রাজনীতি

১০ মাস পার করার আগেই মারাত্মক সংকটের মধ্যে পড়েছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। সংকটটা এমন পর্যায়ে গেছে যে, প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের ভাবনার কথাও প্রকাশ পেয়েছে।

আর ড. ইউনূসের পদত্যাগের ভাবনায় সরকারও নড়বড়ে হয়ে পড়েছে।এদিকে ১০ মাস না যেতেই অন্তর্বর্তী সরকার কেন এই সংকটে পড়লো তা নিয়েও জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তবে এই সংকটের জন্য রাজনৈতিক চাপকেই প্রধান কারণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে। এই রাজনৈতিক চাপ তৈরির জন্য অন্তর্বর্তী সরকার নিজেই দায়ী। আর সেটি হলো নির্বাচন প্রশ্নে সরকারের দৃশ্যমান পদক্ষেপ না থাকা বলে অনেকে মনে করেন।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। এরপর ৮ আগস্ট নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়। এই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান দায়িত্ব একটি সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যবস্থা করা। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অভিযোগ, সরকার সেদিকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নজর দিচ্ছে না। যদিও প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, চলতি বছরের ডিসেম্বর অথবা আগামী বছরের জুনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু সরকারের এই বক্তব্যে রাজনৈতিক দলগুলো আশ্বস্ত হতে পারছে না। কারণ এখন পর্যন্ত সরকার নির্বাচনের রোডম্যাপ ও সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করেনি। সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে প্রধান এবং সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি দীর্ঘদিন ধরেই নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ও রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি করে আসছে। কিন্তু সরকারের দিক থেকে এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ এখনো দৃশ্যমান নয়। এর মধ্যেই সংকটে পড়লো অন্তর্বর্তী সরকার। আর অন্তর্বর্তী সরকারের এই সংকট তখনই তৈরি হলো যখন রাজপথের কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলনে নামে বিএনপি।

বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র পদে শপথ পড়ানোর দাবিতে টানা আটদিন ধরে আন্দোলন চলে। বৃহস্পতিবার (২২ মে) অন্তর্বর্তী সরকারকে ৪৮ ঘণ্টা আল্টিমেটাম দিয়ে এই আন্দোলন আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। এদিন ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া গেজেটের বৈধতা নিয়ে এবং তাকে শপথ পড়ানো থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা চেয়ে করা রিট খারিজ করে দেন হাইকোর্ট।

এদিকে গত কয়েকদিন ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার বিচার ও হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে গত কয়েকদিন ধরে শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলন চালিয়ে আসছে ছাত্রদল। বৃহস্পতিবার অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত করা হলেও দ্রুত দাবি আদায় না হলে আগামীতে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।

এর আগের দিন বুধবার সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বাহিনীর কর্মকর্তাদের নিয়ে এক বৈঠকে নির্বাচন, রাখাইনের জন্য মানবিক করিডোর প্রসঙ্গ এবং মব সৃষ্টিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন। বৈঠকে সেনাবাহিনী প্রধান চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন। রাখাইনের মানবিক করিডোরবিষয়ক সিদ্ধান্ত একটি নির্বাচিত সরকারের থেকে আসতে হবে এবং তা বৈধ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে হতে হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

বিভিন্ন সূত্র থেকে গণমাধ্যমে এ বিষয়গুলো এসেছে।

এই প্রেক্ষাপটে বৃহস্পতিবার রাতে শোনা যায়, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগ করার কথা ভাবছেন। এদিন সকালে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে তিনি তার এই ভাবনার কথা জানান। পরে রাতে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামও তার সঙ্গে সাক্ষাতের পর গণমাধ্যমকে ড. ইউনূসের পদত্যাগের ভাবনার কথা জানান।

সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, পদত্যাগের কারণ হিসেবে ড. ইউনূস বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর নানামুখী চাপ, অনৈক্য, নানা ইস্যুতে তার বাসভবন ঘিরে আন্দোলন, তার বিরুদ্ধে দেশ বিক্রির অভিযোগ, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের জন্য বিএনপির অব্যাহত চাপ, বিভিন্ন দাবিতে একের পর এক আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে জিম্মি করার চেষ্টা ইত্যাদি কারণে তিনি আর দায়িত্ব পালন করতে চান না। উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে তিনি এ বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন।

যদিও শুক্রবার (২৩ মে) প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক মন্ত্রণালয়) ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব জানিয়েছেন, প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করবেন না।

তিনি বলেন, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ক্ষমতা প্রয়োজন নেই, কিন্তু বাংলাদেশের জন্য, বাংলাদেশের শান্তিপূর্ণ ডেমোক্রেটিক ট্রানজিশনের (গণতান্ত্রিক রূপান্তর) জন্য ড. ইউনূস স্যারের দরকার আছে।

অন্তর্বর্তী সরকারকে এই ধরনের সংকটে পড়ার প্রধান কারণ দ্রুত নির্বাচনকে অগ্রাধিকার না দিয়ে অন্য বিভিন্ন কাজে জড়িয়ে পড়া, যা এই সরকারের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না বলে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা মনে করছেন।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান বাংলানিউজকে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার অনেক লোড কাঁধে নিচ্ছে, যা তাদের নেওয়ার কথা ছিল না। হত্যাকাণ্ডের বিচার হোক এটা মানুষ চায়। কিন্তু সব ধরনের কাজ হাতে নিয়েছে। সংস্কার, বন্দর ব্যবস্থাপনা বিদেশিদের হাতে দেওয়া, রাখাইনের করিডোর দেওয়াসহ বিভিন্ন কাজে হাত দিয়েছে। ক্ষমতায় পাঁচ বছর থাকতে চায় এ রকম কথাও শোনা যাচ্ছে। অথচ এত লোড নেওয়ার কথা ছিল না। এ কারণে সংকটগুলো তৈরি হচ্ছে।

এদিকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগ বিএনপির কোনো দাবি নয় বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেছেন, এটি সম্পূর্ণ ড. ইউনূসের ব্যক্তিগত বিষয়। আমরা (বিএনপি) কখনও তার পদত্যাগ দাবি করিনি। নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা না করে যদি তিনি দায়িত্ব ছেড়ে দিতে চান, সেটিও তার ব্যক্তিগত ব্যাপার।

