জাতীয়

নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে আগামী সপ্তাহেই দেশের নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ বসছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

মঙ্গলবার বঙ্গভবনের একটি দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, আগামী সোমবার (২০ ডিসেম্বর) এই সংলাপ শুরু হবে। প্রথমদিনই রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি এই সংলাপে বসবে।

রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন সাংবাদিকদের জানান, রাষ্ট্রপতি একটি স্বাধীন-নিরপেক্ষ-গ্রহণযোগ্য-শক্তিশালী ও কার্যকর নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসছেন। প্রথম দিন জাতীয় পার্টির সঙ্গে আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

নির্বাচন কমিশন নিয়োগে আইন প্রণয়ন না হওয়ায় রাষ্ট্রপতি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সার্চ কমিটি গঠন করে ইসি গঠন করে আসছেন।বর্তমান কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি।এ সময়ের মধ্যেই রাষ্ট্রপতি নতুন কমিশন গঠন করবেন।

জাতীয়

রাজধানীর উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে চলাচল করেছে মেট্রোরেল।

আজ আগারগাঁও স্টেশন পর্যন্ত এই ট্রেন চলাচল শুরু হয়। এর আগে মিরপুর-১০ নম্বর পর্যন্ত মেট্রোরেলের পরীক্ষামূলক চলাচল সীমাবদ্ধ ছিল।

ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ( ডিটিএমসিএল) ব্যবস্থাপক এ বি এম আরিফুর রহমান জানান, বেলা ১০টা ৪০ মিনিটে দিয়াবাড়ি ডিপো থেকে ছেড়ে ১১টায় আগারগাঁও স্টেশন পৌঁছায়। এরপর ১২টা ১০ মিনিটে আগারগাঁ থেকে দিয়াবাড়ি ডিপোর উদ্দেশে ছেড়ে যায় মেট্রোরেলটি।

তিনি জানান, ‘প্রথম দফায় আমরা উত্তরা থেকে মিরপুর ১০ নম্বর পর্যন্ত মেট্রোরেল চালিয়েছি। এবার আগারগাঁও পর্যন্ত পরীক্ষামূলক চলবে। তবে এই পরীক্ষামূলক চলাচলে কোনো যাত্রী পরিবহন করা হবে না।

রাজধানীর মানুষ আগামী বছর ডিসেম্বরে মেট্রোরেলে যাতায়াত করতে পারবেন বলে গত বৃহস্পতিবার ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিক জানান।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পারফরম্যান্স টেস্ট তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। শুরুতে উত্তরা থেকে তিনটি স্টেশন পর্যন্ত চলাচল করে মেট্রোরেল। গত মাসে দ্বিতীয় ধাপে তা সম্প্রসারণ করে মিরপুর-১০ নম্বর পর্যন্ত ছয়টি স্টেশনে আসে। শেষ ধাপে রোববার আগারগাঁও পর্যন্ত পারফরম্যান্স টেস্ট শুরু হয়েছে।

এসব কোচে ৪৮ জন করে যাত্রী বসতে পারবে। মাঝখানের ৪টি কোচ হচ্ছে মোটরকার। এতে বসার ব্যবস্থা আছে ৫৪ জনের। সব মিলিয়ে একটি ট্রেনে বসে যেতে পারবে ৩০৬ জন। প্রতিটি কোচ সাড়ে ৯ ফুট চওড়া। মাঝখানের প্রশস্ত জায়গায় যাত্রীরা দাঁড়িয়ে ভ্রমণ করবে। দাঁড়ানো যাত্রীদের ধরার জন্য ওপরে হাতল এবং স্থানে স্থানে খুঁটি রয়েছে। সব মিলিয়ে একটি ট্রেনে বসে এবং দাঁড়িয়ে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৩০৮ যাত্রী চড়তে পারবে।

জাতীয়

কানাডার পর দুবাইয়ে ঢুকতে চেয়েও ব্যর্থ হয়ে দেশে ফিরেছেন সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান। রোববার (১২ ডিসেম্বর) বিকেল ৫টা ৪ মিনিটে এমিরেটসের ইকে-৫৮৬ নম্বর ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান তিনি।

