রাজনীতি

দেশের লাখো শ্রমিকের জীবনমান উন্নয়নে শ্রম আইনকে আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

আগামী ১০ থেকে ২০ মার্চ জেনেভায় অনুষ্ঠেয় আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) ৩৫৩তম অধিবেশনের আগে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে এ নির্দেশনা দেন তিনি।

বুধবার (০৫ মার্চ) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। আইএলও অধিবেশনে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এম. সাখাওয়াত হোসেন।

প্রধান উপদেষ্টা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, আমাদের সবকিছু ইতিবাচকভাবে করতে হবে এবং কাজগুলো সম্পন্ন করতে হবে। এখানে কোনো অজুহাত দেওয়া চলবে না।

বাংলাদেশের শ্রম খাতে কর্মীদের বিমা সুবিধা এবং স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার নির্দেশনা দেন তিনি।

বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী অনলাইনে যোগ দেন। তিনি জেনেভায় আইএলও অধিবেশনে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের হয়ে অংশগ্রহণ করবেন। লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে শ্রম খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে।

বৈঠকে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এম. সাখাওয়াত হোসেন, সচিব এএইচএম শফিকুজ্জামান, আইন ও বিচার বিভাগের সচিব শেখ আবু তাহের এবং আইএলও বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি তুয়োমো পুশিয়াইনেন উপস্থিত ছিলেন।

জেনেভায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি তারেক মো. আরিফুল ইসলাম ভার্চ্যুয়ালি বৈঠকে যোগ দেন।

রাজনীতি

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, গণবিরোধী কিছু উপদেষ্টা প্রধান উপদেষ্টাকে শিক্ষকদের দিকে দৃষ্টি দিতে দিচ্ছেন না।

তিনি বলেন, এই নন এমপিও শিক্ষকরা পেটের ক্ষুধা নিবারণের জন্য যে দাবি তুলেছে এই দাবির প্রতি ন্যূনতম কোনো কর্ণপাত করেনি সরকার।এটাতো আবু সাঈদের রক্তঝড়া সরকার, মুগ্ধের রক্তঝড়া সরকার, এটাতো আহনাফের রক্তঝড়া সরকার।

বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সম্মিলিত নন এমপিও ঐক্য পরিষদের লাগাতার অবস্থান কর্মসূচিতে উপস্থিত হয়ে বিএনপির এই নেতা এসব কথা বলেন।

গত ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে এমপিওর দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন সম্মিলিত নন এমপিও ঐক্য পরিষদের শিক্ষকরা।

রিজভী বলেন, আজকে যারা সমাজের মেরুদণ্ড, সমাজকে যারা নির্মাণ করবেন, ছাত্রদেরকে যারা গড়ে তুলবেন তারা রাস্তায় দাঁড়িয়ে তাদের আহারের জন্য, খাদ্যের জন্য, কোনো রকমে মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার দাবি করছেন। অথচ সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের নজর নেই।

এ সময় আক্ষেপ করে তিনি বলেন, শিক্ষকদেরকে ক্ষুধার্ত রেখে, অনাহারে রেখে, এদের সন্তানদেরকে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়িয়ে আপনারা কী আনন্দ পাবেন আমি জানি না। কিছু কিছু উপদেষ্টারা এই কাজগুলো করছেন। তাদের (শিক্ষক) দিকে কোনো দৃষ্টি দেওয়াতে দিচ্ছেন না প্রধান উপদেষ্টাকে।

রিজভী বলেন, নন এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা যারা গত বিশ বছর, পঁচিশ বছর, ত্রিশ বছর ধরে একটি টাকাও পায়নি। এরা বাংলাদেশের লোক নন? এরাতো টাকা না নিয়েই অনেক ছাত্র তৈরি করেছেন যারা সমাজের বিভিন্ন জায়গায় আছেন। বিভিন্ন সরকারি দ্বায়িত্বও হয়তো পালন করছেন। তো এদের (শিক্ষক) দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে রেখেছেন কেন?

জাতীয়

পাবনায় কারাগারে থাকা অন্য কয়েদিদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা ও হাতাহাতির অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগ এবং এর বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।

এ ঘটনায় শাস্তিস্বরূপ পাঁচ আসামিকে মঙ্গলবার (৪ মার্চ) অন্য জেলার কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছে।

তারা হলেন- জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক তৌফিক ইমাম খান, গয়েশপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মোতাহার হোসেন মুতাই, জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শেখ লালু এবং আসাদুজ্জামান সুইট। তারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় হামলা ও হত্যার ঘটনায় করা মামলার আসামি।

