অর্থনীতি

কারফিউ শিথিল থাকায় বাজারে সব ধরনের পণ্যের সরবরাহ বাড়তে শুরু করেছে। এতে খুচরা পর্যায়ে কমতে শুরু করেছে দাম। ৩ দিন আগে ৪০০-৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া কাঁচামরিচ ১৮০-২০০ টাকায় নেমেছে। ব্রয়লার মুরগির দাম কমেছে কেজিতে ১০-২০ টাকা। সবজির দামও কমছে। কমতির দিকে মাছের দামও। এদিকে সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকলেও এখনও সব ধরনের চাল, ডিম ও আলু বিক্রি হচ্ছে সেই বাড়তি দরেই।

শুক্রবার রাজধানীর বেশ কয়েকটি খুচরা বাজার ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

বিক্রেতারা জানান, প্রতি কেজি পটল বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকায়, যা ৩ দিন আগেও ৮০ টাকা বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি ঢ্যাঁড়শ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা, যা আগে ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মিষ্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা ৩ দিন আগেও ৭০ টাকা ছিল। প্রতি কেজি শসা আগের মতো ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি কচুর মুখি প্রতি কেজি ৭০-৮০ টাকা, যা আগে ১০০ টাকা বিক্রি হয়েছে। আগের মতোই প্রতি কেজি টমেটো ২০০-২২০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। বাজারভেদে প্রতি কেজি করলা বিক্রি হচ্ছে ৫০-৭০ টাকা। যা ৩ দিন আগেও ১২০-১৪০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছিল। বাজারে প্রতি কেজি গোল বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৮০-৯০ টাকায়। যা গত সপ্তাহে ছিল ১২০-১৪০ টাকা। শুক্রবার প্রতি কেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হয় ১৮০-২০০ টাকায়। যা বাজার ভেদে ৩ দিন আগে প্রতি কেজি ৪০০-৬০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

বিক্রেতারা আরও জানান, খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আলু ৬০-৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি ডজন ফার্মের ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৬০-১৬৫ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ১৫৫-১৬০ টাকা বিক্রি হয়। আর ১০ দিন আগে বিক্রি হয়েছে ১৫০ টাকা। এ ছাড়া রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি সরু চালের মধ্যে মিনিকেট চাল মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা। মাঝারি আকারের চালের মধ্যে পাইজাম ও বিআর ২৮ জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৪-৬০ টাকা। মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫৫ টাকা। যা আগে ৪৮-৫২ টাকায় বিক্রি হয়।

কাওরান বাজারে সবজি কিনতে আসা আল আমিন বলেন, কয়েক দিনের তুলনায় বাজারে সবজির সরবরাহ অনেক বেশি। দামও কমেছে। ফলে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। তবে বাজারে সরবরাহ থাকলেও চাল, ডিম, আলু বাড়তি দরেই বিক্রি হচ্ছে।

একই বাজারের সবজি বিক্রেতা শাহ আলী মিয়া বলেন, কারফিউতে সবজির সরবরাহ কম ছিল। শিথিলের কারণে সরবরাহ বেড়েছে। তাছাড়া ট্রাকের ভাড়া বেড়েছিল। তা এখন কমছে। সব মিলে সরবরাহ বাড়ায় সবজির দাম কমতে শুরু করেছে।

কাওরান বাজারের আল­াহর দান রাইস এজেন্সির মালিক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, সাম্প্রতিক পরিস্থিতির অজুহাতে মিলাররা সব ধরনের চালের দাম বাড়িয়েছে। এর মধ্যে এখনও ট্রাক ভাড়া অনেক বেশি। যে কারণে চালের দাম কমছে না।

এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা পর্যায়ে সব ধরনের মুরগির দাম কেজিতে ১০-২০ টাকা কমেছে। ব্রয়লার প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৮০-১৯০ টাকা। যা আগে ২০০-২১০ টাকা ছিল। প্রতি কেজি সোনালী মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৮০-৩০০ টাকা; যা আগে ৩০০-৩২০ টাকা ছিল। এ ছাড়া আগের মতোই প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭৫০-৭৮০ টাকায় ও খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১০০০-১১৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

খুচরা বাজারে ১ কেজি আকারের প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৬০০ টাকা। প্রতি কেজি রুই ৩৮০-৪০০ টাকা, পাঙাশ ২০০ টাকা, তেলাপিয়া ২৬০ টাকা, কাঁচকি ৫০০ টাকা, কই ২০০-২৪০ টাকায়, চিংড়ি ৭০০ টাকা, দেশি টেংরা ৮০০ টাকা এবং পাবদা ৪৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

অর্থনীতি

কোটাবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সহিংসতা, ইন্টারনেট বন্ধ ও নির্বাহী আদেশে সরকারি ছুটির কারণে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা নেমে আসে। আমদানি-রপ্তানিসহ শিল্পের চাকা বন্ধ হয়ে যায়। ব্যবসা-বাণিজ্যসহ মানুষের দৈনন্দিন চলাচলও বাধাগ্রস্ত হয়। এসব কারণে অর্থনীতিতে প্রতিদিন গড়ে ১০০ কোটি ডলার বা ১১ হাজার ৮০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত টানা ৬ দিন প্রায় সবকিছুই বন্ধ ছিল।

এ হিসাবে ক্ষতি হয়েছে ৬০০ কোটি ডলার বা ৭০ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। গত ১৬ জুলাই সন্ধ্যা থেকে ও ১৭ জুলাই আধাবেলা আন্দোলনের কারণে আংশিক বন্ধ ছিল। এ দুই দিনের আধাবেলার ক্ষতি ৫০ কোটি ডলার বা ৫ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এ হিসাবে সাড়ে ৬ দিনে মোট ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৭৬ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। তবে অনেকের মতে, এ ক্ষতি ৭০০ কোটি ডলার বা ৮২ হাজার ৬০০ কোটি টাকাও হতে পারে।

দেশের শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদ, গবেষক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। ব্যবসায়ীরা আরও বলেছেন, ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি হবে। কারণ ডলারের দাম ১১৮ টাকা করে ধরলে ওই পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু ডলার ১২২ থেকে ১৩০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এ কারণে ক্ষতির পরিমাণ টাকার অঙ্কে আরও বাড়বে। সৃষ্ট ক্ষতি মোকাবিলার জন্য তারা সব বন্দরের পণ্য খালাসে দেরি হওয়ায় ডেমারেজ চার্জ মওকুফ, নতুন চার্জ আরোপ না করা, ঋণের বিপরীতে বাড়তি সুদ আরোপ না করা, কম সুদে ঋণ দেওয়াসহ অন্যান্য নীতিসহায়তার দাবি করেছেন। একই সঙ্গে রপ্তানি আয় বিদেশ থেকে আমান মেয়াদ বৃদ্ধি, দেশীয় ও বৈদেশিক ঋণের কিস্তি পরিশোধের মেয়াদ বাড়ানোর দাবি করেছেন।

