অর্থনীতি

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বছর ২০২৪ সালে (১২ মাস) সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের আমানত বেড়েছে ৩৩ গুণ। এতে ব্যাংকটিতে আমানত বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা।

বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক (এসএনবি) বিশ্বের সব দেশের সঙ্গে ২০২৪ সালে তাদের দেশের ব্যাংকগুলোর দায় ও সম্পদের পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। গত এক যুগ ধরে বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক। যদিও নির্দিষ্ট গ্রাহকের তথ্য প্রকাশ করছে না ব্যাংকটি।

২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষ হওয়া বছরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশটির ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের আমানত এখন ৫৮ কোটি ৯৫ লাখ সুইস ফ্রাঁ। প্রতি ফ্রাঁ ১৪৯ টাকা ৬৯ পয়সা হিসাব করলে ৮ হাজার ৮৩৪ কোটি টাকা। অথচ আগের বছর, অর্থাৎ ২০২৩ সালে এটি ছিল মাত্র এক কোটি ৭৭ লাখ সুইস ফ্রাঁ। বাংলা টাকায় ২৬৪ কোটি টাকার মতো। এক বছরে আমানত বেড়েছে ৩৩ গুণ বা ৮ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা। রিপোর্টে অবশ্য এই উলম্ফনের কোনো কারণ উল্লেখ নেই।

২০২১ সাল পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে বাংলাদেশিদের আমানত। ২১ সালে আমানত বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৮৭ কোটি ১১ লাখ সুইস ফ্রাঁতে। যা ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এরপর নজিরবিহীন গতিতে অর্থ তুলে নেন বাংলাদেশিরা। দুই বছরে ১১ হাজার কোটি টাকা কমে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে যায় আমানত। দুই বছর টানা যে আমানত কমেছে, তা হঠাৎ এত বেড়ে যাওয়ায় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। উত্তর অনুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে সামনে আসে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন এবং ক্ষমতা হারানোর ভয়ে নিরাপদে অর্থ সরিয়ে নেয়ার বিষয়টি।

সুইস কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, যদি কোনো বাংলাদেশি, নাগরিকত্ব গোপন রেখে অর্থ জমা রেখে থাকেন, তবে ওই টাকা এই হিসাবে অন্তর্ভূক্ত হয়নি। গচ্ছিত রাখা স্বর্ণ বা মুল্যবান সামগ্রীর আর্থিক মূল্যমানও হিসাব করা হয়নি প্রতিবেদনে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সুইজারল্যান্ডে গোপনীয়তা কমতে থাকায়, অনেক ধনী এখন অবৈধ টাকা জমা রাখার জন্য ঝুকছেন, লুক্সেমবার্গ, কেম্যান আইল্যান্ড, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড কিংবা বারমুডার মতো ট্যাক্স হ্যাভেনের দিকে।

অর্থনীতি

মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ঘটে গেল এক নাটকীয়তা। ঈদের আগের দিন (৬ জুন) হঠাৎ করে নির্বাচনের সময় ঘোষণা করে অন্তর্বর্তী সরকার।

এরপর রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয় বিতর্ক, ক্ষোভ এবং দলীয় চাপ।

সবশেষে ১৩ জুন লন্ডনের ডরচেস্টার হোটেলে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকে পাল্টে যায় পুরো দৃশ্যপট। আর তাতেই রাজনীতিতে যুক্ত হয় এক নতুন মাত্রা।

সংস্কারকে বাদ দিয়ে শুধু নির্বাচনমুখী একটি দল হিসেবে বিএনপিকে প্রমাণ করতে সক্রিয় ছিল কয়েকটি রাজনৈতিক দল, প্রভাবশালী বুদ্ধিজীবী এবং ইউটিউবার গোষ্ঠী। তাদের ধারাবাহিক প্রচারণা ও ভিডিওবার্তায় ক্রমেই চাপে পড়ছিল বিএনপি।

১৩ জুনের বৈঠকের পর জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এক বিবৃতিতে বলে যে, ‘জুলাই সনদ’ ঘোষণা ও বিচারের রোডম্যাপ ঘোষণার পরই নির্বাচন-সংক্রান্ত আলোচনা চূড়ান্ত হওয়া উচিত। তাদের অভিযোগ লন্ডন বৈঠকে নির্বাচনের তারিখ এগিয়ে আনার তুলনায় সংস্কার ও বিচার গুরুত্ব পায়নি।

একটি দলের সঙ্গে সরকারের যৌথ বিবৃতিতে বিস্ময় প্রকাশ করে এনসিপি বলছে— এটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির জন্য মোটেও অনুকূল নয়, বরং এটি নৈতিকতা বিরুদ্ধ। তাদের মতে, এটি একটি নির্দিষ্ট দলের প্রতি সরকার প্রধানের পক্ষপাতদুষ্ট মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ। আর জামায়াতে ইসলামীর অভিযোগ, বিএনপির সঙ্গে বৈঠকের পর সরকার যে পদ্ধতিতে যৌথ ব্রিফিং ও বিবৃতি দিয়েছে, তা প্রধান উপদেষ্টার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি করেছে।

