জাতীয়

আমরা অনেক সময় বাইরের কেনা মিনারেল ওয়াটার পান করি। আর ঘরে সাধারণত ফিলটার করা বা  ফুটানো পানিতেই আস্থা রাখি।

আমরা কি জানি ফিলটার করা পানি থেকে শুধু ময়লা এবং ব্যাকটেরিয়া দূর করা যায়। কিন্তু মিনারেল ওয়াটার নানারকম খনিজ যেমন সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালসিয়াম ইত্যাদিতে সমৃদ্ধ।

কাজেই বুঝতেই পারছেন যে, মিনারেল ওয়াটার যদি নিয়মিত পান করা যায় তা হলে শরীরের নানা উপকারে তা লাগে। তবে একথাও ঠিক যে প্রতিদিন মিনারেল ওয়াটারের জার বা বোতল কেনা সবার পক্ষে সম্ভব নয়। তবে খুব অল্প খরচে বাড়িতেই বানিয়ে নিতে পারেন মিনারেল ওয়াটার।

কীভাবে, জেনে নিন

উপকরণ 

ফিলটার করা পানি, বেকিং সোডা, এপসম সল্ট, পটাশিয়াম বাই-কার্বোনেট।

যেভাবে করবেন 

একটি পরিষ্কার পাত্রে ফিলটার করা পানি -২ লিটার, বেকিং সোডা -চা-চামচের ১৪, ইপসম সল্ট  চা-চামচের ১৪ এবং পটাসিয়াম বাইকার্বোনেট – চা-চামচের ১৪।

এবার সব উপকরণ খুব ভালো করে মিশিয়ে নিন। ১৫ মিনিট পর ছেঁকে বোতলে ভরে রাখুন আপনার বিশুদ্ধ-নিরাপদ পানি।

নিয়মিত মিনারেল ওয়াটার পানে পেট ফাঁপা, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, রক্তসঞ্চালন এবং হার্ট সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

জাতীয়

হাড় হলো শরীরের ভিত। আমাদের শরীর সুস্থ রাখতে হলে হাড় সুস্থ রাখতে হবে।

এছাড়া হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে ব্যথা থেকে শুরু করে হাড় ক্ষয়ের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমাদের জীবনযাপনের মধ্যেই এমন কিছু ভুল রয়েছে যা সমস্যা তৈরি করতে পারে। তাই আমাদের প্রতিটি মানুষকে হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে নিচের বিষয়গুলোর দিকে কড়া নজর দিতে হবে।

ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি

মাছ থেকে শুরু করে দুধ, মাংসের মতো খাবারে থাকে ভালো পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে। ক্যালসিয়াম হাড় মজবুত রাখতে সহায়তা করে। এছাড়া হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে চাইলে আপনি খেতেই পারেন ভিটামিন ডি। এই ভিটামিন একমাত্র সূর্যের আলো থেকেই পাওয়া যায়। তাই প্রতিটি মানুষের উচিত সকালে কিছুক্ষণের জন্য  সূর্যের আলোয় দাঁড়ান।

নিয়মিত ব্যায়াম

দেহের হাড় মজবুত রাখতে ব্যায়ামের বিকল্প নেই। ব্যায়ামের মাধ্যমেই হাড় শক্ত হয়। তাই প্রতিটি মানুষকে অবশ্যই হাড়ের স্বাস্থ্য মজবুত করতে চাইলে ব্যায়াম করতে হবে। তবে যেমন ইচ্ছা তেমন ব্যায়াম করে লাভ নেই। বরং ওয়েট ট্রেনিং করতে পারলে সব থেকে বেশি লাভ পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে দিনে ৩০ মিনিট ব্যায়াম করতেই হবে। নইলে শরীরে দেখা দিতে পারে সমস্যা।

কফি পান করতে হবে সীমিত

কফি খেতে আমরা সবাই ভালোবাসি। তবে এরপরও দেখা দিতে পারে সমস্যা। কারণ বেশি কফি পান করলে শরীর থেকে ক্যালসিয়াম দ্রুত বেরিয়ে যেতে শুরু করে। আর এটি প্রমাণিত হয়েছে বিভিন্ন গবেষণায়। তাই প্রতিটি মানুষকে কফি পান সীমিত করতে হবে।

খাওয়া যাবে না কাঁচা লবণ 

লবণ বেশি খেলে শরীরের হাড় ক্ষয় হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। এক্ষেত্রে অস্টিওপোরোসিসের আশঙ্কা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। তাই প্রতিটি মানুষকে সচেতন হতে হবে। কাঁচা লবণ কোনোভাবে খাওয়া যাবে না।

ধূমপান ছাড়ুন

ধূমপান শরীরে সমস্যা তৈরি করতে পারে। এক্ষেত্রে গবেষণা বলছে ধূমপান শরীরের হাড়ের ক্ষয়েরও কারণ হতে পারে। তাই এবার ধূমপান ছাড়ুন।

জাতীয়

দেশে গমের উৎপাদন বাড়াতে আন্তর্জাতিক ভুট্টা ও গম উন্নয়ন কেন্দ্র (সিমিট) এবং মেক্সিকোর বর্ধিত সহযোগিতা চেয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুস শহীদ।

তিনি বলেন, ভাত আমাদের প্রধান খাদ্য হলেও বছরে গমের চাহিদা বাড়ছে শতকরা ৭ থেকে ১১ ভাগ।

বুধবার মেক্সিকোর টেক্সকোকোতে সিমিটের সদর দপ্তরে ‘পরবর্তী সংলাপ-শক্তির বীজ’ বিষয়ক সম্মেলনে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। ওয়ার্ল্ড ফুড প্রাইজ ফাউন্ডেশন এবং সিমিট যৌথভাবে দুদিন ব্যাপী এ সম্মেলনের আয়োজন করে।

মন্ত্রী আরও বলেন, বাৎসরিক প্রায় ৭৫ লাখ টন চাহিদার এক পঞ্চমাংশ আমরা দেশে উৎপাদন করতে পারি। গম শীতকালীন ফসল হওয়ায় বোরো ধানসহ অন্যান্য শীতকালীন ফসলের সাথে প্রতিযোগিতায় গমের উৎপাদন পিছিয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় গমের উৎপাদন বাড়িয়ে ব্যাপক ঘাটতি পূরণ করতে হলে স্বল্পজীবনকালীন বা ১০০ দিনের মধ্যে হয় এ রকম অতি আগাম এবং তাপ ও লবণসহিষ্ণু গমের উন্নত জাত উদ্ভাবন করতে হবে। এক্ষেত্রে সিমিট এবং মেক্সিকোর বর্ধিত সহযোগিতা প্রয়োজন।
চাল ও ভুট্টা উৎপাদনে বাংলাদেশের বিশ্বস্বীকৃত সাফল্য তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, গত ৫০ বছরে দেশে চালের উৎপাদন বেড়েছে চার গুণের বেশি। এর ফলে এ সময়ের মধ্যে জনসংখ্যা ৭ কোটি থেকে বেড়ে বর্তমানে ১৭ কোটি হলেও দেশে চালের কোন ঘাটতি নেই।

