জাতীয়
জাতীয়

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারকে খুনের উদ্দেশে অপহরণের মামলায় গ্রেফতার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।

রোববার রিমান্ড শেষে তাকে আদালতে হাজির করা হয়।এরপর মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের ওয়ারী জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মাহফুজুর রহমান। আবেদনের প্রেক্ষিতে ঢাকার একটি মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (অপরাধ, তথ্য ও প্রসিকিউশন) আনিসুর রহমান গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে গত ১১ জুন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রাজধানীর ধানমন্ডি থেকে মিন্টুকে ডিবি পুলিশ আটক করে।ডিবি কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। ১৩ জুন মিন্টুকে আদালতে হাজির করে ডিবি পুলিশ। এরপর সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের ওয়ারী জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মাহফুজুর রহমান। অপরদিকে আসামিপক্ষে রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে শুনানি করেন আইনজীবীরা।উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেনের আদালত মিন্টুর ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড শুনানিতে আদালতকে মিন্টু বলেন, ‘আমি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। এমপি মনোনয়ন চাওয়াই আমার অপরাধ।’

মিন্টুর আগে তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবুকে আটক করে ডিবি পুলিশ।গত ৬ জুন রাতে ঝিনাইদহ শহরের আদর্শপাড়া এলাকা থেকে বাবুকে আটক করে ঢাকার ডিবির একটি দল। পরে ৯ জুন বাবুকে আদালতে হাজির করে পুলিশ।তাকে সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।রিমান্ড চলাকালীন আনার হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিতে রাজি হন বাবু। তারপর আদালত বাবুর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেন।এরপর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।বাবুকে জিজ্ঞাসাবাদেই আনার হত্যার নেপথ্যে মিন্টুর নাম আসে।

এর আগে গত ২৩ মে সৈয়দ আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, ফয়সাল আলী সাজী ওরফে তানভীর ভূঁইয়া ও সেলেস্তি রহমানকে এ মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। দুই দফায় তাদের ১৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। তারা তিনজনই ঘটনার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। বর্তমানে তারা কারাগারে আটক রয়েছেন।

উল্লেখ্য, এমপি আনার ১২ মে ভারতে যান। পরদিন ১৩ মে কলকাতার নিউটাউন এলাকার সঞ্জীবা গার্ডেনের একটি ফ্ল্যাটে খুন হন তিনি। তার শরীরের হাড় থেকে মাংস আলাদা করে টুকরো টুকরো করে ফেলা হয় সঞ্জীবা গার্ডেনের ফ্ল্যাটের সেপটিক ট্যাংকে। আর হাড় ফেলা হয় খালে। তবে ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে ২২ মে।

ওইদিন রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন (২৪) অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা করেন। দুই দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্তে এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত হিসাবে এ পর্যন্ত ১২ জনের নাম বেরিয়ে এসেছে। গ্রেফতার হয়েছেন সাত জন। তারা হলেন-বাংলাদেশে গ্রেফতার শিমুল ভূঁইয়া, তানভীর, সেলেস্তি, বাবু ও মিন্টু। এদের মধ্যে মিন্টু ছাড়া অন্যরা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এছাড়া ভারতে গ্রেফতার আছে সিয়াম ও কসাই জাহিদ। আর তিনজনের নাম এসেছে, যারা হত্যাকাণ্ডের সরাসরি জড়িত নয়। তবে আর্থিক লেনদেনের তারা ব্যবহৃত হতে পারে বলে ডিবির সন্দেহ। হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড আক্তারুজ্জামান শাহীন যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে গেছেন। এছাড়া পলাতক আছেন মোস্তাফিজ ও ফয়সাল।

জাতীয়

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সমুদ্রসীমায় সম্প্রতি গোলাগুলির ঘটনার পর সেন্ট মার্টিন দ্বীপের নিরাপত্তা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানারকম কথা বলা হচ্ছে। বিষয়টিকে গুজব আখ্যা দিয়ে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) সকলকে এ ধরনের গুজবে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে।

রোববার সন্ধ্যায় এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানিয়েছে আইএসপিআর। এতে বলা হয়, মিয়ানমারে চলমান অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষের প্রেক্ষিতে মিয়ানমার সামরিক বাহিনী রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে যৌথ অপারেশন্স পরিচালনা করছে। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী এবং আরাকান আর্মির এই সংঘর্ষের কারণে নাফ নদী ও নদী সংলগ্ন মোহনা এলাকায় বাংলাদেশি বোটের ওপর অনাকাঙ্খিত গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে গত ১২ জুন প্রতিবাদ জানায়। এরই ধারাবাহিকতায় মিয়ানমার নৌবাহিনী সেন্ট মার্টিন দ্বীপের অদূরে মিয়ানমারের সমুদ্রসীমায় এবং নাফ নদীর মিয়ানমার সীমানায় অবস্থান করা মিয়ানমারের দিকে আরাকান আর্মির অবস্থান লক্ষ্য করে গোলাবর্ষণ করছে। একই সাথে আরাকান আর্মিও মিয়ানমার নৌবাহিনীর জাহাজ ও বোট লক্ষ্য করে গোলাবর্ষণ করছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বর্তমানে মিয়ানমার সীমান্তে মিয়ানমার নৌবাহিনীর একাধিক যুদ্ধজাহাজ অপারেশন্স পরিচালনা করছে। মিয়ানমার নৌবাহিনী সেন্ট মার্টিনের অদূরে মিয়ানমারের সমুদ্রসীমায় অবস্থানের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে অবহিত করছে।

মিয়ানমারের চলমান অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষ সেন্ট মার্টিনের নিকটবর্তী হওয়ায় ওই সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে সোশ্যাল মিডিয়ায় সেন্ট মার্টিনের নিরাপত্তা নিয়ে বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী মহল থেকে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। সকলকে এ ধরনের গুজবে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো।

উল্লেখ্য, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষটি মিয়ানমারের মূল ভূখণ্ড এবং তৎসংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় চলমান রয়েছে। সেন্ট মার্টিন দ্বীপের সন্নিকটে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ডের একাধিক জাহাজ মিয়ানমারের জাহাজের গতিবিধি পর্যবেক্ষণসহ বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় থেকে নিয়মিত টহল পরিচালনা করছে।

