রাজনীতি

ব্যস্ত সড়কঘেঁষা একটি আলোচিত ভবন। এর অবস্থান ময়মনসিংহ শহরের ফায়ার সার্ভিস রোডে। ভবনটিকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কিছু নেই। কারণ, দেশের রাজনৈতিক ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অন্যতম সাক্ষী ভবনটি। নাম তার ‘সুন্দর মহল’।

ভবনটি নগরীর ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে অবস্থিত সুতিয়াখালি গ্রামের কন্যা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী বেগম রওশনের। একসময় সুন্দর মহলের সঙ্গে ছিল জাতীয় পার্টির রাজনৈতিক কার্যালয়। বর্তমানে কার্যালয়টির অস্তিত্ব নেই।

সরেজমিনে দেখা যায়, সুন্দর মহলে জাতীয় পার্টির রাজনৈতিক কার্যালয় ও কেয়ারটেকার থাকার বাসা ভাঙা। ইটগুলো কোথাও এলোমেলো আবার কোথাও সমানভাবে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। দেওয়াল ভাঙার ইটগুলোর পলেস্তারা খুলে পরিষ্কার করা হয়েছে। সুন্দর মহল লেখাটি এখনো জ্বলজ্বলে থাকলেও সঙ্গে ‘দালাল মহল’ লিখে সাইনবোর্ড টানিয়ে রেখেছে ছাত্র-জনতা। ভবনটি ভাঙচুরও করা হয়েছে।

ভবনজুড়ে দেওয়ালে দেওয়ালে কালিতে লেখা রয়েছে ‘দালাল মহল’। টানানো সাইনবোর্ডে রওশন এরশাদের ছবিতে কালি দিয়ে ক্রস চিহ্ন এঁকে দেওয়া হয়েছে। ভবনের সামনে একপাশে রয়েছে বাঁধানো কবর। কবরের নামফলকে লেখা, বেগম বদরুন্নাহার। মৃত্যু ১৯৯১। স্বামীর নাম খান সাহেব উমেদ আলী।

দ্বিতল ভবনের সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে দেখা গেলো চারপাশ পরিষ্কার করা হয়েছে। তবে ছাত্র-জনতার ভাঙচুরের দৃশ্য এখনো রয়ে গেছে। রাজনৈতিক ইতিহাসের সাক্ষী ভবনটিতে শুধুই সুনসান নীরবতা।

সুন্দর মহলের ক্ষতচিহ্ন জাগো নিউজের এ প্রতিবেদককে ঘুরে ঘুরে দেখাচ্ছিলেন কেয়ারটেকার মোখলেছুর রহমান। কথাবার্তার একপর্যায়ে মুখ ফসকে বলে দিলেন ভবনের বর্তমান অবস্থার কথা। তিনি জাগো নিউজকে জানান, এই ভবন থেকে আর জাতীয় পার্টির রাজনীতি পরিচালিত হবে না। এখানে শুধু হবে খানাপিনা। তবে তা বিনামূল্যে নয়। গুনে গুনে টাকা দিয়ে ইচ্ছেমতো যে কেউ খেতে পারবেন। কারণ, এই সুন্দর মহলে তৈরি হচ্ছে রেস্তোরাঁ। এজন্য মালিকপক্ষের পরিকল্পনা মতো ছাত্র-জনতার ভাঙাচোরা শেষে যা অবশিষ্ট ছিল তা পরিষ্কার করা হয়েছে। ভবনের সঙ্গে থাকা ইটের তৈরি জাতীয় পার্টির কার্যালয়সহ পেছনের অংশের একটি ঘরের দেওয়ালগুলো এরইমধ্যে ভেঙে ফেলা হয়েছে। একসময়ের দৃষ্টিনন্দন দোতলা এই বাড়িটির জায়গাজুড়ে হবে রেস্তোরাঁ। যার নাম হবে ‘কুটুমবাড়ি রেস্টুরেন্ট’।

ভবনের কেয়ারটেকার মোখলেছুর রহমান বলেন, “ভবনটি রওশনের ভাইয়ের কাছ থেকে বজলুর রহমান মিন্টু নামের একজন ভাড়া নিয়েছেন। তার ‘কুটুমবাড়ি রেস্টুরেন্ট’ নামের তিনটি রেস্তোরাঁ রয়েছে। একটির অবস্থান ঢাকায়, একটি ময়মনসিংহ সদরের দাপুনিয়ায় ও জেলার ফুলবাড়িয়া উপজেলার পৌর শহরে। সুন্দর মহলে এটি তার চতুর্থ শাখা হবে। তাকে ব্যবসায়ী হিসেবেই জানি। রাজনৈতিক কোনো পদবি আছে কি না আমার জানা নেই।”

কাউন্সিল না হলে জাতীয় পার্টি হারিয়ে যেত: রওশন

তিনি আরও বলেন, ‘ভবনের সবকিছু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করিয়েছেন বজলুর রহমান মিন্টু। তিনি প্রায় তিন মাস আগে প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকার মৌখিক চুক্তিতে আমাকে এখানে কেয়ারটেকার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। আমি ভবনটির সবকিছু দেখভাল করছি।’

মোখলেছুর রহমান জানান, দালাল মহলে (সুন্দর মহল) রেস্তোরাঁ হবে জানতে পেরে একদল লোক এসে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ বন্ধসহ রেস্তোরাঁ করতে বজলুর রহমান মিন্টুকে নিষেধ করেন। এসময় মিন্টু তাদের বুঝিয়ে বলেন, অহেতুক ভবনটি পড়ে রয়েছে। এখানে রেস্তোরাঁ করে ব্যবসা করা দোষের কিছু নয়। পরে আর বাধা দেওয়া হয়নি।

ভবনটিতে রেস্তোরাঁ করার বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহলে পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা তুঙ্গে। রেস্তোরাঁ চালু হওয়ার আগ মুহূর্তে আবারও হামলা কিংবা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটার শঙ্কা রয়েছে। ভবনের কেয়ারটেকার মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘জানতে পেরেছি, পরিবেশ সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হলে কয়েক মাসের মধ্যেই সব কাজ সম্পন্ন করে ভবনটি ‘কুটুমবাড়ি রেস্টুরেন্ট’ নামে চালু করা হবে। সুন্দর মহলের পেছনের অংশের কর্নারে একটি তিনতলা ভবন করারও কথা রয়েছে। এটিও একই নামে রেস্তোরাঁ হবে। এরইমধ্যে কর্নারে থাকা দেওয়াল ভেঙে ইটগুলো সরিয়ে ফাঁকা করা হয়েছে। তবে রেস্তোরাঁকে কেন্দ্র করে যদি কোনো প্রভাবশালী লোকজন উত্তপ্ত পরিবেশ সৃষ্টি করে, তাহলে রেস্তোরাঁ নির্মাণ বন্ধও হতে পারে।

