অর্থনীতি

আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) নির্বাহী পরিষদের বৈঠকে বাংলাদেশের অনুকূলে ঋণের তৃতীয় কিস্তির অর্থ ছাড়ের প্রস্তাবটি উপস্থাপন করা হবে সোমবার। ওই বৈঠকে বাংলাদেশের ঋণের অর্থ ছাড় করার প্রস্তাবটির চূড়ান্ত অনুমোদন মিলতে পারে। এটি অনুমোদন হলে পরবর্তী এক-দুদিনের মধ্যে অর্থ ছাড় করা হবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ ওই অর্থ পেয়ে যাবে। তখন দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কিছুটা বেড়ে যাবে। সাময়িকভাবে কিছুটা উপশম হবে। বাজারে ডলারের প্রবাহ কিছুটা বাড়বে।

যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে আইএমএফ-এর সদর দপ্তরে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশ সময় সোমবার রাত সাড়ে ৯টায়। প্রস্তাবটি ওই বৈঠকে অনুমোদন হতে পারে বলে আগেই জানিয়েছিল বাংলাদেশ সফর করে যাওয়া আইএমএফ মিশন।

ঋণের কিস্তির অর্থ ছাড়ের বিষয়ে আইএমএফ-এর দেওয়া শর্ত বাস্তবায়ন এবং অর্থনৈতিক সংস্কারের অগ্রগতি দেখতে ২৪ এপ্রিল সংস্থাটির একটি মিশন ঢাকায় আসে। তারা ৮ মে পর্যন্ত অবস্থান করে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করে। এতে তারা শর্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতি ও ভবিষ্যৎ সংস্কার কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চায়।

প্রতিনিধিদলটি ঢাকা ত্যাগের আগে এমন বার্তা দিয়ে যায়, শর্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতিতে তারা খুশি। ঋণের তৃতীয় কিস্তির অর্থ ছাড়ের বিষয়ে তারা প্রতিবেদনে সুপারিশ করবেন। তারা আশা প্রকাশ করেন, নির্বাহী পরিষদ ঋণের অর্থ ছাড়ের প্রস্তাবটি অনুমোদন করবে।

বৈঠকে প্রস্তাবটি অনুমোদন হলে মঙ্গল বা বুধবার ঋণের অর্থ পাওয়া যাবে। এবার তৃতীয় কিস্তি বাবদ ১১৫ কোটি ২০ লাখ ডলার দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। টাকার বড় ধরনের অবমূল্যায়নের কারণে কিস্তির অর্থও বেড়েছে। এই অর্থ পেলে দেশের নিট রিজার্ভ আবার ২ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে। এর আগে একাধিকবার নিট রিজার্ভ ২ হাজার কোটি ডলারের নিচে নেমেছে।

এর আগে গত বছরের ৩১ জানুয়ারি আইএমএফ বাংলাদেশের অনুকূলে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করে। এর মধ্যে দুটি কিস্তিতে ১১৬ কোটি ডলার ছাড় করা হয়েছে। এখন তৃতীয় কিস্তি বাবদ ১১৫ কোটি ডলার ছাড় করার পর্যায়ে রয়েছে।

ঋণের চতুর্থ কিস্তির অর্থ ছাড়ের বিষয়ে চলতি বছরের নভম্বরের শেষদিকে আরও একটি মিশন ঢাকায় আসতে পারে। ডিসেম্বরে ঋণের চতুর্থ কিস্তির অর্থ ছাড় হওয়ার কথা রয়েছে।

শর্ত অনুযায়ী, প্রতি কিস্তির অর্থ ছাড় করার আগেই আইএমএফ তাদের দেওয়া শর্ত ও অর্থনৈতিক সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনা করবে। ঋণের তৃতীয় কিস্তির অর্থ ছাড়ের শর্ত বাস্তবায়ন করতে সুদের হার ও ডলারের দাম বাড়ানো হয়েছে। মূল্যস্ফীতির হার কমাতে সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণ করা হচ্ছে। জ্বালানি তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করার পদ্ধতি সীমিত আকারে চালু করা হয়েছে। বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। এতে পণ্যমূল্য যেমন বাড়ছে, তেমনই ভোক্তার জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে, যা ভোক্তার জন্য বড় অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এদিকে ঋণের তৃতীয় কিস্তির অর্থ ছাড়ের মূল্যায়নের সময় চতুর্থ কিস্তির শর্ত হিসাবে আইএমএফ বলেছে, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ডলারের দাম পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করতে হবে। ঋণের সুদের হারে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করা যাবে না। গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হবে। খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা আন্তর্জাতিক মানের করতে হবে। এতে বাজারে পণ্যমূল্য যেমন আরও বাড়বে, তেমনই ভোক্তার ওপর চাপ আরও বাড়বে।

অর্থনীতি

ইউনিফাইড পেমেন্টস ইন্টারফেস-ইউপিআই ব্যবহার করে বাংলাদেশে রু পে কার্ড এবং ভারতে টাকা পে কার্ড চালু করতে সম্মত হয়েছে উভয় দেশ।

শনিবার (২২ জুন) দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

বৈঠকের বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, দুই নেতা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব স্বীকার করেছেন। পানিসম্পদ সহযোগিতাকে এগিয়ে নিতে, উভয় দেশ গঙ্গা চুক্তির পুনঃনবায়ন আলোচনা শুরু করার জন্য একটি যৌথ কারিগরি কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভারত তিস্তা নদীর সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশকে সহায়তা করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ তিস্তা পানি বণ্টন চুক্তির দ্রুত সমাপ্তির কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে।

