বিনোদন

৭৮তম কান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা বিভাগে জায়গা করে নিয়েছে নির্মাতা আদনান আল রাজীবের সিনেমা ‘আলী’। ১৫ মিনিট দৈর্ঘ্যের এই বাংলাদেশি সিনেমা লড়বে স্বল্পদৈর্ঘ্য বিভাগে।

শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) দুপুরে চলতি বছরের উৎসবে স্বল্পদৈর্ঘ্য বিভাগে মনোনীত সিনেমার তালিকা প্রকাশ করে কান উৎসব কর্তৃপক্ষ। পরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ‘আলী’র মনোনয়নের কথা জানান নির্মাতা নিজেও।

আদনান আল রাজীব পরিচালিত স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমাটির প্রযোজনা করেছেন বাংলাদেশের তানভীর হোসেন ও ফিলিপাইনের ক্রিস্টিন ডি লিওন। সিনেমাটির লাইন প্রোডাকশন কোম্পানি ‘রানআউট ফিল্মস’।

এই খবরে আবেগাপ্লুত হয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা এবং রাজীবের মেন্টর মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। সামাজিক মাধ্যমে করা এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘কিছু খবর আপনাকে আবেগপ্রবণ করে তোলে। এটাও তেমন একটি খবর! আঠারো বছর আগে যখন আদনান প্রথম মহাখালীতে আমার বাসায় এসেছিল, আমি দেখেছিলাম এক ছেলেকে—যে নিজেকে প্রমাণ করতে চায়, একটা ছাপ ফেলতে চায়!’

‘গতকাল যখন সে আমাকে ফোন করে জানাল যে তার শর্ট ফিল্ম আলী কান চলচ্চিত্র উৎসবের প্রতিযোগিতায় নির্বাচিত হয়েছে, আমি আনন্দে উচ্ছ্বাসে ভেসে গিয়েছিলাম! যেকোনো বাংলাদেশি নির্মাতার এমন অর্জন আমাকে সমানভাবে খুশি করত, কারণ এটি প্রথম কোনো বাংলাদেশি শর্ট ফিল্ম যা কানের প্রতিযোগিতায় জায়গা করে নিয়েছে! এটি এক ঐতিহাসিক সাফল্য!’-যোগ করেন ফারুকী।

‘আলী’ সিনেমার গল্প সম্পর্কে কিছুটা ধারণা দিয়ে রাজীব গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ব্যক্তিজীবনের ভেতর দিয়ে আমরা একটা অনিবার্য সত্যকে আবিষ্কার করার চেষ্টা করেছি। সহজ-সরল-সুন্দর ঢঙেই কাজটি করার চেষ্টা ছিল আমাদের।’

প্রসঙ্গত, আগামী ১৩ মে পর্দা উঠবে কান চলচ্চিত্র উৎসবের। চলবে ২৩ মে পর্যন্ত। এবারের মুয়ল প্রতিযোগিতা বিভাগে জুড়ি প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ফরাসি অভিনেত্রী জুলিয়েট বিনোশে।

রাজনীতি

‘জনতা পার্টি বাংলাদেশ’ নামে নতুন রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করেছে। দলের সংক্ষিপ্ত নাম জেপিবি। দলটির চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন, মহাসচিব বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ।

gnewsদৈনিক ইত্তেফাকের সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুনশুক্রবার (২৫ এপ্রিল) বেলা ১১টায় রাজধানীর শাহবাগে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এক অনুষ্ঠানে নতুন দলের নাম ঘোষণা করা হয়। নতুন এই রাজনৈতিক দলের স্লোগান— ‘গড়বো মোরা ইনসাফের বাংলাদেশ’।

ইলিয়াস কাঞ্চনের ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, দলের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকছেন ইলিয়াস কাঞ্চন নিজেই। ১৯৯৩ সালে স্ত্রী জাহানারা কাঞ্চনের সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর পর থেকে তিনি ‘নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)’ নামে একটি সামাজিক আন্দোলন চালিয়ে আসছেন।

যদিও অতীতে বহুবার তাকে রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছিল, এবারই প্রথম তিনি সরাসরি একটি রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে আসছেন।

এদিকে, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এ বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সাড়ে ছয় মাসে দেশে প্রায় ২২টি নতুন রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ‘জনতা পার্টি বাংলাদেশ’ আজ থেকে একটি নতুন রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে প্রবেশ করলো।

আন্তর্জাতিক

জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) শুক্রবার জানিয়েছে, গাজায় সমস্ত খাদ্য মজুদ শেষ হয়ে গেছে। কারণ ইসরাইল গত ২ মার্চ থেকে সীমান্ত পারাপার সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছে। এর ফলে অবরুদ্ধ গাজাজুড়ে এখন খাবারের জন্য হাহাকার!