জাতীয়

সরকারি অফিস ছুটি হয়েছে। বেসরকারি পর্যায়ের বেশির ভাগ অফিসও ছুটি হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও বন্ধ হয়ে গেছে। এখন আপনজনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে ঘরমুখো মানুষের স্রোত। কেউ যাচ্ছেন সড়কপথে, কেউ ট্রেনে এবং কেউবা যাচ্ছেন লঞ্চে। সরকারের নানা তৎপরতায় বড় ধরনের ভোগান্তি ছাড়াই ট্রেনে বাড়ি ফিরছে মানুষ। লঞ্চযাত্রায়ও তেমন ভোগান্তি নেই। তবে সড়কপথে যানজটে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে বাড়িফেরা মানুষ। পাশাপাশি বাসের অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ে যাত্রীর অসন্তোষ প্রকাশ করতে দেখা গেছে।

ট্রেনের অগ্রিম টিকিট কাটা যাত্রীরা বুধবার থেকে যাত্রা শুরু করেছেন। বৃহস্পতিবার ছিল ট্রেনযাত্রার দ্বিতীয় দিন। প্রথম দিন অধিকাংশ ট্রেন বিলম্বে চলাচল করলেও দ্বিতীয় দিন সময় অনুযায়ী চলাচল করেছে। বৃহস্পতিবার বিকালে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন পরিদর্শন করেছেন রেলপথমন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিমসহ রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

বৃহস্পতিবার সরেজমিন কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ঘুরে দেখা যায় ঈদযাত্রার দ্বিতীয় দিন প্ল্যাটফরম ও স্টেশনে উপচে পড়া ভিড়। বিনা টিকিট রোধে স্টেশনে প্রবেশের ক্ষেত্রে তিন স্তরবিশিষ্ট চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। তৈরি করা হয়েছে বাঁশ দিয়ে বিশেষ লাইন। রেলওয়ে-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শতচেষ্টায়ও বিনা টিকিট রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। কাউন্টার থেকে আসনযুক্ত কোনো টিকিট বিক্রি হচ্ছে না। তবে বিভিন্ন কাউন্টার থেকে স্ট্যান্ডিং টিকিট কাটতে দেখা গেছে যাত্রীসাধারণকে। অনলাইনে টিকিট কাটতে ব্যর্থ হওয়ায় কিছু যাত্রী আসনবিহীন টিকিট কেটে ট্রেনে ভ্রমণ করছেন। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মধ্যরাত পযর্ন্ত ৪৫টি আন্তঃনগর ট্রেন কমলাপুর থেকে ছেড়ে গেছে।

বিলম্বে চলা কিছু ট্রেনের মধ্যে রাজশাহী কমিউটার ট্রেন প্রায় ২ ঘণ্টা দেরিতে কমলাপুর থেকে ছেড়ে গেছে। এছাড়া চট্টলা এক্সপ্রেস ১টা ৪৫ মিনিটে ছাড়ার কথা থাকলেও ছেড়েছে ৩টা ১৫ মিনিটে। বনলতা এক্সপ্রেস, অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস, নকশিকাঁথা এক্সপ্রেস ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা দেরিতে চলাচল করে।

এদিকে বৃহস্পতিবার বিকালে রেলপথমন্ত্রী কমলাপুর স্টেশন পরিদর্শন শেষে প্ল্যাটফরমে দাঁড়ানো সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনে ভ্রমণ করা যাত্রীদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে কুশল বিনিময় করেন। এ সময় রেলপথমন্ত্রী বলেন, আমরা সফলতার সঙ্গে বুধবার যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছে দিয়েছি, যা সম্ভব হয়েছে রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী ও নিরাপত্তা বাহিনীদের সহযোগিতায়। আমরা চেষ্টা করছি সীমিত সামর্থ্যরে মধ্যেই যাত্রীদের বাড়ি পৌঁছে দিতে। এ সময় রেলপথ সচিব ড. হুমায়ুন কবীর, মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলীসহ রেলওয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বৃহস্পতিবার সরেজমিন রাজধানীর বহির্গমন মুখগুলো ঘুরে দেখা হয়। গাবতলী ও মহাখালী হয়ে উত্তরা রুটে তেমন কোনো দুর্ভোগ ছিল না। তবে গুলিস্তান, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী ও শ্যামপুর হয়ে যারা বাড়ি ফিরেছেন, তাদের অন্তহীন দুর্ভোগ পোহাতে দেখা গেছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে সায়েদাবাদ বাসটার্মিনাল ও আশপাশের বাস কাউন্টার এবং ঢাকা-মাওয়া সড়কের যাত্রাবাড়ী মোড়ে বাস কাউন্টারগুলোয় যাত্রীর প্রচুর চাপ দেখা যায়। তবে বিকাল ৫টার পর থেকে সায়েদাবাদ বাসটার্মিনালে এবং এর আশপাশের বাস কাউন্টারগুলোয় যাত্রীদের তেমন একটা চাপ দেখা যায়নি। অফিস ছুটির পর যাত্রীদের চাপ বেড়ে যায়। বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে রাজধানীতে মুষলধারে বৃষ্টি নামে। এতে ৪০ থেকে ৪৫ মিনিট থমকে যায় যাত্রীদের চলাচল। এরপর বৃষ্টিতে ভিজেই বাসটার্মিনাল ও কাউন্টারগুলোয় আসতে দেখা যায়। বৃষ্টি থেমে যাওয়ার পর উপচে পড়া ভিড় হয়। কাউন্টারগুলোয় বাসের সংখ্যা কমে যাওয়ায় যাত্রীদের বাসের অপেক্ষায় বসে থাকতে হয়।

চাঁদপুর-কচুয়াগামী নিয়াজ সেমি তার বোন নিশিকে নিয়ে বিকাল পৌনে ৪টায় সায়েদাবাদ বাসটার্মিনালে যান। তিনি বলেন, আমার বিশ্ববিদ্যালয় ও বোনের স্কুল বন্ধ হয়েছে বুধবার। বিকাল ৫টার পর যাত্রীদের চাপ বেড়ে যাবে। সেজন্য একটু তাড়াতাড়ি রওয়ানা হলাম।

