রাজনীতি

বর্তমানে বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা ৩ শতাংশে নেমে এসেছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বুধবার (০১ মে) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মহান মে দিবসের আলোচনা সভায় তিনি এ কথা জানান।

শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের প্রসারে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিনা পয়সায় বই দিই, সাথে সাথে কারিগরি শিক্ষা ও ভোকেশনাল ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা আমরা করে দিচ্ছি। যেন কর্মক্ষেত্রে তারা সুযোগ পায়।

তিনি বলেন, কর্মসংস্থান বাড়ানোর জন্য ব্যাপক হারে বেসরকারি খাতকে উন্মুক্ত করে দিয়েছি। যেটা আগে ছিল না। সরকারে আওয়ামী লীগ আসার পরে যেটা আমরা করেছি, যাতে আরও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়। আজকে আমাদের বেকারের সংখ্যা ৩ শতাংশে নেমে এসেছে। যা প্রায় ২/৩ গুণ বেশি ছিল।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, কর্মসংস্থান ব্যাংক করে দিয়েছি। যেকোনো যুবক সেখানে বিনা জামানতে ঋণ নিতে পারে। ঋণ নিয়ে নিজের ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারে। সেই সুযোগটা আমরা তৈরি করে দিয়েছি।

রাজনীতি

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আন্দোলনের শক্তি বিএনপির নেই। আন্দোলনে জনগণ লাগে। তাদের সঙ্গে জনগণ নেই। বিএনপির কর্মীরা ক্লান্ত, নেতারা হতাশ, কেউ কেউ বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, বিএনপির মুখে আন্দোলনের কথাটা শুনলে ঘোড়ারও হাসি পায়। রিমোট কন্ট্রোল নেতাকে এ দেশের মানুষ গ্রহণ করে না। সাহস থাকলে রাজপথে আসুন। লন্ডনে বসে আন্দোলন হবে না, এটা প্রমাণ হয়ে গেছে।

বুধবার বিকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে জাতীয় শ্রমিক লীগের আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এসব কথা বলেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, তাদের (বিএনপি) হাতে ১৫ আগস্টের রক্তের দাগ, তাদের হাতে ২১ আগস্টের রক্তের দাগ, তাদের হাতে শ্রমিকের রক্তের দাগ।তারা আবার ক্ষমতায় আসতে পারলে রক্তে ভাসিয়ে দেবে।

তিনি বলেন, ফখরুল সম্পর্কে নানান কথা শোনা যায়, ভেতরের কথা। বিএনপি নেতাদের কারো সঙ্গে কারো মিল নেই। বিএনপির ভেতরেই যাকে পছন্দ হয় না তাকে বলে সরকারের এজেন্ট। নেতায় নেতায় ঝগড়া করে অন্যকে বলে। বিএনপিকে আমরা ধ্বংস করতে চাই না। আজকে বিএনপি যে অবস্থায় আছে নিজেরাই নিজেদের জন্য ভাঙন ও পতনের জন্য দায়ী হবে। ঘরে এত শত্রু, বিএনপি ধ্বংসের জন্য বাইরের কোনো শত্রুর প্রয়োজন হবে না।

ওবায়দুল কাদের বলেন, সব মানুষই যদি ঐক্যবদ্ধ হবে তাহলে বিএনপি কেন নির্বাচনে এলো না? আজকে বেলা শেষ, বিএনপিরও বেলা শেষ।

বিএনপি নেতাদের লজ্জাশরমও নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ বলেছেন একসময় মনে করতাম বাংলাদেশ আমাদের জন্য বোঝা। বাংলাদেশের যে উন্নয়ন-অগ্রগতি এটা দেখে আমি লজ্জা পাচ্ছি। পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রী দেখতে পায়, বিএনপি কালো চশমা পরেছে, তারা দেখতে পায় না।

ওবায়দুল কাদের বলেন, তারা (বিএনপি) বিদেশিদের কাছে নালিশ করে, কার কাছে নালিশ করবেন? যাদের কাছে নালিশ করতেন তাদেরও বেসামাল অবস্থা। এখন আমেরিকায় আরব বসন্ত। ৪০টি বিশ্ববিদ্যালয় ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ করছে। পেছনের দরজা দিয়ে সমাবেশে উপস্থিত হয়। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী চীন সফরে গেছেন কয়দিন আগে, সে সময় সাংবাদিকরা জিজ্ঞাসা করল আপনাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন এত প্রতিবাদ? তখন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন, এটা গণতন্ত্রের অংশ।

এ সময় বিএনপি সরকারের আমলের প্রসঙ্গ টেনে মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আদমজীর মতো জুট মিল যাদের হাতে বন্ধ হয়েছে, শ্রমিক হত্যার রক্ত যাদের হাতে, এই দেশ তাদের ক্ষমা করবে না।

তিনি বলেন, শেখ হাসিনা শ্রমিকবান্ধব প্রধানমন্ত্রী। আজ কতবার মজুরি বাড়িয়ে ১২ হাজার ৫০০ টাকা করা হয়েছে। শ্রমিকের ওপর কোনো নির্যাতন নেই। বঙ্গবন্ধু আন্দোলন করেছেন, শ্রমিকের আন্দোলন করেছেন। নুরু মিয়ার রক্ত ছয় দফা আন্দোলনকে স্বাধীনতার আন্দোলনে পরিণত করেছে।

এ সময় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, শ্রমিকদের অধিকার দিবসে আমি বলব- আপনারা ঐক্যবদ্ধ থাকবেন। নেত্রী যা করেছেন, ভবিষ্যতে আরও করবেন। নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করে শত্রুতা সৃষ্টি করবেন না।

জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি নুর কুতুব আলম মান্নানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম ও আফজাল হোসেন প্রমুখ।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, শ্রমিক লীগসহ ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

রাজনীতি

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আজকে এমন একটি সময়ে আমরা মে দিবস পালন করছি যখন সারা দেশের মানুষ নূন্যতম অধিকার থেকেও বঞ্চিত। জাতি দানবের শাসনে কবলিত।

দেশনেত্রী আজ বন্দী। যে মানুষটি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সেও নির্বাসিত। আজকে এই দিনেও মানুষ গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার আন্দোলনে রাজপথে সংগ্রাম করছেন।
বুধবার (১ মে) বিকেলে বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনে মহান মে দিবস উপলক্ষে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল আয়োজিত শ্রমিক সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

ফখরুল বলেন, দুঃখ হয় যখন প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাম-ডান একসাথে হয় সরকার সরানোর চেষ্টা করছে। অতি বাম-অতি ডান নয়। কি এমন ঘটেছে যে আমাদের উৎখাত করতে চায়?” আজকে সব মানুষ মনে করছে তাদের অধিকার লুট করা হয়েছে, কেড়ে নেওয়া হয়েছে বাকস্বাধীনতা। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বলছেন, “আমাদের অপরাধ কি?” আপনাদের অপরাধ হলো আপনারা জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছেন। ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে দেশ পরিচালনা করছেন। আপনাদের অপরাধ হলো লুটপাট করে দেশকে অর্থনৈতিকভাবে ফোকলা বানিয়ে ফেলেছেন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকার সংসদে বিল পাশ করে একদলীয় বাকশাল কায়েম করতে চায় না। তারা জনগণের অধিকার কেড়ে নিয়ে কণ্ঠ রোধ করে একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করতে চায়। আজকে অধিকার ফিরিয়ে আনার আন্দোলনে শুধু বিএনপির নয়, সকল দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক শক্তি এক হয়েছে। বিএনপিকে ধ্বংস করা যাবে না। বিএনপি হচ্ছে ফিনিক্স পাখির মতো। বিএনপি অতীতেও পরাজিত হয়নি, ভবিষ্যতেও পরাজিত হবে না।

