অর্থনীতি

পবিত্র রমজান মাসে চাহিদা বাড়ে এমন ১১ ধরনের পণ্য আমদানিতে এলসি মার্জিন শিথিল করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পণ্যগুলো হচ্ছে– চাল, গম, পেঁয়াজ, ডাল, ভোজ্যতেল, চিনি, ডিম, ছোলা, মটর, মসলা ও খেজুর।

রোববার (১৭ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটি সার্কুলার জারি করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে।

নির্দেশনায় বলা বলছে, এসব পণ্য আমদানিতে এখন থেকে ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে এলসি মার্জিন ন্যূনতম পর্যায়ে রাখার নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

শীঘ্রই এ নির্দেশনা কার্যকর হবে এবং ২০২৫ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত বহাল থাকবে।

অভ্যন্তরীণ বাজারে এসব পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করতে আমদানি ঋণপত্র খুলতে অগ্রাধিকার প্রদানের জন্য পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

আসন্ন পবিত্র রমজান উপলক্ষে বেশি ব্যবহৃত পণ্যগুলো আমদানির ক্ষেত্রে আগের বিধিনিষেধ কিছুটা শিথিল করা হয়েছে। এখন থেকে চাল, গম, পেঁয়াজ, ডাল, ভোজ্যতেল, চিনি, ডিম, ছোলা, মটর, মসলা ও খেজুর আমদানির এলসি খুলতে শতভাগ মার্জিন লাগবে না। ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে সাধারণত ৫ থেকে ২০ শতাংশ মার্জিন নেওয়া হয়, উল্লেখিত পণ্য আমদানি ক্ষেত্রেও এখন থেকে মার্জিনের এই হার নির্ধারণ করা যাবে।

এর আগে গত ১১ নভেম্বর এক প্রজ্ঞাপনে পবিত্র রমজান মাসে চাহিদা বাড়ে এমন ১১ ধরনের খাদ্যপণ্য আমদানিতে বিলম্বে বিল পরিশোধের অনুমতি দিয়ে নির্দেশনা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে আসন্ন রমজানকে সামনে রেখে এসব খাদ্যপণ্য বাকিতে আমদানি করা যাবে। এক্ষেত্রে ঋণপত্র খোলার সময় আমদানিকারকদের কোনো অর্থ তাৎক্ষণিকভাবে ব্যাংকে জমা দিতে হবে না। এতে এসব খাদ্যপণ্য দ্রুত ও সহজে আমদানি করা যাবে।

যেসব পণ্যের ক্ষেত্রে এ সুবিধা পাওয়া যাবে সেগুলো হলো– চাল, গম, পেঁয়াজ, ডাল, ভোজ্যতেল, চিনি, ডিম, ছোলা, মটর, মসলা ও খেজুর। এসব পণ্য বাংলাদেশে পাঠানোর জন্য জাহাজে ওঠানোর ৯০ দিন পর পর্যন্ত ব্যাংকের বিল পরিশোধ করা যাবে।

সরকারের এ সব উদ্যোগের ফলে রমজানে ব্যবহৃত পণ্যের সরবরাহ বৃদ্ধি পাবে। ফলে দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।

অর্থনীতি

বাংলাদেশে শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করেছে নেপাল। ভারতের পর তৃতীয় কোনো দেশ হিসেবে বাংলাদেশে প্রথমবার বিদ্যুৎ রপ্তানি শুরু করেছে ‘হিমালয়কন্যা’খ্যাত রাষ্ট্রটি।

যদিও এ বছর একদিনই মিলবে নেপালের বিদ্যুৎ।

চীনের সংবাদমাধ্যম সিনহুয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ত্রিপক্ষীয় চুক্তি অনুসারে ভারতের সরবরাহ লাইনের মাধ্যমে নেপাল থেকে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসছে বাংলাদেশে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানসহ তিন দেশের কর্মকর্তারা কাঠমান্ডুতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে দুপুরে সুইচ চেপে বিদ্যুৎ সরবরাহের উদ্বোধন করেন।

গত অক্টোবরে নেপালে এই ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। নেপাল বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র চন্দন কুমার ঘোষ বলেন, চুক্তি অনুসারে এ বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে কেবল একদিনই বিদ্যুৎ বিক্রি করতে পারবে নেপাল। বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রপ্তানি আবার শুরু হবে ২০২৫ সালের ১৫ জুন।

ওই চুক্তি মোতাবেক, পাঁচ বছরের মধ্যে প্রতি বছরের ১৫ জুন থেকে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত নেপাল বাংলাদেশে বিদ্যুৎ বিক্রি করতে পারবে। অর্থাৎ বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে নেপালের বিদ্যুৎ মিলবে বাংলাদেশে।

দুদেশের মধ্যে সরাসরি বৈদ্যুতিক সংযোগ নেই বিধায় ভারতের সঞ্চালন লাইন হয়ে আসছে এই বিদ্যুৎ।

চন্দন কুমার ঘোষ জানান, বাংলাদেশের গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত ভারতের গ্রিডে সঞ্চালন সক্ষমতা সীমাবদ্ধ থাকায় নেপাল মাত্র ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাঠাতে পারছে। আরও সঞ্চালন লাইন তৈরি হলে সামনের বছরগুলোতে আরও বেশি বিদ্যুৎ সরবরাহের সুযোগ আছে।

বর্ষা মৌসুমে অতিরিক্ত জলবায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদন করে থাকে নেপাল। সেজন্য ২০২১ সালের নভেম্বর থেকে ভারতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আসছে তারা।

অর্থনীতি

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি অনুযায়ী নিট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নামলো ১৮ দশমিক ৪৩ বিলিয়ন এক হাজার ৮৪৩ কোটি ৭৫ লাখ ৮০ হাজার ডলারে (বিপিএম৬)।

একই সময়ে বৈদেশিক মুদ্রায় গঠিত বিভিন্ন তহবিলসহ মোট রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৪১৬ কোটি ৮১ লাখ ডলার।

বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) এ তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন বা আকুর সেপ্টেম্বর–অক্টোবর দুই মাসের এক দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার দায় পরিশোধ করার রিজার্ভ ১৯ বিলিয়ন ডলারের নিচে নামলো। অবশ্য ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভের পরিমাণ ১৩ বিলিয়ন ডলারের কিছুটা ওপরে।

