অর্থনীতি

চলতি অক্টোবর মাসের প্রথম ২৬ দিনে দেশে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স এসেছে ১৯৪ কোটি ৯৩ লাখ ৯০ হাজার মার্কিন ডলার, দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ২৩ হাজার ৩৯ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২০ টাকা ধরে)।দৈনিক গড়ে রেমিট্যান্স এসেছে প্রায় ৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার, যা দেশীয় মুদ্রায় প্রায় ৯০০ কোটি টাকা।

রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি মাসের ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত দেশে যে পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে, এরমধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৫৪ কোটি ৭৩ লাখ ডলার, বিশেষায়িত একটি ব্যাংকের মাধ্যমে ১০ কোটি মার্কিন ডলার, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১২৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৫১ লাখ হাজার মার্কিন ডলার প্রবাসী আয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ২১১ কোটি ৩১ লাখ ৫০ হাজার ডলার।তার পরের মাস ফেব্রুয়ারিতে আসে ২১৬ কো‌টি ৪৫ লাখ ৬০ হাজার ডলার, মার্চে ১৯৯ কো‌টি ৭০ লাখ ৭০ হাজার ডলার, এপ্রিলে ২০৪ কোটি ৪২ লাখ ৩০ হাজার ডলার, মে মাসে ২২৫ কোটি ৪৯ লাখ ৩০ হাজার ডলার, জুনে ২৫৩ কোটি ৮৬ লাখ ডলার, জুলাইয়ে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার, আগস্টে ২২২ কোটি ৪৫ লাখ ৫০ হাজার ডলার এবং সেপ্টেম্বরে আসে ২৪০ কোটি ৪৭ লাখ ৯০ হাজার মার্কিন ডলার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, সদ্য সমাপ্ত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দুই হাজার ৩৯২ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ রেমিট্যান্স আসে দেশে।দেশীয় মুদ্রার যার পরিমাণ দুই লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকা, যা দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেকর্ড প্রবাসী আয় এসেছিল ২০২০-২১ অর্থবছরে দুই হাজার ৪৭৭ কোটি ডলার।

অর্থনীতি

গ্যাসের দুটিসহ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে চারটি উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। এ সময় একটি প্রকল্পের শুধুমাত্র মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।

বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ২২২ কোটি ১৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৯৬৩ কোটি ৮২ লাখ, বৈদেশিক ঋণ সহায়তা থেকে ১০০ কোটি ১৬ লাখ এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে ১৫৮ কোটি ১৬ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।

পরে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়। সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিকল্পনা ও অর্থ উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।

একনেকে অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হলো-বাখরাবাদ-মেঘনাঘাট-হারিপুর গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ (সংশোধিত) প্রকল্প। এছাড়া দুটি মূল্যায়ন কাম উন্নয়ন কূপ (সুন্দলপুর-৪ ও শ্রীকাইল-৫) এবং দুটি অনুসন্ধান কূপ (সুন্দলপুর সাউথ-১ ও জামালপুর-১) খনন। তথ্য আপ: ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে নারীদের ক্ষমতায়ন-দ্বিতীয় পর্যায় (দ্বিতীয় সংশোধিত) এবং সর্বশেষটি হলো, পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান প্রকল্প (২য় সংশোধিত)।

এদিকে ব্যয় না বাড়িয়ে শুধু মেয়াদ বাড়ানোর জন্য উপস্থাপন হবে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান প্রকল্প (দ্বিতীয় সংশোধিত)।

তবে একনেকে উপস্থাপনের জন্য মোট ৬টি প্রকল্প উপস্থাপনের কথা থাকলেও পুনরায় পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য দুটি প্রকল্প ফেরত দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

অর্থনীতি

দেশের যুব সমাজের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়াতে ভূমিকা রাখায় ২০২৪ সালের ‘গ্লোবাল ইয়ুথ ফিন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সম্প্রতি মধ্য আমেরিকার দেশ এল সালভাদরে অনুষ্ঠিত এএফআই গ্লোবাল পলিসি ফোরামের সভায় বাংলাদেশ ব্যাংককে এ সম্মাননা দেওয়া হয়।

রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে বলা হয়, পুরস্কার দেওয়ার ক্ষেত্রে দেশের যুব সমাজের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের বেশ কিছু কার্যক্রম বিবেচনা করা হয়েছে। এগুলোতে সমাজে বিশেষ করে যুব সমাজের মধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন হওয়ার  কারণে এ পুরস্কার দেওয়া হয়।

আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বিষয়ে নীতিনির্ধারণী ও নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানগুলোর আন্তর্জাতিক জোট অ্যালায়েন্স ফর ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন (এএফআই) আর্থিক খাতের সম্মানজনক ‘গ্লোবাল ইয়ুথ ফিন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন অ্যাওয়ার্ড’ দিয়ে থাকে।

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য আর্থিক সাক্ষরতার নির্দেশিকা তৈরি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি এ নির্দেশিকা অনুসারে শিক্ষার্থী ও তরুণদের নির্দিষ্ট শ্রেণির আওতাভুক্তকরণ ও তাদের আর্থিক সাক্ষরতা নিশ্চিতের লক্ষ্যে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

দেশের ২১ থেকে ৪৫ বছর বয়সী উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে স্টার্ট আপ ফান্ড গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। দেশব্যাপী স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে ৪৩ লাখ স্কুল ব্যাংক হিসাব চালু করা হয়েছে। স্কুল ব্যাংকিংয়ে নারী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার মাধ্যমে আর্থিক খাতে লিঙ্গবৈষম্য হ্রাসের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বর্তমানে স্কুল ব্যাংকিং হিসাবধারী নারী শিক্ষার্থীর হার ৪৮ দশমিক ৯ শতাংশ।

