অর্থনীতি

শীতকালীন সবজির সরবরাহ বাড়ায় বাজারে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে সবজি ও মুরগির দাম কমেছে।

একইসঙ্গে বাজারে ইলিশের বিক্রি শুরু হওয়ায় মাছের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। তবে গত সপ্তাহের মতো চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ ও আলু।

শুক্রবার (৮ নভেম্বর) রাজধানীর শেওড়াপাড়া ও তালতলা বাজার ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।

রাজধানীর এসব বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত সপ্তাহের তুলনায় সব ধরনের সবজির দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা কমেছে। তবে সিম ও কাঁচামরিচ কেজিতে ৪০ টাকা কমে ১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এসব বাজারে গ্রীষ্মকালীন সবজি কচুরমুখী প্রতিকেজি ৭০ টাকা, বেগুন ৬০ থেকে ৮০ টাকা, করলা ৭০ থেকে ৮০ টাকা, পটল ৫০ থেকে ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৭০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, পেঁপে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, ধুন্দল ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৭০ টাকা, কচুর লতি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, ঝিঙা ১০০ টাকা, শসা ৬০ থেকে ৮০ টাকা ও কাঁচামরিচ ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে গত সপ্তাহের তুলনায় সব ধরনের মুরগির দাম কমেছে। গত সপ্তাহের তুলনায় ব্রয়লার মুরগি কেজিতে ১০ টাকা কমে ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সোনালি কক মুরগি কেজিতে ৪০ টাকা কমে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সোনালি হাইব্রিড ২৯০ টাকা, দেশি মুরগি ৫২০ টাকা, লেয়ার লাল মুরগি ৩০০ টাকা ও সাদা লেয়ার ২৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

বাজারগুলোতে শীতকালীন সবজি সিম ১২০ টাকা কেজি, ফুলকপি ৩০ থেকে ৫০ টাকা পিস, বাঁধাকপি ছোট সাইজের ৪০ টাকা পিস, পাকা টমেটো প্রকারভেদে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা, গাজর ১২০ টাকা, মুলা ৬০ টাকা ও জলপাই ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এসব বাজারে লেবুর হালি ২০ থেকে ৪০ টাকা, ধনেপাতা কেজিতে ১০০ টাকা কমে ২০০ টাকা, কাঁচা কলা হালি ৫০ টাকা, চাল কুমড়া ৬০ টাকা পিস ও মিষ্টি কুমড়া ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

বাজারগুলোতে লালশাক ১৫ টাকা আঁটি, লাউশাক ৪০ টাকা, মুলাশাক ২০ টাকা, কলমিশাক ১৫ টাকা, পুঁইশাক ৪০ টাকা ও ডাটাশাক ৩০ টাকা আঁটি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।

বাজারগুলোতে দেশি পেঁয়াজ ১৬০ টাকা, ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ ১২০ টাকা, কাঁচা আদা ১২০ টাকা, পুরান আদা ২৮০ টাকা, রসুন কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ২৪০ টাকা, নতুন আলু ১২০ টাকা, বগুড়ার আলু ১০০ টাকা ও পুরান আলু ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এসব বাজারে গরুর মাংস প্রতিকেজি ৬৫০ থেকে ৮০০ টাকা, গরুর কলিজা ৮০০ টাকা, গরুর মাথার মাংস ৪৫০ টাকা, গরুর বট ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা ও খাসির মাংস ১ হাজার ১৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজারগুলোতে এক ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা, হাঁসের ডিম ২৩০ টাকা, দেশি মুরগির ডিমের হালি ৯০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।

নিষেধাজ্ঞা শেষে বাজারে ইলিশ আসতে শুরু করায় মাছের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। বাজারগুলোতে ৫০০ গ্রামের ইলিশ ১ হাজার টাকা, ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রামের ১ হাজার ৫০০ টাকা, এক কেজি ওজনের ১ হাজার ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারগুলোতে প্রতিকেজি শিং মাছ চাষের (আকারভেদে) বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, রুই মাছের দাম বেড়ে (আকারভেদে) ৩৮০ থেকে ৫০০ টাকা, দেশি মাগুর মাছ ৮০০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা, মৃগেল ৩২০ থেকে ৪০০ টাকা, চাষের পাঙাস ২০০ থেকে ২২০ টাকা, চিংড়ি ৭০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, বোয়াল মাছ ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাতল ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, পোয়া মাছ ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, পাবদা মাছ ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ টাকা, কই মাছ ২২০ থেকে ২৩০ টাকা, মলা ৫০০ টাকা, বাতাসি টেংরা ১ হাজার ৩০০ টাকা, টেংরা মাছ ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাচকি মাছ ৫০০ টাকা, পাঁচ মিশালি মাছ ২২০ টাকা, রুপচাঁদা ১ হাজার ২০০ টাকা, বাইম মাছ ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা, দেশি কই ১ হাজার ২০০ টাকা, শোল মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, আইড় মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, বেলে মাছ ৮০০ টাকা ও কোরাল মাছ ৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এসব বাজারে ৫ কেজি সোয়াবিন তেল ৮১৮ টাকা, দেশি মশুর ডাল ১৪০ টাকা, মুগ ডাল ১৮০ টাকা, মিনিকেট চাল ৭৬ থেকে ৮০ টাকা ও নাজিরশাইল চাল ৭৫ থেকে ৮২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

অর্থনীতি

বাংলাদেশের অন্যতম সমস্যা অর্থ পাচার। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মোটা অঙ্কের অর্থ পাচার হয়েছে। আর পাচারের অর্থ ফেরানো নতুন সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। তবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়তা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বিশ্বব্যাংক। প্রতিষ্ঠানটির মতে, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৪ শতাংশ। তবে সংস্কার কার্যক্রম সঠিকভাবে করতে পারলে ২০২৬ সালে তা ৫ শতাংশ ছাড়াবে।

বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক আলোচনা সভায় বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটানের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুলায়ে সেক এসব কথা বলেন। দেশের সাবেক কূটনৈতিকদের সংগঠন ‘অ্যাসোসিয়েশন অব ফরমার অ্যাম্বাসেডর (আওফা)’ এই আলোচনা সভার আয়োজন করে। আলোচনার বিষয় ছিল : ‘বাংলাদেশ-বিশ্বব্যাংক সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার উপায়।’ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের বিশেষ ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান। আওফার সভাপতি রাষ্ট্রদূত আব্দুল্লাহ আল হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক এএফএম গাউসূল আজম সরকার, ভাইস প্রেসিডেন্ট সাহেদ আখতার, সহকারী সাধারণ সম্পাদক মাশফি বিনতে শামস এবং রাষ্ট্রদূত রিয়াজ হামিদুল্লাহ প্রমুখ। এ সময়ে বক্তারা প্রকল্প অর্থায়নের পরিবর্তে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে বাজেট সহায়তা চেয়েছেন।