তিনি বলেন, ভুট্টা উৎপাদনেও আমরা ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছি। গত ১৫ বছরে ভুট্টার উৎপাদন ৯ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

বর্তমানে বছরে প্রায় ৬৮ লাখ টন ভুট্টা উৎপাদিত হচ্ছে। আর এর বিপরীতে প্রতি বছর পোল্ট্রি, মাছ, প্রাণিখাদ্যসহ নানান কারণে দেশে ভুট্টার চাহিদাও বাড়ছে। সেজন্য ভুট্টার উৎপাদনও আমাদেরকে বাড়াতে হবে।

অনুষ্ঠানে সিমিটের মহাপরিচালক ব্রাম গোভায়ার্টস, ওয়ার্ল্ড ফুড প্রাইজ ফাউন্ডেশনের চিফ অপারেটিং অফিসার মাশাল হোসেন, মেক্সিকোর পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যালিসিয়া বার্সেনা ইবারা, মেক্সিকোর কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রী ভিক্টর ম্যানুয়েল ভিলালোবোস আরামবুলা, ইন্টার-আমেরিকান ইনস্টিটিউট ফর কো-অপারেশন অন এগ্রিকালচারের মহাপরিচালক ম্যানুয়েল ওটেরো, হন্ডুরাসের কৃষি ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী লরা এলেনা এস. টরেস প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব নাজিয়া শিরিন এসময় উপস্থিত ছিলেন।

পরে সাইডলাইন ইভেন্টে কৃষিমন্ত্রী মেক্সিকোর পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যালিসিয়া বার্সেনা ইবারা এবং মেক্সিকোর কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রী ভিক্টর ম্যানুয়েল ভিলালোবোস আরামবুলার সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন। বৈঠকে দুদেশের কৃষিখাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়। কৃষিমন্ত্রী সিমিটের গবেষণা ও মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রম ঘুরে দেখেন।

জাতীয়

সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতির সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ চলছে রাজধানীর শাহবাগে।

বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টার দিকে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে শাহবাগে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা ভুয়া ভুয়া স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে পুলিশের জলকামান ও সাঁজোয়া যানের উপর উঠে পড়েন ছাত্ররা। জলকামান ঘিরেই বিক্ষোভ করতে থাকেন তারা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীদের তিন দিক থেকে ঘিরে রেখেছে পুলিশ। অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসে বাংলামোটর অভিমুখী রাস্তায় অবস্থান নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

এর আগে বেলা ৪টা থেকেই শাহবাগ মোড়ের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের অবস্থান নিয়ে দেখা যায়। এ সময় শাহবাগ-বাংলা মোটর সংলগ্ন রোডে পুলিশ ব্যারিকেড দিলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

জাতীয়

বুধবার সকাল ৮টা থেকে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ১৬ জনের শরীরে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, এ সময় ৩১০ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ৫ দশমিক ১৬ শতাংশ।

আজ এক তথ্যবিবরণীতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা যায়নি। এ পর্যন্ত ২৯ হাজার ৪৯৮ জন করোনায় মৃত্যুবরণ করেছেন। করোনা ভাইরাস আক্রান্তদের মধ্যে এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ২০ লাখ ১৮ হাজার ৬৫৯ জন।

জাতীয়

সব কোটা বজায় রেখে সরকারি নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রয়োজন মনে করলে সরকার কোটার হার পরিবর্তন বা বাড়াতে-কমাতে পারে বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।

বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে জারি করা রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত ৫ জুন প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাসহ কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন অবৈধ করে বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দিয়েছিলেন।

রায়ের মূল অংশ বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) প্রকাশ করা হয়েছে। বাংলানিউজকে এ কথা নিশ্চিত করেছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ সাইফুজ্জামান (জামান)। যদিও এ রায়ের ওপর আপিল বিভাগের আদেশে চার সপ্তাহের জন্য স্থিতাবস্থা রয়েছে।

এক পৃষ্ঠার এ রায়ে আদালত ২০১৮ সালের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে বলেন, ২০১২ সালে করা এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে দেওয়া রায় ও আদেশ, যেটি ২০১৩ সালের লিভ টু আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগের বহাল ও সংশোধিত আদেশ এবং ২০১১ সালের ১৬ জানুয়ারির অফিস আদেশের আলোকে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান/নাতি–নাতনিদের জন্য কোটা পুনর্বহাল করতে বিবাদীদের নির্দেশ দেওয়া হলো। এছাড়া জেলা, নারী, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, উপজাতি–ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য কোটাসহ, যদি অন্যান্য থাকে, তাদের ক্ষেত্রে কোটা বজায় রাখতে নির্দেশ দেওয়া হলো। এ বিষয়ে যত দ্রুত সম্ভব, আদেশ পাওয়ার তিন মাসের মধ্যে পরিপত্র জারি করতে নির্দেশ দেওয়া হলো।

রায়ে হাইকোর্ট আরও বলেছেন, প্রয়োজনে উল্লিখিত শ্রেণির ক্ষেত্রে কোটা পরিবর্তন, অনুপাত বা শতাংশ কমানো বা বাড়ানোর বিষয়ে এই রায় বিবাদীদের জন্য কোনো বাধা তৈরি করবে না। যেকোনো পাবলিক পরীক্ষায় কোটা পূরণ না হলে সাধারণ মেধাতালিকা থেকে শূন্য পদ পূরণ করায় বিবাদীদের স্বাধীনতা রয়েছে।

নবম গ্রেড (পূর্বতন প্রথম শ্রেণি) ও ১০ম থেকে ১৩তম গ্রেডের (পূর্বতন দ্বিতীয় শ্রেণি) পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি বাতিল করে ২০১৮ সালে সরকার পরিপত্র জারি করে।

২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর জারি করা এ পরিপত্র চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে রিট দায়ের করেন অহিদুল ইসলামসহ সাত শিক্ষার্থী। একই বছরের ৭ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রুল জারি করেন। ওই রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে চলতি বছরের ৫ জুন রায় দেন হাইকোর্ট।

