জাতীয়

বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের একটি অংশের উদ্যোগে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার টিকাটুলীর রোজ গার্ডেন প্যালেসে ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’ প্রতিষ্ঠিত হয়। এর প্রথম সভাপতি ছিলেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী।

১৯৫৫ সালে সংগঠনটির নাম থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দেওয়া হয়। আর স্বাধীনতার পর দলের নাম হয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধসহ বহু গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে আওয়ামী লীগ। তবে ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত শেখ হাসিনার শাসনামলে দলটির নেতাকর্মীরা চরম দুর্নীতি, দমন-পীড়ন ও লুটপাটে জড়িত হয়ে পড়ে।

১৫ বছরের শাসনে আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী-নেতারা দেশের ব্যাংক, শেয়ারবাজার, আর্থিক খাতসহ রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুট করে বিদেশে পাচার করে অর্থনীতিকে পঙ্গু করে তোলে। একইসঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও নির্বাচন ব্যবস্থাকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করে তিনটি বিতর্কিত জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করে, যার মধ্যে ২০১৮ সালের ‘দিনের ভোট রাতে’ এবং ২০২৪ সালের একতরফা ‘ডামি’ নির্বাচন বিশেষভাবে সমালোচিত হয়।

গত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের সবচেয়ে বড় দুর্নীতি হয় আর্থিক খাতে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাবদ ব্যয় হয়েছে প্রায় ৭ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। অন্তর্বর্তী সরকারের শ্বেতপত্র অনুযায়ী, এর মধ্যে প্রায় ২৩ থেকে ৪০ শতাংশ অর্থ চাঁদাবাজি, ঘুষ ও বাড়তি খরচ দেখিয়ে লুটপাট হয়েছে। এই অপচয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজার কোটি থেকে ২ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা।

সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসামরিক, শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে শেয়ারবাজারে জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে শেয়ারহোল্ডারদের হাজার কোটি টাকা লোপাট এবং সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করে বিদেশে পাচারের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া করোনা টিকা কেনার নামে ২২ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের বিরুদ্ধেও রয়েছে ভয়াবহ দুর্নীতির অভিযোগ। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও দুবাইয়ে বিপুল পরিমাণ সম্পদ গড়ে তুলেছেন তিনি। হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের ঘনিষ্ঠতা কাজে লাগিয়ে পলক সরকারের আইসিটি বিভাগে একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন। ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের আওতায় ‘এসপায়ার টু ইনোভেট (এ-টু-আই)’, ‘শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব’, ‘হাইটেক পার্ক’, ‘আইটি পার্ক’ এবং ‘শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার’সহ বিভিন্ন প্রকল্পে তার কর্তৃত্ব ছিল। এসব প্রকল্প থেকে মোটা অঙ্কের কমিশন গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং সাবেক এমপি আবদুস সোবহান গোলাপের বিরুদ্ধেও রয়েছে দেশি-বিদেশি অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ। জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের কুইন্স এলাকায় তিনি ৯টি ফ্ল্যাট ও বাড়ি কিনেছেন, যার বাজারমূল্য প্রায় ৩২ কোটি টাকা। দেশে ও বিদেশে তার অর্জিত স্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৩২ কোটি ৩৪ লাখ ২৭ হাজার ৯৬০ টাকা এবং অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৩৭ কোটি ১৬ লাখ ৬৯ হাজার ৬৭ টাকা। পারিবারিক ব্যয়সহ সর্বমোট ৬৯ কোটি ৭৬ লাখ ৭৯ হাজার ২৯৪ টাকার সম্পদের হিসাব পাওয়া গেছে, যা আইনবহির্ভূতভাবে অর্জিত বলে অভিযোগ রয়েছে।

শেখ হাসিনা সরকারের সময় ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে দাবি করে কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আল-জাজিরা। অনুসন্ধান অনুযায়ী, তার নামে এবং তার স্ত্রীর নামে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, দুবাই, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় রয়েছে বহু বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। যুক্তরাজ্যে তার ৩৬০টি বাড়ি ও অ্যাপার্টমেন্টের তথ্য মেলে। যার মূল্য প্রায় ২৫ কোটি ডলার বা ৩ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক ও নিউজার্সিতে ৯টি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট; দুবাইয়ে ৫৪টি সম্পদ, ব্যবসা ও রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টমেন্ট; মোট বিদেশি সম্পদের পরিমাণ আনুমানিক ৬৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার বা ৮ হাজার ১০০ কোটি টাকা।

দুবাই ও অন্যান্য দেশে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আড়ালে বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার ছিল জাভেদের মূল প্রক্রিয়া। তা ছাড়া ব্যাংক ঋণ ও ব্যবসার মুনাফা দেখিয়ে সম্পদ বৈধ করার চেষ্টা; ছোট অংশে অর্থ বিনিয়োগ করে বিদেশি সরকারের নজর এড়িয়ে সম্পদ অর্জন; হুন্ডি, ফাইন্যান্সার ও বিদেশি এজেন্টের মাধ্যমে অর্থ স্থানান্তর করে এমন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতেন তিনি। বার্ষিক আয়কর রিটার্ন বা নির্বাচনকালীন হলফনামায় এসব সম্পদের কোনো উল্লেখ করেননি তিনি।

সাইফুজ্জামান চৌধুরী জানিয়েছেন, শেখ হাসিনাও এসব বিষয়ে অবগত ছিলেন এবং তার ছায়াতেই এসব কাজ করেছেন তিনি। যুক্তরাজ্যে বসে আল জাজিরার সাংবাদিককে তিনি বলেছিলেন, আমার নিউইয়র্ক, ম্যানহ্যাটন, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ায় বাড়ি আছে। প্রধানমন্ত্রী জানতেন আমি এসব ব্যবসা করি। তিনি আরও বলেছেন, আমার বাবা প্রধানমন্ত্রীর (হাসিনা) খুব কাছের মানুষ ছিলেন। সত্যি বলতে আমিও। তিনি (হাসিনা) আমার বস।

একইভাবে আওয়ামী লীগের প্রায় সব নেতাকর্মী তাদের আপার শাসনামলে নিজেদের আখের গুছিয়েছিলেন। তাদের দুর্নীতি এতটাই বেড়েছিল, যা ধারণার বাইরে।

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একদলীয় শাসনব্যবস্থা ‘বাকশাল’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বহুদলীয় গণতন্ত্রকে নিষিদ্ধ করেছিলেন। অন্যদিকে, ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার কার্যত একটি একদলীয়, কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে, যেখানে বিরোধী মতের অস্তিত্ব থাকলেও তা কার্যত দমন করা হয়।

পঁচাত্তরের ২৫ জানুয়ারি সংবিধান সংশোধন করে একদলীয় ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হয়। সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা হয়। সব পত্রিকা বন্ধ করে মাত্র চারটি রাষ্ট্রীয় পত্রিকা রেখে বাকস্বাধীনতা হরণ করা হয়। রাজনৈতিক বিরোধিতার সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। শেখ হাসিনার শাসনামলে ২০১১ সালে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন চালু করা হয়। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে একতরফা ও প্রহসনমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের গুম, খুন, কারাবরণ এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ব্যবহারে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করা হয়। নির্বাচন কমিশন, বিচারব্যবস্থা ও প্রশাসন দলীয় নিয়ন্ত্রণে নিয়ে কার্যত একদলীয় শাসনের কাঠামো গড়ে তোলা হয়।

বাকশাল আমলে দেশের ৪টি বাদে সব পত্রিকা বন্ধ করা হয়। সেন্সরশিপের মাধ্যমে সাংবাদিকতা নিয়ন্ত্রিত হতো। অন্যদিকে হাসিনার আমলে শতাধিক মিডিয়া সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। সাংবাদিক গ্রেপ্তার, হয়রানি, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগ হয়। সেলফ-সেন্সরশিপ একটি বাস্তবতা হয়ে দাঁড়ায়।

