অর্থনীতি

গ্রামের গরিব মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি) গ্রহণ করে পল্লী জীবিকায়ন প্রকল্প-৩ (পজীপ)। পাঁচ বছর মেয়াদি এই প্রকল্পে ২২২টি ফটোকপিয়ার মেশিন কেনার সিদ্ধান্ত হয় গত বছরের শুরুর দিকে।

তখন দেশের বাজারে তোশিবা ব্র্যান্ডের ‘ই-স্টুডিও ২৮২৩ এএম’ মডেলের একটি ফটোকপিয়ারের মূল্য ছিল ৬০ হাজার টাকা। অথচ মূল্যর চেয়ে আড়াইগুণ বেশি ১ লাখ ৬০ হাজার টাকায় দাপ্তরিক প্রাক্কলিত ব্যয় ধরে স্পেসিফিকেশন ও বাজার দর নির্ধারণ করে কমিটি।

পরে গ্লোরী অফিস সল্যুশন প্রতিটি মেশিন সরবরাহ করে ১ লাখ ৫৯ হাজার ৫০০ টাকা করে। অথচ এ প্রতিষ্ঠানই বিআরডিবি’র আগে একই পণ্য অন্যত্র দেয় ৬০ হাজার টাকায়। যা ফটোকপিয়ার ক্রয়ের টেন্ডারে অভিজ্ঞতা হিসাবেও উল্লেখ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

এরপরও চড়া দামে প্রতিষ্ঠানটি থেকে ফটোকপিয়ার মেশিন ক্রয়ের মাধ্যমে কোটি টাকারও বেশি লোপাট হয়েছে। আরও কোটি টাকার বেশি লোপাটের আয়োজন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।

অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, ফটোকপিয়ার ক্রয়ের মাধ্যমে লোপাটের আয়োজন করতে ধাপে ধাপে গুরুতর অনিয়ম হয়েছে। লঙ্ঘন করা হয়েছে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা (পিপিআর)। পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিতে পিপিআর বহির্ভূত অবাস্তব শর্ত দেওয়া হয়েছে টেন্ডার ডকুমেন্টে।

শুধু কাজ পাইয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রেই নয়, বিল পরিশোধেও অনন্য রেকর্ড হয়েছে এক্ষেত্রে। কার্যাদেশটি দেওয়া হয় গত বছরের ২৮ জুন। এর পরদিনই ১১১টি সরবরাহকৃত পণ্যের বিল পরিশোধ করা হয় গ্লোরী অফিস সল্যুশনকে। অথচ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোনোক্রমেই এক

মাসের নিচে বিল পরিশোধের সুযোগ নেই। কারণ কার্যাদেশ প্রদানের পর মালামাল সরবরাহের জন্য প্রস্তুত, গুণগত মান যাচাই, বিভিন্ন উপজেলায় পাঠানোসহ সামগ্রিক আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতেই এই সময় লেগে যায়। এছাড়া দ্বিতীয় ধাপে চলতি অর্থবছরে সরবরাহ করা আরও ১১১টি পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে গ্রহণ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কিছুদিনের মধ্যেই এর বিল পরিশোধ করা হতে পারে। এটা পরিশোধ হলে সম্পন্ন হবে দুই কোটি টাকারও বেশি লোপাটের আয়োজন।

অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে পজীপ-৩ এর প্রকল্প পরিচালক (পিডি) মো. আলমগীর হোসেন আল নেওয়াজ বলেন, বাজার যাচাই করে মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ৬০-৬৫ হাজার টাকায় একই মডেলের যে পণ্যটির কথা বলা হচ্ছে, সেটি জেনুইন প্রডাক্ট কিনা দেখার বিষয় আছে।

সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানকে কাজ না দিয়ে দ্বিতীয় সর্বনিম্নকে কাজ দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, মূল্যায়ন কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। তৃতীয় প্রতিষ্ঠান টেন্ডারের সব শর্ত পূরণ করতে পারেনি।

শর্ত পূরণ করতে না পারলে তাকে নিশ্চিতকরণের চিঠি কেন দেওয়া হলো-এমন প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, এটা মূল্যায়ন কমিটির সিদ্ধান্ত ছিল। অপারগতা প্রকাশ করা প্রতিষ্ঠানের জামানত বাজেয়াপ্ত না করার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার ক্লিয়ার ধারণা নেই। এই মুহূর্তে আপনাকে রিপ্লাই করতে পারছি না। টেন্ডারের সময় নির্ধারণে অনিয়মের বিষয়ে তিনি বলেন, এটা টেন্ডার মূল্যায়নের মিটিংয়ে প্লেস করেছিলাম। কমিটি সেটি বিবেচনা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ফটোকপিয়ার মেশিন ক্রয় প্রক্রিয়ার প্রাথমিক পর্যায় থেকেই শুরু হয় অনিয়ম। নিয়ম অনুযায়ী, টেন্ডার আহ্বানের আগে প্রকৃত বাজারদর যাচাই করে ভ্যাট, আয়কর ও পরিবহণ ব্যয়সহ পণ্যের দাপ্তরিক প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ধারণ করতে হয়।

কিন্তু এক্ষেত্রে দেখা যায়, চলতি বছরের ৮ মে প্রকৃত মূল্যের আড়াইগুণ বেশিতে একেকটি ফটোকপিয়ারের মূল্য নির্ধারণ করে স্পেসিফিকেশন ও বাজার মূল্য নির্ধারণ কমিটি। এতে প্রতিটির দাম পড়ে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। অথচ মেশিনগুলো সরবরাহের কার্যাদেশপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান গ্লোরী অফিস সল্যুশন তার আগের বছরের ১৯ জুনের এক কার্যাদেশ অনুযায়ী ফুনা ইনফো টেক লি.-কে একই মডেল ও ব্র্যান্ডের ফটোকপিয়ারের প্রতিটি মাত্র ৬০ হাজার টাকায় সরবরাহ করে।

এই সরবরাহের তথ্যও দরপত্র জমার অভিজ্ঞতা হিসাবে উল্লেখ করেছে গ্লোরী অফিস সল্যুশন। অভিজ্ঞতার সেই সনদে টেন্ডার মূল্যায়ন কমিটিরও ইনিশিয়াল (নমুনা স্বাক্ষর) রয়েছে। এমনকি ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমার পরেও বর্তমানে তোশিবা ব্র্যান্ডের ‘ই-স্টুডিও ২৮২৩ এএম’ মডেলের প্রতিটি ফটোকপিয়ারের খুচরা বাজার মূল্য ৭৪ থেকে ৭৮ হাজার টাকা।

পাঁচটি প্রতিষ্ঠান ঘুরে পাওয়া গেছে এমন বাজারদরের চিত্র। এ অবস্থায় গ্লোরী অফিস সল্যুশন তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে শুধু নির্দিষ্ট এই ব্র্যান্ডের পণ্যের মূল্য গায়েব করে দেয়। কিছুদিন বাদে আবার ওয়েবসাইটে পণ্যটির মূল্য ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা জুড়ে দেয় তারা।

এছাড়া দাপ্তরিক প্রাক্কলিত ব্যয় নিরূপণের ক্ষেত্রে যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয়নি পিপিআর বিধি ২৯(৩)। যেখানে কোনো নির্দিষ্ট ব্র্যান্ড ও মডেলের কারিগরি বিনির্দেশের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত বিস্তারিত উল্লেখ করতে না পারার নির্দেশনা রয়েছে।

টেন্ডারের সময় নির্ধারণে অনিয়ম : পিপিআর বিধি ৬১(৪) অনুযায়ী, ২ কোটি টাকার ঊর্ধ্বে এবং ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত পণ্য ক্রয়ের বিজ্ঞাপন প্রকাশের তারিখ থেকে টেন্ডার প্রণয়ন ও দাখিলের ন্যূনতম সময় ২১ দিন। সময় ২১ দিনের কম হলে পুনঃটেন্ডার আহ্বান করতে হয়।

এ ক্ষেত্রে টেন্ডার নোটিশ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে ১৮ মে। টেন্ডার দাখিলের সর্বশেষ তারিখ ছিল ১ জুন। সময় ছিল মাত্র ১৪ দিন। যা পিপিআর’র পুরোপুরি লঙ্ঘন। কারণ প্রাক্কলিত ব্যয়ে ফটোকপিয়ারসহ অফিস ইক্যুইপমেন্টের (এয়ারকন্ডিশন, সাউন্ড সিস্টেম) ক্রয়মূল্য ছিল ৩ কোটি ৬৫ লাখ ২০ হাজার টাকা। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, সময় কম দেওয়ায় অনেক ভালো প্রতিষ্ঠান টেন্ডারে অংশগ্রহণ করতে পারেনি।

