রাজনীতি

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) আজ মোট চারটি উন্নয়ন প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে। প্রকল্পগুলোর মোট আনুমানিক ব্যয় ১,২২২.১৪ কোটি টাকা। জুলাই-আগস্টে শিক্ষার্থী-নেতৃত্বাধীন গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর চলতি অর্থবছরে (অর্থবছর-২৫) একনেকের দ্বিতীয় সভায় ও অন্তর্বর্তী সরকারের ১ম সভায় এই অনুমোদন দেওয়া হয়।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন।

রাজধানীর শেরেবাংলা নগর এলাকায় এনইসি সম্মেলন কক্ষে সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে পরিকল্পনা ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, সার্বিক ব্যয় ১,২২২.১৪ কোটি টাকার মধ্যে ৯৬৩.৮২ কোটি টাকা আসবে বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে, প্রকল্প সহায়তা হিসাবে আসবে ১০০.১৬ কোটি টাকা এবং বাকি ১৫৮.১৬ কোটি টাকা সংশ্লিষ্ট সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে সংগ্রহ করা হবে।

দু’টি নতুন অনুমোদিত প্রকল্প হল- ৫৮৮.৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘দুটি মূল্যায়ন কাম উন্নয়ন কূপ (সুন্দলপুর-৪ ও শ্রীকাইল-৫) এবং দুটি অনুসন্ধানী কূপ (সুন্দলপুর দক্ষিণ-১ ও জামালুর-১)’ এবং ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ে টেকসই সামাজিক পরিষেবা প্রদান প্রকল্প (২য় পর্যায়)’ ।

এছাড়া আরও দুটি সংশোধিত প্রকল্প হল- ৭০.৬৩ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয়ে ‘বাখরাবাদ-মেঘনাঘাট-হরিপুর গ্যাস ট্রান্সমিশন পাইপলাইন, প্রথম সংশোধিত’ এবং ১৬৩.১১ কোটি টাকার অতিরিক্ত ব্যয়ে ‘তথ্য আপা: আইসিটি টুওয়ার্ডস ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রকল্পের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন, (দ্বিতীয় পর্যায় ও দ্বিতীয় সংশোধিত)’। এ প্রকল্পের সময়সীমা এক বছরে কমিয়ে আনা হয়েছে।

উপদেষ্টা বলেন, এছাড়া তথ্য আপা প্রকল্পের শিরোনাম পরিবর্তন করা হবে।

বৈঠকে সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টা ও সচিবরা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে গত ২ জুলাই বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পরিকল্পনা কমিশনে সর্বশেষ একনেক সভা অনুষ্ঠিত হয়।

রাজনীতি

রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ৭ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর বাসায় ফিরলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বুধবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে গুলশানের ভাড়া বাসা ‘ফিরোজা’য় পৌঁছান তিনি। মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে বাসায় নেওয়া হয়। ১২ সেপ্টেম্বর ভোরে অসুস্থবোধ করায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ম্যাডাম খালেদা জিয়া সব কিছু টেলিভিশনে দেখছিলেন। তখন উনি বলেছিলেন, এই দিনটা দেখার খুব প্রয়োজন ছিল। তবে তিনি বলেছিলেন, নেতাকর্মী ও দেশের মানুষ কেউ যেন নিজের হাতে আইন তুলে না নেন। প্রতিহিংসাপরায়ণ না হোন। আন্দোলনে যে ছেলেটির হাত চলে গেছে, পা-চোখ চলে গেছে, উনি ব্যক্তিগতভাবে মনে করেন তাদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য দল যাতে সবটুকু সামর্থ্য নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়ায়। সরকার তো সরকারের মতো করবেই। এজন্য খালেদা জিয়া মহাসচিবসহ সিনিয়র নেতাদের পঙ্গু ও চক্ষু হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠিয়েছেন। চেয়ারপারসন এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশে তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি।

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিছুটা সুস্থতাবোধ করছেন। ক্রনিক লিভার ডিজিজ এমন একটা ডিজিজ, সাময়িকভাবে কিছুদিন সুস্থ থাকেন, আবার কয়েকদিন পর অসুস্থ হয়ে যান। এজন্য তার স্থায়ী চিকিৎসার জন্য মালটি ডিসিপ্লিনারি অ্যাডভান্স সেন্টারে নেওয়া প্রয়োজন। এখন বাসায় চিকিৎসা চলবে।

