রাজনীতি

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান আমাদের সামনে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ে তোলার সুযোগ এনে দিয়েছে। এ সুযোগ যেন আমরা না হারাই। বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়াই হোক এবারের নববর্ষে আমাদের অঙ্গীকার।

বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ বা পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে দেশবাসীর উদ্দেশে দেওয়া এক শুভেচ্ছা বার্তায় তিনি এ কথা বলেন।

নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে দেশবাসীকে নতুন উদ্যমে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘পহেলা বৈশাখ সম্প্রীতির দিন, মহামিলনের দিন। আজকে সবাইকে আপন করে নেয়ার দিন। এবারের নববর্ষ, নতুন বাংলাদেশের প্রথম নববর্ষ। আসুন, আমরা বিগত বছরগুলির গ্লানি, দুঃখ-বেদনা, অসুন্দর ও অশুভকে ভুলে গিয়ে নতুন প্রত্যয়ে, নতুন উদ্যমে সামনের দিকে এগিয়ে চলি। চলুন, নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলি।’

বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রক্ষায় সবাইকে সক্রিয় ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন,‘বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রক্ষায় এবং তাকে এগিয়ে নিতে আমাদের সবাইকে সক্রিয় ভূমিকা রাখার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। আমাদের এসব ঐতিহ্য শুধু যেন নিজেদের মধ্যেই না থাকে, আমাদের সংস্কৃতি যেন আমরা ছড়িয়ে দিতে পারি বিশ্ব দরবারে। বছরের এই দিনটিতে আমরা সুযোগ পাই উৎসবমুখর পরিবেশে আমাদের সুদীর্ঘ ঐতিহ্যকে নতুন প্রজন্ম ও পৃথিবীর সামনে তুলে ধরতে।’

তিনি বলেন, পহেলা বৈশাখ আমাদের প্রাণের উৎসব, বাঙালির সর্বজনীন উৎসব। পুরো পৃথিবীতে যেখানে যেখানে বাঙালিরা আছেন আজ আমাদের সবার আনন্দের দিন, বর্ষ বরণের দিন।

‘ফসলি সন’ এর ইতিহাস তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলা সাল গণনা শুরু হয়েছিল কৃষিকাজের সুবিধার জন্য, ‘ফসলি সন’ হিসেবে। এখনো এদেশের কৃষকরা বাংলা তারিখের হিসেবেই বীজ বোনেন, ফসল তোলেন।
‘হালখাতা’কে বাংলা নববর্ষের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এখনকার আধুনিক সময়েও অনেকেই এই হালখাতার ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন বাংলাদেশের হাটে-বাজারে, শহরে-বন্দরে। নববর্ষের বৈশাখী মেলায় বাংলাদেশের জেলায় জেলায় উদ্যোক্তারা সারা দেশে ঐতিহ্যবাহী শীতল পাটি, মাটির হাঁড়ি-পাতিল, খেলনা, হাত পাখা ইত্যাদি তৈরি করে নিজেদের সৃজনশীলতাকে তুলে ধরেন এই দিনকে উপলক্ষ্য করে।

তিনি আরও বলেন, পাহাড় ও সমতলের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীও চৈত্র সংক্রান্তি ও নববর্ষে এবার বড় পরিসরে উৎসব উদযাপন করছে।

দেশবাসীকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, নববর্ষ ১৪৩২ আমাদের সবার জন্য শুভদিনের সূচনা করুক। নববর্ষ ১৪৩২ আমাদের সকলের জন্য নতুন ও গভীর আনন্দের উন্মোচন করুক, এই কামনা করছি।

তিনি নববর্ষের সকল আয়োজন ও উদ্যোগের সাফল্য কামনা করেন।

রাজনীতি

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) এবং বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)-এর নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেছেন, বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট ২০২৫ এ বিনিয়োগের অপার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘সময়ই বলে দেবে ইনভেস্টমেন্ট সামিট সফল হয়েছে কিনা।’

আজ রোববার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ‘বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট-২০২৫’ এর অর্জন নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আলম, বিডার হেড অফ বিজনেস ডেভেলপমেন্ট নাহিয়ান রহমান রচি এবং প্রধান উপদেষ্টার উপ প্রেস সচবি মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।

চৌধুরী আশিক বলেন, ‘এবারের বিনিয়োগ সম্মেলনে সরাসরি দুটি কোম্পানি হান্ডা ইন্ডাস্ট্রি  ও শপআপ মিলে ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ চুক্তি এবং ৬টি কোম্পানির সাথে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা হয়েছে। এর বাইরে আরও ২০-২৫টি কোম্পানি বিনিয়োগ করার জন্য আমাদের সাথে ক্লোজলি যোগাযোগ করেছে।’

তিনি বলেন, ‘তবে আমাদের এ সামিটের মূল উদ্দেশ্য ছিলো বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশ নিয়ে বিনিয়োগকারিদের মাঝে ইতিবাচক ধারণা তৈরি করা। যাতে তারা দেশে ফিরে গিয়ে বাংলাদেশের প্রকৃত অবস্থা অন্যদের কাছে তুলে ধরতে পারেন। এ লক্ষ্যেই আমাদের প্রোগ্রামগুলো আয়োজন করেছিলাম।’

বিডা প্রধান বলেন, এখন আমাদের কাজ হলো বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশকে সেল করা। এজন্য বিনিয়োগ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীদের ট্যাগ করে একটি পাইপলাইন তৈরি করা এবং তাদের কাছে বারবার ফেরত যাওয়া। আশা করছি ২০২৬ -২৭ সালের মধ্যে এ বিনিয়োগ সামিটের সফলতা  আসবে। তবে প্রতি বছরই আমাদের এ ধরনের সামিট আয়োজন করা উচিৎ। ৪ দিনের এ সম্মেলনে ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। ১০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ আসলেও আমরা বলবো এটি সফল। বিদেশিদের কাছে বাংলাদেশের সম্ভাবনা তুলে ধরাই ছিল সম্মেলনের প্রধান উদ্দেশ্য।

নাহিয়ান রহমান রচি বলেন, এবারের সম্মেলনে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বেশি ছিল। উদ্বোধনের দিন মোট ৭১০ জন অংশগ্রহণ করেন। তার মধ্যে ৫০টি দেশ থেকে ৪১৫ জন বিদেশি এবং ২৯৫ জন বাংলাদেশি ডেলিগেট অংশ নিয়েছেন। সংখ্যার দিক থেকে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ ৫৮ শতাংশ।

তিনি বলেন, ৪ দিনব্যাপী এ বিনিয়োগ সম্মেলনে ১৫০ টির মতো অফিসিয়াল দ্বিপাক্ষিক মিটিং হয়েছে। এছাড়াও বাণিজ্য উপদেষ্টা, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, এনবিআর চেয়ারম্যান, রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিসহ অনেকেই সারাদিন ভ্যানুতে উপস্থিত ছিলেন।