এ ছাড়া প্রশিক্ষণ, দক্ষতাভিত্তিক পেশা ও ব্যবসা পরিচালনার জন্য স্কুল ব্যাংকিং হিসাবধারীদের পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের আওতায় ঋণ দেওয়া হচ্ছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, এএফআই হচ্ছে বিশ্বব্যাপী আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বিষয়ে নীতিনির্ধারণী নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানসমূহের আন্তর্জাতিক সংগঠন। বর্তমানে বিশ্বের ৮৪টি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয় ও আর্থিক খাতের অন্যান্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাসহ ৯০টি প্রতিষ্ঠান এ সংস্থার সদস্য।

বাংলাদেশ ব্যাংক ২০০৯ সাল থেকে এ প্রতিষ্ঠানের মুখ্য সদস্য হিসেবে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি সংক্রান্ত বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করছে। প্রতিবছর এএফআই কর্তৃক আয়োজিত গ্লোবাল পলিসি ফোরামের আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে বিশেষ অবদানের জন্য এর সদস্যদের মধ্য থেকে বিভিন্ন শ্রেণিতে পুরস্কার দেওয়া হয়।

ব্যাংক খাত সংস্কারে ১৫০ কোটি মার্কিন ডলার দেবে এডিবি

 দেশের ব্যাংক খাত সংস্কারের জন্য ১৫০ কোটি মার্কিন ডলার দেবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। বাজেট সহায়তা হিসাবে আগামী ডিসেম্বরে মধ্যে মিলবে আরও ৪০ কোটি ডলার।রোববার অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর এটি নিশ্চিত করেছেন।

ওই বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, আজকের বৈঠক আর্থিক খাত, রাজস্ব খাত সংস্কার নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এডিবি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর

অর্থায়ন সংস্থা। তারা স্বল্প মধ্যে ও দীর্ঘ মেয়াদে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে। এলডিসি উত্তোলনে বাজেট সহায়তা হিসাবে আগামী ডিসেম্বর ৪০ কোটি ডলার দেবে সংস্থাটি।

অর্থনীতি

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) হিসাবে সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার অভাবে দেশে বছরে ২৫-৩০ শতাংশ কৃষি এবং খাদ্য পণ্য নষ্ট হচ্ছে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্ট্যাডিজের হিসাবে নষ্ট হওয়া পণ্যের মোট ক্ষতির অংক ৫ হাজার কোটি টাকা। বিগত ৫০ বছরে হিসাবটি যোগ করলে এ ক্ষতির অংক সম্ভাব্য দুই থেকে আড়াই লাখ কোটি টাকা। যা চলতি জিডিপির সর্বোচ্চ ৪ দশমিক ৪৬ শতাংশ। এই বিপুল অংক দেশের মূল অর্থনীতিতে যোগ হয়নি।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতায় আটকে আছে কৃষি ও কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের বিকাশ।এরমধ্যে নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপনে গ্যাস ও বিদ্যুৎ মিলছে না। অধিকাংশ স্থানে কাঁচামালের প্রাপ্যতা ও সরবরাহের অনিশ্চয়তা।এ ছাড়া উদ্ভাবন, গবেষণা, মান উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ, পরীক্ষাগার স্থাপন, সংরক্ষণ এবং প্যাকেজিং ব্যবস্থা উন্নয়নে জোরদার নেই। স্থানীয় পর্যায়ে অনেক পণ্য উৎপাদন হলেও প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে অগ্রাধিকার পাচ্ছে না।পণ্য উৎপাদনশীলতা সংক্রান্ত ও প্রযুক্তিগত জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ জনবল এবং উদ্ভাবনী প্রযুক্তি অনুসরণের অভাব রয়েছে।

আরও দেখা গেছে, সংরক্ষণ সুবিধা স্বল্পতা, ব্যবসার তথ্য ও বিপণন প্রবেশাধিকার সীমিত সুবিধা, অধিক পরিচালন ব্যয় এবং ব্যবসাবান্ধব শুল্ক সুবিধার অভাবও রয়েছে। ফলে আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভরতার অভাবে প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে পণ্যে ভ্যালু অ্যাড (মূল্য সংযোজন) কম হচ্ছে। চাহিদা স্বত্বেও রপ্তানি বাজার বাড়ছে না।

এসব প্রতিবন্ধকতা দূর না করা হলে ২০২৮ সালের মধ্যে এ খাতে ৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা হাতছাড়া হওয়ার শঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের নথিপত্র বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা দূর করতে পারলে ২০২৮ সালের মধ্যে কৃষি ও কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের মাধ্যমে অতিরিক্ত সাড়ে চার লাখ কোটি টাকা জিডিপিতে যোগ করা সম্ভব। বর্তমান জিডিপিতে এ শিল্পের অবদান ৯৬ হাজার কোটি টাকার ঘরে আটকে আছে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, পরিবহণ, সংরক্ষণ, বাজারজাতকরণ এবং উৎপাদন পর্যায়ে নানাভাবে বছরে আম নষ্ট হচ্ছে ২৫-৩০ শতাংশ, কাঠাল ৪৫ শতাংশ এবং সবজি হচ্ছে ৩০ শতাংশ। রপ্তানির চাহিদা এক লাখ মেট্রিক টনের বেশি হলেও বর্তমানে ৩ হাজার মেট্রিক টনের বেশি আম রপ্তানি সম্ভব হচ্ছে না। সঠিক স্থানে প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প গড়ে উঠলে এই নষ্ট হওয়া পণ্যের পরিমাণ আরও কম হতো এবং রপ্তানি বাড়ানো যেত।

