জাতীয়

আজ ৭ জুন ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস। ১৯৬৬ সালের এই দিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ ৬ দফা দাবির পক্ষে দেশব্যাপী তীব্র গণআন্দোলনের সূচনা হয়।

এই দিনে আওয়ামী লীগের ডাকা হরতালে টঙ্গি, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে তৎকালীন পুলিশ ও ইপিআর-এর গুলিতে মনু মিয়া, শফিক ও শামসুল হকসহ ১১ জন বাঙালি শহীদ হন। এরপর থেকেই বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আপোসহীন সংগ্রামের ধারায় ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের দিকে এগিয়ে যায় পরাধীন বাঙালি জাতি।

প্রতিবছরের মত এবারও যথাযোগ্য মর্যাদায় বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালিত হবে। ঐতিহাসিক এই দিনটি উপলক্ষে আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আগামীকাল সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু ভবন, কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও দেশব্যাপী আওয়ামী লীগ দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল ৮ টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হবে। এছাড়াও বিকাল সাড়ে তিনটায় তেজগাঁওস্থ ঢাকাজেলা আওয়ামী লীগের কার্যলয়ে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে সভাপতিত্ব করবেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি তাসখন্দ চুক্তিকে কেন্দ্র করে লাহোরে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের সাবজেক্ট কমিটিতে ৬-দফা উত্থাপন করেন এবং পরের দিন সম্মেলনের আলোচ্য সূচিতে যাতে এটি স্থান পায় সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেন। কিন্তু, এই সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুর দাবির প্রতি আয়োজক পক্ষ গুরুত্ব প্রদান করেনি। তারা এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে। প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু সম্মেলনে যোগ না দিয়ে লাহোরে অবস্থানকালেই ৬-দফা উত্থাপন করেন। এই নিয়ে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের বিভিন্ন খবরের কাগজে বঙ্গবন্ধুকে বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা বলে চিহ্নিত করা হয়। পরে ঢাকায় ফিরে বঙ্গবন্ধু ১৩ মার্চ ৬-দফা এবং এই ব্যাপারে দলের অন্যান্য বিস্তারিত কর্মসূচি আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদে অনুমোদন করিয়ে নেন।

৬-দফার মূল বক্তব্য ছিল প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র বিষয় ছাড়া সকল ক্ষমতা প্রাদেশিক সরকারের হাতে থাকবে। পূর্ববাংলা ও পশ্চিম পাকিস্তানে দু’টি পৃথক ও সহজ বিনিময়যোগ্য মুদ্রা থাকবে। সরকারের কর, শুল্ক ধার্য ও আদায় করার দায়িত্ব প্রাদেশিক সরকারের হাতে থাকাসহ দুই অঞ্চলের অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার আলাদা হিসাব থাকবে এবং পূর্ববাংলার প্রতিরক্ষা ঝুঁকি কমানোর জন্য এখানে আধা-সামরিক বাহিনী গঠন ও নৌবাহিনীর সদর দফতর স্থাপন করতে হবে।

বঙ্গবন্ধু ঘোষিত ৬-দফা দাবির মুখে পাকিস্তানের তৎকালীন সামরিক শাসক আইয়ুব খান বিচলিত হয়ে পড়েন। তিনি হুমকি দিয়ে বলেন, ৬-দফা নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে অস্ত্রের ভাষায় উত্তর দেয়া হবে।

এদিকে, ৬-দফা কর্মসূচি জনগণের মাঝে পৌঁছে দেয়ার জন্য বঙ্গবন্ধ শেখ মুজিবুর রহমানসহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ সমগ্র পূর্ববাংলা সফর করেন এবং ৬ দফাকে বাঙালির বাঁচার দাবি হিসেবে অভিহিত করেন। ফলে,শাসকগোষ্ঠী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ অন্যান্য নেতাকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করে। যশোর, ময়মনসিংহ ও সিলেটসহ অন্যান্য কয়েকটি স্থানে ৬ দফার পক্ষে প্রচারকালে বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হন।

ছয় দফা দাবি আদায় প্রসঙ্গে ‘কারাগারের রোজনামচা’ গ্রন্থে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, ‘আওয়ামী লীগ কর্মীরা যথেষ্ট নির্যাতন ভোগ করেছে। ছয় দফা দাবি যখন তারা দেশের কাছে পেশ করেছে তখনই প্রস্তুত হয়ে গিয়েছে যে তাদের দুঃখ কষ্ট ভোগ করতে হবে। এটা ক্ষমতা দখলের সংগ্রাম নয়, জনগণকে শোষণের হাত থেকে বাঁচাবার জন্য সংগ্রাম।’

