অর্থনীতি

ক্ষমতার পালাবদলে বিচারালয়ের শীর্ষ পদে পরিবর্তনের পর বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি করার খবর এলেও তাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন আন্দোলনকারীরা।

শনিবার সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ রিফাত আহমেদকে প্রধান বিচারপতি ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন তারা।

আপিল বিভাগের বিচারপতিদের পদত্যাগের দাবিতে হাইকোর্টের পাশে শিক্ষা চত্বরে বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে এ দাবি জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ।

শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে ইতোমধ্যে পদত্যাগ করেছেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। আপিল বিভাগের সাত বিচারকের মধ্যে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি আবু জাফর সিদ্দিকী, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি কাশেফা হোসেনও পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

তবে বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম পদত্যাগ করেননি। তাকেই ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি করা হচ্ছে বলে বিকালে খবর আসে।

সেই প্রসঙ্গ ধরে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, আমাদের দাবিতে প্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি পদত্যাগ করেছেন। আমরা জেনেছি ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হিসেবে মো. আশফাকুল ইসলামকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, গত পনের বছর তিনি হাসিনাকে সার্ভ করেছেন। তাই আমরা এই নিয়োগ প্রত্যাখ্যান করছি।

বিচারপতিদের পদত্যাগের কারণে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের শূন্যতা পূরণে হাইকোর্ট বিভাগের ৭ বিচারকে সর্বোচ্চ আদালতের দায়িত্ব দেওয়ারও খবর এসেছে ইতোমধ্যে। সাতজনের ওই সম্ভাব্য তালিকাতেও বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নাম রয়েছে।

বাংলাদেশের তৃতীয় অ্যাটর্নি জেনারেল এবং দুটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসাবে দায়িত্ব পালন করা ব্যারিস্টার সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদের ছেলে সৈয়দ রেফাত আহমেদ ২০০৩ সালে হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি নিযুক্ত হওয়ার দুই বছর পর স্থায়ী নিয়োগ পান।

শিক্ষার্থীদের অবস্থানে তাদের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ছাত্র-জনতার রক্ত হয়ে কবরস্থানের মাধ্যমে আমরা খুনি হাসিনাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেছি। এটি আমাদের প্রাথমিক বিজয়। খুনি হাসিনা যখন দেশ ছেড়ে পালিয়েছে, তখন একটি গোষ্ঠী আবারও উঠে পড়ে লেগেছে দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য। সারা বিশ্বব্যাপী চক্রান্ত শুরু হয়েছে। দেশে বিদেশে যে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র আমরা ঘুরিয়ে দেব।

তিনি বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি, আজ যখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হয়েছে। বিচার বিভাগীয় ক্যু করে, এ সরকারকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছিল খুনি হাসিনার নিয়োগকৃত বিচারপতি। আমরা খুনি হাসিনাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেছি, কিন্তু যদি এই বিচার ব্যবস্থাকে ন্যায্যতার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত করতে না পারি, তাহলে আমাদের যেই ন্যায্যতার স্বপ্ন রয়েছে সেটি আমরা কখনোই প্রতিষ্ঠিত করতে পারব না।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার তিন দফা দাবি ঘোষণা করে বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিচার বিভাগ পুনর্গঠন করতে হবে। হাসিনার পুলিশ প্রশাসন আমরা চাই না, পুলিশকে পুনর্গঠন করতে হবে। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশকে নিরস্ত্র করে পুনর্গঠন করতে হবে, যে পুলিশ হবে জনতার পুলিশ।

অর্থনীতি

কোটাবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বন্ধ থাকা ফেসবুক এবং টিকটকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাপস বিকেলের মধ্যেই চালু হবে বলে জানিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।

বুধবার (৩১ জুলাই) সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বিটিআরসি ভবনে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।

এ সময় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন পর্যায়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।

পলক বলেন, আর কোনো বিধি নিষেধ নেই। আজ (বুধবার) বিকেলের মধ্যেই বন্ধ থাকা ফেসবুক-টিকটকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সাইটগুলো চালু করে দেওয়া হবে। একই সঙ্গে ইন্টারনেটের সর্বোচ্চ স্পিড নিশ্চিত করার জন্য কাজ শুরু হয়েছে।

এর আগে, মেটার (ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার, ইনস্টাগ্রাম) সিঙ্গাপুরের এশিয়া সদর দপ্তরের সঙ্গে (অনলাইন প্লাটফর্মে) এ বৈঠক করেন পলক। বৈঠকে বাংলাদেশে অফিস স্থাপন, মিস-ইনফরমেশন, ডিস-ইনফরমেশন জনিত যে কোনো অস্থিরতা নিরসনে ফ্যাক্ট চেকিং জোরদারের উদ্যোগ গ্রহণসহ সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

এর আগে, গত ২৮ জুলাই সাম্প্রতিক কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময়ের কিছু ভিডিও কন্টেন্টের ব্যাপারে ফেসবুক, ইউটিউব ও টিকটককে চিঠি দিয়ে তলব করে সরকার। চিঠিতে তাদের কাছে যৌক্তিক ব্যাখ্যা চাওয়া হয়।

অর্থনীতি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা বিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী সহিংসতার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করতে জাতিসংঘসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা জাতিসংঘের কাছেও আবেদন করেছি, আন্তর্জাতিকভাবেও বিভিন্ন সংস্থা রয়েছে দেশে-বিদেশে তাদের কাছেও আমরা সহযোগিতা চাই যে এই ঘটনার যথাযথ সুষ্ঠু তদন্ত হোক এবং যারা এতে দোষী তাদের সাজার ব্যবস্থা হোক।’
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘কারণ, আমি জানি এতে আমার কোন ঘাটতি ছিলনা।’

প্রধানমন্ত্রী আজ সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘জাতীয় মৎস সপ্তাহ-২০২৪’ এর উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।

কোটা বিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে প্রাণহানির ঘটনায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ঘটনার তদন্তে আমরা ইতোমধ্যেই বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছি। কারণ, দাবির অপেক্ষা আমি রাখিনি। তার আগেই বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি করে দিয়ে দিয়েছি ।

শেখ হাসিনা বলেন, আগে একজন বিচারপতি দিয়ে তদন্ত কমিটি করে দিয়েছিলাম। এখন আরো দুইজন লোকবল বৃদ্ধি করে তাদের তদন্তের পরিধি আরো বাড়ানোর জন্য তাঁর নির্দেশ প্রদানের কথাও জানান তিনি।

