জাতীয়

নানা কর্মসূচিতে বাংলাদেশ স্মরণ করছে স্বাধীনতার স্থপতিকে।

সাতচল্লিশ বছর আগে ঘাতকের বুলেট যেদিন স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল, সেই শোকের দিনটি ফিরে এল আবার।

কালের নিয়মে ঘুরে আসা বাংলাদেশের শোকের দিন ১৫ অগাস্ট; গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে জাতি পালন করছে জনককে হারানোর দিনটি।

স্বাধীনতার চার বছরের মধ্যে ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট সেনাবাহিনীর একদল কর্মকর্তা ও সৈনিকের হাতে সপরিবারে জীবন দিতে হয় তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে।

তার পরিবারের ছয় বছরের শিশু থেকে শুরু করে অন্তঃসত্ত্বা নারীও সেদিন ঘাতকের গুলি থেকে রেহাই পায়নি।

জাতীয় এই শোকের দিনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়, পালিত হয় নানা কর্মসূচি।

ইতিহাসের জঘন্যতম সেই হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে শুধু স্বাধীনতার স্থপতিকেই হারায়নি বাঙালি, দীর্ঘ কালের শাসন-শোষণ থেকে মুক্ত হয়ে জাতীয় জীবনের যে অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছিল, তাও উল্টো পথে যাত্রা শুরু করে।

স্বাধীনতা বিরোধীশক্তি আবার জেঁকে বসে এদেশের বুকে, যে স্বপ্ন-চেতনায় স্বাধীন হয়ে ছিল দেশ, তাও হয় অবদমিত।

১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসন অবসানের পর পূর্ব পাকিস্তানে ছাত্রলীগ গঠনের মাধ্যমে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনায় আসেন তিনি।

এরপর বাহান্নর ভাষা আন্দোলন, চুয়ান্নর যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন ও ছেষট্টির ছয় দফা প্রণয়নে ভূমিকা রেখে এবং ১৯৬৮ সালে তথাকথিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার প্রধান আসামি হিসেবে শেখ মুজিব বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা হয়ে ওঠেন।

১৯৬৯ এর ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে কারামুক্ত হন শেখ মুজিবুর রহমান। এরপর তাকে বঙ্গবন্ধু খেতাবে ভূষিত করে ছাত্র-জনতা।

১৯৭১ সালের উত্তাল মার্চে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান) স্বাধীনতার ডাক দেন তিনি। তার নেতৃত্বে রক্তাক্ত সংগ্রামেই অভ্যূদয় ঘটে স্বাধীন বাংলাদেশের।

স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ এর ওই ঘটনার দুই দশকের বেশি সময় পর ১৯৯৬ সালে স্বাধীনতার নেতৃত্ব দেওয়া দল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগ পর্যন্ত সেই বঙ্গবন্ধুই থেকে যান অগোচরে, উপেক্ষিত থেকে যায় তার নীতি-আদর্শ। বিকৃত করা হয় ইতিহাস।

আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় ফেরার পর ১৫ অগাস্টকে ‘জাতীয় শোক দিবস’ ঘোষণা করলে রাষ্ট্রীয়ভাবে বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করার সুযোগ পায় বাংলাদেশ।

কিন্তু বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলের পাঁচ বছরে আবারও বাতিল করা হয় সেই শোকের দিবস। পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে হাই কোর্টের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৮ সাল থেকে দিনটি জাতীয় শোক দিবস হিসাবে পালিত হচ্ছে।

৪৭ বছর আগে সেই রাতে ঘাতকরা বঙ্গবন্ধু ছাড়াও স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব, তিন ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেল, শেখ কামালের স্ত্রী সুলতানা কামাল, শেখ জামালের স্ত্রী রোজী জামাল, বঙ্গবন্ধুর ছোট ভাই শেখ নাসেরকে হত্যা করে।

সেই রাতেই নিহত হন বঙ্গবন্ধুর বোনের স্বামী আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তার ছেলে আরিফ, মেয়ে বেবী ও শিশুপৌত্র সুকান্ত বাবু; বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে যুবনেতা শেখ ফজলুল হক মণি, তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মণি, নিকট আত্মীয় শহীদ সেরনিয়াবাত ও রিন্টু।

ধানমণ্ডির বাড়িতে পুলিশের বিশেষ শাখার সাব ইন্সপেক্টর সিদ্দিকুর রহমান ও নিরাপত্তা কর্মকর্তা কর্নেল জামিলকেও গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়।

বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা দেশের বাইরে থাকায় সে সময় প্রাণে বেঁচে যান। বঙ্গবন্ধুকে জন্মস্থান গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় দাফন করা হলেও পরিবারের অন্য সদস্যদের ঢাকার বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়।

<div class="paragraphs"><p>গুলিবিদ্ধ বঙ্গবন্ধুর লাশ ৩২ নম্বরে</p></div>

(গুলিবিদ্ধ বঙ্গবন্ধুর লাশ ৩২ নম্বরে)

১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ইতিহাসের নৃশংসতম এই রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের আত্মস্বীকৃত খুনিদের রক্ষায় ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছিল।

২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর বিচার শুরু হয়। তবে বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার পর মামলার গতি শ্লথ হয়ে যায়।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর মামলার বিচার চূড়ান্তভাবে শেষ করার পর ২০১০ সালে পাঁচ খুনির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। ২০২০ সালে ফাঁসি হয় আরেক খনি আবদুল মাজেদের।

অন্য আসামিদের মধ্যে রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে এবং নূর চৌধুরীর কানাডায় আছেন। তাদের ফিরিয়ে আনতে সরকারের তরফ থেকে যোগাযোগ করা হলেও যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা সরকারের সাড়া মেলেনি।

আরেক আসামি মোসলেম উদ্দিন পাকিস্তানে আছেন বলে তথ্য ছিল ইন্টারপোলের বাংলাদেশ শাখা ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোর (এনসিবি) কাছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশের তরফ থেকে যোগাযোগ করা হলেও পাকিস্তান কোনো জবাব দেয়নি। আর রশিদ ও ডালিম এখন কোথায় আছেন, সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো তথ্য এখনও জানতে পারেনি সরকার।

বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে আহ্বান রাষ্ট্রপতির

জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীকে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, “বঙ্গবন্ধু রাজনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের লক্ষ্যে সারাজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত ‘সোনার বাংলা’ প্রতিষ্ঠাই ছিল তার স্বপ্ন। এ লক্ষ্যে স্বাধীনতার এক বছরের মাথায় প্রণয়ন করেন একটি গণমুখী সংবিধান।

“বঙ্গবন্ধু শুধু একটি দেশই উপহার দেননি; তিনি সদ্য স্বাধীন একটি রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাঠামো কেমন হবে, তারও একটি যুগোপযোগী রূপরেখা প্রণয়ন করেছিলেন।”

বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের নানা দিক তুলে ধরে আবদুল হামিদ বলেন, “বঙ্গবন্ধু সবসময় জনগণের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস রাখতেন। উন্নয়ন ও স্ব-নির্ভরতা অর্জনে মানুষের ঐক্যবদ্ধ ও যৌথ প্রচেষ্টাকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতেন। বঙ্গবন্ধুর দেখানো সেই পথে তারই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে স্বনির্ভর দেশ গড়ার লক্ষ্যে। দেশকে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করতে তিনি ঘোষণা করেছেন ‘রূপকল্প ২০৪১’। বাংলাদেশের উন্নয়নের অনন্য মাইলফলক পদ্মা সেতু ইতোমধ্যে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলসহ আরো কয়েকটি মেগা প্রকল্পের কাজ খুব শীঘ্রই শেষ হবে এবং বাংলাদেশের উন্নয়ন ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় সূচিত হবে।”

“আমাদের দায়িত্ব হবে জ্ঞান-গরিমায় সমৃদ্ধ হয়ে বঙ্গবন্ধুর অসম্পূর্ণ কাজকে সম্পূর্ণ করে বাংলাদেশকে একটি সুখী ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করা। তাহলেই চিরঞ্জীব এই মহান নেতার প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা হবে। আসুন, জাতীয় শোক দিবসে আমরা জাতির পিতাকে হারানোর শোককে শক্তিতে রূপান্তর করি এবং তার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে নিজেদের আত্মনিয়োগ করি,” বলেছেন রাষ্ট্রপ্রধান।

গণতন্ত্রবিরোধীদের চক্রান্ত মোকাবেলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেছেন, “জাতির পিতার দূরদর্শী ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাঙালি জাতি পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙ্গে ছিনিয়ে এনেছিল আমাদের মহান স্বাধীনতা। সদ্য স্বাধীন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব যখন সমগ্র জাতিকে নিয়ে সোনার বাংলাদেশ গড়ার সংগ্রামে নিয়োজিত, তখনই স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী চক্র তাকে পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যসহ হত্যা করে।

“এই হত্যার মধ্য দিয়ে তারা বাঙালি জাতির ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও অগ্রযাত্রাকে স্তব্ধ করার অপপ্রয়াস চালায়। ঘাতকদের উদ্দেশ্যই ছিল অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের রাষ্ট্রকাঠামোকে ভেঙে আমাদের কষ্টার্জিত স্বাধীনতাকে ভূলুণ্ঠিত করা। এই জঘন্য হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত স্বাধীনতাবিরোধী চক্র ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু করে। তারা ইনডেমনিটি অর্ডিনেন্স জারি করে জাতির পিতার হত্যার বিচারের পথকে বন্ধ করে দেয়। জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে মার্শাল ল’ জারির মাধ্যমে গণতন্ত্রকে হত্যা করে; সংবিধানকে ক্ষত-বিক্ষত করে; হত্যাকারীদের পুরস্কৃত করে; বিদেশে দূতাবাসে চাকরি দেয়। স্বাধীনতাবিরোধী-যুদ্ধাপরাধীদের নাগরিকত্ব দেয়; রাষ্ট্রক্ষমতার অংশীদার করে; রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে পুনর্বাসিত করে। পরবর্তী অবৈধ সামরিক সরকার এবং বিএনপি-জামাত সরকারও একই পথ অনুসরণ করে।”

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফেরার পর জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের বিচার, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার পাশাপাশি দেশকে এগিয়ে নেওয়ার কথা বলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।

<div class="paragraphs"><p>আওয়ামী লীগের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনে&nbsp;শেখ হাসিনা</p></div>

(আওয়ামী লীগের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনে শেখ হাসিনা)

তিনি বলেন, “গত সাড়ে ১৩ বছরে আমরা দেশের প্রতিটি সেক্টরে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি অর্জন করেছি। এই সময়ে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছে। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশ বিশ্বে ‘রোল মডেল’ হয়েছে। আমাদের সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করার লক্ষ্য নিয়ে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।

“ঘাতকচক্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে হত্যা করলেও তার স্বপ্ন ও আদর্শের মৃত্যু ঘটাতে পারেনি। কিন্তু স্বাধীনতাবিরোধী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী এবং গণতন্ত্রবিরোধী চক্র এখনও নানাভাবে চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। এই অপশক্তির যে কোনো অপতৎপরতা-ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করে দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ও গণতন্ত্র রক্ষার জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকতে আমি সকলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”

জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ বলেন, “বাংলাদেশ ও বাঙালির বিভিন্ন ঐতিহাসিক দিবসের প্রায় সবই অর্জনের, গৌরবের; কিন্তু জাতীয় শোক দিবস হারানোর দিন, কলঙ্কের দিন।এই দিনে ইতিহাসের বর্বরোচিত ও মর্মান্তিক হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে স্বপরিবারে হত্যা করা হয় হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি ও স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধুকে।”

শোকাবহ এদিনে একটি সুখী-সমৃদ্ধ দেশ গড়ার প্রত্যয়ে সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।

দিনের কর্মসূচি

জাতীয় শোক দিবসে সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি ভবন, বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে।

তথ্য অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, সোমবার সকাল সাড়ে ৬টায় ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর প্রাঙ্গণে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাবেন প্রধানমন্ত্রী।

