রাজনীতি

আওয়ামী লীগের দুর্নীতি আলি বাবার চল্লিশ চোরের গল্পও হার মানিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।

বুধবার বিকালে যশোরে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

জেলা বিএনপির আয়োজনে শহরের টাউন হল ময়দানে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিএনপির সমাবেশে বৃষ্টিতে ভিজেই নেতাকর্মীরা অংশ নেন। দীর্ঘদিন পর জেলা বিএনপির এ সমাবেশে ব্যাপকসংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। মাঠে ছিলেন নারী কর্মীরাও। ঘণ্টাব্যাপী বৃষ্টিতে ভিজেই তারা টাউন হল ময়দানে সমাবেশে কেন্দ্রীয় নেতাদের বক্তৃতা শুনেছেন।

সমাবেশে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, অনিয়ম করে বেশি দিন টিকে থাকা যায় না। খালেদা জিয়ার অপর নাম গণতন্ত্র। খালেদা জিয়া মুক্তি পেলে জনগণ মুক্তি পাবে।

সীমান্ত হত্যার সমালোচনা করে বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, প্রতিদিনই সীমান্তে হত্যা হচ্ছে। সেই সীমান্ত রক্ষায় বাহিনী ছিল বিডিআর রাইফেল। এখন রাইফেল শেখ হাসিনা ঘরে তুলে দিয়েছেন। এখন নাম দিয়েছেন বর্ডার গার্ড। গার্ডদের কোনো অর্ডার নাই গুলি করার। ওনারা গুলি করবে, আর আমরা খাব। কেন তাহলে সীমান্ত রক্ষী রাখতে হচ্ছে। হাতে হারিকেন দিয়ে চৌকিদার রাখতে পারতেন! কেন আমরা হাজার হাজার টাকার অস্ত্র কিনি। অস্ত্র কিনি আমার দেশ রক্ষা, দেশের মানুষের রক্ষার জন্য। অস্ত্রের ব্যবহার যদি না করতে পারি, তাহলে কিনব কেন। এত স্বামী স্ত্রী সম্পর্ক তাহলে সীমান্তে এতো হত্যা কেন। জিয়াউর রহমানের সময়ে পারেনি, বেগম জিয়ার সময়ে তো পারেনি। তাহলে আপনার সময়ে কেন এত হত্যা। আজ ব্যাঙও ঠ্যাং মেলে এ সরকারের বিরুদ্ধে। কারণ এই সরকার ব্যস্ত লুটপাটে। হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়ে বিদেশ যাচ্ছে। সেই লুটপাটের টাকা ঘুস দিলে সব মাফ করে দেওয়ার ব্যবস্থাও রেখেছে এই সরকার।

সরকারের উন্নয়ন আর দুর্নীতির সমালোচনা করে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, উন্নয়ন তো দয়ার দান নয়। উন্নয়ন কি রিলিফ জনগণের কাছে? উন্নয়ন জনগণের অধিকার। জনগণের টাকায় এই উন্নয়ন হয়। উন্নয়নের কথা বলে একেটা প্রজেক্টের নামে সরকার হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করছে। এই লুটপাট কারা করেছে। শেখ হাসিনার সরকার ও তার মাফিয়ারা। এই মাফিয়ার সর্দার কে? শেখ হাসিনা। এই সরকারের কাছে অর্থনীতি বলে কোন নীতি নাই। এই সরকারের আছে শুধু দুর্নীতি। এই মাফিয়া আর দুর্নীতির সরকার ব্যবস্থা জনগণের মঙ্গল তো দূরের কথা, দেশটাও রক্ষা করতে পারবে না।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু ও অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী। জেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক নার্গিস বেগমের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন- দলের খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, সহ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু, কেন্দ্রীয় সদস্য সাবেরা নাজমুল মুন্নী, আবুল হোসেন আজাদ, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, সদস্য মিজানুর রহমান খান, আব্দুস সামাদ আজাদ প্রমুখ।

রাজনীতি

বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে চাকরিতে কোটা ব্যবস্থার মাধ্যমে বৈষম্যমুক্ত সমাজ গঠন ধ্বংস করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য চাকরি লাভে বিশেষ বড় অঙ্কের কোটা চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করা স্বাধীনতার চেতনার নামে স্বাধীনতার মূল উদ্দেশ্য বৈষম্যমুক্ত ন্যায়বিচারভিত্তিক সমাজ গঠনকে ধ্বংস করে। আমি মনে করি যে কোনো পরিস্থিতিতে দেশের মানুষের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি কখনই মঙ্গল বয়ে আনে না।

বুধবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে জিএম কাদের এসব কথা বলেন। এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।

বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, একথা যেন আমরা ভুলে না যাই যে, ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় এ দেশের মানুষ বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামে, আন্দোলনে জয়লাভের জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতে এবং যে কোনো পর্যায় যেতে প্রস্তুত থাকে। স্বাধীনতা যুদ্ধে আমাদের মূল অর্জন সংবিধান, সেখানে সুযোগ-সুবিধাদির ক্ষেত্রে সাম্যের কথা বলা হয়েছে।

জিএম কাদের বলেন, আমাদের শহিদ মিনার বৈষম্য থেকে মুক্তিসংগ্রামের, আত্মত্যাগের প্রতীক। আমাদের জাতীয় স্মৃতিসৌধ বৈষম্যহীন ন্যায়বিচারভিত্তিক নিজ দেশ গঠনে অঙ্গীকারের প্রতীক।

কোটা পদ্ধতি নিয়ে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে প্রথম শ্রেণি, দ্বিতীয় শ্রেণি, তৃতীয় শ্রেণি এবং চতুর্থ শ্রেণিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে ৫৬ শতাংশ কোটা ছিল। (৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা, ১০ শতাংশ নারী, ১০ শতাংশ অনগ্রসর জেলার বাসিন্দাদের জন্য, পাঁচ শতাংশ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের জন্য, এক শতাংশ প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত)। বাকি ৪৪ শতাংশ মেধায় নিয়োগ দেওয়া হতো। ২০১৮ সালে মেধাবী ছাত্রদের দাবি ছিল সরকারি চাকরিতে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণি থেকে শুধু মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের। আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সে সময় প্রথম এবং দ্বিতীয় শ্রেণির নিয়োগের ক্ষেত্রে সব কোটা পদ্ধতির নীতি বাতিল করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় পরিপত্র জারি করে। কিন্তু তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে আগের মতো কোটা পদ্ধতি বহাল থাকে।

