অর্থনীতি

বাজারে আলুর কোনো সংকট নেই। মৌসুম শেষ হলেও বাজারে পুরাতন আলুর সরবরাহ যথেষ্ট। এরপর নতুন আলুও বাজারে উঠতে শুরু করেছে। তবুও পণ্যটি নিয়ে অসাধুদের কারসাজি যেন থামছে না। খুচরা পর্যায়ে হু হু করে বাড়ছে দাম। পরিস্থিতি সামাল দিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সুপারিশের ভিত্তিতে সরকার আলু আমদানিতে শুল্কহার ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করেছে। কম শুল্কের আলু দেশের বাজারেও এসেছে। কিন্তু কমিশন বাণিজ্য সিন্ডিকেটের কারসাজিতে আমদানি করা ২১ টাকা কেজির আলু খুচরায় ৭৫ টাকায় বিক্রি করেছে। ফলে পণ্যটি কিনতে হিমশিম খাচ্ছে ভোক্তা।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ভারত থেকে আলু আমদানি করতে কেজিপ্রতি খরচ পড়ে ২১ টাকা ৩০ থেকে ৬০ পয়সা। পরিবহণ খরচ ও অন্যান্য খরচ এবং লাভসহ এই আলু ২৫ থেকে ২৮ টাকা বিক্রির কথা। আর পাইকারি হয়ে খুচরা পর্যায়ে একই আলু ভোক্তাপর্যায়ে ৩০-৩৫ টাকা হওয়ার কথা। কিন্তু সেই আলু ক্রেতা ৭৫ টাকা কেজি দরে কিনছেন। আর এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে আমদানিকারক ও ঢাকার শ্যামবাজারের আড়তদার সিন্ডিকেট। আমদানিকারকরা কমিশনের মাধ্যমে আড়তদারদের দিয়ে আলু বিক্রি করায়। তারা দুই পর্যায়ে সিন্ডিকেট করে ২১ টাকা ৩০-৬০ পয়সার আলু আড়তদারদের ৫৫-৬০ টাকা বিক্রির নির্দেশ দিয়েছে। সেই মোতাবেক আড়তদাররা এই দামে আলু বিক্রি করছেন। যা অনৈতিক। ফলে এই আড়তি দামের আলু পাইকারি ও খুচরা বাজারে ৭০-৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

অন্যদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পুরাতন আলু প্রতি কেজি ৩৫ থেকে ৪০ টাকা দরের আলু হিমাগার পর্যায় থেকে দাম বাড়িয়ে ৬০-৬৫ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। সেই আলু পাইকারি বাজার হয়ে খুচরা পর্যায়ে ৭৫-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা এক মাস আগেও ৫৫-৬০ টাকা ছিল। বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন সূত্র জানায়, কোল্ড স্টোরেজে যারা আলু সংরক্ষণ করছেন, তারা এখন দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন। যে কারণে আলুর দাম বেশি বেড়েছে। এখানে গুটিকয়েক ব্যবসায়ী আছেন, যারা বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন।

নয়াবাজারে আলু কিনতে আসা আমেনা বেগম বলেন, এক কেজি আলুর দাম ৭৫ টাকা। এই এক কেজিতে আলু কয়টা উঠে? শীত আসার আগে আলুর দাম ২৫ টাকায় নেমে আসত। এবার চিত্র উলটো। দাম কমেনি বরং বেড়ে ৭৫ টাকা কেজি দরে কিনতে হচ্ছে। কিন্তু বাজারে আলুর কোনো সংকট নেই। বিক্রেতারা বাড়তি দামে আলু বিক্রি করছেন।

জানতে চাইলে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাবেক সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, কোনো সরকারই বাজারে সিন্ডিকেট ভাঙতে পারেনি। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে মানুষের প্রত্যাশা ছিল সিন্ডিকেট ভাঙবে। কিন্তু সেটাও দেখা যাচ্ছে না। সরকার গঠনের পর চাঁদাবাজি বন্ধ হওয়ায় হঠাৎ করে কিছু পণ্যের দাম কমেছিল। তবে কয়েকদিন পরই চাঁদাবাজির হাতবদল হওয়ায় ফের পণ্যের দাম বাড়তে শুরু করেছে। এর মধ্যে পুরোনো সেই সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে উঠেছে। বাড়িয়েছে পণ্যের দাম। এতে নাজেহাল ভোক্তা।

তিনি বলেন, পণ্যের দাম কে বাড়ায়, কারা সিন্ডিকেট করে সরকারের কাছে সব তথ্য আছে। ব্যবস্থা নিতে পারলে দাম কমবে। তবে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে ভর করেছে সব গাফিলতি। তিনি বলেন, গলাকাটা দাম আর কত সইবে ভোক্তা।

এ বিষয়ে অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মন্ডল বলেন, আলুর অসহনীয় দামের কারণে অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নির্দেশে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। অভিযানে বেরিয়ে আসে ভয়াবহ চিত্র। আমদানিকারকরা আলু ২১ টাকায় কিনলেও কমিশন বাণিজ্যের মাধ্যমে এই আলু ৫৫-৫৬ টাকায় বিক্রি করাচ্ছেন। এমন প্রমাণ হাতেনাতে ধরে শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে। সিন্ডিকেট ভেঙে আলুর দাম সহনীয় করা হচ্ছে।

এদিকে বাজারে বেশ কিছু দিন চড়া দাম থাকার পর সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০-২০ টাকা কমেছে। তারপরও খুচরা বাজারে এই পণ্য ১০০ টাকার উপরে বিক্রি হচ্ছে। শুক্রবার প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ১২০-১৩০ টাকা ও আমদানি করা পেঁয়াজ ১০০-১০৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

খুচরা বাজারে প্রতিটি ফুলকপি ও বাঁধাকপি ৫০-৬০ টাকা, প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ১৪০-১৬০ টাকা, মুলা ৫০-৬০ টাকা, শালগম ১০০ টাকা, বেগুন ৮০-১২০ টাকা, পেঁপে ৪০-৫০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৭০-৮০ টাকা ও লাউ ৬০-৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এছাড়া প্রতি কেজি সিম বিক্রি হচ্ছে ১০০-১২০ টাকা। যা ২ সপ্তাহ আগেও ২৩০-২৪০ টাকা ছিল। এছাড়া প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকা। ফার্মের মুরগির ডিম প্রতি ডজন ১৪৫-১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

অর্থনীতি

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পতন হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান সেদিন।এরপর দেশের দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তী সরকার।যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকার রাজনীতি ও রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ করছে।সংস্কার কাজ শেষে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে।সেই নির্বাচনে জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে অন্তর্বর্তী সরকার।

এরমধ্যেই রাজনীতির অন্দর মহল থেকে মাঠে আলোচনা হচ্ছে এক-এগারোর ‘মাইনাস টু’ ফর্মুলা নিয়ে।তবে এবার শোনা যাচ্ছে, এক-এগারোর সময় ‘মাইনাস টু’ নয়; ‘মাইনাস ফোর’-এর পরিকল্পনা ছিল তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের। বিষয়টি জানিয়েছেন লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ, যিনি এক-এগারোর সরকার নিয়ে গবেষণামূলক বই লিখেছেন।