বিএনপির এই গুরুত্বপূর্ণ নেতার বক্তব্য থেকে এটাই স্পষ্ট হয় যে, বিএনপির প্রধান দাবি নির্বাচনের রোডম্যাপ। দলটি প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ না চাইলেও এই বছরের মধ্যে নির্বাচনের জন্য রোডম্যাপ ঘোষণা না করলে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি তাদের অব্যাহত সমর্থন আর না থাকার সম্ভাবনাই বেশি।

এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের যে উপদেষ্টারা একটি নতুন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত তাদের অব্যাহতি দেওয়ার দাবি জানিয়েছে বিএনপি। একইসঙ্গে সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানকেও অব্যাহতি দেওয়ার দাবি জানিয়েছে দলটি ৷ বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে দলটির পক্ষ থেকে এ দাবি জানানো হয়। সবমিলিয়ে অন্তর্ভুক্তি সরকারের ওপর থেকে বিএনপির সমর্থন উঠে যাওয়ার আশঙ্কাই জোরালো হচ্ছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্যেও এ ধরনের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বলে গুঞ্জন রয়েছে। বিএনপির সমর্থন না থাকলে এই সরকারকে টিকে থাকা অত্যন্ত কঠিন বলেই তারা মনে করছেন। আর বিএনপি শুধু একা নয়, এই দলটির সঙ্গে ডান বাম অনেক রাজনৈতিক দলও রয়েছে। সরকার সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। এই পরিস্থিতিতে ড. ইউনুসের পদত্যাগের ভাবনায় সরকার নড়বড়ে হয়ে পড়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের পানিসম্পদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের বক্তব্যের মধ্য দিয়েও সরকারের চিন্তিত হওয়ার একটি ইঙ্গিত উঠে এসেছে। তিনি বলেছেন, চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন, এর বাইরে একদিনও এদিক-সেদিক যাওয়ার সুযোগ নেই।

শুক্রবার (২৩ মে) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

রিজওয়ানা হাসান বলেন, বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের সভার পর অনেক সময় আমরা আলোচনা করেছি। আমাদের তিনটি কঠিন দায়িত্ব- একটি সংস্কার, অন্যটি বিচার, আরেকটি নির্বাচন। শুধু নির্বাচন করার জন্য আমরা দায়িত্বটা নেইনি। আমাদের আরও দুটি দায়িত্ব রয়েছে। কিন্তু আমরা সেগুলো পালন করতে পারছি না।

রাজনীতি

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে তার দল সরকার গঠন করতে পারলে বন্ধ হয়ে যাওয়া ২৫টি পাটকল আবারও চালু করতে কাজ করবে।

বগুড়া শহরের পাঁচ তারকা হোটেল মম ইন কনভেনশন হলে ‘কৃষি উন্নয়ন, পরিবেশ রক্ষা ও নাগরিক সমস্যা নিয়ে তারুণ্যের ভাবনা’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় আজ তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘অনেক দল অনেক কথাই বলবে। তাদের অতীত ইতিহাস দেখে তাদের বিশ্বাস করবেন। এক্ষেত্রে দেশের অধিকতর উন্নয়নের স্বার্থে সবার প্রথমে বিএনপিকে সবাই বেছে নিবে।’

সেমিনারে এক শিক্ষার্থীর পাটকল বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে নজরুল ইসলাম বলেন, “বিএনপি উৎপাদন ও উন্নয়নে বিশ্বাসী। কোন কিছু বন্ধ করা বিএনপির রাজনীতি নয়। তাই সরকার গঠন করতে পারলে বন্ধ হয়ে যাওয়া ২৫টি পাটকল আবারও চালু করতে কাজ করবে বিএনপি। একই সাথে শ্রমিকদের সকল বকেয়াও পরিশোধ করবে। ”

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের এই সেমিনারে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন— জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের চেয়ারম্যান ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ববি হাজ্জাজ৷

তিনি বলেন, ‘তারেক রহমানের ৩১ দফা ভবিষ্যৎ রাজনীতির দর্শন।দেশে বিগত বছরগুলো বেশি নির্যাতিত হয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমান। আমরা সবার আগে ভোটের অধিকার চাই। আমরা চাই নির্বাচিত সরকার ভোটের মাধ্যমে দেশ পরিচালনা করুক।’

আরও বক্তৃতা করেন অস্ট্রেলিয়ার ওয়াটার স্ট্র্যাটেজিক অ্যানালিস্ট ড. ফয়সাল কবীর শুভ, বিশিষ্ট গণমাধ্যমকর্মী কাজী জেসিন, আবহাওয়া গবেষক ও সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের মোস্তফা কামাল পলাশ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ’র অধ্যাপক ড. রিদওয়ানুল হক, এইচআর বিশেষজ্ঞ শারমিন সুলতানা জয়া এবং নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক জুলকারনাইন জাহাঙ্গীর।

সেমিনারে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার পাঁচ শতাধিক দল নিরপেক্ষ নাগরিক অংশগ্রহণ করেন। উপস্থিত তরুণ ও অংশগ্রহণকারীরা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বক্তাদের প্রশ্ন করেন ও মতামত জানান।

সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু ও মাহবুবুর রহমান, রংপুর বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু, রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন শওকত, বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরহাদ হোসেন আজাদ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম ওবায়দুর রহমান চন্দন (রাজশাহী), এম এ খালেক ও অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম (রংপুর), বিএনপির সাবেক ক্রীড়া বিষয়ক সহ-সম্পাদক রায়হান আমিন রনি, বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন, গাইবান্ধা জেলা বিএনপির সভাপতি ডা. মইনুল হাসান সাদিক, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য জিএম সিরাজ, কাজী রফিক, মাহবুবুর রহমান, ভিপি সাইফুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম (রংপুর জেলা আহ্বায়ক), যুবদলের সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না ও সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী ও সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান, ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসির।

জাতীয়

দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে নানা সময়ে পারস্পরিক দ্বন্দ্ব দেখা গেছে। যতই দিন যাচ্ছে, দ্বন্দ্ব যেন ক্রমশ বাড়ছেই।

এমন পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, যত দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা যাবে, ততই দেশের জন্য মঙ্গল।

গণঅভ্যুত্থানে সামনের সারিতে থাকা শিক্ষার্থীদের নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপি দলটি গঠনের পর থেকেই জামায়াতে ইসলামী বা ছাত্র শিবিরের সঙ্গে এক ধরনের রাজনৈতিক মিত্রতাও ছিল। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতেও দল দুটি এক মঞ্চে ছিল। পরে জামায়াত ইস্যু ঘিরে উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের স্ট্যাটাস ঘিরে দল দুটির মধ্যে এক ধরনের টানাপোড়েনও তৈরি হয়।