জিএম কাদের বলেন, ২০২১ সালে সেই পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের অংশটিকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান উচ্চ আদালতে রিট করেন। ৫ জুন রায় প্রকাশ করেন আদালত। সেখানে পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সংরক্ষিত অংশটির বাতিলকে অবৈধ ঘোষণা করেন। ফলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে চাকরিপ্রত্যাশী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা সরকারের জারি করা সেই পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে পুনরায় মাঠে নেমেছেন।

তিনি বলেন, সংবিধানে সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে সাম্যের কথা বলা হয়েছে। সংবিধানে বলা আছে, নিয়োগ লাভের ক্ষেত্রে সুযোগের সমতা থাকবে। ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠী, জন্মস্থানের কারণে কেউ প্রজাতন্ত্রের কাজে নিয়োগে অযোগ্য হবেন না। সরকারকে অথরিটি দেওয়া হয়েছে, নাগরিকদের অনগ্রসর অংশের জন্য, অনগ্রসর অংশ যাতে প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে সেজন্য বিশেষ বিধান প্রণয়ন করা যাবে। অনগ্রসর যারা, নৃগোষ্ঠীকে দিতে পারি, সংখ্যালঘুকে দিতে পারি। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের প্রজš§ যারা থাকবেন তারা সবাই অনগ্রসর, এটা আমি মানতে রাজি নই। বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, সংবিধানকে যদি মানতে হয় তাহলে মানতে হবে, অনগ্রসর যারা নন, মুক্তিযোদ্ধা সবাই অনগ্রসর বা এরকম পিছিয়ে পড়া অবস্থানে নেই। কাজেই তার বিষয়টি ওইভাবে দেখাটা সংবিধানসম্মত নয়।

জিএম কাদের বলেন, আমাদের প্রথম দরকার মেধা। দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। সামনের বিশ্ব আমাদের সেন্টিমেন্টের ওপর থাকবে না। আমাদের কমপিটিশন করতে হবে। সেখানে মেধাকে প্রাধান্য না দিলে প্রতিযোগিতা করব কিসের ভিত্তিতে।

সর্বজনীন পেনশন স্কিম নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চলমান আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, আগে যেটা সর্বজনীন পেনশন স্কিম দেওয়া হয়েছিল, যে কোনো কারণেই হোক সেটায় খুব একটা সাড়া আসেনি। এখন নতুন একটা স্কিম চালু করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নেতারা বেশিরভাগ সরকারের সমর্থক।

সরকারের কাছের লোক। তারা মানতে চাইছেন না। অনেকে মনে করছেন সুযোগ-সুবিধা আগের চেয়ে কম। অনেকে এটাও মনে করছেন না। তারপরও মানছেন না।

তিনি বলেন, বললে খারাপ শোনাবে, সেটা হলো মানুষের আস্থাহীনতা আছে যে সরকার যেটা কমিট করছে আলটিমেটলি সেটা দিতে পারবে কিনা, দেবে কিনা, মানুষ পাবে কিনা। এটা বড় ধরনের একটা আস্থাহীনতা। এটা আমাদের সরকারের কারও জন্যই মঙ্গলজনক নয়।

রাজনীতি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পরিবর্তনশীল বিশ্বে বৈশ্বিক মান বজায় রাখতে সরকার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে অগ্রাধিকারদিয়ে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে বহুমাত্রিক ও সৃজনশীল করেছে। তিনি বলেন, আমরা বহুমুখী শিক্ষা ব্যবস্থার প্রচলন করেছি যাতে দেশে ও বিদেশে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়।

প্রধানমন্ত্রী আজ এখানে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের (পিএমইএটি) মাধ্যমিক থেকে স্নাতক (পাস) এবং এর সমমানের অস্বচ্ছল মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে উপবৃত্তি ও টিউশন ফি বিতরণের উদ্বোধনকালে এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, তাঁর সরকার ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত সারাদেশে ২৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও ৫৪টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে। তিনি বলেন, বৈশ্বিক চাহিদা অনুধাবন করে তাঁর সরকার কৃষি, পশুচিকিৎসা, প্রাণী বিজ্ঞান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, চিকিৎসা, ডিজিটাল ইসলামিক, আরবি, টেক্সটাইল, সমুদ্রিক, বিমান চলাচল, মহাকাশ এবং ফ্যাশন ও প্রযুক্তি বিষয় অন্তর্ভূক্ত করে বহুমাত্রিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও গবেষণাভিত্তিক শিক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে। তিনি বলেন, “বিজ্ঞান, গবেষণা ও প্রযুক্তির জ্ঞান ছাড়া কোনো দেশই পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে না। তাই, আমরা বিশ্বের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার লক্ষ্যে ব্যবস্থা নিয়েছি।

১৯৭৫ সালের পর তাঁর সরকার প্রথম বাজেটে গবেষণার জন্য অর্থ বরাদ্দ করার উল্লেখ করে, তিনি বলেন, তার সরকার গবেষণা বৃদ্ধি এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার প্রসারের জন্য বাজেটে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা মেধাবী অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের তাদের মেধাকে দেশ ও মানব কল্যাণের কাজে লাগাতে তাদের প্রতিভা বিকাশে সহায়তা করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট (পিএমইএটি) গঠন করেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের “দারিদ্র্য কোনো শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবনকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে না” উক্তির স্মরণ করেন।

মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক ও সমমানের ৬৪ লাখ ৭০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর মধ্যে মোট ২,২০৮ কোটি টাকা বিতরণ করা হবে। অর্থ বিতরণের উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী বলেন, উপবৃত্তি ও টিউশন ফি-র টাকা ডিজিটাল পদ্ধতির মাধ্যমে সরাসরি সুবিধাভোগীদের কাছে যাবে।

তিনি বলেন, “ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে উপবৃত্তি ও টিউশন ফি-র অর্থ বিতরণ করতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। শেখ হাসিনা ১৫ জন শিক্ষার্থীকে বঙ্গবন্ধু সৃজনশীল প্রতিভা অনুসন্ধান পুরস্কার-২০২৪ ( ক্রিয়েটিভ ট্যালেন্ট সার্চ অ্যাওয়ার্ড-২০২৪) এবং ২১ শিক্ষার্থীকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্কলার পুরস্কার-২০২৩ প্রদান করেন।