এরপর তিনি সকাল সাড়ে ৭টায় বনানী কবরস্থানে জাতির পিতার পরিবারের সদস্য ও অন্য শহীদের কবরে শ্রদ্ধা জানাবেন।

সকাল ১০টায় গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধিতে ফুল দেবেন প্রধানমন্ত্রী।

শোক দিবস উপলক্ষে বঙ্গভবনে হবে বিশেষ মিলাদ মাহফিল ও দোয়া অনুষ্ঠান। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এতে অংশ নেবেন বলে বঙ্গভবন থেকে জানানো হয়েছে।

শোক দিবসে সারাদেশের মসজিদগুলোতে জোহরের নামাজের পর বিশেষ মোনাজাত হবে। মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হবে।

জাতীয় দৈনিক ও সাময়িকীতে প্রকাশ করা হবে বিশেষ ক্রোড়পত্র। এছাড়া দিবসটি উপলক্ষে চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর পোস্টার প্রকাশ করেছে। সারাদেশে গণযোগাযোগ অধিদপ্তর বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের ওপর প্রামাণ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শন করবে।

তথ্য অধিদপ্তর বাংলাদেশ সচিবালয়ে সপ্তাহব্যাপী আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। বিভাগীয় পর্যায়েও আঞ্চলিক তথ্য অফিস আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশন শোক দিবস উপলক্ষ্যে বিশেষ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে।

সব সরকারি-বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উচ্চ বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, কলেজ, মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আলোচনা সভা, কবিতা পাঠ, রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, চিত্র প্রদর্শনী, হামদ-নাত প্রতিযোগিতা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করবে।

জাতীয় কর্মসূচির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আলোচনা সভা, দোয়া মাহফিলসহ অন্যান্য কর্মসূচি পালিত হবে।

রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করার উদ্যোগ নিয়েছে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দুস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণ করা হবে।

দিবসটি উপলক্ষে ১৬ অগাস্ট আলোচনা সভা করবে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। তাতে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সেই সভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

জাতীয়

শিশুদের সুরক্ষায় ৫-১১ বছর বয়সীদের টিকা দেওয়ার কার্যক্রম বাড়াতে কোভ্যাক্সের আওতায় এই টিকা অনুদান দেওয়া হচ্ছে।

দেশের শিশুদের জন্য দ্বিতীয় দফায় আরও ১৫ লাখ ডোজ ফাইজারের কোভিড-১৯ টিকা অনুদান দেওয়ার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

সোমবার ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ৫-১১ বছর বয়সী শিশুদের সুরক্ষায় টিকা দেওয়ার কার্যক্রম বাড়ানোর অংশ হিসাবে কোভ্যাক্সের আওতায় এই টিকা অনুদান দেওয়া হচ্ছে।

এর আগে ৩০ জুলাই যুক্তরাষ্ট্র সরকারের দেওয়া ফাইজার উৎপাদিত শিশুদের কোভিড টিকার ১৫ লাখ ডোজের চালান বাংলাদেশে আসে।

নতুন সহায়তা মিলিয়ে বাংলাদেশের জনগণের জন্য এ পর্যন্ত ৭ কোটি ৫০ লাখের বেশি কোভিড টিকা উপহার দেওয়ার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে পাওয়া কোভিড-১৯ টিকা অনুদানের দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি এসেছে যুক্তরাষ্ট্র ও আমেরিকার জনগণের পক্ষ থেকে।

জাতীয় কোভিড-১৯ টিকা কার্যক্রমের প্রতিটি ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র কাজ করছে জানিয়ে বলা হয়, এর মধ্যে ৫১ হাজারের বেশি স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী ও অন্যান্য কর্মীকে নিরাপদ টিকা প্রদানের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া ১৮টি ফ্রিজার ভ্যান, ৭৫০টি ফ্রিজার ইউনিট ও টিকা বহনকরার ৮ হাজার বাক্স অনুদান দেয়ার কথাও জানিয়েছে দূতাবাস।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, কোভিড-১৯ বিষয়ে উন্নয়ন ও মানবিক সহায়তা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র এই পর্যন্ত বাংলাদেশকে ১৪ কোটি ডলারেরও বেশি অনুদান দিয়েছে।

জাতীয়

নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার কমে পাঁচ শতাংশের নিচে নেমেছে।

দেশে গত একদিনে আরও ২৯৬ জন কোভিড রোগী শনাক্ত হয়েছেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে আরও তিনজনের।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, সোমবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৫ হাজার ৯২৯টি নমুনা পরীক্ষা করে এই ২৯৬ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। আগের দিন রোববার ২১৬ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছিল।

সোমবার নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার কমে পাঁচ শতাংশের নিচে নেমেছে। শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৯৯ শতাংশ। আগের দিন শনাক্তের হার ৫ দশমিক ১০ শতাংশ ছিল।

নতুন রোগীদের নিয়ে দেশে শনাক্ত মোট কোভিড রোগীর সংখ্যা বেড়ে ২০ লাখ ৭ হাজার ৬৩১ জন হয়েছে। তাদের মধ্যে ২৯ হাজার ৩০৭ জনের মৃত্যু হয়েছে করোনাভাইরাসে।

গত ২৪ ঘণ্টায় ৬৩৮ জন কোভিড রোগীর সেরে ওঠার তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তাদের নিয়ে এ পর্যন্ত সুস্থ হলেন ১৯ লাখ ৪৮ হাজার ৬৬৫ জন।

নতুন শনাক্ত ২৫৩ জনের মধ্যে ১২১ জনই ঢাকা জেলার বাসিন্দা। দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৩৮ জেলায় গত এক দিনে নতুন রোগী ধরা পড়েছে।

মৃতদের দুজন রাজশাহী ও সিলেট বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন। তাদের একজন পুরুষ ও দুজন নারী।

আগের সপ্তাহের তুলনায় গত সপ্তাহে শনাক্ত এবং মৃত্যু দুটোই কমেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত সপ্তাহে সারাদেশে ২ হাজার ৭৮ জন রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এর আগের সপ্তাহে এই সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৪৮২ জন। শনাক্ত কমেছে শতকরা ৪০ দশমিক ৩ শতাংশ।