রাজনীতি

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা সব সময় বলে আসছি আলোচনার মধ্য দিয়ে, ঐক্যের মধ্য দিয়ে নতুন বাংলাদেশ তৈরি করতে চাই। আমাদের মধ্যে এই ঐক্য সম্ভব হবে এবং আমরা সফল হব।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আগামী ১৬ এপ্রিল বিএনপির বৈঠক ও নির্বাচনের রোডম্যাপ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন।

সিঙ্গাপুরে সস্ত্রীক এক সপ্তাহ চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে সোমবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে ঢাকার হযরত শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল।

এ সময় সাংবাদিকদের মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গোটা জাতি আশা করছে যে বাংলা ১৪৩২ সাল দেশের জন্য একটা নতুন দিগন্ত নিয়ে আসবে। বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের হৃদয় উদ্ভাসিত হবে নতুন সম্ভাবনার আনন্দে এটাই আমরা প্রত্যাশা করি। আমরা মনে করি অতীতের সব ধুলাবালি-জঞ্জাল উড়িয়ে দিয়ে এই বৈশাখ সমৃদ্ধ নতুন বাংলাদেশ সৃষ্টি করবে।’

ডিসেম্বরে নির্বাচন প্রশ্নে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এ সমস্যারও সমাধান হবে।

রাজনীতি

বাংলাদেশকে ব্যবসার জন্য সেরা জায়গা উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশে ব্যবসা নিয়ে আসুন এবং এর মাধ্যমে বিশ্ব বদলে দিতে ভূমিকা রাখুন।

‘বাংলাদেশ এমন একটি দেশ, যার বিশ্বকে বদলে দেওয়ার অভিনব সব ধারণা রয়েছে। এসব ধারণাকে বাস্তবে রুপ দিতে হবে। তাই আমরা আপনাদের আমন্ত্রণ জানাই, যেন আপনারা শুধু বাংলাদেশকে নয়, পুরো বিশ্বকেই বদলে দেওয়ার যাত্রায় যুক্ত হন।’

আজ বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে চারদিনব্যাপী ‘বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলন-২০২৫’ এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদানকালে প্রধান উপদেষ্টা একথা বলেন।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) এই সম্মেলনের আয়োজন করেছে।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আপনি যদি কোনো লক্ষ্য নিয়ে ব্যবসা করতে চান, তাহলে বাংলাদেশই আপনার সেই জায়গা।’

তিনি বলেন, বাংলাদেশ কাজ করে দেখায়, আর একবার কেউ শুরু করলে অন্যরাও তার অনুসরণ করে।

কীভাবে মানুষ ব্যবসার মাধ্যমে সুখী হয়, তার বর্ণনা করে তিনি বলেন, ‘টাকা উপার্জন করে মানুষ নিঃসন্দেহে আনন্দ বা সুখ পায়, কিন্তু অন্যকে সুখী করার মধ্যে অতিরিক্ত আনন্দ বা সুখ নিহিত রয়েছে।’

সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রমে ব্যবসায়ীদের যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘যদি আপনি বাংলাদেশে ব্যবসা করেন, তাহলে আপনি সুখ এবং অতিরিক্ত আনন্দ দুটিই পাবেন। কোনো খরচ ছাড়াই এই অতিরিক্ত আনন্দ আপনি লাভ করতে পারেন এবং এটি করে আপনি গর্বিত হবেন।’

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, তিনি শুধু বাংলাদেশ নয়, বরং পুরো এই অঞ্চলকেই দেখেন যেখানে বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি একসাথে অর্থ উপার্জন এবং মানুষের জীবন পরিবর্তনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

তিনি বলেন, ‘আপনাদের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান এই অতিরিক্ত সুখ বা আনন্দ উপভোগ করতে পারবে, যদি তারা তাদের প্রভাব মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারে।’

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য বিশ্ব বদলে দেওয়ার একটি শক্তিশালী হাতিয়ার এবং এর মাধ্যমে নতুন সভ্যতা গঠনের ওপর তিনি গুরুত্ব দেন।

তিনি বলেন, ‘আমি বলছি, আমরা ‘তিন শূন্য’র একটি পৃথিবী তৈরি করতে পারি। এটা সরকার দিয়ে নয়, ব্যবসার মাধ্যমে করা সম্ভব। কারণ এটা সরকারের কাজ নয়, বরং ব্যক্তিমাত্র, মানুষ হিসেবে আমাদের কাজ।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা মানুষ। আমরাই বিশ্বকে বদলে দিতে পারি।’

ব্যবসা-বাণিজ্য মানুষের হাতে একটি শক্তিশালী হাতিয়ার তুলে দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নতুন সভ্যতা হবে এমন একটি সভ্যতা যেখানে কার্বন নির্গমন থাকবে না। ‘আমরা তা করতে পারি। এটি হওয়া উচিত ব্যবসায়িক উদ্ভাবনী কার্যক্রমের মাধ্যমে।’

কার্বন নিঃসরণকে আত্মবিধ্বংসী ব্যবস্থা আখ্যা দিয়ে তিনি সম্পদ কেন্দ্রীকরণ না করার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, অর্থ উপার্জন আনন্দের হলেও, সম্পদের কেন্দ্রীকরণ মানবজাতির জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক। ‘এটি পুরো পৃথিবীকে ধ্বংস করে ফেলবে।’

তিনি শূন্য বেকারত্বের ধারণার প্রতিও গুরুত্ব দেন এবং বলেন, তরুণ প্রজন্ম প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী চিন্তার মাধ্যমে বিশ্বকে বদলে দিতে সক্ষম।

১৯৭৪ সালে বাংলাদেশের দুর্ভিক্ষের সময় মানুষের নিদারুণ কষ্টের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওই সময় প্রায় ১৫ লাখ মানুষ খাদ্যের অভাবে মৃত্যুবরণ করেন। তবে ১৯৭৪ সাল থেকে এই স্বল্প সময়ের যাত্রায় আমরা এক অভূতপূর্ব অবস্থানে চলে এসেছি। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের তিনি বলেন, আপনারা আমাদের এই অগ্রযাত্রায় সামিল হন।

অধ্যাপক ইউনূস ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে বাংলাদেশে দারিদ্র্য বিমোচন ও নারী ক্ষমতায়নের কথাও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে তুলে ধরেন।

রাজনীতি

জাতিসংঘের একাধিক প্রস্তাবের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ন্যায্য লক্ষ্যে বাংলাদেশ তার অটল সমর্থন অব্যাহত রাখবে।

