জাতীয়

ঢাকা থেকে কুয়াকাটা, সরাসরি সড়কপথে ভ্রমণের সেই স্বপ্ন এখন খুব বেশি দূরে নয়; আরও একটি পথ জোড়া লাগছে পায়রা সেতু চালুর অপেক্ষার অবসানের মধ্য দিয়ে।

দেরিতে হলেও নদীবেষ্টিত বরিশালের সঙ্গে পটুয়াখালী, বরগুনা আর কুয়াকাটার সড়ক যোগাযোগে নতুন আরেক যুগের সূচনা করতে যাচ্ছে এ সেতু।

সমুদ্র শহর কুয়াকাটার সঙ্গে রাজধানীসহ সারা দেশের সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগের আরেক দ্বার খুলবে পটুয়াখালীর লেবুখালীতে পায়রা নদীর ওপর নির্মাণ করা চারলেনের সেতুটি খুলে দেওয়া হলে। ফেরি পারাপারের ভোগান্তি যেমন কাটবে, বাঁচবে সময় ও অর্থ।

রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ সেতু উদ্বোধন করবেন। এর মাধ্যমে কাজ শুরুর দীর্ঘ নয় বছর পর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে।

অবসান ঘটবে সেই দীর্ঘ অপেক্ষার। সময়ে সময়ে প্রকল্পের কাজ দীর্ঘায়িত হলে যা রূপ নেয় প্রতীক্ষায়।

অবশেষে দক্ষিণাঞ্চলের ওই এলাকার মানুষের এ আকাঙ্খা বাস্তব রূপ পেতে যাচ্ছে দৃষ্টিনন্দনভাবে গড়ে তোলা প্রায় দেড় কিলোমিটারের পায়রা সেতু উদ্বোধনের মাধ্যমে।

সেতুটি চালু হলে বরিশাল শহরসহ ওই অঞ্চলের যানবাহন ফেরি পারাপার ছাড়াই পটুয়াখালী, কুয়াকাটা ও বরগুনায় যেতে পারবে।

উদ্বোধন উপলক্ষে সেতু এলাকায় সাজ সাজ রব পড়েছে বলে জানিয়েছেন পায়রা সেতুর প্রকল্প পরিচালক আবদুল হালিম।

তিনি বলেন, “সবাই আগামী রোববার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধনের দিকে তাকিয়ে আছেন। উদ্বোধনের পর গাড়ি চলাচলের জন্য সেতুটি খুলে দেওয়া হবে। “

তবে পায়রা সেতু চালুর পরও ঢাকা থেকে সরাসরি সড়কপথে কুয়াকাটা যেতে কিংবা পটুয়াখালী ও বরগুনার মানুষকে রাজধানী আসতে আরও একটু অপেক্ষা করতে হবে। তারা এখন তাকিয়ে থাকবেন পদ্মা সেতুর দিকে।

কেননা নিমার্ণাধীন দেশের বৃহ্ত্তম এ সেতু দিয়ে গাড়ি চলাচল শুরু হলে উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা পায়রা সেতুর মাধ্যমে এসব এলাকার সঙ্গে রাজধানীসহ সারাদেশের নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবে।
একসময় সড়কপথে ঢাকা থেকে বরিশাল হয়ে সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটা যেতে ১০টি নদীতে ফেরি পার হতে হত। এখন শুধু পদ্মা ও পায়রা এ দুই নদীতে ফেরি পারাপার হতে হয়। নদী পারাপারে দীর্ঘ সময় লাগার পাশাপাশি যাত্রীদের ভোগান্তি ও বাড়তি অর্থ ব্যয় করতে হয়।

পায়রা সেতু নির্মাণের প্রকল্প পরিচালক আবদুল হালিম জানান, প্রকল্পটির আওতায় মূল সেতু ও সংযোগ সড়কসহ সব কাজ প্রায় শতভাগ শেষ হয়েছে। এখন সেতু এলাকা সাজানো হচ্ছে। রঙ লাগিয়ে সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ চলছে।

বাংলাদেশ সরকার ও কুয়েত ফান্ড ফর আরব ইকোনমিক ডেভেলপমেন্টের যৌথ অর্থায়নে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘লংজিয়ান রোডস অ্যান্ড ব্রিজ কোম্পানি’ সেতুটি নির্মাণ করেছে।

সর্বাধুনিক ‘এক্সট্রাডোজড কেবল স্টেইড’ প্রযুক্তিতে এটি নির্মাণ করা হয়েছে। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর ওপর শাহ আমানত সেতুও একইভাবে নির্মাণ করা হয়।

