অর্থনীতি

দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে আবার ২০ বিলিয়ন (১০০ কোটিতে এক বিলিয়ন) ডলার অতিক্রম করেছে।

বৃহস্পতিবার দিনের শুরুতে রিজার্ভ ২ হাজার ২০ কোটি ডলারে ওঠে। গত সপ্তাহে রিজার্ভ ছিল ২ হাজার কোটি ডলারের নিচে। রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বাড়ায় রিজার্ভ বাড়ছে।

বৃহস্পতিবার প্রকাশিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে ২৩ দশমিক ৬১ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে বেড়েছিল মাত্র ৩ দশমিক ৭০ শতাংশ। পাশাপাশি রপ্তানি আয়ও বাড়ছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বরে রপ্তানি আয় বেড়েছে ১৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ আয় কমেছিল। বৈদেশিক অনুদান আসার প্রবণতাও বেড়েছে। ডলারের প্রবাহ বাড়ায় আমদানিও বাড়তে শুরু করেছে।

ব্যাংকগুলোয় ডলারের প্রবাহ বাড়ায় এখন ব্যাংক নিজেরাই আমদানির দেনা ও বকেয়া বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করতে পারছে। পাশাপাশি চলমান ঋণের কিস্তির অর্থও পরিশোধ করছে। ব্যাংকে ডলার থাকার কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক টাকার মান স্থিতিশীল রাখতে রিজার্ভ থেকে এখন কোনো ডলার বিক্রি করছে না। উলটো ব্যাংকগুলো থেকে ডলার কিনে নিচ্ছে বকেয়া দায় পরিশোধ করছে।

এর আগে জানুয়ারির শুরুর দিকে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) দেনা বাবদ ১৬৭ কোটি ডলার পরিশোধের পর রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছিল।

অর্থনীতি

সংযুক্ত আরব আমিরাতের দু’টি বড় কোম্পানি আবুধাবি পোর্টস গ্রুপ এবং মাসদার বাংলাদেশের বন্দর উন্নয়ন, বন্দর পরিচালনা ও লজিস্টিকস সহায়তা এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

মঙ্গলবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আবুধাবি পোর্টস গ্রুপের (এডিপিজি) সিইও আহমেদ ইব্রাহিম আল মুতাওয়া এবং মাসদারের এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের উন্নয়ন ও বিনিয়োগ প্রধান ফাতিমা আলমাধলুম আলসুওয়াইদি সাক্ষাৎ করে এসব বিনিয়োগ প্রস্তাব উপস্থাপন করেন।

প্রধান উপদেষ্টা এই বিনিয়োগ প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন ব্যবসার জন্য প্রস্তুত।’

এডিপিজি ও মাসদারের নির্বাহীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা আপনাদের টিম নিয়ে আসুন এবং যতগুলো কারখানা স্থাপন করতে চান, করুন।’

আবুধাবি পোর্টস গ্রুপ হলো চতুর্থ বৃহৎ বন্দর পরিচালনা ও লজিস্টিকস কোম্পানি। প্রতিষ্ঠানটি এক সপ্তাহেরও কম সময়ের ব্যবধানে আরব আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ড, ডেনমার্কের এপি মুল্যার মায়ের্স্ক এবং সৌদি আরবের রেড সি গেটওয়ে টার্মিনালের পর তারা বাংলাদেশের বন্দর ব্যবস্থাপনায় আগ্রহ প্রকাশ করলো।

বাংলাদেশে প্রস্তাবিত তিন বে টার্মিনালের মধ্যে একটি টার্মিনালকে আবুধাবি পোর্টস গ্রুপ চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সাথে যৌথ উদ্যোগে অর্থায়ন ও পরিচালনা এবং বহুমুখী টার্মিনাল ও কন্টেইনার রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে নির্মাণের আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

প্রতিষ্ঠানটির সিইও আল মুতাওয়া বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের উষ্ণ মনোভাবের প্রশংসা করেন এবং আশা প্রকাশ করেন যে তাদের বিনিয়োগ বাংলাদেশের বন্দরগুলোতে জাহাজ চলাচল বৃদ্ধি করতে সহায়ক হবে।

নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রতিষ্ঠান মাসদার বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে পুনরুদ্ধারকৃত ভূমিতে ২৫০ মেগাওয়াটের একটি সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের জন্য ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে।

মাসদারের আঞ্চলিক বিনিয়োগ প্রধান ফাতিমা আলমাধলুম আলসুওয়াইদি বলেন, ‘বাংলাদেশে নতুন ধারণা প্রদর্শনের ক্ষেত্রে আমরা অনেক বেশি সহায়ক।’

