রাজনীতি

পিরোজপুর-১ আসনের জামায়াত মনোনীত প্রার্থী মাসুদ বিন সাঈদী বলেছেন, রাষ্ট্র ক্ষমতায় যখন যে যেভাবে এসেছেন তারাই দেশটাকে তাদের নিজেদের সম্পত্তি মনে করে লুটেপুটে খেয়েছেন। দেশের সম্পত্তি, দেশের অর্থ সব বিদেশে পাচার করেছে।

আমরা দেখেছি বিদেশে বেগম পাড়া হতে। এর একটি কারণ হলো নীতি-নৈতিকতার সমৃদ্ধ আমরা রাজনৈতিক নেতা বাংলাদেশে আমরা পাইনি।

শনিবার (২৩ নভেম্বর) দুপুরে পিরোজপুরে টাউন ক্লাব মাঠে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন পিরোজপুর জেলা শাখা দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।

মাসুদ বিন সাঈদী বলেন, ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হয়েছিল একটা বৈষম্যহীন ন্যায় ইনসাফ নীতি-নৈতিকতার সম্পন্ন একটি রাষ্ট্র গঠনের জন্য। আমরা দীর্ঘ ৫৩ বছর দেখেছি যে ন্যায় ইনসাফ তো বহুদূরের কথা বরং শোষণ বঞ্চনায় ভরপুর একটি রাষ্ট্র। তৎকালীন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ রাষ্ট্র ক্ষমতায় যারা ছিলেন তারা এই জাতিকে দিয়েছেন। আমরা দেখেছি, মানুষ দুর্ভিক্ষে না খেয়ে থেকেছে। কিন্তু শেখ সাহেবের সন্তানেরা সোনার মুকুট পড়ে বিয়েসাদি করেছেন। এটাও দেখেছি ব্যাংক ডাকাতি করেছে, ব্যাংক লুটপাট করেছে।

তিনি আরো বলেন, এই ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান যে গণ বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে বাংলাদেশ এই গণঅভ্যুত্থান শুধু ৩৬ দিনের আন্দোলনের ফসল নয়। এই গণঅভ্যুত্থানে বিগত ১৭টি বছর বাংলার মেহনতি, শ্রমিক, জনতা, ছাত্র-জনতা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের সংগ্রামের ফসল। যদিও আমাদের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ৩৬ দিনে আন্দোলন এটা পূর্ণতা পেয়েছে। কিন্তু আন্দোলন শুধু ছাত্র-জনতা নয় আন্দোলন ছিল গোটা দেশবাসীর। সেই সাথে এই আন্দোলনের ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ করেছিল আমাদের শ্রমিক ভাইয়েরা। যদি ৫ আগস্টের আন্দোলনে আমাদের শ্রমিক ভাইদের ব্যাপক অংশগ্রহণ না থাকতো তাহলে স্বাধীনতা আমরা পেতাম নিশ্চিত ইনশাআল্লাহ তবে আরো হয়তো সময় লেগে যেত। আমরা এই বাংলাদেশকে একটি সুখী সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে দেখতে চাই।

মাসুদ সাঈদী আরো বলেন, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন বাংলাদেশ একটি শোষণ বঞ্চনাহীন রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চায়। তারা চায় সংবিধানের আলোকে সকল ধর্মের বর্ণের মানুষের সমান অধিকার। যে কারণে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন চায় কিছু সোনার মানুষ তৈরি করতে। কারণ সোনার মানুষ যদি তৈরি না হয় সোনার রাষ্ট্র তৈরি হবে না। যে কারণে আজকের এই দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে আমার সম্মানিত শ্রমিক ভাইদের প্রতি আমার আহ্বান থাকবে আসুন আগে আমি নিজেকে গড়ি, এরপর আমার পরিবারকে গড়ি, এরপর সমাজ গড়ার আন্দোলনে অংশগ্রহণ করি।

তিনি বলেন, এই পিরোজপুরের মাটিতে আমরা নতুন করে আর কোনো জালেম স্বৈরাচারকে দেখতে চাই না। শ্রমিক, ছাত্র, যুবক, নারী, পুরুষ মেহনতি জনতা সকলে মিলেমিশে একটি শান্তিপূর্ণ পিরোজপুর আমরা চাই। এই পিরোজপুরে আর কোনো চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি দেখতে চাই না। কোনো শ্রমিক আর কোনো মামলার শিকার হন তাও দেখতে চাই না। এজন্য সবার আগে যেটা প্রয়োজন ঐক্যবদ্ধ হয়ে আগে নিজেকে গড়া এরপর পরিবার গড়া এরপরে সমাজ গড়া।

বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন পিরোজপুর জেলা সভাপতি মোহাম্মদ সিদ্দিকুল ইসলাম খন্দকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক মাওলানা হারুনুর রশিদ খান, কেন্দ্রীয় সিনিয়র সহ-সভাপতি বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন। প্রধান বক্তা ছিলেন মো. আলহাজ কবির আহমেদ, কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি ও অঞ্চল পরিচালক বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ বরিশাল অঞ্চল। বিশেষ অতিথি অধ্যক্ষ তাফাজ্জল হোসেন ফরিদ, জেলা আমির বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, অধ্যক্ষ জহিরুল হক, জেলা সেক্রেটারি।

রাজনীতি

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বাংলাদেশে চোখের যত্নের সেবা সম্প্রসারণ করতে হবে এবং এ লক্ষ্যে আমরা অরবিস ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। অরবিস ইন্টারন্যাশনালের প্রেসিডেন্ট ও সিইও ডেরেক হডকির সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি একথা বলেন। শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা গেছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অরবিস ফ্লাইং আই হাসপাতালের প্রশিক্ষণ কর্মসূচির অংশ হিসাবে ডেরেক বাংলাদেশ সফর করছেন। এখন চট্টগ্রামে প্রশিক্ষণ চলছে। ডেরেকে বুধবার রাজধানীতে অধ্যাপক ড. ইউনূসের সঙ্গে তার কার্যালয়ে দেখা করেন।

