জাতীয়

গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মোট মৃত্যু হয়েছে ১২ হাজার ৪৫৮ জনের।

নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ১ হাজার ৪৯৭ জন। সব মিলিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৯৩ হাজার ৬৯৩ জনে। মৃত ১৭ জনের মধ্যে পুরুষ ১০ জন ও ৭ জন নারী।
বুধবার (২৬ মে) বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাছিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা সিটিসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ও বাড়িতে উপসর্গ বিহীন রোগীসহ গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৫৬ জন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৭ লাখ ৩৩ হাজার ৮৬৬ জন। সারাদেশে সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৪৮৬টি ল্যাবে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা হয়েছে। এর মধ্যে আরটি-পিসিআর ল্যাব ১২৯টি, জিন এক্সপার্ট ৪২টি, র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন ৩১৫টি। এসব ল্যাবে ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ হয়েছে ১৬ হাজার ৩৪২টি। মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১৬ হাজার ৪৩৪টি। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৫৮ লাখ ৭১ হাজার ৩৫৩টি।

এতে আরও জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার ৯ দশমিক ১১ শতাংশ। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৫২ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯২ দশমিক ৪৬ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৭ শতাংশ।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, ২৪ ঘণ্টায় মৃত ১৭ জনের মধ্যে ঢাকা বিভাগে রয়েছেন ৫ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৮ জন। এছাড়া খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগে ১ জন করে ৪ জন রয়েছেন।

এদের মধ্যে সরকারি হাসপাতালে মারা গেছেন ১১ জন, বেসরকারি হাসপাতালে ৬ জন।

মৃতদের বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৬০ বছরে ঊর্ধ্বে ১১ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৪ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ১ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ১ জন রয়েছেন।

এতে আরও জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে এসেছেন ৫৩৯ জন ও আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ৪৪৭ জন। এ পর্যন্ত আইসোলেশনে এসেছেন এক লাখ ৩২ হাজার ৫৯৭ জন। আইসোলেশন থেকে ছাড়পত্র নিয়েছেন ১ লাখ ১৪ হাজার ২০৪ জন। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ১৮ হাজার ৩৯৩ জন।

এর আগে গত ৭ এপ্রিল দেশে একদিনে করোনা শনাক্ত হয় সাত হাজার ৬২৬ জন। যা দেশে একদিনে করোনা শনাক্তে সর্বোচ্চ রেকর্ড। আর গত ৬ এপ্রিল একদিনে করোনা শনাক্ত হয়েছিল সাত হাজার ২১৩ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে করোনা ভাইরাসের প্রথম রোগী শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রথম একজনের মৃত্যু হয়। এরপর ধীরে ধীরে আক্রান্তের হার বাড়তে থাকে।

জাতীয়

পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে একটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়েছে। আগামীকাল রবিবার সকালে সেটি আরো শক্তি সঞ্চয় করবে এবং পরদিন সোমবার বেশি শক্তি সঞ্চয় করে সেই নিম্নচাপ উত্তর-উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে পরিণত হবে ঘূর্ণিঝড় ‘যশ’। আজ শনিবার (২২ মে) ভারতের আবহাওয়া অধিদফতরের বরাত দিয়ে এ খবর প্রকাশ করেছে আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইন।

পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সোমবার থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঘূর্ণিঝড়টি আরো অগ্রসর হতে থাকবে এবং তীব্রতর হবে। বুধবার সন্ধ্যা নাগাদ এটি পশ্চিমবঙ্গে আছড়ে পড়বে। তবে এটি কোথায় আঘাত হানবে তা এখনো স্পষ্ট নয়। বলা হচ্ছে বাংলায় আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা বেশি। ২৬ মে সন্ধ্যার দিকে ঘূর্ণিঝড় ‘যশ’ পশ্চিমবঙ্গ, উত্তর ওড়িশা এবং বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করবে বলে জানিয়েছে ভারতের অলিপুর আবহাওয়া অধিদফতর।

সুপার সাইক্লোন হয়ে বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে ‘যশ’। সেজন্য পুরো উপকূলীয় এলাকায় সতর্কতা জারি করা হবে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান। শনিবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।

২৬ মে ভূমিতে আঘাত করার সম্ভাবনা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ভূমিতে ওঠার সময় এর গতিবেগ হবে ১২০ থেকে ১৯০ কিলোমিটার। এটা বর্তমানে বঙ্গোপসাগরের আন্দামান নিকোবর দীপপুঞ্জের কাছাকাছি আছে।

এখন পর্যন্ত এর ডিরেকশন ভারতের উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গের দিকে। এটি যে অবস্থায় আছে, সেখান থেকে যদি সোজাসুজি আসে তবে আমাদের খুলনা বিভাগ আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এটা জানার পর আমরা আবহাওয়া অধিদফতরের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা করেছি, বলেন তিনি।

প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, আজকে প্রস্তুতি সভা দিয়েছি। বিকেল প্রস্তুতি সভার পর মাঠ প্রশাসনে আমাদের নির্দেশনা পাঠিয়ে দেব। ইতিমধ্যে সিপিপি ভলান্টিয়ারদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রচার কাজ শুরু হচ্ছে।

জাতীয়

জমি দখল নিয়ে বিরোধের জেরে পল্লবী এলাকায় একাধিক হত্যাকাণ্ডে সাবেক এমপি এমএ আউয়ালের সম্পৃক্ততা পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। পল্লবীর সাহিনুদ্দীন হত্যাকাণ্ডে গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে গোয়েন্দা পুলিশের রিমান্ডে আছেন সাবেক এই সংসদ সদস্য।

রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদকারী কর্মকর্তারা বলছেন, শুধু সাহিনুদ্দীন নয়, গত ১৫ বছরে ওই এলাকায় যে হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়েছে তার বেশ কয়েকটির সঙ্গেই আওয়ালের সম্পৃক্ততার তথ্য মিলেছে। তবে ওই তথ্যগুলো এখন যাচাই বাছাই করা হচ্ছে।

এদিকে মাত্র একবার এমপিও হলে আউয়ালের ঘনিষ্ঠ সহকারীদের অনেকেই এখন আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছেন। লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ এলাকায় এখন তার সহকারীদের নিয়েই আলোচনা চলছে।