অবাস্তব শর্ত : নিয়ম অনুযায়ী, টেন্ডার ডকুমেন্ট প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে অত্যধিক সুযোগ দেওয়ার মতো কোনো শর্ত প্রয়োগ করা যায় না। এক্ষেত্রে টেন্ডার ডকুমেন্টে ২০২১-২২ অর্থবছরে ৫০ শতাংশ ফটোকপিয়ার সরবরাহের অবাস্তব শর্ত আরোপ করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ১৮ মে পত্রিকায় টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। দাখিলের সময় ছিল ১ জুন। স্বাভাবিক প্রক্রিয়া অনুযায়ী সাধারণত টেন্ডার মূল্যায়ন ও চুক্তি সম্পাদনের জন্য আরও এক মাসের মতো সময় প্রয়োজন হয়। সেই হিসাবে পিপিআর’র বিধিবিধান অনুযায়ী কোনোভাবেই ২০২১-২২ অর্থবছরের মধ্যে চুক্তি সম্পাদন বা কার্যাদেশ প্রদানের সুযোগ নেই।

তাছাড়া এ বিপুলসংখ্যক ফটোকপিয়ার সরবরাহের ক্ষেত্রে চুক্তি/কার্যাদেশ প্রাপ্তির পর এলসি খুলে আমদানির পর সরবরাহ করতেও ৩-৪ মাসের মতো সময় প্রয়োজন। অবাস্তব শর্তের ফলে কোনো স্বনামধন্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান টেন্ডারে অংশগ্রহণের সুযোগ পায়নি। এক্ষেত্রে শুধু ওই প্রতিষ্ঠানই টেন্ডারে অংশগ্রহণ করা সম্ভব, যার গোডাউনে ন্যূনতম ১১১টির মতো ফটোকপিয়ার মজুত আছে। তাই সুকৌশলে পিপিআর বহির্ভূতভাবে পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিতেই অবাস্তব শর্ত প্রয়োগ করা হয়েছে।

যোগসাজশে হরিলুট, বাজেয়াপ্ত হয়নি জামানত : এদিকে সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, টেন্ডারে প্রতিযোগিতা হয়েছে-এমনটি প্রমাণে বেশকিছু কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে। এখানেও হয়েছে অনিয়ম। ৩টি ভিন্ন নামের প্রতিষ্ঠানের এই টেন্ডার দাখিল করে। টেন্ডার উন্মুক্ত করার পর দেখা যায়, মডার্ন টেলিকম সিস্টেম ২ কোটি ৪১ লাখ ৯৭ হাজার ৮০০ টাকা, গ্লোরী অফিস সল্যুশন ৩ কোটি ৬৩ লাখ ৯৯ হাজার ৫০০ টাকা এবং সায়েম কম্পিউটারস ৩ কোটি ৬৪ লাখ ৯৯ হাজার ৬০০ টাকায় টেন্ডার দাখিল করে।

এরমধ্যে ১ম সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান মডার্ন টেলিকম সিস্টেম। তারা প্রতিটি ফটোকপিয়ারের দাম দেয় এক লাখ তিন হাজার ৫০০ টাকা। এই দরও ছিল তৎকালীন বাজারমূল্যের চেয়ে ৩৫-৪০ হাজার টাকা বেশি। দাখিলকৃত দরে মালামাল সরবরাহে অপারগতা প্রকাশ করলে প্রতিষ্ঠানটির টেন্ডার জামানত ১০ লাখ ৯৫ হাজার টাকা বাজেয়াপ্ত হওয়ার কথা।

কিন্তু তা না করেই ২য় সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান গ্লোরী অফিস সল্যুশনকে ৩ কোটি ৬৩ লাখ ৯৯ হাজার ৫০০ টাকায় কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। পিপিআর বিধি ৯৮(১৪) অনুযায়ী, বাজারমূল্যের সঙ্গে পণ্যের মূল্য সঙ্গতিপূর্ণ না হলে, কোনো প্রতিষ্ঠান অপারগতা প্রকাশ করলেই দ্বিতীয় সর্বনিম্ন প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়ার সুযোগ নেই।

অনুসন্ধানে আরও উঠে আসে, অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের চেয়ে মডার্ন টেলিকম সিস্টেমের দর কম হওয়ায় ৮ জুন প্রতিষ্ঠানটিকে দরপত্রে উল্লিখিত দর নিশ্চিতকরণে একটি চিঠি দেন প্রকল্প পরিচালক (পিডি)। কিন্তু পিপিআর’র ৯৮ এর ৮ বিধি অনুযায়ী পিডির পক্ষ থেকে এমন চিঠি দেওয়ার সুযোগ নেই। এদিকে এর পরদিনই ডলারের মূল্য বৃদ্ধির অজুহাতে মডার্ন টেলিকম দরপত্রে দেওয়া মূল্যে মালামাল সরবরাহে অপারগতা প্রকাশ করে পিডিকে চিঠির উত্তর দেয়।

অথচ ডলারের মূল্যবৃদ্ধির পরেও ফটোকপিয়ারের বাজারমূল্য ছিল দরপত্রে দেওয়া মূল্যের চেয়ে কম। বর্ধিত মূল্যে পণ্য সরবরাহ করলেও তাদের অনেক লাভ হওয়ার কথা। এতকিছুর পরেও নিয়ম অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির জামানত বাজেয়াপ্ত না হওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, শুধু পারস্পরিক যোগসাজশে হরিলুটের পরিকল্পনা থাকলেই এমন হওয়া সম্ভব।

শুধু তাই নয়, ১৫ জুন দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির ৪র্থ সভার কার্যবিবরণীতেও রয়েছে নানা অসঙ্গতি। সেখানে ৩য় সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়, প্রস্তাবিত দরে মালামাল সরবরাহের নিশ্চয়তা প্রদানে ব্যর্থ হওয়ায় মডার্ন টেলিকম সিস্টেমকে ‘নন-রেসপনসিভ’ ঘোষণা করা হয়।

পরে ৪র্থ সভায় সিদ্ধান্ত হয়, বিজ্ঞপ্তির শর্ত অনুযায়ী মালামাল সরবরাহের অভিজ্ঞতার ঘাটতি থাকায় পিপিআর বিধি ৯৮(৩) অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটিকে ‘নন-রেসপনসিভ’ ঘোষণা করা হলো। এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে, যদি পিপিআর বিধি ৯৮(৩) অনুযায়ী অভিজ্ঞতায় ঘাটতির ফলে তাদের বাদ দেওয়া হয়, তাহলে পিডি প্রকৃত বাজারমূল্য যাচাই না করেই কেন পণ্য সরবরাহ নিশ্চিতে চিঠি দিল?

মূল্য পুনঃপরীক্ষার নির্দেশনা উপেক্ষিত : এদিকে পিপিআর’র বিধি ৯৮(২৩) অনুযায়ী, দরদাতা যদি দাপ্তরিক প্রাক্কলিত মূল্য থেকে উল্লেখযোগ্য কম দাম উদ্ধৃত করে দরপত্র দাখিল করে তবে দাপ্তরিক প্রাক্কলিত মূল্য পুনঃপরীক্ষার বিধান রয়েছে। দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি এর প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান করবে।

এক্ষেত্রে দাপ্তরিক প্রাক্কলিত মূল্য পরীক্ষা করা হয়েছে উল্লেখ করলেও প্রকৃত বাজারদরের সঙ্গে তা কোনোভাবেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ফলে সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, এখানে প্রকৃত মূল্য পরীক্ষা করা হয়নি। সে কারণেই ১ম সর্বনিম্ন দরদাতা থেকে ১ কোটি ২২ লাখ ১ হাজার ৭০০ টাকা বেশি দরে ২য় সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানকে ৩ কোটি ৬৩ লাখ ৯৯ হাজার ৫০০ টাকায় টেন্ডারটি গ্রহণে সুপারিশ করে।

কেনাকাটায় দুর্নীতির বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক আ. গাফফার খান বলেন, আমি প্রতিষ্ঠানটিতে নতুন এসেছি। সবকিছু বুঝে নিচ্ছি। কোনো অনিয়ম পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অর্থনীতি

