খেলাধুলা

টানা ব্যাটিং ব্যর্থতার খেসারত দিতে হচ্ছে দলকে, চট্টগ্রাম টেস্টে রানে ফিরতে মরিয়া মুশফিক-শান্তরা।

টানা ব্যাটিং ব্যর্থতার খেসারত দিতে হচ্ছে দলকে, চট্টগ্রাম টেস্টে রানে ফিরতে মরিয়া মুশফিক-শান্তরা।

থ্রো-ডাউনে একটি ডেলিভারি ঠিকঠাক খেলতে না পেরে একটু জোরেই চিৎকার করে উঠলেন মুশফিকুর রহিম। তার হতাশার আওয়াজ শুনে ঘুরে তাকালেন মাঠের আরেক প্রান্তে বসে থাকা এইডেন মার্করাম। মুশফিককে দেখে হয়তো কিছুটা অবাকও হলেন দক্ষিণ আফ্রিকার ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক। বাংলাদেশ দলের অনুশীলন শুরু হতে যে তখনও বাকি ঘণ্টা দুইয়ের বেশি সময়!

মার্করাম চমক গেলেও বাংলাদেশের ক্রিকেটে এটি নতুন কিছু নয়। দলীয় অনুশীলনের আগে নিয়মিতই আলাদা অনুশীলন করে নেন মুশফিক। রোববারও ব্যতিক্রম নয়। দলের অনেক আগেই ব্যক্তিগত অনুশীলনে জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে চলে আসেন তিনি। পরে দলীয় অনুশীলনেও যথারীতি ঝালিয়ে নেন নিজেকে। মিরপুর টেস্টে দুই ইনিংসেই দৃষ্টিকটূভাবে বোল্ড হয়েছেন বাংলাদেশের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। চট্টগ্রামে তার ব্যাটে আবার ভরসা খুঁজবে দল।

শুধু মুশফিকই অবশ্য নয়, সিরিজ হার এড়াতে হলে চট্টগ্রাম টেস্টে দারুণ কিছু করতে হবে পুরো দলকেই। মিরপুরে মূলত ব্যাটিং ব্যর্থতায় হেরেছে বাংলাদেশ। পরের টেস্টে তাই ব্যাটসম্যানদের ভালো করার দায়টা বেশি। চট্টগ্রামে আসার পর দলের প্রথম অনুশীলনে দুর্দশা কাটানোর চেষ্টার ছাপই যেন পড়ল বেশি। অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তকে দেখা যায় ব্যাটিং কোচ ডেভিড হেম্পের সঙ্গে নিবিড় আলোচনা করতে।

দলের অনুশীলন দুপুরে থাকলেও বেলা ১১টাতেই মাঠে চলে আসেন মুশফিক। টিম বয় ও নেট বোলার নিয়ে শুরু করেন নেট সেশন। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে চলে তার ব্যক্তিগত অনুশীলন পর্ব।

পাকিস্তান সফরের প্রথম টেস্টে ১৯১ রানের ইনিংসের পর থেকেই হাসছে না মুশফিকের ব্যাট। সবশেষ চার ম্যাচের আট ইনিংসে চল্লিশ ছুঁতে পারেননি ৩৭ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান। সীমানা আরেকটু বাড়িয়ে ১৫ ম্যাচ বিবেচনায় নিলে, ওই ১৯১ ছাড়া তার পঞ্চাশছোঁয়া ইনিংস আছে আর একটি। সবশেষ চার ইনিংসেই তিনি ফিরেছেন বোল্ড হয়ে।

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ ড্র করার অভিযানে জিততে হলে ব্যাটিংয়ে ভালো করার বিকল্প নেই বাংলাদেশের। সেই লক্ষ্য পূরণে বড় দায়িত্ব মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান মুশফিকের। তাই দুঃসময়ের আঁধার পেরিয়ে আলোর খোঁজই যেন করছেন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান।

একইভাবে ছন্দহীনতায় ভুগছেন অধিনায়ক শান্তও। সবশেষ ১৫ ইনিংসে তিনি চল্লিশ ছুঁতে পেরেছেন মোটে একবার। স্পিনার হোক বা পেসার, বাজে শটে আউট হচ্ছেন প্রায় নিয়মিত।

শান্ত-মুশফিকসহ ওপরের সারির ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার প্রভাব পড়ছে দলের সামগ্রিক ব্যাটিংয়ে। চলতি বছর সাত টেস্টে মাত্র তিনবার তিনশ ছুঁয়েছে বাংলাদেশের স্কোর। ঘরের মাঠের অবস্থা আরও নাজুক। সবশেষ আট ইনিংসে দুইশ রান হয়েছে মোটে দুইবার।

ঘুরে দাঁড়ানোর মরিয়া চেষ্টায় অনুশীলনে ভিন্ন নানা কিছু করতে দেখা যায় শান্তকে। তার ব্যাটিংয়ের প্রায় পুরোটা সময় সামনে থেকে দেখেন হেম্প। শুরুতে স্বাভাবিকের চেয়ে ছোট মাপের ব্যাট দিয়ে স্পিনের বিপক্ষে ব্যাটিং করতে দেখা যায় বাংলাদেশ অধিনায়ককে। এ সময় কাছে দাঁড়িয়ে তাকে বিভিন্ন পরামর্শ দেন ব্যাটিং কোচ।