এদিন এক বিবৃতিতে সংস্থাটি জানায়, ‘আজ ডব্লিউএফপির নিয়ন্ত্রণে থাকা গাজা উপত্যকার রান্নাঘরগুলোতে তাদের হাতে মজুদ থাকা সর্বশেষ খাবার সরবরাহ করেছে’।

আনাদোলু জানিয়েছে, এই রান্নাঘরগুলো গাজার অর্ধেক জনগণের দৈনন্দিন খাদ্য চাহিদার মাত্র ২৫ ভাগ জোগান দিয়ে আসছিল। তবে কয়েকদিনের মধ্যে সেগুলোও বন্ধ হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ডব্লিউএফপি জানায়, তারা যে ২৫টি বেকারিকে সহায়তা করে আসছিল, তা গত ৩১ মার্চের মধ্যেই গমের আটা ও রান্নার জ্বালানির অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। গাজার পরিবারগুলোর মধ্যে বিতরণ করা প্যাকেটজাত খাবারও ওই সময়ে শেষ হয়ে যায়।

সংস্থাটি এ সময় সতর্ক করে জানায়, এখানে নিরাপদ পানীয়জল ও রান্নার জ্বালানির মারাত্মক ঘাটতি রয়েছে। মানুষ এখন খাবার রান্না করার জন্য পোড়ানোর মতো কিছু একটা খুঁজে বেড়াচ্ছে।

স্থানীয় কর্তৃপক্ষের বরাতে আনাদোলু জানাচ্ছে, গাজা বর্তমানে ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘ সীমান্ত অবরোধের শিকার হয়েছে। ধ্বংসস্তুপ ও মৃত্যুপুরীতে পরিণত হওয়া উপত্যকাটিতে টানা সাত সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে কোনো মানবিক বা বাণিজ্যিক সহায়তা প্রবেশ করেনি।

সেখানে যুদ্ধবিরতির সময়ের তুলনায় বর্তমানে খাদ্যের দাম ১৪০০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে গেছে। মৌলিক পণ্যের ঘাটতি চরমে পৌঁছেছে। যার ফলে শিশু, গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী নারী ও বয়স্কদের জন্য গুরুতর পুষ্টিহীনতার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

ডব্লিউএফপি জানায়, ১০ লাখ মানুষের চার মাসের জন্য যথেষ্ট হবে এমন ১ লাখ ১৬ হাজার মেট্রিক টন খাদ্য সহায়তা সীমান্ত খুললেই গাজায় পাঠানো যাবে।

একই সঙ্গে সংস্থাটি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, ‘গাজা উপত্যকার পরিস্থিতি আবারও একটি ভয়াবহ অবস্থায় পৌঁছেছে। মানুষ আর সহ্য করতে পারছে না’।

পাশাপাশি, ‘গাজার নাগরিকদের প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। অবিলম্বে গাজায় সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দিতে হবে এবং আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের বাধ্যবাধকতা মেনে চলতে হবে’ বলে বিশ্বের সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

আন্তর্জাতিক

পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর ভারত ‘সিন্ধু পানি চুক্তি’ স্থগিত করেছে। ভারতের পানি শক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব দেবশ্রী মুখার্জি বৃহস্পতিবার তার সমকক্ষ পাকিস্তানের সচিব সৈয়দ আলী মুর্তজাকে একটি আনুষ্ঠানিক চিঠিতে এই স্থগিতাদেশের ঘোষণা দেন।

চিঠিতে ভারত অভিযোগ করে, ‘জম্মু ও কাশ্মীরকে লক্ষ্য করে পাকিস্তানের ধারাবাহিক আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদ’ এবং চুক্তি পুনর্বিবেচনায় পাকিস্তানের অনিচ্ছাই এই সিদ্ধান্তের কারণ। চুক্তির ৬৫ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম স্বাক্ষরকারী একপক্ষ এমন চরম পদক্ষেপ নিয়েছে।

পাকিস্তান ভারতের এই সিদ্ধান্তকে দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির (এনএসসি) এক বৈঠকের পর দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, সিন্ধু পানি চুক্তি একটি বাধ্যতামূলক আন্তর্জাতিক চুক্তি, যা বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় হয়েছে এবং এটিকে একতরফা স্থগিতাদেশের কোনো বিধান নেই।

এই চুক্তির মাধ্যমে ভারত তিনটি পূর্বাঞ্চলীয় নদী (সতলজ, বিয়াস ও রাভি) এবং পাকিস্তান তিনটি পশ্চিমাঞ্চলীয় নদী (সিন্ধু, ঝেলাম ও চেনাব) নিয়ন্ত্রণের অধিকার পায়। এখন চুক্তি থেকে ভারতের একতরফা সরে যাওয়ার পর পাকিস্তানের সামনে কি কোনো বিকল্প রয়েছে?

এনএসসির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পাকিস্তান তার অধিকার অনুযায়ী ভারতের সঙ্গে সব দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্থগিত করতে পারে; যার মধ্যে শিমলা চুক্তিও রয়েছে। বাস্তবতা হলো, পাকিস্তান যদি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্থগিত করা শুরু করে, তাহলে ভারত আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে অভিযোগও জানাতে পারবে না। অপরদিকে, পাকিস্তান বিশ্বব্যাংকের কাছে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিতের বিষয়ে ভারতের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করতে পারে।

প্রথমত, এটা বোঝা জরুরি যে, সিন্ধু পানি চুক্তিকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা ভারতের এটাই প্রথম নয়। এই চুক্তিটি ১৯৬০ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু এবং পাকিস্তানের জেনারেল আইয়ুব খানের মধ্যে করাচিতে স্বাক্ষরিত হয়েছিল। ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধেও এটি টিকে ছিল। ১৯৭০ সালে ভারত জম্মু ও কাশ্মীরের রিয়াসি জেলায় চেনাব নদীর উপর সালাল বাঁধ নির্মাণ করে চুক্তি লঙ্ঘন করে। তবুও এই চুক্তি ১৯৭১ সালের যুদ্ধেও টিকে ছিল।