বৈঠকে দুই নেতা দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়ার প্রবণতার প্রশংসা করেছেন। বাণিজ্য ভলিউম বাড়ানোর সম্ভাব্য উপায় নিয়ে আলোচনা করেছেন। উভয় নেতা দুই দেশের জনগণের উন্নতির জন্য অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়ানোর কথাও উল্লেখ করেন। চাল, গম, চিনি, পেঁয়াজ, আদা এবং রসুনের মতো প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের
সরবরাহ নিশ্চিতে পূর্বাভাস জানাতে ভারতীয় পক্ষকে অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ । উভয় পক্ষই উল্লেখ করেছে, ব্যাপক অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তির (সিইপিএ) দ্রুত সমাপ্তি ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে চলমান সহযোগিতাকে আরও উৎসাহিত করবে।

বৈঠকে উভয় পক্ষই ডিজিটালাইজেশন, মহাকাশের শান্তিপূর্ণ ব্যবহার, যৌথ ক্ষুদ্র উপগ্রহ প্রকল্পের উন্নয়নে সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য সহযোগিতার নতুন ও উদীয়মান ক্ষেত্রগুলির সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর গুরুত্ব স্বীকার করেছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদীর আমন্ত্রণে ২১ জুন দিল্লি সফরে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিজেপি জোট টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠনের পর ভারতে কোনো সরকার প্রধানের এটিই প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফর। শনিবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠক করেন শেখ হাসিনা।

অর্থনীতি

ভারতীয় ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগ নিয়ে আসার আমন্ত্রণ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সব প্রতিবেশী দেশকে অগ্রাধিকার দেয়।

শুক্রবার (২১ জুন) সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সফরকালীন আবাসস্থল নয়াদিল্লির হোটেল তাজ প্যালেসে কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রির (সিআইআই) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের (সিইও) সঙ্গে এক বৈঠকে এ কথা বলেন।

পরে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা (ভারতীয় ব্যবসায়ীরা) বাংলাদেশে আসেন এবং বিনিয়োগ করেন। বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য আপনাদের স্বাগত জানাই।

বাংলাদেশ সারা দেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছে উল্লেখ করে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের তিনি বলেন, তারা এসব অর্থনৈতিক অঞ্চল ব্যবহার করতে পারেন এবং সেখানে বিনিয়োগ করতে পারেন।

বৈঠকে অংশ নেওয়া সিইওরাও বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে এবং বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন।

এছাড়া বাংলাদেশে যারা ব্যবসা করছেন তারা তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণে আগ্রহ প্রকাশ করেন বলে জানান সালমান এফ রহমান।

কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রির (সিআইআই) ব্যবসায়ীরা এফবিসিসিআই-এর সঙ্গে যৌথভাবে বাংলাদেশের বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন। বিশেষ করে তারা কৃষি, তথ্যপ্রযুক্তি ও লজিস্টিক সেক্টরে কাজ করার ওপর জোর দেন।

ব্যবসায়ীরা ভারতের বিভিন্ন সেক্টরে বিশেষ করে আইটি সেক্টরে তাদের সাফল্য তুলে ধরেন এবং ব্যবসা বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন।

বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা দেশে বিদ্যমান বিভিন্ন সুযোগ ও সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন।

বৈঠকে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব মো. নাঈমুল ইসলাম খান, ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. মোস্তাফিজুর রহমান, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ।

বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. মাহবুবুল আলম, নিটল নিলয় গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুল মাতলুব আহমাদ, প্রাণ আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী প্রমুখ।

ভারতীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে ছিলেন- আইটিসি লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্জীব পুরী, সিআইআই-এর মহাপরিচালক চন্দ্রজিৎ ব্যানার্জি, অ্যাপোলো হসপিটালস এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের এক্সিকিউটিভ ভাইস চেয়ারপারসন শোবানা কামিনেনি, ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশনের চেয়ারম্যান শ্রীকান্ত মাধব বৈদ্য, ডাবর ইন্ডিয়া লিমিটেডের সিইও মোহিত মালহোত্রা, অমৃত সিমেন্ট লিমিটেড প্রদীপ কুমার বাগলা, আদানি পাওয়ার লিমিটেডের সিইও (এনার্জি) দীপক অমিতাভ, সাংখ্য ল্যাবসের নির্বাহী পরিচালক এবং সিওও বিশ্বকুমারা কায়ারগাড্ডে, তেজাস নেটওয়ার্ক লিমিটেডের (টাটা গ্রুপ কোম্পানি) সিটিও এবং প্রতিষ্ঠাতা ড. কুমার শিবরাজন, সিআইআইয়ের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল ড. মারুত সেন গুপ্ত প্রমুখ।

অর্থনীতি

গত কয়েক বছর ধরে চামড়ার বাজারে মন্দা থাকায় হতাশ হয়ে পড়েছিলেন মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা। তবে এ বছর চামড়ার দাম ভালো থাকায় মুনাফা করতে পারবেন বলে আশা করছেন তারা।

সোমবার (১৭ জুন) ঈদের দিন বিকেলে রাজধানীর লালবাগের পোস্তায় দেখা গেছে, মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চামড়া বিক্রি করতে এসে ফিরছেন হাসিমুখে।

সাইনবোর্ড এলাকা থেকে ট্রাকে করে পোস্তায় চামড়া নিয়ে এসেছেন মৌসুমি ব্যবসায়ী আব্দুল মোমেন মিয়া। ভালো দামে চামড়া বিক্রি করতে পেরে খুশি এই ব্যবসায়ী।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, এ বছর চামড়ার দাম অনেক ভালো। চামড়ার মান ও আকারের ওপর নির্ভর করে প্রতি চামড়ায় ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা পর্যন্ত দিচ্ছে। আমি এলাকা থেকে দেড় লাখ টাকায় প্রায় ৩০০ চামড়া নিয়ে এসেছি। আমরা মৌসুমি ব্যবসায়ী, চামড়া কম আনতে পারি। এলাকার বেশির ভাগ চামড়া মানুষ মাদরাসায় দিয়ে দেয়। আমার আনা কিছু চামড়ায় সমস্যা থাকায় সেগুলো কমদামে বিক্রি করেছি। এবাদে প্রায় সবগুলো চামড়াই ভালো দামে বিক্রি করতে পেরেছি।