আজ শুক্রবার তুরস্কে ‘আনাতোলিয়া কূটনীতি ফোরাম (এডিএফ)-২০২৫’ এর ফাঁকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রসিকিউটর করিম এ.এ. খানের সঙ্গে এক বৈঠকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবং তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম এই আশ্বাস দিয়েছেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বৈঠকে দুই উপদেষ্টা সাম্প্রতিক আগ্রাসনে ফিলিস্তিনের জনগণের দুর্দশায় গভীর সহানুভূতি প্রকাশ করেন। তারা রোহিঙ্গা সংকট ও গাজা পরিস্থিতি নিয়ে আইসিসি’র অবস্থানের জন্য সংস্থাটির প্রশংসা করেন।

দুই উপদেষ্টা রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সংঘটিত মানবতা বিরোধী অপরাধের ন্যায়বিচার ও সংকটের চূড়ান্ত সমাধানের জন্য জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন।

বৈঠকে বাংলাদেশ ও আইসিসি’র মধ্যে সব ধরনের সম্পৃক্ততার দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়।

আন্তর্জাতিক বিচার ব্যবস্থায় বাংলাদেশের অটল অবস্থানের প্রশংসা করেন আইসিসি’র প্রসিকিউটর করিম এ.এ. খান।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা রোম সংবিধি ও আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রতি বাংলাদেশের অব্যাহত সমর্থনের কথা ব্যক্ত করেন।

বিশেষজ্ঞ, শিক্ষাবিদ ও আইনজ্ঞদের প্রশিক্ষণ এবং দক্ষতা বৃদ্ধিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সঙ্গে দৃশ্যমান সহযোগিতা অন্বেষণে বাংলাদেশের আগ্রহের কথা জানান তৌহিদ হোসেন।

উভয় পক্ষই আগামী দিনে বিদ্যমান সম্পৃক্ততার মাত্রা আরো বাড়ানোর ব্যাপারে সম্মত হয়েছে।

তুরস্কে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এবং উভয় পক্ষের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠকে অংশ নেন।

‘বিভক্ত বিশ্বে কূটনীতি পুনরুদ্ধার’ প্রতিপাদ্য নিয়ে আজ তুরস্কের আনাতোলিয়ায় তিন দিনব্যাপী ‘আনাতোলিয়া কূটনীতি ফোরাম (এডিএফ)-২০২৫’ শুরু হয়েছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের পৃষ্ঠপোষকতায় দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই ফোরামের আয়োজন করেছে।

বিশ্ব নেতা, নীতিনির্ধারক, শিক্ষাবিদ, ব্যবসায়িক বিশেষজ্ঞদের পাশাপাশি গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের একত্রিত করেছে এডিএফ। এই ফোরামের মাধ্যমে কীভাবে কূটনীতির পরিস্থিতির মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া যায় এবং একটি বিভক্ত বিশ্বে সম্মিলিত পদক্ষেপের একটি সাধারণ ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায়, তা অনুসন্ধান করা হবে।

২০ জনেরও বেশি রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান, ৫০ জনেরও বেশি পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ৭০ জনেরও বেশি মন্ত্রী এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রায় ৬০ জন সিনিয়র প্রতিনিধি, পাশাপাশি শিক্ষার্থীসহ ৪ হাজার জনেরও বেশি অতিথি ফোরামে অংশগ্রহণ করেছেন।

রাজনীতি

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিএনপি সরকারে এলে প্রথম ১৮ মাসে এক কোটি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। জনগণের ঘাড় থেকে বাড়তি করের লাগাম টেনে ধরা হবে।

বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে এ তথ্য জানান তিনি। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) আয়োজনে বিনিয়োগ সম্মেলন ২০২৫-এ অংশ নিয়ে বিএনপি এ পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ২০৩৪ সালে জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা এক ট্রিলিয়ন ডলার নির্ধারণ করেছে বিএনপি। এ ছাড়া জনগণের ঘাড় থেকে বাড়তি করের লাগাম টেনে ধরা, মানুষের মন থেকে করের ভয় দূর করে কীভাবে কর আহরণ বাড়ানো যায় তা নিয়েও দলটি কাজ করতে চায়।

‘এক ট্রিলিয়ন ডলার ইকোনমি’ শিরোনামে দেওয়া ওই পোস্টে মির্জা ফখরুল বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করতে পারলে প্রথম ১৮ মাসে এক কোটি কর্মসংস্থান বা চাকরির ব্যবস্থা করবে। প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই)/মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) লক্ষ্যমাত্রার শূন্য দশমিক ৪৫ শতাংশ থেকে জিডিপির দুই দশমিক পাঁচ শতাংশে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে বিএনপি।

বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ বা এফডিআইকে জনপ্রিয় করতে বিএনপি ১১টি রেগুলেটরি পরিবর্তনের প্রস্তাব করেছে বলেও পোস্টে উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল। এর মধ্যে আটটি প্রস্তাবের কথা তুলে ধরেছেন তিনি। এগুলো হলো- বিডাকে কার্যকর করা, ভিসা বা ওয়ার্ক পারমিট বিধির আধুনিকীকরণ, বিনিয়োগকারীদের জন্য ২৪দ্ধ৭ (দিনে ২৪ ঘণ্টা ও সপ্তাহে সাত দিন) সেবা চালু করা, স্বয়ংক্রিয় মুনাফা প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা, স্থানীয়ভাবে দক্ষ জনশক্তির ব্যবস্থা করা, বিনিয়োগকারীদের নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের সঙ্গে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, মানবসম্পদের কর্মদক্ষতা বাড়ানোর ব্যবস্থা নেওয়া এবং প্রকৃত প্রশিক্ষণ ও প্রণোদনার ব্যবস্থা করে বৈদেশিক কর্মসংস্থানের পরিমাণ ও আওতা বাড়ানো।

সরকার গঠন করতে পারলে দেশের মানবসম্পদের কর্মদক্ষতা বাড়ানোর ব্যবস্থা নেওয়া, প্রকৃত প্রশিক্ষণ ও প্রণোদনার ব্যবস্থা করে বৈদেশিক কর্মসংস্থানের পরিমাণ ও আওতা বাড়ানোর জন্য বিএনপি অতীতের চেয়েও ব্যাপক সফলতা অর্জন করতে চায় বলে জানান মির্জা ফখরুল।

পোস্টে তিনি জানান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিনিয়োগ সম্মেলন উপলক্ষে এক শুভেচ্ছা বার্তায় তিনটি বিষয় বলেছেন। এগুলো হলো- ঐক্যই ভবিষ্যৎ জাতীয় উন্নয়নের সোপান, এফডিআই আকৃষ্ট করতে জিয়াউর রহমানের সরকার আইন করেছিল এবং খালেদা জিয়ার সরকারগুলোর বিনিয়োগবান্ধব নীতি ছিল।

রাজনীতি

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ব্যাংককে শুক্রবার দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছেন। দক্ষিণ এশিয়ার প্রধানতম দুই দেশের সরকার প্রধান পারস্পরিক শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে খোলামনে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