বঙ্গবন্ধু ক্রিয়েটিভ ট্যালেন্ট সার্চ পুরষ্কারপ্রাপ্ত ১৫ জন শিক্ষার্থীকে সনদপত্র ও ২ লাখ টাকা এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্কলার পুরস্কারপ্রাপ্ত ২১ জন শিক্ষার্থীকে সনদপত্র ও ৩ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বেগম শামসুন নাহার ও শিক্ষা সচিব সুলেমান খান অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

হাজারীবাগ গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী নুসরাত জাহান মালিহা, দিনাজপুরের আমেনা-বাকী রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্রী আতিফা রহমান ও খুলনার সরকারি মজিদ মেমোরিয়াল সিটি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র পিনাক মুগ্ধ দাস ‘বঙ্গবন্ধু ক্রিয়েটিভ ট্যালেন্ট সার্চ-২০২৪’(বঙ্গবন্ধু সৃজনশীল প্রতিভা অনুসন্ধান-২০২৪)-এর পক্ষ থেকে পুরস্কার গ্রহন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢা.বি) দুই শিক্ষার্থী জারিন তাসনিম রাইসা ও আল ফয়সাল বিন কাশেম কানন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্কলার অ্যাওয়ার্ড-২০২৩-এর পুরস্কার গ্রহন করেন। অনুষ্ঠানে তারা তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রিয় শিক্ষার্থীদের বলবো আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর পরই পাঠ্যপুস্তক, শিক্ষাক্রম সব কিছুতে পরিবর্তন এনেছি। আমরা পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সৃজনশীল শিক্ষার ব্যবস্থা, মেধা অন্বেষণ, মেধার মাধ্যমে শিক্ষাকে আরও আপন করে নেওয়া, আনন্দ মুখর পরিবেশে শিক্ষা গ্রহন- সেই পদ্ধতিটাতে আমরা নিয়ে আসতে চাই।

তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, এখন যদি সারাক্ষণ কেউ বলে পড়, পড়, পড়-এটা কি ভালো লাগে বলো? মোটেই ভালো লাগে না। এটা কিন্তু বাস্তব কথা, যাও বা একটা পড়ার ইচ্ছে থাকে তাও নষ্ট হয়ে যায়। সেই জন্য এমন ভাবে শিক্ষা ব্যবস্থাটা করা, যাতে আগ্রহ নিয়েই ছেলেমেয়েরা পড়বে। পড়, পড়-করতে হবে না বা ধরে পেটাতে হবে না। নিজেরাই পড়বে, নিজেদের মধ্যেই সেই আকাঙ্খাটা থাকবে। আমরা সেই সিস্টেমটাই তৈরি করতে চাই।

তিনি বলেন, জানি, একটা পরিবর্তন এলে অনেকেই নানা ধরনের কথা বলে। তাছাড়া, ডিজিটাল বাংলাদেশ, সোশ্যাল মিডিয়ায় যার যা মনে আছে-সমালোচনা করতে পারলেই খুশি। আমরা বাঙালিরা আবার পরচর্চায় খুব পছন্দ করি। পরচর্চা ছাড়া তো আসরই জমে না। যে যা মনে করে লিখে দেয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিজের মনে আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে। নিজের ওপর বিশ্বাস থাকতে হবে। কেউ একটু সমালোচনা করলেই ওমনিই সেটার জন্য ভীত হয়ে যেতে হবে। আমি এটা বিশ্বাস করি না। আত্মমর্যাদাবোধ, আত্মবিশ্বাসই মানুষকে শক্তি দেয়।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি আমাদের শিক্ষার্থীদের এটাই বলবো, সব সময় এই চিন্তাটাই করতে হবে। কে কি বললো সেটা শুনে ওমনিই চোখের পানি ফেলানো, মুখ লুকানো- তা নয়। নিজের বিশ্বাস থেকে চলা শিখতে হবে। তাহলে এই দেশকে তোমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে।

তিনি বলেন, জনগণের সেবা করা, জনগণের পাশে দাঁড়ানো, জনগণের জন্য কল্যাণ করা- এটাই হবে মানুষের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব। খালি আমি নিজে শিক্ষিত হবো, নিজে অর্থ কামাই করবো, নিজেই ভালো থাকবো, আমি দেশকে কিছু দেবো না। আশে-পাশের মানুষ দরিদ্র থাকবো এটা হয় না। সকলে মিলেই আমাদের চলতে হবে, সকলে মিলে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। সেই নির্দেশনাটা জাতির পিতা দিয়ে গেছেন, আমরা সেটাই অনুসরণ করি। তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি, সকল বাধা অতিক্রম করে বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা-আমাদের তরুণ সমাজই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

রাজনীতি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সাম্প্রতিক ভারত সফর নিয়ে আজ ২৫শে জুন সংবাদ সম্মেলন করবেন।

প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং জানায়, সকাল ১১টায় গণভবনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে ২১ জুন দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ভারতের নয়াদিল্লি যান।

লোক সভা নির্বাচনে বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করার পর ভারতে কোনো সরকার প্রধানের এটিই প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফর। এছাড়াও, এই সফরটি ছিল ১৫ দিনেরও কম সময়ের মধ্যে ভারতের রাজধানীতে শেখ হাসিনার দ্বিতীয় সফর, তিনি ৯ জুন মোদির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত বিশিষ্ট জনদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে, ঢাকা ও নয়াদিল্লি দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সম্পর্ককে আরও সুসংহত করতে সাতটি নতুন এবং তিনটি নবায়নসহ ১০টি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করেছে।

রাজনীতি

দেশের যেকোনো দুর্যোগ ও দুঃসময়ে আওয়ামী লীগ মানুষের পাশে দাঁড়ায় বলে মন্তব্য করেছেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক।

তিনি আরও বলেন, আমরা কেবল ত্রাণ বিতরণ করতে চাই না, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেবে সরকার।

শেখ হাসিনা তার লক্ষ্য অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছেন। স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণে তিনি বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন। তারই হাত ধরে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হচ্ছে।