বাকশালি আমলে নির্বাচন প্রক্রিয়া বাতিল করে একদলীয় মনোনয়ন ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল। আর ২০০৯–২০২৪ সালে নির্বাচন প্রহসনে পরিণত হয়। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে বিরোধী দলকে মাঠে নামতেই দেওয়া হয়নি। ২০২৪ সালে ভোটারবিহীন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

শেখ মুজিবের শাসনামলে সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরীণ অসন্তোষ, রাজনৈতিক বন্দিত্ব, গণতন্ত্রহীনতা থেকে বিদ্রোহ ও হত্যাকাণ্ড দেখা গেছে। ২০০৯–২০২৪ সাল পর্যন্ত গুম-খুনের ব্যাপক অভিযোগ (হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সূত্রে); রাষ্ট্রীয় বাহিনী দিয়ে বিরোধী নেতাকর্মীদের নিপীড়ন ও নির্যাতন ও ডিজিটাল আইন ব্যবহার করে মতপ্রকাশ নিয়ন্ত্রণের ঘটনা ঘটে।

মুজিবের সময় ছাত্রলীগকে মূল হাতিয়ার বানানো হয়। বিরোধী ছাত্রসংগঠন নিষিদ্ধ করা হয়। হাসিনা ছাত্রলীগের দাপট, বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্ত্রাস, হত্যাকাণ্ড ও হল দখলকে পরোক্ষ সমর্থন দিয়েছিলেন। তার আমলে ব্যাপক আকারে শিক্ষাব্যবস্থায় দলীয় প্রভাব, বিতর্কিত পাঠ্যক্রম ও প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়। ১৯৭৫ সালে মুজিবের বাকশাল ছিল একটি ঘোষিত একদলীয় শাসন। অন্যদিকে শেখ হাসিনার ২০০৯–২০২৪ সালের শাসন ছিল গণতন্ত্রের ছদ্মবেশে একটি কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থা, যেখানে নির্বাচন, প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা, গণমাধ্যম সবকিছু সরকারদলীয় নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। দুই সময়েই গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও মুক্তচিন্তার অবসান ঘটেছে; পার্থক্য হলো, শেখ হাসিনার সময় তা হয়েছে আধুনিক কৌশলে ও প্রশাসনিক পৃষ্ঠপোষকতায়।

গত বছর ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হলে আওয়ামী লীগের প্রায় ৩০০ জন এমপি-মন্ত্রী, বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের শীর্ষ নেতা একযোগে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। শুধু রাজনৈতিক নেতৃত্বই নয়—প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায়ের কর্মচারী পর্যন্ত বহুজন গোপনে দেশ ত্যাগ করেন। যারা শেখ হাসিনার একনায়কতান্ত্রিক শাসনকে টিকিয়ে রাখার প্রশাসনিক ভরসা ছিলেন, তাদের এই গণপলায়ন প্রমাণ করে যে, সরকারের ভিত নড়বড়ে ছিল এবং নৈতিক ভিত্তি সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছিল।

সরকারের নীতির ফলে কিছু ব্যবসায়ী এবং রাজনৈতিক নেতারা অলিগার্ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন। তাদের হাতে প্রচুর অর্থ এবং ক্ষমতা চলে যায়। ফলে দেশের রাজনৈতিক শৃঙ্খলা ও অর্থনৈতিক সমতা নষ্ট হয়। অলিগার্কদের প্রভাবশালী অবস্থান দেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করে। তারা দেশের অর্থনীতি তাদের নিজের প্রয়োজনে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হন, ফলে অর্থনৈতিক বৈষম্য বৃদ্ধি পায়। কিছু গোষ্ঠী যে পরিমাণ সুযোগ সুবিধা পেয়েছে, তা সাধারণ জনগণের মধ্যে থেকে আয়ের বৈষম্য বাড়ায়। অনেক সময় সরকারি প্রকল্প এবং উন্নয়ন কাজে দুর্নীতি বৃদ্ধি পায় অলিগার্কদের মাধ্যমে। সরকারি টেন্ডার প্রক্রিয়া এবং চুক্তি এসব ব্যক্তিদের কাছে চলে যাওয়ায় দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয় ও সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করে। এসব লোকেদের প্রভাবশালী অবস্থান রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। ফলে নৈতিক অবক্ষয় ঘটতে থাকে ও জনগণের মধ্যে আস্থা কমে যায়।

শেখ হাসিনা জনতুষ্টির মাধ্যমে দেশে উন্নয়নের নামে দুর্নীতি সৃষ্টি করেছেন। গণতন্ত্রের আদর্শকে অবজ্ঞা করে এবং একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠা করে, উন্নয়নের স্লোগান তুলে ক্ষমতা ধরে রেখেছিলেন। এর ফলে রাজনৈতিক স্বাধীনতা সংকুচিত হয় এবং জনগণের মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ণ হয়, যা দেশের জনগণের জন্য ব্যাপক ক্ষতির কারণ হয়েছে।

বিশ্লেষকরা শেখ হাসিনার সরকারের শাসনকাল সম্পর্কে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে মন্তব্য করেছেন, বিশেষ করে গুম, খুন, রাজনৈতিক মামলা এবং রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহারের বিষয়গুলো নিয়ে। তারা বলেন, শেখ হাসিনার শাসনামলে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গুম ও খুনের ঘটনা বেড়ে যায়, যা সরকারের প্রতি জনগণের আস্থাহীনতা সৃষ্টি করে। আইনশৃঙ্খলার অবক্ষয় এবং বিচার ব্যবস্থার অকার্যকর হওয়ার ফলস্বরূপ ঘটনাগুলো তার আমলে ঘটতেই থাকে।

অনেক বিশ্লেষক শেখ হাসিনার শাসনামলে রাজনৈতিক মামলা ও দমন-পীড়নের অভিযোগ তোলেন। তারা বলেন, সরকার বিরোধী মতের দমন ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দুর্বল করার কৌশল হিসেবে হাসিনার লোকজন বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, হামলা, এবং গ্রেপ্তার চালায়। বিশ্লেষকরা মনে করেন, শেখ হাসিনার সরকার রাষ্ট্রযন্ত্র—বিশেষ করে পুলিশ, র‌্যাব, এবং বিচার ব্যবস্থা—ব্যবহার করে নিজেদের ক্ষমতা ধরে রেখেছিল। সরকারের পক্ষ থেকে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং আইনের শাসনকে ক্ষুণ্ণ করে বিরোধী দল ও সমাজের বিভিন্ন অংশের ওপর রাজনৈতিকভাবে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন শেখ হাসিনা।

অনেক বিশ্লেষক এও বলেন, শেখ হাসিনার শাসনামলে গণতন্ত্রের অস্তিত্ব সংকুচিত হয়েছিল। বিরোধী দলের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হ্রাস করে দিয়েছিলেন তিনি। জনগণের রাজনৈতিক অধিকারের প্রতি তার সরকারের উদাসীনতা প্রবল হয়ে উঠেছিল। জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোকে শাসনমূলক শক্তি দ্বারা স্তব্ধ করা হয়েছিল।

২০২৪ সালের জুনে শিক্ষার্থীদের কোটা বৈষম্য ও দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনে পুলিশ-সেনা-দলীয় ক্যাডারের গুলিতে শতাধিক শিক্ষার্থী নিহত হলে আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে। অবশেষে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে।

বর্তমানে দেশে অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকার বিদ্যমান। গঠিত কমিশন আওয়ামী লীগের শাসনামলের দুর্নীতি, খুন-গুম, মানবাধিকার লঙ্ঘনের তদন্ত করছে। ইতিমধ্যে দলটির রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ জব্দ এবং পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনতে আন্তর্জাতিক সহায়তা চাওয়া হয়েছে।

এসব বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিলম্বে হলেও অন্তর্বর্তী সরকার ফ্যাসিবাদী সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিশ্চিত করতে এবং বিচারকার্য নির্বিঘ্ন রাখতে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনগুলোর কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গুম, খুন, নিপীড়ন ও জনগণের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের দমন-পীড়নের কারণে এই সিদ্ধান্তকে সঠিক বলেই আমরা মনে করি।

আন্তর্জাতিক

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার দ্বিতীয় মেয়াদেও প্রথম বিদেশ সফর করলেন সৌদি আরবে। দেশটির যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস)-এর প্রতি অকুণ্ঠ প্রশংসা জানালেন তিনি। রিয়াদে বিশ্বের শীর্ষ ব্যবসায়িক নেতাদের এক সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ট্রাম্প মজা করে যুবরাজকে প্রশ্ন করেন, মোহাম্মদ, আপনি রাতে ঘুমান কিভাবে? কী অবিশ্বাস্য কাজ আপনি করেছেন!