নেট বোলারের একটি ডেলিভারি ঠিকঠাক খেলতে না পেরে নিজের ওপর বিরক্ত হন শান্ত। সহকারী কোচ নিক পোথাস তখন এগিয়ে এসে তাকে কিছু একটা বোঝানোর চেষ্টা করেন। সেই পরামর্শ যে কাজে লেগেছে, তা বোঝা যায় পরের ডেলিভারিগুলোতে শান্তর ব্যাটিংয়ের নিয়ন্ত্রণ বাড়তে দেখে।

এরপর হাসান মাহমুদ, সৈয়দ খালেদ আহমেদ, নাহিদ রানাদের পেস বোলিং বেশ ভালোভাবে সামলান শান্ত। এ সময় অন্য প্রান্তে দাঁড়ান মেহেদী হাসান মিরাজ। কয়েকটি ডেলিভারি পরপর স্ট্রাইক পরিবর্তন করে ব্যাটিং করতে থাকেন তারা দুজন।

সবশেষে স্পিনারদের নেটে গিয়ে বেশ কিছু বড় শটও খেলেন শান্ত। তার পাশের নেটে তখন নাহিদের একটি ডেলিভারি জাকের আলির হেলমেটে লাগলে মুহূর্তের জন্য শঙ্কা জাগে। তবে কিছুক্ষণ পরই আবার সাবলীলভাবে ব্যাটিং করতে থাকেন মিরপুরে টেস্ট অভিষেকে ফিফটি করা ব্যাটসম্যান।

ব্যাটিং অনুশীলন শেষ করে শুরু হয় প্রধান কোচ ফিল সিমন্সের সঙ্গে শান্তর দীর্ঘ আলোচনা। তখন পর্যন্ত চট দিয়ে ঢাকা ছিল উইকেট। কোচ ও অধিনায়ক সেদিকে যেতেই তুলে দেওয়া হয় কাভার। হাঁটু গেড়ে হাত দিয়ে উইকেট ধরে বোঝার চেষ্টা করেন শান্ত। মাঠের কিউরেটর জাহিদ রেজা বাবুও তখন যোগ দেন তাদের আলোচনায়।

দীর্ঘ ব্যাটিং সেশন শেষ করে ঘর্মাক্ত শরীর নিয়েই সেন্টার উইকেটে প্রধান কোচ, অধিনায়ক ও কিউরেটরের সঙ্গে যোগ দেন মুশফিক। চার জন মিলে প্রায় ২০ মিনিট ধরে উইকেটের পাশে চলে আলোচনা। পরে মুশফিক ও জাহিদ রেজা সরে এলেও শান্ত ও সিমন্সের কথোপকথন চলছিল তখনও।

সেন্টার উইকেটে যখন এই দীর্ঘ আলোচনা চলমান, তখন ড্রেসিং রুমের সামনে নিরাপত্তা মহড়া পরিচালনা করছিল চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ। সংবাদমাধ্যমের নজর তখন সেদিকেই ছিল। সেন্টার উইকেট থেকে সেদিকে এসে মজার চলেই জাহিদ রেজা বলেন, ‘ভালোই হলো, উইকেট নিয়ে আমাদের আলোচনা কেউ খেয়াল করেনি!’

সঙ্গত কারণেই উইকেট নিয়ে কোনো ধরনের তথ্য দিতে রাজি হননি বিসিবির অভিজ্ঞ কিউরেটর। তবে পরে বিসিবির ভিডিওবার্তায় অফ স্পিনার নাঈম হাসান বলেন, স্পিন সহায়ক উইকেট আশা করছেন তারা।

“উইকেট আমি দেখিনি, যদি স্পিন সহায়ক হয়, তাহলে তো টার্ন হবে। আমাদের এই মাঠে বল একটু আস্তে ঘোরে, যেটা আমাদের জন্য ভালো। কারণ ওরা তো মিরপুরে অনেক আস্তে বোলিং করেছে, আমাদের স্পিনাররা তো ৯০-এর ওপর (কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা) বোলিং করে। ওই হিসেবে আমাদের দিক দিয়ে ভালো।”

স্পিন সহায়ক উইকেট হলে কেশাভ মহারাজ, ডেন পিটদের সামলানোর চ্যালেঞ্জে পড়তে হবে ব্যাটসম্যানদের। বিকেলের আলো যখন নিভু নিভু, তখন যেন সেই প্রস্তুতিই নেওয়ার চেষ্টা করেন মুমিনুল হক। বাকিরা ড্রেসিং রুমে চলে যাওয়ার পর এক টিম বয়কে নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ সুইপ আর রিভার্স সুইপের অনুশীলন করেন অভিজ্ঞ বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।

সব মিলিয়ে চট্টগ্রামে প্রথম দিনের অনুশীলনে ব্যাটিংয়ে বাড়তি মনোযোগীই দেখা যায় পুরো দলকে। এমনকি লেজের দিকে ব্যাটসম্যানরাও প্রত্যেকে প্রায় ত্রিশ মিনিট করে ব্যাটিং করেন নেটে।

টেস্ট শুরুর আগে আরও একদিন নিজেদের শাণিয়ে নেওয়ার সুযোগ পাবেন ব্যাটসম্যানরা। এরপর মঙ্গলবার শুরু মূল পরীক্ষা। টেস্ট জিততে হলে ২০টি উইকেট নিতে হবে, এটিই সবসময়ের সত্যি। তবে কিছু রানও তো অন্তত করতে হবে!