আকু হলো আন্তঃদেশীয় লেনদেন নিষ্পত্তির ব্যবস্থা। যার মাধ্যমে বাংলাদেশ ছাড়াও ভুটান, ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল ও পাকিস্তান মধ্যকার লেনদেনের দায় পরিশোধ করা হয়। ইরানের রাজধানী তেহরানে এর সদর দপ্তর। এ ব্যবস্থায় সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতি দুই মাস অন্তর আমদানির অর্থ পরিশোধ করে থাকে।

গত সপ্তাহর শেষে নিট রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২০ বিলিয়ন ডলার (বিপিএম-৬) ডলার। আর মোট রিজার্ভ ছিল ২৫ দশমিক ৭২ বিলিয়ন ডলার, বা দুই হাজার ৫৭২ কোটি ৮৮ লাখ ২০ হাজার ডলার।

রিজার্ভ ১৯ বিলিয়ন ডলারের নিচে নামা দুশ্চিন্তার কিছু নেই বলে মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, রিজার্ভ চলমান একটি বিষয়। একবার কমবে, আবার বাড়বে। তবে এখন প্রবাসী আয়ের প্রবাহ ইতিবাচক আছে, সাময়িকভাবে কমলেও আবার বাড়বে রিজার্ভ।

অর্থনীতি

দেশের বাজারে চালের সরবরাহ স্বাভাবিক এবং দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে চালের শুল্ক প্রত্যাহার, টাস্কফোর্স গঠন, আমদানির অনুমোদন, কিছু পণ্যের দাম বেঁধে দেওয়াসহ সরকারের নানা উদ্যোগেও ভোক্তার স্বস্তি মিলছে না। চালের বাজারের ঊর্ধ্বগতিতে ভোক্তাদের নাভিশ্বাস উঠে গেছে।

সাম্প্রতিক অতিবৃষ্টি এবং ভারতসহ উজানের দেশগুলো থেকে আসা ঢলে আমনের আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া ধান ও চালের মজুত গড়ে তুলে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে দাম বাড়াচ্ছেন বলেও অভিযোগ উঠছে।

একই সঙ্গে বিশ্ববাজারে চালের দাম দেশের বাজারের তুলনায় বেশি। এসব কারণে গত ১৫ দিনে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি চালের দাম দুই থেকে চার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

সম্প্রতি দেশের পাইকারি ও খুচরা বাজারে চালের দাম সহনীয় রাখতে চাল আমদানিতে শুল্ক পুরোপুরি প্রত্যাহার করে সরকার। ফলে ১৯ মাস পর দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে চাল আমদানি শুরু হয়েছে।

এরইমধ্যে আমন ধান কাটা শুরু হলেও কমছে না চালের দাম। এদিকে ভারতও চালের ওপর শুল্ক কমিয়েছে। তাতেও আমদানিতে আগ্রহী নন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা।

দেশের ব্যবসায়ীরা বলছেন, চাল যদি আমদানি করা হয়, তবে বর্তমানে দেশের বাজারের চেয়ে বেশি দাম দিয়ে ক্রেতাদের কিনতে হবে। শুল্ক কমানো হলেও এ মুহূর্তে দেশে চালের দামে প্রভাব পড়বে না। আর যে চাল আমদানি করা হয়েছে, তাও বাজারে আসতে আরও এক সপ্তাহ সময় লাগবে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের কোনো উদ্যোগ কাজে আসছে না। শুল্ক কমানোর পর এর সুবিধা একটি পক্ষ নিয়ে নিচ্ছে, ভোক্তারা পাচ্ছেন না। সরকারের নজরদারিতে ঘাটতি রয়েছে, তদারকি আরও বাড়াতে হবে।

তারা বলছেন, সরকার এখন শুধু খুচরা পর্যায়ে তদারকি করছে। কিন্তু বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য উৎপাদক, করপোরেট, মিল, পাইকারি ও খুচরা— সব স্তরেই তদারকি করতে হবে, যা হচ্ছে না।

তারা আরও বলছেন, যেভাবেই হোক, বাজারে সরবরাহ বাড়িয়ে দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। সরকার বাজার সংস্কারের সুনির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা না নেওয়ায় শৃঙ্খলা ফিরছে না। বাজার ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর পরামর্শ তাদের।

মঙ্গলবার রাজধানীর কয়েকটি খুচরা ও পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চালের দাম কমেনি। অথচ চালের দাম কমাতে গত অক্টোবরে দুদফায় শুল্ক সাড়ে ৬২ শতাংশ থেকে কমিয়ে দুই শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। এরপরও কমেনি।

খুচরা বাজারে জাত ও মানভেদে চিকন চাল দেশি বাসমতির কেজি ৯০ থেকে ৯৫ টাকা, নাজিরশাইল চাল ৭২ থেকে ৮২ টাকা, মিনিকেট চাল ৬৮ থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর মাঝারি মানের বি আর ২৮, ২৯ নম্বর চাল ৬২ থেকে ৬৫ টাকা এবং গুটি, স্বর্ণা, চায়না ইরিসহ মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৮ টাকায়।

সূত্রাপুর বাজারের মেসার্স আদনান অ্যান্ড আরাফাত ট্রেডার্সের মালিক মো. ফারুক বাংলানিউজকে বলেন, আমদানির চাল এখনো বাজারে আসেনি। চাল ঢুকলে দাম কমতে পারে। চালের বাজার একটু দেখছি। ভারতে থেকে চাল এনে লাভ করতে পারব না। কারণ সেদেশেই চালের দাম বেশি, ডলার রেট ও পরিবহন খরচও বেশি। তাই আমাদের বাজারে দাম কমার সুযোগ কম।

এদিকে পাইকারি বাজারে বর্তমানে চিকন চাল প্রতি কেজি দেশি বাসমতি চাল প্রতি কেজি ৮৫ থেকে ৮৮ টাকা। নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৮ টাকায়। মিনিকেট মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়।

মাঝারি মানের বি আরের কেজি ২৮ চাল ৬০ টাকা। বি আর ২৯ চালের কেজি ৫৮ টাকা। পাইজামের কেজি ৫৭ থেকে ৬১ টাকা। মোটা চাল গুটি স্বর্ণা মানভেদে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। হাইব্রিড ধানের চাল (গুটি) বা সব চেয়ে মোটা চালের কেজি ৪৯ টাকা।