আবুল কালাম স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বরিশাল যাচ্ছেন যাত্রাবাড়ী মোর বাস কাউন্টার থেকে। তিনি বলেন, স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ২৫০ টাকা অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে টিকিট কেটেছি। তাকে বিআরটির কাছে অভিযোগ করার কথা বললে তিনি বলেন, এসব সবই বিআরটির লোকজন জানেন। আমি বললে হয়তো লোকদেখানো একটু তদারকি করবে আবার আমি চলে গেলে যেই সেই হবে। বলে সময় নষ্ট না করাই ভালো।

এদিকে পদ্মা সেতুর কারণে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ সড়কপথে বাড়ি ফিরছেন। আগে যেখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেরিঘাটে অপেক্ষা করতে হতো, সেখানে এখন ৬ থেকে ৭ মিনিটেই পদ্মা সেতু দিয়ে গন্তব্যে যেতে পারছেন তারা। এতে তাদের মনে স্বস্তির ভাব দেখা যায়।

বরিশালগামী বাসের যাত্রী মনির হোসেন বলেন, বর্তমান সরকার দ্রব্যমূল্যে আমাদের কষ্ট দিলেও পদ্মা সেতু করে বাড়িতে দ্রুত যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। এজন্য সরকারের প্রতি আমি অত্যন্ত খুশি। কেননা আগে আমাদের চলাচলের একমাত্র পথ ছিল লঞ্চ। সেখানে নানা অব্যবস্থায় অনেক দুর্ভোগের শিকার হতে হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ট্রাফিক পুলিশের ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার মোহাম্মদ আশরাফ ইমাম বলেন, ঈদ উপলক্ষ্যে বাস ও যাত্রীর চাপ প্রচুর পরিমাণে বেড়ে যায়। সড়কের স্পেসের তুলনায় কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায় যানবাহন। যে কারণে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা অক্লান্ত পরিশ্রম করার পরও সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। তখন আমাদের মনে কষ্ট হয়। তারপরও আমরা হাল ছাড়িনি। ঈদে মানুষ যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে যেতে পারে, আমাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট দীর্ঘ যানজটে নাকাল হতে হয়েছে যাত্রী ও বিভিন্ন পরিবহণচালকের। রাজধানীর শ্যামপুর, জুরাইন, পোস্তগোলা, গুলিস্তান, হানিফ ফ্লাইওভারসহ আশপাশের এলাকাজুড়ে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়। প্রায় প্রতিটি সড়কে যানবাহনের দীর্ঘ লাইনে থাকা যাত্রী ও চালকদের নাভিশ্বাস উঠেছে। গুলিস্তান হানিফ ফ্লাইওভার ও নিচের সড়ক থেকে শুরু হওয়া যানজটের দীর্ঘ লাইন পোস্তগোলা ব্রিজ পর্যন্ত এসেছে বলে মানুষের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে।
এদিকে দীর্ঘ এ যানজট নিরসনের জন্য ওয়ারী ট্রাফিক বিভাগ পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে ফুটপাত উচ্ছেদ অভিযান চালাচ্ছে। সড়কে নানা অনিয়মের জন্য নিয়ন্ত্রণহীন যানজটের কবলে পড়ে কর্মস্থলে যাওয়া মানুষ ও সাধারণ যাত্রীরা পড়েছেন বিপাকে। তবে এ বিরক্তিকর যানজট নিরসনে ট্রাফিক বিভাগ অক্লান্ত পরিশ্রম করছে।

সরেজমিন দেখা যায়, রাজধানীর মতিঝিল থেকে শুরু হয়ে গুলিস্তান থেকে যাত্রাবাড়ী সায়েদাবাদ এলাকার সড়কের দুপাশেই ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও শ্যামপুর থানাধীন জুরাইন রেলগেটসংলগ্ন মহাসড়কের দুই পাশে নারায়ণগঞ্জ ও কেরানীগঞ্জ থেকে আসা সিএনজি ও অন্যান্য পরিবহণ পার্কিং করে রাখায় যানজট আরও দীর্ঘ হয়েছে। এদিকে প্রতিদিনের মতো সড়কের দুপাশের এলাকায় প্রাইভেট কার ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। মূল সড়কে যানজট থাকায় অনেকে অলিগলির রাস্তার প্রাইভেট কার ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে ঢুকে পড়েছেন বলে সেখানেও দেখা দিয়েছে যানবাহনের লম্বা লাইন।

যানজটে আটকে থাকা জুরাইন এলাকার বসিন্দা মো. নান্নু বলেন, জুরাইন থেকে রাইদা নামের যাত্রীবাহী বাসে উঠে দীর্ঘ যানজটের কারণে তিন থেকে চার ঘণ্টা সড়কে আটকে আছি। তবে সকাল থেকে প্রতিটি সড়কের অসহনীয় যানজট শুরু হয়েছে। এতে দূরদূরান্ত থেকে আসা অফিসগামী যাত্রীদের নাভিশ্বাস উঠেছে।

যানজটের বিষয় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দোলাইখালে মেইন সড়কে বসছে কুরবানির গরুর বাজার, ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ক যাত্রাবাড়ী থানাধীন শনিরআখড়া মেইন সড়কে গরুর হাট বসানোয় এ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে দীর্ঘ যানজট দেখা দিয়েছে।

পোস্তগোলার যাত্রী শেখ ওমর ফারুক বলেন, ঢাকা শহরের সব রাস্তা কাটার কারণে বেশি যানজট লেগেই থাকে। যানজটের বিষয়ে শ্যামপুরের বাসিন্দা প্রাইভেট কার চালক মোখলেস বলেন, জুরাইনে সড়কের দুপাশে অবৈধ নানা স্থাপনা, অন্যদিকে নিষিদ্ধ জেলার সিএনজি পার্কিং করে রাখা- সবমিলিয়ে শ্যামপুরে সবসময় যানজট লেগেই থাকে।

এ বিষয়ে জুরাইনের ট্রাফিক পুলিশ টিআই মো. ইসমাইল বলেন, ঈদ সামনে রেখে সকাল থেকে সড়কের অন্যা দিনের তুলনায় গাড়ির চাপ বেশি হয়েছে। পাশাপাশি শ্যামপুরের দিকে সব ফিডার রোডের কাজ করার কারণে ভেতরের সড়কে গাড়ি চলাচল করতে না পারায় এলাকায় যানজট একটু বেশি। এদিকে যানজটের কারণে অনেকেই সকাল থেকে কর্মস্থলে বের হয়েছেন বলে সড়কের ওপর চাপও বেড়েছে।