রাজনৈতিক বিশ্বেষকদের ভাষ্য, এখন এই ‘মাইনাস টু কিংবা মাইনাস ফোর’ ফর্মুলাটি আলোচনা এসেছে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাওয়ার বিষয় ঘিরে।

গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে রাজনীতি ও রাষ্ট্র সংস্কারের বড় দাবি রয়েছে আন্দোলনকারীদের। ২০০৭ সালে এক-এগারোর সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারও রাজনীতিতে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছিল।সে সময় আলোচিত হয়েছিল ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’।

তৎকালীন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক কর্মকর্তা, সেনাপ্রধানসহ অনেকের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মহিউদ্দিন আহমদ। এ সময় রাজনীতিতে ‘মাইনাস টু’ ফর্মুলার বিষয়টি বিশেষভাবে জানার চেষ্টা করেছেন। তার ‘এক এগারো’ গ্রন্থে আলাদা একটি অধ্যায় রয়েছে ‘মাইনাস টু’ শিরোনামে।

মহিউদ্দিন বলেন, যখন এক-এগারো নিয়ে বই লিখি তখনতো আমি ব্রিগেডিয়ার বারী ও জেনারেল মইন- এদের ইন্টারভিউ করেছিলাম। আমি একবার বারীকে (চৌধুরী ফজলুল বারী) প্রশ্ন করলাম, আপনারা ‘মাইনাস টু’ কেন চাচ্ছিলেন? তিনি বলেন যে আমরা কখনো ‘মাইনাস টু’র কথা বলি নাই, এটা মিডিয়ার সৃষ্টি। আমরা চেয়েছিলাম মাইনাস ফোর।

‘মাইনাস টু’ বলতে প্রধান দুই দলের শীর্ষ নেত্রীদের বোঝানো হয়। তবে ‘মাইনাস ফোর’র বাকি দু’জন কারা সেটি পরিষ্কার না হলেও মহিউদ্দিন আহমদ ধারণা পান যে বাকি দুজন হলেন দুই নেত্রীর ছেলে তারেক রহমান এবং সজীব ওয়াজেদ জয়।এইটা আমাকে ওই সময় বলেছিল।

সম্প্রতি বিএনপির অন্যতম সিনিয়র নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের বক্তব্যে ‘এক-এগারো এবং মাইনাস টু’ প্রসঙ্গটি এসেছে। এক-এগারোর মতো বিরাজনীতিকরণের চক্রান্ত চলছে বলে বক্তব্য দেন তিনি।এ ছাড়া বিএনপির মহাসচিব তার এক বক্তব্যে বলেছেন, ‘কেউ যেন মাইনাস টু ফর্মুলার কথা না ভাবে।’

আবার মাইনাস ফর্মুলা আলোচিত হওয়া এবং এর সঙ্গে খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়ার সম্পর্ক আছে কি না- সেটি নিশ্চিত নয়। তবে মহিউদ্দিন আহমদের ধারণা মাইনাস ফর্মুলার একটা বিবেচনা থাকলেও থাকতে পারে।

মহিউদ্দিন বলেন, ‘ফোরের মধ্যে মাইনাস ওয়ান হয়ে গেছে ২০০৮ এ। আর পাঁচই আগস্ট আরও দুজন হয়ে মাইনাস থ্রি কমপ্লিট। এখন যদি খালেদা জিয়া বিদেশে চলে যান, তাহলে মাইনাস ফোর হয়ে যাবে। ওইটার ধারাবাহিকতাই আমার মনে হচ্ছে।’

‘মাইনাস ফর্মুলার’ বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও মুখপাত্র সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি মনে করেন, ২০০৭ সালে ওয়ান ইলেভেন সরকারের সঙ্গে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা চলে না।

তিনি বলেন, ‘আমি জানি না কেউ এগুলো উচ্চারণ করে কি না। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এটা জনগণের সরকার। এটা গণঅভ্যুত্থান, গণবিল্পব-গণতান্ত্রিক বিপ্লবের মধ্য দিয়ে সৃষ্ট জনগণের সরকার। সুতরাং এখানে মাইনাস ফর্মুলার কোনো অস্তিত্ব এখানে নেই। এই সরকার আমাদেরই সরকার। আমরা এই সরকারকে সহযোগিতা করি। এই সরকারকে ওউন করি।’

খালেদা জিয়ার চিকিৎসার প্রসঙ্গ

এক যুগ পর ২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, যার মাধ্যমে ছয় বছরেরও বেশি সময় পর সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীকে প্রকাশ্য কোনো অনুষ্ঠানে দেখা গেল।

নানা রোগে অসুস্থ খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠিয়ে চিকিৎসার দাবিতে রাজপথে টানা আন্দোলন করেছে বিএনপি।বিগত আওয়ামী লীগ সরকার তাকে বিদেশ যেতে অনুমতি দেয়নি। চলতি বছরের গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ায় এবার খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা নিতে আর কোনো বাধা নেই।

খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্যগত বিভিন্ন জটিলতা রয়েছে। বিদেশে দীর্ঘ যাত্রার জন্য খালেদা জিয়ার শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতিসহ বিভিন্ন বিষয় জড়িত এখানে।ওনার মাল্টিপল কোমর্বিডিটিজ আছে তো। কাজেই সব জিনিস বিবেচনায় নিয়েই প্ল্যানিং করতে হয়। আমরা ইচ্ছা করলেই আমরা অন্য পেশেন্টের জন্য যেমন একটা এয়ার অ্যাম্বুলেন্স এনে তিন ঘণ্টায় সিঙ্গাপুর বা ব্যাংকক নিয়ে গেলাম আমাদের ইস্যুটাতো এরকম না।

তিনি বলেন, ‘ইস্যুটা হচ্ছে টেকঅফ ল্যান্ডিং একটা নেগেটিভ প্রেসার মেইনটেনই করে সেটার মধ্যে সাসটেইন করা সবকিছু মিলিয়ে ডাক্তার সাহেবরা সবকিছু বিবেচনা করেই আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। খুব সহসাই শারীরিক অবস্থা যাওয়ার মতো হলেই ইনশাআল্লাহ আমরা আপনাদেরকে জানিয়েই যাব।’

এদিকে খালেদা জিয়ার জন্য বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করতে গিয়ে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে বলে জানান বিএনপির মুখপাত্র সালাহউদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার উদ্দেশ্যে বিদেশ যাওয়ার সমস্ত আয়োজন মোটামুটি সম্পন্ন হয়েছে। তবে দূরপাল্লার যাওয়ার মতো এয়ার অ্যাম্ব্যুলেন্স সংগ্রহ করাটার জন্য কিছুদিন বিলম্ব হচ্ছে। আশা করি ইতোমধ্যে ব্যবস্থা হয়েছে এবং খুব শিগগিরই উনি যেতে পারবেন। প্রথমে তিনি যুক্তরাজ্যে যাবেন এবং সেখানে চিকিৎসা নেওয়ার পরে ওনার চিকিৎসক দলের পরামর্শ অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উন্নত চিকিৎসার উদ্দেশ্যেই খালেদা জিয়া বিদেশ যাবেন এবং সেজন্য সরকারি পর্যায় থেকে সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার জন্য যাওয়ার ব্যাপারে কোনো রাজনৈতিক বিষয় নেই।সূত্র: বিবিসি