রাষ্ট্রীয় বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এখন চালের দাম সাত থেকে ১০ শতাংশ বেশি। এক মাসে বেড়েছে দুই শতাংশ পর্যন্ত। বাজারে এখন মোটা চালের কেজি ৫২ থেকে ৫৫ টাকা।

মাঝারি মানের চালের কেজি ৫৮ থেকে ৬৩ টাকা। সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৭২ থেকে ৮০ টাকায়। এ ছাড়া গত সপ্তাহে মাঝারি মানের চালের দাম বেড়ে যায় প্রায় এক শতাংশ। গত মাসে বাড়ে প্রায় দুই শতাংশ।

বার্ষিক হিসাবে চিকন চালের দাম বেড়েছে নয় দশমিক শূন্য নয় শতাংশ। মাঝারি মানের চালের দাম বেড়েছে ১১ দশমিক ৪৩ শতাংশ। মোটা চালের দাম বেড়েছে সাত দশমিক ১৪ শতাংশ।

এদিকে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে বৈরী আবহাওয়ার কারণে চাল উৎপাদন ব্যাহত হয়। পর্যাপ্ত সরবরাহ ও দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাল রপ্তানিতে উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ এবং কোনো কোনো মানের চালের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দেয় দেশটির সরকার।

তবে গত ২৩ অক্টোবর ভারত সরকার টনপ্রতি ন্যূনতম রপ্তানি দাম ৪৯০ ডলার তুলে দিয়ে বাসমতি ছাড়া অন্য চালের ওপর রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা শিথিল করে। ভারত সেদ্ধ চালের ওপর ১০ শতাংশ রপ্তানি শুল্ক তুলে নেওয়ার একদিন পর এ উদ্যোগ নেওয়া হয়।

এসব উদ্যোগ আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম কমাতে সহায়তা করতে পারে। তবে স্থানীয় আমদানিকারকেরা বর্তমান দাম বিবেচনায় আমদানির কার্যকারিতা সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।

মেসার্স রশিদ রাইস এজেন্সির মালিক বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমানে বাজারে চালের সরবরাহ কম। সরবরাহ বাড়লে দাম এমনিতেই কমে যাবে। কয়েকদিন পর আমন উঠবে। তখন মোটা চালের দাম কমবে। আর সরকার চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে।

তিনি বলেন, আমদানির চাল বাজারে আসতে আরও এক সপ্তাহ সময় লাগবে। তবে আমদানি করা চালের দাম দেশি চালের চেয়ে বেশি হলেও তা মানুষ খাবে। কারণ চালের মান ভালো। যারা ভালোটা খান, তাদের কাছে দাম কোনো বিষয় নয়। আমরা আশা করছি, চালের দাম শিগগিরই কমে যাবে।

বাবুবাজারের চালের আড়ত মেসার্স ফেমাস রাইস এজেন্সির বিক্রয়কর্মী মো. সেলিম বাংলানিউজকে বলেন, ভারতে চালের দাম বেশি। মিনিকেট আনলে দাম পড়বে ৭৪ টাকা। আর দেশি মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৭২ টাকায়। চিকন চাল এনে লাভ হবে না।

তিনি বলেন, মোটা চাল আনলে দাম একটু কমবে। আমনের মোটা চাল উঠলে দাম কমবে। চিকন চাল বৈশাখ মাসের আগে আসবে না। তার আগে আর চালের দামও কমবে না।

হাজী রাইস এজেন্সির ব্যবস্থাপক রুহুল আমিন বলেন, গত ১৫ দিনে মোটা চিকন সব ধরনের চালে দুই থেকে চার টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। চাল আমদানি হয়েছে শুনেছি। কিন্তু বাজারে এখনও আসেনি। মনে হয় না তেমন কোনো লাভ হবে। কারণ আন্তর্জাতিক বাজারেও চালের দাম বেশি।

তিনি বলেন, নভেম্বরের শেষে বাজারে নতুন আমন চাল এলে মোটা চালের দাম একটু কমবে। আর এ সময়ের মধ্যে আমদানি করা চালও বাজারে আসবে। মোটামুটি বলা যায়, ডিসেম্বর থেকে চালের দাম কমে যাবে।

গত অক্টোবরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি) সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে সরকারের কাছে দেওয়া এক প্রতিবেদনে এর আগে বলা হয়েছিল, চাল আমদানি বাড়াতে শুল্ক-কর পুরোপুরি তুলে নেওয়া দরকার। চাল সরকারের জন্য একটি সংবেদনশীল পণ্য। গরিব মানুষের খাদ্য ব্যয়ের একটি বড় অংশ যায় চালের পেছনে।

ওই প্রতিবেদনে বিশ্ববাজারের একটি চিত্র তুলে ধরে বলা হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে এক বছর আগের তুলনায় এখন চালের দাম ১১ শতাংশ কম। গত এক মাসে তা ৪ থেকে ৫ শতাংশ কমেছে। কিন্তু তারপরও আমদানি করতে গেলে খরচ অনেক পড়বে।

কমিশন বলেছিল, থাইল্যান্ডের চালের দাম পড়বে ৬৬ টাকা কেজি। এর সঙ্গে শুল্ক-কর ও অন্যান্য খরচ যোগ করলে দেশে দাম পড়বে ৯২ থেকে ৯৫ টাকা। ভারত থেকে আমদানি করতে গেলে প্রতি কেজির দাম পড়বে ৫৪ টাকা। এর সঙ্গে শুল্ক-কর ও অন্যান্য খরচ যোগ করে দাম পড়বে ৭৫ থেকে ৭৮ টাকা। ট্যারিফ কমিশনের মত ছিল, এ দামে চাল আমদানি কঠিন। তাই শুল্ক-কর তুলে নেওয়ার সুপারিশ করা হয়।

ট্যারিফ কমিশনের সুপারিশে সরকার ২০ অক্টোবর এক দফায় চালের শুল্ক-কর সাড়ে ৬২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশে নামায়। শুল্ক কমানোর ফলে প্রতি কেজিতে আমদানি খরচ ১৪ টাকা ৪০ পয়সা কমে। তবে এরপরও আমদানির ঋণপত্র বাড়েনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, শুল্ক-কর প্রথম দফায় কমানোর পর সেই পর্যন্ত মাত্র ২৬ টন চাল আমদানির ঋণপত্র (এলসি) খোলা হয়। ট্যারিফ কমিশন বাকি শুল্ক-করও তুলে নেওয়ার সুপারিশ করে। তবে সুনির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য। ৩১ অক্টোবর এনবিআর (জাতীয় রাজস্ব বোর্ড) চালের শুল্ক পুরোপুরি তুলে নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে।

