জাতীয়

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকীতে তার নামে আন্তর্জাতিক পুরস্কার ঘোষণা করেছে ইউনেস্কো নির্বাহী সংসদ। আগামী ১১ নভেম্বর প্যারিসে ইউনেস্কোর সদর দপ্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দিতে পারেন বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন।

শনিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে প্রধানমন্ত্রীর ইউরোপ সফরের বিস্তারিত তুলে ধরতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমসহ মন্ত্রণালয়ের অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ইউনেস্কো সদর দপ্তরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ ফর দ্য ক্রিয়েটিভ ইকোনোমিকস নামের এ পুরস্কার প্রদান করা হবে। এই প্রথম বঙ্গবন্ধুর নামে কোনো আন্তর্জাতিক পুরস্কার ঘোষণা করা হলো। এটি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গর্বের।’

তিনি বলেন, ১২ নভেম্বর ইউনেস্কোর ৭৫ তম বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে একটি উচ্চ পর্যায়ের সভা অনুষ্ঠিত হবে। যেখানে অংশগ্রহণের জন্য ইউনেস্কোর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এই উচ্চ পর্যায়ের সভায় অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের বিশ্বজনীন আদর্শ তুলে ধরার পাশাপাশি জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সর্বজনীন, মানসম্মত ও বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা এবং সুস্থ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সংস্কৃতি চর্চার গুরুত্বের বিষয়ে তার নিজস্ব চিন্তা ও এ বিষয়ে বাংলাদেশের অর্জনসমূহ বিশ্বের সামনে তুলে ধরবেন।

জাতীয়

দেশে গত ২৪ ঘন্টায় করোনা ভাইরাসে শনাক্ত হার কমেছে দশমিক ৪৬ শতাংশ। একদিন আগে এই ভাইরাসে শনাক্তের হার ছিল ১ দশমিক ৭১ শতাংশ। আজ কমে হয়েছে ১ দশমিক ২৫ শতাংশ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আজ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে একথা জানিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আজ ১৩ হাজার ২৪০ জনের নমুনা পরীক্ষায় নতুন শনাক্ত হয়েছে ১৬৬ জন। গতকাল ১৭ হাজার ৮১১ জনের নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছিল ৩০৫ জন। দেশে এ পর্যন্ত ১ কোটি ৩ লাখ ৩২ হাজার ৬৪৪ জনের নমুনা পরীক্ষায় মোট শনাক্ত হয়েছে ১৫ লাখ ৬৯ হাজার ৩২৮ জন। মোট শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ১১ শতাংশ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, করোনা আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘন্টায় ৮ জন মারা গেছে। আগের দিনের চেয়ে আজ ১ জন বেশি মারা গেছে। আগের দিনে মারা গিয়েছিল ৭ জন। আজ মৃতদের মধ্যে পুরুষ ৬ জন ও নারী ২ জন। এ নিয়ে সারা দেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৭ হাজার ৮৬২ জনে। মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৭৮ শতাংশ।

এদিকে ঢাকা জেলায় (মহানগরসহ) ২৪ ঘন্টায় ৭ হাজার ৩১০ জনের নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছে ৮৮ জন। শনাক্তের হার ১ দশমিক ২০ শতাংশ এবং আগের দিনে এ হার ছিল ১ দশমিক ৮২ শতাংশ। এই জেলায় গত ২৪ ঘন্টা মারা গেছেন ৪ জন। আগের দিনে মারা গিয়েছিল ২ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আরও জানায়, গত ২৪ ঘন্টায় ঢাকা বিভাগে ৪ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ২ জন এবং খুলনা ও সিলেট বিভাগে ১ জন করে মারা গেছে। তবে, রাজশাহী, বরিশাল, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগে করোনা আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘন্টায় কেউ মারা যায়নি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘন্টায় হাসপাতাল এবং বাসায় মিলিয়ে সুস্থ হয়েছেন ১৮০ জন। সুস্থ্যতার হার ৯৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ। আগের দিনে সুস্থতার হার ছিল ৯৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ। দেশে এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছে ১৫ লাখ ৩৩ হাজার ১৪৭ জন।