ডা. জাহিদ বলেন, বাইরে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে বিমানযাত্রার যে সময়। যখন সুস্থ মানুষও প্লেনে উঠে, উঠা ও নামার সময় যে স্ট্রেস তা উনি সহ্য করতে পারবেন কি পারবেন না সেটা দেখতে হবে। উনার শারীরিক সুস্থতা হচ্ছে এক নম্বর অগ্রাধিকার। এজন্য মেডিকেল বোর্ড যখনই প্রয়োজনবোধ করবে বাইরে পাঠানো যায়, আমরা তখনই নিয়ে যাবো। বিমানযাত্রা করার মতো সুস্থতা লাভ করলেই তাকে বিদেশে নেওয়া হবে।

বিদেশে নেওয়ার প্রস্তুতির বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের মেডিকেল প্রস্তুতি যেটা দরকার তা কমপ্লিট। আমেরিকা ও যুক্তরাজ্যের দুটি হাসপাতালেরই কনসালট্যান্ট থেকে শুরু করে সবকিছু ফাইনাল করে রেখেছি। আমরা কিভাবে নেব তাও ঠিক করে রেখেছি। আইনগত দিক যা আছে সে ব্যাপারে বর্তমান সরকারের সঙ্গেও কথা বলেছি। এখন বিষয়টি উনার শারীরিক সুস্থতার ওপর নির্ভর করছে।

রাজনীতি

প্রথমবারের মতো সেনাসদর পরিদর্শন করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রথমবারের মতো সেনাসদরে আগমন করেন।

প্রধান উপদেষ্টা সেনাসদরে এসে পৌঁছালে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান তাকে স্বাগত জানান।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.), প্রধান উপদেষ্টার প্রতিরক্ষা ও জাতীয় সংহতি উন্নয়ন বিষয়ক বিশেষ সহকারী লেফটেন্যান্ট জেনারেল আব্দুল হাফিজ (অব.), মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী প্রধান, পিএসও এএফডি, সামরিক ও অসামরিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, পুলিশ মহাপরিদর্শক এবং গোয়েন্দা সংস্থাসমূহ, বিজিবি, কোস্টগার্ড, আনসার ও ভিডিপি, র‍্যাব এর মহাপরিচালকরা ও সেনাসদরের কর্মকর্তারা।

এ সময় প্রধান উপদেষ্টাকে জাতীয় নিরাপত্তার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি সম্পর্কে ব্রিফ করা হয়।

আইএসপিআর আরও জানায়, পরিদর্শনকালে প্রধান উপদেষ্টা কর্তৃক প্রদত্ত মূল্যবান দিকনির্দেশনাসমূহ সম্মিলিতভাবে ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের প্রতিটি ক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা পালনে অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

রাজনীতি

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গত ১৩ আগস্ট পর্যন্ত ৮৭৫ জন নিহত হয়েছেন বলে একটি মানবাধিকার সংস্থার প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। এর মধ্যে ৪২২ জন বিএনপির নেতাকর্মী বা সমর্থক বলে দাবি করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

রোববার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, এই আন্দোলন হঠাৎ করে গড়ে ওঠেনি। এটি বহু বছরের নির্যাতন, নিপীড়ন ও ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। এটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বিএনপির দীর্ঘদিনের নিরবিচ্ছিন্ন পরিক্রমা। এখানে বিএনপির আবদান খাটো করার কোনো অবকাশ নেই।

তিনি বলেন, এ বিজয়ের পেছনে রয়েছে অসংখ্য নির্যাতিত মানুষের বেদনার অপ্রকাশিত ইতিহাস, গুম হওয়া ছেলের ফেরার প্রতীক্ষায় ব্যাথাতুর মায়ের ডাক, স্বামী হারানো বেদনাবিধূর স্ত্রীর অনন্ত আর্তনাদ, পঙ্গু বাবার জন্য সন্তানের হৃদয়বিদারক হাহাকার, আর কারাগারে বন্দি ভাইয়ের জন্য বোনের নীরব প্রার্থনা। তাদের সবার ১৬ বছরের রক্ত, শ্রম ও অশ্রু দিয়ে, প্রতিটি পরিবারের ক্ষোভ, ক্রোধ ও অব্যক্ত বিস্ফোরণ বুকে ধারণ করে; চলমান ছিল শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, বস্তুত ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে শহিদ ৪২২ জন, ২০২৩ সাল পর্যন্ত শহিদ এক হাজার ৫৫১ জন, গুম ৪২৩ জন (সব রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষ মিলিয়ে প্রায় ৭০০ জন), আসামি ৬০ লাখ এবং মামলা দেড় লাখ। এসব কেবল বিএনপির ত্যাগের পরিসংখ্যানই নয়, বরং বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জনের পথে দলটির অবিচল সংগ্রাম ও অবদানের প্রতিফলন।

এ সময় আন্দোলনের কৃতিত্ব নয়, স্বৈরাচার পতন নিশ্চিত করাই বিএনপির লক্ষ্য ছিল বলেও মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সংবাদ সম্মেলনে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সালাহউদ্দিন আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