এদিকে খাদ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত মাসের শেষ দিকে তাদের গুদামে চালের মজুত ১০ লাখ টনের নিচে নেমে যায়, যা ১৫ আগস্ট ছিল প্রায় সাড়ে ১৪ লাখ টন। সরকারিভাবে বিতরণ বাড়ানোয় মজুত কমে যাওয়ার ব্যাখ্যা দেওয়া হয় অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে। এরপর আমদানিতে উৎসাহ দেওয়ার পরামর্শ আসে।

সে কারণে রপ্তানিকারক দেশের সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে ‘জি টু জি’ ভিত্তিতে (সরকারের সঙ্গে সরকারের চুক্তি) চাল আমদানির বিষয়টি বিবেচনা নিয়ে সরকার পাঁচ লাখ টন চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়। এর আগে সরকার ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১২ লাখ টনের বেশি চাল আমদানি করেছিল। পরের বছর আমদানি হয় এক হাজার টনেরও কম।

ইতোমধ্যে ভারত থেকে আমদানি করা চাল আসা শুরু হয়েছে। দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ১১ নভেম্বর ভারতীয় দুটি ট্রাকে চাল আমদানির প্রথম চালান দেশে প্রবেশ করে। ইতোমধ্যে মোট ১০২টি প্রতিষ্ঠানকে চার লাখ ২৫ হাজার টন সেদ্ধ ও এক লাখ ৬২ হাজার টন আতপ চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আগামী ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত এলসির বিপরীতে বরাদ্দপ্রাপ্তরা চাল আমদানি করতে পারবেন।

খাদ্যসচিব মো. মাসুদুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, আমদানিকারকরা চাল আমদানি শুরু করেছেন। এরইমধ্যে হিলি বন্দর দিয়ে দেশে চাল এসেছে। সামনের দিনগুলোতে আরও চাল আসবে। আগামী সপ্তাহে বাজারে আমন চাল আসবে। আশা করছি আগামী সপ্তাহ থেকে দাম কিছুটা হলেও কমবে।

আমদানির চাল দেশি চালের থেকে দামে বেশি হবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা- এ নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, লাভ না হলে তো আমদানিকারকেরা আর আমদানি করবেন না। আমদানি করা চালের দাম দেশি চালের থেকে দুই এক এক বেশি ঠিক আছে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্যে হলো বাজারে চালের সরবরাহ বাড়িয়ে দাম স্থিতিশীল রাখা। এজন্য আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আর বাজারে সরবরাহ রাড়লে দাম এমনিতেই কমে যাবে। আমাদের উৎপাদন খরচটাও মাথায় রাখতে হবে।

সচিব বলেন, আমদানি ছাড়াও চালের দাম নিয়ন্ত্রণে আমাদের বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি আছে। টিসিবির মাধ্যমে সহায়তা করা হচ্ছে। তা বাড়ানো হতে পারে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে চালের বার্ষিক চাহিদা তিন কোটি ৭০ লাখ থেকে তিন কোটি ৯০ লাখ টন। গত অর্থবছরে তিন কোটি ৯০ লাখ ৩৫ হাজার টন চাল উৎপাদন হয়েছিল। তারপরও বাজারে চালের দাম বেশি ছিল।

এ বিষয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির বাংলানিউজকে বলেন, চাল আমদানিতে শুল্ক কমানোর জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। তবে দেশে আমদানি করা চাল আসছে। তারপরও কেন দাম কমছে না সে বিষয়ে সরকারকে কঠোরভাবে মনিটরিং করতে হবে।

তিনি বলেন, সরকারের নজরদারিতে ঘাটতি রয়েছে, তদারকি আরও বাড়াতে হবে। সরকার এখন শুধু খুচরা পর্যায়ে তদারকি করছে। কিন্তু বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য উৎপাদক, করপোরেট, মিল, পাইকারি ও খুচরা— সব স্তরেই তদারকি করতে হবে, যা হচ্ছে না।

বর্তমান সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে একটা গোষ্ঠী কৃত্রিম সংকটের চেষ্টা করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমানে কৃষকের কাছে কোনো ধান নেই। করপোরেট পার্টিগুলো সব কিনে নিয়ে গুদাম ভরে রেখেছে। বিভিন্ন করপোরেট গুদামে গিয়ে মনিটরিং করতে হবে।

তার পরামর্শ, বাজারে সরবরাহ বাড়াতে হবে। এ ছাড়া শুল্ক কমানোর পর এর সুবিধা একটি পক্ষ নিয়ে নিচ্ছে, ভোক্তারা পাচ্ছেন না। এজন্য যেভাবে হোক বাজারে সরবরাহ বাড়িয়ে দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। এখন আমনের মৌসুম। সেই চাল বাজারে এলে দাম একটু কমবে বলে আশা করেন তিনি।

গত ৩১ আগস্ট বোরো মৌসুমের সংগ্রহ কার্যক্রম শেষ হয়। এ মৌসুমে ১১ লাখ টন সিদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল, হয় ১১ লাখ ২৫ হাজার টন। আতপ চালও এক লাখ টনের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৪ হাজার টন বেশি হয়। তবে ধানের সংগ্রহ কম হয়েছে। আর বর্তমান আমন মৌসুমে ১০ লাখ মেট্রিক টন ধান চাল সংগ্রহ করা হবে।

অর্থনীতি

বিদেশে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ ও চাকরিপ্রত্যাশী বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সব সনদ অনলাইনে সত্যায়ন নিশ্চিত করা গেলে বছরে কমপক্ষে ৭০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।

মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) ইউজিসি অডিটরিয়ামে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্জিত ডিগ্রি নিয়ে বিদেশ যেতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের সনদ অনলাইনভিত্তিক অ্যাপোস্টিল প্ল্যাটফর্মে সত্যায়ন শীর্ষক এক কর্মশালায় এ তথ্য জানানো হয়েছে।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান, প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন ও ইউজিসি সচিব ড. মো. ফখরুল ইসলাম।