এদিকে চট্টগ্রাম ব্যুারো জানায়, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে মোট আমদানি-রপ্তানির প্রায় ৯৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়। ফলে এ বন্দরের কার্যক্রম টানা পাঁচ দিন বন্ধ থাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে আমদানি কার্যক্রম ও পণ্য ডেলিভারি বন্ধ থাকায় এ খাতে পাঁচ দিনে ক্ষতি হয়েছে কয়েক হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে কেবল চট্টগ্রাম কাস্টমসই ৯০০ কোটি টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে।

এ পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, অর্থনীতির চাকা বন্ধ হলে ক্ষতি হতেই থাকে। এই চাকা এক মুহূর্তেই বন্ধ করা যায়। কিন্তু চালু করতে সময় লাগে। ফলে ক্ষতির পুরো হিসাব এখনই করা যাবে না। তবে ক্ষতির অঙ্ক অনেক বড় হবে। গবেষণায় গড় হিসাবে প্রতিদিন অর্থনৈতিক ক্ষতি প্রায় ১০০ কোটি ডলার হবে। টানা ছয় দিন বলতে গেলে সবকিছুই বন্ধ ছিল। সাড়ে ৬৫০ কোটি থেকে ৭০০ কোটি ডলারের ক্ষতি হতে পারে।

তিনি আরও বলেন, ক্ষতিটা সবচেয়ে বেশি হয়েছে সাধারণ মানুষের। বিশেষ করে যারা ‘দিন আনে দিন খায়।’ ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় ক্ষতির পরিমাণটা আরও বেড়েছে। এছাড়া উদ্যোক্তারাও অনেক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। অর্থনীতি এমনিতেই করোনার পর থেকে বহুমুখী চ্যালেঞ্জের ভেতর দিয়ে এগোচ্ছে। বৈশ্বিক মন্দায় এ চ্যালেঞ্জ আরও বাড়িয়েছে। সাম্প্রতিক অস্থিরতায় অর্থনীতিতে চ্যালেঞ্জ আরও বাড়বে।

তার মতে, এ ধরনের পরিস্থিতিতে সবচেয়ে ক্ষতির মুখে পড়বে দেশের ইমেজ। দেশের উদ্যোক্তাদের সঙ্গে যেসব বিদেশি উদ্যোক্তা ব্যবসা করছেন তারা অনিশ্চয়তায় ভুগবেন। ফলে এ ধরনের সংকট যাতে না হয় সেদিকে সরকারকে নজর রাখতে হবে।

উদ্যোক্তারা জানান, সৃষ্ট অস্থিরতায় রপ্তানি খাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। একদিকে কারখানায় উৎপাদন বন্ধ ছিল। অন্যদিকে ক্রেতাদের আদেশ অনুযায়ী রপ্তানি করা সম্ভব হয়নি। এতে এ খাতে এখনকার ক্ষতির চেয়ে আগামীতে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন উদ্যোক্তারা। এখন পর্যন্ত উৎপাদন ও রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হওয়ায় গত ৬ দিনের হিসাবে ক্ষতির পরিমাণ ৮ হাজার কোটি টাকার বেশি। এছাড়া বিভিন্ন চার্জ ও ঋণের সুদ ও রপ্তানি পণ্য স্টক লট হলে কম দামে বিক্রি করতে হবে। তখন ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, রপ্তানির সব খাতেই ক্ষতি হয়েছে। এ ক্ষতির পরিমাণ আগামীতে আরও বাড়বে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ক্ষতি হচ্ছে ইমেজ সংকট। ক্রেতা ধরে রাখাটা এখন বড় চ্যালেঞ্জিং। কারণ ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় ক্রেতাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। অনেক ক্ষেত্রে ক্রেতা ধরে রাখতে পণ্য এখন বিমানে পাঠাতে হবে। এতে খরচ বাড়বে। যা রপ্তানিকারকদের ক্ষতির তালিকায় পড়বে।

চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়. আমদানি কার্যক্রম ও পণ্য ডেলিভারি বন্ধ থাকায় এ খাতে পাঁচ দিনে বিপুল আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। টাকার অঙ্কে এই ক্ষতির পরিমাণ কত তা সুনির্দিষ্ট করে বলা না গেলেও ক্ষতির অঙ্ক কয়েক হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছেন আমদানিকারকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যে কেবল চট্টগ্রাম কাস্টমসই ৯০০ কোটি টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৬৮ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করে। সে হিসাবে প্রতিদিন গড়ে ১৮০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলন, সংঘর্ষ ও রাষ্ট্রীয় স্থাপনায় দুর্বৃত্তদের হামলার জেরে বৃহস্পতিবার রাত থেকে বন্ধ হয়ে যায় ইন্টারনেট পরিষেবা। শুক্রবার রাত ১২টার পর থেকে জারি করা হয় কারফিউ। ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ হওয়ার কারণে কাস্টমসের রাজস্ব আদায়ের অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমও বন্ধ হয়ে যায়। তাই শুল্ক আদায়ও বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় পণ্য ডেলিভারি। বুধবার থেকে ম্যানুয়ালি এবং বৃহস্পতিবার থেকে ইন্টারনেট সেবা চালু হওয়ার পর পুরোদমে বন্দর-কাস্টমসে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুক্রবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত শুল্কায়ন কার্যক্রম বন্ধ থাকায় প্রতিদিন গড়ে ১৮০ কোটি টাকা করে ৫ দিনে ৯০০ কোটি টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হয় সরকার। প্রতিদিন আমদানি পণ্য ছাড়ের জন্য ৪-৫ হাজার বিল অব এন্ট্রি (বিই) দাখিল হতো। ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকার কারণে এসব পণ্যের বিএই দাখিল করা যায়নি। এ ছাড়া প্রতিদিন চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ৮-১০ হাজার ট্রাক-কাভার্ডভ্যান, লরি পণ্য নিয়ে বের হয়।

এই পাঁচ দিন কোনো পণ্য ডেলিভারি হয়নি। শিল্পের কাঁচামাল না পাওয়ায় শত শত মিল-কারখানায় বন্ধ ছিল উৎপাদন। স্টিল সেক্টর, সিমেন্ট সেক্টরসহ প্রায় সব সেক্টরেই পড়েছে এই প্রভাব। এছাড়া বন্দর থেকে সময়মতো পণ্য ছাড় করতে না পারায় আমদানিকারকদের ওপর উঠেছে পোর্ট ও শিপিং লাইনের বিপুল অঙ্কের ডেমারেজ। বন্দরে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অতিরিক্ত ৬-৭ হাজার কনটেইনার জমে যায়।

চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি ওমর হাজ্জাজ বলেন, পাঁচ দিন সব কিছু বন্ধ থাকার কারণে কেবল আমদানি খাতেই কয়েক হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তবে সুনির্দিষ্ট করে টাকার অঙ্কে এই ক্ষতি নিরূপণ করা সম্ভব নয়। তবে বন্দর-কাস্টমসহ সব সেক্টরে প্রতিদিন গড়ে ১২ হাজার থেকে ১৩ হাজার কোটি টাকার ব্যবসায়িক ক্ষতি হয়েছে বলে তারা ধারণা করছেন। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার থেকে সবকিছু স্বাভাবিক হয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমস পুরোদমে কাজ শুরু করেছে। উদ্ভুত পরিস্থিতির কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যের যে ক্ষতি হয়েছে তা কাটিয়ে উঠতে করণীয় নির্ধারণে চেম্বার বৃহস্পতিবার সব সেক্টরের প্রতিনিধি এবং প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠক থেকে বলা হয়েছে, বড় ধরনের বিপদ থেকে দেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আর একটি সেকেন্ডও যাতে ওয়েস্টেজ না হয় সেভাবে সবাইকে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহŸান জানানো হয়। এ ক্ষেত্রে সরকার ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের সব ধরনের সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ার্ডারস অ্যাসোসিয়শনের সহসভাপতি ও শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খাইরুল আলম সুজন বলেন, ‘পণ্য নিয়ে অনেক জাহাজ এলেও চার দিনে খালাস করতে পারেনি। পণ্য ডেলিভারি না হওয়ায় চট্টগ্রাম বন্দরে জমে যায় বাড়তি ৬-৭ হাজার কনটেইনার। পণ্য না পেয়ে মিল-কারখানায় উৎপাদন বিঘিœত হয়েছে। যার ভয়াবহ প্রভাব ভোক্তাদের ওপর পড়েছে।

উদ্যোক্তারা জানান, ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় সফটওয়্যার রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হয়েছে। অফিস বন্ধ থাকায় সফটওয়্যার তৈরির কাজও করা সম্ভব হয়নি। এসব কারণে গত ৫ দিনে এ খাতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। দেশ থেকে যারা সফটওয়্যার বা তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য কিনেছেন তাদের রপ্তানিকারকরা বিভিন্ন সেবা দিয়ে থাকেন অনলাইনে। কিন্তু ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় এ সেবা দেওয়া সম্ভব হয়নি। ফলে সেবা বাবদ অর্থও মিলবে না।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সফটওয়্যার ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতি রাসেল টি আহমেদ বলেন, ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় ক্রেতাদের সেবা দেওয়া সম্ভব হয়নি। এ ধরনের পরিস্থিতির কারণে ক্রেতারা সেবা না পাওয়ায় তাদেরও ক্ষতি হয়েছে। এতে দেশের ইমেজ নষ্ট হয়েছে। ফলে ভবিষ্যতে দেশ থেকে তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য রপ্তানিতে জটিলতা দেখা দিতে পারে। কারণ এসব পণ্য রপ্তানির পর পরিচালনার ক্ষেত্রে সমস্যা হলে সেবা দিতে হয়।
জানা গেছে, ওষুধ উৎপাদন, রপ্তানি ব্যাহত, কাঁচামাল ছাড় করাতে না পারায় ফার্মাসিউটিক্যালস খাতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। এ খাতে যেসব কাঁচামাল বন্দরে আটকে ছিল সেগুলোর গুণগত মান কমার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ এ খাতের সবকিছুই চলে ঘণ্টা গুণে।

রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হওয়ায় সিরামিক খাতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। রি-রোলিং মিলস খাতে শুধু উৎপাদন ক্ষতি হয়েছে হাজার কোটি টাকার বেশি। ই-কমার্স খাতে ক্ষতি হয়েছে ৩০০ কোটি টাকা। ইন্টারনেট না থাকায় দেশের কলসেন্টারগুলোর কার্যক্রম একেবারেই মুখ থুবড়ে পড়েছে। ৫ দিনে এ খাতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২০০ কোটি টাকা।

গণপরিবহণ না চলার কারণে এ খাতেও অনেক ক্ষতি হয়েছে। অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের কারণে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২২ কোটি টাকা। এছাড়া গণপরিবহণ বন্ধ থাকায় এ খাতেও মোটা অঙ্কের ক্ষতি হয়েছে।

কৃষির উৎপাদন ব্যবস্থায় তেমন ক্ষতি হয়নি। তবে বিপণন ব্যবস্থায় ক্ষতি ব্যাপক হয়েছে। কারফিউর কারণে পণ্য পরিবহণ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। ফলে কৃষকের পণ্য পচে নষ্ট হয়েছে।

অর্থনীতি

“অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আনুমানিক চার মাসের মধ্যে কাজ সম্পন্ন হবে,” বলছেন ব্যাংক এশিয়ার এমডি সোহেল আর. কে. হুসেইন।

পাকিস্তানভিত্তিক ব্যাংক আলফালাহর বাংলাদেশ অংশের কার্যক্রম অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে দেশীয় বেসরকারি খাতের ব্যাংক এশিয়া।

বাংলাদেশ অংশের পুরো স্বত্ব বিক্রি করে চলে যাচ্ছে আলফালাহ। সব মিলে ব্যাংকটির মূল্য কত দাঁড়াচ্ছে, নিরীক্ষা প্রতিবেদন শেষ হলেই তা ঠিক হবে বলে ব্যাংক এশিয়া ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানাচ্ছে।

ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সোহেল আর. কে. হুসেইন বলেন, “অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আনুমানিক চার মাসের মধ্যে কাজ সম্পন্ন হবে।

“সকল প্রক্রিয়া ব্যাংক কোম্পানি আইন মোতাবেক করা হবে। তবে কিছু ধীর ও লম্বা প্রক্রিয়া আছে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে। যেহেতু তারা (ব্যাংক আলফালাহ) ব্যবসা কার্যক্রম বিক্রি করে এ দেশ থেকে চলে যাচ্ছে, তাই বিক্রি থেকে পাওয়া তাদের অর্থ বাইরে পাঠানোর একটা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।”

এরই মধ্যে ব্যাংকপাড়ায় ব্যাংক আলফালাহ কত টাকায় কেনা হচ্ছে, তা নিয়ে আলোচনা শোনা যাচ্ছে। বিষয়টি জানতে চাইল আর. কে. হুসেইন বলেন, “বিভিন্ন মাধ্যমে বলা হচ্ছে ব্যাংক আলফালাহ ৬০০ কোটি টাকা দিয়ে কেনা হয়েছে। কিন্তু এটা সঠিক নয়। কারণ একটা নিরীক্ষা প্রতিবেদন করার পরেই ভ্যালুয়েশন কত আসবে, সেই বিষয় সঠিক ধারণা পাওয়া যায়।”

ব্যাংক আলফালাহ কীসের ভিত্তিতে কিনছে ব্যাংক এশিয়া, তার ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, “আর্থিক ব্যবস্থাপনার দিক পর্যালোচনা করলে ব্যাংক এশিয়া অনেক ভালো একটি প্রতিষ্ঠান। কারণ ব্যাংক এশিয়ার পর্যাপ্ত পরিমাণে তারল্য রয়েছে। এমন কী দেশের অন্যান্য ব্যাংকের চেয়ে ব্যবস্থাপনা খরচও কম।

“ব্যাংক আলফালাহ একটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ব্যাংক। বাংলাদেশে তাদের একটা অংশ কার্যক্রম পরিচালনা করছে, সেটিই দুই ব্যাংকের বোর্ডের সর্বসম্মতিতে অধিগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এটা এমন ঘটনা নয় যে, আলফালাহ দুর্বল ব্যাংক তাই অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। কমার্শিয়াল চুক্তির আওতায় ব্যাংক এশিয়া অধিগ্রহণ করছে এটি।”