আবদুলায়ে সেক বলেন, বিশ্বব্যাংকের কাছে বাংলাদেশের পোর্টফোলিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শুরু থেকেই এ দেশকে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। বর্তমানে দেশটি কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি। এখানে বড় কয়েকটি সমস্যার মধ্যে অন্যতম দেশ থেকে অর্থ পাচার। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার পাচার করা টাকা ফিরিয়ে আনতে সহায়তা চেয়েছে। তবে এক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংক সহায়তা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ ব্যাপারে ইতোমধ্যে সরকারের প্রতিনিধি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কথা হয়েছে। সেখানে আমরা সহায়তা দেওয়ার কথা বলেছি। তবে অর্থ ফেরানো কঠিন। কারণ অনেক আইনকানুনের ব্যাপার রয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে অনেক কথা আছে। অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও তাদের পূর্বাভাস দিয়েছে। তবে আমাদের মতে, চলতি অর্থবছর অর্থাৎ ২০২৫ সালে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৪ শতাংশ। কিন্তু ইতোমধ্যে বাংলাদেশ বেশকিছু খাতে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। এই সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন হলে ২০২৬ সালে প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশ ছাড়াতে পারে।

চলতি অর্থবছরের বাজেটে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল সরকার।

সংস্কার ইস্যুতে এক প্রশ্নের জবাবে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর বলেন, অন্যান্য খাতের পাশাপাশি বাংলাদেশে বাণিজ্য খাতে সংস্কার খুব গুরুত্বপূর্ণ। সরকার চাইলে বিশ্বব্যাংক এখানেও সহায়তা দিতে পারে। রোহিঙ্গা সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই সমস্যাটির টেকসই সমাধান দরকার। আর এর টেকসই সমাধান হলো রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো। বিশ্বব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এ বিষয়ে কাজ করছে। এছাড়া সংস্থাগুলো তাদের সহায়তাও অব্যাহত রেখেছে। এই ইস্যুতে তারা বাংলাদেশের পাশে রয়েছে।

ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে ছাত্র-জনতা সম্মিলিতভাবে বিশাল ত্যাগের মাধ্যমে ৫ আগস্ট বড় একটি অর্জন করেছে। এটিকে আমরা ধরে রাখতে চাই। আমরা চাই আমাদের সেই অতীত, ভবিষ্যতে আর যাতে ফিরে না আসে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। স্বাধীনতার পর থেকে প্রতিষ্ঠানটি আমাদেরকে ৪৫ বিলিয়ন ডলার (এক বলিয়ন ডলার সমান ১২ হাজার কোটি টাকা) সহায়তা দিয়েছে। তবে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের দাতা নয়, উন্নয়ন অংশীদার। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অন্যতম সমস্যা বৈষম্য। দেশের নিম্ন আয়ের ৫ শতাংশ এবং উচ্চ আয়ের ৫ শতাংশের মধ্যে সম্পদের পার্থক্য বিশাল। বিশ্বব্যাংকও বিষয়টি বারবার বলে আসছে। আগস্টের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এটা আরও পরিষ্কারভাবে সামনে এসেছে। আরেকটি বিষয় হলো অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক নিয়ে সরকারের প্রকাশিত তথ্যের সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের তথ্যের পার্থক্য রয়েছে। এরমধ্যে জিডিপি প্রবৃদ্ধি, দারিদ্র্য বিমোচন এবং মূল্যস্ফীতি অন্যতম। তার মতে, বতর্মানে বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতির অন্যতম কারণ ডলারের দাম বেড়েছে। এর ফলে বেড়েছে আমদানি ব্যয়। ৩ বছর আগেও এক ডলারের দাম ছিল ৮৬ টাকা। বর্তমানে সেটি ১২০ টাকায় উন্নীত হয়েছে। এছাড়াও বর্তমানে বাংলাদেশের দরিদ্র মানুষের হার ৪ শতাংশ।

পাচারের অর্থ ফেরানোর ব্যাপারে তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে যেসব অর্থ বিদেশে পাচার হয়েছে, তা ফেরানো অত্যন্ত কঠিন। কারণ যে সব দেশে গেছে, ওই দেশের আইনকানুন, আন্তর্জাতিক আইন এবং তদন্ত প্রক্রিয়া এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু বিশ্বব্যাংক চাইলে তা সম্ভব। কারণ তাদের তদন্ত সক্ষমতা এবং ফরেনসিক সাপোর্টসহ সব ধরনের সক্ষমতা আছে। ড. মোস্তাফিজ বলেন, বাংলাদেশের আরেকটি বড় সমস্যা অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ একেবারে কম। বর্তমানে দেশের রাজস্ব আয় জিডিপির ৮ দশমিক ২ শতাংশ। এর মধ্যে প্রত্যক্ষ আয় এক-তৃতীয়াংশ। আর বাকি দুই-তৃতীয়াংশই পরোক্ষ আয়। তিনি বলেন, দেশে যে পরিমাণ রাজস্ব আয় হয়, পুরোটাই রাজস্ব ব্যয়। অর্থাৎ রাজস্ব আয়ের পুরো টাকাই সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতায় চলে যায়। আর উন্নয়নের অর্থ পুরোটাই ঋণ করে আনতে হয়। ফলে এই উন্নয়ন টেকসই নয়। এ অবস্থার উন্নয়নে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। সংস্কারের ব্যাপারে তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কারে ব্যাপক গুরুত্ব দিয়েছে। ইতোমধ্যে বড় ৬টি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে। এছাড়া ব্যাংকিং খাতে টাস্কফোর্স এবং শ্বেতপত্র প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছে। তবে সংস্কারের জন্য অর্থ এবং কারিগরি সহায়তা জরুরি। এক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংক সহায়তা দিতে পারে। তবে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে প্রকল্প সহায়তার পরিবর্তে বাজেট সাপোর্টে জোর দেন তিনি। তার মতে, বর্তমানে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকটে রয়েছে। বাজেট সহায়তা পেলে রিজার্ভ বাড়বে। অর্থনীতির অন্যান্য সূচকেও এর প্রভাব পড়বে। এছাড়াও বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে সুনির্দিষ্ট সহায়তা চেয়েছেন তিনি। সিপিডির এই বিশেষ ফেলো বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের আদানি গ্র“পের কাছ থেকে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ আমদানি নিয়ে একটি জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। কেউ কেউ বিদ্যুতের দাম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তবে ভবিষ্যতে তাদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি করলে অন্যান্য দেশের সঙ্গে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতের দাম নিয়ে তুলনা করা যেতে পারে। কিন্তু আগে যে চুক্তি করা হয়েছিল, আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে সেই বিল পরিশোধ না করার বিকল্প নেই।