তখন ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল নুরুল ইসলাম সাদ্দাম বলেন,  ‘উপদেষ্টা মাহফুজ আলম সংবিধানবিরোধী যে কাজটি করেছেন তাতে তিনি শপথের ভায়োলেশন করেছেন। কোনো রাগ বা বিরাগের বশবর্তী হয়ে কাউকে হুমকি দেওয়া বা কোনো বিষয়ে তার দায়িত্ব থাকাকালীন সময় এটা তার জন্য মানায় না। ’

জানা যায়, উপদেষ্টা পরিষদে থাকলেও দলের নেতাদের ওপর মাহফুজ আলমের প্রভাব রয়েছে। এ কারণে তার ওই ফেসবুক স্ট্যাটাসের পর দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিবৃতিও দেওয়া হয়েছিল।

এদিকে, ইশরাক হোসেনের শপথ নেওয়ার আন্দোলন থেকে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলমের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা। এদিকে বিএনপি তাদের দাবিতে বলছে, অন্তর্বর্তী সরকারের যে উপদেষ্টারা ‘সরাসরি বা পরোক্ষভাবে নতুন একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত’, তাদের অব্যাহতি দিতে হবে।

নির্বাচন ও সংস্কার ইস্যুতেও বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির বিরোধ রয়েছে। বিএনপি শুরু থেকেই দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কথা বলে আসছে। জামায়াতে ইসলামী চাইছে, সংস্কার শেষে ‘যৌক্তিক সময়ের’ মধ্যে নির্বাচন। আর এনসিপি আগে চাইছে ইসি পুনর্গঠন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন।

এনসিপি-জামায়াত বিরোধ

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে এনসিপি নেতা হাসনাত আবদুল্লাহর নেতৃত্বে আন্দোলন শুরু হয় প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে। ওই রাতেই একে একে আন্দোলনে যুক্ত হয় ছাত্র শিবির, হেফাজতে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলনসহ বেশ কিছু রাজনৈতিক ও ছাত্র সংগঠন।

পরে অবস্থান কর্মসূচির স্থান পরিবর্তন করে শাহবাগে নিয়ে যাওয়া হয়। শাহবাগে জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমসহ বেশ কয়েকজন নেতার নাম ধরে বিতর্কিত কিছু স্লোগান ও জাতীয় সংগীত গাওয়ার সময় বাধা দেওয়ার ঘটনাও ঘটে। পরে সেই বিষয়গুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে।

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে টানা আন্দোলনের মুখে শনিবার রাতেই জরুরি বৈঠকে বসে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। বৈঠকে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের কথা জানানো হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে। আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের পর তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম তার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি স্ট্যাটাস দেন।

সেখানে তিনি লেখেন, ৭১র প্রশ্ন মীমাংসা করতেই হবে। যুদ্ধাপরাধের সহযোগীদের ক্ষমা চাইতে হবে। বাংলাদেশে রাজনীতি করতে হলে পাকিস্তানপন্থা বাদ দিতে হবে। পাকিস্তান এ দেশে গণহত্যা চালিয়েছে। সহযোগীদের ইনিয়ে বিনিয়ে গণহত্যার পক্ষে বয়ান উৎপাদন বন্ধ করতে হবে। জুলাইয়ের শক্তির মধ্যে ঢুকে স্যাবোটাজ করা বন্ধ করতে হবে। সাফ দিলে আসতে হবে।

পরে আরেকটি পোস্ট দিয়ে সেটি সরিয়ে ফেলেন তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। তবে তার পোস্টের স্ক্রিনশট দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। একই মঞ্চে আন্দোলন করে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সফলতা আসার পর কেন হঠাৎ জামায়াত শিবিরকে ইঙ্গিত করে এই ধরনের পোস্ট দেন মাহফুজ আলম, সেটি নিয়েও প্রশ্ন জামায়াত ও শিবিরের শীর্ষ নেতাদেরও। জামায়াত ও শিবির বিষয়টি নিয়ে নিজেদের মধ্যে একাধিক বৈঠকও করেছে। সেখানে কেউ কেউ মাহফুজ আলমের পদত্যাগের দাবিও তোলেন।

এনসিপি-বিএনপি বিরোধ

৫-আগস্ট রাজনীতিতে পরবর্তী বিএনপি ছিল কিছুটা ধীর-স্থির ভূমিকায়। তবে দলের চেয়ারপারসনের চিকিৎসা শেষে দেশে ফেরার পর বিএনপির সব স্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যে নতুন করে উদ্দীপনা দেখা যায়। একপর্যায়ে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের শপথ নিয়ে বিলম্ব করায় মাঠে নামেন বিএনপি সমর্থকেরা। পরে আদালতের আদেশের মাধ্যমে সেই আন্দোলনে পূর্ণতা আসে। ফলে এখন রাজনীতির মাঠে এনসিপি-জামায়াতকে ছাপিয়ে অনেকটা সামনে চলে এসেছে বিএনপি।

এই প্রেক্ষাপটে বিএনপি কয়েকটি দাবি উত্থাপন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে—অন্তর্বর্তী সরকারের যে উপদেষ্টারা ‘সরাসরি বা পরোক্ষভাবে নতুন একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত’, তাদের অব্যাহতি, সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানকে অপসারণ এবং ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জাতীয় সংসদ গঠনের লক্ষ্যে অবিলম্বে একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি।

ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোর দাবিতে কয়েকদিন ধরে আন্দোলন করছিলেন তার সমর্থকেরা। টানা নগর ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে পরে বুধবার থেকে মৎস্য ভবন, কাকরাইল ও যমুনার সামনের রাস্তায় অবস্থান করছিলেন তারা। হাইকোর্টে সেই রিট খারিজ করে দিলে বৃহস্পতিবার বিকেলে অবশ্য ৪৮ ঘণ্টার জন্য আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করেন ইশরাক।

ইসির সামনে বিক্ষোভ সমাবেশে নির্বাচন কমিশনকে ‘বিএনপির দলীয় আখড়া’ বলে অভিহিত করেন এনসিপি নেতা নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। তিনি বলেন, ‘এই যে ইসি গঠন করা হয়েছে এটা কোনো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে এখন অ্যাকটিভ করে না। এটা বিএনপির একটি দলীয় কার্যালয় হিসেবে উপস্থিত হয়েছে। এটা বিএনপির মুখপাত্র হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ’

বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদের বিরুদ্ধে ‘ভারতের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী মুজিববাদী সংবিধান রাখতে চায়’ বলে অভিযোগ তোলেন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনই হবে। আমরা যতদিন বেঁচে আছি এই ইসি পুনর্গঠন করেই ছাড়ব। ইসি পুনর্গঠন না হলে বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন জাতীয় নাগরিক পার্টি করতে দেবে না।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের যে উপদেষ্টারা একটি নতুন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িত বলে সবাই জানে ও বুঝে; উপদেষ্টা পরিষদে তাদের উপস্থিতি সরকারের নির্দলীয় নিরপেক্ষ পরিচিতিকে ক্রমাগত প্রশ্নবিদ্ধ করে চলেছে বলেই সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে তাদের অব্যাহতি দেওয়া প্রয়োজন। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার বুধবারের বক্তব্য আবারও নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে তাকে অব্যাহতি দিতে হবে।

সম্প্রতি ‘আওয়ামী লীগের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বিএনপি চলে’—জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা হাসনাত আবদুল্লাহর এমন বক্তব্যের কড়া প্রতিক্রিয়া জানান বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। তিনি বলেন, ‘বিএনপি নেতারা যদি একত্রে প্রস্রাব করেন, তাহলে এই প্রস্রাবের তোড়ে ভেসে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়বা। এমন কোনো কথা বলবা না যে কথার দায়িত্ব নিতে পারবা না। বিএনপির সম্পর্কে যে অভিযোগ করছ, সেই অভিযোগের জবাবে বিএনপি যদি শুধু থুথু ফেলে, সেই থুথুর মধ্যে তোমাকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। ’

হাসনাত আবদুল্লাহর উদ্দেশে দুদু বলেন, ‘কথা বলার আগে একটু চিন্তাভাবনা করে বলতে হয়। এভাবে কথা বললে তোমাদের সম্বন্ধে মানুষের ধারণা কোথায় যাচ্ছে, একটু চিন্তা করো। এমন কোনো কথা বলবা না যে কথার দায়িত্ব নিতে পারবা না। হিসাব করে চলা, বলা ও গণতন্ত্রের রীতিনীতি না মানলে ফ্যাসিস্ট হিসেবে চিহ্নিত হবা। এ রকম প্রতিহিংসামূলক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে রাজনীতি করা যাবে না। ’

জামায়াত-বিএনপি দূরত্ব

দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক মিত্র ও নির্বাচনের সঙ্গী বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যেও তৈরি হয়েছে দূরত্ব। বিভিন্ন সময়ে নেতাদের কথায় তা স্পষ্ট। লন্ডনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমানের সাক্ষাতের পর সম্পর্কে দূরত্ব কমবে বলে মনে করা হয়েছিল। তবে দলীয় আদর্শ আর কৌশলের রাজনীতি তাদের দূরত্ব আরও বাড়িয়েছে।

গত বছরের ৫ আগস্ট অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয় আওয়ামী লীগ। সেই থেকে রাজনীতির মাঠে নানা বিষয়ে এই দুই দলের মধ্যে স্পষ্ট মতবিরোধ দেখা দেয়। তৃণমূল থেকে শীর্ষ নেতাদের বক্তব্যেও তা স্পষ্ট হয়। দুই দলের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা, সরকারের সংস্কার প্রস্তাব, নির্বাচনের দিনক্ষণ, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক, প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে দলীয় লোকের বদলি, পদায়ন, নিয়োগ, দখল-চাঁদাবাজির মতো বিষয় নিয়ে বিরোধ রয়েছে।

সবশেষ একটি ঘটনার দিকে তাকানো যাক। পাবনার আটঘরিয়ায় একটি কলেজের পরিচালনা পর্ষদের অভিভাবক সদস্যপদ নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতের নেতা–কর্মীদের মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়েছে। বিরোধের জের ধরে দুই পক্ষ একে অপরের ওপর হামলা, দলীয় কার্যালয় ভাঙচুরের অভিযোগ তুলেছে।

ভুল পদক্ষেপে অন্য কারো লাভ?

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের ভেতরে একটি অংশ দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকার পক্ষে, তাই পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। শুধু রাজনৈতিক দলগুলো নয়, গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারদের মধ্যেও বিভক্তি স্পষ্ট হয়ে পড়েছে। এই ঘোলাটে পরিস্থিতিতে তৃতীয় পক্ষ সুযোগ নিতে পারে।

তারা বলছেন, বিভক্তিতে পতিত আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনেরও আশঙ্কা রয়েছে। এমন বাস্তবতায় সরকার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিএনপি ও এনসিপি কোনো একটি পক্ষের ভুল পদক্ষেপ পরিস্থিতি শোচনীয় করে তুলতে পারে। এতে চূড়ান্ত বিচারে লাভবান হবে গণঅভ্যুত্থানের পরাজিত ও পতিত শক্তি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ইশরাক হোসেনের মেয়র পদের ইস্যুকে জাতীয় ইস্যুতে পরিণত করে বিএনপি শক্তি প্রদর্শনের রাজনীতি দেখাচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দলটি বরাবারই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ দাবি করে আসছে। এনসিপি-বিএনপির মধ্যে মূলত শক্তির পরীক্ষা চলছে। তাদের পারস্পরিক দ্বন্দ্ব গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তিগুলোর মধ্যে বিভেদ বাড়াবে। এতে অস্থিরতাও বাড়বে।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ‘পদত্যাগ করতে চান’ চান বলেও খবর সামনে এসেছে। এমন পরিস্থিতিতে আগের সব ‘বিভাজনমূলক বক্তব্য ও শব্দচয়নের’ জন্য দুঃখ প্রকাশ করে তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম দেশপ্রেমিক শক্তির ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন। তার সঙ্গে সুর মিলিয়ে একই আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। আরও কয়েকটি দল ঐক্যের কথা বলছে।

রাজনীতিবিদ-বিশ্লেষকরা কী বলছেন

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, ইশরাক হোসেনের মেয়র পদে শপথ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার সম্পূর্ণ প্রতিহিংসামূলক কাজ করছে। ভারত ও আওয়ামী লীগের মতো এখনো প্রতিহিংসার রাজনীতি চলছে। জনগণের নির্বাচিত সরকার ছাড়া পরিস্থিতি স্থিতিশীল করা সম্ভব নয়। তাই যত দ্রুত সম্ভব অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত হবে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করে জাতিকে আশ্বস্ত করা।