যে বিএনপি এক সপ্তাহ আগে নির্দিষ্ট দুটি দলের প্রতি প্রধান উপদেষ্টার পক্ষপাতের অভিযোগ তুলেছিল, এক সপ্তাহ পর সেই বিএনপি-ই সরকারের সঙ্গে সদ্ভাবপূর্ণ মনোভাবে এসেছে। বিপরীতে, যেসব দল এতদিন অন্তর্বর্তী সরকারের ঘনিষ্ঠ বলে বিবেচিত ছিল, তারাই এখন লন্ডন বৈঠক ও যৌথ বিবৃতি নিয়ে প্রশ্ন তুলছে সরকার প্রধানের নিরপেক্ষতা ঘিরে।

নির্বাচনের সময় নিয়ে অধ্যাপক ইউনূস ও বিএনপির মধ্যে কিছুটা দূরত্ব আগে থেকেই ছিল। বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চাইলেও জুনের শুরুতে অধ্যাপক ইউনূস হঠাৎ ঘোষণা দেন, ভোট হবে আগামী এপ্রিলের প্রথমার্ধে। বিষয়টি নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায় বিএনপি। দলটির শীর্ষ নেতারা এটিকে জামায়াত ও এনসিপির ইচ্ছার প্রতিফলন বলে অভিযোগ তোলেন।

তবে ঈদের ছুটির মধ্যেই রাজনীতির মোড় ঘুরে যায়। এরপর নানা নাটকীয়তা ও কূটনৈতিক তৎপরতা শেষে লন্ডনের ডরচেস্টার হোটেলে অধ্যাপক ইউনূস ও তারেক রহমানের ‘ওয়ান টু ওয়ান’ বৈঠক হয়। ১০ জুন বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ইসলাম বৈঠকের খবর নিশ্চিত করলে শুরু হয় নানা বিশ্লেষণ।

নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে বিএনপির পক্ষ থেকে এ বৈঠকে অংশ নেওয়ার বিষয়ে প্রথমে কিছুটা অনীহা ছিল। তবে সরকারের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ ও প্রভাবশালী উপদেষ্টা এবং প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠকটি আয়োজনের চেষ্টা অব্যাহত রাখেন। এ নিয়ে ঢাকা ও লন্ডনে কূটনৈতিক তৎপরতাও চলতে থাকে। আলোচনার মাধ্যমে বিদ্যমান ইস্যুগুলো সমাধানের বিভিন্ন সম্ভাবনা তুলে ধরে বৈঠকে রাজি করাতে চেষ্টা চালানো হয়।

একাধিক সূত্র জানায়, বিএনপি চেয়ারপারসন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পরামর্শেই দৃশ্যপট পাল্টে যায়। এই সাক্ষাৎ বাস্তবায়নে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া শেষ মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। পরে উভয় পক্ষের আগ্রহে, বিশেষ করে সরকারের বাড়তি উৎসাহে সাক্ষাতের সময় চূড়ান্ত হয়।

বিএনপি ও অন্তর্বর্তী সরকারের দূরত্বের মূল কারণ ছিল নির্বাচন নিয়ে অবিশ্বাস। সময়সূচি নিয়ে গড়িমসি বিএনপির মনে প্রশ্ন তোলে—সরকার আদৌ নির্বাচন দিতে চায় কি না। অনেকেই মনে করেন, সরকার দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকার কৌশল হিসেবে সময় নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ফেলছে।

রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টরা জানান, কিছু বুদ্ধিজীবী, ইউটিউবার এবং স্বার্থান্বেষী লোক সরকার ও বিএনপির স্বাভাবিক সম্পর্ককে বিষিয়ে তুলছিল পরিকল্পিতভাবে। তারা কোনোভাবেই চায়নি দ্রুতই জাতীয় নির্বাচন হোক। তাদের লক্ষ্য, যেভাবেই হোক নির্বাচন বিলম্বিত করে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটানো। আর এ কারণেই তারা কোনোভাবেই বিএনপিকে রাজনীতির মাঠে দাঁড়াতে দিতে চাইছিল না। অনলাইন ও অফলাইন- দুই জায়গাতেই সমানভাবে বিএনপির বিরুদ্ধে কথার যুদ্ধ শুরু করে বিএনপির ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত কয়েকজন ইউটিউবার, রাজনৈতিক মিত্র, বুদ্ধিজীবী। দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তখন একপর্যায়ে বলেন, বিএনপি মিডিয়া ট্রায়ালের শিকার হচ্ছে।

সরকারঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, তারেক রহমানের সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ না হওয়ায় একটি মহল এক/এগারো পরবর্তী সময়ের উদ্দেশ্যমূলক প্রচার ও বিভ্রান্তিকর সংবাদ তুলে ধরে অধ্যাপক ইউনূসকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছিল। তবে লন্ডনের বৈঠকে তারেক রহমান নিজেকে একজন পরিপক্ব, চিন্তাশীল ও সংস্কারমুখী নেতা হিসেবে উপস্থাপন করেন, যিনি গণতন্ত্র, জবাবদিহিতা ও রাষ্ট্রীয় সংস্কারে প্রতিশ্রুতিশীল। কিছু নীতিগত মতপার্থক্য থাকলেও তার বিনয়, ধৈর্য ও উদারতা অধ্যাপক ইউনূসকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে।