দুই সরকার প্রধানের ৪০ মিনিটব্যাপী আলোচনা ছিল খোলামেলা, ফলপ্রসূ এবং গঠনমূলক।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়। আমাদের দুটি দেশের বন্ধুত্ব সুদৃঢ় ইতিহাস, ভৌগলিক নৈকট্য এবং সাংস্কৃতিক সাদৃশ্যের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। ১৯৭১ সালের আমাদের কঠিন সময়ে ভারত সরকার ও জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থনের জন্য আমরা চিরকৃতজ্ঞ।’

যদিও এটি দুই নেতার প্রথম সরাসরি বৈঠক, তবে অধ্যাপক ইউনূস জানান, গত আট মাসে দুই দেশের মধ্যে বহুবার দ্বিপাক্ষিক যোগাযোগ হয়েছে।

দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দুই দেশের জনগণের কল্যাণে সম্পর্ককে সঠিক পথে এগিয়ে নিতে আমরা আপনার সঙ্গে একযোগে কাজ করতে চাই।’

বিমসটেকের নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে অধ্যাপক ইউনূস সাত সদস্য দেশের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির জন্য ভারতের সমর্থন চান। তিনি গঙ্গা পানিবণ্টন চুক্তি নবায়নের আলোচনা এবং তিস্তা পানিবণ্টন চুক্তির চূড়ান্তকরণের আহ্বান জানান।

বিমসটেকের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করায় অধ্যাপক ইউনূসকে অভিনন্দন জানান এবং ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেন, ভারত সবসময় বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে।

তিনি উল্লেখ করেন, দুই প্রতিবেশী দেশের ইতিহাস বাংলাদেশ সৃষ্টির সময় থেকেই অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত।

প্রধানমন্ত্রী মোদি অধ্যাপক ইউনূসের আন্তর্জাতিক মর্যাদার কথা স্মরণ করে বলেন, ভারত সর্বদা একটি প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের পক্ষে থাকবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ভারত বাংলাদেশে কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করে না আমাদের সম্পর্ক জনগণের সঙ্গে।

অধ্যাপক ইউনূস শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের বিষয়ে ভারতের অবস্থান জানতে চান। তিনি বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী মিডিয়ার মাধ্যমে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন, যা ভারতের আতিথেয়তার অপব্যবহার বলে মনে হয়। শেখ হাসিনা অন্তর্বর্তী সরকার সম্পর্কে মিথ্যা ও উসকানিমূলক অভিযোগ করে চলেছেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা ভারত সরকারকে অনুরোধ করছি যে, আপনার দেশে অবস্থানকালে তাকে এ ধরনের বক্তব্য থেকে বিরত রাখার জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।

অধ্যাপক ইউনূস জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করেন, যা ২০২৪ সালের ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত নিরাপত্তা বাহিনী ও সশস্ত্র আওয়ামী লীগ কর্মীদের দ্বারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ দিয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা জানান, প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- গণঅভ্যুত্থানের সময় ১ হাজার ৪০০ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে প্রায় ১৩ শতাংশই শিশু। প্রতিবেদনটি এটাও জানায়- হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন এবং অমানবিক কার্যকলাপের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে।

জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী নিজে নিরাপত্তা বাহিনীকে আন্দোলনকারীদের হত্যা ও ‘নেতাদের গ্রেফতার করে লাশ গুম করার’ নির্দেশ দেন।

প্রধানমন্ত্রী মোদি শেখ হাসিনার বক্তব্য নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, ভারতের সম্পর্ক কোনো ব্যক্তি বা দলের সঙ্গে নয়, বরং দেশের সঙ্গে।

অধ্যাপক ইউনূস সীমান্তে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টিও উত্থাপন করেন এবং বলেন, এ ধরনের মৃত্যু রোধে যৌথভাবে কাজ করলে তা শুধু পরিবারগুলোর বেদনা কমাবে না, বরং দুই দেশের মধ্যে আস্থা ও সম্পর্ক আরও দৃঢ় করবে।

তিনি বলেন, ‘আমি প্রতিবার এসব মৃত্যুতে কষ্ট অনুভব করি’। তিনি অনুরোধ জানান, ভারত যেন এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে উপায় খুঁজে বের করে।

প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, ভারতীয় সীমান্তরক্ষীরা শুধুমাত্র আত্মরক্ষার জন্য গুলি চালায় এবং মৃত্যুর ঘটনাগুলো ভারতের ভেতরেই ঘটে। উভয় নেতা বিষয়টি নিয়ে একসঙ্গে কাজ করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

বিমসটেকের বাংলাদেশের চেয়ারম্যানশিপের বিষয়ে অধ্যাপক ইউনূস আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিমসটেকের দৃশ্যমানতা বাড়াতে চায় এবং এই সংস্থাকে একটি কার্যকর ও প্রাণবন্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে চায়, যা এই অঞ্চলের জনগণের প্রত্যাশা পূরণে সহায়তা করবে এবং বিশ্বব্যাপী পণ্য আমদানি-রপ্তানির একটি দক্ষ পথ তৈরি করবে।

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদির উদ্বেগের জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার যেসব প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, তা অনেকটাই অতিরঞ্জিত এবং ‘এর বেশিরভাগই ভুয়া খবর’। যেসব হামলার অভিযোগ এসেছে, তা স্বচক্ষে যাচাই করার জন্য তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে সাংবাদিক পাঠানোর অনুরোধ জানান।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তিনি দেশে ধর্মীয় ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার প্রতিটি ঘটনা নজরদারির আওতায় আনতে একটি কার্যকর ব্যবস্থা প্রচলন করেছেন এবং তার সরকার এমন যেকোনো ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।

দুই নেতা তাদের খোলামেলা ও ফলপ্রসূ সংলাপের সমাপ্তি টানেন পরস্পরের সুস্বাস্থ্য ও মঙ্গল কামনা করে এবং উভয় দেশের জনগণের শান্তি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির জন্য শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

বৈঠকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমান, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালসহ অন্যান্য জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা।

শেখ হাসিনাকে ফেরত দিন

সীমান্ত হত্যা, গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তির নবায়ন ও তিস্তা নিয়ে আলোচনা * জনগণের কল্যাণে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে চান ড. ইউনূস * সম্পর্ক খারাপ হয়, এমন বক্তব্য পরিহারের আহ্বান নরেন্দ্র মোদির