পল্লবীর সাহিনুদ্দীন (৩৩) হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা হিসেবে র্যাব গ্রেফতার করেছে আউয়ালকে। শনিবার ছিল ৪ দিনের রিমান্ডের দ্বিতীয় দিন। একজন ঊর্ধ্বতন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, একাধিক হত্যাকাণ্ডে তার সম্পৃক্ততা পাওয়া যাচ্ছে। তবে সেগুলো যাচাই বাছাই ছাড়া এখন বলা ঠিক হবে না। দ্রুত বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে।

গোয়েন্দা পুলিশের পাশাপাশি র্যাব-৪ সাহিনুদ্দীন হত্যাকাণ্ডের ছায়া তদন্ত করছে। র্যাব-৪ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক বলেন, শুধু এই হত্যাকাণ্ড নয়, আরও কোনো হত্যাকাণ্ডে আউয়াল সম্পৃক্ত কি-না সেগুলোসহ সব ব্যাপারে আমরা খোঁজ খবর নিচ্ছি। পাশাপাশি ওই এলাকায় জমি-জমা নিয়ে এতদিন যারা সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালিয়ে আসছিল তাদের কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। র্যাব প্রত্যেকটি বিষয়ে তদন্ত করছে, পাশাপাশি অপরাধীদের গ্রেফতারের প্রক্রিয়া চলছে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু সাহিনুদ্দীন নয়, গত ১৫ বছরে ওই এলাকায় জমি-জমার দখল নিয়ে বিরোধে অন্তত ৭ জন খুন হয়েছেন। সর্বশেষ গত ১৬ মে পল্লবীর ১২ নম্বর সেক্টরের ডি-ব্লকে ৩১ নম্বর রোডের ৩৬ নম্বর বাড়ির সামনে একটি গ্যারেজে স্থানীয় জয়নুদ্দিনের ছেলে সাহিনুদ্দীনকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ২০১৫ সালের ১৪ মে বুড়িরটেকে দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় বঙ্গবন্ধু কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র চঞ্চলকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এর কয়েকদিন পরই ৮ জুলাই মোহাম্মদপুর থেকে পুলিশ পরিচয়ে তুলে নেওয়া হয় পল্লবীর ১২ নম্বর সেকশনের টেকেরবাড়ির সামাদ বক্সের ছেলে মমিন বক্সকে। চার দিন পর কালশী ব্রিজ থেকে তার লাশ উদ্ধার হয়। এরপর খুন হয় পাগলা খোকন ও ডি-ব্লকের মিন্টু। গৃহায়ন প্রকল্পের মধ্যে মাছের খামারেই পাওয়া যায় পাগলা খোকনের লাশ। ২০১৪ সালে কালাপানির মুসা খুন হয়। এর আগে ডিওএইচএস সড়কে খুন হয় পাকিস্তানি মোহাম্মদ আলী। ২০০৪ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি সিরামিকের পেছনে কুপিয়ে হত্যা করা হয় আব্বাস নামে এক যুবককে। এই হত্যাকাণ্ডগুলোর একটির সঙ্গে আরেকটি যোগসূত্র রয়েছে। খুনের বদলা হিসেবে এখানে পাল্টা খুন হয়েছে আরেকজন।

এই হত্যাকাণ্ডগুলোর সঙ্গে সাবেক সংসদ আউয়ালের কী কোনো সম্পৃক্ততা আছে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (মিরপুর) মানস কুমার পোদ্দার বলেন, রিমান্ডে আউয়াল অনেক রকম তথ্য দিচ্ছে, অনেক কিছু স্বীকার করছে, আবার অনেক কিছু অস্বীকারও করছে। ফলে আমরা তার দেওয়া তথ্যগুলো এখন ভেরিফাই করছি। কোন কিছুই নিশ্চিত নয়। পাশাপাশি এই হত্যাকাণ্ডে আরও ৫ জন রিমান্ডে আছে। তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এছাড়া একজনকে রিমান্ড শেষে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

জাতীয়

ঈদের পর প্রায় প্রতিদিনই দেশে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও ৩৮ জন মারা গেছে। আর এই সময়ে নতুন শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ২৮ জন।

গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৮ জনের মৃত্যুর মধ্যদিয়ে দেশে এ পর্যন্ত করোনায় মোট মৃত্যু হয়েছে ১২ হাজার ৩৪৮ জনের। এছাড়া দেশে এ পর্যন্ত মোট ৭ লাখ ৮৭ হাজার ৭২৬ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনিবার (২২ মে) স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো করোনা ভাইরাস নিয়ে নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এর আগের দিন শুক্রবার (২১ মে) দেশে করোনায় ২৬ জন মারা যান। আর নতুন করে শনাক্ত হয় ১ হাজার ৫০৪ জন এবং শনাক্তের হার ছিল ৮.২২। সে তুলনায় আজ করোনায় মৃত্যু বেড়েছে।

এতে আরও বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনামুক্ত হয়েছেন ৭৫৯ জন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৭ লাখ ২৯ হাজার ৭৯৮ জন। ২৪ ঘণ্টায় ১১ হাজার ৯২০ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। তবে আগের দিনের সংগৃহীত নমুনাসহ আজ পরীক্ষা করা হয়েছে ১৯ হাজার ৪৩৭টি। নমুনা পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ৮ দশমিক ৪১ শতাংশ।

২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়াদের মধ্যে ২৫ জন পুরুষ এবং ১৩ জন নারী। এদের সবাই হাসপাতালে মারা গেছেন। বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়াদের মধ্যে ১৬ জনেরই বয়স ৬০ বছরের বেশি। ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ১৩ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে দুইজন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের তিনজন, ২১ থেকে ৩১ বছরের মধ্যে দুইজন ও ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে দুই মারা গেছেন।

জাতীয়

রাজধানীর পল্লবীতে চাঞ্চল্যকর সাহিনুদ্দিন হত্যায় সময় লাগে পাঁচ থেকে সাত মিনিট। ঘটনার পরপরই সাবেক এমপি ও হ্যাভেলি প্রাপার্টিজের মালিক এমএ আউয়ালকে ফোন করে মূল ঘাতক কিলার সুমন বেপারী বলে, ‘স্যার ফিনিশ’।