পাবনা জেলার জেল সুপার মো. ওমর ফারুক জানান, কয়েক দিন ধরেই কারাগারে থাকা অন্য সাধারণ কয়েদিদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করছিলেন তারা। সর্বশেষ ৩ মার্চ বিকেলে এ পাঁচ কয়েদি কারাগারের অন্য কয়েদিদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন এবং বাগবিতণ্ডায় জড়ান। একপর্যায়ে তাদের গায়ে হাত তোলেন। পরে শাস্তিস্বরূপ কয়েদি তৌফিক ইমাম, শেখ লালু ও আসাদুজ্জামান সুইটকে রাজশাহী এবং মুতাই ও অন্যজনকে নওগাঁ জেলা কারাগারে স্থানান্তর করা হয়।

জেল সুপার আরও বলেন, বিগত সময়ে তারা বাইরে যেমন বেপরোয়াভাবে কথাবার্তা বলেছেন ও চলেছেন, কারাগারেও তেমনই চলছিলেন। ফলে ঝামেলাটা বাধে। অন্য কয়েদিদের সঙ্গে অশোভন আচরণ ও কারাগারে বিশৃঙ্খলার অভিযোগে ৪ মার্চ বিকেলে তাদের রাজশাহী ও নওগাঁ কারাগারে স্থানান্তর করা হয়।

রাজনীতি

জামায়াতে ইসলামী নেতা নয়, নীতি প্রতিষ্ঠা করতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।

তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী নেতা নয়, নীতিকে প্রতিষ্ঠা করতে চায়।

ক্ষমতা নয়, দুনিয়াতে আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠা করতে বদ্ধপরিকর। এ ব্যাপারে জামায়াত জোরালোভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
মঙ্গলবার (৪ মার্চ) রাজধানীর শ্যামলীতে বাদশাহ ফয়সল ইনস্টিটিউটে চিকিৎসকদের সম্মানে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তরের মেডিকেল থানা শাখা আয়োজিত এক ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ আহ্বান জানান তিনি।

রমজানের শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ হয়ে চিকিৎসকদের মানবসেবায় আত্মনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়ে জামায়াতের আমির বলেন, তাকওয়া বা আল্লাহভীতি অর্জন করার জন্য আল্লাহ আমাদের ওপর সিয়ামকে অত্যাবশ্যকীয় বা ফরজ করে দিয়েছেন, তাই এ মোবারক মাসে যথাযথভাবে সিয়াম ও কিয়াম পালনের মাধ্যমে ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তি অর্জন করতে হবে।

মেডিকেল থানা আমির ডা. স ম খালিদুজ্জামানের সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারি ডা. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদের পরিচালনায় ইফতার মাহফিলে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন, এনডিএফ সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক ডা. মাহমুদ হোসেন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম এবং থানা সহকারী সেক্রেটারি ডা.হাসানুল বান্না।

উপস্থিত ছিলেন মহানগরীর নায়েবে আমির আব্দুর রহমান মূসা, ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা, সহকারী সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান, নাজিমুদ্দিন মোল্লা, ডা. ফখরুদ্দিন মানিক, ইয়াসিন আরাফাত, জিয়াউল হাসান, ডা. আব্দুল জলিলসহ অনেকে।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, পবিত্র মাহে রমজান একটি মোবারক মাস। রাসূল (সা.) রজব মাস শুরুর সঙ্গে সঙ্গে এ বলে দোয়া করতেন, হে আল্লাহ তুমি আমাদের রজব ও শাবান মাসের বারাকাহ ও কল্যাণ নিশ্চিত করো এবং রমজান পর্যন্ত আমাদের পৌঁছে দাও। কারণ, হাদিসে রাসূল (সা.)-এ রমজান মাসের প্রথম ১০ দিন রহমত, মধ্যের ১০ দিন মাগফিরাত তথা গোনাহ মাফ, আর শেষ ১০ দিনকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তির সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। হাদিসে রাসূল (সা.)-এর অন্যত্র বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি ঈমান ও ইহতিসাবের সঙ্গে রমজান মাসে সিয়াম পালন করবেন, আল্লাহ তার পূর্বের সব গোনাহ মাফ করে দেবেন। মূলত, মাহে রমজান আত্মশুদ্ধি, তাকওয়া ও তাজকিয়া অর্জনের মাস। তাই এ মাসে বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে নিজেকে পরিশুদ্ধ করার কাজে আত্মনিয়োগ করতে হবে।

তিনি মাহে রমজানের শিক্ষা বাস্তব জীবনের প্রতিফলন ঘটাতে সবার প্রতি আহ্বান জানান।

জাকাত ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, শাড়ি-লুঙ্গি বা খাদ্যদ্রব্য নয় বরং এমনভাবে জাকাত দেওয়া উচিত, যাতে একজন ব্যক্তি স্বাবলম্বী ও প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। ইসলামী রাষ্ট্র না হওয়ায় সরকারি জাকাত ব্যবস্থাপনায় জনগণের আস্থা নেই। তাই মানুষ সরকারকে জাকাত দিতে চায় না। মূলত, জামায়াতে ইসলামী নেতাকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায় না, আল্লাহর দ্বীনকে প্রতিষ্ঠা করতে চায়।