এ নিয়ে সাংবাদিক, লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মারুফ কামাল খান বলেন, ‘গণতন্ত্রের যে সৌন্দর্য, তার অনুশীলন দরকার। মতামতের বৈচিত্র্যের মধ্যে জাতীয় ঐক্য দরকার। রাজনীতিতে দম্ভ ও শক্তির প্রদর্শনীর বদলে মেধা, যুক্তি ও বুদ্ধির দীপ্তি দরকার। সহনশীলতা ও পারস্পরিক মর্যাদাবোধ দরকার। দলীয় অ্যাক্টিভিস্টদের চেয়ে সব শ্রেণী-পেশার মানুষের হৃদয়ের ভাষা ও আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতি বেশি গুরুত্ব দেওয়া দরকার। লন্ডন বৈঠকের ছোট ছোট সংলাপের মধ্য দিয়ে তার প্রকাশ ঘটেছে। ’

বৈঠকের মূল বিষয় ছিল নির্বাচন, যার সমাধানও হয়েছে সহজভাবে। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি নির্বাচন আয়োজনের সম্ভাবনায় দুই পক্ষই অবস্থানে নমনীয়তা দেখিয়েছে। বিএনপি ডিসেম্বরের দাবিতে অনড় ছিল না, আর অন্তর্বর্তী সরকারও এপ্রিলে নির্বাচনেই অনড় থাকেনি। বিশ্লেষকদের মতে, এই সমঝোতা প্রমাণ করে, প্রয়োজনের সময় বাংলাদেশের জনগণ দেশকেই বড় করে দেখে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক দিলারা চৌধুরী বলেন, ‘সরকার এবং বিএনপি দুই পক্ষই অত্যন্ত বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছে। দীর্ঘ স্বৈরশাসনের পর রাষ্ট্র বিনির্মাণে সবার ঐক্যবদ্ধ থাকা প্রয়োজন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি না করে দুই পক্ষ আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতায় আসতে পেরেছে, দেশ ও জাতীর স্বার্থে এটি বিরাট সাফল্য। ’

একই মত দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘এই বৈঠকে প্রমাণিত হয়েছে, জাতির ক্রান্তিলগ্নে আমরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারি। অতীতে কোনো দল কোনো বিষয়ে ভুল করতে পারে। প্রতিদিনের ভুলভ্রান্তি নিয়ে পড়ে থাকলে আমরা এগোতে পারব না। নতুন বাংলাদেশের যে স্বপ্ন আমরা দেখছি, সেটা বাস্তবায়ন করতে পারব না। ’

অর্থনীতি

বাংলাদেশের সরকারি খাতের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিশ্বব্যাংকের নির্বাহী পরিচালনা পর্ষদ ২৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের অর্থায়ন অনুমোদন করেছে।

‘স্ট্রেংদেনিং ইনস্টিটিউশনস ফর ট্রান্সপারেন্সি অ্যান্ড অ্যাকাউন্টিবিলিটি (এসআইটিএ)’- শীর্ষক এই প্রকল্প বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ সরকারি খাতগুলোর আধুনিকায়ন, তথ্যের স্বচ্ছতা, রাজস্ব আহরণ, সরকারি বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা, সরকারি ক্রয় ও আর্থিক তদারকির ক্ষেত্রে চলমান সংস্কার কার্যক্রমকে সহায়তা করবে।

এই প্রকল্পের আওতায় পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, পরিকল্পনা বিভাগ, বাংলাদেশ সরকারি ক্রয় কর্তৃপক্ষ এবং মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের শাসন কাঠামো ও সক্ষমতা শক্তিশালী করা হবে।

বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশে ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর গেইল মার্টিন বলেন, ‘ব্যবসায়িক প্রক্রিয়াগুলোর ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে এই বিনিয়োগ স্বচ্ছতা বৃদ্ধিতে ও দুর্নীতি কমাতে সহায়তা করবে। এতে বাংলাদেশ এমন আধুনিক সরকারি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পারবে, যা একটি উদীয়মান অর্থনীতির চাহিদা পূরণে সক্ষম। ’

তিনি বলেন, ‘এই প্রকল্প সরকারি সেবার গুণগত মান ও প্রবেশগম্যতা বাড়াবে এবং এর মাধ্যমে জনগণের মধ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতি আস্থা বৃদ্ধি পাবে। ’

বিশ্বব্যাংক জানায়, এ প্রকল্পের পাশাপাশি বাংলাদেশের সঙ্গে আরও একটি উন্নয়ন নীতিগত ঋণ নিয়ে আলোচনা চলছে, যা এই মাসের শেষ দিকে বোর্ড আলোচনার জন্য উপস্থাপন করা হবে। এতে রাজস্ব আহরণ, ব্যাংকখাত, তথ্য সংরক্ষণ ও বিতরণ, সরকারি বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা, সামাজিক সেবা প্রদান এবং নিরীক্ষা ও জবাবদিহিতার স্বচ্ছতা উন্নয়নের জন্য সহায়তা প্রদান করা হবে।

এসআইটিএ প্রকল্পটি এসব কার্যক্রমের পরিপূরক হিসেবে কাজ করবে এবং এসব গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা গড়ে তুলবে।

বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ও প্রকল্পের টিম লিডার সুলেমানে কুলিবালি বলেন, ‘পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি সংস্থাকে নিয়ে একটি সমন্বিত কৌশলে কাজ করার ফলে সরকারের কার্যকারিতা অনেক বেড়ে যাবে, যা টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি আরও বলেন, ‘এই প্রকল্প ও প্রস্তাবিত উন্নয়ন ঋণ একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করবে এবং সরকারকে আধুনিক আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও কার্যকর সেবাপ্রদান নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা গড়ে তুলতে সহায়তা করবে। ’

স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে কাজ করছে বিশ্বব্যাংক। এ পর্যন্ত বাংলাদেশে তারা ৪৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অনুদান, সুদমুক্ত ও স্বল্পসুদের ঋণ প্রদান করেছে।

অর্থনীতি

দেশের বাজারে সোনার দাম আরেক দফা বাড়ানো হয়েছে। এবার ভরিতে ২ হাজার ১৯২ টাকা বাড়িয়ে ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ১ লাখ ৭৪ হাজার ৫২৮ টাকা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। যা রেববার (১৫ জুন) থেকে কার্যকর হবে।

শনিবার রাতে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে বাজুস।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্থানীয় বাজারে তেজাবি সোনার (পিওর গোল্ড) মূল্য বেড়েছে। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সোনার নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।

এর আগে, সবশেষ গত ৫ জুন দেশের বাজারে সোনার দাম বাড়ানো হয়েছিল। সে সময় ভরিতে ২ হাজার ৪১৫ টাকা বাড়িয়ে ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ১ লাখ ৭২ হাজার ৩৩৬ টাকা নির্ধারণ করেছিল সংগঠনটি।

অপরদিকে সোনার দাম বাড়ানো হলেও অপরিবর্তিত রয়েছে রুপার দাম।

অর্থনীতি

পদ্মা সেতুর ডান তীর রক্ষা বাঁধের ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শনে এসে সেতু উপদেষ্টা মোহাম্মদ ফাওজুল কবির বলেছেন, আমরা অতিদ্রুত এর স্থায়ী সমাধানের জন্য কার্যক্রম শুরু করব। নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে এর আশপাশে ভাঙন দেখা দেয়। এটা আমরা বন্ধ করবই। কোনো মানুষের ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ার মতো দুঃখজনক কিছু হতে পারে না। এখানে কী কী করতে হবে সামগ্রিকভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন বিষয়টি দেখবেন।

বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পদ্মা সেতুর ডান তীর রক্ষা বাঁধের ভাঙনকবলিত নাওডোবা এলাকা পরিদর্শনে এসে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।

অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, গুরুত্বের সঙ্গেই আমরা দেখতে এসেছি। আমরা বলেছি, ভাঙন প্রতিরোধে স্থায়ী সমাধান দরকার। যাতে বারবার যেন না ভাঙে। তবে এখন ভাঙছে না। আমরা যতটুকু পারি, দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করব। নদী শাসন করা বড় কঠিন কাজ।

এছাড়া শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসকসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকতারা উপস্থিত ছিলেন।

অর্থনীতি

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের সঞ্চালন লাইন পূর্ণ সক্ষমতায় চালু হয়েছে। এর মাধ্যমে পারমাণবিক কেন্দ্রের বিদ্যুৎ বাংলাদেশের জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিডে সঞ্চালনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করলো।

সোমবার (২ জুন) দুপুর সাড়ে ৩টায়, ‘রূপপুর-গোপালগঞ্জ ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন’ সফলভাবে চালু হয়।

রূপপুর-গোপালগঞ্জ ৪০০ কেভি লাইনের দৈর্ঘ্য প্রায় ১৫৮ কিলোমিটার। টাওয়ার সংখ্যা ৪১৪টি।

এর আগে প্রথম ইউনিটের ফিজিক্যাল স্টার্টআপের জন্য আরও দুটি হাইভোল্টেজ লাইন প্রস্তুত করা হয়েছিল।

২০২২ সালের ৩০ জুন ‘রূপপুর-বাঘাবাড়ি ২৩০ কেভি সঞ্চালন লাইন’ এবং ২০২৪ সালের ৩০ এপ্রিল ‘রূপপুর-বগুড়া ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন’ চালু করা হয়।

রূপপুর-গোপালগঞ্জ লাইন চালুর মধ্য দিয়ে মোট তিনটি লাইন প্রস্তুত হলো। যার প্রতিটির সঞ্চালন সক্ষমতা ২০০০ মেগাওয়াট।

পিজিসিবির নির্বাহী প্রকৌশলী এনায়েত করিম জানান, রূপপুর-গোপালগঞ্জ ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন সফলভাবে সংযুক্তের মধ্যদিয়ে বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিড সঞ্চালনের মাইলফলক স্পর্শ করেছে। ২৯ মে এই কাজ শেষ হয়েছে। এর মাধ্যমে পারমাণবিক কেন্দ্রের বিদ্যুৎ বাংলাদেশের গ্রিডে সঞ্চালনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলো।