পোস্তায় এক আড়তের দায়িত্বরত মো. শফিক জানান, ঢাকা ও এর আশপাশের বিভিন্ন এলাকার মাদরাসা থেকে আসছে বেশির ভাগ চামড়া। এবার মৌসুমি ব্যবসায়ীদের সংখ্যা তুলনামূলক কম। পোস্তায় সন্ধ্যা পর্যন্ত চামড়াবাহী ট্রাকের বেশির ভাগই বিভিন্ন এলাকার মসজিদ-মাদরাসার। হাতেগোনা কয়েকজন মৌসুমি ব্যবসায়ী এসেছেন। এবছর চামড়ার বাজার ভালো যাচ্ছে।

গত বছর সরকারিভাবে চামড়ার দাম ছিল প্রতি বর্গফুট ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। এবার সরকারিভাবে চামড়ার দাম বাড়ানো হয়েছে। লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। বিভিন্ন এলাকা থেকে মৌসুমি ব্যবসায়ী ও মাদরাসা থেকে পোস্তায় চামড়া আনার পর চামড়ার আকার ও অবস্থা দেখে দাম নির্ধারণ করছেন আড়ৎদাররা। ছোট আকার ও কাটাছেঁড়া চামড়া কেনা হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায়। ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায় কেনা হচ্ছে মাঝারি আকারের চামড়া। বড় চামড়া কিনতে আড়ৎদাররা ৯০০ টাকা পর্যন্ত গুনছেন। আড়ৎদার ও বিক্রেতাদের ভাষ্যমতে, এই দাম গত কয়েক বছরের তুলনায় বেশি।

অর্থনীতি

ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে বেশি বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। এছাড়া ডলারের দাম বাড়ায় রপ্তানি আয়ও বেশি আসছে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় বা রিজার্ভ কিছুটা বেড়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি জুন মাসের প্রথম ১২ দিনে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে ১৪৬ কোটি (এক দশমিক ৪৬ বিলিয়ন) ডলারের প্রবাসী আয় পাঠিয়েছেন। এর আগে গত মে মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ২২৫ কোটি মার্কিন ডলার, যা গত ৪৬ মাসের মধ্যে যা সর্বোচ্চ এবং এ যাবৎকালের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রবাসী আয়। এর আগে এক মাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছিল ২০২০ সালের জুলাই মাসে ২৬০ কোটি ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ২০২১ সালের আগস্টে সর্বোচ্চ উঠেছিল চার হাজার ৮০০ কোটি ডলার (৪৮ বিলিয়ন)। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, ১২ জুন পর্যন্ত গ্রস রিজার্ভ ২৪ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্তের বিপিএম-৬ ম্যানুয়াল অনুযায়ী, গ্রস রিজার্ভ ১৯ দশমিক ২১ বিলিয়ন। মাসের শুরুতে অর্থাৎ ৫ জুন গ্রস রিজার্ভ ছিল ২৪ দশমিক ২৩ বিলিয়ন এবং বিপিএম-৬ ছিল ১৮ দশমিক ৬২ বিলিয়ন।

তবে এর বাইরে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিট বা প্রকৃত রিজার্ভের আরেকটি হিসাব রয়েছে, যা শুধু আইএমএফকে দেওয়া হয়। এটি প্রকাশ করা হয় না। সেখানে আইএমএফের এসডিআর খাতে থাকা ডলার, ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক মুদ্রা ক্লিয়ারিং হিসাবে থাকা বৈদেশিক মুদ্রা এবং আকুর বিল বাদ দিয়ে ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভের হিসাব করা হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সেই হিসাবে দেশের ব্যয়যোগ্য প্রকৃত রিজার্ভ এখন ১৩ বিলিয়ন ডলারের ঘরে। প্রতি মাসে পাঁচ বিলিয়ন ডলার হিসেবে এ রিজার্ভ দিয়ে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সক্ষমতা নেই। সাধারণত একটি দেশের ন্যূনতম তিন মাসের আমদানি খরচের সমান রিজার্ভ থাকতে হয়। সেই মানদণ্ডে বাংলাদেশ এখন মন্দ সূচকে রয়েছে। একটি দেশের অর্থনীতির অন্যতম সূচক হলো বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ।

অর্থনীতি

ঈদের ছুটিতে উত্তরাঞ্চলের মানুষ এখন ঘরমুখো। এতে ঢাকা-টাঙ্গাইল ও বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে যানবাহনের সংখ্যা বেড়েই চলছে। এর ফলে বঙ্গবন্ধু সেতুতে বেড়েছে টোল আদায়ের হার। গত ২৪ ঘন্টায় সেতুতে টোল আদায় হয়েছে প্রায় ৩ কোটি টাকা।

বৃহস্পতিবার দুপুরে বঙ্গবন্ধু সেতু সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবীর পাভেল এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

বঙ্গবন্ধু সেতু সাইট অফিস সূত্রে জানা যায়, গত মঙ্গলবার রাত ১২টা থেকে বুধবার রাত ১২টা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে ৩০ হাজার ৮৩৪টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এ থেকে টোল আদায় হয়েছে ২ কোটি ৮৮ লাখ ৭২ হাজার ৯৫০ টাকা। এর মধ্যে টাঙ্গাইলের বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব অংশে ১৫ হাজার ৭২০টি যানবাহন পারাপার হয়। এ থেকে টোল আদায় হয়েছে ১ কোটি ৪০ লাখ ২৬ হাজার ৯৫০ টাকা। সিরাজগঞ্জে সেতুর পশ্চিম অংশে ১৫ হাজার ১১৪ টি যানবাহন থেকে টোল আদায় হয়েছে ১ কোটি ৪২ লাখ ৪৬ হাজার টাকা।