অর্থনীতি
অর্থনীতি

টেলিকম খাতে কাউকে দানব হতে দেওয়া হবে না মন্তব্য করে বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেছেন, “যারা চেষ্টা করবে, প্রয়োজনে পাখা কেটে দেওয়া হবে।”

দেশব্যাপী ফাইবার অপটিক কেবল সেবাদাতা এনটিটিএন অপারেটরদের সেবা নিয়ে নিজেদের অসন্তুষ্টি তুলে ধরার পাশাপাশি নিজেরাই আবার ফাইবার কেবল স্থাপনে অনুমতি পাওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো।

সোমবার এক গোলটেবিলে বৈঠকে টেলিযোযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির কাছে ফাইবার অপটিক কেবল স্থাপনের অনুমতি দেওয়ার সেই দাবি আবারও তুলে ধরেছে মোবাইল অপারেটররা।

বৈঠকে উপস্থিত ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) এনটিটিএন অপারেটররা এর বিরোধীতা করে বলেছে, কমন নেটওয়ার্ক ছাড়া খরচ কমানো সম্ভব নয়। বিটিআরসির নীতিমালায় কিছু অস্পষ্টতা রয়েছে, যেগুলো সুনির্দিষ্ট হওয়া উচিৎ।

রাজধানীর একটি হোটেলে টেলিযোগাযোগ বিটের প্রতিবেদকদের সংগঠন টিআরএনবি আয়োজিত ‘আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্কের গুরুত্ব’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বিষয়টি সামনে আসে।

এতে বক্তব্য রাখেন মোবাইল অপারেটর রবি, বাংলালিংক ও টেলিটকের প্রতিনিধিরা। পাশাপাশি নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরেন এনটিটিএন কোম্পানি ‘ফাইবার অ্যাট হোম’ ও ‘সামিট কমিউনেকশন্সে’র প্রতিনিধিরা।

মোবাইল ফোন অপারেটর ও এনটিটিএনগুলোর বিপরীতমুখী অবস্থানের প্রেক্ষিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল এমদাদ উল বারী বলেন, “মোবাইল অপারেটর এবং এনটিটিএন দুইজনের ওপর আস্থা রেখেই দেখেছি, ফল আসেনি। কেননা মোবাইল অপারেটররা একটা সুইট পয়েন্ট মিস করেছে। ডেটা রেভ্যুলেশনে তারা এখন ডিজিটাল সেবাদাতা হিসেবে পরিচিত হতে চায়। ইন্টারনেটের দাম জলের দামে নেমে না আসলে এটা সম্ভব হবে না। এজন্য নেটওয়ার্ক সাসটেইন করতে হবে।”

মোবাইল ও ইন্টারনেট সেবার ক্ষেত্রে ব্যান্ডউইথ পরিবহনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে ফাইবার অপটিক কেবল। ২০০৯ সালের আগে মোবাইল অপারেটরগুলো নিজেরাই এই ফাইবার স্থাপন করেছে, কেউ রেলের ফাইবার ব্যবহার করেছে।

এরপরে সরকারের সিদ্ধান্তে ফাইবার কেবল স্থাপনের জন্য এনটিটিএন লাইসেন্স দেওয়া হয়। তখন থেকেই ফাইবার কেবলগুলোর নিয়ন্ত্রণ পায় এনটিটিএন কোম্পানিগুলো। এখন দেশে সরকারি তিনটি ও বেসরকারি তিনটি এনটিটিএন রয়েছে। তবে বাজারে ‘ফাইবার অ্যাট হোম’ এবং ‘সামিট কমিউনিকেশন্সে’র আধিপত্য রয়েছে।

আওয়ামী লীগ সরকার এসব কোম্পানিকে ’অনৈতিকভাবে’ বাড়তি সুযোগ দিয়েছে কি না সে বিষয়টিও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে এসেছে। তবে এনটিটিএন কোম্পানিগুলো সেসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

মোবাইল অপারেটরগুলো সেবার ক্ষেত্রে ত্রুটি ও উচ্চ মূল্যের জন্য এনটিটিএনগুলোকে অভিযুক্ত করে আসছে।

এর বিপরীতে এনটিটিএন অপারেটরদের যুক্তি ‘কমন নেটওয়ার্ক’ স্থাপনের ফলে ডেটার দাম কমানো সম্ভব হয়েছে। প্রতিটি মোবাইল অপারেটর পৃথকভাবে ফাইবার বসালে তাতে খরচ বাড়বে, জটিলতাও বাড়বে।

সংশিষ্টরা বলছেন, মোবাইল অপারেটরগুলো এনটিটিএন এর কাছে ফাইবার ভাড়া নিতে (ডার্ক ফাইবার) চায়। আর এনটিটিএনগুলো চায় পরিবহন করা ব্যান্ডউইথের পরিমাণ অনুযায়ী দাম নিতে। এ নিয়ে তাদের দ্বন্দ্ব এখন প্রকাশ্য। কোম্পানিগুলো নিজেদের মধ্যে বসে এর সুরাহা করতে পারছে না।

সোমবারের গোলটেবিলে মোবাইল অপারেটর রবির চিফ করপোরেট ও রেগুলেটরি অফিসার সাহেদুল আলম অভিযোগ তোলেন, “এখন পর্যন্ত দুটো এনটিটিএন অপারেটর আমাদেরকে কিন্তু ফাইবার দেয় না। এনটিটিএন’র যে মূল উদ্দেশ্য ছিল আমাদের ফাইবার দেওয়া হবে সেটা কিন্তু তারা দিচ্ছে না। যার কারণে আমরা সাফার করছি প্রতিনিয়ত। এখন ফাইবার অ্যাট হোম রাজি হয়েছে ডার্ক ফাইবার দিতে। তাদের সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলছে।

“আমরা যাচ্ছি একদিকে, এনটিটিএন অপারেটররা যাচ্ছে একদিকে। আমাদের থিংকিং প্রসেসের কোথাও মিল হচ্ছে না।”

তিনি বলেন, “ভবিষ্যতের দিকে তাকালে আমরা দেখি ভিডিওর চাহিদা বাড়ছে ৩০ গুণ বেশি। নন ভিডিও অ্যান্ড টু অ্যান্ড কমিউনিকেশন বাড়বে ৪৭ গুণ। আমরা এর জন্য প্রস্তুত, অবশ্যই না।”

তার ভাষ্য, এখন নানা কারগরি কারণে তিনটি এনটিটিএন অপারেটরের কাছ থেকে সেবা পাওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, তাদের ক্ষেত্রে প্রকৃত অর্থে কোনো প্রতিযোগিতা নেই এবং সেখানে মানসম্পন্ন সেবার কোন প্রশ্নও কেউ তুলছে না। কেবল মোবাইল অপারেটরদের ক্ষেত্রেই মান সম্পন্ন সেবা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