তিনি বলেন, সেইসঙ্গে আমরা জাতিসংঘের কাছেও আবেদন করেছি, আন্তর্জাতিকভাবেও বিভিন্ন সংস্থা রয়েছে দেশে-বিদেশে তাদের কাছেও আমরা সহযোগিতা চাই যে এই ঘটনার যথাযথ সুষ্ঠু তদন্ত হোক এবং যারা এতে দোষী তাদের সাজার ব্যবস্থা হোক।

তিনি বলেন, কারণ আমি জানি এতে আমার কোন ঘাটতি ছিলনা।

শেখ হাসিনা বলেন, যারা আলোচনায় বসেছিল (আন্দোলনকারি) তাদের সঙ্গে বার বার আলোচনা করেছি এবং তাদের দাবি মেনে নিয়েছি। দাবি মানবো কী যেটা আমিই বাতিল করে দিয়েছি। এটাতো আমারই (কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন) ইস্যু করা। আপিল করা হয় আপিল বিভাগে এবং সেখানে হাইকোর্টের রায় (কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন বাতিল) স্থগিত করে দিয়ে আপিল বিভাগ পূর্ণাঙ্গ শুনানির তারিখ নির্দিষ্ট করে দেয়। কাজেই কোটা না থাকায় আমার জারি করা প্রজ্ঞাপনটাই আবার কার্যকর হয়। পরে আপিল বিভাগে থেকে সেটার রায়ও দিয়ে দেওয়া হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই আন্দোলনের নামে যে সমস্ত ঘটনা ঘটেছে, ধবংসাত্মক কাজ করা হয়েছে তাতে অনেকগুলো তাজা প্রাণ ঝরে গেছে।

তিনি বলেন, জানি না অপরাধটা কী ছিল আমার? যে ইস্যুটা নেই সেটা নিয়ে আন্দোলনের নামে এই ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ করে দেশের অর্জনকে নষ্ট করা, আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করাতে কে কী অর্জন করলো সেটাই আমার প্রশ্ন?
সরকার প্রধান বলেন, তাঁর কাছে ক্ষমতা কোন ভোগের বস্তু নয়, তিনিতো আরাম আয়েশ করার জন্য ক্ষমতায় অসেন নি।

দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন দেশকে একটু উন্নত করতে। যেটা তিনি সফলভাবে করতে পেরেছিলেন।

‘আজকে বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। সেই মর্যাদাকে কেন নষ্ট করা হলো?’ সে প্রশ্ন উত্থাপন করে এর বিচারের ভার তিনি দেশবাসীর কাছে দিয়ে দেন।

’৮১ সালে বাংলাদেশে আসার পর থেকে গুলি, বোমা পুঁতে রেখে গ্রেনেড হামলা করে তার ওপর বহুবার হত্যা প্রচেষ্টার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘আমিতো জীবনের পরোয়া করিনি। দেশ ও দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। দেশকে দারিদ্র মুক্ত করার পাশাপাশি ভূমিহীন-গৃহহীনকে বিনামূল্যে ঘর করে দেওয়া, অন্ন বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থার পাশাপাশি বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করে মানুষের জীবন যাপনকে আরো সহজ করে দেওয়াই তাঁর লক্ষ্য ছিল। কিন্ত যেসব জিনিষগুলো মানুষকে সেবা দেয় সেগুলোই হামলাকারিদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হলো।

শেখ হাসিনা দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন, ‘একটা ঘটনা ঘটিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করে দেশকে পিছনে টেনে নেওয়ার এই চক্রান্তে যারা জড়িত সেটা আপনাদের খুঁজে বের করা উচিত।’

তিনি বলেন, ঐ ’৭১ এ যারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর ছিল তাদের চক্রান্ত বারবার আমাদের দেশকে পিছিয়ে নিয়ে গেছে। এটা হচ্ছে সব থেকে কষ্টের, সবচেয়ে দুঃখের।

জাতির পিতার কন্যা বাষ্পরুদ্ধ কন্ঠে বলেন, আমি যেহেতু স্বজন হারিয়েছি। স্বজন হারাবার বেদনা আমি বুঝি। তাই যারা

আপনজন হারিয়েছেন তাদের প্রতি আমার সহমর্মিতা জানাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ধ্বংস করেছে। স্থাপনা যে ধ্বংস করেছে সেগুলোতো পুনর্গঠন করা যাবে কিন্তু যে প্রাণগুলো ঝরে গেল সেগুলোতো আমরা আর ফিরে পাব না।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ৭টি ক্যাটাগরিতে ২২ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মাঝে ‘জাতীয় মৎস পদক-২০২৪’ প্রদান করেন। পুরস্কার হিসেবে ৬টি স্বর্ণ, ৮টি রৌপ্য ও ৮টি ব্রোঞ্জ পদক, সম্মাননা স্মারক এবং পুরস্কারের অর্থ প্রদান করা হয়। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে জেলেদের মধ্যে স্মার্ট আইডি কার্ডও বিতরন করেন।

২২ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি মৎস চাষে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য প্রধানমন্ত্রীকেও অনুষ্ঠানে স্বর্ণপদক প্রদান করা হয়।
দেশের মৎস খাতের উন্নয়নের ওপর একটি প্রামান্য চিত্র অনুষ্ঠানে প্রদর্শন করা হয়।

মৎস ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মো. আব্দুর রহমান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। সংশ্লিস্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দার স্বাগত বক্তৃতা করেন।

মৎস অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ আলমগীর পুরস্কার প্রদান পর্বটি সঞ্চালনা করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ গড়ে তোলার সময়ই জাতির পিতা এদেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য যেমন কৃষি গবেষণা ও কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছিলেন, পাশাপাশি, জনগণের পুষ্টির অধিকারও নিশ্চিত করার পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।

জাতির পিতার বক্তব্যকে উদ্ধৃত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি বলেছিলেন, ‘মাছ হবে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারি সম্পদ।’
শেখ হাসিনা বিস্তীর্ণ সামুদ্রিক এলাকার গভীর সমুদ্র থেকে মাছ আহরণে বেসরকারি খাতকে বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানিয়ে বলেন, গভীর সমুদ্রে মৎস ও সমুদ্র সম্পদ আহরণে যতরকম সুযোগ সুবিধা লাগে তার ব্যবস্থা সরকার করবে। কারণ, এটা আমাদের কাজে লাগবে।