এ বিষয়ে ডিসি ট্রাফিক ওয়ারী বিভাগ আশরাফ ইমাম বলেন, কুরবানির গরু রাখতে না দেওয়া, যথাস্থানে গরু আনলোড করা এবং ভারী যানবাহনগুলোকে দিনে শহরে প্রবেশ না করতে দেওয়ার কারণে কুরবানির হাটের জন্য যানজট বৃদ্ধি পায়নি। তবে ঈদ উপলক্ষ্যে ঘরমুখী মানুষের যাত্রার কারণে এবং যানবাহনের চলাচল বেড়ে যাওয়ায় যানজট হয়েছে। এছাড়া সাপ্তাহিক শেষ কর্মদিবস হওয়ায় স্বাভাবিক নিয়মেই যানজট বৃদ্ধি পেয়েছে। তাছাড়া হানিফ ফ্লাইওভারে ধারণক্ষমতার বেশি গাড়ি চলাচল করায় এবং এর নিচের অনেকাংশ পিলার দ্বারা দখল থাকায় মাঝেমধ্যেই যানজট সৃষ্টি হয়ে থাকে। ট্রাফিক ওয়ারী বিভাগের কর্মকর্তারা মধ্যরাত পর্যন্ত যানজট নিয়ন্ত্রণে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিসি) যুগ্মপরিচালক আলমগীর কবির বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ৪৭টি লঞ্চ ঢাকা নদীবন্দর থেকে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। তবে বৈরী আবহাওয়ার কারণে বিকাল ৫টার পর কিছু সময় লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হয়। আবহাওয়া পরিস্থিতির উন্নতি হলে লঞ্চ চলাচল আবারও শুরু হয়েছে।

তিনি বলেন, সকাল থেকে ঢাকা নদীবন্দরে যাত্রীর পরিমাণ কম ছিল। তবে সন্ধ্যার দিকে যাত্রীর চাপ বেড়েছে। সব ধরনের শৃঙ্খলা অক্ষুন্ন রেখে লঞ্চ চলাচল অব্যাহত রয়েছে।

জাতীয়

সংসদ-সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে রয়েছে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুর এমপি হওয়ার স্বপ্ন। এমপি আনারের ঝিনাইদহ-৪ আসনে মিন্টুর নির্বাচন করার খায়েস ছিল দীর্ঘদিনের। সর্বশেষ দুটি সংসদ নির্বাচনেই মিন্টু এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের টিকিট পাওয়ার জোর লবিং চালান। কিন্তু পেরে ওঠেননি তিনি। সর্বশেষ ২০২২ সালে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠনের সময়ও সাধারণ সম্পাদক পদের বাধা হয়ে দাঁড়ান এমপি আনার। ফলে ঠান্ডা মাথায় আনারকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেন মিন্টু। আনার হত্যা মিশন শেষ করতে দুই কোটি টাকার বাজেটও করেন তিনি। খুনি ভাড়া থেকে শুরু করে সার্বিক কাজের দায়িত্ব দেন মিন্টুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কাজী কামাল আহম্মেদ ওরফে গ্যাস বাবুকে। এ গ্যাস বাবুই আনার হত্যার মাস্টারমাইন্ড আক্তারুজ্জামান শাহীন ও মূল কিলার চরমপন্থি নেতা শিমুল ভূঁইয়া ওরফে আমানুল্যার সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করেন। গ্যাস বাবু এমপি আনারকে হত্যার আগে ৬ মে শিমুলকে দুই কোটি টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। সে অনুযায়ী হত্যা মিশন শেষে ১৬ মে আনারের ছবি গ্যাস বাবু ও মিন্টুর ফোনে পাঠায় শিমুল। ছবি পাঠানোর পর শিমুলকে ফোনও করেন মিন্টু। শাহীনের সঙ্গেও হত্যাকাণ্ড নিশ্চিত হতে কথা বলেন তিনি।

পূর্বপরিকল্পিত রাজনৈতিক এ হত্যাকাণ্ডকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতেই খুনিরা শাহীনের সঙ্গে আনারের স্বর্ণ চোরাচালানের দ্বন্দ্বের বিষয়টি সামনে আনেন। গ্রেফতারের প্রথম পর্যায়ে খুনিরা ডিবি পুলিশকেও এ বিষয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। ডিবির তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র বলছে, মূল কিলার শিমুলের জবানবন্দি এবং খুনিদের ব্যবহৃত বিভিন্ন ডিজিটাল ডিভাইসে আছে হত্যাকাণ্ডে আদ্যোপান্ত। আর এ হত্যার পরিকল্পনা থেকে বাস্তবায়ন পর্যন্ত সব পর্যায়েই আওয়ামী লীগ নেতা মিন্টুর সংশ্লিষ্টতা পাচ্ছে ডিবি পুলিশ। মঙ্গলবার মিন্টুকে আটকের পর দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি ডিবি পুলিশের কাছে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। তবে তার বিরুদ্ধে থাকা ডিজিটাল এভিডেন্সের বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারছেন না। ডিবির জেরার মুখে অনেক প্রশ্নের অসংলগ্ন জবাবও দিচ্ছেন মিন্টু।

এদিকে গ্রেফতারের পর মিন্টুকে ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। বৃহস্পতিবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন এ আদেশ দেন।

মিন্টুর গ্রেফতারের বিষয়ে বৃহস্পতিবার বিকালে নিজ কার্যালয়ে অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, তদন্তে কারও সম্পর্কে সুস্পষ্ট কোনো সংশ্লিষ্টতা না পেলে আমরা কাউকে ডাকি না। শিমুল ভূঁইয়ার ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে এবং মিন্টুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী বাবুর জবানবন্দিতে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে ব্যাপক আকারে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। সে কারণে তাকে আমরা সোপর্দ করে ১০ দিনের রিমান্ড চাইলে ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। প্রয়োজনে শিমুলকে আবার রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