রাজনীতি

জামায়াতের ওপর যে জুলুম করা হয়েছে তা যেন আওয়ামী লীগের ওপর করা না হয়’ এমন মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যেই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তার সুষ্ঠু বিচার হতে হবে। ন্যায় বিচারের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে তাদের পাওনা বুঝিয়ে দিতে হবে।

রোববার দুপুরে রাজধানীর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আন্দোলনে আহত ও নিহত পরিবারের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকা মহানগর উত্তর জামায়াতের উদ্যোগে মতবিনিময় সভা, প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। এতে জামায়াত ছাড়াও বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও গণঅভু্যত্থানে নিহত-আহতদের স্বজনরা অংশ নেন।

শফিকুর রহমান বলেন, জুলাই-আগস্টের শহিদদের স্বপ্নের দুর্নীতিমুক্ত মানবিক বাংলাদেশ গড়তে চায় জামায়াত। তিনি বলেন, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ফ্যাসিবাদের হত্যাকাণ্ডের ইতিহাস পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। জাতিকে জানাতে হবে। শহিদ পরিবারের সদস্যদের যোগ্যতা অনুসারে অন্তত একজনকে চাকরি দিয়ে কৃতজ্ঞতা জানাতে হবে। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে যারা লড়াই করেছেন তাদের চাকরিতে অগ্রাধিকার দিতে হবে। ফ্যাসিবাদ বিরোধী দলগুলোকে এসব পরিবারের পাশে দঁাড়ানোর আহ্বানও জানান তিনি।

জামায়াত আমির বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ বলেছিল ক্ষমতা ছাড়ার পর ৫ লাখ আওয়ামী লীগ কর্মীকে হত্যা করা হবে। অভু্যত্থানের পর ৫০০ কিংবা ৫ জনকে হত্যা করা হয়নি। তারা দুর্নীতি করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে। পৃথিবীতে সব দেশেই বাংলাদেশিরা আছেন। যেখানেই যান আপনাদের (আ.লীগ নেতা) ধরে ফেরত পাঠাবে তারা। যেখানেই যাবেন সেখানেই ধরা হবে।

জামায়াতের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, কেউ কেউ আওয়ামী লীগকে ঐতিহ্যবাহী দল বলে দাবি করেন। কিন্তু তাদের ঐতিহ্য হলো দেশে একদলীয় বাকশালী শাসন প্রতিষ্ঠা, হত্যা, সন্ত্রাস-নৈরাজ্য ও ভোট চুরি। তারা ২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠার তাণ্ডবের মাধ্যমে রাজপথে পিটিয়ে মানুষ হত্যা করেছিল। তাই তাদের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, গণহত্যার নেত্রী ও তাদের দোসররা ভারতে পালিয়ে গেছেন। তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাসি্ত নিশ্চিত করতে হবে। শুধু ব্যক্তির বিচার করলেই চলবে না বরং দল হিসাবে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনকে অবিলম্বে নিষদ্ধি করতে হবে।

সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আমাদের বিপ্লবের শহিদদের নাম ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তারা দুনিয়া ও আখেরাতে পুরস্কৃত হবেন।

সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর শেখ হাসিনার নির্দেশে নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড চালানো হয়। তাই তাদের বিচার নিশ্চিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাসি্ত দিতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা মহানগর উত্তর জামায়াত আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিস্টরা ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা ও অসংখ্য আলেম-উলামাদের হত্যা এবং আয়নাঘরের মাধ্যমে জাতীয় নেতাদের নির্যাতন চালিয়েছে।

শহীদ ফারহানুল ইসলামের বাবা বলেন, ফারহান ফাইয়াজ আমার একমাত্র ছেলে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দাবি∏যারা হত্যাকাণ্ড চালিয়েছেন তাদের দ্রুত বাংলার মাটিতে বিচারের মুখোমুখি করা হোক।

ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিমের পরিচালনায় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল, ১২ দলীয় জোট প্রধান ও জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমদ, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আব্দুল কাদের, এনপিপি চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক এসএম ফরহাদ, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, জাতীয় গণতানি্ত্রক দল জাগপার মুখপাত্র রাশেদ প্রধান, গণঅধিকার পরিষদ একাংশের সদস্য সচিব ফারুক হাসান, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন। উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাছুম, এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ, মাওলানা আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় প্রচার সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ প্রমুখ।