দেশের ২০টি শিল্প প্রতিষ্ঠানকে রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার-২০২০ প্রদান করা হয়েছে।

জাতীয় অর্থনীতিতে শিল্পখাতে অবদানের স্বীকৃতি প্রদান এবং বেসরকারি খাতে শিল্প স্থাপন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ৬ ক্যাটাগরিতে ২০টি শিল্প প্রতিষ্ঠানকে এ পুরস্কার প্রদান করা হয়।

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিক/প্রতিনিধিদের হাতে পুরস্কার হিসেবে ক্রেস্ট ও সম্মাননা সনদ প্রদান করেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার এমপি এবং এফবিসিসিআই সভাপতি মো: জসিম উদ্দিন। শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। শিল্প মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, পুরস্কার প্রাপ্ত বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের পরিচালকবৃন্দসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

শিল্পমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার উন্নয়নের যে গতিতে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে স্বাধীনতা বিরোধীরা তা বাধাগ্রস্ত করতে চায়। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের অবদানের ফলে রপ্তানি আয় বৃদ্ধি, জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন তথা দেশের উন্নয়ন হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও এ উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে বর্তমান সরকারের কোনো বিকল্প নেই।

উল্লেখ্য, শিল্প প্রতিষ্ঠানের শ্রেণিবিন্যাস অনুযায়ী ছয় ক্যাটাগরির জন্য মোট ২০টি শিল্প প্রতিষ্ঠান/উদ্যোক্তাকে এ পুরস্কার প্রদান করা হয়। এরমধ্যে বৃহৎ শিল্প ক্যাটাগরিতে ৫টি, মাঝারি শিল্প ক্যাটাগরিতে ৫টি, ক্ষুদ্র শিল্প ক্যাটাগরিতে ৪টি, মাইক্রো শিল্প ক্যাটাগরিতে ১টি, কুটির শিল্প ক্যাটাগরিতে ২টি এবং হাইটেক শিল্প ক্যাটাগরিতে ৩টি প্রতিষ্ঠান পুরস্কার পেয়েছে।

বৃহৎ শিল্প ক্যাটাগরিতে যৌথভাবে ১ম পুরস্কার গ্রহণ করে রানার অটোমোবাইলস লি: এবং ইনসেপটা ফার্মাসিউটিক্যালস লি:। যৌথভাবে ২য় পুরস্কার পেয়েছে বিআরবি কেবল ইন্ডাস্ট্রিজ লি: এবং ফারিহা স্পিনিং মিলস্ লি:, ৩য় পুরস্কার পেয়েছে এনভয় টেক্সটাইল লি:।

মাঝারি শিল্প ক্যাটাগরিতে ১ম পুরস্কার পেয়েছে নোমান টেরি টাওয়াল মিলস্ লি:, যৌথভাবে ২য় হয়েছে মাসকোটেক্স লিমিটেড এবং এপিএস ডিজাইন ওয়ার্কস লি:, যৌথভাবে ৩য় পুরস্কার পেয়েছে বেঙ্গল পলিমার ওয়্যারস্ লি: এবং অকো-টেক্স লি:।

ক্ষুদ্র শিল্প ক্যাটাগরিতে ১ম হয়েছে মাসকো ওভারসিজ লি:, যৌথভাবে ২য় হয়েছে আব্দুল জলিল লি: এবং প্যাসিফিক সী ফুডস লি:, ৩য় হয়েছে মাধবদী ডাইং ফিনিশিং মিলস্ লি:।

মাইক্রো শিল্প ক্যাটাগরিতে শুধুমাত্র ১টি প্রতিষ্ঠান মাসকো ডেইরী এন্টারপ্রাইজ পুরস্কার পেয়েছে। কুটির শিল্প ক্যাটাগরিতে ১ম পুরস্কার পেয়েছে ইন্টেলিজেন্ট কার্ড লি: এবং ২য় পুরস্কার পেয়েছে রং মেলা নারী কল্যাণ সংস্থা (আর এন কে এস)।

হাইটেক শিল্প ক্যাটাগরিতে ১ম পুরস্কার পেয়েছে ফেয়ার ইলেকট্রনিক্স লি:, ২য় পুরস্কার পেয়েছে মীর টেলিকম লি: এবং ৩য় পুরস্কার পেয়েছে সার্ভিস ইঞ্জিন লি:।

উল্লেখ্য, শিল্প মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ‘রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার প্রদান সংক্রান্ত নির্দেশনাবলী ২০১৩’ অনুযায়ী ২০১৪ সালে ১ম বারের মত ‘রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার’ প্রদান শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় এ বছর ৬ষ্ঠ বারের মতো ‘রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার ২০২০’ প্রদান করা হল।

সম্প্রতি, সরকার রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার প্রদান নীতিমালা ২০২০ প্রণয়ন করেছে। এতে রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার প্রদানের উদ্দেশ্য, ক্ষেত্র নির্ধারণ, পুরস্কার প্রাপকের সংখ্যা নির্ধারণ ও বিবেচনাসূত্র, মনোনয়ন যোগ্যতা, প্রাথমিক তালিকা প্রস্তুতকরণ কমিটি, আবেদনপত্র মূল্যায়ন কমিটি এবং মনোনয়ন চূড়ান্তকরণ কমিটি গঠন ও কার্যপরিধি ইত্যাদি বর্ণিত আছে। রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান/ব্যবস্থাপনা পরিচালক (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) পুরস্কার প্রাপ্তির পরবর্তী একবছর বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠানে এবং সিটি কর্পোরেশন আয়োজিত নাগরিক সংবর্ধনায় আমন্ত্রণ পাবেন।

অর্থনীতি

রাত পোহালেই গাইবান্ধা-৫ আসনের উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বুধবার (৪ জানুয়ারি) ওই আসনে ইভিএমে ভোট অনুষ্ঠিত হবে।

নির্বাচনী এলাকায় নির্বাচনের কাজে ব্যবহার হবে, এমন কোনো স্থাপনায় ব্যাংকের শাখা বা উপ-শাখা থাকলে তা বন্ধ থাকবে।

মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংকের অফসাইট সুপারভিশন বিভাগ এ সম্পর্কিত নির্দেশনা জারি করে সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের পাঠিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ২ জানুয়ারির প্রজ্ঞাপন মোতাবেক জাতীয় সংসদের ৩৩ গাইবান্ধা-৫ শূন্য আসনে ৪ জানুয়ারি ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

নির্বাচনী এলাকায় যেসব স্থাপনা ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার বা নির্বাচনী কার্যক্রমের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে, সেসব স্থাপনায়
ব্যাংকের কোনো শাখা বা উপ-শাখা থাকলে তা বন্ধ থাকবে। এবং নির্বাচনী এলাকায় ব্যাংকের কোন শাখায় বা উপশাখায় কর্মরত ভোটারের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ দিতে পরামর্শ দেয়া হলো।

অর্থনীতি

দেশ থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে মেধা। সেই সঙ্গে যাচ্ছে অর্থও। প্রতি বছর গড়ে অর্ধলক্ষ ছাত্রছাত্রী উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যায়। তাদের গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের অন্তত ৫৭টি দেশ। কেউ যান পিএইচডি ডিগ্রি করতে। আবার কেউ মাস্টার্স বা অনার্স ডিগ্রি নিতে।

বিদেশে যাওয়া এসব শিক্ষার্থীর মধ্যে যাদের দেশে চাকরির নিশ্চয়তা আছে কেবল তারাই ফিরে আসেন। অধিকাংশ আর ফিরে আসছেন না। তারা সংশ্লিষ্ট দেশে চাকরি নিয়ে স্থায়ী আবাস গড়েন। এভাবে দেশ থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে মেধা। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় তৈরি করা মেধাবীর সেবায় উন্নত হচ্ছে অন্য দেশ। বঞ্চিত হচ্ছে বাংলাদেশ।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বিদেশে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীদের একটি অংশ আছে দুর্নীতিবাজদের সন্তান। ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার নামে তারা অনেকেই বিদেশে পাচার করে দিচ্ছেন বৈদেশিক মুদ্রা। ওই টাকায় সংশ্লিষ্ট দেশে গাড়ি-বাড়ি কিনে কিংবা ব্যবসায়ী সেজে স্থায়ী বসবাসের (পিআর) অনুমতি নিচ্ছেন।