এরপর ওই রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করে। এর প্রতিবাদে দেশব্যাপী শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরু হয়। পরে গত মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির সভাপতি আল সাদী ভূঁইয়া এবং উর্দু বিভাগের শিক্ষার্থী আহনাফ সাঈদ খান চেম্বার কোর্টের অনুমতি নিয়ে একটি সিএমপি (হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে) আবেদন করেন। ওইদিনই আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে সেই আবেনের শুনানির জন্য বুধবার দিন ধার্য করেন চেম্বার আদালত।

এদিন (বুধবার) মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিষয়ে চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থা দেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ।

আগামী ৭ আগস্ট এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানি হবে। শুনানির সময় প্রধান বিচারপতি আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে বলেন, সব প্রতিবাদী কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের স্ব স্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে গিয়ে নিজ নিজ কাজে অর্থাৎ পড়াশোনায় মনোনিবেশ করতে বলা হয়েছে। দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রক্টর এবং অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানরা তাদের ছাত্র-ছাত্রীদের স্ব স্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরিয়ে নিয়ে শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করবেন বলে এ আদালত আশা করে।

আদালত আরও বলেন, স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদকারী ছাত্র-ছাত্রীরা চাইলে আইনজীবীর মাধ্যমে তাদের বক্তব্য এ আদালতের সামনে তুলে ধরতে পারে। আদালত মূল আবেদন নিষ্পত্তির সময় তাদের বক্তব্য বিবেচনায় নেবেন।

কিন্তু আন্দোলনকারী বিষয়টি নির্বাহী বিভাগের সঙ্গে সম্পর্কিত বলে আন্দোলন চলমান রাখার ঘোষণা দেন। এ অবস্থায় আজ বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের রায়ের আদেশ অংশ প্রকাশ করা হলো।

জাতীয়

ছাগলকাণ্ডে আলোচিত সমালোচিত মতিউর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের অঢেল সম্পদের কথা তো সবাই জানে। এদিকে কম যান না সাবেক রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউরের ঘনিষ্ঠ বান্ধবী হিসেবে পরিচিত আরজিনা খাতুনও।

আরজিনাও এনবিআরের কর্মকর্তা। রাজস্ব বোর্ডের মূসক মনিটরিং, পরিসংখ্যান ও সমন্বয়ের দ্বিতীয় সচিব তিনি। এর আগে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের উপ-কমিশনার ছিলেন।

মতিউরের মতোই অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। মতিউরের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে তিনি অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

আরজিনার বাবার বাড়ি রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার তালুকপাড়া গ্রামে। তার বাবা আহমেদ আলীর সংসার আগে মাছ শিকার আর চাষাবাদ করেই চলত।

দ্বিতীয় সচিব হিসেবে আরজিনা খাতুন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজে থাকার সময় কোটি কোটি টাকা অবৈধভাবে আয় করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ টাকায় তিনি ঢাকা ও রাজবাড়ীতে করেছেন স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি।
গত ১০ জুন আরজিনার দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদের খতিয়ান তুলে ধরে দুদকে অভিযোগ জমা দেন এক ব্যক্তি।

দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) করা অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, রাজধানীতে ফ্ল্যাট, গ্রামে আলিশান বাড়ি, পরিবারের সদস্যদের নামে-বেনামে জমি, বাসায় বিলাসবহুল ইন্টেরিয়র এবং দামি সব আসবাবপত্র করেছেন আরজিনা।

ছাগলকাণ্ডে ফেঁসে যাওয়া মতিউর রহমানের সঙ্গে সখ্য ও ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে এরই মধ্যে।

দুদকে দেওয়া অভিযোগে বলা হয়েছে, আমদানি পণ্য খালাসের নামে আরজিনা কিছু ব্যবসায়ী ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিতেন। অনেক সময় পণ্য খালাস না হলেও ফেরত দিতেন না ঘুষের টাকা। এভাবে দুর্নীতির টাকায় তিনি গড়েছেন কোটি কোটি টাকার সম্পদ। একই সঙ্গে স্বর্ণ চোরাকারবারিদের সঙ্গে যোগসাজশে হাতিয়েছেন প্রায় ছয় কোটি টাকার স্বর্ণ।

দুদকের কাছে অভিযোগ জমা পড়েছে, মাত্র তিন বছরে ৫০০ ভরি স্বর্ণালঙ্কারের মালিক হয়েছেন আরজিনা।

সম্প্রতি দুর্নীতি, অনিয়মের নানা অভিযোগ মাথায় নিয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন আলোচিত কর্মকর্তা মতিউর। তবে আরজিনার সঙ্গে তার একটি ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে। সেই ফোনালাপ থেকেই ছাগলকাণ্ডের মতিউরের সঙ্গে আরজিনা খাতুনের সম্পর্কের অনেক অজানা তথ্য উঠে এসেছে।

দুদকে দেওয়া অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, অবৈধ টাকায় ৫০০ ভরি স্বর্ণ কিনেছেন আরজিনা খাতুন। তার বার্ষিক আয়কর নথিতে উল্লেখ করেছেন, বিয়ের সময় ১০০ ভরি স্বর্ণ উপহার পেয়েছেন। কিন্তু তার কাবিননামায় এ স্বর্ণের কথা উল্লেখ নেই।

আরজিনা আগে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের উপকমিশনার ছিলেন। এক বছর আগে চট্টগ্রাম থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে বদলি করা হয় তাকে। চট্টগ্রামে থাকা অবস্থায় তার ঘুষের টাকা লেনদেনের বাহক ছিলেন তার বন্ধু আবু তাহের, গাড়িচালক শাহাজাহান আকতার ও অফিসের পিয়ন মো. ইলিয়াস।

অভিযোগে আরও বলা হয়, আরজিনা ১০০ ভরি স্বর্ণ কিনেছেন ঢাকার রয়েল মালাবার দোকান থেকে। বাকি স্বর্ণ কিনেছেন ঢাকার আপন জুয়েলার্স ও ডায়মন্ড ওয়াল্ড দোকান থেকে। বর্তমানে এসব স্বর্ণের দাম অন্তত ছয় কোটি টাকা। দেশের বেশ কয়েকটি ব্যাংকের লকার ও দোকানে স্বর্ণগুলো বন্ধক রেখেছেন তিনি।