অরবিস বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. মুনির আহমেদ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতের সময় ডেরেকের সঙ্গে ছিলেন। অরবিস প্রেসিডেন্ট প্রধান উপদেষ্টাকে ফ্লাইং আই হাসপাতালের একটি মডেল সংস্করণ উপস্থাপন করেন। অধ্যাপক ড. ইউনূস এর ভূয়সী প্রশংসা করেন।

ডেরেক অরবিস ইন্টারন্যাশনালের কাজ সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করেন। ১৯৮২ সালে বিশ্বব্যাপী দৃষ্টি-সংরক্ষণ কর্মসূচি শুরু করা অরবিস গত ৩৯ বছর ধরে বাংলাদেশে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কাজ করছে। ডেরেক বলেন, এই সময়ের মধ্যে, অরবিস এ পর্যন্ত কমিউনিটি আউটরিচ ইভেন্টে ৭.৮ মিলিয়নেরও বেশি চোখের স্ক্রিনিং পরিচালনা করেছে, প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশুদের মধ্যে ৪.৫ মিলিয়নেরও বেশি ব্যক্তিকে ওষুধ ও অপটিক্যাল চিকিৎসা প্রদান করেছে, ২৫৮০০০টিরও বেশি চোখের সার্জারি করেছে এবং বাংলাদেশের ৪০ হাজারের বেশি লোককে চোখের যত্ন নেওয়ার বিষয়ে প্রশিক্ষিত করেছে।

অধ্যাপক ড. ইউনূস বাংলাদেশে চক্ষু স্বাস্থ্য খাতে অরবিসের অবদানের কথা স্বীকার করেন এবং ফ্লাইং আই হাসপাতালের প্রতি তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। অরবিস এখন বাংলাদেশে ১১তম প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

ড. ইউনূস বলেন, ‘আমি অরবিসকে ভালোবাসি। আমি ফ্লাইং আই হসপিটালকে ভালোবাসি।’ তিনি উল্লে­খ করেন যে, অরবিস বাংলাদেশে চোখের স্বাস্থ্য খাতে ভূমিকা পালনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যতম।

ডেরেক বলেন, অরবিস ব্যক্তি, পরিবার ও জনগোষ্ঠীকে সাহায্য করার জন্য বিশ্বব্যাপী ২ শতাধিক দেশ ও ভূখণ্ডে দৃষ্টি সংরক্ষণের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। বিশ্বজুড়ে প্রায় এক বিলিয়ন মানুষ সম্পূর্ণভাবে পরিহারযোগ্য অন্ধত্ব ও দৃষ্টিশক্তি হ্রাসের সমস্যা নিয়ে বসবাস করছে উলে­খ করে ডেরেক বলেন, চার দশকেরও বেশি সময় ধরে অরবিস জোরদার ও টেকসই চোখের যত্ন ব্যবস্থা নিয়ে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে।

রাজনীতি

বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী দল কখনও ভারতবিরোধী ছিল না বলে মন্তব্য করেছেন দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান। সম্প্রতি ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন।

ওই সাক্ষাৎকারে জামায়াতে ইসলামীর ভারত-বিরোধিতা সর্বজনপরিচিত বলে মন্তব্য করেন সাংবাদিক।

জবাবে এমন বক্তব্য সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন ডা. শফিকুর রহমান।

জামায়াত আমির বলেন, এ ধারণা ভিত্তিহীন। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে আমাদের নিশানা করে এই মতবাদ ছড়ানো হয়েছে যাতে জামায়াতের রাজনীতির মিথ্যা ব্যাখ্যা ও বিভ্রান্তি তৈরি হয়। সমান মর্যাদা এবং সম্মানের ভিত্তিতে আমরা ভারতসহ সমস্ত প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চাই। আমাদের আন্তর্জাতিক নীতি, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়। চাই ভারতও একইরকম সাড়া দিক, পারস্পরিক বিশ্বাস এবং সহাবস্থানের ভিত্তিতে।

সাক্ষাৎকারে আরও যেসব প্রশ্নের জবাব দেন ডা. শফিকুর রহমান তা হুবহু তুলে ধরা হলো –

প্রশ্ন: কিন্তু জামায়াতে ইসলামীকে দেখা হয় কট্টর ইসলামি সংস্থা হিসাবে, অন্যান্য ইসলামি রাষ্ট্রে যে ‘ইসলামিক ব্রাদারহুড’ রয়েছে তার অংশ হিসাবে। নিজেদের সংগঠনকে কী ভাবে দেখেন?

উত্তর: আবারও আপনি ধরেই নিচ্ছেন জামায়াতে ইসলামী কট্টরপন্থী মুসলিম সংগঠন। এটা একেবারেই অসত্য। জামায়াত একটি আধুনিক, উদার এবং গণতান্ত্রিক দল, যার ভিত্তি ইসলামিক আদর্শ। আরো একটি কথা মনে করিয়ে দিই, আমরা একটি স্বাধীন রাজনৈতিক দল। বিশ্বের অন্য কোনো রাজনৈতিক সংস্থায় আমাদের প্রতিনিধিত্ব নেই।

প্রশ্ন: কিন্তু বিএনপির একটি অংশ আপনাদের কট্টরপন্থী মনোভাব নিয়ে অস্বস্তিতে। কী বলবেন?