খোজ নিয়ে জানা গেছে, কৃষি ও কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া অনেক এগিয়ে গেছে। ভারতের কেরালায় আনারস ‘মরিশাস’ জাতটি জিআই প্রডাক্ট হিসেবে রাজ্য সরকার কর্তৃক স্বীকৃত। এ আনারসকে কেন্দ্র করে বহু ক্ষুদ্র প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা গড়ে উঠেছে। প্রাথমিকভাবে আনারস থেকে প্রায় ১৫ রকমের ভ্যালু অ্যাডেড খাদ্যপণ্য তৈরি হচ্ছে। তার মধ্যে ফ্রেশকাট পাইনঅ্যাপল, ড্রাইড পাইনঅ্যাপল, আনারসের জ্যাম, জেলি, জুস, সফট ক্যান্ডি, আনারসের চাঙ্ক, পাল্প ইত্যাদি উল্লে­খযোগ্য। এছাড়া কেরালার ভার্জিন নারকেল তেল, নারকেল পাউডার ও নারকেলের উপজাত থেকে তৈরি নানা রকমের শোপিস পর্যটকদের দৃষ্টি কাড়ে। এসবের অর্থনৈতিক ভ্যালুও অনেক। সেখানে কলা থেকে তৈরি নানা রকম চিপসও দেদারছে বিক্রি হয় রাস্তার ভালোমানের দোকানগুলোয়। একইভাবে ভিয়েতনামের হো চি মিন সিটিতে ফুটপাথের দোকানে সুন্দর রেপিং করা মোড়কে বিভিন্ন ফলের ফ্রেশকাট বিক্রি করতে দেখা যায়। যা বেশ লোভনীয়।

বিষয়টি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে গত ২৮ এপ্রিল নিজ কার্যালয় বসে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুস শহীদ (বর্তমান সাবেক) বলেন, দেশে এখনো পর্যন্ত বড় কোনো প্রক্রিয়াকরণ শিল্প গড়ে উঠেনি। আনারস ও আম প্রচুর উৎপাদন হলেও প্রক্রিয়াজাত করা যাচ্ছে না। তিনি মনে করেন, কৃষি খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প স্থাপনে গবেষণা দরকার। এ জন্য বরাদ্দ রাখতে হবে।

কৃষি ও কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের অবস্থা জানতে গত ৭ জুলাই সরেজমিন পরিদর্শন করা হয় রাজশাহীর বিভিন্ন জায়গা। রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ সূত্রমতে, স্থানীয়ভাবে বছরে টমেটো বেচাকেনা হয় ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকা এবং পান ১৫৬১ কোটি টাকা। চলতি মৌসুমে ১৯ হাজার ৬০২ হেক্টর জমির গাছে আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬০ হাজার ১৬৫ টন। গত বছর প্রায় একশ কোটি টাকার আম বিক্রি হয়েছে।

রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মাসুদুর রহমান বলেন, এখানে আমসহ কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্প গড়ে উঠলে স্থানীয় কৃষকেরা যেমন লাভবান হবেন, তেমনি এই অঞ্চলে কর্মসংস্থান বাড়বে।

কথা হয় রাজশাহীর পবা থানার নওহাটি গ্রামের কৃষক ফিরোজ আহমেদের সঙ্গে। তিনি ২০২৪ সালে কয়েকটি বাগানে আম উৎপাদন করলেও কম মূল্যে বিক্রি করছেন। কোনো ধরনের রপ্তানির সুবিধা পাচ্ছেন না। প্রক্রিয়াকরণ শিল্প প্রসঙ্গে তিনি জানান, সেখানে আম থেকে জুস তৈরির একটি কোম্পানি গড়ে উঠলেও ‘গুটি’ নামে নিম্নমানের আম দিয়ে তৈরি হচ্ছে, ভালো গুণাবলীর আম ব্যবহার করছে না। তার মতে, উৎপাদিত অনেক পণ্য নষ্ট হচ্ছে সঠিক সংরক্ষণ ও পরিবহণের অভাবে।

জাতি সংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) বাংলাদেশস্থ প্রতিনিধি জিয়াও কুন শি গত জুন মাসে চাপাইনবাবগঞ্জের নাচোলের কান্দবোনা গ্রামের বাগান পরিদর্শন করে বলেন, আম ভ্যালু চেইন (মূল্য সংযোজন) প্রোডাক্ট। এ সুবিধা নিতে হলে উৎপাদন পর্যায়ে কৃষককে ‘উত্তম কৃষিচর্চা (গ্যাপ)’ অনুসরণ করতে হবে। তাহলে বিভিন্ন দেশে রপ্তানির সুযোগ বাড়বে।

একই স্থানে পরিদর্শনকালে সিঙ্গাপুরের ঢাকাস্থ চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স শিলা পিললাই বলেন, ভারতের আম সিঙ্গাপুরে যাচ্ছে বেশি দামে। সাশ্রয়ী মূল্যে ভালো গুণাবলীর আম মিললে বাংলাদেশ কেন নয়। যেহেতু সিঙ্গাপুর আম উৎপাদন করে না, সেক্ষেত্রে এ সুযোগ বাংলাদেশ নিতে পারে।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) এবং এফবিসিসিআইয়ের ‘কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য’ খাতের সম্ভাবনা সংক্রান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, ২০২২ সালের বৈশ্বিক বাজার ছিল ১৩ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার। সে হিসাবে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজার (দেশীয় চাহিদা ও রপ্তানি) ছিল ৪৮০ কোটি ডলার। এছাড়া ভিয়েতনাম ও ভারত এক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছে। প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা সম্ভব হলে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) বিজ্ঞানীরা কাঠাল থেকেই প্রায় ২০ রকমের ভ্যালু অ্যাডেড খাদ্যপণ্য তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। কিছু কিছু সুপার শপে তা বিক্রি হতে দেখা যায়। চাহিদাও বেশ লক্ষণীয়। এছাড়া মাছ, মাংস, দুধ ও ডিম থেকেও অনেক ভ্যালু অ্যাডেড খাদ্যপণ্য তৈরি হচ্ছে। তবে সেটি সীমিত পরিসরে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এ খাত পূর্ণ বিকাশের জন্য অবকাঠামোগত সক্ষমতা বাড়ানো ও নীতিগত সহায়তার প্রয়োজন। এছাড়া নতুন উদ্যোক্তা গড়ে তোলা, দেশি-বিদেশি বাজার সম্পসারণ ও রপ্তানি বাড়ানোর উদ্যোগ, প্রতি জেলায় পণ্যভিত্তিক উৎপাদন, কৃষকের সঙ্গে উৎপাদকের সংযোগ স্থাপন ও সমন্বয় সাধন এবং প্রক্রিয়াজাতকরণে আধুনিক প্যাকেজিং ব্যবস্থার জন্য গবেষণা ও উন্নয়ন দরকার।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. জামাল উদ্দিন বলেন, বেসরকারি খাত কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে বিনিয়োগে এগিয়ে আসতে হবে। এতে আমাদের পণ্যের মূল্য সংযোজন বাড়বে, রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণ এবং মানুষও প্রক্রিয়াজাত পণ্যসামগ্রী খাবারের তালিকায় যুক্ত করবে। তিনি আরও বলেন, এই মুহূর্তে উৎপাদনকেন্দ্রিক প্রকল্প হচ্ছে ৯৫ শতাংশ। আর মাত্র ৫ শতাংশ প্রকল্প হচ্ছে কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকেন্দ্রিক।কিন্তু কৃষক উৎপাদন সম্পর্কে জানেন। এখন দরকার প্রক্রিয়াকরণ প্রকল্পের সংখ্যা বাড়ানো।

মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি ও খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের ফলে প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্যের অভ্যন্তরীণ চাহিদাও বাড়ছে ক্রমান্বয়ে। বর্তমানে দেশে প্রায় ৬৮২ লাখ টন প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য উৎপাদন এবং ১৪০ দেশে এসব খাবার রপ্তানি হচ্ছে। রপ্তানির পরিমাণ প্রায় ১৭০ লাখ টন। দেশে ৬০০ শিল্প রয়েছে ফুড প্রসেসিংয়ের।এরমধ্যে তিনশ শিল্প রপ্তানি করছে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে ৭ লাখ লোকের। বাংলাদেশে ২০১৮ সালে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের অভ্যন্তরীণ আকার ছিল ৫.২ বিলিয়ন ডলার, যা বর্তমান বছরে ৭.৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে বলে বিশেজ্ঞরা মনে করছেন।

জানতে চাইলে ‘বাংলাদেশ অ্যাগ্রো প্রসেসিং অ্যাসোসিয়েশনের (বিএপিএ) প্রেসিডেন্ট মো. আবুল হাসেম বলেন, সম্ভাব্য খাত থাকলে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ পাওয়া যাচ্ছে না। এ দুটি নতুন শিল্পের জন্য বড় অন্তরায়। এছাড়া বিদ্যমান প্রসেসিং শিল্পগুলো প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সংকট মোকাবিলা করছে। এছাড়াও এলসিতে ডলার সংকট এবং এ শিল্পের কাঁচামাল চিনির অত্যাধিক মূল্য বড় ধরনের অন্তরায়। এতে এ শিল্পের রপ্তানি আয়ে আঘাত আনছে। ২৫০ দেশে এ শিল্পের পণ্য রপ্তানি হলেও সরকার প্রণোদনা ২০ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনছে। এতে প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে টিকে থাকা যাচ্ছে না। এর ফলে আগামী ২০২৭ সালের মধ্যে এ শিল্পের রপ্তানি আয় একশ কোটি মার্কিন ডলার থেকে তিনশ কোটি ডলারে উন্নীত করার পরিকল্পনা হুমকির মধ্যে পড়েছে।

নীতিমালা ঘোষণা:

সূত্র মতে, আগামী ২০২৮ সালের মধ্যে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ৫৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ এবং এক লাখ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্য নিয়ে ‘কৃষি খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প উন্নয়ন নীতিমালা-২০২৩’ প্রণয়ন করে শিল্প মন্ত্রণালয়। গত বছর ১১ নভেম্বর এই নীতিমালার গেজেট জারি করা হয়। ওই নীতিমালার আওতায় কৃষি খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প স্থাপনে মূলধনী যন্ত্রাংশ আমদানিতে শুল্ক এবং বিদ্যমান প্রকল্পের লভাংশের ওপর আয়কর মওকুফ, বাণিজ্যিক উৎপাদনের পরবর্তী তিনবছর পর্যন্ত নগদ প্রণোদনা এবং নমনীয় ব্যাংক ব্যবস্থার ঘোষণা দেওয়া হয়। এছাড়া অটোমেশন বিনিয়োগে করপোরেট আয়কর শতভাগ অব্যাহতি দেওয়া হবে যদি দেশজ সংযোগ মূল্য মোট অটোমেশনের সংযোগ মূল্যের কমপক্ষে ৩০ শতাংশ পৌঁছায়।

এ শিল্প রক্ষায় বিদেশ থেকে কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ পণ্য আমদানিতে উচ্চহারে ট্যারিফ আরোপ এবং নির্দিষ্ট কাঁচামাল আমদানিতে ভ্যাট সমন্বয়ের সুযোগ দেওয়া হবে। নতুন শিল্প স্থাপনে প্রকল্প ব্যয়ের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ বা ৫০ কোটি টাকা পর্যন্ত স্বল্প সুদে মূলধন সহায়তা দেওয়া হবে। এছাড়া মাইক্রো ও ক্ষুদ্র শিল্প স্থাপনে ৫ বছর পর্যন্ত ১০০ শতাংশ ভ্যাট, মাঝারি শিল্পের ক্ষেত্রে ৭ বছর পর্যন্ত ৭৫ শতাংশ ভ্যাট এবং বড় শিল্পের ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ ভ্যাট অব্যাহতির সুবিধা দেওয়া হবে।এছাড়াও মাঝারি ও বড় শিল্পের বিনিয়োগের একশ শতাংশ পর্যন্ত মূলধন সমন্বয় করা হবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি ব্যবসা ও বিপণন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ পণ্যের প্রয়োজনীয় পরীক্ষার জন্য পরীক্ষাগার এবং কৃষিপণ্যের ভালো জাতের অভাব রয়েছে। এছাড়া ফাইটোস্যানিটারি সার্টিফিকেট প্রাপ্তিতে জটিলতা ও দুর্বল প্যাকেজিং রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্যের রপ্তানি বাড়াতে উত্তম কৃষি চর্চা (জিএপি) ও উত্তম উৎপাদন চর্চা (জিএমপি) বাস্তবায়নে জোর দিতে হবে। পণ্যের মান ঠিক রাখতে দেশে পণ্যের শনাক্তকরণ (ট্রেসিবল) পদ্ধতির উন্নতি ঘটাতে হবে। কৃষিপণ্য রপ্তানি উন্নয়নে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে একযোগে কাজ করতে হবে।