ফখরুল আরও বলেন, চলমান আন্দোলন বিএনপির একার সংগ্রাম নয়, সবার। আমরা জনগণের অধিকার পুণঃপ্রতিষ্ঠা করতে চাই। শ্রমিকরা আজ পদে পদে লাঞ্ছিত হচ্ছে। তাদের সন্তানরা ভালো স্কুলে লেখাপড়া করতে পারে না, ভালো খেতে পারে না। আর এই বৈষম্য সৃষ্টি করেছে সরকার। আজকে আবারও জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। নিজেদের লোকদের সুবিধা দিতে আবারও জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে। মানুষকে কীভাবে অশান্তিতে রাখা যায়, কষ্টে রাখা যায় সরকার তাই করছে। ৬০ লাখ বিরোধী নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা। বিরোধী নেতাকর্মীদের ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানে হামলা হচ্ছে, দোকানপাট লুট হচ্ছে। এখন আর চুপ থাকলে চলবে না। সকল রাজনৈতিক দল, মত সকলকে অধিকার ফিরিয়ে আনতে রাজপথে আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।

সমাবেশ শেষে একটি বর্ণাঢ্য র‌্যালি নয়াপল্টন থেকে শুরু হয়ে বিজয়নগর হয়ে পল্টন মোড় ঘুরে দৈনিক বাংলা হয়ে ফকিরাপুল মোড় হয়ে আরামবাগ ঘুরে পুনরায় নয়াপল্টন বিএনপি কার্যালয়ের সামনে এসে শেষ হয়। তীব্র তাপদাহ উপেক্ষা করে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী সমাবেশে অংশ নেন।

সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, দেশের মানুষের মুক্তি মিলবে না সরকারকে না সরাতে পারলে। বিএনপির আন্দোলন সফল হয়নি সরকারের লোকেরা বলে। এটা হয়েছে কারণ, সরকার বিএনপির আন্দোলনকে নিষ্ঠুরভাবে দমন করেছে। এই সরকারের পায়ের তলায় মাটি নেই, অর্থনৈতিক অবস্থা ভঙ্গুর। পুলিশ ও প্রশাসনের ওপর ভর করে ক্ষমতায় টিকে আছে সরকার। বিএনপির নেতাকর্মীদের জেলে পুরে, সাজা দিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়েছে সরকার। মে দিবসের অঙ্গীকার, রুখতে হবে স্বৈরাচার।

স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান বলেন, বাংলাদেশে শ্রমিকের অধিকার, ভোটের অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিতে হবে। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম সহজ নয়, এজন্য অনেক রক্ত-শ্রম দিতে হয়। আওয়ামী লীগ বুলেটের জোরে ক্ষমতায় এসেছে, মানুষের ভোটে নয়। বিএনপি রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে একদলীয় সরকারকে বিদায় দেওয়া হবে।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আব্দুস সালাম বলেন, সরকারের পক্ষে কেউ নেই, প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন ডান-বাম এক হয়ে গেছে। জিনিসপত্রের দাম কমছে না শুধু বাড়ছেই। কারণ, সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়নি, প্রশাসনের মাধ্যমে ক্ষমতায়। তাই তাদের সুবিধা দিতেই ব্যস্ত। সরকার জোর করে ক্ষমতায় টিকে আছে। আওয়ামী লীগের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করতে হলে একসাথে রাজপথে সকলের নামা ছাড়া বিকল্প নেই।

শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইনের সভাপতিত্বে শ্রমিক সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, সহ শ্রমবিষয়ক হুমায়ুন কবির খান, ফিরোজ মোল্লা, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব, সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির, জাসাসের সদস্য সচিব জাকির হোসেন রোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক মাজাহারুল ইসলাম শিবাসানু, মহিলা দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খান, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোনায়েম মুন্না, জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের আহ্বায়ক মাওলানা সেলিম রেজা ,মৎস্যজীবী দলের সদস্য সচিব আব্দুর রহিম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম আহবায়ক আনম সাইফুল ইসলাম, শ্রমিক দল নেতা মোস্তাফিজুর রহমান মজুমদার, মনজুরুল ইসলাম মঞ্জু, সুমন ভূঁইয়া, বদরুল আলম সবুজ ,শাহ আলম রাজা বক্তব্য দেন।

রাজনীতি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের পোল্ট্রি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতের উন্নয়নে বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে নিজেদেরই নিজস্ব খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।

তিনি বলেন, “আমি চাই বেসরকারি খাত এগিয়ে আসুক। বেসরকারী খাতকেই উদ্যোক্তা হিসেবে দেখতে চাই। তাদের সবরকম সহযোগিতা করতে চাই। এর ফলে আমার দেশের মানুষের কর্মসংস্থান বাড়বে। আমরা তাই চাই।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের (বিআইসিসি) পাশে শেরে বাংলানগরের পুরাতন বাণিজ্য মেলা মাঠে আয়োজিত দুই দিনব্যাপী ‘প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী-২০২৪’ এর উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বেসরকারী খাতকেই বেশি উৎসাহিত করতে চাই। তাদেরকেই বেশি সুবিধা দিতে চাই। কারণ এগুলো সব সরকারিভাবে হয় না। এটা বেসরকারি খাতে হলে তাতে কর্মসংস্থানেরও সৃষ্টি হয়। আমাদের শিক্ষিত যুবসমাজ এক্ষেত্রে এগিয়ে আসুক সেটাই আমরা চাই।

তাঁর সরকারের দেয়া সুযোগ-সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে যুব সমাজকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে ওঠার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, শুধু একটা পাস করে চাকরির পেছনে না ছুটে যুব সমাজ যদি নিজের উদ্যোগে একটু ব্যবসা-বাণিজ্য করে তাহলে কিন্তু আমরা যথেষ্ট এগিয়ে যেতে পারবো। এসব ক্ষেত্রে আমাদের যুব সমাজকে এগিয়ে আসার জন্য আরো উৎসাহিত করতে হবে। যাতে কখনো আমাদের কারো উপর নির্ভরশীল হতে না হয়। খাদ্য নিরাপত্তার সাথে সাথে আমাদের নিজস্ব পুষ্টির ব্যবস্থা আমরা নিজেরাই করতে পারি সে বিশ্বাস আমার আছে।