উত্তর: কট্টরপন্থি মনোভাব বলতে কী বোঝাতে চাইছেন, তা অস্পষ্ট। আপনাদের কাগজের মাধ্যমে জোরালো ভাবে আবারও বলতে চাই, জামায়াত একটি আধুনিক, উদারপন্থি, গণতান্ত্রিক দল, যার আদর্শ ইসলামের। আমরা সর্বদাই যুক্তিগ্রাহ্য, বাস্তবসম্মত এবং মধ্যপন্থা নিয়ে রাজনৈতিক নীতি নির্ধারণ করি। বিএনপি দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সঙ্গী, তারা আমাদের আধুনিক মনোভঙ্গি সম্পর্কে সচেতন।

প্রশ্ন: অন্তর্বর্তী সরকার আসার পর থেকেই সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায় তাদের বিরুদ্ধে হিংসার প্রতিবাদে সরব। কী ভরসা দেবেন?

উত্তর: জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের অসামান্য সম্পর্ক এবং বোঝাপড়া রয়েছে। প্রতিটি নাগরিককে সমদৃষ্টিতে দেখা হয় এবং রাষ্ট্রের সমস্ত নাগরিককে সমান অধিকার এবং মর্যাদার ভিত্তিতে সম্মান করা হয়। জামায়াত সংখ্যালঘু বা সংখ্যাগুরুর তত্ত্বে বিশ্বাসী নয়। আমরা মনে করি ধর্মের ভিত্তিতে দেশবাসীর বিভাজন অপরাধ। হিন্দু বা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে হিংসার ইতিহাস জামায়াতের নেই। বরং বিভিন্ন সময়ে জামায়াতে ইসলামী বিভিন্ন বিষয় নিয়ে হিন্দু নেতাদের সঙ্গে আলোচনাও করেছে।

প্রশ্ন: শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। আপনারা সরকারে এলে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক কোন দিকে যাবে?

উত্তর: আমার মনে হয় না পুরোনো আওয়ামী লীগ জমানার সঙ্গে ভারতের নিছকই ঘনিষ্ঠ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ছিল। আমরা সবাই জানি, ওই সম্পর্কে কার কী স্বার্থ ছিল। তবে নিজেদের কথা বলতে পারি, আমরা চাই ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করতে, তবে তা হতে হবে পারস্পরিক সম্মান এবং সমতার মাধ্যমে। পড়শিদের সঙ্গে কার্যকরী এবং বাস্তবোচিত সম্পর্ক উভয় রাষ্ট্রের পক্ষেই সুবিধাজনক। সরকারে এলে সেটাই করতে চাইব।

প্রশ্ন: একটা আতঙ্ক তৈরি হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার এবং জামায়াত মিলেমিশে আওয়ামী লীগের পর এবার বিএনপিকেও সরিয়ে দিতে চাইছে। দুই বড় রাজনৈতিক দলকে বাইরে রেখে নতুন শক্তির উত্থান হবে। কতটা ঠিক?

উত্তর: সবিনয়ে বলতে চাই এই তত্ত্বের কোনো ভিত্তি নেই। আওয়ামী লীগের প্রতি জনতার সম্মিলিত ঘৃণা তৈরি হয়েছিল দুর্নীতি এবং ফ্যাসিবাদী নীতির কারণে। তারা নিজেরাই নিজেদের পতন ডেকে এনেছে। কোনো সংগঠন বা দলকে সরানোর জন্য আমাদের কোনো ভূমিকা পালনের প্রয়োজন নেই। মানুষ সব জানেন। তাদের সম্মিলিত প্রজ্ঞাকে আমরা সম্মান করি। এইটুকু বলতে পারি, কোনো রাজনৈতিক দলকে খারিজ করা বা সরিয়ে দেওয়ার কোনো ইচ্ছা আমাদের নেই।

রাজনীতি

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ছাত্ররা রাষ্ট্র সংস্কারের কথা বলছে। তারা বলছে সংবিধানও সংস্কার করতে হবে। সংবিধান পরিবর্তন কিভাবে করবেন? একটা সংস্কার কমিটি দিয়েই সংবিধান সংস্কার হবে না। ওটা করতে গেলে সাংবিধানিক কিংবা সংসদের প্রতিনিধি লাগবে। সেটার জন্য ধৈর্য ধরতে হবে।

তিনি বলেন, সবচেয়ে প্রধান যে জিনিসটা দরকার, সেটি হলো নির্বাচন। একদিকে যেমন পরিবর্তনের জন্য জীবন দিয়েছে, তেমনি নির্বাচনের জন্য মানুষ প্রাণ দিয়েছে। একই সঙ্গে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। যার জন্য মানুষ প্রাণ দিয়েছে। হঠাৎ করেই কোনো কিছু পরিবর্তন করে ফেললে হবে না। সেটা কতটা টেকসই সেই চিন্তাও করতে হবে। তার জন্য গণতান্ত্রিক পথে যেতে হবে। তারা যদি বলত বিপ্লবী সরকার গঠন করেছি, তাহলে বিপ্লবী সরকার করত। আমাদের কিছু বলার ছিল না। এটা (অন্তর্বর্তীকালীন সরকার) বিপ্লবী সরকার নয়, সাংবিধানিক সরকার। আপিল বিভাগ থেকে এই সরকারের বৈধতা নেওয়া হয়েছে। ওটাকে ধরে রেখেই আমাদের এগোতে হবে।

শুক্রবার রাতে জিলা পরিষদ মিলনায়তনে জেলা বিএনপির আয়োজিত ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী দীর্ঘ আন্দোলন : আজকের প্রেক্ষিত নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের সামনে বড় ক্রান্তিকাল। ঐক্যবদ্ধভাবে আমরা ফ্যাসিস্টকে বিদায় দিয়েছি। আমাদেরকে ঐক্য ধরে রাখতে হবে। আমাদেরকে সঠিকভাবে রূপান্তর ঘটাতে হবে। যে রূপান্তরের মধ্যদিয়ে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, চেতনাকে ফিরে এনে সত্যিকারের গণতান্ত্রিক, মানবিক মূল্যবোধ, কল্যাণকর দেশ গড়তে পারি। এটাই আমাদের সামনে লক্ষ্য।

