম নিয়ে আন্দোলনে আসা আটকাতে পারেনি৷ এই পোস্টেড ছেলেরা হল থেকে এক হয়ে বের না হলে নন-পোস্টেডরাও এক হয়ে বের হয়ে আসার সাহস করতে পারত না৷ ওই গার্টস আর বোল্ডনেস এই ছেলেগুলাই শো করতে পারে৷ হলের পার্সপেক্টিভে সত্য এটাই যে, এই পোস্টেড তুলনামূলক ক্লিন ইমেজের হলের ছেলেরা আন্দোলনে এসেছিল বলেই ১ জুলাই থেকে ১৫ জুলাই সম্ভব হয়েছিল এবং আন্দোলনটাকে প্রাথমিকভাবে অন্য কোনো দলের বা সরকারবিরোধী ট্যাগ দেওয়া যায়নি ৷

১৫ জুলাই পর্যন্ত আন্দোলন না আসলে ৫ আগস্ট কখনো সম্ভব হতো কিনা সে বিষয়ে ঢের সন্দেহ আছে বলে মনে করেন সারজিস।

স্ট্যাটাসে নিজেই প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে জুলাই শহিদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, এই পোস্টেড ছেলেগুলোকে আমি ছাত্রলীগ ট্যাগ দিয়ে নিষিদ্ধের কাতারে ফেলব কিনা৷

উত্তরে সারজিস বলেন, ফেলব না৷কারণ হিসেবে তিনি বলেন, যারা ১ জুলাই থেকে আমাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নিজের জীবন বাজি রেখে রাজপথে ন্যায়ের পক্ষে নিজের অবস্থান জানান দিয়েছে, তারা তাদের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছে৷ সত্য এটাই যে, এই আন্দোলন সফল না হলে এই ছেলেগুলোকেই সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হতো৷ বিশ্বাসঘাতক ট্যাগ দেওয়া হতো৷

যে সিস্টেমের কারণে এদেরকে বাধ্যতামূলক ছাত্রলীগের রাজনীতি করতে হয়েছে, পোস্ট নিতে হয়েছে সেই সিস্টেমের জন্য দায়ী হলে আপনাদের সবাইকে দায়ী হতে হবে৷ কারণ আপনারা চুপ ছিলেন৷ হলে ও ক্যাম্পাসে দিনের পর দিন ওদের সঙ্গে হওয়া অন্যায়ে কেউ বাধা দেননি৷ ওরা যদি সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটির জন্য পোস্ট নেয় তবে আপনিও নিজের গা বাঁচাতে চুপ ছিলেন৷ বরং যখনই সুযোগ হয়েছে ওরা সাহস করে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে নেমে এসেছে৷ আর তখনো আপনি নিরব দর্শক হয়ে অনেক কিছু শুধু দেখে গেছেন৷

‘এই ৮০ ভাগ ছেলের কেউ যদি পূর্বে কোনো অন্যায়ের সঙ্গে জড়িত থাকে তবে তদন্ত সাপেক্ষে তার শাস্তি হোক, কেউ যদি পরে কোনো অন্যায়ে জড়িত হয় তবে তদন্ত সাপেক্ষে তারও শাস্তি হোক৷ কিন্তু যখন দরকার ছিল তখন রাজপথে নামালাম আর এখন ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের পোস্টেড দেখেই গণহারে গ্রেফতার হবে এটা কখনোই সমর্থন করি না৷ এটা হতে পারে না’৷

সারজিস বলেন, যারা সময়ের প্রয়োজনে ন্যায়ের পক্ষে ছাত্রলীগের সব বাধা উপেক্ষা করে আমার সঙ্গে জীবন বাজি রেখে রাজপথে নেমেছে তারা আমার ভাই৷ ২৪ এর অভ্যুত্থানের যোদ্ধা৷ আমি তাদের পক্ষে থাকব৷ সত্য সত্যই৷ কে কী বলল তাতে আমার কিছু যায় আসে না।

অর্থনীতি

দেশবাসীকে অনলাইনে আয়কর দিতে অনুপ্রাণিত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর শহরের সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সব তফসিলি ব্যাংক, মোবাইল ফোন অপারেটর এবং বেশকিছু বহুজাতিক কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য এভাবে আয়কর রিটার্ন দেয়া এখন থেকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। দেশের বাকি সবাইকে অনলাইনে ই-রিটার্ন ও আয়কর জমা দেয়ার জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে।