”এর কারণে আমরা মানুষের কাছে তাদের প্রত্যাশিত দামে মান সম্পন্ন সেবা দিতে পারছি না।“

বৈঠকে উপস্থিত বিটিআরসির চেয়ারম্যানকে উদ্দেশ্য করে সাহেদুল বলেন, “আমরা কিন্তু বলছি না আপনি এনটিটিএন অপারেটরদের বন্ধ করে দেন। আমরা মনে করি এনটিটিএন অপারেটররা আমাদের সহযোগী। আমরা যেটা বলব, মোবাইল অপারেটরদের যেমন রেস্ট্রিকশন দেওয়া আছে, এনটিটিএন অপারেটরদের যেমন রেস্ট্রিকশন দেওয়া আছে এই সমস্ত রেস্ট্রিকশনগুলো তুলে দেওয়া হোক। সব প্লেয়ারকে ওপেনলি বিজনেস ও ইনভেস্ট করার সুযোগ দেওয়া উচিৎ।

”এইসব রেস্ট্রিকশন তুলে দিয়ে প্রতিযোগিতা তৈরি করুন, যা একটা গ্লোবার ইকোনমির জন্য প্রয়োজন। ওপেন হয়ে গেলে আমরা ফাইট করব বেশি।”

রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “এখন আমাদের সামনে একটা লাইফটাইম অপরচুনিটি তৈরি হয়েছে। এই মুহূর্তে যদি আমরা এটা পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) করতে না পারি আমরা এই সুযোগ হারাব। এখানে কোনো পলিটিক্যাল প্রভু (মাস্টার) নেই, আমাদের বিটিআরসি চেয়ারম্যানকে এখন কোন রাজনৈতিক মাস্টারকেই খুশি করতে হবে না।”

পরে সামিট কমিউনেকশন্সের চিফ নেটওয়ার্ক আর্কিটেক্ট ফররুখ ইমতিয়াজ বলেন, “২০০৯ সালে এনটিটিএনগুলোকে সেবা দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আমরা কী ধরনের সেবা দিতে পারব তা এই ২০২৪ সালে এসেও সুনির্দিষ্ট হয়নি। আমরা ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রোভাইডার হিসেবে আইএসপি বা অন্য যারা ইউজার আছেন তাদের কী ধরনের সার্ভিস দিতে পারবো সেখানে একটা গ্রে এরিয়া বা কনফিউশন আছে।

”আবার (মোবাইল অপারেটরগুলোকে) এনটিটিএন কী সেবা দিবে এটা আসলে ডার্ক ফাইবার মিন করে, না এটা ক্যাপাসিটি বেইজড সার্ভিস মিন করে বিটিআরসির গাইডলাইনে এগুলো ক্লিয়ার না। এই জায়গা থেকে বিটিআরসি যদি কোন ক্লিয়ার দিক নির্দেশনা দেয় তাহলে আমরা অবশ্যই সেটা ফলো করব।”

তার ভাষ্য, “আমরা যখন বিজনেস শুরু করি তখন বড় যে অপারেটরগুলো ছিল তাদের হাতেই এই ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্কটা কুক্ষিগত ছিল। এবং তখন এক এমবিপিএস (ডেটার) দাম ছিল ২৮ থেকে ৩০ হাজার টাকা। এখন সেই পরিমাণ ডেটার দাম আসলে এটা ৫০ টাকারও কম।”

অবকাঠমো ব্যবসায় চুক্তির ক্ষেত্রে সময় বেঁধে দেওয়ার গুরুত্ব দিয়ে ফররুখ ইমতিয়াজ বলেন, “যখন টাওয়ার ব্যবসার সুযোগ সামনে এলো তখন বিটিআরসি একটা লকিং পিরিয়ড দিয়ে ব্যবসা করার সুযোগ করে দিয়েছে। তবে ২০০৭ সালে যখন এনটিটিএন গাইলাইনটা করে সেখানে এরকম কোন লকিং ছিল না। ইনফ্রাস্ট্রাকচার বিজনেসে রিটার্ন আসে লং টার্মে।“

তার আশা বিটিআরসি এই সময়সীমাটা (লকিং) সুনির্দিষ্ট করে দিলে দাম অনেক কমিয়ে দেওয়া সম্ভব।

বাংলালিংকের করপোরেট ও রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স বিভাগের প্রধান তাইমুর রহমান বলেন, “মোবাইল অপারেটর, এনটিটিএনসহ সবারই ফাইবার ডেপ্লয় করার সুযোগ থাকা উচিৎ। আমাদের যখন একটা বেইজ স্টেশন (টওয়ার) থেকে আরেকটা স্টেশনে জরুরি ভিত্তিতে ফাইবারের প্রয়োজন হয় তখন এটার জন্য কেন আমাদের আলাদা লাইসেন্স নিতে হবে। এটা কিন্তু অনেক ডিলে হয়ে যায়। এটা একটা সমস্যা।”

মোবাইল কোম্পানি কেন টাওয়ার রাখতে পারবে না সে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, “এই বিষয়গুলো রিভিউ করা উচিৎ। ফাইবারাইজেশন বাড়ানোর জন্য বা আমি যদি আরও তাড়াতাড়ি ডেপ্লয় করতে চাই তাহলে কেন পারবে না। এগুলো তো আমার ব্যবসার কাঁচামাল।”

এনটিটিএন কোম্পানি ফাইবার অ্যাট হোমের চেয়ারম্যান ময়নুল হক সিদ্দিকী বলেন, “১৬ বছর ধরে ডিজিটাল বৈষম্য দূর করতে কমন নেটওয়ার্ক হিসেবে কাজ করছে এনটিটিএন। আইএসপিরা যেন তৃণমূলে ইন্টারনেট নিয়ে যেতে পারে সে জন্য আমরা কাজ শুরু করি। সবগুলো উপজেলায় নেটওয়ার্ক নিয়ে যাওয়াটা খুবই কঠিন কাজ। এখন মনে হচ্ছে সব সমস্যার গোড়া এনটিটিএন।

“আমরা ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে থাকতে চাই। এজন্য আমরা বারবার অপারেটরদের সঙ্গে বসেছি। এরপরও আমি উত্থাপিত সব প্রশ্নেরই লিখিত উত্তর দিতে পারব। একসঙ্গে কাজ করলে সল্যুশন আসবে। কমন নেটওয়ার্কের কারণে ট্রান্সমিশন খরচ ১০০ ভাগ কমানো সম্ভব হয়েছে।”

সভায় বিটিআরসির চেয়ারম্যান এমদাদুল বারী বলেন, “আজকের দিনে ইন্টারনেট মৌলিক অধিকার হওয়া উচিত। কখনোই ইন্টারনেট বন্ধ হওয়া উচিত নয়। এক্ষেত্রে সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করতে ব্যবসা সুরক্ষায় নয় সেবার চাহিদাকে গুরুত্ব দিয়ে রেফারির দায়িত্ব পালন করবে বিটিআরসি।”

টেলিকম খাতে কাউকে দানব হতে দেওয়া হবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, “যারা চেষ্টা করবে, প্রয়োজনে পাখা কেটে দেওয়া হবে।”

নেটওয়ার্ক আলাদা করার ধারণা থেকে এনটিটিএনগুলোর জন্ম মন্তব্য করে তিনি বলেন, “কিন্তু এখন এনটিটিএনকে সমস্যা হিসেবে অভিযুক্ত করা হচ্ছে।… ইন্টারনেটের কেন্দ্রে রয়েছে এনটিটিএন। সেজন্য সরকার সর্বাত্মক সহায়তা করেছে। তারা কোথাও মাত্রা ছাড়িয়েছে কিনা তা দেখা যেতে পারে। ১০ বছরে তারা উপজেলা হেড কোয়ার্টারে পৌঁছেছে। কিন্তু এই পৌঁছানোর ধরনটা কী? অভিযোগ উঠেছে পর্যাপ্ত পপ নেই।”

ব্রডব্যান্ডকে সমাধান হিসেবে তুলে ধরে তিনি বলেন, “এজন্য আমরা একটি ব্রডব্যান্ড পলিসি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। টেকনোক্রাট হিসেবে বলতে পারি আমাদের ডার্ককোরের প্রয়োজনীয়তা বাড়বে। এটার প্রাপ্যতা নিয়ে মোবাইল অপারেটররা সামনের দিনে সংকটে পড়বে। তাই আমাদের টেকসই পথ খুঁজতে হবে।

ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক ’থার্ডপার্টির’ কাছে দেওয়া দরকার মন্তব্য করে তিনি বলেন, ”পাশাপাশি ইন্টারনেট সেবা ব্যবসাকে সম্প্রসারণ করতে হবে যাতে তরুণরা ঝাঁকে ঝাঁকে অংশ নিতে পারে। সেবাকে টেকসই, সাশ্রয়ী করতে যা করার আমরা তাই করব।”

অর্থনীতি

বেসরকারি খাতে স্থগিত করা বৈদেশিক ঋণের স্থিতি কমতে শুরু করেছে। ঋণ ও সুদের বোঝা কমাতে এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাপকভাবে স্বল্পমেয়াদি বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করছে। এতে কমছে সব ধরনের ঋণের স্থিতি। গত সরকারের শেষ সময়ে জুলাইয়ে এ খাতে ঋণের স্থিতি ছিল ৮৬ কোটি ৭৪ লাখ ডলার। গত সেপ্টেম্বরে তা কমে এসেছে ৬৮ কোটি ৮৫ লাখ ডলারে। স্থানীয় মুদ্রায় ৮ হাজার ২৬২ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে স্থগিত ঋণ কমেছে ১৭ কোটি ৮৯ লাখ ডলার। টাকার অঙ্কে ২ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

সূত্র জানায়, স্বল্পমেয়াদি ঋণের বড় অংশই বেসরকারি খাতে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে করোনার সময় ও এরপর ডলার সংকটের কারণে এসব ঋণ সময়মতো পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি। ফলে দফায় দফায় ঋণ পরিশোধের সময় বাড়ানো হয়েছে। এতে ঋণের স্থিতি বেড়েছে। এসব ঋণের শতভাগেরই সুদের হার ও বিনিময় হার বাজারভিত্তিক। অর্থাৎ যখন পরিশোধ করতে হবে সেই হারে সুদ দিতে হবে, যখন ডলারের যে দাম সেই দামেই ডলার কিনে পরিশোধ করতে হবে। গত আড়াই বছরে ডলারের দাম বেড়েছে গড়ে ৩৫ টাকা। আগে ছিল ৮৫ টাকা। এখন তা বেড়ে ১২০ টাকা হয়েছে। ফলে ঋণের বিপরীতে প্রতি ডলার কিনতে হচ্ছে সর্বোচ্চ ৩৫ টাকা বেশি দিয়ে। তবে ঋণ যে সময়ে নেওয়া হয়েছে সেই সময়ের ডলারের দাম থেকে পরিশোধের সময়ের দাম বাড়িয়ে দিতে হচ্ছে। এতে ঋণের কিস্তি স্থগিত করায় ঋণের স্থিতি বেড়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে সুদের হারও বেড়েছে। আগে সুদের হার ৩ থেকে ৪ শতাংশ। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ থেকে ৮ শতাংশ। দুভাবেই টাকা বেশি দিতে হচ্ছে।

সূত্র জানায়, বেসরকারি খাতের স্বল্পমেয়াদি ঋণের বড় অংশই নেওয়া হয়েছে আমদানির বিপরীতে। এর কিছু অংশ নেওয়া হয়েছে অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট থেকে। এসব ঋণের একটি অংশ বিদেশে পাচার করা হয়েছে। ফলে কিছু ঋণ খেলাপিও হয়ে পড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্দে কয়েকটি ব্যাংকের অফশোর ইউনিটের (বৈদেশিক মুদ্রায় আমানত নিয়ে বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ বিতরণ) ঋণ দিয়ে এলসি খোলা হলেও পণ্য দেশে আসেনি। ওইসব অর্থ পাচার করা হয়েছে। ফলে গ্রাহকের নামে ফোর্স লোন তৈরি করে ব্যাংক বৈদেশিক ঋণ শোধ করেছে।

এসব ঋণ ডলারে নেওয়া হয়েছে, পরিশোধও করতে হবে ডলারে। তবে পরিশোধের সময় বাড়তি টাকা দিয়ে ডলার কিনতে হবে। তারপর ওইসব ডলার দিয়ে স্থগিত ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হবে। এ কারণে ডলারের দাম বাড়ায় বাড়তি ঋণ শোধ করতে হচ্ছে। একই সঙ্গে এসব ঋণের চুক্তি অনুযায়ী যখন যে হারে আন্তর্জাতিক বাজারে সুদ থাকে ওই হারে পরিশোধ করতে হবে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে সুদের হার বেশি। এ কারণে বাড়তি সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে। ফলে বেশি দামে ডলার কেনা ও বাড়তি সুদ পরিশোধ করতে হওয়া দুই দিক থেকেই দেশকে দণ্ড দিতে হচ্ছে। এছাড়া কিছু ঋণের বিপরীতে বাড়তি ফি বা চার্জ পরিশোধ করতে হচ্ছে। আগে বাংলাদেশকে বৈদেশিক ঋণের বিপরীতে বাড়তি চার্জ বা কমিশন পরিশোধ করতে হতো না। কারণ ঋণের কিস্তি নিয়মিত ছিল। এখন ঋণের কিস্তি নিয়মিত শোধ করতে না পারায় বাড়তি কমিশন পরিশোধ করতে হচ্ছে। ২০২০ সালে কমিশন বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে ৬৯ লাখ ডলার। ২০২১ সালে তা বেড়ে ১ কোটি ৪০ লাখ ডলারে দাঁড়ায়। ২০২২ সালে তা আরও বেড়ে ৩ কোটি ৭৭ লাখ ডলার হয়। ২০২৩ সালে তা কমে দাঁড়ায় ১ কোটি ৭৯ লাখ ডলারে। ওই চার বছরে বাংলাদেশকে ৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলারের কমিশন পরিশোধ করতে হয়েছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় ৯১৫ কোটি টাকা। ঋণের কিস্তি পরিশোধে দেরি হওয়ার কারণেই কমিশন পরিশোধ করতে হচ্ছে।