বঙ্গবন্ধু সেতু সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, ঈদকে সামনে রেখে যানবাহনের পারাপার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেতু পারাপারে যাতে কোনো বিঘ্ন না ঘটে সে লক্ষ্যে সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। যানজট নিরসনে সেতুর উভয় অংশে ৯টি করে ১৮টি টোল বুথ স্থাপনসহ মোটরসাইকেলের জন্য চারটি বুথ স্থাপন করা হয়েছে। এবারো ঘরমুখো মানুষের ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক হবে বলে আশা করছি।

অর্থনীতি

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৩৭ হাজার ৮১৭ কোটি ৪০ লাখ ৫৭ হাজার টাকার সম্পূরক বাজেট জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। সোমবার (১০ জুন) সংসদ অধিবেশনে ‘নির্দিষ্টকরণ (সম্পূরক) বিল-২০২৪’ পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।

পরে বিলটি কণ্ঠভোটে পাস হয়। বিল পাসের প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র সদস্যরা আর্থিক খাতে বিভিন্ন অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা নিয়ে সমালোচনার পাশাপাশি পাচার অর্থ ফিরিয়ে আনার এবং পাচারকারীদের চিহ্নিত করার দাবি জানান।

আগামী ৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া অর্থবছরের কার্যক্রম নির্বাহের জন্য সংযুক্ত তহবিল থেকে মঞ্জুরিকৃত অর্থের বেশি বরাদ্দ ও নির্দিষ্টকরণের কর্তৃত্ব দেওয়ার জন্য এ সম্পূরক বিল আনা হয়।

চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে ৬২টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অনুকূলে সাত লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। সংশোধিত বাজেটে ২২টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বরাদ্দ বেড়েছে ৩৭ হাজার ৮১৭ কোটি টাকা। ৪০টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বাজেট অপরিবর্তিত রয়েছে বা কমেছে।

সার্বিকভাবে ৪৭ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা কমে সংশোধিত বাজেট হয়েছে সাত লাখ ১৪ হাজার ৪১৮ কোটি টাকা। সম্পূরক বাজেটে সর্বোচ্চ ১২ হাজার ৬৪৯ কোটি ৩৩ লাখ ৬৮ হাজার টাকা পেয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়।

সম্পূরক বাজেটে ২০টি দাবির বিপরীতে ৬৬টি ছাঁটাই প্রস্তাব দেন চার জন সংসদ সদস্য। এর মধ্যে দুটি মঞ্জুরি দাবির ওপর ছাঁটাই প্রস্তাবের আলোচনা হয় – অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ। বাকি প্রস্তাবগুলো আলোচনা ছাড়াই ভোটে দেন স্পিকার।

এর আগে সম্পূরক বাজেটের ওপর সরকারি ও বিরোধী দলের সদস্যরা আলোচনা করেন। তাদের বক্তব্যের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, অনিয়মের যেসব কথা বলা হয়েছে সেগুলো অনেকটা ঢালাও অভিযোগ। তবে তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। পরে কণ্ঠভোটে ছাঁটাই প্রস্তাবগুলো নাকচ হয়।

এর আগে আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, দুই হাজার ২০০ কোটি টাকা সুদ মওকুফ করা হয়েছে অথচ ৫০ হাজার টাকার জন্য কৃষককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আর্থিক খাতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে এখানে টাকা খরচ করা কেন। চুপ থাকাই ভালো।

তিনি বলেন, আর্থিক বিভাগের বিভাগের অনিয়মের প্রতিবাদ হিসেবে তিনি ছাঁটাই প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের বড় কাজ ব্যাংকিং খাতকে সুপারভাইজ করা। কিন্তু জনগণের টাকা লুটপাট হচ্ছে, ব্যাংকে অনিয়ম হচ্ছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বা বাংলাদেশ ব্যাংক কি সুপারভাইজ করছে? পি কে হালদার কয়েক হাজার কোটি নিয়ে চলে গেছেন, বিভিন্ন সময় বড় বড় প্রতিষ্ঠান ঋণ নেয়; পরে তাদের সুদ মওকুফ করা হয়, এসবের জবাব কি অর্থমন্ত্রী দিতে পারবেন।

জাতীয় পার্টির এ সদস্য বলেন, ডলার সংকটের বড় কারণ পাচার। আগের অর্থমন্ত্রী এ বিষয়ে কিছুই শুনতে চাইতেন না। আর্থিক খাতে অনিয়ম বন্ধের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, আমলা যিনিই হোন, যারা বিদেশে টাকা পাচার করেছেন, কানাডা, ইউরোপ আমেরিকায় বাড়ি, হোটেল করেছেন, তদন্ত করে তাদের চিহ্নিত করা হোক। টাকা ফেরত আনতে না পারলেও তাদের চিহ্নিত করার দাবি জানান তিনি।

স্বতন্ত্র সদস্য পঙ্কজ নাথ বলেন, দেশ থেকে টাকা পাচার হচ্ছে। এ বিষয়ে কঠোর হতে হবে। ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এলসি খোলার ক্ষেত্রে যে সংযত নীতি পরিহার করে আরও উদার হওয়া দরকার। ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা জরুরি ।

আরেক স্বতন্ত্র সদস্য হামিদুল হক খন্দকার বলেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ কেন অতিরিক্ত মঞ্জুরি দাবি করেছে, তার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই। অতীতে আরাফাত রহমান কোকোর পাচার করা টাকা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। দেশে লুটপাট করে যারা অর্থ পাচার করেছেন, তাদের সে অর্থ ফিরিয়ে আনতে হবে।