পাশাপাশি, দেশিও প্রজাতির মাছ যাতে বৃদ্ধি পায় সে গবেষণার ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করে বলেন, মিঠাপানির মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশে^ তৃতীয় স্থানে রয়েছে। ইলিশ উৎপাদনে প্রথম ও তেলাপিয়া উৎপাদনে ৪র্থ স্থানে রয়েছে এবং সরকারের উদ্যোগ রয়েছে দেশের গ্রামাঞ্চলের পরিত্যক্ত জলাভূমিগুলোকে কাজে লাগিয়ে মৎস উৎপাদন বাড়ানোর। পাশাপাশি, বদ্ধ জলাশয়ে চাষের মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে ৫ বছর বিশে^ পঞ্চম স্থান ধরে রেখেছে।

তিনি সংশ্লিষ্ট মহলকে আরো উদ্যোগী হয়ে এই অবস্থানকে আরো এগিয়ে নিয়ে আসার আহ্বান জানান এবং বলেন, মাছ চাষীরা যাতে মাছের ন্যায্যমূল্য পেতে পারে সে পদক্ষেপও সরকার ইতোমধ্যে নিয়েছে।

তিনি মাছ ও মৎসজাত পণ্য রপ্তানিতে ভ্যালু এডেড করার বিষয়েও গুরুত্বারোপ করে মৎস প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে বেসরকারি উদ্যোক্তাদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

দেশে তিনটি টেস্টিং ল্যাবরেটরি প্রতিষ্ঠাসহ মৎস খাতের উন্নয়নে তাঁর সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের প্রসঙ্গ টেনে সরকার প্রধান বলেন, এগুলো শুধু আমাদের দেশের মানুষের পুষ্টির চাহিদাই পূরণ করবে না, জীবন-জীবিকার মানও উন্নত করবে এবং আমরা রপ্তানীর মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে দেশকে আরো সামনের দিকে নিয়ে যেতে পারবো।

তিনি বলেন, আমি এটুকুই বলবো, বাংলাদেশ আজকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং এই ধারাটা যেন অব্যাহত থাকে। সেজন্য আপনাদের সকলের সহযোগিতা চাই।

অর্থনীতি

জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধের বিষয়ে ১৪ দল একমত হয়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

সোমবার রাতে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনে ১৪ দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে এ কথা জানান তিনি।

তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত নৈরাজ্যের মাধ্যমে দেশকে অকার্যকর করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। জাতীয় স্বার্থে দেশবিরোধী অপশক্তি নির্মূল করার জন্য ১৪ দলের বৈঠকে সর্বসম্মতভাবে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত সরকার দ্রুত বাস্তবায়ন করবে।

ডিবি কার্যালয়ে গিয়ে ৬ সমন্বয়ককে ‘সাহস’ দিলেন সোহেল তাজ

বৈঠকে ১৪ দলের অংশীদার বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বলেন, জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ হলে তারা আর সংবাদ সম্মেলন কিংবা অন্য কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি করতে পারবে না।

এর আগে ১৪ দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জামায়াত-শিবির-বিএনপির জঙ্গিরা আজকে আমাদের ওপর থাবা দিয়েছে। এখানে ঐ শিবির, ছাত্রদল, বিএনপি-জামায়াত এরাই কিন্তু এবং জঙ্গি এরা। এই জঙ্গিরাই কিন্তু আজকে আমাদের ওপর থাবা দিয়েছে।

কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, এদের উদ্দেশ্যটা এখন বোঝা যাচ্ছে যে কোটা কোনো ইস্যু না। একে একে যে কয়টা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের সেবা দেয়, যে কয়টা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের মানুষের জীবনমান উন্নত করে, সেটাই ধ্বংস করা। অর্থাৎ বাংলাদেশটাকেই যেন ধ্বংস করে ফেলা।

অর্থনীতি

কারফিউ শিথিল থাকায় বাজারে সব ধরনের পণ্যের সরবরাহ বাড়তে শুরু করেছে। এতে খুচরা পর্যায়ে কমতে শুরু করেছে দাম। ৩ দিন আগে ৪০০-৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া কাঁচামরিচ ১৮০-২০০ টাকায় নেমেছে। ব্রয়লার মুরগির দাম কমেছে কেজিতে ১০-২০ টাকা। সবজির দামও কমছে। কমতির দিকে মাছের দামও। এদিকে সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকলেও এখনও সব ধরনের চাল, ডিম ও আলু বিক্রি হচ্ছে সেই বাড়তি দরেই।

শুক্রবার রাজধানীর বেশ কয়েকটি খুচরা বাজার ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

বিক্রেতারা জানান, প্রতি কেজি পটল বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকায়, যা ৩ দিন আগেও ৮০ টাকা বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি ঢ্যাঁড়শ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা, যা আগে ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মিষ্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা ৩ দিন আগেও ৭০ টাকা ছিল। প্রতি কেজি শসা আগের মতো ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি কচুর মুখি প্রতি কেজি ৭০-৮০ টাকা, যা আগে ১০০ টাকা বিক্রি হয়েছে। আগের মতোই প্রতি কেজি টমেটো ২০০-২২০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। বাজারভেদে প্রতি কেজি করলা বিক্রি হচ্ছে ৫০-৭০ টাকা। যা ৩ দিন আগেও ১২০-১৪০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছিল। বাজারে প্রতি কেজি গোল বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৮০-৯০ টাকায়। যা গত সপ্তাহে ছিল ১২০-১৪০ টাকা। শুক্রবার প্রতি কেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হয় ১৮০-২০০ টাকায়। যা বাজার ভেদে ৩ দিন আগে প্রতি কেজি ৪০০-৬০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

বিক্রেতারা আরও জানান, খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আলু ৬০-৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি ডজন ফার্মের ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৬০-১৬৫ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ১৫৫-১৬০ টাকা বিক্রি হয়। আর ১০ দিন আগে বিক্রি হয়েছে ১৫০ টাকা। এ ছাড়া রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি সরু চালের মধ্যে মিনিকেট চাল মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা। মাঝারি আকারের চালের মধ্যে পাইজাম ও বিআর ২৮ জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৪-৬০ টাকা। মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫৫ টাকা। যা আগে ৪৮-৫২ টাকায় বিক্রি হয়।