অর্থনীতি

অ্যাপার্টমেন্ট বা ফ্ল্যাট কেনায় কালোটাকা সাদা করার সুযোগ অব্যাহত রাখা হয়েছে আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরেও। পাশাপাশি ভবনের নির্মাণের ক্ষেত্রেও এ সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে আগের চেয়ে করের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। এলাকাভেদে ও আয়তন অনুসারে নির্দিষ্ট পরিমাণ কর দিলেই টাকার উৎস সম্পর্কে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে বলে ধরে নেবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সোমবার (২ জুন) অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করেন। সেখানে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করেন তিনি।

ঢাকার গুলশান, বনানী, বারিধারা, মতিঝিল ও দিলকুশা এলাকার ২ হাজার বর্গফুটের অধিক প্লিন্থ আয়তন বিশিষ্ট ভবন বা অ্যাপার্টমেন্টের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুটে ২ হাজার টাকা কর প্রস্তাব করা হয়েছে। ঢাকার গুলশান, বনানী, বারিধারা, মতিঝিল, দিলকুশা এলাকার অনধিক ২ হাজার বর্গফুটের অধিক প্লিন্থ আয়তন বিশিষ্ট ভবন বা অ্যাপার্টমেন্টের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুটে ১৮০০ টাকা কর দিতে হবে। ঢাকার ধানমন্ডি, ডিওএইচএস, মহাখালী, লালমাটিয়া, উত্তরা, বসুন্ধরা, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, সিদ্ধেশ্বরী, কারওয়ান বাজার, বনশ্রী, বিজয়নগর, ওয়ারী, সেগুনবাগিচা ও নিকুঞ্জ এবং চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ, খুলশী, আগ্রাবাদ ও নাসিরাবাদ এলাকায় ২ হাজার বর্গফুটের অধিক প্লিন্থ আয়তন বিশিষ্ট ভবন বা অ্যাপার্টমেন্টের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুটে ১৮০০ টাকা কর ধরা হয়েছে। এছাড়া ঢাকার ধানমন্ডি, ডিওএইচএস, মহাখালী, লালমাটিয়া, উত্তরা, বসুন্ধরা, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, সিদ্ধেশ্বরী, কারওয়ান বাজার, বনশ্রী, বিজয়নগর, ওয়ারী, সেগুনবাগিচা ও নিকুঞ্জ এবং চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ, খুলশী, আগ্রাবাদ ও নাসিরাবাদ এলাকায় ২ হাজার বর্গফুটের কম প্লিন্থ আয়তন বিশিষ্ট ভবন বা অ্যাপার্টমেন্টের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুটে ১৫০০ টাকা কর দিতে হবে।

এসব এলাকা ছাড়া সিটি করপোরেশন এলাকায় ১৫০০ বর্গফুটের অধিক প্লিন্থ আয়তন বিশিষ্ট ভবন বা অ্যাপার্টমেন্টের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুটে ৭০০ টাকা কর প্রস্তাব করা হয়েছে। সিটি করপোরেশন এলাকায় ১৫০০ বর্গফুটের অনধিক প্লিন্থ আয়তন বিশিষ্ট ভবন বা অ্যাপার্টমেন্টের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুটে ৬০০ টাকা কর দিতে হবে। এছাড়া জেলা সদরের পৌর এলাকায় ১৫০০ বর্গফুটের অধিক প্লিন্থ আয়তন বিশিষ্ট ভবন বা অ্যাপার্টমেন্টের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুটে ৩০০ টাকা, জেলা সদরের পৌর এলাকায় ১৫০০ বর্গফুটের অনধিক প্লিন্থ আয়তন বিশিষ্ট ভবন বা অ্যাপার্টমেন্টের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুটে ২৫০ টাকা কর প্রস্তাব করা হয়েছে।

দেশের অন্য এলাকায় (সিটি করপোরেশ ছাড়া) ১৫০০ বর্গফুটের অধিক প্লিন্থ আয়তন বিশিষ্ট ভবন বা অ্যাপার্টমেন্টের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুটে ১৫০ টাকা কর দিতে হবে। দেশের অন্য এলাকায় ১৫০০ বর্গফুটের অনধিক প্লিন্থ আয়তন বিশিষ্ট ভবন বা অ্যাপার্টমেন্টের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুটে কর ১০০ টাকা। এছাড়া একই সুবিধা পেতে ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে এলাকাভেদে প্রতি বর্গফুটে ৫০ থেকে ৯০০ টাকা কর নির্ধারণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে।

অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করার ক্ষেত্রে দুটি শর্তও দেওয়া হয়েছে। যদি আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনের অধীনে কোনো অপরাধমূলক কার্যক্রম থেকে উদ্ভূত হয় এবং কোনো বৈধ উৎস থেকে উদ্ভূত না হয়, তাহলে এই আইনের এই ধারার আওতায় কালোটাকা সাদা করা যাবে না। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কালোটাকা সাদা করার ঢালাও সুযোগ বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা এসে গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর বাতিল করে। এবারের বাজেটে অর্থ উপদেষ্টা নতুন করে করহার বাড়িয়ে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দিলেন।