অর্থনীতি

মূল্য নির্ধারণ কাঠামোর সংস্কারের মাধ্যমে দেশের বাজারে জ্বালানি তেলের দাম লিটারপ্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত কমানো সম্ভব বলে জানিয়েছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। জ্বালানি তেলের দাম কমাতে মূল্য নির্ধারণ কাঠামো সংস্কারের সুপারিশ করেছে সংস্থাটি।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘বাজারভিত্তিক জ্বালানির মূল্য : সরকারের নেতৃত্বাধীন উদ্যোগ এবং সম্ভাব্য সংশোধন’ শীর্ষক সেমিনারে এসব তথ্য জানায় সিপিডি।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা সহযোগী হেলেন মাশিয়াত প্রিয়তী ও প্রোগ্রাম অ্যাসোসিয়েট ফয়সাল কাইয়ুম।

সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান (সচিব) মো. আমিন উল আহসান। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব খালিদ আহমেদ।

বিশিষ্ট আলোচক হিসাবে ছিলেন ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম, বাংলাদেশ ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিপ্পা) সহ-সভাপতি হুমায়ুন রশিদসহ প্রমুখ। সঞ্চালনায় ছিলেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম হোসেন।

স্বাগত বক্তব্যে গোলাম মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, সব খাতে সংস্কার চলছে। জ্বালানি খাতেও এর হাওয়া লাগছে। ভোক্তার স্বার্থ বিবেচনা করে জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণ করার সুযোগ রয়েছে। বিপিসির ভর্তুকির প্রয়োজন পড়ে না। কারণ তারা বড় মুনাফা করে। এই মুনাফা সমন্বয় করলে ভোক্তাস্বার্থ প্রাধান্য পাবে, এছাড়া ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বিদ্যুতে।

মূল প্রবন্ধে সিপিডি জানায়, বাজারভিত্তিক ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে মূল্য নির্ধারণ হলে জ্বালানি তেলের মূল্য ১০ থেকে ১৫ টাকা কমানো সম্ভব। বিপিসি কোন মডেল বা কোন আইনে জ্বালানির দাম নির্ধারণ করে তা পরিষ্কার নয়। দাম নিয়ে ভোক্তাও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না। ২০১৫ সাল থেকে তারা ভর্তুকি পায় না, কেননা তারা মুনাফা করে। জ্বালানি তেলের মূল্য বাড়িয়ে ক্ষতি সমন্বয় করে। বিইআরসিকে জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণ করার দায়িত্ব, কর্তৃত্ব বা মূল্য নির্ধারণ মডেল তৈরি করার আইনি কাঠামো দেওয়ার প্রস্তাব দেয় সিপিডি। বিইআরসি গণশুনানির মাধ্যমে ভোক্তার মতামত নেবে। এছাড়া বিইআরসির মাধ্যমে জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণ নীতিমালা দ্রুত বাস্তবায়ন জরুরি।

সিপিডি বলছে, প্রতিযোগিতামূলক দাম নির্ধারণ করতে চাইলে গ্রাহকের স্বার্থের বিষয়টি মাথায় রাখা উচিত। জ্বালানি তেলের দাম গ্রাহকের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা প্রয়োজন। পাশাপাশি মুদ্রার অবমূল্যায়নের কারণে মূল্য বৃদ্ধি পেলে পরে তা সমন্বয় করা যেতে পারে।

বক্তব্যে বিপিসির চেয়ারম্যান মো. আমিন উল আহসান বলেন, ‘জ্বালানি তেলের মূল্য কমাতে হলে তেলের চুরি কমাতে হবে। সিস্টেম লসের পরিমাণ কমাতে হবে। তাই তেল বিক্রির কার্যক্রম অটোমেশনের বিকল্প নেই। আমাদের স্টোরেজ ক্ষমতা কম, ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে বিপুল পরিমাণ টাকা বেশি খরচ হয়েছে। বর্তমানে স্টোরেজ বাড়ানোর কাজ চলছে। এতে খরচও কমার পাশাপাশি দামও কমবে।’

বিপিসির চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের ডেভেলপমেন্ট করার অনেক জায়গা আছে। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর আগের তুলনায় প্রিমিয়াম প্রাইজ কমিয়ে আনা হয়েছে। আগামী জানুয়ারি থেকে জুন মেয়াদে যে জ্বালানি তেল আমদানি করা হবে সেখানেও দাম আরও কমানোর সুযোগ তৈরি হয়েছে।

বিইআরসির চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ বলেন, জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণের এখতিয়ার বিইআরসির হাতে ছেড়ে দেওয়ার ইস্যুতে সরকার দ্বিধায় রয়েছে, যে কোনো সময় যে কোনো কিছু (হঠাৎ দাম বৃদ্ধি) হতে পারে, তখন ভোক্তারা বহন করতে পারবে কি না। আমি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেওয়ার পর উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলেছি, আমি জানিয়েছি, তেমন কোনো পরিস্থিতির উদ্ভব হলে সরকার বিইআরসির মাধ্যমেও ভর্তুকি দিতে পারবে। বিইআরসি সহসা এই তেলের দাম নিয়ে কাজ করবে। এটা নিয়ে আমরা কাজ করছি। বিপিসি যে তালিকা (ফর্মুলা) করেছে, সেই তালিকা চূড়ান্ত নয়, অবশ্যই অনেক বিষয় উঠে আসবে। ভোক্তাদের মতামতও নেওয়া হবে।

ক্যাবের জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. এম শামসুল আলম বলেন, বিগত সরকার ব্যবসায়ীদের সরকার ছিল, তারা ব্যবসায়ীদের স্বার্থে তেলের দাম নিজেদের হাতে রেখেছিলেন। কিন্তু আজকের সরকার কেন হাতে রাখতে চায়, কার স্বার্থে? তাহলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে সরকার কার স্বার্থ কাজ করছে। কেন এটা বিইআরসির হাতে ছেড়ে দিচ্ছে না এটা বড় প্রশ্ন।

তিনি বলেন, বিপিসি লাভ করে কত! তারা কস্ট প্লাস নয়, ট্রিপল প্লাস মুনাফা করে। বিপিসির কাছ থেকে করপোরেট ট্যাক্স নেয়, আবার ডিভিডেন্ড নেন। রেগুলেটরি কমিশন নিষ্ক্রিয়, হাইকোর্ট বারবার বলেছে নিষ্ক্রিয় থাকা অবৈধ। প্রয়োজন হলে ক্যাব আবার কোর্টে যাবে। কেন এখন পর্যন্ত বিদ্যুৎ জ্বালানি খাতের সংস্কার কমিশন হয় না। আমরা আগে থেকেই বলে আসছি সংস্কারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ খাতে বছরে ৪০ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব হবে।