কাওরান বাজারে সবজি কিনতে আসা আল আমিন বলেন, কয়েক দিনের তুলনায় বাজারে সবজির সরবরাহ অনেক বেশি। দামও কমেছে। ফলে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। তবে বাজারে সরবরাহ থাকলেও চাল, ডিম, আলু বাড়তি দরেই বিক্রি হচ্ছে।

একই বাজারের সবজি বিক্রেতা শাহ আলী মিয়া বলেন, কারফিউতে সবজির সরবরাহ কম ছিল। শিথিলের কারণে সরবরাহ বেড়েছে। তাছাড়া ট্রাকের ভাড়া বেড়েছিল। তা এখন কমছে। সব মিলে সরবরাহ বাড়ায় সবজির দাম কমতে শুরু করেছে।

কাওরান বাজারের আল­াহর দান রাইস এজেন্সির মালিক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, সাম্প্রতিক পরিস্থিতির অজুহাতে মিলাররা সব ধরনের চালের দাম বাড়িয়েছে। এর মধ্যে এখনও ট্রাক ভাড়া অনেক বেশি। যে কারণে চালের দাম কমছে না।

এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা পর্যায়ে সব ধরনের মুরগির দাম কেজিতে ১০-২০ টাকা কমেছে। ব্রয়লার প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৮০-১৯০ টাকা। যা আগে ২০০-২১০ টাকা ছিল। প্রতি কেজি সোনালী মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৮০-৩০০ টাকা; যা আগে ৩০০-৩২০ টাকা ছিল। এ ছাড়া আগের মতোই প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭৫০-৭৮০ টাকায় ও খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১০০০-১১৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

খুচরা বাজারে ১ কেজি আকারের প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৬০০ টাকা। প্রতি কেজি রুই ৩৮০-৪০০ টাকা, পাঙাশ ২০০ টাকা, তেলাপিয়া ২৬০ টাকা, কাঁচকি ৫০০ টাকা, কই ২০০-২৪০ টাকায়, চিংড়ি ৭০০ টাকা, দেশি টেংরা ৮০০ টাকা এবং পাবদা ৪৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

অর্থনীতি

কোটাবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সহিংসতা, ইন্টারনেট বন্ধ ও নির্বাহী আদেশে সরকারি ছুটির কারণে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা নেমে আসে। আমদানি-রপ্তানিসহ শিল্পের চাকা বন্ধ হয়ে যায়। ব্যবসা-বাণিজ্যসহ মানুষের দৈনন্দিন চলাচলও বাধাগ্রস্ত হয়। এসব কারণে অর্থনীতিতে প্রতিদিন গড়ে ১০০ কোটি ডলার বা ১১ হাজার ৮০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত টানা ৬ দিন প্রায় সবকিছুই বন্ধ ছিল।

এ হিসাবে ক্ষতি হয়েছে ৬০০ কোটি ডলার বা ৭০ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। গত ১৬ জুলাই সন্ধ্যা থেকে ও ১৭ জুলাই আধাবেলা আন্দোলনের কারণে আংশিক বন্ধ ছিল। এ দুই দিনের আধাবেলার ক্ষতি ৫০ কোটি ডলার বা ৫ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এ হিসাবে সাড়ে ৬ দিনে মোট ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৭৬ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। তবে অনেকের মতে, এ ক্ষতি ৭০০ কোটি ডলার বা ৮২ হাজার ৬০০ কোটি টাকাও হতে পারে।

দেশের শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদ, গবেষক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। ব্যবসায়ীরা আরও বলেছেন, ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি হবে। কারণ ডলারের দাম ১১৮ টাকা করে ধরলে ওই পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু ডলার ১২২ থেকে ১৩০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এ কারণে ক্ষতির পরিমাণ টাকার অঙ্কে আরও বাড়বে। সৃষ্ট ক্ষতি মোকাবিলার জন্য তারা সব বন্দরের পণ্য খালাসে দেরি হওয়ায় ডেমারেজ চার্জ মওকুফ, নতুন চার্জ আরোপ না করা, ঋণের বিপরীতে বাড়তি সুদ আরোপ না করা, কম সুদে ঋণ দেওয়াসহ অন্যান্য নীতিসহায়তার দাবি করেছেন। একই সঙ্গে রপ্তানি আয় বিদেশ থেকে আমান মেয়াদ বৃদ্ধি, দেশীয় ও বৈদেশিক ঋণের কিস্তি পরিশোধের মেয়াদ বাড়ানোর দাবি করেছেন।

এদিকে চট্টগ্রাম ব্যুারো জানায়, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে মোট আমদানি-রপ্তানির প্রায় ৯৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়। ফলে এ বন্দরের কার্যক্রম টানা পাঁচ দিন বন্ধ থাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে আমদানি কার্যক্রম ও পণ্য ডেলিভারি বন্ধ থাকায় এ খাতে পাঁচ দিনে ক্ষতি হয়েছে কয়েক হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে কেবল চট্টগ্রাম কাস্টমসই ৯০০ কোটি টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে।

এ পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, অর্থনীতির চাকা বন্ধ হলে ক্ষতি হতেই থাকে। এই চাকা এক মুহূর্তেই বন্ধ করা যায়। কিন্তু চালু করতে সময় লাগে। ফলে ক্ষতির পুরো হিসাব এখনই করা যাবে না। তবে ক্ষতির অঙ্ক অনেক বড় হবে। গবেষণায় গড় হিসাবে প্রতিদিন অর্থনৈতিক ক্ষতি প্রায় ১০০ কোটি ডলার হবে। টানা ছয় দিন বলতে গেলে সবকিছুই বন্ধ ছিল। সাড়ে ৬৫০ কোটি থেকে ৭০০ কোটি ডলারের ক্ষতি হতে পারে।

তিনি আরও বলেন, ক্ষতিটা সবচেয়ে বেশি হয়েছে সাধারণ মানুষের। বিশেষ করে যারা ‘দিন আনে দিন খায়।’ ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় ক্ষতির পরিমাণটা আরও বেড়েছে। এছাড়া উদ্যোক্তারাও অনেক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। অর্থনীতি এমনিতেই করোনার পর থেকে বহুমুখী চ্যালেঞ্জের ভেতর দিয়ে এগোচ্ছে। বৈশ্বিক মন্দায় এ চ্যালেঞ্জ আরও বাড়িয়েছে। সাম্প্রতিক অস্থিরতায় অর্থনীতিতে চ্যালেঞ্জ আরও বাড়বে।

