অর্থনীতি

ডলারের তীব্র সংকটের মধ্যে বাজারে এর দাম নিয়ে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। ডলারের দামের ওপর পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বাফেদা ও এবিবির ওপর ছেড়ে দেওয়ার পর তারা এখন বাজারের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণই করতে পারছে না।

এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রেমিট্যান্সের ডলার কেনার ক্ষেত্রে কিছুটা নমনীয় হওয়ার পর বাজারে বড় ধরনের অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। রেমিট্যান্সের ডলার কেনার ক্ষেত্রে কোনো নিয়মনীতি মানা হচ্ছে না। প্রণোদনার নামে রেমিট্যান্সের ডলার ১২১ থেকে ১২৩ টাকা দরেও কিনছে কোনো কোনো ব্যাংক। বেশির ভাগই কিনছে ১১৪ থেকে ১১৬ টাকা করে। এতে ডলারে কেনার খরচ বেড়ে যাওয়ায় আমদানিতেও প্রিমিয়াম এবং নানা ফির নামে বেশি দামে ডলার বিক্রি হচ্ছে। আমদানির ডলার ১১১ টাকা করে বিক্রির কথা থাকলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১১৪ থেকে ১১৭ টাকা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরও বেশি। এতে রপ্তানিকারকরাও আপত্তি করেছেন। তারা ১১০ টাকা ৫০ পয়সা দরে এখন ডলার বিক্রি করতে চাচ্ছেন না।

এ পরিস্থিতিতে বুধবার রাতে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের লাইসেন্সধারী বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে তারা বিদ্যমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করে। তারা বলেছে, রেমিট্যান্সের ডলারের ক্ষেত্রে আগের দামই অর্থাৎ ১১০ টাকা ৫০ পয়সা বহাল থাকবে। তবে ব্যাংকের নিজস্ব প্রণোদনাসহ এর দাম কোনো ক্রমেই ১১৫ টাকার বেশি হবে না। এর চেয়ে বেশি দামে কোনো ব্যাংক রেমিট্যান্সের ডলার কিনলে এর দায়দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ব্যাংককেই বহন করতে হবে। তবে ডলার বিক্রির ক্ষেত্রে গ্রাহকের কাছ থেকে কোনো ক্রমেই বেশি দাম নেওয়া যাবে না।

সূত্র জানায়, সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে গেল ডলারের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিছুটা শিথিল হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকগুলোকে বলা হয়, বাড়তি দামে ডলার কেনার জন্য। এ মাসের শেষদিকে এসে কিছু ব্যাংক বাড়তি দামে রেমিট্যান্সের ডলার কেনা শুরু করে। ওই সময়ে ১১০ টাকা করে রেমিট্যান্সের ডলারের দাম নির্ধারিত থাকলেও তারা ১২১ থেকে ১২২ টাকা দরেও কিনেছে। একে বৈধ করার জন্য বাফেদা ও এবিবির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় রেমিট্যান্সের ডলারে ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দিতে পারবে। এর সঙ্গে সরকারি খাতের প্রণোদনা আড়াই শতাংশ। দুটি মিলে প্রণোদনা দাঁড়ায় ৫ শতাংশ। এতে রেমিট্যান্সের ডলারের দাম দাঁড়ায় প্রায় ১১৬ টাকা। কিন্তু এর আগে থেকেই কিছু ব্যাংক ১২১ থেকে ১২২ টাকা দরেও রেমিট্যান্স কিনছে।

১ নভেম্বর থেকে ডলারের দাম বাড়িয়ে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স কেনার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১১০ টাকা ৫০ পয়সা এবং বিক্রির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১১১ টাকা নির্ধারণ করা হয়। একই বৈঠকে রেমিট্যান্সের প্রণোদনার বিপরীতে সীমা তুলে দেওয়া হয়। বলা হয়, ব্যাংকগুলো নিজস্ব বিবেচনায় পর্ষদের অনুমোদন নিয়ে যে কোনো অঙ্কের প্রণোদনা দিতে পারবে। ওই প্রণোদনার অর্থ ব্যাংকের নিজস্ব তহবিল থেকে মেটাতে হবে। এর দায় গ্রাহকের ওপর চাপানো যাবে না। অর্থাৎ বেশি দামে ডলার কিনলেও বেশি দামে বিক্রি করা যাবে না। এ সুযোগে কিছু দুর্বল ব্যাংক বাড়তি রেমিট্যান্স সংগ্রহ করতে ডলারের দাম বাড়িয়ে ১২৩ টাকায়ও রেমিট্যান্স কিনে। অর্থাৎ তারা প্রতি ডলারে সাড়ে ১২টাকা প্রণোদনা দিচ্ছে। কিন্তু ওইসব ডলার বিক্রি করতে হচ্ছে সর্বোচ্চ ১১১ টাকা করে। এতে প্রতি ডলারে লোকসান হচ্ছে সাড়ে ১২ টাকা। এই লোকসান সমন্বয় করতে হবে নিজস্ব অর্থ থেকে। এতে ব্যাংকগুলোর লোকসান বেড়ে যাবে। এ কারণে তারা ডলারের দাম বাড়াতে বাফেদাকে চাপ দিচ্ছে।

বাফেদা ও এবিবির বুধবারের বৈঠকে বলা হয়, রেমিট্যান্সের ডলারের দাম বেশি বাড়ানো যাবে না। কারণ, এতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে মূল্যস্ফীতিতে। এ কারণে তারা রেমিট্যান্সের প্রতি ডলারে সর্বোচ্চ সাড়ে ৪ টাকা প্রণোদনা দেওয়ার সুযোগ দিয়েছে। অর্থাৎ ১১০ টাকা ৫০ পয়সা নির্ধারিত দামের সঙ্গে সাড়ে ৪ টাকা যোগ করে সর্বোচ্চ ১১৫ টাকা করে রেমিট্যান্স কেনা যাবে। এর বেশি দামে কেনা যাবে না। তবে আমদানি, রপ্তানি ও অন্যান্য খাতে ডলার বিক্রি করতে হবে সর্বোচ্চ ১১১ টাকা দামে। রপ্তানি আয়ের ডলার কিনতে হবে সর্বোচ্চ ১১০ টাকা ৫০ পয়সা দামে। এদিকে রপ্তানিকারকরা বলছেন, একই ডলার ব্যাংক প্রবাসীদের কাছ থেকে কিনছে ১২২ থেকে ১২৬ টাকা দামে। ওই ডলারই রপ্তানিকারকদের কাছ থেকে কিনছে ১১০ টাকা ৫০ পয়সা দামে। এতে প্রতি ডলারে তারা ঠকছে সাড়ে ১১ থেকে সাড়ে ১৫ টাকা। এ কারণে তারা রপ্তানি আয়ের ডলারের দাম সমন্বয়ের দাবি তুলেছেন।

এদিকে বিদেশে এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো প্রবাসীদের কাছ থেকে ডলার কিনছে ১২২ থেকে ১২৩ টাকা দরে। ওইসব ডলার তারা এক টাকা মুনাফায় ১২৩ থেকে ১২৪ টাকার কম দামে বিক্রি করতে চাচ্ছেন না। এত দামে অনেক ব্যাংক ডলার কিনতে চাচ্ছে না। ফলে অনেক ব্যাংকের রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে গেছে। তবে কিছু ব্যাংক বাড়তি দামে ডলার কিনছে। এদিকে চড়া দামে রেমিট্যান্সের ডলার না কেনায় বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউজের কাছে মোটা অঙ্কের ডলার আটকে রয়েছে।
এদিকে খোলাবাজার বা কার্ব মার্কেটে ডলারের দাম আরও একদফা বেড়েছে। মঙ্গলবার প্রতি ডলারের দাম সর্বোচ্চ ১২২ টাকায় উঠেছিল। বুধবার তা আরও বেড়ে ১২৪ টাকা ৬০ পয়সায় ওঠে। দিনের শেষদিকে তা কোথাও কোথাও আরও বেড়ে ১২৫ টাকায়ও বিক্রি হয়। ব্যাংকগুলোয় রেমিট্যান্সের ডলার ১২২ থেকে ১২৩ টাকা ওঠায় কার্ব মার্কেটে ডলারের দামও বেড়েছে। এছাড়া ব্যাংকেও নগদ ডলারের দাম বাড়ছে। বুধবার তা সর্বোচ্চ ১১৬ টাকা করে বিক্রি হয়। তবে বেশির ভাগ ব্যাংকেই ছিল ১১৪ থেকে ১১৫ টাকা।