হারুন অর রশীদ আরও বলেন, আনারের লাশ গুম করে ১৫ মে শিমুল দেশে আসেন। পরে শিমুল ঢাকা এলে তার সঙ্গে মিন্টুর প্রতিনিধি যোগাযোগই বা কেন করলেন? ১৬ মে থেকে মিন্টু জানেন এমপি আনার খুন হয়েছেন অথচ আমরা জানি ২২ মে। এমপি আনারকে হত্যার পর তোলা ছবি যদি মিন্টু ১৬ মে দেখে থাকেন তাহলে তিনি কেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বলেননি। টাকা-পয়সা লেনদেনের বিষয়টিও গ্রেফতারদের ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে এসেছে। সব কিছুই আমরা বিচার-বিশ্লেষণ করব।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ডিজিটাল ডিভাইস এবং ডিজিটাল এভিডেন্স বিশ্লেষণ করে আনার হত্যার সঙ্গে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা পায় ডিবি। শিমুল আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেছেন, হত্যাকাণ্ডের এক সপ্তাহ আগে ৬ মে তারা আরেকজন নেতার সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করেছেন। সেখানে অর্থের লেনদেনের কথা বলেছেন ওই নেতা, যার পরিমাণ দুই কোটি। এর মধ্যে খুনিরা দেশে ফেরার পরে দেবে ২০ লাখ আর ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা দেবে ২৬ থেকে ২৯ মে এর মধ্যে।

জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারদের দেওয়া তথ্য ও ডিভাইস পর্যালোচনা করে ডিবি জানতে পেরেছে আক্তারুজ্জামান শাহীনের পক্ষে লিয়াজোঁ অফিসার হিসাবে কাজ করেছেন শিমুল ভূঁইয়া। একইভাবে মিন্টুর পক্ষে লিয়াজোঁ অফিসার হিসাবে কাজ করেছেন বাবু। জিজ্ঞাসাবাদে বাবু স্বীকার করেছেন, মূল কিলারের সঙ্গে তিনি একাধিকবার মিটিং করেছেন। তার সঙ্গে একাধিকবার টেলিফোনে কথাও হয়েছে। একপর্যায়ে বাবু মৃত এমপি আনারের ছবিও মিন্টুকে দিয়েছেন।

জিজ্ঞাসাবাদে বাবু জানিয়েছেন, তার তিনটি মোবাইল ফোনই আক্তারুজ্জামান শাহীন নিয়ে গেছেন। কী কারণে ফোন নিয়ে গেছে সে বিষয়ে বাবুকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

এদিকে আনারকে হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ মামলায় মিন্টুর রিমান্ড শুনানিতে তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) মাহফুজুর রহমান বলেন, আনারকে হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণের পুরো বিষয়টি জানতেন মিন্টু। এরপর বিচারক মিন্টুকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনি কিছু বলবেন? জবাবে মিন্টু বলেন, আমি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। এমপি মনোনয়ন চাওয়াই আমার অপরাধ।

মিন্টুর রিমান্ড আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এমপি আনার হত্যায় সরাসরি জড়িত গ্রেফতার শিমুল আদালতে যে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন, সেখানে আসামি সাইদুল করিম মিন্টুর সংশ্লিষ্টতা আছে। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আর্থিক লেনদেন সংক্রান্তে মিন্টুর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। বর্তমানে পুলিশ রিমান্ডে থাকা আসামি কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবু এমপি আনার অপহরণে মিন্টুর সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। মূল পরিকল্পনাকারী শাহিন আসামি মিন্টুর সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে কথা বলেন। শিমুল তার জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন, চলতি বছরের ৫ ও ৬ মে এমপি আনারকে প্রলুব্ধ করে অপহরণ ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামান শাহিন আসামি সাইদুল করিম মিন্টুর সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে কথা বলেন এবং এমপি আনার হত্যা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সাপেক্ষে আর্থিক লেনদেনের কথা বলেন। হত্যার প্রমাণস্বরূপ ছবি আদান-প্রদান করা হয়।

এমপি আনার ১২ মে ভারতে যান। পরদিন ১৩ মে কলকাতার নিউটাউন এলাকার সঞ্জীবা গার্ডেনের একটি ফ্ল্যাটে খুন হন তিনি। তার শরীরের হাড় থেকে মাংস আলাদা করে টুকরো টুকরো করে ফেলা হয় সঞ্জীবা গার্ডেনের ফ্ল্যাটের সেপটিক ট্যাংকে। আর হাড় ফেলা হয় খালে। তবে ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে ২২ মে। ওইদিন রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন (২৪) অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা করেন। দুই দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্তে এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত হিসাবে এ পর্যন্ত ১২ জনের নাম বেরিয়ে এসেছে। গ্রেফতার হয়েছেন সাত জন। তারা হলেন-বাংলাদেশে গ্রেফতার শিমুল ভূঁইয়া, তানভীর, সেলেস্তি, বাবু ও মিন্টু। এদের মধ্যে বাবু ও মিন্টু ছাড়া অন্যরা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এছাড়া ভারতে গ্রেফতার আছে সিয়াম ও কসাই জাহিদ। আর তিনজনের নাম এসেছে, যারা হত্যাকাণ্ডের সরাসরি জড়িত নয়। তবে আর্থিক লেনদেনের তারা ব্যবহৃত হতে পারে বলে ডিবির সন্দেহ। হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড আক্তারুজ্জামান শাহীন যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে গেছেন। এছাড়া পলাতক আছেন মোস্তাফিজ ও ফয়সাল।

কালীগঞ্জে আনার হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন : আনার হত্যাকাণ্ডে সাইদুল করিম মিন্টুকে মূল পরিকল্পনাকারী বলে দাবি করেছেন মেয়র আশরাফুল আলম। তিনি বলেন, এ হত্যায় কালীগঞ্জের অনেকে অর্থের জোগানদাতা রয়েছে। সুষ্ঠু তদন্ত করলে তাদের নামও বেরিয়ে আসবে। বৃহস্পতিবার বিকালে উপজেলার ৭ নম্বর রায়গ্রাম ইউনিয়নে আয়োজিত এমপি আনার হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধনে এসব কথা বলেন তিনি। ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়কের দুলাল মুন্দিয়া নামক স্থানে মানববন্ধনের আয়োজন করে রায়গ্রাম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ।