তিনি বলেন, জামায়াত নিজেরা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়, আল্লাহর কুরআন বিজয় করতে চায়। তিনি দ্বীন বিজয়ের লক্ষ্যে সব শ্রেণি ও পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ময়দানে কাজ করার আহ্বান জানান।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, পবিত্র রমজান মাসেই মহাগ্রন্থ আল কুরআন নাজিল হয়েছে বলে এ মাসের এতো মর্যাদা। মূলত, এ মাসকে কুরআনের মাসও বলা হয়। তাই মানবজীবনের সব সমস্যার সমাধান করতে হবে কুরআনের আদর্শের ভিত্তিতেই।

তিনি দ্বীন প্রতিষ্ঠায় চিকিৎসকদের দাওয়াতি কার্যক্রম বাড়ানোর আহ্বান জানান।

মোবারক হোসাইন বলেন, রমজানে সিয়াম পালন শুধু আমাদের জন্য নয় বরং পূর্ববর্তীদের জন্যও অত্যাবশ্যকীয় ছিল। আমরা যাতে তাকওয়া অর্জন করতে পারি, সেজন্যই রোজা আমাদের জন্য ফরজ করা হয়েছে। তাই পবিত্র রমজান মাসে সিয়াম ও কিয়াম পালনের মাধ্যমে তাকওয়ার সমাজ প্রতিষ্ঠায় সবাইকে আত্মনিয়োগ করতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে ডা. স ম খালিদুজ্জামান বলেন, আমরা সবাই আল্লাহর বান্দা। তাই চিকিৎসাকে শুধু পেশা হিসেবে নেয়, মানবসেবা হিসেবে নিতে হবে।

তিনি চিকিৎসকদের সেবার মানসিকতা নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানান।

রাজনীতি

জুলাই অভ্যুত্থানের নেতৃত্বের প্রথম সারিতে যারা ছিলেন, তারা এরইমধ্যে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন। ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’ নামের দলটি আত্মপ্রকাশ করেছে ২৮ ফেব্রুয়ারি।

এরপর থেকেই নতুন এ দলের নিবন্ধনের বিষয়টি আলোচনায় উঠে এসেছে। আগামী নির্বাচনের আগে বিদ্যমান আইনে নতুন দলটির নিবন্ধন সম্ভব, না কি নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ করা হবে, তা নিয়ে অনেকেই কথা বলছেন।
বলা হচ্ছে, নিবন্ধন পেতে প্রধান তিন শর্তের প্রথম দু’টি পূরণ করা নতুন দলটির নাগালের বাইরে। কেননা, দলটি আগে কোনো সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি এবং কোনো আসনে জয়লাভ করেনি বা ন্যূনতম ভোটও পায়নি। এক্ষেত্রে কেবল একটি পথ খোলা। সেটি হলো নির্দিষ্ট কার্যালয়সহ কমিটি গঠন ও সমর্থক জোগাড় করা। তবে অক্টোবরে তফসিল হলে আট মাসে সেটাও কতটুকু সম্ভব সে প্রশ্নও দেখা দিয়েছে।

এদিকে নতুন দল নিবন্ধনের বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারছে না নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নিবন্ধন প্রক্রিয়ার আইনি দিক নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সুপারিশ আসে কি-না, সে অপেক্ষা করতে চায় সংস্থাটি।

ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ করার জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করেছে। ঐক্যমত কমিশনেও বিষয়টি নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা হবে। এরপর যে সিদ্ধান্ত আসবে সে দিকেই যাবে কমিশন।

সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের নেতৃত্বে গঠিত নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন সুপারিশে বলেছে, নতুন দল নিবন্ধনের শর্ত শিথিলের লক্ষ্যে বিদ্যমান এক তৃতীয়াংশ জেলা কমিটির পরিবর্তে ১০ শতাংশ জেলা এবং ১০০ উপজেলার পরিবর্তে ৫ শতাংশ উপজেলা/থানায় দলের অফিস এবং ন্যূনতম ৫ হাজার সদস্য থাকার বিধান করতে হবে।

একই রকম দাবি বিভিন্ন দল থেকেও করা হয়েছে। গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি এ বিষয়ে বলেন, আমরা মনে করি, পুরো নিবন্ধন বিধিমালাই পরিবর্তন করা দরকার। কারণ দল নিবন্ধনের যে আইন ও বিধি তৈরি করা হয়েছে তা জনগণের অধিকারকে ক্ষুণ্ন করে। রাজনৈতিক দল গড়ে তোলার অধিকার ক্ষুণ্ন করে।

তিনি বলেন, বিগত সরকারের যে নিবর্তনমূলক বিষয়গুলো ছিল, যেভাবে ফ্যাসিস্ট কায়দায় জনগণের অধিকারকে হরণ করতে চেয়েছে, একই কায়দায় রাজনৈতিক দলও যাতে বিকশিত হতে না পারে, সেজন্য নানাভাবে যেন রাজনৈতিক কার্যক্রম সংকুচিত করে রাখা যায়, সেটার অংশ হিসেবেই গণসংহতির ছয় বছর নিবন্ধন আটকে রেখেছিল।