এ বিষয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, যেভাবেই ব্যাখ্যা করা হোক না কেন, এটি স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে রাষ্ট্র সংস্কার- বিশেষ করে দুর্নীতিবিরোধী সংস্কারের মূল উদ্দেশ্যকে রীতিমতো উপেক্ষা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। একই সঙ্গে, দুর্নীতিকে উৎসাহ দিয়ে রিয়েল এস্টেট লবির ক্ষমতার কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। করহার যা-ই হোক না কেন, এটি সংবিধানের ২০(২) অনুচ্ছেদের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। যেখানে বলা হয়েছে রাষ্ট্র এমন ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে যে অনুপার্জিত আয় অবৈধ হবে। কালোটাকা সাদা করার সুযোগ একই সঙ্গে বৈষম্যমূলক। কারণ এই সিদ্ধান্তের ফলে আবাসন খাতে অবৈধ অর্থের মালিকদের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হবে। সৎ উপার্জনকারীদের ফ্ল্যাট বা ভবনের অংশীদার হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করবে।

অর্থনীতি

চলতি বছর জুলাইয়ের মধ্যে এ প্রক্রিয়া শেষে একীভূত ব্যাংকটির জন্য বিদেশি বিনিয়োগকারী খোঁজা হবে, বলেন তিনি।

ছয়টি দুর্বল ব্যাংককে একীভূত করে সরকারি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার পরিকল্পনার কথা বলেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।

চলতি বছর জুলাইয়ের মধ্যে এ প্রক্রিয়া শেষে একীভূত ব্যাংকটির জন্য বিদেশি বিনিয়োগকারী খোঁজা হবে বলে সোমবার চ্যানেল ২৪ এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

দুর্বল ব্যাংকগুলো হল- সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড (এসআইবিএল), ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংক।

এসব ব্যাংকের মধ্যে চারটির পর্ষদ সরাসরি চট্টগ্রামভিত্তিক আলোচিত ব্যবসায়ী সাইফুল আলম মাসুদ (এস আলম) এর নিয়ন্ত্রণে ছিল। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ দিকে ন্যাশনাল ব্যাংকের পর্ষদের নিয়ন্ত্রণও পরোক্ষভাবে সুবিধাভোগীদের মাধ্যমে তার কাছে যায়। আর এক্সিম ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ ছিল শেখ হাসিনার সময়ের আরেক প্রভাব খাটানো ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম মজুমদারের।

একীভূত করে সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে এসব ব্যাংকের সম্পদ পর্যালোচনাও করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।

সোমবার রাতে প্রচারিত চ্যানেল ২৪ এর প্রতিবেদনে গভর্নর বলেন, জুলাইয়ের মধ্যে এসব ব্যাংককে সরকারি মালিকানায় নিয়ে প্রয়োজনীয় পুঁজি যোগান দেওয়া হবে। তারপর বিদেশি বিনিয়োগকারী খোঁজা হবে।

“এটা আস্থার খবর কারণ এটা সরকারিকরণ করা হবে। সরকার সাময়িকভাবে এটাকে নিয়ে নেবে। একই সঙ্গে সেগুলোকে মূলধন যোগাবে। বাংলাদেশ ব্যাংকতো ইতোমধ্যে তাদের তারল্য সহায়তা দিচ্ছে। তারপর আমরা শেয়ারগুলোকে আন্তর্জাতিক কৌশলগত বিনিয়োগকারীর কাছে হস্তান্তর করব; পুনর্গঠন হওয়ার পরে।”

তিনি বলেন, “পুনর্গঠনের সময়টায় আমরা অংশীদারত্ব রাখব। এটা একটা সাময়িক ব্যবস্থা, যেটা আমরা নতুন ব্যাংক করব। পরে সেটা নতুন বিনিয়োগকারীর কাছে হস্তান্তর করে দেওয়া হবে।”

এর আগে বিগত সরকারের আমলে দুর্বল ব্যাংককে একীভূত বা মার্জার করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। তবে পট পরিবর্তনের পর সে উদ্যোগ আর এগোয়নি।

দুর্দশাগ্রস্ত পদ্মা ও এক্সিম ব্যাংককে একীভূত করতে ২০২৪ সালে ব্যাংক দুটির পর্ষদে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। এ নিয়ে একটি এমইউ চুক্তি সাক্ষরিত হয়েছিল।

ওই বছর বাংলাদেশ ব্যাংকের সবুজ সংকেতের পর ন্যাশনাল ব্যাংককে (এনবিএল) ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) সঙ্গে একীভূত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তবে তখন ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে মার্জার হওয়ার বিষয়ে আপত্তি থাকায় তা বাতিল হয়ে যায়।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়ে ব্যাংক খাতের সংস্কারের অংশ হিসেবে ‘ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারি করে।

এর অধীনে দেউলিয়া হওয়া বা দেউলিয়ার ঝুঁকিতে থাকা ব্যাংককে ‘ভালো করার স্বার্থে’ যেকোনো তফসিলি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে সাময়িকভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত মালিকানায় নিতে পারবে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক।

দুর্বল ব্যাংককে ‘ভালো করার স্বার্থে’ সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংককে যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