পরবর্তীতে জুলফিকার আলী ভুট্টো পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হলে তার সরকার বিশ্বব্যাংকে সালাল বাঁধ নিমার্ণের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানায় এবং ভারতকে বাঁধটি নকশা পরিবর্তনে বাধ্য করা হয়। এরপর সামরিক শাসক জেনারেল জিয়াউল হকের সঙ্গে ১৯৭৮ সালে ভারত একটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করে। এ চুক্তির ফলে বাঁধের স্পিলওয়ে গেটের উচ্চতা ৪০ ফুট থেকে ৩০ ফুটে নামিয়ে আনতে বাধ্য হয় ভারত।

সিন্ধু পানি চুক্তিতে স্বাক্ষর করছেন ভারতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু, পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খান ও বিশ্বব্যাংকের সাবেক ভাইস-প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম ইলিফ। ছবি: বিশ্বব্যাংক
ভারত চুক্তিটিকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নয়ন হিসেবে ঘোষণা করে। তবে ভারতের পানি বিশেষজ্ঞরা এটিকে ঝেলাম, চেনাব এবং সিন্ধু নদীর পানি ঘুরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনায় বাধা বলে মনে করতেন। ২০০১ সালে ভারতের সংসদ ভবনে হামলার পর দেশটি পাকিস্তানের সঙ্গে চুক্তি স্থগিতের হুমকি দিয়েছিল। বিগত তথ্যপ্রমাণ থেকে এটি স্পষ্ট, ভারত বারবার সন্ত্রাসবাদের অজুহাত তুলে এই চুক্তিকে স্থগিত করার চেষ্টা করেছে। প্রকৃতপক্ষে, ভারতের লক্ষ্য ছিল ঝেলাম ও চেনাব নদীর উপর আরও বেশি বাঁধ নির্মাণ।

২০০৭ সালে ভারত কাশ্মীর উপত্যকার বান্দিপুরার উত্তরে ঝেলাম নদীর উপর কিশনগঙ্গা বাঁধ নির্মাণ শুরু করে। পাকিস্তান বিশ্বব্যাংকে অভিযোগ জানালে প্রকল্প স্থগিত করতে হয় ভারতকে। পরে বিষয়টি সালিশি আদালতে পাঠানো হয়, যা এখনো বিচারাধীন।

পুনরায় ২০১৩ সালে ভারত কাশ্মীরের কিশ্তওয়ার জেলায় চেনাব নদীর উপর রাতলে বাঁধ নির্মাণ শুরু করে। পাকিস্তান আবারও বিশ্বব্যাংকে অভিযোগ করলে, ভারত নকশায় পরিবর্তন আনতে বাধ্য হয়। ২০১৯ সালে পুলওয়ামা হামলার পর ভারত আবার চুক্তটি বাতিলের হুমকি দেয়। অনেক ভারতীয় বিশেষজ্ঞ দাবি করেন, এই চুক্তির মাধ্যমে পাকিস্তান ভারতের চেয়ে বেশি পানি পায়। প্রকৃতপক্ষে, এই দাবিটি ভুল।

গত বছর ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে চুক্তি পরিবর্তনের প্রস্তাব দিয়েছিল কিন্তু পাকিস্তান ইতিবাচক সাড়া দেয়নি। এরপর সর্বশেষ পেহেলগামে হামলার পর ভারত সরকার চুক্তিটি স্থগিতের ঘোষণা দেয় এবং প্রচার করে, ‘পানি অবরোধ’ করে পাকিস্তানকে ভয়াবহ পানি সংকটে ফেলা হবে।

তবে অনেক ভারতীয় বিশেষজ্ঞ বিজেপি সরকারের এই দাবির সঙ্গে একমত নন। ইন্ডিয়া টুডে-তে অভিষেক দে লেখেন, ‘চুক্তি স্থগিত মানেই তাৎক্ষণিকভাবে পাকিস্তানে পানি প্রবাহ বন্ধ করে দেওয়া যাবে এমন নয়; কারণ ভারতের হাতে এখনো সেই পরিকাঠামো নেই, যার মাধ্যমে সিন্ধু নদীর পানি থামিয়ে দেওয়া বা নিজের কাজে ব্যবহার করা সম্ভব। ভারত সর্বোচ্চ ৫-১০% পানি প্রবাহ কমাতে পারে।’

এই নদীগুলোর উপর বড় রিজার্ভার নির্মাণ করতে ভারতের কয়েক বছর লেগে যাবে। এর জন্য বিস্তৃত জরিপ এবং বিশাল অর্থের প্রয়োজন। পাকিস্তান এই প্রকল্পগুলোর কারণে দশ বছর পর সমস্যায় পড়তে পারে।

এটা নির্দ্বিধায় বলা যায়, ভারত সরকার মিথ্যা দাবি করে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে। এর বিপরীতে পাকিস্তান যদি শিমলা চুক্তি স্থগিত করে, তাহলে দীর্ঘমেয়াদে ভারতই বড় ক্ষতির মুখে পড়বে। বর্তমানে পাকিস্তানের হাতে শিমলা চুক্তি স্থগিতের অনেক যুক্তি রয়েছে। ভারত ১৯৮৪ সালে সিয়াচিন হাইটস দখল করে এ চুক্তি লঙ্ঘন করেছিল। পরবর্তীতে ভারতের সংবিধানের ৩৭০ এবং ৩৫এ অনুচ্ছেদ বাতিল করে জম্মু ও কাশ্মীরের মর্যাদা পরিবর্তন করে ভারত আবারও চুক্তিটি লঙ্ঘন করে।