লগি-বৈঠার তাণ্ডবের প্রতিবাদে আলোচনা সভা আজ : এদিকে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠার তাণ্ডবের প্রতিবাদে আলোচনা সভা করবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াতের উদ্যোগে আজ সকালে রাজধানীর রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে এ সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য দেবেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।

জাতীয়

নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সূর্যসেন হল শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মোয়াজ্জেম এইচ রাকিব সরকার ও শামসুন্নাহার হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি খাদিজা আক্তার ঊর্মিকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

রোববার (২৭ অক্টোবর) রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান।

তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা করেছিলেন মোয়াজ্জেম এইচ রাকিব সরকার। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

তবে কোন মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে তা জানাননি ডিএমপির এ কর্মকর্তা।

মুহাম্মদ তালেবুর রহমান আরও বলেন, পৃথক অভিযানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শামসুন্নাহার হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি খাদিজা আক্তার ঊর্মিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি শাহবাগ থানায় দায়ের করা এজাহারনামীয় আসামি।

রাজনীতি

আগামী ১ নভেম্বর থেকে পলিথিন শপিং ব্যাগের ব্যবহার বন্ধে কঠোর মনিটরিং চালু করা হবে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। পাশাপাশি পলিথিন উৎপাদনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে বলেও তিনি জানান।

রিজওয়ানা বলেন, শুধুমাত্র পলিথিনের শপিং ব্যাগ বন্ধ করা হচ্ছে। কোনো সুপারশপ পলিথিন শপিং ব্যাগ সরবরাহ করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রোববার (২৭ অক্টোবর) সচিবালয়ের পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে একটি বিশেষ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।

সভায় পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন, ২০১০ বাস্তবায়ন ও পলিথিনের পরিবর্তে পাটের ব্যাগ ব্যবহারে জনগণকে উৎসাহিত করার বিষয়ে আলোচনা হয়।

উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, মানুষ যদি পলিথিন ব্যবহার বন্ধ করে, তাহলে উৎপাদনও বন্ধ হবে। এজন্য জনগণকে সচেতন করতে হবে। কেউ ইচ্ছে করে গাফিলতি করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পলিথিন ব্যাগের ক্ষতিকর প্রভাব বুঝে মানুষ যেন এটি থেকে সরে আসে, সে উদ্যোগ নেওয়া হবে।

সভায় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় ও নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, পাটের ব্যাগের ব্যবহার বাড়াতে হবে। পর্যাপ্ত পাটের ব্যাগের সরবরাহ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। প্রয়োজন হলে কাঁচা পাট রপ্তানি বন্ধ করা হবে।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আব্দুর রউফ, পাট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জিনাত আরা ও বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিরা।

আন্তর্জাতিক

ইসরাইলি সেনাবাহিনীর বিভিন্ন স্থাপনা এবং বসতিগুলোতে ব্যাপক রকেট হামলা চালিয়েছে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। যার ফলে ইসরাইলি বাহিনীর বেশ কয়েকজন সেনা হতাহত হয়েছেন।

লেবানিজ সংবাদ মাধ্যম আল আহদের প্রতিবেদন অনুযায়ী, রোববার ইসরাইলের গ্যালিলি অঞ্চলে ৭৫টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়। যার ফলে সেখানকার বেশ কিছু ভবন ও গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

হিজবুল্লাহ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা হাইফার উত্তরের জভুলুন সামরিক শিল্প ঘাঁটিতে প্রচুর সংখ্যক রকেট হামলা চালিয়েছে। এছাড়াও আল-মারজ, আল-মালকিয়া এবং কারমিয়েল এলাকায় ইসরাইলি ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এতে বেশ কয়েকজন সেনাকে হতাহত হয়েছে।

এছাড়াও আল-মানারা এলাকায় একটি ড্রোন ব্যবহার করে ইসরাইলি সেনাদের ওপর সফল হামলা চালানো হয়েছে বলা জানিয়েছে হিজবুল্লাহ।

গোষ্ঠীটির যোদ্ধারা উত্তর-পূর্ব হাউলা এলাকায় ইসরাইলি বাহিনীর ওপর গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়, যেখানে বেশ কয়েকজন সেনা হতাহত হয়।

হিজবুল্লাহ আরও একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে, যেখানে শোমেরা এলাকায় ইসরাইলি বাহিনীর ওপর হামলার দৃশ্য দেখানো হয়েছে।

আরেক ভিডিওতে হাইফার উত্তরে ইয়েসুদ হামায়ালা এলাকায়ও বড় ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার দৃশ্যও দেখানো হয়।

গত ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে ইসরাইল লেবাননের বিভিন্ন অঞ্চল বিশেষ করে রাজধানী বৈরুতে হামলা বৃদ্ধি করেছে। এর প্রতিশোধ হিসেবে হিজবুল্লাহ উত্তরাঞ্চলের ইসরাইলি অবস্থানগুলোতে কয়েক শতাধিক রকেট ছুঁড়েছে এবং গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানগুলোতে হামলা চালিয়েছে। সূত্র: ইরনা