অনেক জল্পনাকল্পনার পর অবশেষে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রথম দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়েছে বাংলাদেশ। এছাড়াও ভারতে বসে হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্য, সীমান্ত হত্যা, গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তির নবায়ন, তিস্তার পানিবণ্টনসহ বিভিন্ন বিষয় আলোচনায় তুলেছেন ড. ইউনূস। বৈঠকে বাংলাদেশের সঙ্গে একটি ইতিবাচক ও গঠনমূলক সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ভারতের আকাঙ্ক্ষার কথা জানিয়েছেন মোদি। পাশাপাশি তিনি সীমান্ত সুরক্ষা, অবৈধ অনুপ্রবেশ প্রতিরোধ, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা এবং তাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত সহিংস ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দেন। নরেন্দ্র মোদি গণতান্ত্রিক, স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ, প্রগতিশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ গঠনে ভারতের সমর্থনের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।

থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের সাংরিলা হোটেলে শুক্রবার বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। দুই প্রতিবেশী দেশের সরকারপ্রধান আধা ঘণ্টারও বেশি সময় দুদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন। বৈঠকে ড. ইউনূস ১০ বছর আগের কথা মনে করিয়ে মোদিকে একটি ছবি উপহার দিয়েছেন।

অধ্যাপক ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়। আমাদের দুটি দেশের বন্ধুত্ব সুদৃঢ় ইতিহাস, ভৌগোলিক নৈকট্য এবং সাংস্কৃতিক সাদৃশ্যের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। ১৯৭১ সালে আমাদের কঠিন সময়ে ভারত সরকার ও জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থনের জন্য আমরা চিরকৃতজ্ঞ।

দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বেশকিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দুই দেশের জনগণের কল্যাণে সম্পর্ক সঠিক পথে এগিয়ে নিতে আমরা আপনার সঙ্গে একযোগে কাজ করতে চাই। বিমসটেকের নতুন চেয়ারম্যান হিসাবে অধ্যাপক ড. ইউনূস সাত সদস্য দেশের মধ্যে মুক্তবাণিজ্য চুক্তির জন্য ভারতের সমর্থন চান। তিনি গঙ্গা পানিবণ্টন চুক্তি নবায়নের আলোচনা এবং তিস্তা পানিবণ্টন চুক্তি চূড়ান্তকরণের আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিমসটেকের চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করায় অধ্যাপক ড. ইউনূসকে অভিনন্দন জানান এবং ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা জানান। নরেন্দ্র মোদি বলেন, ভারত সবসময় বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। তিনি উল্লেখ করেন, দুই প্রতিবেশী দেশের ইতিহাস বাংলাদেশ সৃষ্টির সময় থেকেই অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।

প্রধানমন্ত্রী মোদি অধ্যাপক ইউনূসের আন্তর্জাতিক মর্যাদার কথা স্মরণ করে বলেন, ভারত সর্বদা একটি প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের পক্ষে থাকবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ভারত বাংলাদেশে কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করে না। আমাদের সম্পর্ক জনগণের সঙ্গে।

অধ্যাপক ইউনূস শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের বিষয়ে ভারতের অবস্থান জানতে চান। তিনি বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী মিডিয়ার মাধ্যমে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন, যা ভারতের আতিথেয়তার অপব্যবহার বলে মনে হয়।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, শেখ হাসিনা অন্তর্বর্তী সরকার সম্পর্কে মিথ্যা ও উসকানিমূলক অভিযোগ করে চলেছেন। তিনি বলেন, আমরা ভারত সরকারকে অনুরোধ করছি যে, আপনার দেশে অবস্থানকালে তাকে এ ধরনের বক্তব্য থেকে বিরত রাখার জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।

অধ্যাপক ইউনূস জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করেন, যা ২০২৪ সালের ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত নিরাপত্তা বাহিনী ও সশস্ত্র আওয়ামী লীগ কর্মীদের দ্বারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ দিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শেখ হাসিনার বক্তব্য নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, ভারতের সম্পর্ক কোনো ব্যক্তি বা দলের সঙ্গে নয়, বরং দেশের সঙ্গে।

অধ্যাপক ইউনূস সীমান্তে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টিও উত্থাপন করেন এবং বলেন, এ ধরনের মৃত্যু রোধে যৌথভাবে কাজ করলে তা শুধু পরিবারগুলোর বেদনা কমাবে না, বরং দুই দেশের মধ্যে আস্থা ও সম্পর্ক আরও দৃঢ় করবে। তিনি বলেন, আমি প্রতিবার এসব মৃত্যুতে কষ্ট অনুভব করি। তিনি অনুরোধ জানান, ভারত যেন এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে উপায় খুঁজে বের করে।

প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, ভারতীয় সীমান্তরক্ষীরা শুধু আত্মরক্ষার জন্য গুলি চালায় এবং মৃত্যুর ঘটনাগুলো ভারতের ভেতরেই ঘটে। উভয় নেতা বিষয়টি নিয়ে একসঙ্গে কাজ করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদির উদ্বেগের জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার যেসব প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, তা অনেকটাই অতিরঞ্জিত এবং ‘এর বেশির ভাগই ভুয়া খবর’।

যেসব হামলার অভিযোগ এসেছে, তা স্বচক্ষে যাচাই করার জন্য তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে সাংবাদিক পাঠানোর অনুরোধ জানান।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তিনি দেশে ধর্মীয় ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার প্রতিটি ঘটনা নজরদারির আওতায় আনতে একটি কার্যকর ব্যবস্থা প্রচলন করেছেন এবং তার সরকার এমন যে কোনো ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।

বৈঠকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমান, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালসহ অন্য জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, দুই দেশের সরকারপ্রধানের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকটি অত্যন্ত গঠনমূলক ও ফলপ্রসূ হয়েছে। তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট যত ইস্যু আছে, এর সবকটি নিয়ে কথা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা আমাদের সব বিষয় আলোচনায় তুলেছেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ, ভারতে বসে তিনি যেসব উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন সে প্রসঙ্গ, সীমান্ত হত্যা বন্ধ, গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তির নবায়ন, তিস্তা চুক্তির প্রসঙ্গ এসেছে।

বৈঠক নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রিও। তিনি জানান, ড. ইউনূসের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ওই সময় মোদি বাংলাদেশে হিন্দুসহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিয়ে ভারতের উদ্বেগের বিষয়টি উত্থাপন করেছেন। এর পাশাপাশি শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন বিক্রম মিশ্রি।

ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদি গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল, শান্তিপূর্ণ, স্থিতিশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক, বাংলাদেশের প্রতি তার সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি অধ্যাপক ইউনূসকে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের ইতিবাচক ও গঠনমূলক সম্পর্ক তৈরির আকাঙ্ক্ষার কথা জানিয়েছেন। এছাড়া (দুই দেশের সম্পর্কে প্রভাব ফেলে) এমন কথাবার্তা এড়িয়ে চলার অনুরোধ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

দুই নেতার মধ্যে সীমান্ত নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলেও জানান বিক্রম মিশ্রি। তিনি বলেছেন, সীমান্তের নিরাপত্তা রক্ষায় সীমান্ত আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকানো জরুরি বলে জানান মোদি।

শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ নিয়ে আলোচনা হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে মিশ্রি বলেন, বাংলাদেশ এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক পত্র দিয়েছে। তবে এ মুহূর্তে এর চেয়ে বেশি বলা তার জন্য ঠিক হবে না বলে মন্তব্য করেন ভারতীয় এ কূটনীতিক।

এদিকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মোদি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের প্রতি ভারত সরকারের জনগণকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গির কথা উল্লেখ করে বলেছেন, দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা জনগণের জন্য বাস্তবসম্মত সুফল বয়ে এনেছে। এমন কোনো বক্তব্য বা প্রচার এড়িয়ে চলা উচিত, যা পরিবেশকে নষ্ট করতে পারে। সেই সঙ্গে সীমান্ত সুরক্ষার বিষয়ে তিনি জোর দিয়ে বলেন, আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করা এবং বিশেষ করে রাতে অবৈধ অনুপ্রবেশ প্রতিরোধ করা জরুরি। দ্বিপাক্ষিক সংলাপের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো পর্যালোচনা এবং সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য বিদ্যমান প্রক্রিয়া সক্রিয় রাখা যেতে পারে। পাশাপাশি নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সংঘটিত সহিংস ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের প্রয়োজনীয়তার ওপরও গুরুত্ব দেন তিনি।

মোদিকে ছবি উপহার ড. ইউনূসের : প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে এক দশক আগের স্মৃতিময় একটি ছবি উপহার দিয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানিয়েছেন, ছবিটি ২০১৫ সালের ৩ জানুয়ারি মুম্বাইয়ে অনুষ্ঠিত ১০২তম ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসে অধ্যাপক ইউনূসকে স্বর্ণপদক প্রদানের সময়কার।

রাজনীতি

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার কার্যক্রম শুরু করেছে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের তরুণ প্রজন্ম ও দেশবাসী বাংলাদেশের ভবিষ্যত নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করতে অসাধারণ সংকল্প ও শক্তি প্রদর্শন করেছে। জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধারে আমরা গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছি।’

প্রধান উপদেষ্টা আজ বৃহস্পতিবার চীনের হাইনানে বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া (বিএফএ) সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে ভাষণ দেওয়ার সময় এ কথা বলেন।

চলমান সংস্কার কর্মসূচির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘স্বাধীন কমিশন গঠন করা হয়েছে যাতে নির্বাচনী ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, বেসামরিক প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে সংস্কার আনা যায়।’

এই সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়িত হলে আমাদের জাতির একটি মৌলিক রূপান্তর সাধিত হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা যখন একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে যাচ্ছি, তখন এশিয়ার অন্যান্য দেশের মতো আমরাও একাধিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছি।’

বিশ্বব্যাপী আর্থিক বাজারের অস্থিরতা, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, কূটনৈতিক উত্তেজনা এবং বাণিজ্য বিঘ্নতা বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতা তৈরি করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘সুদের হার বৃদ্ধি ও ঋণ পরিষেবা ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় এশিয়ার ঋণ সংকট আরও গভীর হচ্ছে।’

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে ধীরগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী ২০৩০ এজেন্ডার প্রতি প্রতিশ্রুতি থাকা সত্ত্বেও অগ্রগতি খুব ধীর গতিতে হচ্ছে। এখন পর্যন্ত মাত্র ২৪ শতাংশ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জিত হয়েছে।’

তিনি বলেন, উন্নয়নশীল এশীয় দেশগুলো প্রতি বছর ২.৫ থেকে ৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার এসডিজি অর্থায়নের ঘাটতির সম্মুখীন হচ্ছে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এসডিজি অর্থায়নের বাইরেও এশিয়াকে ব্যাপক পরিমাণে অবকাঠামো বিনিয়োগ ও দায়িত্বশীল অর্থায়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক বৈচিত্র্য আনতে হবে।

দুর্নীতি ও আর্থিক অপচয় রোধের আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে দুর্নীতি ও অবৈধ অর্থপ্রবাহের শিকার।

তিনি উল্লেখ করেন, এই ধরনের দুর্নীতি ও আর্থিক অনিয়মের কারণে উন্নয়নশীল দেশগুলো প্রতি বছর প্রায় ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতির সম্মুখীন হয়, যা তারা আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহায়তা হিসেবে যে অর্থ পায় তার চেয়ে বহুগুণ বেশি।

তিনি বলেন, ‘এশিয়াকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সম্পদ পুনরুদ্ধার ও পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার জন্য একটি বহুপাক্ষিক মধ্যস্থতা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।’

প্রধান উপদেষ্টা আরো বলেন, ‘খাদ্য নিরাপত্তা ক্রমবর্ধমান চাপে রয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়ার কারণে নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো কঠিন সময় পার করছে।’

তিনি আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ এই সংকটকে আরও গভীরতর করছে। ‘খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থা শক্তিশালী করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ,’ তিনি উল্লেখ করেন।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘জ্বালানি নিরাপত্তা গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষত জ্বালানি আমদানিকারক উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য। জ্বালানি সরবরাহ ব্যাহত হলে মূল্যস্ফীতি, অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং ঋণ সংকট বৃদ্ধি পায়।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই টেকসই জ্বালানি সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। নবায়নযোগ্য শক্তিতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।’

প্রধান উপদেষ্টা মানবসম্পদ উন্নয়নে স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় বিনিয়োগের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

তিনি বলেন, ‘যেসব দেশ সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবায় বিনিয়োগ করে, তারা অর্থনৈতিক উৎপাদনশীলতার দিক থেকে ভালো ফল পায়।’

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমাদের তরুণ প্রজন্মকে ভবিষ্যতের চাকরির বাজারের জন্য প্রস্তুত করতে ডিজিটাল শিক্ষা ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের প্রসার ঘটাতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তন তীব্রতর হচ্ছে, ঋণের বোঝা অসহনীয় হয়ে উঠছে এবং মানবিক সংকট বাড়ছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘উন্নয়ন সহযোগিতার জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা দুর্বল হয়ে পড়ছে, এবং বিশ্ব এখন সম্মিলিত পদক্ষেপের অভাবের কারণে একটি বিপজ্জনক পরিস্থিতির সম্মুখীন।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বিশ্বের ৬০ শতাংশ জনসংখ্যা এবং ৫৫ শতাংশ বিশ্ব জিডিপি ধারণকারী এশিয়া এই পরিবর্তনগুলোর কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।’

‘নতুন নিয়ম, বিধিনিষেধ এবং প্রযুক্তি সরকার পরিচালনা ও অর্থনৈতিক নীতিকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করছে,’ তিনি বলেন।

তিনি আরও বলেন, ‘এক দশক আগে যে নীতিগুলো কার্যকর ছিল, সেগুলো আর প্রাসঙ্গিক নয়। আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা এখন আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি প্রয়োজন।’