এখন কল্পনা করা যাক, পাকিস্তান যদি শিমলা চুক্তি থেকে সরে আসে তাহলে কী কী হতে পারে। প্রথমত, পাকিস্তান আর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের শর্তে আবদ্ধ থাকবে না এবং কাশ্মীর ইস্যুতে তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ বা মধ্যস্থতার পথ খুলে যাবে। যুক্তরাষ্ট্র, চীন বা অন্য যে কোনো দেশ কাশ্মীর নিয়ে মধ্যস্থতা করতে পারবে। দ্বিতীয়ত, লাইন অব কন্ট্রোল (এলওসি) স্বয়ংক্রিয়ভাবে যুদ্ধবিরতির রেখা (সিএফএল) হিসেবে বিবেচিত হবে, যা কাশ্মীরের স্বাধীনতা আন্দোলনের পক্ষে সহায়ক হবে।

আন্তর্জাতিকভাবে কোনো আইন নেই যা যুদ্ধবিরতির রেখা অতিক্রম করা নিষিদ্ধ। ভারত হয়তো ভাবতেও পারছে না, শিমলা চুক্তি স্থগিত হলে কী ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে। ভারতের তথাকথিত ‘পানি অবরোধ’ হয়তো পাকিস্তানকে একেবারে শুকিয়ে ফেলবে না, কিন্তু পাকিস্তানের ‘শিমলা অবরোধ’র পর ভারত নিজেই সবচেয়ে বড় ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

জাতীয়

খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেছেন, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন ও তাদের প্রতিবেদন ইসলামবিরোধী। তাই অবিলম্বে তা বাতিল করতে হবে। তিনি ইসলামী ব্যক্তিত্বদের দিয়ে নতুন কমিশন গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন।

শুক্রবার বাদ জুমা বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন ও তাদের প্রতিবেদন বাতিল এবং ভারতে মুসলিম নির্যাতনের প্রতিবাদে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিল পূর্ব সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

আবদুল কাদের বলেন, ‘নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে তার ১০টির মতো প্রস্তাবনা সরাসরি কুরআনের বিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কমিশনের প্রতিবেদনে মুসলিম উত্তরাধিকার আইন বাতিলের প্রস্তাব করা হয়েছে। মুসলিম পারিবারিক আইন সংস্কার করে সব ধর্মের জন্য অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়নের প্রস্তাব করা হয়েছে- যেখানে বিয়ে, তালাক, উত্তরাধিকার ও ভরণপোষণে নারী-পুরুষের কথিত সমান অধিকার থাকবে। স্ত্রী স্বামীর বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করতে পারবে। যৌনকর্মীদের শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের প্রস্তাব করা হয়েছে। এসব প্রস্তাবনা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদে অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে দ্রুততম সময়ের মধ্যে কার্যকর করারও প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট- দেশের স্বার্থে, ইসলামের স্বার্থে এবং নারীদের স্বার্থে এই কমিশন বাতিল করতে হবে। কারণ, দেশের মানুষের বিশ্বাসের বিরুদ্ধে এই কমিশন দাঁড়িয়েছে। তারা পরিবার ও সমাজে বিশৃঙ্খলা তৈরির অপচেষ্টা করছে। পাশ্চাত্য জীবন দর্শনে প্রভাবিত কমিশনের এসব সদস্যরা বাংলাদেশের নারীদের সর্বসাধারণের আদৌ প্রতিনিধিত্ব করেন না। এরা দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়। তাদের প্রস্তাবনাগুলো মেনে নিলে তা হবে ইসলাম ও মুসলিম পরিচয়ের অস্তিত্বের ওপর একটি সুপরিকল্পিত আঘাত। কমিশনের এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে সবাইকে রুখে দাঁড়াতে হবে। এই কমিশন বাতিল ঘোষণা করা পর্যন্ত সবাইকে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে।’

খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আরও বলেন, ‘সম্প্রতি ভারতে ওয়াকফ আইন সংস্কারের মাধ্যমে মুসলিমদের সম্পত্তি উচ্ছেদ ও বাজেয়াপ্ত করছে বিজেপি সরকার। কাশ্মীরের মুসলমানদের ওপর ফিলিস্তিনের গাজার মতো গণহত্যা চালানোর জন্য বিজেপি নেতারা উসকানি দিচ্ছে। আমরা ভারতীয় মুসলমানদের ওপর উগ্রবাদী হিন্দুত্ববাদের সব আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা জানাই। ভারত সরকারকে তার নিজ দেশের সংখ্যালঘু মুসলমানদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের আহ্বান জানাই।’

খেলাফত মজলিসের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি অধ্যাপক মাওলানা আজীজুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন- দলটির নায়েবে আমির মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, যুগ্ম মহাসচিব মুহাম্মদ মুনতাসির আলী, ঢাকা মহানগরী উত্তর সভাপতি মাওলানা সাইফুদ্দিন আহমদ খন্দকার।

জাতীয়

অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্স প্রোগ্রামে ভর্তি হতে লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন।

তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব হিউম্যানিটিজ অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্সেসের অধীনে পরিচালিত ‘এক্সিকিউটিভ মাস্টার্স ইন পলিসি অ্যান্ড গভর্নেন্স’ (ইএমপিজি) প্রোগ্রামের সামার সেশন-২০২৫ এর ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন।

শুক্রবার সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রোগ্রামটির পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, আজ সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত আমাদের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে আসিফ মাহমুদ নামে একজন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেন। পরে আমরা জানতে পারি, তিনি মন্ত্রণালয়ের একজন উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, আজ সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত আমাদের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে আসিফ মাহমুদ নামের একজন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেন। পরে আমরা জানতে পারি, তিনি মন্ত্রণালয়ের একজন উপদেষ্টা।

তিনি আরও জানান, আগামী এক থেকে দুই দিনের মধ্যেই ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হবে। সেখানে যারা উত্তীর্ণ হবেন, তারাই ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাবেন।

এর আগে দুপুরের পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার ছবি ছড়িয়ে পড়ে এবং এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে ইতিবাচক আলোচনা শুরু হয়।

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ পরিচালিত এক্সিকিউটিভ মাস্টার্স ইন পলিসি অ্যান্ড গভর্নেন্স (ইএমপিজি) একটি বিশেষায়িত মাস্টার্স প্রোগ্রাম। এটি নীতিনির্ধারক, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, উন্নয়নকর্মী ও গবেষকদের জন্য প্রস্তুতকৃত একটি শিক্ষা কার্যক্রম। এ প্রোগ্রামের মাধ্যমে পাবলিক পলিসি, প্রশাসনিক দক্ষতা, নেতৃত্ব এবং সুশাসন বিষয়ক সমন্বিত জ্ঞান প্রদান করা হয়।

প্রোগ্রামের আওতায় সরকারি নীতিনির্ধারণ ও বিশ্লেষণ (পাবলিক পলিসি অ্যানালাইসিস), শাসন ব্যবস্থা ও প্রতিষ্ঠান বিষয়ক পাঠ, নীতিনির্ধারকদের জন্য অর্থনীতি, গবেষণা পদ্ধতি, জনপ্রশাসন ব্যবস্থাপনা, নেতৃত্ব ও কৌশলগত ব্যবস্থাপনাসহ অন্যান্য বিষয়ে পাঠদান করা হয়ে থাকে।

অর্থনীতি

বাংলাদেশ সরকার এবং বিশ্বব্যাংক গ্রুপের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (আইডিএ) মধ্যে দুটি অর্থায়ন চুক্তি সই হয়েছে।

বুধবার ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশের পক্ষে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী এবং বিশ্বব্যাংকের পক্ষে ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর গেইল এইচ. মার্টিন চুক্তিপত্রে সই করেন।

এদিন বে টার্মিনাল মেরিন ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (বিটিএমআইডিপি) বাস্তবায়নে ৬৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং সামাজিক সুরক্ষা জোরদার প্রকল্প (এসএসপিআইআরআইটি) বাস্তবায়নে ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের চুক্তি হয়।

প্রকল্প দুটি যথাক্রমে নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে সমাজসেবা অধিদপ্তর ও অর্থ বিভাগ বাস্তবায়ন করবে।

বে টার্মিনাল মেরিন ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে চলতি মাস থেকে ২০৩১ সালের জুন পর্যন্ত এবং এসএসপিআইআরআইটি প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল এ বছরের জুলাই থেকে ২০৩০ সালের জুন পর্যন্ত।

ঋণ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের (এসএআর) ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রেইজারসহ বিশ্বব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

চট্টগ্রামে বে টার্মিনাল নির্মাণে গত ২০ এপ্রিল একনেক সভায় ১৩ হাজার ৫২৫ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ব্যয়ে বে টার্মিনাল মেরিন ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (বিটিএমআইডিপি) অনুমোদন হয়।

ওই দিন সভায় সুরক্ষা জোরদার প্রকল্পও (এসএসপিআইআরআইটি) অনুমোদন পায়। মোট অনুমোদন দেওয়া হয় ১৬টি প্রকল্প। যার মোট ব্যয় ধরা হয় ২৪ হাজার ২৪৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা।

এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন তিন হাজার এক কোটি ৩৪ লাখ টাকা, প্রকল্প ঋণ ১৬ হাজার ৭১৯ কোটি ৭৩ লাখ টাকা এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন চার হাজার ৪২৬ কোটি ১৭ লাখ টাকা ব্যয় হবে।

অনুমোদিত ১৬টি প্রকল্পের মধ্যে ১৩টি নতুন এবং তিনটি সংশোধিত প্রকল্প রয়েছে।

খেলাধুলা

চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলীখেলার ১১৬তম আসরে রাশেদ বলীকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন কুমিল্লার বাঘা শরীফ। গতবারের আসরেও তিনি রাশেদকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন।

শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) বিকেল ৪টায় নগরের লালদীঘি মাঠের অস্থায়ী মঞ্চে এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেন ১২০ জন বলী।

আসর শুরু আগেই নানা বয়সী দর্শকদের আগমনে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় লালদীঘির ময়দান।

এ প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী আয়োজনে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ। প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।