সোমবার (২৪ জুন) দুপুরে  সিলেট সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে নগরের ৪২নং ওয়ার্ডে বন্যার্তদের ত্রাণ সহায়তা প্রদানকালে তিনি এসব বলেন।

বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, সিলেটে বন্যায় কৃষিখাতে যে ক্ষতি হয়েছে সে ক্ষতিপূরণ সহায়তা করবে সরকার। পাশাপাশি সুরমা, কুশিয়ারা নদী পানি খননের মাধ্যমে সিলেটবাসীকে বন্যা থেকে রক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আগামী বছর সিলেটবাসীকে বন্যার কবল থেকে রক্ষা করতে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণে ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী এবং পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীকে সিলেট পাঠিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সে লক্ষে কাজ করছে সরকার।

বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, বিএনপি মসনদে বসে দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে দেশকে দেউলিয়া রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। তাদের কর্তাব্যক্তিরা বিদেশে টাকা পাচার করে আলিশান অট্টালিকা নির্মাণসহ সম্পদের পাহাড় তৈরি করেছেন। কিন্তু কোনো দুনীর্তিবাজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি খালেদা জিয়ার সরকার।

তিনি বলেন, বন্যায় সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে নিয়মিত খাবার, পানি ও ওষুধ সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।

নানক বলেন, ২০২২ সালের বন্যায় সিলেটবাসীর পাশে দাঁড়ান প্রধানমন্ত্রী। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতা ও সহমর্মিতা জানাতে তিনি নিজেও সিলেট সফর করেন। তারই নির্দেশে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীসহ পুলিশ, প্রশাসন ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলো বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ায় এবং পানিবন্দিদের উদ্ধারে কাজ করেন। আগামী বছর বন্যার কবল থেকে সিলেটকে রক্ষা করতে কাজ করছে আওয়ামী লীগ সরকার।

সিলেট সিটি মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহাবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের সরকার। যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে এ সরকার মানুষের পাশে দাঁড়ায়। সিলেটে বন্যা দেখা দেওয়ার পর থেকে প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে বন্যার খোঁজখবর রাখেন। শেখ হাসিনা সব সময় সিলেটবাসীর পাশে আছেন। আপনারা তার ওপর আস্থা রাখুন। সব সময় প্রধানমন্ত্রী আপনাদের পাশে আছেন।

সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিবের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দা জেবুন্নেছা হক, আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, কার্যনির্বাহী সদস্য আজিজুস সামাদ ডন, জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খাঁন, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বদরুল ইসলাম, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, ৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র মো. মখলিছুর রহমান কামরান, ২৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ তৌফিক বকস, ৪২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মতিউর রহমান ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রব।

এ সময় সিলেট সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ড কাউন্সিলর, কর্মকর্তা ও সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও অন্যান্ন সহযোগী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

এরপর সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিবের উদ্যোগে দক্ষিণ সুরমা উপজেলার সিলামে বন্যার্তদের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর উপহার ত্রাণ সহায়তা প্রদান করেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক।

এর আগে বেলা ১১টায় সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে সংগঠনের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেনের পরিচালনায় নগরীর ২৪ নং ওয়ার্ড তেররতন এলাকায় বন্যার্তদের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর উপহার ত্রাণ সহায়তা প্রধান করেন তারা।

রাজনীতি

রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) থেকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়েছে।

সোমবার বিকালে খালেদা জিয়াকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয় বলে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, আলহামদুলিল্লাহ। ম্যাডামকে মেডিকেল বোর্ড সদস্যরা দেখার পর সবকিছু পর্যালোচনা করে তাকে বিকাল ৪টা ৪৫মিনিটে সিসিইউর সব সুবিধা সম্বলিত কেবিনে স্থানান্তর করা হয়েছে। এখানে ডাক্তারদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে তিনি চিকিৎসাধীন আছেন।

এর আগে শুক্রবার দিনগত রাত সাড়ে ৩টায় গুলশানের বাসা ফিরোজায় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন খালেদা জিয়া। এরপর তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে সিসিইউতে ভর্তি করা হয়।

এরপর রোববার খালেদা জিয়ার হৃদযন্ত্রে পেসমেকার বসানো হয়। ৭৯ বছর বয়সি খালেদা জিয়া আর্থ্রাইটিস, হৃদরোগ, ফুসফুস, লিভার, কিডনি, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন।

আজ দুপুরে অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে গঠিত মেডিকেল বোর্ড বৈঠকে বসে। তারা বিএনপি চেয়ারপারসনের গত ১২ ঘণ্টা রিপোর্টগুলো পর্যালোচনা করেন। এরপর সিসিইউতে খালেদা জিয়াকে বোর্ড সদস্যরা দেখতে যান। এরপর আবার বৈঠকে করে তাকে কেবিনে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেন।

মেডিকেল বোর্ডের এ বৈঠকে লন্ডন থেকে ডা. জোবায়দা রহমানসহ অষ্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন।

খালেদা জিয়ার হৃদরোগের সমস্যা আগে থেকেই ছিল। হার্টে তিনটি ব্লক ছিল। আগে একটা রিং পরানো হয়েছিল। সবকিছু পর্যালোচনা করে বিদেশি চিকিৎসক ও মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শে পেসমেকার বসানো হয়েছে বলে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক জাহিদ জানান।

খালেদা জিয়াকে সর্বশেষ গত ২ মে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। ওই সময় তাকে সিসিইউতে রেখে দুদিন চিকিৎসা দেওয়া হয়।

এর আগে গত বছরের ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তখন পাঁচ মাসের বেশি সময় চিকিৎসা শেষে গত ১১ জানুয়ারি তিনি বাসায় ফেরেন। এরপর ওই বছরের ২৭ অক্টোবর লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত বিএনপির চেয়ারপারসনের রক্তনালিতে অস্ত্রোপচার করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র থেকে তিনজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এনে খালেদা জিয়ার রক্তনালিতে অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল। তার স্বাস্থ্য কিছুটা স্থিতিশীল হলে সে দফায় পাঁচ মাসের বেশি সময় পর তাকে বাসায় নেওয়া হয়েছিল।