বিমানবন্দরে নামার পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও ইমিগ্রেশনের কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়তে হয়েছে বিতর্কিত এ সংসদ সদস্যকে।

করোনার ডাবল ডোজ টিকার সনদ না থাকলেও কীভাবে বিমানবন্দর দিয়ে কানাডায় গেছেন এসব বিষয় নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লোকজন তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন বলে জানা গেছে। অন্যদিকে ট্রানজিটের যাত্রী হওয়ায় ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের মুখোমুখি হতে হয়েছে সদ্য প্রতিমন্ত্রিত্ব হারানো ডা. মুরাদকে।

জানা গেছে, ডা. মুরাদ হাসানকে কানাডায় ঢুকতে না দেওয়ার জন্য করোনার ডাবল ডোজের টিকার সনদ না থাকাও একটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ। যে কারণেই প্রশ্ন উঠেছে, ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট ও কোভিড প্রোটোকল না মেনে মুরাদ কীভাবে ঢাকা বিমানবন্দর থেকে কানাডায় গেছেন?

এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী ও হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক এ এইচ এম তৌহিদ-উল আহসানকে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা।

জবাবে তৌহিদ-উল আহসান বলেন, বিমানবন্দর দিয়ে যে যাত্রীই বাইরের দেশে যান সেসব বহির্গমন যাত্রীদের স্বাস্থ্য সনদ চেক করা, ভ্যাকসিনেশন সার্টিফিকেট চেক করার দায়িত্ব সিভিল এভিয়েশনের। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের নয়। আমরা ইমিগ্রেশন করি, যাত্রীদের সেবা দেই। ইমিগ্রেশন শাখা ইমিগ্রেশন করবে, স্বাস্থ্যের কাজ স্বাস্থ্য করবে। মুরাদ সংক্রান্ত তথ্য জানতে হলে আপনাদের যথাযথ কর্তৃপক্ষকে প্রশ্ন করলে তারা ভালো উত্তর দিতে পারবেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ও ইমিগ্রেশনের লোকজন কানাডায় যাওয়া-আসার বিষয় নিয়ে মুরাদ হাসানকে জিজ্ঞাসাবাদের কথা জানিয়েছেন বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলীও।

এর আগে বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর) দিনগত রাত ১টা ২১ মিনিটে কানাডার উদ্দেশে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছেড়ে যান মুরাদ হাসান। পরের দিন শুক্রবার কানাডার বিমানবন্দরে পৌঁছালে তাকে দেশটির বর্ডার সার্ভিস এজেন্সি ঢুকতে দেয়নি। পরে দুবাইগামী একটি ফ্লাইটে তাকে তুলে দেওয়া হয়। দুবাইয়ে ঢুকতে না পেরে অবশেষে দেশে ফেরেন তিনি।

প্রসঙ্গত, নারী বিদ্বেষী, অশালীন ও অবমাননাকর বক্তব্যের জেরে ৭ ডিসেম্বর তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর পদ ছাড়তে বাধ্য হন মুরাদ হাসান।

জাতীয়

করোনার টিকার বুস্টার ডোজ দেশে ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে শুরু করার আশাবাদ জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

শনিবার (১১ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর শ্যামলীর শিশু হাসপাতালে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাম্পেইন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ তথ্য জানান।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বুস্টার ডোজ শুরুর জন্য কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় পরামর্শক কমিটির সুপারিশের অপেক্ষায় রয়েছি। একইসঙ্গে সুরক্ষা অ্যাপ আপডেট করার কাজ চলছে। সবকিছু ঠিক থাকলে বুস্টার ডোজের কার্যক্রম ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে শুরু করা সম্ভব হবে।