১৯০৯ সালে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী আব্দুল জব্বার সাওদাগরের এ বলী খেলার সূচনা করেন। সেই থেকে প্রতি বছরের বৈশাখ মাসের ১২ তারিখ এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

এদিকে জব্বারের বলীখেলাকে ঘিরে লালদীঘির পাড়ে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে এ জনপদের সবচেয়ে বড় লোকজ মেলা।

এ প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী আয়োজনে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ। প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।

১৯০৯ সালে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী আব্দুল জব্বার সাওদাগরের এ বলী খেলার সূচনা করেন। সেই থেকে প্রতি বছরের বৈশাখ মাসের ১২ তারিখ এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

এদিকে জব্বারের বলীখেলাকে ঘিরে লালদীঘির পাড়ে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে এ জনপদের সবচেয়ে বড় লোকজ মেলা।

খেলাধুলা

ক্রিকেটের নাটকীয়তা যেন আজ নিজের সীমা ছাড়িয়ে গেল। নারী ক্রিকেট বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে দেখা গেল এমন এক রোমাঞ্চ, যা সিনেমার কাহিনিকেও হার মানায়।

একই পয়েন্টে শেষ করেও রান রেটের ব্যবধানে জায়গা হলো এক দলের, আর বাদ পড়লো আরেক দল।
১০ ওভারে ১৬৭ রান কিংবা ১১ ওভারে ১৭২—এই অসম্ভব সমীকরণ পূরণ করতেই নেমেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ নারী দল। থাইল্যান্ডের দেওয়া লক্ষ্য তারা টপকায় মাত্র ১০.৫ ওভারে। শেষ দুই বলে প্রয়োজন ছিল ১০ রান। প্রথম বলেই ছয় হাঁকিয়ে জয় নিশ্চিত করে তারা, কিন্তু তাতেও হলো না শেষরক্ষা।

জিতেও বিশ্বকাপে জায়গা হয়নি ক্যারিবীয়দের। কারণ ম্যাচ শেষে তাদের রান রেট দাঁড়ায় +০.৬৩, যেখানে বাংলাদেশের রান রেট +০.৬৪। মাত্র ০.০১ পয়েন্টের ব্যবধানে বিশ্বকাপে জায়গা করে নেয় নিগার সুলতানা জ্যোতির নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ দল।

বাছাইপর্বে দুর্দান্ত শুরু করেছিল বাংলাদেশ। টানা তিন জয়ে বিশ্বকাপের দরজায় কড়া নাড়ছিল দলটি। কিন্তু শেষ দুই ম্যাচে হারে স্বপ্নটা হয়ে পড়ে অনিশ্চিত। ওয়েস্ট ইন্ডিজের আজকের জয়ও চিন্তার ভাঁজ ফেলেছিল বাংলাদেশের কপালে। তবে নাটকীয় সমীকরণে শেষ হাসি হাসে লাল-সবুজের মেয়েরা।

তবে থাইল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই বড় জয়ও তাদের উদ্ধার করতে পারেনি। থাইল্যান্ডের ইনিংসে নাথাকান ছানথামের ৬৬ রানের লড়াকু ইনিংসে তারা সংগ্রহ করে ১৬৬ রান। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজ জানতো, শুধু জয় নয়—জয়টা হতে হবে অসাধারণ।

শেষ পর্যন্ত জয় পেলেও তীব্র রান রেটের লড়াইয়ে বাংলাদেশকে পেছনে ফেলতে পারেনি ক্যারিবীয়রা।

এখন নারীদের বিশ্বকাপের আসর বসবে ভারতে। যে আসরে বাছাইপর্ব পেরিয়ে পাকিস্তানের পর দ্বিতীয় দল হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশ নারী দল।

আন্তর্জাতিক

ঢাকায় ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ইউসুফ এস ওয়াই রামাদান। তিনি ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংকট নিয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন।

গত ১৫ এপ্রিল ঢাকাস্থ ফিলিস্তিন দূতাবাসে তার সাক্ষাৎকার নেয়া হয় ।

সম্প্রতি বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে লাখো জনতা ফিলিস্তিনের পক্ষে নানা কর্মসূচি পালন করেছে। আপনি নিশ্চয়ই সেটা প্রত্যক্ষ করেছেন?

ইউসুফ এস ওয়াই রামাদান: বাংলাদেশের জনগণ কখনো ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝখানে ছিল না। তারা সব সময় ন্যায়ের পক্ষে ছিল। ইসরায়েলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ও ফিলিস্তিনের পক্ষে ছিল। কেননা তারা দেখছে, গত ৭৭ বছর ধরে ফিলিস্তিনের জনগণ নিজেদের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করছে। ফিলিস্তিনিদের জন্য বাংলাদেশের বার্তা খুব স্পষ্ট—আমরা তোমাদের (ফিলিস্তিনের) পাশে আছি। এজন্য আমি বাংলাদেশে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত হিসেবেও গৌরব বোধ করি।

ফিলিস্তিনে দীর্ঘ দিন ধরে গণহত্যা চলে আসছে। তবে আমরা দেখছি, আরব বিশ্ব নীরবতা পালন করছে। আপনার মন্তব্য কী?