এরপর শুরু হয় তাদের উচ্চাভিলাষী জীবনযাপন। অবশ্য বিদেশে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগই ‘ফান্ডিং’ (ভর্তি হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন চাকরি) কিংবা ‘মেধাবৃত্তি’ নিয়ে পড়তে যান। আবার বাবা-মায়ের সর্বশেষ সম্বল বিক্রি করে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কম নয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল বলেন, কোনো দেশের উচ্চশিক্ষিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে সবচেয়ে যোগ্য ও দক্ষ অংশ যখন অন্য দেশে চলে যায় এবং সেখানেই চাকরি করে; ফিরে আসে না সেটাকে আমরা মেধা পাচার বা ব্রেইন-ড্রেইন বলি। উন্নত প্রযুক্তি ও পরিবেশে লেখাপড়া-গবেষণা আর বৈশ্বিক জ্ঞানভাণ্ডারের সঙ্গে পরিচিত হতে বিদেশে উচ্চশিক্ষার্থে যাওয়াটা অপরাধ নয়, বরং জরুরি।

ফিরে এসে তারা দেশের জনশক্তিকে বৈশ্বিক মানে তৈরি করতে পারেন। চীন-ভারত প্রতি বছর হাজার হাজার গ্রাজুয়েটকে উচ্চশিক্ষার জন্য আমেরিকা-যুক্তরাজ্যসহ উন্নত দেশে পাঠাচ্ছে। এজন্য তাদের বিনিয়োগের আনুষ্ঠানিক ব্যবস্থাও আছে। অনেকে ব্যাংক ঋণ পান। তবে ব্যতিক্রম হচ্ছে-যারা পড়তে যাচ্ছেন তাদের বেশির ভাগ আবার ফিরে এসে নিজ দেশে সেবা করছেন।

এ ছাড়া যারা ওইসব দেশে থেকে যাচ্ছেন এবং উচ্চপদে চাকরি করছেন- তাদের যথাযথ সুযোগ দিয়ে ফিরিয়ে এনে নিজের দেশ গড়ার কাজে নিযুক্ত করছে। সুতরাং সমস্যাটা বিদেশযাত্রায় নয়- ফিরে না আসায় এবং দেশে যথাযথ সম্মান না পাওয়ার ক্ষেত্রে। তাই মেধাবীরা কেন ফিরছে না বা কেন দেশ তাদের ফিরিয়ে আনতে পারছে না-সেই আত্মসমালোচনা জরুরি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মেধাবীরা বিদেশে পড়তে গেলে মোটা দাগে তিনটি ক্ষতি হয় দেশের। একটি হচ্ছে, জাতি তার সেবা থেকে বঞ্চিত হয়। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, যারা ফিরে না আসে তারা দেশে কোনো অর্থ পাঠান না। বরং অনেকে নিজের সহায়-সম্বল যা আছে তা বিক্রি করে চলে যান।

আর শেষটি হচ্ছে, তাদের মাধ্যমে এ দেশ থেকে দুর্নীতিবাজ সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদসহ অন্যরা বিদেশে টাকা পাচার করেন। এই অর্থের বড় অংশ যায় অনানুষ্ঠানিক (হুন্ডি) পথে। ফলে ‘রিজার্ভ’ সংকটে পড়ে দেশ। অন্যদিকে শ্রমিকরা বিদেশ গেলে অর্জিত অর্থ (ডলার) আনুষ্ঠানিক বা হুন্ডির মাধ্যমে দেশে পাঠান।

২০২০ সালের ১৮ নভেম্বর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির এক অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আবদুল মোমেনের সরল স্বীকারোক্তিতেও উল্লিখিত কথার প্রমাণ মেলে। তিনি বলেছিলেন, রাজনীতিবিদরা নন, বিদেশে বেশি অর্থ পাচার করেন সরকারি চাকুরেরা। গোপনে কানাডার টরন্টোতে অবস্থিত বাংলাদেশিদের বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হয়েছে।

ধারণা ছিল রাজনীতিবিদদের সংখ্যা বেশি হবে। কিন্তু যে তথ্য এসেছে, তা অবাক হওয়ার মতো। ২৮টি কেসের মধ্যে চারটি মাত্র রাজনীতিবিদ। সরকারি কর্মচারীর সংখ্যা বেশি। কিছু ব্যবসায়ীও আছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, বিদেশে যারা যাচ্ছেন তাদের বড় অংশ মাস্টার্স, এমফিল ও পিএইচডি শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে যারা যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়াসহ উন্নত দেশে যান তাদের অন্তত ৭০ শতাংশ ফিরে আসেন না।

আর দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, তাদের অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। দেশে গবেষণার পরিবেশ সৃষ্টি হলে খুব কম সংখ্যক হয়তো যেতেন। যা ভারত, চীন এবং মালয়েশিয়ায় দেখা যায়। অন্যদিকে বিত্তবানরা তাদের সন্তানদের স্নাতক করতে পাঠান যখন ভালো বিশ্ববিদ্যালয় বা বিষয়ে চান্স পায় না। সাম্প্রতিক সময়ে একটি অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে-বিদেশে পাঠানো সন্তানের লেখাপড়ার নামে অনেকেই বৈদেশিক মুদ্রা পাচার করছেন। এটা রোধের ব্যবস্থা সরকারকেই করতে হবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বিদেশে যেসব বাংলাদেশি লেখাপড়া করতে যান তাদের একটি বড় অংশ মাস্টার্স আর পিএইচডি করতে যান। এই তালিকায় কেবল বুয়েটেরই প্রতি ব্যাচের ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী আছেন। লেখাপড়া শেষে তাদের খুব কম অংশই দেশে আসেন। এই তালিকায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির শিক্ষার্থীই বেশি। বিজনেস স্টাডিজের কিছু শিক্ষার্থী আছেন। আর কলা-সামাজিকবিজ্ঞানে ইংরেজি-অর্থনীতির মতো বিষয়ের শিক্ষার্থী আছেন। এছাড়া একটি অংশ আন্ডারগ্রাজুয়েট বা অনার্স ডিগ্রি করতে যান। তাদের খুব কমসংখ্যকই দেশে ফিরে আসেন।

জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থার (ইউনেস্কো) ‘গ্লোবাল ফ্লো অব টারশিয়ারি লেভেল স্টুডেন্টস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের বিদেশে লেখাপড়া করতে যাওয়া সংক্রান্ত একটি চিত্র পাওয়া গেছে।

এছাড়া প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কালচারাল অ্যাফেয়ার্স ব্যুরো এবং ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশন ইনস্টিটিউট যৌথভাবে ‘ওপেন ডোরস রিপোর্ট অন ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশনাল এক্সচেঞ্জ’ নামে প্রতিবেদনেও এ সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যায়। ইউনেস্কো বলছে, ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষে বিশ্বের ৫৭টি দেশে বাংলাদেশের ৪৯ হাজার ১৫১ শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য গেছেন। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রেই গেছেন সর্বাধিক ৮৬৬৫ জন।

দ্বিতীয় স্থানে আছে মালয়েশিয়া। সেখানে যাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৭৫৪৮ জন। শীর্ষ ১২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির তৃতীয় ও চতুর্থ সর্বোচ্চ দেশ দুটি হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া ও কানাডা। দেশ দুটিতে যথাক্রমে ৫৬৪৭ ও ৫১৩৬ জন পড়তে গেছেন। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের পছন্দের পঞ্চম আর ষষ্ঠ স্থানে আছে জার্মানি ও যুক্তরাজ্য। দেশ দুটিতে যাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৯৩০ ও ৩১৯৪ জন।

সপ্তম থেকে দ্বাদশ স্থানে থাকা দেশগুলো হচ্ছে-ভারত, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, সৌদি আরব, সুইডেন, সাইপ্রাস, এসব দেশে ওই বছর যাওয়া শিক্ষার্থী সংখ্যা হচ্ছে-২৭৫০, ২৪৩৬, ১১৭৬, ১১৬৮, ৯৭৩, ৯০৭ জন। উল্লিখিত বছরে সবচেয়ে কম গেছেন ম্যাকাওতে, পাঁচজন। সর্বনিম্ন ১০০ শিক্ষার্থী গেছেন এমন দেশ ২৫টি। এগুলোর মধ্যে আছে-ফিনল্যান্ড, তুরস্ক, কাতার, থাইল্যান্ড, রাশিয়া, এস্তোনিয়া, নরওয়ে, পোল্যান্ড, হাঙ্গোরি, নিউজিল্যান্ড, চীন-হংকং, ডেনমার্ক, ইতালি, ওমান, ইউক্রেন, ফ্রান্স এবং পর্তুগাল।

