অর্থনীতি

মোংলা ও চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে পণ্য পরিবহণে ভারতকে টনপ্রতি ২২০ টাকা ফি (ট্রান্সশিপমেন্ট ফি, সিকিউরিটি চার্জ, প্রশাসনিক চার্জ) দিতে হবে। এর বাইরেও প্রতি চালানের ডকুমেন্ট প্রসেসিং ফি ৩০ টাকা, কনটেইনার স্ক্যানিং ফি ২৫৪ টাকা এবং প্রতি কিলোমিটারে এসকর্ট চার্জ ৮৫ টাকা দিতে হবে। নির্দিষ্ট রুটের বাইরে অন্য রুটে ট্রানজিটের পণ্য পরিবহণ করা যাবে না।

সোমবার ভারতীয় পণ্য পরিবহণে ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্ট সংক্রান্ত একটি স্থায়ী আদেশ জারি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। স্থায়ী আদেশে ট্রানজিটের ফি-রুট নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।

স্থায়ী আদেশে বলা হয়েছে, ট্রানজিট অপারেটর হিসাবে তালিকাভুক্তির জন্য সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের মোংলা ও চট্টগ্রাম কাস্টমসে আবেদন করতে হবে। আবেদন যাচাই-বাছাই শেষে ফলাফল সন্তোষজনক হলে যোগ্য সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের ১০ হাজার টাকা অফেরতযোগ্য ট্রেজারি চালান, ১০ লাখ টাকার নিঃশর্ত ব্যাংক গ্যারান্টি এবং ৫০ লাখ টাকা রিস্ক বন্ড জমা দিতে হবে। ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্টের পণ্য সাত দিনের মধ্যে বাংলাদেশের ভৌগোলিক সীমানা অতিক্রমে ব্যর্থ হলে পণ্যের শুল্ক-করের জরিমানা অপারেটকে দিতে হবে। প্রাকৃতিক কারণে পণ্য নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছতে ব্যর্থ হলে বা যানবাহন নষ্ট হয়ে গেলে সংশ্লিষ্ট ভ্যাট কমিশনারেট অফিসকে বিস্তারিত জানিয়ে চিঠি দিতে হবে।

আদেশে আরও বলা হয়েছে, প্রতিটি ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্টের চালান স্ক্যানিং করা হবে। এরপর ইলেকট্রনিক সিল লক লাগানো হবে। স্ক্যানিং-এ অসঙ্গতি পাওয়া গেলে পণ্যের কায়িক পরীক্ষা করা হবে।

যেসব রুটে পণ্য পরিবহণ : মোট ১৬টি রুটে পণ্য পরিবহণ করা যাবে। এগুলো হলো, চট্টগ্রাম বন্দর-আখাউড়া-আগরতলা; মোংলা বন্দর-আখাউড়া-আগরতলা; চট্টগ্রাম বন্দর-তামাবিল-ডাউকি; মোংলা বন্দর-তামাবিল-ডাউকি; চট্টগ্রাম বন্দর-শেওলা-সুতারকান্দি; মোংলা বন্দর-শেওলা-সুতারকান্দি; চট্টগ্রাম বন্দর-বিবিরবাজার-শ্রীমন্তপুর; মোংলা বন্দর-বিবিরবাজার-শ্রীমন্তপুর; আগরতলা-আখাউড়া-চট্টগ্রাম বন্দর; আগরতলা-আখাউড়া-মোংলা বন্দর; ডাউকি-তামাবিল- চট্টগ্রাম বন্দর; ডাউকি-তামাবিল-মোংলা বন্দর; শেওলা-সুতারকান্দি-চট্টগ্রাম বন্দর; শেওলা-সুতারকান্দি-মোংলা বন্দর; শ্রীমন্তপুর-বিবিরবাজার-চট্টগ্রাম বন্দর এবং শ্রীমন্তপুর-বিবিরবাজার-মোংলা বন্দর।

অর্থনীতি

দেশে রেমিট্যান্সে এগিয়ে রয়েছে চার জেলা। প্রথম স্থানে রয়েছে ঢাকা।

এরপর যথাক্রমে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও সিলেট। সবচেয়ে কম প্রবাসী আয় এসেছে বান্দরবান, লালমনিরহাট ও রাঙ্গামাটি জেলায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রবাসী আয় সম্পর্কিত প্রতিবেদন পর্যালোচনা এমন তথ্য মিলেছে। এই তথ্য চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ এই ৯ মাসের।

জুলাই থেকে মার্চ- এই ৯ মাসে প্রবাসীরা দেশে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন এক হাজার ৬০৩ কোটি ৩ লাখ মার্কিন ডলার। ঢাকায় প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ৫২২ কোটি ৫৪ লাখ ডলার। চট্টগ্রাম জেলার প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ১১৬ কোটি ৭৬ লাখ ডলার, কুমিল্লা জেলার প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ৯৫ কোটি ২৪ লাখ ডলার। আর প্রবাসীদের শহর তথা বাংলাদেশের লন্ডনখ্যাত সিলেটের প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ৮৮ কোটি ৬৫ মার্কিন ডলার।

দেশের সবচেয়ে কম প্রবাসী আয় পাঠানো তিন জেলা হলো বান্দরবান, লালমনিরহাট ও রাঙ্গামাটি। উত্তরাঞ্চলের একাধিক জেলা ও পার্বত্য দুই জেলার প্রবাসীর সংখ্যা কম। এর প্রভাব পড়েছে প্রবাসী আয় পাঠানোর ক্ষেত্রেও।

যেসব এলাকার লোকেরা নিজ এলাকা থেকে বাইরে যেতে তুলনামূলক কম পছন্দ করেন বা করতেন এবং বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে কম সাহসী, সেসব এলাকার মানুষ প্রবাসে কম গেছেন।

অন্যদিকে, যেসব এলাকার মানুষের এ ধরনের প্রতিবন্ধকতা নেই এবং যেসব জেলার লোকেরা আগে থেকেই বিদেশে যান, সেসব জেলা থেকে প্রবাসে যাওয়ার হার বেশি।

আর এ কারণেই ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও সিলেট জেলায় বেশি প্রবাসী আয় আসে বলে মনে করেন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের মাইগ্রেশনবিষয়ক প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান।

তিনি বলেন, এক কোটিরও বেশি মানুষ দেশের বাইরে আছেন। এর মধ্যে বড় অংশ আছেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে। মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশেও কাজ করছেন তারা।

তিনি আরও বলেন, তথ্যে দেখা যায়, দেশের সব জেলা থেকে সমানভাবে মানুষ প্রবাসে যায় না। নির্দিষ্ট ১০ থেকে ১২টি জেলা থেকেই বেশির ভাগ মানুষ প্রবাসে যায়। আবার পার্বত্য চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, নীলফামারী ও লালমনিরহাটের মানুষ কম যায়।
শরিফুল হাসান জানান, কুমিল্লা জেলা থেকে এক মাসে যে সংখ্যক মানুষ বিদেশে গেছেন, তা কিছু জেলার গত ৫০ বছরে লোকজনের বিদেশে যাওয়ার সমান। এ কারণে প্রবাসী আয় পাঠানোর ক্ষেত্রেও এ সব জেলা পিছিয়ে আছে।

তিনি বলেন, উল্টো তথ্য দেখা যাবে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও সিলেটের মতো জেলাগুলোতে। তাদের এই প্রবাসে যাওয়া হঠাৎ করে হয়নি। দীর্ঘ সময় ধরে মানুষ বাইরে গেছে; এই বাইরে যাওয়াকে অনুসরণ করে অন্যরা।

তিনি আরও বলেন, যেসব কারণে নির্দিষ্ট জেলাগুলো থেকে মানুষ কাজের সন্ধানে বিদেশে কম যাচ্ছে, সেসব কারণ চিহ্নিত করে সমাধানে সরকার উদ্যোগও নিয়েছে। কিন্তু এর সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।

প্রবাসে যাওয়ার ক্ষেত্রে উন্নয়ন ও যোগাযোগ ভূমিকা রাখছে। যেসব এলাকা তুলনামূলক বেশি উন্নত, শিক্ষার হার বেশি, যোগাযোগ ভালো, সেসব এলাকার মানুষ বেশি সংখ্যক হারে দেশের বাইরে গেছে।

জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ- এই তিন মাসে প্রবাসে গেছেন তিন লাখ ২৩ হাজার ১০ জন। এর মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক কুমিল্লা থেকে। এই জেলা থেকে গেছেন ২৬ হাজার ১৯৬ জন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৭ হাজার ৬১৯ জন গেছেন চট্টগ্রাম থেকে। আর ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ১৫ হাজার ৯৩৯ জন, টাঙ্গাইল থেকে ১৩ হাজার ৫৫৭ জন, নোয়াখালী থেকে ১১ হাজার ৭৫০ জন বিদেশে গেছেন।

এই সময়ে সব চেয়ে কম সংখ্যক মানুষ প্রবাসে কাজের সন্ধানে গেছেন রাঙামাটি থেকে। এই জেলা থেকে ২২৭ জন বিদেশে গিয়েছেন। এরপর রয়েছে বান্দরবান ২৪০ জন, লালমনিরহাট ৪৪৪ জন ও খাগড়াছড়ি ‍৪৭৯ জন।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ জরিপে দেখা যাচ্ছে, যেসব এলাকার বেশি সংখ্যক মানুষ দেশের বাইরে গেছেন, সেখানে দারিদ্র্যের হারও কম। দারিদ্র্যের এ হার কমানো বা প্রবাসী আয় বাড়ানোর দুটি বিষয় একটি জায়গা থেকে উদ্ভূত।

এসব এলাকা চিহ্নিত করে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, বিদেশমুখীদের জন্য ঋণের ব্যবস্থা করা ও মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করা হচ্ছে। এমনটি দেখানো হয়েছে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ-পরিকল্পনায়।

অর্থনীতি

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল, খাদ্য, গ্যাস ও সারের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি সংকট সৃষ্টি হয় মার্কিন ডলারের। যে কারণে টাকার বিপরীতে বেড়ে যায় ডলারের দাম। ডলার ও পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি আমদানি ব্যয়কে উসকে দেয়। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন, সার ও খাদ্য আমদানির ক্ষেত্রে খরচ বেড়ে যায়। অপরদিকে সাশ্রয়ী মূল্যে এসব পণ্য বিক্রি করতে গিয়ে ভর্তুকিতে বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি হয়। অর্থ বিভাগের হিসাবে চলতি (২০২২-২৩) অর্থবছরে শুধু কৃষি, বিদ্যুৎ ও খাদ্যে অতিরিক্ত ভর্তুকি গুনতে হবে ২১ হাজার কোটি টাকা। পাশাপাশি ডলার মূল্যবৃদ্ধিসহ অতিরিক্ত অভ্যন্তীরণ ঋণের সুদ পরিশোধে বাড়তি ব্যয় হবে ৯ হাজার ৬৩৮ কোটি টাকা।

সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে ‘আর্থিক, মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময় হারসংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল’ এবং ‘বাজেট মনিটরিং ও সম্পদ কমিটির’ বৈঠকে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এ তথ্য। এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত অর্থ বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, চলতি ও আগামী উভয় বাজেটে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ভর্তুকি ও সুদ পরিশোধের ব্যয় মোকাবিলা করা। চলমান যুদ্ধের কারণে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধিতে বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি হয় ভর্তুকিতে। যদিও এখন পণ্যের দাম নিম্নমুখী। কিন্তু ২০২২ সালের জুনের পর সব ধরনের পণ্যের মূল্য অস্বাভাবিক হারে বাড়ে। ফলে সরকারকে একদিকে বেশি মূল্যে আমদানি করে সাশ্রয় মূল্যে বিক্রি করতে হচ্ছে। যে কারণে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি ভর্তুকি ব্যয় গুনতে হচ্ছে। এছাড়া অভ্যন্তরীণ ঋণ সুদ ব্যয় বেশি হওয়ায় এ খাতেও খরচ বেড়েছে।

জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবিএম মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, বাজেটে ভর্তুকি খাতে ব্যয় অনেক বেশি যাচ্ছে। এটি ধীরে ধীরে কমাতে হবে। এতে কিছুটা মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে। আর মূল্যস্ফীতি হলে নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো কিছুটা সমস্যায় পড়তে পারে। অবশ্য তাদের সুরক্ষার জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বাড়াতে হবে। তিনি সুদ ব্যয় প্রসঙ্গে বলেন, সার্বিকভাবে চলতি বাজেটে সুদ খাতে ব্যয় বাড়ছে। আর এ ব্যয়ের বড় অংশ যাচ্ছে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধে। বিশেষ করে বেশি সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে সঞ্চয়পত্রে। যদিও এ বছর সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়া কমানো হচ্ছে। এতে আগামীতে এ খাতে সুদ কিছুটা কমবে। এই অতিরিক্ত সুদ ব্যয় থেকে বেরিয়ে আসার জন্য অভ্যন্তরীণ খাত থেকে কম ঋণ গ্রহণ এবং বৈদেশিক খাত থেকে বেশি ঋণ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তার মতে, বৈদেশিক ঋণ রির্জাভের জন্য ভালো। বৈদেশিক ঋণের প্রয়োজন আছে। বর্তমান জিডিপির তুলনায় বৈদেশিক ঋণের অনুপাত অন্যান্য দেশের তুলনায় ভালো অবস্থানে আছে। এটি নিয়ে চিন্তার কারণ নেই।

জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে খাদ্য, কৃষি ও বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি বরাদ্দ দেওয়া হয় ৩৯ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা। এরমধ্যে খাদ্যে ছয় হাজার ৭৪৫ কোটি, বিদ্যুতে ১৮ হাজার কোটি এবং কৃষিতে ১৫ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই তিন খাতের ভর্তুকিতে আরও ব্যয় হবে ২১ হাজার কোটি টাকা। তাহলে এসব খাতে মোট ভর্তুকি দাঁড়াবে ৬০ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা।

আর্থিক, মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময় হারসংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল বৈঠকে বলা হয়, বিশ্ববাজারে সারের মূল্য প্রতি কেজিতে ৮১ টাকা পর্যন্ত উঠে। সেই দামে আমদানি করে কৃষককে দেওয়া হচ্ছে কেজি ২০ টাকা দরে। ১ আগস্টের আগে প্রতি কেজি ইউরিয়া সার কৃষককে দেওয়া হয় ১৬ টাকা দরে। বেশি মূল্যে কিনে কম মূল্যে কৃষককে সার দেওয়ায় এ খাতে অস্বাভাবিক ভর্তুকি ব্যয় বেড়েছে।

এদিকে ভর্তুকি কমাতে বিদ্যুতের মূল্য সমন্বয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ ফেব্রুয়ারিতে সব ধরনের গ্রাহকের বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়। এর আগে জানুয়ারিতে খুচরা ও পাইকারি পর্যায়ে দাম ৫ শতাংশ বাড়ানো হয়। নতুন ঘোষণায় ফেব্রুয়ারিতে আবাসিক এবং শিল্প-কলকারখানায় বিদ্যুতের দাম বাড়ছে অন্তত ৫ শতাংশ। আর পাইকারিতে বিতরণ কোম্পানিগুলোর জন্য দাম বাড়ছে অন্তত আট শতাংশ। সরকারের আগেই আভাস দিয়েছিল যে, এখন থেকে প্রতিমাসেই বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য সমন্বয় হতে পারে। এই সমন্বয়ের পরও কেন এ খাতে ভর্তুকি বাড়ছে সে প্রশ্নের জবাবে অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, শেষ সময় এসে সমন্বয় করা হচ্ছে। কিন্তু অর্থবছরের শুরুতে সমন্বয় না হওয়ায় ভর্তুকি বেড়েছে অস্বাভাবিক ভাবে। এদিকে বিশ্ববাজারের সঙ্গে মিল রেখে জ্বালানি তেলের দামও সমন্বয়ের একটি প্রক্রিয়া চলছে।

এদিকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রায় ১১ লাখ ৮০ হাজার টন খাদ্য আমদানির চুক্তি করা হয়। যদিও বাজেটে আমদানির লক্ষ্য ছিল ৭ লাখ টন। এজন্য খাদ্য খাতে ভর্তুকি বাড়ছে।