জ্বালানি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব খালিদ আহমেদ বলেন, স্বাধীনতার এতদিন পরেও আমরা একটি রিফাইনারি করতে পারিনি। পুরোনো রিফাইনারির (ইআরএল) লাইফ টাইম অনেক আগে শেষ হয়ে গেছে। যার কারণে এখন এটির মাধ্যমে রিফাইন করা তেল আমদানি করা তেলের চেয়ে ব্যয় বেশি পড়ছে। এটা আমরা পাবলিকলি বলি না, কারণ তখন বলা হবে এটা বন্ধ করে দাও।

অর্থনীতি

রাজধানীতে এবার ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করবে সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)।

মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিসিবি জানায়, প্রতি কেজি আলু ৪০ টাকা করে বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন।বুধবার থেকে ঢাকায় সাধারণ ভোক্তাদের জন্য এসব আলু বিক্রি শুরু হবে।

এই কার্যক্রম বুধবার সকাল সাড়ে ৯টায় টিসিবি ভবন থেকে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন উদ্বোধন করবেন বলে জানা গেছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় নিম্ন আয়ের এক কোটি কার্ডধারী পরিবারে টিসিবির পণ্য (ভোজ্যতেল ও ডাল) সাশ্রয়ী মূল্যে বিক্রি চলছে। এই কার্যক্রমের পাশাপাশি ঢাকার ৫০টি ও চট্টগ্রামের ২০টি ট্রাকে ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির তেল, ডাল এবং খাদ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে চাল বিক্রি করা হচ্ছে। এর সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হচ্ছে আলু।

এতে আরও বলা হয়, প্রতি লিটার ভোজ্যতেল ১০০ টাকা, মসুর ডাল ৬০ টাকা এবং ৩০ টাকায় চাল পাওয়া যাবে। একজন গ্রাহক সর্বোচ্চ দুই লিটার তেল, দুই কেজি মসুর ডাল এবং পাঁচ কেজি চাল কিনতে পারবেন।

অর্থনীতি

৩ মাসেই বেড়েছে ৭৩,৫৮৬ কোটি টাকা * প্রকৃত খেলাপি ৭ লাখ কোটি টাকার কম হবে না -ড. মইনুল ইসলাম

দেশের ব্যাংকগুলোতে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা। ৩ মাসেই ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭৩ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানো আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে যে অর্থ বের করে নেওয়া হয়েছে, তা এখন খেলাপি হিসাবে চিহ্নিত হতে শুরু করেছে। ফলে ব্যাংক থেকে বিতরণ করা ঋণের প্রায় ১৭ শতাংশই বর্তমানে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য।

তবে ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন, প্রকৃত খেলাপি ঋণের অঙ্ক আরও বেশি। কারণ, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হিসাবে অবলোপন করা ও আদালতের আদেশে স্থগিত থাকা ঋণ বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। এছাড়া বিপুল অঙ্কের ঋণ পুনঃতফশিল করা আছে। সেগুলোও এই হিসাবে নেই। সরকার পরিবর্তনের পর ব্যাংক খাত সংস্কারে পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র আগামী দিনে আরও বেরিয়ে আসবে বলে মনে করছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। জানতে চাইলে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি ড. মইনুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, খেলাপি ঋণের এই তথ্য ভুয়া। কারণ বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান গভর্নর আহসান এইচ মনসুর নিজেই বলেছেন খেলাপি ঋণ ৬ লাখ কোটি টাকা। এছাড়া একটা গণমাধ্যমেও বলা হয়েছে প্রকৃত খেলাপি প্রায় ৭ লাখ কোটি টাকা। মূলত কৌশলগত কারণে বলা যাচ্ছে না। তবে প্রকৃত খেলাপি ঋণ ৭ লাখ কোটি টাকার কম হবে না। কারণ এখানে ঋণ অবলোপন, অর্থঋণ আদালতে মামলা, আদালতে স্থগিতাদেশ ও ঋণ পুনঃতফসিল করা বিপুল অঙ্কের টাকার হিসাব নেই।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুন শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। তখন দেশের ব্যাংকগুলো থেকে বিতরণ করা ঋণের ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ ছিল খেলাপি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করে, তখন মোট খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। এরপর থেকে খেলাপি ঋণের অঙ্ক বেড়েই চলছে। অর্থনীতিবিদরা অনেক দিন ধরেই অভিযোগ করছেন, তৎকালীন সরকারের ছত্রছায়ায় ব্যাংক থেকে বিপুল অর্থ লুটপাট হয়েছে, যার একটা বড় অংশই পাচার হয়েছে বিদেশি।

এ প্রসঙ্গে এনসিসি ও মেঘনা ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ নুরুল আমিন যুগান্তরকে বলেন, বর্তমানে খেলাপি ঋণের যে তথ্য প্রকাশ হয়েছে এটা এখন পর্যন্ত প্রকৃত তথ্য। আগের মতো তথ্য গোপন, লুকোচুরি, কারচুপির সুযোগ নেই। আশঙ্কা হচ্ছে, ধীরে ধীরে খেলাপি ঋণ আরও বেড়ে যাবে। যা আন্তর্জাতিক ব্যবসার জন্য খুবই ক্ষতিকর। কারণ যে কয়েকটি ব্যাংকে লুটপাট হয়েছে এবং যারা লুটপাট করেছে তারা এখন নানাভাবে পলাতক বা গা-ঢাকা দিয়েছে। তাদের ব্যবসা আর ভালোভাবে চলবে না। ফলে খেলাপি ঋণ আরও বাড়বে। এটা হলো দুশ্চিন্তার বিষয়। যা ব্যাংক খাতের জন্য অশনি সংকেত।

জানা গেছে, ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর এই দ্বিতীয়বার খেলাপি ঋণের তথ্য পাওয়া গেছে, ফলে খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র বের হতে শুরু করেছে। সাবেক সরকারের আমলে ব্যাংক থেকে প্রভাবশালীদের বড় অঙ্কের ঋণ দিতে নানা সুবিধা দেওয়া হয়েছিল। পাশাপাশি খেলাপি ঋণ কাগজে-কলমে কম দেখাতে নেওয়া হয়েছিল একের পর এক নীতি। সরকার পরিবর্তনের পর সেই নীতি থেকে সরে এসেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুন থেকে সেপ্টেম্বর এই ৩ মাসে খেলাপি ঋণ বাড়াতে সরকারি ব্যাংকের চেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে বেসরকারি ব্যাংকগুলো। এই সময়ে সরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৩ হাজার ৬২৮ কোটি টাকা। আর বেসরকারি ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির পরিমাণ ছিল ৪৯ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা।

বিশেষ করে এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণমুক্ত ব্যাংকগুলো ঋণের প্রকৃত চিত্র দেখাতে শুরু করেছে। এদের মধ্যে ইসলামী ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। একইভাবে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণও বেশ বেড়েছে। পাশাপাশি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন বেক্সিমকো গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ, থার্মেক্সসহ আরও কিছু বড় ও মাঝারি ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর ঋণ খেলাপি হয়ে পড়েছে। এতেও বেড়েছে খেলাপি ঋণ।

এদিকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের অঙ্ক দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২৬ হাজার ১১১ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ৪০ দশমিক ৩৫ শতাংশ।

অন্যদিকে বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের অঙ্ক দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৪৯ হাজার ৮০৬ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ১১ দশমিক ৮৮ শতাংশ। বিদেশি ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের অঙ্ক দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা বা বিতরণ করা ঋণের ৪ দশমিক ৯৯ শতাংশ এবং বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের অঙ্ক ৫ হাজার ৮১৩ কোটি টাকা।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, অক্টোবর-ডিসেম্বর ত্রৈমাসিকে খেলাপি ঋণ আরও বাড়বে। কারণ, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রভাবশালী ব্যবসায়ী গোষ্ঠীগুলো ভুয়া দলিল ও অনিয়মের মাধ্যমে বড় অঙ্কের ঋণ নিয়েছিল। সরকার পতনের পর এই ঋণের একটি অংশ এখন খেলাপিতে পরিণত হবে।

তারা বলেন, শুধু এস আলম ও তার সহযোগীরা একাই ছয়টি ব্যাংক থেকে ৯৫ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ নিয়েছে। ইতোমধ্যে এসব মন্দ ঋণে পরিণত হওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে।

ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, অস্থিতিশীল অর্থনৈতিক অবস্থাকে কারণ হিসাবে দেখিয়ে অনেকে ঋণ পরিশোধ করতে চান না। তাদের এই প্রবণতা মন্দ ঋণের বোঝা আরও বাড়াতে পারে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা অধিকাংশ ঋণ অনিয়ম ও কেলেঙ্কারির মাধ্যমে নেওয়া হয়েছে। ফলে এসব ঋণ আদায় করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

অর্থনীতি

সরকারি কর্মচারীদের সম্পদ বিবরণীর তথ্য গোপনীয়তার স্বার্থে সিলগালা করা খামে কর্তৃপক্ষ বরাবর দাখিল করতে হবে। সম্পদ বিবরণী দাখিলের শেষ তারিখ ৩০ নভেম্বর।

রোববার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে এ কথা বলা হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত ছকে সম্পদ বিবরণী দাখিল করতে হবে। ছকটি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর ও সংস্থার নিজস্ব ওয়েবসাইট থেকে সংগ্রহ করা যাবে।

দুর্নীতির লাগাম টানতে বছর বছর সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। প্রতিবছর ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে হিসাব বিবরণী দেওয়ার কথা থাকলেও এ বছর তা ৩০ নভেম্বরের মধ্যে দিতে বলেছে মন্ত্রণালয়। সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯, যা ২০০২-এ সংশোধনী এনে সরকারি কর্মচারীদের সম্পদ বিবরণী পাঁচ বছর পরপর দেওয়ার বিধান করা হয়। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর ১ সেপ্টেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সরকারি কর্মচারীদের সম্পদ বিবরণী দাখিলের নির্দেশনা দেয়।

কে কোথায় দাখিল করবেন- ক্যাডার বা নন-ক্যাডার (নবম বা তদূর্ধ্ব গ্রেড) কর্মকর্তা তার নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় বা বিভাগের সচিবের কাছে সম্পদ বিবরণী দাখিল করবেন।

গেজেটেড বা নন-গেজেটেড কর্মকর্তা বা কর্মচারীরা (১০ম থেকে ২০তম গ্রেড) নিজ নিজ নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের কাছে সম্পদ বিবরণী দাখিল করবেন।

অর্থনীতি

পবিত্র রমজান মাসে চাহিদা বাড়ে এমন ১১ ধরনের পণ্য আমদানিতে এলসি মার্জিন শিথিল করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পণ্যগুলো হচ্ছে– চাল, গম, পেঁয়াজ, ডাল, ভোজ্যতেল, চিনি, ডিম, ছোলা, মটর, মসলা ও খেজুর।

রোববার (১৭ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটি সার্কুলার জারি করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে।

নির্দেশনায় বলা বলছে, এসব পণ্য আমদানিতে এখন থেকে ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে এলসি মার্জিন ন্যূনতম পর্যায়ে রাখার নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

শীঘ্রই এ নির্দেশনা কার্যকর হবে এবং ২০২৫ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত বহাল থাকবে।

অভ্যন্তরীণ বাজারে এসব পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করতে আমদানি ঋণপত্র খুলতে অগ্রাধিকার প্রদানের জন্য পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

আসন্ন পবিত্র রমজান উপলক্ষে বেশি ব্যবহৃত পণ্যগুলো আমদানির ক্ষেত্রে আগের বিধিনিষেধ কিছুটা শিথিল করা হয়েছে। এখন থেকে চাল, গম, পেঁয়াজ, ডাল, ভোজ্যতেল, চিনি, ডিম, ছোলা, মটর, মসলা ও খেজুর আমদানির এলসি খুলতে শতভাগ মার্জিন লাগবে না। ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে সাধারণত ৫ থেকে ২০ শতাংশ মার্জিন নেওয়া হয়, উল্লেখিত পণ্য আমদানি ক্ষেত্রেও এখন থেকে মার্জিনের এই হার নির্ধারণ করা যাবে।

এর আগে গত ১১ নভেম্বর এক প্রজ্ঞাপনে পবিত্র রমজান মাসে চাহিদা বাড়ে এমন ১১ ধরনের খাদ্যপণ্য আমদানিতে বিলম্বে বিল পরিশোধের অনুমতি দিয়ে নির্দেশনা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে আসন্ন রমজানকে সামনে রেখে এসব খাদ্যপণ্য বাকিতে আমদানি করা যাবে। এক্ষেত্রে ঋণপত্র খোলার সময় আমদানিকারকদের কোনো অর্থ তাৎক্ষণিকভাবে ব্যাংকে জমা দিতে হবে না। এতে এসব খাদ্যপণ্য দ্রুত ও সহজে আমদানি করা যাবে।

যেসব পণ্যের ক্ষেত্রে এ সুবিধা পাওয়া যাবে সেগুলো হলো– চাল, গম, পেঁয়াজ, ডাল, ভোজ্যতেল, চিনি, ডিম, ছোলা, মটর, মসলা ও খেজুর। এসব পণ্য বাংলাদেশে পাঠানোর জন্য জাহাজে ওঠানোর ৯০ দিন পর পর্যন্ত ব্যাংকের বিল পরিশোধ করা যাবে।

সরকারের এ সব উদ্যোগের ফলে রমজানে ব্যবহৃত পণ্যের সরবরাহ বৃদ্ধি পাবে। ফলে দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।

অর্থনীতি

বাংলাদেশে শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করেছে নেপাল। ভারতের পর তৃতীয় কোনো দেশ হিসেবে বাংলাদেশে প্রথমবার বিদ্যুৎ রপ্তানি শুরু করেছে ‘হিমালয়কন্যা’খ্যাত রাষ্ট্রটি।