অর্থনীতি

সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের টাকা বিগত আওয়ামী লীগ সরকার বিভিন্ন দুর্বল বেসরকারি ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট (এফডিআর) করে রেখেছে। এ টাকাগুলো কোন বিবেচনায় এসব ব্যাংকে রাখা হয়েছে, তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বন, পরিবেশ ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে শেষে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমার (বন, পরিবেশ ও জলবায়ু) মন্ত্রণালয়ের জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডে সরকার ৫৯৭ কোটি টাকা দেয়। বিগত সরকার এ টাকা ফারমার্স ব্যাংকে রাখে, যেটি বর্তমানে আমরা বলি পদ্মা ব্যাংক। ফারমার্স ব্যাংকে রাখা টাকা সুদে আসলে বেড়ে হয়েছে ৮৭৩ কোটি ৮১ লাখ ৬৫ হাজার ৮৫৩ টাকা। বারবার টাকা চাওয়ার পরও বর্তমান পদ্মা ব্যাংক সেই টাকা দিতে পারছে না।

তিনি বলেন, আমাদের সঙ্গে কোনো কনসালটেশন না করেই পদ্মা ব্যাংক বছর বছর এফডিআর রিনিউ করছে। তাদের বর্তমান বক্তব্য ২০৩৮ সালের আগে তারা এ টাকা দিতে পারবে না। না সুদ, না আসল। এ রকম সমস্যা শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়েও আছে। সে বিষয়ে আজ উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, এসব টাকা দুর্বল ব্যাংকে কোন বিবেচনায় রাখা হয়েছে, বলতে পারি না। এটি তো পাবলিক মানি। সিদ্ধান্ত হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বাংলাদেশ ব্যাংককে বলা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক সেসব মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বসে রোডম্যাপ তৈরি করে দেবে, যাতে এ পাবলিক মানি আমরা ফেরত পেতে পারি।

ব্যাংকিং খাত ভঙ্গুর উল্লেখ করে তিনি বলেন, ব্যাংকিং সংস্কারে কতটা সময় ধরে প্রচেষ্টা দিতে হচ্ছে, এর একটি সামান্য নমুনা আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম।

এ টাকা কবে পাওয়া যাবে, তা জানলে খুশি হতেন জানিয়ে রিজওয়ানা বলেন, দ্রুতই মিটিংটা ডাকা হবে। ব্যাংকগুলোর বাস্তব অবস্থা বিবেচনায় নিতে হবে। তারপর কত সময়ে দিতে পারবে, তারা বলবে। ২০৩৮ সালের কত আগে, কত অনুপাতে ফেরত আনা যায়, তা রোডম্যাপে বলা হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমরা জলবায়ু পরিবর্তন ফান্ডের টাকা সরকারি ব্যাংকে রাখছি। তাদের বন্ড কেনার সিস্টেম আছে। ইন্টারেস্ট বেশি পাওয়া যায়। ব্যাংকে টাকা কে, কেন এবং কোন ব্যাংকে রেখেছিল, সেসব অনুসন্ধান করে জবাবদিহির আওতায় আনার কথা ভাবছি।

যুব ও ক্রীড়া ফাউন্ডেশন আছে জানিয়ে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, শ্রম কল্যাণের অধীনে ফাউন্ডেশন আছে। শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের প্রাইভেট ব্যাংকে ১১৪ কোটি টাকা রাখার খোঁজ পেয়েছি। দুটি ফাউন্ডেশনের অর্থ আলাদা। অর্থের পরিমাণ কত, তা জানব। প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের এফডিআর আছে। গভর্নর বলেছেন, কিছু ব্যাংক দেউলিয়ার দিকে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে পাবলিক মানি যেন জনগণের জন্য রিস্টোর (উদ্ধার) করা যায়, জনগণের কাজে লাগানো যায়।

নির্বাচন নিয়ে কী সিদ্ধান্ত হলো, জানালেন উপদেষ্টা রিজওয়ানা

সংস্কারের জন্য সরকার যে ছয়টি কমিশন গঠন করেছে, সেগুলো তিন মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে পারবে বলে আশা করছে সরকার। তারপর একপর্যায়ে তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে যাবে সরকার। ওই সংলাপের মাধ্যমে রাজনৈতিক মতৈক্য গড়ে সংস্কার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার, সুনির্দিষ্ট কোনো কোনো ক্ষেত্রে সংশোধনী এনে তারপর নির্বাচনের কথা ভাবছে সরকার।

বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

এ সময় যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে বুধবার জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, সংস্কার করার প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে প্রাথমিকভাবে ছয়টি কমিশন গঠন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে কাজ করবেন সাবেক সচিব সফর রাজ হোসেন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান, দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে সাবেক তত্ত¡াবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও সাবেক আমলা আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী, সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে বিশিষ্ট আইনজীবী শাহদীন মালিক দায়িত্ব পালন করবেন।

অর্থনীতি

তৈরি পোশাকশিল্পমালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর নতুন সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন ডিজাইন টেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) খন্দকার রফিকুল ইসলাম। জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি হয়েছেন টিম গ্রুপের এমডি আবদুল্লাহ হিল রাকিব।

শনিবার (২৪ আগস্ট) রাজধানীর র‍্যাডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেন হোটেলে বিজিএমইএর পরিচালনা পর্ষদের জরুরি সভায় সংগঠনটির এ নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

গত মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ২০২৪-২৬ মেয়াদে বিজিএমইএর সভাপতি হয়েছিলেন সেহা ডিজাইনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এস এম মান্নান। তিনি ঢাকা মহানগর (উত্তর) আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

এস এম মান্নান সম্প্রতি দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার কারণ দেখিয়ে সভাপতির দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়ে বিজিএমইএর পরিচালনা পর্ষদের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন। ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার জরুরি সভা করে বিজিএমইএর পরিচালনা পর্ষদ।

সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এস এম মান্নানের পদত্যাগপত্র নেওয়া হয়।

এরপর সভায় খন্দকার রফিকুল ইসলামকে বিজিএমইএর নতুন সভাপতি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তিনি সংগঠনের ২০২৪-২৬ সাল মেয়াদে বিজিএমইএর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি পদে ছিলেন।

বিজিএমইএর নতুন জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি করা হয়েছে আবদুল্লাহ হিল রাকিবকে, তিনি এত দিন সহ-সভাপতি ছিলেন।

খন্দকার রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন বিজিএমইএর পুনর্গঠিত পর্ষদের সদস্যরা হলেন, প্রথম সহ-সভাপতি চট্টগ্রামের ওয়েল গ্রুপের পরিচালক সৈয়দ নজরুল ইসলাম, জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি টিম গ্রুপের এমডি আবদুল্লাহ হিল রাকিব, সহ-সভাপতি তুসুকা ফ্যাশনসের চেয়ারম্যান আরশাদ জামাল, সাদমা ফ্যাশনওয়্যারের এমডি মো. নাছির উদ্দিন, বিটপি গ্রুপের এমডি মিরান আলী, উর্মি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসিফ আশরাফ ও এইচকেসি অ্যাপারেলসের এমডি রকিবুল আলম চৌধুরী।

গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেন। পরিবর্তিত রাজনৈতিক পটভূমিতে সম্প্রতি বিজিএমইএর নেতৃত্ব পরিবর্তনের দাবি তোলে ব্যবসায়ীদের একটি অংশ। তারা বিজিএমইএর পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার দাবি জানায়।

১৯ আগস্ট বিজিএমইএর নির্বাচনকেন্দ্রিক জোট ফোরাম সংগঠনটির পর্ষদ ভেঙে অন্তর্বর্তী পর্ষদ গঠন, স্বচ্ছ ভোটার তালিকা প্রণয়ন এবং নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদকে চিঠি দেয়। এরই মধ্যে বিজিএমইএ এর সভাপতির পরিবর্তনের এমন ঘটনা ঘটল।

অর্থনীতি

বিশ্বব্যাংক বলেছে, বাংলাদেশে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার কমে যাচ্ছে। করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ঠ বৈশ্বিক মন্দার প্রভাবে প্রবৃদ্ধির হার কমছে।\

প্রবৃদ্ধির হার কমার তালিকায় শুধু বাংলাদেশই নয়। মধ্য আয়ের প্রায় সব দেশেরই জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার কমছে। এ হার বাড়াতে বাংলাদেশসহ এসব দেশকে মৌলিক তিনটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এর মধ্যে আছে গুণগতমানের টেকসই বিনিয়োগ বাড়ানো, দক্ষতা অর্জন ও জ্বালানির নিরবচ্ছিন্ন জোগান নিশ্চিত করা। সম্প্রতি প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে।

বিশ্বব্যাংক এখন বাংলাদেশকে মধ্য আয়ের দেশ হিসাবে মনে করে। তবে জাতিসংঘের মানদণ্ডে ২০২৬ সাল নাগাদ বাংলাদেশ মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার কথা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার বেড়ে সাড়ে ৬ শতাংশের বেশি হয়েছিল। করোনা ও বৈশ্বিক মন্দার প্রভাবে এ হার কমেছে। উন্নত দেশগুলো মন্দার কবল থেকে দ্রুত বের হয়ে এলেও বাংলাদেশ ততটা দ্রুত পারছে না। জিডিপির পুনরুদ্ধার কার্যক্রম অনেকটা ধীরগতিতে এগোচ্ছে। বিদায়ি বছরে প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশের নিচে রয়েছে। যদিও সরকার মনে করছে প্রবৃদ্ধি আরও বেশি।

এদিকে বৈশ্বিক মন্দার প্রভাবে ডলারের দাম বৃদ্ধি ও স্থানীয় মুদ্রার মান কমায় বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ডলারের হিসাবে কমেছে। তবে বেড়েছে টাকার হিসাবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ নারী ক্ষমতায় বেড়েছে, মোবাইল আর্থিক লেনদেনে উলে­খযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। ফলে গ্রামে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রসারিত হয়েছে।

প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক বলেছে, বাংলাদেশসহ মধ্য আয়ের দেশগুলোকে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রম দ্রুত করতে হলে গুণগতমানের বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। এজন্য দক্ষতার উন্নয়ন ও নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ করতে হবে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর ক্ষেত্রে বর্তমানে এই তিনটিই বড় চ্যালেঞ্জ। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য বিনিয়োগের খরচ কমাতে হবে। বিনিয়োগ থেকে রিটার্ন হওয়ার সময়ও কমাতে হবে।

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈশ্বিকভাবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুনরুদ্ধার কার্যক্রম এগিয়ে যাচ্ছে। তবে করোনার আগের অবস্থায় যেতে আরও সময় লাগবে। বৈশ্বিক জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার বাড়তে শুরু করেছে। আগামীতে এ হার আরও বাড়বে।

বৈশ্বিকভাবে পণ্যের সরবরাহে বাধার ক্ষেত্রে বড় ধরনের আশঙ্কা নেই। বৈদেশিক ঋণের সুদের হারও চলতি বছরের মধ্যেই কমতে শুরু করবে। ইতোমধ্যে অনেক দেশ সুদের হার কমানোর আভাস দিয়েছে। উন্নত দেশগুলোর মূল্যস্ফীতির হার কমে আসায় তারা সুদের হার কমিয়ে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আরও সচল করছে।

এদিকে বাংলাদেশ এখনও মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি। জুনের তুলনায় জুলাইয়ে মূল্যস্ফীতির হার ২ শতাংশ বেড়ে ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশে ওঠেছে। আগে ছিল সাড়ে ৯ শতাংশের বেশি। তবে আগে মূল্যস্ফীতির প্রকৃত তথ্য গোপন করে কম দেখানোর অভিযোগ রয়েছে। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখন তথ্য গোপন করবে না বলে জানিয়েছে। তারা প্রকৃত তথ্যই জনগণের উদ্দেশে প্রকাশ করবে।

