আন্তর্জাতিক

সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ের এক্সপো সিটিতে বৃহস্পতিবার শুরু হয়েছে জাতিসংঘের জলবায়ুবিষয়ক শীর্ষ সম্মেলন কপ (কনফারেন্স অব দ্য পার্টিজ)-এর ২৮তম আসর। চলবে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ১৩ দিনব্যাপী এ সম্মেলনে অংশ নেবেন বিশ্বের ১৯৮টি দেশের প্রায় ৭০ হাজার মানুষ। এতে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, ব্রিটেনের রাজা চার্লসসহ অন্যান্য দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা উপস্থিত থাকবেন। তবে সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন না যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও খ্রিষ্টানদের ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস। কপ-২৮ সম্মেলনে বিশ্বনেতারা পরিবেশের দূষণ কমানো, জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যা সমাধানের বিষয়ে আলোচনা করবেন। বিবিসি, রয়টার্স, সিএনএন।

কপ-২৮ সম্মেলনের সভাপতি আবুধাবি জাতীয় তেল কোম্পানির প্রধান নির্বাহী ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের শিল্প ও উন্নত প্রযুক্তিমন্ত্রী সুলতান আহমেদ আল জাবের। সম্মেলনে কার্বন নির্গমনবিষয়ক বিভিন্ন সমস্যা ও তার সমাধান নিয়ে মূল আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। তবে পরিবেশে কার্বন নির্গমনের পেছনে সবচেয়ে বেশি দায়ী জ্বালানি তেল। তাই সম্মেলন সফল করতে আল জাবের কতটুকু সৎভাবে কাজ করতে পারবেন তা নিয়ে ইতোমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। এছাড়া এর আগে আল জাবেরের বিভিন্ন দেশের সরকারের সঙ্গে গ্যাস ও অন্যান্য বাণিজ্যিক চুক্তি নিয়ে আলোচনা করার পরিকল্পনার নথি ফাঁস হওয়ার দাবি জানিয়েছিল বিবিসি। এ বিষয়ে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফাঁস হওয়া নথি সঠিক নয় বলে জানিয়েছে কপ-২৮ এর এক মুখপাত্র।

কপ-২৮ সম্মেলনে মোটা দাগে চারটি বিষয় বিশেষভাবে গুরুত্ব পেতে পারে। এর মধ্যে প্রথমটি হলো জ্বালানির ব্যবহার স্থানান্তর (জীবাশ্ম জ্বালানির বদলে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার)। দ্বিতীয় যে বিষয়টি গুরুত্ব পাবে তা হলো, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতৃত্বে ৬০টিরও বেশি দেশের সমন্বয়ে একটি জোট গঠন করে জলবায়ু পরিবর্তনের সংকট মোকাবিলায় কাজ করা।

এছাড়া সম্মেলনে জলবায়ু তহবিল বৃদ্ধি, জলবায়ু অভিযোজন ও স্থিতিস্থাপকতা ও টেকসই উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপের পাশাপাশি জীববৈচিত্র্য রক্ষার বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় কয়লা, তেল ও গ্যাসের ব্যবহার বন্ধ করা উচিত, নাকি জলবায়ুর ওপর এসব শিল্পের প্রভাব কমাতে প্রযুক্তি উদ্ভাবনে গুরুত্ব দেওয়া উচিত, তা নিয়ে দেশগুলোর মধ্যে বিভাজন রয়েছে। সম্মেলনে সেই বিভাজন আরও স্পষ্ট হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।

২০৩০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার তিনগুণ বাড়াতে চায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। এ লক্ষ্যে সম্মেলন চলাকালীন একটি চুক্তি করতে চায় এই তিন দেশ। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যেসব দেশে খরা, বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিচ্ছে তাদের সেই ক্ষতি পুষিয়ে দিতে একটি চূড়ান্ত তহবিল গঠন করা হবে। ইতোমধ্যে এর খসড়া তৈরি হয়েছে। সম্মেলন চলাকালীন সেই খসড়া অনুমোদনের জন্য জমা দেওয়া হবে।

কপ-২৮ সম্মেলনে প্রথমবারের মতো গ্লোবাল স্টকটেক নিয়েই মূল আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। গ্লোবাল স্টকটেকে মূলত সম্মেলনের সদস্য দেশগুলো নিজেদের ক্ষেত্রে জলবায়ু সংক্রান্ত কী ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে, তা নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

জলবায়ুবিষয়ক বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে গিয়ে কী কী ধরনের প্রতিবন্ধকতা রয়েছে সেগুলোও চিহ্নিত করা হয়। এছাড়া এর মাধ্যমে প্যারিস চুক্তির সামগ্রিক বাস্তবায়ন কতটুকু সম্ভব হয়েছে সেটিও মূল্যায়ন করা হবে।

তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রেও জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া হবে কপ-২৮ সম্মেলনে। জীবাশ্ম জ্বালানি নির্গমনকে ‘শূন্যে’ নামিয়ে আনার প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নিতে একসঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নও কাজ করবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া এতে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সংকট থেকে বিশ্বকে বাঁচাতে ও বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখতে ২০২৫ সালের মধ্যে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বাতিল করারও সম্ভাবনা রয়েছে। এমনকি জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের ক্ষেত্রেও বিনিয়োগ বন্ধ করতেও উদ্বুদ্ধ করা হবে।

কপ-২৮ সম্মেলনে জলবায়ু তহবিল ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনাও রয়েছে বলে জানা গেছে। সম্মেলনে লস অ্যান্ড ড্যামেজের (জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট অপরিবর্তনীয় ক্ষতি) বিষয়টিও উল্লেখ থাকতে পারে। উন্নয়নশীল দেশগুলো এ সংক্রান্ত তহবিলের অগ্রগতি বিষয়ে জবাবদিহিতা চাইতে পারে। কারণ এ ধরনের ক্ষতি মোকাবিলায় উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহায়তার জন্য উন্নত দেশগুলো নির্দিষ্ট অর্থ প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এ বিষয়ে তহবিল প্রতিষ্ঠার বিষয়ে উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে উন্নয়নশীল দেশগুলোর একটি চুক্তি হয়েছিল গত বছরের কপ-২৭ শীর্ষ সম্মেলনে। সে সময় দুই বছরের মধ্যে লস অ্যান্ড ড্যামেজ তহবিল প্রতিষ্ঠা করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।

আন্তর্জাতিক

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় হামাসের সঙ্গে ইসরাইলের যুদ্ধবিরতির মেয়াদ দু’দিনের জন্য বাড়ানো হয়েছে। সোমবার কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা গাজায় মানবিক যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর চুক্তিতে পৌঁছানোর এই ঘোষণা দিয়েছেন।

চুক্তি অনুযায়ী, মঙ্গলবার এবং বুধবার ১০ জন করে— মোট ২০ জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস। এর বিনিময়ে দু’দিনে ইসরাইলের কারাগারে বন্দি থাকা ৬০ ফিলিস্তিনি মুক্তি পাবেন।

আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামাসের পক্ষ থেকেও আরও দুই দিন যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে।

দীর্ঘ ৪৮ দিন যুদ্ধাবস্থার পর গত শুক্রবার হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি শুরু হয়। চার দিনের এ অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির শেষ দিন ছিল সোমবার।

প্রসঙ্গত, ফিলিস্তিনে ইসরাইলের বর্বর হামলায় এ পর্যন্ত ১৪ হাজার ৮৫৪ ফিলিস্তিনির প্রাণ গেছে।

আন্তর্জাতিক

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে চাই, এখানে যদি কেউ (বিদেশি) সহায়তা করতে চায়, স্বাগত জানাব। কিন্তু আমরা মাতব্বরি করতে দেব না।

যারা মাতব্বরি করবে তাদের আমরা সহ্য বা গ্রহণ করতে পারি না।

সোমবার (২৭ নভেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশিদের হস্তক্ষেপ নিয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে ড. মোমেন বলেন, ঐতিহাসিকভাবে আমাদের রাজনীতিবিদরা এটার জন্য দায়ী। কিছু হলেই মিশনে গিয়ে ধর্না দেয়। সম্প্রতিকালে আমাদের মিডিয়াও এটার জন্য দায়ী। কিছু বাঙালি বিদেশি আছে, তারাও এটার জন্য দায়ী। কয়েকটি গোষ্ঠী কারণে বিদেশিরা অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলায়। প্রত্যেক দিন মার্কিন মুখপাত্রকে ত্যক্ত করে ফেলে বাংলাদেশি সাংবাদিকরা, বাংলাদেশি লোকেরা।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সুপার পাওয়ার। আমরা তাদের অগ্রাহ্য করতে পারি না। আমরা করিও না। আমাদের কোনো উদ্দেশ্যও নাই। আমরা তো এজন্য তাদের পরামর্শকে অত্যন্ত গুরত্বসহকারে গ্রহণ করি। তবে আমাদের দেশের একটা বাস্তবতা আছে। বাস্তবতার নিরিখে তারা যদি কোনো প্রস্তাব দেয়… আমরা তাদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখি।

অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বাইরে যুক্তরাষ্ট্র কিছু চায় না উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমেরিকা কিন্তু বেশি কিছু চায় না। তারা চায় অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। আমরাও চাই। তারা আমাদের সাহায্য করছে। আমরা নিজেরা একটা সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন চাই। আমরা যদি এটা করি আমেরিকা আমাদের সঙ্গে থাকবে। তারা আমাদের বন্ধু দেশ। শুধু নির্বাচন নয়, তাদের সঙ্গে আমাদের বিভিন্ন রকম সম্পর্ক আছে। আমেরিকা সব সময় বাস্তববাদী।