ইউজিসির ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট, কমিউনিকেশন এবং ট্রেনিং বিভাগের পরিচালক মো. ওমর ফারুখের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (কনস্যুলার ও কল্যাণ) ড. শাহ মোহাম্মদ তানভীর মনসুর।

কর্মশালায় বক্তারা বলেন, মন্ত্রিসভায় অ্যাপোস্টিল কনভেনশন স্বাক্ষরের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর ফলে বিদেশগামী শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীদের বিভিন্ন সনদ, দলিল, হলফনামা চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী ১২৭টি দেশে পুনরায় সত্যায়নের প্রয়োজন হবে না। অ্যাপোস্টিল পদ্ধতিতে বছরে প্রায় দুই লাখ ৫০ হাজারের অধিক সার্টিফিকেট অনলাইনে সত্যায়ন করা সম্ভব হবে এবং এতে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। এছাড়া, অ্যাপোস্টিল পদ্ধতিতে সার্টিফিকেট সত্যায়ন করা হলে শিক্ষার্থীদের সময় ও শ্রম সাশ্রয় হবে এবং ভোগান্তি কমে আসবে বলে তারা জানান।

কর্মশালায় বক্তারা আরও জানান, অনলাইনে সত্যায়ন করা হলে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে এবং সত্যায়নে নকল প্রবণতা ও মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য রোধ করা যাবে। অ্যাপোস্টিল পদ্ধতিতে প্রতিদিন ১০ হাজারের অধিক সনদ সত্যায়ন করা যাবে।

বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিতে আগ্রহী বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট সত্যায়নে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ‘অ্যাপোস্টিলমাইগভ’ (apostille.mygov.bd) প্ল্যাটফর্মে যুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, আইসিটি মন্ত্রণালয়ের এটুআই এবং ইউজিসি উচ্চশিক্ষা স্তরের সার্টিফিকেট অনলাইনে সত্যায়ন বাস্তবায়ন করবে।

অনুষ্ঠানে ৪৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও আইটি কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন কমিশনের গবেষণা সহায়তা ও প্রকাশনা বিভাগের পরিচালক ড. ফেরদৌস জামান, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের পরিচালক ড. সুলতান মাহমুদ ভূইয়া, জনসংযোগ ও তথ্য অধিকার বিভাগের পরিচালক ড. শামসুল আরেফিন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ জামিনুর রহমান, স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানিং, কোয়ালিটি অ্যাসিউরেন্স বিভাগের পরিচালক ড. দুর্গা রানী সরকার, অর্থ ও হিসাব বিভাগের পরিচালক মো. রেজাউল করিম হাওলাদারসহ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, এটুআই এবং ইউজিসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

অর্থনীতি

নভেম্বরের প্রথম নয় দিনে প্রবাসী আয় এলো ৬৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ সাত হাজার ৮৬০ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২০ টাকা হিসাবে)।

নভেম্বরের শুরুর নয় দিন প্রতিদিন প্রবাসী আয় এসেছে সাত কোটি ২৭ লাখ ৭৭ হাজার ৭৭৮ ডলার। রোববার (১০ নভেম্বর) এ তথ্য প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

তথ্য অনুযায়ী, আগের মাস অক্টোবরে প্রতিদিন প্রবাসী আয় আসে সাত কোটি ৯৮ লাখ ৩৬ হাজার ডলার। আগের বছরের নভেম্বর মাসে প্রতিদিন প্রবাসী আয় আসে ছয় কোটি ৪৩ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬৭ ডলার।

আগের মাস অক্টোবরে সেপ্টেম্বর মাসের চেয়ে কম প্রবাসী আয় এসেছিল। অক্টোবর মাসে প্রবাসী আয় এসেছিল ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ ৮০ হাজার ডলার। আর সেপ্টেম্বর মাসে আসে ২৪০ কোটি ৪১ লাখ ১০ হাজার ডলার।

তথ্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, নভেম্বর মাসের ৯ দিনে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে আসে ১৯ কোটি ৯৭ লাখ ৫০ হাজার ডলার। কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে আসে তিন কোটি ১৫ লাখ ৬০ হাজার ডলার।

বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৪২ কোটি ১৯ লাখ ৪০ হাজার ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১৭ লাখ ৫০ হাজার ডলার এসেছে।

একক ব্যাংক হিসেবে সর্বোচ্চ প্রবাসীয় আয় এসেছে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে, ১০ কোটি ৯১ লাখ ৯০ হাজার ডলার।

অনলাইনে রিটার্ন জমা দিয়েছেন আড়াই লাখ করদাতা

চলতি ২০২৪-২০২৫ করবর্ষে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলের সংখ্যা ২ লাখ ৫০ হাজার। একই সময়ে আয়কর রিটার্ন দাখিলের জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছেন ১০ লাখ ৫০ হাজার করদাতা।

রোববার (১০ নভেম্বর) বিষয়টি  নিশ্চিত করেছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পরিচালক (জনসংযোগ) সৈয়দ এ মু’মেন।

তিনি বলেন, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, কার্ড পেমেন্ট ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে করদাতারা কর পরিশোধ করতে পারছেন এবং দাখিল করা রিটার্নের কপি, প্রাপ্তি স্বীকারপত্র, আয়কর সনদ, টিআইএন সনদ ডাউনলোড ও প্রিন্টের সুবিধা পাচ্ছেন। এছাড়া পূর্ববর্তী বছরের দাখিল করা ই-রিটার্ন ডাউনলোড ও প্রিন্ট করতে পারছেন।

চলতি ২০২৪-২৫ করবর্ষের আয়কর রিটার্ন দাখিল ও কর পরিশোধ পদ্ধতি গত ৯ সেপ্টেম্বর থেকে অনলাইন রিটার্ন দাখিল সিস্টেম করদাতাদের জন্য উন্মুক্ত করেছে। ই-রিটার্ন সংক্রান্ত যেকোনো সমস্যায় করদাতাদের সহায়তা দিতে এনবিআর একটি কল সেন্টার স্থাপন করেছে। অফিস চলাকালীন যে কোনো সময়ে কল সেন্টারের ০৯৬৪৩ ৭১ ৭১ ৭১ নম্বরে করদাতারা তাৎক্ষণিক টেলিফোনিক সমাধান পাচ্ছেন বলে জানান এনবিআরের এই কর্মকর্তা।