জাতীয়

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিরূপ প্রভাবে বাংলাদেশে প্রতি বছর বজ্রপাতে প্রাণহানির সংখ্যা বেড়েই চলেছে। চলতি বছরে এ পর্যন্ত প্রাণহানি ঘটেছে ৩৫২ জনের। সর্বশেষ গত ২১ অক্টোবর রাতে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় দুই মৎস্যজীবীর মৃত্যু হয়। সরকারি হিসাবে গত বছরের তুলনায় চলতি বছরের ১০ মাসে বজ্রপাতে ১০০-এর বেশি মারা গেছে। ২০২০ সালে বজ্রপাতে মারা যায় ২৫৫ জন। ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, দেশে গত ১১ বছরে বজ্রপাতে ২ হাজার ৮০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। যাদের বেশির ভাগই খোলা মাঠ বা হাওরে কৃষিকাজ করছিলেন। ফিনল্যান্ডের বজ্রপাত-বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ‘ভাইসালা’র গবেষকরা বলছেন, বজ্রপাতের অন্যতম হটস্পট হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ।

পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি, বন-জঙ্গল উজাড়, বঙ্গোপসাগর থেকে সক্রিয় মৌসুমি বায়ু প্রবাহ, উত্তরের হিমালয়ের পাদদেশে পুঞ্জীভূত মেঘ, মেঘ সৃষ্টির প্রক্রিয়া কিউমোলোনিম্বাস (পুঞ্জমেঘ), মোবাইল ফোন টাওয়ার থেকে উৎপন্ন অতিমাত্রার ম্যাগনেটিক ফিল্ড ও ওয়েব বজ্রপাতের জন্য দায়ী। বাংলাদেশে ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর প্রায় ৫০ লাখ বা তার বেশি-সংখ্যক বজ্রপাত মেঘ থেকে ভূমিতে নেমে আসে। বজ্রপাত ঠেকাতে আধুনিক কোনো প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হয়নি পৃথিবীতে। তবে আগাম সতর্ক সংকেত প্রদানে স্যাটেলাইট ভিত্তিক বিভিন্ন সিস্টেম ও অ্যাপস রয়েছে। এমতাবস্থায় সরকার বিদেশ থেকে বজ্রপাতে মৃত্যুরোধে ‘আরলি ওয়ার্নিং সিস্টেম’ বা বজ্রপাত পূর্বাভাস যন্ত্র এনে তা বসানোর পরিকল্পনা নিয়েছে। প্রাথমিকভাবে দেশের বজ্রপাত-প্রবণ এলাকাগুলোতে ৭২৩টি যন্ত্র বসানো হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বজ্রপাতের ৪০-৪৫ মিনিট আগেই সংকেত পাওয়া যাবে। ফলে যারা খোলা আকাশের নিচে কাজ করেন তারা সহজেই নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে পারবেন। এতে অনেক প্রাণহানি রোধ করা সম্ভব হবে। এছাড়া বজ্রপাতে মৃত্যু ঠেকাতে ‘লাইটার অ্যারেস্টার’ সম্বলিত বজ্রপাত-নিরোধক কংক্রিটের ছাউনি (শেল্টার) নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রাথমিকভাবে হাওর এলাকায় প্রতি কিলোমিটার পরপর একটি করে মোট ১ হাজার ছাউনি নির্মাণ করা হবে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান। দেশের হাওরাঞ্চলসহ বজ্রপাতপ্রবণ ২৩ জেলায় ছাউনি নির্মাণে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি ছাউনির সম্ভাব্য নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা। এক কিলোমিটার অন্তর-অন্তর নির্মাণ করা হবে একেকটি শেল্টার, যাতে বজ্রপাতের আওয়াজ পেলেই মাঠের কৃষকসহ মানুষজন সেখানে আশ্রয় নিতে পারেন।

প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান বলেন, বজ্রপাতের আগে মেঘের মধ্যে পজিটিভ-নেগেটিভ চার্জগুলো তৈরি হয়। চার্জ তৈরি হওয়ার চার মিনিট পরই বজ্রপাত হয়। এজন্য গুড়ুগুড়ু ডাক শুনলে যাতে মানুষ ঘরে থাকে বা মেঘ দেখে ঘরে যেতে পারে। বর্তমান বিশ্বে বজ্রপাতের ক্ষেত্রেও সাইক্লোনের মতো আগাম সতর্কবার্তা দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। কিছু মেশিন আছে যেগুলো ৪০ মিনিট আগেই শনাক্ত করতে পারে বজ্রপাত হবে এবং কোথায় হবে। তাই বজ্রপাতের ক্ষেত্রে আগাম সতর্কতা প্রদানকারী এ যন্ত্রগুলো আমদানি করা হবে। এ প্রকল্পের আওতায় বজ্রপাত থেকে বাঁচতে আশ্রয়কেন্দ্র করা হবে। প্রাথমিকভাবে বজ্রপাতপ্রবণ অঞ্চলগুলোতে, বিশেষ করে হাওর-বাঁওড় এলাকায় বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এই সিগন্যাল যাতে একটি অ্যাপের মাধ্যমে স্থানীয় মানুষের মোবাইল ফোনে ম্যাসেজ যেতে পারে, সেই ব্যবস্থাও করা হবে।

