বিনোদন

এবার ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার নেইমারের বাড়িতে বেজে উঠলো বাংলা গান! গানটি জনপ্রিয় ব্যান্ড অ্যাশেজের।

দলটির ভোকাল জুনায়েদ ইভানের জন্মদিন আজ।

দিনভর সবার শুভেচ্ছা পেলেও এবারের জন্মদিনে এক অবাক করা উপহার নেইমারের বাড়িতে তার গান বেজে ওঠা।
এদিন নেইমারের বাংলো বাড়িতে বড় পর্দায় বেজে উঠেছে ইভানের গান! নেইমারের বাড়ি থেকে একটি ভিডিও পোস্ট করে ইভানকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রবিন মিয়া। যিনি নেইমারের পরিবারের ঘনিষ্ঠ ও তার বাবার ম্যানেজার।

বাড়ির সুইমিংপুল থেকে নেওয়া ভিডিওতে দেখা গেছে, তখন অ্যাশেজ ব্যান্ডের ‘তামাক পাতা’ গান বাজছিল। সেই ভিডিওর ক্যাপশনে ইভানকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান রবিন।

ভিডিওটি শেয়ার করে ইভান লেখেন, নেইমারের বাসার বড় পর্দায় অ্যাশেজ-এর গান দেখে বেশ ভালো লাগছে। ভিডিওর মন্তব্যে জুনায়েদ ইভান লেখেন, ভালোবাসি ভাই! আপনি সুন্দর।

এদিকে জন্মদিনের আগের দিন বৃহস্পতিবার এক পোস্টে ইভান জানিয়েছেন, প্রতি বছরের মতো এবারও জন্মদিনে একজন দরিদ্র অসুস্থ মানুষের চিকিৎসার জন্য কাজ করবেন তিনি।

আন্তর্জাতিক

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই সপ্তাহে বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করার বিষয়ে ভ্লাদিমির পুতিন কতটা আন্তরিক, তা তিনি আজকের বৈঠকের ‘প্রথম দুই মিনিটের মধ্যেই’ বুঝে যাবেন।

তবে এরও আগে হয়তো একটি বড় ইঙ্গিত পাওয়া যেতে পারে — রুশ প্রেসিডেন্টের বিমান আলাস্কার অ্যাঙ্কোরেজে কবে অবতরণ করে।

সাত বছর আগে হেলসিঙ্কি শীর্ষ সম্মেলনে পুতিন ট্রাম্পকে বৈঠক শুরুর আগে এক অতিথিশালায় এক ঘণ্টারও বেশি অপেক্ষায় রেখেছিলেন। পুতিন তখন বৈঠক শুরুর নির্ধারিত সময়ের মাত্র ১০ মিনিট আগে পৌঁছান। এটি ব্যাপকভাবে এক ধরনের ‘ক্ষমতার প্রদর্শনী’ হিসেবে দেখা হয়েছিল, বিশেষ করে তিনি একসময় জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেলকেও চার ঘণ্টা অপেক্ষায় রেখেছিলেন।

তবে এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। পুতিন ট্রাম্পের সঙ্গে সরাসরি বৈঠকের মাধ্যমে বৈশ্বিক মঞ্চে নিজের অবস্থান পুনর্গঠনের চেষ্টা করছেন। সময়মতো পৌঁছানো কি চুক্তির ইঙ্গিত দেবে, তা স্পষ্ট নয়; তবে বড় ধরনের দেরি অবশ্যই তাৎপর্যপূর্ণ বার্তা বহন করবে।

মস্কোর অবস্থান

ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পুতিন আজ সময়মতো পৌঁছাবেন। ‘প্রেসিডেন্ট সবসময়ই সময়মতো আসেন,’ রাশিয়ার সুদূরপ্রাচ্যের মাগাদান অঞ্চলে বিমানে থাকা অবস্থায় ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, যদিও পুতিনের দেরি করার খ্যাতি সুপরিচিত।

রুশ রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের বরাতে পেসকভ আরও জানিয়েছেন, ট্রাম্প ও পুতিনের বৈঠক অন্তত ‘৬ থেকে ৭ ঘণ্টা’ স্থায়ী হতে পারে। রুশ পক্ষের প্রত্যাশা, আলাস্কার এই বৈঠক ‘ফলপ্রসূ’ হবে।

তিনি আরও জানান, দুই নেতার একান্ত বৈঠকে সহকারীদের অংশগ্রহণ থাকবে, যদিও কারা থাকবেন তা স্পষ্ট করেননি।