২০১৪ সালে স্থগিত বকেয়া ঋণের স্থিতি ছিল ৪০ কোটি ১১ লাখ ডলার। ২০১৫ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫০ কোটি ৮৮ লাখ ডলার। ২০১৬ সালে তা আবার কমে দাঁড়ায় ৩৫ কোটি ৪০ লাখ ডলার। ওই বছর আগের বকেয়া মোটা অঙ্কের ঋণ পরিশোধ করা হয়েছিল। যে কারণে স্থিতি কমে আসে।

২০১৭ সালে স্বল্পমেয়াদি স্থগিত বকেয়া ঋণের স্থিতি আবার বেড়ে ৪৫ কোটি ৩৬ লাখ ডলারে দাঁড়ায়। ২০১৮ সালে আবার কমে ৩৯ কোটি ১৪ লাখ ডলারে স্থিতি হয়। ২০১৮ সালে আবার কমে ৩৬ কোটি ৪০ লাখ ডলারে দাঁড়ায়। ২০২০ সালে করোনার সময় বৈশ্বিকভাবে লকডাউন থাকায় সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও ঋণ পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি। কারণ ওই সময়ে বিশ্বব্যাপী ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বেশির ভাগ সময়ই বন্ধ ছিল। ওই সময়ে ডলারের প্রবাহ বেশি ছিল। ফলে ডলারের দাম ৫ পয়সা কমে যায়। ওই বছরে ঋণের স্থিতি প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে দাঁড়ায় ৬৬ কোটি ৪০ লাখ ডলারে। এর পর থেকে এ ঋণের স্থিতি আর কমেনি। বরং বেড়েই গেছে। ২০২১ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৯৫ কোটি ৫৩ লাখ ডলার। করোনার পর ২০২২ সালে এসেছে বৈশ্বিক মন্দা। এর প্রভাবে দেশে ডলার সংকট প্রকট আকার ধারণ করে। যা নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এখন কিছুটা কমেছে। যে কারণে এখন ঋণ শোধ করা হচ্ছে বেশি।

ডলার সংকটের সময়ে স্বল্পমেয়াদি ঋণের কিস্তি পরিশোধ ব্যাপকভাবে স্থগিত করায় স্থিতি বেড়ে যায়। ওই সময়ে তা ১০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যায়। অন্যদিকে ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়ায় কিছু ঋণকে দীর্ঘমেয়াদি ঋণে রূপান্তর করা হয়। ফলে স্বল্পমেয়াদি ঋণের স্থিতি কিছুটা কমেছে। ২০২২ সালে তা কমে দাঁড়ায় ৬৮ কোটি ৯৪ লাখ ডলার। ২০২৩ সালে ডলার সংকট আরও হলে ঋণের কিস্তি পরিশোধ আরও বেশি মাত্রায় স্থগিত হয়ে যায়। এতে ঋণের স্থিতি বেড়ে ৮৬ কোটি ৭৩ লাখ ডলারে দাঁড়ায়। চলতি বছরের জানুয়ারিতে এর স্থিতি আরও বেড়ে ৮৯ কোটি ১১ লাখ ডলারে দাঁড়ায়। গত সরকার ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে। এর আগের মাসে জুলাইয়ে ঋণের স্থিতি ছিল ৮৬ কোটি ৭৪ লাখ ডলার। ঋণের বাড়তি সুদ ও মূল ঋণের বোঝা কমাতে নতুন সরকার স্বল্পমেয়াদি স্থগিত ঋণ পরিশোধে জোর দেয়। আগস্ট থেকে অক্টোবর এই তিন মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১৭ কোটি ৮৯ লাখ ডলার ঋণ পরিশোধ করেছে। ফলে ঋণের স্থিতি কমে সেপ্টেম্বরে দাঁড়িয়েছে ৬৮ কোটি ৮৫ লাখ ডলার। অক্টোবরে আরও ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে। ফলে ঋণের স্থিতি আরও কমে যাবে।

অর্থনীতি

অক্টোবর মাসে প্রবাসী আয় এলো ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ ৮০ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ২৮ হাজার ৭৪১ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২০ টাকা হিসাবে)। এ অংক আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে বেশি।

রোববার (০৩ নভেম্বর ) এ তথ্য প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

জুলাই মাসে দেশে আন্দোলনের সময় প্রবাসী আয়ের ধারা কমে যায়। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলে প্রবাসী আয় বাড়ে। এরপর থেকে প্রবাসী আয়ের ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। এ ধারা সেপ্টেম্বর মাসেও অব্যাহত থাকে। একক মাস হিসেবে সেপ্টেম্বরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রবাসী আয় আসে।

তথ্য অনুযায়ী, আগের মাস সেপ্টেম্বরে প্রবাসী আয় এসেছিল ২৪০ কোটি ৪১ লাখ ১০ হাজার ডলার। আর আগের বছরের অক্টোবর মাসে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৯৭ কোটি ১৪ লাখ ৩০ হাজার ডলার।

তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, অক্টোবর মাসে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৭২ কোটি ৬১ লাখ ৬০ হাজার ডলার। কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১১ কোটি ৯৯ লাখ ডলার। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১৫৪ কোটি ১৮ লাখ ৫০ হাজার ডলার। আর বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে প্রবাসী আয় এসেছে ৭১ লাখ ৭০ হাজার ডলার।

একক ব্যাংক হিসাবে অক্টোবরে সর্বোচ্চ পরিমাণ প্রবাসী আয় এসেছে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে। এর পরিমাণ ৪৩ লাখ ১৪ লাখ ৯০ হাজার ডলার।

কোন প্রবাসী আয় সংগ্রহ করতে পারেনি রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবি) ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। বেসরকারি কমিউনিটি ব্যাংক, সিটিজেন ব্যাংক, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক ও পদ্মা ব্যাংকে আসেনি প্রবাসী আয়। বিদেশি হাবিব ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান ও স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়াও প্রবাসী আয় সংগ্রহ করতে পারেনি।