দেশের কয়েকটি জেলা সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, দিনাজপুর, সিরাজগঞ্জ, হবিগঞ্জ, শেরপুর ও জামালপুরে বজ্রপাতে মৃত্যুর হার বেশি। প্রতিমন্ত্রী বলেন, মৃত্যু বেশি হয় খোলা মাঠ ও হাওরের মধ্যে। তাই খোলা মাঠ ও হাওরে বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রের মতো বজ্রপাত আশ্রয়কেন্দ্র করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। সেখানে একটা পাকা ঘর থাকবে এবং প্রত্যেক ঘরে একটি করে লাইটনিং অ্যারেস্টার দেওয়া হবে। যাতে ২০ থেকে ২৫ মিনিটের মধ্যে সতর্কবার্তা শোনার পর মানুষ সেই আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে পারে। বজ্রপাত না হওয়া পর্যন্ত তারা সেখানে অপেক্ষা করবে। এই আশ্রয়কেন্দ্রগুলো হবে বহুমুখী। এখানে কৃষক ও মৎস্যজীবীরা সকালে নাস্তা করতে পারবেন, দুপুরে খেতে পারবেন। ঝড়-বৃষ্টিতে আশ্রয় নিতে পারবেন, কেউ চাইলে বিশ্রামও নিতে পারবেন। তিনি জানান, বজ্রপাতে মৃত্যু ঠেকাতে ৪৭৬ কোটি টাকার প্রকল্প প্রণয়ন করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এটার সম্ভাব্যতা যাচাই করছে, সেই রিপোর্ট আসলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর কাজ শুরু হবে। স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠন ‘সেভ দ্য সোসাইটি অ্যান্ড থান্ডারস্টর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরামের (এসএসটিএএফ) সভাপতি ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলেন, বজ্রপাতে মৃতদের বেশির ভাগই কৃষক। দেশের হাওর অঞ্চলগুলোতে বেশি বজ্রপাত হওয়ায় দ্রুত ঐ সব অঞ্চলে আগাম বার্তা ও বজ্র-নিরোধক টাওয়ার নির্মাণ গুরুত্বপূর্ণ।

এদিকে গেজেটস নাউয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের সর্বাধিক বজ্রপাতপ্রবণ কর্নাটকে ‘সিদিলু’ নামে একটি মোবাইল অ্যাপ চালু করে মৃত্যুর সংখ্যা কমিয়ে আনা হয়েছে। এই অ্যাপ ব্যবহারকারীরা বজ্রপাতের ৪৫ মিনিট আগেই সংকেত পেয়ে থাকেন। ফলে সহজেই সবাই নিরাপদ স্থানে চলে যেতে পারেন। মূলত ব্যবহারকারীদের রিয়েল টাইম লোকেশন বা অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে সংকেত দিচ্ছে সিদিলু। ঝুঁকির মাত্রা বিবেচনায় তিনটি ভিন্ন ভিন্ন রঙে সতর্কসংকেত দেখায় সিদিলু অ্যাপ। রঙ তিনটি হলো-লাল, কমলা ও হলুদ। আর ব্যবহারকারী নিরাপদে থাকলে এটি দেখাবে সবুজ রঙ। সিদিলুতে লাল রঙের সংকেতের অর্থ ব্যবহারকারী যে জায়গায় অবস্থান করছেন তার এক বর্গ কিলোমিটারের মধ্যে বজ্রপাতের আশঙ্কা রয়েছে। অর্থাৎ এক্ষেত্রে ঝুঁকি অনেক বেশি। অন্যদিকে, কমলা রঙের সংকেতের অর্থ হলো-ব্যবহারকারীর অবস্থানের ৫ বর্গ কিলোমিটারের মধ্যে বজ্রপাত হবে। আর হলুদ রঙের সংকেতের অর্থ হলো ১৫ বর্গ কিলোমিটারের মধ্যে বজ্রপাতের আশঙ্কা আছে।