ট্রাম্প বলেন, তিনি (এমবিএস) রাতে আমাদের মতোই বিছানায় গড়াগড়ি করেন। ভাবেন— ‘আর কীভাবে উন্নতি করবো?’ এ মন্তব্যে যুবরাজ হাসি দিয়ে সাড়া দেন এবং উপস্থিত শ্রোতারা দাঁড়িয়ে করতালি দেন।

৭৮ বছর বয়সি ট্রাম্প সৌদি আরবের পরিবর্তনের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, সমালোচকরা মনে করত এটা সম্ভব না। কিন্তু গত আট বছরে সৌদি আরব তাদের ভুল প্রমাণ করেছে। আমি তাকে (এমবিএস) অনেক পছন্দ করি, খুব বেশি পছন্দ করি।

যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে ট্রাম্প ঘোষণা দেন, এমবিএস এবং তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগানের অনুরোধে তিনি সিরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিচ্ছেন।

এ সময় ট্রাম্প রসিকতা করে বলেন, ক্রাউন প্রিন্সের জন্য আমি কী-না করি!

ডোনাল্ড ট্রাম্প সৌদি আরবকে ‘বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ দেশ’ বলেও অভিহিত করেছেন। তিনি সৌদি নেতৃত্ব, অর্থনৈতিক রূপান্তর এবং বৈশ্বিক মঞ্চে দেশটির ক্রমবর্ধমান প্রভাবের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।

সৌদি নেতাদের উদ্দেশে ট্রাম্প বলেন, আপনারা বিশ্বের অন্যতম সমৃদ্ধ দেশ, রিয়াদ একটি বৈশ্বিক বাণিজ্য কেন্দ্র হয়ে উঠবে। মধ্যপ্রাচ্যের ভবিষ্যৎ এখান থেকেই শুরু।

সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে ‘দিন-রাত পরিশ্রমী নেতা’ হিসেবে বর্ণনা করে ট্রাম্প।

আন্তর্জাতিক

পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) এর প্রতিষ্ঠাতা ও দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দুই পুত্র– কাসিম ও সুলেমান– দীর্ঘদিনের নীরবতা ভেঙে তাদের বাবার কারাবন্দি অবস্থার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। খবর সামা টিভির।

ইমরান খানের গ্রেফতারের পর এই প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে কথা বলেছেন দুই ভাই। কাসিম খান বলেন, আমরা কখনো কল্পনাও করিনি যে আমাদের বাবা এত দীর্ঘ সময় ধরে কারাগারে থাকবেন। পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপ থেকে আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। আমাদের হাতে এখন খুব কম অপশন আছে, তাই আমরা মনে করি জনসমক্ষে কথা বলার সময় এসেছে।

তারা অভিযোগ করেন, ইমরান খান কারাগারে অমানবিক পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছেন এবং তার মৌলিক মানবাধিকার পর্যন্ত লঙ্ঘন করা হচ্ছে। কাসিম শঙ্কা প্রকাশ করে আরও বলেন, তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, তার মধ্যে কিছু অভিযোগের সাজা মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে।

তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, এখন তারা আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে ইমরান খানের মুক্তির পথ খুঁজছেন এবং এজন্য সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। কাসিম বলেন, এ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখার জন্য ট্রাম্পের চেয়ে উপযুক্ত আর কে হতে পারে? আমরা আমেরিকার প্রেসিডেন্টের কাছে সাহায্য চাইছি।

তিনি আরও বলেন, আমরা আইনি পথে যা যা করা সম্ভব, সব করেছি। বাবার মুক্তির জন্য এবং পাকিস্তানে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। আমি মনে করি না, তিনি কখনো নিজের মুক্তির বিনিময়ে কোনো আপস করবেন।

জাতীয়

আবারও লাশ পড়ল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। মঙ্গলবার (১৩ মে) সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে নিহত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হলের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্য।

কেবল সাম্যই নন, স্বাধীনতার পর থেকে রাজনৈতিক সংঘাতসহ নানা কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৭৬ খুনের তথ্য পাওয়া গেছে। গণমাধ্যম এবং বিভিন্ন নথি বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। সবগুলো হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত তথ্য যাচাই সম্ভব হয়নি।

অধিকাংশ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিরোধ, দলীয় কোন্দল, চাঁদাবাজি, অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন দল-উপদলের দ্বন্দ্ব ও নারীঘটিত কারণে হত্যাকাণ্ডগুলো সংঘটিত হয়েছে।

তবে বিভিন্ন সময়ে হওয়া এই ৭৬ হত্যাকাণ্ডের অধিকাংশেরই বিচার হয়নি। কোনো কোনোটির রায় হলেও আসামির চূড়ান্ত শাস্তি নিশ্চিত করা যায়নি।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় দুটি খুনের ঘটনা ঘটেছে। ২০২৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর চোর সন্দেহে তোফাজ্জল হোসেন (৩২) নামে এক মানসিক ভারসাম্যহীন যুবককে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করে হলের একদল শিক্ষার্থী।

এ ঘটনায় ৮ জনের সম্পৃক্ততা পেয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এরমধ্যে ৬ জনকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় একটি মামলা করেছে। তবে এখনো এ বিচারের কোনো অগ্রগতি নেই।

এর আগে ২০১০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি স্যার এ এফ রহমান হলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে পড়ে খুন হন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু বকর। ২০১৭ সালে এ মামলার রায়ে ছাত্রলীগের সাবেক ১০ নেতাকর্মী বেকসুর খালাস পান। অথচ রায়ের ব্যাপারে নিহতের পরিবার কিংবা বাদীকে কোনো কিছু জানানো হয়নি।

সেসময় ১০ শিক্ষার্থীকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট বহিষ্কার করে। তবে পরে হাইকোর্টের রিটের পর ২০১২ সালে তাদের বহিষ্কারাদেশ অবৈধ ঘোষণা করেন আদালত। জুলাই অভ্যুত্থানের পর এ ঘটনায় পুনরায় উচ্চ আদালতে আপিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৭১ সালের পর প্রথম হত্যাকাণ্ডের খবর পাওয়া যায় ১৯৭৪ সালের ৪ এপ্রিল।  সেদিন মধ্যরাতে হঠাৎ গুলির শব্দে কেঁপে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা। হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জের গুলিতে একে একে লুটিয়ে পড়েন সাতজন।

রাজনৈতিক বিরোধকে কেন্দ্র করে এদিন মাস্টার দা সূর্যসেন হলের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী বসির উদ্দিন আহমেদ, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আবুল হোসেন, সৈয়দ রিজওয়ানুর রব, এবাদ খান, সমাজবিজ্ঞানের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সৈয়দ মাসুদ মাহমুদ বাব্বন, ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রথম বর্ষের এম এ ইদ্রিস, সমাজবিজ্ঞানের এম এ চূড়ান্ত বর্ষের শিক্ষার্থী নাজমুল হক কোহিনুরকে মুহসীন হলের টিভি রুমের সামনে ব্রাশফায়ার করা হয়।