৪-৫ দিন আগে আউয়ালের কলাবাগানের অফিসেই হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। এ সময় তাহের ও সুমন বাহিনীর প্রধান সুমন বেপারীসহ আরও কয়েকজন উপস্থিত ছিল। হত্যা বাস্তবায়নে মূল দায়িত্ব দেওয়া হয় সুমনকে। তার নেতৃত্বে ১০-১২ জন সরাসরি কিলিং মিশনে অংশ নেয়।

বৃহস্পতিবার বিকালে কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির লিগ্যাল আন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার আল মঈন।

বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত সাহিনুদ্দিন হত্যার ঘটনায় আরও পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হলেন- সাবেক এমপি এমএ আউয়াল, হাসান, জাহিরুল ইসলাম বাবু, সুমন বেপারী ও রকি তালুকদার। এদের মধ্যে আউয়াল, হাসান ও বাবুকে র‌্যাব এবং সুমন ও রকিকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) গ্রেফতার করেছে।

এর আগে র‌্যাব ও পুলিশের পৃথক অভিযানে গ্রেফতার হয় মুরাদ ও দিপু। দুই দিনের রিমান্ড শেষে মুরাদকে বৃহস্পতিবার ফের তিন দিনের রিমান্ডে নিয়েছে ডিবি। দিপুকে শুক্রবার আদালতে হাজির করা হতে পারে। এ ছাড়া বৃহস্পতিবার সুমন ও রকির পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

র‌্যাবের সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সাহিনুদ্দিন হত্যাকাণ্ডে ৩০ লাখ টাকার চুক্তি হয়েছে বলে র‌্যাব জানতে পেরেছে। টিটুর মাধ্যমে সুমনের কাছে টাকা আসে। ১৫ মে সুমন ও বাবুসহ কিলিং মিশনে অংশগ্রহণকারীরা শলাপরামর্শ করে। ১৬ মে বিকালে তারা ঘটনাস্থলে জড়ো হয়। পূর্ব বিরোধ মীমাংসার কথা বলে সাহিনুদ্দিনকে সেখানে ডেকে আনা হয়। এ সময় সাহিনের সাত বছরের সন্তান মাশরাফিও সঙ্গে ছিল। সাহিন ঘটনাস্থলে আসার পর সুমন, মনির, মানিক, হাসান, ইকবাল ও মুরাদসহ ১০-১২ জন ধারালো অস্ত্র দিয়ে শিশু সন্তানের সামনেই এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। শেষ পর্যায়ে শরীরের ওপরের অংশে মনির এবং মানিক হাঁটু ও পায়ে কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। এ সময় বাবুসহ বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে লুকআউট ম্যান হিসেবে নজরদারি করে।

কমান্ডার আল মঈন জানান, হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই আসামিদের গ্রেফতারে র‌্যাব উদ্যোগী ছিল। ১৭ মে এজাহারনামীয় আসামি দিপুকে টাঙ্গাইল থেকে গ্রেফতার করে পল্ল­বী থানায় সোপর্দ করে র‌্যাব।

তিনি বলেন, গ্রেফতার মূল আসামি আউয়াল একজন আবাসন ও জমি ব্যবসায়ী। তার ছত্রছায়ায় সুমন সন্ত্রাসী গ্রুপ দিয়ে জমি দখল ও আধিপত্য বিস্তার করতো। আউয়ালের কাছ থেকে সুমনবাহিনীর সদস্যরা প্রতি মাসে ১০-১২ হাজার টাকা করে মাসোয়ারা পেতো। ক্ষেত্র বিশেষ কাজ অনুযায়ী অতিরিক্ত টাকা পেতো। সুমনের নেতৃত্বাধীন সন্ত্রাসী বাহিনী এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাই, রিকশা টোকেন বাণিজ্য, মাদক এবং জুয়াসহ অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালাতো। গত দুই মাসে তাদের বিরুদ্ধে পল্ল­বী থানায় ছয়টি মামলা হয়েছে। নৃশংস হত্যাকাণ্ডে জড়িত অন্যদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে বলে তিনি জানান।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকারি জমি দখলকে কেন্দ্র করে এমএ আউয়াল এবং সাবেক মেজর মোস্তফা কামালের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলছিল। সাহিনুদ্দিন হত্যায় দুই গ্রুপেরই যোগসাজশ থাকতে পারে। তবে মামলায় মেজর গ্রুপের কাউকে আসামি করা হয়নি।

এ বিষয়ে র‌্যাব পরিচালক কমান্ডার আল মঈন বলেন, আউয়ালসহ যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তারা প্রাথমিকভাবে হত্যার দায় স্বীকার করেছে। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সাবেক মেজর মোস্তফা কামালেরও সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে বলে আমরা শুনেছি। তাই এ বিষয়টিও গভীরভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

তিনি বলেন, সাহিনুদ্দিনরা ওই এলাকার স্থানীয় লোক। আউয়াল সেখানে প্রকল্প শুরুর পর ২০০৪ সাল থেকেই সাহিনুদ্দিন পরিবারের সঙ্গে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। সরকারি জমি দখলের পাশাপাশি সাহিনুদ্দিন পরিবারের জমিও দখল করতে চান আউয়াল। কিন্তু সাহিন তাতে বাধা দিচ্ছিলেন। এ নিয়ে দ্বন্দ্ব থাকলেও কখনো কখনো তাদের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে।
র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা এবং র‌্যাব-৪ এর অভিযানে বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে চাঁদপুরের হাইমচর এলাকায় অভিযান চালিয়ে হাসানকে গ্রেফতার করা হয়। বুধবার রাত তিনটার দিকে ভৈরব সদর এলাকায় অভিযান চালিয়ে এমএ আউয়াল এবং বৃহস্পতিবার ভোর ৫টার দিকে পটুয়াখালি থেকে জহিরুল ইসলাম বাবুকে গ্রেফতার করা হয়।

ডিবি মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার মানস কুমার পোদ্দার জানান, সুমন বাহিনীর প্রধান সুমন বেপারী ও তার সহযোগী রকিকে বুধবার রাতে পল্ল­বী ও রায়েরবাগ থেকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা মিরপুর জোনাল টিম।