গত সপ্তাহে ১৩ জনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। পূর্ববর্তী সপ্তাহে ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল করোনাভাইরাসে। সে হিসাবে আগের সপ্তাহের চেয়ে ৪৮ শতাংশ মৃত্যু কম হয়েছে।

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ে ২০২০ সালের ৮ মার্চ। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের ব্যাপক বিস্তারের মধ্যে গত বছরের ২৮ জুলাই দেশে রেকর্ড ১৬ হাজার ২৩০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়।প্রথম রোগী শনাক্তের ২৮ মাস পর বৃহস্পতিবার শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ২০ লাখ ছাড়ায়।

প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর ২০২০ সালের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ২০২১ সালের ৫ অগাস্ট ও ১০ অগাস্ট ২৬৪ জন করে মৃত্যুর খবর আসে, যা মহামারীর মধ্যে এক দিনের সর্বোচ্চ সংখ্যা।

বিশ্বে করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত মারা গেছে ৬৪ লাখ ১৮ হাজারের বেশি মানুষ। বিশ্বজুড়ে আক্রান্ত ছাড়িয়েছে ৫৮ কোটি ৪৬ লাখের বেশি।

জাতীয়

পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তারদের কাছ থেকে ওই নারীর মোবাইল ফোন ও মালপত্র উদ্ধার করা হয়েছে।

স্বামীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে নামিয়ে দিয়ে গাজীপুরের একটি বাসে নারীকে ধর্ষণের ঘটনায় চালক ও তার দুই সহকারীসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

শনিবার রাতে গাজীপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সানোয়ার হোসেন জানান, গ্রেপ্তারদের মধ্যে বাসের হেল্পার-চালক-কন্ডাক্টর ছাড়াও অন্য বাসের দুই কর্মী রয়েছেন।

তাদের পরিচয়সহ বিস্তারিত রোববার সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরা হবে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

সানোয়ার হোসেন জানান, শুক্রবার রাত সোয়া ৩টার দিকে ৮-১০জন যাত্রী নিয়ে গাজীপুর মহানগরের বাইপাস মোড় এলাকা থেকে তাকওয়া পরিবহণের একটি বাস শ্রীপুরের উদ্দেশে রওনা হয়।

বাসটিতে ধর্ষণের শিকার ওই নারী এবং তার স্বামীও ছিলেন। এক পর্যায়ে বিভিন্ন স্থানে অন্য যাত্রীদের বাস থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, “শ্রীপুরের মাওনা ফ্লাইওভারে পৌঁছার আগে ওই নারীর স্বামীকেও ভয়-ভীতি দেখিয়ে ও জোর করে বাস থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়।”

পরে বাসটি মাওনা হয়ে রাজেন্দ্রপুরের দিকে চলে যায় জানিয়ে তিনি বলেন, “পথিমধ্যে ওই নারীকে ধর্ষণ করে তার সঙ্গে থাকা মোবাইল, নগদ টাকা ও অন্যান্য মালপত্র রেখে রাজেন্দ্রপুরের কাছে নামিয়ে দেয়।”

এ ঘটনায় শ্রীপুর থানায় মামলা হলে অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পুলিশ কর্মকর্তা জানান, গ্রেপ্তারদের কাছ থেকে ওই নারীর মোবাইল ফোন এবং মালপত্র উদ্ধার করা হয়েছে। ওই বাসটিও জব্দ করা হয়েছে।

জাতীয়

জ্বালানির দাম বাড়ায় যানবাহনের ভাড়াও বেড়েছে। সিটি সার্ভিসে কিলোমিটার প্রতি বাড়ছে ৩৫ পয়সা।

দূরপাল্লায় ৪০ পয়সা করে বাড়বে।

শনিবার (৬ আগস্ট) রাতে ঢাকা পরিবহন মালিক সমিতির বৈঠক শেষে এ তথ্য জানা গেছে।

৪ ঘণ্টা বৈঠক শেষে ভাড়া সমন্বয়ের বিষয়ে গণমাধ্যমে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন সড়ক সচিব এ বি এম আমিনুল্লাহ নুরী।

সড়ক সচিব এ বি এম আমিনুল্লাহ নুরী বলেন, যাত্রী সাধারণের কথা চিন্তা করে ভাড়া যৌক্তিক পর্যায়ে রাখার চেষ্টা করেছি। অতিরিক্ত ভাড়া যেন আদায় না হয় সেজন্য ৭ জন ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে থাকবেন।

সড়ক পরিবহন সচিব এ বিএম আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, বৈশ্বিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। যেকোনো দেশের চেয়ে আমাদের জ্বালানি তেলের দাম কম।

পরিবহন মালিকদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, মূল্যবৃদ্ধির পরও তারা যানবাহন চালিয়েছে সারাদেশে। তারা ধর্মঘটে যাননি। ভাড়া যৌক্তিক পর্যায়ে রাখার চেষ্টা করছি।

বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মাদ মজুমদার বলেন, মূল্য নির্ধারণ কমিটি যাবতীয় কস্টিং এবং তেলের দাম বৃদ্ধির বিষয়টা বিবেচনা করে ভাড়া পুনঃ নির্ধারণের ব্যাপারে একমত হয়েছি। সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের অনুমতি নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, আগে দূরপাল্লার বাসের ভাড়া ছিল কিলোমিটার প্রতি ১ টাকা ৮০ পয়সা৷ এখন ভাড়া পুনঃ নির্ধারণ করা হয় ২ টাকা ২০ পয়সা। আর সিটি সার্ভিসে কিলোমিটার প্রতি ছিল ২ টাকা ১৫ পয়সা, এখন ২ টাকা ৫০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া ডিটিসিএ আওতাভুক্ত জেলাগুলোতে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ২ টাকা ৪০ পয়সা। এছাড়া বাস ও মিনিবাসের সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ ও ৮ টাকা বহাল রেখেছি। নতুন এ ভাড়া আগামীকাল (৭ আগস্ট) থেকে কার্যকর হবে।