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায়র কারাদণ্ডের সাজা পেয়ে খালেদা জিয়া কারাগারে যান। পরে একই বছরের অক্টোবরে হাইকোর্টে আপিলে সাজা বেড়ে দ্বিগুণ হয়। সেই মাসেই জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ৭ বছরের সাজা হয় তার। সেই থেকে প্রায় দুই বছর জেলে ছিলেন তিনি। পরে মহামারী করোনা ভাইরাসের প্রকোপ বৃদ্ধি পেলে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিত করে দুটি শর্তে সরকারের নির্বাহী আদেশে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।

প্রথমটি হলো, তাকে বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে। দ্বিতীয় শর্তটি হলো, তিনি বিদেশ যেতে পারবেন না। তখন করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে তার পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে ৬ মাসের জন্য মুক্তি দেওয়া হয়। এরপর থেকে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ছয় মাস অন্তর অন্তর তার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে।

রাজনীতি

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে দলের নেতাকর্মীদের তার দলকে সুসংগঠিত করার আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে কোনো আক্রমণ বা ষড়যন্ত্র দলকে ধ্বংস করতে না পারে এবং ফিনিক্সের মতো ছাই-ভস্ম থেকেও জেগে উঠতে পারে।

তিনি বলেন, ‘সংগঠনকে শক্তিশালী করতে পারলে এবং জনগণের সমর্থন পেলে কোনো হামলা বা ষড়যন্ত্র আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করতে পারবে না।

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আজ বিকেলে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭৫ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির ভাষণে একথা বলেন।

তিনি বলেন, সংগঠনের প্রতিটি নেতা-কর্মীর কাছে আমার একটাই আবেদন থাকবে সংগঠনকে সুসংগঠিত করতে হবে। একজন রাজনীতিবিদের জীবনে সংগঠন হচ্ছে সবচেয়ে শক্তিশালী একটি বিষয়। যদি সংগঠন শক্তিশালী হয় তবে দেশের গণমানুষের সমর্থন পাওয়া যায়।

মৃত্যু যে কোনো সময় আসতে পারে এবং তিনি মৃত্যু ভয়ে ভীত নন উল্লেখ করে বলেন, যতই ষড়যন্ত্র হোক যতক্ষণ শ্বাস ততক্ষণ আশ।’ বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়ন করে এদেশের মানুষকে একটা উন্নত জীবন দিয়ে যাওয়াই তাঁর এবং তাঁর সংগঠনের লক্ষ্য বলে উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি বলেন, প্রত্যেক নেতা-কর্মীকে বলবো, দলের ও নেতাকর্মীদের ওপর বার বার আঘাত এসেছে। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা অনেক কষ্ট সহ্য করেছে। তাদের পরিবারগুলো কষ্ট করেছে। কিন্তু সংগঠন ধরে রেখেছে। কাজেই যেমন সংগঠন করতে হবে তেমনি জনগণের আস্থা ও বিশ^াস অর্জন করতে হবে, সেটাই আমাদের মূল শক্তি।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছি বলেই বার বার জনগণ আমাদের ভোট দিয়েছে, আমরা বার বার ক্ষমতায় এসেছি। ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ পর্যন্ত এই দীর্ঘ সময় বাংলাদেশের ইতিহাসে দেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রয়েছে। আর গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলেই আর্থসামাজিকভাবে বাংলাদেশ আজকে এগিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশের উন্নতি হচ্ছে, বিশ্ব দরবারে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। ফলে আজকে বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এটাকে ধরে রেখেই আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।

তিনি সকল গণআন্দোলনে আত্মত্যাগকারী এই সংগঠনের সকল নেতা-কর্মীদের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা জানান এবং বলেন সেই মহান আত্মত্যাগের মধ্যদিয়েই আজকে দেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সভায় বক্তৃতা করেন। দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ সভা সঞ্চালনা করেন।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে ৭৫ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠানমালা উদ্বোধন করেন। এ সময় জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশিত হয়। পরে আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক উপকমিটির উদ্যোগে এবং দেশ বরেণ্য বিভিন্ন শিল্পী ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানস্থলে আসার আগেই ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ছাপিয়ে প্রখর দাবদাহ এড়িয়ে আশপাশের ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়, শাহবাগ, হাইকোর্ট এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। সকাল থেকেই প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর নানা রংয়ের পোশাক, টুপি পরে, হেড ব্যান্ড লাগিয়ে ও গামছা বেঁধে, ব্যানার-ফেস্টুন-প্ল্যাকার্ড হাতে ঢাক-ঢোল নিয়ে বাদ্যের তালে তালে, শ্লোগানে শ্লোগানে চারদিক প্রকম্পিত করে দলে দলে নেতা-কর্মী ও সমর্থকগণ অনুষ্ঠানস্থলে আসতে থাকেন।

আজ উপমহাদেশের প্রাচীন ও অন্যতম বৃহৎ এই রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তার ৭৫ বছর পূর্তি উদযাপন করছে।

১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পুরান ঢাকার টিকাটুলিস্থ কে এম দাস লেনের ঐতিহ্যবাহী রোজ গার্ডেনে ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে এই রাজনৈতিক দলটির আত্মপ্রকাশ। পরে অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক আদর্শের অধিকতর প্রতিফলন ঘটানোর জন্য দলটির নামকরণ করা হয় আওয়ামী লীগ। ১৭৫৭ সালের ঠিক যে দিনটিতে পলাশীর প্রান্তরে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়েছিল সেই একই দিন জাতিকে পাকিস্তানি শাসকদের শোষণ-বঞ্চনা ও পরাধীনতার শৃংখল থেকে মুক্ত করতে জন্ম নেয় এই দল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দলটি ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ এবং দেশের সকল গণআন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ’৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার পর সে সময় প্রবাসে থাকায় তাঁকে এবং শেখ রেহানাকে অবৈধভাবে সংবিধান লংঘন করে ক্ষমতা দলকারীরা দেশে ফিরতে দেয়নি। তাঁরা প্রবাসে রিফিউজি হিসেবে জীবন কাটাতে বাধ্য হন এবং ’৮১ সালে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে তাঁকে সভাপতি নির্বাচিত করার পর একরকম জোর করে তাঁর দেশে ফেরা।