প্রধানমন্ত্রী উৎপাদন বৃদ্ধিতে গবেষণার উপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, এক্ষেত্রে আমাদের গবেষণা আরও বাড়াতে হবে। আজ আমরা ৪০ ভাগের উপরে পেঁয়াজ উৎপাদন করতে পারি। আমরা কারো মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে চাই না। প্রতিটি পণ্য আমরা নিজেরাই উৎপাদন করব। তার সরকার খামারিদের সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে উৎসাহিত করে যাচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মো. আব্দুর রহমানের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সেলিম উদ্দিন।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইমরান হোসেন দেশের ডেইরি খাতের প্রতিনিধি হিসেবে এবং বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রি সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআইসিসি) যুগ্ম আহ্বায়ক মশিউর রহমান পোল্ট্রি খাতের প্রতিনিধি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।

শুরুতে প্রাণিসম্পদ খাতে বর্তমান সরকারের অগ্রগতি ও অর্জনের ওপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের এ আয়োজনের এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে- “প্রাণি সম্পদে ভরবো দেশ, গড়বো স্মার্ট বাংলাদেশ।” উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী প্রদর্শনীর বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার একটি প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। যেসব পশু পালন করা হয় তা স্বাস্থ্যসম্মতভাবে পালনের ব্যবস্থা নিতে হবে। মাছ, হাঁস-মুরগি, পশু পালন এবং উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরনও স্বাস্থ্যসম্মত ভাবে করতে হবে। এটাও গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়ে আরো যতœবান হতে হবে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে হালাল মাংস রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগ আমাদের রযেছে।

সরকার প্রধান বলেন, অনেক দেশ হালাল মাংস আমাদের থেকে ক্রয় করতে চায়। সেই সুযোগ আমাদের নিতে হবে। আর সে জন্য আমাদের পশু পাখিগুলোকে স্বাস্থ্য সম্মতভাবে লালন পালন ও নিয়ম মেনে জবাই করতে হবে এবং প্যাকেটজাত করার ক্ষেত্রে নিয়ম মেনে হচ্ছে কিনা সে বিষয় আমাদের বিবেচনায় নিতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এভাবে যদি করতে পারি তাহলে দেশের মানুষের চাহিদা মিটিয়ে আমরা বিদেশেও রপ্তানি করতে পারবো।
তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে কিছু কিছু রপ্তানি হচ্ছে। কিন্তু আরো বেশি রপ্তানি করার সুযোগও আমাদের আছে, অনেক দেশের কাছ থেকে আমরা সেই অনুরোধও পাচ্ছি।’

প্রধানমন্ত্রী পশু জবাইয়ের ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের উপর গুরুত্বারপ করে বলেন, আমরা যাতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারি সেজন্য কিছু আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন বুচার হাউস (কসাই খানা) আমাদের তৈরি করা দরকার। বিশেষ করে কোরবানির সময় রাস্তাঘাটে যেখানে সেখানে ফেলে পশু জবাই করা আমাদের বন্ধ করতে হবে। সুনির্দিষ্ট একটি স্থান থাকবে যেখানে পশু জবাই হবে এবং যার যার চিহ্নিত পশু সে নিয়ে যাবে। তাহলে পুরো প্রক্রিয়া যেমন স্বাস্থ্যসম্মত হবে তেমনি পশুর পরিত্যক্ত অংশ এবং চামড়া যথাযথভাবে কাজে লাগানো যাবে। না হলে চামড়ার মান নষ্ট হয় তেমনি অনেক কিছুই অপচয় হয়ে যায়।

তিনি বলেন, পশুর কেবল মাংসই আমাদের প্রয়োজন হয় না এর হাড়, রক্ত, চামড়া এমনকি বর্জ্যও আমাদের কাজে লাগে। আমরা যদি এগুলো যথাযথভাবে সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাত করে ব্যবহার করতে পারি তাহলে আমাদের অনেক কাজে আসতে পারে। এগুলো যথাযথভাবে সংরক্ষণ এবং কাজে লাগানোর ব্যবস্থা আমাদের করতে হবে । এ ব্যাপাওে সংশ্লিষ্টদেওর ব্যবস্থা নেয়ারও পরামর্শ দেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া দরকার বলে আমি মনে করি এবং সংশ্লিষ্ট মহল এ উদ্যোগ নেবেন বলে আমি আশা করি।

তিনি বলেন, তার সরকার ৪৭০ টি উপজেলায় ভ্রাম্যমান পশু চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে।

এই ভেটেরনারী সেক্টরটার দিকে আরও দৃষ্টি দেয়া দরকার উল্লেখ করে তিনি আটটি বিভাগ ও ৬৪ টি জেলায় ভেটেরনারী ফার্ম, পশু চিকিৎসালয় ও সংরক্ষণাগার গড়ে তোলার উপরও জোর দেন।

তিনি বলেন, ধান চালের পাশাপাশি পশু সম্পদ সংরক্ষণাগার গড়ে তুলে কোন সম্পদই যেন অপচয় না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে এগুলোকে যেন আমাদের আর্থিক কাজে আমরা ব্যবহার করতে পারি সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে।

মৎস্য ও পশু পাখির খাদ্যও যেন নিরাপদ হয় এবং এগুলো যাতে পরবর্তীতে মানবদেহে কোন রোগের সৃষ্টি করতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখার ওপরও তিনি গুরুত্ব দেন।

বাংলাদেশে ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্প অনেক দূর এগিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন ,আমরা পশু পাখির জন্য নিজেরাই নানা রকম ভ্যাকসিন তৈরি করে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারি।

শেখ হাসিনা বলেন, এটা দুর্ভাগ্যের বিষয় যে বাংলাদেশ বিস্তীর্ণ সমুদ্রসীমা অর্জন করলেও এখনও গভীর সমুদ্র থেকে সম্পদ আহরণ করতে পারেনি।

তিনি বলেন,“আসলে আমরা এই উদ্দেশ্যে কোনো উদ্যোক্তা পাচ্ছি না। এটাই বাস্তবতা।”

তিনি ১৯৯৮ সালের প্রলংকারি বন্যার উল্লেখ করে বলেন, তাঁর সরকারের প্রচেষ্টায় বীজ ও কীটনাশকসহ প্রয়োজনীয় কৃষি সামগ্রি কৃষকের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দেয়ায় এরপরই বাম্পার ফসল উৎপাদন হয়। যেখানে বিভিন্ন বিদেশি মিডিয়া বলেছিল এক কোটি মানুষ এই বন্যায় না খেতে পেয়ে মারা যাবে সেখানে একটি মানুষও না খেয়ে মরেনি। অথচ তিরি সরকার প্রধান হিসেবে সংসদে যখন দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ন হবার ঘোষণা দিলেন তখন বিরোধি দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে তার সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান সংসদে দাঁড়িয়ে বলেন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া ভাল না, তাহলে বিদেশি সাহায্য পাওয়া যাবেনা। আসলে এটা হচ্ছে নীতির বিষয়। তারা দেশকে অন্যে মুখাপেক্ষী করেই রাখতে চায়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার প্রতি ইঞ্চি অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আনার মাধ্যমে সার্বিক উৎপাদন বাড়ানোর প্রচেষ্টা চালানোর পাশাপাশি পরিত্যক্ত চরাঞ্চলে মহিষ, ভেড়া হাঁস-মুরগি চাষে উৎসাহিত করছে।