আর. কে. হুসেইন জানাচ্ছেন, ব্যাংক এশিয়ার বোর্ড পর্যালোচনা করেছে যে, ব্যাংক আলফালাহর ব্যালেন্স শিট অত্যন্ত ভালো। আবার তাদের কর্মীরাও দক্ষতাসম্পন্ন। ব্যাংকটির যা সম্পদ আছে, তা দিয়ে ব্যাংক এশিয়া উপকৃত হবে।

দুই দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্তের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত মুখপাত্র সাইফুল ইসলাম  বলেন, “ব্যাংক আলফালহ অধিগ্রহণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদন দিয়ে দিয়েছে। ব্যাংকটি যেহেতু পাকিস্তানভিত্তিক, সেহেতু অধিগ্রহণের জন্য সে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন দরকার, যা তারা এরই মধ্যে দিয়েছে। তবে অডিট করার পর বলা যাবে, ব্যাংকটির মূল্য আসলে কত আসবে।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধতন কর্মকর্তা বলছেন, দুটিই সবল ব্যাংক। তাই ব্যাংক কোম্পানি আইন মোতাবেক দুই বোর্ডের সিদ্ধান্তে অধিগ্রহণ করছে ব্যাংক এশিয়া।

বাংলাদেশের বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে শুধু ব্যাংক এশিয়ারই ব্যাংক অধিগ্রহণের অভিজ্ঞতা আছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো কোনো বিদেশি ব্যাংকের বাংলাদেশ অংশের কার্যক্রম অধিগ্রহণ করতে চলেছে তারা।

এর আগে ২০০১ সালে ব্যাংক এশিয়া কানাডাভিত্তিক নোভা স্কোশিয়া এবং একই বছর পাকিস্তানের আরেক ব্যাংক মুসলিম কমার্শিয়াল ব্যাংকের বাংলাদেশি কার্যক্রম অধিগ্রহণ করে।

ব্যাংক আলফালাহ পাকিস্তানে ১৯৯৭ সালে কার্যক্রম শুরু করে। এর মালিকানায় রয়েছে আবুধাবি গ্রুপ। পাকিস্তানের বাইরে আফগানিস্তান, বাহরাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) এর কার্যক্রম রয়েছে। এর প্রধান কার্যালয় পাকিস্তানের করাচিতে। ২০০৫ সালে ১ কোটি ৭৮ লাখ ৮০ হাজার ডলারে শামিল ব্যাংক অব বাহরাইন কেনার মাধ্যমে বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরু করে ব্যাংক আলফালাহ। পাকিস্তানের বাইরে বাংলাদেশ হল প্রথম দেশ, যেখানে সেবা সম্প্রসারণ করে ব্যাংকটি।

অর্থনীতি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ এবং ডিজিটাল দেশে রূপান্তর করতে এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (এআইআইবি) কাছ থেকে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন যাত্রা এবং ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে রূপান্তরের স্বপ্ন বাস্তবায়নে এআইআইবি ভবিষ্যতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

এআইআইবির প্রেসিডেন্ট জিন লিকুনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বেইজিংয়ে তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করার সময় প্রধানমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।

চীন সফরের দ্বিতীয় দিনের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান।

বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, নদী খনন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে দেশকে রক্ষা করার লক্ষ্যে জলবায়ু সহিষ্ণুতা গড়ে তোলার জন্য এআইআইবির কাছে অর্থ সহায়তা চেয়েছেন। তার সরকার উপকূলীয় অঞ্চলে জলবায়ু সহিষ্ণু বাড়িঘর নির্মাণ করছে উল্লেখ করে তিনি এই লক্ষ্যে আর্থিক সহায়তা চেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের উন্নয়নে এআইআইবি এর অবদানের কথাও স্মরণ করেন।

তিনি বলেন, এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক অতীতে বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জন্য ঋণের সুদের হার আরও কমানোর জন্য এআইআইবিকে অনুরোধ করেন। জবাবে এআইআইবি প্রেসিডেন্ট বলেন, ব্যাংকটি এর আগে বাংলাদেশের জন্য বিশেষ ছাড় দিয়েছে এবং আবারও অনুরূপ সুবিধা দেওয়ার কথা বিবেচনা করবে। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ তার ব্যাংকের সবচেয়ে বড় ঋণগ্রহীতা।

এআইআইবির ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং ব্যাংকের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ সময় এআইআইবি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ছিলেন।

ব্রিফিংকালে অর্থমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব এম নাঈমুল ইসলাম খান এবং বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ উপস্থিত ছিলেন।

অর্থনীতি

ঋণ আদায় বাড়াতে ও খেলাপি ঋণ কমাতে এবারও ঋণখেলাপিদের আরও ছাড় দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে আগের মতো এবার বড় ছাড় দেওয়া হয়নি। সীমিত আকারে ছাড় দেওয়া হয়েছে। ঋণের মোট বকেয়ার কমপক্ষে ১০ শতাংশ অর্থ জমা দিয়ে এই সুবিধা নেওয়ার জন্য আবেদন করতে হবে। ৩ বছরের মধ্যে পুরো ঋণ শোধ করতে হবে।

ব্যাংক বিদ্যমান নীতিমালার আওতায় গ্রাহকের সুদ মওকুফ করতে পারবে। বিশেষ পরিস্থিতির কারণে যারা খেলাপি হবেন শুধু তারাই এ সুবিধা পাবেন। কোনো ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি এই সুবিধা পাবেন না। এ বিষয়ে সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটি সার্কুলার জারি করা হয়; যা বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়, এ নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর হবে।

সূত্র জানায়, এর আগেও ঋণখেলাপিদের ছাড় দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিভিন্ন নীতিমালা জারি করা হয়েছে। মূলত খেলাপি ঋণ আদায় বাড়াতে এ ছাড় দেওয়া হয়। কিন্তু বাস্তবে আদায় বাড়েনি। অথচ এভাবে খেলাপি ঋণ নবায়ন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে খেলাপি ঋণ কমানো সম্ভব হয়েছে বলে দাবি করা হয়। ব্যাংকাররা মনে করেন, এই নীতিমালার মাধ্যমেও খেলাপি ঋণের ঊর্ধ্বগতি কিছুটা হলেও কমানো সম্ভব হবে। তবে ঋণ আদায় তেমন একটা বাড়বে না।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবার প্রকৃত পরিস্থিতির কারণে যারা খেলাপি হচ্ছেন বা যারা তাদের ব্যবসা বা শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে চান, তাদের ঋণ পরিশোধের জন্য একটি নতুন নীতিমালা করেছে। এর আওতায় সংশ্লিষ্ট গ্রাহকদের ঋণের দায় থেকে কিছু ছাড় দিয়ে বের হওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