সাত খুনের ঘটনার নেপথ্যে ছিলেন ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম প্রধান। ঘটনায় জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়ে তাকে মৃত্যদণ্ড এবং বাকি আসামিদের ২২ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। কিন্তু রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে আসামিদের সাজা প্রথম ১০ বছর করেন। পরে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন।

১৯৭৭ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর প্রেম-সংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে জগন্নাথ হলের ভূতত্ত্ব বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী বীরেন্দ্র কুমার সরকারকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেন একই হলের রণজিৎ কুমার মজুমদার। এ ঘটনায় বাদী হয়ে মামলা করেন হলের প্রাধ্যক্ষ জপব্রত রায় চৌধুরী। তবে মামলার পর তিনি কখনো আদালতে যাননি। এদিকে রণজিৎ পুলিশকে ফাঁকি দিয়ে ভারতে পালিয়ে যান।

১৯৮৮ সালে সপরিবারে আমেরিকায় চলে যান জপব্রত রায়। অন্যদিকে মামলার অপর চারজন সাক্ষী নিহত বীরেন্দ্রর বন্ধু স্বপন কুমার রায়, সচিন্দ্র চন্দ্র ঘোষ, শীষ মোহাম্মদ এবং পুলিশের তৎকালীন সহকারী উপ-পরিদর্শক মামলার রেকর্ড অফিসার আবদুল বারীকেও আদালতে হাজির করতে পারেনি পুলিশ। ঘটনার ৩৭ বছর পর ২০১৪ সালে তদন্তকারী কর্মকর্তা খোরশেদ আলম আদালতে সাক্ষ্য দিতে এলেও ‘কেস ডকেট’ না থাকায় সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করা যায়নি।

১৯৭৭ সালে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে লুকুসহ ২ জন নিহত হন। একই বছর রণ্টু নামে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয় নুর গ্রুপের হাতে প্রাণ হারান। এ বছর হনু এবং গোপাল নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও দুজন শিক্ষার্থী নিহত হন। ১৯৭৮ সালে লিয়াকতসহ দুজন খুন হন।

এরশাদের শাসনামলে প্রণীত মজিদ খান শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনগুলো আন্দোলনে নামে। ১৯৮৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি এই আন্দোলনে ছাত্র-পুলিশ সংঘর্ষে জয়নাল নিহত হন।

১৯৮৫ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি এরশাদবিরোধী মিছিল নিয়ে মুহসীন হলের ফটক পার হওয়ার সময় এরশাদ সমর্থিত নতুন বাংলা ছাত্রসমাজের গুলিতে নিহত হন জাতীয় ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক রউফুন বসুনিয়া। ১৯৮৬ সালের ৩১ মার্চ ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ছাত্র ইউনিয়ন কর্মী মাজহারুল হক আসলাম নামে একজন নিহত হন।

১৯৮৭ সালের ৯ মার্চ হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে বোমা বানাতে গিয়ে ছাত্রদলের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল হক বাবলু এবং তার দুই সহযোগী মাঈনুদ্দিন ও নূর মোহাম্মদ নিহত হন। একই বছরের ১৪ জুলাই জাসদ ছাত্রলীগের সঙ্গে সংঘর্ষে আব্দুল ওয়াদুদ হালিম নামে ছাত্রদলের এক কর্মী নিহত হন। এ ঘটনার পরদিন ছাত্রদল ও জাসদ ছাত্রলীগের সংঘর্ষে মুন্না নামে একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। ঘটনাস্থলে আব্দুর রহিম নামে এক রিকশাচালক এবং কামরুল হাসান নামে এক পথচারী গুলি লেগে নিহত হন। এসব ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও পরে কোনো রিপোর্ট পাওয়া যায়নি।

১৯৮৮ সালের ১১ ডিসেম্বর ছাত্রদলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে বজলুর রশীদকে খুন করা হয়। ১৯৮৯ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি মতান্তরে ৯ ফেব্রুয়ারি ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনের সামনে ছাত্রদলের গোলাগুলিতে জাসদ ছাত্রলীগ কর্মী কফিল উদ্দিন কনক গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। একই বছরের ২৯ ডিসেম্বর রাতে সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী আরিফ।

১৯৯০ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত ৩৪ খুন

১৯৯০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগ নেতার সঙ্গে দ্বন্দ্বে সূর্যসেন হলের শিক্ষার্থী আলমগীর কবীর নিহত হন। একই মাসের ২৫ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগ নেতা ও জহুরুল হক হল ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি শহীদুল ইসলাম চুন্নু গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। একই বছরের ২৬ নভেম্বর পরমাণু শক্তি কমিশনের সামনে নিমাই নামের একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।

একই বছর হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের এক জাসদকর্মী নিহত হন। এ সময় ফজলুল হক মুসলিম হল থেকে শাহীন নামে এক শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার করা হয়। ১৯৯০ সালের ২৭ নভেম্বর স্বৈরশাসনবিরোধী আন্দোলনের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি সংলগ্ন টিএসসি মোড়ে সামরিক বাহিনী রিকশা লক্ষ্য করে গুলি করে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে ডা. শামসুল আলম খান মিলন নিহত হন।

১৯৯১ সালের ২১ জানুয়ারি সূর্যসেন হলের ছাত্র আলমগীর কবির লিটনের গুলিবিদ্ধ দেহ উদ্ধার করা হয়। ২০ জুন জাসদ ছাত্রলীগ এবং আওয়ামী লীগ সমর্থক ছাত্রলীগের সংঘর্ষে জাসদ ছাত্রলীগ নেতা মাহবুবুর রহমান খুন হন। ১৯৯১ সালের ২৭ অক্টোবর ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের সংঘর্ষে ছাত্রদল নেতা গালিব, লিটন এবং ছাত্রলীগের নেতা মিজান খুন হন। এসময় অজ্ঞাত পরিচয়ের একজনও নিহত হন।

১৯৯২ সালের ৯ জানুয়ারি ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে শামসুন নাহার হলের সামনে তৎকালীন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুজ্জামান বাদল গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। পরবর্তীতে ১৩ মার্চ ছাত্র ইউনিয়ন নেতা ও মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের মেধাবী ছাত্র মঈন হোসেন রাজু ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের গোলাগুলিতে পড়ে নিহত হন। ২৭ জুন সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান ছাত্রলীগ কর্মী লাক্কু। একই বছরের ১১ জুলাই কার্জন হল থেকে তন্ময় নামে একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। ৩০ আগস্ট ছাত্রদলের ইলিয়াস গ্রুপ এবং রতন গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে অজ্ঞাতনামা একজন নিহত হন। এই দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ৪ সেপ্টেম্বর ছাত্রদল নেতা আশরাফুল আলম মামুন ও খন্দকার মাহমুদ হোসেন নিহত হন।

১৯৯৩ সালে চাঁদা আদায়ের ভাগ-বাটোয়ারাকে কেন্দ্র করে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নাট্য সম্পাদক জিন্নাহকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি হলেও কোনো অগ্রগতির তথ্য পাওয়া যায়নি। এ সময় আরও দুই কর্মচারী নিহত হয়েছেন বলে তথ্য পাওয়া যায়। তবে তাদের নাম জানা যায়নি। ১৯৯৩ সালের ২২ নভেম্বর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অলোক কান্তি পাল গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।

১৯৯৪ সালে ফজলুল হক মুসলিম হলে গণিত বিভাগের প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার করা হয়। একই বছরের ১ সেপ্টেম্বর কামরুল ইসলাম বুলবুল নামে গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এ বছরের ২২ সেপ্টেম্বর ফজলুল হক মুসলিম হলে ছাত্রদলের সংঘর্ষে সরোয়ার খান মিঠু নিহত হন। ১৯৯৪ সালের ২৭ অক্টোবর জগন্নাথ হলে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী জাকিরকে হত্যা করা হয়।