সে দুঃসময়ের কথা স্মরণ করে জাতির পিতার কন্যা বলেন, তিনি এমন একটা সময় দেশে ফিরেছিলেন যখন যুদ্ধাপরাধী এবং জাতির পিতার খুনিরা ক্ষমতায়। জিয়া ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করে জাতির পিতা হত্যার বিচারের পথ রুদ্ধ করে খুনিদের বিদেশে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি এসেছিলাম একটা চিন্তা নিয়ে যে এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতেই হবে। মানুষকে সুখী সমৃদ্ধ জীবন উপহার দিতে হবে।’

২০২০ সালের জাতির পিতা জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনকালেই বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি লাভ করে যা ২০২৬ সাল থেকে কার্যকর হওয়া শুরু হবে। সেজন্য যথাযথ প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে।

পাশাপাশি ২০০৮ সালের নির্বাচনে তাঁর দল যে দিন বদলের সনদ ঘোষণা করেছিল তার সফল বাস্তবায়নে আজ প্রকৃতই দিন বদল হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, এখন আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সালের বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। আর আগামী প্রজন্মকে সুন্দর জীবন উপহার দেওয়ার লক্ষ্যে ‘ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। আওয়ামী লীগ এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করেছে। এদেশের মানুষকে ক্ষুধা ও দারিদ্র মুক্ত উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ, স্মার্ট বাংলাদেশ, স্মার্ট সোনার বাংলা ইনশাল্লাহ আমরা গড়ে তুলবো।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সবসময় সুখে-দুঃখে জনগণের পাশে থেকেছে। আজকে বাংলাদেশ ও বাঙালির যতটুকু অর্জন সে অর্জনটুকু আওয়ামী লীগের দ্বারাই। কিন্তু বার বার এই দলের ওপর আঘাত এসেছে। বার বার এই দলকে খন্ড বিখন্ড করা হয়েছে। বার বার এই দলকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করা হয়েছে। সেই ’৫৮ সালে আইয়ুব খানের মার্শাল ল’ আমল থেকে শুরু করে বার বার এই আঘাত এসেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ গণমানুষের সংগঠন। জনগণের অধিকার আদায়ের সংগঠন। জনগণের আর্থসামাজিক উন্নতি করার সংগঠন। কাজেই বার বার আঘাত এসেও এই সংগঠনের কোন ক্ষতি করতে পারে নাই।

গ্রিক পুরাণের ফিনিক্স পাখির উদাহারণ টেনে তিনি বলেন, ফিনিক্স পাখি পুড়িয়ে ফেলার পরও ছাই ভস্ম থেকে যেমন জেগে ওঠে, আওয়ামী লীগও সেভাবেই জেগে উঠেছে। খুব বেশিদিনের কথা নয় ২০০৭ সালেও চেষ্টা করা হয়েছিল আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে নতুন কিংস পার্র্টি গড়ে তোলার, সেটা সফল করতে পারেনি। কারণ আওয়ামী লীগের মূল শক্তি হচ্ছে বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ ও তৃণমূলের মানুষ, আওয়ামী লীগের অগনিত নেতা-কর্মী ও মুজিব আদর্শের সৈনিক। যারা কখনো পরাভব মানে না। মাথা নত করে না। হয়তো কখনো কখনো কোনো কোনো নেতা ভুল করেছেন। নিজেকে বড় নেতা মনে করে দল ছেড়ে অন্য দল করেছেন। এদের কেউ কেউ ভূল বুঝতে পেরে ফেরত আসলে তাদের আবার দলে নেওয়া হয়েছে। অবার কেউ কেউ এখনও বিভিন্নভাবে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন, ধ্বংসসহ নানা জল্পনা-কল্পনা করে যাচ্ছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের জন্মই হয়েছে বাংলার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য, যা আমরা প্রমাণ করেছি, বলেন তিনি।

’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর অস্ত্র ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বার বার ক্ষমতার পালাবদলের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সে সময় জনগণের কোন গণতান্ত্রিক অধিকার ছিল না। তাদের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করে জনগণের ভাগ্যের কোন পরিবর্তনই তারা করতে পারেনি। নিজেদের বিলাসিতা, অর্থ সম্পদ বানানো, অর্থ পাচার, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, খুন-খারাপি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অস্ত্রের ঝনঝনানি এসবই ছিল তাদের কাজ। ওই অস্ত্র ও অর্থ দিয়ে মেধাবী ছাত্রদের বিপথে নিয়ে এর মাধ্যমেই তারা ক্ষমতার ভিত্তি তৈরি করতে চেয়েছিল। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে তারা। কারণ তারা ভুলে গিয়েছিল যে জনগণের শক্তি অপরিসীম।

দেশের শতভাগ বিদ্যুতায়ন, স্বাক্ষরতার হার বৃদ্ধি ও দারিদ্র বিমোচনসহ তাঁর শাসনামলে দেশের বিভিন্ন উন্নয়নের উল্লেখযোগ্য দিক তুলে ধওে শেখ হাসিনা আরও বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের শক্তিতে বিশ্বাস করে। ’৯৬ সালে একুশ বছর পর আওয়ামী লীগ পুনরায় সরকার গঠন করাতে জনগণ বুঝতে পারে যে একটি দলের শক্তিই হচ্ছে জনগণের সেবা করা।

অনুষ্ঠানে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় নেতা জিএম কাদের, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ-ইনু) সভাপতি হাসানুল হক ইনুসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশে বিদেশি মিশনে কর্মরত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকগণও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

রাজনীতি

দেশের প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী এবং মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী (প্লাটিনাম জয়ন্তী) নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে উদযাপিত হয়েছে।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ রোববার সকালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মধ্য দিয়ে কর্মসূচি শুরু হয়।

আওয়ামী লীগের প্লাটিনাম জয়ন্তী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল ৭ টায় ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে রক্ষিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পুষ্পস্তবক অর্পণের পরে স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

পরে দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনা তাঁর দলের পক্ষ থেকে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে আরেক দফা পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

এ সময় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আামির হোসেন আমু, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, ড. আব্দুর রাজ্জাক, কাজী জাফরউল্লাহ, ড. আব্দুর রাজ্জাক, শাজাহান খান, কামরুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সিমিন হোসেন রিমি ও মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, মাহবুব উল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বি এম মোজাম্মেল হক, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, আফজাল হোসেন ও সুজিত রায় নন্দী, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক আসিম কুমার উকিল, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