তার মতে, এ ধরনের পরিস্থিতিতে সবচেয়ে ক্ষতির মুখে পড়বে দেশের ইমেজ। দেশের উদ্যোক্তাদের সঙ্গে যেসব বিদেশি উদ্যোক্তা ব্যবসা করছেন তারা অনিশ্চয়তায় ভুগবেন। ফলে এ ধরনের সংকট যাতে না হয় সেদিকে সরকারকে নজর রাখতে হবে।

উদ্যোক্তারা জানান, সৃষ্ট অস্থিরতায় রপ্তানি খাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। একদিকে কারখানায় উৎপাদন বন্ধ ছিল। অন্যদিকে ক্রেতাদের আদেশ অনুযায়ী রপ্তানি করা সম্ভব হয়নি। এতে এ খাতে এখনকার ক্ষতির চেয়ে আগামীতে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন উদ্যোক্তারা। এখন পর্যন্ত উৎপাদন ও রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হওয়ায় গত ৬ দিনের হিসাবে ক্ষতির পরিমাণ ৮ হাজার কোটি টাকার বেশি। এছাড়া বিভিন্ন চার্জ ও ঋণের সুদ ও রপ্তানি পণ্য স্টক লট হলে কম দামে বিক্রি করতে হবে। তখন ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, রপ্তানির সব খাতেই ক্ষতি হয়েছে। এ ক্ষতির পরিমাণ আগামীতে আরও বাড়বে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ক্ষতি হচ্ছে ইমেজ সংকট। ক্রেতা ধরে রাখাটা এখন বড় চ্যালেঞ্জিং। কারণ ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় ক্রেতাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। অনেক ক্ষেত্রে ক্রেতা ধরে রাখতে পণ্য এখন বিমানে পাঠাতে হবে। এতে খরচ বাড়বে। যা রপ্তানিকারকদের ক্ষতির তালিকায় পড়বে।

চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়. আমদানি কার্যক্রম ও পণ্য ডেলিভারি বন্ধ থাকায় এ খাতে পাঁচ দিনে বিপুল আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। টাকার অঙ্কে এই ক্ষতির পরিমাণ কত তা সুনির্দিষ্ট করে বলা না গেলেও ক্ষতির অঙ্ক কয়েক হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছেন আমদানিকারকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যে কেবল চট্টগ্রাম কাস্টমসই ৯০০ কোটি টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৬৮ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করে। সে হিসাবে প্রতিদিন গড়ে ১৮০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলন, সংঘর্ষ ও রাষ্ট্রীয় স্থাপনায় দুর্বৃত্তদের হামলার জেরে বৃহস্পতিবার রাত থেকে বন্ধ হয়ে যায় ইন্টারনেট পরিষেবা। শুক্রবার রাত ১২টার পর থেকে জারি করা হয় কারফিউ। ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ হওয়ার কারণে কাস্টমসের রাজস্ব আদায়ের অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমও বন্ধ হয়ে যায়। তাই শুল্ক আদায়ও বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় পণ্য ডেলিভারি। বুধবার থেকে ম্যানুয়ালি এবং বৃহস্পতিবার থেকে ইন্টারনেট সেবা চালু হওয়ার পর পুরোদমে বন্দর-কাস্টমসে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুক্রবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত শুল্কায়ন কার্যক্রম বন্ধ থাকায় প্রতিদিন গড়ে ১৮০ কোটি টাকা করে ৫ দিনে ৯০০ কোটি টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হয় সরকার। প্রতিদিন আমদানি পণ্য ছাড়ের জন্য ৪-৫ হাজার বিল অব এন্ট্রি (বিই) দাখিল হতো। ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকার কারণে এসব পণ্যের বিএই দাখিল করা যায়নি। এ ছাড়া প্রতিদিন চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ৮-১০ হাজার ট্রাক-কাভার্ডভ্যান, লরি পণ্য নিয়ে বের হয়।

এই পাঁচ দিন কোনো পণ্য ডেলিভারি হয়নি। শিল্পের কাঁচামাল না পাওয়ায় শত শত মিল-কারখানায় বন্ধ ছিল উৎপাদন। স্টিল সেক্টর, সিমেন্ট সেক্টরসহ প্রায় সব সেক্টরেই পড়েছে এই প্রভাব। এছাড়া বন্দর থেকে সময়মতো পণ্য ছাড় করতে না পারায় আমদানিকারকদের ওপর উঠেছে পোর্ট ও শিপিং লাইনের বিপুল অঙ্কের ডেমারেজ। বন্দরে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অতিরিক্ত ৬-৭ হাজার কনটেইনার জমে যায়।

চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি ওমর হাজ্জাজ বলেন, পাঁচ দিন সব কিছু বন্ধ থাকার কারণে কেবল আমদানি খাতেই কয়েক হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তবে সুনির্দিষ্ট করে টাকার অঙ্কে এই ক্ষতি নিরূপণ করা সম্ভব নয়। তবে বন্দর-কাস্টমসহ সব সেক্টরে প্রতিদিন গড়ে ১২ হাজার থেকে ১৩ হাজার কোটি টাকার ব্যবসায়িক ক্ষতি হয়েছে বলে তারা ধারণা করছেন। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার থেকে সবকিছু স্বাভাবিক হয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমস পুরোদমে কাজ শুরু করেছে। উদ্ভুত পরিস্থিতির কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যের যে ক্ষতি হয়েছে তা কাটিয়ে উঠতে করণীয় নির্ধারণে চেম্বার বৃহস্পতিবার সব সেক্টরের প্রতিনিধি এবং প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠক থেকে বলা হয়েছে, বড় ধরনের বিপদ থেকে দেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আর একটি সেকেন্ডও যাতে ওয়েস্টেজ না হয় সেভাবে সবাইকে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহŸান জানানো হয়। এ ক্ষেত্রে সরকার ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের সব ধরনের সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ার্ডারস অ্যাসোসিয়শনের সহসভাপতি ও শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খাইরুল আলম সুজন বলেন, ‘পণ্য নিয়ে অনেক জাহাজ এলেও চার দিনে খালাস করতে পারেনি। পণ্য ডেলিভারি না হওয়ায় চট্টগ্রাম বন্দরে জমে যায় বাড়তি ৬-৭ হাজার কনটেইনার। পণ্য না পেয়ে মিল-কারখানায় উৎপাদন বিঘিœত হয়েছে। যার ভয়াবহ প্রভাব ভোক্তাদের ওপর পড়েছে।