ক্রেমলিন জানিয়েছে, শীর্ষ সম্মেলনের শুরুতে একান্ত বৈঠকে দোভাষীরা সহায়তা করবেন, এরপর ব্যবসায়িক প্রতিনিধি নিয়ে মধ্যাহ্নভোজের মাধ্যমে আলোচনার ধারা চলবে।

আন্তর্জাতিক

‘বিদেশি অনুপ্রবেশের’ কারণে ভারতের সীমান্ত সংলগ্ন অঞ্চলে জনমিতিক পরিবর্তন ঘটছে অভিযোগ তুলে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এটিকে ‘বিপদ’ আখ্যা দিয়েছেন। এমনকি এই ‘বিপদ’ মোকাবিলায় তিনি মিশন ঘোষণা করেছেন।

শুক্রবার (১৫ আগস্ট) দিল্লির লালকেল্লা ময়দানে ভারতের স্বাধীনতা দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে মোদী এই ঘোষণা দেন। তিনি এসময় যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক, পাকিস্তানের সঙ্গে দ্বৈরথসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন।

মোদী বলেন, সীমান্ত অঞ্চলের জনমিতিক পরিবর্তন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি স্বরূপ। এটি সংঘাতের বীজ বপণ করে। কোনো দেশই অনুপ্রবেশকারীদের সামনে আত্মসমর্পণ করতে পারে না। তাহলে আমরা কীভাবে তা মেনে নেব? এমন কর্মকাণ্ডকে অনুমতি না দেওয়া আমাদের কর্তব্য—আমাদের পূর্বপুরুষদের প্রতি, যারা আমাদের একটি স্বাধীন ভারত উপহার দিয়েছেন। তাই আমি লালকেল্লার প্রাচীর থেকে ঘোষণা করছি যে, আমরা একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন জনমিতি মিশন শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এই মিশন ভারতের ঘাড়ে ভর করা এই বিপদ মোকাবিলা করবে।

অনুপ্রবেশকারীরা ভারতের যুবসমাজের রুটি রোজগার কেড়ে নিচ্ছে দাবি করে মোদী বলেন, এরা আমাদের দেশের কন্যা বোনদের টার্গেট করছে। এটা আর কোনোভাবেই সহ্য করা হবে না। এই অনুপ্রবেশকারীরা নিরীহ আদিবাসীদের বোকা বানিয়ে তাদের বনভূমি দখল করছে। এই দেশ এটা সহ্য করবে না।

পাকিস্তানে চালানো ‘অপারেশন সিঁদুর’ অভিযানে ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রশংসা করার পাশাপাশি ইসলামাবাদকে কড়া বার্তা দিয়ে মোদী বলেন, ভারত পারমাণবিক ব্ল্যাকমেইলের কাছে কখনোই নতি স্বীকার করবে না।

যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত ৫০ শতাংশ শুল্ক নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত সরকার তার কৃষকদের স্বার্থের বিষয়ে কখনো আপস করবে না। ভারতের কৃষক, মৎস্যজীবী এবং পশুপালক আমাদের অগ্রাধিকার। আমাদের কৃষকদের স্বার্থে ভারত কখনোই কোনো আপস মেনে নেবে না।

মোদী প্রায় ১০৩ মিনিট বক্তৃতা দেন। ভারতের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো প্রধানমন্ত্রী এত দীর্ঘ সময় বক্তৃতা দিলেন।

নানা আয়োজনে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন
এদিন গোটা ভারতজুড়ে ৭৯তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপিত হয়েছে। কলকাতার রেড রোডেও স্বাধীনতা দিবসের কুচকাওয়াজ হয়। এতে অংশ নেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

অনুষ্ঠানে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের পাশাপাশি বেশ কিছু সরকারি সংস্থা ও স্কুলের তরফে বিভিন্ন প্রদর্শনী ও শারীরিক কসরত দেখানো হয়।

ভারতের সীমান্তরক্ষীরাও দিবসটি উদযাপন করেছেন। পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার পেট্রাপোল সীমান্তের নোমান্স ল্যান্ডে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)-এর ১৪৫ নম্বর ব্যাটালিয়নের সদস্যরা পতাকা উত্তোলন করেন। পরে সীমান্তে কর্তব্যরত ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ’ (বিজিবি)-এর সদস্যদের হাতে মিষ্টি তুলে দেয় বিএসএফ। এর মধ্যে দিয়ে দুই বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে সৌহার্দ্য বিনিময় হয়। একই ছবি ধরা পড়ে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ঘোজাডাঙ্গা, চ্যাংড়াবান্ধা, ফুলবাড়ী সীমান্তেও।