সভায় বিগত দেড় দশকে বিএনপির আন্দোলন সংগ্রাম, হামলা, মামলার কথা তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের গোলটা দিয়েছে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান। এটা অস্বীকার করা যাবে না। এজন্য তাদেরকে সাধুবাদ জানাচ্ছি।

বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, যশোর প্রেসক্লাব সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, মানবাধিকার সংগঠক বিনয়কৃষ্ণ মল্লিক, ক্রীড়া সংগঠক চিন্ময় সাহা, যশোর আদালতের জিপি শেখ আবদুল মোহায়মেন, কওমি মাদ্রাসা খুলনা বিভাগীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আবদুল মান্নান, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দীপংকর দাস রতন সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোরের সভাপতি আকরামুজ্জামান, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি শ্যামল দাস, চিকিৎসক সমাজের প্রতিনিধি ডা. রবিউল ইসলাম যশোর জেলা শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইবাদত হোসেন খান।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সাবেরুল হক সাবু।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইয়ুব, সাবিরা নাজনীন মুন্নী, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মনিরুল হুদা প্রমুখ।

রাজনীতি

জুলাই-আগস্টে ছাত্র আন্দোলনের পর বাংলাদেশের রাজনৈতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসেছে। গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালায়ন করেন শেখ হাসিনা; আওয়ামী লীগের নেতা এবং সাবেক মন্ত্রীরা অনেকেই দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে গণহত্যার শয়ে শয়ে মামলা হয়েছে, শুরু হয়েছে বিচার প্রক্রিয়াও। আওয়ামী লীগের রাজনীতির প্রশ্নে অনেকে বলছেন, দলটির ভূমিকার জন্য জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত।

এ অবস্থায় আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বৃহস্পতিবার একটি বেসরকারি টেলিভিশনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন। সেটি ফেসবুকে আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড পেজে শেয়ারও করা হয়েছে।

বাহাউদ্দীন নাছিম বলেছেন, প্রকৃতপক্ষেই আমরা যদি ভুল করে থাকি অথবা অন্যায় করে থাকি, সেই অন্যায়ের জন্য জাতির কাছে ক্ষমতা চাইতে আমাদের কোনো আপত্তি অথবা আমরা ক্ষমা চাইব না—এ ধরনের গোঁড়ামি আমাদের ভেতরে কাজ করে না। এ ধরনের দল, এই মানসিকতার দল আওয়ামী লীগ নয়।

জুলাই-আগস্টে ছাত্র আন্দোলন দমাতে আওয়ামী লীগ যে ভূমিকা নিয়েছিল, তা নিয়ে দলটির কোনো অনুশোচনা রয়েছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে ওই ফোনালাপে নাছিম আরও বলেন, অনুশোচনা কি কারাগারের ভেতরে বসে করবে আওয়ামী লীগ? নাকি জঙ্গলে-পাহাড়ে বা নির্বাসনে থেকে অনুশোচনা করবে? কীভাবে করবে? সেজন্য তো উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে, সেই সুযোগটা কি দেশে আছে এখন? স্বাভাবিক পরিস্থিতি হলে নিজেরা দলগত মূল্যায়নের মাধ্যমে ভুল চিহ্নিত করে আমরা কি ক্ষমা চাইতে পারি না?

শেখ হাসিনা, এমপি-মন্ত্রী ও নীতিনির্ধারণী থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে চলে যান। অনেকে দেশ ছেড়েছেন। কেউ কেউ আশ্রয় নিয়েছেন পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে। এ প্রসঙ্গে নাছিম বলেন, কৌশলগত কারণে দেশের বাইরে অবস্থান করছি, উপমহাদেশের রাজনীতিতে এমন অসংখ্য উদাহরণ আছে। যারা এখন বিরাজনীতিকরণের চেষ্টা করছে তারা রাজনৈতিক দলগুলোর বিরুদ্ধে অপপ্রচার করে রাজনীতিকে ধ্বংসের চেষ্টা করছে।

জুলাই-আগস্ট মাসে আন্দোলনকারীদের নিহতের ঘটনায় সারা দেশে শেখ হাসিনাসহ নেতাকর্মীদের নামে গণহত্যার অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলার ব্যাপারে বাহাউদ্দীন নাছিম বলেন, দলের মন্ত্রী, এমপিসহ সারা দেশে নেতাকর্মীদের নামে হাজার হাজার মামলা হয়েছে। দলের সভাপতি শেখ হাসিনার নামে আড়াই শতাধিক মামলা হয়েছে। গ্রেফতার হয়ে কারাগারে শীর্ষ নেতারা। আত্মগোপনে রয়েছেন অনেকে। এর মধ্যে রয়েছে গণহত্যার অভিযোগ, অথচ উপদেষ্টারা দেশে-বিদেশে বলে বেড়াচ্ছেন এই আন্দোলন পরিকল্পিত ছিল, তাহলে অভিযোগ কেন আমাদের দিকে? আর গণহত্যার বিচারের জন্য প্রধান কৌঁসুলি নিয়োগ দিয়েছে যে কিনা সাজাপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধীদের আইনজীবী ছিলেন।

রাজনীতি

বাংলাদেশ প্রতিবেশীসহ সব দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চায় বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) বিকেলে ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে আয়োজিত এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান।

এ সময় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ শান্তিপ্রিয় এক দেশ, প্রতিবেশীসহ সব রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ ও শ্রদ্ধাশীল সহযোগিতার মাধ্যমে সহ-অবস্থানই আমাদের মূল লক্ষ্য।

বহিঃশত্রুকে রুখতে বাংলাদেশ সদা প্রস্তুত জানিয়ে তিনি বলেন, যেকোনো আগ্রাসী বহিশত্রুর আক্রমণ থেকে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য আমরা সদা প্রস্তুত এবং দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ।

সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নে প্রচেষ্টার কথা জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল-মিলিয়ে আমাদের সেনা-নৌ- বিমান বাহিনী পুনর্গঠন, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের উন্নত প্রশিক্ষণ, বাহিনীগুলোতে আধুনিক প্রযুক্তি সংযুক্তির প্রয়াস অব্যাহত রয়েছে।

সশস্ত্র বাহিনীর প্রশংসা করে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, সাম্প্রতিক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে এবং তৎপরবর্তী সময়ে দেশের ক্রান্তিলগ্নে সশস্ত্র বাহিনী বরাবরের ন্যায় দেশের মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। দেশের ছাত্র-জনতা এবং সাধারণের পক্ষে দাঁড়িয়ে সশস্ত্র বাহিনী আবারও দেশের মানুষের কাছে আস্থার প্রতীক হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

তিনি বলেন, গত কয়েক মাসে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সশস্ত্র বাহিনী অত্যন্ত প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখেছে। এ ছাড়া দেশের অবকাঠামো এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন, ছিন্নমূল মানুষের জন্য বাসস্থান তৈরি এবং অন্যান্য জনকল্যাণমুখী কাজে প্রতিনিয়ত সশস্ত্র বাহিনী নিবেদিত প্রাণ।

সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আমাদের প্রত্যাশা, গণতান্ত্রিক ও নিয়মতান্ত্রিক নেতৃত্বের প্রতি অনুগত ও শ্রদ্ধাশীল থেকে পেশাগত দক্ষতা ও দেশপ্রেমের সমন্বয়ে সশস্ত্র বাহিনী দেশের সেবায় সবসময় তৎপর থাকবে।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সশস্ত্র বাহিনীর প্রশংসনীয় কাজের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী তাদের পেশাদারত্ব ও কর্মদক্ষতার মাধ্যমে, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি গত ৩৬ বছর ধরে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দক্ষতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় বাংলাদেশ একটি দায়িত্বশীল ও নির্ভরযোগ্য নাম।

বিভিন্ন সময় সশস্ত্র বাহিনীর অবদানের কথা উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান বাংলাদেশের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিখিত থাকবে। স্বাধীনতার সূচনালগ্ন থেকে দেশের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি দেশ গঠন ও জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলায় সশস্ত্র বাহিনী সব সময় কাজ করে এসেছে।

বক্তব্যে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদ, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও নির্যাতিত মা-বোনদের কথা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন অধ্যাপক ইউনূস। একই সঙ্গে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে শহীদ ও আহতদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, যাদের দুঃসাহসিক আত্মত্যাগ ও সাহস দেশ পুনর্গঠনে একটি নতুন সুযোগ সৃষ্টি করেছে, তাদের এ আত্মত্যাগ জাতি চিরদিন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।

রাজনীতি

সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে সেনাকুঞ্জে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে যে সম্মান জানানো হয়েছে, তাতে গোটা জাতি আনন্দিত।

এমনটি বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) বিকেলে সেনাকুঞ্জে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বেগম খালেদা জিয়া তার জীবনের সবচেয়ে বড় সময়টা দিয়েছেন গণতন্ত্রে জন্য, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের জন্য। ১২ বছর ধরে পরিকল্পিতভাবে সশস্ত্র বাহিনীকে তার কাছ থেকে দূরে করে রাখা হয়েছিল।

তিনি বলেন, আমি আজকে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের, বিশেষ করে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান এবং বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁনকে ধন্যবাদ জানাতে চাই।

তিনি আরও বলেন, বিশেষ করে আমাদের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। তিনি আজ ম্যাডামকে (বেগম খালেদা জিয়া) যে সম্মান দেখিয়েছেন, এতে আমরা যেমন কৃতজ্ঞ হয়েছি, একই সঙ্গে গোটা জাতি আজ আনন্দিত হয়েছে।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, খালেদা জিয়া সেনাকুঞ্জে পৌঁছে তার আসনে বসার পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস তার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। আগেই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে পৌঁছান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। খালেদা জিয়াকে অনুষ্ঠানে দেখে তিনি কেঁদে ফেলেন।

সেনাকুঞ্জের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও আবদুল মঈন খান আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

রাজনীতি

সেনাকুঞ্জে সশস্ত্র বাহিনী দিবসের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়াকে আনতে পেরে আমরা গর্বিত।

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) বিকেলে ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে আয়োজিত এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেন।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আজকে আমরা বিশেষভাবে সৌভাগ্যবান এবং সম্মানিত যে, বাংলাদেশের তিনবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া আজ এখানে আমাদের মাঝে উপস্থিত আছেন। এক যুগ ধরে তিনি এই মহাসম্মেলনে অংশগ্রহণের সুযোগ পান নাই।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আজকে সুযোগ পেয়েছেন, আমরা সবাই আনন্দিত এবং গর্বিত। আমরা এই সুযোগ দিতে পেরেছি আপনাকে। শারীরিক অসুস্থতা সত্ত্বেও এই বিশেষ দিবসে সবার সঙ্গে শরিক হওয়ার জন্য আপনাকে আবারও ধন্যবাদ। আমরা তার আশু রোগ মুক্তি কামনা করছি। এবং এই অনুষ্ঠানে বিশেষভাবে স্বাগত জানাচ্ছি।

দীর্ঘ এক যুগ পর সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে সেনাকুঞ্জের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশ নেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। ২০১৮ সালের পর খালেদা জিয়া প্রথম প্রকাশ্য কোনো কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করলেন। এর আগে সর্বশেষ ২০১২ সালে সেনাকুঞ্জে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন তিনি।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং খালেদা জিয়া পাশাপাশি বসেন। এ সময় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে খালেদা জিয়া কুশল বিনিময় করেন। খালেদা জিয়াকে বেশ উৎফুল্ল দেখা যায় এবং তাদের হাস্যোজ্জ্বল কথাবার্তা বলতে দেখা যায়।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সংবর্ধনা অনুষ্ঠান ঘুরে ঘুরে আমন্ত্রিত অতিথিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।

জানা গেছে, এবার সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির ২৬ নেতাকে সেনাকুঞ্জে আমন্ত্রণ জানানো হয়।

গত ৫ আগস্ট রাষ্ট্রপতি খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করার পর এই প্রথম রাষ্ট্রীয় কোনো অনুষ্ঠানে গেলেন তিনি।

রাজনীতি

আগামী নির্বাচনে জয়ী হলে বিএনপি একা দেশ চালাবে না। এমনটা জানিয়ে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা একটি জাতীয় সরকার গড়ে তুলব। যারা আমাদের সঙ্গে আন্দোলনে ছিল তাদের নিয়ে দেশ চালাব। তাহলে সমস্যাটা কোথায়? সন্দেহটা কোথায়? সন্দেহ কিন্তু আপনাদের ওপর আসতে শুরু করেছে।

রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে মঙ্গলবার ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ (বিএসপিপি) আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

পুলিশ প্রশাসন-নির্বাচন কমিশন ব্যবস্থা সংস্কার করে অন্তর্বর্তী সরকারকে দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সন্দেহ কিন্তু আপনাদের (অন্তর্বর্তী সরকার) ওপর আসতে শুরু করেছে। আমরা চাই, সরকার সাফল্য অর্জন করুক, তাদের সাফল্য মানে আমাদের সাফল্য। তারা ব্যর্থ হলে আমরা ব্যর্থ হবো। আমরা চাই না, শেখ হাসিনা আবার ফিরে আসুক। আমরা চাই না, আওয়ামী লীগের দু:শাসন আবার ফিরে আসুক।

শিক্ষা কাঠামোর সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ৫৩ বছরে আমরা কী সাফল্য অর্জন করেছি শিক্ষাখাতে, বিশ্বের এক হাজার ইউনিভার্সিটি মধ্যে আমাদের একটি ইউনিভার্সিটি সিরিয়ালে আসে না। কারণ আমরা ঐক্যবদ্ধ জাতি না। দেশের সবচেয়ে ক্ষতি করেছে শেখ হাসিনা। দেশের সব অর্জন ১৫ বছর শেষ করেছেন তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, দেশে গার্মেন্টস শিল্প, রেমিটেন্স, উচ্চ ফলনশীল ধানের সূচনা হয়েছিল শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাধ্যমে। নারীর ক্ষমতায়নে কাজ করেছিলেন তিনি। কীভাবে আমরা তার অবদান ভুলি? তিনি বিশ্বাস করতেন গণতন্ত্র একমাত্র রাস্তা। দেশকে ধ্বংসকারীরা তাকে হত্যা করল।

ইস্পাত কঠিন সময়ে ঐক্যের জায়গায় এক থাকতে হবে বলে আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও বিএসপিপির আহ্বায়ক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব সাংবাদিক কাদের গণি চৌধুরীর সঞ্চালনায় এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ শিক্ষক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের চেয়ারম্যান সেলিম ভূঁইয়া, ড্যাবের সাবেক সভাপতি আজিজুল হক, ড্যাবের সভাপতি হারুন আল রশীদ প্রমুখ।

রাজনীতি

সবাইকে সতর্ক ও ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ করতে পতিত স্বৈরাচারের নেতারা তাদের বিপুল পরিমাণ পাচারের টাকায় বলিয়ান হয়ে এক মহাপরিকল্পনা নিয়ে মাঠে আছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ তম দিন উপলক্ষে রোববার (নভেম্বর ১৭) সন্ধ্যা ৭টায় জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে তিনি এ বলেন।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এ সরকারকে ব্যর্থ করার জন্য, অকার্যকর করার জন্য বিশাল অর্থে বিশ্বব্যাপী এবং দেশের প্রতিটি স্থানে, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে এক মহাপরিকল্পনা প্রতি মুহূর্তে কার্যকর রয়েছে। তাদের একটি বড় প্রচেষ্টা হচ্ছে আমাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা।

তিনি বলেন, পতিত সরকারের নেতৃবৃন্দ যারা এদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করে নিয়ে গেছে সে অর্থে বলিয়ান হয়ে তারা দেশে ফিরে আসার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। তাদেরকে কিছুতেই সফল হতে দেবেন না। তারা সফল হওয়া মানে জাতির মৃত্যু। জাতি হিসেবে আমাদের অবসান।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বিশ্বের রাষ্ট্রপুঞ্জের মজলিসে আমরা এখন সম্মানিত এবং প্রশংসিত দেশের অবস্থানে পৌঁছাতে পেরেছি। এর কারণে পরাজিত শক্তি নানা কৌশল করেও তাদের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারছে না। তারা নানা চেহারা নিয়ে আপনাদের প্রিয়পাত্র হবার চেষ্টা করছে।

তিনি বলেন, পরাজিত শক্তির ষড়যন্ত্র থেকে নিজেকে মুক্ত রাখুন, দেশকে মুক্ত রাখুন। এ ব্যাপারে অনড় থাকুন। এমন কিছু করবেন না যা তাদেরকে উৎসাহিত করতে সাহায্য করে। তাদেরকে সকল দিক থেকে নিরাশ করুন। সেটা নিশ্চিত করতে পারলে আমাদের আর কোন বিষয়ে সংশয় করার প্রয়োজন নেই।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি সকল প্রকার সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আমরা আপনাদেরকে একটা মজবুত অর্থনীতি দিয়ে যাবো, ভবিষ্যতে চলার পথকে সহজগম্য করে যাবো, নাগরিক অধিকারসমূহ নিশ্চিত করে যাবো।

সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সাবধান থাকুন। তাদের সকল হীন প্রচেষ্টাকে আমাদের ঐক্যের মাধ্যমে নস্যাৎ করে দিন। যে ভাবে নস্যাৎ করেছিলেন তাদের বন্দুকের গুলিকে। তাদের আয়না ঘরকে। প্রতি পায়ে তাদের অনাচারের শিকলকে। এ ব্যাপারে সবাই একমত থাকুন, ঐক্যবদ্ধ থাকুন।

তিনি আরও বলেন, বিপক্ষ শক্তি যত শক্তিশালীই হোক, নাশকতার যত রকমই উদ্ভট পরিকল্পনাই করুক– সব কিছু নস্যাৎ করার জন্য প্রস্তুত থাকুন। এবার যে মুক্তি আমরা অর্জন করেছি তা আমাদের কাছ থেকে কেউ যেন ছিনিয়ে নিতে না-পারে তার জন্য সর্বমুহূর্তে প্রস্তুত থাকুন।

পতিত আ. লীগ সরকার রিজার্ভ তলানিতে রেখে গিয়েছিল: ইউনূস

পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বিদেশে টাকা পাচার এবং রিজার্ভের কথা তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আমরা যখন কাজ শুরু করেছি, দেশের অর্থনীতি ছিল বিপর্যস্ত। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে।

অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ তম দিন উপলক্ষে রোববার (নভেম্বর ১৭) সন্ধ্যা ৭টায় জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে তিনি এ বলেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিনে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, দেশের অর্থনীতি ছিল বিপর্যস্ত। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে। আশার কথা, এই রিজার্ভ পরিস্থিতি এখন উন্নতির পথে।

তিনি বলেন, গত তিন মাসে রিজার্ভে কোনো রকম হাত না দিয়েই আমরা প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক ঋণ শোধ করতে পেরেছি। জ্বালানি তেল আমদানিতে পুঞ্জীভূত বকেয়ার পরিমাণ ৪৭৮ মিলিয়ন ডলার হতে কমিয়ে ১৬০ মিলিয়ন ডলারে আনতে পেরেছি।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ১০০ দিন আগে আর্থিক দিক থেকে আমরা যে লণ্ডভণ্ড অবস্থা থেকে যাত্রা শুরু করেছিলাম–সেটা এখন অতীত ইতিহাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই একশো দিনে অর্থনীতি সবল অবস্থানে চলে এসেছে। এটা সম্পূর্ণ নিজস্ব নীতিমালা দিয়ে হয়েছে। বলা বাহুল্য এখনো আমাদের বন্ধুদের কাছ থেকে যে সাহায্যের আয়োজন হয়েছে তা আসা শুরু করেনি।

তিনি বলেন, বন্ধু রাষ্ট্রগুলি শুধু যে আমাদের বড় বড় অংকের সাহায্য নিয়ে আসছে তাই নয়, তারা এই সাহায্য দ্রুততম সময়ে আসা শুরু করবে এই প্রতিশ্রুতিও আমাকে দিয়েছে। এই সাহায্য আসা শুরু করলে আমাদের অর্থনীতি অত্যন্ত মজবুত এবং আকর্ষণীয় অর্থনীতিতে পরিণত হবে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও নানা রকম বিনিয়োগে উৎসাহীত হয়ে এগিয়ে আসবে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ-সহ বিভিন্ন দাতা সংস্থা ইতোমধ্যে ঋণ ও অনুদান হিসেবে প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যা আমাদের ভঙ্গুর অর্থনীতিকে সচল করতে সক্ষম হবে।

তিনি বলেন, পতিত সরকার আমাদের জন্য যে ভঙ্গুর অর্থনৈতিক পরিস্থিতি রেখে গিয়েছে তাতে রাজস্ব আদায়ে গতি আনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে। এর মধ্যেও জুলাইয়ের নেতিবাচক অবস্থা থেকে অক্টোবর নাগাদ রাজস্ব আদায়ে পৌনে ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। আগের অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে বিপুল রাজস্ব ঘাটতি ছিল। যে কারণে এবার শুরু থেকেই রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অনেক বেড়ে যায়। এর ফলে স্বৈরাচার পতনের পরবর্তী তিন মাসে পৌনে ৯ শতাংশ রাজস্ব বৃদ্ধির পরও লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ২৩ শতাংশের বেশি ঘাটতি থেকে যায়। রাজস্ব আদায়ে গতি আনতে আমি এখন অন লাইনে আয়কর রিটার্ন জমা দিতে উৎসাহিত করছি।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, ইউএনডিপি ইত্যাদির প্রধানদের সঙ্গেও আমার দীর্ঘ বৈঠক হয়েছে। তারাও বাংলাদেশকে নতুনভাবে এবং সর্বাত্মকভাবে সাহায্যের জন্য তাদের আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে একান্ত বৈঠকে চীনের পক্ষ থেকে যাবতীয় সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান বলেন, বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে এখন থেকে আমরা আলোচনা শুরু করে দিয়েছি। বিশ্বের রাষ্ট্রপুঞ্জের মজলিসে আমরা এখন সম্মানিত এবং প্রশংসিত দেশের অবস্থানে পৌঁছাতে পেরেছি। এর কারণে পরাজিত শক্তি নানা কৌশল করেও তাদের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারছে না। তারা নানা চেহারা নিয়ে আপনাদের প্রিয়পাত্র হবার চেষ্টা করছে। পরাজিত শক্তির ষড়যন্ত্র থেকে নিজেকে মুক্ত রাখুন, দেশকে মুক্ত রাখুন। এ ব্যাপারে অনড় থাকুন।

তিনি বলেন, এমন কিছু করবেন না যা তাদেরকে উৎসাহিত করতে সাহায্য করে। তাদেরকে সকল দিক থেকে নিরাশ করুন। সেটা নিশ্চিত করতে পারলে আমাদের আর কোনো বিষয়ে সংশয় করার প্রয়োজন নেই। সরকারের পক্ষ থেকে আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি সকল প্রকার সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আমরা আপনাদেরকে একটা মজবুত অর্থনীতি দিয়ে যাবো, ভবিষ্যতে চলার পথকে সহজগম্য করে যাবো, নাগরিক অধিকারসমূহ নিশ্চিত করে যাবো। বিপক্ষ শক্তি যত শক্তিশালীই হোক, নাশকতার যত রকমই উদ্ভট পরিকল্পনাই করুক– সব কিছু নস্যাৎ করার জন্য প্রস্তুত থাকুন। এবার যেমুক্তি আমরা অর্জন করেছি তা আমাদের কাছ থেকে কেউ যেন ছিনিয়ে নিতে না-পারে তার জন্য সর্বমুহূর্তে প্রস্তুত থাকুন।

ড. ইউনূস বলেন, পতিত সরকার ও তার দোসররা প্রতিবছর দেশ থেকে ১২-১৫ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছে। দুর্নীতি বিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশ সম্প্রতি এই তথ্য দিয়েছে। পাচার হয়ে যাওয়া এই অর্থ ফিরিয়ে আনার জন্য সম্ভব সকল ধরনের উদ্যোগ আমরা গ্রহণ করেছি। এ কাজে সফল হতে পারলে আমাদের অর্থনীতি আরো গতি পাবে। এ কাজে আমরা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার সাহায্য নিচ্ছি।

প্রতিটি হত্যার বিচার করব, শেখ হাসিনাকে ফেরত চাইব: ড. ইউনূস

পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে ফেরত চাওয়া হবে বলে জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, শুধু জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ড নয়, গত ১৫ বছরে সব গুম-খুন, অপকর্মের বিচার করব।

অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০তম দিন উপলক্ষে রোববার (নভেম্বর ১৭) সন্ধ্যা ৭টায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।

ড. ইউনূস বলেন, স্বৈরশাসন টিকিয়ে রাখতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছিল। বিপ্লব চলাকালে প্রায় দেড় হাজার ছাত্র-শ্রমিক জনতার শহীদি মৃত্যু হয়। আমাদের সরকার প্রতিটি মৃত্যুর তথ্য অত্যন্ত যত্নের সাথে জোগাড় করছে। এই বিপ্লবে আহত হয়েছে ১৯,৯৩১ জন। আহতদের জন্য ঢাকার ১৩টি হাসপাতালসহ বিভিন্ন বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, প্রতিদিনই তালিকায় আরও নতুন নতুন শহীদের তথ্য যোগ হচ্ছে, যারা স্বৈরাচারের আক্রোশের শিকার হয়ে এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন।

প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের বিচার করার প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, প্রতিটি হত্যার বিচার আমরা করবই। জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচারের যে উদ্যোগ আমরা নিয়েছি, তার কাজও বেশ ভালোভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকেও আমরা ভারত থেকে ফেরত চাইব।

শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক ইউনূস বলেন, কেবল জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডই নয়, আমরা গত ১৫ বছরে সব অপকর্মের বিচার করব। অসংখ্য মানুষ গুম হয়েছে, খুন হয়েছে এই সময়ে। আমরা গুমের তদন্তে একটি কমিশন গঠন করেছি। কমিশন প্রধান আমাকে জানিয়েছেন অক্টোবর পর্যন্ত তারা ১ হাজার ৬০০ গুমের তথ্য পেয়েছেন। তাদের ধারণা এই সংখ্যা ৩ হাজার ৫০০ ছাড়িয়ে যাবে।

ভাষণের শুরুতেই প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মুক্তিযুদ্ধের লাখো লাখো শহীদ এবং গত জুলাই-আগস্ট মাসে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ছাত্র শ্রমিক জনতার অভ্যুত্থানে নিহত সব শহীদকে স্মরণ করেন এবং তাদের প্রতি সশ্রদ্ধ সালাম ও গভীর শ্রদ্ধা জানান।

জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে আহত এবং সব অংশগ্রহণকারীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, স্মরণ করছি তাদের, যারা ফ্যাসিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে আহত হয়েছে, পঙ্গুত্ব বরণ করেছে, চোখের দৃষ্টি হারিয়েছে। যারা নয় দফা নিয়ে দাঁড়িয়েছে, যারা এক দফা নিয়ে দাঁড়িয়েছে। যারা দেশকে এক হিংস্র স্বৈরাচারের হাত থেকে বাঁচিয়েছে। কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করছি আপনাদের, আপনাদের ভাই-বোনদের, আপনাদের সন্তানদের যারা এই বিপ্লবে অংশগ্রহণ করেছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম ১০০ দিন অতিক্রম করার কথা উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, স্বৈরশাসনে বিপর্যস্ত এই দেশকে আমাদের সবাইকে মিলে পুনর্গঠন করতে হচ্ছে। জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের পর আমরা এমন একটি দেশ হাতে পেয়েছি, যার সর্বত্র ছিল বিশৃঙ্খলা।