জাতীয়

দেশে গত ২৪ ঘন্টায় করোনাভাইরাসে শনাক্ত বেড়েছে দশমিক ২১ শতাংশ। গতকাল এই ভাইরাসে শনাক্তের হার ছিল ১ দশমিক ৫০ শতাংশ, যা আজ বেড়ে হয়েছে ১ দশমিক ৭১ শতাংশ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আজ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে একথা জানিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আজ ১৭ হাজার ৮১১ জনের নমুনা পরীক্ষায় নতুন শনাক্ত হয়েছে ৩০৫ জন। গতকাল ১৯ হাজার ৫৩৫ জনের নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছিল ২৯৪ জন। দেশে এ পর্যন্ত ১ কোটি ৩ লাখ ১৯ হাজার ৪০৪ জনের নমুনা পরীক্ষায় মোট শনাক্ত হয়েছে ১৫ লাখ ৬৯ হাজার ১৬২ জন। মোট শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ২১ শতাংশ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, করোনা আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘন্টায় ৭ জন মারা গেছেন। গতকালের চেয়ে আজ ১ জন বেশি মারা গেছেন। গতকাল মারা গিয়েছিল ৬ জন। আজ মৃতদের মধ্যে পুরুষ ৪ জন ও নারী ৩ জন। এ নিয়ে সারা দেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৭ হাজার ৮৫৪ জনে। গত ২২ সেপ্টেম্বর থেকে মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৭৭ শতাংশ থাকলেও আজ তা দশমিক ০১ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ১ দশমিক ৭৮ শতাংশ।

এদিকে, ঢাকা জেলায় (মহানগরসহ) ২৪ ঘন্টায় ১০ হাজার ২১৬ জনের নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছে ১৮৬ জন। শনাক্তের হার ১ দশমিক ৮২ শতাংশ এবং গতকাল এ হার ছিল ১ দশমিক ৬০ শতাংশ। এই জেলায় গত ২৪ ঘন্টা মারা গেছেন ২ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আরও জানায়, গত ২৪ ঘন্টায় ঢাকা বিভাগে ৩ জন এবং চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগে ১ জন করে মারা গেছেন। তবে সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগে করোনা আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘন্টায় কেউ মারা যায়নি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘন্টায় হাসপাতাল এবং বাসায় মিলিয়ে সুস্থ হয়েছেন ২৭১ জন। সুস্থতার হার ৯৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ। গতকাল এই হার ছিল ৯৭ দশমিক ৭০ শতাংশ। দেশে এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১৫ লাখ ৩২ হাজার ৯৬৬ জন।

জাতীয়

উপ-সচিব থেকে পদোন্নতি পেয়ে যুগ্ম সচিব হয়েছেন ২১৩ কর্মকর্তা। এর মধ্যে ২০৩ জন বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অন্যান্য সরকারি দফতরে কর্মরত। বাকি ১০ জন বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাস ও হাইকমিশনে কর্মরত আছেন।

শুক্রবার (২৯ অক্টোবর) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত দুটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপন ১, প্রজ্ঞাপন ২

নিয়মানুসারে, পদোন্নতি দিয়ে এসব কর্মকর্তাদের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে। পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তাদের তাদের যোগদানপত্র ই-মেইলে (‍[email protected]) পাঠাতে হবে বলে জানিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। পদোন্নতির পর যুগ্ম সচিবের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৮০৩ জনে।

এর আগে সর্বশেষ ২০২০ সালের ৫ জুন ১২৩ কর্মকর্তাকে যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি দিয়েছিল সরকার।

জাতীয়

পণ্যবোঝাই ১৪টি ট্রাক ও চারটি মোটরসাইকেল নিয়ে পাটুরিয়ায় ফেরিডুবির তৃতীয় দিনে আজ দুটি ট্রাক ও একটি কভার্ডভ্যান উদ্ধার করা হয়েছে। শুক্রবার (২৯ অক্টোবর) উদ্ধার করা এ সব গাড়ি নিয়ে মোট ১২টি ট্রাক-কাভার্ডভ্যান ও একটি মাত্র মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হলো। এখনো নদীতে নিমজ্জিত রয়েছে দুটি ট্রাক ও তিনটি মোটরসাইকেল।

এদিকে হামজা নামে উদ্ধারকারী জাহাজ দিয়ে উদ্ধার তৎপরতা চালানোর তিন দিনের মাথায় বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেক শুক্রবার বলেন, চাঁদপুর থেকে উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয় নাব্যতা সংকটের কারণে পাটুরিয়ায় আসতে পারবে না। তবে, মুন্সিগঞ্জ থেকে অপর উদ্ধার জাহাজ রুস্তম রওয়ানা দিয়ে রাতের মধ্যে এসে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। হামজা ও রুস্তমের প্রতিটির ৬০ টন ধারণ ক্ষমতার তুলনায় নিমজ্জিত ফেরিটি ভারী হাওয়ায় তা উদ্ধারে বেগ পেতে হচ্ছে। এছাড়া, বেসরকারি উদ্যোগে ফেরি উদ্ধারের চিন্তা-ভাবনা চলছে।