আবারও কেন ভাঙলো জাতীয় পার্টি

এদিকে সুন্দর মহলে রেস্তোরাঁ হওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন স্থানীয় জাতীয় পার্টির নেতারাও। দলটির নেতারা জানান, সুন্দর মহল থেকেই ময়মনসিংহ জাতীয় পার্টির রাজনীতি পরিচালিত হতো। দলের স্বার্থে স্থানীয় শীর্ষ নেতারা এখানেই হুংকার দিতেন। নেতাকর্মীদের করতেন ঐক্যবদ্ধ। বিভিন্ন স্থান থেকে এই সুন্দর মহলে দলে দলে স্লোগান দিয়ে এসে জড়ো হতেন নেতাকর্মীরা। রওশন এরশাদ এসে থাকতেন এই বাড়িতেই। দলকে চাঙা রাখতে দিতেন নানা দিকনির্দেশনা। কিন্তু দেবর-ভাবির (জি এম কাদের-রওশন এরশাদ) দ্বন্দ্বে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বেগম রওশন এরশাদ অংশ নেননি। ফলে নেতাকর্মীরা বিভক্ত হয়ে যান। নেতাকর্মীরা না আসায় ধীরে ধীরে জৌলুশ হারায় ভবনটি।

স্থানীয়রা জানান, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর সুন্দর মহলটি ‘দালাল মহল’ আখ্যা দিয়ে হামলা ও ভাঙচুর চালায় বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। এরপর ৩১ অক্টোবর রাতে নগরীর টাউন হল মোড় থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে রওশন এরশাদের বাসভবন সুন্দর মহল ও জাতীয় পার্টির কার্যালয় ঘেরাও করেন বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। একইসঙ্গে সুন্দর মহলের সামনের সড়কে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন তারা। এসময় সুন্দর মহলকে ‘জাতীয় দালাল মহল’ আখ্যা দিয়ে জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেওয়া হয়। এছাড়া তারা ময়মনসিংহে জাতীয় পার্টি সব কার্যক্রম প্রতিহত করার ঘোষণা দেন। সেইসঙ্গে স্বৈরাচারের সহযোগী অভিযোগ করে জাতীয় পার্টিকে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান আন্দোলনকারীরা।

তবে একটি সূত্র জাগো নিউজকে বলেছে, রেস্তোরাঁ নামে ভবনটি (সুন্দর মহল) একসময় ধীরে ধীরে দখল হয়ে যেতে পারে। যদিও জাতীয় পার্টির একজন পদধারী নেতা এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে বলেন, দেশের রাজনৈতিক ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অন্যতম সাক্ষী এই বাড়ি দখলে নেওয়া এত সহজ নয়। কখনো এমনটি হলে, জাতীয় পার্টির নেতারা শক্তি সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়ে তা আগের রূপে ফিরিয়ে আনবে।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের অনুসারী ও ময়মনসিংহ জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. ওয়াহিদুজ্জামান আরজু জাগো নিউজকে বলেন, ‘এটি বেগম রওশন এরশাদের পৈতৃক বাড়ি। এখানে আনুমানিক ৩০ শতাংশ জায়গা রয়েছে। শুনেছি, রওশনের ভাই সুন্দর মহলটি রেস্তোরাঁ হিসেবে ভাড়া দিয়েছেন। তবে কে বা কারা ভাড়া নিয়েছেন তা আমার জানা নেই।’

বক্তব্য জানতে ময়মনসিংহ মহানগর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আবদুল আওয়াল সেলিম ও জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবু মূসা সরকারের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তাদের পাওয়া যায়নি।

তবে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও ময়মনসিংহ মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি জাহাঙ্গীর আহম্মেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘সুন্দর মহলে রেস্তোরাঁ হওয়ার বিষয়টি আমিও জেনেছি। শুনেছি, ১০ বছরের জন্য চুক্তি করে ভাড়া নেওয়া হয়েছে। প্রতিমাসে ৪০ হাজার টাকা ভাড়া পরিশোধ করতে হবে। তবে এটি একক মালিকানায় নেওয়া হয়নি। যৌথ মালিকানার বিষয়টি জানতে পেরেছি। তবে কে কে মালিকানায় আছেন, তা এখনো জানতে পারিনি।’

জাতীয় পার্টির এই নেতা আরও বলেন, রেস্তোরাঁ দেওয়ার ক্ষেত্রে বজলুর রহমান মিন্টুর সঙ্গে মালিকানায় স্থানীয় বিএনপির কোনো নেতার কিংবা তার অনুসারীর নাম থাকতে পারে। তবে এ নিয়ে কেউই মুখ খুলছেন না।

ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগ করলেন জাতীয় পার্টির শতাধিক নেতাকর্মী

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে ‘সুন্দর মহল’ ভাড়া নেওয়া বজলুর রহমান মিন্টুর মোবাইল নম্বরে থেমে থেমে টানা দুই সপ্তাহ কল দেওয়া হয়। এরমধ্যে একবার কল রিসিভ করেন তিনি। কবে সুন্দর মহল ভাড়া নিয়েছেন? মালিকানায় কতজন? কবে রেস্তোরাঁ চালু হবে? জাগো নিউজের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে এমন প্রশ্ন করতেই বলেন, ‘আমি একটা মিটিংয়ে আছি। এ নিয়ে আপনার সঙ্গে পরে কথা বলা হবে।’

এরপর আরও এক সপ্তাহ বিভিন্ন সময় তার নম্বরে কল দিলেও রিসিভ করেনি তিনি। পরে হোয়াটসঅ্যাপে প্রশ্ন করা হলেও কোনো কথা বলেননি বজলুর রহমান মিন্টু।

তবে মহলটিতে রেস্তোরাঁ হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বজলুর রহমান মিন্টুর ম্যানেজার আল আমিন। তিনি ময়মনসিংহ সদরের দাপুনিয়াতে অবস্থিত কুটুমবাড়ি রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

আল আমিন জাগো নিউজকে বলেন, “ঢাকা, ময়মনসিংহ সদরের দাপুনিয়া ও জেলার ফুলবাড়ীয়া পৌর শহরে একটি করে ‘কুটুমবাড়ি রেস্টুরেন্ট’ ও ‘কুটুমবাড়ি মিষ্টি’ নামের রেস্তোরাঁ রয়েছে। এগুলোর মালিক বজলুর রহমান মিন্টু। আমাদের আরেকটি শাখা বাড়ানো হচ্ছে। সুন্দর মহলে হবে ওই রেস্তোরাঁ। এটির মালিকানাতেও আছেন বজলুর রহমান মিন্টু। কবে রেস্তোরাঁটি চালু হবে, তা আমরা বলতে পারবো না।”

তিনি আরও বলেন, আমাদের জানামতে বজলুর রহমান মিন্টু কোনো দলের রাজনীতি করেন না। ব্যবসায়ী হিসেবেই পরিচিত তিনি।

ফুলবাড়ীয়ায় ‘কুটুমবাড়ি রেস্টুরেন্ট’ রমজান উপলক্ষে বন্ধ রয়েছে। তবে ‘কুটুমবাড়ি মিষ্টির’ দোকান চালু রয়েছে। এই দোকানের ম্যানেজার এনামুল হক। তিনিও একই ধরনের বক্তব্য দিয়ে জাগো নিউজকে বলেন, ‘সুন্দর মহলে কুটুমবাড়ি নামে রেস্তোরাঁ হবে। কুটুমবাড়ি নামে এটি আমাদের চতুর্থ শাখা। তবে এখনো রেস্তোরাঁর কাজ শুরু হয়নি। কতদিন সময় লাগবে তা আমাদের জানা নেই।