রাজনীতি

আল্লামা সাঈদী ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শামীম সাঈদী বলেছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় টিকে থাকার লিপ্সায় রক্তাক্ত ২৮ অক্টোবরের সৃষ্টি করেছিল। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগের লগি-বৈঠার তাণ্ডবের প্রতিশোধ নিতেই ৫ আগস্টের সৃষ্টি হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার যে গুম খুন লুণ্ঠন অত্যাচার নির্যাতন করেছে তার প্রতিবাদেই ৫ আগস্টের সৃষ্টি হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ একাত্তরের স্বাধীনতায় ঠিকই নেতৃত্ব দিয়েছিল কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর তাদের খুনের নেশা চেপে বসে। তাদের সেই পৈশাচিক তাণ্ডবের কারণেই তাদের পতন হয়েছে। জনগণের আক্রোশ থেকে বাঁচতে খুনি হাসিনা দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে।

রোববার বিকালে ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার সরকারি মহেন্দ্র নারায়ণ একাডেমির (মডেল স্কুল) মাঠে এক সমাবেশে এসব কথা বলেন সাঈদীপুত্র।

২০০৬ সালের রক্তাক্ত ২৮ অক্টোবর স্মরণে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নগরকান্দা উপজেলা শাখা এ সমাবেশের আয়োজন করে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে শামীম সাঈদী বলেন, আওয়ামী লীগের খুনিরা বিনা অপরাধে যাদের ফাঁসি দিয়েছে, ক্ষমতায় টিকে থাকার লিপ্সায় যাদের হত্যা করেছে, তাদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না। এই বাংলার মাটিতে প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের বিচার করা হবে।

তিনি আরও বলেন, সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে আগামীতে আপনারা তাদেরকেই ভোট দেবেন যারা ন্যায় ও কুরআনের পক্ষে। আপনারা তাদের পক্ষে থাকবেন যারা ইনসাফভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চায়। আগামীতে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে জামায়াতে ইসলামীর পতাকা তলে আসার আহ্বান জানাই। আমরা আজীবন আপনাদের পাশে থাকতে চাই। একটি সুন্দর দেশ গড়ার জন্য আপনাদেরও এগিয়ে আসতে হবে।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নগরকান্দা উপজেলা শাখার আমির মাওলানা মো. সোহরাব হোসেনের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দলটির ফরিদপুর জেলা শাখার আমির মাওলানা মুহাম্মদ বদরুদ্দীন, বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ ও ইসলামি আলোচক অধ্যাপক মাওলানা মো. হাবিবুর রহমান এবং মো. আবু হারিচ মোল্যা, দলটির নগরকান্দা উপজেলা শাখার সহ-সাধারণ সম্পাদক এনায়েত হোসেন, আইনবিষয়ক সম্পাদক মো. সরোয়ার হোসেন প্রমুখ।

আন্তর্জাতিক

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও আসন্ন নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্য থেকেই পৃথিবী ধ্বংস হবে বলে বিশ্বাস করেন তিনি। এই অঞ্চল সম্পর্কে নবীরা এমন বার্তা দিয়ে গেছেন বলে জানান তিনি।

সম্প্রতি জনপ্রিয় মার্কিন পডকাস্টার জো রোগানকে দীর্ঘ এক সাক্ষাৎকার দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রায় তিন ঘণ্টা দীর্ঘ সেই সাক্ষাৎকারের এক পর্যায়ে রোগানকে উদ্দেশ্য করে ট্রাম্প বলেন, ‘আপনি জানেন, নবীরা বলে গেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে পৃথিবী শেষ হয়ে যাবে। আপনি এটা জানেন, তাই না।’

‘পাওয়ারফুল জেআরই’ নামের ইউটিউব চ্যানেলে পডকাস্টটি প্রকাশের পর হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন দর্শকরা। ভিডিওটি একদিনের মধ্যেই ২ কোটি ৭০ লাখ বারের বেশি দেখা হয়েছে।

দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইসরাইলের সম্পর্ক ও মধ্যপ্রাচ্য সংকট নিয়ে কথা বলেন ট্রাম্প। এসময় তিনি বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং আসন্ন নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ও বর্তমান ভাইস-প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের সমালোচনা করেন তিনি।

বাইডেনের সমালোচনা করে ট্রাম্প বলেন, ‘বাইডেন ইসরাইলকে কিছু করতে নিষেধ করেছিল।’ গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার পর ইসরাইল যেন গাজায় পাল্টা হামলা না করে সে ব্যাপারে বাইডেন ইসরাইলে সতর্ক করেছেন জানিয়ে ওই মন্তব্য করেন ট্রাম্প।

তবে বাইডেনের কথায় কর্ণপাত না করায় ইসরায়েলের প্রশংসা করেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়, যদি তারা (ইসরায়েল) বাইডেনের কথা শুনতো, তাহলে এখনও তারা মাথার ওপর বোমা পড়ার জন্য অপেক্ষা করতো।’