আওয়ামী লীগের প্লাটিনাম জয়ন্তী উপলক্ষে সকাল থেকেই ধানমন্ডি ৩২ নম্বর এলাকা দলের নেতাকর্মীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে। এ সময় নেতাকর্মীদের ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু,’ ‘শুভ শুভ শুভ দিন, আওয়ামী লীগের জন্মদিন’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়।

কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, তাঁতী লীগ, কৃষক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে।

এছাড়া যুবলীগ মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, ছাত্রলীগ মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও কর্মীরা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এর আগে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও সারাদেশের সব কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।

কর্মসূচির অংশ হিসেবে সকাল সাড়ে ১০ টায় টুঙ্গীপাড়ায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খানের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় সংসদের পক্ষ থেকে জাতির পিতার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

এদিকে প্লাটিনাম জয়ন্তী উপলক্ষে বিকেলে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্দ্যানে আলোচনা সভার আয়োজন করে আওয়ামী লীগ। সভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করেন। বিকেল ৩ টা ৪০ মিনিটে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সভামঞ্চে উপস্থিত হন। শেখ হাসিনা সভামঞ্চে পৌঁছানোর সাথে সাথে জাতীয় সংগীতের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।

এরপর শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে সঙ্গে নিয়ে পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে কর্মসূচি উদ্বোধন করেন। এর পরে আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিলের সঞ্চলনায় শুরু হয় সাংস্কৃতি অনুষ্ঠান। দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।
১৯৪৯ সালের এই দিনে পুরান ঢাকার রোজ গার্ডেনে আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হলেও পরবর্তীতে অসাম্প্রদায়িক রূপ লাভ করে আওয়ামী লীগ নামে আত্মপ্রকাশ করে।

আওয়ামী লীগের প্লাটিনাম জয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় রাজধানীর ঢাকার বিভিন্ন থানা, ওয়ার্ড, ইউনিয়নসহ আশেপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা হাজির হন ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে।

দুপুর ১ টার আগে থেকেই নেতা-কর্মীরা ঢাকঢোল, ব্যান্ড পার্টি বাজিয়ে আনন্দ-উল্লাস করতে করতে সভাস্থলে আসতে শুরু করেন।

বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকা থেকে নেতা-কর্মীরা বাস ও ট্রাকে চড়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্দ্যানে আসেন। তাঁরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সামনে জড়ো হয়ে নানা স্লোগান দেন। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। বিশেষ কওে বেলা তিনটার পর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ ফটকের সামনে জনস্রোত তৈরি হয়।

সমাবেশে আগত নেতাকর্মীদের হাতে জাতীয় ও দলীয় পতাকা ধরা। এছাড়াও পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু টানেলের মতো বর্তমান সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের আদলে বানানো প্ল্যাকার্ড, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সজিব ওয়াজেদ জয়-এর ছবি সংবলিত ব্যানার-প্ল্যাকার্ডও তাদের হাতে লক্ষ্য করা গেছে।

রাজনীতি

বর্ণচোরা বিএনপির নেতৃত্বে গড়ে ওঠা সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে প্রতিহত করাই আওয়ামী লীগের আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ বলে জানিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেন,‘আমাদের দলের জন্মদিনে আমাদের অঙ্গীকার হচ্ছে আমাদের রক্তমূল্যে অর্জিত বিজয়কে সুসংহত করব।

আমাদের চলার পথে প্রধান বাধা বর্ণচোরা বিএনপি। মুক্তিযুদ্ধের নামে এই বর্ণচোরারা ভাঁওতাবাজি করে। সাম্প্রদায়িক ও জঙ্গিবাদী শত্রু আজ আমাদের অভিন্ন শত্রু।’

আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ রোববার সকালে ধানমন্ডিস্থ বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে রক্ষিত জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এই সাম্প্রদায়িক অভিন্ন শত্রু বিএনপির নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়। আজ আমাদের অঙ্গীকার, আমাদের আজ শপথ এই অপশক্তিকে পরাজিত করতে হবে এবং আমাদের বিজয়কে আমরা সুসংহত করব। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ করব। এটাই আজকের দিনের শপথ।’

স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন, অঙ্গীকার ও শপথ সামনে রেখে আওয়ামী লীগের সৃষ্টি হয়েছিল জানিয়ে দলটির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক বলেন, আওয়ামী লীগ এই দেশের বৃহত্তম ও প্রাচীনতম রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। আমরা এক কথায় বলতে পারি, সংগ্রাম, সাফল্য ও সংস্কৃতির বর্ণিল প্রতিভাসের নাম আওয়ামী লীগ। দুটি পর্বে আমাদের এই সংগ্রাম, আন্দোলন, অর্জন উন্নয়নকে যদি ভাগ করি একটি অংশে স্বাধীনতা।

তিনি বলেন, স্বাধীনতার অবিসংবাদিত নেতা কেন্দ্রাতীত শক্তি হচ্ছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পলাশীতে ১৭৫৭ সালে যে সূর্য অস্তমিত হয়েছিল, ১৯৪৯ সালে সে সূর্য আবার উদিত হয়েছিল। উদিত হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন, অঙ্গীকার ও শপথকে সামনে রেখে।

তিনি বলেন, জনগণের কণ্ঠে প্রতিধ্বনিত হয়ে প্রতিরোধের দাবানল ছড়িয়ে বিজয় ছিনিয়ে আনার নাম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। আমরা মৃত্যুর মিছিলে দাঁড়িয়ে জীবনের জয়গান গাই। আমরা ধ্বংসস্তুপের ওপর দাঁড়িয়ে সৃষ্টির পতাকা উড়াই।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যার ছয় বছর পর শেখ হাসিনা স্বদেশ প্রত্যাবর্তন অন্ধকারে আশার আলো হয়ে এসেছিল। শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন বলেই গণতন্ত্র শৃঙ্খলমুক্ত হয়েছে। তিনি এসেছিলেন বলেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পুনরুত্থান হয়েছে। গণতন্ত্রের প্রত্যাবর্তন ঘটেছে। তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ছিল স্বাধীনতার আদর্শের প্রত্যাবর্তন।