অর্থনীতি

দেশে এখন বৈদেশিক মুদ্রার নিট রিজার্ভ ২০ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলার (বিপিএম৬) বা দুই হাজার ৬৬ কোটি ৫৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার। গত এক সপ্তাহে ২৩১ মিলিয়ন বা ২৩ দশমিক ১ কোটি ডলার খরচের পর এ রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে।

আগামী সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) ১ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলার পরিশোধের পর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১৯ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নামবে। বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) বাংলাদেশ হালনাগাদ প্রতিবেদন ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে গ্রস রিজার্ভের পরিমাণ ২৬ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার বা দুই হাজার ৬৪২ কোটি ৬৩ লাখ ডলার। অর্থাৎ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে গঠিত তহবিলের অর্থ বাদ দিলে একই নিট রিজার্ভের পরিমাণ ২০ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলার।

এক সপ্তাহ আগে অর্থাৎ গেল ২৫ নভেম্বর বৈদেশিক মুদ্রার নিট রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন ডলার (বিপিএম৬) বা দুই হাজার ৮৯ কোটি ৭০ লাখ ৬০ হাজার ডলার। এক সপ্তাহ পর ১ নভেম্বর নিট রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলার (বিপিএম৬) বা দুই হাজার ৬৬ কোটি ৫৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার। এক সপ্তাহে রিজার্ভ কমেছে ২৩১ দশমিক ২৯ মিলিয়ন ডলার।

প্রতি দুই মাস পর পর আকুর আওতাধীন দেশগুলো দায় পরিশোধ করে। গত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর দুই মাসের দেনা ১ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলার আগামী সোমবার পরিশোধ করতে হবে বাংলাদেশকে। এই দায় পরিশোধের পর দেশের রিজার্ভ ১৯ দশমিক ৪০ মিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি নেমে আসবে।

অর্থনীতি

সৌদি আরবের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন শীর্ষ বাণিজ্য সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল আলম।

তিনি বৃহস্পতিবার (০২ নভেম্বর) ফেডারেশন অব সৌদি চেম্বার অ্যান্ড কমার্সের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আজিজ সালেহ আল ফরিদীর সঙ্গে বৈঠকে এ আহ্বান জানান।

এফবিসিসিআই সভাপতি সৌদি আরবে ৩১ সদস্যের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এ সময় তিনি সরকারের বিনিয়োগ সুবিধা উল্লেখ করে সৌদি ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, সৌদি ব্যবসায়ীদের জন্য বাংলাদেশে বিশেষ ইকোনমিক জোন তৈরি করা হয়েছে, যেখানে সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে বিনিয়োগ করার সুযোগ রয়েছে।

ফেডারেশন অব সৌদি চেম্বার অ্যান্ড কমার্সের ভাইস চেয়ারম্যান বিজনেস কাউন্সিলে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানান।

ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নতি করেছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও সৌদি আরব উভয় দেশেরই ব্যবসা ও বিনিয়োগ বাড়ার দারুণ সুযোগ রয়েছে।

তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, শিগগিরই বাংলাদেশি বিনিয়োগকারীরা সৌদি আরবের বিনিয়োগের বড় অংশীদার হবেন।

এ সময় তিনি চলতি বছরের মার্চে সৌদি আরবের বাণিজ্যমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল কাসাবির নেতৃত্বে সৌদি ব্যবসায়ী দলের এফবিসিসিআই আয়োজিত বাংলাদেশে বিনিয়োগ সামিটে যোগ দেওয়ার কথা উল্লেখ করেন, যা অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে বলে জানান।

বৈঠকে তিনি সৌদি বাজার, সৌদি আরবে বিনিয়োগের বিভিন্ন সুবিধা তুলে ধরেন।

তিনি বিভিন্ন সম্ভাবনাময় খাতে সৌদি ও বাংলাদেশের নতুন বিনিয়োগের ওপর জোর দেন।

সভায় এফবিসিসিআই সভাপতি সৌদি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশের অনুকূল বিনিয়োগ পরিবেশের উল্লেখ করে বিনিয়োগের জন্য আমন্ত্রণ জানান।

এরপর এফবিসিসিআই এবং ফেডারেশন অব সৌদি চেম্বার অ্যান্ড কমার্সের মধ্যে বিজনেস কাউন্সিল এবং রিয়াদ চেম্বার অব কমার্সের সহযোগিতায় বিটুবি ম্যাচ মেকিং সেশন অনুষ্ঠিত হয়।

উল্লেখ্য চলতি বছরের মার্চে ঢাকায় এফবিসিসিআইর আয়োজনে অনুষ্ঠিত বিজনেস সামিটে দুই দেশের মধ্যে যৌথ বিজনেস কাউন্সিল গঠিত হয়। এর ধারাবাহিকতায় রিয়াদে আজ দুই দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে প্রথম বিজনেস কাউন্সিল সভা অনুষ্ঠিত হয়। কাউন্সিলে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে জ্বালানি, আইটি, স্বাস্থ্যসেবা, পর্যটন, খাদ্যপণ্য, লজিস্টিকস, পোশাক শিল্প, ম্যানুফ্যাকচারিং ইত্যাদি অগ্রাধিকার খাত চিহ্নিত করে পারস্পরিক ব্যবসা বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে ঐক্যমত্য প্রকাশ করা হয়।
এফবিসিসিআই সভাপতি এ সময় সৌদি ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশ ভ্রমণের আমন্ত্রণ জানান। যৌথ বিজনেস কাউন্সিলে বাংলাদেশের পক্ষে এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম এবং ফেডারেশন অব সৌদি চেম্বার অ্যান্ড কমার্সের পক্ষে ওআয়াদ আল আমরি নেতৃত্ব দেন।

এর আগে বুধবার জেনারেল অথরিটি ফর ফরেন ট্রেডের (জিএএফটি) গভর্নর মোহাম্মদ আব্দুল আজিজ আব্দুলজাব্বারের সঙ্গে এফবিসিসিআই সভাপতি বৈঠক করেন।

এ সময় এফবিসিসিআইর সহ-সভাপতিসহ ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল উপস্থিত ছিলেন। সৌজন্য সাক্ষাতে জেনারেল অথরিটি ফর ফরেন ট্রেডের পক্ষ হতে দুই দেশের ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দেওয়া হয়।

উল্লেখ্য, এফবিসিসিআইর এ প্রতিনিধিদল আগামী ৬ নভেম্বর জেদ্দা চেম্বার অব কমার্সের সঙ্গে অনুরূপ বৈঠক এবং বিটুবি ম্যাচ মেকিং সেশন নির্ধারিত রয়েছে।

এ বৈঠকে রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষে মিশন উপপ্রধান মো. আবুল হাসান মৃধা, ইকনমিক মিনিষ্টার মুর্তুজা জুলকার নাঈন নোমান, জেদ্দাস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কমার্শিয়াল কাউন্সেলর সৈয়দা নাহিদা হাবিবা ও দূতাবাসের প্রথম সচিব (প্রেস) মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

অর্থনীতি

বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো তারল্য বা টাকার ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বড় ধরনের চাপে পড়েছে। এই চাপ সামাল দিতে একদিকে বিভিন্ন ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিশেষ তারল্য সহায়তার আওতায় চড়া সুদে ধার নিচ্ছে।