অভিযোগে আরও বলা হয়, ঢাকার মিরপুরে দুই কোটি টাকায় একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন আরজিনা খাতুন। কিন্তু কেনার চুক্তিনামায় উল্লেখ করেছেন এক কোটি ২১ লাখ টাকা। এছাড়া ফ্ল্যাট কেনার পর সেখানে ইন্টেরিয়র ডিজাইনের পেছনে খরচ করেছেন ২৭ লাখ টাকা, ফ্ল্যাটের ইলেকট্রনিক ও ফার্নিচারের পেছনে ব্যয় করেছেন ৩৫ লাখ টাকা। ফ্ল্যাট কেনার এক বছর পর তিনি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন।

এছাড়া আরজিনার একটি প্রাইভেটকার থাকলেও ওই গাড়ি সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠান ‘আনবি লজিস্টিক লিমিটেডে’র নামে রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে। ওই সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ীও কাস্টমস কর্মকর্তার সঙ্গে দুর্নীতিতে জড়িত বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

দুদকে দেওয়া অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, কাস্টমসে চাকরির আগে আরজিনা খাতুনের বাড়ি ছিল ২০ ফুটের একটি টিনের ঘর। সম্প্রতি তার গ্রামের বাড়িতে ৯০ লাখ টাকায় করেছেন বড় দোতলা বাড়ি। আসবাবপত্র ও ইলেকট্রনিক খাতে ব্যয় করা হয়েছে আরও অন্তত ৩৫ লাখ টাকা।

অভিযোগে বলা হয়, আরজিনা খাতুন ও তার গ্রামের মো. আবু তাহের বাল্যবন্ধু। আবু তাহের ঢাকায় এয়ারপোর্টের কাছে কাওলা এলাকায় ব্যবসা করেন। আরজিনা চট্টগ্রাম কাস্টমসে থাকার সময় পিয়ন ইলিয়াস ও তার গাড়িচালক শাহজাহান আকতারকে দিয়ে টাকা পাঠাতেন দুটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে। একটি নিরো এন্টারপ্রাইজ, অপরটি বেঙ্গল ট্রেডিংয়ের নামে।

অভিযোগে আরও বলা হয়, আরজিনা তার বাবা আলী আহমেদের কাছে টাকা পাঠাতেন। তিনি তিন কোটি টাকায় আপন দুই ছোট ভাইয়ের নামে ৪০ বিঘা জমি কিনেছেন। বর্তমানে সেখান থেকে ৩০ বিঘা জমি বন্ধক রাখা হয়েছে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে আরজিনার গ্রামের বাড়ি বালিয়াকান্দি উপজেলার নারুয়া ইউনিয়নের তালুকপাড়া গ্রামের বাড়িতে কাউকে পাওয়া যায়নি।

তালুকপাড়া গ্রামের বেশ কয়েকজন বলেন, আহমেদ আলী একজন দিনমজুর। মাছ শিকার ও চাষাবাদ করে সংসার চালাতেন। দুই ছেলে ও এক মেয়ে তার। দুই ছেলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে চাকরি করেন। আর মেয়ে আরজিনা খাতুন অল্প দিনেই অনেক সম্পদ গড়ে তুলেছেন। নারুয়া বাজারে জমি কিনে ঘর তুলে ভাড়া দিয়েছেন। বালিয়াকান্দি ও রাজবাড়ী শহরেও বাড়ি করেছেন। মাঠে ১০-১২ পাখি (এক পাখি=২২ শতাংশ) জমি কিনেছেন। ব্যাংকে টাকা আছে কি না বলতে পারব না। তবে তিন ছেলেমেয়ে চাকরি করার পর অল্প কিছুদিনের মধ্যেই আর্থিক অবস্থা পাল্টে গেছে।

নারুয়া বাজারের ঘরের ভাড়াটিয়া ব্যবসায়ী আরজু বলেন, আরজিনার ভাই মতিন ও মেহের সেনাবাহিনীতে চাকরি করেন। জানা মতে, মতিন মিশন থেকে ফিরে বাজারের জমি কিনে টিনের ঘর বানিয়ে ভাড়া দিয়েছেন।

এ বিষয়ে আরজিনা খাতুন সাংবাদিকদের বলেন, আমি দুদকের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তারা অনেক বিচক্ষণ। তারা সব কিছু খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। আমি যদি অন্যায় করে থাকি, তাহলে শাস্তি পাব। ডিভোর্সের পর আমার সাবেক স্বামী আবু হেনা মো. রউফউল আজম এসব মিথ্যা অভিযোগ দিচ্ছেন। আমি এখন চরম অশান্তির মধ্যে রয়েছি। তবে দুদক ডাকলে তার জবাব দেব।

দুদক অভিযোগের অনুলিপি আরজিনাকে দিয়েছে বলে জানা গেছে। তবে এখনও আরজিনাকে ডাকা হয়নি। অভিযোগটি এখনও নথিভুক্ত না হলেও দুদক কর্মকর্তারা খোঁজখবর নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।

দুর্নীতির ‘সম্রাট’ অতিধূর্ত: অবৈধ সম্পদ বৈধ করতে নানা কারসাজি

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ‘দুর্নীতিবাজ’ সদ্য সাবেক প্রথম সচিব কাজী আবু মাহমুদ ফয়সালের পথ অনুসরণ করেছেন সাবেক দ্বিতীয় সচিব মেহরাজ উল আলম সম্রাট। বয়সে অনেকটা নবীন এ কর্মকর্তা দুর্নীতিতে অতি ধূর্ত। ফয়সাল স্ত্রী, শাশুড়ি, শ্যালকের নামে বিপুল সম্পদ করে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জালে আটকে গেছেন। কিন্তু একই পথে হেঁটে সম্রাট এখনো অধরা। অভিযোগ আছে, জ্ঞাতআয়বহির্ভূত কোটি কোটি টাকার সম্পদ বৈধ করতে তিনি নানা কারসাজি করেছেন। আশ্রয় নিয়েছেন জাল-জালিয়াতির। গৃহিণী স্ত্রী ও শাশুড়িকে পরিণত করেছেন ‘টাকা সাদা করার মেশিনে’। ঘনিষ্ঠজনরা বলছেন-শুধু নামে নয়, প্রকৃতপক্ষেই কাস্টমসে দুর্নীতি ও জাল-জালিয়াতির ‘সম্রাট’ হিসাবেই পরিচিত তিনি! এরপরও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সম্রাট শুদ্ধাচার চর্চার স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২০-২১ অর্থবছরে পেয়েছেন ‘শুদ্ধাচার পুরস্কার’।