এ বিষয়ে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক (ময়মনসিংহ বিভাগ) ও ময়মনসিংহ মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আবু ওয়াহাব আকন্দ ওয়াহিদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি দেশের বাইরে আছি। বিষয়টি এখনো আমার জানা নেই। বিএনপির কোনো নেতার নামে কিংবা বেনামে সুন্দর মহলের রেস্তোরাঁর মালিকায় আসবে বলে আমার মনে হয় না। এছাড়া এই এলাকায় এবং আলোচিত এই বাসায় (সুন্দর মহল) সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ রেস্তোরাঁ দিতে অনুমতি দেবে কিনা, তাও সন্দেহ রয়েছে। দেশে এসে বিষয়টি জানতে চেষ্টা করবো।’

১৯৫৬ সালে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদে সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন রওশন এরশাদ। এরপর স্বামীর রাজনৈতিক সাহচর্যে এসে পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। এর ধ্যে ১৯৯৬, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসন থেকে, ২০০১ সালে গাইবান্ধা এবং ২০০৮ সালে শ্বশুরবাড়ির এলাকা রংপুর থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন দেশের এই ফার্স্ট লেডি। বেগম রওশন এরশাদ দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেত্রী ছিলেন।

খেলাধুলা

তৃতীয়বারের চেষ্টায় কৃতকার্য হলেন সাকিব আল হাসান। তার বোলিং অ্যাকশনকে বৈধ বলে রায় দিয়েছে ইংল‍্যান্ডের লাফবোরো বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার রিপোর্ট। এখন থেকে যে কোনো পর্যায়ের ক্রিকেটে বোলিং করতে পারবেন সাকিব।

গত বছর সেপ্টেম্বরে প্রথম সাকিবের বোলিং অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। ইংল্যান্ডের কাউন্টিতে সারের হয়ে বোলিং করতে গিয়ে অ‍্যাকশন নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ হন তিনি। ফলে ইসিবি (ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড) যেকোনো পর্যায়ের ক্রিকেটে সাকিবের বোলিংয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়।

এরপর এই লাফবোরোর ল‍্যাবেই প্রথমবারে বোলিংয়ের পরীক্ষা দেন সাকিব। সেই পরীক্ষার রিপোর্ট আসে নেতিবাচক। অর্থাৎ অকৃতকার্য হলেন তিনি। দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দেন ভারতের চেন্নাইয়ে। সেই পরীক্ষায়ও সুসংবাদ পাননি সাকিব। সর্বশেষ তৃতীয়বার পরীক্ষা দিলেন সেই লাফবোরো বিশ্ববিদ্যালয়ের ল‍্যাবে। এবার সেখান থেকে সুসংবাদ পেলেন তিনি।

লাফবোরো বিশ্ববিদ্যালয়ের ল‍্যাবে সাকিবের বোলিং অ্যাকশনের সর্বশেষ পরীক্ষা হয়েছে গত ৯ মার্চ। যার ফলাফল সাকিব জেনেছেন গতকাল, বুধবার। সেই ফল অনুসারে- তার বোলিং অ‍্যাকশন এখন বৈধ।

সর্বশেষ বোলিং পরীক্ষায় সাকিব মোট ২২টি ডেলিভারি দিয়েছিলেন। যার প্রায় সবই ত্রুটিমুক্ত। দু-একটি ডেলিভারিতে সামান্য সমস্যা থাকলেও তা ধরার মধ্যে নেননি লাফবোরোর বিশেষজ্ঞরা।

জানা গেছে, বোলিংয়ের পরীক্ষা দেয়ার জন্য ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ইংল্যান্ডে থাকছেন সাকিব। লন্ডনের কেনিংটন ওভালের কাছের এক হোটেলে প্রায় দুই সপ্তাহ সারে দলের সঙ্গে অনুশীলন করেছেন কিয়া ওভালে। সেই অনুশীলনে সাকিবকে সব ধরনের সহযোগিতা করেছে সারে। প্র্যাকটিস উইকেট, বিশেষজ্ঞ কোচ, জিমনেসিয়াম- সব সুযোগ-সুবিধাই সাকিব পেয়েছেন। সারের উদ্দেশ্য হলো, সাকিবকে দলে নেয়া।

বোলিংয়ের পাশাপাশি সাকিব ব্যাটিং অনুশীলনও করে গেছেন। প্রায় দুই সপ্তাহের অনুশীলনের পর তৃতীয়বারের মত পরীক্ষা অবৈধ বোলিং অ্যাকশনের অভিযোগ থেকে মুক্তি পেলেন তিনি।

বিনোদন

পোশাক কারখানা সংশ্লিষ্ট দেশের ২৪০টি গ্রুপ বন্ধ হয়ে গেছে বলে ব্যবসায়ী অনন্ত জলিল যে দাবি করেছেন, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

বুধবার দিবাগত রাতে প্রেস সচিব তার ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে এ কথা বলেন।

প্রেস সচিব লিখেছেন, অনন্ত জলিলের সরকার থেকে কিছু সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করার আগে সঠিক তথ্য জানা উচিত। পোশাক কারখানার ২৪০টি গ্রুপ বন্ধ হয়ে গেছে বলে তার যে দাবি তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। এ ছাড়া বাংলাদেশি কারখানা প্রতিদিন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, সেটিও অসত্য। হাজার হাজার মানুষ চাকরি হারিয়েছে বলে তার দাবি, সেটিও ভুল তথ্য।

তিনি লেখেন, ‘প্রকৃত তথ্য হলো, গত সাত মাসে বাংলাদেশের রপ্তানি ১১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ও শিল্প পুলিশ রিপোর্ট অনুযায়ী, এই সপ্তাহে গাজীপুর, আশুলিয়া ও সাভারের প্রায় ৯৯ শতাংশ কারখানা খোলা ছিল।’

সরকারের দাবি মিথ্যা হলে অনন্ত জলিলকে তার তথ্য ও পরিসংখ্যান উপস্থাপন করার জন্য অনুরোধ জানান প্রেস সচিব।

আন্তর্জাতিক

ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম শক্তিশালী শাসক ছিলেন মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব। মজার বিষয় হলো, আওরঙ্গজেবের সমাধি নাগপুরে নয় বরং নাগপুর থেকে ৪৫০ কিলোমিটার দূরের এক শহরে অবস্থিত। ২০২৩ সাল পর্যন্ত এই শহরের নাম ছিল আওরঙ্গবাদ। পরে হিন্দু গোষ্ঠীগুলোর চাপে নাম পাল্টে রাখা হয় ছত্রপতি সম্ভোজনগর।

কট্টর হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীগুলো আওরঙ্গজেবকে ভারতের আধুনিক ইতিহাসের অন্যতম নৃশংস খলনায়ক হিসেবে দেখে আসছে। তবে ইতিহাসবিদরা মনে করেন, আওরঙ্গজেবের শাসনকে এত সরলীকরণের সুযোগ নেই।

ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের এক বিধায়ক ও বিজেপি নেতা মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের সমাধি খননের আহ্বান জানান। তারই ধারাবাহিকতায় আওরঙ্গজেবের সমাধি সরিয়ে ফেলার দাবিতে নাগপুরে রাস্তায় নামে কট্টরপন্থি হিন্দু সংগঠন বিশ্ব হিন্দু পরিষদ।

তাদের ভাষ্য, ১৬৫৮ থেকে ১৭০৭ সাল পর্যন্ত নিজের শাসনামলে হিন্দুদের ওপর অত্যাচার করেছেন আওরঙ্গজেব। তার আমলে নানা বৈষম্যের শিকার হয়েছে হিন্দুরা। ভেঙে দেওয়া হয়েছে অনেক মন্দির।

অমিত বাজপেয়ি নামে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের এক মুখপাত্র বলেন, আওরঙ্গজেবের সমাধি আমাদের মাতৃভূমির জন্য কলঙ্ক। আমরা আওরঙ্গজেবের কুশপুত্তলিকা পুড়িয়েছি। পুলিশ আমাদের সামনেই ছিল। যা ঠিক মনে করছি, তা সরকারের কাছে চাওয়া আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার।

স্থানীয় মুসলমানেরা চেয়েছিল, পবিত্র রমজানে এমন বিক্ষোভ বন্ধ হোক। পুলিশের কাছে তারা সেই আরজিও জানিয়েছিল; কিন্তু বিপত্তি বাধায় একটি গুজব। পরিস্থিতি যখন উত্তপ্ত, তখন হঠাৎ চাউর হয়-আওরঙ্গজেবের কুশপুত্তলিকা যে সবুজ কাপড়ে মোড়ানো ছিল, তাতে কোরআনের আয়াত লেখা ছিল। এরপরই ক্ষোভে ফেটে পড়ে স্থানীয় মুসলমানরা। ইফতারের পর কুরআন অবমাননার প্রতিবাদে মিছিল নিয়ে মাঠে নামে তারা। একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।

আসিফ কুরেশি নামের এক আইনজীবী ও মহারাষ্ট্র বার কাউন্সিলের সাবেক চেয়ারপারসন আল-জাজিরাকে বলেন, খুব দ্রুতই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। কারফিউ জারি করা হয়। ধরপাকড় শুরু করে পুলিশ; কিন্তু সমস্যাটা হলো, যারা দাঙ্গায় জড়িয়েছে বা উসকে দিয়েছে এমন মুসলমানদের বদলে যারা নিরপরাধ, নামাজ পড়তে বেরিয়েছিলেন, তাদের অনেককেই আটক করেছে পুলিশ।

এ ঘটনায় আরও আগ্রাসী হয়ে উঠেছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। বাজপেয়ি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, এখন আমরা আরও কঠোর প্রতিবাদ জানাব। মুসলমানেরা ভাবল কিভাবে যে দাঙ্গা শুরু করে আমাদের ভয় দেখাতে পারবে? এ অঞ্চল থেকে আওরঙ্গজেবকে চিরতরে বিদায় করব আমরা।

মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ বলছেন, সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া বলিউড চলচ্চিত্র ‘ছাভা’ এই দাঙ্গাকে প্রভাবিত করেছে। এটি মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের সঙ্গে মারাঠাদের দ্বন্দ্বের ওপর নির্মিত, যেখানে আওরঙ্গজেবকে খলনায়ক হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, এই সিনেমা হিন্দু ধর্মীয় অনুভূতিকে নতুন করে জাগ্রত করে আওরঙ্গজেবের বিরুদ্ধে জনসাধারণের ক্ষোভকে সামনে নিয়ে এসেছে।

আওরঙ্গজেবের সমাধি ভারতের প্রত্নতত্ত্ব সংরক্ষণ-১৯৫৮ আইনের অধীনে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্মারক হিসেবে সংরক্ষিত। এই আইন এই সমাধির অননুমোদিত পরিবর্তন বা ধ্বংসের হাত থেকে সুরক্ষা দেয়।

‘আওরঙ্গজেব: দ্য ম্যান অ্যান্ড দ্য মিথ’ বইয়ের লেখিকা অড্রে টাস্কি বলেন, নিজের ভাই ও বাবাকে হত্যা করে সম্রাট হয়েছিলেন আওরঙ্গজেব। কিন্তু ক্ষমতালিপ্সু এই সম্রাট যুদ্ধক্ষেত্রে ছিলেন অপরাজেয়। নিজের সাম্রাজ্যের বিভিন্ন গোষ্ঠীকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন আওরঙ্গজেব। রাজপুত থেকে মারাঠা-সবার সঙ্গে তার সংযোগ ছিল। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদেও তাদের বসান এই সম্রাট।

টাস্কি বলেন, আওরঙ্গজেব তার শাসনামলে ধর্ম নয় বরং, ক্ষমতাকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। যখনই ধর্মীয় অনুশাসন ও ক্ষমতার মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে, তিনি সব সময় ক্ষমতাকেই বেছে নিয়েছেন। আর তা করতেই এই সম্রাট পুনর্বহাল করেন জিজিয়া কর। নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে এই কর দিতে হতো হিন্দুদের। আওরঙ্গজেবের ব্যক্তিত্বে বহু স্তর আছে, যা ব্যাপক বিশ্লেষণের বিষয়।

টাস্কি বলেন, তৎকালীন কোনো শাসকই গণতান্ত্রিক ছিলেন না। আওরঙ্গজেবকে আলাদা করে ঘৃণা করা মূলত তৎকালীন ঔপনিবেশিক যুগের প্রচারেরই পুনরাবৃত্তি। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকেরা নানা কারণে তাকে অপছন্দ করতেন এবং তার বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাতেন। এত বছর পরও তা থেকে বের হতে পারেনি ভারতীয় কট্টর হিন্দুরা।

টাস্কি বলেন, বিজেপি ও আরএসএস যে হিন্দু জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের অংশ, তারা মূলত ঔপনিবেশিক যুগের প্রচারকে পুনরাবৃত্তি করছে।

এই বিরোধিতা এখন ক্রমশ আগ্রাসী, এমনকি সহিংস রূপ নিচ্ছে। গত বছর আওরঙ্গজেবের পোস্টার বহন করায় চারজনকে গ্রেফতার করা হয়। তার আগের বছর অর্থাৎ, ২০২৩ সালের জুনে এই শাসককে নিয়ে ইনস্টাগ্রাম পোস্ট করায় ১৪ বছরের এক মুসলিম কিশোরকে কারাগারে পাঠানো হয়।

২০২২ সালে মোদি সরকার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস বইগুলো থেকে মুঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাসসংক্রান্ত পাঠের অংশ বড় পরিসরে ছেঁটে ফেলে, যার মধ্যে আওরঙ্গজেব ও তার পূর্বপুরুষদের বিভিন্ন অর্জনের তথ্যও ছিল। মোদির সমর্থকদের কাছে আওরঙ্গজেব কেবল অতীতের এক চরিত্র নন; তাদের কাছে এই সম্রাট হিন্দুবিদ্বেষী শাসক, যিনি বহু মন্দির ধ্বংস করেছেন বলে তাদের দাবি। তবে, তিনি বেশ কিছু হিন্দু মন্দিরের জন্য জমি ও আর্থিক অনুদানও দিয়েছিলেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায়।