জাহিদ মালেক বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বয়স্কদের বুস্টার ডোজ দেওয়া হচ্ছে। আমাদের দেশেও বয়স্ক জনগোষ্ঠীকে বুস্টার ডোজের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ষাটোর্ধ্ব ও ফ্রন্টলাইনারদের বুস্টার ডোজ দেওয়া হবে। তাদের তালিকা তৈরির কার্যক্রম চলছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের আরও সচেতন ও সতর্ক থাকতে হবে। এয়ারপোর্টে আমরা আরও জোরদার স্কিনিং করেছি। বর্ডারগুলোতেও আমরা স্কিনিং জোরদার করেছি। আফ্রিকার থেকে যারা দেশে আসবেন, তাদেরকে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনে থাকার জন্য ব্যবস্থা করেছি।

জাতীয়

সদ্য বিদায়ী তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান কানাডা ও দুবাই ঢুকতে না পেরে দেশে আসার প্রস্তুতি নিয়েছেন। তিনি দুবাই থেকে দেশে ফিরছেন।

সব কিছু ঠিক থাকলে দুবাই থেকে আগামীকাল রোববার (১২ ডিসেম্বর) সকাল ৮টা ২০ মিনিটে ঢাকায় ফিরবেন। একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সূত্রে জানা যায়, ডা. মুরাদ হাসান কানাডার বিমানবন্দরে পৌঁছালে তাকে দেশটির বর্ডার সার্ভিস এজেন্সি ঢুকতে দেয়নি। শুক্রবার দুপুর দেড়টায় মুরাদ টরন্টো পিয়ারসন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে তাকে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তাকে জানানো হয়, তার সেদেশে প্রবেশে অনেক কানাডিয়ান নাগরিক আপত্তি তুলেছেন। তারপর তাকে ফেরত পাঠানো হয়। পরে তাকে দুবাইগামী একটি প্লেনে তুলে দেওয়া হয়।

ডা. মুরাদ হাসান দুবাই ফিরে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ঢোকার চেষ্টা করেন। তবে ভিসা না থাকায় তিনি আরব আমিরাতে ঢুকতে পারেননি। পরে তিনি ঢাকায় আসার উদ্দেশে প্লেনের একটি  টিকিট কেটেছেন।

ডা. মুরাদ হাসান ৭ ডিসেম্বর প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন। ৯ ডিসেম্বর রাতে কানাডার উদ্দেশে তিনি কূটনৈতিক পাসপোর্টে ঢাকা ত্যাগ করেন৷

জানা যায়, নারীর প্রতি বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ও কয়েকটি অডিও ক্লিপ ফাঁসের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় ডা. মুরাদ হাসান প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন।

জাতীয়

মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বিভিন্ন অ্যাপস তৈরি করতে আইসিটি মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়েছে। যার ফলে নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানতে পারবে।

তিনি শুক্রবার সকালে মাদারীপুর মুক্তি দিবস উপলক্ষে সদর উপজেলার সমাদ্দার এলাকায় শহিদ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।

মন্ত্রী বলেন, শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে প্রত্যেকটি ইউনিয়ন পরিষদে নিজ নিজ ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধাদের নাম-ঠিকানা খোদাই করে টাঙিয়ে দেওয়া হবে। একইভাবে প্রত্যেক উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে ওই উপজেলার মুক্তিযোদ্ধাদের নাম এবং জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে জেলার সব মুক্তিযোদ্ধার নামের তালিকা লেখা থাকবে। এটা নিয়ে যেন কোনো বিভ্রান্তি না থাকে।

তিনি আরও বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের যেমন নাম-পরিচয় দেওয়া হবে, তেমনটি একাত্তর সালের রাজাকার, আলবদর, আল শামসদেরও নামের তালিকা টাঙিয়ে দেওয়া হবে। যেন আগামী প্রজন্ম তাদের কুকৃর্তির কথা জানতে পারে। এতে তারাই সিদ্ধান্ত নিতে পারবে, তারা কোন পথে চলবে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খান, জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন, বীর মুক্তিযোদ্ধা খলিলুর রহমান খান প্রমুখ।

জাতীয়

মৃত্যুপথযাত্রী বাবার সামনেই পায়ের জুতা খুলে দিয়ে এক আওয়ামী লীগ কর্মীকে নিজের গালে আঘাত করার নির্দেশ দিয়ে ফেঁসে গেলেন ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আরিফুজ্জামান বিপাশ। এ ঘটনায় পদ হারাতে হচ্ছে তাকে।