এদিকে চলতি অর্থবছরে ঋণের সুদ পরিশোধে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৮০ হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা। এ বছরই আরও নয় হাজার ৬৩৮ কোটি টাকা বেশি গুনতে হবে সুদ ব্যয়ে। সংশ্লিষ্টদের মতে, এই ব্যয়ের বড় অংশ যাবে অভ্যন্তরীণ সুদ ব্যয়ে। বিশেষ করে সঞ্চয়পত্র খাতে। বর্তমান ব্যাংকের আমানতের সুদ হার চার থেকে সাড়ে চার শতাংশ। কিন্তু সঞ্চয়পত্রে সর্বোচ্চ সুদ হার সাড়ে ১১ শতাংশ পর্যন্ত বহাল আছে। ফলে ব্যাংকের আমানতকারীরা এখন সঞ্চয়পত্র খাতে বিনিয়োগ বেশি করছেন। যে কারণে এখনে সুদ ব্যয় অনেক বেড়েছে। অর্থ বিভাগের মতে, সঞ্চয়পত্রকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি টুলস হিসাবে দেখা হচ্ছে। যে কারণে এখানের সুদ হার অনেক বেশি রাখা হয়েছে। তবে আগামী অর্থবছরে সে সুযোগ বন্ধ করা হচ্ছে। এখাত থেকে মোট ঋণের মাত্র ২০ শতাংশ নেওয়া হবে। ফলে সুদ ব্যয়ও কমবে।

অর্থনীতি

বৈদেশিক বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে, তবে কৃষিতে উৎপাদন সন্তোষজনক হলেও তার প্রভাব নেই বাজারে। দেশি-বিদেশি নানা প্রভাবকের কারণে মূল্যস্ফীতি লাগাম ছাড়া।

যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে মানুষের সঞ্চয়ে। একমাত্র প্রবাসী আয়ই পথ দেখাচ্ছে—ঘুরে দাঁড়াচ্ছে রেমিট্যান্স। এই সময়ে প্রবাসগামী মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য বলছে, বিদায়ী মার্চ মাসে প্রবাসী আয় এসেছিল ২০১ কোটি ডলার। টাকার অংকে যা ২১ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১০৭ টাকা ধরে)। একই সময়ে প্রবাসে গেছেন এক লাখ ৯ হাজার ৫০২ জন। প্রবাসে যাওয়া জনশক্তি বা দেশে আসা প্রবাসী আয় দুটোই বিএমইটি বা ব্যাংকিং খাতের মতো দুটো ফর্মাল চ্যানেলে। এর বাইরে ইনফর্মাল চ্যানেলে অর্থ যেমন এসেছে; বিপুলসংখ্যক মানুষও সরকারের হিসাবের বাইরে বিভিন্নভাবে কাজের সন্ধানে বিদেশে গেছেন। যা সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের হিসাবে নেই।

প্রবাসে যাওয়া জনশিক্ত ও প্রবাস থেকে পাঠানো বৈদেশিক আয় দুটোই সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে বেশি। অর্থনীতির প্রধান তিন ভিত্তির অন্যতম প্রধান ভিত্তি প্রবাসী আয়ের এই ইতিবাচক খবরে স্বস্তির বার্তা দিচ্ছে।

চলতি ২০২৩ সালের তিন মাস জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চে প্রবাসী আয় এসেছে যথাক্রমে ১৯৫ কোটি ৮৯ ডলার, ১৫৬ কোটি ৫ লাখ ডলার ও ২১০ কোটি ৭৭ লাখ ডলার। অর্থ বছরের হিসাবে ২০২২-২৩ এর জুলাই-মার্চ ৯ মাসে প্রবাসী আয় এসেছে এক হাজার ৬০৩ কোটি তিন লাখ ডলার। আগের ২০২১-২২ অর্থ বছরে এসেছিল দুই হাজার ১০৩ কোটি ১৬ লাখ ডলার এবং করোনা মহামারির বছর ২০২০-২১ অর্থ বছরে এসেছিল দুই হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ ডলার।

করোনা মহামারিতে প্রবাসী আয় বেড়ে যায়। পরের বছর করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রবাসী আয় কমতে থাকে। এ সময় প্রবাসী আয় বৃদ্ধিতে সরকার বিভিন্ন রকম উদ্যোগ নিলে প্রবাসী আয় ঘুরে দাঁড়াতে থাকে। গত চার মাসে প্রবাসী আয় বাড়তে থাকে। সর্বশেষ মার্চ মাসে অব্যাহত এ ইতিবাচক ধারার প্রতিফলন দেখা যায়।

করোনা পরবর্তী প্রবাসী আয়ের মতো প্রবাসে যাওয়া মানুষের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। করোনা মহামারির মধ্যে অর্থনীতি সংকুচিত হয়, করোনা পরবর্তী বিশ্বজুড়ে অর্থনীতির পুনরুদ্ধার কার্যক্রম শুরু হয়। চাহিদা বাড়ে বিদেশি জনশিক্তর। বাংলাদেশ মধ্যপ্রাচ্য, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের জনশক্তির যোগানদাতা। এসব দেশের উন্নয়নে বাংলাদেশের অদক্ষ-আধা দক্ষ জনশক্তি দীর্ঘদিন ধরেই অবদান রাখছে। করোনা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশিদের প্রবাসে যাওয়ার হারও বেড়ে যায়। বিএমইটি তথ্যতে বিষয়টি ফুটে ওঠে।

তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে প্রবাসে যান ১১ লাখ ৩৫ হাজার ৮৭৩ জন। এটা একক বছর হিসাবে সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষের প্রবাসে যাওয়া। আগের ২০২১ সালে যায় ৬ লাখ ১৭ হাজার ২০৯, করোনা মহামারিতে বিপর্যস্ত বছর ২০২০ সালে প্রবাসে যায় ২ লাখ ১৭ হাজার ৬৬৯ জন। আগের বছর ২০১৯ সালে প্রবাসে গিয়েছিলেন ৭ লাখ ১৫৯ জন।

প্রবাসীদের আয় বৃদ্ধিতে মার্কিন ডলারের বিনিময় হার একরেটে যাওয়াকে গুরুত্ব দেন ড. আতিউর রহমান। তিনি বলেন, এক রেট না হওয়ার কারণে বাজারে কিছুটা অস্থির হওয়ার সুযোগ থাকে। এই অস্থিরতা রোধে উদ্যোগ নিতে হয়েছে।

প্রবাসী আয় বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। এগুলো কার্যকর করতে হবে। পর্যবেক্ষণ জোরদার করার তাগিদ দেন তিনি।

খাদ্য উৎপাদনে নানা প্রচেষ্টার ফলে দেশের পর্যাপ্ত খাদ্য উৎপাদন হচ্ছে। কিন্তু বাড়তি উৎপাদন ব্যয়ের কারণে খাদ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। বাড়ছে দানাদার খাদ্যের বাইরে অন্যান্য খাদ্যের দামও। সর্বশেষ মার্চ মাসের মূল্যস্ফীতি উঠেছে ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশে । মূল্যস্ফীতির আঘাত মানুষের সঞ্চয়ে লেগেছে। মানুষ সঞ্চয় ভেঙে বাড়তি ব্যয় মেটাচ্ছে। সঞ্চয়পত্র কেনার বিপরীতে মানুষ বেশি বেশি ভাঙছে।

রপ্তানি আয় এখনো ইতিবাচক ধারায় রয়েছে। চলতি অর্থ বছরের জুলাই-মার্চ ৯ মাসে রপ্তানি আয় হয়েছে ৪১ দশমিক ৭২ বিলিয়ন ডলার। এ সময়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। আগের ফেব্রুয়ারি মারে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৯ দশমিক ৫৬ শতাংশ। তথ্য বলছে, রপ্তানি আয়ে এখনো ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকলেও তা কমে আসছে।

এ সময়ে ডলারের চাহিদা কমাতে আমদানি নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু কার্যত কোনো কাজে আসছে না। চলতি অর্থ বছর ২০২২-২৩ এর প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) এক হাজার ৩৮২ কোটি ৮০ লাখ (১৩ দশমিক ৮২ বিলিয়ন) ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছে। তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থ বছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) ৪ হাজার ৮৭৯ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে। এর বিপরীতে রপ্তানি হয়েছে তিন হাজার ৪৯৬ কোটি ৬০ লাখ ডলারের পণ্য।