ইউসুফ এস ওয়াই রামাদান: এটা খুব দুর্ভাগ্যজনক যে, ফিলিস্তিনে গণহত্যা চলছে। শুধু আরবই নয়, সাধারণভাবে পুরো বিশ্বই নীরবতা পালন করছে। আর শুধু নীরবই নয়, কিছু দেশ এই গণহত্যার জন্ম দিচ্ছে, সেটা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে হোক না কেন। আর এটা ঘটছে এখন এই বিংশ শতাব্দীতে এসে, যখন আমরা মানবতা-গণতন্ত্র রক্ষা ও সকল নীতি নৈতিকতার কথা বলছি। যখন আমরা এসব বলছি, তখন কার্যকর ক্ষেত্রে আমরা দেখছি, সম্পূর্ণ এর বিপরীত এক চিত্র। আমাদের ধর্ম, বর্ণ আলাদা হতে পারে। তবে সবার সাথে আমাদের যে মিল আছে, সেটা হলো আমরা সবাই মানুষ। আমাদের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করার কথা, আমাদের অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করার কথা, আমাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করার কথা, প্রকৃতপক্ষে যারা মানবতার বিরুদ্ধে তাদের সকলের বিরুদ্ধেই আমাদের লড়াই করার কথা। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা সেটা করছি না।

তবে ফিলিস্তিনের জনগণ প্রকৃতপক্ষে মানবতার জন্যই লড়াই করছে। এই লড়াই অশুভশক্তির বিরুদ্ধে। এটা শুধু তাদের নিজেদের জন্য লড়াই নয়। আমি বিশদভাবে বলতে চাই না, কোন দেশ কী ভূমিকা পালন করছে। আমি বলতে চাই, বিশ্ব কিছুই করছে না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও কোনো ভূমিকা পালন করছে না। যদিও তারা চেষ্টা করছে, তবে কিছু করতে পারছে না, কারণ তারাও চাপে রয়েছে। এখন আমরা কী করতে পারি? আমরা লড়াই বন্ধ করে দিতে পারি না। কেননা আমাদের অনেক মূল্য দিতে হচ্ছে। আমাদের শুধু ১৭ হাজার শিশুই মারা গেছে! পুরো বিশ্ব সেটা দেখছে। এখানে তো মানবতা নীরব।

ফিলিস্তিন ইস্যুতে জাতিসংঘ তেমন কোনো জোরালো ভূমিকা নিতে পারছে না। এ ক্ষেত্রে আপনি কী বলবেন?

ইউসুফ এস ওয়াই রামাদান: ফিলিস্তিন ইস্যুতে জাতিসংঘ অনেক উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা জাতিসংঘকে অনেক সম্মান করি। তারা যতটা পারে, সেই চেষ্টাও করেছে। জাতিসংঘের ১৩০ জন কর্মী ইসরায়েলের আগ্রাসনে নিহত হয়েছে। তবে তাদের (জাতিসংঘের) ভূমিকা সীমিত। কারণ, তারা অপহৃত হয়েছে। আইনের ক্ষেত্রে তাদের পুরোপুরি কর্তৃত্ব নেই। কেননা সেখানে যুক্তরাষ্ট্র বারবার ইসরায়েলের সমর্থনে ভেটো দিয়ে আসছে, আর এটাই হলো প্রকৃত বাস্তবতা।

বাংলাদেশ গত সপ্তাহে পাসপোর্টে ‘এক্সসেপ্ট ইসরায়েল’ (ইসরায়েল ব্যাতিত) বাক্যটি সংযুক্ত করেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে যেটা প্রত্যাহার করা হয়েছিল। এ বিষয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

ইউসুফ এস ওয়াই রামাদান: ১৯৭২ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের পাসপোর্টে এটা (এক্সসেপ্ট ইসরায়েল) লেখা ছিল। তবে ২০২২ সালে বাংলাদেশ সরকার এই বাক্যটি পাসপোর্ট থেকে প্রত্যাহার করে। আমার শক্তিতে যতটুকু কুলায়, তখন আমি সাধ্যমতো চেষ্টা করেছিলাম, যেন সরকার ওই সিদ্ধান্তটা বাতিল করে। তবে সেটা সম্ভব হয়নি। আমার মনে আছে, সে সময়ের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর (আসাদুজ্জামান খান কামাল) সঙ্গে আমার একটি বৈঠক হয়েছিল। সেখানে আমি খুব স্পষ্ট করে বলেছিলাম—যখন আমাদের ফিলিস্তিনিদের রক্ত ঝরছে, শিশুদের রক্ত ঝরছে, গাজা উপত্যকায় এখনো আমরা অধিকার হারা আর এই মুহূর্তে এটা করা হলে ইসরায়েলকে একটি উপহার দেওয়া হবে। তবে তার (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর) উত্তর ছিল—আমরা ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখব, (পাসপোর্ট) আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার জন্যই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমি স্পষ্ট বলেছিলাম, এটা গ্রহণযোগ্য নয়। তবে চূড়ান্তভাবে আমরা সব দেশের সার্বভৌমত্বকে সম্মান করি। আমরা চেষ্টা করি, কখনো সফল হই, কখনো হই না।

তবে এখন যেটা আবার হয়েছে, এটা বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে ফিলিস্তিনের জনগণের প্রতি অবিচল সমর্থন ও সংহতি ঘোষণা। গত সপ্তাহে ঢাকায় প্রায় ২০ লাখ লোক সমবেশ করে সংহতি জানিয়েছেন। আর পাসপোর্টে ‘এক্সসেপ্ট ইসরায়েল’ যুক্ত হয়েছে। এই দুই ঘটনা আমাদের গৌরাবান্বিত করেছে।

ফিলিস্তিনে দীর্ঘদিন গণহত্যা চলছে। কীভাবে ফিলিস্তিন সংকটের সমাধান হতে পারে?