আর ‘ওপেন ডোরস রিপোর্ট অন ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশনাল এক্সচেঞ্জ’ প্রতিবেদন ২০২১-২২ অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে চলতি শিক্ষাবর্ষে সারা বিশ্ব থেকে এসেছে ৯ লাখ ৪৮ হাজার ৫১৯ জন। এর মধ্যে বাংলাদেশি ১০ হাজার ৫৯৭ জন, যেটি তালিকার ১৩ অবস্থানে আছে। অথচ এক দশক আগে এই সংখ্যা ছিল মাত্র তিন হাজার ৩১৪ জন।

বিদেশে এভাবে শিক্ষার্থী চলে যাওয়ার পেছনে নানান কারণ আছে। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েন স্টেট ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি গবেষণারত বাংলাদেশি সাংবাদিক খাদিমুল ইসলাম হৃদয় বলেন, আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি, রাজনৈতিক অস্থিরতা, নিরাপত্তাহীনতাসহ বিকশিত হওয়ার অপর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার অভাবেই মূলত মেধাবী তরুণ প্রজšে§র একটি বড় অংশ উন্নত দেশে পাড়ি জমায়। এ ক্ষেত্রে তাদের আকৃষ্ট করে উন্নত দেশের গবেষণা, প্রযুক্তি, সামাজিক নিরাপত্তা, জীবনমান, আইনের শাসন আর স্থিতিশীলতা।

সার্চ ইঞ্জিন গুগলে একটি ব্লগে দেখা যায়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েক বছর আগে একটি বিভাগে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়েছিলেন তানিয়া আহমেদ নামে এক ছাত্রী। নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে তিনি বিবেচিত হননি। একটি ছাত্র রাজনৈতিক দলের বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতা হওয়ায় অপেক্ষাকৃত কম মেধাবী তারই সহপাঠী নিয়োগটি পেয়েছেন। এরপর তানিয়া ক্ষোভ ও অপমানে সুইডেনে বৃত্তি নিয়ে চলে যান লুন্ড ইউনিভার্সিটিতে। তিনি বর্তমানে সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং সুইডিশ নাগরিকত্বও গ্রহণ করেছেন।

কানাডার সিনথেটিক অর্গানিক ক্যামিস্ট্রির সিনিয়র রিসার্চ সায়েন্টিস্ট ড. সাদেকুল ইসলাম জানান, বিদেশে মেধাবীদের এভাবে চলে যাওয়ার ক্ষেত্রে এ ধরনের অনেক ঘটনা আছে। তিনি বলেন, একজন মেধাবীর মূল্যায়িত হওয়ার পথে দেশে কম-বেশি প্রতিবন্ধকতা আছে। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হতে হলে তাকে হলুদ-বেগুনি বিভিন্ন রঙে রঞ্জিত করতে হয় নিজেকে। কিন্তু একজন গবেষকের সেই সময় কোথায়। তিনি বলেন, তিনি জাপানে পাঁচজন অধ্যাপকের সঙ্গে কাজ করেছেন। কানাডায়ও কাজ করছেন। উন্নত বিশ্বে শিক্ষা ও গবেষণায় রাজনীতির কোনো রঙ নেই। সেখানে যোগ্যতা ও গবেষণার মানই মুখ্য। এমন পরিস্থিতিই মেধাবীকে উন্নত দেশই আকৃষ্ট করে।

সম্প্রতি চীন থেকে পিএইচডি ডিগ্রি শেষে ফিরে এসেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সাহাবুল হক। তিনি বলেন, ‘আমরা বর্তমানে ‘নলেজ-ইকোনমি’র (যে অর্থনীতি উৎপাদনের পরিবর্তে জ্ঞানভিত্তিক) যুগে বসবাস করছি। এ কারণে অনেক দেশই মেধা লালনের নীতি গ্রহণ করেছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত রুয়ান্ডা কিংবা দক্ষিণ কোরিয়ার দৃষ্টান্ত এর মধ্যে অন্যতম।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রচুর বিদেশি চাকরি করেন। তাদের মাধ্যমে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা চলে যাচ্ছে বেতন হিসাবে। কিন্তু তাদের স্থলে বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি মেধাবীদের আনা সম্ভব হলে মেধাকেন্দ্রিক পরনির্ভরশীলতা কমানো যেত। পাশাপাশি দেশের শিক্ষাব্যবস্থাও এমনভাবে সাজাতে হবে যাতে কেউ আর বিদেশে ডিগ্রির জন্য না যায়।

সম্প্রতি এক নিবন্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন নিজের মেয়েকে অনার্স ডিগ্রি করতে বিদেশে পাঠানোর স্মৃতিচারণ করেন। এতে তিনি লেখেন, যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে মানসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ, শিক্ষকদের ভালো বেতন এবং সম্মান প্রদান, প্রয়োজনীয় (বড়) বরাদ্দ, শিক্ষার অনুকূল পরিবেশ, ছাত্র শিক্ষকদের কু-রাজনীতি বন্ধ-এসব বিষয় যদি নিশ্চিত করা যেত তাহলে মেধাবীদের যারা বিদেশে পড়তে যাচ্ছে, তাদের একটি বড় অংশ দেশেই পড়াশুনা করত।

ফলে দেশের পরিবেশ এবং সংস্কৃতির মান উন্নত থাকত। দেশ তার সেরা মেধাবীদের সেবা পেত। তার ওই নিবন্ধে ভর্তি সমস্যা (বিশেষ করে ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের) এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আর সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ থেকে উচ্চতর ডিগ্রি করানোর ক্ষেত্রে বরাদ্দসংক্রান্ত অব্যবস্থাপনার চিত্র এবং মেধাবীদের দেশে ফিরিয়ে আনার পন্থা উল্লেখ করেছেন।

ইউনিভার্সিটি অব নিউ ম্যাক্সিকোর কমিউনিকেশন অ্যান্ড জার্নালিজম বিভাগের ওয়েবসাইটে ঢুকলেই দেখা যাবে আবেদনকারীদের আকৃষ্ট করতে একজন সহকারী অধ্যাপককে ছবিসহ তার অর্জিত পুরস্কার বিজ্ঞাপন হিসেবে দেওয়া আছে। ওই শিক্ষকের নাম ড. মোহাম্মদ ইউসুফ, যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের গ্রাজুয়েট।

তিনি বলেন, মেধাবীদের একটি অংশের বিদেশে চলে যাওয়া ও না ফেরার পেছনে বহু কারণ আছে। যারা দেশে ফিরে যাচ্ছেন না তারা সেটাকেই ভালো বিকল্প মনে করেন। তবে তিনি এটাও মনে করেন যে, মেধাবীরা বিদেশে থাকলেও তারা দেশের জন্যই কাজ করেন। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশ এর উদাহরণ। আসলে বর্তমান যুগে এটাকে ‘মেধা পাচার’ না বলে ‘মেধা সঞ্চালন’ হিসাবে দেখা যায়। তবে তাদের কাজে লাগাতে দেশ উদ্যোগ নিতে পারে।

অর্থনীতি

বহুদিন পর চালের দাম কমেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, চিকন চাল ছাড়া প্রায় সব চালের দামই নিম্নমুখী। গত সপ্তাহের তুলনায় এই সপ্তাহে সব ধরনের চালের দাম কমেছে। শুধু চালই নয়, আটা-ময়দার দামও কমেছে। কমেছে সয়াবিন তেল ও পাম অয়েলের দাম। সুখবর আছে ডাল, পেঁয়াজ, আদা ও দারুচিনির দামেও। শীতের সবজির দাম কমায় ক্রেতাদের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি দেখা গেছে।

কমেছে চালের দাম

সরকারের বিপণন সংস্থা টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহে স্বর্ণা, চায়না, ইরি চাল (মোটা) বিক্রি হয়েছে ৪৮ টাকা কেজি দরে, এই সপ্তাহে এই একই চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৬ টাকা কেজিতে। শুধু তাই নয়, লতা ও পাইজাম চাল বিক্রি হচ্ছে ৫২ টাকা কেজিতে। যদিও গত সপ্তাহে এই চাল ব্যবসায়ীরা বিক্রি করেছেন ৫৫ টাকা কেজি দরে।