একমাত্র প্রবাসী আয়ই ইতিবাচক ধারায় আছে। অবশ্য এর জন্য সরকারকে নানা রকম উদ্যোগ নিতে হয়েছে। প্রবাসী আয় বাড়াতে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে সেগুলো—বৈধ পথে প্রবাসী আয় পাঠানোর বিপরীতে নগদ প্রণোদনা ২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২ দশমিক ৫ শতাংশ করা, প্রবাসীদের সিআইপি সম্মাননা দেওয়া, প্রবাসী আয় বিতরণ প্রক্রিয়া সম্প্রসারণ ও সহজ করা, অনিবাসী বাংলাদেশিদের জন্য বিনিয়োগ ও গৃহায়ণ অর্থায়ন সুবিধা দেওয়া, ফিনটেক পদ্ধতির আওতায় আন্তর্জাতিক মানি ট্রান্সফার অপারেটরকে বাংলাদেশের ব্যাংকের সঙ্গে ড্রয়িং ব্যবস্থা স্থাপনে উদ্বুদ্ধ করা ও রেমিট্যান্স পাঠাতে ব্যাংক বা এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোর চার্জ ফি মওকুফ করা হয়েছে।

এছাড়া সেবার বিনিময়ে দেশে প্রবাসী আয় আনার ক্ষেত্রে ফরম ‘সি’ পূরণ করার শর্ত শিথিল করার ব্যবস্থা করা হয়। ঘোষণা ছাড়াই সেবাখাতের উদ্যোক্তা ও রপ্তানিকারকদের ২০ হাজার মার্কিন ডলার দেশীয় মুদ্রা দেশে আনার সুযোগ দেওয়া হয়।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এসব উদ্যোগের ফলে প্রবাসী আয় যেমন বাড়ছে। যে হারে প্রবাসে যাওয়া মানুষের সংখ্য বাড়ছে তাতে প্রবাসী আয় বৃদ্ধির ধারাকে আরও টেকসই করবে।

অর্থনীতি

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় আগামী বাজেটে মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রা বিনিময় হার স্থিতিশীলতায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলেছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ।

এছাড়া ভর্তুকিতে মাত্রারিক্ত ব্যয়ের ব্যাপারেও সতর্ক করা হয়েছে। পাশাপাশি জোর দিতে বলা হয় কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও বিনিয়োগ বাড়াতে।

সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে প্রাক-বাজেট বৈঠকে এসব বিষয়সহ একগুচ্ছ প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এগুলো নিয়ে এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে অর্থ বিভাগ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

সূত্রমতে, চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের আকার বেড়ে দাঁড়াতে পারে প্রায় ৭ লাখ ৬৯ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ চলতি বাজেটের তুলনায় এর আকার প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকা বাড়তে পারে। এর মধ্যে ভর্তুকির আকার এক লাখ কোটি টাকার বেশি।

আগামী অর্থবছরের বাজেট নিয়ে অর্থ বিভাগের এই প্রাক্কলন আজ বাজেট প্রাক্কলন পরীক্ষাসংক্রান্ত কারিগরি কমিটির সভায় উপস্থাপন করা হবে।

এ সভায় অনুমোদনের পর আগামী ৫ এপ্রিল অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় বাজেট ব্যবস্থাপনা ও সম্পদ কমিটির বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে। ৯ মে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় এক সভায় তা চূড়ান্ত হবে। আর পহেলা জুন জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করা হবে।

জানতে চাইলে অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর যুগান্তরকে বলেন, ব্যাংক ঋণের সুদ ও মুদ্রা বিনিময় হার বাড়ানো এবং টাকা ছাপানো বন্ধ না হলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। বর্তমান সরকার টাকা ছাপিয়ে বাজেটের ভর্তুকি দিচ্ছে। সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তিনি আরও বলেন, পুরো সামষ্টিক অর্থনীতি ঝুঁকির মধ্যে আছে, যা আমাদের প্রবৃদ্ধি ও বিনিয়োগকে বাধাগ্রস্ত করছে। সরকার একদিকে মূল্যস্ফীতি কমাতে পারছে না, কারণ টাকা ছাপাতে হচ্ছে।

অন্যদিকে ঋণের সুদের হারে ক্যাপ দিয়ে রেখেছে এবং ডলারের সংকট থেকে বের হয়ে আসতে পারছে না। আর ডলার সংকট যতদিন থাকবে, পণ্যের সরবরাহ পর্যাপ্ত হবে না। বিনিয়োগ ও প্রবৃদ্ধি এবং মূল্যস্ফীতি-কোনোটাই নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না।

প্রতিবছরই বাজেট প্রণয়নের আগে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে পৃথকভাবে ধারাবাহিক বৈঠক করে অর্থ বিভাগ। এটিকে প্রাক-বাজেট বৈঠক বলা হয়। ওই বৈঠকে মূলত মন্ত্রণালয়গুলোর সম্ভাব্য ব্যয়ের আকার চূড়ান্ত করা হয়। পাশাপাশি কোন খাতে বেশি গুরুত্ব দেওয়া দরকার, কী ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে-এসব বিষয়ে সুপারিশ নেওয়া হয়।

সম্প্রতি শেষ হওয়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট বৈঠকে উঠে আসা প্রস্তাবগুলো নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে অর্থ বিভাগ। এর মধ্যে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাব মোকাবিলা, অর্থনৈতিক সংকট, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি ও ডলার সংকট নিয়ে অনেক প্রস্তাব আসছে।

সেখানে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আগামী বাজেটে আরও দিকনির্দেশনা রাখতে বলা হয়। এছাড়া অভ্যন্তরীণ খাদ্যশস্য উৎপাদন বাড়াতে বলা হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ে কৃষকের কাছ থেকে ধানচাল সংগ্রহ ও ক্রয় আরও জোরদার এবং কৃষিতে ভর্তুকি বাড়িয়ে ৩০ হাজার কোটি টাকা করার সুপারিশ করেছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো। যদিও চলতি অর্থবছরে কৃষিতে ১৬ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি রয়েছে।

এছাড়া আগামী অর্থবছরে ভর্তুকি ও কর প্রণোদনার মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে রাখার উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে। প্রস্তাবে আরও বলা হয়, মূল্যস্ফীতির কারণে প্রবৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। আগামী বাজেটে গুরুত্ব কোনটি পাবে-মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ না প্রবৃদ্ধির ধারা বজায় রাখা, উভয়ের মধ্যে যে কোনো একটি অগ্রাধিকার দিতে হবে।

এছাড়া ব্যাংক খাত নিয়েও সেখানে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে বর্তমান ব্যাংক সুদহারের ওপর সরকার ক্যাপ বসিয়ে রাখার কারণে এটি বাড়ছে না। সেখানে বলা হয়, ব্যাংকের সুদহার মূল্যস্ফীতি থেকে কম হলে সঞ্চয় হবে না। বর্তমান মূল্যস্ফীতির চেয়ে ব্যাংক সুদহার কম। এজন্য ব্যাংকের সুদহার পুনর্গঠন করতে হবে।

মন্ত্রণালয় ও বিভাগের দেওয়া প্রস্তাবের মধ্যে আরও আছে-বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি সহনীয় পর্যায়ে রাখা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানো, কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা, সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি ও ব্যক্তি আয়করমুক্তসীমা ৪ লাখ টাকা নির্ধারণ। এছাড়া জাতীয় বাজেটে দরিদ্র জনগণকে গুরুত্ব দিয়ে মহামারি-পরবর্তী দারিদ্র ব্যবস্থাপনার দিকে নজর দেওয়া এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এসএমই খাতে জোর দিতে বলা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, নানা কারণে আগামী বাজেট সরকারের কাছে বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কারণ, বর্তমান সরকারের তৃতীয় মেয়াদে এটি হবে শেষ বাজেটে। পাশাপাশি এই বাজেটে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফ-এর ঋণ প্রভাব থাকবে। সংস্থার শর্তমতে, কর জিডিপির অনুপাত দশমিক ৫ শতাংশ বাড়ানোর এই উদ্যোগ নতুন বাজেটে থাকতে হবে। ফলে অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে আইএমএফ-এর শর্ত পালন করাও কঠিন হবে। এরই মধ্য দিয়ে সরকারকে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য ঠিক করতে হবে।