অন্যদিকে কলমানি মার্কেট বা অন্য ব্যাংক থেকে নিচ্ছে স্বল্পমেয়াদি ধার। এই ধার নেওয়ার প্রবণতা এখন মাত্রাতিরিক্ত হারে বেড়ে গেছে। গত বুধবার একদিনেই ব্যাংকগুলো বিভিন্ন উৎস থেকে প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকা ধার করেছে। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সাড়ে ২৪ হাজার কোটি টাকা, কলমানি মার্কেট ও অন্য ব্যাংক থেকে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ধার করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে প্রায় প্রতিদিনই ব্যাংকগুলো মোটা অঙ্কের অর্থ ধার করছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ধার করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে।

সূত্র জানায়, মূলত পাঁচ কারণে তারল্য ব্যবস্থাপনায় বড় চাপ তৈরি হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- বৈদেশিক মুদ্রার সংকট মেটাতে নগদ টাকা দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডলার কেনায় তারল্যের একটি অংশ চলে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। রপ্তানি আয় ও প্রবাসীদের রেমিট্যান্স কমার কারণে ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ডলার বিক্রি করতে পারছে না, ফলে বৈদেশিক মুদ্রা কেনা বাবদ কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকার জোগান কমেছে। আমানত প্রবাহ বাড়ার তুলনায় ঋণের প্রবাহ বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে ব্যাংকে যে টাকা ঢুকছে, তার চেয়ে বেশি বেরিয়ে যাচ্ছে। বিতরণ করা ঋণ আদায় করতে ব্যর্থতায় তারল্যের জোগান বাড়ছে না। ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ বাড়ায় এর বিপরীতে প্রভিশন রাখতে গিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা আটকে যাচ্ছে। কিছু দুর্বল ও সবল ব্যাংক এখন তারল্য সংকটে পড়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি ব্যাংকে বড় ধরনের জালিয়াতির কারণে মোটা অঙ্কের টাকা বেরিয়ে গেছে। বেশ কিছু ব্যাংকে এখনো বাড়তি তারল্য রয়েছে।

এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তারল্যের জোগান বাড়ানোর কারণে ব্যাংকগুলোতেও এর প্রবাহ বেড়েছে। একই সঙ্গে আমানত প্রবাহও বাড়তে শুরু করেছে। তবে রেমিট্যান্স কমায় তারল্যে কিছুটা ঘাটতি রয়েছে। এছাড়া আগে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে জনগণের হাতে রাখার প্রবণতা বাড়লেও এখন তা কমছে। এতেও তারল্যের জোগান আগের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে। এসব কারণে ব্যাংকগুলোতে অতিরিক্ত তারল্য কমার প্রবণতা হ্রাস পেয়ে এখন বাড়তে শুরু করেছে। গত জুনে ব্যাংকগুলোতে অতিরিক্ত তারল্য ছিল ৪ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকা। গত আগস্টে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৩৮ হাজার কোটি টাকা। দুই মাসে অতিরিক্ত তারল্য বেড়েছে ১৭ হাজার কোটি টাকা। ২০২১ সালের জুনে অতিরিক্ত তারল্য ছিল ৪ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা, ২০২২ সালের জুনে তা কমে দাঁড়ায় ৪ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকায়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, কিছু ব্যাংক যেমন বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তারল্য সহায়তা নিচ্ছে। আবার এর বিপরীত চিত্রও আছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ট্রেজারি বিলের নিলামে অনেক ব্যাংক চাহিদার চেয়ে বেশি টাকার বিল কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছে। অর্থাৎ ওইসব ব্যাংকে অতিরিক্ত তারল্য রয়েছে।

গত বুধবার বিশেষ তারল্য সহায়তার আওতায় ১৯টি ব্যাংক মোট ২৪ হাজার ৪৫৫ কোটি টাকা ধার নেয়। এর মধ্যে বেশির ভাগই সাত দিন মেয়াদি বিলের আওতায়। সামান্য টাকা নেওয়া হয়েছে একদিন মেয়াদি বিলের আওতায়। এর বিপরীতে গড় সুদ নেওয়া হচ্ছে ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে ৯ দশমিক ২৫ শতাংশ। যা ব্যাংকগুলোর আমানতের সুদের সমান। চড়া সুদে ধার নেওয়ার কারণে ব্যাংকগুলোর তহবিল ব্যবস্থাপনার খরচ বেড়ে যাচ্ছে। একইদিন কলমানি মার্কেট ও মুদ্রা বাজার থেকে এক ব্যাংক অন্য ব্যাংক থেকে ধার করেছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা। গত বৃহস্পতিবার একই বাজার থেকে মোট ধার করেছে ৪ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা। এর মধ্যে একদিনের জন্য কলমানিতে ধার নিয়েছে ৪ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। বাকি টাকা স্বল্পমেয়াদি ধার।

গত ২৩ অক্টোবর কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিশেষ তারল্য সহায়তার আওতায় ধার নেয় ১৬ হাজার ৯১ কোটি টাকা। সুদের হার ছিল পৌনে ৭ থেকে সোয়া ৯ শতাংশ। ২২ অক্টোবর একই উপকরণের মাধ্যমে নেয় ১৩ হাজার ১৮৪ কোটি টাকা। ১৯ অক্টোবর ১২ হাজার ৫১৮ কোটি টাকা। ১৮ অক্টোবর ১৪ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা ও ১৭ অক্টোবর ১৫ হাজার ৫৩২ কোটি টাকা ধার দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে। এগুলোর সুদের হার ছিল ৬ থেকে সোয়া ৯ শতাংশ। এভাবে প্রায় প্রতিদিনই কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিভিন্ন ব্যাংক ধার করছে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ধারদেনা নিয়মিত ঘটনা হলেও সাম্প্রতিক সময়ে তা মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে গেছে। এই বেড়ে যাওয়াকে ভালো চোখে দেখছেন না অনেকে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করছে, দেশে ব্যাংকের সংখ্যা বেড়েছে। ঋণ আমানত বেড়েছে। তার মধ্যে আছে ডলার সংকট। এসব কারণে এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর লেনদেন বেড়েছে। সার্বিকভাবে ব্যাংক খাতে এখন অতিরিক্ত তারল্য রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ব্যাংকগুলোকে আমানতের চেয়ে কম ঋণ দিতে হবে। কিন্তু তারা এখন বেশি দিচ্ছে। ঋণ আদায় বাড়াতে হবে, খেলাপি কমাতে হবে। এটি পারছে না। রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে পারছে না। বৈদেশিক দেনা শোধে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডলার কিনতে হচ্ছে। এছাড়া সরকার এখন টাকা ছাপিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ না নিয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে নিচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে আগে নেওয়া ঋণ এখন বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে নতুন ঋণ নিয়ে পরিশোধ করা হচ্ছে। এসব মিলে ব্যাংকগুলোর তহবিলের একটি বড় অংশ আটকে যাচ্ছে। যে কারণে তারল্য ব্যবস্থাপনায় ভারসাম্যহীনতার সৃষ্টি হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এ সংকট মোকাবিলা করতে হলে আমানত বাড়াতে হবে, ঋণ কমাতে হবে। বিতরণ করা ঋণ আদায় করতে হবে। খেলাপি কমাতে হবে। রেমিট্যান্স বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে ঋণের নামে ব্যাংক থেকে টাকা পাচার হচ্ছে কিনা সেটি দেখতে হবে, হলে বন্ধ করতে হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, গত অর্থবছরে ব্যাংক খাতে আমানত প্রবাহ বেড়েছিল ৮ দশমিক ৪০ শতাংশ। ঋণ প্রবাহ বেড়েছিল ১৫ দশমিক ২৫ শতাংশ। অর্থাৎ আমানতের চেয়ে ঋণ প্রবাহ বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। চলতি অর্থবছরের জুলাই-আগস্টে আমানত বেড়েছে ১০ দশমিক ১৮ শতাংশ। ঋণ বেড়েছে ১৪ শতাংশ। অর্থাৎ এখনো আমানতের চেয়ে ঋণ বেশি বাড়ছে। এতে ব্যাংকগুলোতে তারল্য কমে যাচ্ছে।