১৯৯৬ সালের ২২ সেপ্টেম্বর ছাত্রলীগের কোন্দলে জগন্নাথ হলের একজন নিহত হন। ১৯৯৭ সালের ১৩ মার্চ ছাত্রদলের একটি সশস্ত্র গ্রুপ বঙ্গবন্ধু হলের আরিফ হোসেন তাজকে হত্যা করে। ১৯৯৭ সালে শাহীন নামে একজনের লাশ কার্জন হল থেকে উদ্ধার করা হয়। ১৯৯৮ সালের ২৩ এপ্রিল মধুর ক্যান্টিনে ছাত্রদলের গুলিতে নিহত হন ছাত্রলীগ নেতা পার্থ প্রতিম আচার্য। ১৯৯৮ সালের জগন্নাথ হলের এক শিক্ষার্থী ছাত্রলীগের কোন্দলে মারা যান।

১৯৯৯ সাল মনির হোসাইন ও ফিরোজ নামে দুজন খুন হন। ২০০০ সালের ১ জানুয়ারি ক্যাম্পাসে ছিনতাইকারী ছুরিকাঘাতে নিহত হন এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব নিকুঞ্জ বিহারী নাগ। একই বছরে ছাত্রদলের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে অজ্ঞাতনামা একজন নিহত হন। ২০০১ সালের ২৯ মার্চ খায়রুল ইসলাম লিটন নামে ছাত্রলীগের এক নেতা নিহত হন। ২০০৩ সালের ২৫ ডিসেম্বর মোহাম্মদপুরের ব্যবসায়ী ইয়াছমিন এবং ইসমাইলের লাশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাওয়া যায়।

২০০৪ সালের ১৭ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের গ্যারেজের সামনে থেকে শামসুর নামে একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। একই বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর ছাত্রদলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে নিহত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের জহুরুল হক হল ছাত্রদলের নেতা মাহাবুবুল ইসলাম খোকন। ওই হত্যাকাণ্ডের পর দুটি তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও প্রতিবেদন জমা পড়েনি। শাহবাগ থানায় মামলা হলেও এর বিচারকাজ শেষ হয়নি।

সুরাহা হয়নি অধ্যাপক আফতাব হত্যার

২০০৬ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর রাত পৌনে আটটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুলার রোডের বাসায় দুর্বৃত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক আফতাব উদ্দিনকে গুলি করে। তিন দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর ২৬ সেপ্টেম্বর তিনি মারা যান। এ ঘটনায় তার স্ত্রী বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করলেও গত ১৮ বছরেও মামলার জট খুলতে পারেনি পুলিশ।

২০১৫ সালে তার স্ত্রী নুরজাহানও মারা যান। বাদী হয়ে অন্য কেউ এই মামলা নিয়ে সোচ্চার হননি। এ পর্যন্ত ১২ জন তদন্ত কর্মকর্তা বদল হয়েছে, কিন্তু অধ্যাপক আফতাবকে কারা গুলি করেছে, তা এখনো শনাক্ত করা যায়নি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক মনে করেন, এ ধরনের হত্যাকাণ্ড এবং বিচার না হওয়ার ঘটনায় মূল দুর্বলতা রাজনৈতিক।

দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের ঘটনা ঘটা উচিত নয় এবং স্বাভাবিকও নয়। বেশ কয়েকটি ঘটনা বিবেচনা করলে এসব ঘটনা হয়তো সমাধানও করা যাবে। কিন্তু আমাদের দেশে তো কোনো কিছুই সেভাবে বিবেচনা করা হয় না। সেকারণে বিচারও হয় না।

আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, এগুলোর প্রতিকার চাইলে আমাদের রাষ্ট্রের এবং চিন্তা-ভাবনার কিছু পরিবর্তন দরকার। কিন্তু এসব নিয়ে রাজনৈতিক মহলে কোনো আলোচনা নেই। এই সমস্যার সমাধানে কোনো একটি জায়গায় প্রতিকার করলে হবে না। বরং একসাথে অনেকগুলো জায়গায় পরিবর্তন আনতে হবে। রাষ্ট্রকে পর্যায়ক্রমিক উন্নতির দিকে নিয়ে যেতে হবে।

এই অধ্যাপক বলেন, ১৯৭২ সাল থেকে বাংলাদেশ এত ঢিলেঢালা অবস্থায় আছে। সমস্যার দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের জন্য রাজনৈতিক নেতৃত্ব প্রয়োজন। কিন্তু এখানে সে প্রচেষ্টা দেখি না।

‘মানুষের মন মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। আমাদের সমাজ এমন হয়েছে, এখানে টাকা-পয়সা, সম্পত্তি কে কত বেশি অর্জন করতে পারে, তার ওপর মানুষের মর্যাদা নির্ধারিত হয়। আগে যেমন ধর্মের গুরুত্ব ছিল, দার্শনিক, বৈজ্ঞানিক, চিন্তাবিদ—এ ধরনের মানুষকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হতো। কিন্তু গত ৫০ বছরে সমাজ এসব থেকে সরে একটা সম্পূর্ণ বিশৃঙ্খলার মধ্যে পড়ে গেছে। রাজনৈতিক নেতৃত্ব সেভাবে গঠন করা হলে, এ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হবে।

রাজনীতি

যুক্তরাজ্যের লন্ডনে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার তারিখ একদিন পিছিয়ে গেছে। আগামী ৫ মে’র পরিবর্তে ৬ মে (মঙ্গলবার) তিনি দেশে ফিরবেন।

বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বিএনপি মহাসচিবের নির্দেশে আমাদেরকে জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া ৫ মে লন্ডন থেকে রওয়ানা হয়ে ৬ মে ঢাকায় পৌঁছাবেন।

তিনি আরও জানান, কাতারের আমিরের দেওয়া একটি বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে খালেদা জিয়া লন্ডন ত্যাগ করবেন এবং পরদিন বাংলাদেশে এসে পৌঁছাবেন।

খালেদা জিয়া ২০১৮ সালে তৎকালীন শেখ হাসিনা সরকারের আমলে দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার হয়ে পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ছিলেন। করোনা মহামারির সময় সরকার তাকে বিশেষ বিবেচনায় কারামুক্তি দেয়। তবে তিনি কার্যত গৃহবন্দি ছিলেন।

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের এক আদেশে খালেদা জিয়া মুক্তি পান। এরপর দুর্নীতির যে দুটি মামলায় তিনি কারাবন্দি ছিলেন, সেগুলোর রায় বাতিল করেন আদালত।

এরপর এ বছরের ৮ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে টানা ১৭ দিন লন্ডন ক্লিনিকে চিকিৎসা নেন তিনি। এরপর গত ২৫ জানুয়ারি তাকে তারেক রহমানের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। অর্ধযুগের বেশি সময় পর এবার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

দেশে ফিরছেন খালেদা জিয়া, নেতাকর্মীদের যে নির্দেশনা বিএনপির

প্রায় চার মাস লন্ডনে চিকিৎসা শেষে সোমবার দেশে ফিরছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। কাতারের আমিরের দেওয়া বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সেই ফিরছেন তিনি। তাকে বিমানবন্দর থেকে অভ্যর্থনা জানিয়ে তার বাসভবনে পৌঁছে দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপি।

শনিবার সন্ধ্যায় গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুলআলমগীর।

খালেদা জিয়ার সঙ্গে আসছেন তার দুই পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান এবং সৈয়দা শর্মিলা রহমান সিঁথি। এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের সময়সূচি চূড়ান্ত হয়নি। এর আগে বিএনপি থেকে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশ বিমানের নিয়মিত ফ্লাইটে লন্ডন থেকে সিলেট হয়ে সোমবার ঢাকায় পৌঁছাবেন খালেদা জিয়া।