এ ছাড়া www.etaxnbr.gov.bd এর eTax Service অপশন থেকে করদাতারা ই-রিটার্ন সংক্রান্ত যে কোনো সমস্যা ই-মেইলের মাধ্যমে জানাতে পারছেন, যা দ্রুততম সময়ে নিষ্পত্তি করছেন আয়করকারী গ্রাহকরা। একইসঙ্গে অনলাইনে রিটার্ন দাখিল বিষয়ক একটি ভিডিও টিউটোরিয়াল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ওয়েব পেজ (www.nbr.gov.bd), ইউটিউব চ্যানেল www.youtube.com/@nbr.bangladesh এবং ফেসবুক পেজ www.facebook.com/nbr.bangladesh-এ পাওয়া যাচ্ছে।

আয়কর রিটার্ন দাখিলসহ মেলার পরিবেশে করদাতাদের সব ধরনের সেবা দিতে ৩ নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে কর তথ্যসেবা মাস। চলতি নভেম্বর মাসজুড়ে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের ৪১টি কর অঞ্চলের ৮৬৯টি সার্কেলে অফিস চলাকালীন সময়ে পাওয়া যাবে করসেবা।

এর আগে তথ্য প্রযুক্তিতে অভ্যস্ত ঢাকা উত্তর, ঢাকা দক্ষিণ, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনে অবস্থিত আয়কর সার্কেলগুলোর অধিক্ষেত্রভুক্ত সব সরকারি কর্মচারী, সব তফসিলি ব্যাংক, সব মোবাইল টেলিকম সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান এবং কয়েকটি কোম্পানিতে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এর ফলে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলের পরিধি বাড়ছে।

অর্থনীতি

“তারা আমাদের কাছে টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য সময় চেয়েছে। আশা করি, এ বিষয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটা সিদ্ধান্ত নেবে,” বলছেন নগর সংস্থার প্রধান নির্বাহী।

চার ব্যাংকে রাখা ২৯ কোটি টাকার স্থায়ী আমানতের মেয়াদ পূর্ণ হলেও ব্যাংকগুলো তারল্য সংকটে থাকায় মুনাফাসহ সেই অর্থ তুলতে পারছে না ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)।

এ পরিস্থিতিতে নগর সংস্থার তরফে গভর্নরের কাছে চিঠি দেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।

ওই চার ব্যাংক হচ্ছে- গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ও বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক।

জানতে চাইলে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মীর খায়রুল আলম বলেন, “ডিপোজিট ম্যাচিউরড হওয়ার পর সেটার জন্য এসব ব্যাংকে আমরা আবেদন করেছি। কিন্তু তারা আমাদের কাছে টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য সময় চেয়েছে।

“আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে বিষয়টি জানিয়েছি যে- এসব ব্যাংক আমাদের টাকা দিতে পারছে না। তবে এখনও কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। আশা করি, এ বিষয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটা সিদ্ধান্ত নেবে।”

এ বিষয়ে জানতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র শাহরিয়ার সিদ্দিকের সঙ্গে মোবাইলে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার সাড়া মেলেনি।

চিঠিতে ডিএনসিসি লিখেছে, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের পান্থপথ মহিলা শাখা ও উত্তরা শাখায় ৪ কোটি টাকার এফডিআর ছিল।

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের কুড়িল বিশ্ব রোড শাখায় এফডিআর ছিল ১০ কোটি টাকার। বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের প্রগতি সরণি শাখায় এর পরিমাণ ছিল ৫ কোটি টাকা। আর সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের মোহাম্মদপুর শাখায় ১০ কোটি টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করেছিল ডিএনসিসি।

সংস্থাটি বলছে, স্থায়ী আমানতের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ায় মুনাফাসহ টাকা উত্তোলনের জন্য জুলাইয়ের শুরুতে আবেদন করা হয়। তবে কাঙ্ক্ষিত সেই অর্থ পাওয়া যায়নি।

মুনাফাসহ সর্বসাকুল্যে পাওনার পরিমাণ কত তা ডিএনসিসির সিইও মীর খায়রুল আলম জানাতে পারেননি।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের মোহাম্মদপুর শাখার ব্যবস্থাপক জাফরিন খন্দকারের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ও বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট শাখাগুলোও ফোন কলে সাড়া দেয়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, এসব ব্যাংকে আমানতের বিপরীতে উচ্চ মুনাফার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হত। সে কারণে অন্য ব্যাংকে আমানত না রেখে এসব ব্যাংকে আগ্রহী ছিল অনেকেই।

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এসব ব্যাংকে তারল্য সহায়তা দেওয়া বন্ধ রেখেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর আগে শেখ হাসিনার আমলে বিতর্কিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলমের নিয়ন্ত্রণে থাকা দুর্বল ব্যাংকগুলোকে তারল্য সহায়তা দিয়ে আসছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।

এসব দুর্বল ব্যাংককে সহায়তার প্রশ্নে সরাসরি কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে অর্থ না দিয়ে আন্তঃব্যাংক থেকে তারল্য সহযোগিতা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন বর্তমান গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। এরপর তারা সবল ব্যাংকগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে; এখন পর্যন্ত ৫টি সবল ব্যাংক তারল্য সহায়তা দিয়েছে।

অর্থনীতি

শীতকালীন সবজির সরবরাহ বাড়ায় বাজারে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে সবজি ও মুরগির দাম কমেছে।

একইসঙ্গে বাজারে ইলিশের বিক্রি শুরু হওয়ায় মাছের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। তবে গত সপ্তাহের মতো চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ ও আলু।

শুক্রবার (৮ নভেম্বর) রাজধানীর শেওড়াপাড়া ও তালতলা বাজার ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।