রাষ্ট্রচিন্তক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী  বলেন, দেশের চলমান আইনশৃঙ্খলা ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতির জন্য যত দ্রুত সম্ভব জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া জরুরি। সে কারণে বিএনপিসহ জুলাই বিপ্লবের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলগুলোকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা জরুরি। প্রয়োজনে নিজেদের ছাড় দেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। আশা করি, নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর হলে পরিস্থিতি উন্নতির দিকে যাবে।

আন্তর্জাতিক

বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তির ক্ষমতা বাতিল করার সিদ্ধান্তে ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাচীনতম হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়। শুক্রবার বোস্টনের ফেডারেল আদালতে মামলাটি করা হয়। মামলায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ উল্লেখ করেছে, ট্রাম্প প্রশাসনের এ পদক্ষেপ আইনের ‘স্পষ্ট লঙ্ঘন’। বিবিসি, রয়টার্স।

এর আগে বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হার্ভার্ড আর কোনো বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করতে পারবে না। বর্তমানে যেসব বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি রয়েছেন, তাদের অবশ্যই স্থানান্তর করতে হবে। না হলে তারা আইনগত বৈধতা হারাবেন।

এছাড়া দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টি নোম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক বার্তায় জনিয়েছেন, হার্ভার্ড ‘আইন মেনে না চলায়’ তাদের স্টুডেন্ট অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ভিজিটর প্রোগ্রাম সনদ বাতিল করা হয়েছে। তিনি আরও লেখেন, ‘এটি দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য সতর্কবার্তা হিসাবে বিবেচিত হোক।’

এ সিদ্ধান্তকে বেআইনি বলে মন্তব্য করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘আমরা হার্ভার্ডে বিদেশি শিক্ষার্থী ও গবেষকদের চাই। এ ব্যাপারে আমরা সম্পূর্ণ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ১৪০টিরও বেশি দেশ থেকে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসে তারা। হার্ভার্ড এবং এ দেশকে অসামান্যভাবে সমৃদ্ধ করে এ শিক্ষার্থী ও গবেষকরা।’

হার্ভার্ডের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, আমরা দ্রুত আমাদের কমিউনিটির সদস্যদের জন্য প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা ও সহায়তা দিতে কাজ করছি। এ প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ হার্ভার্ড কমিউনিটি ও আমাদের দেশের ওপর গভীর ক্ষতির হুমকি তৈরি করেছে। পাশাপাশি হার্ভার্ডের শিক্ষা ও গবেষণা মিশনকেও দুর্বল করছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের এ সিদ্ধান্তের ফলে হার্ভার্ডে অধ্যয়নরত হাজারো বিদেশি শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় পড়তে পারে। এ সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদেশি শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছালে তাদের মধ্যে আতঙ্ক ও হতাশা তৈরি হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, গত শিক্ষাবর্ষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে প্রায় সাত হাজার বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছিলেন। এটি গত শিক্ষাবর্ষে ভর্তি মোট শিক্ষার্থীর ২৭ দশমিক ২ শতাংশ।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসাবে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় বসার পর হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়কে দেওয়া কেন্দ্রীয় সরকারের তহবিলে কাটছাঁট শুরু করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

আন্তর্জাতিক

ইতালির রাজধানীতে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার পঞ্চম দফার পারমাণবিক আলোচনা শুক্রবার শেষ হয়েছে। তবে রোমে অনুষ্ঠিত এ আলোচনা থেকে কোনো সিদ্ধান্তমূলক অগ্রগতি অর্জিত হয়নি বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, আলোচনায় মার্কিন প্রতিনিধি দলে ছিলেন স্টিভ উইটকফ ও মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নীতিনির্ধারণ প্রধান মাইকেল অ্যান্টন। তিনি এই আলোচনা সংক্রান্ত কারিগরি বিষয়েও যুক্ত। অন্যদিকে ইরানের পক্ষ থেকে এতে নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ওমানের মধ্যস্থতায় অনুষ্ঠিত আলোচনায় কিছু প্রস্তাব উঠে এসেছে। এ দফার আলোচনা ‘পেশাদারিত্ব’ বজায় রেখে হলেও পরমাণু ইস্যু নিয়ে জটিলতা এখনো রয়ে গেছে।

তার ভাষায়, ‘আমরা অত্যন্ত পেশাদার একটি আলোচনা সম্পন্ন করেছি। তবে বিষয়গুলো এখনো পুরোপুরি নিষ্পত্তি হয়নি’।

এদিকে ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আলোচনায় কিছু অগ্রগতি হয়েছে। তবে তা সিদ্ধান্তমূলক নয়। আমরা আশা করি আগামী দিনে অমীমাংসিত বিষয়গুলো নিষ্পত্তি হবে। যাতে একটি সম্মানজনক ও টেকসই চুক্তির পথে অগ্রসর হওয়া যায়’।

মূল মতপার্থক্য:

• ইরান ঘোষণা করেছে, তারা ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম বন্ধ করবে না।

• যুক্তরাষ্ট্র বলছে, পরমাণু কর্মসূচি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ না হলে চুক্তি সম্ভব নয় এবং ‘পরমাণু কর্মসূচি ভেঙে ফেলা’ বিষয়ক ব্যাখ্যা নিয়ে আলোচনার ইচ্ছাও প্রকাশ করেছে।

টাইমস অব ইসরাইল জানিয়েছে, মার্কিন কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দিয়েছেন, যদি এই আলোচনায় চুক্তি না হয়, তাহলে তারা সামরিক ব্যবস্থাসহ অন্যান্য বিকল্প বিবেচনা করবে। যাতে ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন থেকে রোধ করা যায়।

এদিকে ইউরোপীয় প্রতিনিধিরা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, আলোচনা ব্যর্থ হলে ‘SnapBack’ মেকানিজম সক্রিয় করা হতে পারে। এর ফলে ইরানের ওপর আগের নিষেধাজ্ঞাগুলো পুনরায় কার্যকর হবে।

চুক্তি নিয়ে সংশয়:

অন্যদিকে ইরানের দুটি সূত্রের বরাত দিয়ে সিএনএন দাবি করেছে, তেহরান এ দফার আলোচনায় অংশ নিয়েছে কেবল ওয়াশিংটনের সর্বশেষ অবস্থান যাচাই করার জন্য। কোনো অগ্রগতির প্রত্যাশা নিয়ে নয়।

মার্কিন সংবাদমাধ্যমটির মতে, ‘তেহরান যুক্তরাষ্ট্রের আন্তরিকতা নিয়ে ক্রমবর্ধমান সন্দেহ পোষণ করছে’।