উদ্যোক্তারা জানান, ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় সফটওয়্যার রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হয়েছে। অফিস বন্ধ থাকায় সফটওয়্যার তৈরির কাজও করা সম্ভব হয়নি। এসব কারণে গত ৫ দিনে এ খাতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। দেশ থেকে যারা সফটওয়্যার বা তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য কিনেছেন তাদের রপ্তানিকারকরা বিভিন্ন সেবা দিয়ে থাকেন অনলাইনে। কিন্তু ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় এ সেবা দেওয়া সম্ভব হয়নি। ফলে সেবা বাবদ অর্থও মিলবে না।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সফটওয়্যার ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতি রাসেল টি আহমেদ বলেন, ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় ক্রেতাদের সেবা দেওয়া সম্ভব হয়নি। এ ধরনের পরিস্থিতির কারণে ক্রেতারা সেবা না পাওয়ায় তাদেরও ক্ষতি হয়েছে। এতে দেশের ইমেজ নষ্ট হয়েছে। ফলে ভবিষ্যতে দেশ থেকে তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য রপ্তানিতে জটিলতা দেখা দিতে পারে। কারণ এসব পণ্য রপ্তানির পর পরিচালনার ক্ষেত্রে সমস্যা হলে সেবা দিতে হয়।
জানা গেছে, ওষুধ উৎপাদন, রপ্তানি ব্যাহত, কাঁচামাল ছাড় করাতে না পারায় ফার্মাসিউটিক্যালস খাতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। এ খাতে যেসব কাঁচামাল বন্দরে আটকে ছিল সেগুলোর গুণগত মান কমার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ এ খাতের সবকিছুই চলে ঘণ্টা গুণে।

রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হওয়ায় সিরামিক খাতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। রি-রোলিং মিলস খাতে শুধু উৎপাদন ক্ষতি হয়েছে হাজার কোটি টাকার বেশি। ই-কমার্স খাতে ক্ষতি হয়েছে ৩০০ কোটি টাকা। ইন্টারনেট না থাকায় দেশের কলসেন্টারগুলোর কার্যক্রম একেবারেই মুখ থুবড়ে পড়েছে। ৫ দিনে এ খাতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২০০ কোটি টাকা।

গণপরিবহণ না চলার কারণে এ খাতেও অনেক ক্ষতি হয়েছে। অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের কারণে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২২ কোটি টাকা। এছাড়া গণপরিবহণ বন্ধ থাকায় এ খাতেও মোটা অঙ্কের ক্ষতি হয়েছে।

কৃষির উৎপাদন ব্যবস্থায় তেমন ক্ষতি হয়নি। তবে বিপণন ব্যবস্থায় ক্ষতি ব্যাপক হয়েছে। কারফিউর কারণে পণ্য পরিবহণ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। ফলে কৃষকের পণ্য পচে নষ্ট হয়েছে।

অর্থনীতি

“অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আনুমানিক চার মাসের মধ্যে কাজ সম্পন্ন হবে,” বলছেন ব্যাংক এশিয়ার এমডি সোহেল আর. কে. হুসেইন।

পাকিস্তানভিত্তিক ব্যাংক আলফালাহর বাংলাদেশ অংশের কার্যক্রম অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে দেশীয় বেসরকারি খাতের ব্যাংক এশিয়া।

বাংলাদেশ অংশের পুরো স্বত্ব বিক্রি করে চলে যাচ্ছে আলফালাহ। সব মিলে ব্যাংকটির মূল্য কত দাঁড়াচ্ছে, নিরীক্ষা প্রতিবেদন শেষ হলেই তা ঠিক হবে বলে ব্যাংক এশিয়া ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানাচ্ছে।

ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সোহেল আর. কে. হুসেইন বলেন, “অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আনুমানিক চার মাসের মধ্যে কাজ সম্পন্ন হবে।

“সকল প্রক্রিয়া ব্যাংক কোম্পানি আইন মোতাবেক করা হবে। তবে কিছু ধীর ও লম্বা প্রক্রিয়া আছে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে। যেহেতু তারা (ব্যাংক আলফালাহ) ব্যবসা কার্যক্রম বিক্রি করে এ দেশ থেকে চলে যাচ্ছে, তাই বিক্রি থেকে পাওয়া তাদের অর্থ বাইরে পাঠানোর একটা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।”

এরই মধ্যে ব্যাংকপাড়ায় ব্যাংক আলফালাহ কত টাকায় কেনা হচ্ছে, তা নিয়ে আলোচনা শোনা যাচ্ছে। বিষয়টি জানতে চাইল আর. কে. হুসেইন বলেন, “বিভিন্ন মাধ্যমে বলা হচ্ছে ব্যাংক আলফালাহ ৬০০ কোটি টাকা দিয়ে কেনা হয়েছে। কিন্তু এটা সঠিক নয়। কারণ একটা নিরীক্ষা প্রতিবেদন করার পরেই ভ্যালুয়েশন কত আসবে, সেই বিষয় সঠিক ধারণা পাওয়া যায়।”

ব্যাংক আলফালাহ কীসের ভিত্তিতে কিনছে ব্যাংক এশিয়া, তার ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, “আর্থিক ব্যবস্থাপনার দিক পর্যালোচনা করলে ব্যাংক এশিয়া অনেক ভালো একটি প্রতিষ্ঠান। কারণ ব্যাংক এশিয়ার পর্যাপ্ত পরিমাণে তারল্য রয়েছে। এমন কী দেশের অন্যান্য ব্যাংকের চেয়ে ব্যবস্থাপনা খরচও কম।

“ব্যাংক আলফালাহ একটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ব্যাংক। বাংলাদেশে তাদের একটা অংশ কার্যক্রম পরিচালনা করছে, সেটিই দুই ব্যাংকের বোর্ডের সর্বসম্মতিতে অধিগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এটা এমন ঘটনা নয় যে, আলফালাহ দুর্বল ব্যাংক তাই অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। কমার্শিয়াল চুক্তির আওতায় ব্যাংক এশিয়া অধিগ্রহণ করছে এটি।”