ড. মোমেন বলেন, বরং আমরা তাদের (যুক্তরাষ্ট্র) বলব, যারা নির্বাচন বানচাল করার চেষ্টা করছে, তাদের তারা ভিসা পলিসির মধ্যে ঢুকাক। তারা তাদের যা করার করুক, নির্বাচনে যারা বাধা দেবে। আমরা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে নষ্ট করতে চাই না। আমেরিকা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। আমরা তাদের সঙ্গে আছি, তারা আমাদের সঙ্গে আছে।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আমাদের একাত্তরে সমর্থন দেয়নি। তারা পাকিস্তান সরকারকে সমর্থন করেছে। কিন্তু আমরা ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতা পাওয়ার পর আমেরিকা প্রতিনিয়ত আমাদের সমর্থন দিয়ে গেছে। কোনোদিন আমাদের বিরুদ্ধে যায়নি। এটা কী মিন করে? তারা আমাদের সঙ্গে আছে।

নির্বাচন নিয়ে বিদেশিদের তৎপরতা কম দেখা যাচ্ছে। সরকার কি বিদেশিদের চুপ থাকতে বাধ্য করল কি না—জানতে চাইলে ড. মোমেন বলেন, আমাদের সেই ক্ষমতা নাই। আমাদের বন্ধু দেশ যারা তারা অনেক সময় আমাদের উপদেশ দেয়, যেটা ভালো সেটা গ্রহণ করি। অন্যের যদি ভালো উপদেশ থাকে সহায়ক নির্বাচনের জন্য, আমরা এটাকে স্বাগত জানাই। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অনেক দিন ধরে বলছে, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা। সম্প্রতি তারা বলছে, সংঘাতমুক্ত। আমরাও চাই। কিন্তু সেটা আমরা একা পারব না।

এক প্রশ্নের উত্তরে ড. মোমেন বলেন, জনগণের যদি সম্পৃক্ততা থাকে, জনগণ যদি ভোট দেয়, তাহলে সেটা অংশগ্রহমূলক। আমাদের প্রায় নির্বাচনে শতকরা ৫০ ভাগ লোক ভোট দেয়। আমেরিকায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সব সময় নির্বাচন হয়। সিনেটর কেনেডি, সিনেটর জন কেরি তাদের বিরুদ্ধে কেউ দাঁড়ায় না। সম্মানিত লোকের বিরুদ্ধে কেউ দাঁড়ায় না।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, তারানকো সাহেব কিছু করতে পেরেছে? আমরা চাইব না, বিদেশিরা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করুক। তবে সহায়কের ভূমিকা পালন করলে এটাতে স্বাগত জানাব। আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে চাই, এখানে যদি কেউ সহায়তা করতে চায়, স্বাগত জানাব। কিন্তু আমরা মাতব্বরি করতে দেব না। যারা মাতব্বরি করবে তাদের আমরা সহ্য বা গ্রহণ করতে পারি না।

বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার পরও যদি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয় বিদেশিরা গ্রহণ করবে কি না—জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অবশ্যই গ্রহণ করবে। যদি অবাধ ও গ্রহণযোগ্য হয়। একটি বড় দল যদি না আসে…। মিশরে বড় দল ছিল ব্রাদারহুড, তারা নির্বাচনে আসে নাই; আফগানিস্তানে তালেবান আসে নাই। যুক্তরাষ্ট্র ওটাকে গ্রহণ করেছে। কোনো একটি বিশেষ দল যদি না আসে, এটা খুব গুরত্বপূর্ণ নয়।

তিনি বলেন, সরকার হিসেবে সব দলকে চাই, নির্বাচনে আসুক। আর আমরা আমাদের নিজেদেরও যাচাই করতে চাই। তাদের যদি কোনো জনসমর্থন থাকে, তারা নির্বাচনে আসবে এবং প্রমাণ করবে তাদের অবস্থান।

অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ড. মোমেন বলেন, আমাদের দেশের লোকেরা আগেভাগে দুশ্চিন্তা করে। আমরা বিদেশে যে জিনিসপত্র বিক্রি করি, কেউ আমাদের দয়া-দাক্ষিণ্য দেখায় না। সস্তায় ভালো জিনিস বিক্রি করি এবং যথা সময়ে পায় বলে কেনে। সুতরাং আমাদের ভয়ের কোনো কারণ নাই।

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমেরিকা পরিণত সরকার। তারা জানে, র‌্যাব অত খারাপ কাজ করে না। আমেরিকা র‌্যাবকে সমর্থন করবে। হয়তো নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। আমরা আইনি প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছি।

আন্তর্জাতিক

টানা ৪৯ দিনের ইসরাইলি বর্বরতার পর যুদ্ধবিরতির চুক্তি অনুযায়ী, ১৩ ইসরাইলি জিম্মিকে ছেড়ে দিয়েছে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস।