গোয়েন্দা মিরপুর বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার আহসান খান জানান, তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় যাত্রাবাড়ী থানার রায়েরবাগ এলাকায় অভিযান চালিয়ে হত্যার পরিকল্পনা ও নেতৃত্বদানকারী সুমনকে গ্রেফতার করা হয়। সুমনের দেওয়া তথ্যমতে পল্ল­বী থানার স্কুল ক্যাম্প কালাপানি এলাকা থেকে অপর অভিযুক্ত রকিকে গ্রেফতার করা হয়।

সুমন বাহিনীর সদস্যদের বিষয়ে জানতে চাইলে পল্লবী থানার ওসি কাজী ওয়াজেদ আলী বলেন, এই বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে ১০-১২টি মামলা আছে। অর্ধশতাধিক জিডি আছে। বেশ কয়েকবার তাদের গ্রেফতার করা হলেও জামিন পেয়ে তারা আবারও অপকর্মে লিপ্ত হয়। সাহিনুদ্দিনকে কোপানোর ঘটনায় মানিক এবং মনিরের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এই মানিক ও মনিরকে মাদক ও ডাকাতির মামলায় তিন মাস আগে গ্রেফতার করা হয়েছিল। একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় সুমনকেও এক মাস আগে গ্রেফতার করা হয়ছিল। কয়েকদিন আগে সে জামিন পেয়েছে।

উল্লেখ্য, ১৬ মে পল্ল­বীতে নিজ শিশু সন্তানের সামনে চাপাতি ও রামদাসহ অন্য ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে নৃশংসভাবে সাহিনুদ্দিনকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় সাহিনুদ্দিনের মা আকলিমা বাদী হয়ে পল্ল­বী থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সাবেক এমপি, ইসলামি গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান এবং তরিকত ফেডারেশনের সাবেক মহাসচিব এমএ আউয়ালসহ ২০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়।

এ ছাড়া আরও ১৪-১৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। মামলায় এমএ আউয়াল ছাড়া আসামি হিসেবে অন্য যাদের নাম উল্লে­খ করা হয়েছে, তারা হলেন- আবু তাহের, সুমন, মুরাদ, মানিক, শফিক, টিটু, রাজ্জাক, শফিক (২), কামরুল, কিবরিয়া, দিপু, মরণ আলী, লিটন, আবুল, ন্যাটা সুমন, কালু ওরফে কালা বাবু, বাবু ওরফে বাইট্যাব বাবু ও বাবু ওরফে ইয়াবা বাবু।

জাতীয়

রাষ্ট্রীয় গোপন নথি ‘চুরির চেষ্টার’ অভিযোগ এনে ‘অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট’ আইনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মামলায় কারাবন্দি প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে ঘসেটি বেগমের সঙ্গে তুলনা করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হেমায়েত উদ্দিন হিরন জামিন আবেদনের বিরোধিতা করে শুনানিতে রোজিনা ইসলামের ভূমিকাকে ইতিহাসের খলনায়ক ঘসেটি বেগমের সঙ্গে তুলনা করে বক্তব্য দেন।

রোজিনা ইসলামের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী এহেসানুল হক সমাজী, প্রশান্ত কুমার কর্মকার, ব্যারিস্টার জ্যোর্তিময় বড়ুয়া, আমিনুল গণি টিটো প্রমুখ।

জামিন শুনানিতে এহসানুল হক সমাজী বলেন, রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে এই মামলাটি সাজানো, মিথ্যা এবং বানোয়াট। বিগত ৫০ বছরের মধ্যে কোনো সাংবাদিকের বিরুদ্ধে এ ধরনের মামলা হয়নি। তার কাছ থেকে কী ডকুমেন্টস (নথিপত্র) জব্দ করা হয়েছে তার কোনো বর্ণনা নেই এজাহারে। তার কাছ থেকে কোনো ডকুমেন্টস উদ্ধার বা জব্দ করা হয়নি। এজাহারে বলা হয়েছে, গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস। কিন্তু তার কোনো বর্ণনা দেওয়া নেই। তাই অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট অনুযায়ী ১৯২৩ সালের ৩ ধারা এ ঘটনার সঙ্গে যায় না। এটা একটি জামিনযোগ্য মামলা। তিনি একজন নারী, অসুস্থ। তাই তাকে জামিন দেওয়া হোক। তিনি জামিনের কোনো অপব্যবহার করবেন না।

জবাবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হেমায়েত উদ্দিন হিরন বলেন, পলাশী যুদ্ধের সময় ঘসেটি বেগমরা প্রাসাদ ষড়যন্ত্র করেছিল। এবার ‘রোজিনা বেগম’ গোপন তথ্য পাচার করে একইভাবে সরকারকে উৎখাত করতে ষড়যন্ত্র করেন।

জবাবে রোজিনার আইনজীবী আমিনুল গনি টিটো বলেন, রোজিনা ইসলামকে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে লেখালেখি ও ভ্যাকসিনের বিষয়ে জাতীয়ভাবে তুলে ধরার কারণে তাকে শত্রু মনে করেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীসহ সব কর্মকর্তারা। তাকে ফাঁসানো হয়েছে। তিনি ঘটনার সঙ্গে জড়িত না। তাই যে কোনো শর্তে রোজিনা ইসলামের জামিন মঞ্জুর করা হোক।

জামিন শুনানি শেষে আদালত আগামী রোববার আদেশের জন্য দিন ঠিক করেছেন। এর আগে দুপুর ১২টা ৪৯ মিনিটে ঢাকা মহানগর হাকিম বাকী বিল্লার ভার্চুয়াল আদালতে তার জামিন শুনানি শুরু হয়। দুপুর ২টার দিকে শেষ হয় তার জামিন শুনানি।

প্রসঙ্গত, গত ১৭ মে দুপুরের পর পেশাগত দায়িত্ব পালনে সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যান প্রথম আলোর অনুসন্ধানী প্রতিবেদক রোজিনা ইসলাম। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা তাকে একটি কক্ষে ৫ ঘণ্টা আটকে রাখেন। রাত সাড়ে আটটার দিকে রোজিনাকে শাহবাগ থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তাকে রাত ৯টার দিকে শাহবাগ থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।

পরে রাত পৌনে ১২টার দিকে তার বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় রাষ্ট্রীয় গোপন নথি ‘চুরির চেষ্টার’ অভিযোগ এনে ‘অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট’ আইনে মামলা করা হয়। মামলার বাদী হন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপসচিব শিব্বির আহমেদ ওসমানী।