শুক্রবার রাত ৮টার দিকে এ খবর নিশ্চিত করেছেন ঝিনাইদহ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রানা হামিদ।

তিনি জানান, হাসপাতালে ভর্তি মুর্মূষু বাবার বেডের পাশে বসে পায়ের জুতা খুলে দিয়ে হোসাইন নামের এক কর্মীকে নিজের গালে আঘাত করার দৃশ্য ধারণ করে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনাটি দুঃখজনক। এ কারণে জড়িত ব্যক্তির বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

ভিডিওতে দেখা যায়, প্রথমে পা ধরে মাফ চাচ্ছেন হোসাইন নামের ওই কর্মী। কথোপকথনের একপর্যায়ে পা থেকে জুতা খুলে দেন উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি। হোসাইনকে নিজের গালে সেই জুতা দিয়ে আঘাত করার নিদের্শ দেন তিনি। নির্দেশ পালনে কয়েকবার নিজের গালে আঘাত করেন হোসাইন।

মৃত্যুপথযাত্রী বাবার চোখের সামনেই ঘটনাটি ঘটে গেল। সেখানে মা ফাতেমা খাতুন বোবা হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। কিছুই করার ছিল না তার। ছেলেকে জুতাপেটা করতে দেখে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন বাবা।

অমানবিক এ ঘটনটি ঘটেছে ৭ ডিসেম্বর রাত অনুমান ১২টার দিকে ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। শুক্রবার বিকাল ৪টার দিকে যশোর হাসপাতালে মৃত্যু হয় হোসাইনের বাবার।

এলাকায় আওয়ামী লীগের নিবেদিত এক কর্মী হিসেবে এসএম সরকার ওরফে হোসাইন পরিচিত। তার বাড়ি উপজেলার যাদবপুর গ্রামে। ঢাকায় ছোটখাটো কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি। এক ছেলে এক মেয়ের জনক তিনি। বাবা গিয়াস উদ্দিন সরকার অসুস্থ। দুই ছেলে এক মেয়ের পিতা তিনি। বাবার অসুস্থতার খবর পেয়ে ছুটে এসেছেন সবাই।

হোসাইনের ভগিনীপতি মোমিন জানান, মহেশপুর উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আরিফুজ্জামান বিপাশ পা থেকে জুতা খুলে দিয়ে হোসাইনকে নিজের গালে আঘাত করার নিদের্শ দেন। নিরুপায় হয়ে কাজটি করেন হোসাইন। এর আগে পা ধরে মাফ চায়।

মোমিন আরও জানান, যখন ঘটনাটি ঘটে তখন হোসাইনের বাবা গিয়াস উদ্দিন সরকার মৃত্যুশয্যায়। হাসপাতালে চিকিৎসা চলছিল তার।

৬ ডিসেম্বর বিকালে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। অবস্থার অবনতি হলে ৮ ডিসেম্বর মহেশপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে যশোর হাসপাতালে নেওয়া হয় তাকে। সেখানে শুক্রবার বিকাল ৪টার দিকে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। রাত সাড়ে ৮টার দিকে নিজ বাড়ির কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে তার লাশ।

মোমিনের দেওয়া তথ্যমতে, ফেসবুকে লেখালেখির সূত্র ধরে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি বিপাশের সঙ্গে হোসাইনের বিরোধ চলে আসছিল। সাবেক এমপি নবী নেওয়াজের সর্মথক তিনি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পিতা গিয়াস সরকারের বেডের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন হোসাইন। পরে সেখানে আসেন মহেশপুর উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আরিফুজ্জামান বিপাশসহ কয়েকজন। হোসাইনকে সহজেই বাগে পেয়ে যান তারা। শাস্তি হিসেবে জুতাপেটা।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, হোসাইন নিজের গালে জুতা দিয়ে আঘাত করছেন। সেই দৃশ্য ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েও দিলেন আরিফুজ্জামান বিপাশের লোকজন। শেষ পর্যন্ত পদ হারাতে হচ্ছে তাকে। বিপাশের বক্তব্য জানার জন্য ফোন করা হলেও রিসিভ করেননি তিনি।