জোনায়েদ সাকি বলেন, পরবর্তী সময়ে আদালতের নির্দেশ মান্য করা হচ্ছে না, এই রকম দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশনও আবার আদালতের দারস্থ হলেন। তবে আপিল চালাতে আগ্রহী কি না, সরকার পতনের পর সেই ইসির কাছে জানতে চাইলে তারা আপিল প্রত্যাহার করে নেয়। এভাবে নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ইসি।

নিবন্ধিত দল:

ইসিতে বর্তমানে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৪৯টি। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এবি পার্টি, নুরুল হক নুরের গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি), মাহমুদুর রহমানের নাগরিক ঐক্য এবং গণসংহতি আন্দোলন নিবন্ধন দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। দলগুলোর প্রায় প্রতিটিই আবেদনের পাঁচ থেকে ছয় বছর পর আদালতের আদেশে নিবন্ধন পেয়েছে। এর আগে ২০১৮ সালেও শর্ত পূরণ না করার কারণ দেখিয়ে ৭৬টি দলের কোনোটিকেই নিবন্ধন দেয়নি ইসি। পরে ২০১৯ সালে ববি হাজ্জাজের দল এনডিএম আদালতের আদেশে নিবন্ধন পেয়েছিল।

নবম সংসদ নির্বাচনের আগে ২০০৮ সালে নিবন্ধন প্রথা চালু হয়। এ পর্যন্ত ৫৪টি দল ইসির নিবন্ধন পেলেও পরবর্তীতে শর্ত পূরণ, শর্ত প্রতিপালনে ব্যর্থতা এবং আদালতের নির্দেশে পাঁচটি দলের নিবন্ধন বাতিল করে ইসি। দলগুলো হলো- জামায়াতে ইসলামী, ফ্রিডম পার্টি, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, পিডিপি ও জাগপা।

নতুন দল:

জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তীতে আন্দোলনকারীরা ইতিমধ্যে নতুন দল গঠন করেছে। জাতীয় নাগরিক পার্টি নামের দলটির আহ্বায়ক হয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের সদ্য পদত্যাগী উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও সদস্য সচিব আখতার হোসেন। ১৭১ সদস্য বিশিষ্ট দলটির কমিটিতে রয়েছেন আন্দোলনের অগ্রভাগে থাকা ছাত্র নেতারা। শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দলটির আত্মপ্রকাশের পর ইসির দল নিবন্ধন নিয়ে ফের সামনে এসেছে আলোচনা।

নিবন্ধনের বর্তমান পদ্ধতি:

গণপ্রতিনিধি আদেশ-১৯৭২ এ নতুন দল নিবন্ধনের জন্য তিনটি প্রধান শর্তের যে কোনো একটি পূরণ করতে হয়।
(ক) বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে দরখাস্ত দাখিল করার তারিখ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনের যে কোনো একটিতে দলীয় নির্বাচনী প্রতীক নিয়ে কমপক্ষে একটি আসন লাভের সমর্থনে প্রামাণিক দলিল; অথবা
(খ) বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে দরখাস্ত দাখিল করার তারিখ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনের যে কোনো একটিতে দরখাস্তকারী দল কর্তৃক নির্বাচনে অংশগ্রহণকৃত নির্বাচনী এলাকায় প্রদত্ত মোট ভোট সংখ্যার শতকরা পাঁচ ভাগ ভোট লাভের সমর্থনে কমিশন বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কর্তৃক ইস্যুকৃত প্রত্যয়নপত্র; অথবা
(গ) দলের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ, সেটি যে নামেই অভিহিত হোক না কেন, একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় দপ্তর, অন্যূন এক তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর জেলা দপ্তর এবং অন্যূন একশটি উপজেলা বা মেট্রোপলিটন থানায় কার্যকর দপ্তর এবং ওই রকম প্রতি উপজেলায় বা থানায় অন্যূন দুইশত ভোটার সদস্য হিসাবে দলের তালিকাভুক্ত থাকার সমর্থনে প্রামাণিক দলিল।

এছাড়া দলের প্রতিটি কমিটি নির্বাচিত, সর্বস্তরের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী সদস্য পদ রাখা, বিদেশি শাখা না রাখার মতো শর্তগুলোও রয়েছে।

কী বলছে ইসি:

এ বিষয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব কেএম আলী নেওয়াজ বলেন, অনেকেই দল নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ করার জন্য বলছেন। কোনো কোনো দল থেকে আরো কঠিন করার জন্য বলা হচ্ছে। কেউ কেউ আবার বর্তমান প্রক্রিয়া রাখার পক্ষে। অনেকেই নিবন্ধন প্রথা তুলে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছে। কাজেই এটা একটা জটিল বিষয়।