মানববন্ধনে উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর সিদ্দিকী ঠান্ডু, কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শিবলী নোমানী বক্তব্য দেন।

মিন্টুকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে মানববন্ধন : সাইদুল করিম মিন্টুকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সকালে জেলা দোকান মালিক সমিতির আয়োজনে শহরের পোস্ট অফিস মোড়ে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য দেন জেলা দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মনোয়ারুল ইসলাম মন্টু, সহসাধারণ সম্পাদক মতিয়ার রহমান, মুন্সি মার্কেটের সভাপতি রবিউল ইসলাম রবি, চেম্বার অব কমার্সের নেতা মোয়াজ্জেম হোসেন প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, এমপি আনার হত্যার প্রায় এক মাস পর মিন্টুকে ষড়যন্ত্র করে গ্রেফতার করা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে মিন্টুকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য গোয়েন্দা পুলিশের প্রতি দাবি জানান তারা।

জাতীয়

নানা রঙ ও আকৃতির পশুতে ভরে উঠেছে রাজধানীর কুরবানি পশুর হাটগুলো। গরু, মহিষ, ভেড়া, দুম্বা ও ছাগলে হাটগুলো কানায় কানায় ভরে উঠেছে। বিক্রি শুরু হয়েছে। ক্রেতারা বলছেন তুলনামূলক দাম বেশি, আর বিক্রেতারা বলছেন ক্রেতারা দাম কম বলছেন। এ অবস্থার মধ্যেই বৃহস্পতিবার রাজধানীর স্থায়ী ও অস্থায়ী হাটগুলোতে বিক্রি জমে উঠেছে।

বৃহস্পতিবার সরেজমিন শনিরআখড়া, শ্যামপুর, গাবতলী, ভাটারা, হাজারীবাগ, বসিলা, সারুলিয়া ও আমুলিয়া কুরবানি পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, সব হাট কুরবানির পশুতে ভরে উঠেছে। কোনো হাটে বিক্রি জমে উঠেছে, আবার কোনো হাটে ক্রেতা কম। বৃহস্পতিবার সরকারি অফিস শেষ হয়েছে। বেশির ভাগ বেসরকারি অফিসও ছুটি হয়েছে। সে কারণে আজ শুক্রবার পশুর হাটগুলোর বিক্রি পুরোদমে জমে উঠবে বলে আশা করছেন বিক্রেতারা।
মিরপুর প্রতিনিধি গাবতলী হাট ঘুরে জানান, সর্ববৃহৎ পশুর হাট গাবতলীতে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসছে কুরবানির পশু। কানায় কানায় হাট ভরে উঠলেও সে তুলনায় ক্রেতার উপস্থিতি কম দেখা গেছে।

বিক্রেতারা জানান, যেসব ক্রেতারা হাটে আসছেন দামাদামি বেশি করছেন। দাম শুনেই আরেক জায়গায় চলে যাচ্ছেন। কেউ দাম বলছেন, তবে কেনার আগ্রহ কম। দামাদামি বেশি হচ্ছে। তবে তারা আশা করছেন আজ শুক্রবার থেকে তাদের বিক্রি জমে উঠবে। বিক্রি জমলে দামেও কিছুটা ছাড় দেবেন তারা। চুয়াডাঙ্গা থেকে আসা বিল্লাল হোসেন জানান, দুদিন আগে হাটে ১২টি গরু এনেছেন। এর মধ্যে আটটি গরু মাঝারি ও বাকি চারটি ছোট আকারের। হাটে অনেক গরু থাকলেও ক্রেতা নেই। দাম শুনেই লোকজন চলে যাচ্ছেন। রাজশাহী থেকে আগত খামারি মো. রাব্বানী বলেন, হাটে বড় সাইজের ছয়টি গরু এনেছেন। ছোট ও মাঝারি সাইজের গরু বিক্রি হলেও বড় গরুর ক্রেতা কম।

মিরপুর ১০ নম্বর থেকে গাবতলী হাটে আসা গৃহিণী মরিয়ম বেগম বলেন, গতবারের মতো এবারও ছোট সাইজের গরু কেনার পরিকল্পনা নিয়ে হাটে এসেছি। বাজেট অনুযায়ী গরু পাওয়ায় তিনি একটি গরু কিনেছেন।

ভাটারা প্রতিনিধি নতুন বাজার এলাকার অস্থায়ী পশুর হাট ঘুরে জানান, ভাটারার নতুন বাজারে অস্থায়ী পশুর হাটে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এসেছে কুরবানির পশু। বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে হাট শুরু হলেও গত রোববার থেকে হাটে পশু উঠতে শুরু করেছে। কুরবানি পশুতে ভরে উঠেছে পুরো হাট। তবে বিক্রি শুরু হলেও এখনো জমেনি। শুক্র, শনি ও রোববারে জমজমাট বিক্রি হবে বলে মনে করছেন বিক্রেতারা। হাট ঘুরে দেখা যায়, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গা থেকে কুরবানির পশু এনেছেন কৃষক, খামারি ও ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যে অধিকাংশই দেশীয় গরু। তবে হাটে কোনো ছাগল দেখা যায়নি।

হাটের ইজারাদার মো. মিলন হোসেন বলেন, গরু বেপারিদের জন্য পানি, পয়ঃনিষ্কাশন ও বিদ্যুৎ সংযোগের সুব্যবস্থা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে অনেক গরু বেচাকেনা হয়ে গেছে। শুক্রবার থেকে হাট আরও জমবে। শনি ও রোববার হাটে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় হবে। আমরা সেভাবে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।

দিয়াবাড়ি হাট সরেজমিন ঘুরে উত্তরা পশ্চিম (ঢাকা) প্রতিনিধি জানান, উত্তরার দিয়াবাড়ি হাটটি মূলত সড়কের ওপর বসানো হয়েছে। সেখানে সড়কজুড়ে পশু রাখা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ওই হাটে ক্রেতার উপস্থিতি বাড়লেও পশু বিক্রি কম হয়েছে। তবে সড়কের ওপর হাট বসানোর কারণে স্থানীয়রা ভারি বৃষ্টিতে দুর্ভোগের আশঙ্কা করছেন।