রাজনীতি

আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে দলের নেতাকর্মীদের প্রতি জরুরি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শনিবার দিনগত মধ্যরাতে এক পোস্টে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।

এতে তৃণমূল নেতাকর্মীর পাশে দাঁড়ানোর পাশাপাশি কোনও প্রকার উসকানির ফাঁদে পা না দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। এছাড়া আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর উপর হামলা, অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের যেসব ঘটনা ঘটেছে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করতে বলা হয়েছে।

ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ করা নির্দেশনাগুলো হলো–

‘প্রথম কাজ তৃণমূলের পাশে দাঁড়ানো। তথ্যের জন্য আওয়ামী লীগের অফিশিয়াল ইমেইলে [[email protected]] যোগাযোগ করুন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোন প্রকার উসকানি বা প্ররোচনার ফাঁদে পা দেবেন না।’

‘সারাদেশে জুলাই মাসের শেষ দিকে ও আগস্টের শুরু থেকেই আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের উপর যত হামলা হয়েছে, ভাঙচুর, লুটপাট ও হত্যাকাণ্ড হয়েছে সেগুলোর ছবি এবং ভিডিও টুইটার [এক্স], ফেসবুক, ইউটিউবে প্রচার করুন। দেশবাসীকে জানাতে হবে কী নির্যাতন হয়েছে গত দেড় মাসে আওয়ামী লীগের উপর।’

‘আমাদেরকে জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে, কোনও ধরণের উসকানিমূলক পোস্ট বা ভুয়া বার্তায় বিভ্রান্ত হবেন না।’

‘প্রতি মহানগর, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের কার্যালয় ও নেতারকর্মীদের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটে যে ক্ষতি হয়েছে তা দেশের মানুষকে জানান, এবং বর্তমানে যারা দেশ চালাচ্ছে তাদের কাছেও আমরা দাবি জানাবো সকল হামলা, নির্যাতন, ভাঙচুর, লুটপাটের বিচার করতে হবে, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে’ উল্লেখ করা হয় ফেসবুকের ওই পোস্টে।

রাজনীতি

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘এটা মস্ত বড় সুযোগ। এই সুযোগ জাতির জীবনে আর আসবে কি না জানি না। না আসাটাই স্বাভাবিক হোক। গোড়াতে হাত দিতে হবে, সংবিধানে হাত দিতে হবে।’

ডয়চে ভেলেকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।

সাক্ষাৎকারে ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম মাসে নেওয়া নানা উদ্যোগ ও আগামী দিনের কর্মপরিকল্পনাসহ নানা বিষয়ে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আরাফাতুল ইসলাম।

ডয়চে ভেলের পক্ষ থেকে প্রশ্ন ছিল, রাষ্ট্র সংস্কারের পাশাপাশি সংবিধান পুনর্লিখনের দাবিও উঠেছে। বলা হচ্ছে সংবিধান পুনর্লিখন ছাড়া গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখছেন?

জবাবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘এটা মস্ত বড় সুযোগ। এই সুযোগ জাতির জীবনে আর আসবে কি না জানি না। না আসাটাই স্বাভাবিক হোক। গোড়াতে হাত দিতে হবে, সংবিধানে হাত দিতে হবে। তো সেখানে প্রশ্ন হচ্ছে, সংবিধান নতুন করে লিখতে হবে, নাকি এই সংবিধানই কিছু সংশোধন করা হবে? এ বিষয়ে মতভেদ আছে। এইজন্য কমিশন হবে, বিচার বিবেচনা করবে, একমত হবে। এর ওপর ভিত্তি করে নির্বাচন হবে। এটা না হওয়া পর্যন্ত তো আমরা নির্বাচনের রূপরেখা ঠিক করতে পারছি না। কী ধরনের নির্বাচন হবে, কী কী নির্বাচন হবে— সবকিছুই সংবিধানের ভেতরে থাকবে। পুরো আন্দোলনের ব্র্যান্ড নেইম হচ্ছে সংস্কার। সংস্কার হচ্ছে আকাঙ্ক্ষা। আমরা সেই আকাঙ্ক্ষার অংশীদার। আমরা দায়িত্ব নিয়েছি যেন আমরা সেই আকাঙ্ক্ষা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পূরণ করতে পারি।’

উল্লেখ্য, গতকাল (১১ সেপ্টেম্বর) জাতির উদ্দেশে ভাষণে নির্বাচনব্যবস্থা, পুলিশ প্রশাসন ও সাংবিধানিকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সংস্কারের লক্ষ্যে সরকার ছয়টি কমিশন গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন ড. ইউনূস। সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিককে।

ডয়চে ভেলে: আপনি প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণের পর এক মাস পূর্ণ হলো। গত কয়েক সপ্তাহে কোন কোন বিষয়কে আপনি অগ্রাধিকার দিয়েছেন?