পুলিশ রোজিনা ইসলামকে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে ১৮ মে আদালতে হাজির করে। একইসঙ্গে রোজিনাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে পুলিশ। অন্যদিকে রোজিনা ইসলামের জামিনের আবেদন জানান তার আইনজীবীরা। ওই দিন শুনানি নিয়ে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিম রিমান্ড আবেদন নাকচ করেন এবং রোজিনার জামিন আবেদনের ওপর অধিকতর শুনানির জন্য ২০ মে দিন ধার্য করেন। সেদিন আদালতের নির্দেশে রোজিনাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

এদিকে রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট ও দণ্ডবিধিতে করা এই মামলার তদন্তের দায়িত্ব ১৯ মে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগকে (ডিবি) দেওয়া হয়েছে। ডিবি বৃহস্পতিবার (২০ মে) জানিয়েছে, রোজিনার মামলার বিষয়ে তারা কোনো চাপে নেই। স্বাধীন তদন্ত হবে।

জাতীয়

কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ঘিঞ্জি ক্যাম্প থেকে নোয়াখালীর ভাসানচরে সুরম্য দালানের বসবাসের সুযোগ পাওয়া রোহিঙ্গারা এবার সেখান থেকেও পালাচ্ছে। ইতোমধ্যে ৪০-৫০ জন রোহিঙ্গা ভাসানচর দ্বীপের ইটের দেয়ালের ঘর ছেড়ে পালিয়েছেন বলে জানিয়েছেন শরণার্থী নেতারা। অনেকে স্ব-পরিবারে আবার কেউ কেউ পরিবারের অন্য সদস্যদের রেখেই ভাসানচর থেকে পালিয়েছেন। তবে পালিয়ে যাওয়াদের মাঝে ইতোমধ্যে ডজনাধিক রোহিঙ্গা ধরাও পড়েছেন। ঘিঞ্জি বাসের কথা বলে উখিয়া-টেকনাফের ক্যাম্প থেকেও নানাভাবে পালানোর চেষ্টা চালান রোহিঙ্গারা।

ভাসানচর হতে রোহিঙ্গাদের পলায়নকে ‘সুখে থাকতে ভুতে কেলায়’ প্রবাদের সাথে তুলনা করে রোহিঙ্গারা আসলেই অস্থির জনগোষ্ঠী বলে মন্তব্য করেছেন লোকাল এনজিওগুলোর সমন্বিত প্লাটফর্ম সিসিএনএফ’র ফোকাল আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা। তবে, ফিরে আসা কোন রোহিঙ্গার সাথে কথা বলা সম্ভব না হওয়ায় তারা কেন পালিয়ে আসছে সে তথ্য এখনো অজানাই রয়েছে।

সূত্র মতে, ভাসানচর থেকে পালাতে শুরু করেছে কিছু রোহিঙ্গা। ১৮ মে (মঙ্গলবার) সকালে ১১ জন রোহিঙ্গাকে আটক করে সন্দ্বীপ থানা পুলিশ। এছাড়া টেকনাফের উনছিপ্রাং রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও নুরুল আমিন নামের একজন রোহিঙ্গা যুবক ভাসান চর থেকে পালিয়ে এসেছে বলে নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার ১৬ এপিবিএন অধিনায়ক (এসপি)।

সূত্র জানায়, ভাসানচর থেকে পালিয়ে আসা ১১ রোহিঙ্গাকে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার রহমতপুর ইউনিয়ন থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ১৮ মে সকালে নোয়াখালীর ভাসানচর থেকে পালিয়ে কক্সবাজারের টেকনাফ রওয়ানা দেয়ার চেষ্টাকালে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

পুলিশ সূত্রে জানিয়েছে, গ্রেফতার ১১ রোহিঙ্গার মধ্যে ছয়জন নারী, তিনজন শিশু ও দুইজন যুবক রয়েছেন। মঙ্গলবার সকালে রহমতপুর এলাকায় স্থানীয় লোকজন তাদের দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ গিয়ে তাদের আটক করে।

আটক রোহিঙ্গাদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করে ভাসানচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহে আলম জানান, কিছু দিন আগেও ভাসানচর থেকে পালানোর চেষ্টায় আটজন রোহিঙ্গাকে আটক করে মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভাসানচর থেকে দালালের মাধ্যমে জেলেদের ছোট নৌকায় সন্দ্বীপে আসছেন রোহিঙ্গারা। সেখান থেকে চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজারের টেকনাফসহ বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ছেন তারা।

এদিকে কক্সবাজার ১৬ এপিবিএন অধিনায়ক (এসপি) তারিকুল ইসলাম তারিক জানান, নুরুল আমিন (২০) নামে এক রোহিঙ্গা ১৭ মে রাতে ভাসানচর থেকে অজ্ঞাত দালালদের মাধ্যমে পালিয়ে উনচিপ্রাং ক্যাম্পে তার বাবার কাছে চলে আসে। এ তথ্যের ভিত্তিতে ক্যাম্প সিআইসি পালিয়ে আসা নুরুল আমিনকে ডেকে পাঠালে তাকে না পেয়ে তার বাবাকে সিআইসি অফিসে আনা হয়।

তার বাবাকে জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, ছেলে নুরুল আমিন প্রশাসনের ভয়ে বর্তমানে ক্যাম্পের বাইরে অবস্থান করছে। ভাসানচর থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরনার্থী নুরুল আমিনের বাবাকে তার ছেলেসহ বুধবার সিআইসি অফিসে হাজির হতে বলা হয়েছে।

পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা যুবক নুরুল আমিন (২০) টেকনাফের উনছিপ্রাং ব্লক বি-৬, ঘর নং-২৮৫ এ বসবাসকারী (এফসিএন নং-২৪৩৯১০) জকির আহমেদের ছেলে। কিন্তু পরবর্তীতে তাকে সিআইসি অফিসে হাজির করা সম্ভব হয়েছে কিনা জানতে চাইলেও, সে ব্যাপারে কিছুই জানাননি এসপি তারিক।