তিনি আরও লিখেছেন, ‘আমার বিশ্বাস আছে আওয়ামী লীগের ও ছাত্রলীগের নিঃস্বার্থ কর্মীরা তাদের সাথে আছে। কিছু সংখ্যক শ্রমিক নেতা, যারা সত্যই শ্রমিকদের জন্য আন্দোলন করে-তারাও নিশ্চয়ই সক্রিয় সমর্থন দেবে। এত গ্রেপ্তার করেও এদের দমাইয়া দিতে পারে নাই।’

পরবর্তী সময়ে ঐতিহাসিক ৬ দফাভিত্তিক নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনই ধাপে ধাপে বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামে পরিণত হয়। এই দাবির সপক্ষে বাঙালি জাতির সর্বাত্মক রায় ঘোষিত হয় ১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক সাধারণ নির্বাচনের মধ্যদিয়ে। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বাঙালিরা বিজয়ী হয়।

অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধুর দলকে জনগণ বিজয়ী করলেও স্বৈরাচারী পাকিস্তানের শাসকরা বিজয়ী দলকে সরকার গঠন করতে না দিলে আবারো বঙ্গবন্ধু জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে স্বাধীনতার পক্ষে আন্দোলন শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের।

জাতীয়

আসন্ন ঈদুল আজহার পরে সকাল ৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত সরকারি অফিসের কার্যক্রম চলবে। বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এর মাধ্যমে আবারও পূর্বের সময় সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সময়সূচিতে ফিরছে সরকারি অফিসগুলো।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘আগামী ১৯ জুন (পবিত্র ঈদুল আজহার পরবর্তী প্রথম কর্মদিবস) থেকে দেশের সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের অফিস সময়সূচি পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত সরকার নির্ধারণ করল।’

প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, দুপুর ১টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত জোহরের নামাজ ও মধ্যাহ্নভোজের বিরতি। শুক্রবার ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি।

প্রজ্ঞাপনে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট এবং ব্যাংক, বিমা ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সময়সূচি স্ব স্ব কর্তৃপক্ষকে নির্ধারণের জন্য বলা হয়েছে।

উল্লেখ, গত সোমবার (৩ জুন) সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিপরিষদ কমিটির বৈঠকে অফিসের নতুন সময় নির্ধারণ করা হয়। তার পরই আজ প্রজ্ঞাপন জারি করল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

এর আগে জ্বালানি সাশ্রয় করতে ২০২২ সালের ৩১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে অফিস সূচি পরিবর্তন করে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত করা হয়।

জাতীয়

পটুয়াখালী-১ আসনের এমপি জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেছেন, দীর্ঘ রাজনীতির জীবনে আমি অনেক সরকারের সঙ্গে কাজ করেছি; কিন্তু বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতো উদার এবং জনবান্ধব দেখিনি। ঘূর্ণিঝড় রেমাল পরবর্তী সময়ে তিনি আমাকে পটুয়াখালীর ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে থাকতে নির্দেশনা দিয়েছেন এবং বন্যা কবলিত পরিবারগুলোকে সার্বিক সহযোগিতা করতে বলেন।

শুক্রবার বিকালে পটুয়াখালীর পায়রা নদীর তীরবর্তী ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাম পরিদর্শন কালে তিনি এসব কথা বলেন।

এ সময় এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এমপি বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত পটুয়াখালী সদর উপজেলার ছোটবিঘাই ইউনিয়নের ভুতুমিয়া দক্ষিন তিতকাটা, কলাগাছিয়া বাজার সংলগ্ন এলাকা এবং মরিচবুনিয়া বাজার এলাকা পরিদর্শন করেন। তিনি বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ দ্রুত নির্মাণ ও সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন। এসময় ক্ষতিগ্রস্তরা ত্রাণের বদলে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি করেন।

পরিদর্শন কালে তার সঙ্গে ছিলেন ছিলেন- পটুয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুর রহমান, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সঞ্জীব দাশ, পিআইও মো. রফিকুল ইসলাম এবং পুলিশের কর্মকর্তারা।

এছাড়াও ছিলেন-পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি কাজী আলমগীর, পটুয়াখালী জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. জাফরউল্লাহ, সহ-সভাপতি মিরাজুল হক মিন্টু, সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক মিয়া, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাকির মাহামুদ সেলিম, সদর উপজেলা সভাপতি কামরুজ্জামান টিপু এবং সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান প্রমুখ।

জাতীয়

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ বা অবরুদ্ধ করার আগেই অ্যাকাউন্টের অধিকাংশ টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এসব ব্যাংক অ্যাকাউন্টের অর্থ উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, ঢাকায় একটি বাড়ি ও দুবাইয়ের একটি অ্যাপার্টমেন্ট কেনার পর তা বিক্রি করে দিয়েছেন বেনজীর-এমন তথ্যও পাওয়া গেছে।