জাতীয়

বহুল কাঙ্ক্ষিত বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের স্বাক্ষরের পর রোববার প্রস্তাবটি আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে- মামলার সংখ্যা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম, অধস্তন আদালতের বিচারকের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ নানা কারণে সুপ্রিমকোর্ট রেজিস্ট্রির কর্মপরিধি ব্যাপক হারে বেড়েছে। এসব বিবেচনায় বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় স্থাপন জরুরি। শুধু পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই অধস্তন আদালতের বিচারকগণের শৃঙ্খলা, বদলি, পদোন্নতি, ছুটি ও অন্যান্য বিষয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে বিচার বিভাগের প্রকৃত স্বাধীনতা নিশ্চিত করা সম্ভব।

বিচার বিভাগ পৃথককরণসংক্রান্ত মাসদার হোসেন মামলার রায়ের আংশিক বাস্তবায়ন করা হয় ২০০৭ সালে। ওই বছর সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এক অধ্যাদেশ জারি করে নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথক করা হয়। কিন্তু গত ১৭ বছরেও বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। দায়িত্ব নেওয়ার পরই প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কার্যকর ভূমিকা নেন। সে লক্ষ্যে ২১ সেপ্টেম্বর সুপ্রিমকোর্টের মূল ভবনের ইনার গার্ডেনে অধস্তন আদালতের বিচারকদের উদ্দেশে অভিভাষণ দেন। সেখানে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, সুপ্রিমকোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতি, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান, অ্যাটর্নি-জেনারেল মো. আসাদুজ্জামানসহ সুপ্রিমকোর্ট বারের সভাপতি ও সেক্রেটারি উপস্থিত ছিলেন।

প্রধান বিচারপতি তার অভিভাষণে দেশের বিচার বিভাগের জন্য রোডম্যাপ তুলে ধরেন, যাতে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, স্বতন্ত্রীকরণ ও প্রাতিষ্ঠানিক পৃথকীকরণের বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্ব পায়। অভিভাষণে তিনি উল্লে­খ করেছিলেন যে, বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় স্থাপনের জন্য তিনি শিগগিরই পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। তারই ধারাবাহিকতায় সুপ্রিমকোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতিদের মতামত গ্রহণপূর্বক বিচার বিভাগের জন্য একটি পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় গঠন সংক্রান্ত প্রস্তাবনা রোববার আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।

প্রস্তাবে যা বলা হয়েছে : আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় রাষ্ট্রের তিনটি বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার পৃথকীকরণ কার্যকররূপে বাস্তবায়িত না হলে রাষ্ট্রে সংবিধানের সুসংহত চর্চা বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়। এর ফলে রাষ্ট্রের বিভিন্ন বিভাগগুলোর মধ্যে ক্ষমতার শুদ্ধ ভারসাম্য বজায় রাখার যে প্রয়োজনীয়তা রয়েছে তা একদিকে যেমন ব্যাহত হয়, তেমনি সামগ্রিকভাবে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়ে।

বাংলাদেশ একটি সাংবিধানিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হওয়া সত্ত্বেও আমাদের দেশে ক্ষমতার পৃথকীকরণ নীতি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিশেষ করে, দীর্ঘদিন ধরে বিচার বিভাগের ওপর নির্বাহী বিভাগের কর্তৃত্ব প্রয়োগের প্রবণতার যে চর্চা অব্যাহত রয়েছে তা রোধ করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা রয়েছে। স্বীকার করতে দ্বিধা নেই যে, এর ফলে স্বাধীনতার পর হতে অদ্যাবধি আমাদের দেশে আইনের শাসন ও সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা চর্চার সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশ ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অথচ, আমাদের সংবিধানের ২২ অনুচ্ছেদে নির্বাহী বিভাগ হতে বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ নিশ্চিতকরণকে রাষ্ট্র পরিচালনার অন্যতম মূলনীতি হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে।

একথা অনস্বীকার্য যে, এমন একটি প্রেক্ষাপট সত্ত্বেও বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের ৭৯/১৯৯৯ নম্বর সিভিল আপিল মামলার রায়ে (যা মাসদার হোসেন মামলা নামেই অধিক সমাদৃত) নির্বাহী বিভাগ হতে বিচার বিভাগের পৃথকীকরণের পূর্ণ রূপরেখা তুলে ধরার মাধ্যমে আমাদের দেশে ক্ষমতার পৃথকীকরণ নীতির বাস্তবায়নের পথকে সুগম করে দিয়েছে।