এখন, হিন্দু জাতীয়তাবাদীরা উত্তর প্রদেশের বারাণসীর জ্ঞানবাপী মসজিদের মালিকানা দাবি করছে। তারা বলছে, এই মসজিদ ১৬৬৯ সালে আওরঙ্গজেবের আদেশে ধ্বংস হওয়া বিশাল বিষ্ণুনাথ মন্দিরের ধ্বংসাবশেষের ওপর নির্মিত। ২০২২ সালে বারাণসীর এক অনুষ্ঠানে মোদি বলেছিলেন, ‘আওরঙ্গজেব বর্বরতা, সন্ত্রাস ও তলোয়ারের জোরে সভ্যতা বদলাতে চেয়েছিল। ধর্মান্ধতার মাধ্যমে ধ্বংস করতে চেয়েছিল সংস্কৃতিকে। এরপরও তিনি বহুবার আওরঙ্গজেবের প্রসঙ্গ তুলেছেন।

জাতীয়

কুষ্টিয়ায় আন্দোলনকারীদের হত্যাচেষ্টা মামলায় সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও সাবেক সংসদ সদস্য সেলিম আলতাফ জর্জের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।

মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে কুষ্টিয়া কারাগার থেকে তাদের কুষ্টিয়া আদালতে আনা হয়।

ধার্য দিনে কুষ্টিয়া সদর আমলি আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদা সুলতানার আদালতে তাদের হাজির করা হয়। এজলাসের কাঠগড়ায় হাতকড়া পরিয়ে রাখায় হট্টগোল ও পুলিশের সঙ্গে তর্কে জড়ান ইনু। পরে ইনুর হাতকড়া খুলে দেন পুলিশ।

এ সময় সাবেক এমপি জর্জ এনিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। জর্জের হাতকড়া খুলে দিতে গেলেও পুলিশকে খুলতে দেননি তিনি।

হাজিরার ধার্য দিনে শুনানি শেষে বিচারক তাদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো আদেশ দেন। এরপর দুপুর ২টা ১৬ মিনিটে আদালত থেকে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। কড়া নিরাপত্তায় তাকে আদালতে হাজির করা হয় এবং আদালত থেকে কারাগারে পাঠানো হয়। তাদের দেখতে আদালতে জাসদ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা উপস্থিত হন। আদালতে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল।

প্রত্যক্ষদর্শী ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বলেন, ধার্য দিনে ইনু ও জর্জকে প্রিজনভ্যানে করে কড়া নিরাপত্তায় কারাগার থেকে আদালতে আনা হয়। এরপর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনের দ্বিতীয়তলায় এজলাস কক্ষের কাঠগড়ায় তোলা হয়। এ সময় ইনু ও জর্জের হাতে হাতকড়া পরানো ছিল। হাতকড়া পরানো অবস্থায় কাঠগড়ায় উঠানো নিয়ে ইনু ও জর্জ পুলিশের সঙ্গে তর্কে জড়ান এবং হট্টগোলের ঘটনা ঘটে। কাঠগড়ায় হাতকড়া পরিয়ে রাখার আইনি বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন জর্জ ও ইনু। পরে ইনুর হাতকড়া খুলে দেন পুলিশ। জর্জের হাতকড়া পুলিশ খুলে দিতে গেলেও তিনি খুলতে দেননি। তবে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জর্জ।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের ইসলামিয়া কলেজ এলাকায় আন্দোলনকারীদের গুলি করে ও এলোপাতাড়ি মারপিট করে ছাত্র-জনতাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। এতে বেশ কয়েকজন আহত হন। এ ঘটনায় গত ৩০ সেপ্টেম্বর আহত আন্দোলনকারী শরিফুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা করেন।

এ মামলার ৩৩ নম্বর আসামি সাবেক সংসদ সদস্য সেলিম আলতাফ জর্জ এবং ৩৭ নম্বর আসামি সাবেক তথ্য মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। সেলিম আলতাফ জর্জ কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য।

আদালত পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কুষ্টিয়া মডেল থানার আন্দোলনকারীদের হত্যাচেষ্টা মামলায় ধার্য দিনে ইনু ও জর্জকে কুষ্টিয়া চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। আদালতের বিচারক তাদের দুজনের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পরে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে কুষ্টিয়া সদর আমলি আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (জিআরও) এসআই ইস্কান্দার আলী বলেন, ধার্য দিনে তাদের আদালতে হাজির করা হয়েছিল। তাদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছে আদালত। পরে তাদের আদালত থেকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

আন্তর্জাতিক

পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের বোলান এলাকায় একটি ট্রেনে হামলা চালিয়ে ১৮২ জনকে জিম্মি করেছে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। জিম্মি ব্যক্তিদের মধ্যে সেনাসদস্যরাও রয়েছেন বলে জানিয়েছে তারা। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা এই অঞ্চল ছেড়ে না গেলে সব জিম্মিকে হত্যা করা হবে বলে হুমকি দিয়েছে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা।

সন্ত্রাসী হামলার শিকার ট্রেনটির নাম ‘জাফফার এক্সপ্রেস’। মঙ্গলবার সেটি বেলুচিস্তানের রাজধানী কোয়েটা থেকে খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের পেশওয়ার শহরে যাচ্ছিল। তখন ট্রেনটিতে হামলা চালানো হয়। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ট্রেনটিতে প্রায় ৪০০ যাত্রী ছিলেন। সেটি এখন একটি সুড়ঙ্গের ভেতরে আটকে আছে। ট্রেনের চালক গুরুতর আহত হয়েছেন।

ট্রেনটিতে হামলা চালানো বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর নাম বেলুচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ)। বেলুচিস্তান প্রদেশের স্বাধীনতা চায় তারা। এ নিয়ে দশকের পর দশক ধরে গোষ্ঠীটি সরকারের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে আসছে। বিএলএর দাবি, বেলুচিস্তানের গ্যাস ও খনিজ সম্পদ অন্যায্যভাবে ভোগদখল করছে সরকার।

পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা জানিয়েছেন, ট্রেন আটকে থাকা ওই সুড়ঙ্গের কাছে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। সেখানে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে তাদের গোলাগুলি চলছে। ব্যাপক গোলাগুলির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বেলুচিস্তান সরকারের মুখপাত্র শহীদ রিনাও। ঘটনাস্থলে উদ্ধারকারী দল পাঠানো হচ্ছে।

বিএলএ জানিয়েছে, তাদের কাছে ট্রেনের ১৮২ জন যাত্রী জিম্মি রয়েছেন। এর মধ্যে সেনাসদস্য ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা রয়েছেন। এ ছাড়া তারা ২০ সেনাসদস্যকে হত্যা করেছে এবং ১টি ড্রোন ভূপাতিত করেছে। বিএলএর এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেনি পাকিস্তানের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