বৃহস্পতিবার দুপুরে উত্তরা ১৬ নম্বর সেক্টরে অবস্থিত দিয়াবাড়ি পশুর হাটে দেখা যায়, মেট্রোরেলের ২ নম্বর স্টেশন থেকে পশ্চিমে ১৮ নম্বর সেক্টরে যাতায়াতের একমাত্র সড়কটির ওপর সারি সারি বেঁধে রাখা হয়েছে কুরবানি পশু।

দিয়াবাড়ি হাটে আসা উত্তরা ১৪ নম্বর সেক্টরের বাসিন্দা আনিসুর রহমান জানান, গরুগুলো সড়কের ওপর রাখায় ক্রেতারা সড়কে সুষ্ঠুভাবে দাঁড়াতে পারছেন না। পেছন থেকেই গাড়ির হর্ন বাজছে। একটি আতঙ্ক নিয়ে এখানে গরু দেখতে হচ্ছে। দিয়াবাড়ি গরু হাটের ইজারাদার মো. কফিল জানান, দিয়াবাড়ি ১৬ নম্বর সেক্টর বউ বাজার পর্যন্ত সড়কের জায়গা ছাড়া বাকি খালি জায়গায় হাটের সীমানা। তবে সড়কের ওপর গরু রাখার বিষয়টি কতটুকু বৈধ? প্রশ্ন করা হলে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।

মোহাম্মদপুর প্রতিনিধি বসিলা ও হাজারীবাগ হাট ঘুরে জানান, আনুষ্ঠানিক হাট শুরুর প্রথম দিন বসিলার হাটে বিক্রি জমজমাট ছিল। কিন্তু হাজারীবাগ হাটে ক্রেতার উপস্থিতি কম দেখা গেছে। মোহাম্মদপুরের বসিলা ৪০ ফিট এলাকায় বিশাল জায়গা নিয়ে পশুর হাট বসেছে। হাটে ডিজিটাল লেনদেনের জন্য বিকাশ, নগদের পাশাপাশি এটিএম বুথ বসানো হয়েছে। কোনো গরু অসুস্থ হয়ে পড়লে তাৎক্ষণিক চিকিৎসার জন্য পশুর ডাক্তারের বুথ রয়েছে। ব্যবসায়ীদের গরু বিক্রির টাকা নিরাপদে লেনদেন করতে ব্যাংকিং সুবিধা রয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছোট, বড় ও মাঝারি আকারের গরু নিয়ে বিক্রেতারা হাটে এসেছেন।

বিক্রেতারা বলেন, আমরা কেউ কুষ্টিয়া, যশোর, জামালপুর, কুড়িগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গরু বিক্রি করতে এ হাটে এসেছি। প্রতি বছর আমরা গরু নিয়ে এ হাটে এসে ভালো সাড়া পাই। ইতোমধ্যে কেউ কেউ একটি-দুটি গরু বিক্রি করেছি। আশা করছি, এভাবে বাজার থাকলে আমরা ঈদের দু-একদিন আগেই গরু বিক্রি শেষ করে চলে যেতে পারব।

হাজারীবাগ পশুর হাটে বৃহস্পতিবার গিয়ে দেখা যায়, গরু রাখার জন্য বিভিন্ন জায়গায় বাঁশের খুঁটি বসানো হয়েছে। তবে অনেক খুঁটি ফাঁকা আছে। গরু বিক্রেতারা বলছেন, দু-একদিনের মধ্যে বাজার জমে উঠলে গরু বিক্রি বাড়বে। প্রথম দিন তাই বাজারে তেমন ক্রেতা দেখা যায়নি।

শনিরআখড়া ও শ্যামপুর পশু হাট ঘুরে যাত্রাবাড়ী প্রতিনিধি জানান, কুরবানির পশুতে ভরে উঠেছে শনিরআখড়া ও শ্যামপুর পশুর হাট। তবে বিক্রি জমেনি। বিক্রেতা ও ইজারাদারের প্রত্যাশা শুক্র, শনি ও রোববার জমজমাট বিক্রি হবে। সারুলিয়ার স্থায়ী হাট ও আমুলিয়া মডেল টাউনের অস্থায়ী পশুর হাট ঘুরে ডেমরা প্রতিনিধি জানান, এ দুটি হাটে ছোট গরু বেশি উঠেছে। গরুতে হাট ভরে উঠলেও বিক্রি জমেনি। স্বল্প পরিসরে কিছু বিক্রি হচ্ছে।

জাতীয়

আবারো ভারতে সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হা‌সিনা। পূর্বনির্ধারিত দ্বিপক্ষীয় সফরের অংশ হিসেবে আগামী ২১ জুন দি‌ল্লিতে যাচ্ছেন বাংলাদেশ সরকারপ্রধান।সর্বশেষ গত ৮ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দেশটিতে গিয়েছিলেন শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের এ বিষয়টি বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে নিশ্চিত করেছে নির্ভরযোগ্য কূট‌নৈ‌তিক সূত্র।

সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ সফর পূর্বনির্ধারিত ছিল। তারই অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী আগামী ২১ জুন দুই দিনের সফরে দি‌ল্লি যা‌চ্ছেন। এই সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এর আগে গত ৯ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ৮ জুন দেশটিতে সফরে যান শেখ হাসিনা। বিশ্বের অন্যান্য অতিথিদের সঙ্গে আমন্ত্রিত হয়ে সেখানে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শপথ অনুষ্ঠানে যোগদান শেষে ১০ জুন দেশের ফেরেন বাংলাদেশ সরকারপ্রধান।

জাতীয়

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজিম আনারকে অপহরণের মাধ্যমে হত্যার ঘটনায় নিজের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেছেন ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু। নির্বাচনে মনোনয়ন চাওয়ার কারণে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন বলে দাবি তার।

বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) সাইদুল করিম মিন্টুকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সিনিয়র সহকারী কমিশনার মাহফুজুর রহমান। তার পক্ষের আইনজীবী রিমান্ড বাতিলসহ জামিন আবেদন করেন।

এরপর দুপুরে রিমান্ড আবেদনের বিষয়ে শুনানি হয়। শুনানির এক পর্যায়ে বিচারক আসামি সাইদুল করিম মিন্টুর কাছে তার কিছু বলার আছে কিনা জানতে চান। জবাবে তিনি বলেন, আমি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন চাওয়াটাই আমার অপরাধ।