প্রকল্প পরিচালক জানান, নদীর পানির প্রবাহের স্তর থেকে প্রায় ১৮ দশমিক ৩০ মিটার উঁচু করে নির্মাণ করা হয়েছে এ সেতু। এর উদ্দেশ্য যাতে নিচ দিয়ে জলযান চলাচলে কোনও বিঘ্ন না ঘটে।

পানি প্রবাহ ঠিক রাখতে পায়রা নদীর মাঝখানে মাত্র একটি বড় পিলার স্থাপন করে গড়ে তোলা হয়েছে এক হাজার ৪৭০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১৯ দশমিক ৭৬ মিটার প্রস্থের সেতুটি। পিলারটি ১৩০ মিটার গভীর পাইলিং করে বসানো হয়েছে। ওই পিলারের উভয় পাশে অন্য দুই পিলারের সঙ্গে বড় বড় তার দিয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে।

তিনি জানান, ভূমিকম্প ও বজ্রপাতসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে সেতুকে নিরাপদ রাখতে ব্যবহার করা হয়েছে ‘ব্রিজ হেলথ মনিটর’।

দক্ষিণ-পশ্চিমে আশার পিদিম জ্বালছে পদ্মা সেতু

এ প্রযুক্তিতে সেতুর ক্ষতি হতে পারে এমন অতিরিক্ত ভারি যানবাহন সেতুতে উঠলে আপনা আপনি বেজে উঠবে বিপদ সংকেত।

শুক্রবার প্রকল্প এলাকা থেকে পরিচালক হালিম বলেন, “এখন এলাকায় বৃষ্টি হচ্ছে। তাই সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ কিছুটা বিঘ্নিত হচ্ছে। তারপরও আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করে যাচ্ছি।

“উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রকল্প এলাকার অংশে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও রাজনৈতিক নেতারা উপস্থিত থাকবেন।“

৫ বছরের কাজ ৯ বছরে, ব্যয় বেড়েছে সাড়ে তিনগুণ

২০১২ সালের ৮ মে একনেক সভায় অনুমোদনকালে সড়ক পরিবহণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে হাতে নেওয়া প্রকল্পটি ৪১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা ছিল।

তখন ৩৩৬ কোটি ২৬ লাখ টাকা অর্থায়নে কুয়েত ফান্ডের সঙ্গে চুক্তি হয়।

তবে বাস্তবায়নকারী সংস্থা সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ভূমি অধিগ্রহণের ব্যয় বৃদ্ধি, ভ্যাট ও আইটি খাতে ব্যয় সমন্বয়ের জন্য ২০১৫ সালের ৩১ মে ব্যয় বাড়িয়ে প্রকল্প সংশোধনের প্রস্তাব করলে তা অনুমোদন করা হয়। তখন খরচ বেড়ে দাঁড়ায় ৪১৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকা।

এরপর ২০১৭ সালের ২০ জুন আরেক দফা ব্যয় ও মেয়াদ বাড়িয়ে প্রকল্পটি সংশোধন করা হয়। এবার পূর্ত কাজের চুক্তিমূল্য অনুযায়ী অতিরিক্ত ব্যয়, নতুন ঋণ চুক্তি প্রভৃতি বিষয় যুক্ত করে ব্যয় ৮০০ কোটি টাকা বাড়িয়ে এক হাজার ২৭৮ কেটি ৮২ লাখ টাকা করা করা হয়। একই সঙ্গে মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাস নির্ধারণ করা হয়।

ওই সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হলে এরপর ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে আরেক সংশোধনীর মাধ্যমে এক হাজার ৪৪৭ কোটি টাকায় উন্নীত হয় প্রকল্পের ব্যয়। তখন প্রকল্প সাহায্য গিয়ে দাঁড়ায় এক হাজার ৭৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।

অর্থাৎ সবমিলে ৫ বছর মেয়াদের প্রকল্পটির বাস্তবায়নকাল গিয়ে দাঁড়ায় ৯ বছর এবং সাড়ে ৩০০ শতাংশ ব্যয় বেড়ে উন্নীত হয় প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকায়।

এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক আব্দুল হালিম বলেন, “নকশা পরিবর্তন এবং চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লংজিয়ান রোডস অ্যান্ড ব্রিজ কোম্পানিকে নিয়োগ দিতেই ২০১৬ সাল পর্যন্ত সময় লেগে যায়।
“এরপর ভূমি অধিগ্রহণ ও কোভিড-১৯ মহামারীর কারণেও পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের কাজে বিঘ্ন ঘটে। এসব কারণে প্রকল্পটি বিলম্বিত হয়েছে।”

প্রাথমিক পর্যায়ে প্রকল্পের ব্যয় ধারণাগত নকশার ভিত্তিতে অনুমান করা হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, “পরে বিস্তারিত নকশা অনুসারে প্রকৃত নির্মাণ ব্যয় চূড়ান্ত করা হয়। ফলে সেতুর নির্মাণ ব্যয় বেড়ে যায়।“