এদিকে সাংবাদিককের কাছে একটি বিবৃতি ই–মেইল করেছে বিএলএ। বিবৃতিটি বার্তা আদান–প্রদানের অ্যাপ টেলিগ্রামেও প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে গোষ্ঠীটি বলেছে, বেসামরিক যাত্রী, বিশেষ করে নারী, শিশু, বৃদ্ধ ও বেলুচ নাগরিকদের নিরাপত্তার সঙ্গে মুক্তি দেওয়া হয়েছে এবং চলে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। তবে সামরিক হস্তক্ষেপ জারি থাকলে সব জিম্মিকে হত্যা করা হবে।

ট্রেনে হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নাকভি। তিনি বলেছেন, নিরপরাধ যাত্রীদের ওপর যেসব পশু হামলা চালিয়েছে, তাদের কোনো ছাড় দেবে না সরকার।

রাজনীতি

সংবিধান সংস্কার কমিশন একটি কার্যকর গণতন্ত্র, মৌলিক মানবাধিকার সুনিশ্চিতকরণ এবং জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সাতটি প্রধান বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে সুপারিশ করা হয়েছে।

কমিশন সাংবিধানিক সংস্কারে যে সাতটি উদ্দেশ্য নির্ধারণ করে সুপারিশ করেছে,

১) দীর্ঘ সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধের প্রতিশ্রুত উদ্দেশ্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার এবং ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের আলোকে বৈষম্যহীন জনতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা।

২) ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুথানের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত অংশগ্রহণমূলক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটানো।

৩) রাজনীতি এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় সর্বস্তরে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণের ব্যবস্থা।

৪) ভবিষ্যতে যেকোনো ধরনের ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থার উত্থান রোধ। ৫) রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গ-নির্বাহী বিভাগ, আইনসভা এবং বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ ও ক্ষমতার ভারসাম্য আনয়ন।

৬) রাষ্ট্রক্ষমতা ও প্রতিষ্ঠানসমূহের বিকেন্দ্রীকরণ ও পর্যাপ্ত ক্ষমতায়ন।

৭) রাষ্ট্রীয়, সাংবিধানিক এবং আইন দ্বারা সৃষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের কার্যকর স্বাধীনতা ও স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিতকরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা

এই উদ্দেশ্যসমূহ নির্ধারণে কমিশন ১০ এপ্রিল ১৯৭১-এ জারিকৃত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে রাজনৈতিক অঙ্গীকার অর্থাৎ সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার এবং ২০২৪ সালের ফ্যাসিবাদবিরোধী গণঅভ্যুত্থানের জন-আকাঙ্ক্ষা অর্থাৎ একটি বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনকে ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করেছে।

পাশাপাশি কমিশন ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধকে বাংলাদেশের মানুষের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার ও মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা এবং বৈষম্যবিরোধী সংগ্রামের দীর্ঘ ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে বিবেচনা করেছে। এই সব আকাঙ্ক্ষা এবং সংগ্রামের মর্মবস্তুকে সাংবিধানিক-প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার লক্ষ্যেই সংবিধানের সংস্কার প্রস্তাব তৈরি করেছে কমিশন।

ক্ষমতার প্রাতিষ্ঠানিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠায় প্রধানমন্ত্রীর একচ্ছত্র ক্ষমতা কমানোসহ সংবিধানে আমূল পরিবর্তনের সুপারিশ করে প্রতিবেদন দাখিল করেছে সংবিধান সংস্কার কমিশন। একজন ব্যক্তি দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না।

অধ্যাপক আলী রীয়াজের নেতৃত্বে সংবিধান সংস্কার কমিশন ১৫ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে তাদের সংস্কারের সুপারিশ সংবলিত প্রতিবেদন জমা দেন। সুপারিশের সারসংক্ষেপ পরে কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।

সংবিধানের মূলনীতি ও সংসদের কাঠামোতে পরিবর্তন, অন্তর্বর্তী সরকারের কাঠামো, মৌলিক অধিকারের পরিসর বাড়ানো, বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ, স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করা, জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলসহ সংবিধানের নানা ক্ষেত্রে পরিবর্তনের সুপারিশ করেছে সংবিধান সংস্কার কমিশন।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসেবে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ১১ সেপ্টেম্বর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, পুলিশ ও দুর্নীতি দমন বিষয়ে সংস্কারের জন্য ছয়টি কমিশন গঠনের কথা জানান। এরই ধারাবাহিকতায় ৭ অক্টোবর অধ্যাপক আলী রীয়াজকে প্রধান করে সংবিধান সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছিল।

রাজনীতি

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও মানবিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রশ্নে সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন।

তিন বলেন, ‘আমাদের ভিন্ন-ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শ থাকতেই পারে। কিন্তু গণতন্ত্র পুন:প্রতিষ্ঠা ও একটি মানবিক বাংলাদেশ পড়ে তোলার প্রশ্নে আমরা সবাই ঐকমত্য।’

তারেক রহমান আজ মঙ্গলবার বিকেলে ন্যাশনালিস্ট ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (এনডিএম) আয়োজিত ইফতার মাহফিলে লন্ডন থেকে ‘ভার্চ্যুয়াল প্ল্যাটফর্মে’ প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন।

গুলশান শুটিং ক্লাবে রাজনীতিবিদ ও নাগরিকদের সম্মানে এনডিএম এ ইফতার পার্টির আয়োজন করে।

‘নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যে নিয়ন্ত্রণ, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে না পারলে দেশের সম্ভাবনা শেষ হয়ে যাবে’ উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘এই মুহূর্তে পত্রিকা খুললে, টেলিভিশনের পর্দায় আমরা দেখি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে কি পরিমাণ দুঃখ-কষ্টে আছে এদেশের অধিকাংশ মানুষ।’

তিনি বলেন, ‘আমরা রাজনৈতিক দলগুলো কোনো ডিবেট করছি না যে, জনগণের রায় আমার পক্ষে এলে আমরা কীভাবে এই ব্যবস্থাটিকে পরিচালনা করব কিংবা নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য মানুষের ক্রয়সীমার মধ্যে রাখব, বাজার ব্যবস্থা সাজাব, উৎপাদন আরও বাড়াব।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘বিএনপি তার পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে মনে করে এই সব বিষয়গুলো অবশ্যই আমাদের জাতির সামনে তুলে ধরা উচিত। শুধু তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা, সাংবিধানিক ব্যবস্থা, ভোটের ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি আরও বেশি আলোচনা হওয়া উচিত মানুষের সমস্যা সমাধান কোন দল কি করবে।’

রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘আসুন জনগণের সমস্যাগুলোর বিষয়ে আমরা চিন্তা করি, কথা বলি। এই ব্যাপারেও আমাদের কি কি সংস্কার আছে সেগুলো সাধারণ মানুষের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা অবশ্যই একে অন্যের বাস্তবধর্মী সমালোচনা করব। কিন্তু সমালোচনা করতে গিয়ে এমন পরিস্থিতিতে যেন সামনে এসে না দাঁড়াই, যেখানে দেশের জনগণের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে আমরা ভুলে যাই। এমন হলে আগামী দিনে দেশ গঠনের সকল সম্ভাবনা শেষ হয়ে যাবে। সুতরাং সমালোচনার ক্ষেত্রে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।’

কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির প্রয়োজনীয় তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘দ্রব্যমূল্য ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে হলে অবশ্যই আমাদের কৃষি উৎপাদন বাড়াতে হবে। কৃষি উৎপাদন কীভাবে বৃদ্ধি করব? শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান শুধুমাত্র খাল খননের মাধ্যমে কৃষি জমিতে উৎপাদন বাড়িয়েছিলেন। যে জমিতে এক ফসল হতো সেখানে দুই-তিন ফসল হয়েছে সঠিক সময়ে পানি সরবরহ করার মাধ্যমে। খাল খননের মাধ্যমে বন্যা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছিলো।’

তারেক রহমান বলেন, ‘২০ কোটি জনসংখ্যার এই দেশের মানুষের একটি প্রাইমারি প্রয়োজন হচ্ছে ন্যূনতম চিকিৎসা ব্যবস্থা। আমরা রাজনৈতিক দলগুলো কীভাবে আমাদের দেশের মানুষের চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করব সে বিষয়গুলো নিয়ে পরিকল্পনা মাফিক কার্যক্রম কেনো তুলে ধরছি না। সেটি কি সংস্কার নয়? আমি যে বাজার ব্যবস্থা ও উৎপাদন ব্যবস্থার কথা বলেছি সেটি কি সংস্কার নয় ?’

‘শুধু একজন ব্যক্তি দুই বারের বেশি প্রধান মন্ত্রী হবেন না’ এটি কী সংস্কার ? এমন প্রশ্ন রেখে তারেক রহমান বলেন, ‘জনগণের সমস্যাগুলো সমাধান করার বিষয়গুলোকে নিয়ে সংস্কার হতে পারে না? আমি একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে মনে করি এগুলো সংস্কারের প্রয়োজন।’

তিনি বলেন, ‘সংস্কার আরও হতে পারে। প্রত্যেকটি দলের কী ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা থাকবে তা জনগণকে জানানো উচিত। উৎপাদনমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। কারণ, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আমরা যদি সঠিক শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে না পারি তাহলে আমাদের পক্ষে এ দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, একটি সমৃদ্ধশালী দেশ গড়ে তোলা সম্ভব না।’

পরিবেশ দূষণ রোধে সংস্কার প্রস্তাব জরুরি উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ‘পরিবেশ দূষণ অত্যন্ত তীব্র মাত্রায় হচ্ছে। সামগ্রিক ভাবে সমগ্র বাংলাদেশে পরিবেশ হুমকির সম্মুখীন। আমরা রাজনৈতিক দলগুলো জাতির সামনে পরিবেশের ব্যাপারে সংস্কার উপস্থাপন করতে পারি, কীভাাবে আমরা আমাদের পরিবেশের উন্নতি ঘটাতে পারি।’

তারেক রহমান বলেন, ‘আমরা পরিবেশ দূষণ কমাতে উদ্যোগ নিতে পারি। এক্ষেত্রে পরিবেশ বিষয়ে সংস্কার প্রস্তাব একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কারণ শব্দ, বায়ুসহ বিভিন্ন দূষণের কারণে প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ মানুষ, শিশু অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে শারীরিকভাবে। এই দূষণ থেকে রাজধানীসহ গোটা দেশকে কীভাবে রক্ষা করতে পারি এ ব্যাপারেও আমাদের পরিকল্পনা জাতির সামনে সকল রাজনৈতিক দলের উপস্থাপন করা উচিত।’

শিল্পায়নের পরিবেশ সৃষ্টি, মানুষের খাবার পানি, মানুষের ব্যবহার্য পানি, পরিবেশ-জ্বালানি প্রভৃতি ইস্যুতে করণীয় সংস্কার রাজনৈতিক দলগুলোর চিহ্নিত করা উচিত বলে মন্তব্য করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।

এনডিএম’র চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, বিএনপি’র মাহাদী আমিন, এবি পার্টির মজিবুর রহমান মঞ্জু, নাগরিক ঐক্যের শহীদুল্লাহ কায়সারসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতারা ইফতারপূর্ব এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

আন্তর্জাতিক

অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার দুই সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, বোন শেখ রেহানা, বোনের দুই সন্তান টিউলিপ সিদ্দিক ও রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববির নামে থাকা জমিসহ বাড়ি ও ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত।

দুদকের হিসাব অনুযায়ী এসব সম্পদের বাজারমূল্য আট কোটি ৮৫ লাখ ২৫ হাজার ৩২০ টাকা।

দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (১১ মার্চ) ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন। সংস্থাটির জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
মঙ্গলবার দুদকের উপ-পরিচালক মনিরুল ইসলাম এসব এসব সম্পদ জব্দের আবেদন করেন।

আবেদনে বলা হয়, অভিযোগ-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি শেখ হাসিনা, সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, শেখ রেহানা, রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ও টিউলিপ সিদ্দিক তাদের স্থাবর সম্পদ অন্যত্র হস্তান্তর, স্থানান্তর বা বেহাত করার চেষ্টা করছেন। এ অবস্থায় অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধান শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের এসব স্থাবর জব্দ করা হোক।

শুনানি শেষে আদালত সেই আবেদন মঞ্জুর করে আদেশ দেন।

যেসব সম্পদ জব্দ করার আদেশ দেওয়া হয়েছে— টিউলিপ সিদ্দিকের নামে থাকা গুলশানের ফ্ল্যাট, বাজারমূল্য ৪৩ লাখ ২৪ হাজার ৯২০ টাকা। জয় ও পুতুলের নামে ধানমন্ডিতে থাকা ১৬ কাঠা জমিসহ বাড়ি ‘সুধা সদন’, বাজারমূল্য তিন কোটি ৩০ লাখ টাকা।

শেখ রেহানার নামে থাকা গাজীপুরে আট লাখ ৭৫ হাজার ৫০০ টাকা দামের সাড়ে আট কাঠা জমি, গাজীপুরে আরেক জায়গায় তিন লাখ টাকা দামের এক দশমিক ৫৫ শতাংশ জমি এবং সেগুনবাগিচায় ১৮ লাখ টাকার ফ্ল্যাট।

রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববির নামে গুলশানে থাকা ছয়টি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ হয়েছে। এসব ফ্ল্যাটের বাজারমূল্য চার কোটি ৮২ লাখ ১০ হাজার টাকা।

আন্তর্জাতিক

সম্প্রতি পাকিস্তান সেনা বাহিনীতে যুক্ত হয়েছে স্বল্পপাল্লার একটি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। পাক-ভারত সীমান্তের নিয়ন্ত্রণরেখায় (লাইন অব কন্ট্রোল বা এলওসি) সেই অস্ত্র মোতায়েন করেছেন ইসলামাবাদ। তবে এ ক্ষেপণাস্ত্রটি ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এস-৪০০-এর জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ বলে উল্লেখ করেছেন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকেরা।

শত্রুর ক্ষেপণাস্ত্রকে মাঝ আকাশে ধ্বংস করতে রাশিয়ার তৈরি ‘এস-৪০০’-এর ওপর মূলত ভরসা রেখেছে ভারতীয় বিমান বাহিনী। বর্তমানে এর তিনটি ইউনিট মোতায়েন রয়েছে পাকিস্তান ও চীন সীমান্তে।