এরপর শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন তার ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদেশ দেন।

গত ১১ জুন বিকেল ৪টার দিকে রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকা থেকে মিন্টুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

এর আগে গত ৬ জুন রাতে জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবুকে ঝিনাইদহ শহরের আদর্শপাড়া এলাকা থেকে আটক করে ঢাকায় নিয়ে আসে ডিবির একটি দল। এরপর গত ৯ জুন তার ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

এ মামলায় গত ৩ জুন আসামি শিলাস্তি রহমান, ৪ জুন তানভীর ভূঁইয়া এবং ৫ জুন সৈয়দ আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়া ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

গত ২২ মে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় খুন করার উদ্দেশ্যে অপহরণের অভিযোগে মামলাটি দায়ের করেন এমপি আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন।

জাতীয়

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আগামীতে আরো দৃঢ় করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ আজ সকালে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘দুই নেতা আশা প্রকাশ করেছেন, বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আগামী দিনগুলোতে আরও গভীর হবে।’

রোববার সন্ধ্যায় মোদী সরকারের মন্ত্রিসভার শপথ অনুষ্ঠানের পর দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে একান্ত বৈঠকে এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করা হয়।
ড. মাহমুদ বলেন, অত্যন্ত উষ্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে রাষ্ট্রপতি ভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভারতীয় সমকক্ষকে সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।

তিনি বলেন, শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, পরে দুই প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতি ভবনে ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু আয়োজিত ভোজসভায় যোগ দেন।

হাছান মাহমুদ বলেন, ভারতের সিনিয়র মন্ত্রীগণ, বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল, আমন্ত্রিত সরকার ও রাষ্ট্র প্রধানরা নৈশভোজে অংশ নেন। সেখানে তারা সংক্ষিপ্ত মতবিনিময় করেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রী জানান, সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তাদের মধ্যে কুশল বিনিময় হয়।

নরেন্দ্র মোদি গত ১০ বছর গত ধরে তার রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন এবং শেখ হাসিনাও ইতোমধ্যে ১৫ বছর ধরে তাঁর সরকার রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন এবং একে অপরের কাছ থেকে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বহুমুখী সম্পর্ক রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘দুই দেশের মধ্যে অনেক বিষয় জড়িত। যেহেতু উভয় সরকার দেশ পরিচালনায় অব্যাহত রয়েছেন, সেহেতু একসঙ্গে কাজ করার কিছু সুবিধা আছে।’

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, উভয় দেশের জনগণ বিভিন্ন দিক থেকে উপকৃত হচ্ছে যার মধ্যে দু’দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থেকে যোগাযোগ রয়েছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন,‘আমাদের বহুমাত্রিক সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরো সম্প্রসারিত এবং আরো গভীর হবে।’

ব্রিফিংয়ে অন্যান্যের মধ্যে ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. মুস্তাফিজুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব নাঈমুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন।

জাতীয়

নির্বাচন নিয়ে দেশে এখনো রাজনৈতিক সংকট বিরাজ করছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেছেন, রাজনৈতিক সংকট দেশের নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে ফেলতে পারে। তাই নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কিছু মৌলিক সমঝোতা প্রয়োজন।

তিনি আরও বলেন, দেশের সার্বিক নির্বাচন ব্যবস্থার আরও সংস্কার প্রয়োজন। এতে ব্যক্তির গুরুত্ব কমে যাবে, নির্বাচনব্যবস্থা আরও সুসংহত হবে।

সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে ‘রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি (আরএফইডি)’ আয়োজিত ‘আরএফইডি টক’ অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিইসি এসব কথা বলেন।

আরএফইডি সভাপতি একরামুল হক সায়েমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির। অনুষ্ঠানে সিইসি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, সদ্য সমাপ্ত ৪৬৯টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে গড়ে ৩৬.৪৫ শতাংশ ভোট পড়েছে। বড় একটি রাজনৈতিক দল (বিএনপি) অংশগ্রহণ না করায় নির্বাচন অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়নি এবং ভোটার উপস্থিতি কম ছিল।

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের দুই ভাইয়ের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নেওয়ার ঘটনার তদন্ত চলছে।

সিইসি বলেন, এনআইডি জালিয়াতির অপরাধ ঘটছে। কোনো না কোনো ফাঁকফোকর দিয়ে অপরাধীরা এটি করছে। আমাদেরকে জালিয়াতির তথ্য দিলে আমরা ব্যবস্থা নেব। সাবেক সেনাপ্রধানের ভাই এবং বঙ্গবন্ধুর খুনির সন্তানদের এনআইডি জালিয়াতির তথ্য পাওয়ার পর আমরা তদন্ত করছি। পুরো সিস্টেমের এক শতাংশ হয়তো এই জালিয়াতিতে যুক্ত। তাদের আমরা আইনের আওতায় আনব।

দেশের রাজনৈতিক সংকট প্রসঙ্গে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, জাতীয় নির্বাচনের পাঁচ মাস পার হয়ে গেলেও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিরোধের জমাট বরফ এখনো গলেনি। সার্বিক পরিবেশ এখনো পুরোপুরি অনুক‚লে হয়ে ওঠেনি। তবুও আমি আশাবাদী সংকট নিরসন হবে। দেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকবে।

নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংকট নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোকেই সংলাপের মধ্য দিয়ে এর সমাধান করতে হবে। পরাজয় মেনে নিয়ে বিজয়ী দলকে অভিনন্দন জানানোর মাধ্যমে একটি সুস্থ নির্বাচনি সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। আর যারা নির্বাচিত হবেন তারা সেবার মনোভাব নিয়ে জনগণের কাছে গেলে সংস্কৃতিতে বড় ধরনের একটি পরিবর্তন হবে।

জাতীয় সংসদ ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার বিষয়ে সিইসি বলেন, নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আইন ও বিধিবিধান প্রয়োগ করে। যারা প্রার্থী তাদের দক্ষতা ও জনসম্পৃক্ততার ওপর নির্ভর করে ভোটার উপস্থিতি কেমন হবে। একটি বড় রাজনৈতিক দলের ভোটে না থাকায় অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন হয়নি। তবে এখানে আমাদের করার কিছুই ছিল না।