রাজনীতি

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের ওপর হামলার প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ-মহাসড়ক অবরোধ করেছেন দলটির নেতাকর্মীরা।

কাকরাইলে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার (৩০ আগস্ট) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় ওই এলাকায় উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। বিক্ষোভকারী ও পুলিশের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শনিবার বিকালে একদল বিক্ষোভকারী মিছিল নিয়ে কাকরাইল মোড় হয়ে জাতীয় পার্টির অফিস পার হওয়ার সময় পুলিশের দিকে ইট-জুতা নিক্ষেপ করতে থাকে। এর কিছুক্ষণ পর তারা সড়কে অগ্নিসংযোগ করে। পরে তারা জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে হামলা করে এবং আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ করে পুলিশ।

এর আগে কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন জাপা একাংশের মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী। গতকালের ঘটনার বিষয়ে তিনি বলেন, মশাল মিছিলের নামে শুক্রবার জাতীয় পার্টির অফিসে আগুন দিতে আসেন বেশ কয়েকজন। ওই সময় আগুনে পুড়ে যাওয়ার হাত থেকে নেতাকর্মীদের রক্ষা করেছে সেনাবাহিনী ও পুলিশ। দেশের মঙ্গলের জন্য সেনাবাহিনীর আরও দৃশ্যমান হওয়া উচিত।

প্রসঙ্গত, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের ওপর হামলার প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ-মহাসড়ক অবরোধ করেছেন দলটির নেতাকর্মীরা।

এর আগে শুক্রবার (২৯ আগস্ট) সন্ধ্যায় রাজধানীর বিজয়নগরে জাতীয় পার্টি ও গণঅধিকার পরিষদের সংঘর্ষের পরে রাত সাড়ে ৯টার দিকে মশাল মিছিল করেন গণঅধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীরা।

এরপর বিজয়নগরে দলীয় কার্যালয়ের সামনে গণঅধিকার পরিষদের নেতারা ব্রিফিং করতে গেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী লাঠিপেটা করে বলে দলটির সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান দাবি করেন।

এ হামলায় গুরুতর আহত অবস্থায় গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

অর্থনীতি

বহু ব্যাংকে জমা রাখা গচ্ছিত অর্থ তুলতে পারছেন না সাধারণ গ্রাহকরা। পাঁচটি বেসরকারি ব্যাংক কার্যত নামেমাত্র টিকে আছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দীর্ঘদিনের অনিয়ম, লুটপাট, দুর্বল ব্যবস্থাপনা এবং সরকারের উদাসীনতার ফলেই এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। একসময় বাংলাদেশ ব্যাংক দুর্বল ব্যাংকগুলোকে টিকিয়ে রাখতে আর্থিক সহায়তা দিলেও এখন সেই সহায়তা বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে এক্সিম ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের মতো একাধিক ব্যাংক কার্যত দেউলিয়া অবস্থায় পৌঁছেছে।

এই ব্যাংকগুলোর গ্রাহকরা এখন চরম দুর্ভোগে। কেউ কয়েক হাজার টাকার বেশি তুলতে পারছেন না, আবার অনেকে কোনো টাকা তুলতেই পারছেন না। রাজধানীর মতিঝিল, হাটখোলা, বনানী ও মিরপুরের বিভিন্ন শাখায় প্রতিদিনই গ্রাহকদের দীর্ঘ লাইন দেখা যাচ্ছে। কিন্তু টাকা না পেয়ে তারা ক্ষোভ, হতাশা আর কান্নায় ভেঙে পড়ছেন।

মতিঝিলের গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের একজন গ্রাহক আবেগে ভেঙে পড়ে বলেন, ছেলের স্কুল ফি দিতে এসেছিলাম, কিন্তু টাকা পেলাম না। ব্যাংকের লোকজন শুধু কাল-পরশুর আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছেন।

অন্যদিকে ইউনিয়ন ব্যাংকের হাটখোলা শাখায় দেখা গেছে, গ্রাহকদের ভিড় থাকলেও কর্মকর্তারা অসহায়ভাবে জানাচ্ছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক সহায়তা বন্ধ করায় এক মাসের বেশি সময় ধরে তারা কোনো অর্থ ফেরত দিতে পারছেন না। অনেক কর্মকর্তা এমনকি নিজেদের বেতনও পাচ্ছেন না।

অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ব্যাংক খাতের এই সংকট একদিনে তৈরি হয়নি। বছরের পর বছর রাজনৈতিক প্রভাব, খেলাপি ঋণ, কাগুজে ব্যবসায়ীকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ দেওয়া, আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রণহীনতা এবং বড় ধরনের দুর্নীতির কারণে এখন এই দশা।

বাংলাদেশ ব্যাংক অবশ্য বলছে, দুর্বল ব্যাংকগুলোকে ধাপে ধাপে মার্জার ও সংস্কারের আওতায় আনা হবে। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরও সময় লাগবে। কিন্তু তাতে সাধারণ গ্রাহকের দুর্ভোগ কমছে না। প্রতিদিন তারা ব্যাংকে গিয়ে আশাহত হয়ে ফিরছেন, জরুরি প্রয়োজনে টাকা তুলতে না পেরে অনেকেই ধারদেনায় ডুবে যাচ্ছেন।

জাতীয়

কিশোরগঞ্জ শহরের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদে ১০টি লোহার সিন্দুক ও ৩টি ট্রাঙ্কের দানবাক্স খোলা হয়েছে। গণনা শেষে ১২ কোটি ৯ লাখ ৩৭ হাজার ২০৩ টাকা পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে কতৃপক্ষ।

শনিবার (৩০ আগস্ট) রাত ৮টার দিকে এ তথ্য জানিয়েছেন রূপালী ব্যাংক ও মসজিদ কমিটির সদস্যরা।

এর আগে ৪ মাস ১৮দিন পর শনিবার সকাল ৭টায় দানবাক্সগুলো খুলে ৩২ বস্তা টাকা পাওয়া যায়। দুপুর আড়াইটা বিরতির সময় পর্যন্ত ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা গণনা করা হয়।

মসজিদ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য, মসজিদ কমপ্লেক্সে অবস্থিত মাদ্রাসা ও এতিমখানার শিক্ষক-শিক্ষার্থী, পার্শ্ববর্তী জামিয়া এমদাদিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থী, রূপালী ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মাচারীসহ চার শতাধিক মানুষের একটি দল টাকা গণনার কাজে অংশ নিয়েছেন। তিন মাস পর পর দানবাক্সগুলো খোলার কথা থাকলেও মাদ্রাসা-কলেজের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষাজনিত কারণে এবার ৪ মাস ১৮ দিন পর দানবাক্স গুলো খোলা হয়। এ কারণে এবার নতুন করে বসানো হয়েছে আরও ৩টি দানবাক্স।

এর আগেও অনিবার্য কারণে ৪ মাস ১২দিন পর চলতি বছরের ১২ এপ্রিল পাগলা মসজিদের দানবাক্সগুলো খুলে ৯ কোটি ১৭ লাখ ৮০ হাজার ৬৮৭ টাকা পাওয়া যায়। এছাড়াও পাওয়া গিয়েছিল বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালংকার। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও দানবাক্স খোলা কমিটির আহ্বায়ক এরশাদুল আহমেদ এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।

কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফৌজিয়া খান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মিজাবে রহমত ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী, জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির অধ্যাপক মো. রমজান আলীর উপস্থিতিতে দানবাক্সগুলো খোলা হয়। এছাড়াও বিপুল সংখ্যক সেনাবাহিনী, পুলিশ ও আনসার সদস্য উপস্থিত ছিলেন।

মসজিদ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান বলেন, আমরা দানবাক্স থেকে প্রাপ্ত টাকায় পাগলা মসজিদ কমপ্লেক্সের মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানার এবং শিক্ষক-কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদি নির্বাহের পাশাপাশি অন্য মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানা এমনকি দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থী ও দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত লোকজনকে সহায়তা করে থাকি।

তবে, পাগলা মসজিদ কমপ্লেক্সটিকে একটি আন্তর্জাতিক মানের সর্বাধুনিক ইসলামিক কমপ্লেক্স তৈরির মাস্টারপ্ল্যানও হাতে নিয়েছি। এজন্য পাগলা মসজিদের তহবিলে ইতোমধ্যেই ৯১ কোটি টাকা জমা আছে।