দেশের সব রাজ্যে যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করা হয়েছে। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে কড়া নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়েছিল লালকেল্লাসহ দিল্লি, মুম্বাই, বেঙ্গালুরু, কলকাতা, পাঞ্জাব, শ্রীনগরসহ গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলো।

জাতীয়

ধর্ম উপদেষ্টা ড. আফম খালিদ হোসেন বলেছেন, আমরা অল্প সময় আছি। আরও সময় পেলে আরও কাজ করতে পারতাম। আমরা দ্রুতই নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে নিজের ঠিকানায় ফিরে যাব।

শুক্রবার দুপুরে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে শ্রী অদ্বৈত আচার্য প্রভুর জন্মধাম রাজারগাঁও মন্দির কমপ্লেক্স নির্মাণ কাজ পরিদর্শনকালে গণমাধ্যম কর্মীদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, সুষ্ঠু সুন্দর নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে অন্তর্বর্তী সরকারের পাশাপাশি সব বাহিনী প্রস্তুতি নিচ্ছে।

এর পর শ্রী অদ্বৈত আচার্য মন্দির প্রাঙ্গণে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ধর্ম উপদেষ্টা।

এ সময় সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ রেজাউল করিম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জাকির হোসেন, তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মেহেদী হাসান মানিক, শ্রী অদ্বৈত মন্দির পরিচালনা কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

একই দিন তিনি বিসিআইসির তাহিরপুর ট্যাকেরঘাট চুনাপাথর খনি প্রকল্প জামে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন। এরপর মুসল্লিদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে ট্যাকেরঘাট চুনাপাথর খনি প্রকল্প জামে মসজিদ উন্নয়ন সংস্কার কাজে পাঁচ লাখ টাকা সরকারি অনুদান প্রদানের আশ্বাস প্রদান করেন ধর্ম উপদেষ্টা ড. আফম খালিদ হোসেন।

রাজনীতি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সীমা ঘোষণা করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সে অনুসারে, আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে হতে পারে নির্বাচন।

তবে প্রধান উপদেষ্টার সম্ভাব্য সময় ঘোষণার আগেই নির্বাচনে অংশ নিতে প্রায় ৩০০ সংসদীয় আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। কিন্তু এর মধ্যেই আবার কিছু দাবি সামনে এনে নির্বাচনের বিরোধিতায় নেমেছে দলটি। কেন তাদের এমন অবস্থান, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে চলছে নানা গুঞ্জন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন, দীর্ঘদিন আন্দোলন-সংগ্রামের কারণে রাজপথে থাকতে পারেনি জামায়াতে ইসলামী। যে কারণে দল গোছানো এবং জনসংযোগ বাড়ানোর কৌশল হিসেবে নির্বাচনকে বিলম্বিত করার কৌশল নিয়ে থাকতে পারে দলটি।

এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলছিলেন, দীর্ঘ ১৭ বছর দেশের মানুষ সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পারেনি। এছাড়া প্রায় দুই কোটি তরুণ ভোটার যারা এখনো ভোট দিতে পারেননি। সবাই ভোট দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে, তবে সেটি অবশ্যই হতে হবে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন। সে কারণে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী বেশ কিছু দাবি নিয়ে রাজপথে আন্দোলন করছে। তার মধ্যে পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতিতে নির্বাচন অন্যতম দাবি। যদিও এই পদ্ধতির সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষ খুব একটি পরিচিত নন। তবে ভোট যে পদ্ধতিতেই হোক না কেন জামায়াতের প্রস্তুতি রয়েছে।

বিশ্লষকেরা মনে করেন, ফ্যাসিস্ট সরকারবিরোধী আন্দোলনে দীর্ঘদিন একসঙ্গে রাজপথে আন্দোলন করেছে বিএনপি ও জামায়াত। তবে সম্প্রতি নির্বাচন ইস্যুতে পরস্পরবিরোধী অবস্থান নিয়েছে তারা। বিএনপি বলছে, নির্বাচন যত দ্রুত হবে, দেশের জন্য ততই মঙ্গল। আর জামায়াত ইসলামী বলছে, সংস্কার, বিচার এবং পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতি ছাড়া নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না।