ওই রায়ে ক্ষমতার পৃথকীকরণের যে রূপরেখা তুলে ধরা হয়েছে তার অন্যতম মৌলিক ভিত্তি হলো দেশের বিচার বিভাগের জন্য একটি পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠা। বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের সর্বোত্তম কার্যকর উপায় স্বাধীন বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠা। এ কারণে ওই মামলার রায়ে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত বর্তমানে প্রচলিত দ্বৈত-শাসন কাঠামো তথা অধস্তন আদালতের বিচারকদের নিয়োগ, বদলি, শৃঙ্খলা প্রভৃতি বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের যে যৌথ এখতিয়ার রয়েছে তা সম্পূর্ণরূপে বিলোপ করে বিচার বিভাগের জন্য একটি পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠাকে ক্ষমতার পৃথকীকরণের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হিসাবে বিবেচনা করেছে।
বিগত বছরগুলোতে রাজনৈতিক সরকারের অনীহার কারণে বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ সম্ভবপর হয়নি। জুলাই-আগস্টে সংঘটিত ছাত্র-জনতার অবিস্মরণীয় গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বর্তমান সময় হচ্ছে মাসদার হোসেন মামলার রায়ের বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিচার বিভাগের প্রকৃত স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণের শ্রেষ্ঠ সময়। এ প্রচেষ্টার প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে নির্বাহী বিভাগ হতে সম্পূর্ণরূপে স্বাধীন একটি পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করা। কেননা, শুধু পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই আমাদের দেশে দক্ষ, নিরপেক্ষ ও মানসম্পন্ন বিচার কাজের মাধ্যমে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।

আমাদের সংবিধানের ১০৯ অনুচ্ছেদে হাইকোর্ট বিভাগের অধস্তন সব আদালত ও ট্রাইব্যুনালের তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের ওপর অর্পণ করা হয়েছে। বর্তমানে সুপ্রিমকোর্ট রেজিস্ট্রি অধস্তন আদালতের বিভিন্ন বিষয় পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সুপ্রিমকোর্ট তথা হাইকোর্ট বিভাগকে সাচিবিক সহায়তা প্রদান করে থাকে। কিন্তু হাইকোর্ট বিভাগের এই তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ নিরঙ্কুশ নয়। কেননা বিদ্যমান কাঠামোতে আইন মন্ত্রণালয় হতে অধস্তন আদালতসংক্রান্ত বিভিন্ন প্রস্তাব আসার পর হাইকোর্ট বিভাগ তার তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা প্রয়োগ করে থাকে। কিন্তু আমাদের সংবিধানের ১০৯ অনুচ্ছেদের মর্ম অনুসারে অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনালের তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ হাইকোর্ট বিভাগের একচ্ছত্র অধিকার। তাই সাংবিধানিক এই বাধ্যবাধকতা সুচারুরূপে সম্পন্ন করার জন্য পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠা অত্যাবশ্যক।

রাজনীতি

পাটকে ‘জিআই’ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং ‘গোল্ডেন ফাইবার অব বাংলাদেশ’ নামে পাটের জিআই হবে বলে মন্তব্য করেছেন বস্ত্র ও পাট এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ( অব:) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন।

রোববার (২৭ অক্টোবর) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনাগাঁও হোটেলে মন্ত্রণালয় আয়োজিত দুটি মিলের চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘বন্ধ থাকা মিলগুলো উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে দ্রুত উৎপাদনের আওতায় আনা হবে। পিপিপি বা দীর্ঘমেয়াদি লিজের মাধ্যমে নিয়ে বিনিয়োগকারীরা টেক্সটাইলসহ অন্যকিছু করতে পারেন। এখন পাটের চাহিদা, দাম বাড়ছে। পাটের অবৈধ মজুতদারি কঠোরভাবে নজরদারি করা হবে। ’

তিনি বলেন, মিল দুটোর হস্তান্তর অনুষ্ঠানে আমার পক্ষ থেকে প্রাণ গ্রুপকে আন্তরিক শুভেচ্ছা। বন্ধ মিলগুলোর ব্যবহার নিশ্চিত করে কর্মসংস্থান, রাজস্ব আয়, সামাজিক উন্নয়নসহ শিল্পায়নের প্রসারে সুফল পাওয়া যাবে। বিনিয়োগকারীদের বন্ধ থাকা মিলগুলোতে আগামীতে আরও বিনিয়োগ করার আহ্বান জানাই।

বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আব্দুর রউফ বলেন, বর্তমানে বিটিএমসি’র নিয়ন্ত্রণে ২৫টি মিল রয়েছে। বস্ত্র খাতের সঙ্গে পাট খাতের বহুমুখী পণ্য সমাদৃত।

চুক্তির আওতায় প্রাণ গ্রুপ এই দুটি মিল আগামী ৩০ বছর মেয়াদে কার্য পরিচালনা করবে। এছাড়া এ চুক্তি ১০ বছর বর্ধিত করার সুযোগ রয়েছে। দুটি মিলের মধ্যে চট্টগ্রামের আর আর টেক্সটাইল মিলের আয়তন ১৯ একর এবং রাজশাহী টেক্সটাইল মিলের আয়তন ২৬ একর। প্রয়োজনীয় সংস্কার করে আধুনিক টেক্সটাইল মিল হিসেবে প্রতিষ্ঠান দুটিকে গড়ে তোলা হবে। মিল দুটিতে প্রায় দশ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

অনুষ্ঠানে বিটিএমসি’র চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জিয়াউল হক স্বাগত বক্তব্য রাখেন। এ সময় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব দেলোয়ারা বেগম, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব তসলিমা কানিজ নাহিদা,সুব্রত শিকদার, এএনএম মঈনুল ইসলামসহ বস্ত্র ও পাট এবং নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