সাবেক এই আইজিপির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পরপরই আড়ালে চলে যান। তবে কোথায় ছিলেন সেটি নিদিষ্ট করে জানা যাচ্ছিল না। তবে বেনজীরের অবস্থান নিশ্চিত হওয়া গেছে। বেনজীর এখন দেশে নেই।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশের রেকর্ডে উল্লেখ আছে, গত ৪ মে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে তিনি ঢাকা ত্যাগ করেন। এ সময় পরিবারের সদস্যরা তার সঙ্গে ছিলেন।

ক্ষমতায় থাকতে যারা তার অতি আপন ছিলেন, তারাও এখন সরে গেছেন। এমনকি পুলিশ সদর দপ্তরের অন্তত ৫টি কেনাকাটার খাত থেকে বিপুল অর্থ লোপাটে যেসব কর্মকর্তা সহযোগীর ভূমিকায় ছিলেন তারাও বেনজীরকে ‘খারাপ’ আখ্যা দিচ্ছেন। বেনজীরের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসাবে চিহ্নিত ওই কর্মকর্তাদের প্রায় সবাই এখন খারাপ অবস্থায় আছেন।

এদিকে বেনজীর পরিবারের সম্পদের খোঁজে তল্লাশি অব্যাহত রেখেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুসন্ধান টিম। ধারাবাহিকভাবে তারা বেনজীর পরিবারের নামে-বেনামে নতুন নতুন সম্পদের তথ্য পাচ্ছে। এমনকি ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসাবে পরিচিত কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার নামেও সম্পত্তি কেনার তথ্য পাওয়া গেছে।

তবে নতুন করে সাতক্ষীরায় বেনজীরের শ্বশুরবাড়ির লোকজন ও আরেক পুলিশ কর্মকর্তার নামে কয়েকশ বিঘা আয়তনের মাছের ঘের থাকার তথ্য এসেছে দুদকের হাতে। এছাড়া ঢাকায় একটি বাড়ি ও দুবাইয়ের একটি অ্যাপার্টমেন্ট কেনার পর তা বিক্রি করে দিয়েছেন বেনজীর-এমন তথ্যও পাওয়া গেছে।

বেনজীরের মোবাইল ফোন এখন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তিনি ‘আত্মগোপন’ অবস্থায় থাকলেও তার শুভাকাক্সক্ষী হিসাবে পরিচিত কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৬ জুন দুদকের তলবের জবাব দিতে সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। এ কাজে বেশ কয়েকজন আইনজীবীর একটি টিম কাজ করছে।

নির্ধারিত দিনে বেনজীরের পরিবর্তে তার আইনজীবীরা দুদকে হাজির হয়ে তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে সংশ্লিষ্টদের কেউ কেউ বলেছেন, ৬ জুন বেনজীরকে সশরীরে দুদকে হাজির হতে বলা হয়েছে। তিনি নিজে না গেলে জনমনে ভুল মেসেজ যাবে। তাই দুদকের মুখোমুখি হয়ে আইনি মোকাবিলা করার কথাও জানান তিনি। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রের সঙ্গে কথা বলে উল্লিখিত তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, বেনজীর আহমেদের শ্বশুরবাড়ি সাতক্ষীরা জেলায়। সেখানে তিনি কয়েকশ বিঘা আয়তনের মাছের ঘের প্রতিষ্ঠা করেছেন। শাশুড়ির নামে সেখানে বিপুল পরিমাণ জায়গা কেনা হয়েছে।

অনেক জায়গা দখলেরও অভিযোগ আছে। ঘেরের যৌথ মালিকানায় আছেন আরেকজন পুলিশ কর্মকর্তা। বিসিএস ২৪ ব্যাচের ওই কর্মকর্তা এখন চট্টগ্রাম জেলা পুলিশে কর্মরত। তার আদি নিবাস গোপালগঞ্জে হলেও বাবার চাকরির সুবাদে খুলনায়ও বাড়ি আছে। বেনজীরের সঙ্গে যৌথ মালিকানায় খুলনা, গোপালগঞ্জ ও গাজীপুরে তার বিপুল সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করতে সংশ্লিষ্ট এলাকা থেকে নথিপত্র সংগ্রহ করার কাজ শুরু করেছে দুদক।

আরও জানা গেছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ের প্লাম জুমেরা ও মেরিনা এলাকায় বেনজীরের নামে-বেনামে বেশ কয়েকটি অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে। এর মধ্যে জুমেরা এলাকার ৪০ তলা কনকর্ড টাওয়ারে অবস্থিত একটি অ্যাপার্টমেন্ট তিনি অতিসম্প্রতি ৯০ লাখ দিরহামে (২৮ কোটি ৭৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা) বিক্রি করেছেন। এছাড়া বাংলাদেশের এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে দুবাইয়ের ‘মস্কো’ নামের একটি বহুতল হোটেলে বেনজীরের যৌথ বিনিয়োগের তথ্যও আছে। আর ঢাকার ভাটারা থানাধীন একটি অভিজাত আবাসিক এলাকায় বেনজীরের একটি সাততলা ভবন ছিল। সেটাও সম্প্রতি বিক্রি করে দিয়েছেন। অনুসন্ধান শুরু হওয়ার পর এসব সম্পদ বিক্রি করা হয়েছে বলে দুদক জানতে পেরেছে।