তিনি আরও বলেন, দূরপাল্লার ভাড়া বেড়েছে ২২ শতাংশ। ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে ভাড়া বেড়েছে ১৬ দশমিক ২৭ শতাংশ। ডিটিসিএ আওতাভুক্ত এলাকায় ভাড়া বেড়েছে ১৭ শতাংশ।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এনায়েত উল্লাহ বলেন, আমাদের সবমিলিয়ে ব্যয় ৭০ শতাংশ বাড়লেও জনগণের কথা মাথায় নিয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছি। কেউ যদি অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ব্যবস্থা নিবে। মালিক সমিতিও কঠোর আছে এ বিষয়ে।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এনায়েত উল্লাহ, বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান রমেশ চন্দ্র ঘোষ, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী।

জাতীয়

এক সময় উপেক্ষিত বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উন্নয়নের সফল দৃষ্টান্ত। বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে কী অর্জন করা সম্ভব গত কয়েক দশকে দেশটি করে দেখিয়েছে। অপ্রত্যাশিত অবস্থান থেকে শুরু করেই বাংলাদেশ আজ সাফল্যের এক নিদর্শনে পরিণত হয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা, পরিবেশগত ঝুঁকি, দুর্নীতির মাত্রা বেশি থাকার পরও বহু দেশই বাংলাদেশের উন্নয়ন থেকে শিক্ষা নিতে পারে।

দ্য ফিন্যান্সিয়াল টাইমস পত্রিকার এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। ‘বাংলাদেশ উন্নয়ন সম্পর্কে অন্যদের যা শেখাতে পারে’ শিরোনামে নিবন্ধটি শুক্রবার প্রকাশিত হয়। এটি লিখেছেন দ্য ফিন্যান্সিয়াল টাইমস পত্রিকার আফ্রিকাবিষয়ক সম্পাদক ডেভিড পিলিং।

নিবন্ধে বলা হয়েছে, এমন একটি দেশের নাম বলুন তো যাদের মাথাপিছু আয় ৫০০ মার্কিন ডলারেরও কম। যে দেশে নারীদের গড়ে সন্তান সংখ্যা ৪.৫ জন এবং দেশের ৪৪ শতাংশ মানুষ চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করে? উত্তরটি হলো ’৯০-এর দশকের বাংলাদেশ। নানা সমস্যায় জর্জরিত সেই দেশটিই আজ অনেকখানি বদলে গেছে। মাথাপিছু জিডিপি বেড়েছে আটগুণ। নারীদের গড়ে সন্তান সংখ্যা দুজন। অর্থাৎ প্রতিটি সন্তানের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও তাদের ভালো রাখতে বাবা-মা এখন আরও বেশি ব্যয় করতে পারেন। ব্যাংকগুলোর কাছে শিল্প খাতে বিনিয়োগের মতো সঞ্চয়ও বেড়েছে।

দেশের নারীদের অবস্থানেও ঘটেছে ব্যাপক পরিবর্তন। মাধ্যমিকে এখন ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের সংখ্যাই বেশি। ১৯৭১ সালে দেশটি যখন স্বাধীন হয়, তখন প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন শিশু পাঁচ বছর পূর্ণ করার আগেই মারা যেত। বর্তমানে এই হার ৩০ জনের মধ্যে একজন শিশুতে নেমে এসেছে।

বাড়িয়ে বলা উচিত হবে না। বাংলাদেশ এখনো দরিদ্র একটি দেশ। রাজনৈতিক অস্থিরতা, পরিবেশগত ঝুঁকির পাশাপাশি দেশটিতে দুর্নীতির মাত্রাও অনেক বেশি। চলতি সপ্তাহেই দেশটি কয়েক বিলিয়ন ডলার ঋণগ্রহণে আইএমএফের দ্বারস্থ হয়েছে। কিন্তু যদি আরও বড় পরিসরে বাংলাদেশকে দেখা হয় তাহলে হেনরি কিসিঞ্জারের কাছে এক সময় ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ আখ্যা পাওয়া উপেক্ষিত দেশটি এখন উন্নয়নের সফল এক দৃষ্টান্ত।

যদিও খুব কম সময়েই দেশটিকে উন্নয়নের উদাহরণ হিসেবে উপস্থাপিত করা হয়, তবু আফ্রিকার বহু দেশই বাংলাদেশ থেকে শিখতে পারে। দক্ষিণ কোরিয়া ও সিঙ্গাপুরের কথা প্রায়ই উল্লেখ করা হলেও আফ্রিকার কোনো দেশ তাদের সাফল্যের ধারেকাছেও পৌঁছায়নি।

বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে কী অর্জন করা সম্ভব বাংলাদেশ সেই চিত্রই তুলে ধরে। যারা অতীত থেকে ভবিষ্যদ্বাণী করে, এমনকি পুরো মহাদেশকেই বাতিলের খাতায় ফেলে দেয় তাদের ভুলও ধরিয়ে দেবে এই দেশ। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতা লাভ করে বাংলাদেশ। কিন্তু সেই রেশ না কাটতেই দুর্ভিক্ষ ও রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের মতো বর্বর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে দেশটিকে যেতে হয়। সেই অপ্রত্যাশিত জায়গা থেকে শুরু করেই বাংলাদেশ আজ সাফল্যের এক নিদর্শনে পরিণত হয়েছে।

অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ডেভেলপমেন্ট ইকোনমিস্ট স্টেফান ডারকন বাংলাদেশের উন্নয়নের পেছনে তিনটি প্রধান কারণ চিহ্নিত করেছেন। প্রথমে রয়েছে দেশটির টেক্সটাইল শিল্প যার রপ্তানি ১৯৮৪ সালে ৩২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বেড়ে আজ ৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে। ২০২০ সালে বাংলাদেশ ৫৪টি আফ্রিকান দেশের সম্মিলিত পোশাক রপ্তানি আয়ের তুলনায় দ্বিগুণ আয় করেছে। দ্বিতীয়টি হলো রেমিট্যান্স। বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশিরা গত বছর ২২ বিলিয়ন ডলার দেশে পাঠিয়েছে। তৃতীয়ত, ব্র্যাক এবং গ্রামীণ ব্যাংকের মতো বেসরকারি সংস্থার ভূমিকা, যারা দরিদ্র জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে সহায়তার মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা প্রদান করে।