দুদকের অনুসন্ধানে তার অবৈধ সম্পদ ও জালিয়াতির অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেলেও তা ‘ফাইলবন্দি’ আছে। প্রভাবশালী মহলের তদবিরে চলছে অভিযোগ পরিসমাপ্তির পাঁয়তারা। একই সঙ্গে প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলায় ২৩ জুন ৬ মাসের লিয়েনে যোগ দিয়েছেন এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকে (এডিবি)। দুদক থেকে প্রাপ্ত নথির সূত্র ধরে অনুসন্ধানে উল্লিখিত তথ্য পাওয়া গেছে।

জানতে চাইলে অনুসন্ধান কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক আতিয়া তমা বলেন, ‘মেহরাজ উল আলম সম্রাটের বিরুদ্ধে অভিযোগ অনুসন্ধান পর্যায়ে থাকায় আমি কোনো মন্তব্য করতে পারব না।’ এ বিষয়ে জানতে সংস্থার উপপরিচালক (জনসংযোগ) মো. আকতারুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার ওপর কোনো চাপ নেই। আমি কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।’

অনুসন্ধানকালে সম্রাটের ব্যক্তিগত ফাইল, স্ত্রী-শাশুড়ির আয়কর নথি ও দুদকে জমা হওয়া অভিযোগ সংশ্লিষ্ট নথিপত্র পর্যালোচনা করেছেন এ প্রতিবেদক। তাতে দেখা গেছে, বিসিএস ৩০তম ব্যাচে উত্তীর্ণ হয়ে ২০১২ সালের ৩ জুন তিনি কাস্টমস ক্যাডারে চাকরিতে যোগ দেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা সম্রাট চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কমিশনারেটে দায়িত্ব পালন করেন। এরমধ্যে এনবিআরের কাস্টমস শুল্কনীতি বিভাগের দ্বিতীয় সচিব ছিলেন ২ বছর। সংস্থাটির কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেলেও (সিআইসি) নিয়োগ পেয়েছিলেন। তখন এনবিআরের ভেতরে-বাইরে সমালোচনার ঝড় উঠে। কারণ যাদের বিরুদ্ধে ঘুস-দুর্নীতির অভিযোগ থাকে তাদের সাধারণত সিআইসিতে পদায়ন করা হয় না। দুদকে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে টানাহ্যাঁচড়া ও বেনজীর-মতিউর ইস্যুতে তোলপাড় শুরু হলে সম্রাটের ঘুস-দুর্নীতির ঘটনাও সামনে আসে। এমনকি দুদকের শুনানিতে তার হাজিরার ঘটনায় হইচই শুরু হলে তার শুদ্ধাচার পুরস্কারও প্রশ্নবিদ্ধ হয়। এ অবস্থায় নিজেকে বিতর্কের বাইরে রাখতে লিয়েন নিয়ে এডিবিতে যোগ দেন তিনি।

অভিযোগ আছে, চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজে থাকা অবস্থায় ঘুস-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন সম্রাট। এরপর স্ত্রী নাশিদ আলী ও শাশুড়ি রোকেয়া বেগমের নামে সম্পত্তি গড়তে শুরু করেন। অবৈধ উপায়ে অর্জিত কালোটাকা সাদা করতে চাকরিতে যোগদানের পরের বছরই ২০১৩ সালের ১৫ নভেম্বর শাশুড়ির নামে আয়কর ফাইল খোলেন। ১৪ সাল থেকে তার ফাইলে কক্সবাজার এলাকার জমি দেখানো শুরু হয়। একইভাবে স্ত্রীর আয়কর ফাইলেও বাড়তে থাকে সম্পত্তি। দুদক যেসব অভিযোগ খতিয়ে দেখছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, ভবিষ্যতে রিসোর্ট করার ভাবনা থেকে কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার মগনামা মৌজায় শাশুড়ির নামে অন্তত ১৬ কোটি টাকার জায়গা কেনেন সম্রাট। এই অভিযোগ অনুসন্ধানকালে ২০২১ সালে দাখিল করা সম্রাটের শাশুড়ি রোকেয়া বেগমের আয়কর ফাইলে দেখা গেছে, মগনামা মৌজার ১৯৯৫ খতিয়ানে ২৪ দশমিক ৩০৪ শতাংশ, ২০১৬ খতিয়ানে ৮ দশমিক ৫৯৭ শতাংশ, ৭৭ ও ৮৩ খতিয়ানে যথাক্রমে ৮৭ দশমিক ৫ ও ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ জমি রয়েছে। ওয়ারিশ সূত্রে এই জমি রোকেয়া বেগম পেয়েছেন বলে আয়কর ফাইলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে বিস্ময়কর তথ্য হচ্ছে, একই বছরে স্ত্রী নাশিদা আলীর আয়কর ফাইলে একই খতিয়ানের জমি ওয়ারিশ সূত্রে পাওয়া বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রতিটি খতিয়ানে শাশুড়ির চেয়ে স্ত্রীর জমির পরিমাণ বেশি। স্ত্রীর নামে মগনামা মৌজার ১৯৯৫ খতিয়ানে ৫৭ দশমিক ২৩২ শতাংশ, ২০১৬ খতিয়ানে ১৯ দশমিক ৩৯৯ শতাংশ ও৭৭ ও ৮৩ খতিয়ানে ১১১ দশমিক ২৫ শতাংশ দেখানো হয়েছে। এছাড়া শাশুড়ি ও স্ত্রী দুজনের ফাইলেই ৯৯৯, ৮৫৭ ও ৯৭৯ খতিয়ানে সমপরিমাণ ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ করে জমি দেখানো আছে। অভিযোগ আছে, সম্রাটের অবৈধ টাকা বৈধ করতে শুরুতে শাশুড়ির নামে জমি কিনে পরে স্ত্রীর নামে হস্তান্তর করা হয়। শাশুড়ির আয়কর ২০১৩ সালে খোলার সময় এসব জমি দেখানো হয়নি। এক সময় রহস্যজনক কারণে শাশুড়ির আয়কর ফাইলের স্থায়ী ঠিকানা কক্সবাজারের পেকুয়ার পরিবর্তে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ এলাকার অভিজাত ওআর নিজাম রোডের ৯৪ নম্বর বাড়ি দেখানো হয়েছে। আর শাশুড়ির টিন ফাইলে ব্যবহার করা হয়েছে সম্রাটের মোবাইল নম্বর।