জানা গেছে, ২৩ ও ২৬ মে দুদকের দুই দফায় করা আবেদন আমলে নিয়ে বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী-সন্তানদের নামে থাকা বিভিন্ন সম্পত্তির দলিল, ঢাকায় ফ্ল্যাট ও কোম্পানির শেয়ার জব্দের (ক্রোক) নির্দেশ দেন ঢাকা মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন। ২৩ মে বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা প্রায় ৩৪৫ বিঘা (১১৪ একর) জমি এবং ৩৩টি ব্যাংক হিসাব জব্দ ও অবরুদ্ধের আদেশ দেওয়া হয়।

এছাড়া আদালতের নির্দেশে গত সোমবার পুঁজিবাজারের ইলেকট্রনিক্স শেয়ার সংরক্ষণাগার সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডকে (সিডিবিএল) বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী-সন্তানের নামে থাকা সব বিও হিসাব (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স অ্যাকাউন্ট) ফ্রিজ করে রাখতে নির্দেশ দিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এই আদেশ কার্যকর থাকা অবস্থায় হিসাবগুলোয় শেয়ার ও অর্থ লেনদেন করা যাবে না। আদালতের অন্যান্য আদেশও কার্যকর করা শুরু হয়েছে।

দুদকের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, আগামী ৬ জুন বেনজীর ও ৯ জুন তার পরিবারের সদস্যরা দুদকে সশরীরে হাজির হয়ে তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করতে পারেন, নাও পারেন। আবার তারা আইনজীবীর মাধ্যমেও তাদের বক্তব্য ও তথ্য-উপাত্ত পাঠাতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে তারা যেটাই করেন, ৬ জুনের পর দুদক আইনের ২৬(১) ধারা অনুযায়ী বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের সম্পদ বিবরণী দাখিলের আদেশ জারি করা হতে পারে।

প্রসঙ্গত, এর আগেও দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক মন্ত্রী, এমপি, সচিব, শিল্পপতিসহ ‘হাইপ্রোফাইল’ অনেককেই দুদকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে মামলা দায়েরের পর। কারণ মামলার তদন্তকালে আসামিদের বক্তব্য নেওয়ার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তদন্ত সম্পন্ন করতে আসামিদের বক্তব্য নেওয়া বাধ্যতামূলক।

জাতীয়

বিশ্ববাজারের সঙ্গে সমন্বয় রেখে জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে সরকার। নতুন মূল্য অনুসারে কেরোসিন তেল প্রতি লিটারে ৭৫ পয়সা এবং পেট্রল ও অকটেন প্রতি লিটারে আড়াই টাকা বাড়ছে।

আগামী ১ জুন থেকে বাড়তি এ মূল্য কার্যকর হবে।

বৃহস্পতিবার (৩০ মে) রাতে এক প্রজ্ঞাপনে জ্বালানি তেলের নতুন মূল্য নির্ধারণ করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সরকার গত মার্চ থেকে বিশ্ববাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে স্বয়ংক্রিয় ফর্মুলার আলোকে প্রতিমাসে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় করছে। তারই ধারাবাহিকতার প্রাইসিং ফর্মুলার আলোকে ভোক্তা পর্যায়ে ডিজেল ও কেরোসিনের বিদ্যমান মূল্য প্রতি লিটারে ১০৭ টাকা থেকে ৭৫ পয়সা বাড়িয়ে ১০৭ টাকা ৭৫ পয়সা, পেট্রোলের বিদ্যমান মূল্য ১২৪ টাকা ৫০ পয়সা থেকে আড়াই টাকা বাড়িয়ে ১২৭ টাকা এবং অকটেনের বিদ্যমান মূল্য ১২৮ টাকা ৫০ পয়সা থেকে আড়াই টাকা বাড়িয়ে ১৩১ নির্ধারণ করা হয়েছে।

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য কিছুটা কমলেও মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে এ মূল্য সমন্বয় করতে হয়েছে বলেও প্রজ্ঞাপনে বলা হয়।

জাতীয়

ঢাকা দ্রুতগতির উড়াল সড়কের (ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে) নির্মাণ কাজের অংশীদার ইতালিয়ান-থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি লিমিটেডের শেয়ার হস্তান্তরে আপাতত স্থিতাবস্থাই থাকবে বলে আদেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ।