দেশটির সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ‘ফতেহ টু’ ক্ষেপণাস্ত্রটির প্রথম পরীক্ষা চালান পাকিস্তানের সেনাকর্মকর্তারা। গত বছরের মে মাসে সৈনিকদের এ অস্ত্রটি চালানোর প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়।

ইসলামাবাদের দাবি, বর্তমান সময়ের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাগুলোর ‘অ্যান্টিডট’ হিসেবে এ অস্ত্রটিকে তৈরি করা হয়েছে। অর্থাৎ চোখের নিমেষে ‘এস-৪০০’ র কবচ ভেদ করে ভারতীয় সীমান্তবর্তী সেনা ঘাঁটিগুলোতে আক্রমণ হানতে পারবে ‘ফতেহ টু’।

এ ক্ষেপণাস্ত্রটি ৪০০ কিলোমিটার পর্যন্ত লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম বলে জানা গেছে। যুদ্ধের সময়ে এর সাহায্যে গুরুত্বপূর্ণ সেতু, সেনাছাউনি, যোগাযোগ ব্যবস্থা, কমান্ড এবং কন্ট্রোল সেন্টার, এমনকি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকেও ওড়ানো যাবে বলে দাবি করেছে ইসলামাবাদ।

‘এস-৪০০’কে ধ্বংস করার কথা মাথায় রেখেই নাকি অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ‘ফতেহ টু’ নির্মাণের ছাড়পত্র দিয়েছে পাক সেনাসদর দপ্তর।

চলতি বছরের ৩ মার্চ ‘ফতেহ টু’ নিয়ন্ত্রণরেখা বা এলওসির কাছে মোতায়েনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয় ইসলামাবাদ। এর সাহায্যে পাক সেনারা যে ভারতের মজবুত প্রতিরক্ষার বেড়াজাল ভাঙতে চাইছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে শাহবাজ শরিফ সরকারের এ সিদ্ধান্ত ভারতীয় উপমহাদেশে অস্ত্রের প্রতিযোগিতায় হাওয়া দিল বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞেরা।

পাকিস্তানের সরকারি সংস্থা ‘গ্লোবাল ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যান্ড ডিফেন্স সলিউশন’-এর (জিআইডিএস) হাত ধরে জন্ম হয়েছে ‘ফতেহ টু’র। এর আগে ‘ফতেহ-১’ নামের একটি ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করে এই সংস্থা, যার পাল্লা ছিল মাত্র ১৪০ কিলোমিটার। ওই সময় থেকেই হাতিয়ারটির পাল্লা বৃদ্ধির চেষ্টা চালাচ্ছিলেন ইসলামাবাদের প্রতিরক্ষা গবেষকেরা।

নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে ‘ফতেহ টুর’ মোতায়েন নিয়ে ইতোমধ্যে সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খুলেছে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার নিয়ন্ত্রণাধীন ‘ইন্টার সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশনস’ বা আইএসপিআর।

তাদের কথায়, ‘এ ক্ষেপণাস্ত্রে রয়েছে অত্যাধুনিক দিক নির্দেশকারী ব্যবস্থা (নেভিগেশন সিস্টেম)। এটিকে কৃত্রিম উপগ্রহের সাহায্যে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। যে কায়দায় এটি উড়বে, তাতে কোনো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার পক্ষেই একে চিহ্নিত করা সম্ভব নয়।’

উল্লেখ্য, বিশেষ ধরনের একটি গাড়ির ওপরে লঞ্চারে ‘ফতেহ টু’ ক্ষেপণাস্ত্রটিকে রাখা হয়েছে। ফলে যুদ্ধের সময়ে দ্রুত একে এক জায়গা থেকে অন্যত্র নিয়ে যেতে পারবে পাকিস্তান আর্মি। ওই গাড়ি এবং লঞ্চার ইসলামাবাদকে চীনা প্রতিরক্ষা সংস্থা সরবরাহ করেছে বলে জানা গেছে। যদিও এ ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য দেয়নি আইএসপিআর।

ভারতের আকাশকে সুরক্ষিত করতে ২০২১ সালে রাশিয়ার সঙ্গে ‘এস ৪০০’ প্রতিরক্ষা চুক্তি করে নয়াদিল্লি। দেশটির বিমান বাহিনীর হাতে অস্ত্রটি তুলে দিতে ৫৪০ কোটি ডলার খরচ করতে হয়েছে ভারতকে।

রুশ ‘এস-৪০০’কে দুনিয়ার আধুনিকতম ‘ভূমি থেকে আকাশ’ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা (সারফেস টু এয়ার মিসাইল সিস্টেম) বলে গণ্য করা হয়। গত তিন বছর ধরে চলা ইউক্রেন যুদ্ধে বেশ কার্যকর ব্যবহার দেখা গেছে এটির।

বিশ্লেষকদের একাংশের দাবি, মস্কোসহ অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ শহরকে যে ক্ষেপণাস্ত্রের সাহায্যে কিয়েভ নিশানা করতে পারেনি, তার অন্যতম কারণ হল ‘এস-৪০০’। সেগুলোকে মাঝ আকাশেই ধ্বংস করেছে ক্রেমলিনের এ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।

বিশ্লেষকদের দাবি, এস-৪০০ ভেদ করার একমাত্র উপায় হল, ‘ফতেহ টুর’ মতো কয়েকশো ক্ষেপণাস্ত্র একসঙ্গে ছুড়ে দেওয়া। পাশাপাশি ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে আসবে আত্মঘাতী ড্রোন। সেক্ষেত্রে সব কটি ক্ষেপণাস্ত্রকে মাঝ আকাশে ধ্বংস করা ‘এস-৪০০’র পক্ষে সম্ভব হবে না। আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার এই গলদ গত দেড় বছর ধরে চলা পশ্চিম এশিয়ার যুদ্ধে নজরে এসেছে। পাক জেনারেলরা সেটাই ভারতের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করলে আশ্চর্য হওয়ার কিছু থাকবে না।

বিশেষজ্ঞদের অনুমান, ‘এস-৪০০’কে সরাসরি নিশানা না করে এর সঙ্গে যুক্ত রাডার এবং কমান্ড-কন্ট্রোল সিস্টেমকে ওড়ানোর ছক কষতে পারে পাকিস্তান বাহিনী। তাতে সাফল্য পেলে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাটি হাতে থাকা সত্ত্বেও সেটিকে ব্যবহার করতে পারবে না বিমান বাহিনী। একেও নয়াদিল্লির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করা হচ্ছে।

স্বল্পপাল্লার ‘ফতেহ টু’ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে পাঞ্জাব এবং রাজস্থানের বিমান ঘাঁটিগুলোকে নিশানা করতে পারে দেশটির সেনারা। গত কয়েক বছরে জম্মু-কাশ্মীরে সিন্ধু নদীর একাধিক শাখা নদীতে বাঁধ ও বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করেছে নয়াদিল্লি। ‘ফতেহ টু’র নিশানায় সেগুলোও থাকবে বলে জানা যাচ্ছে। অস্ত্রটি ইতোমধ্যেই সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছে ইসলামাবাদ।