তিনি বলেন, এমনকি ভাষানচরে য়ে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি সেখানেও প্রচুর ভেড়া ও মহিষ লালন পালন হচ্ছে। হাঁস-মুরগি প্রতিপালন ও মাছের চাষ হচ্ছে। আমরা এভাবে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের যেটুকু মাটি ও সম্পদ রয়েছে তা ব্যবহার করেই আমরা স্বয়ং সম্পূর্ণ হতে পারব। জনগণ মৎস, পশু ও হাঁস মুরগি পালনে আরো এগিয়ে আসবেন এবং আমাদের খামারগুলো আরো উন্নত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

রাজনীতি

উপজেলা পরিষদ নির্বাচন স্থানীয় এমপি-মন্ত্রীদের প্রভাবমুক্ত রাখতে কঠোর অবস্থানে আওয়ামী লীগ। প্রার্থী হতে পারবেন না তাদের (এমপি-মন্ত্রীদের) পরিবারের সদস্য বা নিকটাত্মীয়রা। যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের সরে দাঁড়াতে কেন্দ্র থেকে দেওয়া হচ্ছে নির্দেশনা।

ইতোমধ্যে প্রভাবশালী কয়েকজন এমপিকে সতর্কও করা হয়েছে। তাদের মধ্যে আছেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক মন্ত্রীও। এ বিষয়ে দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশনার কথাও জানানো হয়েছে তাদের। নির্দেশনা উপেক্ষিত হলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দিচ্ছেন দলের বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন-অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করতেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কেউ যেন নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করতে না পারে সে বিষয়ে শুরু থেকে কঠোর বার্তা দেওয়া হচ্ছে দলের পক্ষ থেকে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বৃহস্পতিবার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের বিভাগীয় দায়িত্ব পাওয়া কয়েকজন নেতার সঙ্গে অনির্ধারিত বৈঠক করেন। এতে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, এসএম কামাল হোসেন, মির্জা আজম, আফজাল হোসেন, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বরাত দিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তাদের এ বিষয়ে নির্দেশনার কথা জানান। একই সঙ্গে সাংগঠনিক সম্পাদক ও দপ্তরকে সারা দেশে মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের স্বজন ও পরিবারের সদস্য যারা নির্বাচন করছেন, সেই তালিকা তৈরির নির্দেশনাও দেন তিনি।

আওয়ামী লীগের দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সাধারণ সম্পাদকের কাছ থেকে দলীয় সভাপতির নির্দেশনা পাওয়ার পরেই দলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকরা নিজ নিজ বিভাগের মন্ত্রী ও সংসদ-সদস্যদের দলের এ নির্দেশ জানাতে শুরু করেছেন। বৈঠক সূত্র জানায়, নির্বাচনে হস্তক্ষেপ না করার জন্য দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, শাজাহান খান এবং নোয়াখালীর এমপি একরামুল করিম চৌধুরীসহ বেশ কয়েকজনকে তাৎক্ষণিক ফোন করে দলীয় সিদ্ধান্তের কথা জানান দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকরা। এ সময় তাদের পরিবারের সদস্য বা নিকটাত্মীয় যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্যও বলা হয়।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠু শান্তিপূর্ণ রাখতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমরা চাই অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। নির্বাচনকে কোনোভাবেই প্রশ্নবিদ্ধ করার সুযোগ কাউকে দেওয়া হবে না। এটা আমাদের দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ।

তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যেই বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা কাজ শুরু করেছেন। কয়েকজনকে ফোন করে নির্দেশনার কথা জানানো হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাকি যারা আছেন তাদেরও দলীয় সভাপতির এই নির্দেশনার কথা জানানো হবে। এই নির্দেশনা না মানা দলের নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত অমান্য করা এবং দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ বলেই বিবেচনা করা হবে।

একই বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল বলেন, দলের সভাপতি শেখ হাসিনার বরাত দিয়ে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আমাদের এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। নেত্রী বলেছেন, যারা এমপি-মন্ত্রী তাদের সন্তানসহ স্বজনরা যেন এই নির্বাচনে প্রার্থী না হয়। এ ব্যাপারে নেত্রীর পক্ষ থেকে বার্তাগুলো তাদের জানাতে বলা হয়েছে। আমরা নিজ নিজ বিভাগে সবাইকে বার্তা পৌঁছে দিচ্ছি।

সূত্র জানায়, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন দিচ্ছে না। নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিযোগিতাপূর্ণ করতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া শুরু থেকেই এমপি-মন্ত্রীদের নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার বা প্রার্থীদের সমর্থন না দেওয়ার নির্দেশনাও দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। কিন্তু দলের কোনো নির্দেশনাই তোয়াক্কা করছিল না তারা। উলটো নিজের পছন্দের প্রার্থীদের পাশাপাশি স্থানীয় এমপি-মন্ত্রীদের অনেকেই তাদের আত্মীয়-স্বজন বা পরিবারের সদস্যদের প্রার্থী করার উদ্যোগ নেন। তাদের পক্ষে প্রকাশ্যে বা গোপনে মাঠেও নামেন অনেকেই। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের নির্বাচন থেকে সরে যেতে হুমকি, তুলে নেওয়া এবং প্রচারণায় বাধা দেওয়াসহ নানা অভিযোগও উঠে কয়েকজন প্রভাবশালী এমপির বিরুদ্ধে।

এ কারণে দলের তৃণমূলে চেইন অব কমান্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভক্তি দেখা দেয়। ঘটে সংঘর্ষের ঘটনাও। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কাছে অভিযোগও জমা পড়ে। এমন প্রেক্ষাপটে দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশনা দিয়েছেন, যেসব এমপি-মন্ত্রী পরিবারের সদস্যরা নির্বাচন করছেন-তারা নির্বাচন করতে পারবেন না।

এবার চার পর্বে উপজেলা নির্বাচন হচ্ছে। প্রথম পর্বে ১৫০টি উপজেলায় ভোট হবে ৮ মে। এরপর ২১ মে দ্বিতীয় এবং ২৯ মে তৃতীয় ধাপের ভোট অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া তফশিল না হলেও ৫ জুন চতুর্থ ধাপের ভোট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মন্ত্রী ও সংসদ-সদস্যদের বিষয়ে দলীয় এই সিদ্ধান্ত উপজেলা নির্বাচনের চার পর্বের জন্যই প্রযোজ্য বলে আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র জানিয়েছে। জানা গেছে, যারা নিকটাত্মীয়দের দিয়ে নির্বাচন করাচ্ছেন, তাদের তালিকা করা হচ্ছে। প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেউ দলীয় নির্দেশনা না মানলে তাদের বিরুদ্ধে সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রাজনীতি

নীতিগত কারণে দলীয় শৃঙ্খলা ইস্যুতে হার্ডলাইনে বিএনপি। এজন্য উপজেলা পরিষদের প্রথম দফার নির্বাচনে যারা দলীয় পদে থেকে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন, তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় সাংগঠনিক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদকরা প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলে দলের এমন নির্দেশনার কথা জানান। একই সঙ্গে কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ভোটে অংশ নিলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও প্রার্থীদের স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়। জানানো হয়, ভোটে গেলে শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে আজীবন বহিষ্কার করা হবে।