দেনা-পাওনা নিয়ে থাই ও চায়না কোম্পানির বিরোধ সিঙ্গাপুরের আরবিট্রেশন সেন্টারে প্রথম মিটিং হওয়া পর্যন্ত এই স্থিতাবস্থা বজায় থাকবে। বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে আট বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে ইতালিয়ান থাই কোম্পানির পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন, শেখ মোহাম্মদ মোরসেদ, ব্যারিস্টার ইমতিয়াজ ফারুক। চায়না কোম্পানির পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মোহাম্মদ মেহেদী হাছান চৌধুরী, ব্যারিস্টার মোস্তাফিজুর রহমান খান।

পরে মেহেদী হাছান চৌধুরী বলেন, ‘কোর্টকে আমরা বলেছি যে, কাজ তো বন্ধ হয়ে আছে। তখন কোর্ট বললেন, যেদিন আরবিট্রেশন প্রসেসের প্রথম সিটিং হবে সেদিন পর্যন্ত স্থিতাবস্থা থাকবে। অর্থাৎ আরবিট্রেশনের প্রথম মিটিংয়ের পর আর স্থিতাবস্থা থাকবে না, স্থিতাবস্থা না থাকলে শেয়ার হস্তান্তরে আর বাধা থাকবে না।’

এর আগে গত ১৬ মে এই উড়াল সড়কের নির্মাণ কাজের অংশীদার ইতালিয়ান-থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি লিমিটেডের শেয়ার হস্তান্তরের ওপর স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দেন আপিল বিভাগ। পক্ষগুলোকে ৩০ মে পর্যন্ত স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে বলা হয়। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ইতালিয়ান-থাই কোম্পানির করা এক আবেদনের শুনানি নিয়ে এ আদেশ দেওয়া হয়। এর আগে ইতালিয়ান-থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি লিমিটেডের শেয়ার স্থানান্তরের ওপর স্থিতাবস্থা তুলে দিয়ে ১২ মে রায় দেন হাইকোর্ট।

জাতীয়

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে নিষ্ঠা এবং সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে লাল-সবুজের পতাকাকে ৩৫ বছর ধরে বিশ্বের বুকে সমুন্নত রেখেছেন বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা। বিরোধপূর্ণ বিভিন্ন দেশে শান্তি এবং নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় তারা অঙ্গীকারবদ্ধ হয়ে কাজ করছেন। আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী হিসাবে নীল হেলমেটে জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে তারা শত্রæদের বিরুদ্ধে লড়ছেন। শান্তির প্রশ্নে তারা উন্নত মমশীর। প্রতিবছরের মতো আজও পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস।

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী বিশ্বের সব দেশের শান্তিরক্ষীদের অসামান্য অবদানকে এই দিনে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হচ্ছে।

১৯৮৮ সালে ইউএন ইরান-ইরাক মিলিটারি অবজারভেশন গ্রুপ (ইউনিমগ) মিশনে মাত্র ১৫ জন সেনা পর্যবেক্ষক পাঠানোর মাধ্যমে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়েছিল। এরপর থেকে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বাহিনী বেশ সুনাম ও কৃতিত্বের সঙ্গে শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ করে যাচ্ছে।

আইএসপিআর সূত্রে জানা গেছে, শান্তিরক্ষার ইতিহাসে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা বিশ্বের ৪৩টি দেশ ও স্থানে, ৬৩টি জাতিসংঘ মিশন সফলতার সঙ্গে শেষ করেছে। বর্তমানে ১৩টি দেশে ৬ হাজার ৯২ জন জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে ও কার্যক্রমে নিয়োজিত আছে, যার মধ্যে রয়েছে ৪৯৩ জন নারী। শুরু থেকে এ পর্যন্ত জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের মোট ১৬৮ জন শান্তিরক্ষী শহিদ হয়েছেন। এ বছর ৩ জন আহত শান্তিরক্ষীকে সম্মাননা দেওয়া হচ্ছে।

১৯৮৯ সালে নামিবিয়ায় মিশনের মাধ্যমে শান্তিরক্ষায় যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ পুলিশ। এরই মধ্যে পুলিশের প্রায় ২১ হাজার ৪৫৩ জন সদস্য বিভিন্ন দেশে শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালন করেছেন। এর মধ্যে নারী শান্তিরক্ষী রয়েছেন এক হাজার ৮১০ জন। সংঘাত ছাড়া শান্তি প্রতিষ্ঠায় তারা ব্যাপক প্রশংসা ও সুনাম কুড়িয়েছেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় বর্তমানে ৩৬৪ জন সদস্য কাজ করছেন। এর মধ্যে নারী রয়েছেন ১২০ জন।

পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, ২৩টি দেশে মিশনে পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন পুলিশ সদস্যরা। বর্তমানে ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো, মালি, সাইপ্রাস, সাউথ সুদান, সেন্ট্রাল আফ্রিকা ও লিবিয়ায় বাংলাদেশ পুলিশের ১২০ জন নারীসহ ৩৬৪ জন শান্তিরক্ষী নিয়োজিত আছেন। এ পর্যন্ত শান্তিরক্ষা মিশনে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে ২৪ জন পুলিশ সদস্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। আহত হয়েছেন ১২ জন।