আরও জানা গেছে, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় সি ব্লকের ১৫ নম্বর রোডের ২৯৭/ডি নম্বরে অবস্থিত বিলাসবহুল ‘নাভানা লুপিন’ নামের বহুতল বাড়িতে স্ত্রীর নামে ২ হাজার ৩৭২ বর্গফুট আয়তনের অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছেন সম্রাট। সুইমিংপুলসহ অভিজাত ভবনটির প্রতি বর্গফুট ১৪ হাজার টাকা হিসাবে দাম আসে ৩ কোটি ৩২ লাখ ৮ হাজার। কিন্তু আয়কর ফাইলে দলিলমূল্য দেখানো হয়েছে মাত্র ৮৪ লাখ ৩৮ হাজার ২০০ টাকা। এখানে মিথ্যা ঘোষণা দেওয়া হয়েছে ২ কোটি ৪৭ লাখ ৬৯ হাজার ৮০০ টাকা। স্ত্রী ও শাশুড়ির জন্য ঢাকার নামি দুটি জুয়েলারি থেকে কেনা হয়েছে কোটি টাকা দামে ১০০ ভরি স্বর্ণালংকার। এসব স্বর্ণালংকার আয়কর ফাইলে বিয়ের উপহার হিসাবে দেখানো হয়েছে। স্ত্রী ও শাশুড়ির আয়ের উৎস দেখাতেও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন সম্রাট। কক্সবাজারের লবণ চাষ থেকে শাশুড়ির বাৎসরিক আয় দেখানো হয়েছে ১০ লাখ টাকা। একই ব্যবসা থেকে স্ত্রীর আয়কর ফাইলেও ১০ লাখ টাকা আয় দেখানো হয়েছে। বাস্তবে তাদের লবণ চাষ ব্যবসার কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। এছাড়া স্ত্রী কোনো চাকরি না করলেও বেতন খাতে তার বার্ষিক আয় দেখানো হয়েছে ২ লাখ ৪৩ হাজার ৪৫৪ টাকা। এভাবে স্ত্রী ও শাশুড়িকে কালোটাকা সাদা করার মেশিন হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

ব্যাংক নথিতে সম্রাটের আরও জালিয়াতির ঘটনা পাওয়া গেছে। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা জনৈক হাসানের নামে পদ্মা ব্যাংকে একটি বেনামি অ্যাকাউন্ট খুলে ২০২২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ৫০ লাখ টাকার এফডিআর করেন সম্রাট। হাসানের স্থায়ী ঠিকানা কুমিল্লা। তবে অ্যাকাউন্ট খুলতে সম্রাটের মোবাইল নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে। এর আগে ২০২১ সালের ২৮ ও ২৯ ডিসেম্বর একই ব্যাংকে নিজের নামে ১০ লাখ করে মোট ৩০ লাখ টাকার তিনটি এফডিআর করেন সম্রাট। এছাড়াও শাহাজালাল ইসলামী ব্যাংক ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকে নামে-বেনামে অ্যাকাউন্ট খুলে বিপুল টাকা জমা রাখা হয়েছে। ওইসব অ্যাকাউন্ট খুলতেও সম্রাটের নামে থাকা ভিন্ন ভিন্ন মোবাইল নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএঅআইইউ) মাধ্যমে খবর নিলেই বেনামি অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত সব তথ্য পাবেন দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা।

বিআরটিএর নথিতে দেখা গেছে, গাড়ি রেজিস্ট্রেশনেও দুর্নীতি ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন সম্রাট। তার কেনা হুন্দাই টাকসন মডেলের বিলাসবহুল গাড়ি (ঢাকা মেট্রো ঘ-২১-৫১৫২) রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে শাশুড়ি রোকেয়া বেগমের নামে। মালিকের বাসার ঠিকানায় সম্রাটের বসুন্ধরার অ্যাপার্টমন্টের হোল্ডিং উল্লেখ করা হয়েছে। আর টিআইএন যোগাযোগে যে মোবাইল নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে সেটা ভুয়া। মো. ইমরান ইবনে মঞ্জু নামে এক যুবকের এনআইডি দিয়ে ওই মোবাইল নম্বর তোলা হয়েছে। মঞ্জুর বাড়ি রংপুর। আর ট্যাক্স টোকেনের জায়গায় সম্রাটের মোবাইল নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে। আর স্ত্রী নাশিদ আলীর ব্যবহৃত প্রিমিও মডেলের গাড়িটি (ঢাকা মেট্রো গ-২৬-৩১৯২) তার নামেই আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে কেনা হয়েছে। এছাড়া ইউসিবি ব্যাংকে স্ত্রীর নামে আছে ১০ লাখ টাকার এফডিআর।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে মেহরাজ উল আলম সম্রাট বলেন, ‘আমি যখন সিআইসিতে দায়িত্বে ছিলাম তখন আমার কাজে সংক্ষুব্ধ হয়ে একটি মহল আমার বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ করেছে। সেটা এখনো অনুসন্ধানাধীন। আমাকে দুদকে ডেকেছে আমি গিয়েছি। তবে আমার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ মিথ্যা। আমার স্ত্রী ও শাশুড়ির নামে কক্সবাজারে জায়গা শ্বশুরবাড়ির ওয়ারিশসূত্রে পাওয়া। এটা নিয়ে বিতর্কের কিছু নেই।’ ১২ বছরে আপনি কমবেশি এক কোটি টাকার কিছু বেশি বেতন পেয়েছেন, বসুন্ধরায় স্ত্রীর নামে সাড়ে তিন কোটি টাকার অ্যাপার্টমেন্ট কিভাবে কিনলেন-এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সাড়ে তিন কোটি টাকায় নয়, বাংলাদেশের বিদ্যমান আইনে মৌজা দামে আমি ফ্ল্যাট কিনেছি।’ পদ্মা ব্যাংকে একই দিনে আপনার বেনামে করা এফডিআরের ৫০ লাখ টাকার উৎস কি-এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি ৫০ লাখ টাকার এফডিআর করিনি। আমার মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে কারা এ এফডিআর করেছিল তা আমার জানা নেই।’ শাশুড়ি ও স্ত্রীর নামে গাড়ি কেনার বিষয়ে কি বলবেন-‘শাশুড়ির গাড়ি তিনি নিজেই কিনেছেন। ওটা আমার টাকায় কেনা নয়। আর স্ত্রী যখন চাকরি করতেন তখন তিনি তার টাকায় গাড়ি কিনেছেন। এগুলো তাদের আয়কর ফাইলে দেখানো আছে।’ অন্যান্য ক্ষেত্রে জাল-জালিয়াতির বিষয়ও তিনি অস্বীকার করেন।

জাতীয়

সম্প্রতি সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রেখে ঘোষিত হাইকোর্টের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আবারও মাঠের আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা। গত ৭ ও ৮ জুলাই ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি দিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক অচল করে দিয়েছে এই আন্দোলনকারীরা।