আইসিটি বিভাগের লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং প্রকল্পগুলো সঠিকভাবে চলছে কি না, সেই খবর নেওয়ার দাবি জানিয়ে বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, এ প্রকল্পে যারা শিখতে আসে, তারা সঠিকভাবে আত্মস্থ করতে পারে না। এখানে অপব্যয় হচ্ছে।

যশোরে শেখ হাসিনা আইসিটি পার্কের অনিয়মের বিষয়ে গণমাধ্যমের প্রতিবেদন তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নামে আইসিটি পার্ক করেছেন, সেখানে হোটেল ম্যানেজমেন্ট, বিয়ের অনুষ্ঠান, সামাজিক অনুষ্ঠান কী করে হয়?

স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য পংকজ নাথ বলেন, আইসিটি খাতে কাজ যে হচ্ছে না, তা ঠিক নয়। তবে, দোয়েলের বাক্স খুললে যদি চীনা কম্পিউটার পাওয়া যায় তাহলে- এটা কি অপচয় নয়, দুর্নীতি নয়? এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থাটা কী নিয়েছেন, তা সংসদ জানতে চায়। দোয়েলের বাক্স খোলার পরে দেখা গেল চায়নিজ পচা মাল। এরপর বন্ধ করে দেওয়া হলো।

তিনি বলেন, শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাবের নামে যে কম্পিউটার দিয়েছেন, তাতে কি আদৌ কাজ হচ্ছে নাকি জং ধরে গেছে। ডাক বিভাগের আধুনিকায়নের নামে দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে। ডাক বিভাগের জমির অবস্থা কী, জানতে চান তিনি।

অর্থনীতি

অর্থনীতির কঠিন সময়ে দৃঢ় উদ্যোগের বাজেট উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। উত্থাপিত বাজেটের লক্ষ্য বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ উত্তাল বৈতরণী সামাল দেওয়া।

মূল্যস্ফীতির লাগাম টানা, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার নিয়ন্ত্রণে আনা ও ব্যাংকিং খাতের অস্থিরতা সামাল দেওয়ার মতো কঠোর পরিস্থিতি মোকাবিলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এ বাজেটে।

বৃহস্পতিবার (৬ জুন) বিকেলে জাতীয় সংসদে নতুন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উত্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী। এটি মাহমুদ আলীর প্রথম বাজেট। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের টানা চতুর্থ মেয়াদের প্রথম বাজেট।

প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয়েছে সাত লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে পাঁচ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। বাকি দুই লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা আসবে ঋণ থেকে।

প্রস্তাবিত বাজেটে ৬ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ধরা রাখার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছ। মোট জিডিপির প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ।

২০২৬ সালে এলডিসি-উত্তরণ, ২০৩১ সালে উচ্চ মধ্যম আয়ের মর্যাদা এবং ২০৪১ সালে একটি উন্নত দেশে রূপান্তরিত হওয়ার মতো লক্ষ্যমাত্রাকে সামনে রেখে আগামী পাঁচ বছরের অর্থনৈতিক পথনকশা হিসেবে প্রণীত এ বাজেট বাস্তবায়ন বেশ চ্যালেঞ্জিং হবে অর্থমন্ত্রীর জন্য।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ
বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বেশ কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে করছাড় সুবিধা দিতে হচ্ছে। নিম্ন আয়ের মানুষকে স্বস্তি দিতে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। আবার রাজস্ব আদায়ের বড় প্রাক্কলন বাস্তবায়ন করতে হবে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে বাজেট বাস্তবায়ন কঠিন, খোদ অর্থমন্ত্রীই উল্লেখ করেছেন তার বক্তৃতায়।

জিডিপি
প্রস্তাবিত বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। বিদায়ী অর্থবছরে যা ছিল ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। পরে তা কমিয়ে সাড়ে ৬ শতাংশ করা হয়।

রাজস্ব
প্রস্তাবিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোট রাজস্ব প্রাপ্তি ধরা হয়েছে পাঁচ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। যা চলতি বছরের চেয়ে ৮ শতাংশ বেশি। রাজস্ব আহরণে বরাবরের মতো এবারও বেশিরভাগ আয় করার দায়িত্ব থাকবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ওপর। আগামী অর্থবছরে এনবিআরকে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য দেওয়া হয়েছে চার লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের চেয়ে যা ৫০ হাজার কোটি টাকা বেশি। নন-এনবিআর খাত থেকে রাজস্ব আসবে আরও ১৫ হাজার কোটি টাকা। আর কর ব্যতীত প্রাপ্তির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৪৬ হাজার কোটি টাকা।

রাজস্ব আদায়ে বিদায়ী অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে যা আদায় হয়েছে, তাতে এনবিআর লক্ষ্য পূরণ থেকে অনেকটাই দূরে আছে। এর সঙ্গে প্রস্তাবিত বাজেটে আরও ৫০ হাজার কোটি টাকা বাড়নো হয়েছে। ফলে আগামী বাজেটের লক্ষ্য পূরণ রাজস্ব বোর্ডের জন্য অনেকটাই কঠিন হবে।

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি)
প্রস্তাবিত বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ধরা হয়েছে দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। বিদায়ী অর্থবছরে যা ছিল দুই লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে ১৮ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে এডিপির আকার করা হয়েছে দুই লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (আরএডিপি) তুলনায় নতুন বাজেটে এডিপির আকার ২০ হাজার কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে এক লাখ ৬৫ হাজার কোটি এবং বৈদেশিক ঋণ থেকে এক লাখ কোটি টাকার সংস্থান ধরা হয়েছে।