ড. মুহাম্মদ ইউনূস: আমার তো অগ্রাধিকার দেবার কথা না। অগ্রাধিকারগুলো সামনে এসে গেছে। আমি বাছাই করার সুযোগও পাইনি। শান্তি-শৃঙ্খলা হলো সবার প্রথমে। যেহেতু বিপ্লবের মধ্য দিয়ে আমরা আসছি, সরকার গঠন করেছি, কাজেই প্রথম দায়িত্ব হলো শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা। এটার উপরেই জোর দেয়া হচ্ছে। এরকম বিপ্লব বাংলাদেশের ইতিহাসে আগে হয় নাই। ছাত্রদের সঙ্গে সাধারণ জনগণ এগিয়ে এসেছে। এমন কোনো লোক ছিল না যে এটাতে শরিক মনে করে নাই। জনমত নির্বিশেষে এই আন্দোলনে শরিক হয়েছে। আমরা একটা বিরাট দায়িত্ব নিয়ে আসছি। এদিকে হলো বিপ্লব আর এদিকে স্বপ্ন। শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনে আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়বো। মানুষের সীমাহীন আকাঙ্ক্ষা। আমাদের দায়িত্ব অনেক। অর্থনীতি একটা বিশৃঙ্খল, ভঙ্গুর অর্থনীতি হয়ে গিয়েছিল। যে কারণে মানুষ এত বিক্ষুব্ধ। সব কিছু লুটপাট। এটা লুটের একটা সরকার ছিল। কাজেই সেই লুটের সরকার থেকে সত্যিকার সরকার, জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা- এটাও মানুষের একটা আকাঙ্ক্ষা। এবং এটা দ্রুত দেখতে চায়। সেগুলো আমাদের করার চেষ্টা। এক মাসের মধ্যে আমাদের যতটুকু সম্ভব করেছি।

ডয়চে ভেলে: বাংলাদেশের অর্থনীতি গত কয়েকবছর ধরেই নানা রকম সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ডলার সংকট, ঋণের নামে ব্যাংক লুটপাট আর বিদেশে অর্থ পাচার এই সংকটকে তীব্র করেছে বলে বিশেষজ্ঞদের মতামত। সাম্প্রতিক সময়ে শ্রমিক অসন্তোষসহ নানা আন্দোলনেও রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ব্যবসা এবং অর্থনীতিকে পুনরায় সন্তোষজনক অবস্থানে ফিরিয়ে নেওয়ার পথে কী কী বাধা দেখছেন?

ড. মুহাম্মদ ইউনূস: লুটপাটের একটা অর্থনীতি। তার একমাত্র লক্ষ্য ছিল নিজের টাকা-পয়সা করার আগ্রহ। ৬০ হাজার কোটি টাকা শুধু ছাপানো হয়েছে তাদের সুবিধার জন্য। কিন্তু মানুষের যে মূল্যস্ফীতি হবে- এটার দিকে তাদের কোনো মনোযোগ ছিল না। ব্যাংকিং সিস্টেম পুরোটাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলতে কোনো জিনিস ছিল না। এগুলো সমস্ত কিছু নতুন করে গড়ে তুলতে হচ্ছে। সব কিছু নতুন করে করতে হচ্ছে। দেশকে বাঁচাতে হলে, সামনে নিয়ে যেতে হলে করতে হবে। আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য ভিত্তিটা করতে হবে। কিছুটা শৃঙ্খলা এসেছে। সবটা পেরে গেছি তা না। বৈদেশিক মুদ্রার অভাব আছে। বড় বড় প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। বিশাল বিশাল অংকের ঋণ নেওয়া হয়েছে,সেগুলো শোধ করার পালা এসেছে আমাদের ওপরে। উনারা নিয়ে গেছেন, ভোগ দখল করেছেন। এখন টাকাটা জনগণকে শোধ করতে হবে। সেই পরিশোধের টাকা কোথা থেকে আসবে, কিভাবে আসবে এই চিন্তা আমাদের বড় চিন্তা। আমরা পৃথিবীর সামনে এমন একটা রাষ্ট্র হতে চাই না যে তার অঙ্গীকার রক্ষা করতে পারে না। আমরা অঙ্গীকার রক্ষা করতে চাই। অর্থনীতিকে মজবুত ভিত্তির ওপরে দাঁড় করাতে চাই, যেন ভবিষ্যতে এই পরিস্থিতি না হয়।

ডয়চে ভেলে: ছাত্রদের নেতৃত্বে গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে সুশাসনের বিষয়টি নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে। বিশেষ করে নাগরিক অধিকার, মানুষের নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার, পুলিশের সেবা পাওয়ার অধিকার এখনও পুরোপুরি নিশ্চিত করা যায়নি বলে নানা মহল থেকে দাবি করা হয়েছে। এই বিষয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?