গতকাল সকালে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক ভিডিও বার্তায় তিনি এসব কথা বলেন। দেশবাসীর উদ্দেশ্যে ড. ইউনূস বলেন, আপনাদের দেয়া করই দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। এখন থেকে ব্যাংকে লাইন দিয়ে আয়কর জমা দেয়া বা আয়কর অফিসে গিয়ে রিটার্ন জমা দেয়ার ঝামেলা করতে হবে না। ঘরে বসেই আয়কর জমা দিয়ে রিটার্ন দাখিল করবেন এই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, কোন প্রতিষ্ঠান কত বেশি করদাতার আয়কর রিটার্ন অনলাইনে দিচ্ছেন, তার ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় পুরস্কার অর্জনের জন্য জেলায় জেলায়, শহরে শহরে প্রতিযোগিতা হোক। অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমা দেয়ার ক্ষেত্রে পরস্পরকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধবকে শিখিয়ে দিন কীভাবে ঘরে বসে অনলাইনে ই-রিটার্ন ও আয়কর জমা দিতে হয়। ড. ইউনূস বলেন, আমি তরুণ-তরুণীদের এ ব্যাপারে করদাতাদের সাহায্য করার জন্য অনুরোধ করছি। ভবিষ্যৎ উদ্যোক্তা হওয়ার প্রস্তুতি এখান থেকেই শুরু হতে পারে। ধীরে ধীরে অনলাইনে সব কর আদায়ের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। এ সময় তিনি সবার জন্য আয়কর দেয়ার অভিজ্ঞতা মসৃণ ও ঝঞ্ঝাটমুক্ত হওয়ার প্রত্যাশা করেন।
বাংলাদেশে আরও বেশি সৌদি বিনিয়োগ চান ড. ইউনূস: প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সৌদি আরবকে বাংলাদেশে আরও বেশি বিনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়ে একইসঙ্গে দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও জোরদার করতে জ্বালানি ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন।

গতকাল রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত ইসা ইউসুফ ইসা আল দুহাইলান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এলে তিনি এ আহ্বান জানান। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এখন আমরা এমন একটি সময় পার করছি, যখন সৌদি আরব আমাদেরকে সর্বোচ্চ সমর্থন দিতে পারে। প্রধান উপদেষ্টা সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ককে ‘অনন্য’ ও ‘আলাদা’ হিসেবে অভিহিত করেন। ড. ইউনূস সৌদি আরবকে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে তহবিল জমা রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, অর্থনৈতিক সহযোগিতার অংশ হিসেবে এ ধরনের উদ্যোগ তারল্য সহায়তা বৃদ্ধি করবে। এছাড়া এটি ‘অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য একটি চমৎকার অঙ্গীকার’ বলেও উল্লেখ করেন। তিনি সৌদি আরবকে সহজ শর্তে জ্বালানি ও পেট্রোলিয়াম পণ্য সরবরাহ, ব্যবসা-বাণিজ্য সমপ্রসারণ এবং বাংলাদেশি তরুণদের প্রশিক্ষণের জন্য বিনিয়োগের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, প্রশিক্ষণের জন্য বিনিয়োগ করলে ঢাকা থেকে সৌদি আরবে আরও বেশি দক্ষ ও প্রশিক্ষিত কর্মী পাঠানো সম্ভব হবে। রাষ্ট্রদূত আল দুহাইলান সৌদি আরবে বাংলাদেশি প্রবাসীদের অবদানের প্রশংসা করে বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশিদের দক্ষতা বাড়ানো গেলে তারা আরও বেশি বেতন পাবেন এবং দেশে অনেক বেশি রেমিট্যান্স পাঠাতে সক্ষম হবেন। বর্তমানে প্রায় ৩০ লাখ বাংলাদেশি সৌদি আরবে কর্মরত আছেন এবং প্রতি বছর তারা বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়ে থাকেন। রাষ্ট্রদূত আল দুহাইলান জানান, সৌদি আরব প্রতিদিন গড়ে ৫ হাজার ভিসা প্রদান করে, যা বাংলাদেশি অভিবাসী এবং মুসলিম হজযাত্রীদের জন্য বরাদ্দ রয়েছে।

গত ২০২৩ সালে প্রায় পাঁচ লাখ বাংলাদেশি সৌদি আরবে ওমরাহ্‌ পালন করেছেন, যা এর আগের বছরের তুলনায় ৩৭ শতাংশ বেশি। রাষ্ট্রদূত আল দুহাইলান জানান, তার দেশ বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগ করতে আগ্রহী এবং মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর এবং বিশেষ করে আকওয়া পাওয়ারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে প্রস্তাবিত সৌদি বিনিয়োগ সহজ করতে তিনি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সহযোগিতা চান। তিনি সৌদি আরবের বাদশাহ্‌ খাদেমুল হারামাইন সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ এবং যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টার কাছে সৌদি জাতীয় দিবস উপলক্ষে অভিনন্দন বার্তা পৌঁছে দেন। সৌদি রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমার সরকার বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা দেখতে চায় এবং ইনশাআল্লাহ্‌, আমরা বাংলাদেশ সরকারকে সমর্থন দিতে প্রস্তুত আছি। তিনি প্রধান উপদেষ্টাকে পবিত্র আল-কোরআন ও সৌদি আরবের জাতীয় পাখি বাজপাখির একটি রেপ্লিকা উপহার দেন।