এছাড়াও বৃহস্পতিবার রাতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের ভার্চুয়াল বৈঠক হয়। সেখানে বাকি ধাপের উপজেলা নির্বাচনে যাতে দলীয় কোনো নেতা অংশ না নেন, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সাংগঠনিক সম্পাদকদের নির্দেশ দেয় হাইকমান্ড। নির্দেশনা পেয়ে তারা কাজও শুরু করেছেন।

এছাড়া দলীয় কোন্দল নিরসন, নেতায়-নেতায় দ্বন্দ্ব-গ্রুপিং, বিভাজন ও সিনিয়র নেতাদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য রোধেও কঠোর হচ্ছে বিএনপি। মূল দল ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনে বিশৃঙ্খলাকারী নেতাদের লাগাম টেনে ধরতে চায় দলটি। একই সঙ্গে নেতাকর্মীদের জবাবদিহির আওতায় আনতে চায় হাইকমান্ড। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

আসন্ন উপজেলা নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি ও তাদের মিত্র রাজনৈতিক দলগুলো। নেতারা জানান, নির্দেশনা অমান্যকারী নেতাদের বিষয়ে কোনো ধরনের ছাড় না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে দলীয় ফোরামে। ইতোমধ্যে এমন সিদ্ধান্ত পৌঁছে দেওয়া হয়েছে তৃণমূলে। পাশাপাশি নির্বাচনে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক পদধারী নেতাদের দেওয়া হয়েছে সতর্কবার্তা।

কেউ যেন সরকারের ‘পাতানো ফাঁদে’ জড়িয়ে উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে, সেজন্য তৃণমূলের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ বাড়িয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। এমন পরিস্থিতিতে কেউ নির্বাচনে অংশ নিলে কিংবা প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দলীয় শৃঙ্খলার বিষয়টি বিএনপির গঠনতন্ত্রেই বলা আছে। কেউ দলীয় নির্দেশনা অমান্য করলে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপি উপজেলা নির্বাচনে যাবে না, এটা অনেক আগে থেকেই বলা আছে। এটি দলীয় নীতিনির্ধারণী ফোরামের সিদ্ধান্ত। এমন বার্তা নেতাকর্মীদের জানানো হয়েছে। শুধু নির্বাচন ইস্যুতে নয়, দলের যে কোনো সিদ্ধান্ত ভঙ্গ হলে গঠনতন্ত্র মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

দলীয় সূত্র জানায়, প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে যেসব পদপদবিধারী নেতা মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন কেন্দ্রীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। নির্বাচনে অংশ না নিতে তাদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে মনোনয়ন দাখিলের কারণও জানতে চাওয়া হচ্ছে। মনোনয়নপত্র দাখিল করলেও অনেকেই দলের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে নিজ অবস্থান থেকে সরে আসার ইচ্ছা পোষণ করেছেন। তবে কেউ কেউ বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন না। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মনোনয়ন প্রত্যাহার না করলে নেতাদের বহিষ্কার করবে-এমন বার্তা সংশ্লিষ্ট জেলার নেতাদের কাছে স্পষ্ট করা হয়েছে।

এদিকে ঢাকা বিভাগের গাজীপুর ও মানিকগঞ্জের কয়েকটি উপজেলায় মনোনয়নপত্র দাখিলকারী নেতাদের সঙ্গে বৃহস্পতিবার বিএনপির সাংগঠনিক নেতারা যোগাযোগ করেন। তাদেরকে নির্বাচন থেকে সরে আসার অনুরোধ জানানো হয়েছে। একইভাবে অন্যান্য উপজেলার নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করছে বিএনপি। একই বিষয়ে সাংগঠনিক নেতাদের সঙ্গে এদিন রাতে বৈঠক করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

সূত্রমতে, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির পদধারী নেতারা কেউ যেন অংশ না নেন, সেজন্য প্রতিনিয়ত দলের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাদের কাউন্সেলিং করা হচ্ছে। বিভাগ, জেলা ও উপজেলার শীর্ষ নেতারা বিষয়টি তদারকি করছেন।

কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, উপজেলা নির্বাচনে বিএনপির অসংখ্য যোগ্য প্রার্থী রয়েছেন। তবে দলীয় সিদ্ধান্তকে তৃণমূলের বিএনপি নেতারা সাধুবাদ জানিয়েছেন। তারাও মনে করছেন জাতীয় নির্বাচন বর্জনের পর সরকারের অধীনে অন্য কোনো নির্বাচনে অংশ নেওয়ার যৌক্তিকতা নেই। অতীতেও যারা বিভিন্ন সময়ে নির্দেশনা অমান্য করে নির্বাচন করেছেন, তারা দল থেকে বহিষ্কার হয়েছেন। এবার সেই অভিজ্ঞতার আলোকে কেউ দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করতে চান না। বিচ্ছিন্নভাবে কিছু বহিষ্কৃত ও সাবেক নেতারা অংশ নিতে পারে। সেক্ষেত্রেও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।

এদিকে বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোয় দলীয় কোন্দল, নেতায়-নেতায় দ্বন্দ্ব, গ্রুপিং, বিভাজন ও সিনিয়র নেতাদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের জেরে দলটিতে বেড়েছে বিশৃঙ্খলা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের নামে চালানো হচ্ছে নানা অপপ্রচার। এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য দিয়েছে সংশ্লিষ্ট একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র। সূত্র বলছে, এসব ঘটনায় বিব্রত কেন্দ্রীয় নেতারা। এসব অপপ্রচারকারীকে শনাক্তকরণের জন্যও কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাকে দায়িত্ব দিয়েছে হাইকমান্ড।

বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ বলেন, ‘উপজেলা নির্বাচনে বিএনপির যারা প্রার্থী হয়েছেন, তাদের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করেছি। তাদের সাফ বলে দেওয়া হয়েছে, দল যেখানে নির্বাচনে যাবে না, সেখানে তারা যেন নির্বাচন থেকে সরে আসেন, দলীয় শৃঙ্খলা মেনে চলেন। অন্যথায় বিএনপি সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে। তবে অনেকেই বিষয়টি ভেবে দেখবেন বলে জানিয়েছেন। আশা করি, প্রথম ধাপের নির্বাচনে যারা ইতোমধ্যে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন, তারা তা প্রত্যাহার করে নেবেন।’

তিনি বলেন, ‘দলীয় শৃঙ্খলার বিষয়ে বিএনপি খুবই কঠোর। এজন্য তৃণমূলের অন্য নেতাদের সঙ্গেও যোগযোগ রাখছি। যাতে প্রথম ধাপের মতো দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় ধাপেও দলের কেউ যেন মনোনয়ন দাখিল না করেন।’

প্রসঙ্গত, চার ধাপে ৪৫০-এর বেশি উপজেলায় নির্বাচন হবে। প্রথম ধাপে ৮ মে ১৫০টি উপজেলা পরিষদে ভোটগ্রহণ হবে। এসব উপজেলায় মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষদিন ছিল ১৫ এপ্রিল। ২২ এপ্রিল মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন।

বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা আশা করছেন, এর মধ্যেই পদধারী নেতারা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করবেন। কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া বলেন, তার সাংগঠনিক বিভাগ সরাইল, মেঘনা ও মতলব উপজেলায় মনোনয়নপত্র জমাদানকারী তিন নেতা ইতোমধ্যে তা প্রত্যাহার করবেন বলে লিখিতভাবে জানিয়েছেন।

রাজনীতি

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ক্ষমতার স্বর্ণযুগ উপভোগ করছেন। টানা চার মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা এই নারী সরকার প্রধানের গৌরব ধরে রেখেছেন। জানুয়ারিতে তার বিজয় প্রায় সব মহলের প্রশংসা কুড়িয়েছে। হাসিনার সরকার পরিচালনার জাহাজ এখন মসৃণ সমুদ্রে ভেসে চলছে।

মার্কিন থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক ‘আটলান্টিক কাউন্সিল’-এ গত ৮ এপ্রিল এক নিবন্ধে এসব কথা লিখেছেন ভারতের প্রেস ক্লাবের সভাপতি গৌতম লাহিড়ী।

তিনি লিখেছেন, জানুয়ারিতে বিজয়ের মাধ্যমে শেখ হাসিনা একটি বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। কারণ এশিয়ার দুই প্রতিদ্বন্দ্বী চীন ও ভারত উভয়েই তার নেতৃত্বের প্রতি সমর্থন দিয়েছিল।

বাংলাদেশ কি একদলীয় শাসনের দিকে যাচ্ছে?

আওয়ামী লীগের ভূমিধস বিজয়ের পর কিছু সমালোচক সতর্ক করেছিলেন, বাংলাদেশ কার্যকর একদলীয় শাসনের দিকে ধাবিত হচ্ছে। আওয়ামী লীগ ২২৩টি আসনে জয়ী হয়েছে এবং এর অনুগত স্বতন্ত্ররা আরও ৬২টি আসনে জয়ী হয়েছে। তারা যুক্তি দিয়েছিল সংসদে কোনো অর্থবহ বিরোধী দল নেই।

লাহিড়ী লিখেছেন, প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও তার মিত্ররা নির্বাচন বর্জন করলেও সব বিরোধী দল তা অনুসরণ করেনি। ৪৪টি নিবন্ধিত দলের মধ্যে ২৭টি দল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল এবং সেই সঙ্গে প্রায় ১ হাজার ৯শ’ স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল।

নির্বাচন বর্জনীয় ছিল নাকি গ্রহণযোগ্য?

অফিসিয়াল ভোটার (৪১.৮ শতাংশ) গত নির্বাচনের তুলনায় কম ছিল কিন্তু অভূতপূর্ব কম নয়। কেউ কেউ এই কম ভোটারকে একটি ইঙ্গিত হিসাবে দেখেন যে বিরোধীদের বয়কট জনগণের মনোভাব প্রতিফলিত করে। তিনি বলেন, বিএনপির বয়কট কিছু ভোটারদের উপস্থিতি কমিয়ে দিয়েছে তবে এটি অগত্যা জনগণের ভোট প্রত্যাখ্যানের ইঙ্গিত বহন করে না।

ভোটের দৌড়ে বিএনপির নির্বাচন বিরোধী বিক্ষোভ সহিংসতায় পরিণত হয়। শতাধিক গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় বিএনপির অনুগতদের জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভোটের আগের দিন দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টার হরতাল-অবরোধের ডাক দেয় বিএনপি।

তিনি বলেন, আতঙ্কিত পরিস্থিতিতে কিছু ভোটারকে নির্বাচনের দিন বাড়িতেই অবস্থান করতে হয়েছে।

লাহিড়ী বলেন, আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হওয়ার কোনো নজির নেই, বিএনপির পক্ষ থেকে এমন দাবি করা হলেও, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবির এখনো ভিত্তি নেই। দলটির নির্বাচন বয়কট শুধু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে ব্যাপকভাবে সাহায্য করেছে। এই আত্মঘাতী সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বিএনপি আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসিয়েছে।

রাজনীতি

জেলে থাকা নেতাকর্মীর সংখ্যা নিয়ে বিএনপি মিথ্যাচার করছে দাবি করে তালিকা চেয়ে দলটিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেছেন, ছিল (কারাবন্দি) ২০ হাজার এখন সেটা ৬০ লাখ হলো কি করে? ৬০ লাখ বন্দির তালিকা অবিলম্বে প্রকাশ করুক। না হয় মিথ্যাচারের জন্য জাতির কাছে মির্জা ফখরুলকে ক্ষমা চাইতে হবে।

আওয়ামী লীগের সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সোমবার দুপুরে এক বিফ্রিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

বিএনপির রাজনীতির সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ১৭ এপ্রিল মুজিব নগর দিবস। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকারের শপথ দিবস, সেই দিনটিকে তারা অস্বীকার করে। ১০ এপ্রিল প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের সরকার গঠন হয় সেটা অস্বীকার করে। স্বাধিকার আন্দোলনের মাইলফলক ৭ জুন অস্বীকার করে। বিএনপি বাঙালি সংস্কৃতির চেতনা নিয়ে ইতিবাচক রাজনীতি করবে এটা আমি বিশ্বাস করি না।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার চেতনাকে ধ্বংস করার জন্য বিএনপির জন্ম মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, তারা বাংলাদেশের অস্তিত্বের মূলে আঘাত করতে চায়। ৭১ এ তাদের যে ভূমিকা, হঠাৎ করে বাঁশিতে ফুঁ দিলেন অমনিই তিনি ঘোষক হয়ে গেলেন।

ইরান ও ইসরাইল উত্তেজনা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা যুদ্ধ চাই না। শান্তি চাই।

নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে রমজানে সরকারের বেশ কিছু কার্যক্রম চলমান ছিল। তা চালু থাকবে কিনা- এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যতদিন জনগণের প্রয়োজন থাকবে ততদিন জনস্বার্থে এই প্রোগ্রাম (সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অভিযান) থাকবে।

এসময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান।

রাজনীতি

প্রথম ধাপের ১৫০টি উপজেলা নির্বাচনের বেশ কয়েকটিতে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন বিএনপি ও জামায়াত নেতা। তারা অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচন বর্জন করে আসছে বিএনপি ও জামায়াত।  কিন্তু এবার নির্বাচন বর্জনে কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করেই ওইসব উপজেলায় দল দুটির নেতারা প্রার্থী হয়েছেন। তবে কত উপজেলায় মোট কতজন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তার প্রকৃত তথ্য পাওয়া যায়নি।  জেলা ও উপজেলা অফিস থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে এ সংখ্যা ৫০ জনের কম নয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

সোমবার বিকাল ৪টায় প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমার সময় শেষ হয়েছে। আগামী ৮ মে প্রথম ধাপের ১৫০ উপজেলায় ভোটগ্রহণ হবে।

নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ১৫০টি উপজেলায় মোট ১৮৯০ প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৬৯৫ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭২৪ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪৭১ জন রয়েছেন। মনোনয়নপত্র দাখিলের দিনই বাগেরহাট সদর ও মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা চেয়ারম্যানসহ ১২টি পদে একজন করে প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তারা সবাই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হতে চলেছেন। বাকি শুধু আনুষ্ঠানিকতা।

বাগেরহাট সদর উপজেলায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান পদে জয়ী হতে যাচ্ছেন বর্তমান চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগ সভাপতি সরদার নাসির উদ্দিন। এ উপজেলায় মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে রিজিয়া পারভীনও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। এর আগের নির্বাচনেও তারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছিলেন।

তবে এ উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান পদে চারজন প্রার্থী হয়েছেন। আরেকজন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলায়। এ উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আনিছুজ্জামান আনিস একক প্রার্থী হিসাবে আবারও নির্বাচিত হওয়ার পথে রয়েছেন। মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে দুজন করে প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।

মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রাহেনা বেগম হাছনা। এ নিয়ে টানা চতুর্থবার জয় পেতে যাচ্ছেন তিনি। এছাড়া কক্সবাজার সদর ও চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান পদে একজন করে প্রার্থী রয়েছেন। নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদেও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পেতে যাচ্ছেন প্রার্থীরা। কুষ্টিয়া সদর, চাঁদপুরের মতলব উত্তর, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা ও ঠাকুরগাঁওর বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী রয়েছেন।

প্রথম ধাপে ১৫০ উপজেলায় ১৮৯০ জনের মনোনয়নপত্র দাখিলের তথ্য নিশ্চিত করেছেন নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ। তিনি বলেন, অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিল হওয়ায় কোথাও উল্লেখ করার মতো আচরণবিধি লংঘনের খবর পাওয়া যায়নি। প্রার্থীরা সহজেই অনলাইনে আবেদন করতে পেরেছেন।

নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, এবারই প্রথম পুরোপুরি অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। এ কারণে মনোনয়নপত্র দাখিলের দিন রিটার্নিং কর্মকর্তার দপ্তরগুলোতে শোরগোল ছিল না, আচরণ বিধিমালা লংঘনেরও খবর পাওয়া যায়নি। গত নির্বাচনে অনলাইন ও অফলাইন দুভাবেই জমা দেওয়ার সুযোগ ছিল। তখন অনলাইনে তেমন সাড়া  মেলেনি।

তারা আরও জানান, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ীর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। কারণ জমা হওয়া মনোনয়নপত্র আগামীকাল বুধবার যাচাই করবেন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তারা। বাছাইয়ে বৈধ বা বাতিল হওয়া মনোনয়নপত্রের বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে ১৮-২০ এপ্রিল। ওইসব আপিলের ওপর শুনানি হবে ২১ এপ্রিল। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ২২ এপ্রিল। নির্বাচনি এই প্রক্রিয়ায় প্রার্থীর সংখ্যা আরও কমবে। তখন একক প্রার্থীর সংখ্যা বাড়তে পারে। তারা আরও জানান, ১৬টি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে দুজন করে প্রার্থী হয়েছেন। এসব উপজেলায় একজন প্রত্যাহার করলেই অপরজন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হবেন।

নির্বাচন কমিশন গত ২১ মার্চ ১৫২টি উপজেলা নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করে। তফশিল ঘোষণার পর কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলা দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে সরিয়ে নেওয়া হয়। আর নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাচন আইনি জটিলতায় স্থগিত করা হয়েছে। বাকি ১৫০টিতে ভোট হতে যাচ্ছে। এর মধ্যে ২২টিতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) এবং বাকি উপজেলাগুলোতে কাগজের ব্যালটে ভোটগ্রহণ হবে।

উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালায় দলীয় প্রতীক থাকলেও এবার প্রার্থী মনোনয়ন দেবে না বলে আগেই ঘোষণা দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এর মধ্য দিয়ে নির্বাচন দলীয় নেতাকর্মীদের জন্য উš§ুক্ত রাখা হয়। অপরদিকে নির্বাচন কমিশনও স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার বিধান শিথিল করে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে ২৫০ জন ভোটারের সমর্থনসূচক স্বাক্ষর জমা দেওয়ার বিধান বাতিল করা হয়। তবে জামানতের বিধানে কড়াকড়ি করা হয়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সুযোগ তৈরি হওয়ায় অনেক উপজেলায় বিপুলসংখ্যক প্রার্থী হয়েছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল ও সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলা চেয়ারম্যান পদে ১১ জন করে প্রার্থী হয়েছেন। নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলায় ১০ জন চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।

যেসব উপজেলায় প্রার্থী হয়েছেন বিএনপি ও জামায়াত নেতারা : আমাদের ব্যুরো, জেলা ও উপজেলা অফিস থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ৫ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২ জন মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছেন। এ উপজেলায় সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আতাউর রহমান মুকুল চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। বাকি প্রার্থীরা হলেনÑবর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এমএ রশিদ, মুছাপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও জেলা জাতীয় পার্টির সহসভাপতি মাকসুদ হোসেন, তার ছেলে মাহমুদুল হাসান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম আবু সুফিয়ান।

প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে বিএনপি নেতা আতাউর রহমান মুকুল বলেন, এবার দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হবে না। তাই আমি মনোনয়নপত্র দাখিল করেছি। আল্লাহতায়ালা যাকে নির্ধারণ করে রেখেছেন তিনিই নির্বাচিত হবেন। আমি জনগণের খেদমত করে যাচ্ছি। এটাই আমার মূল লক্ষ্য।

নাটোরের ধামইরহাট উপজেলায় বিএনপি নেতা মো. আয়েন উদ্দিন ডালিম; মহাদেবপুরে উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন; ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুরুজ্জামান লস্কর তপু; কুমিল্লার মেঘনায় উপজেলা বিএনপি সভাপতি মো. রমিজ উদ্দিন; একই উপজেলার নাঙ্গলকোটে উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মো. মাজহারুল ইসলাম; চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলায় বিএনপি নেতা মো. আশরাফ হোসেন আলিম ও তার ছেলে আব্দুল্লাহ আল রাইহান; ভোলাহাট উপজেলায় বিএনপির মোহাম্মদ বাবর আলী, মো. আনোয়ারুল ইসলাম ও ইয়াজদানী আলীম আল রাজী; ময়মনসিংহের ফুলপুরে পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এমরান হাসান পল্লব চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন।

একইভাবে নাটোর সদর উপজেলায় বিএনপি নেতা গোলাম সরোয়ার ও বিএনপি কর্মী সাবেক ভিপি মো. ইসতেয়াক আহম্মেদ (হিরা); একই জেলার নলডাঙ্গা উপজেলায় বিএনপির উপজেলা কমিটির সহ-সভাপতি সরদার আফজাল হোসেন; পিরোজপুরের ইন্দুরকানীতে উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ভাইস-চেয়ারম্যান ফায়জুল কবির তালুকদার; বান্দরবন সদর উপজেলায় জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আব্দুল কুদ্দুছ; নওগাঁর মহাদেবপুরে থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মো. সাজ্জাদ হোসেন; সিলেটের বিশ্বনাথে উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ও সাবেক ভাস চেয়ারম্যান গৌছ খান, যুক্তরাজ্য বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেবুল মিয়া ও যুক্তরাজ্য বিএনপি নেতা সফিক উদ্দিন চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন।
একইভাবে আরও অনেক উপজেলায় চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে দলটির অনেক নেতা প্রার্থী হয়েছেন।