শুক্রবার হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে চারদিনের যুদ্ধবিরতি শুরু হয়। এ যুদ্ধবিরতির চুক্তি অনুযায়ী, চারদিনে ৫০ ইসরাইলি জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস। চুক্তির শর্ত মেনে, প্রথমদিন ১৩ ইসরাইলিকে ছেড়ে দিয়েছে এ সশস্ত্র গোষ্ঠী। মুক্তি পাওয়া সবাই নারী ও শিশু। আগামী তিনদিনে হামাসের কাছ থেকে ছাড়া পাবেন আরও ৩৭ ইসরাইলি।

চুক্তি অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতির চারদিনে ইসরাইল তাদের কারাগার থেকে ১৫০ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেবে। তাদের মধ্যে ইতিমধ্যে ৩৯ জনকে কারাগার থেকে বের করে নিয়ে আসা হয়েছে।

যেসব ইসরাইলিকে শুক্রবার মুক্তি দেওয়া হয়েছে তাদের পরিবারকে আগেই অবহিত করা হয়েছে।

গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলের বিভিন্ন অবৈধ বসতিতে হামলা চালিয়ে ২৪০ জনের বেশি ইসরাইলিকে গাজায় ধরে নিয়ে যায় হামাস।

এদিকে এ পর্যন্ত হামাস ইসরাইল যুদ্ধে নিহত হয়েছে ১৪ হাজার ৮০০ ফিলিস্তিনি।

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়াত্রা শুক্রবার বিকালে নয়াদিল্লির ঐতিহাসিক হায়দ্রাবাদ হাউসে অনুষ্ঠিত ফরেন অফিস কনসালটেশনে (এফওসি) নিজ নিজ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে অংশ নিয়েছেন।

বৈঠকে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন তিস্তা চুক্তি ও অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন চুক্তি দ্রুত সম্পাদন, বাংলাদেশের রফতানিযোগ্য পণ্য থেকে বাণিজ্য বাধা অপসারণ এবং দু’দেশের মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরেন।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ভারতের সহযোগিতাও কামনা করেন। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়াত্রা বাংলাদেশকে বিশ্বস্ত প্রতিবেশী হিসেবে আখ্যায়িত করেন এবং দু’দেশের মধ্যে বিদ্যমান চমৎকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে সন্তোষ প্রকাশ করেন।

এক বিজ্ঞপ্তিতে এ খবর দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, এফওসি বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক ইস্যু পর্যালোচনা এবং দুই দেশের জনগণের বৃহত্তর সুবিধার জন্য পারস্পরিক স্বার্থের নতুন পথ অনুসন্ধানের লক্ষ্যে একটি বিস্তৃত আলোচনার জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব ভারতের জি-২০ প্রেসিডেন্সির অধীনে একমাত্র দক্ষিণ এশীয় নেতা হিসেবে ‘জি-২০ লিডার্স সামিটে’ যোগ দিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানোয় ভারত সরকারকে ধন্যবাদ জানান।

উভয় দেশের পররাষ্ট্র সচিব বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এবং ২০২৩ সালে অর্জিত অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেন। সম্প্রতি দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য বেশ কয়েকটি প্রকল্পের উদ্বোধনের কথা উল্লেখ করে তারা বলেন, এ ধরনের সহযোগিতা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করবে।

দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিব উন্নয়ন, ব্যবসা-বাণিজ্য, আঞ্চলিক সংযোগ, আঞ্চলিক পাওয়ার গ্রিড সংযোগ, নিরাপত্তা ও পানি সম্পর্কিত ইস্যু, কনস্যুলার ও সাংস্কৃতিক ইস্যুর মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। স্নাতকোত্তর পর্যায়ে বাংলাদেশের সামনে যে সব চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হবে তা নিয়েও তারা আলোচনা করেন। উভয় পক্ষই পুনর্ব্যক্ত করেছে যে শান্তিপূর্ণ সীমান্তের জন্য দুদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে হবে।

আন্তর্জাতিক

ইসরাইলি বোমা হামলার পর থেকে বিধ্বস্ত হয়েছে গাজার প্রতিটি অঞ্চল। অবরুদ্ধ এলাকাগুলোতে এখন মৌলিক চাহিদার সংকট। ভেঙে পড়েছে যোগাযোগব্যবস্থা। জ্বালানির অভাবে যোগাযোগের আধুনিক যন্ত্রগুলোও ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে না। নিত্যপ্রয়োজনীয় মোবাইল, গাড়িসহ সব প্রযুক্তিই নিশ্চল।

এমনকি দূরপথ পাড়ি দিতে আবার সেই আদিম যুগে ফিরে গেছে গাজাবাসী। পথে পথে দেখা যাচ্ছে ঘোড়া এবং গাধার গাড়ি। গাড়ির বিকল্পে এগুলোর পিঠে ভর করেই এক স্থান থেকে অন্যস্থানে যাচ্ছেন বাসিন্দারা।

জীবন বাঁচাতে প্রতিদিনই এদিক-ওদিক ছুটে বেড়াচ্ছেন গাজাবাসী। বিদ্যুতের অভাবে দেখা দিয়েছে পরিবহণ সংকট। ফলে দৈনন্দিন দ্রব্যসামগ্রী এবং খাদ্য সংগ্রহেও প্রাণীদের ওপর নির্ভর করছে গাজার বেসামরিকরা।

একটি ঘোড়ার গাড়ির মালিক আবু মোহাম্মদ আজাইজা (৩৪) মিডলইস্ট আইয়ের প্রতিবেদনে বলেন, দিনের পর দিন, গাড়ির মালিকদের জ্বালানি শেষ হয়ে যাচ্ছে। এতে তারা পরিবহণের অন্য কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছেন না।

পশুদের দ্বারা পরিচালিত এই গাড়িগুলোই তাদের টেনে নিয়ে যায়; যেহেতু তাদের জ্বালানি বা গ্যাসের প্রয়োজন হয় না। বর্তমান পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে আমাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে উঠেছে। তিনি জানান, গত চার বছরের তুলনায় তিনি বর্তমানে আরও বেশি মুনাফা করেছেন।

মোহাম্মদ আজাইজা আরও বলেন, এই মুনাফায় আমি খুশি নই। যদি যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য আমার সব অর্থ বিলিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয় তবে আমি তা বিলিয়ে দিতে পছন্দ করব। যুদ্ধ শুরুর আগে কেবল গাজার প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এ পরিবহণ ব্যবহার করত। তবে এখন সব শ্রেণির মানুষেরাই প্রাণীদের এ পরিবহণের ওপর নির্ভরশীল।

গাজা শহরের একজন বাস্তুচ্যুত বাসিন্দা মোনা আকলক বলেন, আমি আমার জীবনে আগে কখনো এ গাড়িতে চড়ে যাইনি। কিন্তু এখন আমরা দেইর আল-বালাহ পৌঁছানোর পর থেকে বেশ কয়েকবার কার্ট ট্যাক্সি নিয়েছি।

আন্তর্জাতিক

প্রভাবশালী এই নারী একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা, লেখিকা এবং প্রতিবন্ধীদের অধিকার রক্ষা আন্দোলন কর্মী।
চলতি বছর বিশ্বের অনুপ্রেরণাদায়ী ও প্রভাবশালী ১০০ নারীর তালিকা প্রকাশ করেছে বিবিসি।

এ তালিকায় সাবেক মার্কিন ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামার পাশাপাশি ফুটবলে নারীদের সমতা নিয়ে কথা বলা স্পেনের নারী ফুটবলার আইতানো বনমাতি,এলজিবিটিকিউ অধিকারের জন্য লড়ে যাওয়া থাইল্যান্ডের নারী মাচা ফর্নসহ আরও যারা স্থান পেয়েছেন, তাদের মধ্যে আছেন- বাংলাদেশের জান্নাতুল ফেরদৌস; যিনি একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা, লেখিকা এবং প্রতিবন্ধীদের অধিকার রক্ষা আন্দোলন কর্মী।

পোড়া ক্ষত নিয়ে জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করে চলেছেন জান্নাতুল।১৯৯৭ সালে এক অগ্নি দুর্ঘটনায় পুড়ে গেছে তার দেহের ৬০ শতাংশ।

সে দুর্ঘটনায় বেঁচে যান জান্নাতুল। কিন্তু, তার মুখমন্ডল ও শরীরের ওপরের অংশ পুড়ে কুঁচকে বিকৃত হয়ে যায়। এই ক্ষত বয়ে বেড়ানোর শারীরিক এবং মানসিক সংগ্রামের মধ্যেও দৃড় মনোবল নিয়ে নতুন করে জীবনের পথ চলতে শুরু করেন তিনি।

জান্নাতুল ফেরদৌস মানবাধিকার সংস্থা ‘ভয়েস অ্যান্ড ভিউজ’ এর প্রতিষ্ঠাতা।  পোড়া ক্ষত নিয়ে বেঁচে থাকা নারীদের অধিকারের জন্য লড়াই করে এই সংস্থা।

বন্ধু-বান্ধব এবং আত্মীয় স্বজনের কাছে আইভী নামেও পরিচিত জান্নাতুল ফেরদৌস। তিনি পাঁচটি শর্ট ফিল্ম তৈরি করেছেন এবং তার তিনটি উপন্যাসও প্রকাশ হয়েছে। তাছাড়া,সমাজের প্রতিবন্ধীদের সচেতন করতে গল্প বলার ছলে তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করেন জান্নাতুল।

তিনি পড়াশুনাও করেছেন বিস্তর। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম,এ এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উন্নয়ন শিক্ষায় ডিগ্রি নিয়েছেন জান্নাতুল।

এছাড়া,জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি এবং বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট থেকে সোশ্যাল কমপ্লায়েন্সে ডিপ্লোমাও করেছেন।চলচ্চিত্র নির্মাণ ও ফটোগ্রাফি বিষয়ক কয়েকটি প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি করেছেন অ্যাপ্রিসিয়েশন কোর্স।

আন্তর্জাতিক

অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে আবার গম ও চাল আমদানি শুরু করেছে সরকার। আন্তর্জাতিক টেন্ডারের মাধ্যমে ৫ লাখ টন খাদ্যশস্য আমদানি করা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে দুই লাখ টন গম ও তিন লাখ টন চাল। প্রথম প্যাকেজের দ্বিতীয় চালানের গমবাহী জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছে। জাহাজটিতে গম রয়েছে ৫৫ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন।

এসব গমের সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ভারতের অ্যাগ্রোকর্পস। সরকার বেশির ভাগ সময় রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে গম আমদানি করলেও এবার গম আমদানি করেছে বুলগেরিয়া থেকে। বুধবার বিকাল পর্যন্ত জাহাজটি থেকে গম খালাস চলছিল। চট্টগ্রাম খাদ্য বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। তৃতীয় ধাপে চলতি মাসের শেষের দিকে চালের চালান আসবে বলে জানা গেছে।

খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, ৫ নভেম্বর ‘এমভি কনন’ নামে একটি জাহাজ ৫৫ হাজার ৮৬২ দশমিক ৭৫০ মেট্রিক টন গম নিয়ে বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছে। ৭ নভেম্বর অধিদপ্তরের প্রতিনিধি, মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধি ও আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকসহ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে জাহাজ থেকে আমদানি করা গমের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়। নমুনা সংক্রান্ত প্রতিবেদন ‘খাওয়ার উপযোগী’ পাওয়ার পর ৯ নভেম্বর থেকে গম খালাস প্রক্রিয়া শুরু হয়। আমদানি করা গমের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে খালাস হবে ৩৪ হাজার ৬৭৪ দশমিক ৫০১ মেট্রিক টন আর মোংলা বন্দরে খালাস হবে ২১ হাজার ৫৬ দশমিক ০৪২ মেট্রিক টন গম। বুধবার বিকাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দরে খালাস হয়েছে ১৬ হাজার ৩১৭ দশমিক ১৬৮ মেট্রিক টন। বাকিগুলো খালাস চলছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে খালাস শেষ হবে বলে আশা চট্টগ্রাম খাদ্য বিভাগের। খাদ্য মন্ত্রণালয় জি-টু-জি ও আন্তর্জাতিক টেন্ডারের আওতায় বিপুল পরিমাণ গম আমদানি করলেও তা খোলাবাজারে আসার সুযোগ নেই।

সংশ্লিষ্টরা জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম কমে এলেও এর প্রভাব পড়েনি দেশের বাজারে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরপরই অধিকাংশ গম আমদানি হচ্ছে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে। দেশের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে বর্তমানে ভালো মানের গম বিক্রি হচ্ছে মনপ্রতি ১ হাজার ৮০০ থেকে ১ হাজার ৯ টাকায়। অন্যদিকে মাঝারি ধাঁচের গমের দাম মনপ্রতি ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা। এতে দেশের পাইকারি বাজারেই গমের দাম পড়ছে কেজিপ্রতি ৫১ টাকা।

পাহাড়তলীর গমের আড়তদার কামরুল হাসান মহিউদ্দিন জানান, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পর থেকে গমের দাম বাড়তে শুরু করে। ইউক্রেন-রাশিয়া বিশ্বের অন্যতম গম রপ্তানিকারক দেশ। ইউক্রেন-রাশিয়ার বিকল্প হিসাবে প্রতিবেশী দেশ ভারতের গমের ওপর আমাদের নির্ভরশীলতা বেড়েছে। ভারত ছাড়া আমাদের দেশে গম আসে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও আর্জেন্টিনা থেকে। তবে সেসব দেশ থেকে গমের আমদানি খরচও বেশি। অন্যদিকে ভারতের গম কম আমিষযুক্ত। অস্ট্রেলিয়া-কানাডা ও আর্জেন্টিনার গম অধিক আমিষযুক্ত। ময়দা তৈরিতে এসব গম সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়।

চট্টগ্রাম চলাচল ও সংরক্ষণ কার্যালয়ের উপনিয়ন্ত্রক সুনীল দত্ত যুগান্তরকে জানান, নতুন করে আমদানি করা গমের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে খালাস হবে ৩৪ হাজার ৬৭৪ দশমিক ৫০১ মেট্রিক টন আর মোংলা বন্দরে ২১ হাজার ৫৬ দশমিক ০৪২ মেট্রিক টন। বুধবার বিকাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দরে খালাস হয়েছে ১৬ হাজার ৩১৭ মেট্রিক টন।

আন্তর্জাতিক

বিদ্রোহীদের সঙ্গে সংঘর্ষে টিকতে না পেরে জীবন বাঁচাতে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্য মিজোরামে আশ্রয় নিয়েছে মিয়ানমারের ৪৫ সেনা সদস্য। আশ্রয়ের খোঁজে ভারতে পালাচ্ছেন দেশটির সাধারণ নাগরিকরাও। আনন্দবাজার, হিন্দুস্থান টাইমস, আল আরাবিয়া ও আল জাজিরা।

মিজোরাম পুলিশ জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ৪৫ জন মিয়ানমারের সেনা সদস্য ভারতীয় ভূখণ্ডে ঢুকে আত্মসমর্পণ করেছেন। তাদের গ্রেফতার করে হেফাজতে নিয়েছে অসাম রাইফেলস।

মিজোরাম পুলিশ আরও জানায়, মঙ্গলবার ৪৩ জন মিয়ানমারের সেনা ভারতে ঢুকে পড়ে। বুধবার আরও দুইজন ঢুকে পড়েছে। বিদ্রোহীদের হামলা থেকে প্রাণ বাঁচাতে সীমান্ত পেরিয়ে তারা ভারতে ঢুকছে।

মিজোরামের চাম্পেই জেলা লাগোয়া সীমান্তের অদূরে মিয়ানমারের সেনার রিখাওদর ও খাওমাওয়ি ছাউনি দুটি সোমবার সন্ধ্যায় বিদ্রোহীরা দখল করে।

হাফ ডজন শহর, কয়েকশো গ্রাম, পুলিশ ও সেনার শতাধিক শিবিরের পর মঙ্গলবার মিয়ানমারের সেনাদের একটি অস্ত্রাগার দখলে নেয় বিদ্রোহী বাহিনী। শান প্রদেশের ওই অস্ত্রাগার থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও বিস্ফোরকের পাশাপাশি বিদ্রোহীদের যৌথ বাহিনী অন্তত ছয়টি ট্যাংক ও বেশ কয়েকটি সাঁজোয়া গাড়িও তাদের দখলে নেয়।

উত্তর মিয়ানমারে তুমুল যুদ্ধের পরে বিদ্রোহী বাহিনী মঙ্গলবার নামতু নদীর উত্তরে হেসেনভি শহর ও সেনাঘাঁটি দখল করেছে।

উত্তর মিয়ানমারের কুনলং, মনিক্যাট, নানবেং (লাশিও-টাংইয়ান রোডে) ও মোনেকো ছাড়া সীমান্তবর্তী অন্য কোনো সেনাঘাঁটি এখন সামরিক জান্তা সরকারের দখলে নেই। রাখাইন প্রদেশের সিতওয়ে শহরের দোরগোড়াতেও পৌঁছে গিয়েছে ‘ব্রাদারহুড অ্যালায়্যান্স’ বাহিনী। এই প্রদেশে রোহিঙ্গারা প্রতিনিয়ত নিপীড়নের শিকার হচ্ছে।

মিয়ানমারের শান ও সাগিয়াং প্রদেশে সাফল্যের পরে পশ্চিমের চিন এবং রাখাইন প্রদেশেও হামলা শুরু করেছে বিদ্রোহী গোষ্ঠী ‘তাঙ ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি’ (টিএনএলএ), ‘আরাকান আর্মি’ (এএ) এবং ‘মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মি’ (এমএনডিএএ)-র নয়া জোট ‘ব্রাদারহুড অ্যালায়্যান্স’। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে, পশ্চিম মিয়ানমারে সক্রিয় দুই বিদ্রোহী বাহিনী ‘চিন ন্যাশনাল আর্মি’ (সিএনএ) এবং চায়নাল্যান্ড ডিফেন্স ফোর্স (সিডিএফ), ‘কাচিন লিবারেশন ডিফেন্স ফোর্স’ (কেএলডিএফ), পিপল’স ডিফেন্স ফোর্স (পিডিএফ)। মায়ানমারের গণতন্ত্রপন্থি শক্তির স্বঘোষিত সরকার ‘ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট’, জান্তাবিরোধী রাজনৈতিক দল ‘শান স্টেট প্রোগ্রেস পার্টি’।

অক্টোবরের শেষ দিকে, মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা শুরু করে ‘অপারেশন-১০২৭’। ব্যাপক লড়াইয়ের পর, জান্তা নিয়ন্ত্রিত কয়েকটি শহরের দখলও নেয় সরকারবিরোধীরা। বলা হচ্ছে, ২০২১ সালে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জান্তা সরকার ক্ষমতা দখলের পর, এটিই দেশটির সরকারবিরোধীদের সবচেয়ে বড় প্রতিরোধ। এখনও হামলা-পালটা হামলায় উত্তপ্ত কিছু এলাকা।

জান্তা সরকারের ক্ষমতা দখলের পর প্রায় তিন বছর ধরেই উত্তপ্ত মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলো। বিদ্রোহী ও সেনাবাহিনীর সংঘর্ষ থেকে বাঁচতে এই সময়ে দেশটি থেকে মিজোরামে পালিয়েছেন ত্রিশ হাজারের বেশি নাগরিক।

আন্তর্জাতিক

ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমের বুকের ওপর রাজত্ব করছে ৭ লাখেরও বেশি ইসরাইলি দখলদার। এ হিসাবে ইসরাইলের মোট ৭০ লাখ জনসংখ্যার ১০ শতাংশই বসতি স্থাপনকারী। অধিকৃত পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে ১৫০টি বসতি ও ১২৮টি ঘাঁটিতে বর্তমানে বাস করছেন তারা।

বসতি স্থাপনকারীরা মূলত ইসরাইলের নাগরিক। আর ফিলিস্তিনের দুই অঞ্চলে তাদের আবাসস্থলের বেশিরভাগই সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ফিলিস্তিনিদের ব্যক্তিগত জমিতে নির্মাণ করা হয়েছে। পশ্চিম তীরের প্রায় ৪০ শতাংশ জমিই বর্তমানে বসতি স্থাপনকারীদের হাতে। তবে বসতিগুলো ইসরাইল সরকারের অনুমোদিত হলেও ঘাঁটিগুলো সরকারি কোনো অনুমোদন ছাড়াই নির্মাণ করা হয়েছে।

পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে অল্পসংখ্যক ইসরাইলি বাস করে এমন ঘাঁটি থেকে শুরু করে ৪০০ জন পর্যন্ত বাস করে এমন ঘাঁটিও রয়েছে।

ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারীদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশই আল্ট্রাঅর্থোডক্স ইহুদি। অনেকেই ধর্মীয় কারণে অধিকৃত অঞ্চলগুলোতে চলে আসে। আবার অনেকে তুলনামূলকভাবে জীবনযাত্রার কম ব্যয় আর সরকার কর্তৃক প্রদত্ত আর্থিক প্রণোদনার কারণে অঞ্চলগুলোতে চলে আসে।
সাম্প্রতিক সময়ে ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতা বেড়েছে।

ইসরাইলে গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর পশ্চিম তীরে ১৯৮টিরও বেশি হামলা চালিয়েছে তারা। ১ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।
ফিলিস্তিনে সর্বপ্রথম বসতি স্থাপন

১৯৬৭ সালের জুন মাসে ছয় দিনের যুদ্ধে পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেম ও গাজা উপত্যকা দখল করার পরপরই বসতি স্থাপন শুরু করে ইসরাইল। একই বছরের সেপ্টেম্বরে পশ্চিম তীরের হেব্রনে ইটজিয়ন ব্লক ছিল ইসরাইলিদের নির্মাণ করা প্রথম বসতি। বর্তমানে এই বসতিতে ৪০ হাজার মানুষ বাস করছেন।

প্রাচীনতম বসতির আরেকটি কেফার এটজিয়ন। প্রায় ১ হাজার ইসরাইলির বাসস্থান। আর পশ্চিম তীরে বৃহত্তম বসতি মোদি’ইন ইলিট। এতে প্রায় ৮২ হাজার ইহুদির বসবাস। যাদের বেশিরভাগই অতি-অর্থোডক্স ইহুদি।

বসতি স্থাপনকারীদের ইসরাইল সরকারের সমর্থন

বসতি স্থাপনকারীদের সরাসরি অর্থায়ন করে ইসরাইলের সরকার। পশ্চিম তীরের ৬০ শতাংশই সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করে ইসরাইল। এসব অঞ্চলে ফিলিস্তিনিদের নির্মাণ সীমাবদ্ধ, সে সম্পর্কে প্রতিবেদন ও নিরীক্ষণের জন্য বসতি স্থাপনকারীদের প্রতিবছর প্রায় ২০ মিলিয়ন শেকেল (৫ মিলিয়ন ইউএস ডলার) দেওয়া হয়। ইসরাইল সরকারের দেওয়া অর্থ পরিদর্শক নিয়োগ থেকে শুরু করে ড্রোন, আকাশ প্রতিরক্ষা, ট্যাবলেট ও যানবাহনসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে ব্যবহৃত হয়।

চলতি বছরের ৪ এপ্রিল ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ রাষ্ট্রীয় বাজেটে বসতি স্থাপনকারীদের অর্থায়নের পরিমাণ দ্বিগুণ করে ৪০ মিলিয়ন শেকেল (১০ মিলিয়ন ইউএস ডলার) করার নির্দেশ দেয়।

আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে ফিলিস্তিনে ইসরাইলের বসতি স্থাপন কি বৈধ?

পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে ইসরাইলের সব বসতি ও ঘাঁটি আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে অবৈধ বলে বিবেচিত হবে। এটি স্পষ্ট আন্তর্জাতিক মানবিক আইন চতুর্থ জেনেভা কনভেনশন লঙ্ঘন। চতুর্থ জেনেভা কনভেনশনে দেশগুলোকে তাদের দখলকৃত এলাকায় নিজেদের জনসংখ্যা স্থানান্তরে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

জাতিসংঘ একাধিক প্রস্তাব ও ভোটের মাধ্যমে ইসরাইলের দখলদারিত্বের নিন্দা জানিয়েছে। ২০১৬ সালে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের একটি রেজুলেশনে বসতি স্থাপনের ‘কোনো আইনি বৈধতা’ নেই বলে জানানো হয়েছে।