টিসিবির হিসাবে, গত সপ্তাহে ৬২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া চাল এই সপ্তাহে ৫৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে পাইজাম চাল প্রতিকেজি ৫৮ টাকা, আটাশ চাল ৬০ থেকে ৬২ টাকা, নাজিরশাইল ৭০ থেকে ৭৫ টাকা, হাসকি ৬০ থেকে ৬২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

অবশ্য ভালো মানের চিকন চাল (মিনিকেট ও নাজির) কেজিতে তিন টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৭৮ টাকা কেজি দরে। গত সপ্তাহে এই চাল বিক্রি হয় ৭৫ টাকা কেজিতে।

নিম্নমুখী আটা-ময়দার দাম

বিগত কয়েক মাস ধরে বাড়তে থাকা আটা-ময়দার দাম নতুন করে বাড়েনি। বরং ময়দার দাম কিছুটা কমে এসেছে। গত সপ্তাহে ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া প্যাকেট ময়দা এই সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকা কেজি দরে।

কমেছে সয়াবিন তেলের দাম

রাজধানীর বাজারে খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৬৭ টাকা লিটার। গত সপ্তাহে এই সয়াবিন বিক্রি হয়েছে ১৭৫ টাকা লিটার। আর ১৮০ টাকা দরের সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকা লিটার।

তবে কোথাও কোথাও ক্রেতাদের গুনতে হচ্ছে আগের নির্ধারিত ১৯২ টাকাই। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, কোম্পানিগুলো এখনও নতুন দরে তেল বাজারে ছাড়েনি। তবে ১ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে গত সপ্তাহের মতোই ১৯০ টাকা। কিছু কিছু দোকানে প্রতি লিটার ১৭৮ টাকাতেও বিক্রি করছে। গত সপ্তাহের এর দাম ছিল ১৮০ টাকা। ব্যবসায়ীরা পাঁচ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি করছে ৯১০ টাকা। গত সপ্তাহে এই সয়াবিন তেলের দাম ছিল ৯২৫ টাকা।

কমেছে পাম অয়েলের দাম

বাজারে ১৪০ টাকা লিটার সুপার পাম অয়েল এই সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকা লিটার। একইভাবে ১৪৫ টাকা দরে বিক্রি হওয়া পাম অয়েল এই সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ১৪২ টাকা লিটার। এছাড়া খোলা পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ১১৫ টাকা থেকে ১২৫ টাকা। গত সপ্তাহে এর দাম ছিল ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা।

শুক্রবার (২৩ ডিসেম্বর) রাজধানীর কয়েকটি খুচরা বাজারে দেখা গেছে, খোলা পাম তেল নির্ধারিত দামের থেকে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি লিটার পাম তেল বিক্রি হওয়ার কথা ১১৭ টাকায়, যা ১২০ থেকে ১২২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কমেছে ডালের দাম

গত সপ্তাহে ১১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া তুরস্ক ও কানাডা থেকে আমদানি করা মসুর ডাল এই সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ১০৫ টাকা কেজি দরে। এছাড়া গত সপ্তাহে যে ডাল বিক্রি হয় ১৩০ টাকা, এই সপ্তাহে সেই একই মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১২৫ টাকা কেজি দরে। আর গত সপ্তাহে ১২৫ টাকা দরে বিক্রি হওয়া মসুর ডাল এই সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা কেজি দরে।

কমেছে পেঁয়াজের দাম

দেশি ও আমদানি করা দুই ধরনের পেঁয়াজের দামই কমেছে। দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা কেজি দরে। গত সপ্তাহে এই পেঁয়াজের দাম ছিল ৪৫ টাকা কেজি। এছাড়া ৫৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া পেঁয়াজ ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে ৪০ টাকা কেজি দরের আমদানি করা পেঁয়াজ ৩০ টাকা কেজিতে পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া পেঁয়াজ এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়।

কমেছে আদা ও দারুচিনির দাম

গত সপ্তাহের ১৬০ টাকা কেজি দরের আদা এই সপ্তাহে ১৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। আর ৪৩০ টাকা কেজি দরের দারুচিনি এই সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৪২০ টাকা কেজি দরে। ভালো মানের দারুচিনি পাওয়া যাচ্ছে ৫০০ টাকায়। গত সপ্তাহে এই দারুচিনি বিক্রি হয় ৫২০ টাকা কেজি।

অবশ্য এক মাসের আগে চিনির দাম ১০৮ টাকা (প্যাকেট) নির্ধারণ করার পরও ক্রেতাদেরকে গুনতে হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকা।

সুখবর আছে সবজির বাজারেও

এদিকে কিছুটা সুখবর আছে সবজি বাজারে। শীতের প্রচুর সবজি বাজারে, সরবরাহ বাড়ায় কমেছে টমেটো, সিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি, নতুন আলু ও গাজরের দাম।

সবজি ব্যবসায়ীরা জানান, মাঝারি আকারের প্রতি পিস ফুলকপি ও বাঁধাকপি ২৫ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। প্রতিকেজি শিম ৩০ থেকে ৪০ টাকা, পেঁপের কেজি ২০ টাকা, লম্বা বেগুনের কেজি ৪০ টাকা, গোল বেগুন বা তাল বেগুনের কেজি ৬০ টাকা, নতুন আলুর কেজি ২৫ থেকে ৩০ টাকা। লাউয়ের পিস ৫০ টাকা, করলার কেজি মানভেদে ৬০ থেকে ৭০ টাকা, কাঁচকলার হালি ৩০ টাকা, দেশি গাজর কেজিতে ২০ টাকা কমে ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, চিচিঙ্গা ও ধুন্দুলের কেজি ৬০ টাকা, শালগমের কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা।

এ প্রসঙ্গে মানিকনগর এলাকার কামাল হোসেন বলেন, বিগত যেকোনও সপ্তাহের চেয়ে এই সপ্তাহে সবজির বাজার কিছুটা স্থির থাকলেও সব জিনিসের দাম এখনও চড়া রয়েছে।

এদিকে দাম কমেছে মাছেরও। চাষের কই, তেলাপিয়া, পাঙাশ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকায়। রুই, কাতলা কার্পজাতীয় চাষের মাছ ২৬০ থেকে ২৮০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। তবে খুব একটা হেরফের হয়নি দেশি জাতের মাছের দামে।

অর্থনীতি

দীর্ঘ ১০ মাস বন্ধ থাকার পর ফের কয়লা আমদানি শুরু হয়েছে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা সীমান্তের (বড়ছড়া, বাগলী ও চারাগাঁও) শুল্ক স্টেশন দিয়ে।

শুল্ক স্টেশন বন্ধ থাকায় সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয় সেই সঙ্গে চরম দুর্ভোগের শিকার হয় ২০ হাজার শ্রমিক ও পাঁচ শতাধিক ব্যবসায়ী।

বুধবার (২১ ডিসেম্বর) সকাল ১১টায় উপজেলার বড়ছড়া এলসি পয়েন্ট দিয়ে আমদানি কার্যক্রম উদ্বোধন করেন তাহিরপুর কয়লা আমদানিকারক গ্রুপের সভাপতি আলখাছ উদ্দিন খন্দকার।

এসময় উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রিয়াজ উদ্দিন খন্দকার লিটন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আবুল খায়ের, কোষাধ্যক্ষ জাহের আলী, সচিব রাজেস চক্রবর্তী, সদস্য হাসান মেম্বার, ব্যবসায়ী শংকর দাসসহ বিজিবি ব্যবসায়ী এবং স্থানীয় এলাকাবাসী উপস্থিত ছিলেন। এসময় উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

তাহিরপুর কয়লা আমদানিকারক গ্রুপ সূত্রে জানা যায়, বড়ছড়া, বাগলী ও চারাগাঁও শুল্ক স্টেশন দিয়ে নব্বইয়ের দশকের শুরু থেকে ভারত থেকে কয়লা আমদানি শুরু হয়।
২০১৪ সালে ভারতের মেঘালয়ের একটি পরিবেশবাদী সংগঠনের মামলার পরিপ্রেক্ষিতে পরিবেশগত ক্ষতির কথা বিবেচনা করে কয়লা রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে দেশটির ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল। পরে টানা প্রায় সাত মাস বন্ধ থাকে কয়লা আমদানি।