জাতীয়

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৮ হাজার ১৭ জনে।

শুক্রবার বিকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ২৬৯ জনের শরীরে করোনা ধরা পড়েছে। এ নিয়ে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ৭৮ হাজার ৮১৯ জনে।

দেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গত বছরের ৮ মার্চ। প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর গত বছরের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সেই বছর সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছিল ৬৪ জনের।

ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ায় চলতি বছর জুন থেকে রোগীর সংখ্যা হু-হু করে বাড়তে থাকে। ২৮ জুলাই একদিনে সর্বোচ্চ ১৬ হাজার ২৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল।

চলতি বছরের গত ৭ জুলাই প্রথমবারের মতো দেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়ে যায়। এর মধ্যে ৫ ও ১০ আগস্ট ২৬৪ জন করে মৃত্যু হয়, যা মহামারির মধ্যে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু।

বেশকিছু দিন ২ শতাধিক মৃত্যু হয়। এরপর গত ১৩ আগস্ট মৃত্যুর সংখ্যা ২০০ এর নিচে নামা শুরু করে। দীর্ঘদিন শতাধিক থাকার পর গত ২৮ আগস্ট মৃত্যু ১০০ এর নিচে নেমে আসে।

২০২০ সালের এপ্রিলের পর চলতি বছরের ১৯ নভেম্বর প্রথম করোনাভাইরাস মহামারিতে মৃত্যুহীন দিন পার করে বাংলাদেশ।সর্বশেষ দ্বিতীয়বারের মতো গেল বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর) মৃত্যুশূন্য দিন পার করেছে দেশ।

জাতীয়

রাজধানী ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার যানজট নিরসনে আরেকটি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হবে। এটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘ঢাকা ইস্ট-ওয়েস্ট এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প’।

সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব (পিপিপি) ভিত্তিতে এই মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে সরকার। ১৬ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয়ের প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে সরকারের সেতু বিভাগ।

বুধবার অর্থনৈতিক বিষয় ও সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে প্রকল্পটির নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে একথা জানান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। অর্থনৈতিক বিষয় এবং সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভায় অর্থমন্ত্রী ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন।

ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভারের বালিয়াপুর থেকে নিমতলী-কেরানীগঞ্জ-ফতুল্লা-বন্দর হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের লাঙ্গলবন্দ পর্যন্ত হবে এই এক্সপ্রেসওয়ে। প্রায় ১৬ হাজার ৩৮৯ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ৩৯ দশমিক ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই এক্সপ্রেসওয়ে।

সভা শেষে অনুমোদিত ক্রয় প্রস্তাবের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের আতিরিক্ত সচিব মো.সামসুল আরেফিন।

কবে নাগাদ ঢাকা ইস্ট-ওয়েস্ট এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শুরু হবে- সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত সচিব শামসুল আরেফিন বলেন, ‘নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এখন টেন্ডারে দেওয়া হবে।’

টেন্ডারে দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে শামসুল আরেফিন বলেন, বেশকিছু প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে আগ্রহ দেখিয়েছে। সে জন্য টেন্ডার দেওয়া হবে।

জাতীয়

কান্না চেপে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করছিলেন আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ। এ কান্না ছেলের মৃত্যু শোকের সঙ্গে একরকম আনন্দেরও। কারণ ছেলের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার হলো। বুধবার দুপুরে এমন দৃশ্য দেখা যায় পুরান ঢাকার নিম্ন আদালত প্রাঙ্গণে। ওই সময় বুয়েট ছাত্র আবরার হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন ঢাকার দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনাল-১।

রায়ে ২০ আসামির মৃত্যুদণ্ড ও ৫ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। রায় ঘোষণার পর আসামি ও তাদের স্বজনদের অঝোরে কাঁদতে দেখা যায়। অন্যদিকে রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষায় ছিলেন মামলার বাদী আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ। তার চোখ দিয়ে ঝরছিল জল।