জামায়াত : চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে জামায়াতে ইসলামীর উপজেলা আমির আব্দুর রশিদ পাটোয়ারী, নাটোরের ধামইরহাট উপজেলায় নায়েবে আমির মাওলানা মো. আতাউর রহমান, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা আমির ওলিউর রহমান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে সাবেক জামায়াত নেতা মো. সিরাজুল ইসলাম, কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় জেলা জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক সুজা উদ্দিন জোয়ার্দার, দিনাজপুরের বিরামপুরে জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির এনামুল হক, লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলায় জামায়াত নেতা হাবিবুর রহমান এবং সিলেটের বিশ্বনাথে উপজেলা আমির নিজাম উদ্দিন সিদ্দিকী চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন। এর বাইরে বেশ কয়েকটি উপজেলা নির্বাচনে জামায়াত নেতারা প্রার্থী হয়েছেন।

রাজনীতি

বাংলা নতুন বছর আমাদেরকে জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ, উগ্রবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রেরণা জোগাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রোববার বাংলা নববর্ষ উপলক্ষ্যে দেওয়া এক বাণীতে তিনি এ কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘শুভ নববর্ষ’ ১৪৩১। উৎসবমুখর বাংলা নববর্ষের এই দিনে আমি দেশবাসীসহ সব বাঙালিকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।’

তিনি বলেন, ‘পহেলা বৈশাখ বাংলা সনের প্রথম দিন। এটি সর্বজনীন উৎসব। এদিন আনন্দঘন পরিবেশে বরণ করে নেওয়া হয় নতুন বছরকে। আবহমানকাল ধরে নববর্ষের এই উৎসবে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সমগ্র জাতি জেগে ওঠে নবপ্রাণ স্পন্দনে, নব-অঙ্গীকারে। সারা বছরের দুঃখ-জরা, মলিনতা ও ব্যর্থতাকে ভুলে বাঙালি রচনা করে সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য, আনন্দ ও ভালোবাসার মেলবন্ধন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাঙালির চিরায়ত ঐতিহ্যে ‘পহেলা বৈশাখ’ বিশেষ স্থান দখল করে আছে। বাংলা নববর্ষ পালনের সূচনা হয় মূলত মুগল সম্রাট আকবরের সময় থেকে। কৃষিকাজের সুবিধার্থে সম্রাট আকবর ‘ফসলি সন’ হিসেবে বাংলা সন গণনার যে সূচনা করেন, তা কালের পরিক্রমায় সমগ্র বাঙালির কাছে অসাম্প্রদায়িক চেতনার স্মারক উৎসবে পরিণত হয়েছে। পহেলা বৈশাখ বাঙালিয়ানার প্রতিচ্ছবি। এই উদযাপন আমাদের শেকড়ের সন্ধান দেয়, এর মধ্য দিয়ে খুঁজে পাওয়া যায় জাতিসত্তার পরিচয়।’

তিনি বলেন, ‘বাঙালির প্রতিটি ঘরে, জনজীবনে এবং আর্থসামাজিক সংস্কৃতিতে পহেলা বৈশাখ এক অনন্য উৎসব। পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে হালখাতার পাশাপাশি যাত্রাগান, পালাগান, পুতুলনাচ, অঞ্চলভিত্তিক লোকসংগীত, খেলাধুলাসহ বিভিন্ন পসরা নিয়ে মেলার বর্ণিল আয়োজনের মাধ্যমে যেমন লোকজ-সংস্কৃতি প্রাণ ফিরে পায় তেমনি দেশের অর্থনীতি তথা ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমৃদ্ধ হয়, ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি আসে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পহেলা বৈশাখ পূর্ণপ্রাণ নিয়ে অবারিতভাবে বেড়ে ওঠার বাতায়ন। এটি ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতিকে ধারণ ও লালন করতে শেখায়। অসাম্প্রদায়িকতার চর্চা ও অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পহেলা বৈশাখ আমাদের মনে আনে নতুন তেজ। এ কারণেই আমরা দুর্বার প্রতিরোধে রুখে দিতে পেরেছি পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক অপশক্তিকে, যারা বাঙালির ঐতিহ্য নস্যাৎ করতে চেয়েছিল।

তিনি বলেন, ‘আত্মপরিচয় ও স্বীয় সংস্কৃতির শক্তিতে বলিয়ান হয়ে আমরা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম মুক্তির সংগ্রামে। সংস্কৃতি ও রাজনীতির মিলিত স্রোত পরিণত হয়েছিল স্বাধিকার ও স্বাধীনতার লড়াইয়ে। এভাবেই বিশ্বের বুকে অভ্যুদয় ঘটেছে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের।’

ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি লালনের মাধ্যমে বিশ্বসমাজে বাঙালি শ্রেষ্ঠ জাতি হয়ে উঠবে বলে আশা প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এরই ধারাবাহিকতায় ইউনেসকো ২০১৬ সালে পহেলা বৈশাখের ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’কে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। নববর্ষের-এ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি সারাবিশ্বের বাঙালির জন্য নিঃসন্দেহে বিরাট অর্জন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অসাম্প্রদায়িক, উদারনৈতিক, জাতীয়তাবাদী ও গণতন্ত্রের ভাবাদর্শে আজীবন যে সংগ্রাম করে গেছেন তার মূলমন্ত্র জাতিগত ঐতিহ্য ও অহংকার। এ কারণেই  বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন এবং দেশ পুনর্গঠনে কাজ করেছে তার অভিন্ন চেতনা। আমরা বীরের জাতি, এ জাতিকে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না। কাল থেকে কালান্তরের পথ পরিক্রমায় বাঙালির অর্জন ও অগ্রগতি চির ভাস্বর হয়ে থাকবে, এ আমার দৃঢ় বিশ্বাস।

তিনি বলেন, ‘সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ তথা উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে সক্ষম হব ইনশাআল্লাহ।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আসুন আমরা বিগত বছরের গ্লানি, দুঃখ-বেদনা, অসুন্দর ও অশুভকে ভুলে গিয়ে নতুন প্রত্যয়ে, নতুন উদ্যমে সামনে এগিয়ে চলি। সুখী, শান্তিময়, আনন্দপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ে তুলি। বাংলা নববর্ষ ১৪৩১ এই হোক আমাদের অঙ্গীকার। কবিগুরুর ভাষায়…
‘মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা,
অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।
রসের আবেশরাশি শুষ্ক করি দাও আসি,
আনো আনো আনো তব প্রলয়ের শাঁখ
মায়ার কুজ্ঝটিজাল যাক দূরে যাক।
এসো হে বৈশাখ এসো, এসো..