সংশ্লিষ্টদের আরও অভিমত, চলতি বাজেটে ২০ থেকে ২৪ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি হবে। এ প্রেক্ষাপটে আসন্ন বাজেটে ব্যয়ের পরিমাণ বড় ধরনের বাড়ানো উচিত হবে না। এ বছর যে রাজস্ব আহরণের হার, সেটি খুব বেশি বাড়ানো যাবে না।

অর্থনীতি

প্রকল্প অনুমোদনে বিলম্ব হওয়ায় উন্নয়ন সহযোগীদের ৩ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৩৬ হাজার ৩০০ কোটি টাকার ঋণ আটকে আছে। আটটি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এ অর্থ দেওয়ার কথা। এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্প অনুমোদন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার উদ্যোগ নিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। এর অংশ হিসাবে আজ আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন পরিকল্পনা সচিব সত্যজিত কর্মকার। ঋণদাতা সংস্থা হলো-বিশ্বব্যাংক এবং জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)। জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান রোববার বলেন, বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা বৈদেশিক অর্থ আছে এমন প্রকল্প সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে অনুমোদন করে দিচ্ছি। আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার পরই বিস্তারিত জানা যাবে। তিনি বলেন, আমাদের এখন বৈদেশিক অর্থায়ন দরকার। সেখানে প্রতিশ্রুতি আছে এমন প্রকল্প দেরি করাটা যৌক্তিক নয়।

সূত্র জানায়, মূলত চলমান সংকটের কারণে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা নিয়মিত না হওয়ায় কাজের গতি মন্থর হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রকল্পগুলোর সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (আরডিপিপি) যথাসময়ে পাঠাচ্ছে না মন্ত্রণালয় ও বিভাগ।

পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, প্রকল্প প্রস্তাব পাওয়ার পর ৫৫ দিনের মধ্যে অনুমোদনের প্রক্রিয়া শেষ করার নিয়ম। কিন্তু প্রকল্পগুলোর সম্ভাব্যতা যাচাই সঠিকভাবে না করায় মন্ত্রণায় ও বিভাগগুলো পুনর্গঠিত ডিপিপি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠাতে পারেনি।

ইআরডি সূত্র জানায়, হায়ার এডুকেশন অ্যাক্সিলারেশন ট্রান্সফরমেশন প্রজেক্ট বাস্তবায়নে বিশ্বব্যাংক ১৯ কোটি ১০ লাখ ডলার বা প্রায় ২ হাজার ১০০ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন দিয়েছে। এছাড়া সড়ক নিরাপত্তা প্রকল্পের জন্য ৩৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার বা প্রায় ৩ হাজার ৯৩০ কোটি টাকা; ‘অ্যাক্সিলারেটিং ট্রান্সপোর্ট অ্যান্ড ট্রেড কানেকটিভিটি ইন ইস্টার্ন সাউথ এশিয়া-বাংলাদেশ ফেইজ-১’ প্রকল্পের জন্য ৭৫ কোটি ৩৪ লাখ ডলার বা প্রায় ৮ হাজার ২৮৭ কোটি টাকা এবং ‘অভিযোজন ও দুর্বলতা হ্রাসের জন্য স্থিতিস্থাপক পরিকাঠামো’ প্রকল্পে ২৫ কোটি ডলার বা প্রায় ২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন করেছে বিশ্বব্যাংক। ২০২১ সালের জুন থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এসব ঋণ অনুমোদন দেওয়া হয়। এর মধ্যে শুধু ‘অভিযোজন এবং দুর্বলতা হ্রাসের জন্য স্থিতিস্থাপক পরিকাঠামো’ প্রকল্পটি সম্প্রতি অনুমোদন দিয়েছে একনেক।

বিশ্বব্যাংকের বাইরে জাইকার অর্থায়ন করা তিনটি প্রকল্পের অনুকূলে ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন বা প্রায় ১৪ হাজার ৩০০ কোটি টাকার ঋণ এখনো চুক্তি পর্যায়ে যেতে পারছে না। প্রকল্পগুলো হলো-মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প (৮০ কোটি ডলার); চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প (৪২ কোটি ৩৫ লাখ ডলার) এবং জয়দেবপুর থেকে ঈশ্বরদী পর্যন্ত ডুয়েল গেজ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প (৩ কোটি ২১ লাখ ডলার ঋণ)। ইআরডি সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, সাধারণত নিয়ম হলো যে কোনো প্রকল্পে বৈদেশিক ঋণ থাকলে চুক্তির আগে সেটি একনেকে বা যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে অনুমোদন হতে হয়। অনুমোদনের পরই ঋণ চুক্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়ে থাকে।

সূত্র আরও জানায়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে ভাসমান সুদহার বর্তমানে ঊর্ধ্বমুখী। এর মধ্যে ছয় মাসের এসওএফআর সুদহার ৪ শতাংশের বেশি পড়ে যায়। ফলে সরকার ভাসমান সুদহারে ঋণ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে উন্নয়ন প্রকল্পের অনুমোদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়ায় সরকার নমনীয় ঋণও কাজে লাগাতে পারছে না।

অর্থনীতি

রমজান মাস এলেই দেশে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।

অধিকাংশ নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। রমজান মাস আসায় দাম বাড়তিতে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। নিত্যপণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে, চাল, ডাল, আটা, তেল, চিনি, পেঁয়াজ, মসলা ও বিভিন্ন সবজি। এসব পণ্যের দাম এক বছরের ব্যবধানে ১১ শতাংশ থেকে ১৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। তবে সরকারকে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে পণ্যে দাম আছে কিনা সেটা নিশ্চিত করতে হবে৷ এজন্য সরকার যে পদক্ষেপ নিয়েছেন সে সিস্টেমকে আরও যুগোপযোগী করতে হবে। নজরদারি আরো শক্তিশালী করতে পারলে বাজার দর কিছুটা স্বস্তিতে থাকবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

এদিকে পণ্যের লাগামহীন দাম বাড়ায় চরম সংকটে পড়েছে নিম্নবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার। রোজগার না বাড়ায় পরিবার নিয়ে শহরে টিকে থাকাটাই দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদের। দাম বাড়ার বিষয়ে সরকার আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার কথা বললেও ভোক্তারা অভিযোগ করছেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ‘সিন্ডিকেট বা জোট’ করে দাম বাড়াচ্ছেন। সরকার তাদের শক্ত হাতে দমন করছে না। সাধারণ মানুষ অসহায়। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলার সংকট ও এলসি করতে না পারায় পণ্যের দাম বেড়েছে। এছাড়া পণ্যের দাম বাড়ায় কেনাবেচাও কমে গেছে। কারণ, স্বল্প আয়ের মানুষ কষ্টে আছেন।
১৯ মার্চ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের সভায় উপস্থাপিত একটি প্রতিবেদনেও বলা হয়, এবার রোজায় মূল্যের ঊর্ধ্বগতি বিবেচনায় গত রমজানের তুলনায় সব অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের চাহিদা ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কম থাকবে।

শনিবার (২৫ মার্চ) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি মোটা চাল ৪৬-৫০ টাকা, খোলা আটা ৫৫ থেকে ৫৮ ট্কা, প্যাকেট আটা ৬৫ টাকা, ময়দা ৫৮ থেকে ৬৫ টাকা, তেল ১৮০ থেকে ১৮৫ টাকা, চিনি ১১৫ থেকে ১২০ টাকা, ডাল ৯৫ থেকে ১৩০ টাকা, ছোলা ৮০ থেকে ৯০ টাকা, আলু ২৫ টাকা, রসুন ১০০ থেকে ১২০ টাকা, শুকনা মরিচ ৩৮০ থেকে ৪২০ টাকা, পেঁয়াজ ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, হলুদ ২০০ থেকে ২৪০ টাকা, লবণ ৩৮ থেকে ৪২ টাকা, ডিম ( হালি) ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা, খেজুর ( নিন্স ও মাঝারি মানের) ১৮০ থেকে ৪৫০ টাকা, রুইমাছ ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, গরুরু মাংস ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা এবং খাশির মাংস ১১০০ থেকে ১১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এর এক বছর আগে অর্থাৎ গত বছর (২০২২) রোজার সময় প্রতি কেজি মোটা চাল ছিলো ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা, খোলা আটার দাম ছিল ৩৬ থেকে ৩৬ টাকা, ময়দা ৪৬ থেকে ৫০ টাকা, সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৫৮ থেকে ১৬৫ টাকা, চিনি প্রতি কেজি ৭৮ থেকে ৮০ টাকা, ডাল ৯৫ থেকে ১২০ টাকা, ছোলা ৭০ থেকে ৭৫ টাকা, আলু ২০ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, রসুন ৫০ থেকে ৬০ টাকা, শুকনা মরিচ ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, হলুদ ২০০ থেকে, ২৩০ ৫ কাটা, লবণ ২০ থেকে ৩৫ টাকা, ডিম ( হালি) ৩২ থেকে ৩৫ টাকা, রুইমাছ ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা, ব্রয়লার মুরগী ১৭০ থেকে ১৭৫ টাকা, গরুরু মাংস ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা, খাসির মাংশ ৯০০ থেকে এক হাজার টাকা।

অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে আটার দাম বেড়েছে ৬৫ দশমিক ৭১ শতাংশ, চালের দাম বেড়েছে ১১ শতাংশ, ময়দা দাম বেড়েছে ৪৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ, ডালের দাম ৩৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ, তেলের দাম বেড়েছে ১৭ দশমিক শূন্য ৪৪ শতাংশ, ছোলার দাম বেড়েছে ২৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ, আলুর দাম ২৫ শতাংশ, এক হালি ডিমের দাম ৫০ শতাংশ, নিম্ন ও মাঝারি মানের খেজুরের দাম ১২ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়েছে।

মসলার মধ্যে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৩৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ, রসুনের দাম ১৪০ শতাংশ, শুকনা মরিচের দাম ১৩৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ, হলুদের দাম ২০ শতাংশ, লবণের দাম ৪০ শতাংশ বেড়েছে।

এছাড়া রুই মাছের দাম কেজিতে ৮০ শতাংশ, খাসির মাংসের দাম ২৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ, গুরুর মাংশের দাম ২৩ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ এবং ব্রয়লার মুরগির দাম ৭৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ বেড়েছে।

একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন ইমন সারোয়ার। রাজধানীর শ্যামবাজারে বাজার করতে এসেছেন৷ নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের হাতে আমরা জিম্মি। তারা যখন তখন ইচ্ছেমতো দাম বাড়ান। এখানে জনগণের করার কিছু নেই। আমরা হয়তো আন্দোলন করতে পারি। কিন্তু তাহলে সরকারের কাজটা কী? সরকারকে বাজার ব্যবস্থাপনায় আরও মনোযোগ দিতে হবে।

পুরান ঢাকার কয়েকজন দিনমজুর ও রিকশাচালকের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, ঈদ ছাড়া গরু বা খাসির মাংস খেতে পারি না। গত কোরবানির ঈদে গরুর মাংস খেয়েছি। আবার সামনে ঈদ আসছে। তখন ফের খাবো। দাম কম থাকায় বউ-বাচ্চাদের অন্তত ব্রয়লার মুরগি খাওয়াতে পারতাম। এখন তো সেটাও পারছি না। যে ডিম ১০০ টাকা ডজন কিনতাম, সেই ডিম এখন ১৫০ টাকা ডজন কিনতে হচ্ছে। দিনে যা রোজগার করি বাসা ভাড়া দেওয়ার পর এখর আর বাজার খরচ খোগাতে পারছি না। আগের তুলনায় ২ ঘণ্টা বেশি পরিশ্রম করি। তারপরও সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভোজ্যতেল, চিনি, গম, মসুর ডাল ও ছোলার সরবরাহ আমদানি নির্ভর। এসব পণ্যের দাম বিশ্ববাজারে বেড়েছে। আবার মার্কিন ডলারের দাম বাড়ায় আমদানির খরচ বেড়েছে। গত বছর রোজার আগে প্রতি ডলারের দাম ছিল ৮৬ টাকা, যা এখন ১০৫ টাকার বেশি। ডলারের দামের কারণে গবাদিপশু, মুরগি ও মাছের খাবারের দাম অনেকটাই বেড়েছে। এতে তাদের উৎপাদন খরচ বেড়েছে।

এছাড়া মূল্যবৃদ্ধির জন্য জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে দেওয়া, গ্যাস ও বিদ্যুতের বাড়তি দামের কারণে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়াকেও দায়ী করা হচ্ছে। জ্বালানি মন্ত্রণালয় বারবার বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়াচ্ছে। গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে তিন দফায় ১৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে বিদ্যুতের দাম। জানুয়ারিতে গ্যাসের দাম গড়ে ৮২ শতাংশ বাড়ানো হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্ববাজারে মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে বাজার ব্যবস্থাপনার ঘাটতিও বাড়তি দামের কারণ। যেমন গত ২৬ ফেব্রুয়ারি চিনির আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ কমানো হয়। কিন্তু বাজারে দাম কমেনি। টিসিবি বলছে, এক মাসে দাম উল্টো ৫ টাকা বেড়েছে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের একটি প্রতিবেদনে ১৯ মার্চ জানায়, দেশে ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ খামারের আকারভেদে প্রতি কেজিতে ১৩৫ থেকে ১৬০ টাকা। এটা সর্বোচ্চ ২০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হওয়া উচিত। কিন্তু বাজারে দাম অনেক বেশি, প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়৷

এদিকে পণ্যের উচ্চমূল্যের বাজারে সাধারণ মানুষদের একটু কষ্ট কমানোর জন্য সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে। যেমন, নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য খোলাবাজারে বিক্রি (ওএমএস) কর্মসূচির আওতায় চাল ও আটা বিক্রি করছে। সেটা কিনতে দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। অনেকে না কিনতে পেরে ফিরেও যান। এছাড়া সরকার এক কোটি পরিবারকে পরিবার বা ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে প্রতি মাসে ভর্তুকি মূল্যে দুই কেজি ডাল, এক কেজি চিনি ও দুই লিটার সয়াবিন তেল দেয়। রোজায় এক কেজি খেজুর (শুধু ঢাকায়) ও এক কেজি ছোলাও দেওয়া হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সরকারের এ উদ্যোগ ভালো। তবে তা পর্যাপ্ত নয়। আরও বেশি পরিবারের এ সহায়তা দরকার। কারণ, করোনাকালের আগের হিসাবেই দেশে এক কোটির মতো পরিবার দারিদ্র্যসীমার নিচে ছিল। আরও এক কোটির মতো পরিবার দারিদ্র্যসীমার সামান্য ওপরে বাস করে। যেকোনো সংকটে তারা বিপাকে পড়ে যায়। আর পরিবার কার্ড বিতরণে নানা অনিয়মের অভিযোগও রয়েছে।

এ বিষয়ে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক চেয়ারম্যান ড. গোলাম রহমান বলেন, দেড় দশকে দেশে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন), মাথাপিছু আয় বেড়েছে, দারিদ্র্যের হার কমেছে। তবু চার কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে রয়ে গেছে। নিম্নমধ্যবিত্তের প্রকৃত আয় খুব একটা বাড়েনি। অধিকাংশ আয়ই বেড়েছে উচ্চবিত্তের। ফলে দেশে দিন দিন আয়বৈষম্য বাড়ছে। এ রকম পরিস্থিতিতে মূল্যস্ফীতি সাধারণ মানুষের জন্য কাল হয়ে আসে।

তিনি বলেন, চাহিদা যদি বেশি হয়, তখন বাজারে সরবরাহ যদি না বাড়ে তাহলে দাম বাড়ে। এটা চিরাচরিত নিয়ম। রোজার সময় এক শ্রেণির ক্রেতা রোজার শুরুতে প্রয়োজনেরও খুব বেশি পণ্য ক্রয় করে। এর ফলে বাজারে বাড়তি চাপ সৃষ্টি হয় এবং দাম বাড়ে। এছাড়া ব্যবসায়ীদের লাভ করার প্রবনতা বেশি। আর ব্যবসায়ীদের অতি মুণাফা পাওয়ার প্রবণতাও এর জন্য দায়ী। এদিকে সঙ্গে ডলারের মূল্য বাড়ার ফলে আমদানি ব্যয় অনেক বেড়েছে সেটা অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। এরপরও ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফার করার প্রবণতা বাড়ছে৷