সাক্ষাৎকালে বাংলাদেশে নিযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত আবদুল্লাহ আলী আলহুমৌদি, প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেনটেটিভ খলিলুর রহমান এবং এসডিজি বিষয়ক সিনিয়র সচিব লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন।

দুবাই শাসকের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টাকে ফেব্রুয়ারিতে আমিরাতে অনুষ্ঠিতব্য ওয়ার্ল্ড গভর্নমেন্ট সামিটে যোগদানের আমন্ত্রণপত্র হস্তান্তর করেন আবদুল্লাহ আলী আলহুমৌদি।

অর্থনীতি

ভারতের নুমালীগড় রিফাইনারি লিমিটেড থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর সময়ে ১ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন ডিজেল আমদানি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এতে মোট ব্যয় হবে ১ হাজার ১৩৭ কোটি ৯৬ লাখ টাকা।

মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিনের সভপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে ভারত থেকে এই ডিজেল আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

বৈঠক সূত্রে জনা গেছে, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) ২০২৫ সালের পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির প্রস্তাব ২০২৪ সালের ৭ নভেম্বর ‘অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি’র সভায় নীতিগতভাবে অনুমোদিত হয়।

তারেই আলোকে ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর সময়ে চুক্তির আওতায় ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান নুমালীগড় রিফাইনারী লিমিটেডের সঙ্গে নেগোসিয়েশনের ভিত্তিতে মূল্য নির্ধারণ করে ১ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন ডিজেল (০.০০৫% ‘সালফার’) ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেয় জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ।

এই ডিজেল আমদানির ব্যয় ধরা হয় ৯ কোটি ৩২ লাখ ৭৫ হাজার ৩৬৪ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ এক হাজার ১৩৭ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। প্রতি ব্যারেল ডিজেলের মূল্য ধরা হয়েছে ৫.৫০ ডলার। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে প্রস্তাবটি উপস্থাপন করা হলে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি তা অনুমোদন দিয়েছে।

জানা গেছে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ১৫ বছর মেয়াদি চুক্তির আওতায় ২০১৬ থেকে ডিজেল আমদানি করা হচ্ছে। পাইপলাইন নির্মাণের আগে এনআরএল থেকে রেল ওয়াগনের মাধ্যমে পরবর্তীতে ২০২৩ সালের ১৮ মার্চ থেকে ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইনের মাধ্যমে ভারত থেকে ডিজেল আমদানি করা হচ্ছে।

অর্থনীতি

চলতি জানুয়ারির ২৫ দিনে রেমিট্যান্স (প্রবাসী আয়) এলো ১৬৭ কোটি ৫৯ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ২০ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২৩ টাকা)।

রোববার (২৬ জানুয়ারি) এ তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

জানুয়ারি মাসের প্রতিদিন প্রবাসী আয় এসেছে ছয় কোট ৭০ লাখ ৩৮ হাজার ৮০০ ডলার। আগের মাসে ডিসেম্বর প্রতিদিন প্রবাসী আয় এসেছিল আট কোটি ৫১ লাখ ১৯ হাজার ৯৩৫ ডলার। আর আগের বছর জানুয়ারি মাসে প্রতিদিন এসেছিল ৭ কোটি চার লাখ ৩৮ হাজার ৩৩৩ ডলার। এ হিসাবে চলতি জানুয়ারি মাসে প্রবাসী আয় কিছুটা কমেছে।

তথ্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৩৫ কোটি ৪২ লাখ ৮০ হাজার ডলার। রাষ্ট্রায়ত্ত কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৭ কোটি ৪৩ লাখ ৭০ হাজার ডলার। বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১২৪ কোটি ২৫ লাখ ৩০ হাজার ডলার এবং ৪৭ লাখ ৯০ হাজার ডলার।

একক ব্যাংক হিসাবে সর্বোচ্চ প্রবাসী আয়ে এসেছে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে। বেসরকারি বড় এ ব্যাংকটির মাধ্যমে এসেছে ২২ কোটি ৯০ লাখ ১০ হাজার ডলার।

অর্থনীতি

বিশ্বব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আন্না বিয়ার্দে বাংলাদেশ পুনর্গঠনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি বৈশ্বিক ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানটির সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

বৃহস্পতিবার সুইজারল্যান্ডের দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনের ফাঁকে আন্না বিয়ার্দে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এসময় তিনি প্রধান উপদেষ্টাকে বিশ্বব্যাংকের সমর্থন ব্যক্ত করেন।