গত ডিসেম্বরে রোহিঙ্গাদের কক্সবাজার থেকে ভাসানচরে স্থানান্তর শুরু হওয়ার পর এপ্রিল পর্যন্ত কয়েক দফায় প্রায় ১৯ হাজার রোহিঙ্গা সেখানে পৌঁছান। সরকারি কর্মকর্তাদের মতে, সব রোহিঙ্গাই সেখানে স্বেচ্ছায় গেছেন। কিন্তু গত কয়েক মাসে সেখান থেকে ৪০-৫০ জন রোহিঙ্গা পালিয়ে গেছেন বলে জানিয়েছেন ভাসানচরের আশ্রয়ণ প্রকল্পের গুচ্ছগ্রামের থাকা একাধিক রোহিঙ্গারা।

তবে সরকারি কর্মকর্তা, পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা, নৌবাহিনী এবং কোস্ট গার্ডের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে ভাসানচরে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের (আরআরআরসি) প্রতিনিধি ও ক্যাম্প ইনচার্জ (সিআইসি) রঞ্জন চন্দ্র দে বলেন, ১২-১৩ জন পলাতক রোহিঙ্গার একটি তালিকা আমরা পেয়েছি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভাসানচর আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি গুচ্ছগ্রামের রোহিঙ্গা নেতা সাংবাদিকদের বলেন, এখান থেকে ৪০-৫০ জন রোহিঙ্গা পালিয়েছেন। সর্বশেষ গত বুধবার বিকালে বেড়িবাঁধ থেকে পালানোর চেষ্টা করা চার রোহিঙ্গাকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

গুচ্ছগ্রামের আরেক নেতার মতে, এখানে আসার পর হতে প্রায় অর্ধশত রোহিঙ্গা ভাসানচর থেকে পালিয়ে গেছেন। আরও অনেকে পালানোর চেষ্টাকালে ধরা পড়েছেন। তাদের অনেককে কারাগারেও যেতে হয়েছে। তবু পালানোর চেষ্টা থামছে না। তবে পলাতক একজন রোহিঙ্গা ফিরে আসার ঘটনা ঘটেছে। সুরম্য দালানে সবধরনের সুযোগ পেয়ে বাস করলেও কঠোর নিরাপত্তার কারণে একে বন্দী জীবন বলে অবহিত করে অনেকে আগের ক্যাম্পে ফিরতে চাচ্ছে বলে অভিমত ভাসানচরে বসবাসকারীদের।

এদিকে, গত শনিবার চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের মাইটভাঙ্গা ইউনিয়নের চৌধুরী বাজার থেকে আটক হয় ভাসানচরের তিন রোহিঙ্গা। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা পুলিশকে জানিয়েছেন, সাগরে তিনঘণ্টা সাঁতার কেটে সন্দ্বীপের কাছাকাছি পৌঁছানোর পর বাংলাদেশি জেলেরা তাদের নৌযানে তুলে সেখানে নিয়ে গেছে।

সন্দ্বীপ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বশির আহমেদ খান সাংবাদিকদের বলেন, জেলেরা সাগরে সাঁতরাতে দেখে কয়কজনকে উদ্ধার করেন। পরে জানতে পারেন তারা রোহিঙ্গা, ভাসানচর থেকে পালিয়ে এসেছেন। এরপর তাদের ট্রলারে তুলে নিয়ে এসে মাইটভাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদে সোপর্দ করেন জেলেরা। আটক তিন জনের নাম নাজিম উদ্দিন, মোহাম্মদ নাসিম ও আবদুল হামিদ। তারা ভাসানচরের ৪৯ ও ৬২ নম্বর ক্যাম্প থেকে পালিয়ে আসার কথা বলেছেন। উখিয়ার ঘিঞ্জি ক্যাম্প হতে তারা স্বেচ্ছায়ই ভাসানচরে গিয়েছিলেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন।

তাদের বিরুদ্ধে বিদেশি নাগরিক সম্পর্কিত আইনে মামলা দিয়ে গত রবিবার আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

এ বিষয়ে ভাসানচর থানার ওসি মাহে আলম বলেন, ভাসানচর থেকে রোহিঙ্গারা প্রায়ই পালানোর চেষ্টা করে। তবে এমন অনেক চেষ্টাই ব্যর্থ করে দিয়েছি আমরা। কারাগারে পাঠানো রোহিঙ্গাদের জামিনে মুক্ত করে পুনরায় ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হতে পারে।

উখিয়া কুতুপালংয় রোহিঙ্গা ক্যাম্পের একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, স্বেচ্ছায় পরিবার নিয়ে ভাসানচরে যাওয়া অনেকে পরিবার রেখে পালিয়ে এখানে ফিরে এসেছে। প্রথমে সাঁতরে, পরে জেলেদের নৌকায় সাগর পাড়ি দিচ্ছে বলে উল্লেখ করছে ফিরে আসা ব্যক্তিরা।

রোহিঙ্গাদের ভাসানচর ছেড়ে পালানোর বিষয়টি অবগত থাকার কথা জানিয়ে কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার শাহ রেজওয়ান হায়াত বলেন, পলাতকরা ভাসানচর থেকে সাগরপথে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার পথে আটক হওয়া রোহিঙ্গা। সেখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে যারা আছেন, তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে আমরা এটা ঠেকানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি।

এদিকে, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) সাবেক কর্মকর্তা অভিবাসন ও শরণার্থী বিষয়ক বিশ্লেষক আসিফ মুনীর মনে করেন, ভাসারচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর শুরুর সরকারি সিদ্ধান্তে দূরদর্শিতার অভাব ছিল বলেই এমনটা ঘটছে। সরকার নিজে দায়িত্ব কাঁধে নিয়েই কক্সবাজার থেকে রোহিঙ্গাদের সেখানে স্থানান্তর করেছে। এখন সেখান থেকে কেউ পালিয়ে গেলে তার দায়টাও সরকারের ওপরই বর্তাবে। এক্ষেত্রে সরকার হয়তো বলবে, যে পরিমাণ নিয়ে যাওয়া হয়েছে সেই তুলনায় পালিয়ে যাওয়ার হার খুবই কম, বেশিরভাগই ভাসানচরে ভালো আছে। কিন্তু একজন মানুষও যদি পালিয়ে থাকে সেটার কারণ খতিয়ে দেখা উচিত বলে উল্লেখ করেন তিনি।রোহিঙ্গাদের নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করা বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা পালস্ এর প্রধান নির্বাহী, সিসিএনএফ’র ফোকাল ও কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা বলেন, রোহিঙ্গারা এমন একটি জনগোষ্ঠী, তাদের যেখানেই রাখা হোক না কেন তারা পালানোর বা নানা অপরাধে যুক্ত হওয়ার চেষ্টা করবে। পৃথিবীতে জোরপূর্বক উদ্বাস্তু হওয়ারা অন্য কোথাও স্বাভাবিক জীবনে অভ্যস্ত হতে পারেনি। তাছাড়া ভাসানচরের চারদিকে সমুদ্রের যে বিশাল জলরাশি, এটা রোহিঙ্গাদের জন্য সমস্যা না। রাখাইন থেকে বঙ্গোপসাগর হয়ে ভারত মহাসাগর দিয়ে মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে যাওয়ার চেষ্টা তারা যুগ যুগ ধরেই করে আসছে। নাফ নদী সাঁতরে টেকনাফে চলে আসার নজিরও আমরা দেখেছি। তাই ভাসানচরে নজরদারি বাড়ানো ছাড়া অন্য কোনও উপায় নেই।