কিশোরগঞ্জ শহরের মাঝপথ দিয়ে প্রবাহিত নরসুন্দা নদী সংলগ্ন হারুয়া এলাকায় অবস্থিত প্রায় দু’শ বছরের অধিক সময়ের পুরোনো এ পাগলা মসজিদ। শহরের হয়রত নগর জমিদার বাড়ির পূর্ব পুরুষ আধ্যাত্মিক সাধক-পাগল হিসাবে পরিচিত জিল কদর খান এক সময় নরসুন্দা নদীর মাঝপথে জেগে ওঠা উঁচু টিলাতে তার আস্তানা গড়ে তুলেন। তার দেহাবসানের পর আস্তানাটি মসজিদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। মসজিদটি এ কারণে সারা দেশের মানুষের কাছে পাগলা মসজিদ হিসাবে পরিচিত হয়ে ওঠে। এখন ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশবিদেশের মানুষের আস্থা-বিশ্বাসের শেষ ঠাঁই হিসেবে বিবেচিত হয়ে উঠেছে এ মসজিদ।

রাজনীতি

মালয়েশিয়া আসিয়ান ও জনবহুল দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বৃহত্তর অর্থনৈতিক সংযোগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মাধ্যমে ‘বেনিফিশিয়ারি উইন্ডো’ যা সুবিধাভোগী জানালা হতে পারে বলে জানিয়েছেন নোবেল বিজয়ী প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

মালয়েশিয়া সফরকালে দেশটির সরকারি বার্তা সংস্থা বারনামাকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বারনামাকে বলেছেন, মালয়েশিয়া ও আসিয়ানের জন্য ঢাকার গুরুত্ব অপরিসীম। শুধুমাত্র বাংলাদেশ ও আশেপাশের এলাকায় জনসংখ্যা ১৭ কোটির বেশি, যা একটি বিশাল লাভজনক কনজিউমার মার্কেট। একইসঙ্গে দেশের বিপুল মানবসম্পদ আঞ্চলিক উৎপাদনেরও বড় সুযোগ এনে দিতে পারে।

এ ছাড়া তিনি আঞ্চলিক গুরুত্বের চিত্র তুলে ধরে বলেছেন, বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান আঞ্চলিক বাণিজ্যে এক অনন্য ভূমিকা পালন করতে পারে, বিশেষ করে স্থলবেষ্টিত ভুটান ও নেপাল এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ‘সেভেন সিস্টার্স’ রাজ্যগুলোর জন্য, যাদের সরাসরি সমুদ্রপথ নেই।

অর্থনৈতিক সুবিধার ক্ষেত্রে সমুদ্র পথের কথা উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেছেন, ‘অনেক অর্থনৈতিক সুবিধা বাংলাদেশে গড়ে তোলা যেতে পারে কারণ এখান থেকে সমুদ্রে পৌঁছানো সহজ। যেসব দেশের সরাসরি সমুদ্রপথ নেই, আমরা তাদের জন্য বিশ্বের সাথে সংযোগের পথ হয়ে উঠি। এর মানে মালয়েশিয়া বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে এক বিস্তৃত দেশের নেটওয়ার্কের সাথে তার অর্থনীতি যুক্ত করতে পারে। ’

গত ১১-১৩ আগস্ট মালয়েশিয়ায় প্রধানমন্ত্রী দাতুক সেরি আনোয়ার ইব্রাহিমের আমন্ত্রণে তিন দিনের সরকারি সফরকালে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং দুই নেতা মালয়েশিয়া–বাংলাদেশ সম্পর্কের অগ্রগতি পর্যালোচনা করেন। আলোচনার মূল বিষয় ছিল বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, শ্রম, শিক্ষা, পর্যটন ও প্রতিরক্ষা, পাশাপাশি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পারস্পরিক স্বার্থের নানা বিষয়।

নোবেল বিজয়ী ইউনূস এ ছাড়া প্রোটন হোল্ডিংস, সানওয়ে গ্রুপ, আজিয়াটা গ্রুপ বিডি এবং খাজানাহ ন্যাশনাল বিডিসহ বেশ কয়েকটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও বিনিয়োগকারীর সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন।
২০২৪ সালের ৮ আগস্ট থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, বিদেশি বিনিয়োগ ও বৈশ্বিক বাণিজ্য বাংলাদেশের উন্নয়নশীল অর্থনীতিকে পুনর্গঠনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ভূটান, নেপাল ও ভারতের সঙ্গে সংযোগের অনুকূল ভৌগোলিক অবস্থান তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এমন সহযোগিতা মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে পারে, যেখানে বাংলাদেশ পণ্য ও সেবার পরিবহনে সহায়তা করবে। আমরা এমন সহযোগিতা চাই যেখানে মালয়েশিয়া হবে ‘বেনিফিশিয়ারি উইন্ডো’ সুবিধাভোগী জানালা যা আমরা একেবারেই সেটাই খুঁজছি। ’