পুলিশ সদর দফতরের পুলিশ সুপার ইনামুল হক সাগর বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ হাইতির ভূমিকম্প বিধ্বস্ত অসহায় মানুষের পাশে থেকে মানবিক সহায়তা দিয়েছে, আবার আফ্রিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে পুলিশি সেবা প্রদান, পুলিশের প্রতিষ্ঠানিক কাঠামো পুনর্বিন্যাস ও পুনর্গঠন এবং সক্ষমতা বৃদ্ধিতে অনন্য সাধারণ ভূমিকা রেখেছে, যা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে।

জানা গেছে, বিশ্বের সংঘাতময় অঞ্চলগুলোতে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৪৮ সালে জন্ম হয় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের। ওই বছরের ২৯ মে আরব-ইসরাইল যুদ্ধ বিরতি পর্যবেক্ষণের জন্য মধ্যপ্রাচ্যের সিনাই অঞ্চলে প্রথম জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষীদের মোতায়েন করা হয়েছিল। বিশ্বের ১২০টিরও বেশি দেশের সেনা, পুলিশ ও বেসামরিক নাগরিকরা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ করেছেন। যাদের মধ্যে অনেকে দায়িত্বপালনকালে নিহত হয়েছেন। বিভিন্ন দেশের শান্তিরক্ষীদের মহান আত্মত্যাগকে স্মরণ করে ২০০৩ সাল থেকে ২৯ মে বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।

কর্মসূচি: এবারও বাংলাদেশে দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে উদযাপিত করা হচ্ছে। সকালে শান্তিরক্ষীদের স্মরণে ‘শান্তিরক্ষী দৌড়-২০২৪’-এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবসের কর্মসূচি শুরু হবে এবং ১১টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে শহিদ শান্তিরক্ষীদের নিকটাত্মীয় ও আহত শান্তিরক্ষীদের সংবর্ধনা দেওয়া হবে। এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত/হাইকমিশনার, বাংলাদেশে নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী, তিন বাহিনী প্রধান, সংসদ-সদস্য, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও), পুলিশের মহাপরিদর্শক, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বসহ ঊর্ধ্বতন সামরিক ও অসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।

দিবসের মর্যাদা ও গুরুত্ব তুলে ধরে জাতীয় পত্রিকায় বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হবে। বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এবং বাংলাদেশে বেতারে বিশেষ আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

জাতীয়

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে দলীয় প্রতীক ‘নৌকা’ রাখেনি আওয়ামী লীগ। বিএনপিবিহীন নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতির বিষয় মাথায় রেখে দলীয় প্রার্থিতা উন্মুক্ত রাখা হয়। কিন্তু প্রথম দুই ধাপে ভোটার উপস্থিতি আশানুরূপ না হওয়ায় একরকম অস্বস্তিতে পড়েছে ক্ষমতাসীনরা। এমন পরিস্থিতিতে আজ অনুষ্ঠেয় তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ভোটার যাতে ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হন, সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিয়েছেন দলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা।

এদিকে তৃতীয় নির্বাচনে দলীয় সংসদ-সদস্যদের প্রভাব বিস্তার ও নিজেদের মধ্যে সংঘাত-সহিংসতার ঘটনা রোধ করতে আজও নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন তারা। দলের কেউ নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করলেই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক কাছে দাবি করে বলেন, প্রথম দুই ধাপে ভোটার উপস্থিতি অনেক ভালো ছিল। আশা করছি তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে সেই সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে। ভোটাররা কেন্দ্রে যাবেন এবং নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।

তিনি আরও বলেন, কৌশলগত কারণে এবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক দেওয়া হয়নি। প্রতীক না থাকায় নির্বাচনে প্রার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি হয়েছে। ফলে নির্বাচনটাও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হচ্ছে। মনে রাখতে হবে আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। কাজেই নির্বাচনে দলের একাধিক প্রার্থী প্রতিযোগিতা করলেও দলের অভ্যন্তরে বিভেদ-বিভাজন সৃষ্টির সুযোগ নেই। তবুও নির্বাচনে কেউ যেন বিশৃঙ্খলায় জড়িয়ে না পড়েন-সে বিষয়গুলো দলের দায়িত্বপ্রাপ্তরা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন বলেন, তৃতীয় ধাপের নির্বাচনও অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হবে। প্রথম দুই ধাপের চেয়ে ভোটার উপস্থিতও বৃদ্ধি পাবে। সাধারণ ভোটাররা স্বাধীনভাবে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দেবেন। এছাড়া কিভাবে ভোটার উপস্থিতি বৃদ্ধি করা যায় তা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। তবে দলের কেউ যদি নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করেন এবং নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করেন। অবশ্যই তাকে সাংগঠনিক শাস্তির আওতায় নিয়ে আশা হবে।