একইসাথে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট দিয়ে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেছেন তারা।
শুরুতে চার দফা দাবি নিয়ে নানা কর্মসূচি পালন করলেও ৭ জুলাই থেকে এক দফা দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা। আজ (৯ জুলাই) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এক দফা দাবির ব্যাখ্যা এবং সংশ্লিষ্ট বিষয় স্পষ্ট করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সমম্বয়কারীরা।

তারা জানান, শুরুতে ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল, কমিশন গঠন করে করে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল, কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহারের সুযোগ না দেওয়াসহ ৪ দফা দাবিতে তারা আন্দোলন করেছেন। সেখানে শুধু প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণী তথা ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেডের কথা ছিল। তবে এখন আর ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল মূলকথা নয়। বরং ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীসহ সকল গ্রেডে ‘অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক’ কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লেখিত অনগ্রসর গোষ্ঠী ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের কোটাকে ন্যায্যতার ভিত্তিতে ন্যূনতম পর্যায়ে এনে সংসদে আইন পাস করে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবি জানাচ্ছেন তারা।

তারা আরও জানান, এতদিন তারা আদালত থেকে সিদ্ধান্ত প্রত্যাশা করলেও নতুন দাবিতে আদালতের সম্পৃকতা নেই। বরং সরকারের নির্বাহী বিভাগের প্রতি তারা এই দাবি জানাচ্ছেন।

আন্দোলনের অন্যতম সমম্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, আমরা যে আন্দোলন করছি তা কোটা বাতিলের আন্দোলন নয়। বরং বাস্তবতার সাথে সমন্বয় রেখে কোটার যৌক্তিক সংস্কার আন্দোলন।

তিনি বলেন, এই আন্দোলন মুক্তিযুদ্ধ বা মুক্তিযোদ্ধা কোটা বিরোধিতা কী না-আমরা একাধিকবার এই প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছি। এই আন্দোলন মুক্তিযুদ্ধ বা মুক্তিযোদ্ধা কোটার বিরোধিত নয়। মুক্তিযুদ্ধ যারা করেছে, তারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। বাংলাদেশকে যে ধারণ করে সে কখনো মুক্তিযুদ্ধ বা মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানের প্রশ্নে আঙুল তুলতে পারে না। যারা আঙুল তোলে, তাদেরকে আমরা বাংলাদেশের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করতে চাই।

‘মুক্তিযোদ্ধাদের পুরস্কার নিয়ে আমরা প্রশ্ন তুলিনি। সরকার যদি মুক্তিযোদ্ধাদের সুবিধা আরও বিস্তৃত করতে চায়, আমরা তা স্বাগত জানাব। বরং মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিদের যে কোটা দেওয়া হয়েছে, আমরা তার বিরোধিতা করছি। ’

৫ শতাংশ কোটা থাকা যৌক্তিক

শিক্ষার্থীদের দাবিতে ‘অনগ্রসর ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন গোষ্ঠী’ এবং কোটাকে ‘ন্যায্যতার ভিত্তিতে ন্যূনতম পর্যায়ে’ নিয়ে আসার শব্দবন্দ নিয়ে অস্পষ্টতা তৈরি হয়। শিক্ষার্থীরা কত শতাংশ কোটা চান, তা নিয়ে নানা মতও দেখা যায়।

কাদের জন্য কোটা প্রণয়ন করা যেতে পারে এবং কত শতাংশ হবে, এ নিয়ে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, কোটাতে কাদের অন্তর্ভুক্ত করা যায় এ বিষয়ে আমরা শিক্ষক, নীতিনির্ধারক, আইনজ্ঞদের সাথে কথা বলেছি। গণমাধ্যমের সংবাদ বিশ্লেষণ ও টিভি-টকশো পর্যালোচনা করেছি। আমরা দেখেছি কোটা কেবল মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী এবং প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে হতে পারে। এই তিন ক্ষেত্র ছাড়া বাকি কোটাকে আমরা অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক বলে বিবেচনা করছি।

তিনি বলেন, কোটা কত শতাংশ হতে পারে, তা নিয়ে আমরা স্টেকহোল্ডারদের সাথে কথা বলেছি। আমরা মনে করছি ৫ শতাংশ কোটা ন্যূনতম এবং যৌক্তিক পর্যায়। সরকার যে স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখে সেখানে মেধাকেই গুরুত্ব দেওয়া উচিত। অর্থাৎ (সরকারি চাকরিতে) ৫ শতাংশ কোটা রাখা যেতে পারে।

তিনি বলেন, আমাদের এই আন্দোলন এখন গণমানুষের আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। অভিভাবক-কৃষক-শ্রমিক-রেমিটেন্স যোদ্ধারা আন্দোলনে সংহতি জানিয়েছেন। তারা চান, তাদের সন্তান যেন পড়াশোনা শেষে নিরাপদ কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে পারে। তারা দেখেছেন, এক্ষেত্রে কোটা একটি বাধা।

‘এছাড়া বাংলাদেশের সচেতন মহল মেধাভিত্তিক স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে কোটাকে সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ২০২১ সালের এক বিবৃতিতে বুয়েট জানিয়েছে, কোটা প্রথা চালু করলে বুয়েটের শিক্ষার মান ব্যহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা এসব থেকে নিশ্চিত হতে পারি, কোটা মেধাকে অতিক্রম করে গেলে বাংলাদেশের মান ব্যহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ’

২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল হলেও আন্দোলন চলবে

এদিকে ২০১৮ সালের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সভাপতি আল সাদী ভুইয়া এবং উর্দু বিভাগের শিক্ষার্থী আহনাফ সাঈদ খান।

তবে এই রিটের সাথে আন্দোলনের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে জানিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। একইসাথে আদালত থেকে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসলেও এক দফা দাবিতে আন্দোলন চলমান থাকবে বলেও জানান তারা।

আন্দোলনের সমন্বয়কারী আসিফ মাহমুদ বলেন, দুজন শিক্ষার্থী যে রিট করেছে, তা নিয়ে আমাদের কোনো মন্তব্য নেই। তাদের আদালতে যাওয়ার সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে। তারা ব্যাক্তিগতভাবে এই রিট করেছেন। এর সাথে আমাদের (বৈষম্যবিরোধী) ছাত্র আন্দোলনের কোনো সম্পর্ক নেই।

আরেক সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, আদালত যদি বুধবার পরিপত্র বহালও করে, তবুও আমাদের দাবি আদায় হচ্ছে না। আমরা সকল গ্রেডের চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবি জানিয়েছি। ফলে মহামান্য হাইকোর্টের শুনানি থেকে আমাদের দাবি পূরণ সম্ভব নয়।