আসিয়ান অর্থনীতিতে বাংলাদেশের সম্ভাবনা উল্লেখ করে ড. ইউনূস বারনামাকে আরও বলেছেন, ‘আসিয়ানভুক্ত দেশগুলো ১৭ কোটির বেশি মানুষের বাজারে প্রবেশাধিকার পাবে, পাশাপাশি আঞ্চলিক উৎপাদন সহায়তার জন্য প্রস্তুত বিপুল কর্মশক্তিও পাবে। এটা শুধু বাজার নয়—এটিই মানবসম্পদের উৎসও। যে কেউ এখানে (বাংলাদেশে) উৎপাদন করতে চাইলে দক্ষ শ্রমিক থেকে শুরু করে ব্যবস্থাপনা পর্যায় পর্যন্ত প্রয়োজনীয় সবকিছু পাবে। ’

তিনি আরও বলেছেন, মিয়ানমারের সঙ্গে গভীর সমুদ্র, মৎস্য আহরণসহ অনেক অনাবিষ্কৃত আরও সহযোগিতার ক্ষেত্র রয়েছে। বাংলাদেশ ও মিয়ানমার একই সমুদ্রসীমা ভাগ করে নিচ্ছে, যা যৌথভাবে কাজে লাগানো গেলে আরেকটি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুযোগ তৈরি হবে। পাশাপাশি সীমান্ত পারের বাণিজ্যকে ফিজিক্যাল ও ডিজিটাল উভয়খাতে সম্প্রসারণের সুযোগ রয়েছে। আমাদের সামনে বিশাল বঙ্গোপসাগর রয়েছে, কিন্তু আমরা কখনো গভীর সমুদ্রে মাছ ধরা শুরু করিনি। যদি মিয়ানমারের সঙ্গে কাজ করি, তাহলে এটা হবে আরেকটি বড় অর্থনৈতিক সুযোগ। ’

তিনি প্রতিবেশীদের গুরুত্ব উল্লেখ করে আরও বলেছেন, বাংলাদেশের অবকাঠামো ও যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রতিবেশী অর্থনীতিগুলোকে বৃহত্তর সরবরাহ চেইনে যুক্ত করতে পারে। এর ফলে শুধু বাণিজ্য বাড়বে না, বিনিয়োগ, প্রযুক্তি বিনিময় এবং সামুদ্রিক শিল্প ও ডিজিটাল পরিষেবার মতো উদীয়মান খাতে যৌথ উদ্যোগের সুযোগও তৈরি হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ইতোমধ্যে আসিয়ানের ‘ট্রিটি অব অ্যামিটি অ্যান্ড কো-অপারেশন ইন সাউথইস্ট এশিয়া’র (টিএসি) অংশীদার, যা দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে আসিয়ানের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার আনুষ্ঠানিক কাঠামো।

বারনামা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ক্রমোন্নতির কথা উল্লেখ করে লিখেছে, আসিয়ান ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক ক্রমোন্নতির পথে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। এ ছাড়া বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়, যা বিশ্বে সাধারণ মূল্যে ৩৫তম এবং ক্রয় স্বক্ষমতা অনুযায়ী ২৫তম অবস্থানে রয়েছে।

অন্যদিকে দক্ষিণ এশিয়ায় মালয়েশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার ও রপ্তানি গন্তব্য হলো বাংলাদেশ। প্রধান রপ্তানি পণ্য হলো পেট্রোলিয়ামজাত দ্রব্য, পাম তেল ও রাসায়নিক দ্রব্য, আর আমদানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে তৈরি পোশাক, জুতা, পেট্রোলিয়ামজাত দ্রব্য ও প্রস্তুত পণ্য। ২০২৪ সালে মালয়েশিয়া-বাংলাদেশ বাণিজ্য ৫ দশমিক ১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন রিঙ্গিত যা ডলার হিসাবে ২ দশমিক ৯২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

জাতীয়

১০ থেকে ১২ বছরের মধ্যে নগদ অর্থবিহীন (ক্যাশলেস) বাংলাদেশ সম্ভব। শুধু নগদ অর্থের মাধ্যমেই দেশের সব মানুষকে ব্যাংকিং নেটওয়ার্কের আওতায় আনা যাবে তা নয়, নগদ অর্থবিহীন লেনদেনের মাধ্যমেও এটি সম্ভব। এটি হলে সরকারের অনেক অর্থ সাশ্রয় হবে। সেই সঙ্গে নোট জালকারীদের তৎপরতা কমে যাবে।

বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত ‘ব্যাংকার্স মিট ২০২৫’ অনুষ্ঠানে বিশ্বখ্যাত ফিনটেক বিশেষজ্ঞ ব্রেট কিং এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সিটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ সদস্য, ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা।

ব্রেট কিং বলেন, মোবাইলভিত্তিক ডিজিটাল আর্থিক সেবা ও ডিজিটাল পরিচয়ভিত্তিক অবকাঠামো গড়ে তুলতে পারলে বাংলাদেশ খুব দ্রুতই নগদ অর্থনির্ভরতা কাটিয়ে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে বড় অগ্রগতি অর্জন করতে পারবে। বাংলাদেশে ব্যাংকিং খাতের উচ্চমাত্রায় খেলাপি ঋণ ও প্রশাসনিক নানা সংকট মোকাবিলায় প্রযুক্তিনির্ভর অবকাঠামো গড়ে তোলা জরুরি।

দেশে প্রথমবার ব্যাংকার্স মিট অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক ফিনটেক প্রতিষ্ঠান ফিলপস লিমিটেড। এতে সহযোগিতা করে সিটি ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক ও এবি ব্যাংক।

ব্যাংকার্স মিটে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নেতারাসহ জ্যেষ্ঠ নির্বাহীরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে ভবিষ্যৎমুখী ডিজিটাল ব্যাংকিং নিয়ে আলোচনা হয়।

অনুষ্ঠানে ব্রেট কিং বলেন, চীন ২০১২ সালে বাংলাদেশের মতোই ছিল নগদ অর্থনির্ভর অর্থনীতির দেশ। এখন দেশটিতে খুচরা লেনদেনে নগদ অর্থের ব্যবহার ১ শতাংশের কম। বাংলাদেশও চাইলে একই পরিবর্তন ১০ থেকে ১২ বছরের মধ্যে সম্ভব। তবে এজন্য ইন্টারনেট ও মোবাইল নেটওয়ার্কের মানোন্নয়ন, কম দামে স্মার্টফোনের প্রাপ্যতা ও ডিজিটাল অবকাঠামোতে বিনিয়োগকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

অনুষ্ঠানে সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাসরুর আরেফিন বলেন, বর্তমানে দেশের জনপ্রিয় ব্যাংকিং অ্যাপগুলোর সংখ্যা হাতে গোনা, যা আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ত্বরান্বিত করার জন্য যথেষ্ট নয়।

সমাপনী বক্তব্যে ফিলপসের প্রধান নির্বাহী (সিইও) বিশ্বাস ধাকাল বলেন, ফিলপস উদীয়মান বাজারে বছরের পর বছর সফলতার মাধ্যমে অর্জিত প্রযুক্তি ও পরিচালন দক্ষতার সমন্বয়ে বাংলাদেশে এসেছে। তারা দীর্ঘ মেয়াদে এখানে থাকতে চান। ব্যাংক, নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও শিল্পের অংশীদারদের সঙ্গে একযোগে কাজ করে ডিজিটাল রূপান্তরকে এগিয়ে নিতে চান।

রাজনীতি

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিন উপলক্ষে রাজধানীর গুলশানে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শুক্রবার বিকালে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

এতে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এছাড়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সালাহউদ্দিন আহমেদ, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন এবং ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, শামসুজ্জামান দুদু, বরকতউল্লাহ বুলু, অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়াও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, আমান উল্লাহ আমান, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল ও খায়রুল কবির খোকনসহ দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা অংশ নেন।

দোয়া মাহফিলে খালেদা জিয়ার সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করা হয়।

জাতীয়

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সংস্কার সংস্কার করে কালক্ষেপণ করলে ভয়ংকর বিপদ নেমে আসবে, মহাবিপদ ডেকে আনবে। ফখরুদ্দীন-মইনুদ্দিন সরকারের সংস্কার আমরা দেখেছি। সে সংস্কারের পর শেখ হাসিনার দানব সরকার এসেছিল। জাতি পেয়েছিল ভয়ংকর দুঃশাসন। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ৮১তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে শুক্রবার স্বেচ্ছাসেবক দল আয়োজিত দোয়া মাহফিলে এ কথা বলেন তিনি।