ভাসানচর আশ্রয়ণ প্রকল্পের পরিচালক ও নৌবাহিনীর কমোডোর রাশেদ সাত্তারের মতে, ভাসানচর আশ্রয়ণ প্রকল্পটি উদ্বাস্তুদের জন্য স্বর্গতুল্য। পৃথিবীর কোথাও শরণার্থীদের এত আধুনিক সুযোগ-সুবিধা দেয়ার নজির নেই।

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে ২৫ আগস্টে কোরবানি ঈদের মাত্র কয়েকদিন আগে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর ব্যাপক নিপীড়নমূলক অভিযান শুরু করে। এর ফলে প্রাণ বাঁচাতে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। পুরনোসহ উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি শিবিরে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। পরবর্তীতে কক্সবাজার থেকে এক লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে সরিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে একটি প্রকল্প নেয় সরকার। আশ্রয়ণ-৩ নামে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে। এর অংশ হিসেবে গত ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত কয়েক দফায় স্বেচ্ছাগামী প্রায় ১৯ হাজার রোহিঙ্গা সেখানে পৌঁছে দালানের এক একটি ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেয়া হয়। রোজার পর সেখানে অবস্থানকারীদের জন্য উৎসবমুখর ভাবে ঈদের জামায়াত ও নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

জাতীয়

‘বঙ্গভ্যাক্স’ হল mRNA প্রযুক্তিতে তৈরি বিশ্বের প্রথম এক ডোজের কার্যকরী টিকা যা SARS-CoV-2 ভাইরাসের বিরুদ্ধে সফলভাবে মানব কোষ এবং প্রাণীদেহে সুদৃঢ় সুরক্ষা দেখিয়েছে। বিশ্বের বিখ্যাত টিকা আবিষ্কারক প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে তাল মিলিয়ে দেশীয় প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড নিজস্ব প্রযুক্তিতে এই টিকাটি তৈরি করেছে এবং বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশকে এক অনন্য উচ্চতায় উন্নীত করেছে।

বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশে কাজ করার সহজাত সীমাবদ্ধতাসমূহ যেমন: কাঁচামালের ব্যবস্থাকরণ, নতুন প্রযুক্তির সাথে অভিযোজন, গবেষণা তহবিলের অভাব সত্ত্বেও ড. কাকন নাগ এবং ড. নাজনীন সুলতানার নেতৃত্বে তরুণ বিজ্ঞানীদের একটি চৌকস দল এই টিকাটি আবিষ্কার করেছে। এটির অনন্য নকশা, প্রযুক্তি ও ফর্মুলেশন প্রানিদেহে কার্যকর ফার্মাকোলোজিক্যাল প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে।

প্রি-ক্লিনিক্যাল গবেষণায় দেখা গেছে, এই টিকাটি মানব কোষ ও প্রাণীদেহে সহনশীল ও নিরাপদ। টিকাদান পরবর্তী ৭ম দিনে নির্দিষ্ট অ্যান্টিবডি তৈরির প্রমাণ মিলেছে, যা ১৪তম দিনে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় পাওয়া গেছে। টিকাদান পরবর্তী ৯১ দিন অবধি মেমরি কোষগুলো পর্যাপ্ত সংখ্যায় পাওয়া গেছে, যা নির্দেশ করে যে এই ভ্যাকসিনটি ভাইরাসের বিরুদ্ধে দীর্ঘস্থায়ী সুরক্ষা দিতে সক্ষম।

অন্যান্য mRNA ভ্যাকসিনের তুলনায় এই ভ্যাকসিনটি সুলভ হবে, তাই স্বল্প ও মধ্যম আয়ের দেশগুলির জন্য সহজেই ক্রয়যোগ্য হবে। এর মাধ্যমে এই দেশগুলির প্রায় ৫শ কোটি মানুষের mRNA ভ্যাকসিন (বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ এবং কার্যকর টিকা প্রযুক্তি) পাওয়ার সুযোগ হবে। যেহেতু এটি এক ডোজের টিকা, তাই অন্যান্য টিকার তুলনায় এটি ক্রয়ের জন্য ব্যয় এবং প্রয়োগের জন্য সময় সাশ্রয়ী হবে।

প্রথমে টিকাটির টার্গেটের সম্পূর্ণ কোডিং সিকুয়েন্স গত ২৯ জুন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এনসিবিআই (NCBI) ডেটাবেসে এবং গবেষণা নিবন্ধনটি ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের অনলাইন প্ল্যাটফর্ম বায়ো-আর্কাইভ (bioRxiv) এ প্রকাশিত হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) গতবছরের ১৫ অক্টোবর গ্লোব বায়োটেক কর্তৃক আবিষ্কৃত mRNA vaccine কে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে, যা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়। গত ডিসেম্বরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি বিশেষজ্ঞ দল ‘বঙ্গভ্যাক্স’ এর গবেষণাগার পরিদর্শন করে সকল তথ্য উপাত্ত ও প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের নথি পত্র পর্যালোচনা করে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অগ্রগতিতে সহযোগিতা করেন। এরই পরিক্রমায় ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর (DGDA) উক্ত গবেষণাগার ও উৎপাদন কেন্দ্র পরিদর্শন সাপেক্ষে গত ২৮ ডিসেম্বর ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য ‘বঙ্গভ্যাক্স’ উৎপাদনের অনুমতি প্রদান করেন।