কমবে ভোগান্তি, বাড়বে ব্যবসা-বাণিজ্য

বরিশাল সিটি করপোরশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ জানান, পায়রা নদীর উপর একটি সেতু নির্মাণ দক্ষিণাঞ্চলবাসীর দীর্ঘ দিনের দাবি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করেছেন।

“পায়রা সেতু দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নের জন্য একটি মাইলফলক। এরফলে বরিশাল থেকে খুব সহজেই কুয়াকাটা যাওয়া যাবে। এমনকি আগামী বছর পদ্মা সেতু খুলে দেওয়া হলে সারা দেশের সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে যেতে আর কোনো বাধা থাকবে না।”

বরিশাল চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, পায়রা সেতু নির্মাণের ফলে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক কেন্দ্র পায়রা বন্দর, পর্যটন এলাকা কুয়াকাটার সঙ্গে যোগাযোগ বাড়বে, সময় বাঁচবে। মালামাল পরিবহনে খরচ কমবে, ব্যবসায়ীরা উপকার পাবেন।

“পায়রা সেতু উন্মোচনের সঙ্গে সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও বিশাল দ্বার উন্মোচন হবে। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হলে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান দক্ষিণাঞ্চলে বিনিয়োগে আসবে। কুয়াকাটায় পাঁচ তারকা মানের হোটেল মোটেল গড়ে উঠবে। ব্যবসার প্রসার ঘটবে।”

সেতু নির্মাণ করে ভোলা থেকে বরিশালে গ্যাস আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেটিও খুব শিগগিরই বাস্তবায়ন হবে বলে আশা প্রকাশ করেন চেম্বার সভাপতি।

পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও বরিশাল-৫ আসনের সংসদ সদস্য জাহিদ ফারুক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পরপরই সেতুটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। ফলে ঢাকা থেকে পায়রা বন্দর বা কুয়াকাটা পর্যন্ত যেতে পদ্মা ব্যতীত আর কোনো ফেরি থাকল না।

পায়রা সেতুর ফলে দক্ষিণাঞ্চলের ব্যবসারও প্রসার ঘটবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পায়রা বন্দরে যে অর্থনৈতিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে তা এগিয়ে নিতে পায়রা সেতু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ব্যবসায়ীদের পণ্য পরিবহন সহজ হবে।

“নতুন নতুন শিল্প কারখানা গড়ে উঠবে। নতুন প্রজন্মের যারা আছেন তাদের চাকরির জন্য বরিশালের বাইরে যেতে হবে না, এখানেই তাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।”

জাতীয়

মাজারের মসজিদ থেকে কোরআন শরীফ নিয়ে পাশের পূজামণ্ডপে রাখার কথা স্বীকার করেছেন ইকবাল হোসেন। সেইসঙ্গে হনুমানের মূর্তি থেকে গদাটি সরিয়ে নেয়ার কথাও বলেছেন তিনি।

কুমিল্লা পুলিশ লাইনসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক ইউনিটের জিজ্ঞাসাবাদে এ কথা জানিয়েছেন ইকবাল। তবে কারও কথায় তিনি এ কাজটি করেছেন কিনা, সে বিষয়ে এখনও মুখ খোলেননি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এক কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ওই কর্মকর্তা বলেন, ধরা পড়ার পর থেকে অস্বাভাবিক আচরণ করছে ইকবাল। তাকে আটক করার পর থেকে সে নিঃসংকোচে বলে আসছিল ‘আমিই সেই ব্যক্তি’।

কুমিল্লায় আনার পর দুপুর ১টা থেকে ইকবালকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক ইউনিটের কর্মকর্তারা। এ সময় ইকবাল ক্লান্ত থাকলেও তাকে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

এর আগে কক্সবাজার থেকে গ্রেপ্তারের পর শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে কুমিল্লায় প্রবেশ করে ইকবালকে বহনকারী পুলিশের মাইক্রোবাসটি। বিষয়টা নিশ্চিত করেন কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সোহান সরকার।

এদিকে কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে সমুদ্রসৈকত এলাকায় ঘোরাফেরা করার সময় ইকবাল হোসেনকে জেলা পুলিশের একটি দল আটক করে। পরে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে নিয়ে এসে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