তিনি প্রায় দুই বছর আদালত প্রাঙ্গণে ঘুরে বেড়িয়েছেন। সূদুর কুষ্টিয়া থেকে ভোরে ঢাকায় আসতেন-যেতন মধ্যরাতে। খেয়ে না খেয়ে ছেলে হত্যার বিচার চেয়েছেন। রায় শেষে অসহায় এ বাবার সঙ্গে যুগান্তরের এই প্রতিবেদক কথা বলেছেন। তারই মোবাইলে গ্রামে (কুষ্টিয়ায়) থাকা আবরারের মায়ের সঙ্গেও কথা হয় ৫ মিনিট ৩ সেকেন্ড। বলছিলেন- রায় এসেছে-হয়তো সেটি কার্যকরও হবে। কিন্তু আমাদের বুকের ধন কি কখনো ফিরে আসবে। আমাদের শূন্য বুক-শূন্যস্থান কী কখনো পূরণ হবে?

২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর ছিল একটি কালো অধ্যায়। ওই দিন বুয়েটের শেরেবাংলা হলে মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। ছেলের মৃত্যুশোক আজও মা-বাবাকে স্তব্ধ করে। বুধবার ভোরেই আদালতে হাজির ছিলেন বাবা। সঙ্গে আসা ছোটভাই মনিরুল ইসলাম বললেন, এখনো (দুপুর ১টা ৩৩ মিনিট) ভাই এখনও কিছু খায়নি। অনেক বলেছি-কিছু খেতে, ওই সময় বোবার মতো একপলকে চেয়ে থাকে। চোখের পানি গাল বেয়ে গড়ায়। রায় শেষে সাংবাদিকরা ভাইকে ঘিরে ধরেছিল প্রতিক্রিয়া জানতে। মিডিয়া কর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরও দিচ্ছিলেন।

দুপুর পৌনে ২টার দিকে আবরারের বাবাকে এই প্রতিবেদক অনুরোধ করেন যুগান্তরের সঙ্গে একান্ত কথা বলার। আদালত ভবনের দ্বিতীয় তলায় একটি উম্মুক্ত জায়গায় কথা হয় অসহায় এ বাবার সঙ্গে। অশ্রুভেজা কণ্ঠে বললেন, অনেক তো বলছি- প্রায় দুই বছর ধরে বলেই আসছি। বিচারের জন্য গ্রাম থেকে রাজধানীতে আসি ভোরে-আবার মধ্যরাতে গ্রামে ফিরি। আজ রায় হয়েছে। এ রায়ের জন্য খেয়ে না খেয়ে কতবার যে আদালতে ঘুরেছি, এ হিসাব নেই। এখন আর কাঁদতে পারি না। বুকে ব্যথা হয়। শ্বাস ফেলতে কষ্ট হয়। অনেক কষ্ট করেই বড় ছেলে আবরারকে পড়িয়ে ছিলাম।

সন্তানহারা বাবার আর্জি, খুনিরা আমার বুকের ধনকে হত্যা করেছে। আমি জানি, আমার বাবা কত ভালো মানুষ ছিল। মাথা নিচু করে হাঁটতেন। এমন কোনো কাজ করতেন না, যার জন্য মানুষ তাকে মন্দ বলবে। পড়াশোনা শেষে দেশের বাহিরে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল। উচ্চশিক্ষা করে দেশে ফিরে-দেশের উন্নয়ন করবে। কিন্তু, কি নির্মম-আমার সেই ছেলেকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। সে বারবার পানি খেতে চেয়েছিল-দেওয়া হয়নি। বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন এ বাবা।