সরকার নিন্ম আয়ের মানুষদের স্বস্তি দেওয়ার জন্য কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে সেটার জন্য সাধুবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, সরকারের সুবিধাভোগীদের বাইরে যারা আছে যাদের আয়-রোজগার বাড়েনি তারা অনেক সংকটে আছে। তবে সরকারকে এ শ্রণিটাকে নিয়ে ভাবতে হবে। কিন্তু সরকারের সামর্থ্য সীমিত থাকায় সেটা সম্ভব হচ্ছে না। সরকারকে এখাতে আরও মনোযোগী হতে হবে।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি)সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সরকার সভা করে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে অনুযায়ী বাজারে নিত্যপণ্যের দাম কমবে সেটা প্রত্যাশা করা ঠিক হবে না। বাজারে পণ্যের দাম উঠার কারণ যেমন, মধ্যস্বত্বভোগী, সরবরাহ ক্ষেত্রে যে সমস্য হচ্ছে সে সব জায়গাগুলোতে হাত না দিয়ে শুধু চূড়ান্ত জায়গায় হাত দেই তাহলে সেটা বাস্তবসম্মত না। যদি চিনি, আটা, ছোলা, তেল যেটাই বলেন এসব পণ্য বিভিন্ন হাত ঘুরে বাজারে আসে। সেসব জায়গায় ম্যানুপোলেট হচ্ছে কিনা সেটা মনিটর করার জন্য আগে থেকেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। তাৎক্ষণিকভাবে কিছু করে দাম কমানো সম্ভব না। সরকার যেটা করছে সেটাকে মধ্যমেয়াদি কৌশলের অংশ হিসেবে দেখতে হবে।

তিনি বলেন, আমাদের আমদানি কতো, মজুদ, ওএমএস এ এতটুকু ছাড়তে পারবো, আমাতনি থেকে ভোক্তা পর্যন্ত পৌছাতে কোন কারসাজি আছে কিনা, উৎপাদন স্তর থেকে ভোক্তা পর্যন্ত পৌঁছাতে কারসাজি, চাঁদাবাজি আছে কিনা। এসব বিষয়গুলো সমাধান করতে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা ও আইনের প্রয়োগ করে একটা সিস্টেমের মধ্যে এনে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সরকার যে পদক্ষেপ নিয়েছেন সে সিস্টেমকে আরো যুগোপযোগী করতে হবে। নজরদারি আরো শক্তিশালী করতে পারি তাহলে বাজার দর কিছুটা স্বস্তিতে থাকবে। সুতরাং সেস্টেমিক বিষয়গুলোতে নজরদিতে হবে নইলে সব কিছু সীমাবদ্ধ থেকে যাবে।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ডলার সংকটের কারণে আমদানি পণ্যের দাম একটু বেশি পড়ছে। তবে দাম বৃদ্ধির প্রবণতায় এটাকে আংশিক কারণ হিসেবে ধরা যায়। কিন্তু বাজার ব্যবস্থাপনায় আমদানি স্তর থেকে পাইকারি স্তর, সেখান থেকে হাত ঘুরে রিটেল স্তর বা উৎপাদন স্তর থেকে খুচরা পর্যায়ে যে প্রক্রিয়া সেখানে নজর রাখার প্রয়োজন রয়েছে। কারণ নিত্যপণ্যে অনেক পণ্যই আমাদের দেশে উৎপাদন হয়৷ যখন কোভিড বা ইউক্রেণ রাশিয়ার যুদ্ধ বা ডলারের সংকট ছিলোনা তখনও আমরা দেখেছি নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। আবার বাজারে চাহিদা অনুযায়ী দাম স্থির থাকবে সেটাও কিন্তু না। মুল বিষয় হচ্ছে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে পণ্যে দাম আছে কিনা৷

তিনি বলেন, মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে দাম রাখতে গেলে সরকারকে দীর্ঘ মেয়াদি পদক্ষেপ নিতে হবে। এই যে বাজার ব্যবস্থাপনায় একটা দুষ্টুচক্র, সিন্ডিকেশন এর বিরুদ্ধে কৃষি আইন, ভোক্তা অধিকারকে আরো শক্তিশালী করতে হবে। একই সঙ্গে বাজার ব্যবস্থাপনাকে উন্নত করতে একটা সিস্টেমের মাধ্যমে। সে জায়গাগুলোতে আমাদের হাত দিতে হবে বলে মনে করেন তিনি।

সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, দেশে নিত্যপণ্যের মজুদ পর্যাপ্ত রয়েছে। তাই দাম বাড়ার কোন কারণ নেই। তারপরও ধারাবাহিকভাবে দাম বাড়ছে। গত রোববার (১৯ মার্চ) সবিচালয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক বৈঠকের পর সাংবাদিকদের তিনি বলেন, দেশে ভোজ্যতেল, চিনি, ডাল, ছোলাসহ সব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য মজুদ আছে। কোনো পণ্যের ঘাটতি বা মূল্য বাড়ার আশঙ্কা নেই।

এদিকে সংবাদ সম্মেলন করে দেশে নিত্যপণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ায় ঘোষণা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। মহাপরিচালক (ডিজি) এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেছেন, পণ্যের কোনো ঘাটতি নেই, বাজার ব্যবস্থাপনার ঘাটতি রয়েছে। চিনি, ছোলা, তেলসহ সব নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ আছে। সংকটের যে কথা বলা হচ্ছে তা কৃত্রিম ও এটা বাজার অস্থির করার পাঁয়তারা। আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা এই কাজটা করছে। আমাদের দেশে মানুষের মধ্যে একটা বিষয় কাজ করে, রমজান এলেই দাম বাড়ে। আর এ বিষয়টার সুযোগ নেয় অসাধুরা। এই বিষয়টা বাজারে দাম বাড়ানোকে উসকে দেয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দাম বৃদ্ধির এই প্রবণতা ঠেকাতে বরাবরের মতো এবারও নানা আয়োজন করেছে সরকার। ইতোমধ্যে বলা হয়েছে, এবার রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সারাদেশে কঠোর বাজার মনিটরিং করবে সরকারের ১৩ সংস্থা। অসাধু ব্যবসায়ীরা যেন দাম বৃদ্ধি করতে না পারে সেজন্য রমজান মাসজুড়ে বাজার তদারকি করবে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ২৮টি মনিটরিং টিম বাজারে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করবে। কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি ও অবৈধ মজুদের বিরুদ্ধে চারটি গোয়েন্দা সংস্থাকে নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বাজার নজরদারিতে ঢাকা সিটি করপোরেশন, আনসার, নিরাপদ খাদ্য অধিদপ্তর এবং জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের একাধিক টিম বাজার মনিটরিংয়ে কাজ করবে। বাজার মনিটরিংয়ে থাকবে পুলিশ, বিজিবি ও র‌্যাবের বিশেষ টিম।

প্রসঙ্গত, দেশে বর্তমানে যথেষ্ট পরিমাণ তেল ও চিনি মজুদ আছে। ছয় শিল্প গ্রুপের কাছে ৩ লাখ ২ হাজার ১৬৩ টন ভোজ্যতেল মজুদ আছে। আর পাঁচটি শিল্পগ্রুপের কাছে চিনি মজুদ রয়েছে ২ লাখ ২৫ হাজার ৫৬৩ টন। এছাড়া ২ লাখ ৭৫ হাজার ৮৪৫ টন ভোজ্যতেল এবং ৫ লাখ ৯৯ হাজার ৫০ টন চিনি পাইপলাইনে রয়েছে।

অর্থনীতি

ঈদের পর আরেক দফা বাড়ছে বিদ্যুতের দাম। ইতোমধ্যে পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ২০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। লোকসানের হাত থেকে বাঁচতে বিতরণ সংস্থাগুলোও ভোক্তা পর্যায়ে ২০ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধির জন্য পিডিবির কাছে আবেদন করেছিল। সে ভিত্তিতেই ধাপে ধাপে ১৫ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি করা হয়।

এ ছাড়া ডলার সংকট, ভর্তুকি সমন্বয় করতে না পারাসহ আইএমএফের ঋণের বিপরীতে শর্ত পালনের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাহী আদেশে এ দফায় বিদু্যুতের দাম বাড়তে পারে আরও ৫ শতাংশ। বিতরণ কোম্পানির শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারাও এমনই আভাস দিয়েছেন।

সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, ভর্তুকি কমাতেই নেওয়া হচ্ছে এমন সিদ্ধান্ত। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট বরাদ্দ প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা কমেছে। গত অর্থবছরে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দুটি বিভাগে ২৭ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। এ বছর সে বরাদ্দ নেমে এসেছে ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকায়, যা আগের বছরের তুলনায় ১ হাজার ৪১৮ কোটি টাকা কম।

গত ১০ জানুয়ারি বিশেষ প্রেক্ষাপটে বিদ্যুৎ, জ্বালানি, তেল ও গ্যাসের দাম নির্ধারণ, পুনঃনির্ধারণ এবং সমন্বয়ে সরাসরি সরকারের হস্তক্ষেপের সুযোগ রেখে ‘বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (সংশোধন) আইন ২০২৩’-এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। এর আগে আইন সংশোধন করে গত ১ ডিসেম্বর ‘বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (সংশোধন), অধ্যাদেশ, ২০২২’ গেজেট আকারে প্রকাশ করে সরকার।

এর মধ্য দিয়ে বিশেষ ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম সরাসরি বাড়ানো বা কমানোর ক্ষমতা যায় সরকারের হাতে।

গত ২১ নভেম্বর বিদ্যুতের পাইকারি দাম ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ বৃদ্ধি করে বিইআরসি। এরপরই গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম গড়ে ২০ শতাংশ বৃদ্ধির আবেদন করে বিতরণ কোম্পানিগুলো। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৮ জানুয়ারি গণশুনানি করে বিইআরসি। কিন্তু গণশুনানি শেষে নির্ধারিত সময়ের আগেই নির্বাহী আদেশে বিইআরসিকে পাশ কাটিয়ে কয়েক দফায় ১৫ শতাংশ বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি করে সরকার। সে প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবেই আরেক দফা বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি করা হবে। যার ঘোষণা আসতে পারে ঈদের পরেই। গত দুই মাসে (জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি) বিদ্যুতের মূল্য তিন দফায় ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়। সর্বশেষ ২৮ ফেব্রুয়ারি ৫ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি করা হয়।

অর্থনীতি

এক দিনের ব্যবধানে ফের দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম বেড়েছে।

স্থানীয় বাজারে তেজাবী স্বর্ণের (পাকা স্বর্ণ) দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে এই দাম বাড়ানো হয়েছে।

সব থেকে ভালো মানের স্বর্ণের দাম ভরিতে ১ হাজার ১৬৭ টাকা বাড়িয়ে স্বর্ণের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে ভালো মানের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম হয়েছে ৯৭ হাজার ৬২৮ টাকা।

বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটি বৈঠক করে এই দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়।

পরবর্তীতে মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এম এ হান্নান আজাদ সই করা এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে দাম কমানোর এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়, স্থানীয় বাজারে তেজাবী স্বর্ণের দাম কমেছে। তাই সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বাজুস স্বর্ণের নতুন দাম নির্ধারণ করেছে, যা ২৪ মার্চ থেকে কার্যকর হবে।

নতুন মূল্য অনুযায়ী, সব থেকে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেট প্রতি ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম ১ হাজার ১৬৭ টাকা বাড়িয়ে ৯৭ হাজার ৬২৮ টাকা করা হয়েছে। ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ১ হাজার ১০৮ টাকা বাড়িয়ে ৯৩ হাজার ১৯৫ টাকা করা হয়েছে। ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৯৯১ টাকা বাড়িয়ে ৭৯ হাজার ৮৯৮ টাকা করা হয়েছে। আর সনাতন পদ্ধতির স্বর্ণের দাম ভরিতে ৭৫৮ টাকা বাড়িয়ে ৬৬ হাজার ৫৪৩ টাকা করা হয়েছে।

স্বর্ণের দাম কমলেও অপরিবর্তিত রয়েছে রুপার দাম। ২২ ক্যারেটের এক ভরি রুপার ১ হাজার ৭১৫ টাকা, ২১ ক্যারেটের রুপা ১ হাজার ৬৩৩ টাকা, ১৮ ক্যারেটের রুপা ১ হাজার ৪০০ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির রুপা ১ হাজার ৫০ টাকা ভরি বিক্রি হচ্ছে।

এর আগে আজ ভালো মানের বা ২২ ক্যারেট প্রতি ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম ১ হাজার ১৬৭ টাকা কমিয়ে ৯৬ হাজার ৪৬১ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ১ হাজার ১০৮ টাকা কমিয়ে ৯২ হাজার ৮৭ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৯৯১ টাকা কমিয়ে ৭৮ হাজার ৯০৭ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির স্বর্ণের দাম ভরিতে ৭৫৮ টাকা কমিয়ে ৬৫ হাজার ৭৮৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

তার একদিন আগে ২২ মার্চ সব থেকে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেট প্রতি ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম ১ হাজার ১৬৬ টাকা কমিয়ে ৯৭ হাজার ৬২৮ টাকা করা হয়।

২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ১ হাজার ১০৮ টাকা কমিয়ে ৯৩ হাজার ১৯৫ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৯৩৪ টাকা কমিয়ে ৭৯ হাজার ৮৯৮ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির স্বর্ণের দাম ভরিতে ৭৫৮ টাকা কমিয়ে ৬৬ হাজার ৫৪৩ টাকা করা হয়।

১৮ মার্চ ঘোষণা দিয়ে এক লাফে সব থেকে ভালো মানের স্বর্ণের দাম ভরিতে ৭ হাজার ৬৯৮ টাকা বাড়ানো হয়। এতে ভালো মানের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম হয় ৯৮ হাজার ৭৯৪ টাকা। দেশের বাজারে এর আগে কখনো স্বর্ণের এত দাম হয়নি। ১৯ মার্চ থেকে স্বর্ণের এই দাম কার্যকর হয়।

এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৭ হাজার ২৯০ টাকা বাড়িয়ে ৯৪ হাজার ৩০৩ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৬ হাজার ২৪১ টাকা বাড়িয়ে ৮০ হাজার ৮৩২ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির স্বর্ণের দাম ভরিতে ৫ হাজার ১৩২ টাকা বাড়িয়ে ৬৭ হাজার ৩০১ টাকা করা হয়।

অর্থনীতি

একদিনের ব্যবধানে ফের দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম কম। স্থানীয় বাজারে তেজাবী স্বর্ণের (পাকা স্বর্ণ) দাম কমার পরিপ্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)।

এখন স্বর্ণের দাম ভরিতে এক হাজার ১৬৭ টাকা কমিয়ে ভালো মানের প্রতিভরি স্বর্ণ ৯৬ হাজার ৪৬১ টাকা দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।

বুধবার বাজুসের মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এমএ হান্নান আজাদের সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দাম কমানোর এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্থানীয় বাজারে তেজাবী স্বর্ণের দাম কমেছে। এমন অবস্থায় সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে বাজুস স্বর্ণের নতুন দাম নির্ধারণ করেছে, যা ২৩ মার্চ থেকে কার্যকর হবে।

নতুন মূল্য অনুযায়ী, সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম এক হাজার ১৬৭ টাকা কমিয়ে ৯৬ হাজার ৪৬১ টাকা করা হয়েছে। ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম এক হাজার ১০৮ টাকা কমিয়ে ৯২ হাজার ৮৭ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৯৯১ টাকা কমিয়ে ৭৮ হাজার ৯০৭ টাকা করা হয়েছে। আর সনাতন পদ্ধতির স্বর্ণের দাম ভরিতে ৭৫৮ টাকা কমিয়ে ৬৫ হাজার ৭৮৫ টাকা করা হয়েছে।

এর আগে মঙ্গলবার স্বর্ণের ভরিতে এক হাজার ১৬৬ টাকা কমায় বাজুস। এতে দুই দিনে ভালো মানের স্বর্ণের ভরিতে কমল দুই হাজার ৩৩৩ টাকা।

গত ১৮ মার্চ ভরি প্রতি স্বর্ণের দাম সাত হাজার ৬৯৮ টাকা বাড়িয়ে ৯৮ হাজার ৭৯৪ টাকা নির্ধারণ করে বাজুস।