যদিও এ বছর একদিনই মিলবে নেপালের বিদ্যুৎ।

চীনের সংবাদমাধ্যম সিনহুয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ত্রিপক্ষীয় চুক্তি অনুসারে ভারতের সরবরাহ লাইনের মাধ্যমে নেপাল থেকে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসছে বাংলাদেশে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানসহ তিন দেশের কর্মকর্তারা কাঠমান্ডুতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে দুপুরে সুইচ চেপে বিদ্যুৎ সরবরাহের উদ্বোধন করেন।

গত অক্টোবরে নেপালে এই ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। নেপাল বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র চন্দন কুমার ঘোষ বলেন, চুক্তি অনুসারে এ বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে কেবল একদিনই বিদ্যুৎ বিক্রি করতে পারবে নেপাল। বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রপ্তানি আবার শুরু হবে ২০২৫ সালের ১৫ জুন।

ওই চুক্তি মোতাবেক, পাঁচ বছরের মধ্যে প্রতি বছরের ১৫ জুন থেকে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত নেপাল বাংলাদেশে বিদ্যুৎ বিক্রি করতে পারবে। অর্থাৎ বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে নেপালের বিদ্যুৎ মিলবে বাংলাদেশে।

দুদেশের মধ্যে সরাসরি বৈদ্যুতিক সংযোগ নেই বিধায় ভারতের সঞ্চালন লাইন হয়ে আসছে এই বিদ্যুৎ।

চন্দন কুমার ঘোষ জানান, বাংলাদেশের গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত ভারতের গ্রিডে সঞ্চালন সক্ষমতা সীমাবদ্ধ থাকায় নেপাল মাত্র ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাঠাতে পারছে। আরও সঞ্চালন লাইন তৈরি হলে সামনের বছরগুলোতে আরও বেশি বিদ্যুৎ সরবরাহের সুযোগ আছে।

বর্ষা মৌসুমে অতিরিক্ত জলবায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদন করে থাকে নেপাল। সেজন্য ২০২১ সালের নভেম্বর থেকে ভারতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আসছে তারা।

অর্থনীতি

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি অনুযায়ী নিট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নামলো ১৮ দশমিক ৪৩ বিলিয়ন এক হাজার ৮৪৩ কোটি ৭৫ লাখ ৮০ হাজার ডলারে (বিপিএম৬)।

একই সময়ে বৈদেশিক মুদ্রায় গঠিত বিভিন্ন তহবিলসহ মোট রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৪১৬ কোটি ৮১ লাখ ডলার।

বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) এ তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন বা আকুর সেপ্টেম্বর–অক্টোবর দুই মাসের এক দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার দায় পরিশোধ করার রিজার্ভ ১৯ বিলিয়ন ডলারের নিচে নামলো। অবশ্য ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভের পরিমাণ ১৩ বিলিয়ন ডলারের কিছুটা ওপরে।

আকু হলো আন্তঃদেশীয় লেনদেন নিষ্পত্তির ব্যবস্থা। যার মাধ্যমে বাংলাদেশ ছাড়াও ভুটান, ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল ও পাকিস্তান মধ্যকার লেনদেনের দায় পরিশোধ করা হয়। ইরানের রাজধানী তেহরানে এর সদর দপ্তর। এ ব্যবস্থায় সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতি দুই মাস অন্তর আমদানির অর্থ পরিশোধ করে থাকে।

গত সপ্তাহর শেষে নিট রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২০ বিলিয়ন ডলার (বিপিএম-৬) ডলার। আর মোট রিজার্ভ ছিল ২৫ দশমিক ৭২ বিলিয়ন ডলার, বা দুই হাজার ৫৭২ কোটি ৮৮ লাখ ২০ হাজার ডলার।

রিজার্ভ ১৯ বিলিয়ন ডলারের নিচে নামা দুশ্চিন্তার কিছু নেই বলে মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, রিজার্ভ চলমান একটি বিষয়। একবার কমবে, আবার বাড়বে। তবে এখন প্রবাসী আয়ের প্রবাহ ইতিবাচক আছে, সাময়িকভাবে কমলেও আবার বাড়বে রিজার্ভ।

অর্থনীতি

দেশের বাজারে চালের সরবরাহ স্বাভাবিক এবং দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে চালের শুল্ক প্রত্যাহার, টাস্কফোর্স গঠন, আমদানির অনুমোদন, কিছু পণ্যের দাম বেঁধে দেওয়াসহ সরকারের নানা উদ্যোগেও ভোক্তার স্বস্তি মিলছে না। চালের বাজারের ঊর্ধ্বগতিতে ভোক্তাদের নাভিশ্বাস উঠে গেছে।

সাম্প্রতিক অতিবৃষ্টি এবং ভারতসহ উজানের দেশগুলো থেকে আসা ঢলে আমনের আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া ধান ও চালের মজুত গড়ে তুলে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে দাম বাড়াচ্ছেন বলেও অভিযোগ উঠছে।

একই সঙ্গে বিশ্ববাজারে চালের দাম দেশের বাজারের তুলনায় বেশি। এসব কারণে গত ১৫ দিনে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি চালের দাম দুই থেকে চার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

সম্প্রতি দেশের পাইকারি ও খুচরা বাজারে চালের দাম সহনীয় রাখতে চাল আমদানিতে শুল্ক পুরোপুরি প্রত্যাহার করে সরকার। ফলে ১৯ মাস পর দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে চাল আমদানি শুরু হয়েছে।

এরইমধ্যে আমন ধান কাটা শুরু হলেও কমছে না চালের দাম। এদিকে ভারতও চালের ওপর শুল্ক কমিয়েছে। তাতেও আমদানিতে আগ্রহী নন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা।

দেশের ব্যবসায়ীরা বলছেন, চাল যদি আমদানি করা হয়, তবে বর্তমানে দেশের বাজারের চেয়ে বেশি দাম দিয়ে ক্রেতাদের কিনতে হবে। শুল্ক কমানো হলেও এ মুহূর্তে দেশে চালের দামে প্রভাব পড়বে না। আর যে চাল আমদানি করা হয়েছে, তাও বাজারে আসতে আরও এক সপ্তাহ সময় লাগবে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের কোনো উদ্যোগ কাজে আসছে না। শুল্ক কমানোর পর এর সুবিধা একটি পক্ষ নিয়ে নিচ্ছে, ভোক্তারা পাচ্ছেন না। সরকারের নজরদারিতে ঘাটতি রয়েছে, তদারকি আরও বাড়াতে হবে।

তারা বলছেন, সরকার এখন শুধু খুচরা পর্যায়ে তদারকি করছে। কিন্তু বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য উৎপাদক, করপোরেট, মিল, পাইকারি ও খুচরা— সব স্তরেই তদারকি করতে হবে, যা হচ্ছে না।

তারা আরও বলছেন, যেভাবেই হোক, বাজারে সরবরাহ বাড়িয়ে দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। সরকার বাজার সংস্কারের সুনির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা না নেওয়ায় শৃঙ্খলা ফিরছে না। বাজার ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর পরামর্শ তাদের।