ড. মুহাম্মদ ইউনূস: চেষ্টা করছি আমরা, কিন্তু পুরোপুরি হয়নি। অনেক লোক পালিয়ে গেছে, যারা জনপ্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ছিল। অথবা যারা আছে, তাদের সহকর্মীরা তাদের ওপর ভয়ানক বিক্ষুব্ধ। বিক্ষোভের মুখে তারা পদত্যাগ করে চলে গেছেন। কাজেই এক বিরাট শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে। জনপ্রশাসনে এই শূন্যতা পূরণ আবার মুশকিল। এরে দিলেন ওরে কেন দিলেন না ইত্যাদি ইত্যাদি প্রশ্ন উঠছে। তো এর মধ্য থেকেই আমরা মানুষকে বোঝাচ্ছি, দেখো- আমাদের বিবেচনায় যেটা সঠিক সেটাই আমরা করছি। আমরা করি একটা, আমাদের ওপর আস্থা রাখেন। বহু পরিবর্তন হয়েছে। প্রধান বিচারপতি নিয়োগ হয়েছে। সব ভিসিই চলে গেছেন। ভিসি নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, সঙ্গে প্রো-ভিসি দিতে হচ্ছে এবং এই নিয়োগে সবাই খুশি। আবার নতুন করে বিচার ব্যবস্থা চালু হবে। অনেকগুলো পরিবর্তন আমাদের একসঙ্গে করতে হচ্ছে। অবস্থা উন্নতির দিকে যাচ্ছে।

ডয়চে ভেলে: বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসেব অনুযায়ী জুলাই-আগস্টে আন্দোলন চলাকালে এক হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। এসব হত্যাকাণ্ডের বিচারে আপনার সরকারের তরফ থেকে এখন অবধি নেওয়া পদক্ষেপে আপনি কি সন্তুষ্ট?

ড. ইউনূস: না, এখনও সন্তুষ্ট হওয়ার সময় আসে নাই তো। আমাদের প্রথম দৃষ্টি হচ্ছে তালিকা করা, যেটার কথা আপনি বললেন। আমরা প্রত্যেকের তথ্য নিয়ে ড্যাটাবেজ তৈরি করছি। আমাদের ভয় হলো, আমরা যদি এটা না করি কিছুদিনের মধ্যে ভুয়া শহিদ ইত্যাদি শুরু হয়ে যাবে। কাজেই এটা থেকে আমরা বাঁচতে চাই। আমরা ওয়াদা করেছি, প্রত্যেকটা শহিদ পরিবারের দায়িত্ব আমরা গ্রহণ করবো। সরকারের পক্ষ থেকে আমরা গ্রহণ করবো। কাজেই এটার সংখ্যা নির্দিষ্ট হয়ে যেতে হবে। যেন এক বছর পরে কেউ এসে না বলতে পারে যে, আমার পরিবার শহিদের পরিবার। আমরা খুঁজে খুঁজে বের করছি। আমরা একটা ফাউন্ডেশন করেছি। একটা স্থায়ী ফাউন্ডেশন তাদের পরিবারকে দেখাশোনা করার জন্য। যারা বেঁচে আছে তাদেরকে মিলিয়ে আমরা কর্মসূচি নিচ্ছি।

ডয়চে ভেলে: বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনা গত কয়েক দশকে বিভিন্ন সরকারের সময় বেশ কয়েকবার শোনা গেছে। সর্বশেষ শেখ হাসিনা সরকারের পতনের সময়ও এ ধরনের হামলা ঘটেছে বলে জানিয়েছে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও হিন্দু মহাজোট নামের দুটি সংগঠন। সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধের দাবিতে রাজপথে নানা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিও দেখা গেছে গত কয়েক সপ্তাহে। এক্ষেত্রে স্থায়ী সমাধান কী হতে পারে বলে আপনি মনে করেন?