জাতীয়

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বহুল আলোচিত-সমালোচিত ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) কারিগরি স্বত্ব এখনো বুঝে পায়নি নির্বাচন কমিশন (ইসি)। চলতি বছরের ৩০ জুন প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। ইভিএম সংগ্রহ চুক্তিতেও অস্পষ্টতা রয়েছে। এসব কারণে দেড় লাখ ইভিএম, এসব মেশিনের কারিগরি ডকুমেন্টস এবং প্রকল্পের আওতায় কেনা মালামাল বুঝে পেতে জটিলতার মধ্যে পড়েছে কমিশন সচিবালয়।

ইভিএম’র সফটওয়্যারের আনএনক্রিপটেড সোর্সকোড ও আর্কিটেকচার, ডাটাবেজ আর্কিটেকচার, ডকুমেন্টেশনসহ কারিগরি সবকিছুই বুঝিয়ে দিতে সম্প্রতি প্রকল্প ও সরবরাহকারী সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সম্প্রতি নির্দেশনা দিয়েছে ইসি। পাশাপাশি ওইসব মালামাল বুঝে নেওয়ার জন্য ব্যয় না বাড়িয়ে শুধু মেয়াদ বাড়াতে পরিকল্পনা কমিশনকে অনুরোধ জানিয়ে আসছে ইসি। অবশ্য প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা জানান, দেড় লাখ ইভিএম যেখানে যে অবস্থায় আছে সেই অবস্থায় বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছেন। তবে কারিগরি স্বত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন সচিব শফিউল আজিম বলেন, প্রকল্পের আওতায় কেনা দেড় লাখ ইভিএম, ইভিএমে ব্যবহার করা টেকনোলজি, গাড়িসহ অন্যান্য সবকিছুই নির্বাচন কমিশনের। প্রকল্পের মেয়াদ বাড়বে বাড়বে এমন আশায় এসব কিছুই বুঝে নেওয়া হয়নি। এখন আমরা এসব জিনিস বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করছি। তিনি বলেন, সমস্যা হচ্ছে টেকনোলজি ট্রান্সফার নিয়ে। ওই প্রযুক্তির সঙ্গে ইসির জনবল যুক্ত ছিল না। আমাদের দক্ষ জনবল নেই। আমাদের জনবলকে প্রশিক্ষণ দিতে যারা ইভিএম তৈরি করেছে তাদের দরকার হবে। এসব বিষয় সমাধানে আলোচনা চলছে।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৮ সালে তিন হাজার ৮২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘নির্বাচন ব্যবস্থায় তথ্যপ্রযুক্তি প্রয়োগের লক্ষ্যে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার’ শীর্ষক প্রকল্প অনুমোদন করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। ২০২৩ সালের জুনে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা এক বছর বাড়ানো হয়। বিএনপিসহ বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলের বিরোধিতার মধ্যেই ওই প্রকল্পের আওতায় সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে (ডিপিএম) দেড় লাখ ইভিএম কেনা হয়। ওই নির্বাচনে মাত্র ছয়টি আসনে এ মেশিনে ভোটগ্রহণ হয়। পরে এক হাজারের বেশি বিভিন্ন ধরনের নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হয়। নির্বাচন কমিশন ও প্রকল্পসংশ্লিষ্টদের দাবি, ইভিএমে কারচুপি হয়েছে এমন অনেক অভিযোগ আছে কিন্তু তা কেউ প্রমাণ করতে পারেনি। ইসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ইভিএমের কারিগরি স্বত্ব বুঝে নেওয়া এবং এ মেশিন দিয়ে নির্বাচনে পরিচালনা করতে পারবেন-নির্বাচন কমিশনের এমন পর্যাপ্ত দক্ষ কর্মকর্তা তৈরি হয়নি। প্রকল্পে ইসির যেসব কর্মকর্তা যুক্ত ছিলেন তারাও এদিকে মনোযোগ দেননি। সম্প্রতি ইভিএম কাস্টমাইজ করার জন্য নির্বাচন কমিশনের ৪০ জন কর্মকর্তাকে প্রকল্প থেকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ওই প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার পর ইভিএমে নির্বাচন না হওয়ায় তারা কতটা পারদর্শী হয়েছেন তা পরীক্ষা করা সম্ভব হয়নি। তারা আরও জানান, সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান সহযোগিতা না করলে এসব ইভিএম আর কোনো নির্বাচনে ব্যবহার করা সম্ভব হবে না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় কেনা দেড় লাখ ইভিএমের মধ্যে মাঠ পর্যায়ে ৬২ হাজার ৬৪৭টি, বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরিতে (বিএমটিএফ) ৮৬ হাজার ৫৭৮টি ও নির্বাচন ভবনে কাস্টমাইজেশন সেন্টারে ৬১৮টি রাখা হয়েছে। আর আগুনে পুড়ে নষ্ট হয়েছে ১৫৭টি। যদিও ইসির আঞ্চলিক কর্মকর্তাদের প্রতিবেদনে মাঠ পর্যায়ে ৬১ হাজার ২২০টি ইভিএম রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এই হিসাবে এক হাজার ৪২৭টি ইভিএমের খোঁজ নেই।