খেলাধুলা

নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের গত আসরে এই ভুটানকে ৮-০ গোলে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। যদিও গত আসরের থেকে এই ভুটান দল সম্পূর্ণ ভিন্ন। গ্রুপপর্বে দুই ম্যাচে প্রতিপক্ষের জালে ১৭ বার গোল দিয়েছে দলটি। এমন দলের বিপক্ষে ফাইনালে উঠার ম্যাচে তাই বাড়তি সতর্ক বাংলাদেশ। খেলেছে নিজেদের সেরা ফুটবলটাই। ফাইনালে পা রেখেছে সাফের ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন হিসেবেই। ভুটানকে সেমিফাইনালে উড়িয়ে দিয়েছে ৭-১ গোলের বড় ব্যবধানে।

নেপালের দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে ফাইনালে যাওয়ার রাস্তাটা অবশ্য প্রথমার্ধেই পরিষ্কার করে রেখে গিয়েছিল সাবিনা খাতুনের দল। প্রথমার্ধেই ভুটানের জালে ৫ গোল দিয়েছিল সাবিনা-তহুরারা। বিরতির পর সেই ব্যবধান আরও বাড়বে সেটাই ছিল অনুমেয়। হয়েছেও তাই। তবে ফাইনালের আগে চোট সতর্কতায় কোচ পিটার বাটলার বেশ কয়েকজনকে উঠিয়ে নেওয়ায় ব্যবধানটা তত বড় হয়নি এই যা।

দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নেমে ম্যাচের ৫৭ মিনিটে প্রথম গোল পায় বাংলাদেশ। অনেকটা ফাকায় দাঁড়িয়ে ডি বক্সে ঢুকে বল জালে জড়ান তহুরা। পূরণ করেন হ্যাটট্রিক। এই গোলের পর মাঝে একাদশে বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়। ৭১ মিনিটে গোল করেন মাসুরা পারভিন। সানজিদার নেওয়া কর্নার কিক দারুণ হেডে জালে জড়ান এই রক্ষণভাগের ফুটবলার। এরপর আর গোল না হলে ৭-১ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ। নিশ্চিত করে আসরের ফাইনাল।

এর আগে, প্রথমার্ধের পুরো সময় জুড়ে দাপট ছিল বাংলাদেশের। ম্যাচের ৭ মিনিটে ডি বক্সের অনেক বাইরে থেকে দূর পাল্লার শটে জাল কাঁপালেন এই উইঙ্গার। বাংলাদেশ পেয়ে গেল জয়ের রসত। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি বাংলাদেশকে। ঋতুপর্ণার গোলের পর ১৪ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন তহুরা খাতুন। গোলরক্ষক খানিকটা সামনের দিকে থাকায় ডি বক্সের বাইরে থেকে শট নেন তিনি। তাতে গোলরক্ষকের মাথার ওপর দিয়ে বল জালে জড়ায়।

২৪ মিনিটে সাবিনার গোলরক্ষককে ফাকি দেওয়া শট গোলপোস্টে বাধা পেয়ে ফিরে আসে। নিশ্চিত গোল মিস হওয়ায় হতাশায় মুখ লুকান সাবিনা। অবশ্য এর এক মিনিট না যেতেই বল জালে জড়িয়ে গোল আদায় করে নেন সাবিনা। বাংলাদেশ এগিয়ে যায় ৩-০ ব্যবধানে।

৩৪ মিনিটে আবারও তহুরার ম্যাজিক। বক্সের বাইরে থেকে বা পায়ের বুদ্ধিদীপ্ত শটে জাল কাঁপান তিনি। তাতে বাংলাদেশ এগিয়ে যায় ৪-০ ব্যবধানে। এক হালি গোল হজম করে ম্যাচ থেকে একরকম ছিটকে যায় ভুটান। এর দুই মিনিট না যেতেই ফের গোল। এবার গোলপোস্ট থেকে রুপনা চাকমার নেওয়া দূর পাল্লার শট মাঝ মাঠ থেকে দারুণ দক্ষতায় নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ভুটানের ফুটবলারদের কাটিয়ে গোল করে আসেন অধিনায়ক সাবিনা খাতুন। পঞ্চম দফা এগিয়ে যায় বাংলাদেশ।

খানিক পর অবশ্য এক গোল শোধ দিয়েছে ভুটান। দেখি লাজুম ৪০ মিনিটে এক গোল শোধ দেন। এ দফায় আর তাকে রুখতে পারেনি রুপনা। অনেকটা একাই পেয়ে গিয়েছিলেন রুপনাকে। সুযোগ কাজে লাগাতে ভুল হয়নি লাজুমের। ব্যবধান কমিয়ে বিরতিতে যায় ভুটান। যদিও দ্বিতীয়ার্ধে আর দুই গোল হজম করতে হয়েছে তাদের। বাংলাদেশ ম্যাচ জিতেছে ৭-১ ব্যবধানে।

একই দিন দ্বিতীয় সেমিফাইনালে মাঠে নামবে ভারত ও নেপাল। সেই ম্যাচের জয়ী দল আগামী বুধবার বিকেল ৫টা ৪৫ মিনিটে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশের।