অর্থনীতি

লতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরের প্রথম ২২ দিনে প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন ১০৫ কোটি ৪৯ লাখ ৬০ হাজার ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১১ হাজার ৫৫১ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা ধরে)।

রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

সেপ্টেম্বরের ২২ দিনে গড়ে প্রতিদিন দেশে এসেছে ৪ কোটি ৭৯ লাখ ৫২ হাজার ডলার প্রবাসী আয়।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৯ কোটি ১১ লাখ ৩০ হাজার ডলার, বিশেষায়িত একটি ব্যাংকের মাধ্যমে ২ কোটি ৯৮ লাখ ৮০ হাজার ডলার, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৯২ কোটি ৯৮ লাখ ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৪১ লাখ ৫০ হাজার ডলার দেশে এসেছে।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৯৭ কোটি ৩১ লাখ ৫০ হাজার ডলার এবং আগস্টে প্রবাসী আয় আসে ১৫৯ কোটি ৯৪ লাখ ৫০ হাজার ডলার। এক মাসের ব্যবধানে রেমিট্যান্স কমে ৩৭ কোটি ৩৭ লাখ মার্কিন ডলার।

বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট প্রবাসী আয় আসে ২ হাজার ১৬১ কোটি ৭ লাখ মার্কিন ডলার। আগের ২০২১-২০২২ অর্থবছরে মোট প্রবাসী আয় এসেছিল ২ হাজার ১০৩ কোটি ১৭ লাখ মার্কিন ডলার। ২০২০-২১ অর্থবছরে সর্বোচ্চ প্রবাসী আয় আহরণ হয়েছিল, যার পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ মার্কিন ডলার।

অর্থনীতি

দেশের ডলার বাজারের অস্থিরতা এখন চরম স্থবিরতায় রূপ নিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক, বাণিজ্যিক ব্যাংক, রপ্তানিকারক, মানি চেঞ্জার্স, খোলাবাজার সর্বত্রই চলছে স্থবিরতা। সংকট প্রকট আকার ধারণ করায় কেউ এখন ডলার ছাড়ছে না। ডলার ছেড়ে দিলে প্রয়োজনে আবার পাওয়া যাবে কিনা-এমন শঙ্কা অনেকেরই। তারা এখন ডলার ধরে রাখতে চাচ্ছে। যে কারণে বাজারে ডলারের লেনদেন কমে গেছে। এতে ডলারের সংকট সর্বত্রই আরও প্রকট হচ্ছে। আমদানির এলসি খোলা যাচ্ছে না। ফলে অর্থনৈতিক সংকট আরও ঘনীভূত হতে পারে।

সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভের ক্ষয় রোধ করতে বা পতন ঠেকাতে ডলার বিক্রি কমিয়ে দিয়েছে। এতে বাজারে সংকট আরও বেড়েছে। ব্যাংকগুলো এখন আমদানির ও বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের জন্য চাহিদা অনুযায়ী ডলার পাচ্ছে না। ফলে অনেক দায়দেনা স্থগিত রাখতে হচ্ছে। এতে সুদ যেমন বাড়ছে, তেমনি আরোপিত হচ্ছে দণ্ড সুদ। ফলে বিশ্ববাজারে দেশের দুর্নাম হচ্ছে। অতিরিক্ত নিরাপত্তার জন্য বিদেশি ব্যাংকগুলো এখন এলসি কমিশনের ওপর বাড়তি প্রিমিয়াম আরোপ করছে। এতে আমদানি খরচ আরও বেড়ে যাচ্ছে। আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রায় ১০-১২ কোটি ডলার পর্যন্ত বিক্রি করত। এখন মাঝে মধ্যে বিক্রি করছে ৫-৭ কোটি ডলার। তারপরও রিজার্ভের ক্ষয় রোধ করা যাচ্ছে না। ২০২১ সালের আগস্টে গ্রস রিজার্ভ সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৮০৬ কোটি ডলারে উঠেছিল। এখন তা কমে ২ হাজার ৭৩৩ কোটি ডলারে নেমেছে। নিট রিজার্ভ আরও কমে ২ হাজার ১৫২ কোটি ডলার হয়েছে। যা দিয়ে তিন মাসের কিছু বেশি সময়ের আমদানির দায় মেটানো সম্ভব হবে।

ব্যাংকগুলোতে ডলারের সংকট প্রকট আকার ধারণ করায় রপ্তানি ও রেমিট্যান্সের মাধ্যমে অর্জিত কোনো ডলার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বিক্রি করছে। ফলে রিজার্ভে কোনো ডলার যোগ হচ্ছে না। তবে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফের ঋণের কিস্তির অর্থ পেলে সেগুলোই কেবল রিজার্ভে যোগ হচ্ছে। এসব খাতে ডলার পাওয়া যাচ্ছে চাহিদার তুলনায় অনেক কম। ফলে জরুরি প্রয়োজনে রিজার্ভ থেকেই চাহিদা মেটানো হচ্ছে।

রপ্তানির ডলার দিয়ে এখন রপ্তানিকারকদেরই চাহিদা মিটছে না। ফলে তারা ডলার ছাড়তে চাচ্ছেন না। ছাড়লে এলসি খোলার সময় ডলার না পাওয়ার অভিজ্ঞতাও অনেকের রয়েছে। এছাড়া মাস ঘুরলেই প্রতি ডলারে ১ টাকা বেশি পাওয়া যাচ্ছে। এজন্য রপ্তানিকারকরাও ডলার ধরে রাখতে চাচ্ছেন। এ প্রেক্ষাপটে গত ৪ আগস্ট কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক সার্কুলার জারি করে রপ্তানিকারকের প্রয়োজনে এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে ডলার স্থানান্তরের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এতে এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে ডলার স্থানান্তর আরও কমে গেছে। আগে রপ্তানিকারক নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী এক ব্যাংক থেকে ডলার অন্য ব্যাংকে স্থানান্তর করে এলসির দেনা শোধ করতে পারতেন। এখন সেটি করা যাচ্ছে না।
এলসির দেনা শোধ করে ব্যাংকগুলোর কাছে রেমিট্যান্স বাবদ প্রাপ্ত ডলারের কিছু অংশ নিজেদের কাছে থাকত। সেগুলো তারা অন্য ব্যাংকে বিক্রি করত। এখন যেসব ব্যাংকে রেমিট্যান্স বেশি আছে তারাই কেবল অন্য ব্যাংকে কিছু ডলার বিক্রি করতে পারছে। মাত্র ৭-৮টি ব্যাংকের অন্য ব্যাংকে ডলার বিক্রির সক্ষমতা রয়েছে। বাকিদের নেই। যাদের আছে তারাও বিক্রি কমিয়ে দিয়েছে। কেবল ওপেন পজিশন লিমিট বা ডলার রাখার নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করলে সেগুলো অন্য ব্যাংকে বিক্রি করছে। এছাড়া করছে না।

বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) বিধান অনুযায়ী ব্যাংকগুলোর চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত ডলার থাকলে তা আন্তঃব্যাংকে বিক্রি করতে পারবে। তবে এক্ষেত্রে প্রতি ডলারে গড় কেনা দামের চেয়ে ১ টাকা মুনাফা করতে পারবে। তবে কোনোক্রমেই ডলারের দাম সর্বোচ্চ ১১০ টাকার বেশি হবে না। বর্তমানে ব্যাংকগুলো ডলার কিনছে ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা দরে। ১১০ টাকায় বিক্রি করলে তাদের মুনাফা থাকে ৫০ পয়সা। এর সঙ্গে পরিচালন খরচ যোগ করলে এতে মুনাফা থাকে না। এ কারণে আন্তঃব্যাংকের স্পট মার্কেটে ডলার বেচাকেনা একেবারেই কমে গেছে। তবে আগাম বা ফরোয়ার্ড বেচাকেনা কিছুটা হচ্ছে। এছাড়া সোয়াপ (এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকের মেয়াদি ধার, যার বিপরীতে সুদ দিতে হয়) হচ্ছে। এতে ডলারের দাম বেশি পড়ছে। এসব খাতে প্রতি ডলার গড়ে ১১১ থেকে ১১৪ টাকা পর্যন্ত পড়ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরও বেশি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, গত বছরের আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত আগাম কোনো ডলার বেচাকেনা হয়নি। এর আগে জানুয়ারিতে ৩ কোটি ৫ লাখ ডলার, ফেব্র“য়ারিতে ২ কোটি ৯০ লাখ ডলার, মার্চে ৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার, এপ্রিলে ৩ কোটি ৬৯ লাখ ডলার বিক্রি হয়েছে। মে মাসে কোনো বেচাকেনা হয়নি। জুনে ২০ লাখ ডলার ও জুলাইয়ে ৫০ লাখ ডলার বিক্রি হয়। চলতি বছরের জুন থেকে আগাম ডলার বেচাকেনা কিছুটা বেড়েছে। তবে তা আগের মতো নয়।
সোয়াপের আওতায় গত বছরের জানুয়ারিতে ছিল ৩২৯ কোটি ডলার, ফেব্র“য়ারিতে ৩৩২ কোটি ডলার, মার্চে ৩৪৮ কোটি ডলার, এপ্রিলে ৪০৭ কোটি ডলার, মেতে ৩৮১ কোটি ডলার, জুনে ৩৪০ কোটি ডলার, জুলাইয়ে ২২১ কোটি ডলার, আগস্টে ৩২৫ কোটি ডলার, সেপ্টেম্বরে ২৫৮ কোটি ডলার, অক্টোবরে ১৭৪ কোটি ডলার, নভেম্বরে ১৫৩ কোটি ডলার ও ডিসেম্বরে ১৮১ কোটি ডলার লেনদেন হয়। গত বছরের মতো এ বছরও এ খাতে লেনদেন কমেছে। গত জুন পর্যন্ত প্রায় অর্ধেক কমে গেছে।

এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে ডলার লেনদেন ২০১৭ সালে ছিল ১ হাজার ৮১০ কোটি ডলার। ২০১৮ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২ হাজার ১৮০ কোটি ডলার। ২০১৯ সালে তা কিছুটা কমে হয় ১ হাজার ৫৭০ কোটি ডলার। ২০২০ সালে তা দ্বিগুণ বেড়ে দাঁড়ায় ৩ হাজার ৪৫০ কোটি ডলারে। করোনার কারণে ওই বছরে দেশে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স আসে। এর বিপরীতে আমদানি ছিল কম। যে কারণে ডলারের ছড়াছড়ি ছিল বাজারে। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার থেকে ডলার কিনে রিজার্ভ বাড়িয়ে রেকর্ড উচ্চতায় তুলেছিল। তখন এক ব্যাংক অন্য ব্যাংকে দীর্ঘমেয়াদি রীতিতে ডলারের লেনদেন করে ভারসাম্য রক্ষা করে।

২০২১ সালে করোনার ধকল কমলে আমদানি বাড়তে থাকে। এ সময় আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দামও বেড়ে যায়। তখন আমদানি ব্যয়ও বাড়ে। তখনো ডলারের প্রবাহ বেশি থাকায় এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে লেনদেন বেড়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার ৩৭০ কোটি ডলারে। ২০২২ সালের ফেব্র“য়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করলে এপ্রিল থেকে ডলার সংকট প্রকট হতে থাকে। পরে তা ক্রমেই বেড়েছে। ফলে এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে ডলার লেনদেনও কমে যায়। ওই বছরে তা কমে ৩ হাজার ৭০৫ কোটি ডলারে দাঁড়ায়। চলতি বছরের জুন পর্যন্ত তা আরও কমে ১ হাজার ৭২০ কোটি ডলারে নামে। গত আগস্ট থেকে এ ধরনের লেনদেন আরও কমেছে।

এদিকে টাকার মান ধরে রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে গত বছর রেকর্ড পরিমাণ ডলার বিক্রি করে। ওই বছরে ১ হাজার ২৯৪ কোটি ডলার বিক্রি করে। এর বিপরীতে কোনো ডলার বাজার থেকে কেনেনি। চলতি বছরের শুরু থেকে ডলার বিক্রি কমিয়েছে। তারপরও রিজার্ভ থেকে গত আগস্ট পর্যন্ত ৭৮৪ কোটি ১৭ লাখ ডলার বিক্রি করেছে। এর আগে ২০১৭ সালে ১২৩ কোটি ১০ লাখ ডলার, ২০১৮ সালে ২২৯ কোটি ২০ লাখ ডলার, ২০১৯ সালে ১৬২ কোটি ১০ লাখ ডলার বিক্রি করে। ২০২০ সালে বিক্রি করেছিল মাত্র ৬৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার। ওই বছর বাজারে ডলারের প্রবাহ ছিল বেশি। যে কারণে এক ব্যাংক অন্য ব্যাংক থেকে ডলার কিনতে পেরেছে। তবে সরকারি আমদানির দায় মেটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে কম দামে ডলার দিয়েছে। কারণ ওই সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডলারের দাম বাজার থেকে ৪-৫ টাকা কম ছিল। আইএমএফের চাপে এখন বাজারের সমান দরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকও ডলার বিক্রি করে। ২০২১ সালে ডলার বিক্রি করে ২৪৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার।

এদিকে ২০২২ সালের এপ্রিল থেকে ডলার বাজারে অস্থিরতা শুরু হয়। জুনে তা প্রবল আকার ধারণ করে। সেপ্টেম্বরে গিয়ে তা আরও প্রকট হয়। ওই সময়ে ঘন ঘন ডলারের দাম এলোপাতাড়িভাবে বাড়ছিল। ওই বছরজুড়েই ছিল অস্থিরতা। গত বছরের শেষদিকে ডলারের দাম বাফেদার মাধ্যমে নির্ধারিত হতে শুরু করে। প্রতিমাসের শুরুর দিকে তারা ডলারের দাম বাড়াচ্ছিল। এতে বাজারে অস্থিরতা কমলেও ডলার সংকট প্রবল হচ্ছিল। বাফেদার নির্দেশনা ভঙ্গ করে বেশি দামে যেমন ডলার কিনেছে, তেমনি বিক্রিও করেছে। এতে ডলার কেনাবেচার সঙ্গে জড়িতরা শাস্তির মুখেও পড়েছে। সাম্প্রতিক তদন্তেও আরও কিছু ব্যাংক একই অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে শাস্তির মুখে আছে।

ঘোষিত দরের চেয়ে বেশি দামে ডলার বিক্রি ও ডলার মজুত করার খবর পেয়ে গত মাসে মানি চেঞ্জার্স ও খোলাবাজারে অভিযান পরিচালনা করে গোয়েন্দা সংস্থা। এতে বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়। কয়েকটি মানি চেঞ্জার্সের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এতে ডলার বাজারে নেমে আসে স্থবিরতা। কেউ এখন আর ডলার বিক্রি করছে না। মানি চেঞ্জার্সের বেশিরভাগই বন্ধ থাকছে। তাদের অভিযোগ, বেঁধে দেওয়া দামে ডলার মিলছে না। ফলে তারা ডলার কিনতেও পারছে না, বিক্রিও করছে না।

অর্থনীতি

বাজারের লাগাম টানতে বৃহস্পতিবার তিন পণ্য-আলু, পেঁয়াজ ও ডিমের মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। এ সিদ্ধান্ত কার্যকরে সর্বাত্মক শক্তি প্রয়োগের কথাও জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। কিন্তু রাজধানীসহ সারা দেশে নির্ধারিত মূল্য কার্যকর করা সম্ভব হয়নি।

প্রতি কেজি আলুর দাম খুচরা পর্যারে ৩৫-৩৬ টাকা নির্ধারণ করা হলেও বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকা। পেঁয়াজের দাম খুচরায় প্রতি কেজি ৬৪-৬৫ টাকা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বিক্রি হচ্ছে ৮০-৯০ টাকায়। আর প্রতি পিস ডিম ১২ টাকা বেঁধে দেওয়া হলেও বিক্রি হচ্ছে ১৩-১৪ টাকা। অর্থাৎ সরকারের আদেশের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ভোক্তার পকেট কাটছেন ব্যবসায়ীরা।

বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন-অসাধু ব্যবসায়ীরা ৩০ টাকা কেজি আলু ২০ টাকা দাম বাড়িয়ে ৫০ টাকা করার পর সরকার ১৫ টাকা কমিয়েছে। আর প্রতি পিস ডিমে অতি মুনাফা রোধে ১২ টাকা নির্ধারণ করেছে। কিন্তু বাজারে কার্যকর নেই। সাম্প্রতিক সময় একাধিকবার একাধিক পণ্যের দাম সরকার নির্ধারণ করে দিলেও তা কার্যকর করা সম্ভব হয়নি।

সরকারের বেঁধে দেওয়া দাম অমান্য করার চিত্র খোদ সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) দৈনিক বাজার মূল্য তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে। টিসিবি জানায়-শুক্রবার খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আলু ৪৩ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ টাকায় বিক্রি হয়। দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৭০-৮০ টাক। প্রতি হালি ডিম সর্বোচ্চ ৫৩ টাকায় বিক্রি হয়। অর্থাৎ প্রতি পিসের দাম হয় ১৩ টাকা ২৫ পয়সা।

জানতে চাইলে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়শন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ ও অসাধুদের অতি মুনাফা রোধে সরকার একাধিকবার একাধিক পণ্যের দাম নির্ধারণ করেছে। কিন্তু সেই দাম কার্যকর করা যায়নি। ক্রেতার বাড়তি দরেই পণ্য কিনতে হয়েছে। এবারও একই চিত্র দেখা যাচ্ছে। যদিও দাম নির্ধারণের মাত্র একদিন অতিবাহিত হয়েছে। তাই আরও কয়েকদিন দেখলে বোঝা যাবে সরকার দাম কার্যকর করতে পেরেছে কিনা।

তিনি বলেন, ‘অসাধুদের অনেক ছাড় দেওয়া হয়েছে। এবার আর ছাড় দেওয়া ঠিক হবে না। আলু নিয়ে কারা কারসাজি করছে সরকারের কাছে তথ্য আছে। ডিমের দাম বাড়িয়ে কারা ভোক্তার পকেট কেটেছে তারও তথ্য সংশ্লিষ্টদের কাছে আছে। পেঁয়াজ নিয়ে কারা অসাধু পন্থায় অতি মুনাফা করছে সে তথ্যও সরকারের কাছে আছে। তাই ভোক্তার স্বার্থে অসাধু ব্যবসায়ীদের কঠোরভাবে দমন করতে হবে।’

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বৃহস্পতিবার নিত্যপ্রয়োজনীয় কৃষিপণ্যের উৎপাদন, চাহিদা ও মূল্য পরিস্থিতি পর্যালোচনা সভা হয়। সভা শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী আলু, পেঁয়াজ ও ডিমের দাম নির্ধারণের কথা জানান। তিনি বলেন, কোল্ডস্টোরেজ পর্যায়ে প্রতি কেজি আলু ২৬-২৭ টাকায় বিক্রি করতে হবে। খুচরা পর্যায়ে বিক্রি করতে হবে ৩৫-৩৬ টাকা। প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ পাইকারি পর্যায়ে মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৩-৫৪ টাকা। আর খুচরা পর্যায়ে ৬৪-৬৫ টাকা। এছাড়া ডিমের দাম নির্ধারণ উৎপাদক পর্যায়ে ১০ টাকা ৫০ পয়সা এবং খুচরা পর্যায়ে সর্বোচ্চ ১২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কোল্ড স্টোরেজে খোঁজ নিয়ে জানা যায়- সেখানে প্রতি কেজি আলু ৩৪-৩৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রাজধানীর পাইকারি আড়তে বিক্রি হচ্ছে ৩৯-৪০ টাকা। আর খুচরা বাজারে ভোক্তার কাছে বিক্রি করা হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকা। পাশাপাশি প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ পাইকারি আড়তে বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা ও খুচরা বাজারে ৮০-৯০ টাকা। আর প্রতি পিস ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩-১৪ টাকা।

রাজধানীর নয়াবাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা হুসনে আরা বেগম বলেন, ‘সরকারের মন্ত্রীরা এসি রুমে বসে পণ্যের দাম নির্ধারণ করেন। বিভিন্ন মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তা প্রচার করা হয়। কিন্তু বাজারে এর কোনো প্রভাব পড়ে না। যারা বিষয়টি দেখবে তারাও টিনের চশমা পরে বসে আছেন। আর আমরা ভোক্তারা অসহায়ের মতো বাড়তি টাকা ব্যয় করতে করতে শেষ হয়ে যাচ্ছি।’

একই বাজারের বিক্রেতা শাহ আমানত আলী বলেন, সরকার পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দায়িত্ব শেষ করে বসে থাকে। পাইকারি বাজারে দাম না কমালে আমরা খুচরা বিক্রেতারা কি করে দাম কমিয়ে বিক্রি করব। কিন্তু দেখা যায়, যারা দাম বাড়ায় তাদের না ধরে তদারকি সংস্থা আমাদের ধরে। জরিমানা করে। এছাড়া ক্রেতারাও আমাদের গালাগাল করেন। সব মিলে আমরাও অসহায়।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, বীজ আলু বাদ দিলে কোল্ড স্টোরেজে খাবারের আলু আছে প্রায় ১২ লাখ টন; যা দিয়ে ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। কোল্ড স্টোরেজে যারা আলু সংরক্ষণ করেন তারা দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন। মাঠ থেকে নিয়ে পরিবহণ খরচ ও কোল্ড স্টোরেজ ভাড়া মিলে এক কেজি আলুর খরচ হয় ১৮-২০ টাকা। সংরক্ষণকারীরা ৬-৭ টাকা লাভ করে আলু বিক্রি করলে কোল্ড স্টোরেজ থেকে ২৬-২৭ টাকায় বিক্রি করতে পারেন। সেটাই উচিত। কিন্তু কোল্ড স্টোরেজে প্রতি কেজি আলু ৩৪-৩৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এটা ২৭ টাকার বেশি হওয়া উচিত নয়। আর বিভিন্ন হাত ঘুরে ভোক্তা পর্যায়ে ৩৬ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। কিন্তু বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা। কারা দাম বাড়াচ্ছে তা সরকারও জানে। ব্যবস্থা নিলে মূল্য কমে আসবে।

শ্যাম বাজারের পেঁয়াজের পাইকারি ব্যবসায়ী শংকর চন্দ্র দাস বলেন, আমদানিকারকরা পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণ করেন। তারা দাম বাড়ালে সারা দেশে বেড়ে যায়। আর কমালে দাম কমে। তাই সেখানে অভিযান পরিচালনা করা দরকার।

তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতির একটি সূত্র বলছে, কারা ডিমের বাজার অস্থির করেছে তা সরকার জানে। এসএমএসের মাধ্যমে কারা বাজার নিয়ন্ত্রণ করে তা গোয়েন্দা সংস্থাও জানে। তাদের রুখতে পারলে সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে ডিম বিক্রি করা যাবে।

এ ব্যাপারে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, তিনটি কৃষিপণ্যের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। কৃষি এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে এই দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর থেকে শুরু করে জেলা প্রশাসকরা (ডিসি) বাজার মনিটরিং করবে। মূল্য বাস্তবায়নে সর্বাত্মক শক্তি নিয়ে বাজারের দাম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হবে। তিনি বলেন, দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে সবকিছু বিবেচনায় নিয়েই করা হয়েছে। আশা করছি এটা আমরা বাস্তবায়ন করতে পারব। শুধু মূল্য ঘোষণা হলো। প্রচার হতে একটু সময় লাগবে। আশা করছি এক-দু দিনের মধ্যে বেঁধে দেওয়া দাম কার্যকর হবে।

বাজার তদারকি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মন্ডল বলেন, পণ্যের দাম কার্যকরে অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নির্দেশে রাজধানীসহ সারা দেশে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। শনিবার (আজ) মহাপরিচালক এইচএম সফিকুজ্জামান মুন্সীগঞ্জ জেলার বিভিন্ন আলুর হিমাগার পরিদর্শন করবেন। সব মিলে মূল্য কার্যকর করতে কাজ চলমান আছে। আশা করছি সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে পণ্য বিক্রি হবে।

চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রামে সরকার নির্ধারিত দামে মিলছে না ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ, ডিম ও আলু। অতিরিক্ত দামে বিক্রি হচ্ছে এসব পণ্য। ভোজ্যতেল ৫ টাকা কমানো হলেও চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে এর প্রভাব নেই। আগের মতোই অতিরিক্ত দামে বিক্রি হচ্ছে ভোজ্যতেল। কোথাও কোথাও দাম কমার বদলে বেড়েছে। প্যাকেটজাত সয়াবিন তেল ১৬৯ টাকা বিক্রি হওয়ার কথা থাকলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৭২-১৭৫ টাকায়। সব ধরনের ভোজ্যতেল সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে অতিরিক্ত দামে বিক্রি হচ্ছে। ভোক্তাদের অভিযোগ বাজার তদারকির অভাবে সরকার নির্ধারিত মূল্যে ব্যবসায়ীরা এসব পণ্য বিক্রি করছেন না। প্রতি কেজি ভালোমানের ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬৮ থেকে ৭০ টাকা। তবে কিছু নিুমানের পেঁয়াজ সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে। ডিমও অতিরিক্ত দামে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫২ থেকে ১৫৫ টাকায়। অথচ ডিমের সরকার নির্ধারিত দাম প্রতি ডজন ১৪৪ টাকা।

এদিকে নগরীতে সরকার নির্ধারিত দামে আলু বিক্রি না করা, মূল্য তালিকা ও ক্রয় রসিদ না রাখায় তিনটি আলুর আড়ত ও একটি ডিমের দোকানকে জরিমানা করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। শুক্রবার বেলা ১১টায় রিয়াজউদ্দিন বাজারে অভিযান নেতৃত্ব দেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্যাহ। তিনি জানান, মূল্য তালিকা যথাযথ না থাকা ও ক্রয়ের পাকা ভাউচার না থাকায় আলু ও ডিমের ৪ টি প্রতিষ্ঠানকে মোট ১৩ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

কুমিল্লা ব্যুরো জানায়, কুমিল্লা নগরীর রাজগঞ্জ বাজারের চার ব্যবসায়ীকে ৭ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভোক্তা অধিদপ্তর। ক্রয় ভাউচার সংরক্ষণ না করা, দৃশ্যমান স্থানে মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করা এবং মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে ভোক্তাকে প্রতারিত করায় তাদের জরিমানা করা হয়।

অর্থনীতি

ভারতে ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন পাচ্ছেন ৯৬ ব্যবসায়ী। প্রাথমিকভাবে এ তালিকা চূড়ান্ত করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। প্রত্যেক ব্যবসায়ী নির্দিষ্ট পরিমাণ ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন পাবেন।

পাশাপাশি একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রপ্তানি কার্যক্রম শেষ করতে হবে। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ইলিশ রপ্তানির পরিমাণ পাঁচ হাজার টনের নিচে। যদিও দুর্গাপূজা সামনে রেখে এবারও পাঁচ হাজার টন ইলিশের চাহিদার কথা জানিয়েছেন কলকাতার ব্যবসায়ীরা।

১ সেপ্টেম্বর কলকাতা ফিশ ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন কলকাতার বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে ইলিশ আমদানির আবেদন করে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের রপ্তানি অনুবিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ব্যবসায়ীদের দাবি পুরোটাই পূরণ করা হবে। আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা দেখে শর্ত সাপেক্ষে ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হবে।

শর্তের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে শুল্ক কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে কায়িক পরীক্ষা করানো ও রপ্তানিসংক্রান্ত কাগজপত্র জমা দেওয়া। এরই মধ্যে ইলিশের রপ্তানির পরিমাণ ও ব্যবসায়ীদের তালিকা চ‚ড়ান্ত করার কাজ চলছে। এরপর সেটি বাণিজ্যমন্ত্রী অনুমোদন দেবেন। আশা করছি, শিগগিরই এ ব্যাপারে নির্দেশনা জারি করা হবে।

এ বছর ভারতে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি চেয়ে একশ ব্যবসায়ী আবেদন করেন।

এদিকে দুর্গাপূজা শুরু হবে অক্টোবরের শেষ ভাগে। অক্টোবরে ২২ দিনের জন্য মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। গত বছর নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছিল ৭ অক্টোবর থেকে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবার তাই আগেভাগেই ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দেবে বলে জানা গেছে। যেসব প্রতিষ্ঠানকে রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হবে, তারা সে অনুযায়ী কাজ করছে কিনা, তা নজরদারিও করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ২০১২ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত রপ্তানি বন্ধ থাকলেও ২০১৯ থেকে ভারতে আবার ইলিশ রপ্তানি শুরু হয়।

বাংলাদেশ হিমায়িত খাদ্য রপ্তানিকারক সমিতির (বিএফএফইএ) হিসাবে, দেশে বছরে সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় লাখ টন ইলিশ উৎপাদিত হয়। তা থেকে রপ্তানি যেটুকু হয়, তা খুবই সামান্য। এ কারণে দাম ও সরবরাহে খুব একটা প্রভাব পড়ে না বাজারে।

বাংলাদেশ দূতাবাসে চিঠি: সম্প্রতি কলকাতায় বাংলাদেশের উপহাইকমিশনের প্রথম সচিব (বাণিজ্যিক) শামছুল আরিফ ভারতে ইলিশ আমদানির অনুমতি চেয়ে বাংলাদেশ সরকারকে একটি চিঠি দেন। ওই চিঠিতে বাংলাদেশ থেকে ইলিশ আমদানির জন্য ৬০ দিন সময় চেয়েছেন। এতে কলকাতার ফিশ ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের আবেদনের বিষয় উল্লেখ করা হয়।

এ বিষয়ে কলকাতা ফিশ ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আনোয়ার মাকসুদ বলেন, গত বছরের মতো এ বছরও আমরা কলকাতায় বাংলাদেশের উপহাইকমিশনারের কাছে চিঠি দিয়েছি। আমরা অনুরোধ করেছি যেন ইলিশ আমদানিতে আমাদের পর্যাপ্ত সময় দেওয়া হয়। যেমন গত বছর আমরা ২ হাজার ৯০০ টন আমদানির অনুমতি পেলেও সময়ের অভাবে এক হাজার ৩০০ টন ইলিশ আমদানি করতে পেরেছি।

অর্থনীতি

পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেছেন, আগস্ট মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির প্রধান নায়ক মুরগি এবং ডিম। এ মাসে রেকর্ড বেড়ে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ।

এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন মন্তব্য করেন। তিনি আরও বলেন, এটা বেড়েছে এটাকে অ্যাড্রেস করার চেষ্টা করব। শিগগিরই মূল্যস্ফীতি কমানোর চেষ্টা করব। আগস্টে মূল্যস্ফীতির নায়ক মুরগি ও ডিম। এ দুটির দাম ব্যাপক বেড়ে যাওয়ায় প্রভাব পড়েছে মূল্যস্ফীতির হিসাবে।

মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেছেন মন্ত্রী। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ বৈঠক ও ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়।

এমএ মান্নান বলেন, আমাদের দেশের যে মূল্যস্ফীতি সেটি রানওয়ে মূল্যস্ফীতি নয়। অর্থাৎ আমাদের মূল্যস্ফীতি লকলকিয়ে বাড়েনি, আবার কমেওনি। ধীরে ধীরে বেড়েছে, আবার ধীরে ধীরেই কমবে। এটা আমাদের অর্থনীতির সক্ষমতার প্রমাণ।

একই ব্রিফ্রিংয়ে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, যখনই পণ্যের দাম বাড়ে, সরকার সাড়া দেয়। এর আগে চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমদানির খরচ কমাতে শুল্ক কমিয়ে দেওয়া হয়েছে, সুদহার বাড়ানো হয়েছে। সুদ হারে ক্যাপ তুলে দেওয়া হয়েছে। তবে সুদের হার আরও একটু বাড়ানো প্রয়োজন। সেটিও হয়তো করা হবে। তিনি আরও বলেন, আমরা মূল্যস্ফীতির চক্রে পড়ে গেছি। অর্থাৎ বছরের আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে সাধারণত মূল্যম্ফীতি বাড়বেই। আবার নভেম্বর মাসে গিয়ে কমতির দিকে যাবে।

ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন- পরিকল্পনা সচিব সত্যজিত কর্মকার, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন, ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) ড. মোহাম্মদ ইমদাদউল্লা মিয়ান এবং আইএমইডির সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন। আরও উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য আব্দুল বাকী, একেএম ফজলুল হক প্রমুখ।

অর্থনীতি

জি-২০ জোটের প্রধান এজেন্ডা ‘আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা’। বিশ্বব্যাপী জিডিপির প্রায় ৮৫ শতাংশের প্রতিনিধিত্ব করে এই ফোরাম। আর বিশ্ব বাণিজ্যের ৭৫ অংশের নিয়ন্ত্রণে আছে এই জোট। জি-২০ সদস্য দেশগুলোতে আছে বিশ্বের সমগ্র জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত পরিসংখ্যানের বরাতে এএনআইয়ের প্রতিবেদন বলা হয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে জি-২০ দেশগুলোর মধ্যে ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার যুক্তরাষ্ট্র। যেখানে ১২৯ বিলিয়ন ডলারের পণ্য বাণিজ্য ও ২৭.৭ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত রয়েছে। ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার হলো চীন। চীনের সঙ্গে মোট পণ্য বাণিজ্য ১১৩.৮ বিলিয়ন ইউএস ডলার। সৌদি আরবের সঙ্গে ভারতের ৪৯.৯ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য রয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে রয়েছে ৪৯.৪ বিলিয়ন ডলারের।

জি-২০’র একমাত্র আঞ্চলিক গোষ্ঠী ইউরোপীয় ইউনিয়নও ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অংশীদার। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ভারতের পণ্য বাণিজ্য রয়েছে ১৩৫.৯ বিলিয়ন ডলারের। বাণিজ্য উদ্বৃত্ত রয়েছে ১৩.৮ বিলিয়ন ডলারের। জি-২০ জোটের সদস্য দেশগুলোতে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা ৪.৯ বিলিয়নেরও বেশি। যাদের গড় আয়ু ৭৮ বছর। আর বর্তমান গড় বয়স ৩৯ বছর।

বিশ্ব জনসংখ্যা পর্যালোচনার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বের ১৭.৮৫ শতাংশ বাস করে ভারতে। চীনে ১৭.৮১ শতাংশ। শুধ দুই দেশের জনসংখ্যাই বিশ্বের সম্পূর্ণ জনসংখ্যার ৩৫ শতাংশেরও বেশি। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা বিশ্ব জনসংখ্যার ৪.২৫ শতাংশ। ইন্দোনেশিয়ায় তা ৩.৪৭ শতাংশ। জি-২০ সদস্য দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম জনবহুল দেশ অস্ট্রেলিয়া। বিশ্ব জনসংখ্যার মাত্র ০.৩৩ শতাংশ রয়েছে দেশটিতে।

অর্থনীতি

ডলারের বাড়তি দর কার্যকর হওয়ার দুই দিনের মধ্যেই প্রায় সব ব্যাংকে বেঁধে দেওয়া সীমার সর্বোচ্চ দামে ডলার বেচাকেনা হচ্ছে।

বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) বেঁধে দেওয়া দাম রোববার থেকে কার্যকর হয়েছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজার বন্ধ থাকায় তেমন কোনো লেনদেন হয়নি। সোমবার থেকে বাড়তি দামে ডলার বেচাকেনা শুরু হয়েছে। দর কার্যকর হওয়ার প্রথম দিনেই প্রায় সব ব্যাংকে সীমার সর্বোচ্চ দামে ডলার বেচাকেনা হয়েছে।

মঙ্গলবার বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে একেবারে অংশগ্রহণ কম এমন কয়েকটি ব্যাংক ছাড়া সব ব্যাংকেই ডলারের দাম সর্বোচ্চে ওঠে।

ব্যাংকগুলোয় খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, তিনটি ছাড়া বাকি সব ব্যাংক বাফেদার বেঁধে দেওয়া সীমা ১১০ টাকা করে আমদানিতে ডলার বিক্রি করছে। একই সঙ্গে আন্তঃব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে সোমবারই ডলারের দাম সর্বোচ্চ সীমা অর্থাৎ ১১০ টাকায় ওঠে। রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় সংগ্রহে সব ব্যাংকই সর্বোচ্চ সীমা ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা করে দিচ্ছে।

তবে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে একেবারেই অংশগ্রহণ কম- এমন দুটি ব্যাংক বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক ও বেসিক ব্যাংক ১১০ টাকার কিছু কম দামে ডলার বিক্রি করছে। এছাড়া বাজারে সক্রিয় থেকেও ডাচ্-বাংলা ব্যাংক ১১০ টাকার সামান্য কম দামে আমদানি খাতে ডলার বিক্রি করছে। এর কারণ হিসাবে জানা যায়, তাদের কাছে আগের কিছু ডলার রয়েছে, যেগুলোর কেনার খরচ কম পড়েছে।

আগে ডলারের বাড়তি দর কার্যকর হওয়ার পর দুই থেকে তিন সপ্তাহ বেশির ভাগ ব্যাংক সর্বোচ্চ সীমার চেয়ে কম দামে ডলার বিক্রি করত। কারণ ওই সময়ে ব্যাংকগুলো ডলার কেনার ক্ষেত্রে দাম নিয়ে দরকষাকষি করত। ফলে সর্বোচ্চ সীমার চেয়ে কিছুটা কম দামে ডলার কিনতে পারত। এখন সেটি সম্ভব হচ্ছে না।

ব্যাংকগুলোয় ডলার সংকট এতটাই প্রকট আকার ধারণ করেছে যে এখন রীতিমতো কে বেশি ডলার সংগ্রহ করবে- এ নিয়ে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। কারণ ডলার ছাড়া আমদানির বকেয়া দেনা শোধ করা যাচ্ছে না। এতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিয়ম অনুযায়ী দেনা শোধের বিলম্বের কারণে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের দুর্নাম হয়ে যেতে পারে। অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের চাহিদা অনুযায়ী ডলারের জোগান দিয়ে এলসি খুলতে না পারলে বড় বড় এবং ভালো গ্রাহক অন্য ব্যাংকে চলে যাচ্ছেন। ফলে ব্যাংকগুলো ভালো গ্রাহক হারানোর পাশাপাশি ব্যবসাও হারাচ্ছেন। এতে অনেক ব্যাংক নানামুখী শঙ্কার মধ্যে রয়েছে। এ কারণে বেশকিছু ব্যাংক বাফেদার বেঁধে দেওয়া সর্বোচ্চ সীমার চেয়ে বেশি দামে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি খাতের ডলার কিনত। এতে তাদের ডলার কেনার খরচ বেড়ে যায়। ফলে তারা আমদানিতেও চড়া দামে ডলার বিক্রি করত।

সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালিত বিশেষ পরিদর্শন প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, একটি বেসরকারি খাতের ব্যাংক রেমিট্যান্স কিনেছে সর্বোচ্চ ১১৪ টাকা দরে। অথচ ওই সময়ে বাফেদার বেঁধে দেওয়া সর্বোচ্চ দর ছিল ১০৯ টাকা। ৫ টাকা বেশি দামে তারা রেমিট্যান্স কিনেছে। বিষয়টি জানাজানি হলে অন্য আরও কয়েকটি ব্যাংক রেমিট্যান্সের দাম বাড়িয়ে দেয়। কারণ এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো যেখানে বেশি দাম পাচ্ছে, সে ব্যাংককেই ডলার দিচ্ছে বেশি। একই এক্সচেঞ্জ হাউজ একাধিক ব্যাংকে রেমিট্যান্সের জোগান দিচ্ছে। এছাড়া দাম কম হলে প্রবাসীরাও বিকল্প থাকলে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন না। রেমিট্যান্স বেশি দামে কেনার কারণে ডলার কেনার খরচ বেশি হচ্ছে। ফলে আমদানিতেও এর দাম বাড়ছে। আমদানিতে কোনো কোনো ব্যাংক ১১৬ থেকে ১১৭ টাকা করে ডলার বিক্রি করেছেন। ওই সময়ে আমদানিতে ডলার বিক্রির সর্বোচ্চ সীমা ছিল ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা। সীমার চেয়ে সাড়ে ৭ থেকে সাড়ে ৮ টাকা বেশি দরে বিক্রি হয়েছে। এর কমে আমদানিকারকরা ডলার পাচ্ছিলেন না বলে অনেকে অভিযোগ করেছেন। ওষুধ খাতের এক ব্যবসায়ী অভিযোগ করেছেন, তিনি ১২২ টাকা করে ডলার কিনে এলসি খুলেছেন।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন একটি অনুষ্ঠানে কয়েক মাস আগে প্রকাশ্যেই বলেছিলেন, ডলার নিয়ে ব্যাংকগুলো লুটের মালের মতো আচরণ করছে। আমদানির জন্য ব্যবসায়ীরা ১১৩ থেকে ১১৪ টাকার কম ডলার পাচ্ছেন না। ওই সময়ে আমদানি খাতে ডলারের সর্বোচ্চ দর ছিল ১০৮ টাকা।