অর্থনীতি

দীর্ঘ পাঁচ বছর পর দেশের আমদানি বাণিজ্য আবার সচল হওয়ার পথে। ২০২০ সাল থেকে করোনার সংক্রমণ, বৈশ্বিক মন্দা, দেশে ডলার সংকট, অর্থনৈতিক মন্দার কারণে আমদানি বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

টানা পাঁচ বছর আমদানি ব্যাহত হওয়ার পর এখন এ বাণিজ্য সচল হওয়ার পথ খুলেছে। আড়াই বছর ধরে চলা ডলার সংকট ক্রমেই কেটে যাচ্ছে, বকেয়া বৈদেশিক ঋণের স্থিতিও কমতে শুরু করেছে। ফলে ঋণ পরিশোধে চাপও কমছে। এতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক বাজারেও পণ্যের দাম বেশ খানিকটা কমেছে। আগামী বছরে তা আরও কমে গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন চলে যেতে পারে। জ্বালানি তেলের দামও কমেছে। আগামীতে আরও কমে প্রতি ব্যারেল ৭৩ ডলারে নেমে আসতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। এসব মিলে আমদানি বাণিজ্য আগামীতে বেড়ে যাবে।

সূত্র জানায়, ২০২০ সালের শুরু থেকে করোনার সংক্রমণের কারণে বিশ্বব্যাপী লকডাউন শুরু হলে আমদানিও ব্যাহত হয়। এই ধারাবাহিকতা চলে ২০২১ সালের শেষ সময় পর্যন্ত। ২০২১ সালের শেষদিক থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বাড়তে থাকে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির শেষদিকে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করলে বিশ্বব্যাপী পণ্যের দাম হুহু করে বেড়ে যায়। এতে দেশে আমদানি বাধাগ্রস্ত হয়।

ওই বছরের এপ্রিল থেকে দেশে শুরু হয় ডলার সংকট। জুলাইয়ে গিয়ে তা প্রকট আকার ধারণ করে। যা গত ৫ আগস্ট পর্যন্ত চলমান ছিল। ওই সময়ে ডলার সাশ্রয় করতে ও রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে আমদানিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর মধ্যে প্রথমে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ছাড়া বাকি সব পণ্যে ২৫ শতাংশ এলসি মার্জিন আরোপ করে। এরপর তা বাড়িয়ে ৭৫ শতাংশ মার্জিন আরোপ করে। পরে আরও বাড়িয়ে শতভাগ মার্জিন আরোপ করে। একই সঙ্গে বিলাসী পণ্যের ওপর নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপ করে।

এর মাধ্যমে ব্যাপকভাবে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এতে আমদানিনির্ভর কাঁচামালের শিল্পের উৎপাদন কমে যায়। আমদানিনির্ভর ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়ে। কর্মসংস্থানে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। আমদানি পণ্যের সরবরাহ সংকটের কারণে দাম বেড়ে যায়। যে কারণে আমদানি পণ্যের মূল্যস্ফীতির হারও বেড়ে যাবে। ২০২২-২৩ অর্থবছর থেকে বিভিন্ন সময়ে আমদানি পণ্য মূল্যস্ফীতি বাড়াতে সর্বোচ্চ ৫২ শতাংশ ভ‚মিকা রেখেছে।

দেশ ২০১৮ সাল থেকে অর্থনৈতিক মন্দার কবলে পড়ে। পরবর্তী সময়ে তা প্রকট হয়েছে। করোনা ও মন্দার কারণে ২০১৯-২০ অর্থবছরে আগের বছরের তুলনায় আমদানি কমে যায় ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ। ওই বছরে আমদানি হয়েছিল ৫ হাজার ৬৯ কোটি ডলার। ২০২০-২১ অর্থবছরে আমদানি ব্যয় কিছুটা বেড়ে ৬ হাজার ৬৮ কোটি ডলারে দাঁড়ায়। আগের বছরের চেয়ে এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয় ১৯ দশমিক ৭১ শতাংশ।

মূলত করোনার পর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়। যে কারণে দামও বাড়তে থাকে। এ কারণে ওই বছরে আমদানি ব্যয় বেড়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে আমদানি ব্যয় বেড়ে রেকর্ড সৃষ্টি করে। ওই বছরে আমদানি ব্যয় ৩৬ শতাংশ বেড়ে ৮ হাজার ২৪৯ কোটি ডলারে দাঁড়ায়। বৈদেশিক ঋণসহ আমদানি ব্যয় বেড়েছিল ৪৮ শতাংশ। ওই বছরের এপ্রিলে সর্বোচ্চ ৯০০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানির এলসি খোলা হয়েছিল। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করলে আন্তর্জাতিক বাজারে সব পণ্যের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে যায়। এর প্রভাবে আমদানি খরচও বৃদ্ধি পায়।

ওই বছরের এপ্রিল থেকে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ছাড়া বাকি পণ্য আমদানিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়। এতে পণ্য আমদানি কমার পাশাপাশি এ খাতে ব্যয়ও কমে যায়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ব্যয় ১৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ কমে ৭ হাজার ৭৫ কোটি ডলারে দাঁড়ায়।

ওই বছর থেকে এখনো আমদানি ব্যয় কমছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আমদানি ব্যয় আরও ১০ দশমিক ৬১ শতাংশ কমে ৬ হাজার ৩২৪ কোটি ডলারে নেমে যায়। চলতি অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট এই দুই মাসে আমদানি হয়েছে ৯৯১ কোটি ডলার। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় আমদানি কমেছে ১ দশমিক ১৬ শতাংশ।

সূত্র জানায়, নতুন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ৫ সেপ্টেম্বর থেকে আগের আরোপিত এলসি মার্জিন প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে কেবল ১৪টি বিলাসী পণ্য আমদানিতে শতভাগ মার্জিন আরোপিত রয়েছে। এছাড়া অর্থ পাচার বহুলাংশে কমে যাওয়ায় এবং রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বাড়তে থাকায় বাজারে ডলারের প্রবাহ বাড়ছে। আগে প্রতি মাসে রিজার্ভ কমত। এখন রিজার্ভ না কমে বরং বাড়ছে। রিজার্ভে হাত না দিয়েই আমদানি ব্যয়সহ নিয়মিত দেনা শোধ করা হচ্ছে। পাশাপাশি প্রায় ৩০০ কোটি ডলারের বৈদেশিক ঋণ শোধ করা হয়েছে। ফলে রিজার্ভে চাপ কিছুটা কমেছে।

এসব কারণে আমদানি বাড়ার সুযোগ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে ব্যাংকগুলোতে এলসি খোলার প্রবণতা বেড়েছে। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম কম হওয়ার কারণে আগের তুলনায় কম দামে এখন বেশি পণ্য আমদানি করা যাচ্ছে। এতে আমদানিনির্ভর শিল্প মন্দা কাটিয়ে আবার ঘুরে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