এরপর পুনরায় আমদানি শুরু হলেও তা আর নিয়মিত হয়নি। চলতি বছরের মার্চ থেকে কয়লা আমদানি বন্ধ রয়েছে। গত প্রায় ১০ মাস ধরে আমদানি বন্ধ থাকায় অনেক ক্ষতির মুখে পড়েছেন শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা। সরকার ও কোটি কোটি টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে।

কয়লা আমদানি শুরুর সত্যতা নিশ্চিত করে তাহিরপুর কয়লা আমদানিকারক গ্রুপ আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আবুল খায়ের জানান, বছরে তিন-চার মাস চলে আমদানি আর আট-নয় মাস বন্ধ থাকে।

অন্যদিকে কয়লা আমদানি বন্ধ থাকায় প্রায় ২০ হাজারের বেশি শ্রমিক বেকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অনেকে এলাকা ছেড়ে কাজের সন্ধানে অন্যত্র চলে গেছেন। গত দশ মাস বন্ধ থাকায় পাঁচ শতাধিক ব্যবসায়ী চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন। কয়লা আমদানি শুরু হওয়ায় ভালো লাগছে।

তাহিরপুর কয়লা আমদানিকারক গ্রুপের সভাপতি আলখাছ উদ্দিন খন্দকার বলেন, শুল্ক স্টেশন বন্ধ থাকলে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হয়। রাজস্ব আদায়ের স্বার্থে এবং শুল্ক স্টেশনের সঙ্গে জড়িত শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের জীবন জীবিকার কথা বিবেচনা করে বড়ছড়া, বাগলী ও চারাগাঁও শুল্ক স্টেশন দিয়ে কয়লা আমদানি সারা বছর চালু থাকে তার জন্য সরকার যেন গুরুত্ব সহকারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয় সেই দাবি জানাই।

রাজস্ব কর্মকর্তা বড়ছড়া আবুল হাসেম ভূঁইয়া জানান, এলসির মাধ্যমে কয়লা আমদানি শুরু হয়েছে।

অর্থনীতি

দেশের ১৪১ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ট্যাক্স কার্ড দিচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সেরা করদাতাদের উৎসাহিত করতে এ উদ্যোগ নিয়েছে এনবিআর। এ তালিকায় রয়েছেন শোবিজ অঙ্গনের ৬ জন তারকা।

বুধবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বিভিন্ন শ্রেণিতে এ বছরের সেরা করদাতাদের তালিকা প্রকাশ করে।

এ বছর সংগীতশিল্পী বিভাগে সেরা করদাতা হয়েছেন তিনজন। তারা হলেন তাহসান খান, এস ডি রুবেল ও কুমার বিশ্বজিৎ।

অন্যদিকে অভিনেতা-অভিনেত্রী বিভাগে সেরা হয়েছেন মাহফুজ আহমেদ, মেহজাবীন চৌধুরী ও পীযুষ ব্যানার্জি।

ছয় তারকার মধ্যে কেবল মেহজাবীন চৌধুরীর নাম প্রথমবার সেরা করদাতার তালিকায় এসেছে। অন্যরা এর আগেও একাধিকবার এই স্বীকৃতি পেয়েছেন।

সেরা করদাতা হিসেবে তারা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে ট্যাক্সকার্ড ও সম্মাননা পাবেন। এই কার্ডের মেয়াদ থাকবে এক বছর।

ট্যাক্স কার্ড পাওয়া ব্যক্তিরা রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সুবিধা পাবেন। তাদের জন্য বরাদ্দ রাখা হবে বিমানবন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জ, তারকা হোটেলসহ সব আবাসিক হোটেল বুকিংয়ে অগ্রাধিকার। পাশাপাশি কর কার্ডধারী নিজে ও তার স্ত্রী বা স্বামী, নির্ভরশীল সন্তানের চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতালে কেবিন সুবিধা প্রাপ্তিতে অগ্রাধিকার পাবেন। থাকবে আকাশ, রেল ও জলপথে সরকারি যানবাহনে টিকিট প্রাপ্তিতে অগ্রাধিকার এবং জাতীয় অনুষ্ঠান, সিটি করপোরেশন, পৌরসভাসহ স্থানীয় সরকার কর্তৃক আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ।

অর্থনীতি

আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে বৈশ্বিক মন্দা মোকাবিলায় প্রচলিত সহায়তার অতিরিক্ত হিসাবে আরও ৪৪ হাজার কোটি ডলার ঋণ দেবে। আগামী তিন বছরের মধ্যে এ ঋণ দেওয়া হবে।

সদস্য দেশগুলো বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যে স্থিতিশীলতা রক্ষায় ঋণের অর্থ ব্যয় করতে পারবে। সোমবার প্রকাশিত আইএমএফের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। এসব পণ্য আমদানিতে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর ব্যয় বেড়ে গেছে মাত্রাতিরিক্তভাবে।

এছাড়া উন্নত দেশগুলোতে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার লাগামহীনভাবে বেড়ে যাওয়ায় তারা সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণ করে। এতে ওইসব দেশে ঋণের সুদের হার বেড়ে যায়। ফলে ডলারের দাম বৃদ্ধি পেয়ে স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন ঘটে। এতেও স্বল্পোন্নত দেশগুলোর বৈদেশিক মুদ্রায় চাপ পড়ে। সার্বিকভাবে তাদের রিজার্ভ কমে যায়।

বৈদেশিক মুদ্রার ব্যালেন্স অব পেমেন্টে ঘাটতি দেখা দেয়, যা স্বল্পোন্নত দেশগুলোতেও মূল্যস্ফীতিকে উসকে দেয়।

এ অবস্থায় উন্নত দেশগুলো সুদের হার বাড়িয়ে পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে পরিস্থিতি অনেকটা সামাল দিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো এখনো পরিস্থিতিতে নিয়ন্ত্রণ আনতে পারেনি। তারা চেষ্টা করে যাচ্ছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ না হলে ইউরোপের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।

এদিকে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর বেশির ভাগেরই রপ্তানির বড় বাজার হচ্ছে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র। এসব দেশের অর্থনীতি স্বাভাবিক না হলে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর রপ্তানি বাজার চাঙ্গা করা কঠিন হবে। রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রেও ওইসব দেশ নির্ভরশীল। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্য ও বিভিন্ন দেশ থেকেও রেমিট্যান্স প্রবাহ রয়েছে স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে।

ওইসব দেশেও মন্দার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তারা মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণে মুদ্রার প্রবাহ কমিয়েছে। ফলে সার্বিকভাবে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, স্বল্পোন্নত দেশগুলোর এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ, মুদ্রার মান ধরে রাখা। বৈদেশিক মুদ্রার সংকটের কবলে পড়ে তারা মুদ্রার মান ধরে রাখতে পারছে না। এতে ডলারের দাম বেড়ে যাচ্ছে। ফলে মূল্যস্ফীতিতেও চাপ বাড়ছে। স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে অনেক দেশের মূল্যস্ফীতির হার দুই ডিজিটে চলে গেছে।

আইএমএফের প্রতিবেদনে বলা হয়, স্বল্পোন্নত দেশগুলো কঠিন শর্তের কম সুদের ঋণ না নিয়ে চড়া সুদের কম শর্তেও বাণিজ্যিক ঋণ নিয়েছে বেশি। ওইসব ঋণ স্বল্পমেয়াদি হওয়ায় এগুলো পরিশোধে এখন রিজার্ভের ওপর চাপ পড়েছে। ওইসব ঋণ এখন তারা পরিশোধ না করে মেয়াদ বাড়িয়ে নিচ্ছে।

এতেও ঋণের ওপর বাড়তি চাপ পড়বে, যা আগামীতে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর বৈদেশিক মুদ্রার ওপর চাপ আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। যে কারণে আইএমএফ আরও ৪৪ হাজার কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এসব ঋণে অনেক শর্ত থাকবে। যেসব শর্ত বাস্তবায়নের ফলে ওইসব দেশের অর্থনীতি সঠিক ধারায় ফিরে আসবে।

এদিকে বিদ্যমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশ আইএমএফের কাছে ৪৫০ কোটি ডলারের ঋণ চেয়েছে। ওইসব ঋণ দেওয়ার ব্যাপারে আইএমএফ বেশ কিছু শর্ত আরোপ করেছে। ওইসব শর্ত নিয়ে সংস্থাটির সঙ্গে এখনো আলোচনা চলছে।