কয়েকজন ব্যাংকার জানান, কয়েকটি ব্যাংক রেমিট্যান্স কেনার ক্ষেত্রে বেশি দাম দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারকে বিশৃঙ্খল করে তুলেছে। এখন কম দাম দিয়ে রেমিট্যান্স পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে প্রবাসীরা বিকল্প পথ খুঁজছেন। তারা যেখানে ডলারের দাম বেশি পাচ্ছেন, সেখানে চলে যাচ্ছেন। এতে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স কমেছে।

এদিকে ব্যাংকে ডলারের দাম বাড়ার কারণে মানি চেঞ্জারস ও কার্ব মার্কেটেও দাম বেড়েছে। কারণ, ব্যাংকে ডলারের প্রবাহ বেশি থাকলে মানি চেঞ্জারস বা কার্ব মার্কেটেও দাম কম থাকে। ব্যাংকাররা বেশি দামে কিনছেন শুনেই মানি চেঞ্জারস ও কার্ব মার্কেটের ব্যবসায়ীরা ডলারের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে।

সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার বাজারে তদারকি জোরদার করেছে। বিশেষ পরিদর্শনের পাশাপাশি যেসব ব্যাংক অনিয়ম করছে, তাদের কাছে ব্যাখ্যা তলব করেছে। প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে আরও কয়েকটি ব্যাংকের কাছে ব্যাখ্যা তলব করা হবে।

অর্থনীতি

রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবস্থিত ঢাকা কাস্টম হাউসের গুদাম থেকে ৫৫ কেজি ৫০১ গ্রাম সোনা খোয়া গেছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। যার আনুমানিক বাজারমূল্য ৫০ কোটি টাকার বেশি।

কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, সাধারণত বিমানবন্দরে যাত্রীদের কাছ থেকে জব্দ করা সোনার বার, অলংকারসহ মূল্যবান জিনিস এই গুদামে রাখা হয়। গুদামে রক্ষিত সোনার হিসাব মেলাতে গিয়েই ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে। কীভাবে এই বিপুল পরিমাণ সোনা উধাও হলো, সে বিষয়ে মুখ খুলছেন না কাস্টম হাউসের কোনো কর্মকর্তা। ইতোমধ্যে এ ঘটনায় তদন্ত শুরু হয়েছে।

কাস্টমস সূত্রে আরও জানা গেছে, স্বর্ণের গুদাম যেখানে, সেই জায়গাটি সম্পূর্ণ সংরক্ষিত এলাকা। এছাড়া পুরো এলাকাটি সিসি ক্যামেরার নজরদারিতে। বিমানবন্দরের ভেতরে ‘লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড’ অর্থাৎ হারিয়ে যাওয়া ও খুঁজে পাওয়া পণ্য রাখার স্থানের পাশেই কাস্টম হাউসের গুদামটির অবস্থান। কাস্টম হাউসের গুদামটিতে বিমানবন্দরে কর্তব্যরত ঢাকা কাস্টম হাউস, শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরসহ অন্যান্য সংস্থাগুলোর জব্দকৃত মালামালগুলো এখানে রাখা হয়।

জানা গেছে, সোনার অলংকার ও সোনার বার মিলিয়ে প্রায় ৫৫ কেজি সোনা কাস্টমের গুদামের একটি আলমারিতে বাক্সের মধ্যে সংরক্ষিত ছিল। সেই বাক্সটিই চুরি হয়ে গেছে। গুদামের আলমারি ভেঙে চুরি করা হয়েছে বাক্সটি। কীভাবে এই সোনা গায়েব হয়েছে, তা জানতেই এখন বিমানবন্দরে বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছে।

বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, বিমানবন্দরে ২৪ ঘণ্টায় পালাক্রমে চারটি শিফট কাজ করে। এই শিফটগুলোতে জব্দ হওয়া সোনা এক গুদামেই রাখা হতো এতদিন। তবে স্বচ্ছতার স্বার্থে ঢাকা কাস্টম হাউসের কমিশনার এ কে এম নুরুল হুদা আজাদ শিফট ভিত্তিক জব্দ হওয়া সোনা আলাদা আলাদা লকারে রাখার নির্দেশনা দেন। তিনি নির্দেশ দেন, যে শিফট জব্দ করবে তাদের জব্দ করা সোনা তাদের লকারে থাকবে।

প্রায় সপ্তাহ খানেক আগে কমিশনার এ কে এম নুরুল হুদা আজাদ খবর পান প্রায় ৫৫ কেজি সোনা গুদামে নেই। এরপর একটি কমিটি করে দেওয়া হয় গুদামের সব সোনা গণনা করার জন্য। প্রাথমিকভাবে এ ঘটনার সত্যতা মেলে।

তবে রোববার ঢাকা কাস্টম হাউসের কমিশনার একটি গণমাধ্যমকে বলেছেন, এ বিষয়ে কাস্টমস কর্মকর্তারা তদন্ত করছেন, তদন্তের পর মামলা করা হবে।

এ বিষয়ে জানতে ঢাকা কাস্টম হাউজের সহকারী কমিশনার পদের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলার চেষ্টা করে । তবে, তাদের কেউই এ বিষয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি।

বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আজিজুল হক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তবে, খোয়া যাওয়া সোনার পরিমাণ কত সেটি এখনই জানাতে পারেননি তিনি। ওসি বলেন, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে একটি দল কাস্টম হাউসে গিয়েছে। ঘটনা সত্য। তবে, এখনো দালিলিক অভিযোগপত্র হাতে আসেনি। তাই কী পরিমাণ সোনা খোয়া গেছে, সেটি বলা সম্ভব নয়। অভিযোগপত্র হাতে এলে বিস্তারিত জানানো যাবে।

অর্থনীতি

ডলারের বাড়তি দাম রোববার থেকে কার্যকর হচ্ছে। ফলে আমদানিতে ডলার কিনতে হবে আগের চেয়ে আরও ৫০ পয়সা বেশি দামে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরও বেশি দিতে হবে। কারণ অনেক ব্যাংক সীমার চেয়ে বেশি দামে ডলার বিক্রি করছে। এতে আমদানি খরচ বাড়বে। এর প্রভাবে পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাবে।

এছাড়াও যে কোনো ধরনের কার্ডে বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করলে সে ক্ষেত্রেও আগের চেয়ে এক টাকা বেশি পরিশোধ করতে হবে। নগদ, ড্রাফট বা টেলিগ্রাফিক ট্রান্সফারের (টিটি) মাধ্যমে দেনা পরিশোধ করলেও বাড়তি টাকা গুনতে হবে। এতে ভোক্তার খরচ বেড়ে যাবে। ফলে সার্বিকভাবে মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ বাড়বে। এর বিপরীতে ডলারের দাম বাড়ায় টাকার মান কমে যাবে। এতে ভোক্তার ক্রয় ক্ষমতাও কমবে। সব মিলে দুর্ভোগ বাড়বে স্বল্প ও মধ্য আয়ের মানুষের।

বৃহস্পতিবার বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) বৈঠকে ডলারের দাম আরও এক দফা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

নতুন সিদ্ধান্তের আলোকে রোববার থেকে রপ্তানিকারকরা প্রতি ডলারে সর্বোচ্চ পাবেন ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা। আগে পেতেন ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা। রপ্তানিকারকরা বাড়তি পাবেন এক টাকা। প্রবাসীরা রেমিট্যান্সের ডলারের পাবেন সর্বোচ্চ ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা। আগে পেতেন ১০৯ টাকা। তারা প্রতি ডলারে ৫০ পয়সা বেশি পাবেন। বেশি দামে ডলার কেনার কারণে ব্যাংকগুলোও বেশি দামে বিক্রি করবে। ফলে আমদানিতে ডলারের দামও ৫০ পয়সা বাড়ানো হয়েছে। আগে বিক্রি হতো ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা দরে। এখন তা বাড়িয়ে ১১০ টাকা করা হয়েছে। কার্ডে মূল্য পরিশোধের ক্ষেত্রে প্রতি ডলারের জন্য গুনতে হবে ১১২ টাকা। এটা আগে ছিল ১১১ টাকা।

এ বিষয়ে রোববার বাফেদা থেকে একটি সার্কুলার জারি করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হবে। গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে বাফেদার মাধ্যমে ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। এরপর থেকে প্রতি মাসেই ডলারের দাম বাড়ানো হচ্ছে। গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেণ আক্রমণ করলে আন্তর্জাতিক বাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়ে যায়। এর প্রভাবে ডলারের দামও বাড়তে থাকে। মূলত গত বছরের মার্চ থেকেই ডলারের সংকট শুরু হয়। পরে যা প্রকট আকার ধারণ করে। এখন সংকট আরও তীব্র হচ্ছে। ২০২১ সালের আগে প্রতি ডলারের দাম ছিল ৮৪ টাকা, গত বছরের আগস্টে তা বেড়ে ৯৫ টাকা হয়। ওই এক বছরে দাম বেড়েছে ১১ টাকা। এখন প্রতি ডলারের দাম বেড়ে হয়েছে ১১০ টাকা।

গত এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ১৫ টাকা। গত দুই বছরের ব্যবধানে প্রতি ডলারের দাম বেড়েছে ২৬ টাকা। ওই সময়ে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে ৩০ শতাংশ। অর্থাৎ টাকার মান ওই হারে কমেছে। দুই বছরে ১০০ টাকা থেকে শুধু ডলারের দাম বাড়ার কারণে ৩০ টাকা ক্ষয় হয়ে গেছে।

একদিকে পণ্যমূল্য বেড়েছে, অন্যদিকে টাকার ক্ষয় বেড়েছে। ফলে মানুষ চাহিদা অনুযায়ী পণ্য কিনতে পারছে না। এর প্রভাবে কমে যাচ্ছে জীবনযাত্রার মান। খাদ্য ও চিকিৎসা খাতে ব্যয় কমিয়ে দেওয়ায় মানুষের অপুষ্টিজনিত রোগ যেমন বাড়ছে, তেমনি কমছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। এছাড়া শিক্ষা, বিনোদন ব্যয়ও কাটছাঁট করতে হচ্ছে। এতে স্বল্প ও মধ্য আয়ের মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে।

ডলারের দাম নতুন করে বাড়ানোর ফলে স্বল্প ও মধ্য আয়ের মানুষের ভোগান্তির মাত্রা আরও বাড়বে। কারণ বাড়তি দামে ডলার কিনে পণ্য আমদানি করতে হবে। ফলে আমদানি পণ্যের দাম বাড়বে। এর সঙ্গে অন্যান্য পণ্যের দামও বাড়বে। আর টাকায় ক্ষয় বাড়ার কারণে মূল্যস্ফীতির হার আরও বেড়ে যাবে। জুলাইয়ে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে খাদ্যপণ্যের দাম। যে কারণে খাদ্য খাতে মূল্যস্ফীতির হার সবচেয়ে বেশি হয়েছে অর্থাৎ ৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এর মধ্যে শহরের চেয়ে গ্রামে আবার মূল্যস্ফীতি বাড়তে শুরু করেছে। জুলাইয়ে গ্রামে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে খাদ্য মূল্যস্ফীতি। গ্রামে এ হার এখন ৯ দশমিক ৮২ শতাংশ। যা সাম্প্রতিক সময়ে মূল্যস্ফীতির হারের মধ্যে সর্বোচ্চ। অর্থাৎ যেখানে খাদ্য উৎপাদন হয় ও সরবরাহ বেশি থাকে সেখানেই খাদ্যের দাম সবচেয়ে বেশি বাড়ছে।

এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল, চাল, গম, সয়াবিন তেলসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম আবার বাড়তে শুরু করেছে। জ্বালানি তেলের দাম গত দুই মাসের ব্যবধানে প্রতি ব্যারেল ৮০ ডলার থেকে বেড়ে ৮৬ ডলারে ওঠেছে। দুই মাসের ব্যবধানে চালের দাম ৫ শতাংশ, গমের দাম ২ শতাংশ বেড়েছে। এতে আমদানি খরচও আরও বেড়ে যাবে। আমদানির পরিমাণ কমিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের ওপর চাপ কমানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু দাম বেড়ে যাওয়ার ফলে আমদানি খরচও বেড়ে যাবে। এতে ডলারের ওপর চাপ আরও বাড়বে। কমে যাবে রিজার্ভ। তখন ডলারের দাম আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বৃহস্পতিবারের মধ্যে জুলাই-আগস্টের এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) দেনা বাবদ ১০০ কোটি ডলারের বেশি পরিশোধ করতে হবে। ফলে রিজার্ভ আরও কমে যাবে। বর্তমানে নিট রিজার্ভ আছে ২ হাজার ৩০৭ কোটি ডলার। তখন রিজার্ভ ২ হাজার ২০০ কোটি ডলারের ঘরে নেমে আসতে পারে। নিট রিজার্ভ এপ্রিলে ২ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের ঘরে নেমে আসে। জুনে আকুর দেনা শোধের আগে আবার ২ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের ওপরে ওঠেছিল। আকুর দেনা শোধের পর তা আবার ২ হাজার ৩০০ কোটি ডলারে নেমে যায়। এরপর থেকে রিজার্ভ কমতেই থাকে। যা বৃহস্পতিবারের মধ্যে আরও কমে ২ হাজার ২০০ কোটি ডলারের ঘরে নেমে আসতে পারে।

আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) অন্যতম একটি শর্ত হচ্ছে সব অফিশিয়াল চ্যানেলে ডলারের একক দর নিশ্চিত করা। এ দফায় রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্সের ডলারের দাম একই করার ফলে ওই শর্ত পূরণে ব্যাংকগুলো এক ধাপ এগিয়ে গেল। আগে রপ্তানির চেয়ে রেমিট্যান্সের ডলারের দাম বেশি ছিল। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য খাতেও ডলারের একক দর প্রতিষ্ঠা করা হবে।

অর্থনীতি

দেশীয় শিল্পের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়াতে ‘শুল্ক প্রতিরক্ষণ’ হার ধাপে ধাপে কমাতে হবে। পাশাপাশি শুল্ক রেয়াত সুবিধা পরিহার করতে হবে। তবে ভোক্তার কল্যাণে আমদানি শুল্ক যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনতে হবে। এসবসহ আরও বিধিবিধান অন্তর্ভুক্ত করে সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ‘ন্যাশনাল ট্যারিফ পলিসি-২০২৩’ (জাতীয় শুল্কনীতি) গেজেট জারি করেছে।

বিধিতে আরও বলা হয়, পণ্য আমদানির কারণে শিল্পের ক্ষতি হয়, সেটি লাঘবে ‘অ্যান্টি ডাম্পিং’, ‘কাউন্টারভেইলিং’ ও ‘সেফ গার্ড’ শুল্ক আরোপের মাধ্যমে সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।

সূত্রমতে, এটি দেশের প্রথম শুল্কনীতি। এটি প্রণয়নে তাগিদ ছিল আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ)। দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে ১০ আগস্ট জাতীয় শুল্কনীতির গেজেট জারি করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে এই শুল্কনীতি দেশি শিল্পকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে বলে জানিয়েছে বিশেষজ্ঞমহল। কারণ, বিগত সময়ে নানা ধরনের সুরক্ষা পেয়ে দেশি শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। আগামী দিনগুলোয় এই নীতিমালার আওতায় সুবিধা ও সুরক্ষাগুলো পর্যায়ক্রমে তুলে নেওয়া হবে।

জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব নুসরাত জাবীন বানু রোববার জানান, ২০২৬ সালে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পর বেশকিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এই ট্যারিফ পলিসি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর জানান, এটি ১০ থেকে ১৫ বছর আগেই করা দরকার ছিল। বর্তমান জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) শুল্ক নির্ধারণ করে দেয়। এটি ভুল পলিসি। এটি করবে ট্যারিফ কমিশন ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাস্তবায়ন করবে এনবিআর। এটি নিয়ে শিল্পোদ্যোক্তাদের কাছ থেকে বিরোধিতা আসবে। কারণ, শিল্প খাত সুরক্ষা পেয়ে অভ্যস্ত। সুরক্ষা কমিয়ে দিলে তাদের অসুবিধা হওয়ার কথা। কিন্তু রপ্তানির বহুমুখীকরণ, বাজার সম্প্রসারণ, বাণিজ্য নিগোসিয়েশন, বড় দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি এবং নির্ভরশীলতা কমাতে হলে এই পলিসি দরকার আছে। দেশি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে এখন এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে যে একই পণ্য বিদেশ থেকে আমদানি হলেও টিকে থাকা যাবে।

এ প্রসঙ্গে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই-এর স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন জিটু জানান, এ নীতিতে শিল্প খাত আগামী দিনে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। কারণ, সুরক্ষা শুল্ক শিল্প খাত থেকে পর্যায়ক্রমে তুলে নেওয়া হলে বিদেশি পণ্যের কাছে টিকে থাকতে হিমশিম খেতে হবে। আমদানি পণ্যের শুল্ক কমালে অনেক পণ্য দেশের বাজার দখল করে নেবে। এসব বিষয়ও ভাবতে হবে।

জানা যায়, স্বাধীনতার ৫০ বছর পর এটি প্রথম জাতীয় শুল্কনীতি প্রণয়ন করা হলো। এর আগে আমদানি ও রপ্তানি পর্যায়ে শুল্কহার নির্ধারণ ও হ্রাস-বৃদ্ধিসহ সব চলছে অস্থায়ী ভিত্তিতে (অ্যাডহক)। এই শুল্কনীতি প্রণয়নের তাগিদ প্রথম দিয়েছে আইএমএফ। সংস্থাটি বলেছে, অনেক পণ্য আমদানিতে এখনো বাংলাদেশের শুল্কহার বেশি এবং কাঠামো জটিল। স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হয়ে উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার পথে থাকার সময়ে বিদ্যমান শুল্কহার যৌক্তিক করা দরকার। এরপর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় উদ্যোগ গ্রহণ করে এ ধরনের একটি জাতীয় শুল্কনীতি প্রণয়নের।

সূত্র জানায়, নতুন জাতীয় শুল্কনীতির আওতায় ছয় মাসের মধ্যে দেশের বিদ্যমান শুল্কহার যৌক্তিকীকরণের জন্য একটি কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। পাশাপাশি এর বাস্তবায়ন মনিটরিং করতে বাণিজ্যমন্ত্রীকে প্রধান করে ১৬ সদস্যের কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে জাতীয় শুল্কনীতিতে। আর সদস্য হিসাবে থাকবেন পররাষ্ট্র, বাণিজ্য, কৃষি, শিল্প, অর্থ এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব। এছাড়া অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবরাও এর সদস্য হিসাবে থাকবেন।

জাতীয় শুল্কনীতিতে যা আছে : বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি পর্যায়ে মোট শুল্ক ও কর আরোপোর হার ক্রমান্বয়ে হ্রাস করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি দেশে উৎপাদিত পণ্য ও সেবা এবং আমদানিকৃত পণ্যের ওপর আরোপিত সম্পূরক শুল্ক এবং মূল্য সংযোজন করকে (ভ্যাট) ‘বাণিজ্য নিরপেক্ষ কর’-এ পরিণত করতে বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে বাণিজ্য নিরপেক্ষ কর হচ্ছে আমদানি পণ্যের শুল্ক বা কর, যা সমানভাবে স্থানীয় উৎপাদিত পণ্যের ওপর আরোপ করা হয়। এছাড়া অনেক ক্ষেত্রে শুল্ক ছাড় সুবিধা রয়েছে। শুল্কনীতিতে বলা হয়েছে, ব্যবহারকারীভিত্তিক শুল্ক রেয়াত সুবিধা পরিহার করতে হবে। অর্থাৎ আগামী দিনে অনেক ক্ষেত্রে শুল্ক রেয়াত সুবিধা থাকছে না। সরকার অনেক সময়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে বিদেশে উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী আমদানির ওপর শুল্ক আরোপ করে থাকে। সেটিকে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্কব্যবস্থা বলা হয়।

শুল্কনীতিতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, কেবল জরুরি পরিস্থিতিতে এটা আরোপ করা যাবে। সেখানে আরও বলা হয়, প্রয়োজনে কোনো কোনো পণ্যের ওপর মিশ্র এবং সিজনাল শুল্ক আরোপ করতে হবে। এখানে সিজনাল শুল্ক হলো কৃষিপণ্যের পর বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন হারে আরোপিত শুল্ক, সেটির হার মৌসুমে সর্বোচ্চ থাকবে। এছাড়া বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় বাংলাদেশ আমদানি পর্যায়ে শুল্ক ও করহার একটি নির্দিষ্ট অঙ্কে রাখার অঙ্গীকার করেছে। এখানেও এর সঙ্গে মিল রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এছাড়া বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সঙ্গে মিল রেখে ন্যূনতম আমদানি মূল্য ব্যবস্থা বিলুপ্ত করতে বলা হয়েছে।

এছাড়া বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী সুপারিশের ভিত্তিতে সম্ভাবনাময় শিল্প, নতুন পণ্য উৎপাদনকারী শিল্প স্থাপন ও শিশু শিল্পের জন্য সময়াবদ্ধ প্রতিরক্ষণ দিতে হবে। শুল্কনীতিতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র, মধ্যম উদ্যোক্তা (এমএসএমই) শিল্পকে। সেখানে এমএসএমই শিল্পের স্বার্থ সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে।

এছাড়া আমদানি ও রপ্তানি নীতি অনুযায়ী আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় উভয় বাজারে বিক্রির উদ্দেশ্যে পণ্য উৎপাদনকারী শিল্প রয়েছে। এর মধ্যে শুধু রপ্তানির উদ্দেশ্যে উৎপাদিত পণ্যের কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য শুল্ক ও করের বিপরীতে শতভাগ ব্যাংক গ্যারান্টির মাধ্যমে বন্ড সুবিধা প্রদান করতে হবে। তবে শর্ত হচ্ছে, রপ্তানির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৭০ ভাগ কাঁচামাল আমদানির বন্ড সুবিধা প্রাপ্য হবে।

সেখানে আরও বলা হয়, কোনো রপ্তানি পণ্যের উৎপাদনে ব্যবহৃত কাঁচামালের ৭০ শতাংশের বেশি হলে বর্ধিত অংশের জন্য প্রচলিত নীতি অনুযায়ী শুল্ক প্রত্যাপন প্রাপ্য হবে। এই নীতিতে বলা হয়েছে, দেশের আমদানি ও রপ্তানি পর্যায়ে আরোপিত ট্যারিফকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য প্রবাহের নিয়ামক হিসাবে দেখতে হবে। এছাড়া জাতীয় শুল্কনীতিতে দেশের শতভাগ রপ্তানিমুখী শিল্প ও প্রচ্ছন্ন রপ্তানিকারকদের বন্ড ব্যবস্থা সংস্কার করতে বলা হয়েছে। বিশেষ করে বন্ড সুবিধা পাওয়া ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে অধিক স্বচ্ছতা ও সহজ করতে বলা হয়। এছাড়া বিদ্যমান শুল্ক কাঠামো আরও সহজ করা এবং শুল্ক ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে ওই নীতিতে।

জাতীয় শুল্কনীতির উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য : এই নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে বলা হয়, এতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ অথনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন হবে। এছাড়া স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পরবর্তী চ্যালেঞ্জ এবং অর্থনীতিতে বৈশ্বিক আঘাত মোকাবিলা করা যাবে। এছাড়া বাণিজ্য উদারীকরণ ও ট্যারিফ কাঠামোকে যৌক্তিকীকরণের মাধ্যমে দেশীয় শিল্পকে শক্তিশালী করতেই এই নীতি প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে আরও বলা হয়, এন্ট্রি এক্সপোর্ট ব্যয় হ্রাসের মাধ্যমে রপ্তানি সম্প্রসারণ ও বহুমুখীকরণ, শুল্ক নির্দিষ্টকরণের মাধ্যমে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানো এবং স্থানীয় বাজারে পণ্যমূল্যের অসামঞ্জস্য হ্রাস, মাত্রাতিরিক্ত প্রতিরক্ষণ বোঝা কমিয়ে ভোক্তার কল্যাণসাধন, বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক ভ্যালু চেইনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করবে এই শুল্কনীতি।

শুল্কনীতি প্রণয়নের প্রেক্ষাপট : গত কয়েক দশকে বিভিন্ন সময়ে রাজস্ব ক্ষতি কমানো এবং স্থানীয় শিল্পকে রক্ষায় আমদানি পর্যায়ে সম্পূরক ও নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপ বৃদ্ধি পায়। এটি ২০২২-২৩ অর্থবছরে গড় আমদানি শুল্কহার ১৫ দশমিক ০৯ শতাংশ দাঁড়ায়। একই সময়ে গড় প্রতিরক্ষণ শুল্ক হার ৩০ দশমিক ৫৮ শতাংশে উঠেছে। বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) হিসাব অনুযায়ী তা নামিয়ে আনতে হবে ২৫ শতাংশে।