মূল্যস্ফীতির হার কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক নীতি সুদের হার সাড়ে ৮ শতাংশ থেকে তিনটি ধাপে বাড়িয়ে ১০ শতাংশে নিয়ে যাবে। এতে ব্যাংকগুলোরও ঋণের সুদহার বাড়বে। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকের ধার করার খরচ বেড়ে যাবে। ফলে বাজারে টাকার প্রবাহ কমে মূল্যস্ফীতির হার কমে আসবে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আশা করছে।

অর্থনীতি

ব্যাংকে এক অ্যাকাউন্ট থেকে সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা উত্তোলন করা যাবে। রোববার (১৮ আগস্ট) থেকে এ নির্দেশনা কার্যকর হবে।

পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত টাকা উত্তোলনের এই সীমা বলবৎ থাকবে।

শনিবার (১৯ আগস্ট) সন্ধ্যায় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীদের পাঠানো এক ক্ষুদেবার্তাতে এ কথা বলা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, নিরাপত্তাজনিত কারণে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে এ সময়ে যেকোনো পরিমাণ টাকা অন্য হিসাবে স্থানান্তর করা যাবে এবং ডিজিটাল লেনদেন করতে পারবেন গ্রাহকরা।

অন্তর্বর্তী সরকার বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) শপথ নেওয়ার দিন ব্যাংক থেকে নগদ টাকা উত্তোলনে এক লাখ টাকা বেঁধে দেওয়া হয়। সে সময় বলা হয়েছিল, নতুন সরকারের শপথের দিন বেশি বেশি টাকা উত্তোলনের ঘটনা ঘটে। বিশেষ করে রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী পরিবার থেকে নগদ টাকা উত্তোলনের চাপ দেখা যায়। এসব অর্থ যাতে কোনোভাবেই সন্ত্রাসী বা অবৈধ কাজে ব্যবহৃত না হয়, সেজন্য নগদ টাকা উত্তোলন কিছুটা নিরুৎসাহিত কর‌তে এ সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

পরে ১০ আগস্ট নগদ টাকা উত্তোলন সীমা এক লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে দুই লাখ টাকা করা হয়। আজ আরও এক লাখ টাকা বাড়িয়ে তিন টাকা করা হয়েছে।

অর্থনীতি

ইসলামী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। কয়েকশো দুর্বৃত্ত জোর করে ইসলামী ব্যাংকে প্রবেশের চেষ্টা করেন। এসময় প্রবেশে বাধা দিলে কর্মকর্তাদের ওপরে এলোপাতাড়ি গুলি চালানো হয়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন ব্যাংকের চার কর্মকর্তা।

রোববার (১১ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ইসলামী ব্যাংক টাওয়ারের সামনে অবস্থান নেন কর্মকর্তারা।

গুলিবিদ্ধ চার কর্মকর্তা হলেন- ইসলামী ব্যাংকের গোডাউন গার্ড (ডিজি) শফিউল্লাহ সরদার, অফিসার মামুন, আব্দুর রহমান ও বাকী বিল্লাহ। এদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা গুরুতর।

ইসলামী ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা জানান, তারা জামানতবিহীন, অনিয়ম করে লোন কেলেঙ্কারির প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এসময় আকস্মিকভাবে এস আলম গ্রুপের হয়ে কাজ করা কয়েকজন কর্মকর্তা প্রায় শতাধিক লোক অস্ত্র নিয়ে প্রবেশের চেষ্টা করেন।

তাদের প্রবেশে বাধা দিলে বহিরাগতরা অস্ত্র বের করে এলোপাতাড়ি গুলি করেন। এসময় তিন কর্মকর্তা গুলিবিদ্ধ হন। ৪ কর্মকর্তা আহত হয়েছেন যাদের মধ্যে ৩ জন গুরুতর। পরে উপস্থিত কর্মকর্তারা পাল্টা ধাওয়া দিলে তারা পালিয়ে যায়।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার ইসলামী ব্যাংক থেকে পদত্যাগ করেন কায়সার আলী। তিনি ব্যাংকটির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। বুধবার ব্যাংকের কর্মকর্তার সামনে সাদা কাগজে পদত্যাগ করে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে জমা দেন কায়সার আলী।

অর্থনীতি

অর্থনীতিকে সচল করতে বাংলাদেশ ব্যাংক, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ বন্দর পুরোদমে চালু রাখার নির্দেশ দিয়েছেন অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। একই সঙ্গে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আহরণে মনিটরিং করতে বলা হয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর)। পাশাপাশি উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের গতিশীল এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

শনিবার এক বৈঠকে অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এসব নির্দেশনা দিয়েছেন অর্থ বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, পরিকল্পনা ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব এবং এনবিআর চেয়ারম্যানকে।

এর আগে সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে প্রবেশের সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বলেন, ব্যাংক খাত সংস্কার করা হবে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের কার্যক্রম পুরোপুরি চালু হোক, এরপর সংস্কারের প্রসঙ্গ আসবে। এখনই সংস্কার শুরু হলে মূল কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে।

সাপ্তাহিক ছুটির দিন অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা চলে আসেন অফিসে। এ সময় অর্থ সচিব ড. মোহাম্মদ খায়েরুজ্জামান মজুমদার ফুলেল শুভেচ্ছায় তাকে বরণ করেন। এরপর তিনি দেশের অর্থনীতির পরিস্থিতি নিয়ে টানা ৩ ঘণ্টা বৈঠক করেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের সচিবদের সঙ্গে। ওই বৈঠকে অর্থ সচিবসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. আবদুর রহমান খান, পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র সচিব সত্যজিত কর্মকার, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের খান, এনবিআরের চেয়ারম্যান উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে আগামী দিনগুলোতে অর্থনীতি সচল রাখতে স্বল্প মেয়াদের কাজের বিষয়গুলো উপদেষ্টার কাছে তুলে ধরেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের সচিবরা। বৈঠক শেষে জানতে চাইলে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, অর্থনীতির গতি ফেরাতে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সব ব্যাংক ও পুঁজিবাজার সচল ও প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাভাবিক কার্যক্রম বজায় রাখা হবে। এসব প্রতিষ্ঠানে কে আছেন বা চলে গেছেন সেটি আমাদের এখন বিবেচ্য বিষয় নয়। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর আইন ও নিয়মনীতি অনুযায়ী যারা আছেন তারা কাজ করবেন। মানুষের আস্থা ফেরাতে ব্যাংকের কার্যক্রম চলবে। ব্যবসা-বাণিজ্য সচল রাখতে বন্দর কার্যক্রম চালু থাকবে। এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে অর্থনীতি সচল রাখা হবে।