প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বাসসকে এ তথ্য জানান।

বিশ্বব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আন্না বিয়ার্দে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশে করে বলেন, ‘আমি আমাদের সমর্থন প্রকাশ করতে চাই। আপনারা যেকোনো সহায়তার জন্য আমাদের ওপর নির্ভর করতে পারেন’।

তিনি আরও উল্লেখ করেন ব্যাংকটি বছরের দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশের প্রতি তাদের সমর্থন প্রসারিত করতে আগ্রহী।

আলোচনায় তারা জুলাই বিপ্লব, অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কর্মসূচি এবং দেশের অর্থনীতির বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন।

বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ এবং জেনেভায় জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি তারেক আরিফুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

অর্থনীতি

কোনো নীতিমালা ছাড়া সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা করার সাংবিধানিক বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের হয়েছে। সোমবার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান জনস্বার্থে এ রিট করেন।

নীতিমালা ছাড়া সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের রাষ্ট্রপতির ক্ষমা করার ক্ষমতা কেন অসাংবিধানিক হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারির নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে রিটে। এছাড়া রাষ্ট্রপতির ক্ষমা করার ক্ষমতা প্রয়োগে নীতিমালা করার আবেদন জানানো হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব, আইনসচিব, সরাষ্ট্র সচিব, পার্লামেন্ট সচিব ও রাষ্ট্রপতি কার্যালয়ের সচিবকে রিটে বিবাদী করা হয়েছে।

রিট আবেদনে বলা হয়েছে, সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ রাষ্ট্রপতির ক্ষমা করার ক্ষমতা রয়েছে। এই ক্ষমা করার ক্ষমতা অবাধ, যার কোনো নীতিমালা নেই। কে, কিসের ভিত্তিতে ক্ষমা পাচ্ছে তার কোনো নীতিমালা নেই। যা সংবিধানের ৭, ২৭, ৩১ ও ৩২ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ইতোমধ্যেই এই ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে অনেক সাজাপ্রাপ্ত আসামি ক্ষমা পেয়েছে। যার মধ্যে সাবেক সেনাপ্রধানের ভাই জোসেফ, আসলাম ফকির অন্যতম।

অর্থনীতি

অর্থনৈতিক দিকনির্দেশনা না পেলে সংস্কার পক্ষের মানুষ ধৈর্যহারা হবে বলে মন্তব্য করেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো এবং শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

এ ছাড়া সংস্কারের পক্ষের মানুষগুলো অর্থনৈতিক অস্বস্তি ও নিরাপত্তার অভাব থেকে সুষম সংস্কারের পক্ষ থেকে সরে যেতে পারে বলেও জানান তিনি।

শনিবার (১৮ জানুয়ারি) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘শ্বেতপত্র এবং অতঃপর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, সংস্কার ও জাতীয় বাজেট’ শীর্ষক সিম্পোজিয়ামে প্রথম অধিবেশনে এসব কথা বলেন তিনি।

ড. দেবপ্রিয় বলেন, অর্থনৈতিক দিকনির্দেশনা না পেলে সংস্কার পক্ষের মানুষ ধৈর্য হারা হবে। এই মুহূর্তে অর্থনৈতিক পরিস্থিতির স্থিতিশীলতা, প্রবৃদ্ধির ধারা, কর্মসংস্থান, দারিদ্র্য বিমোচন ও সামাজিক সুরক্ষা যদি নিশ্চিত করতে না পারি; তাহলে আমরা যারা সংস্কারকে গতিশীল করতে চায় তারা ধৈর্য হারা হয়ে যাবে। সংস্কারের পক্ষের মানুষগুলো অর্থনৈতিক অস্বস্তি ও নিরাপত্তার অভাব থেকে সুষম সংস্কারের পক্ষ থেকেও সরে যেতে পারে।

তিনি বলেন, প্রশাসনিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার যতটা মনোযোগ পাচ্ছে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা ততটা মনোযোগ পাচ্ছে না। অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো অর্থনৈতিক ম্যানিফেস্টো নেই। অনেকেই বলছেন অর্থনীতির ক্ষেত্রে এই সরকার আগের সরকারের মতোই কাজ করছে।

ড. দেবপ্রিয় বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রশাসনিক সেক্টর বেশি মনোযোগ পাচ্ছে। কিন্তু অর্থনৈতিক সংস্কারে কোনো মনোযোগ নেই। অবিবেচকভাবে পণ্যে ভ্যাট বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রত্যক্ষ কর বাড়ানোর বিষয়ে কোনো গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।

এ সময় অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন, বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক আশিক চৌধুরীসহ সংশ্লিষ্টরা।