মূলত পঞ্চম দফার আলোচনাকে অনেকেই ভবিষ্যতের জন্য নির্ধারক মনে করলেও বাস্তবিক অগ্রগতি অনিশ্চিতই থেকে গেছে।

বিনোদন

মা হওয়ার পর শরীরের পরিবর্তন স্বাভাবিক। তা তিনি হোক সাধারণ নারী কিংবা রূপালি পর্দার তারকা। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তারকাদের এ পরিবর্তন নিয়েও চলে চুলচেরা বিশ্লেষণ। এই তালিকা থেকে বাদ যায়নি বলিউড কুইন ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চনও।

সাম্প্রতিক কান চলচ্চিত্র উৎসবেও তার সাজ-পোশাকের প্রশংসার মাঝে উঠে এসেছে সেই পুরোনো আলোচনাই—তার ওজন ও চেহারা।

কান-এর লাল গালিচায় ঐশ্বরিয়ার গ্ল্যামার ঝলমলে উপস্থিতি নজর কাড়লেও সামাজিকমাধ্যমে অনেকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি। কেউ বলেন, তার মুখ অনেক ফুলে গেছে, কারও মন্তব্য, ‘চুলের স্টাইল তো আর একটু বদলানো যেত!’ এমন একের পর এক নেতিবাচক মন্তব্যে এবার আর চুপ করে থাকেননি তিনি।

স্পষ্ট জবাব দিলেন ঐশ্বরিয়া—‘আমি মোটা হয়েছি তো তাতে কার কী সমস্যা? আমার শরীর নিয়ে এত আগ্রহ কেন?’

তিনি বলেন, ‘চাইলেই ১৫ দিনে নিজের ওজন কমিয়ে ফেলতে পারি। কিন্তু আমার তো কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। আমি যেমন আছি, তাতেই আমি ভাল আছি। সুতরাং আমার চেহারা নিয়ে কে কী ভাবছে তাতে আমার কিছু যায় আসে না।’

এই মুহূর্তে কান চলচ্চিত্র উৎসবে ঐশ্বরিয়ার শাড়ির লুক এবং আত্মবিশ্বাস ভরা উপস্থিতি ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিকমাধ্যমে। আর সমালোচকদের কটাক্ষের জবাব যেন মিলছে তার সেই স্টাইলেই।

খেলাধুলা

আগের ম্যাচে তাও একটা উইকেট পেয়েছিলেন। সাকিব আল হাসান পাকিস্তান সুপার লিগের দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে ব্যাটে-বলে ছিলেন পুরোপুরি ফ্লপ। তবে তার বাজে রাতে আলো কেড়ে নিলেন তারই স্বদেশি রিশাদ হোসেন, তুলে নিলেন তিন উইকেট। আর তাতেই ইসলামাবাদ ইউনাইটেডকে উড়িয়ে দিয়েছে লাহোর কালান্দার্স। ৯৫ রানের বিশাল এক জয় নিয়ে পা রেখেছে ফাইনালে।

টস জিতে ব্যাট করতে নেমে লাহোর বড় পুঁজি পায়। মোহাম্মদ নাঈম ঠিক ২০০ স্ট্রাইক রেটে করেন ৫০। এরপর কুশল পেরেরা ৩৫ বলে ৬১ রানের ইনিংস দলটাকে বড় স্কোরের দিশা দেয়। শেষ দিকে ভানুকা রাজাপাকশের ১৩ বলে ২২, আর আসিফ আলীর ৭ বলে ১৫ রানের ইনিংসে ভর করে দলটা ৮ উইকেট খুইয়ে পেয়ে যায় ২০২ রানের বিশাল এক পুঁজি।

সাকিবকে যে দলটা স্রেফ একজন বোলার হিসেবেই খেলাচ্ছে, তা বোঝা গেল এই অলরাউন্ডারের ব্যাটিং পজিশন থেকে। একের পর এক উইকেট যাচ্ছে, কিন্তু সাকিবের দেখা মিলছিল না। অবশেষে ছয় উইকেট পতনের পর অষ্টম ও শেষ স্বীকৃত ব্যাটার হিসেবে তাকে উইকেটে পাঠায় লাহোর। তার আগেই অবশ্য শাহিন আফ্রিদি নেমেছিলেন।

তাকে এত পরে কেন নামানো হলো, সে প্রশ্নের জবাবটাও মিলে গেল একটু পরই। দুই বল খেলে রানের খাতা খোলার আগেই বিদায় নেন সাকিব। লাহোরের হয়ে এর আগে যখন ব্যাট করতে নেমেছিলেন গ্রুপ পর্বের ম্যাচে, পেশোয়ার জালমির বিপক্ষে সে ম্যাচেও রানের খাতাটা খুলতে পারেননি বাংলাদেশি এই ‘সাবেক’ অলরাউন্ডার।

এমনকি বাংলাদেশের হয়ে স্বীকৃত শেষ ম্যাচটা যখন খেলেছিলেন, তার শেষ ইনিংসেও তিনি রান করতে পারেননি একটিও। সাকিবকে শুধু বোলার হিসেবে খেলানোটাই যে যৌক্তিক, সে যুক্তির সপক্ষে প্রমাণ এর চেয়ে বেশি কী হতে পারে?

সাকিব এরপর বল হাতেও বিফল হয়েছেন। বড় পুঁজি নিয়ে শাহিন আফ্রিদি আর সালমান মির্জার তোপে যখন ইসলামাবাদকে চেপে ধরেছে লাহোর, সাকিব আক্রমণে এসেছিলেন তখন। তবে এরপরও তিনি উইকেটের দেখা পাননি। ৩ ওভার করে ২৭ রান দিয়েছেন তিনি।

তার এমন বাজে দিনে আলো কেড়ে নিয়েছেন রিশাদ। ব্যাট হাতে সাকিবের পর নেমে ২ বলে ৫ রান করেছিলেন। তবে তার মূল ভূমিকা যেটা, সে বোলিংয়ে তিনি করেছেন দারুণ। ৩ ওভারে ৩৪ রান দিয়েছেন বটে, তবে সালমান আলী আগা, শাদাব খান আর জেমি নিশামের উইকেট তুলে নিয়ে অধিনায়কের চাওয়া পূরণ করেছেন ভালোভাবেই।