সম্মেলনে বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়ার মহাসচিব ঝাং জুন, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব ও বোয়াও ফোরামের চেয়ারম্যান বান কি-মুন এবং চীনের স্টেট কাউন্সিলের নির্বাহী উপ-প্রধানমন্ত্রী ডিং জুয়েশিয়াং বক্তব্য রাখেন।

রাজনীতি

ব্যাংককে বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রথম দ্বিপক্ষীয় বৈঠককে ‘আশার আলো’ হিসেবে দেখছে বিএনপি।

দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিমসটেকে সাইডলাইন বৈঠক হয়েছে, এটা (বৈঠক) খুব আনন্দের কথা। আমরা মনে করি যে, ভূ-রাজনীতি এবং বর্তমান বিশ্ব রাজনীতির যে প্রেক্ষাপট এবং বাংলাদেশ-ভারতের এ অঞ্চলের যে প্রেক্ষাপট, সেই প্রেক্ষাপটে আমাদের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সাহেবের বৈঠকটা আমাদের সামনে একটা আশার আলো তৈরি করেছে।

শুক্রবার সন্ধ্যায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলটির মহাসচিব সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দুই দেশের শীর্ষ নেতাদের বৈঠক নিয়ে এরকমই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।

তিনি বলেন, ভারত এবং বাংলাদেশের সম্পর্কের মধ্যে যে একটা বিটারনেস (তিক্ততা) তৈরি হয়েছিল, সেটি যেন আর বেশি সামনে না যায় অথবা এটা যেন কমে আসে। সেখানে একটা সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমি যতদূর দেখেছি, তাতে করে আমার মনে হয়েছে এ ব্যাপারে দুজনই যথেষ্ট আন্তরিক এবং এটা নিসন্দেহে বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশের মানুষেরই উপকার করবে।

শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুরে ব্যাংককে বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর প্রথম দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়। আধা ঘণ্টা স্থায়ী ওই বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণসহ বিভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় তুলে ধরা হয় বলে বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।

এদিকে গুলশান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার আগে ক্রীড়াঙ্গনের কর্মকর্তা, সংগঠন এবং ক্রীড়াবিদদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন বিএনপি মহাসচিব। এ সময়ে মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক ও জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শরীফুল আলম উপস্থিত ছিলেন।

সংগঠন ও ক্রীড়াবিদদের মধ্যে ছিলেন- মাহবুবুল আনাম, রফিকুল ইসলাম বাবু, রুম্মন বিন ওয়ালি সাব্বির, নিয়ামুর রশীদ রাহুল, মো. আশরাফুল, হাবিবুল বাশার সুমন, রিয়াজ আহমেদ, ইমতিয়াজ আহমেদ নকীব, আবু দাউদ শামসুদ্দোজা চৌধুরী ডন, মাইশিকুর রহমান রিয়াল, ফাহিম সিনহা, কাজী মহিউদ্দিন বুলবুল, সেলিম শাহেদ, সৈয়দ বোরহানুল হোসেন পাপ্পু, আকরাম হোসেন সবুজ, ইব্রাহিম খলিল প্রমুখ।

রাজনীতি

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ রাজনীতির মাঠে থাকবে কি না কিংবা আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কি না- সেটি এখন অন্যতম চর্চিত বিষয়। এ নিয়ে আছে নানা মহলের নানাবিধ চেষ্টা-প্রচেষ্টা, বিতর্ক-সমালোচনা। আওয়ামী লীগ নিজেরাই এখন ছন্নছাড়া অবস্থায়। এরই মধ্যে আলোচনায় এসেছে ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ বা পরিশুদ্ধ আওয়ামী লীগ নামে দলটির পুনর্বাসন।

কিন্তু আওয়ামী লীগ কি এভাবে মাঠে থাকতে চায়? জবাবে দলটির নেতারা বলেন, আওয়ামী লীগকে রিফাইনের দায়িত্ব যারা নিয়েছেন, তারা কি আওয়ামী লীগ করেন? না করলে তারা কীভাবে আওয়ামী লীগকে রিফাইন করবেন? অতীতে এমন উদ্যোগ অনেকে নিয়েছে, সফল হয়নি। আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই ঐক্যবদ্ধ। অন্য কারও নেতৃত্ব মানবে না।

বিষয়টি নিয়ে গত কয়েক দিন জলঘোলা কম হয়নি। সেনাপ্রধানের সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাদের আলোচনা ছিল ‘টপ অব দ্য কান্ট্রি’। গত ২১ মার্চ ‘১১ই মার্চ, সময় দুপুর ২:৩০’ ক্যান্টনমেন্টের এক বৈঠকের উদ্ধৃতি দিয়ে এনসিপি নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ ফেসবুকে লেখেন, ‘কিছুদিন আগে আমি আপনাদের বলেছিলাম যে, ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ নামে নতুন একটি ষড়যন্ত্র নিয়ে আসার পরিকল্পনা চলছে। এই পরিকল্পনা পুরোপুরি ভারতের। সাবের হোসেন চৌধুরী, শিরীন শারমিন চৌধুরী, তাপসকে সামনে রেখে এই পরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে। আমিসহ আরও দুজনের কাছে ক্যান্টনমেন্ট থেকে এই পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয় ১১ মার্চ দুপুর ২:৩০ এ। আমাদের প্রস্তাব দেওয়া হয়, আসন সমঝোতার বিনিময়ে আমরা যেন এই প্রস্তাব মেনে নিই। আমাদের বলা হয়- ইতোমধ্যে একাধিক রাজনৈতিক দলকেও এ প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে- তারা শর্তসাপেক্ষে আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনে রাজি হয়েছে। একটি বিরোধীদল থাকার চেয়ে একটি দুর্বল আওয়ামী লীগসহ একাধিক বিরোধীদল থাকা নাকি ভালো। ফলশ্রুতিতে আপনি দেখবেন গত দুদিন মিডিয়ায় আওয়ামী লীগের পক্ষে একাধিক রাজনীতিবিদ বয়ান দেওয়া শুরু করেছে।’

তিনি লেখেন, ‘আমাদের আরও বলা হয়- রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ যাদের দিয়ে করা হবে, তারা এপ্রিল-মে থেকে শেখ পরিবারের অপরাধ স্বীকার করবে, হাসিনাকে অস্বীকার করবে এবং তারা বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ করবে এমন প্রতিশ্রুতি নিয়ে জনগণের সামনে হাজির হবে। আমাদের এ প্রস্তাব দেওয়া হলে আমরা তৎক্ষণাৎ এর বিরোধিতা করি এবং জানাই যে, আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের পরিকল্পনা বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগের বিচার নিয়ে কাজ করুন। এর উত্তরে আমাদের বলা হয়, আওয়ামী লীগকে ফিরতে কোনো ধরনের বাধা দিলে দেশে যে সংকট সৃষ্টি হবে, তার দায়ভার আমাদের নিতে হবে এবং ‘আওয়ামী লীগ মাস্ট কাম ব্যাক’।’