তিনি বলেন, সরকার গঠিত সংস্কার কমিশনও দল নিবন্ধন প্রক্রিয়া নিয়ে সুপারিশ করেছে। সরকার ঐক্যমত কমিশন গঠন করেছে। এখন সেখান থেকে কী সুপারিশ আসে সেটা দেখতে হবে। যেহেতু এটা রাজনৈতিক দলের বিষয়, তাই তাদের মতামত ছাড়া কোনো সিদ্ধান্তে সহজে আসা যাবে না। সে জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

অতিরিক্ত সচিব আরো বলেন, প্রতি সংসদ নির্বাচনের পূর্বে গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে নিবন্ধনের আবেদন আহ্বান করা হয়। এক্ষেত্রে আইনে যে প্রক্রিয়া আছে সেটাই ফলো করতে হবে।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, নিবন্ধন আইন তো একটা থাকতে হবে। বর্তমানে যে আইন আছে, সেটার হয়তোবা সংযোজন, বিয়োজন কিছু থাকতে পারে।

তবে বর্তমান আইন নিয়ে আমরা এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করব না। যেহেতু একটা আইন আছে, সবাই বলতেছে। এখন বিষয়টা ঐকমত্যের প্রশ্ন। কেউ বলবে যে আরও কঠিন করতে। কেউ বলবে যে আরও সহজ করতে। কেউ বলবেন যে আইনটা বাতিল করে দেন। বলার স্বাধীনতা সবার আছে। আমরা কোনো মন্তব্য করে রাজনৈতিক বিতর্ক সৃষ্টি করতে চাই না।

আন্তর্জাতিক

আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, ভোটের অধিকারের ব্যাপারে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে জেনেভায় প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে বুধবার এ কথা বলেন উপদেষ্টা। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট বিক্ষোভের সঙ্গে সম্পর্কিত মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নির্যাতনের ওপর জাতিসংঘের মানবাধিকার তথ্য অনুসন্ধান প্রতিবেদন জেনেভায় উপস্থাপনা করা হয়। এ সময় সেখানে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্কের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।

প্রতিবেদনের বিষয়ে উপস্থাপনের পর বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার প্রতিনিধিরা বেশ কিছু প্রশ্ন ও মতামত ব্যক্ত করেন। এর মধ্যে সম্প্রতি সংখ্যালুঘ ইস্যু ও পার্বত্য চট্টগ্রামে নির্বাচন ইস্যুতে করা প্রশ্নের উত্তর দেন ড. আসিফ নজরুল।

এ সময় আসিফ নজরুল বলেন, বাংলাদেশে কিছু রাজনৈতিক সহিসংতার ঘটনা ঘটেছে আওয়ামী লীগ রিজিমের নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে। যারা বহু বছর ধরে মানুষকে নির্যাতন ও হত্যা করেছে।

আসিফ নজরুল বলেন, তবে এ সব হামলার ঘটনা অধিকাংশই ঘটেছে মুসলিমদের ওপর। সামান্য কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে সংখ্যালঘুদের ক্ষেত্রে। এটিকে সংখ্যালুঘুদের ওপর হামলা হিসেবে দেখার সূযোগ নেই। আওয়ামী রিজিমের সময় মানুষকে নির্যাতন ও হত্যার সাথে জড়িতদের ওপর ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ এসব ঘটনা। আমরা সেটার নিন্দা জানাই।

তিনি বলেন, এটি সংখ্যালঘু ইস্যু ব্র্যান্ড করা উদ্দেশ্যপ্রনোদিত। আমাদের কাছে পরিসংখ্যান আছে। এ সম্পর্কে আমাদের কাছে ফ্যাক্ট চেকড তথ্য আছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে নির্বাচন প্রসঙ্গে আইন উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের প্রত্যেকটা মানুষের ভোটের অধিকারের ব্যাপারে আমাদের সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সেটা পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল হোকা বা যেকোনো স্থানই হোক। আমরা এরই মধ্যে একটি কমিশন গঠন করেছি, যারা স্থানীয় সরকার ইস্যু নিয়ে কাজ করছে।

বাংলাদেশ সময় আজ বুধবার ৫ মার্চ সন্ধ্যা ৬টার পর প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক।

অর্থনীতি

বিগত বছরের তুলনায় এবারের রমজানে মানুষ কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছে। এ বছর তারা বেশিরভাগ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, বিশেষ করে কাঁচাবাজার ও মুদিখানার জিনিসপত্র সুলভ ও সাশ্রয়ী মূল্যে পাচ্ছে।

আজ সকালে কারওয়ান বাজার, খিলগাঁও তালতলা বাজার, ফকিরাপুল বাজার, মতিঝিল এজিবি কলোনি কাঁচা বাজার ও শান্তিনগর বাজারসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কাঁচা বাজার পরিদর্শন করে বাসস প্রতিবেদক দেখতে পেয়েছে যে, ক্রেতারা সাধারণত তাদের ক্রয়ক্ষমতা অনুযায়ী তাদের যা প্রয়োজনীয়, সেসব দ্রব্য ও পণ্য পাচ্ছেন। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যেই রয়েছে।