বর্তমানে পাটুরিয়ায় কাত হয়ে পড়া ফেরি উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিটের ডুবুরি দল, কোস্ট গার্ড, নৌপুলিশ, নৌবাহিনী ও বিআইডব্লিউটিএ’র উদ্ধারকর্মীরা নিয়োজিত রয়েছেন। ফেরি ডুবির তৃতীয় দিনেও হাজার হাজার উৎসুক জনতার ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। উদ্ধার অভিযানের প্রধান বিআইডব্লিটিএ’র যুগ্ম পরিচালক মো. ফজলুর রহমান জানান, ডুবে থাকা ফেরির মধ্যে সকল যানবাহন শনাক্ত করা হয়েছে। উদ্ধার তৎপরতার তৃতীয় দিন অর্থাৎ শুক্রবার আরও দুটি ট্রাক ও একটি কাভার্ডভ্যান উদ্ধার করা হয়। পলির কারণে উদ্ধার কাজে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটলেও আগামী শনিবারের মধ্যে বাকি যানবাহন গুলো উদ্ধারের জোড় চেষ্টা চলছে।

অপর দিকে, ফেরিডুবির কারণে পাটুরিয়ার ৫নং ঘাটটি বন্ধ থাকায় ৩ ও ৪ নং ঘাটের পন্টুনযোগে ফেরিতে যানবাহন লোড-আনলোড করা হচ্ছে। দুটি মাত্র ঘাটে লোড-আনলোড করায় ফেরিতে যানবাহন পারাপারে ধীরগতি দেখা দিয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ফেরি পারের জন্য পাটুরিয়ায় পাঁচ শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক ও অর্ধশত প্রাইভেট-কার-মাইক্রোবাস অপেক্ষায় ছিল। অপেক্ষমাণ যানবাহন পারাপারে বহরের ছোট-বড় ২০টি ফেরির মধ্যে ১৫টি চলাচল করছে।

জাতীয়

গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরো ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে ২৭৫ জনের দেহে।

আজ রবিবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এর আগে গতকাল করোনায় মারা গেছেন ৯ জন। গতকাল দেশে নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে ২৭৮ জনের। সে হিসাবে করোনায় মৃত্যু একই থাকলেও শনাক্ত সামান্য কমেছে।

২৪ ঘণ্টায় করোনা শনাক্তে নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১৮ হাজার ৪৮৫টি। সে হিসেবে করোনা শনাক্তের হার ১.৪৯ শতাংশ।

নতুন ২৭৫ জন শনাক্তের ফলে দেশে মোট করোনা রোগী শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ৬৭ হাজার ৬৯২ জনে।

গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৩৮৬ জন।

গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে মারা যাওয়া ৯ জনের মধ্যে ৬ জনই ঢাকা বিভাগের। চট্টগ্রামের ২ জন এবং সিলেট বিভাগে একজনের মৃত্যু হয়েছে। বাকি ৫ বিভাগে করোনায় আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা যাননি।

জাতীয়

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে আসামিরা ধরা পড়েছে, তদন্তও চলছে

রবিবার (২৪ অক্টোবর) রাজধানীতে বিচারক প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে আনিসুল হক এ কথা বলেন।

আইনমন্ত্রী বলেন, জনগণের আস্থা ধরে রাখতে বিচারপতিদের গুরুত্ব অনেক। বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে অনেক মামলা লেপের তলায় আটকে ছিলো, এই সরকার ক্ষমতায় আসার পরে এই মামালাগুলোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আগামী বছরে ৬ লাখ মামলা নিরসণ করা হবে।

তিনি বলেন, আজকে বাংলাদেশ নতুনভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে বিচারপ্রাপ্তির সংস্কৃতিতে ফিরে এসেছি।

আইনমন্ত্রী বলেন, দেশেকে অস্থিতিশীল করতেই সারাদেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা করা হয়েছে। এর সাথে জড়িতরা যে দলেরই হোক না কেনো তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। কেউ যদি ব্যক্তি স্বার্থে অন্যায় করে তাদেরও বিচারের আওতায় আনা হবে।

জাতীয়

জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেছেন, রংপুরের পীরগঞ্জে হিন্দু সম্প্রদায়ের ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে সরকার। সেখানে সরকারের পক্ষ থেকে সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করা হচ্ছে।

শনিবার (২৩ অক্টোবর) বিকেলে স্পিকারের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমানের নেতৃত্বে জেলার শীর্ষ ব্যবসায়ী এবং হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের নেতাদের একটি প্রতিনিধি দল সাক্ষাৎ করেন। এ স্পিকার এ কথা বলেন।