ইউসুফ এস ওয়াই রামাদান: এটা মিলিয়ন ডলারের একটি প্রশ্ন। এটা সমাধান সম্ভব, তবে অন্য অংশে ইসরায়েল এই সংকটের সমাধান চায় না। কারণ তাদের শক্তি আছে, তাদের পেছনে আমেরিকা আছে। এখানে ভুল বা সঠিক কোনো ইস্যু নেই, এখানে রয়েছে—শক্তি আর শক্তিহীনতার ইস্যু। আমরা এই সংকট সমাধানে ১৯৯০ সাল থেকে ইসরায়েলের সাথে আলোচনা করে আসছি। ইতোমধ্যে ৩৫ বছর অতিবাহিত হয়েছে। কিন্তু কিছুই হয়নি। এর মধ্যে দিয়ে ফিলিস্তিনিরা মারা যাচ্ছে, রক্ত ঝরছে। আর তারা আমাদের বেশিরভাগ ভূমি দখলে নিয়েছে। আপনারা জানেন, ঐতিহাসিক ফিলিস্তিন মাত্র ২৭ হাজার বর্গ কিলোমিটার। আমরা শুধুমাত্র ২২ শতাংশ ভূমি চেয়েছি, আমাদের রাষ্ট্রের জন্য। আর তাদের ৭৮ শতাংশ। কিন্তু তারা এটাও মানছে না। তাদের উদ্দেশ্য হলো, ‘গ্রেটার ইসরায়েল’ প্রতিষ্ঠা করা। তারা শুধু ফিলিস্তিন নয়, মধ্যপ্রাচ্যের অধিকাংশটাই চায়। তারা যতক্ষণ না মাথা থেকে এই অসুস্থতা না সরাবে, ততক্ষণ শান্তি আসবে না।

হামাস (ফিলিস্তিনের একটি ইসলামি রাজনৈতিক দল, যারা গাজা শহর নিয়ন্ত্রণ করে) ও ফাতাহ (প্যালেস্টাইন ন্যাশনাল লিবারেশন মুভমেন্টের) এর মধ্যে বিভক্তির জন্য ফিলিস্তিন সংকট সমাধান হচ্ছে না বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন। গত বছর চীনের মধ্যস্থতায় তাদের মধ্যে একটি চুক্তিও হয়েছিল। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?

ইউসুফ এস ওয়াই রামাদান: এই বিভক্তি আসলেই দুঃখজনক একটি অধ্যায়। এই বিভক্তির কোনো ন্যায্যতা নেই। তবে দুভার্গ্যজনক হলেও এটা হয়েছে। তবে বিভক্তি থাকলেও সংকট সমাধান করা যাবে না, সেটা সত্য নয়। এটা ইসরায়েলের প্রচারণা, এর পেছনে যাওয়া উচিত নয়। আমরা এ বিষয়ে খুব সতর্ক। আমরা (হামাস-ফাতাহ) একই জিনিস চিন্তা করি। আমরা আমাদের নিজস্ব দেশ চাই। তবে তারা (হামাস) ভিন্নভাবে বিশ্বাস করে। তারা ভিন্ন পন্থা বিশ্বাস করে। আর আমরা (ফাতাহ) বিশ্বাস করি, আলোচনা ও শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান। আমরা শান্তিপূর্ণ পথেই শান্তি আনতে চাই। কেননা আমরা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার মতো অবস্থানে নেই। আমাদের আলোচনাই করা উচিত। আমরা ইসরায়েলের সাথে আলোচনা করেই এই সংকটের সমাধান চাই। এ ছাড়া আমাদের অন্য কোনো বিকল্প নেই। আমরা যুদ্ধের জন্য যুদ্ধ করতে চাই না। হত্যার জন্য সংগ্রাম করতে চাই না। রক্তপাত চাই না। এটা আমাদের ধরন। তবে আপনি যদি চাপিয়ে দেন, আমরা সেটা করতে বাধ্য হব। আমরা ১৯৬৫ সাল থেকে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি, আর এখনো ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনা করতে চাই। আমরা যদি আলোচনায় ব্যর্থ হই, তাহলে তখন হামাস বলতে পারে—তোমরা ব্যর্থ, এখন একমাত্র উপায় যুদ্ধ।

আমি বলতে চাই, প্রতিটি ফিলিস্তিনির উচিত পিএলও (প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন)-এর ব্যানারে একত্রিত হওয়া, যেটা ফিলিস্তিনিদের বৈধ প্রতিনিধিত্বকারী সংস্থা। আশা করি, আমাদের হামাসের ভাইয়েরা এখানে এগিয়ে আসবেন। আর ফিলিস্তিনের জনগণকেই ভোটের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিতে দিন, কে তাদের নিয়ন্ত্রণ করবে। তবে যতই বিভক্তি থাকুক না কেন, এখন এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে, আমাদের উভয়ের শত্রু একই। এটাই এখন বাস্তবতা। আমরা বিভক্তিকে পাশ কাটিয়েই সামনে এগিয়ে যেতে চাই।

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

ইউসুফ এস ওয়াই রামাদান: আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।