সরকারের বিভিন্ন সংস্থার কঠোর বাজার তদারকি এবং বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে চিনি, ডাল, খেজুর, পেঁয়াজ, শসা, আলু, টমেটো, ডিম, রসুন, কাঁচা মরিচ, শুকনো মরিচ, আদা ও ইসবগুলসহ বেশিরভাগ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ২০২৪ সালের রমজানের তুলনায় অনেক সাশ্রয়ী মূল্যে পাওয়া যাচ্ছে।

পবিত্র রমজান মাসে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা নিশ্চিত করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বেশ কিছু নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ওপর থেকে ভ্যাট তুলে নিয়েছে।

তালিকাভুক্ত পণ্যের মধ্যে রয়েছে- সরিষার তেল, ময়দা, সুজি, মসুর ডাল, এলপিজি, বিস্কুট, লবণ ও গরম মশলা।

এই পণ্যগুলোর উৎপাদন পর্যায়ে এবং কিছু ক্ষেত্রে ব্যবসায়িক পর্যায়ে ভ্যাট রেয়াত দেওয়া হয়েছে।

রাজস্ব বোর্ড খেজুর, চাল, ডাল, চিনি ও তেলের মতো প্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি শুল্ক শূন্যে নামিয়ে এনেছে।

সরকারি পদক্ষেপের প্রশংসা করে খিলগাঁও এলাকার বাসিন্দা আবু সুফিয়ান বলেন, সরবরাহ প্রচুর থাকায় বেশিরভাগ মুদি পণ্যের দাম সন্তোষজনক।

তিনি বলেন, ‘আমি সব সময় আমার বাড়ির কাছে তালতলা বাজার থেকে কেনাকাটা করি। গত কয়েক বছরের তুলনায় এই রমজানে সবজির দাম কম থাকায় সবাই স্বস্তি পেয়েছে।’

সুফিয়ান আরো বলেন, মাছ, মাংস ও মুরগির দাম স্থিতিশীল রয়েছে।

শহরের বিভিন্ন বাজার পরিদর্শনকালে দেখা গেছে, খামারের মুরগি প্রতি কেজি ১৮০-১৯০ টাকা, সোনালী ৩০০-৩১০ টাকা ও দেশি মুরগি ৫৫০-৫৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে- যা গত বছরের তুলনায় যথাক্রমে ১০-৩০ টাকা কম।

খাসি (মাংস) প্রতি কেজি প্রায় ১১০০ টাকা ও গরুর মাংস ৭৫০-৮৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে- যা আগের বছরের তুলনায় ৩০-৫০ টাকা কম।

অন্যদিকে, চিনি প্রতি কেজি ১২০-১২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে- যা গত বছর ছিল ১৪০-১৫০ টাকা।

সাধারণ খেজুরের দাম ২২০-২৫০ টাকা থেকে কমে ১৮০-২০০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে মাঝারি মানের ও প্রিমিয়াম মানের খেজুর যথাক্রমে ৪৫০-৮০০ টাকা ও ১,০০০-১,৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে- যা গত বছরের তুলনায় ৩০-২০০ টাকা কম।

স্থানীয় পেঁয়াজ এখন ৪০-৪৫ টাকায় প্রতি কেজি পাওয়া যাচ্ছে- যা গত বছরের ১০০-১২০ টাকার তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম।

আলু ২০-৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে- যা গত বছর ছিল ২৫-৩৫ টাকা ।

এছাড়াও, শীতকালীন সবজির দাম গত রমজানের তুলনায় ৫-২০ টাকা কেজি কমেছে।

মতিঝিল এজিবি কলোনির কাঁচা বাজারের মুরগি বিক্রেতা মহসিন বলেন, সরকারের যথাযথ ও সক্রিয় তদারকি কার্যক্রমের কারণে দাম আগের বছরের তুলনায় কম।

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এখানে ক্রয়-বিক্রয় করি। খুব বেশি লাভ করার সুযোগ নেই। কৃষকরাও মোটা অঙ্কের মুনাফা পাচ্ছে না। মূলত, বড় সিন্ডিকেট মুরগির ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে। যারা দিন বয়সী বাচ্চা উৎপাদন করে ও মুরগির খাবার দেয়, তারা বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। সরকার যদি সিন্ডিকেটগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে, তাহলে মুরগির দাম আরও কমার সুযোগ রয়েছে।’

স্থানীয় রুই (১.৫ থেকে ২ কেজি জীবিত) ৩০০-৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে আমদানি করা রুই (২ থেকে ৩ কেজি) ৩০০-৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ফকিরাপুল বাজারের মাছ ব্যবসায়ী রফিক মিয়া বলেন, বাজারে মাছের সরবরাহ স্বাভাবিক। তবে রমজান আসার সাথে সাথে মাছের চাহিদা বেড়েছে।

তালতলা বাজারে সেনবাগ স্টোরের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ তারেক বলেন, সরবরাহ প্রচুর হওয়ায় বেশিরভাগ মুদি পণ্যের দাম সন্তোষজনক।