ড. মুহাম্মদ ইউনূস: এটা বাংলাদেশের একক সমস্যা না। সব দেশেই সংখ্যালঘু নিয়ে সমস্যা হয়। আমেরিকাতেও সংখ্যালঘু নিয়ে সমস্যা আছে। সরকারের দায়িত্ব এটা না হওয়া। সংবিধানের অধিকার সবার প্রাপ্য। আমরা তো হিন্দুর প্রাপ্য, মুসলমানের প্রাপ্য কি বৌদ্ধর প্রাপ্য এরকম করে ভাগ করে দেই নাই। সরকারের দায়িত্ব হলো এই অধিকারগুলো প্রতিষ্ঠা করা। এই অধিকারগুলো প্রতিষ্ঠা হলেই আর ধর্মীয় বিভাজনের প্রশ্ন উঠবে না। যতদিন প্রতিষ্ঠিত না হচ্ছে, ততদিন আমাদের দায়িত্ব নিতে হবে। তবে আমি বলবো যে, যেই পরিমাণ প্রচার হচ্ছে সেই পরিমাণ আমাদের দৃষ্টিতে আসছে না। আমরা বারে বারে খোঁজ-খবর নিচ্ছি। কিন্তু মনে হচ্ছে না যে অত বড় কিছু আসলে হচ্ছে। অনেকে এটা রাজনৈতিক কারণে ব্যবহার করছে। যেটুকু হচ্ছে সেটা যেন না হয়, শূন্যের কোঠায় পৌছায় সেদিকে আমরা যাব।

রাজনীতি

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বর্তমানে সুপরিকল্পিতভাবে ঐক্যকে বিনষ্ট করার একটি চক্রান্ত চলছে। সে বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।

শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘প্রায় এক দশক পর দেশে ফেরায় সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীকে সংবর্ধনা দিতে’ আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ফ্যাসিবাদী হাসিনা বিরোধী আন্দোলনে আমাদের যে ঐক্য সৃষ্টি হয়েছিল, সেই ঐক্যকে যেন আমরা অটুট রাখতে পারি। আজকে সুপরিকল্পিতভাবে সেই ঐক্যকে বিনষ্ট করার একটি চক্রান্ত চলছে। সে বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।

তিনি আরও বলেন, এখানে কোনো ব্যক্তি, কোনো গোষ্ঠী, কোনো দল এই মিশনকে সামনে এনে গোটা বাংলাদেশে যে সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে, তা যেন কেউ নস্যাৎ করতে না পারে। এজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের সময়ে গত ১৫ বছরে অনেকেই নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। অনেকেই দেশছাড়া হয়ে দীর্ঘদিন নির্বাসনে থেকেছেন। তবে দেশপ্রেমিক জনতা দেশের বাইরে থেকেও গণতন্ত্র রক্ষায় সংগ্রাম করে গেছেন।

এ সময় সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর প্রশংসা করে মির্জা ফখরুল বলেন, তিনি গণতন্ত্রের সত্যিকারের নায়ক। আমরা যখন কথা বলতে পারিনি, তখন মুশফিক আমেরিকা এবং ইউরোপে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করেছেন। এমন সন্তান বাংলার ঘরে ঘরে জন্ম নেওয়া দরকার।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন- জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, সৈয়দ আবদাল আহমেদ, বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভুঁইয়া, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) সাবেক সভাপতি এম আব্দুল্লাহ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সাবেক সভাপতি এলাহী নেওয়াজ খান সাজু, কবি আব্দুল হাই সিকদার, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি শহিদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক খুরশিদ আলম, সরকারি কর্মকর্তা সমিতির নেতা ড. নেয়ামত উল্যাহ, বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব অ্যাডভোকেট গোবিন্দ চন্দ্র প্রমাণিক, মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন প্রমুখ।

রাজনীতি

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। এই নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। এটিই এখন সময়ের দাবি। শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের রাজশাহী মহানগর আয়োজিত এক শ্রমিক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। শুক্রবার নগরীর একটি রেস্তোরাঁয় সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে আমরা সময় দিতে চাই। যৌক্তিক সময় দেওয়া উচিত। খুব বেশিও দেওয়া উচিত না, কম দিয়ে তাড়াহুড়োও করা উচিত না। যৌক্তিক সময় দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় দলীয় প্রশাসনে বসে ছিল, পুলিশে হোক, বিজিবিতে হোক, আর্মিতে হোক, বিচারালয়, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিল্পপ্রতিষ্ঠানে যেখানে যাকে যেখানে বসিয়েছিল-এই দলীয় লোকগুলোকে সরিয়ে সেখানে নিরপেক্ষ লোককে বসাতে হবে।

সমাবেশে প্রধান আলোচক ছিলেন জামায়াতের রাজশাহী মহানগরের আমীর ড. কেরামত আলী। বিশেষ অতিথি ছিলেন শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সহসভাপতি মজিবুর রহমান ভূঁইয়া, মহানগরের সভাপতি অধ্যাপক আব্দুস সামাদ, সহসভাপতি আফাজ উদ্দিন সরকার, পবার হড়গ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।