এ সংক্রান্ত নীতিমালায় বলা হয়, পরিস্থিতির কারণে যেসব ঋণগ্রহীতা খেলাপি হচ্ছেন তাদের খেলাপি ঋণ এই নীতিমালার আওতায় নবায়ন করে আদায় করা যাবে। এ জন্য গ্রাহককে মোট ঋণের কমপক্ষে ১০ শতাংশ পরিশোধ করে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে আবেদন করতে হবে। ব্যাংক গ্রাহকের আবেদন ২ মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করবে। গ্রাহককে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী সুদ মওকুফ সুবিধাও দেওয়া যাবে। ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ থেকে চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে। এর বেশি ঋণের ক্ষেত্রে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন নিতে হবে। ঋণের পুরো অর্থ পরিশোধের জন্য ২ বছর সময় দেওয়া যাবে।

গ্রাহকের প্রয়োজনে এর সীমা আরও ১ বছর বাড়ানো যাবে। মোট ৩ বছরের মধ্যে পুরো ঋণ পরিশোধ করতে হবে। ঋণ পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত জামানত ছাড় করা যাবে না। তবে ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে এ বিষয়ে চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে। পুরো ঋণ পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত গ্রাহক খেলাপি হিসাবে চিহ্নিত হবেন।

নীতিমালায় আরও বলা হয়, এর আওতায় কোনো ইচ্ছাকৃত খেলাপি সুবিধা পাবেন না। পরিস্থিতির কারণে যারা খেলাপি হবেন তারা পাবেন। এছাড়া যারা ব্যবসা বা শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে চান তারাও এই সুবিধা পাবেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই নীতিমালার ভিত্তিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে একটি নীতিমালা করতে হবে। তবে কোনোক্রমেই এ নীতিমালার চেয়ে শিথিলযোগ্য শর্ত রাখা যাবে না। ওই নীতিমালা পর্ষদে অনুমোদন করতে হবে। এর ভিত্তিতে ব্যাংক এর বাস্তবায়ন করবে। এই নীতিমালার আওতায় ঋণ নবায়ন করা হলে তা ঋণ পুনর্গঠন বা পুনঃতফশিল হিসাবে বিবেচিত হবে না।

অর্থনীতি

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছেন, দেশে আন্তর্জাতিক মানের টেলিকম সেবা প্রদানে সবরকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘সারাদেশে কলড্রপ, ব্লাংকসংযোগ বিড়ম্বনা হ্রাস, মোবাইল ইন্টারনেটের যথাযথ গতি এবং সুলভ মূল্যে ইন্টারনেট নিশ্চিত করার মাধ্যমে আমরা গ্রাহকের সন্তষ্টি অর্জনে দেশে আন্তর্জাতিক মানের টেলিকম সেবা উপহার দিতে চাই। এ লক্ষ্যে মোবাইল অপারেটরসহ সংশ্লিষ্টদের সেবার মান পর্যবেক্ষণে কারিগরি দল গঠন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৫ বছরে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ এবং ইন্টারনেট পৌছে দিয়েছেন। আমরা এখন চাই এগুলোর মান বৃদ্ধি করতে। এরই ধারাবাহিকতায় সারা দেশে আমরা ড্রাইভ টেস্ট পরিচালনা করছি।’

প্রতিমন্ত্রী আজ শুক্রবার কক্সবাজার রেলস্টেশন এলাকায় মোবাইল সেবার গুণগতমান পর্যবেক্ষণ শেষে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, উন্নত মোবাইল সেবা নিশ্চিত করতে অপারটেরদের সহায়তা দেওয়া হবে। আমরা অপারেটরদের হাত-পা বেঁধে নদীতে ফেলে সাঁতার শেখাব না, আমরা সাঁতার শিখিয়ে সক্ষমতা দিয়ে দেব, যাতে নদীটা পার হওয়া যায়।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, মোবাইল অপারেটরদেরকে গ্রাহকদের প্রতিশ্রুত সেবা প্রদান, গ্রাহক পর্যায়ে সুলভ মূল্যে ইন্টারনেট প্রদান এবং অপারেটরদের যে সকল সুবিধাগুলো দেওয়া হচ্ছে, সেগুলোর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে সরকার কাজ করছে।

পলক বলেন, ‘মোবাইল ফোন এখন জীবনের একটা অপরিহার্য অংশ হয়ে গেছে। কিন্তু আমরা দেখছি যে, আমাদের গ্রাহকেরা অনেক ক্ষেত্রেই তাদের সেবা নিয়ে সন্তুষ্ট নন। কলড্রপ একটা নিয়মিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের মোবাইল গ্রাহকেরা যেমন এ বিষয় নিয়ে অসন্তুষ্ট। তেমনি বিটিআরসি যে পরীক্ষাগুলো করেছে, সে রিপোর্ট অনুসারেও কোয়ালিটি অব সার্ভিস খুব একটা সন্তোষজনক নয়।’

আমরা একটা স্মার্ট টেলিকম ইকোসিস্টেম বাংলাদেশকে উপহার দিতে চাই’ উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘যেভাবেই হোক আমরা গ্লোবাল বেঞ্চমার্কে উন্নীত হতে চাই’।

কক্সবাজারকে পৃথিবীর দীর্ঘতম বালুকাময় সমুদ্র সৈকত উল্লেখ করে পলক বলেন, প্রতিবছর লাখ-লাখ দেশি-বিদেশি পর্যটকরা এখানে আসেন। এই পর্যটন কেন্দ্রকে বিশ্বমানের করে গড়ে তোলার জন্যই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখানে একটি ট্রেন স্টেশন ও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর তৈরি করে দিয়েছেন। কক্সবাজারে একটি হাইটেক পার্ক নির্মাণ করার জন্য তিনি ১৭০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। কক্সবাজারকে বিশ্বমানের আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ, উচ্চগতির ইন্টারনেট, সড়ক-রেল-আকাশ পথের মাধ্যমে যুক্ত করা হয়েছে।

অর্থনীতি

বাজারে সরবরাহ পর্যাপ্ত। তারপরও কারণ ছাড়াই বাড়ছে ভোজ্যতেলের দাম। লিটারপ্রতি সর্বোচ্চ ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি ৫ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি আলু ফের ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বেড়েছে পেঁয়াজের দামও। তবে তদারকি জোরদার করায় ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দাম কমতে শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর কাওরান বাজার, নয়াবাজার, শান্তিনগর কাঁচাবাজারসহ একাধিক খুচরা বাজার ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বৃহস্পতিবার প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৫৫, যা সাতদিন আগেও ১৪৫-১৫২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৬৫-১৬৭, যা সাতদিন আগেও ছিল ১৬০-১৬৫ টাকা। প্রতি লিটার রাইস ব্রান তেল বিক্রি হচ্ছে ১৭৪-১৭৬, যা সাতদিন আগেও ১৭০-১৭৬ টাকা ছিল। পাশাপাশি প্রতি লিটার খোলা পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকা। আর প্রতি লিটার পাম অয়েল সুপার বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ টাকা।