রাজধানীর এসব বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত সপ্তাহের তুলনায় সব ধরনের সবজির দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা কমেছে। তবে সিম ও কাঁচামরিচ কেজিতে ৪০ টাকা কমে ১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এসব বাজারে গ্রীষ্মকালীন সবজি কচুরমুখী প্রতিকেজি ৭০ টাকা, বেগুন ৬০ থেকে ৮০ টাকা, করলা ৭০ থেকে ৮০ টাকা, পটল ৫০ থেকে ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৭০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, পেঁপে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, ধুন্দল ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৭০ টাকা, কচুর লতি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, ঝিঙা ১০০ টাকা, শসা ৬০ থেকে ৮০ টাকা ও কাঁচামরিচ ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে গত সপ্তাহের তুলনায় সব ধরনের মুরগির দাম কমেছে। গত সপ্তাহের তুলনায় ব্রয়লার মুরগি কেজিতে ১০ টাকা কমে ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সোনালি কক মুরগি কেজিতে ৪০ টাকা কমে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সোনালি হাইব্রিড ২৯০ টাকা, দেশি মুরগি ৫২০ টাকা, লেয়ার লাল মুরগি ৩০০ টাকা ও সাদা লেয়ার ২৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

বাজারগুলোতে শীতকালীন সবজি সিম ১২০ টাকা কেজি, ফুলকপি ৩০ থেকে ৫০ টাকা পিস, বাঁধাকপি ছোট সাইজের ৪০ টাকা পিস, পাকা টমেটো প্রকারভেদে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা, গাজর ১২০ টাকা, মুলা ৬০ টাকা ও জলপাই ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এসব বাজারে লেবুর হালি ২০ থেকে ৪০ টাকা, ধনেপাতা কেজিতে ১০০ টাকা কমে ২০০ টাকা, কাঁচা কলা হালি ৫০ টাকা, চাল কুমড়া ৬০ টাকা পিস ও মিষ্টি কুমড়া ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

বাজারগুলোতে লালশাক ১৫ টাকা আঁটি, লাউশাক ৪০ টাকা, মুলাশাক ২০ টাকা, কলমিশাক ১৫ টাকা, পুঁইশাক ৪০ টাকা ও ডাটাশাক ৩০ টাকা আঁটি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।

বাজারগুলোতে দেশি পেঁয়াজ ১৬০ টাকা, ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ ১২০ টাকা, কাঁচা আদা ১২০ টাকা, পুরান আদা ২৮০ টাকা, রসুন কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ২৪০ টাকা, নতুন আলু ১২০ টাকা, বগুড়ার আলু ১০০ টাকা ও পুরান আলু ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এসব বাজারে গরুর মাংস প্রতিকেজি ৬৫০ থেকে ৮০০ টাকা, গরুর কলিজা ৮০০ টাকা, গরুর মাথার মাংস ৪৫০ টাকা, গরুর বট ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা ও খাসির মাংস ১ হাজার ১৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজারগুলোতে এক ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা, হাঁসের ডিম ২৩০ টাকা, দেশি মুরগির ডিমের হালি ৯০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।

নিষেধাজ্ঞা শেষে বাজারে ইলিশ আসতে শুরু করায় মাছের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। বাজারগুলোতে ৫০০ গ্রামের ইলিশ ১ হাজার টাকা, ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রামের ১ হাজার ৫০০ টাকা, এক কেজি ওজনের ১ হাজার ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারগুলোতে প্রতিকেজি শিং মাছ চাষের (আকারভেদে) বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, রুই মাছের দাম বেড়ে (আকারভেদে) ৩৮০ থেকে ৫০০ টাকা, দেশি মাগুর মাছ ৮০০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা, মৃগেল ৩২০ থেকে ৪০০ টাকা, চাষের পাঙাস ২০০ থেকে ২২০ টাকা, চিংড়ি ৭০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, বোয়াল মাছ ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাতল ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, পোয়া মাছ ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, পাবদা মাছ ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ টাকা, কই মাছ ২২০ থেকে ২৩০ টাকা, মলা ৫০০ টাকা, বাতাসি টেংরা ১ হাজার ৩০০ টাকা, টেংরা মাছ ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাচকি মাছ ৫০০ টাকা, পাঁচ মিশালি মাছ ২২০ টাকা, রুপচাঁদা ১ হাজার ২০০ টাকা, বাইম মাছ ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা, দেশি কই ১ হাজার ২০০ টাকা, শোল মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, আইড় মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, বেলে মাছ ৮০০ টাকা ও কোরাল মাছ ৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এসব বাজারে ৫ কেজি সোয়াবিন তেল ৮১৮ টাকা, দেশি মশুর ডাল ১৪০ টাকা, মুগ ডাল ১৮০ টাকা, মিনিকেট চাল ৭৬ থেকে ৮০ টাকা ও নাজিরশাইল চাল ৭৫ থেকে ৮২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

অর্থনীতি

বাংলাদেশের অন্যতম সমস্যা অর্থ পাচার। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মোটা অঙ্কের অর্থ পাচার হয়েছে। আর পাচারের অর্থ ফেরানো নতুন সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। তবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়তা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বিশ্বব্যাংক। প্রতিষ্ঠানটির মতে, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৪ শতাংশ। তবে সংস্কার কার্যক্রম সঠিকভাবে করতে পারলে ২০২৬ সালে তা ৫ শতাংশ ছাড়াবে।

বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক আলোচনা সভায় বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটানের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুলায়ে সেক এসব কথা বলেন। দেশের সাবেক কূটনৈতিকদের সংগঠন ‘অ্যাসোসিয়েশন অব ফরমার অ্যাম্বাসেডর (আওফা)’ এই আলোচনা সভার আয়োজন করে। আলোচনার বিষয় ছিল : ‘বাংলাদেশ-বিশ্বব্যাংক সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার উপায়।’ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের বিশেষ ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান। আওফার সভাপতি রাষ্ট্রদূত আব্দুল্লাহ আল হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক এএফএম গাউসূল আজম সরকার, ভাইস প্রেসিডেন্ট সাহেদ আখতার, সহকারী সাধারণ সম্পাদক মাশফি বিনতে শামস এবং রাষ্ট্রদূত রিয়াজ হামিদুল্লাহ প্রমুখ। এ সময়ে বক্তারা প্রকল্প অর্থায়নের পরিবর্তে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে বাজেট সহায়তা চেয়েছেন।