ওবায়দুল কাদের বলেন,শেখ হাসিনার অর্জন বাংলাদেশের জন্য সারা পৃথিবীতে এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় রচনা করেছে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে বিশ্বব্যাংককে তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন আমরাও পারি। আমাদের সামর্থ্যের প্রতীক, আমাদের সক্ষমতার প্রতীক এই পদ্মা সেতু নিজের টাকায় করেছেন।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ঢাকায় মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, পায়রা সমুদ্রবন্দর, মাতারবারি গভীর সমুদ্র বন্দর, স্যাটেলাইট, ৬৮ বছরের সীমান্ত সমস্যা,ছিটমহল সমস্যার সমাধান এসব অর্জন বঙ্গবন্ধুর কন্যার।

প্রধানমন্ত্রীর দিল্লির সফর নিয়ে বিএনপির সমালোচনার জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী যা নিয়ে এসেছেন সেটা নিয়ে এখনো বিশ্লেষণ হয়নি। প্রধানমন্ত্রী দিল্লি­ গিয়ে গঙ্গার পানির কথা ভুলে যাননি। বাংলাদেশের স্বার্থ সংরক্ষণে এখানে যা বলার দরকার কোনো কিছু বলতে সংকোচ করেননি। ভুলে যাননি।

এর আগে সকাল ৭টায় আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ধানমন্ডিতে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন তিনি। পরে দলের অন্যান্য নেতারাও বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান।

রাজনীতি

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, শেখ হাসিনার সরকার ভারতের সেবাদাসে পরিণত হয়েছে। শুধু ভারত নয়, আশপাশের দেশগুলোর কাছে তারা (আওয়ামী লীগ) পুরোপুরি মাথা নিচু করে, নতজানু পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করছে। মিয়ানমার থেকে গুলি আসে, জবাবটাও তারা দিতে পারে না। এরকম একটা অথর্ব নতজানু শাসকগোষ্ঠী আমাদের ওপর চেপে বসে আছে।

রোববার রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে খালেদা জিয়ার আশু রোগমুক্তি কামনায় দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে ফখরুল বলেন, তিনি (খালেদা) জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। প্রধানমন্ত্রীর (শেখ হাসিনা) ব্যক্তিগত রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তিনি খালেদা জিয়াকে ‘হত্যা’ এবং রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে কোনোভাবে চিকিৎসার সুযোগ দিচ্ছেন না। গত তিন বছরে পরিবারের সদস্যরা চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিতে কয়েক দফা অনুমতি চেয়েছেন। শর্তের (নির্বাহী আদেশে সাময়িক মুক্তির) যুক্তি দেখিয়ে প্রতিবারই তা নাকচ করেছে সরকার।

তিনি বলেন, আজকে ভয়াবহ এই ‘ফ্যাসিস্ট’ সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে দীর্ঘকাল ধরে খালেদা জিয়া কারারুদ্ধ রয়েছেন। সম্পূর্ণ একটা মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে তাকে কারাগারে আটক করে রাখা হয়েছে। বাসায় থাকার সুযোগ দেওয়া হলেও তিনি পুরোপুরি অবরুদ্ধ এবং বন্দি আছেন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, কারাগার থেকে তিনি (খালেদা জিয়া) অসুস্থ হয়েছেন। তার কোনো চিকিৎসা হয়নি। তিনি বারবার অভিযোগ করেছেন। কিন্তু তৎকালীন সরকার সেটা শোনেনি এবং তার সুচিকিৎসা করেনি। পরবর্তীকালে তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। তবে কোনো সুচিকিৎসা হয়নি। আজকে বিনা চিকিৎসায় খালেদা জিয়া মৃত্যুশয্যায়।

খালেদা জিয়ার যেসব রোগ আছে, তার চিকিৎসা করতে হলে উন্নত দেশের মাল্টি ডিসিপ্লিনারি হসপিটাল প্রয়োজন জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, দল, পরিবার, সুশীল সমাজ, এমনকি বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি মিশনগুলো এই কথাগুলো বারবার বলেছে। বাইরে থেকে কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ সবাই বলছে, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হোক। কিন্তু সরকার পাত্তাই দিচ্ছে না।

এসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘তথাকথিত’ প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করে তিনি বলেন, যিনি নির্বাচিত নন, সেই ‘তথাকথিত’ প্রধানমন্ত্রী ভারতে গিয়ে ১০টি চুক্তি করেছেন। কিন্তু আমাদের যে সমস্যাগুলো, আমরা যে তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আমরা পাচ্ছি না, সে ব্যাপারে কোনো চুক্তি হয়নি। উপরন্তু তিস্তা প্রকল্পের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সেই প্রকল্পে অংশ নেওয়ার জন্য, তাতে বিনিয়োগ করার জন্য ভারত প্রস্তাব করেছে।

বিএনপি নেতা বলেন, কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার দুর্নীতির কাহিনি বেরিয়েছে। সাবেক সেনাপ্রধান (আজিজ আহমেদ) তার দুর্নীতির কাহিনি বেরিয়েছে। আবারও কয়েকজন পুলিশের দুর্নীতি কাহিনি বেরিয়ে আসছে। আমি অবাক বিস্ময়ে লক্ষ করলাম যে, গত শুক্রবার পুলিশের অ্যাসোসিয়েশন থেকে একটা স্টেটমেন্ট দেওয়া হয়েছে। সাংবাদিকদের সত্য প্রকাশে হুমকি দিয়েছে, এই সত্য (পুলিশের দুর্নীতির খবর) প্রকাশ করা যাবে না। কারণ এতে নাকি তাদের ভাবমূর্তি বিনষ্ট হয়। আজকে সারা দেশের মানুষ জানে, সারা পৃথিবী জানে যে, পুলিশ বাহিনীর কিছু সদস্য কীভাবে এই অবৈধ সরকারের সঙ্গে যোগসাজশ করে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে।

দোয়া মাহফিলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, শামসুজ্জামান দুদু, আসাদুজ্জামান রিপন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, জলবায়ুবিষয়ক সহ-সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব আমিনুল হক, দক্ষিণের রফিকুল আলম মজনু, যুবদল নেতা মামুন হাসান, নুরুল ইসলাম নয়ন, গোলাম মাওলা শাহীন, স্বেচ্ছাসেবক দলের রাজীর আহসান, নাজমুল হাসান, জহির উদ্দিন তুহিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।