বাজেট ঘাটতি
বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে দুই লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। যা জিডিপির ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। এই বিশাল ঘাটতি পূরণে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক উৎসের ওপর নির্ভর করতে হবে। অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে নেওয়া হবে এক লাখ ৬০ হাজার ৯০০ কোটি। এর মধ্যে প্রধান উৎস হচ্ছে ব্যাংক খাত। এই খাত থেকে মোট এক লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ধরা হয়েছে। আর ৯৫ হাজার ১০০ টাকা বৈদেশিক উৎস থেকে পাওয়ার আশা করছে সরকার। বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে ঘাটতি ছিল দুই লাখ ৮৩ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা।

নতুন বাজেটে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার করা, বৈদেশিক মুদ্রার হার ও রিজার্ভ স্থিতিশীল করা, আমদানিজনিত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা, রাজস্ব আহরণ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং জ্বালানি ও সারের ভর্তুকি বকেয়া পরিশোধ করার কথা বলা হয়েছে।

অর্থমন্ত্রীর সামনে অন্যান্য চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে, বিগত তিন বছরের কৃচ্ছ্রসাধন নীতি থেকে ধীরে ধীরে বের হওয়া, সময়মতো সমাপ্তির উদ্দেশ্যে অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্পগুলোয় অর্থায়নের জন্য কম-প্রয়োজনীয় প্রকল্পগুলো বাদ দেওয়া, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বিদেশি অনুদানপ্রাপ্ত প্রকল্পগুলো ত্বরান্বিত করা এবং কাঠামোগত সংস্কার অব্যাহত রাখার পাশাপাশি দেশীয় ও বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে ব্যবসা-বান্ধব পরিবেশের উন্নতি ঘটানো।

অর্থনীতি

অর্থনৈতিক মন্দা ও তীব্র ডলার সংকটের মধ্যেও দেশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় বিদেশে পুঁজি নেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে দেশীয় উদ্যোক্তাদের। ২০২২ সালে বাংলাদেশ থেকে পুঁজি নেওয়া হয়েছিল ৬ কোটি ৪৭ লাখ ডলার বা স্থানীয় মুদ্রায় ৬৮৫ কোটি ৮২ লাখ টাকা। গত বছর নেওয়া হয়েছে ৭ কোটি ৩২ লাখ ডলার বা স্থানীয় মুদ্রায় ৮৬৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। ওই সময়ে বিদেশে পুঁজি নেওয়ার পরিমাণ বেড়েছে ৮৫ লাখ ডলার বা ১০০ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এ প্রবণতা ডলারের হিসাবে বেড়েছে ১৩ দশমিক ১০ শতাংশ। টাকার হিসাবে পরিমাণে ১৪ দশমিক ৬৩ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্প্রতি প্রকাশিত প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে যেসব উদ্যোক্তা বৈধভাবে বিদেশে পুঁজি নিয়েছে এ হিসাব তার ভিত্তিতে করা হয়েছে। এর বাইরে দেশ থেকে অর্থ পাচার বা বেআইনিভাবে আরও কয়েকশ গুণ বেশি পুঁজি বিদেশে নেওয়া হয়েছে। যা দিয়ে বিদেশে ব্যবসা-বাণিজ্য করা হচ্ছে। এর মধ্যে বিসমিল্লাহ গ্র“প দেশ থেকে ১২০০ কোটি টাকা সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাচার করেছে। ওই টাকায় দেশটিতে তারা পাঁচতারা হোটেল ব্যবসা করছেন বলে জানা গেছে। এ রকম আরও অনেক উদ্যোক্তা দেশ থেকে ব্যাংকের টাকা আÍসাৎ করে বিদেশে পাচার করে সেগুলো দিয়ে ব্যবসা করছেন।

দেশ থেকে বিদেশে পুঁজি নিয়ে বিনিয়োগের যে নীতিমালা করা হয়েছে তাতে শুধু রপ্তানিকারকরাই পুঁজি বিনিয়োগ করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে রপ্তানিকারকের হিসাবে ডলারের পর্যাপ্ত প্রবাহ থাকতে হবে। এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে বিশেষ কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিদেশে পুঁজি নিয়ে ব্যাংক বা এক্সচেঞ্জ হাউস খুলতে পারে।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশ থেকে বিদেশ পুঁজি নেওয়ার পাশাপাশি কিছু মুনাফা দেশে আসতে শুরু করেছে। এর মধ্যে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোই মুনাফা নিয়ে আসছে।

২০২০ সালে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পুঁজি নেওয়া হয়েছিল ৩ কোটি ১১ লাখ ডলার। ২০২১ সালে তা তিনগুণ বেড়ে দাঁড়ায় ৯ কোটি ৪৭ লাখ ডলার। ২০২২ সালে পুঁজি নেওয়ার পরিমাণ কিছুটা কমে। ওই বছরে নেওয়া হয়েছিল ৬ কোটি ৪৭ লাখ ডলার। গত বছর নেওয়া হয়েছে ৭ কোটি ৩২ লাখ ডলার। গত এক বছরের ব্যবধানে দেশ থেকে বিদেশে পুঁজি নেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে ১৩ দশমিক ১০ শতাংশ।

বিদেশে বিনিয়োগকৃত পুঁজি থেকে অর্জিত মুনাফা দেশে আনার প্রবণতাও কিছুটা বেড়েছে। ২০২২ সালে মুনাফা আনা হয়েছিল ১ কোটি ২১ লাখ ডলার। ২০২৩ সালে আনা হয়েছে ৪ কোটি ৩৩ লাখ ডলার। এক বছরের ব্যবধানে মুনাফা আনার প্রবণতা বেড়েছে ২৫৬ দশমিক ৮ শতাংশ। ফলে বিদেশে বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের পুঁজির স্থিতি কিছুটা কমেছে। ২০২২ সালে স্থিতি ছিল ৪০ কোটি ডলার বা ৪২৪০ কোটি টাকা। ২০২৩ সালে তা কমে দাঁড়ায় ৩৮ কোটি ডলার বা ৪৪৮৪ কোটি টাকা। ওই সময়ে স্থিতি কমেছে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ। তবে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হওয়ায় টাকার হিসাবে পুঁজির স্থিতি কমেনি বরং বেড়েছে।