আবদুলায়ে সেক বলেন, বিশ্বব্যাংকের কাছে বাংলাদেশের পোর্টফোলিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শুরু থেকেই এ দেশকে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। বর্তমানে দেশটি কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি। এখানে বড় কয়েকটি সমস্যার মধ্যে অন্যতম দেশ থেকে অর্থ পাচার। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার পাচার করা টাকা ফিরিয়ে আনতে সহায়তা চেয়েছে। তবে এক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংক সহায়তা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ ব্যাপারে ইতোমধ্যে সরকারের প্রতিনিধি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কথা হয়েছে। সেখানে আমরা সহায়তা দেওয়ার কথা বলেছি। তবে অর্থ ফেরানো কঠিন। কারণ অনেক আইনকানুনের ব্যাপার রয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে অনেক কথা আছে। অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও তাদের পূর্বাভাস দিয়েছে। তবে আমাদের মতে, চলতি অর্থবছর অর্থাৎ ২০২৫ সালে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৪ শতাংশ। কিন্তু ইতোমধ্যে বাংলাদেশ বেশকিছু খাতে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। এই সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন হলে ২০২৬ সালে প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশ ছাড়াতে পারে।

চলতি অর্থবছরের বাজেটে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল সরকার।

সংস্কার ইস্যুতে এক প্রশ্নের জবাবে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর বলেন, অন্যান্য খাতের পাশাপাশি বাংলাদেশে বাণিজ্য খাতে সংস্কার খুব গুরুত্বপূর্ণ। সরকার চাইলে বিশ্বব্যাংক এখানেও সহায়তা দিতে পারে। রোহিঙ্গা সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই সমস্যাটির টেকসই সমাধান দরকার। আর এর টেকসই সমাধান হলো রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো। বিশ্বব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এ বিষয়ে কাজ করছে। এছাড়া সংস্থাগুলো তাদের সহায়তাও অব্যাহত রেখেছে। এই ইস্যুতে তারা বাংলাদেশের পাশে রয়েছে।

ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে ছাত্র-জনতা সম্মিলিতভাবে বিশাল ত্যাগের মাধ্যমে ৫ আগস্ট বড় একটি অর্জন করেছে। এটিকে আমরা ধরে রাখতে চাই। আমরা চাই আমাদের সেই অতীত, ভবিষ্যতে আর যাতে ফিরে না আসে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। স্বাধীনতার পর থেকে প্রতিষ্ঠানটি আমাদেরকে ৪৫ বিলিয়ন ডলার (এক বলিয়ন ডলার সমান ১২ হাজার কোটি টাকা) সহায়তা দিয়েছে। তবে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের দাতা নয়, উন্নয়ন অংশীদার। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অন্যতম সমস্যা বৈষম্য। দেশের নিম্ন আয়ের ৫ শতাংশ এবং উচ্চ আয়ের ৫ শতাংশের মধ্যে সম্পদের পার্থক্য বিশাল। বিশ্বব্যাংকও বিষয়টি বারবার বলে আসছে। আগস্টের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এটা আরও পরিষ্কারভাবে সামনে এসেছে। আরেকটি বিষয় হলো অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক নিয়ে সরকারের প্রকাশিত তথ্যের সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের তথ্যের পার্থক্য রয়েছে। এরমধ্যে জিডিপি প্রবৃদ্ধি, দারিদ্র্য বিমোচন এবং মূল্যস্ফীতি অন্যতম। তার মতে, বতর্মানে বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতির অন্যতম কারণ ডলারের দাম বেড়েছে। এর ফলে বেড়েছে আমদানি ব্যয়। ৩ বছর আগেও এক ডলারের দাম ছিল ৮৬ টাকা। বর্তমানে সেটি ১২০ টাকায় উন্নীত হয়েছে। এছাড়াও বর্তমানে বাংলাদেশের দরিদ্র মানুষের হার ৪ শতাংশ।

পাচারের অর্থ ফেরানোর ব্যাপারে তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে যেসব অর্থ বিদেশে পাচার হয়েছে, তা ফেরানো অত্যন্ত কঠিন। কারণ যে সব দেশে গেছে, ওই দেশের আইনকানুন, আন্তর্জাতিক আইন এবং তদন্ত প্রক্রিয়া এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু বিশ্বব্যাংক চাইলে তা সম্ভব। কারণ তাদের তদন্ত সক্ষমতা এবং ফরেনসিক সাপোর্টসহ সব ধরনের সক্ষমতা আছে। ড. মোস্তাফিজ বলেন, বাংলাদেশের আরেকটি বড় সমস্যা অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ একেবারে কম। বর্তমানে দেশের রাজস্ব আয় জিডিপির ৮ দশমিক ২ শতাংশ। এর মধ্যে প্রত্যক্ষ আয় এক-তৃতীয়াংশ। আর বাকি দুই-তৃতীয়াংশই পরোক্ষ আয়। তিনি বলেন, দেশে যে পরিমাণ রাজস্ব আয় হয়, পুরোটাই রাজস্ব ব্যয়। অর্থাৎ রাজস্ব আয়ের পুরো টাকাই সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতায় চলে যায়। আর উন্নয়নের অর্থ পুরোটাই ঋণ করে আনতে হয়। ফলে এই উন্নয়ন টেকসই নয়। এ অবস্থার উন্নয়নে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। সংস্কারের ব্যাপারে তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কারে ব্যাপক গুরুত্ব দিয়েছে। ইতোমধ্যে বড় ৬টি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে। এছাড়া ব্যাংকিং খাতে টাস্কফোর্স এবং শ্বেতপত্র প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছে। তবে সংস্কারের জন্য অর্থ এবং কারিগরি সহায়তা জরুরি। এক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংক সহায়তা দিতে পারে। তবে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে প্রকল্প সহায়তার পরিবর্তে বাজেট সাপোর্টে জোর দেন তিনি। তার মতে, বর্তমানে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকটে রয়েছে। বাজেট সহায়তা পেলে রিজার্ভ বাড়বে। অর্থনীতির অন্যান্য সূচকেও এর প্রভাব পড়বে। এছাড়াও বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে সুনির্দিষ্ট সহায়তা চেয়েছেন তিনি। সিপিডির এই বিশেষ ফেলো বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের আদানি গ্র“পের কাছ থেকে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ আমদানি নিয়ে একটি জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। কেউ কেউ বিদ্যুতের দাম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তবে ভবিষ্যতে তাদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি করলে অন্যান্য দেশের সঙ্গে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতের দাম নিয়ে তুলনা করা যেতে পারে। কিন্তু আগে যে চুক্তি করা হয়েছিল, আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে সেই বিল পরিশোধ না করার বিকল্প নেই।

অর্থনীতি