উল্লেখ্য, গত ১৩ অক্টোবর ভোরে নানুয়া দিঘিরপাড়ের পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরিফ পাওয়া যায়। এরপরই দেশের কয়েক স্থানে সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনা ঘটে। ঘটনার জেরে ওইদিন চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মন্দিরে হামলার ঘটনা ঘটে। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে পাঁচ জন নিহত হন। পরদিন নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে মন্দির, মণ্ডপ ও দোকানপাটে হামলা–ভাঙচুর চালানো হয়। সেখানে হামলায় দুইজন নিহত হন।

এরপর রংপুরের পীরগঞ্জে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বসতিতে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। এরই মধ্যে শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ দেখে পূজামণ্ডপে কোরআন রাখা ইকবালকেও চিহ্নিত করে।

জাতীয়

কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পের একটি মাদ্রাসায় দুষ্কৃতিকারীদের হামলায় মাদ্রাসাশিক্ষকসহ ৭ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছে আরো বেশ কয়েকজন। এ ঘটনায় অস্ত্রসহ একজনকে আটক করেছে পুলিশ।

শুক্রবার ভোরে উখিয়ার ১৮ নং ক্যাম্পের ব্লক এইচ ৫২ এর ক্যাম্প-১৮ এইচ-৫২ ব্লকে অবস্থিত ‘দারুল উলুম নাদওয়াতুল ওলামা আল-ইসলামিয়াহ’ মাদ্রাসায় হামলা চালায় রোহিঙ্গা দুষ্কৃতিকারীরা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সেখানে দায়িত্বরত ৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক এসপি শিহাব কায়সার খান।

হামলায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন ক্যাম্প-১২, ব্লক-জে ৫ এর মাদ্রাসার শিক্ষক, মোঃ ইদ্রীস (৩২), ক্যাম্প-৯ এর ব্লক-২৯ এর ইব্রাহীম হোসেন (২২), ক্যাম্প-১৮ এর ব্লক-এইস ৫২ এর আজিজুল হক (২৬) ও মোঃ আমীন (৩২)। এছাড়াও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় আরও ৩ জনের।

তারা হলেন, ক্যাম্প-১৮ এর বাসিন্দা মাদ্রাসা শিক্ষক নুর আলম ওরফে হালিম(৪৫), ক্যাম্প-২৪ এর বাসিন্দা হামিদুল্লাহ (৫৫) ও ক্যাম্প-১৮এর ব্লক- এইস ৫২ এর মাদ্রাসা ছাত্র নুর কায়সার(১৫)।

এ ঘটনায় মুজিবুর রহমান নামে একজনকে অস্ত্রসহ আটক করেছেন ৮ আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা।

৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক এসপি শিহাব কায়সার খান বলেন, শুক্রবার ভোররাত আনুমানিক রাত ৪ টার দিকে এফডিএমএন ক্যাম্প-১৮ এইচ-৫২ ব্লকে অবস্থিত ‘দারুল উলুম নাদওয়াতুল ওলামা আল-ইসলামিয়াহ’ মাদ্রাসায় রোহিঙ্গা দুষ্কৃতিকারীরা হামলা চালায়। হামলায় মাদ্রাসায় অবস্থানরত ৪ জন রোহিঙ্গা মারা যায়।

এ ঘটনা জানতে পেরে ময়নারঘোনা পুলিশ ক্যাম্প-১২ এর পুলিশ সদস্যরা তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে গিয়ে আহতদের উদ্ধারপূর্বক চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে প্রেরণ করে। হাসপাতালে আরও ৩ জন মারা যান। এসময় হামলাকারীদের একজনকে অস্ত্রসহ (একটি দেশীয় লোডেড ওয়ান শুটারগান), ৬ রাউন্ড গুলি ও একটি ছুরিসহ হাতেনাতে গ্রেফতার করে পুলিশ।

তিনি জানান, ঘটনাস্থলে উখিয়া থানা পুলিশ এসে মরদেহের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত এবং মর্গে প্রেরণের ব্যবস্থা নিচ্ছে।

খবর পেয়ে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রশাসন মোহাম্মদ রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে জেলা পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েছে।

জাতীয়

আসন্ন তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) ও পৌরসভা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদের মধ্যে ৯ পৌরসভা ও রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের ইউনিয়ন পরিষদ প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করেছে আওয়ামী লীগ।

বৃহস্পতিবার বিকালে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তৃতীয় ধাপে ১০০৭টি ইউপি এবং ৯টি পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আগামী ২৮ নভেম্বর এসব ইউপি ও পৌরসভার ভোট অনুষ্ঠিত হবে।

গত ১৪ অক্টোবর এসব ইউপি এবং পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তফসিল অনুযায়ী, রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২ নভেম্বর। মনোনয়নপত্র বাছাই ৪ নভেম্বর ও প্রত্যাহারের শেষ সময় ১১ নভেম্বর। ভোটগ্রহণ হবে ২৮ নভেম্বর।