ব্যাংকগুলো যে ঋণ বিতরণ করছে তার সিংহভাগই আদায় করতে পারছে না। ফলে খেলাপি বাড়ছে। ২০২২ সালে মোট ঋণের ৮ দশমিক ১৬ শতাংশ ছিল খেলাপি। গত জুনে তা বেড়ে ১০ দশমিক ১১ শতাংশ হয়েছে। খেলাপি ঋণ বাড়ায় তহবিলের একটি বড় অংশ আটকে আছে। খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন রাখতে হচ্ছে। এ খাতে আটকে আছে প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা।

এদিকে ব্যাংকগুলোতে ডলার সংকট প্রকট। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডলার কিনে বৈদেশিক দেনা শোধ করতে হচ্ছে। গত অর্থবছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ১ হাজার ৩৫৭ কোটি ডলার ব্যাংকগুলোর কাছে বিক্রি করেছে। এর বিপরীতে ব্যাংক থেকে টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে গেছে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪০০ কোটি ডলার বিক্রি করেছে। এর বিপরীতে গেছে ৪২ হাজার কোটি টাকা। ওই সময়ে ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা চলে গেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। এসব অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংক তারল্য সহায়তার আওতায় ব্যাংকগুলোকে ফিরিয়ে দিচ্ছে। ডলার সংকটের কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে গত জুনের পর থেকে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স কমছে। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বেশি হওয়ায় আমদানি ব্যয়ও বেশি হচ্ছে। ফলে ব্যাংকগুলোর কাছে বাড়তি ডলার থাকছে না। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ডলার বিক্রিও করতে পারছে না। ফলে এ খাতেও টাকার জোগান কমে গেছে।

অর্থনীতি

অটো-ট্রান্সলেশনে (স্বয়ংক্রিয় অনুবাদ) ত্রুটির কারণে বেশ কিছু ফিলিস্তিনির প্রোফাইলে ‘সন্ত্রাসী’ শব্দজুড়ে যায়। এ ঘটনায় ক্ষমা চেয়েছে ইনস্টাগ্রাম কর্তৃপক্ষ।

প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট ৪০৪ মিডিয়া এক প্রতিবেদনে সর্বপ্রথম এ তথ্য সামনে নিয়ে আসে। এ ঘটনায় আক্রান্ত ব্যবহারকারীদের প্রোফাইলে ইংরেজিতে ফিলিস্তিনি শব্দটির উল্লেখ আছে।

ফিলিস্তিনের পতাকা ইমোজির সঙ্গে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ শব্দটি ‘সকল প্রশংসা আল্লাহর, ফিলিস্তিনি সন্ত্রাসীরা স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছে’– এ ইংরেজি বাক্যে অনূদিত হয়। খবর দ্য গার্ডিয়ান।

ওয়াইটিকিংখান নামে এক টিকটক ব্যবহারকারী সমস্যাটি নিয়ে পোস্ট করে। তবু বিভিন্ন শব্দের সমন্বয়ের অনুবাদে ‘সন্ত্রাসী’ শব্দটি চলে আসে। এর নিচে একজন মন্তব্য করেন, এটা কি রসিকতা! আমি মানতে পারছি না, আমি হতবাক!

ইসরাইল ও হামাসের যুদ্ধের শুরু থেকেই মেটা ফিলিস্তিনিদের পোস্ট সেন্সর করছে বলে অভিযোগ এসেছে

মেটার মুখপাত্র গার্ডিয়ানকে বলেন, ঘটনাটি নিয়ে ভিডিও প্রকাশের পর ইনস্টাগ্রাম এই সমস্যার সমাধান করেছে। এখন শব্দটি ইংরেজিতে ‘থ্যাংক গড’–এই বাক্যে অটো–ট্রান্সলেট হয়।

তিনি বলেন, এ ঘটনার জন্য তারা আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছেন।

ইলেকট্রনিক ফ্রনটিয়ারসের সেক্রেটারি ফাহাদ আলী সিডনিতে বসবাসরত ফিলিস্তিনি। তিনি বলেন, ঘটনাটি কীভাবে হলো এ সম্পর্কে মেটা স্পষ্ট করে কিছু বলেনি। এসব ডিজিটাল পক্ষপাতমূলক আচরণ কোথা থেকে উদ্ভব হচ্ছে সেটিই আসল দুশ্চিন্তার বিষয়।

গার্ডিয়ানকে এক সাবেক ফেসবুক কর্মী বলেছে, ঘটনাটি অনেক মানুষকে খেপিয়ে তুলেছে।

ইসরাইল ও হামাসের যুদ্ধের শুরু থেকেই মেটা ফিলিস্তিনিদের পোস্ট সেন্সর করছে বলে অভিযোগ এসেছে। ফিলিস্তিনি সমর্থনকারী অ্যাকাউন্টগুলোকে শ্যাডো ব্যানিং বা কনটেন্ট ডিমোট করছে। অর্থাৎ ব্যবহারকারীরা পোস্ট করতে পারবে কিন্তু অন্যরা তা দেখতে পারবে না বা অন্যদের ফিডে পোস্টগুলো যাবে না।

মেটা বুধবার এক ব্লগ পোস্টে বলেছে, ইসরাইলে ও হামাসের যুদ্ধের শুরু থেকেই ‘ক্ষতিকর কনটেন্টের বৃদ্ধি চিহ্নিত করতে ও এসব কনটেন্ট যেন না ছড়ায়’ এ জন্য কোম্পানি বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। মেটা কারও কণ্ঠ বন্ধ করেছে এমন কোনো প্রমাণও নেই।

কোম্পানি দাবি করছে এই সপ্তাহে বাগের কারণে ব্যবহারকারীর স্টোরিতে শেয়ার করা ইনস্টাগ্রাম রিল ও স্টোরি দেখা যাচ্ছিল না। ইসরাইল ও গাজা সম্পর্কিত পোস্ট সীমিত করা হয়নি।

আলী বলছে, এসব বিষয় নিয়ে মেটাকে আরও স্বচ্ছতা দেখাতে হবে। অনেক ফিলিস্তিনি তাদের অ্যাকাউন্ট লক্ষ্য করে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে বলে মনে করেন। এসব প্ল্যাটফরমের স্বাভাবিক নিয়মেই হচ্ছে বলে মেটা দাবি তুললেও এর মাধ্যমে শুধু ফিলিস্তিনিদেরই কণ্ঠ রোধ হচ্ছে।

অর্থনীতি

নির্ধারিত মেয়াদে শেষ হয়নি কাজ। নানা কারণে দফায় দফায় বেড়েছে মেয়াদ। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বৃদ্ধি পায় ব্যয়ও। এমন ১৫টি প্রকল্পের পেছনে মূল ব্যয়ের তুলনায় বাড়তি খরচ যাচ্ছে ৬০ হাজার ৬৫৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা, যা মূল ব্যয়ের প্রায় দ্বিগুণ। অনুমোদনের সময় ব্যয় ধরা ছিল ৭৭ হাজার ৮৫ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। কিন্তু পরবর্তী সময়ে বেড়ে দাঁড়ায় ১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৮৮ কোটি টাকা।

বাস্তবায়ন পর্যায়ে ডিজাইনে ত্রুটি, উন্নয়ন সহযোগীদের অর্থায়নে জটিলতা, সঠিক সম্ভাব্যতা যাচাই না হওয়া, ভূমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন ব্যয় বেশি, ঠিকাদারদের গাফিলতি, দরপত্র প্রক্রিয়ায় দেরিসহ নানা কারণে বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা।

কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকল্প যদি সঠিকভাবে তৈরি হতো এবং সময়ভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা করা গেলে বাড়তি টাকা নাও লাগতে পারত। এটা একধরনের অপচয়। সেই সঙ্গে যে সময়ে যেসব সুফল পাওয়ার কথা, সেগুলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দেশ ও জাতি। এর একটি কস্ট বেনিফিট অ্যানালাইসিস করা দরকার।

পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, ঢালাওভাবে অপচয় বলা যাবে না। তবে এরকম বাড়তি খরচ কাম্য নয়। এমন হওয়া উচিতও নয়, তারপরও হচ্ছে। এগুলোর সঙ্গে অনেক লোক জড়িত। কাজেই কে কোথায় ফাঁকি দিচ্ছে, বোঝা মুশকিল। অনেক ক্ষেত্রে প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে বৈদেশিক পরামর্শক যুক্ত থাকে। কিংবা বিদেশ থেকে যন্ত্রপাতি আনতে হয়। সেসব ক্ষেত্রে দেরি হলে সেটা বাস্তবতা। এছাড়া টাকার মান কমে যাওয়ায়ও কিছু প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে। পাশাপাশি বাস্তবায়ন দেরি হলে ব্যয় বাড়াটাই স্বাভাবিক। কেননা টাইম ইজ মানি। আমরা চেষ্টা করছি বলেই ধীর ধীরে এ অবস্থার উন্নতি হচ্ছে।

প্রকল্পগুলো হলো-পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেল, সাপোর্ট টু ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পিপিপি প্রজেক্ট, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ এবং দোহাজারী-রামু-গুনদুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ। আরও আছে বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি), খুলনা-মোংলা রেলপথ নির্মাণ, সিরাজগঞ্জ শিল্পপার্ক স্থাপন, চিটাগাং সিটি আউটার রিংরোড নির্মাণ এবং খুলনা শিপইয়ার্ড সড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্প। এছাড়া রয়েছে বাংলাদেশের ৬৪ জেলায় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন নির্মাণ (প্রথম পর্যায়)।

সাসেক সড়ক সংযোগ প্রকল্প-২: এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়ক ৪ লেনে উন্নীতকরণ। উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়কে দীর্ঘ সেতু নির্মাণ (এলবিসি)। জাতীয় উন্নয়ন প্রশাসন একাডেমি প্রতিষ্ঠা এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিদ্যমান চত্বরে ১টি বহুতল অফিস ভবন নির্মাণ প্রকল্প।

বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন বলেন, প্রকল্পগুলো যথাসময়ে শেষ হলে ভালোই হতো। কিন্তু সেটি না হওয়ায় যে পুরোটাই অপচয় হয়েছে, সেটিও বলা যায় না। কেননা বিআরটিসহ অনেক প্রকল্প সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা যায়, বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যয় ও মেয়াদ বাড়ার বাস্তব কারণ আছে। তবে প্রকল্প নেওয়ার সময় সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ঠিক মতো করা হলে এবং সময়ভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা থাকলে এত সমস্যা হতো না। অর্থাৎ গোড়ায় গলদ থাকলে বাস্তবায়ন পর্যায়ে এর প্রভাব পড়বেই।

সূত্র জানায়, পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পটি ২০০৭ সালের জুলাই থেকে ২০১৫ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা ছিল। সেসময় মূল অনুমোদিত ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০ হাজার ১৬১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন থেকে সরে যাওয়াসহ নানা জটিলতায় শুরুতেই হোঁচট খায় প্রকল্পটি।

পরবর্তী সময়ে সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করে প্রথম সংশোধনীতে ব্যয় ধরা হয় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি ২০ লাখ টাকা। সর্বশেষ মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার ৬০৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে মূল বরাদ্দের তুলনায় ব্যয় বেড়েছে ২২ হাজার ৪৪৩ কোটি ৭৭ লাখ টাকা।

সাপোর্ট টু ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে (পিপিপি) প্রকল্পটি ২০১১ সালের জুলাই থেকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা ছিল। মূল অনুমোদিত ব্যয় ধরা হয় ৩২১৬ কোটি টাকা। কিন্তু সর্বশেষ মেয়াদ বাড়িয়ে করা হয়েছে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। জমির দাম এবং পুনর্বাসন ব্যয়সহ নানা কারণে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৪৯১৭ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে অতিরিক্ত ব্যয় বেড়েছে ১৭০১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। এছাড়া পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পটি ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে ৩৪ হাজার ৯৮৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়নের কথা ছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে চায়না এক্সিম ব্যাংকের অর্থায়ন সংক্রান্ত জটিলতায় প্রকল্পের বাস্তবায়ন পিছিয়ে যায়। এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয় ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। বাড়তি খরচ যাচ্ছে ৪২৫৪ কোটি ৮ লাখ টাকা।

কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বহুলেন টানেল নির্মাণ প্রকল্পটি ৮৪৪৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৫ সালের নভেম্বর থেকে ২০২০ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য অনুমোদন দেয় একনেক। কিন্তু চীনা এক্সিম ব্যাংকের ঋণ প্রক্রিয়া নানা জটিলতার কারণে বাস্তবায়ন পিছিয়ে যায়। সর্বশেষ ব্যয় বাড়িয়ে ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি ৭১ লাখ টাকা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে মেয়াদও বেড়েছে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। ফলে এ প্রকল্পে অতিরিক্ত ব্যয় যাবে ২২৪৩ কোটি টাকা। দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমারের কাছে গুনদুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পটি ২০১০ সালের জুলাই থেকে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা ছিল।

সেসময় ব্যয় ধরা হয় ১৮৫২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা থেকে অর্থায়নের বিষয়টি নিশ্চিত না হওয়ায় বাস্তবায়ন পিছিয়ে যায়। সেই সঙ্গে প্রথম পর্যায়ে সিঙ্গেল লাইন মিটার গেজ ট্র্যাক নির্মাণের কথা থাকলেও পরে মিটার গেজের পরিবর্তে ডুয়েল গেজ নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। ফলে প্রথম সংশোধনীতে ১৬ হাজার ১৮২ কোটি টাকা ব্যয় বাড়িয়ে মোট খরচ ধরা হয় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত।

অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ের আরও একটি প্রকল্প হলো সিরাজগঞ্জ বিসিক শিল্পপার্ক স্থাপন। এটি ১৯৯৯ সালের ১৭ জুন অনুষ্ঠিত বিনিয়োগ বোর্ড সভায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী সিরাজগঞ্জে একটি শিল্পপার্ক স্থাপনের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত দেন। এরপর থেকেই শুরু হয় প্রকল্প প্রণয়নের কাজ। এর মাঝে চলে যায় প্রায় ২৩ বছর। দীর্ঘদিনেও কাজ শেষ না হওয়ায় খরচ বেড়েছে দ্বিগুণ। প্রকল্পটির মূল ব্যয় ছিল ৩৭৮ কোটি ৯২ লাখ টাকা। কিন্তু সর্বশেষ সংশোধনীর মাধ্যমে করা হয় ৭১৯ কোটি ২১ লাখ টাকা। সম্প্রতি ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

‘খুলনা থেকে মোংলা পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ’ প্রকল্পের মূল ব্যয় ছিল ১৭২১ কোটি ৩৯ লাখ ৩৭ হাজার টাকা। দ্বিতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে আরও ৪৫৯ কোটি ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। এতে প্রকল্পটির ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৪২৬০ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। সে হিসাবে প্রথম প্রাক্কলিত ব্যয়ের তুলনায় বর্তমান ব্যয় বেড়েছে আড়াই গুণ। সর্বশেষ সংশোধনী অনুযায়ী প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত রয়েছে। সূত্র জানায়, ২০১১ সালে ‘চিটাগাং সিটি আউটার রিং রোড’ প্রকল্প হাতে নেয় সরকার।

একে একে ১১টি বছর পেরিয়ে গেলেও শেষ হয়নি কাজ। চতুর্থ দফায় ব্যয় বাড়ানোয় ৮৫৬ কোটি ২৮ লাখ ৬০ হাজার টাকার প্রকল্পের খরচ দাঁড়িয়েছে ২৬৭৫ কোটি ৯৬ লাখ টাকায়। ফলে বাড়তি ব্যয় যাচ্ছে ১৮১৯ কোটি ৬৮ টাকা। বিআরটি গাজীপুর-এয়ারপোর্ট (গ্রেটার ঢাকা সাসটেইনেবল আরবান ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্ট) প্রকল্প। দফায় দফায় মেয়াদ বাড়ায় চার বছরের এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সময় লাগবে ১২ বছর। সর্বশেষ মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে।

এটির মূল অনুমোদিত ব্যয় ছিল ২০৩৯ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। দ্বিতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৪২৬৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা। ফলে এ প্রকল্পে বাড়তি যাচ্ছে ২২২৮ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। এদিকে পৌনে ৪ কিলোমিটার সড়ক ১৮ দশমিক ৩০ মিটার প্রশস্ত করতে সাড়ে ১১ বছর লাগছে। অথচ প্রকল্পটি অনুমোদনের সময় ২ বছরে সম্পন্ন করার কথা। সেই সঙ্গে প্রায় ৯৯ কোটি টাকার ‘খুলনা শিপইয়ার্ড সড়ক প্রশস্তকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পটির বাস্তবায়ন খরচ এখন ১৬০ কোটি ৩১ লাখ টাকা বাড়ানো হয়েছে। প্রকল্পটি শেষ করতে ২৫৯ কোটি ২১ লাখ টাকা লাগবে। ফলে বাড়তি খরচ যাবে ১৬০ কোটি ৩১ লাখ টাকা।

অর্থনীতি

সর্বজনীন পেনশন তহবিলের অর্থ বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে অর্থ বিভাগের জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ। এ পর্যন্ত তহবিলে জমা পড়া ১২ কোটি টাকা থেকে প্রায় ১১ কোটি টাকা দিয়ে ট্রেজারি বন্ড কেনা হবে। সম্প্রতি অর্থ সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদারের সভাপতিত্বে এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। রোববার এটি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সর্বজনীন পেনশন স্কিমে এ পর্যন্ত মোট যুক্ত হয়েছেন ১৪ হাজার ৮৪৬ জন এবং চাঁদা জমা পড়েছে ১২ কোটি ৯ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে সমতা স্কিমে সম্পৃক্ত হয়েছেন ১৬৬৩ জন এবং চাঁদার অঙ্ক ৩৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা। প্রবাস স্কিমে যুক্ত হয়েছেন ৪৪৬ জন এবং চাঁদার অঙ্ক ১ কোটি ১৩ লাখ টাকা। এ ছাড়া প্রগতি স্কিমে আছেন ৬৬৯৪ জন ও চাঁদার অঙ্ক ৬ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। আর সুরক্ষা স্কিমে যুক্ত হয়েছেন ৬০৪৩ জন ও মোট চাঁদা ৪ কোটি ১৬ লাখ টাকা।

জানা গেছে, রোববার এ বিষয়ে প্রক্রিয়া শেষ করা হবে। বিধিমালা হওয়ার পর অন্যান্য খাতে অর্থ বিনিয়োগের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। জনগণের অর্থ যাতে নিশ্চিতভাবে ফিরিয়ে দেওয়া যায়, সে জন্যই দ্রুত বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, অর্থ ব্যবস্থাপনায় দক্ষতার দরকার আছে।

উল্লেখ্য, গত ১৭ আগস্ট সবার জন্য পেনশন স্কিম চালু করে সরকার।

অর্থনীতি

দেশের বাজারে আবার সোনার দাম বেড়েছে। সব থেকে ভালো মানের এক ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) সোনার দাম ১ হাজার ১৬৭ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে ভালো মানের এক ভরি সোনার দাম হয়েছে ১ লাখ ৫৪৪ টাকা।

রোববার বাজুসের মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এম এ হান্নান আজাদ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, স্থানীয় বাজারে তেজাবী সোনার দাম বে‌ড়ে‌ছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন সোনার নতুন দাম নির্ধারণ করেছে। সোমবার (১৬ অক্টোবর) থেকে এটি কার্যকর করা হবে।

অর্থনীতি

দেশে খেলাপি ঋণ ও মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতিকে উদ্বেগজনক হিসাবে অভিহিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে তারা বলেছে, মূল্যস্ফীতির হারের চেয়ে মজুরি বাড়ার হার অনেক কম। এতে ভোক্তার আয় কমেছে। ফলে তাদের ক্রয় ক্ষমতা কমে গেছে। অন্যান্য খাতের তুলনায় শিল্প খাতের কর্মীদের মজুরি সবচেয়ে কম বেড়েছে। এতে শিল্প খাতে উৎপাদন কমে গেছে। বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে এখনো কিছুটা অস্থিরতা রয়েছে। তবে তা আগের চেয়ে কমেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তৈরি এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৪ অক্টোবর প্রকাশ করেছে। কিন্তু এটি এতদিন কারিগরিক ত্রুটির জন্য খোলা যায়নি। বৃহস্পতিবার প্রতিবেদনটি ডাউন করা সম্ভব হয়েছে।

প্রতিবেদনে সার্বিক অর্থনীতি সম্পর্কে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলা হয়, বাংলাদেশ চলতি অর্থবছরের দিকে তাকিয়ে আছে। এ বছরে দেশে শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি হতে পারে। বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ক্রমেই উন্নতি হচ্ছে। এর সুফল অর্থনীতিতে আসছে। একই সঙ্গে রাজস্ব ও আর্থিক খাতে সংস্কার বাস্তবায়ন করতে হবে। পরিবহণ ও জ্বালানি খাতের মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তাবায়ন হলে শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক হবে।

প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, ব্যাংকিং খাতে খেলাপি বেড়েছে রেকর্ড হারে। ২০২১ সালের জুনে খেলাপি ঋণের হার ছিল ৮ দশমিক ১৮ শতাংশ। গত বছরের জুনে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৯৬ শতাংশে। গত জুনে তা আরও বেড়ে ডাবল ডিজিটে অতিক্রম করেছে। অর্থাৎ গত জুনে এ হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ১১ শতাংশে। খেলাপি ঋণ এখন ১ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। অর্থনৈতিক মন্দায় ঋণ পরিশোধে বিশেষ ছাড় দেওয়ার পরও খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়াকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক উদ্বেগজনক হিসাবে মনে করছে।

প্রতিবেদনে খেলাপি ঋণ কমাতে ঋণখেলাপিদের নিবিড় তদারকির মধ্যে রাখার কথা বলেছে। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক সমস্যাকবলিত ব্যাংকগুলোর সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। এর মাধ্যমে ঋণ আদায় বাড়িয়ে খেলাপি ঋণ কমানোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলোকে অভ্যন্তরীণভাবে নিবিড় তদারকি বাড়াতে বলা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরিদর্শন ব্যবস্থা জোরদার করা হবে। এছাড়া সমস্যাকবলতি ব্যাংকগুলোকে উদ্ধার করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি নতুন নীতিমালা তৈরি করছে। প্রম্পট কারেকটিভ অ্যাকশন (পিসিএ) নামে এই নীতিমালাটির আওতায় ব্যাংকগুলোর ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের বিপরীতে মূলধন অনুপাত, সম্পদের গুণগত মান ও লাভজনকের একটি সীমা বেঁধে দেওয়া হবে। এটি যখন সীমার নিচে চলে যাবে তখন ওই ব্যাংককে এই নীতিমালার আওতায় বিশেষ ব্যবস্থায় তদারকি করা হবে। নীতিমালাটি নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাজ করছে। অচিরেই এটি জারি করা হবে। এর মাধ্যমে দুর্বল ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ দেওয়া হবে।