রাজনীতি

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ছাত্রদের আকাঙ্ক্ষার নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে ব্যবসায়ীদের সরকারের সাথে একজোট হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান নতুন বাংলাদেশ গড়ার যে সুযোগ এনে দিয়েছে, তা ব্যবহার করে আমরা অতীতের পচা বাংলাদেশ থেকে একটা নতুন তরতাজা বাংলাদেশের সৃষ্টি করতে চাই। আসুন, এ লক্ষ্যে আমরা একসঙ্গে কাজ করি।’

তিনি বলেন, ‘এটা কোন কল্পকাহিনী না। আমার দৃঢ় বিশ্বাস- আপনারা মনস্থির করে এগিয়ে এলে খুব দ্রুত গতিতে আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারবো।’

বৃহস্পতিবার রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে আয়োজিত ন্যাশনাল বিজনেস সংলাপে প্রধান উপদেষ্টা একথা বলেন।

ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স, বাংলাদেশ (আইসিসিবি) এবং জাতীয় পর্যায়ের ১৫টি বাণিজ্যিক সংগঠন এ সংলাপের আয়োজন করে।

সবাই মিলে একজোট হয়ে কাজ করলে তরুণদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তোলা অব্যসম্ভাবী এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূস বলেন, ‘ আমরা যে বড় কিছু করতে পারি তার প্রমাণ হলো ব্যবসায়ীরা। বিরাট দুঃসাহস নিয়ে আপনারা উদ্যোক্তা হয়েছেন। বাংলাদেশীদের কাছে শিল্পপতি হওয়া দুঃস্বপ্ন ছিল, কিন্তু আপনার সেটা করতে পেরেছেন। আপনারা বিশ্বমানের উদ্যোক্তা। যুবকরা যে সুযোগ এনে দিয়েছে তা কাজে লাগিয়ে আপনারা স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারবেন।’

তিনি বলেন, যুবকরা প্রাণের বিনিময়ে যে সুযোগ এনে দিয়েছে, তা জাতির জীবনে বারবার আসে না। নতুন করে যে স্বপ্ন আপনাদের মনে তারা জাগিয়ে দিয়েছে, সে স্বপ্ন যদি আপনার জীবনে রেখাপাত করে তাহলে সেই স্বপ্ন পূরণে আপনিও শরিক হবেন।

নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এ সুযোগ আর কখনো আসবে কি না জানিান। এই সুযোগ যেন হারিয়ে না যায়। এই সুযোগ হারিয়ে ফেললে জাতির কাছে আর কিছু অবশিষ্ট থাকবে না।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষ পারস্পারিকভাবে পরিচিত এবং একজনের সঙ্গে আরেকজনের যোগসূত্র রয়েছে।

দুনিয়ায় এমন কোন দেশ পাওয়া যাবে না যেখানে পরস্পর পরস্পরের এমন ঘনিষ্ঠ। এখানে হয়তো কেই সরকারে আছেন, কেইবা সরকারের বাইরে আছেন বা ব্যবসা করছেন। অথবা কেউ আছেন বিদেশে। কিন্তু আমাদের সবার সঙ্গে একটা যোগসূত্র আােছ। পারস্পারিক এই যোগসূত্রই আমাদের বড় শক্তি যা আমাদের স্বপ্ন পূরণে ভুমিকা রাখতে পারে।

তরুণদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূস বলেন, ‘যে কয়টা দিন সরকারে থাকি- আমরা একসঙ্গে কাজ করতে চাই। আমাদের অঙ্গীকার হলো- নতুন বাংলাদেশের জন্য যা আছে তা করবো। যেন বলে যেতে পারি- এই দেশ আমাদেরকে একটা সুযোগ দিয়েছিল, আমরা সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করেছি।’ স্বৈরাচার হঠাতে ছাত্রদের এবারের আন্দোলন কোনো প্রথাগত আন্দোলন ছিল না উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘এটা সাধারণ কোনো আন্দোলন ছিল না। যারা শহিদ হয়েছেন, তারা ঘর থেকে বের হওয়ার সময় অনেকে শেষ বিদায় নিয়ে এসেছেন। তারা মনস্থির করেছিলো যে উদ্দেশে রাস্তায় নেমেছে- সে উদ্দেশে প্রাণ দিতে তারা তৈরি আছে। রাস্তায় নেমেছে তাতে প্রাণ গেলে যবে, কিন্তু যে লক্ষ্য নিয়ে রাস্তায় নেমেছে সে লক্ষ্য অর্জন করবেই করবে।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তরুণরা প্রাণ দিয়েছে। যে বাংলাদেশে তাদের জন্ম ও বেড়ে ওঠা তা অসহ্য হয়ে উঠেছিলো। এ কারণে যখন ছাত্রদের প্রাণ ঝরছিল- তখন সারাদেশের মানুষ তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশে এমন কোন মানুষ ছিল না তাদের সমর্থন করিনি। তাদের প্রাণের ফলে আমরা একটা নতুন সুযোগ পেয়েছি।