এর আগে প্রথম ধাপে গত ২১ জুন ২০৪টি ইউপি ও ২০ সেপ্টেম্বর ১৬০টি ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে ৮৪৮টি ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১১ নভেম্বর। দেশের প্রায় সাড়ে ৪ হাজার ইউপি নির্বাচন আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করা হবে বলে জানিয়েছে ইসি।

জাতীয়

মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর কম সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে দুর্বল অবস্থায় বিরাজ করছে। এ কারণে আগামী তিন দিনে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল থেকে বিদায় হতে পারে।

মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়েছে। খবর বাসসের।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং খুলনা ও ঢাকা বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।

গত ২৪ ঘণ্টায় কুতুবদিয়ায় সর্বোচ্চ ৫২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া কুমিল্লায় ২৫, টেকনাফে ৫ ও চট্টগ্রামে এক মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এ সময় ঢাকাসহ সারা দেশে কোনো বৃষ্টি হয়নি। সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

মঙ্গলবার তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন ২২ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়।

গত সোমবার সিলেটে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

জাতীয়

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণা চালিয়ে কিডনি কেনাবেচার অভিযোগে পাঁচ জনকে আটক করেছে র্যাব। জিজ্ঞাসাবাদে বাহিনীটি জানতে পেরেছে, আটককৃতরা কিডনি বিক্রির একটি চক্রের সদস্য, যারা অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে শতাধিক ব্যক্তিকে ভারতে নিয়ে কিডনি বিক্রি করে দিয়েছে।

র্যাব জানায়, কিডনি দাতাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী টাকাও দিত না চক্রটি। গ্রহীতার কাছ থেকে কিডনি বাবদ ১৫-২০ লাখ টাকা নেওয়া হলেও ডোনারকে দেওয়া হতো ২ লাখ টাকার মতো। ঠকানো হতো গ্রহীতাকেও। এই চক্রের পাঁচ জনকে সোমবার মধ্যরাত থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত জয়পুরহাট ও রাজধানীর নর্দা থেকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে রয়েছে কিডনি বিক্রি সিন্ডিকেটের অন্যতম মো. শাহরিয়ার ইমরান আহম্মেদ। অন্যরা হলো—মেহেদী হাসান, সাইফুল ইসলাম, আব্দুল মান্নান ও তাজুল ইসলাম ওরফে তাজু।

এ সময় তাদের কাছ থেকে কিডনি দাতাদের চারটি পাসপোর্ট, মেডিক্যাল চিকিৎসার জন্য পাসপোর্ট, ভিসা সম্পর্কিত কাগজপত্র, পাঁচটি মোবাইল ফোন ও দেশি-বিদেশি মুদ্রা জব্দ করা হয়।

চক্রটির বিষয়ে মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর র্যাব মিডিয়া সেন্টারে প্রেস ব্রিফিংয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, প্রতারণার মাধ্যমে মানবদেহের কিডনিসহ নানা অঙ্গের অবৈধ ট্রান্সপ্লান্টেশনের সঙ্গে সক্রিয় রয়েছে কয়েকটি চক্র। আইনবহির্ভূত, স্পর্শকাতর ও অবৈধ ট্রান্সপ্লান্টেশনের চক্রের সদস্যরা অর্থের লোভে অমানবিক কার্যক্রমে যুক্ত রয়েছেন।

ব্রিফিংয়ে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে র্যাবের সাইবার মনিটরিং সেল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিডনিসহ অন্যান্য অঙ্গ ক্রয়-বিক্রয় সিন্ডিকেটের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে আসছিল। সিন্ডিকেট সদস্যরা অনলাইনে প্রচারণার মাধ্যমে গ্রাহক ও ডোনারদের প্রলুব্ধ করত। সেই সঙ্গে অপরাধের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করছিল। তাদের কার্যক্রমের ওপর গোয়েন্দা নজরদারি করা হচ্ছিল।

খন্দকার আল মঈন বলেন, এই চক্রের মোট সদস্য সংখ্যা ১৫-২০ জন এবং তারা তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে অবৈধভাবে কিডনি ক্রয়-বিক্রয়ের সম্পূর্ণ কার্যক্রম সম্পন্ন করে থাকে। র্যাব জানায়, চক্রের প্রথম গ্রুপ ঢাকায় অবস্থান করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন প্রয়োজন এমন বিত্তশালী রোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে।

দ্বিতীয় দলটি প্রথম দলের চাহিদা মোতাবেক দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের গরিব মানুষদের চিহ্নিত করে এবং তাদের অর্থনৈতিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে অর্থের বিনিময়ে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশনের জন্য ডোনার হবার জন্য প্রলুব্ধ করে ঢাকায় নিয়ে আসে।