রিজভী বলেন, আমরা ১/১১ সরকারের সংস্কারের জিকির ভুলে যাইনি। তৎকালীন সিইসি শামসুল হুদা বিএনপির গঠনতন্ত্র ছুড়ে ফেলে দিয়েছিলেন। সে ফখরুদ্দীন-মইনুদ্দিন সরকার সংস্কার করে এমন সরকার ক্ষমতায় এনেছিল যে সরকার দেশকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। দেশের গণতন্ত্রকে হত্যা করেছিল। ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলম, জাকির, সুমনসহ অসংখ্য বিএনপি নেতাকর্মীকে গুম করে, খুন করে, ভয়াবহ দুঃশাসন কায়েম করেছিল। দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, মানুষের ভোটের অধিকার, বাকস্বাধীনতাকে কেড়ে নিয়ে একদলীয় বাকশাল কায়েম করেছিল। আমরা এমন সংস্কার চাই না। দেশের স্বার্থে, মানুষের স্বার্থে যে প্রয়োজনীয় সংস্কার দরকার বিএনপি সেটির বিরোধিতা করে না। তাই সামনে অনেক সময় রয়েছে, প্রয়োজনীয় সংস্কার করে আগামী ফেব্র“য়ারিতে নির্বাচনের যে সময় ঘোষণা করা হয়েছে সেই ঘোষিত সময়েই নির্বাচন দাবি করেন তিনি।

রিজভী আরও বলেন, বেগম খালেদা জিয়া হলেন দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক। তার দেখানো পথ ধরেই দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নেতৃত্ব দিয়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতন ঘটাতে সক্ষম হয়েছেন।

স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানির সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসানের পরিচালনায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল। এসময় ইয়াসিন আলী, ডা. জাহিদুল কবিরসহ স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

জাতীয়

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন হবে। এখানে কোনো শক্তি নেই নির্বাচনকে দেরি করবে। চিফ অ্যাডভাইজার বলেছেন। এরপর ইলেকশন কমিশনও বলেছে। আমাদের পুরো জাতি এটির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।

শুক্রবার দুপুরে মাগুরা শহরের পারনান্দুয়ালী এলাকায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহত জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক মেহেদী হাসান রাব্বি এবং আল আমিনের কবর জিয়ারত শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রেস সচিব বলেন, আমাদের সরকারের যতগুলো প্রতিষ্ঠান আছে, ইলেকশন নিয়ে যারা কাজ করে সবাই পুরো দমে কাজ করছে। ইলেকশন ফেব্রুয়ারিতে হবে। এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। যারা সন্দেহের বীজ রোপণ করছেন তাদের বলব- আপনারা থামেন। রোজা শুরু হওয়ার আগেই ইলেকশন হবে।

তিনি বলেন, জাতি নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করছে। বর্ষাটা শেষ হলে দেখবেন পাড়া-মহল্লায় নির্বাচনের আমেজ নেমে আসবে। সম্ভাব্য প্রার্থীরা দুয়ারে দুয়ারে যাবেন ভোটের জন্য। পাড়ায় পাড়ায় নির্বাচনি অফিস হচ্ছে। এটার আমেজ সব জায়গাতে আসবে। আমেজ শুরু হলে কারো মনে যদি সন্দেহে থাকে সেই সন্দেহটুকু চলে যাবে। নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে হবে।

উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, মাগুরায় মোট ১০ জন শহীদ হয়েছেন। আওয়ামী লীগ যুবলীগের খুনি বাহিনীর হাতে শহীদ হয়েছেন ছাত্রদল নেতা রাব্বি। এছাড়া ঢাকায় ছোট ব্যবসা করতেন আল আমিন। তাকেও গুলি করে মারা হয়েছে। ছুটি পেয়েছি, এসেছি। এই দুজনের কবরে ফুল দিয়ে সম্মান জানিয়েছি। বাকি ৮ জনের প্রত্যেকের কবরেও যাব। তাদের আত্মত্যাগে নতুন একটি দেশ পেয়েছি। সবাই মুখ ফুটে কথা বলতে পারছি। সামনে একটা সুন্দর নির্বাচন হবে। তাদের কারণেই আমরা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। তাই তাদের সম্মান জানাতে এসেছিলাম।

 

অর্থনীতি

শিল্পে গ্যাসের নতুন সংযোগ না পাওয়ায় শত শত কারখানা উৎপাদনে যেতে পারছে না। ব্যাংক লোন নিয়ে কারখানা তৈরি করলেও উৎপাদনে যেতে না পারায় নানামুখী সমস্যায় পড়ছেন বিনিয়োগকারীরা।