অর্থনীতি

আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ) বলেছে, সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বাংলাদেশের স্বল্পমেয়াদি অর্থনৈতিক সম্ভাবনায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এতে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার কমে যাচ্ছে। এপ্রিলের তুলনায় অক্টোবরে এসে আইএমএফ প্রবৃদ্ধির হার ব্যাপকভাবে কমিয়ে দিয়েছে। বিদায়ি অর্থবছরের পাশাপাশি চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার আরও কমবে।

শুক্রবার প্রকাশিত আইএমএফের ‘রিজিওনাল ইকনোমিক আউটলুক এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চল’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনে এ অঞ্চলের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরা হয়েছে।

এতে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের দেশগুলোকে আগামী বছরে জলবায়ুর নেতিবাচক প্রভাব, অস্থিরতা, পর্যটন খাতে নেতিবাচক পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। বাংলাদেশকেও এসব পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে।

প্রতিবেদনে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বলা হয়, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে স্বল্পমেয়াদি বেশ ভালো সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে দেশটিতে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেওয়ায় স্বল্পমেয়াদি সম্ভাবনায় নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এর প্রভাব আগামীতে আরও দৃশ্যমান হবে। এপ্রিলে সংস্থাটি ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশ প্রক্ষেপণ করেছিল। অক্টোবরে এসে তা কমিয়ে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ করা হয়েছে। ওই সময়ের জন্য প্রবৃদ্ধির হার কমানো হয়েছে দশমিক ২ শতাংশ। বিদায়ি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য এপ্রিলে প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করা হয়েছিল ৫ দশমিক ৭ শতাংশ। অক্টোবরে এসে তা কমিয়ে করা হয়েছে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে প্রবৃদ্ধির হার কমানো হয়েছে দশমিক ৩ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরের জন্য এপ্রিলে প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করেছিল ৬ দশমিক ৬ শতাংশ। অক্টোবরে এসে তা ২ দশমিক ১ শতাংশ কমিয়ে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে দেশে সৃষ্ট রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে প্রবৃদ্ধির হার কমানো হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এদিকে অপর এক প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক বলেছে, চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার ৪ শতাংশে নেমে আসতে পারে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুারোর (বিবিএস) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে দেশের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ৯১ শতাংশ। আগের তিন প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি আরও বেশি হয়েছিল। শেষ প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি কম হওয়ায় বিদায়ি অর্থবছরে গড় প্রবৃদ্ধির হার কমে যাবে।

আইএমএফের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এখনও প্রাইমারি ব্যালেন্সের স্থিতি চলতি অর্থবছরেও নেতিবাচক থাকবে। বৈদেশিক ঋণ পরিস্থিতিতেও চাপে থাকতে হবে।

ভারতের প্রবৃদ্ধির হার কমানো হয়নি, সাড়ে ৬ শতাংশে স্থিতিশীল রয়েছে। চীনের প্রবৃদ্ধি দশমিক ৪ শতাংশ বেড়ে সাড়ে ৪ শতাংশ হতে পারে। নেপালের প্রবৃদ্ধি দশমিক ৩ শতাংশ কমিয়ে ৪ দশমিক ৯ শতাংশ করা হয়েছে। থাইল্যান্ডের প্রবৃদ্ধি দশমিক ১ শতাংশ বাড়িয়ে ৩ শতাংশ করা হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়, এ অঞ্চলে মূল্যস্ফীতির হার কমে আসবে। চলতি বছরের মধ্যে তা ২ দশমিক ২ শতাংশে নামবে। আগামী বছরে তা সামান্য বেড়ে ২ দশমিক ৬ শতাংশ হতে পারে।

এদিকে বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতির হার এখনও বেশ বেশি। চলতি অর্থবছরে এ হার ৯ দশমিক ৭ শতাংশে থাকতে পারে। তবে বছর শেষ হওয়ার আগে তা বেড়ে ১০ শতাংশেও উঠতে পারে।

অর্থনীতি

বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোতে সাইবার আক্রমণের প্রবণতা আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এজন্য সাইবার আক্রমণ রোধে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সতর্কতামূলক ১৭টি পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি ডিপার্টমেন্টের অতিরিক্ত পরিচালক এস এম তোফায়েল আহমাদ এক চিঠিতে সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে এ অনুরোধ জানান।

গত বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) পাঠানো এ চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশে সাইবার সিকিউরিটি ইনটেলিজেন্সের (বিসিএসআই) নিয়মিত তথ্য নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনায় বাংলাদেশের কিছু ব্যাংকে ডুয়েল কারেন্সি কার্ডে ফেসবুক অ্যাড ম্যানেজার ব্যবহার করে বেআইনিভাবে লেনদেন হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। এই লেনদেনের মাধ্যমে সাধারণ গ্রাহকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এমন তথ্যও জানা যাচ্ছে। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় এসব সাইবার অপরাধী প্রতিনিয়ত দেশের সাধারণ মানুষ তথা ব্যাংকের গ্রাহকদের হয়রানি করছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, বিশ্বব্যাপী সাইবার আক্রমণের প্রবণতা বেড়ে চলেছে। বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোতেও সাইবার আক্রমণের প্রবণতা আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। ব্যাংকগুলো প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ম্যালওয়্যার আক্রমণের শিকারও হচ্ছে। এ ধরনের সাইবার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে ব্যাংকগুলোকে ১৭টি পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

অর্থনীতি

ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ৫০ পয়সা কমিয়েছে সরকার। বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে নতুন দাম কার্যকর হবে।

এ দফায় ডিজেলের দাম ৫০ পয়সা কমিয়ে ১০৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যদিকে অপরিবর্তিত রয়েছে অকটেন ও পেট্রোলের দাম।

বৃহস্পতিবার জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

বার্তায় বলা হয়, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য হ্রাস/বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে দেশে ভোক্তা পর্যায়ে প্রতিমাসে জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণের লক্ষ্যে প্রাইসিং ফর্মুলার আলোকে নভেম্বর মাসের জন্য ডিজেলের বিক্রয়মূল্য প্রতি লিটার ১০৫.৫০ টাকা থেকে ৫০ পয়সা কমিয়ে ১০৫ টাকা, কেরোসিনের দাম ১০৫.৫০ টাকা থেকে ৫০ পয়সা কমিয়ে ১০৫ টাকা।

এ ছাড়া, অকটেন ১২৫ টাকা ও পেট্রোলের দাম ১২১ টাকায় অপরিবর্তিত রেখে পুনর্নির্ধারণ/সমন্বয় করা হয়েছে, যা ১ নভেম্বর থেকে কার্যকর হবে।