গত ৫ আগস্ট জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা জানিয়েছেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর কিছুদিনের মাথায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্বাচন কমিশনকে চিঠিও দেন প্রধান উপদেষ্টা। নির্বাচন কমিশন বলেছে, নির্বাচনের রোডম্যাপ নিয়ে আলোচনা হয়েছে৷ আগামী সপ্তাহে প্রকাশ করা হবে।

এদিকে, নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণা হওয়ার পর থেকে পিআর পদ্ধতিতে ভোটের দাবি নিয়ে জোরালোভাবে রাজপথে নেমেছে জামায়াত। গত বুধবার (১৩ আগস্ট) রাজধানীতে এই দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলও করেছে তারা।

পিআর পদ্ধতিসহ সাত দফা দাবি আদায়ে অর্ন্তবর্তী সরকারের সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি শক্তির জানান দিতে ঢাকায় ১৯ জুলাই ‘জাতীয় সমাবেশ’ও করে জামায়াতে ইসলামী। সেদিন তাদের উত্থাপিত দাবিগুলো হলো- অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতকরণ, সব গণহত্যার বিচার, প্রয়োজনীয় মৌলিক সংস্কার, জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র বাস্তবায়ন, জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের পরিবারের পুনর্বাসন, পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং এক কোটিরও বেশি প্রবাসীদের ভোট প্রদানের ব্যবস্থার করা।

একদিকে নির্বাচনের জন্য প্রার্থিতা ঘোষণা, অপরদিকে নির্বাচনের বিরোধিতা করে রাজপথে কেন তারা আন্দোলন করছে, এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে নানা ধরনের আলোচনা-সমালোচনা চাউর হয়েছে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, দলটি যদি নির্বাচনের বিরোধিতা করে, তাহলে কেনইবা প্রার্থিতা ঘোষণা করা হবে।

যদিও জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য সবার আগে প্রস্তুতি নিয়েছে। পিআর পদ্ধতি এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হলে যদি আগামীকালও ভোট হয় তারা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, আমরা সবার আগে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। আমাদের দাবি আদায় হলে যেকোনো সময় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত।

জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াতের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, ইতোমধ্যে ৩০০ আসনেই জামায়াতে ইসলামীর সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছে। আমরা কেন নির্বাচন বিলম্বিত করবো? আমরা বলেছি সংস্কার ও বিচার এবং লেভেল প্লেয়িং সম্পন্ন না করার আগে নির্বাচন হলে সে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। এখনো প্রশাসনসহ সব সরকারি দপ্তরে ফ্যাসিস্টের সমর্থক ও সহযোগী কর্মকর্তারা বিদ্যমান।

দলটির নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, আমরা ইলেকশন চাই সিলেকশন চাই না। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনে যেতে চায়। কিন্তু তার আগে নির্বাচনের যে বিষয়গুলো প্রয়োজন তা করতে হবে। নির্বাচনের তফসিলকে শুধু একটি দল স্বাগত জানিয়েছে, এতেই বোঝা যায় এই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না।

আন্তর্জাতিক

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় বাংলাদেশের আদালতে ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের বিচার শুরু হয়েছে। এই মামলায় তার বিরুদ্ধে পূর্বাচলে মা, ভাই, বোনকে অনিয়মের মাধ্যমে প্লট পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।

নিজের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া বিচার নিয়ে সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ এক দীর্ঘ পোস্ট করেছেন টিউলিপ। সেখানে নিজেকে ‘নির্দোষ’ ও এ বিচারকে ‘প্রহসন’ হিসেবে দাবি করেছেন পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার এ ভাগ্নি।

টিউলিপ লিখেছেন, ‘ঢাকায় এখন যে তথাকথিত বিচার চলছে তা একটি প্রহসন ছাড়া আর কিছুই নয়। এটি বানানো অভিযোগের উপর ভিত্তি করে তৈরি এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসা দ্বারা পরিচালিত। গত এক বছরে, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো বারবার পরিবর্তিত হয়েছে, তবুও বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ একবারও আমার সাথে যোগাযোগ করেনি। আমি কখনও কোনো আদালতের সমন পাইনি, বাংলাদেশের সরকারের পক্ষ থেকে সাড়া পাইনি।’