তিনি আরও বলেন, স্বাভাবিকভাবে কাজ করলে সমস্যা হবে না। কেউ অতিরিক্ত কিছু বিগত সময় করে থাকলে সে বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বৈঠকের আলোচনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ল’ অ্যান্ড অর্ডারসহ অতিদ্রুত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। কিছু বিশেষ বিষয় আছে দীর্ঘ মেয়াদে করা হবে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান পদত্যাগ করবেন এমন শোনা যাচ্ছে- এ প্রসঙ্গে অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বলেন, না এমন কিছু নয়।

রাজস্ব আদায়ে এনবিআরকে যে লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে সেটি আদায়ের ব্যাপারে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে তিনি তদারকি (চেয়ারম্যান) করবেন।

ব্যাংকপাড়ায় অরাজকতা সৃষ্টি হয়েছে- ব্যাংকের ডিজি ও এমডিদের নিরাপত্তা বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কেউ হয়তো পদত্যাগ করছে। তবে যারা আছে তারা নিজেদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা করেই অফিসে আসবে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অফিসে আসার জন্য কাউকে বলা হয়নি। তারা জীবনের নিরাপত্তা না পায় সে ঝুঁকি আপনি বা আমি কেউ নিতে পারব না।

পুলিশের অনুপস্থিতিকে অর্থনীতি সচলের বাধা কিনা প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, না, মূলত একটি পরিস্থিতিতে অনেকে চাকরি অব্যাহতি দিয়েছে, অনুপস্থিত আছে। তবে প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশের ভয় পাওয়ার কিছু নেই।

এর আগে নিজ দপ্তরে প্রবেশের সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা। এ সময় তিনি বলেন, দেশ কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়েছে। এ মুহূর্তে মূল কাজ হলো আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার করা। আইনশৃঙ্খলা মানে শুধু রাস্তাঘাটের আইনশৃঙ্খলা নয়, বরং ব্যাংক পুরোপুরি চালু করা, বন্দরগুলো অনেকাংশে অচল সেগুলো চালু করা। এ ছাড়া সামষ্টিক অর্থনীতিতে যেসব চ্যালেঞ্জ আছে, যেমন মূল্যস্ফীতি, সেগুলো তাৎক্ষণিকভাবে মোকাবিলার চেষ্টা করা হবে। অর্থনীতি মন্থর হতে পারে, কিন্তু থমকে গেলে পুনরায় চালু করতে অনেক সময় লেগে যায়। সুবিধা হলো বাংলাদেশের মানুষের অফুরন্ত কর্মস্পৃহা আছে। গুটিকয়েক মানুষ ছাড়া বেশিরভাগ মানুষই কাজে যোগ দেবেন।

সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এই সরকারের খুব বেশি দিন ক্ষমতায় থাকার ইচ্ছা নেই। ‘ভবিষ্যৎ সরকারের জন্য আমরা মসৃণ পথ তৈরি করে যেতে চাই। সেজন্য সাংবাদিকদের সহযোগিতা দরকার। আমাদের কর্মোদ্যোগী মানুষ দরকার। শুধু নির্দেশনা পেলে কাজ হয়ে যাবে, এমন হলে চলবে না।’ সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ভুলত্রুটি হলে সমালোচনা করবেন, কিন্তু অপ্রয়োজনীয় সমালোচনা না করার আহ্বান জানান তিনি।

লাইনচ্যুত অর্থনীতিকে লাইনে আনতে কত সময় লাগবে, এমন প্রশ্নের জবাবে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমার মনে হয় না মৌলিক কাজগুলো করতে বেশি সময় লাগবে। অর্থনৈতিক কার্যক্রম ছিল, একেবারে লাইনচ্যুত হয়ে যায়নি। বরং গতি হারিয়ে ফেলেছিল। আমরা গতি বৃদ্ধি করব।’

এখন বড় চ্যালেঞ্জ মূল্যস্ফীতি। সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, সামষ্টিক অর্থনীতি ছাড়াও উন্নয়ন কৌশলে ভুল ছিল। মানুষ সামগ্রিকভাবে উন্নয়নের সুফল পায়নি। প্রবৃদ্ধি হয়েছে, কিন্তু তার ফল কে পেয়েছে, কাদের কাছে টাকা গেছে, সেটাই মূল বিষয়। সরকার চায়, সমতাভিত্তিক ও ন্যায্য প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা। সব মানুষের জীবন-জীবিকার বিষয়ে যথাসাধ্য চেষ্টা করা হবে। সদ্য পদত্যাগী গভর্নরের আমলে দেশের অনেক ব্যাংকে কেলেঙ্কারি হয়েছে। কিন্তু তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হলে কি তিনি জবাবদিহির আওতা থেকে বেরিয়ে যাবেন, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, গভর্নরের পদ সংবেদনশীল। তিনি পদত্যাগপত্র দিয়েছেন, এ বিষয়ে আগামীকালের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে।

সালেহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের আইন বা দেশের যে কোনো আইন যথেষ্ট আন্তর্জাতিকমানের। কিন্তু তা মানা হয় না। যাদের মানানোর কথা তারা সেটা করেননি। যাদের মানার কথা, তারাও মানেননি। অর্থ পাচার প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা সবাই জানি, এ বিষয়ে তথ্য লাগবে। এর প্রক্রিয়া আছে, তা মেনেই এসব করতে হবে।’