এদিকে বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকায় পৌঁছানোর পর বিমানবন্দরে দলের চেয়ারপারসনকে অভ্যর্থনা জানাবে বিএনপি। এনিয়ে ব্যাপক প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন দলটির নেতারা।

খালেদা জিয়ার দেশে ফেরা নিয়ে শনিবার সন্ধ্যায় গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে যৌথসভা করে বিএনপি। পরে দলটির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা আশা করছি, আগামী ৫ তারিখে (৫ মে) দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া একটি বিশেষ বিমানে আসবেন। আমরা আশা করেছিলাম যে বিমানে তিনি গেছেন, কাতারের রয়াল অ্যাম্বুলেন্স, সেই অ্যাম্বুলেন্সেই তিনি আবার দেশে ফিরে আসবেন। সময়টা আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। কারণ, এই সময়টা বিভিন্ন বিষয়ের ওপর নির্ভর করবে। যদি আজকে রাতের (শনিবার) মধ্যে আমরা নিশ্চিত হই, তখন সেটা জানিয়ে দেব।’

প্রস্তুতির কথা জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘নেত্রী ফিরে আসবেন। স্বাভাবিকভাবেই আমাদের মধ্যে প্রচন্ড আবেগ আছে। প্রতিটি দেশপ্রেমিক মানুষ আজকে উৎসাহিত-উজ্জীবিত যে, তাদের প্রিয় নেত্রী দেশে ফিরে আসবেন। তাকে যথাযথ অভ্যর্থনা জানানো, এটা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। শুধু বিএনপি নয়, সারা দেশের মানুষ আজকে তাকে অভ্যর্থনা জানাতে প্রস্তুত হয়ে আছে। এনিয়ে আমরা যৌথসভা করেছি। জনগণ যাতে তাদের নেত্রীকে শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে অভ্যর্থনা জানাতে পারে, আমরা সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।’

বিএনপির নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, অত্যন্ত শৃঙ্খলার সঙ্গে রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে কোনো যানজট সৃষ্টি না করে তারা তাদের নেত্রীকে অভ্যর্থনা জানাবেন। আমরা যেটা বলেছি, একহাতে জাতীয় পতাকা এবং আরেক হাতে দলীয় পতাকা নিয়ে আমরা তাকে অভ্যর্থনা জানাব। এটাই হচ্ছে আমাদের সিদ্ধান্ত।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের দলের যৌথসভা করেছি। দুই সিটি, ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ বিএনপি এবং অঙ্গ-সংগঠনের নেতাদের নিয়ে। যাতে আমরা অত্যন্ত শৃঙ্খলার মধ্যদিয়ে জনগণ যেন তাকে অভ্যর্থনা জানাতে পারে, সেই ব্যবস্থা আমরা গ্রহণ করেছি। শুক্রবারও প্রশাসন এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গেও বসেছিলাম। আলোচনা করেছি। তিনি (তারেক রহমান) পরামর্শ দিয়েছেন।

তিনি বলেন, আল্লাহর অশেষ রহমতে চার মাস লন্ডনে একটি হাসপাতালে দেশনেত্রী চিকিৎসা নিয়েছেন। সেখানকার চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী তিনি বাসায় (বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাসায়) গিয়ে চিকিৎসা আবার নিয়মিত করেছেন। প্রতিদিন তার অবস্থার উন্নতি হয়েছে। একদিকে ভালো পরিবেশ, বিশেষ করে পারিবারিক পরিবেশ এবং একইসঙ্গে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যদিয়ে ও উন্নত চিকিৎসার মধ্যদিয়ে আল্লাহর অশেষ রহমতে তিনি আগের চেয়ে অনেক সুস্থবোধ করছেন। সেই কারণে তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তিনি এখন দেশে ফিরে আসবেন।

বিমানবন্দরের টারমার্কে বিএনপি মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা উপস্থিত থেকে চেয়ারপারসনকে অভ্যর্থনা জানাবেন। বিমানবন্দর থেকে গাড়িতে করে ৮নং গেট দিয়ে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর গুলশানের উদ্দেশে রওনা হবে। বিমানবন্দর মোড় থেকে গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’ পর্যন্ত সড়কের দুইপাশে নেতাকর্মীরা দাঁড়িয়ে তাদের নেত্রীকে শুভেচ্ছা জানাবেন।

প্রায় চার মাস লন্ডনে চিকিৎসাধীন থাকার পর রোববার সন্ধ্যায় হিথ্রো বিমানবন্দর ছাড়বেন খালেদা জিয়া। বিমানবন্দরে মাকে বিদায় জানাবেন ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গত ৮ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নিয়ে যাওয়া হয়। লন্ডন ক্লিনিকে টানা ১৭ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর ২৫ জানুয়ারি খালেদা জিয়াকে তার ছেলে তারেক রহমানের বাসায় লন্ডনের ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক প্যাট্রিক কেনেডি ও অধ্যাপক জেনিফার ক্রসের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

গুলশানের সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি আহ্বায়ক আমিনুল হক ও বিএনপি চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এবিএম আব্দুস সাত্তার, নিরাপত্তা সমন্বয়ক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) একেএম সামছুল রহমানসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতারা।

রাজনীতি

সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে সরব বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি ও আবহাওয়ার কথা বিবেচনা করে তিনি আগামী ফেব্রুয়ারি অথবা এপ্রিলের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানিয়েছেন।

জামায়াত আমির বলেছেন, ‘আমরা নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য দুটি সময়কে উপযুক্ত মনে করি। প্রথমত, রোজার আগে ফেব্রুয়ারি মাস। তবে যদি এই সময়ের মধ্যে নির্বাচনকালীন সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন না হয় এবং জনমনে আস্থা তৈরি করার মতো বিচারের দৃশ্যমান প্রক্রিয়া শুরু না হয়, তাহলে এপ্রিল মাসের পরই নির্বাচন আর বিলম্বিত করা উচিত নয়। ’

শনিবার (৩ মে) সকালে ঢাকার মগবাজারে আল-ফালাহ মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর জেলা ও মহানগরী আমির সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

ডা. শফিকুর রহমান আরও উল্লেখ করেন, ফেব্রুয়ারির শেষ এবং মার্চের বেশিরভাগ সময় রমজান মাস থাকায় তখন নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব নয়।

তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, সরকার যদি আন্তরিকভাবে সংস্কার কার্যক্রম এগিয়ে নেয় এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো সহযোগিতা করে, তাহলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব।

বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে জামায়াত আমির বলেন, ‘আমাদেরকে এখন ফ্যাসিবাদ নয়, বরং ফ্যাসিবাদীদের পতন নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। দুঃখজনক ইতিহাসে জাতি হিসেবে আমরা এখনো একটি ইতি টানতে পারিনি। ’

ডা. শফিকুর রহমান উল্লেখ করেন, ২০১১ সালের এপ্রিলের পর জামায়াতে ইসলামী এমন একটি বৃহৎ সম্মেলনে একত্রিত হওয়ার সুযোগ পায়নি।

তিনি অভিযোগ করেন, ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগীরা দেশ শাসন ও শোষণ করেছে এবং বিরোধী দল, বিশেষ করে ইসলামপন্থিদের ওপর বিভিন্নভাবে দমন-পীড়ন চালিয়েছে।

তিনি তিনটি বড় ধরনের গণহত্যার অভিযোগ তুলে ধরেন, যার মধ্যে রয়েছে পিলখানায় ৫৭ জন দেশপ্রেমিক সেনার হত্যাকাণ্ড, ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে হেফাজতের কর্মীদের হত্যা এবং ২০২৪ সালের জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত আরেকটি হত্যাকাণ্ড, যাতে অনেকে শহীদ ও পঙ্গু হয়েছেন।