তিনি উল্লেখ করেন বাংলাদেশে যে পচন ধরেছিল, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান ছাড়া সেই পচন থেকে মুক্তির কোন উপায় ছিল না। ছাত্রদের আন্দোলন হঠাৎ করে সেই অবস্থা বদলে দিয়েছে। আর কোনো পচন নয়, আমরা সুস্থ, সবল জাতি হিসেবে দাঁড়াতে চাই।

ছাত্র-জনতার আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ বিনির্মাণে সংস্কার বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে ড. ইউনসূ বলেন, সংস্কার কেবল সরকারের ওপর ছেড়ে দেবেন না। আসুন সবাই মিলে সংস্কার করি। যেখানে ভুল দেখবেন, আত্ম-জিজ্ঞাসা করবেন -সেখান থেকে বেরিয় আসার। ছেলেদের আত্মাহুতির দিকে তাকিয়ে ভুলপথ পরিহার করুন।

শ্রমিক-মালিকের মধ্যে সরকার সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে চায় উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের মেয়াদেকালে আমরা শ্রমিক-মালিকের সম্পর্ক সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে চাই। আমরা এখনো জেনেভা কনভেনশনে যোগ দিতে পারিনি। আমাদেরকে সাহস দিন, এগিয়ে আসুন, আমরা সবাই মিলে আইএলও কনভেনশনে স্বাক্ষর করি।’

তিনি শ্রমিকদের যা প্রাপ্য, মালিকদের তাতে শরিক হওয়ার আহ্বান জানান।

বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনায় অনেক বাধা রয়ে গেছে উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘ব্যবসায় বাধার কোন সীমা নেই। ব্যবসা করা এক মহা সংগ্রাম। তবে আমরা এসব বাধা পেরিয়ে যেতে আজ একযোগে সরকার, সরকারের বাইরে সবাই এক পরিবারের সদস্য হিসেবে কাজ করে যাবো।’

তিনি ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেন, বাংলাদেশ নিম্ন মধ্য-আয়ের দেশ থেকে উচ্চ মধ্য-আয়ের দেশে উন্নীত হলে রপ্তানির ক্ষেত্রে কিছু সুবিধা হরাবে। কিন্তু আমাদের প্রতিযোগিতায় শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ার সক্ষমতা অর্জন করতে হবে।

দেশের প্রান্তিক মানুষের পাশে দাঁড়াতে ব্যবসায়ীদের সামাজিক ব্যবসা চালুর আহ্বান জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আপনার গ্রাম, উপজেলা কিংবা আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের এলাকায় সামাজিক ব্যবসা গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ পানি, স্বাস্থ্য সেবা, শিক্ষা ও পরিবেশ উন্নয়নমূলক সামাজিক ব্যবসা করা যেতে পারে। আপনি বিনিয়োগ করবেন মুনাফার জন্য নয়, অন্যের সহায়তা বা সুবিধার জন্য।’

সংলাপে অর্থ উপদেষ্টা ড, সালেহউদ্দিন আহমেদ, পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এবং ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই)’র সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন বক্তব্য রাখেন।

রাজনীতি

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শহিদদের স্মরণে ‘জুলাই শহিদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’ গঠন করা হয়েছে।

এতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সভাপতি ও শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ’র ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান।

তথ্য উপদেষ্টা বলেন, এই ফাউন্ডেশনের সাত সদস্যবিশিষ্ট কার্যনির্বাহী পরিষদ গঠন করা হয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে এটার নিবন্ধন করা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ফাউন্ডেশনের সভাপতি রাখা হয়েছে। সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধকে, তিনি শহিদ মুগ্ধর জমজ ভাই। ফাউন্ডেশনের কার্যনির্বাহী পরিষদ হবে ২১ সদস্য বিশিষ্ট। এতে আরও ১৪ জন সাধারণ সদস্য যোগ হবে বলেও জানান তিনি।

এদিকে ‘জুলাই শহিদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’-এর কার্যকরী পরিষদ অনুমোদন দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সমাজসেবা অধিদপ্তর।

এতে বলা হয়, সাত সদস্য বিশিষ্ট কার্যনির্বাহী পরিষদকে ২৪ আগস্ট ২০২৪ থেকে ২৩ আগস্ট ২০২৬ তারিখ পর্যন্ত দুই বছরের জন্য অনুমোদন করা হলো।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ফাউন্ডেশনের সভাপতি ড. মুহাম্মদ ইউনূস, সাধারণ সম্পাদক মীর মাহবুবুর রহমান। এছাড়া আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, নূরজাহান বেগম ও শারমিন মুরশিদকে নির্বাহী সদস্য করা হয়েছে।