ইতোমধ্যে ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই) সে দেশের দুর্বল ব্যাংকগুলোকে তদারকি করতে এমন একটি নীতিমালা তৈরি করেছে।

এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, মূল্যস্ফীতি ও খেলাপি ঋণের ঊর্ধ্বগতি দুটোই উদ্বেগজনক এতে কোনো সন্দেহ নেই। মূল্যস্ফীতির কারণে পুরো অর্থনীতি এলোমেলো হয়ে গেছে। মূল্যস্ফীতি বেড়েছে মূলত দুটি কারণে। একটি ডলারের দাম বৃদ্ধি ও দুই পণ্যমূল্য বৃদ্ধি। ডলার বাজার ঠিক রাখতে পারলে ও বাজারে সঠিক তদারকি হলে মূল্যস্ফীতির হার এতটা বাড়ত না। কিন্তু প্রকৃত মূল্যস্ফীতির হার আরও বেশি। এছাড়া অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলায় টাকা ছাড়িয়ে সরকারকে ঋণ দেওয়ার ফলে মূল্যস্ফীতি আরও উসকে গেছে। টাকা ছাড়ানো, ডলারের দাম ও উৎপাদন খাতে ঋণের প্রবাহ বাড়ানোর দিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কঠোর ও সতর্ক দৃষ্টি রাখলে এ হার নিয়ন্ত্রণ করা যেত।

তিনি বলেন, শ্রীলংকাসহ দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশসহ বৈশ্বিকভাবে মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। বিশ্ববাজারে পণ্যের দামও কমছে। কিন্তু দেশে এ হার কমছে না।
খেলাপি ঋণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, খেলাপি ঋণ কমাতে হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে কঠোর হতে হবে। রাজনৈতিক প্রভাব মুক্ত থাকতে হবে। ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সঙ্গে ব্যাংকে যেসব জালজালিয়াতি হয়েছে সেগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে। কারণ জালজালিয়াতির মাধ্যমে নেওয়া ঋণের প্রায় পুরোটাই এখন খেলাপি হয়ে গেছে। এ কারণে খেলাপি ঋণ বেড়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, মূল্যস্ফীতির হার যেভাবে বাড়ছে তা উদ্বেগের বিষয়। এ হার গত বছরের জুলাইয়ে ছিল ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ। গত জুনে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ। গত মে মাসে এ হার ছিল ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। যা গত এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ।

মূল্যস্ফীতির হার বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈশ্বিকভাবে পণ্যের দাম বাড়ায় ও দেশে ডলারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আমদানি ব্যয় বেড়েছে। এছাড়া জলবায়ু সম্পর্কিত মৌসুমি কারণে সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগে পণ্যের উৎপাদন কম হয়েছে। এতে সরবরাহ ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। মূলত এসব কারণে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে। এর মধ্যে এবার খাদ্য ও জ্বালানি খাতে অস্থিরতার কারণে মূল্যস্ফীতির হার বেশি বেড়েছে। এই দুই খাতের মূল্যস্ফীতির বাদ দিলে তা ৭ দশমিক ৭৭ শতাংশে দাঁড়ায়। এসব কারণের পাশাপাশি দেশে পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হওয়া মূল্যস্ফীতি হার প্রধানত বেশি বেড়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, অন্যান্য সময় খাদ্য মূল্যস্ফীতি বাড়লে খাদ্যবহির্ভূত খাতে কমে। আবার খাদ্যবহির্ভূত খাতে বাড়লে খাদ্য খাতে কমে। এতে সার্বিক মূল্যস্ফীতিতে একটি ভারসাম্য থাকে। কিন্তু এবার বৈশ্বিক ও দেশীয় পরিস্থিতিতে খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত দুই খাতেই একসঙ্গে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে। বিদেশ থেকে বেশি দামে পণ্য কেনায় প্রধানত আমদানির মাধ্য মূল্যস্ফীতি দেশে এসেছে। বিশ্বব্যাপী পণ্যমূল্যের প্রভাব ও বিশ্ববাজারের সঙ্গে জ্বালানির দাম সমন্বয় করায় মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে।

এ প্রসঙ্গে পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, খেলাপি ঋণ কমাতে হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। রাজনৈতিক বিবেচনায় ছাড় দেওয়ার প্রবণতা বাদ দিতে হবে। ব্যাংক জালজালিয়াতি করলে কঠোর শাস্তি দিতে হবে। যৌক্তিক কারণ ছাড়া খেলাপি হলে তাদের অন্য ব্যবসায় ঋণ দেওয়া বন্ধ করতে হবে। তাহলে যারা ব্যবসা করবেন তারা খেলাপি হওয়ার প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসবেন। আইনের কঠোর প্রয়োগ ছাড়া খেলাপি ঋণ কমানো যাবে না। এভাবে খেলাপি ঋণ বাড়তে থাকলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাংক খাতের দুর্নাম হবে।

মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ডলারের দাম বৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধি, জ্বালানি পণ্যের মূল্য সমন্বয় এ কারণে মূল্যস্ফীতি হয়েছে। এর সঙ্গে আরও একটি কারণ হচ্ছে দেশে পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। মোবাইল ফোনের যোগে ব্যবসায়ীরা যোগাযোগ করে পণ্যের দাম ঠিক করছেন ও সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করছেন। এ খাতে তদারকি প্রয়োজন। এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংককে টাকা ছাপানো বন্ধ, ডলারের দাম বাজারের হাতে ছেড়ে দিতে হবে। এতে সাময়িকভাবে মূল্যস্ফীতি হয়তো বাড়বে। কিন্তু রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বেড়ে ডলার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে মূল্যস্ফীতির হারও স্থিতিশীল হবে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, খাদ্যপণ্যের মধ্যে সবজি, রুটি, শস্যজাতীয় পণ্য, ফল, মাছ, শুকনো খাবার সব খাতেই মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। খাদ্যবহির্ভূত খাতে আবাসন, পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, পরিবহণ, বিভিন্ন জ্বালানি, রেস্টুরেন্ট ও হোটেলের খাবার সবকিছুর দাম বেড়েছে।

এতে বলা হয়, ডলারের দাম বাড়ায় আমদানি খাতে খরচ বেড়েছে। একই সঙ্গে সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় খাদ্যবহির্ভূত খাতে মূল্যস্ফীতির হার বেশি বেড়েছে। এর মাধ্যমে অন্যান্য খাতেও মূল্যস্ফীতির ছোবল বিকশিত হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, মূল্যস্ফীতির চেয়ে মজুরি বৃদ্ধির হার অনেক কম। ফলে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। সার্বিকভাবে মজুুরি বেড়েছে ৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ। এর মধ্যে শিল্প খাতে বেড়েছে ৭ শতাংশ। অন্যান্য খাতে আরও বেশি বেড়েছে। শিল্প খাতে মজুরি কম বাড়ার কারণে উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈদেশিক মুদ্রার চলতি হিসাবে কিছুটা উদ্বৃত্ত দেখা দিলেও বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে অস্থিরতা এখনো রয়েছে। আর্থিক হিসাবে ঘাটতির কারণে এ অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।

এতে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলা হয়, পদ্মা সেতু চালুর ফলে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। ফলে চলতি অর্থবছরে দেশ শক্তিশালী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাবে। এছাড়া মেগা প্রকল্পগুলোর উদ্বোধনের ফলে অর্থনীতিতে আরও গতিশীলতা আসবে।

অর্থনীতি

প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমেরিকাতে ১৮ দিন ঘুরে আসলেন। এখন আবার ব্রাসেলসে যাবেন। চারদিকে ঘোরাঘুরি শুরু করেছেন। ঘুরে ঘুরে যদি কোনো রকমে সামাল দেওয়া যায়- সে চেষ্টা করছেন। আর ঘোরাঘুরি করে কোনো লাভ হবে না। চলে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে। বিদায় নিতেই হবে।