কাওরান বাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা খালেক বলেন, বাজারে কোনো নিয়ম নেই, এটা বলা যাবে না। একটি নিয়ম খুব ভালোভাবে চলছে। বিক্রেতারা সবই এক। তারা চালের দাম বাড়ালে আটার দাম বাড়ায় না। আটার দাম বাড়ালে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ায় না। আবার ভোজ্যতেলের দাম বাড়ালে অন্য আরেকটি পণ্যের দাম কমিয়ে রাখে। তিনি বলেন, বিষয়টি পরিষ্কার। বছরে একেক মাসে একেক পণ্যের দাম বাড়িয়ে একচেটিযা বাড়তি মুনাফা করা হয়।

বাজারে যারা তদারকি করে, তারাও ভোক্তার সঙ্গে অসহায়। কারণ, ব্যবসায়ীরা পাওয়ারফুল। মনে হচ্ছে, তারা দেশ চালাচ্ছে। তিনি জানান, বাজারে কোনো কিছুই হয়নি। কিন্তু সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের তেলের দাম বাড়িয়ে আমাদের মতো ক্রেতাকে ফের নাজেহাল করে ফেলছে।

একই বাজারের মুদি বিক্রেতা মো. আল আমিন বলেন, আমরা খুচরা বিক্রেতা। পণ্যের দাম আমরা কোনোভাবেই বাড়াই না। তেলের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে হাতে গোনা কয়েকটি কোম্পানি। তারা সরকারের সঙ্গে বসে তেলের দাম নির্ধারণ করে মূল্য বাড়ায় বা কমায়। আবার কোনো ঘোষণা ছাড়াই মিল পর্যায় থেকে দাম বাড়িয়ে দেয়। এবারও সেটাই করেছে। কোনো কারণ ছাড়াই মিল থেকে বাড়তি দাম দিয়ে এনে বাড়তি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। কিন্তু ক্রেতারা আমাদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি করছে।

এদিকে রাজধানীর সবকটি খুচরা বাজারে আলুর সরবরাহ থাকলেও বেড়েছে দাম। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ৬৫, যা সাতদিন আগেও ৬০ টাকায় খুচরা বিক্রেতারা বিক্রি করেছেন। প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯৫-১০০, যা সপ্তাহখানেক আগেও ৯০-১০০ টাকা ছিল। কৌশলে বিক্রেতারা ৫ টাকা কেজিপ্রতি বাড়িয়ে বিক্রি করছে। প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকায়। ৫ টাকা কমে প্রতি কেজি ছোট দানার মসুর ডাল ১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি মাঝারি দানার মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১২০ এবং ছোট দানার ১১০ টাকায়।

বাজারে কমেছে সব ধরনের মসলাজাতীয় পণ্যের দামও। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি রসুন সর্বোচ্চ ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা সাতদিন আগে ২৩০ টাকা ছিল। প্রতি কেজি দেশি হলুদ ৩০০ টাকা, যা সাতদিন আগে ৩৫০ টাকা ছিল। কেজিপ্রতি ২০ টাকা কমে প্রতি কেজি ধনে বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা। কেজিতে ৫০ টাকা কমে তেজপাতা বিক্রি হচ্ছে ১৫০-২৫০ টাকা।

অন্যদিকে বাজারে তদারকি জোরদার করার কারণে ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দাম কমতে শুরু করেছে। প্রতি হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৪৮-৫২, যা সাতদিন আগেও ৫০-৫৪ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এছাড়া প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৬০-১৭৫, যা সাতদিন আগে ১৭০-১৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। দেশি মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৬০-৭০০ টাকা। প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭৫০-৭৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১০০০-১১০০ টাকা।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মন্ডল বলেন, অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নির্দেশে ধারাবাহিকভাবে ডিমের আড়তে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। সেখানে গিয়ে দেখা গেছে একই স্থানের ডিম তিনবার হাতবদলের জন্য দাম বাড়ছে।

এছাড়া আড়তদারা এসএমএস-এর মাধ্যমে প্রতিদিন ডিমের মূল্য নির্ধারণ করছে। এসব কিছু হাতেনাতে ধরে শাস্তির আওতায় আনার কারণে ডিমের দাম কমতে শুরু করেছে। সঙ্গে কমছে ব্রয়লার মুরগির দামও। তিনি জানান, শুধু ডিম নয়, অন্যান্য পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য কাজ করা হচ্ছে।

অর্থনীতি

নতুন অর্থবছরে দেশের সার্বিক অর্থনীতিকে প্রধান চারটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সামনে এগোতে হবে। এগুলো হচ্ছে- মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতিতে লাগাম টানা, ডলার সংকট মোকাবিলা করে বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখা, বিনিয়োগ বাড়াতে উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করা এবং রাজস্ব আয় বাড়ানো। দেশে চলমান অর্থনৈতিক মন্দার কারণে এসব খাতে লক্ষ্য অর্জন বেশ চ্যালেঞ্জিং।

সদ্য বিদায়ি অর্থবছরেও খাতগুলোর লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। এমনকি অর্থবছরের মাঝপথে অর্থাৎ গত জানুয়ারিতে লক্ষ্যমাত্রা কমিয়েও তা অর্জন করা সম্ভব হয়নি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

সূত্র জানায়, এসবের পাশাপাশি আরও কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে আইএমএফ-এর শর্তের বাস্তবায়ন এবং এর প্রভাব মোকাবিলা। বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়াতে আস্থার সঞ্চার করা, রেমিট্যান্স প্রবাহের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা, রপ্তানি প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক থেকে ইতিবাচক অবস্থায় আনা। এছাড়া টাকা পাচার রোধ এবং হুন্ডির প্রভাব কমানো একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসাবে রয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ১৫ মাস ধরে মূল্যস্ফীতির হার ৯ শতাংশের ওপরে অবস্থান করছে। এত লম্বা সময় মূল্যস্ফীতি মাত্রাতিরিক্ত হারে থাকায় অর্থনীতিতে বড় ক্ষতের সৃষ্টি করেছে। যার দায় বেশির ভাগই পড়ছে স্বল্প ও মধ্য-আয়ের ভোক্তার ওপর। বিভিন্ন সময় এ হার কমানোর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও তা অর্জিত হয়নি। উলটো বেড়েই চলেছে। গত বছরের মার্চে মূল্যস্ফীতির হার ৯ শতাংশের ঘর অতিক্রম করে ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশে ওঠে। এরপর থেকে গত মে পর্যন্ত এ হার সামান্য ওঠানামা করে ৯ শতাংশের ওপরেই অবস্থান করেছে। কখনো ডাবল ডিজিটের কাছাকাছি চলে গেছে। মেতে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৮৯ শতাংশে। চলতি অর্থবছরে এ হার সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এ লক্ষ্যে বাজারে টাকার প্রবাহ কমাতে সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একই সঙ্গে ছাপানো টাকায় সরকারকে ঋণের জোগানও বন্ধ করেছে। পাশাপাশি ছাপানো টাকায় গঠিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন তহবিলের আকারও ছোট করা হচ্ছে। একই সঙ্গে উৎপাদন খাতে টাকার প্রবাহ বাড়ানোর পদক্ষেপ নিয়েছে।