মতিঝিল এলাকার ব্যবসায়ী মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, এ বছর পেঁয়াজ, আলু, টমেটো, কাঁচা মরিচ ও ডিমের দাম ন্যায্য ও যুক্তিসঙ্গত।

সরকারের কঠোর নজরদারি পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল করতে ভূমিকা রেখেছে বলে মত প্রকাশ করেন তিনি।

পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে সরকার নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার পর্যবেক্ষণ জোরদার করেছে। সরকারের তিনটি নিবেদিতপ্রাণ দল ঢাকা মহানগর জুড়ে সর্বক্ষণ বাজার পর্যবেক্ষণ করছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জেলা ও ঢাকা মহানগর প্রশাসনের মাধ্যমে নিয়মিতভাবে পণ্য বাজার পর্যবেক্ষণ করছে।

এছাড়াও, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর (ডিএনসিআরপি) বাজারের ওপর কড়া নজর রাখছে, যাতে করে অতিমুনাফার জন্য অসাধু ব্যবসায়ী ও মজুদদাররা নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারকে অস্থির ও অস্থিতিশীল করে তুলতে না পারে।

জাতীয়

বেসরকারি ইবতেদায়ি মাদরাসার শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির ফাইলে সই দিয়ে গেলেন বিদায়ী শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। এর মাধ্যমে দীর্ঘ ৪০ বছর পর ইবতেদায়ি শিক্ষকদের দাবি পূরণ হতে যাচ্ছে।

প্রথম ধাপে এক হাজার ৫১৯ ইবতেদায়ি মাদরাসার ছয় হাজারের বেশি শিক্ষকের ভাগ্য খুলছে। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে তারা এমপিওভুক্ত হচ্ছেন বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

বুধবার (৫ মার্চ) সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের বিদায় এবং নতুন উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরারের (সি আর আবরার) যোগদান উপলক্ষে সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। এ সময় উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন বেসরকারি শিক্ষকদের বেতন-ভাতা নিয়েও কথা বলেন।

এখন থেকে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ শুধু পরিকল্পনা উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করবেন। এর আগে তিনি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়েরও দায়িত্বে ছিলেন। এখন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন সি আর আবরার।

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, আমি আশ্বাস দিয়েছিলাম এ বছর এবং আগামী বছরের বাজেটে যতটুকু অর্থ সংকুলান করা যায়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বসে আমরা যতদূর পারি চেষ্টা করব দাবিগুলো মেটাতে। কিন্তু ১৫-২০ বছরের বঞ্চনা দুই-এক বছরের বাজেট দিয়ে তো মেটানো যায় না। এক বছরের বাজেট দিয়ে কীভাবে ১৫ বছরের বৈষম্য ঠিক করা যায়? কিন্তু শুরুটা করা দরকার। সেই শুরুটা আমরা করে দিয়ে যাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের উৎসব ভাতা, বিনোদন ভাতা, বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা- এ বছরের ঈদুল আজহা থেকে শুরু করে আগামী বছরের বাজেট থেকে অন্তত কিছু বাড়াতে পারব। এখানে আমি ঘোষণা দিচ্ছি না কত বাড়াব। আমি জানি এ বছর বাজেটের মধ্যে সেটুকু এবং আগামী বছরের বাজেটের মধ্যে সেটির বিধান রাখা হচ্ছে।

পরে কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের সচিব খ ম কবিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, উপদেষ্টা ফাইলে সই করেছেন। ফাইলটি এখন প্রধান উপদেষ্টার অনুমতির জন্য পাঠানো হবে। তিনি অনুমতি দিলে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করা হবে।

এমপিওভুক্তির দাবি জানিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে আন্দোলন করে আসছিলেন ইবতেদায়ির শিক্ষকরা। নতুন সরকার আসার পর তারা আন্দোলন আরও জোরদার করেন। শিক্ষকদের প্রতিনিধিদল উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাদের দাবি জানান। উপদেষ্টা তাদের দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়েছিলেন। এরপর গত ডিসেম্বর মাস থেকে ইবতেদায়ি শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির জন্য কাজ করছিল কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগ।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শনাক্তকারী নম্বর আছে (ইআইআইএন) এমন এক হাজার ৫১৯টি মাদরাসাকে এমপিও করার ফাইল প্রধান উপদেষ্টার কাছে পাঠানো হবে। তার সম্মতি পাওয়া গেলে মে মাসের মধ্যে শিক্ষকরা বেতন-ভাতা পেতে পারেন।

জাতীয়

প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) সাবেক প্রধান অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল সাইফুল আলমের বাসা থেকে আড়াই কোটি টাকা জব্দ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক।

রোববার (২ মার্চ) দুপুরের সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান দুদক মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন।

তিনি বলেন, সাবেক এই কর্মকর্তার বিষয়ে দুদকে একটি অনুসন্ধান চলমান ছিল। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গোয়েন্দা সংস্থা, যৌথবাহিনীর সহায়তায় তার ক্যান্টনমেন্টের বাসা থেকে প্রায় দুই কোটি ৪৫ লক্ষ টাকা জব্দ করে দুদক।