৮ মে প্রথম ধাপের ভোটগ্রহণের মধ্যদিয়ে শুরু হয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। প্রথম ধাপের নির্বাচনের ভোট কারচুপি, কেন্দ্র দখল, ফলাফল ঘোষণাসহ নানা অনিয়মের প্রশ্ন তোলেন পরাজিত প্রার্থীরা। নির্বাচনের আগে-পরে অনেক স্থানে সংঘাত-সহিংসতায় ঘটনাও ঘটে। ২১ মে দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে ভোটের মাঠে একই চিত্র দেখা যায়। বৃদ্ধি পায় সহিংসতা ও হতাহতের ঘটনা। কেন্দ্র দখল, প্রভাব বিস্তারসহ নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে অনেক সংসদ-সদস্যের বিরুদ্ধে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই বুধবার সারা দেশে ৮৭ উপজেলায় তৃতীয় ধাপের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে তৃতীয় ধাপের ২২ উপজেলায় ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। তৃতীয় ধাপের নির্বাচনেও সংঘাত-সহিংসতার শঙ্কা করা হচ্ছে।

বিএনপিবিহীন নির্বাচনে পর্যাপ্ত ভোটার উপস্থিতি নিয়ে অস্বস্তি রয়েছে আওয়ামী লীগে। দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনের ভোটার উপস্থিতি ছিল ৩৭.৫৭ শতাংশ। এর আগে প্রথম ধাপের নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল ৩৬.১০ শতাংশ। দুই ধাপের নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে আওয়ামী লীগের নানা উদ্যোগ কাজে আসেনি। আজ তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি আরও বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।

জাতীয়

কলকাতার নিউ টাউনের সঞ্জীবা গার্ডেনস আবাসনের যে ভবনে বাংলাদেশের এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার খুন হয়েছেন, সেই ভবনের সেপটিক ট্যাংকে থেকে উদ্ধার হওয়া মাংসের টুকরো ফরেনসিক স্টেটের জন্য বুধবারই (২৯ মে) ল্যাবে পাঠানো হবে। এই মাংস ‘মানুষ’র বলে প্রমাণ হলে ডিএনএ টেস্টের জন্য ডাকা হবে ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনারের মেয়ে ডরিনকে।

তারপরেই নিশ্চিতভাবে বলা যাবে সেটি এমপি আনারের মরদেহের খণ্ডিত অংশ কি না।
মঙ্গলবার (২৮ মে) রাতে এমনটাই বলেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) প্রধান হারুন অর রশীদ।

তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে মূল অপরাধীর কাছ থেকে যে যে তথ্য আমরা পেয়েছি; সেসব তথ্য নিয়েই কলকাতায় এসেছিলাম। আর সে কারণে বাংলাদেশ থেকে এসেই আমাদের প্রথম কাজ ছিল সঞ্জীবা গার্ডেনসের বিইউ ৫৬ নম্বর ফ্ল্যাট পরিদর্শন করা। পরিদর্শনের পরেই আমাদের তদন্তের ভিত্তিতে পশ্চিমবঙ্গের সিআইডি এবং কলকাতা পুলিশকে অনুরোধ করেছিলাম, এই ফ্ল্যাটের কারা প্লাম্বিং এবং বিল্ডিংয়ের কাজটা করেছে তা জানতে। পশ্চিমবঙ্গের সিআইডি এবং পুলিশ অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে আমাদের প্রতিটা দাবি-দাওয়া মেনে নিয়েছে।

তারপরই তাদের সহযোগিতায় এদিন সেপটিক ট্যাংক থেকে বেশ কিছু মাংসের টুকরো উদ্ধার হয়েছে। এটা ফরেনসিক বিভাগে পাঠানো হবে। তারপর ডিএনএ টেস্ট করা হবে। এরপরই আমরা নিশ্চিত হয়ে বলতে পারব সেটি এমপি আনারের দেহ কি না।

হারুন আরও বলেছেন, এ বিষয়ে সংসদ সদস্যের মেয়ে ডরিন আমার কাছে ফোনকল করেছিলেন। আমি তাকে বলেছি তৈরি হওয়ার জন্য। আসার জন্য প্রস্তুত হতে বলেছি। হয়তো অল্প ক’দিনের মধ্যেই তিনি চলে আসবে।

ডিবিপ্রধান বলেন, কলকাতায় খুব দ্রুত ফরেনসিক রিপোর্ট বের হয়ে যায়। এরপরই মৃত এমপি আনারের মেয়ে এবং ভাইকেও ডাকা হতে পারে। তারপরই আমরা এ বিষয়ে আপনাদের জানাবো।