অর্থনীতি

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এর জন্য পৌনে তিন কোটি লিটার সয়াবিন তেল কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এতে খরচ হবে ৫১০ কোটি ২৮ লাখ টাকা। গত লটের তুলনায় নতুন লটে দাম বেশ খানিকটা বেড়েছে। একইসঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কানাডা থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন এমওপি ও টিএসপি সার আমদানির প্রস্তাবও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

বুধবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনলাইনে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় এসব প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়।

সভা শেষে অনুমোদিত প্রস্তাবের বিষয়ে সাংবাদিকদের বিস্তারিত জানান মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান। তিনি জানান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন টিসিবির জন্য স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে তিনটি পৃথক লটে ২ কোটি ৭৫ লাখ লিটার সয়াবিন তেল ক্রয়ের অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।

প্রতি লিটার ১৮৪ টাকা ৮৪ পয়সা দরে প্রথম লটে ১ কোটি ১০ লাখ লিটার সয়াবিন সরবরাহ করবে সিটি এডিবল অয়েল লিমিটেড। প্রতি লিটার ১৮৪ টাকা ৫০ পয়সা দরে দ্বিতীয় লটে ৫৫ লাখ লিটার তেল সরবরাহ করবে সুমসিং এডিবল অয়েল।এছাড়া তৃতীয় লটে প্রতি লিটার ১৮৫ টাকা ৯৫ পয়সা দরে ১ কোটি ১০ লাখ লিটার সরবরাহ করবে সুপার পাওয়ার রিফাইনারি লিমিটেড।

এর আগে গত ৩০ নভেম্বর ২ কোটি ২০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল ক্রয়ের অনুমোদন দেয় সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। তখন প্রতি লিটার তেলের দাম ধরা হয়েছিল ১৫৬ টাকা ৯৮ পয়সা। সে হিসেবে নতুন সয়াবিনের দাম কিছুটা বেড়েছে।
এদিকে, কানাডা ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে এক লাখ ৩০ হাজার টন ইউরিয়া ও এমপিও সার ক্রয়ের তিনটি পৃথক প্রস্তাব মন্ত্রিসভা কমিটিতে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

সাঈদ মাহমুদ খান জানান, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) কর্তৃক রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির আওতায় কানাডা কমার্শিয়াল করপোরেশন থেকে দশম লটে ৫০ হাজার মেট্রিক টন মিউরেট-অব-পটাশ (এমওপি) সার আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে আগের লটের চেয়ে সার কেনার খরচ কমেছে। প্রতি টন ৫১৮ দশমিক ৩৩ ডলার দরে এ সার ক্রয়ে ব্যয় হবে ৩৪৪ কোটি ৯০ লাখ ৬০ হাজার ৪৬৫ টাকা।

এর আগের লটে সার কেনা হয়েছিল প্রতি টন ৫৫৩ দশমিক ৩৩ ডলার দরে। আরও একটি প্রস্তাবে একই দেশের একই প্রতিষ্ঠান থেকে আরও ৫০ হাজার মেট্রিক টন মিউরেট-অব-পটাশ (এমওপি) সার আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রতি টন ৬৫৫ দশমিক শূন্য ৩ ডলার দরে এ সার ক্রয়ে ব্যয় হবে ৩৪৪ কোটি ৯০ লাখ ৬০ হাজার ৪৬৫ টাকা।

এছাড়া শিল্প মন্ত্রণালয়য়ের অধীন বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) মাধ্যমে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ফার্টিগ্লোব ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড থেকে ৩০ হাজার টন গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার ১৬৩ কোটি ৭৫ লাখ ৫৯ হাজার ৯৬৯ টাকায় আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বিসিআইসি কর্তৃক চট্টগ্রামের টিএসপি কমপ্লেক্স লিমিটেডের (টিএসপিসিএল) জন্য ১০ হাজার মেট্রিক টন ফসফরিক এসিড চীনের গুইঝো চানেন কেমিক্যাল কর্পোরেশন থেকে ৭৩ কোটি ৮৫ হাজার ৪০০ টাকায় আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, চট্টগ্রাম শহরের লালখান বাজার থেকে শাহ্-আমানত বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং কর্ণফুলী নদীর তীর বরাবর কালুরঘাট সেতু থেকে চাক্তাই খাল পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানোর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

এ দুই প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানো হয়েছে ৮৭৯ কোটি ৭ লাখ ৪৪ হাজার ১০৭ টাকা। এর মধ্যে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ ব্যয় বাড়ানো হয়েছে ৬৪৯ কোটি ২ লাখ ৪৩ হাজার ৯১ টাকা। আর কালুরঘাট সেতু থেকে চাক্তাই খাল পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ ব্যয় বাড়ানো হয়েছে ২৩০ কোটি ৫ লাখ ১ হাজার ১১৬ টাকা।

অর্থনীতি

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) প্রাণ খুলে, মন খুলে বলেছে, বাংলাদেশের অর্জন অসামান্য। কয়েক দিন আগে আইএমএফের প্রতিনিধিদল দেশের অর্থনীতি কোথায় আছে তা দেখতে এসে এই কথা বলেছে।

শনিবার রাজধানীর একটি পাঁচতারকা হোটেলে জাতীয় ভ্যাট দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।

অনুষ্ঠানে এ বছরের ভ্যাট সম্মাননাপ্রাপ্ত ৯টি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ নির্বাহীদের হাতে সম্মাননাপত্র তুলে দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের যে অর্জন তা সরকারের একক অর্জন নয়। এক হাতে এটি হয়নি। দেশের সব মানুষের সম্পৃক্ততায় এই অর্জন এসেছে। সরকার করদাতাদের কাছে ঋণী বলে তিনি উল্লেখ করেন।

গত ১৪ বছরে অর্থনীতিতে বাংলাদেশের সাফল্য তুলে ধরে মুস্তফা কামাল বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার যখন ক্ষমতায় আসে, তখন আমাদের অর্থনীতির আকার ছিল ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মতো। সেটি বেড়ে এখন দাঁড়িয়েছে ৪৬৫ বিলিয়ন ডলার। আর ৬০০ ডলারের মাথাপিছু আয় বেড়ে হয়েছে ২৮৬৪ ডলার।

তিনি দেশকে উচ্চ মধ্যম আয় ও উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে যেতে দেশবাসীকে সঠিকভাবে কর প্রদানের আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তোরণের পর রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে। আমার মনে হয়-সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব। তিনি বলেন, মূল্য সংযোজন হয় এমন পণ্যের পাশাপাশি বহুমূখী পণ্য উৎপাদন করা গেলে রপ্তানি বাড়বে। একইসাথে ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পায়নের প্রসার ঘটাতে পারলে রাজস্ব আয় বাড়ানো যাবে। এসবের উপযুক্ত নীতি সহায়তা এনবিআরে পক্ষ থেকে দেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

তিনি আরও বলেন, করদাতার যেন স্বতস্ফূর্তভাবে কর প্রদানের পরিবেশ পায়, সেই লক্ষ্যে অটোমেশনের মাধ্যমে রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা বাড়ানো হচ্ছে। দক্ষ জনবল বাড়ানোর পাশাপাশি ভ্যাট অফিস বাড়ানো হচ্ছে বলে তিনি জানান।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন নিয়মিত যাঁরা ভ্যাট দেন, তাঁদের হয়রানি না করা এবং কর ব্যবস্থায় আতঙ্কের পরিস্থিতি সৃষ্টি না করার আহ্বান জানান। তিনি করহার হ্রাস করে কর জাল বাড়ানোর সুপারিশ করেন।

এবার জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কার পাওয়ার তালিকায় উৎপাদন খাতে আছে অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ, ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যালস ইন্ডাস্ট্রিজ ও এসএমসি এন্টারপ্রাইজ, ব্যবসায় শ্রেণিতে গাজীপুরের ওয়ালটন প্লাজা, আগোরা লিমিটেড ও ইউনিমার্ট লিমিটেড, সেবা শ্রেণিতে বিকাশ লিমিটেড, আইএফআইসি ব্যাংক ও নগদ লিমিটেড।

অনুষ্ঠানে এনবিআর সদস্য জাকিয়া সুলতানা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।