দুদক সূত্রটি জানায়, সাবেক এই সেনা কর্মকর্তার ক্যান্টনমেন্টের বাসায় বৃহস্পতিবার রাত ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে ওই পরিমাণ নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়। তবে এ বিষয়ে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি।

সর্বশেষ বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) লেফটেন্যান্ট জেনারেল সাইফুল আলমের ব্যাংক হিসাব জব্দ করে। একই সঙ্গে তার স্ত্রী ও সন্তানদের নামে থাকা অ্যাকাউন্ট এবং তাদের মালিকানাধীন ব্যবসার ব্যাংক অ্যাকাউন্টও স্থগিত করা হয়।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতন হলে ১১ সেপ্টেম্বর ডিজিএফআইয়ের সাবেক প্রধান সাইফুল আলমকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়।

জাতীয়

রমজানুল মোবারক বান্দার জন্য আল্লাহতায়ালার অনেক বড় নেয়ামত। এ মাসের দিবস-রজনিকে আল্লাহতায়ালা খায়ের ও বরকত দিয়ে পূর্ণ করে রেখেছেন। তাকওয়া অর্জনের অনুশীলনে এবং ইবাদত-বন্দেগি ও আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের সব আমলের জন্য ভরা বসন্ত বানিয়েছেন। এ মাস শুধু একটি মাসই নয়; বরং গোটা বছরের জন্য এটা তাপকেন্দ্র। এ মাস থেকেই মুমিন গোটা বছরের তাকওয়া-তাহারাতের সঞ্চয় গ্রহণ করে। গোটা বছরের ইমানি প্রস্তুতি এ মাস থেকেই গ্রহণ করে। হাদিস শরিফের ভাষায়- ‘আল্লাহতায়ালার কসম! মুসলমানদের জন্য এরচেয়ে উত্তম মাস আর নেই এবং মুনাফিকদের জন্য এর চেয়ে ক্ষতির মাসও আর নেই। মুসলমান এ মাসে (গোটা বছরের জন্য) ইবাদতের শক্তি ও পাথেয় সঞ্চয় করে।’ আরও বলেছেন, এ মাস মুমিনের জন্য গনিমত এবং মুনাফিকের জন্য ক্ষতির কারণ। (মুসনাদে আহমদ ২/৩৩০; মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৩/১৪০)।

আল্লাহতায়ালা যেমন রমজানকে খায়ের ও বরকত এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য অর্জনের মৌসুম বানিয়েছেন তেমনই গোটা বছরের ইমানি কুওয়ত হাসিলের কেন্দ্র বানিয়েছেন। এরই সঙ্গে আরও অনুগ্রহ করেছেন যে, এ মাসে সৃষ্টিজগতে এমন অনেক অবস্থা ও পরিবর্তনের সূচনা করেন, যা গোটা পরিবেশকেই খায়ের ও বরকত দিয়ে ভরপুর করে দেন। হাদিস শরিফে এসেছে, এ মাসে আল্লাহর হুকুমে জান্নাতের সব দরজা খুলে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের সব দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। বড় বড় জিন ও শয়তানকে বন্দি করা হয় এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে এক ঘোষক ঘোষণা করতে থাকেন-‘হে কল্যাণ-অন্বেষী, অগ্রসর হও, হে অকল্যাণের পথিক, থেমে যাও।’

এসবের প্রভাবে রমজান মাসে চেতনে বা অবচেতনে বান্দা ভালো কাজের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। সৌভাগ্যশালী ওইসব ব্যক্তি, যারা এ আসমানি প্রেরণাকে মূল্য দেয় এবং হিম্মতের সঙ্গে কর্মের ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

মনে রাখা উচিত, প্রকৃতপক্ষে রমজান হলো, আখিরাতের তিজারতের মৌসুম। এ মাসের সময়গুলো খুব বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগিতে অতিবাহিত করা উচিত। অন্তত ফরজ রোজা এবং সুন্নতে মুয়াক্কাদা তারাবি, সেহরির সময় তাহাজ্জুদ, কিছু পরিমাণে হলেও জিকির ও তেলাওয়াত প্রত্যেকেরই করা উচিত। বাজারের ব্যবসা-বাণিজ্যে এতখানি মগ্ন হওয়া উচিত নয় যে, ফরজ নামাজের জামাত ও তারাবি ছুটে যায়। এছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্যে ধোঁকাবাজি ও প্রতারণা এবং সুদ ও জুয়াসহ অন্য সব হারাম কার্যকলাপ থেকে তো সারা বছরই বেঁচে থাকা ফরজ, রমজান মাসে এর অপরিহার্যতা আরও বেড়ে যায়। কেননা, বরকতপূর্ণ সময়ের গুনাহও অত্যন্ত কঠিন ও ধ্বংসাত্মক হয়ে থাকে।

মুফতি আব্দুল মালেক
লেখক : খতিব, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম