জাতীয়

সুনীল অর্থনীতি (ব্লু ইকোনমি) বাস্তবায়নে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সহযোগিতা চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের সমুদ্রসীমা থেকে প্রতিটি সম্পদ আহরণ করতে চাই।

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ভাইস প্রেসিডেন্ট ইংমিং ইয়াং মঙ্গলবার (০২ জুলাই) রাতে প্রধানমন্ত্রীর সংসদ ভবনস্থ কার্যালয়ে তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে এলে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান।

পরে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব মো. নাঈমুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।

কৃষিতে বাংলাদেশ ভালো করছে এবং দেশে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভালো গবেষক আছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এডিবির কাছে কৃষি গবেষণাও সহায়তা চান।

কৃষিপণ্য উৎপাদনের ওপর জোর দেওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবার খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের অগ্রাধিকার।

তিনি বলেন, আমরা কৃষিকে অর্থনীতির মেরুদণ্ড হিসেবে বিবেচনা করি। আমরা শিল্পায়নের পক্ষে, তবে কৃষিকে গুরুত্ব দিয়ে।

বাংলাদেশের জনগণের মাথা পিছু আয় এবং ক্রয়ক্ষমতা বাড়াতে হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বাংলাদেশকে আমাদের নিজস্ব পণ্যের বড় বাজার হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।

২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পর রপ্তানি পণ্যের বাজারে বাংলাদেশে সক্ষমতা শক্তিশালী করতে এডিবি-এর কাছে লজিস্টিক সহায়তাও চান শেখ হাসিনা।

২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত দেশে উন্নীত করতে সরকারের বিভিন্ন স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচির উল্লেখ করেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়া এবং হত দরিদ্র বিমোচন করা এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার।

এডিবি-কে নদীর ক্যাপিটাল ড্রেজিং এবং মেইনটেন্যান্স ড্রেজিংসহ সমন্বিত নদী ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশকে সহায়তা করতে বলেন শেখ হাসিনা।

এডিবির ভাইস প্রেসিডেন্ট ইংমিং ইয়াং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন।

তিনি বলেন, এডিবি নগর ও পানি নীতিতে তাদের সহায়তা মোট সহায়তার ১৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৬ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

ইংমিং ইয়াং বলেন, এডিবি বৃহত্তর পরিসরে কৃষি গবেষণায় সহযোগিতার পাশাপাশি স্বাস্থ্য প্রকল্প এবং ডিজিটাল প্রযুক্তিতে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে চায়।

তিনি বলেন, এডিবি তাদের নতুন পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় প্রাথমিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা দক্ষতা উন্নয়নে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে চায়।

এডিবির ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেন, এডিবি বিদ্যমান সম্পদের আরও ভালো ব্যবহার নিশ্চিত করে বাংলাদেশের জন্য একটি সিটি মাস্টার প্ল্যান তৈরি করতে চায়।

এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী তাদের প্রকল্পের জন্য বাংলাদেশের উপজেলাগুলোকেও বিবেচনা করতে বলেন।

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন এবং ইআরডি সচিব শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী।

জাতীয়

দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাধ্যমিকে নতুন শিক্ষাক্রমের ষাণ্মাসিক (অর্ধবার্ষিক) পরীক্ষার মূল্যায়ন শুরু হয়েছে। বুধবার ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত প্রথম পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে সদ্য চূড়ান্ত হওয়া নতুন মূল্যায়ন পদ্ধতি বাস্তবায়ন করা হবে। শিক্ষার্থীদের জন্য পরীক্ষার সময় নির্ধারণ করা হয় পাঁচ ঘণ্টা। এর মধ্যে আধা ঘণ্টা বিরতি রাখা হয়। তবে নির্ধারিত সময়ের দুই ঘণ্টা আগেই অধিকাংশ শিক্ষার্থীর পরীক্ষা শেষ হয়ে যায়।

এ ছাড়া পরীক্ষার আগের রাতেই অনলাইনে প্রশ্ন পেয়ে অনেক শিক্ষার্থী উত্তরপত্র লিখে নিয়ে যায়। আবার অনেকেই হলে গ্রুপ হয়ে আলোচনা করেই পরীক্ষা দিয়েছে। হলে মোবাইল ফোন নিয়ে প্রবেশ করে অনেক শিক্ষার্থী। পরীক্ষার হলে শিক্ষকরা অনেকটাই নীরব ভূমিকায় ছিলেন। অতিরিক্ত পরীক্ষার সময় থাকায় অনেক শিক্ষার্থী আড্ডা দিয়ে সময় পার করেছে। পরীক্ষার প্রথম দিন এমন পরিস্থিতি দেখা গেছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, মানসম্মত হয়নি শ্রেণিভিত্তিক প্রশ্নপত্র। তাই খাতায় অনেক সহজ বিষয়ে উত্তর দিতে হয়েছে। পরীক্ষাকে কঠিন মনে হয়নি। যদিও পরীক্ষার আগের রাতে ব্যাপক ভয়ের মধ্যে ছিল শিক্ষার্থীরা। পরীক্ষার কয়েকদিন আগে নতুন মূল্যায়ন পদ্ধতি চূড়ান্ত হওয়ায় উদ্বিগ্ন ছিলেন অভিভাবকরাও।

রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরেজমিন দেখা যায়, অনেক শিক্ষার্থী পরীক্ষার হল থেকে বের হয়ে বেশ উৎফুল­। তবে কেউ কেউ ছিল হতাশ।

ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী পিয়াল বলে, পরীক্ষার নিয়মকানুন ও প্রশ্নপত্রের ধরন নিয়ে খুবই টেনশনে ছিলাম। রাত জেগে অনেক পড়াশোনা করেছি। কিন্তু পরীক্ষার হলে গিয়ে একদম সহজ বিষয়ে পরীক্ষা দিয়েছি। সময়ও লেগেছে কম। মাত্র তিন ঘণ্টায় পরীক্ষা শেষ হয়েছে।

একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাখওয়াত বলে, পরীক্ষায় অনেক প্রশ্ন এসেছে, যা গভীরভাবে বিশ্লেষণ করে লিখতে হয়। অনেকেই বিষয়গুলো ধরতে পারে না। তবে নির্ধারিত সময়ের আগেই পরীক্ষা শেষ হয়ে গেছে।

বিএফ শাহীন স্কুল অ্যান্ড কলেজের জাহিন নামে নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বলে, আমরা যেসব কঠিন বিষয়ে পড়াশোনা করে এসেছি, ওইসব বিষয় পরীক্ষায় আসেনি। বইয়ের ৩০ শতাংশ প্রশ্ন আমাদের কমন পড়েছে। বাকি প্রশ্নগুলো ধারণা করে লিখতে হয়েছে। তবে এ ধরনের প্রশ্নের উত্তর কেউ ইচ্ছা করলে তিন ঘণ্টা পড়াশোনা করে দিতে পারবে। আরও মানসম্মত প্রশ্ন করা উচিত। অনেকেই পরীক্ষার আগেই প্রশ্ন পেয়েছে। তারা উত্তরপত্র মোবাইল ফোনে নিয়ে এসে পরীক্ষা দিয়েছে।

নুরুন নাহার নামে অষ্টম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, নতুন কারিকুলামের মূল্যায়ন পদ্ধতি কেবল চূড়ান্ত হয়েছে। এখনো বিষয়গুলো বুঝে উঠতে পারছি না। প্রথমদিন সন্তানরা গ্রুপভিত্তিক আলোচনা করে পরীক্ষা দিয়েছে। এটা ভালো হয়েছে নাকি খারাপ, বলা মুশকিল।

জেবল রহমান নামে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, আমার মেয়ে পরীক্ষার টেনশনে সারা রাত ঘুমায়নি। পরীক্ষায় কী ধরনের প্রশ্ন হবে, এতে কী কী লিখতে হবে, এ নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল সে। এই নতুন পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে তারা হতাশ বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমের মূল্যায়ন পদ্ধতিতে পরীক্ষার সময় আরও কমিয়ে আনা দরকার। প্রশ্নপত্রের মান আরও বাড়াতে হবে। অতিসহজ প্রশ্নে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে বলে জানান তিনি।

উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অধ্যাপক আ ন ম সামসুল আলম বলেন, নতুন মূল্যায়ন নিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা একধরনের মানসিক চাপে ছিল। প্রথম পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার পর কিছুটা স্বস্তি পেয়েছে তারা। প্রশ্নপত্রের গোপনীয়তা রক্ষায় শিক্ষকদের আরও সচেতন হতে হবে বলে জানান তিনি।

জানা যায়, এদিন সকাল ১০টা থেকে এ মূল্যায়ন কার্যক্রম শুরু হয়ে, বিরতিসহ চলে পাঁচ ঘণ্টা। প্রথম দিনে ষষ্ঠ শ্রেণিতে বাংলা, সপ্তমে ধর্ম, অষ্টমে জীবন ও জীবিকা এবং নবম শ্রেণিতে ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের মূল্যায়ন অনুষ্ঠিত হয়। এতে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির ২০ হাজার ৬৩৬ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৫০ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে।

দুই বছর ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ১ জুলাই জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটি নতুন মূল্যায়ন পদ্ধতির চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। তবে দেরিতে অনুমোদন হওয়ায় নতুন এ পদ্ধতি ষাণ্মাসিক মূল্যায়নে পুরোপুরি প্রয়োগ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছে এনসিটিবি সূত্র। এনসিটিবির প্রস্তুত করা খসড়া মূল্যায়ন পদ্ধতির মাধ্যমে মূলত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিটি বিষয় মূল্যায়নে সাতটি পর্যায় বা স্কেল রয়েছে। মূল্যায়নের পর্যায়গুলো হলো অনন্য, অর্জনমুখী, অগ্রগামী, সক্রিয়, অনুসন্ধানী, বিকাশমান ও প্রারম্ভিক। সবচেয়ে যে ভালো করবে, সে ‘অনন্য’ পাবে।

এনসিটিবির চেয়ারম্যান (রুটিন দায়িত্বে) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান বলেন, নতুন কারিকুলামের পরীক্ষার সময় পাঁচ ঘণ্টা রাখা হলেও সব শিক্ষার্থীর জন্য তা প্রযোজ্য নয়। অনেকে আগেই লিখে বের হয়ে যেতে পারবে। পরীক্ষার আগে শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন পাওয়াটা কোনো সমস্যা নয়। তবে যারা অনলাইনে উত্তরপত্র লিখে শিক্ষার্থীদের দিচ্ছে, এটাই সমস্যা। এখন আমরা প্রশ্নপত্র আরও গোপনীয়ভাবে প্রতিষ্ঠান প্রধানকে পাঠাব। তবে অনেক শিক্ষক তা না বুঝে ফেসবুকেও শেয়ার করছেন। এ ছাড়া কেউ হাতে পেলেই সে উত্তর করতে পারবে এমন না। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীকে দক্ষতা অর্জন করতেই হবে।

গত বছর দেশে নতুন শিক্ষাক্রম চালু করা হয়। এতে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়ন করা হয়। চলতি বছর বাস্তবায়ন করা হচ্ছে দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে। ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে, ২০২৬ সালে একাদশ এবং ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণিতে এ শিক্ষাক্রম ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করা হবে।

জাতীয়

সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা ব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে বুধবার দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাজধানীর শাহবাগ মোড়, জগন্নাথের শিক্ষার্থীরা তাঁতীবাজার মোড়, শেরেবাংলা কৃষির শিক্ষার্থীরা আগারগাঁও-খামারবাড়ি সড়ক, জাহাঙ্গীরনগরের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করেন। এতে এসব সড়ক-মহাসড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। চরম ভোগান্তির শিকার হন যাত্রীরা। ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ট্রেন থামিয়ে ঘণ্টাব্যাপী বিক্ষোভ করেন। একই দাবিতে এদিন রাজশাহী, বেগম রোকেয়া ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধন, পদযাত্রা ও বিক্ষোভ হয়েছে। শিক্ষার্থীরা কোটা ব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ সালে জারি করা পরিপত্র পুনর্বহালসহ চার দাবিতে আন্দোলন করছেন। আজও এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান কর্মকসূচি পালন করবেন তারা। ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

শাহবাগ মোড় : বেলা আড়াইটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সেন্ট্রাল লাইব্রেরির সামনে থেকে মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বর-টিএসসি-হাইকোর্ট-মৎস্যভবন হয়ে বিকাল পৌনে ৪টায় শাহবাগ মোড়ে যায়। শিক্ষার্থীরা সেখানে অবস্থান নিয়ে ‘সংবিধানের/মুক্তিযুদ্ধের মূলকথা, সুযোগের সমতা’, ‘দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ,’ ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’, ‘কোটা প্রথা, বাতিল চাই বাতিল চাই’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন। এতে শাহবাগ মোড় অচল হয়ে পড়ে। দেড় ঘণ্টা পর অবরোধ তুলে নিয়ে কর্মসূচি সমাপ্ত করলে যান চলাচল ফের স্বাভাবিক হয়।

তাঁতীবাজার মোড় অবরোধ : বেলা সাড়ে ৩টায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা তাঁতীবাজার মোড় অবরোধ করেন। এ সময় তারা ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’, ‘জেগেছে জেগেছে, ছাত্র সমাজ জেগেছে’, ‘রক্তের বন্যায়, ভেসে যাবে অন্যায়’, ‘আঠারোর হাতিয়ার গর্জে উঠো আরেকবার’, কোটা প্রথা নিপাত চাই, মেধাবীরা মুক্তি পাক’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন। ১ ঘণ্টা পর তারা অবরোধ তুলে নিলে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি কবি নজরুল কলেজ ও সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থী জসিম উদ্দিন বলেন, আন্দোলন যতদিন না সফল হবে, ততদিন আমরা ঘরে ফিরব না।

আগারগাঁও-খামারবাড়ি সড়ক : রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে দুপুর ১২টায় শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘আমার দেশ আমার মা, বৈষম্য মানি না; কোটা বৈষম্য দূর কর, নইলে বুকে গুলি কর; সারা বাংলা খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে; ইত্যাদি স্লোগান দেন। পরে আগারগাঁও-খামারবাড়ি সড়ক অবরোধ করেন শতাধিক শিক্ষার্থী। এতে সড়কে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। পরে দুপুর ১টার দিকে শিক্ষার্থীরা সড়ক ছেড়ে দিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক : ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক ২ ঘণ্টা (বেলা ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত) ধরে অবরোধ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। সেখানে বিক্ষোভ সমাবেশে জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের যুগ্ম-সম্পাদক ওমর ফারুক বান্না বলেন, বাংলাদেশের মেধাকে ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য কোটা পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরকার বৈষম্যমূলক আচরণ করছে। আমরা কখনোই এই বৈষম্য মেনে নেব না। এদিকে অবরোধের কারণে মহাসড়কের দুই পাশে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ঢাকাগামী লেনে আমিন বাজার পর্যন্ত এবং অপর লেনে চন্দ্রা পর্যন্ত যানজট দেখা দেয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন কয়েক হাজার যাত্রী।

অবরোধ চলাকালে নেতাকর্মীসহ আটকা পড়েন ঢাকা-১৯ আসনের সংসদ-সদস্য মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। এ সময় তার অনুসারীরা গাড়ি ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ জানান। তবে শিক্ষার্থীরা গাড়ি ছাড়তে অস্বীকৃতি জানান। এ সময় তিনি কিছুক্ষণ ঢাকা-আরিচা মহাসড়কসংলগ্ন সাভারের কেন্দ্রীয় গো প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে অবস্থান করেন। এরপরেও শিক্ষার্থীরা কোনোভাবেই গাড়ি যেতে না দেওয়ায় একপর্যায়ে তিনি সিএন্ডবি পর্যন্ত হেঁটে গিয়ে আরেকটি গাড়িতে হেমায়েতপুরের উদ্দেশে যাত্রা করেন।

ট্রেন থামিয়ে বিক্ষোভ : বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থীরা দুই দফায় বিক্ষোভ মিছিল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আবদুল জব্বার মোড়ে রেললাইন অবরোধ করেন। ওই সময় ১ ঘণ্টা ট্রেন অবরোধ করে রাখা হয়। দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চের সামনে সমবেত হন শিক্ষার্থীরা। পরে সেখান থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেআর মার্কেট হয়ে মুক্তমঞ্চে এসে শেষ হয়। সেখানে একটি প্রতিবাদ সভা করেন শিক্ষার্থীরা। পরে সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবদুল জব্বার মোড় পর্যন্ত দ্বিতীয় দফায় বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। ওই সময় ঢাকা থেকে মোহনগঞ্জগামী মহুয়া কমিউটার ট্রেন আটকে রেখে বিক্ষোভ করেন তারা। প্রায় ১ ঘণ্টা পর দুপুর ২টা ২০ মিনিটে তারা রেললাইন অবরোধ তুলে নেন। পরে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।

ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক : কাফনের কাপড় পরে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন। ববির গেটসংলগ্ন মহাসড়ক অবরোধ করে বেলা ১১টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত অবস্থান নেন তারা। এ সময় মহাসড়কের দুই পাশে কয়েকশ যানবাহন আটকা পড়ে। নগরীর রূপাতলী বাস টার্মিনালের কাঁঠালতলা এলাকা থেকে ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার জিরো পয়েন্ট তীব্র যানজট দেখা দেয়। চরম ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। অনেকে ব্যাগ-বস্তা মাথায় নিয়ে স্ত্রী-সন্তানসহ কয়েক কিলোমিটার হেঁটে গন্তব্যে রওয়ানা দেন। পরে শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক ছাড়লে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। পটুয়াখালীর ইয়াসিন হাওলাদার বলেন, স্ত্রীকে ডাক্তার দেখাতে বরিশালে এসে মহাবিপদে পড়েছি। বাসে ২ ঘণ্টা বসে থেকে বাধ্য হয়ে হাঁটা শুরু করেছি। আমার অসুস্থ স্ত্রী আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছে।

জাতীয়

শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেছেন, সবার জীবনে শুদ্ধাচার গুরুত্বপূর্ণ। তবে নৈতিকতা বাদ দিয়ে শুদ্ধাচার সম্ভব নয়। শুদ্ধাচার চলমান থাকলে জীবনে পথচলা অনেক সহজ হয়। অন্যায় ও অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখে, বিবেককে জাগ্রত রাখে।

সোমবার রাজধানীর মতিঝিলে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন শিল্পমন্ত্রী।

মন্ত্রী বলেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কর্তৃক প্রবর্তিত এপিএ ও শুদ্ধাচার পুরস্কার প্রদান কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য গাইডলাইন স্বরূপ। এর মাধ্যমে তারা সঠিক সময়ে সঠিক কাজটি করে মন্ত্রণালয় তথা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

তিনি বলেন, শুদ্ধাচার পুরস্কার প্রবর্তনের ফলে সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে। যারা আগামীতে রাষ্ট্র পরিচালনা ও সেবায় নিযুক্ত হবেন তারা এর মাধ্যমে অনুপ্রাণিত হবেন। মন্ত্রী এসময় এপিএ ও শুদ্ধাচার পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান এবং সততা ও কর্মদক্ষতার মাধ্যমে শিল্প মন্ত্রণালয়কে এগিয়ে নিতে উপস্থিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আহবান জানান।

এদিন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এর আওতাধীন দপ্তর-সংস্থাসমূহের ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) স্বাক্ষর এবং ২০২২-২০২৩ ও ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য শুদ্ধাচার পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা।

উল্লেখ্য, শিল্প মন্ত্রণালয়ের ভিশন, মিশন, কৌশলগত উদ্দেশ্যসমূহ এবং কার্যাবলীর আলোকে মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ১৩টি দপ্তর-সংস্থা তাদের নিজস্ব ভিশন, মিশন কৌশলগত উদ্দেশ্য, কার্যাবলী, বাজেট বরাদ্দ ইত্যাদি বিবেচনা করে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি প্রণয়ন করা হয়।

জাতীয়

সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য দক্ষিণ কোরিয়া বাংলাদেশকে ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণ প্রদান করবে।

এলক্ষ্যে আজ বাংলাদেশ সরকার এবং কোরিয়ার এক্সিম ব্যাংকের মধ্যে একটি ঋণচুক্ষি স্বাক্ষর হয়েছে। আজ ঢাকায় অনুষ্ঠিত ঋণচুক্তিতে বাংলাদেশের পক্ষে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মিরানা মাহরুখ এবং কোরীয় এক্সিম ব্যাংকের পক্ষে প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক হং কিয়েন স্বাক্ষর করেন।

সোমবার ইআরডির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি ‘সেকেন্ড স্ট্রেনেথিং সোশ্যাল রেজিলিয়েন্স প্রোগ্রাম, সাবপ্রোগ্রাম-১’ প্রকল্প বাস্তবায়নে এই অর্থ ব্যয় করা হবে। এই কর্মসূচির উদ্দেশ্য হলো-বাংলাদেশের সামাজিক স্থিতিস্থাপকতা জোরদার এবং সুরক্ষার অন্তর্ভূক্তি ও প্রতিক্রিয়াশীলতা বৃদ্ধি করা। উল্লেখ্য, কোরিয়া সরকার ১৯৯৩ সাল থেকে কোরীয় এক্সিম ব্যাংকের মাধ্যমে নমনীয় সুদে বাংলাদেশকে বিভিন্ন অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্পে ঋণ সহায়তা প্রদান করে আসছে।

জাতীয়

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বোর্ড ওয়াশিংটনে সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে বাংলাদেশের ঋণের তৃতীয় কিস্তির ১১১ কোটি ৫০ লাখ (১ দশমিক ১১৫ বিলিয়ন) ডলার অনুমোদন করেছে। আগামী দুই দিনের মধ্যে ঋণের অর্থ ছাড় করা হবে।

তৃতীয় কিস্তির ঋণের অর্থ পাওয়ার মাধ্যমে আইএমএফ থেকে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের তিন কিস্তিতে মোট ২২৭ কোটি ৩৩ লাখ (২ দশমিক ২৭ বিলিয়ন) মার্কিন ডলার পাবে বাংলাদেশ।

সোমবার (২৪ জুন) ওয়াশিংটনের আইএমএফ বোর্ড সভায় এ ঋণ অনুমোদন করে। এদিন সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশ আইএমএফের কাছে ঋণ চায়। ছয় মাস পর সংস্থাটি গত ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ২০২৬ সাল পর্যন্ত সাড়ে তিন বছরে মোট সাত কিস্তিতে এ অর্থ পাওয়া যাবে।

ঋণের প্রথম কিস্তির ৬৮ কোটি ২০ লাখ ডলার ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি পায় বাংলাদেশ। এরপর ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পায় ২০২৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর। আর আজ সোমবার ঋণের তৃতীয় কিস্তির ১১১ কোটি ৫০ লাখ ডলার অনুমোদন করলো আইএমএফ এর বোর্ড সভা। দুই দিনের মধ্যেই এ অর্থ ছাড় হবে।

জাতীয়

সরকারি চাকরিজীবীদের আচরণ বিধিমালা প্রণয়নের কাজ ৬ বছর ধরে ঝুলে আছে। দীর্ঘ সময়ে এ বিষয়ে দুবার প্রশাসনিক উন্নয়নসংক্রান্ত সচিব কমিটি, দুবার আইন মন্ত্রণালয় এবং একবার সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) মত নেওয়া হয়। এছাড়া বিধিমালাটির ওপর সংশ্লিষ্টদের মতামতও নেওয়া হয়। এভাবে দিনের পর দিন শুধু ঘষামাজার মধ্য দিয়ে বিষয়টি ঘুরপাক খাচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মহিদুল ইসলাম বলেন, সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা প্রণয়নের কাজ প্রায় চূড়ান্ত । শিগগিরই গেজেট প্রকাশ হবে। ইতোমধ্যে আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং শেষ। তবে অতিরিক্ত সচিব বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব খসড়া বিধিমালা আরেকবার দেখতে চেয়েছেন, বুঝতে চেয়েছেন কী জারি করা হচ্ছে। সেই কারণে একটু সময় লাগছে। শিগগিরই জারি হবে।

সরকারি চাকরি আইনের গেজেট প্রকাশিত হয় ২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর। আইনটি কার্যকর করা হয় ২০১৯ সালের ১ অক্টোবর থেকে। এর আগে অধ্যাদেশ ও রাষ্ট্রপতির আদেশ সময়ে সময়ে বিভিন্ন বিধিমালা জারি করে প্রশাসন পরিচালনা করা হয়েছে। সেহেতু এই আইন কার্যকর করার পর প্রশাসন পরিচালনায় আগের প্রায় সব বিধিমালা, নীতিমালা হালনাগাদ করা অপরিহার্য হয়ে পড়ে। এই আইনের অধীনে বেশ কয়েকটি বিধিমালা ইতোমধ্যে জারিও করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। কিন্তু অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য আচরণ বিধিমালা প্রণয়নে।

সময়ক্ষেপণের বিষয়টিকে অবহেলা ও গাফিলতি হিসাবে দেখছেন সাবেক সচিবরা। তারা বলছেন, সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা প্রণয়নে সরকারের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে এবং কর্মকর্তারা সেই সুযোগ নিচ্ছেন। তারা বলেন, একটি বিধিমালা তৈরি করতে গিয়ে দীর্ঘ ছয় বছর লাগার পরও সংশ্লিষ্ট কারও কাছে এর কারণ জানতে চাওয়া হয়নি। আদৌ এই বিধিমালা প্রণয়ন হবে কি না সে বিষয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে।

আবার সেন্ট্রাল সম্পদ বিবরণী ব্যবস্থাপনা সিস্টেম তৈরির জন্য গত বছর ১৭ অক্টোবর উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এ পদ্ধতিতে সরকারি কর্মচারীদের সঙ্গে সরকারি প্রতিষ্ঠানে ঠিকাদারি ব্যবসায় নিয়োজিত ব্যবসায়ীদের সম্পদের আয়-ব্যয় নেওয়ার বিধান করার কথা। সেন্ট্রাল সম্পদ হিসাব বিবরণী ব্যবস্থাপনা সিস্টেমের ধারণাপত্র তৈরির জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব এবং বর্তমান মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বিভাগের সচিব ড. ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে আহ্বায়ক করে কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি গঠনের কয়েকদিনের মধ্যে তাকে সচিব হিসাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়। তিনি চলে যাওয়ার পর সেন্ট্রাল সম্পদ হিসাব বিবরণী সিস্টেমের ধারণাপত্র তৈরির কাজ মুখ থুবড়ে পড়ে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

সংশ্লিষ্ট যুগ্মসচিব মো. শামীম সোহেল বলেন, বিধিমালা প্রণয়নের বিষয়টি আমি দেখতাম না। বিধিমালা তৈরির বিষয়টি দেখতেন যুগ্মসচিব সফিউল আরিফ। তবে সম্প্রতি তাকে বদলি করে দেওয়ায় এখন আমাকে দেখতে হচ্ছে। কিন্তু আচরণ বিধিমালা কী অবস্থায় আছে আমার জানা নেই।

জানতে চাইলে সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান বলেন, সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা প্রণয়ন করতে গিয়ে ৬ বছর সময় ব্যয় একটি অবহেলা। এটা দুঃখজনক। যত দ্রুত সম্ভব আচরণ বিধিমালা প্রণয়ন করা জরুরি। তাছাড়া ১৯৭৯ সালের আচরণ বিধিমালার বিধান বলে কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব চাওয়ার বা তা জমা দেওয়ার বিধান তো আছেই। তিনি আরও বলেন, সম্পদ হ্রাস বৃদ্ধির বিধান বিধিমালায় থাকা জরুরি। বরং প্রতিবছর সরকারকে জানানো উচিত কার কী পরিমাণ সম্পদ হ্রাস-বৃদ্ধি হয়েছে।

জাতীয়

কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে দীর্ঘদিন বন্দি থাকার পর জামিনে মুক্তি পেয়েছেন নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়া। সোমবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান। জেল সুপার আবদুল্লাহ আল মামুন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় পাপিয়াকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। জামিনের সব কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শেষে কারামুক্ত করা হয় তাকে।

এর আগে, কাশিমপুর কারাগারে ছিলেন পাপিয়া। সেখানে এক নারী বন্দির ওপর নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। ২০২৩ সালের ৩ জুলাই তাকে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগার থেকে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করা হয়।

২০২০ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে জাল টাকা বহন এবং অবৈধ টাকা পাচারের অভিযোগে পাপিয়াসহ চার জনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। এরপর তাদের কাছ থেকে ৭টি পাসপোর্ট, ২ লাখ ১২ হাজার ২৭০ টাকা, ২৫ হাজার ৬০০ জাল টাকা, ৩১০ ভারতীয় রুপি, ৪২০ শ্রীলঙ্কান মুদ্রা, ১১ হাজার ৯১ মার্কিন ডলার এবং ৭টি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। ওই বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি পাপিয়ার ইন্দিরা রোডের বাসায় অভিযান চালিয়ে একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন, ২০ রাউন্ড গুলি, পাঁচ বোতল বিদেশি মদ, ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা, পাঁচটি পাসপোর্ট, তিনটি চেক, বেশ কিছু বিদেশি মুদ্রা ও বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি এটিএম কার্ড জব্দ করা হয়।

এই ঘটনায় পাপিয়া ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে শেরেবাংলা নগর থানায় মাদক ও অস্ত্র মামলা, গুলশান থানায় মানি লন্ডারিংয়ের মামলা, বিমানবন্দর থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে (জাল টাকার) মামলা এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে দুদক। ২০২১ সালের ২৭ ডিসেম্বর মানিলন্ডারিং আইনের মামলায় পাপিয়াসহ পাঁচ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন সিআইডি পুলিশের পরিদর্শক ইব্রাহীম হোসেন।

জাতীয়

সেনাবাহিনীর জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান নবনিযুক্ত সেনাবাহিনী প্রধান হিসেবে জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদের নিকট হতে আজ দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন।

পরবর্তীতে, গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে নবনিযুক্ত সেনাবাহিনী প্রধানকে ‘জেনারেল র‌্যাঙ্ক ব্যাজ’ পরিয়ে দেন নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম নাজমুল হাসান ও বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন।

পরে তিনি বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিনের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এসময় রাষ্ট্রপতি নবনিযুক্ত সেনাবাহিনী প্রধানকে দায়িত্বভার গ্রহণ করার জন্য অভিনন্দন জানান এবং তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

উল্লেখ্য, গত ১১ জুন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে ২৩ জুন অপরাহ্ন থেকে লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে ‘জেনারেল’ পদে পদোন্নতি প্রদানপূবক পরবর্তী তিন বছরের জন্য সেনাবাহিনী প্রধান হিসেবে নিয়োগ আদেশ জারি করা হয়।

নবনিযুক্ত সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ১৯৮৫ সালের ২০ ডিসেম্বর ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সদস্য হিসেবে ১৩তম দীর্ঘমেয়াদি কোর্সের সাথে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন।

জাতীয়
পুলিশে বড় ধরনের রদবদল করেছে সরকার। তিনটি পৃথক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে পুলিশ ক্যাডারের ৪০ জন কর্মকর্তাকে বদলি-পদায়ন করা হয়েছে। এ ছাড়া পৃথক দুটি প্রজ্ঞাপনে ১৫ জন পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) ও একজন পুলিশ পরিদর্শককে (সশস্ত্র) সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। গতকাল রবিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পুলিশ-১ শাখা থেকে এসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজি সুপার নিউমারারি) কৃষ্ণ পদ রায়কে ঢাকায় পুলিশ সদর দপ্তরে পদায়ন করা হয়েছে। বদলি হওয়া অন্য কর্মকর্তাদের মধ্যে ৯ জন উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (ডিআইজি), ১৫ জন অতিরিক্ত ডিআইজি ও ১৫ জন পুলিশ সুপার (এসপি) পদমর্যাদার কর্মকর্তা।

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ডিআইজি ইলিয়াছ শরিফকে বরিশাল রেঞ্জে, মেট্রো রেলের ডিআইজি সাইফুল ইসলামকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) পুলিশ কমিশনার, পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার খুলনার কমান্ড্যান্ট নিশারুল আরিফকে পুলিশ সদর দপ্তরে বদলি করা হয়েছে। একই আদেশে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মুহা. আশরাফুজ্জামানকে পুলিশ সদর দপ্তরে, আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) মোহাম্মদ আব্দুল্লাহীল বাকীকে পুলিশ সদর দপ্তরে, হাইওয়ে পুলিশের ডিআইজি মাহবুবুর রহমানকে মেট্রো রেলের ডিআইজি, পুলিশ সদর দপ্তরের এস এম মোস্তাক আহমেদ খানকে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার, বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি জামিল হাসানকে হাইওয়ে পুলিশের ডিআইজি ও এপিবিএনের ডিআইজি মোল্যা নজরুল ইসলামকে অপরাধ তদন্ত বিভাগে বদলি করা হয়েছে।

১৫ অতিরিক্ত ডিআইজির দপ্তর বদল : আরেকটি প্রজ্ঞাপনে সিএমপির উপকমিশনার আব্দুল ওয়ারিশকে সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার, টাঙ্গাইল জেলা এসপি সরকার মোহাম্মদ কায়সারকে এসবির অতিরিক্ত ডিআইজি, ডিএমপির উপপুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেনকে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার, কুষ্টিয়া জেলার এসপি এ এইচ এম আব্দুর রকিবকে এসবির অতিরিক্ত ডিআইজি, ডিএমপির উপকমিশনার মোহাম্মদ আনিসুর রহমানকে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার, ডিএমপির উপকমিশনার এ বি এম মাসুদ হোসেনকে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার, ডিএমপির উপকমিশনার শহীদুল্লাহকে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার, নৌ পুলিশ খুলনা অঞ্চলের এসপি মোহাম্মদ শরিফুর রহমানকে অতিরিক্ত ডিআইজি ময়মনসিংহ রেঞ্জ, সিএমপির উপকমিশনার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানকে চট্টগ্রাম রেঞ্জে, বগুড়ার এসপি সুদীপ কুমার চক্রবর্তীকে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার, যশোরের এসপি প্রলয় কুমার জোয়ারদারকে পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি, ডিএমপির উপকমিশনার আসমা সিদ্দিকা মিলিকে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার, পাবনা জেলা এসপি আকবর আলী মুন্সীকে গাজীপুর মহানগরীর উপপুলিশ কমিশনার, রংপুর জেলা এসপি ফেরদৌস আলী চৌধুরীকে সিএমপির উপকমিশনার ও সুনামগঞ্জ জেলা এসপি মোহাম্মদ এহসান শাহকে সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার পদে বদলি ও পদায়ন করা হয়েছে। তাঁরা সবাই অতিরিক্ত ডিআইজি পদোন্নতিপ্রাপ্ত।

১৫ এসপিকে বদলি : ডিএমপির উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) শাহজাহানকে রংপুর জেলার এসপি, ডিএমপির ডিসি মুহাম্মদ আলমগীর হোসেনকে কুষ্টিয়া জেলার এসপি, কুমিল্লার এসপি আব্দুল মান্নানকে সিলেট জেলার এসপি পদে বদলি করা হয়েছে। এ ছাড়া সিলেটের এসপি মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল-মামুনকে ডিএমপির উপকমিশনার, পটুয়াখালী জেলার এসপি সাইদুল ইসলামকে কুমিল্লা জেলার এসপি, বরগুনার এসপি আব্দুস সালামকে পটুয়াখালী জেলার এসপি, পিবিআইয়ের এসপি রাফিউল আলমকে বরগুনা জেলার এসপি, ফেনীর এসপি জাকির হাসানকে বগুড়া জেলার এসপি, ডিএমপির উপপুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ মনিরুল ইসলামকে ফেনী জেলার এসপি, ডিএমপির উপপুলিশ কমিশনার আ. আহাদকে পাবনা জেলার এসপি এবং নীলফামারীর এসপি গোলাম সবুরকে টাঙ্গাইল জেলার এসপি করা হয়েছে।

পিবিআইয়ের এসপি মকবুল হোসেনকে নীলফামারী জেলার এসপি, মাদারীপুরের এসপি মাসুদ আলমকে যশোর জেলার এসপি, পুলিশের বিশেষ শাখার এসপি মোহাম্মদ শফিউর রহমানকে মাদারীপুর জেলার এসপি এবং পুলিশ সদর দপ্তরের (প্রেষণে এনটিএমসি ঢাকায় কর্মরত) এসপি এম এন মোর্শেদকে সুনামগঞ্জ জেলার এসপি পদে পদায়ন করা হয়েছে।

১৬ এএসপি : ১৬ পুলিশ পরিদর্শককে এএসপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার পর পুলিশ অধিদপ্তরে ন্যস্ত করা হয়েছে। এসব কর্মকর্তা যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব বরাবর পদোন্নতিপ্রাপ্ত পদে যোগদানপত্র পাঠাবেন।