ফলে অনেকে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছেন।

জানা গেছে, নতুন শিল্পে গ্যাস সংযোগের জন্য অসংখ্য আবেদন গ্যাস কোম্পানিগুলোতে জমা পড়ে আছে। শিল্পের মালিকরা টাকাও জমা দিয়েছেন, কিন্তু সংযোগ পাচ্ছেন না। শিল্পে নতুন গ্যাস সংযোগ না পাওয়ায় উৎপাদনে যেতে পারছে না অনেক কারখানা। গ্যাসের বদলে বিদ্যুৎ দিয়ে ৮ থেকে ১০ শতাংশ বেশি ব্যয়ে কারখানার উৎপাদন ধরে রাখতে হচ্ছে।

আবার খরচ কমাতে অনেক কারখানা প্রয়োজনের তুলনায় কম শ্রমিক নিয়োগ দিচ্ছে। এতে কর্মসংস্থানও কম হচ্ছে। নতুন গ্যাস সংযোগের জন্য অনেক কারখানা মালিক টাকা জমা দিয়েছেন। পেয়েছেন ডিমান্ড নোটও (চাহিদাপত্র)। এর মধ্যে কয়েক বছর পার হয়ে গেলেও এখনো তাঁরা সংযোগ পাননি। বিদ্যুৎ দিয়ে কারখানা চালাতে গিয়ে অতিরিক্ত খরচে কেউ কেউ হয়ে পড়ছেন ঋণগ্রস্ত। কেউ কেউ উৎপাদন লসে (বিদ্যুৎ দিয়ে উৎপাদনের জন্য লোডশেডিংয়ের কারণে পণ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়)। সব মিলে শিল্পে গ্যাসের নতুন সংযোগ না পাওয়ায় এখন ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত।

শিল্পমালিকরা বলেন, অনেক শিল্পমালিক বছরের পর বছর ডিমান্ড নোট পেয়েও এখনো সংযোগ পাচ্ছেন না। ভারী শিল্পের জন্য নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি প্রয়োজন, যা গ্যাস ছাড়া সম্ভব নয়। সংযোগ না থাকায় নতুন করে ভারী শিল্পকারখানা গড়ে উঠছে না। নতুনদের ক্ষেত্রে যারা অবকাঠামো গড়ে তুলে সংযোগ পাচ্ছেন না তাদের অবস্থা ক্রমেই রুগ্ণ হচ্ছে।

নতুন করে কর্মসংস্থানও হচ্ছে না। আবার অনেক পণ্য দেশের বাইরে থেকে আনতে হচ্ছে। এতে দেশের টাকা বাইরে চলে যাচ্ছে। শিল্পে নতুন সংযোগের জন্য দেশের গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোর মধ্যে শুধু তিতাসের কাছেই নতুন-পুরান মিলে গ্যাস সংযোগ এবং লোড বৃদ্ধির আবেদন জমা পড়েছে ১ হাজার ১০০টি। এর মধ্যে ৪০০-এর বেশি গ্রাহক সব প্রক্রিয়া শেষ করে প্রতিশ্রুত সংযোগের অপেক্ষায় আছেন। এ গ্রাহকরা গ্যাস সংযোগের জন্য টাকাও জমা দিয়েছেন। এঁদের মধ্যে কেউ নতুন কারখানায় সংযোগের আবেদনের পাশাপাশি কেউ কারখানা সম্প্রসারণ আর কেউ লোড বৃদ্ধির জন্য আবেদন করেছেন।