মঙ্গলবার রাজধানীর কয়েকটি খুচরা ও পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চালের দাম কমেনি। অথচ চালের দাম কমাতে গত অক্টোবরে দুদফায় শুল্ক সাড়ে ৬২ শতাংশ থেকে কমিয়ে দুই শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। এরপরও কমেনি।

খুচরা বাজারে জাত ও মানভেদে চিকন চাল দেশি বাসমতির কেজি ৯০ থেকে ৯৫ টাকা, নাজিরশাইল চাল ৭২ থেকে ৮২ টাকা, মিনিকেট চাল ৬৮ থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর মাঝারি মানের বি আর ২৮, ২৯ নম্বর চাল ৬২ থেকে ৬৫ টাকা এবং গুটি, স্বর্ণা, চায়না ইরিসহ মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৮ টাকায়।

সূত্রাপুর বাজারের মেসার্স আদনান অ্যান্ড আরাফাত ট্রেডার্সের মালিক মো. ফারুক বাংলানিউজকে বলেন, আমদানির চাল এখনো বাজারে আসেনি। চাল ঢুকলে দাম কমতে পারে। চালের বাজার একটু দেখছি। ভারতে থেকে চাল এনে লাভ করতে পারব না। কারণ সেদেশেই চালের দাম বেশি, ডলার রেট ও পরিবহন খরচও বেশি। তাই আমাদের বাজারে দাম কমার সুযোগ কম।

এদিকে পাইকারি বাজারে বর্তমানে চিকন চাল প্রতি কেজি দেশি বাসমতি চাল প্রতি কেজি ৮৫ থেকে ৮৮ টাকা। নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৮ টাকায়। মিনিকেট মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়।

মাঝারি মানের বি আরের কেজি ২৮ চাল ৬০ টাকা। বি আর ২৯ চালের কেজি ৫৮ টাকা। পাইজামের কেজি ৫৭ থেকে ৬১ টাকা। মোটা চাল গুটি স্বর্ণা মানভেদে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। হাইব্রিড ধানের চাল (গুটি) বা সব চেয়ে মোটা চালের কেজি ৪৯ টাকা।

রাষ্ট্রীয় বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এখন চালের দাম সাত থেকে ১০ শতাংশ বেশি। এক মাসে বেড়েছে দুই শতাংশ পর্যন্ত। বাজারে এখন মোটা চালের কেজি ৫২ থেকে ৫৫ টাকা।

মাঝারি মানের চালের কেজি ৫৮ থেকে ৬৩ টাকা। সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৭২ থেকে ৮০ টাকায়। এ ছাড়া গত সপ্তাহে মাঝারি মানের চালের দাম বেড়ে যায় প্রায় এক শতাংশ। গত মাসে বাড়ে প্রায় দুই শতাংশ।

বার্ষিক হিসাবে চিকন চালের দাম বেড়েছে নয় দশমিক শূন্য নয় শতাংশ। মাঝারি মানের চালের দাম বেড়েছে ১১ দশমিক ৪৩ শতাংশ। মোটা চালের দাম বেড়েছে সাত দশমিক ১৪ শতাংশ।

এদিকে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে বৈরী আবহাওয়ার কারণে চাল উৎপাদন ব্যাহত হয়। পর্যাপ্ত সরবরাহ ও দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাল রপ্তানিতে উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ এবং কোনো কোনো মানের চালের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দেয় দেশটির সরকার।

তবে গত ২৩ অক্টোবর ভারত সরকার টনপ্রতি ন্যূনতম রপ্তানি দাম ৪৯০ ডলার তুলে দিয়ে বাসমতি ছাড়া অন্য চালের ওপর রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা শিথিল করে। ভারত সেদ্ধ চালের ওপর ১০ শতাংশ রপ্তানি শুল্ক তুলে নেওয়ার একদিন পর এ উদ্যোগ নেওয়া হয়।

এসব উদ্যোগ আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম কমাতে সহায়তা করতে পারে। তবে স্থানীয় আমদানিকারকেরা বর্তমান দাম বিবেচনায় আমদানির কার্যকারিতা সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।

মেসার্স রশিদ রাইস এজেন্সির মালিক বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমানে বাজারে চালের সরবরাহ কম। সরবরাহ বাড়লে দাম এমনিতেই কমে যাবে। কয়েকদিন পর আমন উঠবে। তখন মোটা চালের দাম কমবে। আর সরকার চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে।

তিনি বলেন, আমদানির চাল বাজারে আসতে আরও এক সপ্তাহ সময় লাগবে। তবে আমদানি করা চালের দাম দেশি চালের চেয়ে বেশি হলেও তা মানুষ খাবে। কারণ চালের মান ভালো। যারা ভালোটা খান, তাদের কাছে দাম কোনো বিষয় নয়। আমরা আশা করছি, চালের দাম শিগগিরই কমে যাবে।

বাবুবাজারের চালের আড়ত মেসার্স ফেমাস রাইস এজেন্সির বিক্রয়কর্মী মো. সেলিম বাংলানিউজকে বলেন, ভারতে চালের দাম বেশি। মিনিকেট আনলে দাম পড়বে ৭৪ টাকা। আর দেশি মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৭২ টাকায়। চিকন চাল এনে লাভ হবে না।

তিনি বলেন, মোটা চাল আনলে দাম একটু কমবে। আমনের মোটা চাল উঠলে দাম কমবে। চিকন চাল বৈশাখ মাসের আগে আসবে না। তার আগে আর চালের দামও কমবে না।

হাজী রাইস এজেন্সির ব্যবস্থাপক রুহুল আমিন বলেন, গত ১৫ দিনে মোটা চিকন সব ধরনের চালে দুই থেকে চার টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। চাল আমদানি হয়েছে শুনেছি। কিন্তু বাজারে এখনও আসেনি। মনে হয় না তেমন কোনো লাভ হবে। কারণ আন্তর্জাতিক বাজারেও চালের দাম বেশি।

তিনি বলেন, নভেম্বরের শেষে বাজারে নতুন আমন চাল এলে মোটা চালের দাম একটু কমবে। আর এ সময়ের মধ্যে আমদানি করা চালও বাজারে আসবে। মোটামুটি বলা যায়, ডিসেম্বর থেকে চালের দাম কমে যাবে।

গত অক্টোবরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি) সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে সরকারের কাছে দেওয়া এক প্রতিবেদনে এর আগে বলা হয়েছিল, চাল আমদানি বাড়াতে শুল্ক-কর পুরোপুরি তুলে নেওয়া দরকার। চাল সরকারের জন্য একটি সংবেদনশীল পণ্য। গরিব মানুষের খাদ্য ব্যয়ের একটি বড় অংশ যায় চালের পেছনে।

ওই প্রতিবেদনে বিশ্ববাজারের একটি চিত্র তুলে ধরে বলা হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে এক বছর আগের তুলনায় এখন চালের দাম ১১ শতাংশ কম। গত এক মাসে তা ৪ থেকে ৫ শতাংশ কমেছে। কিন্তু তারপরও আমদানি করতে গেলে খরচ অনেক পড়বে।