৫ আগস্টের পরবর্তী সময়ের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে জামায়াত আমীর বলেন, ওই সময় দেশে কার্যত কোনো সরকার ছিল না। তিনি দলীয় কর্মীদের ধৈর্য ধরে শান্ত থাকার এবং সাধারণ মানুষকেও সংযত থাকার আহ্বান জানান।

তিনি জানান, অন্যান্য দেশে এমন পরিস্থিতিতে যা ঘটেছে, তার তুলনায় বাংলাদেশে তেমন কিছু ঘটেনি এবং যা ঘটেছে, তাও তারা সমর্থন করেন না। সেদিনই তারা আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়ার এবং আইনি প্রক্রিয়ায় প্রতিকার চাওয়ার কথা বলেছিলেন।

তিনি আরও জানান, জামায়াত ইসলামীর কর্মীরা সেই আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন এবং কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলেও দল দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে। জামায়াত শহীদ পরিবার ও আহতদের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রেখেছে। এছাড়া ফেনীর বন্যার শুরু থেকেই তাদের দলের কর্মীরা দুর্গতদের সহায়তায় এগিয়ে এসেছে।

যারা অনাকাঙ্ক্ষিত কাজ করেছে, তাদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়ে জামায়াত আমির বলেন, গত সাড়ে ১৫ বছরে যারা হত্যা, গণহত্যা, গুম, খুন ও ধর্ষণ করেছে এবং দেশের অর্থ বিদেশে পাচার করেছে, তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত সোচ্চার থাকব।

জাতীয়

বিএনপি বা জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বিক্ষোভ চলাকালে প্রকাশ্যে সহিংসতার ডাক দেয়নি। এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে জাতিসংঘ।

একইসঙ্গে তারা বিএনপি এবং জামায়াত নেতাদের এমন কোনো বক্তব্য খুঁজে পায়নি, যেখানে তারা সমর্থকদের সহিংসতা থেকে বিরত থাকতে এবং আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী, পুলিশ বা সরকারি স্থাপনার ওপর হামলা না চালানোর আহ্বান জানিয়েছে।
বাংলাদেশে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের (ওএইচসিএইচআর) তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

গত ১২ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ করা এই প্রতিবেদন বাংলা ভাষাভাষী পাঠকদের সহজবোধ্যভাবে বোঝার সুযোগ করে দিতে  ইংরেজি থেকে হুবহু বাংলায় অনুবাদ করেছে। বাংলায় অনুদিত সেই প্রতিবেদনটি ধারাবাহিকভাবে পাঠকদের কাছে সংবাদ আকারে তুলে ধরা হচ্ছে। আজ থাকছে সেই প্রতিবেদনের ১১তম পর্ব।

ওএইচসিএইচআরের প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ছিল একই ছাতার নিচে পরিচালিত আন্দোলন, যা বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র শাখাসহ বিভিন্ন ধরনের ছাত্রদের একত্রিত করেছিল।

১৮ জুলাই থেকে পুরোপুরি অবরোধের মাধ্যমে প্রধান সড়ক ও পরিবহন ব্যবস্থার কৌশলগতভাবে এবং দীর্ঘস্থায়ীভাবে অচলাবস্থা সৃষ্টির জন্য আন্দোলন সম্প্রসারণের ডাক দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী এই আহ্বানের প্রতিধ্বনি করে এবং তাদের বহুসমর্থকসহ সাধারণ জনগণের বড় একটি অংশ এই ডাকে সাড়া দেয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দাবি করেছেন যে, বিক্ষোভে সহিংসতার ঘটনা পরিকল্পিত এবং বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর দ্বারা সংঘটিত হয়েছিল। তারা প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন যে, বিভিন্ন স্থানে বিপুল সংখ্যক পুলিশ স্থাপনা, সরকারি ভবন এবং পরিবহন অবকাঠামোতে হামলা চালানো হয়েছে। তবে ওএইচসিএইচআর এই দাবির সমর্থনে কোনো তথ্য পায়নি। বরং, এটা অনুমান করা যায় যে, দেশব্যাপী পুলিশ এবং পূর্ববর্তী সরকার দেশজুড়ে বিক্ষোভকারীদের ওপর পরিকল্পিতভাবে যে গুরুতর বলপ্রয়োগ করেছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্নস্থানে জনতা ক্ষোভ প্রকাশ করেছে এবং কারো নির্দেশনা ছাড়াই স্বতঃস্ফূর্তভাবে পুলিশ ও সরকারি স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। বিশেষ করে, যেসব এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে পুলিশের নিপীড়ন বেশি ছিল, যেমন যাত্রাবাড়ী, উত্তরা ও আশুলিয়া, সেখানে পুলিশকে লক্ষ্য করে প্রতিশোধমূলক হামলা তীব্র ছিল।

ওএইচসিএইচআর যতটুকু নিশ্চিত হতে পেরেছে, বিএনপি বা জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বিক্ষোভ চলাকালে প্রকাশ্যে সহিংসতার ডাক দেয়নি। অন্যদিকে তাদের সমর্থকদের সহিংসতা থেকে বিরত থাকতে এবং আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী, পুলিশ বা সরকারি স্থাপনার ওপর হামলা না চালানোর আহ্বান জানিয়েছে, এমন কোনো বক্তব্যও খুঁজে পায়নি।

জাতীয়

রাখাইনের মধ্যে রোহিঙ্গাদের জন্য ‘আলাদা রাজ্য’ প্রতিষ্ঠা করার জন্য বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামী যে ‘প্রস্তাব’ দিয়েছে, মিয়ানমারের জান্তা সরকার তা প্রত্যাখ্যান করেছে।

দেশটি বলেছে, এর মাধ্যমে দেশটির সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন করা হয়েছে। জেনারেল মিন অং হ্লাইংয়ের জান্তা সরকারের বিবৃতিকে উদ্ধৃত করে শুক্রবার এ খবর দিয়েছে অনলাইন দ্য ইরাবতী।

ঢাকার গুলশানে ২৭ এপ্রিল চীনের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) সঙ্গে জামায়াতের একটি বৈঠক হয়। বৈঠকের পর দলটির ব্রিফিংয়ের সূত্র ধরে সেদিন একাধিক সংবাদমাধ্যমে খবর আসে, যাতে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের জন্য জামায়াতে ইসলামী আলাদা একটি স্বতন্ত্র রাজ্য গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে।

পরের দিন এ বিষয়ে দলের অবস্থান স্পষ্ট করতে সংবাদমাধ্যমে বিবৃতিও পাঠায় দলটি। তাতে দলের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, প্রেস ব্রিফিংয়ে আমি যে বক্তব্য দিয়েছি, তাতে মূলত বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের সম্মানজনক ও নিরাপদভাবে তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন করার ব্যবস্থা ও তাদের জন্য একটি নিরাপদ অঞ্চল গড়ে তোলার বিষয়টি বোঝাতে চেয়েছি।

রাজনীতি

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, গণতন্ত্র পূর্ণ প্রতিষ্ঠায় আমাদের লক্ষ্য সুনির্দিষ্ট। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জাতীয় ঐকমত্য তৈরি করার মাধ্যমে একটি জাতীয় সনদ তৈরি করা।

জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সঙ্গে সংলাপের সূচনা বক্তৃতায় তিনি আজ এ কথা বলেন।

আলী রিয়াজ আশা প্রকাশ করে বলেন, রাষ্ট্র পুনর্গঠন ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য রাজনৈতিক দল ও জোটগুলো নিজ নিজ অবস্থান থেকে ছাড় দেবে।

তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন রকম আদর্শিক অবস্থান থেকে তাদের মতামত দিয়েছেন। আমরা আশা করি জাতীয় স্বার্থে, রাষ্ট্র পুনর্গঠনের প্রশ্নে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য প্রত্যেকটা দল ও জোট কিছুটা ছাড় দিতে প্রস্তুত থাকবেন। কারণ আমরা সকলে মিলে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পুনর্গঠন, বিনির্মাণের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