দুই বছর ধরে দেশে ডলার সংকট চলছে। এ কারণে আমদানি যেমন সংকুচিত করা হয়েছে, তেমনই অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডও কমেছে। পাশাপাশি ডলারের দাম বেড়ে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে। দুই বছরে ডলারের বিপরীতে টাকার প্রায় ৩২ থেকে ৫৩ শতাংশ অবমূল্যায়ন হয়েছে। দুই বছর ধরেই আমদানি কমেছে গড়ে ১৮ শতাংশ করে। ২০২২ সালের আগস্টে এক মাসে সর্বোচ্চ ৯৫০ কোটি ডলারের এলসি খোলা হয়েছিল। এখন তা কমে প্রতিমাসে গড়ে খোলা হচ্ছে ৪৭০ থেকে ৫০০ কোটি টাকার এলসি। এভাবে ডলারের ওপর চাপ কমানো হচ্ছে। পাশাপাশি রেমিট্যান্স ও রপ্তানি বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। গত অর্থবছরে রেমিট্যান্স বেড়েছে প্রায় ১১ শতাংশ। রপ্তানি আয় মে পর্যন্ত বেড়েছে ২ শতাংশ। গত মে মাসে এ খাতে আয় কমেছে ১৬ শতাংশ। তবে রপ্তানি শিল্পের কাঁচামাল আমদানি বাড়তে শুরু করেছে। আগামী দিনে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে রপ্তানি আয়ে।

বিশ্বব্যাংক সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলেছে, বাংলাদেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ ঝুঁকির মুখে রয়েছে। চলতি বছরে ৩ শতাংশের কম বাড়বে রেমিট্যান্স। গত বছর ৩ শতাংশের বেশি বেড়েছিল। এছাড়া বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের চাপ রয়েছে। গত মে থেকে ক্রলিং পেগ পদ্ধতি চালু করে ডলারের দাম একদিনে ৮ টাকা বাড়ানো হয়েছে। আইএমএফ-এর শর্ত অনুযায়ী ডিসেম্বরের মধ্যে ডলারের বাজারভিত্তিক বিনিময় হার চালু করতে হবে। তখন এর দাম আরও বেড়ে গিয়ে টাকার মান কমিয়ে দেবে। আইএমএফ-এর মতে, বাংলাদেশের টাকা অতিমূল্যায়িত। এর মান আরও কমাতে হবে।

এ প্রসঙ্গে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, আগের চ্যালেঞ্জগুলো তো রয়েই গেছে। মূল্যস্ফীতি, ডলার সংকট, বিনিয়োগ বাড়ানো ও রাজস্ব আয় বাড়ানো। এগুলোর পাশাপাশি এলডিসি থেকে উত্তরণের ফলে ২০২৬ সাল থেকে আরও কিছু চ্যালেঞ্জ আসবে। সেগুলোও এখন থেকে মোকাবিলা করতে হবে। অর্থ পাচার, হুন্ডি, খেলাপি ঋণ- এগুলোও চ্যালেঞ্জ হিসাবে দেখা দেবে। এ অর্থবছরেও সরকারকে খুব সতর্কতার সঙ্গে এগোতে হবে। বাড়াতে হবে বিনিয়োগ। নজর রাখতে হবে সুদের হার যাতে বেশি না বাড়ে। ডলারের প্রবাহ বাড়িয়ে টাকার মানকে স্থিতিশীল রাখাটা জরুরি।

চলতি মাসের শেষদিকে আগাম মুদ্রানীতি ঘোষণা করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আইএমএফ-এর শর্তে এতে বাজারে টাকার প্রবাহ কমানোর নীতি গ্রহণ করা হবে। ফলে ঋণের সুদের হার আরও বাড়বে। ব্যাংকে তারল্যের প্রবাহও কমবে। ফলে ঋণের খরচ বেড়ে যাবে।

একদিকে ডলারের দাম, ঋণের সুদ, গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ব্যবসায় খরচ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। কিন্তু অর্থনৈতিক মন্দায় মানুষের আয় বাড়ছে না। উলটো মূল্যস্ফীতির হার বাড়ার কারণে আরও কমে যাচ্ছে। এতে ভোক্তার ভোগের সক্ষমতা কমেছে। এসব চ্যালেঞ্জ মাথায় নিয়ে উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছেন না। ফলে বেসরকারি খাতে ঋণের চাহিদা যেমন কমছে, তেমনই ব্যাংক খাতে তারল্য সংকটের কারণে জোগানও কমেছে। একই সঙ্গে বিদেশি বিনিয়োগও কমেছে। ফলে উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে। বেকারদের প্রত্যাশা অনুযায়ী কর্মসংস্থান হচ্ছে না।

এদিকে চলতি অর্থবছরের মুদ্রানীতিতে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এর মধ্যে শিল্প খাতে ডলারের জোগান, কম সুদে ঋণ বিতরণ এবং অন্যান্য নীতিসহায়তা দেওয়ার পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে মুদ্রানীতিতে বেশকিছু পদক্ষেপ থাকছে। তবে তা কতটুকু অর্জন করা সম্ভব, সেটা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কারণ, বিদায়ি অর্থবছরের মুদ্রানীতির বেশির ভাগ লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি।

অর্থনৈতিক মন্দা, বিনিয়োগ হ্রাস, ডলার সংকট ও সংকোচনমুখী মুদ্রানীতির কারণে আমদানি যেমন কমেছে, তেমনই সার্বিকভাবে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের গতিও কম। ফলে সরকারের রাজস্ব আহরণও কম হচ্ছে। কয়েক বছর ধরে রাজস্ব আয় কম হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হচ্ছে না। এতে সরকারের ব্যয় যেমন কমেছে, তেমনই কমেছে বিনিয়োগও। রাজস্ব আয় না বাড়ায় সরকারকে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হচ্ছে। ব্যাংকগুলোয় তারল্য সংকট থাকায় চাহিদা অনুযায়ী সরকারকে ঋণের জোগানও দিতে পারছে না। মূল্যস্ফীতি বাড়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ছাপানো টাকায়ও ঋণ নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে সরকারের আর্থিক সংকট প্রকট হচ্ছে। এ সংকট কাটাতে সরকার বিভিন্ন সেবার মূল্য ও ফি বাড়াচ্ছে। এতে ভোক্তার ওপরও চাপ বাড়ছে।

গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সরবরাহে বাধা, দেশীয় মুদ্রার বড় ধরনের অবমূল্যায়ন, সাম্প্রতিক সময়ে বৈশ্বিক বাজারে পণ্যের দাম কমলেও বাংলাদেশ এর সুবিধা পাচ্ছে না। অভ্যন্তরীণ বাজারে জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দামের ঊর্ধ্বমুখী সমন্বয় এবং বাজার ব্যবস্থাপনার ত্রুটির কারণে মূল্যস্ফীতির হার বাড়ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির এসব উপকরণের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে রয়েছে শুধু টাকার মান স্থিতিশীল রাখার বিষয়টি। বাকিগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষে এককভাবে মূল্যস্ফীতির হার কমানো সম্ভব নয়। এজন্য সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে।