রিশাদের এই ৩ উইকেটের সঙ্গে শাহিন আর সালমানও ৩টি করে উইকেট নিয়েছেন। তবে সবচেয়ে সফল বোলার ছিলেন শাহিন, এক মেইডেনসহ ৩.১ ওভার থেকে রান দিয়েছেন মোটে ৩টি। ইসলামাবাদ সে চাপটাই আর সামলাতে পারেনি। হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়েছে। ১৫.১ ওভারে ১০৭ রান তুলে অলআউট হয়েছে।

আর তাতেই আরও একবার ফাইনালে উঠে গেছে লাহোর কালান্দার্স। রোববার কোয়েটা গ্লাডিয়েটর্সের বিপক্ষে মাঠে নামবে শাহিন আফ্রিদির দল।

রাজনীতি

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, সংস্কার, বিচার, নির্বাচন এ তিনটি কঠিন দায়িত্ব নিয়ে কাজ করছি।

তিনি বলেন, আমাদের দায়িত্ব মোটা দাগে তিনটি এবং তিনটাই কঠিন দায়িত্ব। এর একটা হচ্ছে সংস্কার, আরেকটি হচ্ছে বিচার, অপরটি নির্বাচন।’

আজ শুক্রবার রাজধানীতে একটি অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের এই দায়িত্বটা জাতীয় দায়িত্ব। আমরা আগে থেকেই বলছি যে আমরা ক্ষমতা নয়, দায়িত্ব নিয়েছি। এ দায়িত্বটা পালন করা তখনই আমাদের পক্ষে সম্ভব হবে যখন আমরা সকলের সহযোগিতা পাব।’

জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা একটা সময় দিয়েছেন, আগামী ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। তার একদিনও এদিক-সেদিক হওয়ার কোনো সুযোগ আমাদের পক্ষ থেকে নেই। কাজেই এগুলো নিয়ে অন্য ধরনের কোনো কথা বলারও কোনো সুযোগ হওয়া উচিত নয় বলে আমি মনে করি।’

পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ‘কালকে আমাদের মিটিং এর পরে আমরা অনেকক্ষণ আলোচনা করেছি। আমাদের যে যে দায়িত্ব রয়েছে সেগুলো আসলে পালন করতে পারছি কিনা, সেটা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা দায়িত্ব নেবার পর থেকে যার যত রকম দাবি আছে সব দাবি নিয়ে তারা রাস্তায় বসে পড়ছে। এসব কারণে ঢাকা শহর অচল হয়ে পড়ছে। সে অচল অবস্থা নিরসনে আমরা কিছু করতে পারছি কিনা। প্রত্যাশার বিষয়টা এক আর দায়িত্ব পালন করার বিষয়টা আরেক। বড় দাগের তিনটা দায়িত্ব পালন করার জন্য প্রতিবন্ধকতা গুলোকে আমরা কিভাবে মোকাবেলা করব সকলে মিলে সেটা চিন্তা করছি।’

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, প্রত্যাশার একটা চাপ হচ্ছে যে আমরা পারফর্ম করতে পারছি কি না। আমাদের বিবেচনায় ওটাই একমাত্র চাপ। এর বাইরে আর কোনো চাপ নেই।

তিনি বলেন, ‘আমরা যদি আমাদের দায়িত্ব পালন করতে পারি, তাহলে আমাদের দায়িত্বে থাকাটা প্রাসঙ্গিক। আমরা যদি না পারি, আমাদের যার যার নিজস্ব কাজ আছে, সেখানে ফিরে যাবো।’

পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ‘অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে অনেক দূর এগিয়েছি। রিফর্ম কমিশন গঠন করেছি, কমিশন তাদের রিপোর্ট, দিয়েছে সেই রিপোর্টের উপর রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্য গড়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সব রাজনৈতিক দল সেখানে পার্টিসিপেট করছে। আমরা নির্বাচনের একটা সময় বলে দিয়েছি যে ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে অবশ্যই হবে।’

বিচার প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, আগে ট্রাইব্যুনাল একটা ছিল এখন দুইটা হয়েছে। এ ট্রাইব্যুনালে কার্যক্রম আনুষ্ঠানিক পর্যায়ে শুরু হচ্ছে।

অর্থনীতি

নামমাত্র বরাদ্দ দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হচ্ছে এডিপিভুক্ত দীর্ঘদিনের পুরোনো ৪৫টি প্রকল্প। আগামী অর্থবছরের উন্নয়ন বাজেটের আওতায় এসব প্রকল্পে এক লাখ টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে ভবিষ্যতে কাজের মেয়াদ ও ব্যয় বৃদ্ধির শঙ্কা দেখা দিয়েছে। সেই সঙ্গে জনগণের করের শত শত কোটি টাকার অপচয় হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

তাদের মতে, বরাদ্দের সামান্য অর্থে আগামী এডিপি সংশোধনের আগ পর্যন্ত কোনো কাজই করা যাবে না। এতে অর্থবছরের শুরুতেই কাজে দেরি হলে সেই ঘানি টানতে হবে শেষ পর্যন্ত। সময়মতো বাস্তবায়ন না হলে কাক্সিক্ষত সুফল পেতেও অপেক্ষা করতে হবে বছরের পর বছর।

জিইয়ে রাখা প্রকল্পগুলোর মধ্যে ১৩ বছর আগে কাজ শুরু হয়েছে এমন প্রকল্প আছে একটি। ১১ বছরের দুটি, ১০ বছরের চারটি, সাত বছরের তিনটি, চার বছরের সাতটি প্রকল্প। এছাড়া ছয় বছরের তিনটি, তিন বছরের আটটি এবং বাকি প্রকল্পগুলো রয়েছে এক থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে। এসবের কাজ কবে শেষ হবে তা কেউ বলতে পারছে না।

বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ও সরকারের শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সদস্য ড. জাহিদ হোসেন বলেন, এটা একটা ব্যাড প্র্যাকটিস। এই ধারাবাহিকতা বন্ধ হলে ভালো হতো। ছোট ছোট বরাদ্দ দিয়ে প্রকল্প বাঁচিয়ে রাখা খারাপ। বরাদ্দ বন্ধ হলে প্রকল্প থেকে কোনো উপকার পাওয়া যায় না, সেটি তো প্রমাাণিত। সামান্য বরাদ্দ দিয়ে এগুলো বাঁচিয়ে রাখায় কারা উপকার পায়? আমরা জানি জনগণ তো অন্তত কিছু পায় না। তাহলে এই কাজ কেন হচ্ছে। এবার ভেবেছিলাম অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যতিক্রমী কিছু করবে। এ ধরনের অপচেষ্টা আর থাকবে না। কিন্তু নতুনত্ব কোথায়? কোনো পরিবর্তন এলো না। অল্প বরাদ্দের নামে যা দেওয়া হলো সেটারও অপচয় এবং ভবিষ্যতে অর্থ ঢালার পথও থেকেই গেল।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনা সচিব ইকবাল আব্দুল্লাহ হারুন বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে বলেন, বিষয়টি আমার মাথায় নেই। আমি তো এডিপির পুরো বই মুখস্থ রাখিনি। এছাড়া এটা একক কোনো কাজ নয়। যৌথভাবে টিমওয়ার্কের মাধ্যমে এডিপি তৈরি হয়েছে। তবে কেন এত কম বরাদ্দ রাখা হয়েছে সে বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে আপনাকে পরে জানাতে পারব।