এদিকে নগদ পুঁজি নেওয়ার প্রবণতা গত এক বছরে কিছুটা কমেছে। ২০২২ সালে পুঁজি হিসাবে নেওয়া হয়েছে ১ কোটি ১৭ লাখ ৪০ হাজার ডলার। ২০২৩ সালে নেওয়া হয়েরেছ ১ কোটি ৭ লাখ ডলার। ওই সময়ে কমেছে ৯ দশমিক ২ শতাংশ। এর আগে ২০২০ সালে নেওয়া হয়েছিল ৯১ লাখ ৯০ হাজার ডলার, ২০২১ সালে ৫৭ লাখ ৮০ হাজার ডলার।

দেশ থেকে নেওয়া পুঁজিতে ব্যবসা পরিচালনা করে অর্জিত মুনাফা ফের বিনিয়োগ করতে শুরু করেছে দেশীয় কোম্পানিগুলো। ২০২২ সালে বিদেশে পরিচালিত ব্যবসা থেকে অর্জিত মুনাফা পুনঃবিনিয়োগ হয়েছে ৩ কোটি ৪৮ লাখ ডলার। ২০২৩ সালে এ খাতে বিনিয়োগ করা হয়েছে ৪ কোটি ৩০ লাখ ডলার। ওই সময়ে মুনাফা বিনিয়োগ বেড়েছে ২৩ দশমিক ৬ শতাংশ।

বিদেশে এক কোম্পানি থেকে অন্য কোম্পানি ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করতে পারে। ২০২২ সালে ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করা হয় ৬১ লাখ ডলার। ২০২৩ সালে এ খাতে নতুন বিনিয়োগ হয়নি। বরং আগের বকেয়া ঋণ থেকে পরিশোধ করা হয়েছে ২ কোটি ৩৭ লাখ ৪০ হাজার ডলার। এ খাতে বিনিয়োগ কমেছে ৪৯১ দশমিক ৭ শতাংশ।

বিদেশে পুঁজি নেওয়া ও ফিরিয়ে আনা এ দুটির পার্থক্য হচ্ছে নিট বিনিয়োগ। ২০২২ সালে নিট বিনিয়োগ ছিল ৫ কোটি ২৬ লাখ ডলার। ২০২৩ সালে তা কমে দাড়ায় ২ কোটি ৯৯ লাখ ডলার। আলোচ্য সময়ে নিট বিনিয়োগ কমেছে ৪৩ দশমিক ২ শতাংশ।

বিদেশে বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের স্থিতি টানা চার বছর বাড়ার পর গত বছরে কমেছে। ২০১৮ সালে স্থিতি ছিল ৩১ কোটি ৫ লাখ ডলার। যা আগের বছরের চেয়ে ৬ দশমিক ২ শতাংশ কমেছিল। ২০১৯ সালে স্থিতি ছিল ৩২ কোটি ৩৬ লাখ ৩০ হাজার ডলার। যা আগের বছরের চেয়ে ৪ দশমিক ২ শতাংশ বেশি। ২০২০ সালে স্থিতি ছিল ৩২ কোটি ৭১ লাখ ৪০ হাজার ডলার। যা আগের বছরের চেয়ে ১ দশমিক ১ শতাংশ বেশি। ২০২১ সালে স্তিতি আরও বেড়ে ৩৮ কোটি ৯৮ লাখ ডলার হয়। যা আগের বছরের চেয়ে ১৯ দশমিক ২ শতাংশ বেশি। ওই বছরেরই স্থিতি সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। ২০২২ সালে স্থিতি আরও বেড়ে ৪০ কোটি ডলারে দাড়ায়। যা আগের বছরের চেয়ে ২ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি। ২০২৩ সালে স্থিতি আরার সামান্য কমে দাড়ায় ৩৮ কোটি ৪৮ লাখ ৪০ হাজার ডলার। যা আগের বছরের চেয়ে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ কম। অর্থাৎ বিনিয়োগের স্থিতি ২-১৮ সালের পর এই প্রথম কমেছে।

প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, ২০২৩ সালে বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশী বিনিয়োগ গেছে হংকংয়ে ২ কোটি ২৩ লাখ ডলার। ওই দেশ থেকে মুনাফাসহ ফিরে এসেছে ২ কোটি ৮১ লাখ ডলার। বিনিয়োগের চেয়ে মুনাফা বেশি এসেছে। ভারতে গেছে ২ কোটি ১১ লাখ ডলার বিনিয়োগ, দেশটি থেকে গত বছর আসেনি কোনো মুনাফা। সংযুক্ত আরব আমিরাতে গেছে ৮৯ লাখ ১০ হাজার ডলার। কোন মুনাফা আসেনি। যুক্তরাজ্যে গেছে ৮৮ লাখ ডলার। মুনাফাসহ ফিরেছে ১ কোটি ৩১ লাখ ২০ হাজার ডলার। নেপালে গেছে ৪২ লাখ ৩০ হাজার ডলার। মুনাফা এসেছে ৭ লাখ ১০ হাজার ডলার। শীর্ষ ৫ দেশে মোট বিনিয়োগ ৬ কোটি ৫৩ লাখ ডলার। মুনাফা এসেছে ৪ কোটি ১৯ লাখ ডলার।্ অন্যান্য দেশে গেছে ৭৯ লাখ ১০ হাজার ডলার। মুনাফা এসেছে ১৪ লাখ ডলার।