টিকাটি মানবদেহে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের নৈতিক অনুমোদনের জন্য গত ১৭ জানুয়ারি বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলে (BMRC) আবেদন করা হয়। ইথিক্যাল কমিটি প্রোটোকল পর্যালোচনা করে প্রায় শতাধিক বিষয়ে পর্যবেক্ষণ দিয়ে চিঠি (সূত্র: বিএমআরসি/ এনআরইসি/২০১৯-০২২/৯৯, তারিখ: ০৯/০২/২০২১) দেন এবং এর সকল প্রশ্নের যথাযথ উত্তরসহ সংশোধিত প্রোটোকল ও প্রয়োজনীয় তথ্য উপাত্ত ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ইং তারিখে বিএমআরসিতে জমা দেয়া হয়। এরপর বিএমআরসি থেকে আর কোন প্রকার প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

টিকাটির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এটি +৪°সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এক মাস এবং -২০°সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ছয় মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যাবে।এটি সিন্থেটিক্যালি তৈরি হওয়ায় তা ভাইরাস মুক্ত এবং শতভাগ হালাল। বর্তমানে গ্লোব বায়োটেকের উৎপাদন কেন্দ্রে প্রতিমাসে ১ কোটি ডোজ টিকা তৈরি করার সক্ষমতা রয়েছে।

জাতীয়

গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে একদিনে আরও ৩৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মোট মৃত্যু হয়েছে ১২ হাজার ২৪৮ জনের।

নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ১ হাজার ৬০৮ জন। সব মিলিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৮৩ হাজার ৭৩৭ জনে। মৃত ৩৭ জনের মধ্যে পুরুষ ২৪ জন ও ১৩ জন নারী।

বুধবার (১৯ মে) বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাছিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা সিটিসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ও বাড়িতে উপসর্গ বিহীন রোগীসহ গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৯২৩ জন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৭ লাখ ২৬ হাজার ১২৩ জন।

সারাদেশে সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৪৭৮ টি ল্যাবে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা হয়েছে। এর মধ্যে আরটি-পিসিআর ল্যাব ১২৯টি, জিন এক্সপার্ট ৩৭টি, র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন ৩১২টি। এসব ল্যাবে ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ হয়েছে ২০ হাজার ৪৯৮টি। মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ২০ হাজার ৫২৮টি। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৫৭ লাখ ৫৫ হাজার ৪৪৬টি।

এতে আরও জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার ৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৬২ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯২ দশমিক ৬৫ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৬ শতাংশ।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, ২৪ ঘণ্টায় মৃত ৩৭ জনের মধ্যে ঢাকা বিভাগে রয়েছেন ১৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৫ জন। খুলনা ও সিলেট বিভাগে ২ জন করে ৪ জন। এছাড়া রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগে ১ জন করে ২ জন রয়েছেন।

এদের মধ্যে সরকারি হাসপাতালে মারা গেছেন ২৬ জন, বেসরকারি হাসপাতালে ১০ জন। আর বাড়িতে মারা গেছেন ১ জন।

মৃতদের বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৬০ বছরে ঊর্ধ্বে ২৪ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৭ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ২ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ৩ জন, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ১ জন রয়েছেন।

এতে আরও জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে এসেছেন ৫১১ জন ও আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ৪০৫ জন। এ পর্যন্ত আইসোলেশনে এসেছেন এক লাখ ২৯ হাজার ১৭৪ জন। আইসোলেশন থেকে ছাড়পত্র নিয়েছেন ১ লাখ ২৯ হাজার ১৭৪ জন। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ১৭ হাজার ৬১৬ জন।

এর আগে গত ৭ এপ্রিল দেশে একদিনে করোনা শনাক্ত হয় সাত হাজার ৬২৬ জন। যা দেশে  একদিনে করোনা শনাক্তে সর্বোচ্চ রেকর্ড। আর গত ৬ এপ্রিল একদিনে করোনা শনাক্ত হয়েছিল সাত হাজার ২১৩ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে করোনা ভাইরাসের প্রথম রোগী শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রথম একজনের মৃত্যু হয়। এরপর ধীরে ধীরে আক্রান্তের হার বাড়তে থাকে।

জাতীয়

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৪০তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ। ১৯৮১ সালের ১৭ মে দীর্ঘ নির্বাসন শেষে তিনি বাংলার মাটিতে ফিরে আসেন। সেদিন বিকাল সাড়ে ৪টায় ইন্ডিয়ান এয়ারলাইনসের বোয়িং বিমানে তিনি ভারতের রাজধানী দিল্লি থেকে কলকাতা হয়ে তত্কালীন ঢাকা কুর্মিটোলা বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নির্মমভাবে নিহত হন। এসময় তার দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা প্রবাসে থাকায় ঘাতকদের হাত থেকে রেহাই পান।

দিবসটি স্মরণে যত কর্মসূচি

কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের চার দশক পূর্তি উপলক্ষ্যে ‘শেখ হাসিনার চার দশক : বদলে যাওয়া বাংলাদেশের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা’ শীর্ষক তথ্যচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা উপ-কমিটি। এই তথ্যচিত্র প্রদর্শনীর মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রাম এবং রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে তার নেতৃত্বে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবে। এছাড়া আজ ১৭ মে সকাল ১১টায় ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর এবং বিকাল ৩টায় মহানগর নাট্য মঞ্চে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে দোয়া মাহফিল ও আলোচনা অনুষ্ঠান হবে। এছাড়া সারা দেশে মসজিদ, মন্দির, গীর্জা ও প্যাগোডায় বিশেষ দোয়া ও প্রার্থনা করা হবে।

টিভি পর্দায় আজ ‘হাসিনা :এ ডটারস টেল’

দিবসটি উপলক্ষ্যে আজ বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বিটিভি ওয়ার্ল্ডসহ বেশ কিছু বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত হবে ‘হাসিনা :এ ডটারস টেল’ ডকুড্রামাটি। বাংলাদেশ টেলিভিশনে এবং বিটিভি ওয়ার্ল্ডে দুপুর ৩টা ৩০ মিনিটে দেখানো হবে। একই দিনে বেসরকারি বিভিন্ন চ্যানেলেও সম্প্রচার করা হবে এটি।