তিনি আরও লিখেছেন, ‘যদি এটি একটি প্রকৃত আইনি প্রক্রিয়া হতো, তাহলে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আমার বা আমার আইনি দলের সাথে যোগাযোগ করত, আমাদের আনুষ্ঠানিক চিঠিপত্রের জবাব দিত, এবং তাদের কাছে থাকা প্রমাণ পেশ করত। এর পরিবর্তে, তারা মিথ্যা এবং হয়রানিমূলক অভিযোগ ছড়িয়েছে, যা সংবাদমাধ্যমকে জানানো হয়েছে কিন্তু তদন্তকারীরা কখনও আনুষ্ঠানিকভাবে আমার কাছে উপস্থাপন করেনি।’

৪২ বছর বয়সী টিউলিপ সিদ্দিক প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু প্রফেসর ইউনূস এতে সাড়া দেননি। এ বিষয়টি আজ আবারও উল্লেখ করেছেন তিনি।

টিউলিপ লিখেছেন, ‘লন্ডনে ড. ইউনূসের সাম্প্রতিক সফরের সময় তার সাথে দেখা করার প্রস্তাব দিয়েছিলাম আমি। কিন্তু এটি প্রত্যাখ্যান করা হয়। আমি শুরু থেকেই স্পষ্ট যে আমি কোনো ভুল করিনি এবং আমার কাছে উপস্থাপন করা যেকোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণের জবাব দেব।’

এদিকে দুদকের তদন্তে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা এবং তাদের সন্তানদের নামে মোট ছয়টি প্লট বরাদ্দ নেওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। তার মধ্যে একটি শেখ হাসিনার নিজের নামে, আরেকটি তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের নামে, অপর একটি তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের নামে।

অপরদিকে শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার নামে, তার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববির নামে ও অপরটি তার মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীর নামে।

টিউলিপের নামে প্লট না থাকলেও প্রভাব খাটিয়ে নিজের মা, বোন ও ভাইকে প্লট পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগে তাকে আসামি করা হয়েছে।

রাজনীতি

মালয়েশিয়ায় তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফর শেষে দেশের দেশে ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

বুধবার (১৩ আগস্ট) রাত ৯টা ৯ মিনিটে তিনি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে এসে পৌঁছান।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এ তথ্য জানানো হয়।

মালায়েশিয়ার স্থানীয় সময় বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় প্রধান উপদেষ্টা ঢাকার উদ্দেশ্যে কুয়ালালামপুর ত্যাগ করেন।

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের আমন্ত্রণে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস দেশটি সফর করেন।

এর আগে সোমবার (১১ আগস্ট) তিনি মালয়েশিয়া যান এবং স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা ৫০ মিনিটে তিনি কুয়ালালামপুর পৌঁছান।

বিনোদন

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নির্মিত বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজনার সিনেমা ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’-এ অভিনয়ের জন্য অডিশন দিয়েছিলেন অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন। প্রায় ৭০ কোটি রুপি বাজেটের এই বিগ প্রজেক্টে কাজ করার সুযোগের আশা থাকলেও শেষ পর্যন্ত বাদ পড়ে যান তিনি। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে সেই অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে বাঁধন জানান, শুধু বাদই পড়েননি, অডিশনের সময় অপমানের শিকারও হয়েছিলেন।

বাঁধন বলেন, ‘আমি তো অডিশন দিয়েছিলাম। দুবার দিয়েছিলাম। রিজেক্ট হয়ে অনেক কান্না করেছি। শ্যাম বেনেগালের সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছে তো ছিল। উনার মতো ডিরেক্টরের সঙ্গে কাজ করা তো বিরাট কিছুই।’

পরের ঘটনা বর্ণনা করে বাঁধন বলেন, ‘আমাকে রিজেক্ট করার পর হাউমাউ করে কেঁদেছিলাম। যখন ট্রেইলার বের হলো তখন আমার এক কাজিন আছে, খুব ক্লোজ, ওর নাম সামিয়া। ও আমাকে বলছিল, ‘বাঁধন আপু আল্লাহ তোমার সঙ্গে সবকিছু ভালো করে। তুমি তা জানো।’ আমি তখন বলেছিলাম, ‘আমি জানি’। তখন আমার বোনটা বলে, ‘আল্লাহ বাঁচিয়ে দিয়েছে তোমাকে এই রকম একটা সিনেমায় অভিনয় করো নাই।’ সেটা শুনে আমি অনেক কান্না করেছিলাম।’