২০২৩ সালে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায় বিদেশে সবচেয়ে বেশি পুঁজি গেছে ৬ কোটি ২৯ লাখ ডলার। এর মধ্যে দেশে এসেছে ৪ কোটি ৩২ লাখ ডলার। বিনিয়োগের মধ্যে খনিজ খাতে গেছে ৮৯ লাখ ডলার, রাসায়নিক ও ফার্মাসিউটিক্যালস খাতে ৪ লাখ ৪০ হাজার ডলার, ট্রেডিং খাতে ৪ লাখ ২০ হাজার ডলার, ট্রেক্সটাইল খাতে ২ লাখ ৩০ হাজার ডলার, ধাতব ও মেশিনারিজ খাতে ২ লাখ ডলার, অন্যান্য উৎপাদন খাতে ৮০ হাজার ডলার, সেবা খাতে ৭০ হাজার ডলার।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদেশে বিনিয়োগ নেওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশ খুব সাবধানে এগুচ্ছে। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে সরকার ১৯৪৭ সালের আইন সংশোধন করে একটি শর্ত যোগ করে বিদেশে বিনিয়োগ নেওয়ার অনুমোদন দেওয়া হয়। কেবল রপ্তানি আয়ের বিপরীতে পর্যাপ্ত ডলারের প্রবাহ থাকলেই বিদেশে বিনিয়োগ নেওয়া যাবে। বর্তমানে ওই আইনের আওতায় ২২টির বেশি দেশে বাংলাদেশ থেকে বিনিয়োগ গেছে।

এ পর্যন্ত ১৮টি কোম্পানি বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নিয়ে বিদেশে বিনিয়োগ করছে।

অর্থনীতি

আগামী (২০২৪-২৫) অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতির অভিঘাত থেকে বেরোনোর জন্য সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান। একইসঙ্গে অর্থনীতিতে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত কী হতে পারে, এবারের বাজেট উপস্থাপনের সময় এ সংক্রান্ত একটি বিশ্লেষণ থাকবে বলেও জানান তিনি।

বৃহস্পতিবার (৩০ মে) দুপুরে সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা জানান।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের অর্থনীতিতে জলবায়ু পরিবর্তনের সম্ভাব্য অভিঘাত কী হতে পারে, তা আগের বাজেটগুলোতে ছিল না। এবার বাজেট উপস্থাপনের সময় সেই সংক্রান্ত একটি বিশ্লেষণ দেওয়া হবে। প্রতিবছর যেভাবে জেন্ডার বাজেটের একটি প্রতিবেদন দেওয়া হয়, ৪৪টি মন্ত্রণালয় এ প্রতিবেদন তৈরি করে। এবার প্রথমবার আইবাস থেকে দেখতে পাবে বরাদ্দগুলো সংশ্লিষ্ট খাতে যাচ্ছে কিনা।

পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে ট্যাক্স সুবিধা দেওয়া হবে। অর্থাৎ আপনি যদি এত টাকা ট্যাক্স দেন, তাহলে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনতে পারবেন। এবার ট্যাক্সের পরিমাণ বাড়ানো হচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে। এ সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এটা তো জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছ থেকে জানতে হবে। রাজস্ব আহরণের বিষয়টি তাদের এখতিয়ার। আমিও শুনেছি, এটিতে গতবারের মতোই এবারও কিছুটা ছাড়ের ব্যবস্থা আছে। তবে রেটটা আমি এখন বলতে পারছি না।

মূল্যস্ফীতি শুরুই তো হলো করোনা মহামারি পরবর্তী রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের সময় জানিয়ে তিনি বলেন, তখন জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে গেছে। এরপর থেকে বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতি চলমান আছে। অনেক দেশে ষাট শতাংশের বেশি মূল্যস্ফীতি আছে। মানুষকে মূল্যস্ফীতি সংক্রান্ত অভিঘাত থেকে কীভাবে বের করে নিয়ে আসবো, সেজন্য সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম প্রস্তাবিত বাজেটে বাড়ানো হয়েছে। এবারের বাজেটে মূল্যস্ফীতির বিষয়টি যেমন গুরুত্ব পাচ্ছে, তেমনই সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের সম্প্রসারণ হচ্ছে। নিম্ন ও স্বল্প-আয়ের মানুষের মধ্যে বিনামূল্যে খাদ্য বিতরণ অব্যাহত থাকবে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ফ্যামিলি কার্ড থেকে শুরু করে খাদ্যসহায়তা চলমান আছে। এগুলো যাতে ঠিকভাবে করা হয়, সেই ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। বাজেট ঘাটতি সহনীয় পর্যায়ে রেখে সামগ্রিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে মুদ্রানীতি সফলভাবে বাস্তবায়নে সপোর্টিভ ফিসক্যাল স্ট্যান্ড গ্রহণ করা হয়েছে। বিশ্ব বাজারে জ্বালানিসহ খাদ্যপণ্য ও সারের মূল্য কমে আসার একটা বিষয় আছে। খাদ্য সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

আমরা ঋণনির্ভর উন্নয়নের দিকে যাচ্ছি কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা ঋণ নির্ভর উন্নয়নের দিকে যাচ্ছি না। আমাদের ডেট-জিডিপি রেশিও অনেক কম। বিভিন্ন দেশের তুলনায় আমাদের অনেক কম। আমাদের ঋণ নেওয়ার সক্ষমতা অনেক আছে। আমাদের পেমেন্ট রেকর্ডও ভালো। বাংলাদেশ কখনো কোনো পেমেন্টে ডিফল্ট করেনি। আমি আশা করবো, ঋণনির্ভর উন্নয়ন কথাটি বলা ঠিক না।