আলী রিয়াজ বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে যে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে জাতি ও রাষ্ট্র হিসেবে অগ্রসর হওয়ার জন্য তা অত্যন্ত প্রয়োজন।

তিনি বলেন, ‘আমাদের এক জায়গায় আসতে হবে। এর অর্থ এ নয় যে সব বিষয়ে আমরা একমত হতে পারব। কিন্তু যেগুলো রাষ্ট্র বিনির্মাণে, পুনর্গঠনে এবং গণতান্ত্রিক ও জবাবদিহি ব্যবস্থা তৈরির জন্য প্রয়োজন সেখানে আশা করি একমত হতে পারব। সেটাই জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের চেষ্টা।’

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ১৬৬ প্রস্তাবের মধ্যে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট (এনপিপি) ১১২টায় একমত, ২৬টায় একমত নয় এবং ২৮ টায় আংশিক একমত হয়েছে বলে জানান জোটের চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ।

বৈঠকে ফরিদুজ্জামান ফরহাদের নেতৃত্বে জোটের ১১ জন নেতা আজ সংলাপে অংশ নিয়েছেন।

ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, একটা অনির্বাচিত সরকার যদি দীর্ঘসময় থাকে এটা বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি করে।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উদ্দেশে ফরিদুজ্জামান ফরহাদ
বলেন, ‘আপনি এমন একটা ভোটের ব্যবস্থা করে দেন যাতে মানুষ বলতে পারে দীর্ঘ পনেরো বছর পর আমরা এমন একটা ভোট দেখতে পেরেছি।’

তিনি বলেন, দেশের মানুষ যেন বলতে পারে ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করে সরকার গঠন করতে পেরেছি।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় বৈঠক উপস্থিত ছিলেন ঐকমত্য কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান।

সংস্কার কমিশন সমূহের সুপারিশ বিবেচনা ও গ্রহণের লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদনক্রমে ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’ গঠন করা হয় গত ১২ ফেব্রুয়ারি। সাত সদস্য বিশিষ্ট এই কমিশনের নেতৃত্বে রয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় এ কমিশনকে সাচিবিক সহায়তা প্রদান করছে।

রাজনীতি

নারীর ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় আগামী তিন মাসের মধ্যে বিভাগীয় সম্মেলন এবং নারী সংস্কার কমিশন বাতিলসহ চার দফা দাবিতে আগামী ২৩ মে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।

শনিবার (৩ মে) দুপুরে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসমাবেশে নতুন এই দুই কর্মসূচি ঘোষণা করেন সংগঠনটির মহাসচিব সাজিদুর রহমান।

তিনি বলেন, নারীর ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় আগামী তিন মাসের মধ্যে বিভাগীয় সম্মেলন করা হবে। আগামী ২৩ মে বাদ জুমা চার দফা দাবিতে দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হবে।

এর আগে ১২ দফা ঘোষণাপত্র পাঠ করেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নায়েবে আমির মাওলানা মাহফুজুল হক।

সমাবেশে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের যুগ্ম মহাসচিব আজিজুল হক ইসলামাবাদী।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আমাদের দেশ এখন বহুমুখী সঙ্কটে রয়েছে। সেইসাথে আগ্রাসী ভারতের ষড়যন্ত্রও থেমে নেই। উপরন্তু মানবিক করিডোরের নামে সাম্রাজ্যবাদীরা তাদের ভূরাজনৈতিক লড়াইয়ের স্বার্থে আমাদের জন্মভূমি বাংলাদেশকে নতুন যুদ্ধের ক্ষেত্র বানাতে পরিকল্পনা করে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় আমাদের জাতীয় ঐক্য আরো সুদৃঢ় করতে হবে। বাংলাদেশ নিয়ে আধিপত্যবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের ষড়যন্ত্র ঠেকাতে এবং দেশের অভ্যন্তরীণ নানা সঙ্কট মোকাবেলায় আমাদেরকে জুলাই-আগস্টের মতো ইস্পাত-কঠিন জাতীয় ঐক্য ও সংহতি আবারও গড়ে তুলতে হবে।

তিনি আরো বলেন, দেশে ইসলামবিরোধী গোষ্ঠী আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। সম্প্রতি নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন কোরআনবিরোধী প্রতিবেদন দাখিল করেছে। সাম্রাজ্যবাদের ফান্ডখোর কুখ্যাত নারীবাদীরা এদেশের সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ, বিধি-বিধান, ঐতিহ্য ও পরিবারকাঠামো ধ্বংস করার পশ্চাত্য পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মাঠে নেমেছে। অন্তর্বর্তী সরকারকে আমরা হুঁশিয়ার করে বলতে চাই, এনজিওবাদী গোষ্ঠীর প্ররোচনায় এমন কোনো হঠকারী সিদ্ধান্ত নেবেন না, যা কোরআন-সুন্নাহর বিরুদ্ধে যায়। এক্ষেত্রে আমরা কোনো ছাড় দেব না। এই বিতর্কিত কমিশন ও কোরআনবিরোধী প্রতিবেদন অবিলম্বে বাতিল করে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম অংশীদার আলেম-ওলামার পরামর্শ নিয়ে নতুন কমিশন গঠন করুন।

হেফাজতে ইসলাম নারীর ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, আমরা সরকারের নিকট দাবি জানাচ্ছি, দেশের যৌতুকপ্রথা বন্ধে কঠোর আইন করুন। শিক্ষা ও কর্ম ক্ষেত্রে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। এছাড়া, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন ফৌজদারি দণ্ডবিধি ও সাইবার সিকিউরিটি আইন থেকে ধর্ম অবমাননার শাস্তি সংক্রান্ত ধারাগুলো বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেছে, এটি আরেক গভীর ষড়যন্ত্র। সংখ্যাগুরু কিংবা সংখ্যালঘু— কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অধিকার অন্য কারো নেই। তাই ধর্ম অবমাননার শাস্তির আইনি ধারাগুলো বহাল রেখে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের ওই নির্দিষ্ট সুপারিশগুলো বাদ দিতে হবে। শুধু তা-ই নয়, আল্লাহ ও তার রাসূল (সা.)-এর নামে কটূক্তি বা বিষোদ্গার বন্ধে সর্বোচ্চ শাস্তির আইন করতে হবে। ৫ আগস্টের এই বিজয়কে আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে নিয়ে যেতে হবে। এমন একটি ন্যায়ভিত্তিক সংবিধান ও সরকারব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, যাতে করে এই বাংলাদেশের মাটিতে আর কখনো কোনো ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচারের জন্ম না হয়।

তিনি আরো বলেন, আমরা এমন বাংলাদেশ গড়তে চাই, যেখানে সংখ্যালঘুসহ সব নাগরিকের জান-মালের নিরাপত্তা, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও ধর্ম পালনের অধিকার সুরক্ষিত থাকবে। কথা বলার স্বাধীনতা থাকবে। নাস্তিকতা ও মুক্তমনা চর্চার নামে কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার সুযোগ থাকবে না। সংখ্যালঘুদের রাজনীতির বলির পাঁঠা বানানো যাবে না। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এমন একটি বিভেদমুক্ত সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা আমাদের প্রতিষ্ঠা করতে হবে, যেখানে কাউকে গুম-খুন, জেল-জুলুম ও পুলিশি নির্যাতন করা হবে না। গণহত্যার বিচারের পাশাপাশি ভারতীয় আধিপত্যবাদ ও আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দালালদেরও বিচার করা হবে। আমরা এদেশে ন্যায়বিচার ও ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চাই।

সমাবেশের সভাপতি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হয় এই মহাসমাবেশ।

এ সময় মহাসমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন হেফাজতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মাহমুদুর হাসান কাশেমী, নায়েবে আমির আহমেদ কাশেমী, জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, হেফাজত ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক প্রমুখ।