অডিশনে বাঁধনকে অপমান করা হয়েছিল। তা স্মরণ করে এই অভিনেত্রী বলেন, ‘কষ্টটা ছিল ওরা শুধু আমাকে রিজেক্টই করেনি, বাজেভাবে অপমান করেছিল। পরে যখন ট্রেইলার এলো, সিনেমা এলো সবার কথা শুনে মনে হলো কাজটা না করে ভালো হয়েছে। খুশি হয়েছিলাম যে, তারা আমাকে রিজেক্ট করেছিল।’

‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ সিনেমায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চরিত্রে অভিনয় করেন আরিফিন শুভ। তার স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের চরিত্রে অভিনয় করেন অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা।

সিনেমাটির অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেন—নুসরাত ফারিয়া, রিয়াজ আহমেদ, দিলারা জামান, চঞ্চল চৌধুরী, সিয়াম আহমেদ, জায়েদ খান, খায়রুল আলম সবুজ, রাইসুল ইসলাম আসাদ, গাজী রাকায়েত, তৌকীর আহমেদ, মিশা সওদাগরসহ শতাধিক শিল্পী।

রাজনীতি

ধর্মভিত্তিক একটি রাজনৈতিক দল নিজেদের অপকর্ম আড়াল করতে বিএনপির বিরুদ্ধে পরিকল্পিত অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।

বুধবার (১৩ আগস্ট) রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।

এ সময় তিনি চট্টগ্রামে ভাইরাল হওয়া এক চিকিৎসকের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করা হয়নি দাবি করে বলেন, নকশা বহির্ভূত ভবন নির্মাণ করায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তার ওপর কেউ হামলা করেনি, তিনি নাকে রং লাগিয়ে লাইভে এসে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়েছেন।

এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে রিজভী বলেন, সামনে নির্বাচন, ফলে একটি বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে এসব করা হচ্ছে।

রিজভী আরও বলেন, বর্তমানে সাধারণ মানুষের কোনো নিরাপত্তা নেই, মব কালচার চলছে। অন্তর্বর্তী সরকারকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার অধিকার কারও নেই।

রংপুরে সনাতন ধর্মাবলম্বী দুজনকে পিটিয়ে হত্যার নিন্দা জানিয়ে বিএনপির এ নেতা জানান, জনকল্যাণমূলক বিচারের মাধ্যমে যতবড় অপরাধীই হোক, বিচারের আওতায় আনতে হবে। উসকানিমূলক কথায় বেআইনিভাবে যেন কেউ প্রাণ না হারায়, সরকারের এটা নিশ্চিত করতে হবে। এ কালচারে অনেক সুযোগ সন্ধানী সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছে।

এ সময় তিনি আরও জানান, আওয়ামী লীগের আমলে লুটপাট করা প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ ফারমার্স ব্যাংকে রাখা হয়। এখন সেটি পদ্মা ব্যাংক নামে চালু থাকলেও সেই টাকার কোনো হদিস নেই। এসব লুটপাটের টাকা উদ্ধারে সরকারকে আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

পিআর ব্যবস্থার জন্য বাংলাদেশ এখনই প্রস্তুত নয় দাবি করে রিজভী বলেন, আমরা উন্নত দেশগুলোর পর্যায়ে এখনো যেতে পারিনি, গরিব অর্থনীতিতে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন সাসটেইনেবল না। এ মুহূর্তে পিআর ব্যবস্থায় যেতে বাংলাদেশ এখনো ততটা প্রস্তুত না। আগে গণতান্ত্রিক চর্চা বাড়াতে হবে। এতে জটিলতা তৈরি করা ছাড়া কোনো উদ্দেশ্য আছে বলে মনে হয় না। এটায় অন্তর্গত কোনো স্বচ্ছতা নেই।

তিনি আরও জানান, দলের বা অঙ্গ সংগঠনের নামে যারা অপরাধ করছে বলে প্রমাণ হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধেই তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তদন্ত সাপেক্ষে আজীবন বহিষ্কারও করা হচ্ছে।

জাতীয়

খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার বৃদ্ধির সূচকে এখনো বিশ্বব্যাংকের লাল তালিকায় বাংলাদেশ। ২০২১ সালের জুন থেকে গত জুলাই পর্যন্ত অর্থাৎ সোয়া ৪ বছর ধরে বাংলাদেশ লাল তালিকায় অবস্থান করছে।