এরপরই দুর্বল ছয় ব্যাংককে সরকারি নিয়ন্ত্রণে আনার কথা বললেন গভর্নর।

তিনি বলেন, ”আমরা পর্যায়ক্রমে যাব। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে আমরা প্রথমটা সফলভাবে করতে পারলে আমরা পরেরটায় যাব। প্রথমটা থেকে আমরা শিক্ষা নেব কী ভুল হতে পারে। এটা ধাপে ধাপে হবে। এটা দুই-তিন মাসের ব্যাপার নয়। রেজুলেশনের প্রথম তিন মাস একটা কঠিন সময়।”

একীভূত করার পর ওই ব্যাংকে বিদেশি বিনিয়োগ আনার বিষয়ে তিনি বলেন, “নতুন কৌশলগত বিনিয়োগকারী যারাই নেবেন তারা এটা সুন্দরভাবে চালিয়ে যেতে পারবেন। আমরা চাই এটার মূলধন বাড়বে, এটার তারল্য বাড়বে, প্রত্যেকটা গ্রাহক তার টাকা পাবে, গ্রাহকদের কোনো লোকসান হবে না।“

অর্থনীতি

নামমাত্র বরাদ্দ দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হচ্ছে এডিপিভুক্ত দীর্ঘদিনের পুরোনো ৪৫টি প্রকল্প। আগামী অর্থবছরের উন্নয়ন বাজেটের আওতায় এসব প্রকল্পে এক লাখ টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে ভবিষ্যতে কাজের মেয়াদ ও ব্যয় বৃদ্ধির শঙ্কা দেখা দিয়েছে। সেই সঙ্গে জনগণের করের শত শত কোটি টাকার অপচয় হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

তাদের মতে, বরাদ্দের সামান্য অর্থে আগামী এডিপি সংশোধনের আগ পর্যন্ত কোনো কাজই করা যাবে না। এতে অর্থবছরের শুরুতেই কাজে দেরি হলে সেই ঘানি টানতে হবে শেষ পর্যন্ত। সময়মতো বাস্তবায়ন না হলে কাক্সিক্ষত সুফল পেতেও অপেক্ষা করতে হবে বছরের পর বছর।

জিইয়ে রাখা প্রকল্পগুলোর মধ্যে ১৩ বছর আগে কাজ শুরু হয়েছে এমন প্রকল্প আছে একটি। ১১ বছরের দুটি, ১০ বছরের চারটি, সাত বছরের তিনটি, চার বছরের সাতটি প্রকল্প। এছাড়া ছয় বছরের তিনটি, তিন বছরের আটটি এবং বাকি প্রকল্পগুলো রয়েছে এক থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে। এসবের কাজ কবে শেষ হবে তা কেউ বলতে পারছে না।

বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ও সরকারের শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সদস্য ড. জাহিদ হোসেন বলেন, এটা একটা ব্যাড প্র্যাকটিস। এই ধারাবাহিকতা বন্ধ হলে ভালো হতো। ছোট ছোট বরাদ্দ দিয়ে প্রকল্প বাঁচিয়ে রাখা খারাপ। বরাদ্দ বন্ধ হলে প্রকল্প থেকে কোনো উপকার পাওয়া যায় না, সেটি তো প্রমাাণিত। সামান্য বরাদ্দ দিয়ে এগুলো বাঁচিয়ে রাখায় কারা উপকার পায়? আমরা জানি জনগণ তো অন্তত কিছু পায় না। তাহলে এই কাজ কেন হচ্ছে। এবার ভেবেছিলাম অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যতিক্রমী কিছু করবে। এ ধরনের অপচেষ্টা আর থাকবে না। কিন্তু নতুনত্ব কোথায়? কোনো পরিবর্তন এলো না। অল্প বরাদ্দের নামে যা দেওয়া হলো সেটারও অপচয় এবং ভবিষ্যতে অর্থ ঢালার পথও থেকেই গেল।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনা সচিব ইকবাল আব্দুল্লাহ হারুন বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে বলেন, বিষয়টি আমার মাথায় নেই। আমি তো এডিপির পুরো বই মুখস্থ রাখিনি। এছাড়া এটা একক কোনো কাজ নয়। যৌথভাবে টিমওয়ার্কের মাধ্যমে এডিপি তৈরি হয়েছে। তবে কেন এত কম বরাদ্দ রাখা হয়েছে সে বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে আপনাকে পরে জানাতে পারব।

পরিকল্পনা কমিশন জানায়, রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলীয় লেভেলক্রসিং গেটগুলোর পুনর্বাসন ও মান উন্নয়ন প্রকল্পটির মোট ব্যয় ১৪৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। ইতোমধ্য্ইে চারবার সংশোাধন করতে হয়েছে। এরপরও বাস্তবায়ন হচ্ছে না। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ আছে ১৪ কোটি ২৫ লাখ টাকা। আগামী অর্থবছরের নতুন এডিপিতে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে মাত্র এক লাখ টাকা। গত জুন মাস পর্যন্ত প্রকল্পটির আওতায় খরচ হয়েছে ৯১ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। এত কম বরাদ্দের কারণ প্রসঙ্গে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রকল্পটি ১০ বছরের পুরোনো।

২০১৫ সাল থেকে শুরু হয়ে আগামী জুন পর্যন্ত মেয়াদ আছে। এতেও বাস্তবায়ন সম্ভব নাও হতে পারে। ফলে সামান্য বরাদ্দ দিয়ে কোনোরকমে বাঁচিয়ে রাখা হচ্ছে। যাতে পরে সংশোধন বা মেয়াদ বাড়িয়ে নেওয়া যায়। একই অবস্থা রেলের পশ্চিমাঞ্চলীয় লেভেলক্রসিং গেটগুলোর পুনর্বাসন ও মান উন্নয়ন প্রকল্পেও। তবে এটি তিনবার সংশোধন করা হয়েছিল। আগামী অর্থবছরে জুটেছে এক লাখ টাকার বরাদ্দ। এটিও চলছে ১০ বছর ধরে।

এদিকে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এবং ইআইবির ঋণে বাস্তবায়ন হচ্ছে আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত ডুয়েলগেজ ডাবল রেললাইন রেলপথ নির্মাণ এ্বং বিদ্যমান রেলপথকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর প্রকল্পটি। এটির মোট ব্যয় ৪ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকা। সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ আছে ১৭৪ কোটি ৯১ লাখ টাকা। আগামী অর্থবছরের জন্য দেওয়া হয়েছে এক লাখ টাকা। এটি চলছে ১০ বছরের বেশি সময় ধরে। টেলিটক নেটওয়ার্ক বিটিএস সাইটের ডিসি পাওয়ার ব্যাকআপ সিস্টেমের ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে নেটওয়ার্ক সেবার মান উন্নয়ন প্রকল্পও পেয়েছে এক লাখ টাকার বরাদ্দ।

এ বিষয়ে সাবেক পরিকল্পনা সচিব মামুন-আল-রশীদ বলেন, উদ্দেশ্যমূলকভাবে এমন বরাদ্দ দিয়ে কোনোরকমে প্রকল্প বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা হতে পারে। যাতে আগামীতে সুযোগ এলেই ব্যয় বৃদ্ধি বা মেয়াদ বাড়িয়ে আবারও বরাদ্দ নেওয়া যায়। এভাবে প্রকল্প চালু রাখলে সংশ্লিষ্টদের অনেক ধরনের লাভ হয়ে থাকে। তবে বিষয়টি ভালোভাবে খতিয়ে দেখা উচিত। প্রয়োজন না থাকলে প্রকল্পগুলো বন্ধ করে দিলে ভবিষ্যতে এগুলোর পেছনে বাড়তি খরচের আশঙ্কা থাকে না।

নামমাত্র বরাদ্দ পাওয়া কয়েকটি প্রকল্প হলো, বারহাট্টা উপজেলায় শিশুপার্ক নির্মাণ। এতে বরাদ্দ তিন লাখ টাকা। কুষ্টিয়া জেলার গড়াই নদীর ওপর সেতু নির্মাণ প্রকল্পটিতে দেওয়া হচ্ছে এক লাখ টাকা। খুলনার ভৈরব নদীর তীর সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্প পাচ্ছে এক লাখ টাকা।

আরও আছে, লেবুখালী-রামপুর-মির্জাগঞ্জ সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্প পাচ্ছে আট লাখ টাকা। জামালপুর নকশিপল্লী প্রকল্পে পাচ্ছে এক লাখ টাকা। শেখ হাসিনা স্পেশালাইহজড জুট টেক্সটাইল মিলস এক লাখ টাকা। বিএমআর অব কেরু অ্যান্ড কোং বিডি লিমিটেড প্রকল্প পাচ্ছে এক লাখ টাকা। গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবন মান উন্নয়ন প্রকল্প পাচ্ছে এক লাখ টাকা। বৃহত্তর ফরিদপুরের চরাঞ্চলে গবাদিপশুর জাত উন্নয়ন প্রকল্পে পাচ্ছে এক লাখ টাকা এবং চর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট প্রজেক্টে দেওয়া হচ্ছে এক লাখ টাকা।

অর্থনীতি

পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, এবারের বাজেট দায়িত্বজ্ঞানহীন হবে না। এমন বাজেট হবে, যা আগামী অর্থবছরের জন্য বোঝা হবে না। আমরা শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারের বাজেট করছি। এজন্যই আগামী অর্থবছরে এডিপির আকার কমেছে।

রোববার জাতীয় অর্থনেতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সন্মেলন কক্ষে এ বৈঠক এবং ব্রিফিং হয়। এতে নতুন বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে অহেতুক ব্যয় কমানো হয়েছে। তবে আগামীতে আড়াই হাজার ডাক্তারসহ স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দেওয়া হবে। সেজন্য তখন স্বাস্থ্য খাতে পরিচালন বরাদ্দও বাড়বে। শিক্ষকদের কল্যাণ ফান্ডসহ বিভিন্ন খাতে দেনা পরিশোধে বরাদ্দ থাকছে। আগামী বাজেট হবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, রাজস্ব আদায় বাড়ানো, বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করে সব ধরনের ঋণের ফাঁদ থেকে বেরিয়ে আসা, বাজেট বাস্তবায়নে ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এবং টেকসই অর্থনীতির বাজেট।

এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা ওয়াহিদ উদ্দিন বলেন, আগামী অর্থবছরে এডিপি যাতে শুরু থেকেই বাস্তবায়ন করা যায়, সেটি নিয়ে এনইসিতে আলোচনা হয়েছে। সেই প্রচেষ্টা থাকবে।