আইএমএফ-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনীতিকে এখন বহুমুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সামনে এগোতে হচ্ছে। অর্থনীতিকে করোনা মহামারির আগের অবস্থায় নিতে আরও দুই বছর অপেক্ষা করতে হবে।

অর্থনীতি

অর্থ পাচার এই সরকারের বড় সমস্যা যা কিছুতেই ঠেকানো যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য সৈয়দ সায়েদুল হক (ব্যারিস্টার সুমন)। এই সরকারকে ব্যর্থ করতে আরও একটা বাজেট আছে, সেই বাজেটে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ড. মুহাম্মদ ইউনুস বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সোমবার (২৪ জুন) জাতীয় সংসদের অধিবেশনে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।

সৈয়দ সায়েদুল হক বলেন, অর্থ পাচার এই সরকারের বড় সমস্যা। কিছুতেই এটি ঠেকানো যাচ্ছে না। দুর্নীতি করলে তো সেই টাকা অর্থনীতিতে ফিরিয়ে আনা যায়। পাচার হয়ে গেলে যে দেশে যায় সেই দেশের অর্থনীতির বাজেট হয়ে যায়। আমরা তো বঙ্গবন্ধুর খুনিদেরই আনতে পারিনি, আর পাচার করা টাকা ফেরত আনবো কীভাবে? অর্থ পাচারের কারণে আমাদের বাজেট সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। এই সরকারের মধ্যে রাসেল ভাইপার সাপ ঢুকে গেছে। প্রকৃতিতে যখন সাপ আসে, তখন বেজি সেই সাপকে নিয়ন্ত্রণ করে। এই সরকারে সাপ ঢুকেছে, কিন্তু সেই সাপকে ধরার মতো বেজি নেই। তাই সাপ বেড়েই চলেছে।

তিনি বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো কতটা দুর্বল হয়ে গেছে! একজন ‘ভদ্রলোক’কে দুদক ধরতে পারেনি, এনবিআর ধরতে পারেনি, বাংলাদেশ ফাইনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্ট ইউনিট ধরতে পারেনি, সেখানে এনবিআর’র মতিউর রহমানকে ধরলো একটা ছাগল। ছাগলকাণ্ড না ঘটলে আর ফেসবুক ভাইরাল না হলে এই লোকের বিষয় তো সামনেই আসতো না। বেনজীর কাণ্ড! মাননীয় সাবেক আইজিপি! উনি এত বড় হয়ে গেলেন, মন্ত্রণালয় জানলো না, মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানলেন না! আর কিছুদিন সময় পেলে পুরো গোপালগঞ্জ কিনে ফেলতেন এই বেনজীর সাহেব। এটার দায় মন্ত্রণালয় এড়াতে পারে না। এখন কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। যদি এমন হয় যে, কিছু জমানো টাকা রয়ে গেছে যেটাকে সাদা করবেন, তাতে কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু, এই সুযোগ ব্যবহার করে বেনজীর আর মতিউরের টাকাও যদি সাদা হয়ে যায়, আর এদের আদর্শের উত্তরাধিকারদের টাকাও যদি সাদা হয়ে যায়, এর চেয়ে দুঃখের আর কিছু থাকবে না।

তিনি আরও বলেন, এই সরকারকে কয়েকটা চাপ নিতে হবে। এই বাজেটে ঋণ নিয়ে উন্নয়ন ব্যয় মেটানো হবে। আড়াই লাখ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হবে। এমপি হওয়ার পর আমি এক কোটি টাকা দিয়ে গাড়ি কিনেছি। ৫০ লাখ টাকা ব্যাংক ঋণ নিয়েছি। এতেই রাতে ঘুম হয় না। আড়াই লাখ কোটি টাকা ঋণের চাপ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কীভাবে ঘুমাবেন, তা উনিই জানেন। তবে আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিনি। বঙ্গবন্ধুকন্যা এমন এক পাখি যিনি বসেন ডালের উপর, কিন্তু ভরসা রাখেন নিজের পাখার উপর। এ কারণে পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে বিশ্বব্যাংক সরে গেলেও নিজের পাখায় ভর করে তিনি ঠিকই পদ্মা সেতু তৈরি করেছেন।

ব্যারিস্টার সুমন বলেন, শ্রীলঙ্কা যখন দেউলিয়া হয়, তখন সবাই বলেছিলেন বাংলাদেশের দেউলিয়া হওয়া সময়ের ব্যাপার। পাকিস্তান যখন দেউলিয়ার পথে, তখনও একই কথা বলেছিল সবাই। ভারত অর্থনৈতিকভাবে চাপে পড়লেও একই কথা সামনে এসেছে। কিন্তু, আমাদের অর্থনৈতিকভাবে দাবিয়ে রাখা যায়নি। ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কার সম্পদ আমাদের চেয়ে কম ছিল না, শুধু তাদের হাতে ছিল না একজন শেখ হাসিনা। এখন আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া। সরকার যেমন সংসদে বাজেট দিচ্ছে, এই সরকারকে ব্যর্থ করতে আরও একটা বাজেট আছে। সেই বাজেটে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ড. মুহাম্মদ ইউনুস। তার সঙ্গে আছে ডলার।

অর্থনীতি

অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেছেন, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে সরকারি-বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ৫১ হাজার ৩৯১ কোটি ৮৯ লাখ টাকা পাওনা। রাষ্ট্রায়ত্ত ৫৬টি প্রতিষ্ঠানের কাছে ব্যাংকগুলোর এ পরিমাণ টাকা পাওনা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রায় ১৫ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা পাওনা বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) কাছে।

সোমবার জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনের প্রশ্নোত্তর পর্বে সংসদ সদস্য মোরশেদ আলমের লিখিত প্রশ্নের জবাবে তিনি এ তথ্য জানান। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপিত হয়।

অর্থমন্ত্রী বলেন, বড় অঙ্কের টাকার মধ্যে চিনি কলগুলোর কাছে পাওনা প্রায় সাত হাজার ৮১৩ কোটি টাকা; সার, রাসায়নিক ও ওষুধ শিল্পের কাছে সাত হাজার ২৫০ কোটি টাকা, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) কাছে পাঁচ হাজার ১৮ কোটি টাকা, বাংলাদেশ বিমানের কাছে পাওনা চার হাজার ৪৪১ কোটি টাকা।

চট্টগ্রাম-১ আসনের সংসদ সদস্য মাহবুব উর রহমানের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে কোনো ব্যাংকেই আর্থিক সংকট নেই। তবে কতিপয় ব্যাংকে উচ্চ খেলাপি ঋণ, মূলধন ঘাটতি ও তারল্য সমস্যা বিদ্যমান। এ সমস্যা নিরসনে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন করে কর্মকর্তা নয়টি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে পর্যবেক্ষক হিসেবে এবং সাতটি ব্যাংকে কো-অর্ডিনেটর হিসেবে নিয়োজিত।

আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানত হ্রাস পাওয়া প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি হওয়ায় মানুষ আমানত তুলে বিনিয়োগ করছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি আস্থাহীনতা বা মূল্যস্ফীতির কারণে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আমানত কমছে না।