আলোচ্য সময়ে প্রতি মাসে বাংলাদেশের খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার ৫ শতাংশের উপরে। একই সময়ে প্রতি মাসে গড়ে খাদ্যপণ্যের দাম সর্বনিম্ন ৫ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ১৪ শতাংশের বেশি বেড়েছে। পণ্যভেদে দাম আরও বেশি বেড়েছে। খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার বৃদ্ধির সূচকে ৫ শতাংশের নিচে নামলেই লাল বা ঝুঁকিপূর্ণ তালিকা থেকে বের হতে পারবে বাংলাদেশ।

এর আগে সর্বশেষ ২০২১ সালের মে মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার ৫ শতাংশের কম বেড়েছিল অর্থাৎ ৪ দশমিক ৮৭ শতাংশ। এরপর থেকে এ হার ৫ শতাংশের উপরে রয়েছে। বৈশ্বিক খাদ্য পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত একাধিক প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশের এমন চিত্র পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশ গত সোয়া ৪ বছরের বেশি সময় ধরে এই লাল বা ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় অবস্থান করছে। গত রোজার সময় থেকে জুন পর্যন্ত অনেক পণ্যের দাম কমলেও সাম্প্রতিক সময়ে আবার বাড়তে শুরু করেছে। বিশেষ করে অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যপণ্য চাল, সবজি, ডিম, মুরগিরর দাম বাড়ছে। এতে আশঙ্কা করা হচ্ছে লাল তালিকা থেকে সহসা বের হওয়ার সম্ভাবনা নেই। যেসব দেশ খাদ্য মূল্যস্ফীতির ক্ষেত্রে লাল ও পিঙ্গেল বর্ণের (কালচে লাল বা তামাটে রং) তালিকায় থাকবে ওইসব দেশের মুদ্রার মান স্থিতিশীল নয় বলে ধরে নেওয়া হয়। ফলে ওইসব দেশে বিদেশি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হয়। কারণ বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগের আগে অর্থনৈতিক সূচকগুলোর ক্ষেত্রে ডলারের প্রবাহ, দাম ও মূল্যস্ফীতির হার সবার আগে পর্যালোচনা করে।

বিশ্বব্যাংক খাদ্য মূল্যস্ফীতির সূচক তৈরির ক্ষেত্রে কিছু ধাপ অনুসরণ করে। এর মধ্যে যেসব দেশের খাদ্যপণ্যের দাম প্রতি মাসে গড়ে ২ শতাংশের কম বাড়ে ওইসব দেশকে সবুজ তালিকায় রাখে। অর্থাৎ কোনো ঝুঁকি নেই। যেসব দেশের খাদ্যপণ্যের দাম প্রতি মাসে ২ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশের মধ্যে বাড়ে ওইসব দেশকে হলুদ তালিকায় রাখে। অর্থাৎ দেশটি ঝুঁকির দিকে চলে যাচ্ছে। এখনই খাদ্যপণ্যের দাম কমাতে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। যেসব দেশের খাদ্যপণ্যের দাম প্রতি মাসে ৫ থেকে ৩০ শতাংশের মধ্যে বৃদ্ধি পায় তাদের রাখে লাল তালিকায়। ওইসব দেশ খাদ্য মূল্যস্ফীতির দিক থেকে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় চলে গেছে।

প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, খাদ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যেমন সবুজ তালিকায় ছিল, তেমনি হলুদ তালিকায়ও ছিল। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে খাদ্যপণ্যের দাম সর্বনিম্ন দশমিক ২৫ শতাংশ বেড়ে সবুজ তালিকায় স্থান পেয়েছিল। ২০১১-১২ অর্থবছরে ২ দশমিক ৫৭ শতাংশ ও ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৪ দশমিক ২৩ শতাংশ বেড়ে হলুদ তালিকায় ছিল। অন্য সময়গুলোতে ৫ শতাংশের বেশি বেড়ে লাল তালিকায় ওঠেছে।

প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, অনেক দেশ বৈশ্বিক মন্দার নেতিবাচক প্রভাব কাটিয়ে লাল তালিকা থেকে বেরিয়ে যেতে পারলেও বাংলাদেশ এখনো পারেনি। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ও ২০২২ সালে শুরু বৈশ্বিক মন্দার নেতিবাচক প্রভাব থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের গতি খুবই ধীর। দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা, অনিশ্চয়তা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়েছে। যে কারণে মূল্যস্ফীতির হার যেমন খুবই ধীর গতিতে কমছে, একই গতিতে কমছে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হারও। জুলাইয়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার কমে দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশে। এদিকে এখনো দেশে বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের মূল্য বাড়ছে ৫ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত।

সর্বশেষ যেসব দেশে খাদ্যপণ্যের দাম প্রতি মাসে গড়ে ৩০ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে ওইসব দেশকে পিঙ্গল বর্ণের তালিকায় ফেলা হয়েছে। ওই তালিকাকে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। মানি লন্ডারিংয়ের ঝুঁকি নিরূপণের ক্ষেত্রেও সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ দেশকে পিঙ্গল বর্ণ দিয়ে শনাক্ত করা হয়। এক সময় বাংলাদেশও মানি লন্ডারিংয়ের ক্ষেত্রে পিঙ্গল বর্ণ অর্থাৎ অতি ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় ছিল। পরে ওই তালিকা থেকে বাংলাদেশ বের হয়ে এসেছে। বাংলাদেশ এখন মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে ঝুঁকিমুক্ত দেশের তালিকায় আছে। যে দেশ মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় থাকবে ওই দেশকে বৈদেশিক বাণিজ্য করতে গেলে বাড়তি কমিশন দিতে হয়, বৈদেশিক ঋণ নিতে গেলেও বাড়তি গ্যারান্টি ফি দিতে হয়। এতে ব্যবসা খরচ বৃদ্ধি পায়।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তৈরি প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে বাংলাদেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে ১৪ দশমকি ১০ শতাংশে ওঠেছিল। পরের ২০০৮-০৯ অর্থবছরে এ হার কমে সর্বনিম্ন দশমিক ২৫ শতাংশে নামে। এরপরের দুই ২০০৯-১০ ও ২০১০-১১ অর্থবছরে খাদ্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ডাবল ডিজিট অতিক্রম করে। ২০১১-১২ অর্থবছরে বাংলাদেশে গড়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতি আবার কমে দাঁড়ায় ২ দশমিক ৫৭ শতাংশে। এরপরের তিন অর্থবছরে এ হার ৫ শতাংশের উপরে ছিল। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তা আবার ৫ শতাংশের নিচে অর্থাৎ ৪ দশমিক ২৩ শতাংশে নেমেছিল। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল সাড়ে ৭ শতাংশ। এরপর ২০১৭-১৮ ও ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৫ শতাংশের ঘরেই ছিল খাদ্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি। ২০১৯-২০ অর্থবছরে এ হার আবার বেড়ে সাড়ে ৬ শতাংশে ওঠে। ওই সময়ে করোনার নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলা করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ছাপানো টাকা ব্যাপক হারে বাজারে ছাড়ার কারণে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছিল। পরের ২০২০-২১ অর্থবছরে আবার তা কমে দাঁড়ায় ৫ দশমিক ৪৫ শতাংশে। ওই অর্থবছরের মে মাসে খাদ্যমূল্য বৃদ্ধির হার কমে ৪ দশমিক ৮৭ শতাংশে দাঁড়ায়। যদিও বছরের হিসাবে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার ৫ শতাংশের উপরে ছিল। এরপর থেকে তা ঊর্ধ্বমুখী হয়।

করোনার পর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়তে থাকলে তখন মূল্যস্ফীতির হারও বৃদ্ধি পেতে থাকে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে এ হার বেড়ে ৬ দশমিক ২২ শতাংশে ওঠে। এর আগে এ হার গড়ে ৫ শতাংশের ঘরেই ছিল। ওই মাসের শেষ দিকে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমন করলে বৈশ্বিকভাবে পণ্যের দাম বাড়তে থাকে। দেখা দেয় বৈশ্বিক মন্দা। এর নেতিবাচক প্রভাব অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পড়ে। ফলে বাড়তে থাকে মূল্যস্ফীতির হার। মে মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার ৮ দশমিক ৩০ শতাংশে ওঠে। এরপর থেকে এ হার বাড়তেই থাকে। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে এ হার বেড়ে ১৪ দশমিক ১০ শতাংশে ওঠে। যা ছিল ২০০৭-০৮ অর্থবছরে বাংলাদেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতির সমান। এরপর থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার টাকা ছাপানো বন্ধ করে। ডলারের দাম স্থিতিশীল করে। পণ্যমূল্য কমাতে নানামুখী পদক্ষেপ নেয়। ফলে সার্বিক মূল্যস্ফীতির পাশাপাশি খাদ্য মূল্যস্ফীতির হারও কমতে থাকে।