তিনি আরও বলেন, ‘খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই, এ দেশের সব মানুষ এখন অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। আপনাদের হাত থেকে তারা বাঁচতে চায়। এখনো বলছি, দুর্গাপূজার ছুটি থাকবে। এ সময়ে নির্বাচন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে দ্রুত একটা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে দিন। সব মানুষ ভোট দেবে এবং ভোট দিতে যাবে। আপনার তো কোনো প্রয়োজন নেই আর।

বৃহস্পতিবার বিকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক ছাত্র সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এতই যদি জনপ্রিয় হন তাহলে সুষ্ঠু একটা ভোট দিতে অসুবিধা কোথায়? পদ্মা সেতু বানিয়েছেন, আন্ডারগ্রাউন্ড টানেল বানিয়েছেন, উড়াল সেতু বানিয়েছেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বানিয়েছেন, লোকজন তো আপনাকেই ভোট দেবে। তাহলে দেন একটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন। সেটা আপনি করবেন না। কারণ জানেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আপনাদের অস্তিত্ব থাকবে না।’

আওয়ামী লীগ সবচেয়ে প্রতারক দল মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ মুখে বলবে এক কথা আর কাজ করবে আরেকটা। নির্বাচনের বিষয়ে মার্কিন একটা টিম এসেছিল। তাদের বলেছেন, ‘এখানে তো আমরাই সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন নিয়ে এসেছি। আর গত দুটি সুষ্ঠু নির্বাচন তো আমরাই করেছি। আবার করব। আমার ওপর আস্থা রাখেন আমি আবার সুষ্ঠু নির্বাচন করব।’ এটা হচ্ছে শিয়ালের মুরগি বর্গা দেওয়া। আর না। এনাফ ইজ এনাফ।

বিএনপি নেতা শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানিকে বাসা থেকে গভীর রাতে দরজা ভেঙে গ্রেফতার এবং থানায় নিয়ে নেতাকর্মীদের নির্মমভাবে নির্যাতন করার অভিযোগ তুলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এ্যানিকে নির্মমভাবে নির্যাতন করা করেছে। এসব আমরা কল্পনাও করতে পারি না। সাবেক সংসদ-সদস্য, সাবেক ছাত্রনেতা, যার কপালে স্বৈরাচারের গুলির দাগ রয়েছে। সেই এ্যানিকে অন্যায়, বেআইনিভাবে আক্রমণ করেছে, আহত করেছে। এটা আমাদের সবার জন্য লজ্জার। পুলিশ কর্মকর্তা যাদের জনগণের টাকায় বেতন হয়, তারা তার ওপর নির্যাতন করেছে। এ্যানির মতো একজন সাহসী নেতা কোন অবস্থায় আদালতে দাঁড়িয়ে বলে যে, চোর-ডাকাতকে মানুষ এভাবে মারে না, আমাকে তারা (পুলিশ) যেভাবে মেরেছে।’

ছাত্রনেতাদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখান থেকে আপনারা একটা বার্তা পাবেন। সেই বার্তা হচ্ছে, মুখ বুঝে বসে থাকবেন না, হাত গুটিয়ে বসে থাকবেন না। আপনারা যদি নিজেরা বাঁচতে চান, দেশকে বাঁচাতে চান, বাবা-মা, ভাই ও বোনদের বাঁচাতে চান তাহলে জেগে উঠতে হবে। জেগে উঠতে হবে এবং রাজপথে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। লড়াই ও সংগ্রাম করে তাদের (সরকার) পরাজিত করতে হবে। অন্যথায় আপনার মাথার ওপর চেপে বসবে। এ্যানিকে যেভাবে মেরেছে। কালকে আপনাকে সেভাবে মারবে। অনেকে বলে তরুণদের ক্ষোভ মোবাইল সেটে। ক্ষোভ মোবাইল ফোনে দিলে হবে না। ক্ষোভ রাজপথে আসতে হবে। রাজপথে এসে তাদের পরাজিত করতে হবে। রুখে দাঁড়াতে হবে।’

ছাত্রদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ‘এই ফ্যাসিবাদী শক্তি আমাদের অধিকারগুলো কেড়ে নিয়েছে। আমাদের স্বপ্নগুলো ভেঙে খান খান করে দিয়েছে। বাংলাদেশটাকে তাদের বিচারকের ভাষায় জাহান্নাম বানিয়েছে। তাদের একটা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেওয়ার যুদ্ধে আমরা নেমেছি। মুখে কলুপ এঁটে বসে থাকবেন না, হাত গুটিয়ে বসে থাকবেন না।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের ৬৪৮ ভাইকে গুম করে দিয়েছে, সহস্রাধিক নেতাকর্মীকে বিচারবহিভর্‚তভাবে হত্যা করেছে। এই এক বছরে মধ্যে ২২ জন যুব নেতা, ছাত্রনেতা, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকে রাস্তায় গুলি করে হত্যা করেছে। এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ কোথায়? আপনাদের মধ্যে সেই বিদ্রোহ জাগিয়ে তুলতে হবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিচার ব্যবস্থা, অর্থনৈতিক দুরবস্থা, দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতিসহ সর্বক্ষেত্রে সরকারের দলীয়করণ, লুটপাট ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তার চিত্র তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।

‘ফ্যাসিবাদ বিরোধী ছাত্র ঐক্য’র উদ্যোগে এ ছাত্র কনভেনশন হয়। এতে ৯ দফা দাবি তুলে ধরেন ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ছাত্র ঐক্যের মুখপাত্র ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল। ছাত্র ঐক্যের সমন্বয়ক ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান বলেন, ১৫ অক্টোবর নয় দফা দাবি আদায়ে সকাল ১০টায় সংবাদ সম্মেলন করে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

২৯ সেপ্টেম্বর ১৫টি ছাত্র সংগঠনে নিয়ে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্য’র আত্মপ্রকাশ হয়। কনভেনশনে ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে হাজারো নেতাকর্মী অংশ নেওয়ায় মিলনায়তনসহ ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণ বিরোধী ছাত্রছাত্রীদের সমাবেশে পরিণত হয়।

জাতীয় ছাত্র ঐক্যের সমন্বয়ক ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খানের সভাপতিত্বে কনভেনশনে বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী, ভাসানী অনুসারী পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, জেএসডির শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, জাগপার একাংশের রাশেদ প্রধান, আরেক অংশের খন্দকার লুৎফুর রহমান, গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নুর, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মুফতি গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, এলডিপির নুরুল আলম, বিএনপির কবি আবদুল হাই শিকদার, রকিবুল ইসলাম বকুল, শিক্ষক অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম প্রমুখ। ছাত্র সংগঠনের নেতাদের মধ্যে বক্তব্য দেন- ছাত্র অধিকার পরিষদের তারিকুল ইসলাম, ছাত্র ফেডারেশনের মশিউর রহমান খান রিচার্ড, ছাত্রলীগের জেএসডি) তৌফিক উজ জামান, গণতান্ত্রিক ছাত্রদলের মেহেদি হাসান মাহবুব, নাগরিক ছাত্র ঐক্যের মেহেদি হাসান মুন্না, জাগপার ছাত্রলীগের আব্দুর রহমান ফারুকী, ভাসানী ছাত্র পরিষদের আহম্মেদ শাকিল, ছাত্র জমিয়তের নিজাম উদ্দিন আল আদনান, জাতীয় ছাত্র সমাজের (পার্থ) সাইফুল ইসলাম, ছাত্র ফোরাম (গণফোরাম) সানজিদ রহমান শুভ, বিপ্লবী ছাত্র সংহতির ফহিবুর রহমান মুনির, রাষ্ট্র সংস্কার ছাত্র আন্দোলনের আহমেদ ইসহাক, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের শহীদুল ইসলাম রিয়াজ, ছাত্রদলের মানসুরা আলম, ছাত্র ফেডারেশনের ফারহানা মানিক মুনা প্রমুখ।