সর্বশেষ অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে ১৩ এপ্রিল নতুন সংযোগ ও লোড বৃদ্ধির ক্ষেত্রে গ্যাসের দাম ৩৩ শতাংশ বাড়ায় বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন। শিল্পমালিকদের আপত্তির পরও গ্যাসের দাম বাড়ানোর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে শিল্পে সরবরাহ বাড়ানো হবে বলা হয়। কিন্তু এ সময়ে নতুন কোনো সংযোগ দেওয়া হয়নি। জানুয়ারি থেকে নতুন গ্যাস সংযোগ দেওয়া পুরোপুরি বন্ধ আছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, প্রতিশ্রুত সংযোগ দেওয়ার বিষয়টি অগ্রাধিকারে আছে। ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত যাঁরা ডিমান্ড নোট পেয়েছেন তাঁদের প্রতিশ্রুত গ্রাহকের তালিকায় রাখা হয়েছে। বর্তমানে দেশে ৩৮০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ করা হচ্ছে ২৮০ থেকে ২৯০ কোটি ঘনফুট। এর মধ্যে শিল্পে যাচ্ছে ১২০ কোটি ঘনফুট। বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) কর্মকর্তারা জানান, শিল্পে নতুন গ্যাস সংযোগ দেওয়া হবে তিন ক্যাটাগরিতে। এর একটি হচ্ছে যেসব শিল্পকারখানায় তিন দিনের মধ্যেই গ্যাস সংযোগ দেওয়া সম্ভব। দ্বিতীয়ত যেখানে তিন মাসের মধ্যে সংযোগ দেওয়া যাবে আর তৃতীয়ত আগামী ছয় মাসের মধ্যে যেসব শিল্পকারখানায় গ্যাস সংযোগ দেওয়া সম্ভব হবে।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান মো. রেজানুর রহমান বলেন, ‘শিল্পে গ্যাস সংযোগের ক্ষেত্রে নতুন করে একটি ধারা যোগ করে দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে নতুন সংযোগ দেওয়া বা লোড বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বিতরণকারী কোম্পানিকে অবশ্যই গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। কারণ শিল্পে গ্যাসের দাম বেশি। শিল্পে গ্যাসের চাহিদা মেটাতে আমাদেরও সতর্ক হয়ে কাজ করতে হবে। ’

তিনি আরও বলেন, ‘এদের মধ্যে যেসব কারখানায় এখনই অর্থাৎ তিন দিনের মধ্যেই সংযোগ দেওয়া যাবে সেগুলো আমরা চিহ্নিত করেছি। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও পেট্রোবাংলা মিলে একটি কমিটি করা হয়েছে। এ কমিটি সশরীরে গিয়ে এসব কারখানা পরিদর্শন করছে। এর মধ্যে জালালাবাদ, কর্ণফুলী ও বাখরাবাদে গ্যাস বিতরণ কোম্পানির গ্রাহকদের জন্য এ পরিদর্শন শেষ হয়েছে। তিতাসের ক্ষেত্রেও এ পরিদর্শন শিগগিরই শেষ হবে। আর এটি শেষ হলেই এ পর্যায়ে আমাদের সংযোগ দেওয়া হবে। সশরীরে গিয়ে কারখানাগুলো পরিদর্শন করার কারণে কাউকে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার কোনো প্রশ্ন নেই। ’

খেলাধুলা

অষ্টম হিরোজ তায়কোয়ান্দো আন্তর্জাতিক চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২৫-এ দুর্দান্ত সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ। গত ৯-১০ আগস্ট থাইল্যান্ডের পাতায়ার ইস্টার্ন ন্যাশনাল স্পোর্টস ট্রেনিং সেন্টারে অনুষ্ঠিত এই টুর্নামেন্টে ২৭টি দেশের ৪ হাজারের বেশি প্রতিযোগীর সঙ্গে লড়াই করে মোট ৩৬টি পদক জয় করেছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।

এটি ছিল টি-১ (টিয়ার ১) র‍্যাংকিং টুর্নামেন্ট; যেখানে অংশ নেয় জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিশ্বের শীর্ষ তায়কোয়ান্দো দলগুলো।

২৯ সদস্যের বাংলাদেশ দল অসাধারণ দক্ষতা, শৃঙ্খলা ও স্পোর্টসম্যানশিপের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের হারিয়ে ১২টি স্বর্ণ, ৯টি রৌপ্য এবং ১৫টি ব্রোঞ্জ পদক জয় করে; যা বিদেশের মাটিতে দেশটির অন্যতম সেরা তায়কোয়ান্দো সাফল্য।

সবচেয়ে বেশি পদক জেতা ক্লাবের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে বনানী তায়কোয়ান্দো ক্লাব। ক্লাবটি একাই জিতেছে ৮টি স্বর্ণ, ৬টি রৌপ্য ও ৬টি ব্রোঞ্জসহ মোট ২০টি পদক। বিশেষ করে বয়সে ৬-৯ বছরের খুদে ‘টাইগার কাভস’রা এই সাফল্যের মূল কারিগর।

এবারের জাতীয় দলে এই ক্লাব ছাড়াও ডাইনামিক তায়কোয়ান্দো ক্লাব (মিরপুর-১০), চ্যাম্পিয়নস তায়কোয়ান্দো ক্লাব (ধানমন্ডি), বাংলাদেশ তায়কোয়ান্দো ট্রেনিং একাডেমি (উত্তরা) এবং তায়কোয়ান্দো ব্ল্যাক বেল্ট একাডেমির খেলোয়াড়েরা অংশ নেয়।