আর. কে. হুসেইন জানাচ্ছেন, ব্যাংক এশিয়ার বোর্ড পর্যালোচনা করেছে যে, ব্যাংক আলফালাহর ব্যালেন্স শিট অত্যন্ত ভালো। আবার তাদের কর্মীরাও দক্ষতাসম্পন্ন। ব্যাংকটির যা সম্পদ আছে, তা দিয়ে ব্যাংক এশিয়া উপকৃত হবে।

দুই দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্তের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত মুখপাত্র সাইফুল ইসলাম  বলেন, “ব্যাংক আলফালহ অধিগ্রহণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদন দিয়ে দিয়েছে। ব্যাংকটি যেহেতু পাকিস্তানভিত্তিক, সেহেতু অধিগ্রহণের জন্য সে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন দরকার, যা তারা এরই মধ্যে দিয়েছে। তবে অডিট করার পর বলা যাবে, ব্যাংকটির মূল্য আসলে কত আসবে।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধতন কর্মকর্তা বলছেন, দুটিই সবল ব্যাংক। তাই ব্যাংক কোম্পানি আইন মোতাবেক দুই বোর্ডের সিদ্ধান্তে অধিগ্রহণ করছে ব্যাংক এশিয়া।

বাংলাদেশের বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে শুধু ব্যাংক এশিয়ারই ব্যাংক অধিগ্রহণের অভিজ্ঞতা আছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো কোনো বিদেশি ব্যাংকের বাংলাদেশ অংশের কার্যক্রম অধিগ্রহণ করতে চলেছে তারা।

এর আগে ২০০১ সালে ব্যাংক এশিয়া কানাডাভিত্তিক নোভা স্কোশিয়া এবং একই বছর পাকিস্তানের আরেক ব্যাংক মুসলিম কমার্শিয়াল ব্যাংকের বাংলাদেশি কার্যক্রম অধিগ্রহণ করে।

ব্যাংক আলফালাহ পাকিস্তানে ১৯৯৭ সালে কার্যক্রম শুরু করে। এর মালিকানায় রয়েছে আবুধাবি গ্রুপ। পাকিস্তানের বাইরে আফগানিস্তান, বাহরাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) এর কার্যক্রম রয়েছে। এর প্রধান কার্যালয় পাকিস্তানের করাচিতে। ২০০৫ সালে ১ কোটি ৭৮ লাখ ৮০ হাজার ডলারে শামিল ব্যাংক অব বাহরাইন কেনার মাধ্যমে বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরু করে ব্যাংক আলফালাহ। পাকিস্তানের বাইরে বাংলাদেশ হল প্রথম দেশ, যেখানে সেবা সম্প্রসারণ করে ব্যাংকটি।

অর্থনীতি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ এবং ডিজিটাল দেশে রূপান্তর করতে এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (এআইআইবি) কাছ থেকে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন যাত্রা এবং ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে রূপান্তরের স্বপ্ন বাস্তবায়নে এআইআইবি ভবিষ্যতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

এআইআইবির প্রেসিডেন্ট জিন লিকুনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বেইজিংয়ে তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করার সময় প্রধানমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।

চীন সফরের দ্বিতীয় দিনের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান।

বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, নদী খনন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে দেশকে রক্ষা করার লক্ষ্যে জলবায়ু সহিষ্ণুতা গড়ে তোলার জন্য এআইআইবির কাছে অর্থ সহায়তা চেয়েছেন। তার সরকার উপকূলীয় অঞ্চলে জলবায়ু সহিষ্ণু বাড়িঘর নির্মাণ করছে উল্লেখ করে তিনি এই লক্ষ্যে আর্থিক সহায়তা চেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের উন্নয়নে এআইআইবি এর অবদানের কথাও স্মরণ করেন।

তিনি বলেন, এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক অতীতে বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জন্য ঋণের সুদের হার আরও কমানোর জন্য এআইআইবিকে অনুরোধ করেন। জবাবে এআইআইবি প্রেসিডেন্ট বলেন, ব্যাংকটি এর আগে বাংলাদেশের জন্য বিশেষ ছাড় দিয়েছে এবং আবারও অনুরূপ সুবিধা দেওয়ার কথা বিবেচনা করবে। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ তার ব্যাংকের সবচেয়ে বড় ঋণগ্রহীতা।

এআইআইবির ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং ব্যাংকের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ সময় এআইআইবি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ছিলেন।

ব্রিফিংকালে অর্থমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব এম নাঈমুল ইসলাম খান এবং বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ উপস্থিত ছিলেন।

অর্থনীতি

ঋণ আদায় বাড়াতে ও খেলাপি ঋণ কমাতে এবারও ঋণখেলাপিদের আরও ছাড় দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে আগের মতো এবার বড় ছাড় দেওয়া হয়নি। সীমিত আকারে ছাড় দেওয়া হয়েছে। ঋণের মোট বকেয়ার কমপক্ষে ১০ শতাংশ অর্থ জমা দিয়ে এই সুবিধা নেওয়ার জন্য আবেদন করতে হবে। ৩ বছরের মধ্যে পুরো ঋণ শোধ করতে হবে।

ব্যাংক বিদ্যমান নীতিমালার আওতায় গ্রাহকের সুদ মওকুফ করতে পারবে। বিশেষ পরিস্থিতির কারণে যারা খেলাপি হবেন শুধু তারাই এ সুবিধা পাবেন। কোনো ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি এই সুবিধা পাবেন না। এ বিষয়ে সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটি সার্কুলার জারি করা হয়; যা বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়, এ নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর হবে।

সূত্র জানায়, এর আগেও ঋণখেলাপিদের ছাড় দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিভিন্ন নীতিমালা জারি করা হয়েছে। মূলত খেলাপি ঋণ আদায় বাড়াতে এ ছাড় দেওয়া হয়। কিন্তু বাস্তবে আদায় বাড়েনি। অথচ এভাবে খেলাপি ঋণ নবায়ন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে খেলাপি ঋণ কমানো সম্ভব হয়েছে বলে দাবি করা হয়। ব্যাংকাররা মনে করেন, এই নীতিমালার মাধ্যমেও খেলাপি ঋণের ঊর্ধ্বগতি কিছুটা হলেও কমানো সম্ভব হবে। তবে ঋণ আদায় তেমন একটা বাড়বে না।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবার প্রকৃত পরিস্থিতির কারণে যারা খেলাপি হচ্ছেন বা যারা তাদের ব্যবসা বা শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে চান, তাদের ঋণ পরিশোধের জন্য একটি নতুন নীতিমালা করেছে। এর আওতায় সংশ্লিষ্ট গ্রাহকদের ঋণের দায় থেকে কিছু ছাড় দিয়ে বের হওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