পরিকল্পনা কমিশন জানায়, রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলীয় লেভেলক্রসিং গেটগুলোর পুনর্বাসন ও মান উন্নয়ন প্রকল্পটির মোট ব্যয় ১৪৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। ইতোমধ্য্ইে চারবার সংশোাধন করতে হয়েছে। এরপরও বাস্তবায়ন হচ্ছে না। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ আছে ১৪ কোটি ২৫ লাখ টাকা। আগামী অর্থবছরের নতুন এডিপিতে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে মাত্র এক লাখ টাকা। গত জুন মাস পর্যন্ত প্রকল্পটির আওতায় খরচ হয়েছে ৯১ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। এত কম বরাদ্দের কারণ প্রসঙ্গে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রকল্পটি ১০ বছরের পুরোনো।

২০১৫ সাল থেকে শুরু হয়ে আগামী জুন পর্যন্ত মেয়াদ আছে। এতেও বাস্তবায়ন সম্ভব নাও হতে পারে। ফলে সামান্য বরাদ্দ দিয়ে কোনোরকমে বাঁচিয়ে রাখা হচ্ছে। যাতে পরে সংশোধন বা মেয়াদ বাড়িয়ে নেওয়া যায়। একই অবস্থা রেলের পশ্চিমাঞ্চলীয় লেভেলক্রসিং গেটগুলোর পুনর্বাসন ও মান উন্নয়ন প্রকল্পেও। তবে এটি তিনবার সংশোধন করা হয়েছিল। আগামী অর্থবছরে জুটেছে এক লাখ টাকার বরাদ্দ। এটিও চলছে ১০ বছর ধরে।

এদিকে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এবং ইআইবির ঋণে বাস্তবায়ন হচ্ছে আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত ডুয়েলগেজ ডাবল রেললাইন রেলপথ নির্মাণ এ্বং বিদ্যমান রেলপথকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর প্রকল্পটি। এটির মোট ব্যয় ৪ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকা। সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ আছে ১৭৪ কোটি ৯১ লাখ টাকা। আগামী অর্থবছরের জন্য দেওয়া হয়েছে এক লাখ টাকা। এটি চলছে ১০ বছরের বেশি সময় ধরে। টেলিটক নেটওয়ার্ক বিটিএস সাইটের ডিসি পাওয়ার ব্যাকআপ সিস্টেমের ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে নেটওয়ার্ক সেবার মান উন্নয়ন প্রকল্পও পেয়েছে এক লাখ টাকার বরাদ্দ।

এ বিষয়ে সাবেক পরিকল্পনা সচিব মামুন-আল-রশীদ বলেন, উদ্দেশ্যমূলকভাবে এমন বরাদ্দ দিয়ে কোনোরকমে প্রকল্প বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা হতে পারে। যাতে আগামীতে সুযোগ এলেই ব্যয় বৃদ্ধি বা মেয়াদ বাড়িয়ে আবারও বরাদ্দ নেওয়া যায়। এভাবে প্রকল্প চালু রাখলে সংশ্লিষ্টদের অনেক ধরনের লাভ হয়ে থাকে। তবে বিষয়টি ভালোভাবে খতিয়ে দেখা উচিত। প্রয়োজন না থাকলে প্রকল্পগুলো বন্ধ করে দিলে ভবিষ্যতে এগুলোর পেছনে বাড়তি খরচের আশঙ্কা থাকে না।

নামমাত্র বরাদ্দ পাওয়া কয়েকটি প্রকল্প হলো, বারহাট্টা উপজেলায় শিশুপার্ক নির্মাণ। এতে বরাদ্দ তিন লাখ টাকা। কুষ্টিয়া জেলার গড়াই নদীর ওপর সেতু নির্মাণ প্রকল্পটিতে দেওয়া হচ্ছে এক লাখ টাকা। খুলনার ভৈরব নদীর তীর সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্প পাচ্ছে এক লাখ টাকা।

আরও আছে, লেবুখালী-রামপুর-মির্জাগঞ্জ সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্প পাচ্ছে আট লাখ টাকা। জামালপুর নকশিপল্লী প্রকল্পে পাচ্ছে এক লাখ টাকা। শেখ হাসিনা স্পেশালাইহজড জুট টেক্সটাইল মিলস এক লাখ টাকা। বিএমআর অব কেরু অ্যান্ড কোং বিডি লিমিটেড প্রকল্প পাচ্ছে এক লাখ টাকা। গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবন মান উন্নয়ন প্রকল্প পাচ্ছে এক লাখ টাকা। বৃহত্তর ফরিদপুরের চরাঞ্চলে গবাদিপশুর জাত উন্নয়ন প্রকল্পে পাচ্ছে এক লাখ টাকা এবং চর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট প্রজেক্টে দেওয়া হচ্ছে এক লাখ টাকা।

রাজনীতি

দেশের বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে একটি সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কার্যালয় মগবাজারে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের এক জরুরি বৈঠক জামায়াত আমীর এ আহ্বান জানান।

বৈঠকে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন। এসময় দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়।

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতের সময় চেয়েছে জামায়াত

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য সময় চেয়েছে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ। মৌখিকভাবে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের পক্ষ থেকে আগামীকাল সন্ধ্যা ছয়টায় দলটিকে সাক্ষাতের সময় দেওয়া হয়েছে। খবর বিবিসির।

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের জানিয়েছেন, চলমান বিষয় নিয়ে আলাপচারিতার জন্য তারা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করতে চাচ্ছেন।

দলটি মনে করে প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ কোনো সমাধান না। তার চায় অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক।

এর আগে, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সর্বদলীয় রাজনৈতিক বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান। তার পক্ষ থেকে জামায়াতে ইসলামীর ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে এ আহ্বান জানানো হয়।