সাক্ষাতকালে তারা সম্প্রতি রংপুরের পীরগঞ্জ, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর অনাকাঙ্ক্ষিত হামলা সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা করেন। এ সময় ৫০ লাখ টাকা মূল্যের চেক হস্তান্তর করে প্রতিনিধি দল।

স্পিকার বলেন, সরকার পীরগঞ্জে হিন্দু সম্প্রদায়ের ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর রাখছেন। সরকারের পক্ষ থেকে মানবতার সেবায় সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ১৮টি বাড়ি পুনরায় র্নিমাণ করা হয়েছে।

প্রতিনিধি দলের প্রধান এমপি শামীম ওসমান বলেন, পীরগঞ্জে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা। মানবতার চেয়ে বড় কিছু নাই। দ্রুততম সময়ের মধ্যে পীরগঞ্জে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য স্পিকারকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

এ সময় স্পিকারের মাধ্যমে পীরগঞ্জসহ সারা দেশে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানে সহযোগিতার আগ্রহ প্রকাশ করেন শামীম ওসমান।

শামীম ওসমানের নেতৃত্বে নারায়ণগঞ্জের প্রতিনিধি দল স্পিকারের কাছে পীরগঞ্জে হিন্দু সম্প্রদায়ের ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ৫০ লাখ টাকা মূল্যের চেক হস্তান্তর করেন। স্পিকার পীরগঞ্জে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে সহযোগিতা করার জন্য নারায়ণগঞ্জের প্রতিনিধি দলকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল, ড্রিম হলিডে পার্কের চেয়ারম্যান প্রবীর কুমার সাহা, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের সাবেক ট্রাস্টি পরিতোষ কান্তি সাহা, নারায়ণগঞ্জ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দিপক কুমার সাহা, নারায়ণগঞ্জ মহানগর হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি লিটন পাল প্রমুথ।

জাতীয়

ঢাকা থেকে কুয়াকাটা, সরাসরি সড়কপথে ভ্রমণের সেই স্বপ্ন এখন খুব বেশি দূরে নয়; আরও একটি পথ জোড়া লাগছে পায়রা সেতু চালুর অপেক্ষার অবসানের মধ্য দিয়ে।

দেরিতে হলেও নদীবেষ্টিত বরিশালের সঙ্গে পটুয়াখালী, বরগুনা আর কুয়াকাটার সড়ক যোগাযোগে নতুন আরেক যুগের সূচনা করতে যাচ্ছে এ সেতু।

সমুদ্র শহর কুয়াকাটার সঙ্গে রাজধানীসহ সারা দেশের সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগের আরেক দ্বার খুলবে পটুয়াখালীর লেবুখালীতে পায়রা নদীর ওপর নির্মাণ করা চারলেনের সেতুটি খুলে দেওয়া হলে। ফেরি পারাপারের ভোগান্তি যেমন কাটবে, বাঁচবে সময় ও অর্থ।

রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ সেতু উদ্বোধন করবেন। এর মাধ্যমে কাজ শুরুর দীর্ঘ নয় বছর পর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে।

অবসান ঘটবে সেই দীর্ঘ অপেক্ষার। সময়ে সময়ে প্রকল্পের কাজ দীর্ঘায়িত হলে যা রূপ নেয় প্রতীক্ষায়।

অবশেষে দক্ষিণাঞ্চলের ওই এলাকার মানুষের এ আকাঙ্খা বাস্তব রূপ পেতে যাচ্ছে দৃষ্টিনন্দনভাবে গড়ে তোলা প্রায় দেড় কিলোমিটারের পায়রা সেতু উদ্বোধনের মাধ্যমে।

সেতুটি চালু হলে বরিশাল শহরসহ ওই অঞ্চলের যানবাহন ফেরি পারাপার ছাড়াই পটুয়াখালী, কুয়াকাটা ও বরগুনায় যেতে পারবে।

উদ্বোধন উপলক্ষে সেতু এলাকায় সাজ সাজ রব পড়েছে বলে জানিয়েছেন পায়রা সেতুর প্রকল্প পরিচালক আবদুল হালিম।

তিনি বলেন, “সবাই আগামী রোববার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধনের দিকে তাকিয়ে আছেন। উদ্বোধনের পর গাড়ি চলাচলের জন্য সেতুটি খুলে দেওয়া হবে। “

তবে পায়রা সেতু চালুর পরও ঢাকা থেকে সরাসরি সড়কপথে কুয়াকাটা যেতে কিংবা পটুয়াখালী ও বরগুনার মানুষকে রাজধানী আসতে আরও একটু অপেক্ষা করতে হবে। তারা এখন তাকিয়ে থাকবেন পদ্মা সেতুর দিকে।