ডারকন তার গ্যাম্বলিং অন ডেভেলপমেন্ট বইয়ে লিখেছেন, এর কোনোটির পেছনেই সরকারের কোনো বৃহৎ পরিকল্পনা ছিল না। বরং সরকার সেখান থেকে দূরেই ছিল। উদাহরণস্বরূপ, সদ্যোজাত টেক্সটাইল শিল্পে সরকার যেমন হস্তক্ষেপ করেনি, তেমনি এনজিওগুলোকেও বিনা বাধায় কাজ করতে দেয় তারা। সত্যি বলতে, বাংলাদেশ নিজেদের সস্তা শ্রম ব্যবহার করে উন্নতি করেছে। কখনো কখনো এর জন্য ভয়ংকর মূল্যও দিতে হয়েছে। ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডিতে এক হাজারের বেশি গার্মেন্টকর্মী মারা যায়। তবে ব্রিটেনের ভিক্টোরিয়ান আমলের চরম অস্বাস্থ্যকর ও বিশৃঙ্খল বস্তিগুলোই হোক বা জাপানের মিনামাটা মার্কারি বিষের কেলেঙ্কারি, প্রতিটি শিল্পোন্নত দেশকেই এ ধরনের ভয়াবহতার মধ্য দিয়ে কখনো না কখনো যেতে হয়েছে।

রেনেসাঁ ক্যাপিটালের প্রধান অর্থনীতিবিদ চার্লি রবার্টসনও বাংলাদেশের উন্নয়ন সাফল্যের পেছনে তিনটি বিষয়কে চিহ্নিত করেছেন। এগুলো হলো-সাক্ষরতা, বিদ্যুৎ এবং জন্মহার। রবার্টসন তার দ্য টাইম ট্রাভেলিং ইকোনমিস্ট বইতে বলেন, ‘শিল্পোন্নয়নের পূর্বশর্ত হলো প্রাপ্তবয়স্কদের সাক্ষরতার হার ৭০ শতাংশের ওপরে থাকা, প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য ৩০০ কিলোওয়াট ঘণ্টার ওপর বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং জন্মহার তিনটি শিশুর কম থাকা-বাংলাদেশ এসব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ।

বাংলাদেশের জিডিপিতে ঋণের হার ৩৯ শতাংশ, যেখানে নাইজেরিয়ায় তা মাত্র ১২ শতাংশ। নাইজেরিয়ার প্রজনন হার যেখানে ৫.২ সেখানে বাংলাদেশের নারীদের প্রজনন হার গড়ে স্রেফ ২ শিশু। দক্ষিণ কোরিয়া ১৯৭৫ সালে যে জায়গায় ছিল, বাংলাদেশ আজ সে স্থানে দাঁড়িয়ে রয়েছে। বেশ কয়েকটি দেশ রবার্টসনের শর্তগুলো পূরণ করে বা পূরণ করার কাছাকাছি অবস্থানে রয়েছে। সৎ ও দূরদর্শী সরকার নিশ্চিতভাবেই উন্নয়নের পথে অপরিসীম ভূমিকা রাখে। তবে বাংলাদেশ দেখায় যে শ্বাপদসংকুল হলেও উন্নয়নের লক্ষ্যে চলার একটি কঠিন পথ রয়েছে।

জাতীয়

চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার বড়তাকিয়া রেলস্টেশনের এক কিলোমিটার এলাকায় ট্রেন ধাক্কায় মাইক্রোবাসের ১১ যাত্রী নিহত হয়েছেন। তাদের সবার বাড়ি চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার চিকনদন্ডী ইউনিয়নের আমানবাজার পূর্ব পাশে খন্দকিয়া গ্রামে। একসঙ্গে ১১ জন কিশোর ও যুবকের মৃত্যুতে স্তব্ধ হয়ে গেছে পুরো গ্রাম।

মিরসরাই এলাকায় ট্রেন ধাক্কায় মাইক্রোবাসের ১৬ আরোহীর ঘটনার খবর নিহতদের পরিবার তথা হাটহাজারীর খন্দকিয়া গ্রামে ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় শোকের ছায়া। এলাকাজুড়ে নেমে এসেছে অমানিশার অন্ধকার। এলাকা জুড়ে চলছে শোকের মাতম। নিহতের পরিবারের সদস্য, তাদের আত্মীয়-স্বজন ও এলাকায় আবাল বৃদ্ধ বনিতার আহাজারিতে খন্দকিয়া গ্রামের পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে।

ঘটনা সত্যতা নিশ্চিত করে চিকনদন্ডী ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান মো. হাসান জামান বাচ্চু বলেন, মিরসরাই উপজেলার পর্যটন স্পট খৈয়াছড়া ঝরনা দেখে পথে ট্রেনের ধাক্কায় আমার এলাকার ১১জন নিহত হয়েছে। করতে আমি দ্রুত চমেক হাসপাতালে ছুটে আসি। এদের মধ্যে ৫/৬ জনকে জরুরি বিভাগে আহত অবস্থায় আনা হয়েছে। তাদেরকে হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। তবে তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুত্ব।

শুক্রবার দুপুরে খৈয়াছড়া ঝরনা লেভেলক্রসিংয়ে উঠে পড়া পর্যটকবাহী মাইক্রোবাসে ট্রেনের ধাক্কায় ১১ জনের মৃত্যু হয়। আহত হয়েছেন আরও ৬ জন।

নিহতদের ১০ জনই হাটহাজারীর জুগিরহাট আর অ্যান্ড জে কোচিং সেন্টারের ছাত্র-শিক্ষক। বাড়ি হাটহাজারীর আমানবাজার খন্দকিয়া গ্রামে। তারা খৈয়াছড়া ঝরনা দেখে ফিরছিলেন।