এ সংক্রান্ত নীতিমালায় বলা হয়, পরিস্থিতির কারণে যেসব ঋণগ্রহীতা খেলাপি হচ্ছেন তাদের খেলাপি ঋণ এই নীতিমালার আওতায় নবায়ন করে আদায় করা যাবে। এ জন্য গ্রাহককে মোট ঋণের কমপক্ষে ১০ শতাংশ পরিশোধ করে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে আবেদন করতে হবে। ব্যাংক গ্রাহকের আবেদন ২ মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করবে। গ্রাহককে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী সুদ মওকুফ সুবিধাও দেওয়া যাবে। ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ থেকে চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে। এর বেশি ঋণের ক্ষেত্রে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন নিতে হবে। ঋণের পুরো অর্থ পরিশোধের জন্য ২ বছর সময় দেওয়া যাবে।

গ্রাহকের প্রয়োজনে এর সীমা আরও ১ বছর বাড়ানো যাবে। মোট ৩ বছরের মধ্যে পুরো ঋণ পরিশোধ করতে হবে। ঋণ পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত জামানত ছাড় করা যাবে না। তবে ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে এ বিষয়ে চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে। পুরো ঋণ পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত গ্রাহক খেলাপি হিসাবে চিহ্নিত হবেন।

নীতিমালায় আরও বলা হয়, এর আওতায় কোনো ইচ্ছাকৃত খেলাপি সুবিধা পাবেন না। পরিস্থিতির কারণে যারা খেলাপি হবেন তারা পাবেন। এছাড়া যারা ব্যবসা বা শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে চান তারাও এই সুবিধা পাবেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই নীতিমালার ভিত্তিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে একটি নীতিমালা করতে হবে। তবে কোনোক্রমেই এ নীতিমালার চেয়ে শিথিলযোগ্য শর্ত রাখা যাবে না। ওই নীতিমালা পর্ষদে অনুমোদন করতে হবে। এর ভিত্তিতে ব্যাংক এর বাস্তবায়ন করবে। এই নীতিমালার আওতায় ঋণ নবায়ন করা হলে তা ঋণ পুনর্গঠন বা পুনঃতফশিল হিসাবে বিবেচিত হবে না।

অর্থনীতি

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছেন, দেশে আন্তর্জাতিক মানের টেলিকম সেবা প্রদানে সবরকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘সারাদেশে কলড্রপ, ব্লাংকসংযোগ বিড়ম্বনা হ্রাস, মোবাইল ইন্টারনেটের যথাযথ গতি এবং সুলভ মূল্যে ইন্টারনেট নিশ্চিত করার মাধ্যমে আমরা গ্রাহকের সন্তষ্টি অর্জনে দেশে আন্তর্জাতিক মানের টেলিকম সেবা উপহার দিতে চাই। এ লক্ষ্যে মোবাইল অপারেটরসহ সংশ্লিষ্টদের সেবার মান পর্যবেক্ষণে কারিগরি দল গঠন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৫ বছরে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ এবং ইন্টারনেট পৌছে দিয়েছেন। আমরা এখন চাই এগুলোর মান বৃদ্ধি করতে। এরই ধারাবাহিকতায় সারা দেশে আমরা ড্রাইভ টেস্ট পরিচালনা করছি।’

প্রতিমন্ত্রী আজ শুক্রবার কক্সবাজার রেলস্টেশন এলাকায় মোবাইল সেবার গুণগতমান পর্যবেক্ষণ শেষে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, উন্নত মোবাইল সেবা নিশ্চিত করতে অপারটেরদের সহায়তা দেওয়া হবে। আমরা অপারেটরদের হাত-পা বেঁধে নদীতে ফেলে সাঁতার শেখাব না, আমরা সাঁতার শিখিয়ে সক্ষমতা দিয়ে দেব, যাতে নদীটা পার হওয়া যায়।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, মোবাইল অপারেটরদেরকে গ্রাহকদের প্রতিশ্রুত সেবা প্রদান, গ্রাহক পর্যায়ে সুলভ মূল্যে ইন্টারনেট প্রদান এবং অপারেটরদের যে সকল সুবিধাগুলো দেওয়া হচ্ছে, সেগুলোর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে সরকার কাজ করছে।

পলক বলেন, ‘মোবাইল ফোন এখন জীবনের একটা অপরিহার্য অংশ হয়ে গেছে। কিন্তু আমরা দেখছি যে, আমাদের গ্রাহকেরা অনেক ক্ষেত্রেই তাদের সেবা নিয়ে সন্তুষ্ট নন। কলড্রপ একটা নিয়মিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের মোবাইল গ্রাহকেরা যেমন এ বিষয় নিয়ে অসন্তুষ্ট। তেমনি বিটিআরসি যে পরীক্ষাগুলো করেছে, সে রিপোর্ট অনুসারেও কোয়ালিটি অব সার্ভিস খুব একটা সন্তোষজনক নয়।’

আমরা একটা স্মার্ট টেলিকম ইকোসিস্টেম বাংলাদেশকে উপহার দিতে চাই’ উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘যেভাবেই হোক আমরা গ্লোবাল বেঞ্চমার্কে উন্নীত হতে চাই’।

কক্সবাজারকে পৃথিবীর দীর্ঘতম বালুকাময় সমুদ্র সৈকত উল্লেখ করে পলক বলেন, প্রতিবছর লাখ-লাখ দেশি-বিদেশি পর্যটকরা এখানে আসেন। এই পর্যটন কেন্দ্রকে বিশ্বমানের করে গড়ে তোলার জন্যই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখানে একটি ট্রেন স্টেশন ও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর তৈরি করে দিয়েছেন। কক্সবাজারে একটি হাইটেক পার্ক নির্মাণ করার জন্য তিনি ১৭০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। কক্সবাজারকে বিশ্বমানের আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ, উচ্চগতির ইন্টারনেট, সড়ক-রেল-আকাশ পথের মাধ্যমে যুক্ত করা হয়েছে।