কেননা নিমার্ণাধীন দেশের বৃহ্ত্তম এ সেতু দিয়ে গাড়ি চলাচল শুরু হলে উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা পায়রা সেতুর মাধ্যমে এসব এলাকার সঙ্গে রাজধানীসহ সারাদেশের নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবে।
একসময় সড়কপথে ঢাকা থেকে বরিশাল হয়ে সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটা যেতে ১০টি নদীতে ফেরি পার হতে হত। এখন শুধু পদ্মা ও পায়রা এ দুই নদীতে ফেরি পারাপার হতে হয়। নদী পারাপারে দীর্ঘ সময় লাগার পাশাপাশি যাত্রীদের ভোগান্তি ও বাড়তি অর্থ ব্যয় করতে হয়।

পায়রা সেতু নির্মাণের প্রকল্প পরিচালক আবদুল হালিম জানান, প্রকল্পটির আওতায় মূল সেতু ও সংযোগ সড়কসহ সব কাজ প্রায় শতভাগ শেষ হয়েছে। এখন সেতু এলাকা সাজানো হচ্ছে। রঙ লাগিয়ে সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ চলছে।

বাংলাদেশ সরকার ও কুয়েত ফান্ড ফর আরব ইকোনমিক ডেভেলপমেন্টের যৌথ অর্থায়নে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘লংজিয়ান রোডস অ্যান্ড ব্রিজ কোম্পানি’ সেতুটি নির্মাণ করেছে।

সর্বাধুনিক ‘এক্সট্রাডোজড কেবল স্টেইড’ প্রযুক্তিতে এটি নির্মাণ করা হয়েছে। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর ওপর শাহ আমানত সেতুও একইভাবে নির্মাণ করা হয়।

প্রকল্প পরিচালক জানান, নদীর পানির প্রবাহের স্তর থেকে প্রায় ১৮ দশমিক ৩০ মিটার উঁচু করে নির্মাণ করা হয়েছে এ সেতু। এর উদ্দেশ্য যাতে নিচ দিয়ে জলযান চলাচলে কোনও বিঘ্ন না ঘটে।

পানি প্রবাহ ঠিক রাখতে পায়রা নদীর মাঝখানে মাত্র একটি বড় পিলার স্থাপন করে গড়ে তোলা হয়েছে এক হাজার ৪৭০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১৯ দশমিক ৭৬ মিটার প্রস্থের সেতুটি। পিলারটি ১৩০ মিটার গভীর পাইলিং করে বসানো হয়েছে। ওই পিলারের উভয় পাশে অন্য দুই পিলারের সঙ্গে বড় বড় তার দিয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে।

তিনি জানান, ভূমিকম্প ও বজ্রপাতসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে সেতুকে নিরাপদ রাখতে ব্যবহার করা হয়েছে ‘ব্রিজ হেলথ মনিটর’।

দক্ষিণ-পশ্চিমে আশার পিদিম জ্বালছে পদ্মা সেতু

এ প্রযুক্তিতে সেতুর ক্ষতি হতে পারে এমন অতিরিক্ত ভারি যানবাহন সেতুতে উঠলে আপনা আপনি বেজে উঠবে বিপদ সংকেত।

শুক্রবার প্রকল্প এলাকা থেকে পরিচালক হালিম বলেন, “এখন এলাকায় বৃষ্টি হচ্ছে। তাই সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ কিছুটা বিঘ্নিত হচ্ছে। তারপরও আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করে যাচ্ছি।

“উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রকল্প এলাকার অংশে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও রাজনৈতিক নেতারা উপস্থিত থাকবেন।“

৫ বছরের কাজ ৯ বছরে, ব্যয় বেড়েছে সাড়ে তিনগুণ

২০১২ সালের ৮ মে একনেক সভায় অনুমোদনকালে সড়ক পরিবহণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে হাতে নেওয়া প্রকল্পটি ৪১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা ছিল।

তখন ৩৩৬ কোটি ২৬ লাখ টাকা অর্থায়নে কুয়েত ফান্ডের সঙ্গে চুক্তি হয়।

তবে বাস্তবায়নকারী সংস্থা সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ভূমি অধিগ্রহণের ব্যয় বৃদ্ধি, ভ্যাট ও আইটি খাতে ব্যয় সমন্বয়ের জন্য ২০১৫ সালের ৩১ মে ব্যয় বাড়িয়ে প্রকল্প সংশোধনের প্রস্তাব করলে তা অনুমোদন করা হয়। তখন খরচ বেড়ে দাঁড়ায় ৪১৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকা।