‘আমরা এতদিন ১ম ও ২য় শ্রেণিতে কোটা বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি। তবে ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণিতে বৈষম্য আরও বেশি। ২০১৮ সালের পরিপত্রে সমস্যা ছিল বলেই হাইকোর্ট অবৈধ ঘোষণা করেছে। ফলে এখন এটিকে বহাল করা হলেও ভবিষ্যতে যে পুনরায় অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।

তিনি বলেন, এটা যেহেতু সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত। তাই আমরা নির্বাহী বিভাগ থেকে একটি সিদ্ধান্ত প্রত্যাশা করি। এটা হতে পারে কমিশন গঠন করার পরিপত্র। যদি লিখিত কোনো আশ্বাস দেওয়া হয়, তাহলে আমরা পড়ার টেবিলে ফিরে যাব।

সমম্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, আদালতের প্রতি আমাদের পূর্ণ বিশ্বাস রয়েছে। সরকার চাইলে (এক দফা দাবির উপর) নতুন পরিপত্র জারি করতে পারে। সে হিসেবে আমাদের আন্দোলন আর আদালতের প্রেক্ষাপটে নেই। আন্দোলন এখন নির্বাহী বিভাগ ও সরকারে প্রতি। যদি সরকার থেকে কোনো কমিশন গঠন করে কোটা সংস্কারের লিখিত পরিপত্র দেয়া হয়, তাহলেই আমরা আন্দোলন থেকে ফিরে আসব।

প্রসঙ্গত, সরকারি সকল গ্রেডের চাকরিতে কোটা প্রথাকে ৫ শতাংশে নামিয়ে এনে সংস্কারের দাবিতে আগামীকাল আবারও মাঠে নামছে শিক্ষার্থীরা। কাল সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করবেন। এদিন সকাল ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে শিক্ষার্থীরা জড়ো হবেন।

জাতীয়

শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেছেন দেশে মাধ্যমিক পর্যায়ের ৩০ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলতি বছরের শেষ দিকে অন্তত একটি করে ডিভাইস পৌঁছে দেয়া হবে।

আজ রাজধানীতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে জাতীয় পোর্টাল, বিষয়ভিত্তিক অনলাইন প্রশিক্ষণ ও নৈপুণ্য অ্যাপ ব্যবহার সংক্রান্ত প্রশিক্ষণের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ তথ্য জানান তিনি।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ৩০ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্মার্ট ক্লাস রুম স্থাপন করা হবে। এ বছর পাঁচ হাজার প্রতিষ্ঠানকে স্মার্ট ক্লাস রুম স্থাপনে নির্দিষ্ট অনুদান দেয়া হবে এবং প্রতিষ্ঠানসমূহ স্থানীয়ভাবে আরও অনুদান গ্রহণ করে স্মার্ট ক্লাস রুম স্থাপন করবে।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বেগম শামসুন নাহার, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব ড. মো. ফরিদ উদ্দিন আহমদ, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক এবং সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

জাতীয়

ভূমি সংক্রান্ত রাজস্ব ও দেওয়ানি মামলায় ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে, দেশব্যাপী ৬১টি জেলায় কেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের (সিএমএস) মাধ্যমে ভূমি মামলা ব্যবস্থাপনা করা হচ্ছে।

এ সিস্টেমের মাধ্যমে ভূমি রাজস্ব ও দেওয়ানি মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হচ্ছে। এ সিস্টেমের মাধ্যমে আদালত ও ভূমি অফিসগুলোকে একই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে আনার ফলে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।

মঙ্গলবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ের ভূমি ভবনের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত ‘রাজস্ব মামলা ব্যবস্থাপনা সিস্টেম বাস্তবায়নে অ্যালামসের সম্পৃক্ততা’ বিষয়ক এক কর্মশালায় সংশ্লিষ্টরা এসব তথ্য জানান।

কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভূমি সচিব মো. খলিলুর রহমান। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আনিস মাহমুদ।

ভূমি সচিব জানান, গত ৮ জুন ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ ঢাকা জেলায় কেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম উদ্বোধন করেন।

পরবর্তীতে ভূমিমন্ত্রীর নির্দেশে খুবই স্বল্প সময়ের মধ্যে সারা দেশে এ সিস্টেম চালু করা হয়েছে। সচিব জানান, এ সিস্টেমের মাধ্যমে মামলার তথ্যের বিবৃতি প্রস্তুতকরণ ও দাখিলকরণ এবং নথিজাত ও নিষ্পত্তি কার্যক্রম নিয়মিত অনলাইনে নিবিড়ভাবে মনিটর করা হচ্ছে।

তিনি জানান, শতভাগ ভূমি রাজস্ব ও দেওয়ানি মামলা কার্যক্রম সিএমএস সিস্টেমের মাধ্যমে পরিচালনা করা হবে।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (মাঠ প্রশাসন ও উন্নয়ন) জিয়াউদ্দীন আহমেদ এনডিসি, অতিরিক্ত সচিব (বাজেট) সায়মা ইউনুস, যুগ্ম সচিব (আইন) মো. খলিলুর রহমানসহ কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন ভূমি মন্ত্রণালয়, ভূমি সংস্কার বোর্ড এবং মাঠ প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা।

এতে অংশ নেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের ডিকেএমপি অনুবিভাগের ব্যবস্থাপনাধীন কর্মসূচি অ্যালামসের পরামর্শকরা এবং ভূমিসেবা ডিজিটাইজেশন ভেন্ডর প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা।

এ পর্যন্ত আড়াই লাখের বেশি মামলা কেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের ব্যবস্থাপনাধীনে আনা হয়েছে। ৫৭ হাজার ৬১০টি রাজস্ব মামলা সিএমএস সিস্টেমের ব্যবস্থাপনায় আনা হয়েছে। এর মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ২৮ হাজার ১৬৮টি মামলা, বাকি ২৯ হাজার ৪৪২টি মামলা চলমান রয়েছে।

অন্যদিকে ১ লাখ ৯৪ হাজার ৪৬টি দেওয়ানি মামলা সিএমএস সিস্টেমের ব্যবস্থাপনায় আনা হয়েছে। এর মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ১৩ হাজার ৫০৩টি মামলা, ১ লাখ ৮০ হাজার ৫৪৩টি মামলা চলমান রয়েছে।

ভূমি সিএমএসের মাধ্যমে চার ধরনের মামলা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে- দেওয়ানি মামলা, ভূমি রাজস্ব মামলা, আপিল মামলা এবং প্রশাসনিক মামলা। সিএমএস সিস্টেমটির ঠিকানা https://case.gov.bd।