আবরারের বাবার সঙ্গে এই প্রতিবেদক যখন কথা বলছিলেন, ওই সময় আদালত ভবনের নিচে, প্রিজনভ্যান ঘিরে আসামি, আসামিদের স্বজনরা কান্না করছিল। আসামিরা সূর-চিৎকার করছিল। এমনটা দেখে আবরারের বাবা বলছিলেন, আমার বাবা হয়তো কান্নাও করতে পারেনি। বুকের ওপর লাফিয়ে লাফিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। আজ তারা কাঁদছে, স্বজনরা কাঁদছে। আর আমরা দীর্ঘ দুই বছর ধরে কেঁদে যাচ্ছি। ফাঁসির রায় কার্যকর হলে-তাদের অভিভাবকরাও বুঝবে, শূন্য বুক কীভাবে হাহাকার করে। সন্তান হারানোর ব্যথা কি। কেমন লাগে। আমি জানি, সন্তান হারানোর যন্ত্রণার সঙ্গে ক্ষতিপূরণ কিংবা আসামিদের ফাঁসির কোনো অঙ্কই যে মেলে না। যাদের ফাঁসি হবে, তাদের অভিভাবকরাও আমাদের মতো কাঁদবে-যন্ত্রণায় ভুগবে।

আর যেন কোন সন্তান খুন না হয়-খুনের দায়ে কারও ফাঁসি না হয়- এমন আকুতি জানিয়ে বরকত উল্লাহ বললেন, এ রায় যেন দ্রুত কার্যকর করা হয়। রায় কার্যকর হলেই আমার বাবা (আবরার) শান্তি পাবে। এমন বর্বর হত্যাকাণ্ড ঘটাতে কেউ সাহস পাবে না। রাজনৈতিক দল প্রধান-নেতাদের কাছে অনুরোধ, শিক্ষার্থীদের হত্যাকারী বানাবেন না। হিংস্র-বর্বর হতে সহযোগিতা করবেন না। নতুন করে সন্তান হারানোর তালিকায় আর যেন কোন মা-বাবার নাম না উঠে। ফের আরেকবার যন্ত্রণাবিদ্ধ মুখে তিনি বললেন- সন্তানের লাশ বাবার কাঁধে; এ মৃত্যুশোকের যন্ত্রণা প্রতিনিয়ত তাড়া করে বেড়ায়।

দুপুর ২টা ৩ মিনিটে আবরারের মা রোকেয়া বেগমের (৫৭) সঙ্গে মোবাইল ফোনে এ প্রতিবেদকের কথা হয়। কলটি রিসিভ করলেই কানে ভেসে আসে কান্না। নিজের পরিচয় দিয়ে কথা বলতেই বললেন, আমার বাবাকে আমি ভুলি না, চোখের সামনে ভেসে আসে সব। এখন নিজেকে অপরাধীও মনে হয়- বাবাকে যদি ঢাকায় না পাঠাতাম হয়তো বেঁচে যেত। আমি নিজ হাতে বাবাকে বুয়েটে ভর্তি করিয়েছি। দিনের পর দিন বাবার সঙ্গে ঢাকায় ঘুরেছি। তার বাবা গ্রামে থাকতো, ছেলেদের পড়াশোনার সব দায়িত্ব যেন আমার কাঁধে। আসামিদের ফাঁসি এবং যাবজ্জীবন দণ্ডের যায় হয়ে-দ্রুত হয়তো দ্রুত কার্যকর হবে। আমি ভাবছি, যাদের ফাঁসি হবে, তাদের অভিভাবকদের কথা। কোনো বাবাই চায় না সন্তান সস্ত্রাসী হোক-কাউকে খুন করুক। কেউ না কেউ তাদের সস্ত্রাসী বানায়-খুন করতে সাহস দেয়। তারা কারা?

রোকেয়া বেগম বললেন, ১৯৯৩ সালে তিনি মাস্টার্স করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ঢাকায় বহু সময় ছিলেন। ছেলেদের (ছোট ছেলেসহ) ভর্তি করাতেও ঢাকায় থাকতে হয়েছে। কিন্তু যে দিন আবরারের লাশ গ্রামের বাড়িতে এলো-সেই দিন থেকে আর কোনো দিন ঢাকায় যাইনি। আবরারের বয়স যখন ১৩ দিন, তখন বিসিএস পরীক্ষা ছিল। ছেলেকে কার কাছে রেখে যাব, তার বাবা ব্যাংকে চাকরি করতেন। পরীক্ষা দেওয়া হয়নি। কিছুদিন পর সিলেটে একটি ভালো চাকরি হয়। কিন্তু ছেলের জন্য চাকরিতেও যোগদান করিনি। আমার বয়স যখন ৩ বছর ৭ মাস তখন আমরা বাবা মারা যান। বাবার মুখ আমি স্মরণ করতে পারিনি। যখন আবরার আমার কূলজুড়ে এলো-সেই দিন থেকেই মনে হয়েছে-আবার বাবা আমার কাছে ফিরে এসেছে। বাবা বলেই তাকে ডাকতাম। সেই বাবাকেও খুন করা হয়েছে-আমার পূর্ণ বুক শূন্য করে দেওয়া হয়েছে। কথাগুলো বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন এই মা।

কিছুক্ষণ পর তিনি বললেন, আমার ছেলের হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা অমিত শাহ হত্যাকাণ্ডের সময় ঘটনাস্থলে না থাকলেও মোবাইলের মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডের সমস্ত পরিকল্পনা করেছে। তার মৃত্যুদণ্ডের দাবিতে আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করব। কীভাবে মৃত্যুদণ্ড থেকে ৫ জনের নাম বাদ গেল-আমি চাই, অমিত শাহসহ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া সবার ফাঁসি হোক। এখন ছোট ছেলেকে নিয়েও ভয় হয়। আমি আর কাউকে হারাতে চাই না। কেউ কি আমার বেঁচে থাকা ছেলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। কেউ কি নিশ্চিত করে বলবে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আর কারও সন্তান খুন হবে না। কারও মায়ের বুক খালি হবে না। শিক্ষার পরিবেশ, ছাত্র রাজনীতি, হিংস্র শিক্ষার্থীদের অপদার্থতাকেই কাঠগড়ায় তুলে ছেলেহারা মায়ের কান্নাভেজা গলায় এ প্রশ্নটাই ছুড়ে দিলেন মা রোকেয়া বেগম।

এদিকে বিকাল সাড়ে ৩টা পযর্ন্ত আবরারের বাবা আদালত ভবনের দ্বিতীয় তলায় হাঁটছিলেন। তার সঙ্গে তার ভাই, শ্যালক ও বোনের মেয়ে ছিলেন। চাচা মনিরুল ইসলাম বললেন, আবরারকে তিনি স্কুলে নিয়ে যেতেন। কূলে-পিঠে করে বড় করেছিলেন। মামা মোফাজ্জেল হোসেন বললেন- সে ছিল আমাদের আলোকরশ্মি। যেমন মেধাবী-তেমনি ভদ্র। সেই প্রিয় ভাগ্নেকেই নির্মমভাবে খুন করা হলো। ফুফুতো বোন আফরিদা তানজীনার ভাষ্য- আবরার তার চেয়ে কয়েক বছরের ছোট। একসঙ্গে খেলা করতেন। তাদের বোন নেই-আপন বোন হিসেবেই দেখতেন-মানতেন। সেই ভাইটাকে কেড়ে নিল সন্ত্রাসীরা।

এদিকে আসামিদের কয়েকজন স্বজনের সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এক আসামির বড়ভাই বললেন- তার ভাই সোজা-সাপ্টা মানুষ ছিল। বুয়েটে ভর্তির আগেও কোনো রাজনীতি করত না। রাজনীতির নামে কারা তাদের ক্ষমতাবান করে তুলে। কারা তাদের ব্যবহার করে। ফাঁসির আরেক আসামির বৃদ্ধা মা ছেলের দিকে তাকিয়ে কাঁদছিলেন। নাম জানতে চাইলে, পাশে থাকা এক যুবক প্রতিনিধিকে ধাক্কা দেন। প্রিজন ভ্যানে থাকা ওই আসামি চিৎকার দিয়ে বলছিলেন- তার কোনো অপরাধ নেই। সে অপরাধে সম্পৃক্ত নয়। যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত ইসতিয়াক হোসেনের মা কুলসুমা বেগম ছেলের জন্য কাঁদছিলেন। তিনি জানালেন, তার ছেলে ভালো মানুষ; কিন্তু ছেলে কেন ফাঁসল। কে তাদের হিংস্র করল— মিডিয়া কর্মীদের কাছে প্রশ্ন রাখেন এই মা।