আরও জানা গেছে, ইভিএম’র কারিগরি স্বত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার বিষয়ে সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে জোরালো আলোচনা হয়। ওই বৈঠকে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বিএমটিএফ ও প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, ইভিএম’র আপডেট সফটওয়্যার ইসিকে দেওয়া হয়নি। ওই সফটওয়্যার সোর্সকোডসহ ইসিকে বুঝিয়ে দিতে হবে। ইভিএমে ইন্সটল করা সফটওয়্যার কখনোই হস্তান্তর করা হয়নি। সফটওয়্যারগুলো যাতে নতুন কোনো ডিভাইসে ইন্সটল করা যায়-সেই সক্ষমতা ইসির প্রতিনিধিদের বুঝিয়ে দিতে হবে, যাতে তারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে। বৈঠকে ইভিএম ইন্সটল থাকা সফটওয়্যার, কাস্টমাইজেশন সফটওয়্যার এবং এসডি কার্ড, অডিট কার্ড এবং পোলিং কার্ড প্রক্রিয়াকরণ ও মুদ্রণের জন্য সফটওয়্যারের সোর্সকোড বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে অনুরোধ জানানো হয়। একই সঙ্গে এসব সফটওয়্যার বুঝে নেওয়ার জন্য ইসির কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এ বিষয়ে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা বৈঠকে বলেন, সোর্সকোডের বিষয়ে কারিগরি দল ও নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এক্ষেত্রে চুক্তি এবং সোর্সকোড সংরক্ষণের ইসির কর্মকর্তাদের দক্ষতা নিয়েও আলোচনা হয়।

ওই বৈঠকে বিএমটিএফ’র কর্মকর্তারা ইভিএম ও প্রকল্পের মালামাল সংরক্ষণের জন্য ইসি ভাড়া পরিশোধ করছে না বলে অভিযোগ করেন। তারা ইসিকে বলেন, ইভিএম যেখানে যে অবস্থায় আছে সেই অবস্থায় হিসাব মিলিয়ে দেওয়া হবে। হার্ডওয়্যার হস্তান্তরের প্রক্রিয়া আলোচনা করে নির্ধারণ করা হবে। এসডি কার্ড, অডিট কার্ড এবং পোলিং কার্ড প্রক্রিয়াকরণ ও মুদ্রণের বিষয়টি আলোচনা করে সমাধান করা হবে বলে আশ্বস্ত করেন।

জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক কর্নেল সৈয়দ রাকিবুল হাসান বলেন, সরবরাহের পরপরই ইসির কমিটির দেড় লাখ ইভিএম রিসিভ করেছেন। প্রকল্পের শেষ পর্যায়ে এসে এখন ইসির মাঠ কার্যালয়, নির্বাচন ভবনে থাকা কাস্টমাইজেশন সেন্টার ও বিএমটিএফে থাকা ইভিএম এবং র‌্যাক ইসিকে বুঝিয়ে দেওয়া হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসির একাধিক কর্মকর্তা বলেন, গত মার্চ-এপ্রিলে মাত্র ৪৫ হাজার ইভিএম সচল থাকার কথা প্রকল্প থেকে জানানো হয়। এখন কতগুলো ইভিএম সচল, কতগুলো পুরোপুরি অচল এবং কতগুলো মেরামতযোগ্য তার তালিকা চাওয়া হয়েছে। এজন্য একটি সফটওয়্যারও তৈরি করা হয়েছে। তবে সেখানে সব ইভিএম’র বর্তমান অবস্থার তথ্য নেই। তারা বলেন, প্রকল্পে ইভিএম সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বিপাকে আছে ইসি সচিবালয়। ইসির সর্বশেষ সমন্বয় সভায় ইসি সচিব শফিউল আজিম ১০ আঞ্চলিক কর্মকর্তাকে ওয়্যারহাউজের জন্য জমি খোঁজার পরামর্শ দেন। সেখানে ইভিএম ছাড়াও নির্বাচনি সামগ্রী মজুত করা হবে বলে ওই বৈঠকে জানানো হয়।