এরপর ২০১৭ সালের ২০ জুন আরেক দফা ব্যয় ও মেয়াদ বাড়িয়ে প্রকল্পটি সংশোধন করা হয়। এবার পূর্ত কাজের চুক্তিমূল্য অনুযায়ী অতিরিক্ত ব্যয়, নতুন ঋণ চুক্তি প্রভৃতি বিষয় যুক্ত করে ব্যয় ৮০০ কোটি টাকা বাড়িয়ে এক হাজার ২৭৮ কেটি ৮২ লাখ টাকা করা করা হয়। একই সঙ্গে মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাস নির্ধারণ করা হয়।

ওই সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হলে এরপর ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে আরেক সংশোধনীর মাধ্যমে এক হাজার ৪৪৭ কোটি টাকায় উন্নীত হয় প্রকল্পের ব্যয়। তখন প্রকল্প সাহায্য গিয়ে দাঁড়ায় এক হাজার ৭৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।

অর্থাৎ সবমিলে ৫ বছর মেয়াদের প্রকল্পটির বাস্তবায়নকাল গিয়ে দাঁড়ায় ৯ বছর এবং সাড়ে ৩০০ শতাংশ ব্যয় বেড়ে উন্নীত হয় প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকায়।

এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক আব্দুল হালিম বলেন, “নকশা পরিবর্তন এবং চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লংজিয়ান রোডস অ্যান্ড ব্রিজ কোম্পানিকে নিয়োগ দিতেই ২০১৬ সাল পর্যন্ত সময় লেগে যায়।
“এরপর ভূমি অধিগ্রহণ ও কোভিড-১৯ মহামারীর কারণেও পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের কাজে বিঘ্ন ঘটে। এসব কারণে প্রকল্পটি বিলম্বিত হয়েছে।”

প্রাথমিক পর্যায়ে প্রকল্পের ব্যয় ধারণাগত নকশার ভিত্তিতে অনুমান করা হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, “পরে বিস্তারিত নকশা অনুসারে প্রকৃত নির্মাণ ব্যয় চূড়ান্ত করা হয়। ফলে সেতুর নির্মাণ ব্যয় বেড়ে যায়।“

কমবে ভোগান্তি, বাড়বে ব্যবসা-বাণিজ্য

বরিশাল সিটি করপোরশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ জানান, পায়রা নদীর উপর একটি সেতু নির্মাণ দক্ষিণাঞ্চলবাসীর দীর্ঘ দিনের দাবি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করেছেন।

“পায়রা সেতু দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নের জন্য একটি মাইলফলক। এরফলে বরিশাল থেকে খুব সহজেই কুয়াকাটা যাওয়া যাবে। এমনকি আগামী বছর পদ্মা সেতু খুলে দেওয়া হলে সারা দেশের সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে যেতে আর কোনো বাধা থাকবে না।”

বরিশাল চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, পায়রা সেতু নির্মাণের ফলে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক কেন্দ্র পায়রা বন্দর, পর্যটন এলাকা কুয়াকাটার সঙ্গে যোগাযোগ বাড়বে, সময় বাঁচবে। মালামাল পরিবহনে খরচ কমবে, ব্যবসায়ীরা উপকার পাবেন।

“পায়রা সেতু উন্মোচনের সঙ্গে সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও বিশাল দ্বার উন্মোচন হবে। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হলে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান দক্ষিণাঞ্চলে বিনিয়োগে আসবে। কুয়াকাটায় পাঁচ তারকা মানের হোটেল মোটেল গড়ে উঠবে। ব্যবসার প্রসার ঘটবে।”

সেতু নির্মাণ করে ভোলা থেকে বরিশালে গ্যাস আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেটিও খুব শিগগিরই বাস্তবায়ন হবে বলে আশা প্রকাশ করেন চেম্বার সভাপতি।

পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও বরিশাল-৫ আসনের সংসদ সদস্য জাহিদ ফারুক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পরপরই সেতুটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। ফলে ঢাকা থেকে পায়রা বন্দর বা কুয়াকাটা পর্যন্ত যেতে পদ্মা ব্যতীত আর কোনো ফেরি থাকল না।

পায়রা সেতুর ফলে দক্ষিণাঞ্চলের ব্যবসারও প্রসার ঘটবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পায়রা বন্দরে যে অর্থনৈতিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে তা এগিয়ে নিতে পায়রা সেতু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ব্যবসায়ীদের পণ্য পরিবহন সহজ হবে।

“নতুন নতুন শিল্প কারখানা গড়ে উঠবে। নতুন প্রজন্মের যারা আছেন তাদের চাকরির জন্য বরিশালের বাইরে যেতে হবে না, এখানেই তাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।”