কমিশন বলেছিল, থাইল্যান্ডের চালের দাম পড়বে ৬৬ টাকা কেজি। এর সঙ্গে শুল্ক-কর ও অন্যান্য খরচ যোগ করলে দেশে দাম পড়বে ৯২ থেকে ৯৫ টাকা। ভারত থেকে আমদানি করতে গেলে প্রতি কেজির দাম পড়বে ৫৪ টাকা। এর সঙ্গে শুল্ক-কর ও অন্যান্য খরচ যোগ করে দাম পড়বে ৭৫ থেকে ৭৮ টাকা। ট্যারিফ কমিশনের মত ছিল, এ দামে চাল আমদানি কঠিন। তাই শুল্ক-কর তুলে নেওয়ার সুপারিশ করা হয়।

ট্যারিফ কমিশনের সুপারিশে সরকার ২০ অক্টোবর এক দফায় চালের শুল্ক-কর সাড়ে ৬২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশে নামায়। শুল্ক কমানোর ফলে প্রতি কেজিতে আমদানি খরচ ১৪ টাকা ৪০ পয়সা কমে। তবে এরপরও আমদানির ঋণপত্র বাড়েনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, শুল্ক-কর প্রথম দফায় কমানোর পর সেই পর্যন্ত মাত্র ২৬ টন চাল আমদানির ঋণপত্র (এলসি) খোলা হয়। ট্যারিফ কমিশন বাকি শুল্ক-করও তুলে নেওয়ার সুপারিশ করে। তবে সুনির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য। ৩১ অক্টোবর এনবিআর (জাতীয় রাজস্ব বোর্ড) চালের শুল্ক পুরোপুরি তুলে নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে।

এদিকে খাদ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত মাসের শেষ দিকে তাদের গুদামে চালের মজুত ১০ লাখ টনের নিচে নেমে যায়, যা ১৫ আগস্ট ছিল প্রায় সাড়ে ১৪ লাখ টন। সরকারিভাবে বিতরণ বাড়ানোয় মজুত কমে যাওয়ার ব্যাখ্যা দেওয়া হয় অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে। এরপর আমদানিতে উৎসাহ দেওয়ার পরামর্শ আসে।

সে কারণে রপ্তানিকারক দেশের সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে ‘জি টু জি’ ভিত্তিতে (সরকারের সঙ্গে সরকারের চুক্তি) চাল আমদানির বিষয়টি বিবেচনা নিয়ে সরকার পাঁচ লাখ টন চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়। এর আগে সরকার ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১২ লাখ টনের বেশি চাল আমদানি করেছিল। পরের বছর আমদানি হয় এক হাজার টনেরও কম।

ইতোমধ্যে ভারত থেকে আমদানি করা চাল আসা শুরু হয়েছে। দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ১১ নভেম্বর ভারতীয় দুটি ট্রাকে চাল আমদানির প্রথম চালান দেশে প্রবেশ করে। ইতোমধ্যে মোট ১০২টি প্রতিষ্ঠানকে চার লাখ ২৫ হাজার টন সেদ্ধ ও এক লাখ ৬২ হাজার টন আতপ চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আগামী ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত এলসির বিপরীতে বরাদ্দপ্রাপ্তরা চাল আমদানি করতে পারবেন।

খাদ্যসচিব মো. মাসুদুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, আমদানিকারকরা চাল আমদানি শুরু করেছেন। এরইমধ্যে হিলি বন্দর দিয়ে দেশে চাল এসেছে। সামনের দিনগুলোতে আরও চাল আসবে। আগামী সপ্তাহে বাজারে আমন চাল আসবে। আশা করছি আগামী সপ্তাহ থেকে দাম কিছুটা হলেও কমবে।

আমদানির চাল দেশি চালের থেকে দামে বেশি হবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা- এ নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, লাভ না হলে তো আমদানিকারকেরা আর আমদানি করবেন না। আমদানি করা চালের দাম দেশি চালের থেকে দুই এক এক বেশি ঠিক আছে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্যে হলো বাজারে চালের সরবরাহ বাড়িয়ে দাম স্থিতিশীল রাখা। এজন্য আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আর বাজারে সরবরাহ রাড়লে দাম এমনিতেই কমে যাবে। আমাদের উৎপাদন খরচটাও মাথায় রাখতে হবে।

সচিব বলেন, আমদানি ছাড়াও চালের দাম নিয়ন্ত্রণে আমাদের বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি আছে। টিসিবির মাধ্যমে সহায়তা করা হচ্ছে। তা বাড়ানো হতে পারে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে চালের বার্ষিক চাহিদা তিন কোটি ৭০ লাখ থেকে তিন কোটি ৯০ লাখ টন। গত অর্থবছরে তিন কোটি ৯০ লাখ ৩৫ হাজার টন চাল উৎপাদন হয়েছিল। তারপরও বাজারে চালের দাম বেশি ছিল।

এ বিষয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির বাংলানিউজকে বলেন, চাল আমদানিতে শুল্ক কমানোর জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। তবে দেশে আমদানি করা চাল আসছে। তারপরও কেন দাম কমছে না সে বিষয়ে সরকারকে কঠোরভাবে মনিটরিং করতে হবে।

তিনি বলেন, সরকারের নজরদারিতে ঘাটতি রয়েছে, তদারকি আরও বাড়াতে হবে। সরকার এখন শুধু খুচরা পর্যায়ে তদারকি করছে। কিন্তু বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য উৎপাদক, করপোরেট, মিল, পাইকারি ও খুচরা— সব স্তরেই তদারকি করতে হবে, যা হচ্ছে না।

বর্তমান সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে একটা গোষ্ঠী কৃত্রিম সংকটের চেষ্টা করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমানে কৃষকের কাছে কোনো ধান নেই। করপোরেট পার্টিগুলো সব কিনে নিয়ে গুদাম ভরে রেখেছে। বিভিন্ন করপোরেট গুদামে গিয়ে মনিটরিং করতে হবে।

তার পরামর্শ, বাজারে সরবরাহ বাড়াতে হবে। এ ছাড়া শুল্ক কমানোর পর এর সুবিধা একটি পক্ষ নিয়ে নিচ্ছে, ভোক্তারা পাচ্ছেন না। এজন্য যেভাবে হোক বাজারে সরবরাহ বাড়িয়ে দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। এখন আমনের মৌসুম। সেই চাল বাজারে এলে দাম একটু কমবে বলে আশা করেন তিনি।

গত ৩১ আগস্ট বোরো মৌসুমের সংগ্রহ কার্যক্রম শেষ হয়। এ মৌসুমে ১১ লাখ টন সিদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল, হয় ১১ লাখ ২৫ হাজার টন। আতপ চালও এক লাখ টনের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৪ হাজার টন বেশি হয়। তবে ধানের সংগ্রহ কম হয়েছে। আর বর্তমান আমন মৌসুমে ১০ লাখ মেট্রিক টন ধান চাল সংগ্রহ করা হবে।