নিহতরা হলেন- আর অ্যান্ড জে কোচিং সেন্টারের শিক্ষক মোস্তফা মাসুদ রাকিব (২৮), জিয়াউল হক সজীব (২৮), রিদোয়ান চৌধুরী (৩১) ও ওয়াহিদুল আলম জিসান (৩২)। শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষার্থী হিশাম (১৮), আয়াত (১৮), মারুফ (১৭), তাসফির (১৮) ও হাসান (১৯)। নিহত অন্যজন হলেন- মাইক্রোবাস চালক গোলাম মোস্তফা (৩৫), তিনি হাটহাজারী উপজেলার চিকনদণ্ডী এলাকার বাসিন্দা।

আহতরা হলেন- তাছমীর পাভেল (১৬), মো. মাহিম (১৮), মো. সৈকত (১৮), তানভীর হাসান হৃদয় (১৮), মো. ইমন (১৯) ও মাইক্রোবাসের চালকের সহকারী তৌকিদ ইবনে শাওন (২০)। তারা চমেক হাসপাতালের ২৪ ও ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী মহানগর প্রভাতি ট্রেনটি দুপুর দেড়টার দিকে ওই লেভেলক্রসিং পার হওয়ার মুখে পর্যটকবাহী মাইক্রোবাসটি লাইনে উঠে পড়ে। ট্রেনটি মাইক্রোবাসটিকে ধাক্কা দিলে তা ট্রেনের ইঞ্জিনের সঙ্গে আটকে যায়। ওই অবস্থায় মাইক্রোবাসটিকে প্রায় পৌনে এক কিলোমিটার পথ ছেঁচড়ে নিয়ে বার তাকিয়া স্টেশনের অদূরে থামে ট্রেনটি।

এরমধ্যেই মাইক্রোবাসের চালকসহ ১১জন মারা যান। স্থানীয়রা ছুটে এসে হতাহতদের উদ্ধার শুরু করে। পরে ফায়ার সার্ভিস, রেলপুলিশ ও থানা পুলিশের সদস্যরা এসে উদ্ধার কাজে যোগ দেন। আহতদের নেওয়া হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজিম উদ্দীন গণমাধ্যমকে জানান, পরিবারের লোকজনের আবেদনের প্রেক্ষিতে এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনায় ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।

জাতীয়

গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ পর্যন্ত দেশে করোনায় মোট মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ২৮৫ জনের।

এদিন নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ৩৫৫ জন। সব মিলিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ চার হাজার ৫৪৩ জনে।
শুক্রবার (২৯ জুলাই) বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো করোনা বিষয়ক এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এতে বলা হয়, ঢাকা সিটিসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল ও বাড়িতে উপসর্গ বিহীন রোগীসহ গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৬৯৬ জন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ১৯ লাখ ৪০ হাজার ৭৯৭ জন।

সারা দেশে সরকারি-বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৮৮০টি ল্যাবে গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ছয় হাজার ২৪টি এবং মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ছয় হাজার ৮৩টি। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে এক কোটি ৪৫ লাখ ৯৭ হাজার ৬৬১টি।

এতে আরও জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার পাঁচ দশমিক ৮৪ শতাংশ। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৭৩ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯৬ দশমিক ৮২ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার এক দশমিক ৪৬ শতাংশ।

গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত একজন পুরুষ। তার বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। তিনি ঢাকা বিভাগের সরকারি হাসপাতালে মারা গেছেন।

এতে আরও জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে এসেছেন ১৩১ জন এবং আইসোলেশন থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন ৯৮ জন। এ পর্যন্ত মোট আইসোলেশনে এসেছেন চার লাখ ৪৯ হাজার ৭২ জন। আইসোলেশন থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন চার লাখ ১৭ হাজার ১৮৯ জন। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ৩১ হাজার ৮৮৩ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে করোনা ভাইরাসের প্রথম রোগী শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রথম একজনের মৃত্যু হয়।

জাতীয়

ইতোমধ্যে লাবনীর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি ফরেনসনিক বিভাগে জমা দেওয়া হয়েছে; সেখানে তার ফোনের কললিস্ট চেক করে দেখা হবে।

এক সপ্তাহ পার হলেও মাগুরায় পুলিশ কর্মকর্তা খন্দকার লাবনী আক্তার ও মাগুরা জেলা পুলিশ লাইন্সে তার সাবেক দেহরক্ষী মাহমুদুল হাসানের মৃত্যুর রহস্যের জট খোলেনি।

তদন্তের অগ্রগতি জানতে চাইলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তদন্ত চলছে। ইতোমধ্যে লাবনীর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি ফরেনসনিক বিভাগে জমা দেওয়া হয়েছে। সেখানে তার ফোনের কললিস্ট চেক করে দেখা হবে।

এর বাইরে তারা সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য জানাতে পারেননি।

মাহমুদুল হাসানের দুলাভাই মো. সেলিম উদ্দিন বলেন, “এক সপ্তাহ চলে গেলেও আমার শ্যালকের আত্মহত্যার কারণটাই আমরা জানতে পারলাম না। আমরা মনে করি, মাগুরার পুলিশ সুপার মহোদয় একটু আন্তরিকতা দিয়ে চেষ্টা করলে অল্প সময়ের মধ্যেই এর কারণ উদঘাটন করা সম্ভব।”

ছুটিতে গ্রামের বাড়ি থাকা অবস্থায় গত ২০ জুলাই রাতে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি খন্দকার লাবনী আক্তারের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরদিন ২১ জুলাই সকালে মাগুরা পুলিশ লাইন্সের ব্যারাকের ছাদে নিজের অস্ত্রের গুলিতে প্রাণ হারান লাবনী আক্তারের সাবেক দেহরক্ষী কনস্টেবল মাহমুদুল হাসান।

লাবনী আক্তারের মৃত্যুর ঘটনা তদন্তের দায়িত্বে থাকা মাগুরার শ্রীপুর থানার এসআই নিলুফা ইয়াসমিন বলেন, “তদন্ত চলছে।”

এ বিষয়ে কোনো কিছু জানতে হলে এসপি অথবা ওসির সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।

লাবনী আক্তারের সাবেক দেহরক্ষী মাহমুদুল হাসানের মৃত্যুর ঘটনার তদন্তে আছেন মাগুরা সদর থানার ওসি (অপারেশন) সাইফুল ইসলাম।

তিনি বলেন, “তদন্ত চলছে; ঘটনাটি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।”

তবে এখনও মাহমুদুল হাসানের লাশের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাননি বলে ওসি জানান।

শ্রীপুর থানার ওসি প্রিটন সরকার বলেন, “সব কিছু মাথায় রেখেই আমরা তদন্ত কাজ চালাচ্ছি। এ বিষয়ে স্পষ্ট করে এখনও বলার সময় আসেনি।”

এডিসি লাবনী আক্তারের মৃত্যুর পর তার স্বামী ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক তারেক আব্দুল্লাহ দুই মেয়েকে নিয়ে ফরিদপুরে অবস্থান করছেন বলে জানিয়েছেন লাবনীর ছোট ভাই হাসনাতুল আজম প্রিন্স।

স্ত্রীর মৃত্যু সংবাদ শুনে ২১ জুলাই ভারত থেকে দেশে ফিরে আসেন ক্যান্সারাক্রান্ত তারেক। লাবনীর মরদেহ ২১ জুলাই দাফনের পরদিনই দুই মেয়েকে নিয়ে তিনি ফরিদপুরের বাসায় চলে যান।

জানতে চাইলে তারেক আব্দুল্লাহ বলেন, “বর্তমানে আমি মানসিকভাবে অত্যন্ত বিপর্যস্ত অবস্থায় আছি। এ মুহূর্তে এ বিষয়টি নিয়ে আমি কোনো কথা বলতে চাই না।”

তবে লাবনী আক্তারের বাবা প্রাক্তন স্কুলশিক্ষক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল আজম বলেন, “আর কোনো প্রশ্ন আপনারা আমাকে করবেন না। কারণ ঘটনার পর থেকে অনেক প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে আমি ক্লান্ত। মানসিকভাবে এখন আমি একদম ভেঙে পড়েছি। স্বামীর সঙ্গে পারিবারিক কলহের বিষয় ছাড়া আমার মেয়ের আত্মহত্যার পিছনে অন্য কোনো বিষয় আছে কিনা তা আমার কাছে স্পষ্ট নয়।”

জাতীয়

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, রাজনৈতিক শক্তি নির্বাচনে না এলে অপশক্তি মাথা চাড়া দেবে। অপশক্তি প্রতিহত করতে রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনী মাঠে থাকতে হবে।

তিনি আজ আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ে গণফোরামের সাথে সংলাপকালে বলেন, ‘আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক এবং অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে। আমরা আমাদের দায়িত্ব বলতে চাচ্ছি না। আমরা রাজনৈতিক নেতৃত্বে নেই, আমরা প্রশাসনিক সংগঠন। আমাদের কাজ হবে নির্বাচনে যাতে ভোটাররা নির্বিঘেœ গিয়ে তাদের ভোটাধিকার স্বাধীনভাবে প্রয়োগ করতে পারে, এই ব্যাপারে চেষ্টা করবো সর্বাত্মক। আপনাদেরও সহযোগিতা চাইবো। আপনাদের আমাদের সঙ্গে থাকতে হবে। নির্বাচনের মাঠে যদি আপনারাও থাকেন, আমরাও যদি থাকি, তাহলে কোনো অপশক্তিকে প্রতিহত, প্রতিরোধ করা সহজ হবে।’

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ১৭ জুলাই থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে ধারাবাহিকভাবে সংলাপ শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এই ধারাবাহিকতায় আজ গণফোরাম ছাড়া আরও ২টি দলের সঙ্গে ইসি সংলাপে বসে। দলগুলো হলো- বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ ও তরিকত ফেডারেশন।

গণফেরামের উদ্দেশ্যে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘রাজনীতি আপনারা নিয়ন্ত্রণ করেন। রাজনীতির সংস্কৃতি ধারণ করা, লালন করা আপনাদের দায়িত্ব। আপনাদের দায়িত্ব অনেক বড়। আপনাদের কাছে ছোট কিন্তু আমাদের কাছে অনেক বড়।’

তিনি বলেন, আমাদের মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা আছে, আমি নির্বাচন করবো এবং আমাকে জিততেই হবে। হারতে যে হতে পারে, এটা কিন্তু কেউ মেনে নিচ্ছে না। মনস্তাত্ত্বিক দৈন্য আমাদের মধ্যে আছে। তাই সহনশীলতা জাগ্রত করা না গেলে সংকট থেকে যাবে।

গণফোরামের নির্বাহী সদস্য মোকাব্বির খান এমপি’র নেতৃত্বে সংলাপে ১১ সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নেয়।

পরে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপের সঙ্গে সংলাপে বসে নির্বাচন কমিশন। সংলাপে বাংলাদেশ ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানির নেতৃত্বে ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নেয়।

এ সময় সংসদীয় আসন বাড়ানোসহ ১১টি প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (বাংলাদেশ ন্যাপ)। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে অনুষ্ঠিত সংলাপে দলের মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তাফা ভুইয়া প্রস্তাবগুলো তুলে ধরেন।

এদিকে জাতীয় সংসদের অর্ধেক আসনের নির্বাচনে ইলেক্ট্র্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহার চেয়েছে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন। এছাড়াও বিশেষ মনিটরিং সেল গঠনসহ ১১টি প্রস্তাব দিয়েছে দলটি।

দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি এমপি’র নেতৃত্বে ১১ সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নেন। দলের মহাসচিব ড. সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী লিখিত আকারে প্রস্তাবগুলো উত্থাপন করেন।

প্রস্তাবনায় তারা বলেন, ইভিএম সম্পর্কে ভোটারদের পরিচিতি আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে ইউনিয়ন, উপজেলা, থানা ও জেলা পর্যায়ে (ক্যাম্পিং) প্রচারণা ও প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করতে হবে। বিষয়টি প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া প্রচার প্রসারে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে।

সংলাপে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছাড়াও চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

আগামী ৩১ জুলাই রোববার সকাল ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত জাতীয় পার্টি ও বিকেল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সঙ্গে ইসির সংলাপে বসার কথা রয়েছে।