এরকমভাবে রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ করতে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ এবং জিয়াউর রহমানও চেষ্টা করেছেন। আসলে যেটা থাকার সেটাই থেকে গেছে। আওয়ামী লীগকে কেউ রিফাইন করতে পারবে না। আওয়ামী লীগ রিফাইন্ড করতে হলে আওয়ামী লীগই করবে, কাউন্সিলের মাধ্যমে।- আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী

এ স্ট্যাটাসের পর উত্তপ্ত হয়ে ওঠে রাজনৈতিক অঙ্গন। পরে এ বিষয়ে সুইডেনভিত্তিক নেত্র নিউজকে প্রতিক্রিয়া জানায় সেনাবাহিনী সদরদপ্তর। সেনাসদর নিশ্চিত করে, সেনাপ্রধানের সঙ্গেই ওই বৈঠকটি হয়েছিল। তবে ওই বৈঠক ছাত্রনেতাদের আগ্রহেই হয়।

সেনাসদপ্তর জানায়, ‘হাসনাত আব্দুল্লাহ এবং সারজিস আলম দীর্ঘদিন যাবৎ সেনাবাহিনী প্রধানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের জন্য ইচ্ছা পোষণ করছিলেন। পরবর্তীসময়ে সারজিস আলম ১১ মার্চ ২০২৫ তারিখে সেনাপ্রধানের মিলিটারি অ্যাডভাইজরকে ফোন দিয়ে সেনাপ্রধানের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য সময় চান। এর পরিপ্রেক্ষিতে মিলিটারি অ্যাডভাইজার তাদের সেনাসদরে আসার জন্য বলেন।’

‘অতঃপর ১১ মার্চ দুপুরে সারজিস আলম এবং হাসনাত আব্দুল্লাহ সেনাসদরে না এসে সরাসরি সেনাভবনে সেনাবাহিনী প্রধানের সঙ্গে দেখা করার জন্য অপেক্ষা করেন। পরবর্তীসময়ে সেনাপ্রধান অফিস কার্যক্রম শেষ করে সেনা ভবনে এসে তাদের সঙ্গে দেখা করেন।’

আরও জানানো হয়, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মতো প্রতিষ্ঠিত সুশৃঙ্খল বাহিনীর প্রধান সদ্য প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলের যুগ্ম সংগঠকদের ডেকে নিয়ে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের বিষয়ে নির্দেশনা দিচ্ছে বা চাপ প্রয়োগ করছে, যা অত্যন্ত হাস্যকর ও অপরিপক্ব গল্পের সম্ভার বলে প্রতীয়মান হয়।’

আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। আগামী সরকারবিরোধী আন্দোলন, নির্বাচন সবকিছু শেখ হাসিনার নেতৃত্বে করবে আওয়ামী লীগ। কোনো ধরনের রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ বা অন্য কোনো টার্মে আওয়ামী লীগকে খণ্ডিত করার সব ষড়যন্ত্র তৃণমূলের নেতাকর্মীরা মোকাবিলা করবে।- আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া

সেনাসদরের বক্তব্যে বলা হয়, এই দুই ছাত্র সমন্বয়ককে সেনাবাহিনী প্রধান ‘অত্যন্ত স্নেহের দৃষ্টিতে ছেলের মতো’ দেখতেন। তিনি স্নেহবৎসল পরিবেশে তাদের সঙ্গে নানা আলাপচারিতা করেন। প্রাসঙ্গিকভাবে তাদের নতুন দল গঠনের শুভকামনা ও পরবর্তী রাজনৈতিক পথচলার বিষয়ে নানা প্রসঙ্গে আলাপ করেন।’

এ নিয়ে এনসিপি নেতা সার্জিস আলমও স্ট্যাটাস দেন তার ফেসবুক পেজে। তিনি আলোচনার বিষয়টি স্বীকার করেন এবং এটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আনার জন্য হাসনাতের সঙ্গে কিছু দ্বিমত পোষণ করেন।

‘সায়’ নেই আওয়ামী লীগের
রিফাইন্ড প্রক্রিয়ায় সায় নেই খোদ আওয়ামী লীগ নেতাদের। তারা বলছেন, আমরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। সামনে আন্দোলন ও নির্বাচন যাই হবে, সবই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে করবে আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ‘এরকমভাবে রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ করতে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ এবং জিয়াউর রহমানও চেষ্টা করেছেন। আসলে যেটা থাকার সেটাই থেকে গেছে। আওয়ামী লীগকে কেউ রিফাইন করতে পারবে না। আওয়ামী লীগ রিফাইন্ড করতে হলে আওয়ামী লীগই করবে, কাউন্সিলের মাধ্যমে। আওয়ামী লীগকে কেউ ঠেকাতেও পারবে না। এখন হয়তো তাদের হাতে শক্তি আছে, চাইলে যা কিছু করে দেওয়া যাবে, কিন্তু বাস্তবে তো কেউ মানবে না। এগোতেও পারবে না। আওয়ামী লীগের কেউ গ্রহণ করেবে না।’

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের আদর্শ, নীতি ও লক্ষ্য আছে। আওয়ামী লীগের আদর্শিক নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আমরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। আওয়ামী লীগ তো কচু পাতার পানি না, বাতাস দিলেই তো টলে পড়বে না। আওয়ামী লীগের শেকড় অনেক গভীরে। আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতি হয়? এখনো তো প্রতিদিনই তারা আওয়ামী লীগের কথা বলে। আওয়ামী লীগ এখনো বাংলাদেশের রাজনীতির শীর্ষবিন্দুতে আছে। আওয়ামী লীগকে মুছে ফেলতে পারবে না। বরং, ওরাই মুছে যাবে। দেশের মানুষ দেখবে কার সময় ভালো ছিলাম, শান্তিতে ছিলাম!’

দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী জাগো নিউজকে বলেন, ‘এগুলো ভুয়া খবর। ওয়েট অ্যান্ড সি।’

আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের রাজনীতির মূলধারা। এ দল বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছে। রিফাইন্ড আওয়ামী লীগের কথা যারা বলছে, আমি মনে করি তারা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগকে ভাঙার ষড়যন্ত্র করছে।’

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। আগামী সরকারবিরোধী আন্দোলন, নির্বাচন সবকিছু শেখ হাসিনার নেতৃত্বে করবে আওয়ামী লীগ। কোনো ধরনের রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ বা অন্য কোনো টার্মে আওয়ামী লীগকে খণ্ডিত করার সব ষড়যন্ত্র তৃণমূলের নেতাকর্মীরা মোকাবিলা করবে।’