আর তৃতীয় গ্রুপটি ভুক্তভোগী কিডনি ডোনারদের ঢাকায় বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন রোগীর সঙ্গে ব্লাড ম্যাচিং এবং অন্যান্য পরীক্ষানিরীক্ষা সম্পন্ন করে। ব্লাড ম্যাচিং এবং অন্যান্য ডায়াগনস্টিক টেস্টে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশনের উপযুক্ততা নিশ্চিত হলে, তার পাসপোর্ট, ভিসা প্রসেসিং ও ভুয়া কাগজপত্র তৈরির মাধ্যমে ভুক্তভোগী ডোনারকে প্রতিবেশী দেশে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত করে।

র্যাব জানায়, এই চক্রের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী দেশে অবস্থানকারী আরেকটি চক্র পারস্পরিক যোগসাজশে কিডনি ডোনারদের এয়ারপোর্ট অথবা স্থলবন্দরে রিসিভ করে। এরপর হাসপাতালের ডকুমেন্টেশন, অস্ত্রোপচারসহ যাবতীয় কার্যক্রম শেষে ভিকটিমদের বৈধ বা অবৈধ উপায়ে বিমান বা উত্তর পূর্বাঞ্চলের সীমান্ত এলাকার মাধ্যমে দেশে ফেরত পাঠায়। আইনের হাত থেকে বাঁচার জন্য চক্রটি কোনো প্রকার রিসিট, পাসপোর্ট বা অন্যান্য প্রমাণ ভুক্তভোগী ডোনারকে সরবরাহ করা থেকে বিরত থাকত।

র্যাব জানায়, ইমরান ফেসবুকে ‘বাংলাদেশ কিডনি ও লিভার পেশেন্ট চিকিত্সা সেবা’ এবং ‘কিডনি লিভার চিকিত্সা সেবা’ নামক দুটি পেজের অ্যাডমিন। এ পর্যন্ত তিনি কিডনি বিক্রয়ের জন্য প্রায় শতাধিক মানুষকে প্রতিবেশী দেশে পাচার করেছেন।

জাতীয়

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বাংলাদেশে প্রতি সাতজনে একজন বাস্তুচ্যুত হবে। ২০৫০ সাল নাগাদ দেশে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা দাঁড়াবে এক কোটি ৩০ লাখ।

সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রণীত অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতি ব্যবস্থাপনা বিষয়ক জাতীয় কৌশলপত্রে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।

নভেম্বরে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে অনুষ্ঠেয় জলবায়ু বিষয়ক ‘কনফারেন্স অব পার্টিস’ সংক্ষেপে কোপ-২৬ সম্মেলনে বাংলাদেশের তরফে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

জো বাইডেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাবর্তনের ফলে এবারের জলবায়ু সম্মেলনকে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নাম প্রত্যাহার করেছিলেন।

অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতি ব্যবস্থাপনা বিষয়ক জাতীয় কৌশলপত্রে উল্লেখ করা হয়, ২০০৮ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বাংলাদেশের ৪৭ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

২০১৯ সালের অর্ধবার্ষিকী প্রতিবেদনের হিসাব মতে, দেশের ২৩টি জেলা থেকে প্রায় ১৭ লাখ মানুষকে স্থানান্তরিত হতে হয়েছে। এর বেশিরভাগই ঘটেছে বিভিন্ন উপকূলীয় জেলাগুলোতে, যেমন ভোলা, খুলনা ও পটুয়াখালী। উপকূলীয় এলাকাগুলোতে বাস্তুচ্যুতির মূল কারণ জোয়ারের পানির উচ্চতাবৃদ্ধি, যা উপকূলীয় অঞ্চলে বন্যা ঘটায়। বাস্তুচ্যুতির মাধ্যমিক কারণ হিসাবে গ্রীষ্মকালীন ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসকে চিহ্নিত করা হয়েছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি দুর্যোগের এসব প্রক্রিয়ার আরও অবনতি ঘটাতে পারে। ২০৮০ সালের মধ্যে তলিয়ে যেতে পারে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের ১৩ শতাংশ ভূমি।

সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতাবৃদ্ধির অনুমেয় সবচেয়ে গুরুতর ফল হলো চাষযোগ্য জমি, মাটি এবং পানিতে লবণাক্ততার অনুপ্রবেশ এবং তার পরিণতিতে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের কৃষিভিত্তিক জীবনযাত্রায় বিরূপ প্রভাব। এটি উপকূলীয় অঞ্চলে বাস্তুচ্যুতির অন্যতম বড় কারণ।

বিষয়টি সম্পর্কে রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. তাসনীম সিদ্দিকী বলেছেন, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, নদী ভাঙন এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে বাস্তুচ্যুতির ঘটনা ঘটছে।

লিঙ্গ, জাতিগত, ভৌগোলিক অবস্থান এবং কর্মসংস্থানের ধরনের ওপর ভিত্তি করে বাস্তুচ্যুতির প্রভাব নির্ধারণ হবে। এ ব্যাপারে নীতি নির্ধারণে সব গ্রুপকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। মেগাসিটির ধারণা থেকে সরে গিয়ে গ্রোথ সেন্টারভিত্তিক বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে।

জাতীয় কৌশলপত্রে উল্লেখ করা হয় যে, মূল ভূখণ্ড এলাকায় বাস্তুচ্যুতি ঘটানোর মূল কারণ নদীভাঙন ও বন্যা। দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোয় নিয়মিত খরা হয়। এটাও বাস্তুচ্যুতি ঘটায়। ভূতাত্ত্বিকভাবে কয়েকটি সক্রিয় ভূ-চ্যুতির মধ্যে অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ উচ্চমাত্রায় ভূমিকম্পের ঝুঁকিপ্রবণ দেশ।

ভারতীয় টেকটোনিক প্লেটের উত্তরপূর্ব কিনারে বাংলাদেশের অবস্থান। সক্রিয় সাবডাকশন জোন ও মেগা থ্রাস্ট ফ্রন্টের কারণে এ অঞ্চলে ভূমিকম্পের ঝুঁকি আগের ধারণার চাইতেও বেশি হতে পারে। ভূমিকম্পও শহর ও উপশহরগুলোতে বড় আকারে বাস্তুচ্যুতি ঘটাতে পারে। কৌশলপত্রে বাস্তুচ্যুতিরোধ, বাস্তুচ্যুতির সময় মানুষকে রক্ষা করা এবং বাস্তুচ্যুতি পরবর্তিতে স্থায়ী সমাধান করার প্রতি জোর দেয়া হয়।

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বেশ কিছু সুপারিশ কৌশলপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা থেকে যেমন : ক্ষয়ক্ষতি তহবিল, অভিযোজন তহবিল, সবুজ জলবায়ু তহবিল থেকে অর্থ সংগ্রহ করা।

এ জন্যে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে নিয়ে একটি তহবিল সংগ্রহ ও ব্যয় ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করা। স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষের অধীনে আলাদা বাজেট বরাদ্দ করা। আন্তর্জাতিক ও দেশীয় শ্রমবাজার বিবেচনায় রেখে ঝুঁকিতে থাকা পরিবারগুলোর দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য অকৃষি খাতে সরকারি ও বেসরকারি যৌথ অংশীদারির মাধ্যমে প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা করা। রেমিট্যান্স প্রেরণকে জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজনে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া এবং বাস্তুচ্যুতিপ্রবণ এলাকাগুলো থেকে পরিবারের এক বা একাধিক সদস্যের জন্য স্বল্পমেয়াদি চুক্তিভিত্তিক আন্তর্জাতিক শ্রম অভিবাসনের সুযোগ তৈরি করা প্রয়োজন।

কৌশলপত্র বাস্তবায়নে অর্থায়নের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে দুর্যোগ বিষয়ক স্থায়ী আদেশাবলি-২০১৯ অনুযায়ী বাংলাদেশে কর্মরত বিভিন্ন বহুপাক্ষিক এবং দ্বিপাক্ষিক দাতা সংস্থাকে সম্পৃক্ত করে একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করতে হবে।

জাতীয়

ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মৃদু ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৭ অক্টোবর) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে এই তিন বিভাগসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প অনুভূত হয়।

আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এর মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৬। উৎপত্তিস্থল মিয়ানমারের। এজন্য চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে এ কম্পন তুলনামূলক বেশি অনুভূত হয়। ভূপৃষ্ঠ থেকে ১১৪ কিলোমিটার গভীরে এ কম্পনের উৎপত্তি হয়। উৎপত্তিস্থল মিয়ানমারে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।

ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।

জাতীয়

গত ২৪ ঘন্টায় ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। গতকালের চেয়ে আজ ৫ জন বেশি মারা গেছেন। গতকাল ১৮ জন মারা গিয়েছিল। আজ মৃতদের মধ্যে পুরুষ ১৫ জন ও নারী ৮ জন। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৭ হাজার ৬১৪ জনে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘন্টায় মৃতদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১৩ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫ জন, রাজশাহী, বরিশাল ও ময়মনসিংহ বিভাগে ১ জন করে এবং খুলনা বিভাগে ২ জন রয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘন্টায় হাসপাতাল এবং বাসায় মিলিয়ে সুস্থ হয়েছেন ৭০৮ জন। দেশে এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১৫ লাখ ২০ হাজার ২৯৬ জন। আজ শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ। গতকালও সুস্থতার হার ছিল ৯৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ।

দেশে আজ করোনাভাইরাসে শনাক্ত কমেছে, তবে বেড়েছে মৃত্যুর সংখ্যা। গত ২৪ ঘন্টায় শনাক্তের হার কমেছে দশমিক ৪৭ শতাংশ। গতকাল শনাক্তের হার ছিল ৩ দশমিক ১৯ শতাংশ, যা আজ কমে হয়েছে ২ দশমিক ৭২ শতাংশ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, আজ ২৫ হাজার ৪৯৯ জনের নমুনা পরীক্ষায় নতুন শনাক্ত হয়েছে ৬৯৪ জন। গতকাল ২৪ হাজার ৯২৮ জনের নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছিল ৭৯৪ জন। দেশে এ পর্যন্ত ৯৮ লাখ ৪৪ হাজার ৯১৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় মোট শনাক্ত হয়েছে ১৫ লাখ ৫৯ হাজার ৪৫২ জন। মোট শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ।

এদিকে ঢাকা জেলায় (মহানগরসহ) ২৪ ঘন্টায় ১৪ হাজার ৬০৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছে ৪২৪ জন। শনাক্তের হার ২ দশমিক ৯০ শতাংশ এবং গতকাল এ হার ছিল ৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ। এই জেলায় গত ২৪ ঘন্টায় মারা গেছেন ১০ জন। গতকাল ৬ জন মারা গিয়েছিল।

জাতীয়

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসবের পুণ্যলগ্ন, শুভ মহালয়া আজ বুধবার (৬ অক্টোবর)। এ দিন থেকেই শুরু দেবীপক্ষের। শ্রী শ্রী চন্ডীপাঠের মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গার আবাহনই মহালয়া হিসেবে পরিচিত। আর এই ‘চন্ডী’তেই আছে দেবী দুর্গার সৃষ্টির বর্ণনা। শারদীয় দুর্গাপূজার একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হলো এই মহালয়া।

পুরাণমতে, এদিনই দেবী দুর্গার আবির্ভাব ঘটে। এ দিন থেকেই দুর্গাপূজার দিন গণনা শুরু হয়। মহালয়া মানেই আর ৬ দিনের প্রতীক্ষা মায়ের পূজার। আর এই দিনেই দেবীর চক্ষুদান করা হয়। আগামী ১১ অক্টোবর থেকে ষষ্ঠীপূজার মাধ্যমে দুর্গাপূজা শুরু হলেও মূলত কাল থেকেই পূজার্থীরা দুর্গাপূজার আগমণধ্বনি শুনতে পাবেন। দুর্গাপূজার এই সূচনার দিনটি সারা দেশে বেশ আড়ম্বরের সঙ্গে উদযাপিত হবে। আগামীকাল ভোরে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য মন্দিরেও এ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

বাঙালি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে মহিষাসুরমর্দিনী দেবী দুর্গা সমস্ত অশুভ শক্তি বিনাশের প্রতীক রূপে পূজিত। মহামায়া অসীম শক্তির উৎস। পুরাণ মতে, মহালয়ার দিনে, দেবী দুর্গা মহিষাসুর বধের দায়িত্ব পান। শিবের বর অনুযায়ী কোন মানুষ বা দেবতা কখনও মহিষাসুরকে হত্যা করতে পারবে না। ফলত অসীম হ্মমতাশালী মহিষাসুর দেবতাদের স্বর্গ থেকে বিতারিত করে এবং বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের অধীশ্বর হতে চায়।

ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিব ত্রয়ী সন্মিলিত ভাবে ‘মহামায়া’র রূপে অমোঘ নারীশক্তি সৃষ্টি করলেন এবং দেবতাদের দশটি অস্ত্রে সুসজ্জিত সিংহবাহিনী দেবী দুর্গা নয় দিনব্যাপি যুদ্ধে মহিষাসুরকে পরাজিত ও হত্যা করে।

মহালয়ার আর একটি দিক হচ্ছে এই মহালয়া তিথিতে যারা পিতৃ-মাতৃহীন তারা তাদের পূর্বপুরুষের স্মরণ করে তাদের আত্মার শান্তি কামনা করে অঞ্জলি প্রদান করেন। সনাতন ধর্ম অনুসারে এই দিনে প্রয়াত আত্মাদের মর্ত্যে পাঠিয়ে দেয়া হয়। প্রয়াত আত্মার যে সমাবেশ হয় তাকে মহালয়া বলা হয়। মহালয় থেকে মহালয়া। পিতৃপক্ষের ও শেষদিন এটি।