সিআইডির তথ্যমতে, এদিন সেপটিক ট্যাংক থেকে মাংসের সাথে কিছু চুলও উদ্ধার হয়েছে। এ বিষয়ে ডিবি প্রধান বলেন, আমরা পুরো বিষয়টা জানি। তবে ফরেনসিক বা ডিএনএর জন্য এক টুকরো মাংস হলেই যথেষ্ট।

তিনি আরও বলেছেন, আমরা এখনই তল্লাশির কাজ শেষ করছি না। যেমন খাল বা বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশির কাজ চলছে, সেটা চলতে থাকবে।

মঙ্গলবার (২৮ মে) বিকেলে সঞ্জীবা গার্ডেনসের কর্মী পরিচয় দেওয়া সিদ্ধেশ্বর মন্ডল একদলা মাংস উদ্ধারের তথ্য জানান।

ওই সময় আবাসনটিতে স্থানীয় পুলিশ, সফররত বাংলাদেশের গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) টিম ও অন্যান্যরা অনুসন্ধান চালাচ্ছিলেন। ভবনের সেপটিক ট্যাংকে খোঁজ করা হচ্ছিল আনারের দেহাংশ। সেসময় ভবনটি থেকে তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে আসা সিদ্ধেশ্বর মন্ডলের কাছে পরিস্থিতি জানতে চায় । তিনি বলেন, ট্যাংক থেকে মাংস উদ্ধার হচ্ছে।

সিদ্ধেশ্বর মন্ডল বলেন, আমার ভগ্নীপতি ভূষণ শিকারী ট্যাংক পরিষ্কার করার দায়িত্বে ছিল। উদ্ধার হওয়া মাংস ওজনে তিন-চার কেজির মতো হবে।

বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলে রয়েছেন ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ, ডিবি ওয়ারী বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) আব্দুল আহাদ ও অতিরিক্ত উপ-কমিশনার সাহেদুর রহমান।

জাতীয়

বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হেনেছে ঘূর্ণিঝড় রিমাল। এতে ৮৪ লাখের বেশি মানুষ স্বাস্থ্য, পুষ্টি, স্যানিটেশন ও নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকিতে পড়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ৩২ লাখ শিশু।

সোমবার (২৭ মে) এক বিবৃতিতে এ কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশে ইউনিসেফ প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড়ে ভোলা, পটুয়াখালী ও বাগেরহাট সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানকার অনেক উপজেলা প্লাবিত হয়েছে। এই সংকটময় মুহূর্তে আমাদের একমাত্র প্রচেষ্টা, ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত শিশু ও তাদের পরিবারের কাছে প্রয়োজনীয় সাহায্য পৌঁছে দেওয়া।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ঘূর্ণিঝড়ের শুরু থেকেই মাঠে রয়েছে ইউনিসেফ। এ সময় ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় দ্রুত ও কার্যকর ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সরকারকে প্রাথমিক সতর্কতামূলক প্রচারণা ও প্রচেষ্টা থেকে শুরু করে সর্বাত্মক সহায়তা করছে। ক্ষতিগ্রস্ত কমিউনিটি ও আশ্রয়কেন্দ্রে বিতরণের জন্য ইউনিসেফ দেশব্যাপী ৩৫টি গুদামে পানি বিশুদ্ধিকরণ ট্যাবলেট, জেরিক্যান, মোবাইল টয়লেট, স্বাস্থ্যবিধি (হাইজিন) ও পরিবারের জন্য উপযোগী (ফ্যামিলি) কিটসহ বিভিন্ন সামগ্রী মজুত করে রেখেছে।

এছাড়া, আমাদের দুটি সেবাপ্রদানকারী দল (র‍্যাপিড রেসপন্স টিম) সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় মোতায়েনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে।

প্রাথমিক প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ইউনিসেফ রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও কক্সবাজারসহ উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের কাছে পৌঁছানোর পরিকল্পনা করেছে। তবে সব খাতে মেয়ে, নারী ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের তাৎক্ষণিক চাহিদা মেটাতে পর্যাপ্ত অর্থায়নের ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে আমরা সরকার ও অংশীজনদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি। পাশাপাশি প্রয়োজনে দ্রুত সহায়তা ও ত্রাণ দিতে সমন্বিত প্রচেষ্টা নিশ্চিত করছি। আমাদের অগ্রাধিকার হলো সবচেয়ে প্রান্তিক মানুষের জীবন রক্ষা করা ও তাদের কল্যাণ নিশ্চিত করা; বিশেষ করে শিশুদের, যারা এই ধরনের দুর্যোগের সময় সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকে।

এই কঠিন সময়ে বাংলাদেশের জনগণের পাশে দাঁড়াতে এবং ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাব মোকাবিলা করে ঘুরে দাঁড়াতে তাদের সহায়তা করতে প্রয়োজনীয় সবকিছু দিতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।