অর্থনীতি

উন্নয়নকে সবসময় পরিবেশের বিপরীতে দাঁড় করানো হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অধ্যাপক রেহমান সোবহান। তিনি বলেন, আইন যথাযথ বাস্তবায়নের অভাবে পরিবেশ সুরক্ষা কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এজন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও উদ্যোগ প্রয়োজন। তবে সবার আগে এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে বিশেষ কমিশন গঠন করতে হবে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে আয়োজিত দুইদিনের বিশেষ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রেহমান সোবহান এসব কথা বলেন।

শুক্রবার শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মিলনায়তনে যৌথভাবে এ সম্মেলনের আয়োজন করে বাপা ও বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্ক (বেন)। রেহমান সোবহান বলেন, দেশের বিদ্যমান আইন ও আন্তর্জাতিক নিয়ম মানলেই পরিবেশ সুরক্ষা করা সম্ভব। অতি মুনাফা ও বাজার অর্থনীতি পরিবেশ ধ্বংসের মূল কারণ।

পরিবেশ সুরক্ষায় অন্তর্বর্তী সরকার ইতিবাচক পদক্ষেপ নেবে বলে আশা প্রকাশ করে বিশিষ্ট এই অর্থনীতিবিদ বলেন, পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা নিজেই একজন পরিবেশবিদ। তিনি ইতোমধ্যে ইতিবাচক উদ্যোগ নিয়েছেন। তবে বিভিন্ন ইস্যুতে সরকার কমিশন ও বিশেষ কমিটি গঠন করেছে। কিন্তু পরিবেশের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে এখনো কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প দেশের জ্বালানি সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে স্বপ্ন দেখানো হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে তা পূরণ হয়নি; বরং ওই অঞ্চলের বিপুলসংখ্যক সাধারণ মানুষ উদ্বাস্তু হয়েছে। পরিবেশেরও মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। পরিবেশ ধ্বংস করে এমন প্রকল্প থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

একই অনুষ্ঠানের পৃথক অধিবেশনে পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক নদী আইনে স্বাক্ষর করতে যাচ্ছে। তিস্তা নিয়ে সরকার একটি মহাপরিকল্পনা চূড়ান্ত করে যাবে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাপা সভাপতি নুর মোহাম্মদ তালুকদার। ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন বেনের প্রতিষ্ঠাতা ও বাপার সহসভাপতি নজরুল ইসলাম। স্ব-অর্থায়ন ও স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে পরিবেশ রক্ষামূলক কাজের সংস্কৃতি অব্যাহত রাখা কঠিন হচ্ছে উল্লে­খ করে তিনি বলেন, এ কাজে সম্মিলিত উদ্যোগ ও সহযোগিতা প্রয়োজন।

সভাপতির বক্তব্যে নুর মোহাম্মদ তালুকদার বলেন, দীর্ঘ পথচলায় বাপার অনেক অর্জন থাকলেও সারা দেশে কার্যকর পরিবেশ আন্দোলন গড়ে ওঠেনি। দেশে স্থানীয় পরিবেশ সমস্যা নিয়ে ভুক্তভোগীরা আন্দোলন করছেন, যাদের অনেকের কাছে বাপা পৌঁছাতে পারেনি। প্রথম অধিবেশনে ‘রাজনীতিকদের দৃষ্টিকোণ থেকে বাপা ও পরিবেশ রক্ষার সংগ্রাম’, দ্বিতীয় অধিবেশনে ‘নদনদী ও পানি ব্যবস্থাপনা’ এবং তৃতীয় অধিবেশনে ‘বায়ু, শব্দ ও দৃষ্টিদূষণ এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা’ নিয়ে আলোচনা হয়।

প্রথম অধিবেশনে বক্তৃতায় অধ্যাপক রওনক জাহান বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো পরিবেশের সমস্যাগুলো আমলে নিতে শুরু করেছে।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, পরিবেশ আন্দোলনের কারণেই রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে পরিবেশের বিষয়গুলো গুরুত্ব পাচ্ছে। তাই আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে।

‘নদনদী ও পানি ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক দ্বিতীয় অধিবেশনে বক্তব্য দেন অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক নদী আইনে স্বাক্ষর করতে যাচ্ছে। এজন্য সম্মতিপত্র পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে অনুমতি এলেই বাংলাদেশ ওই আইনে স্বাক্ষর করবে। বাংলাদেশ তিস্তা নিয়ে ভারত ও চীন- এ দুই দেশের সঙ্গেই চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। ফলে বাংলাদেশ জটিল অবস্থার মধ্যে পড়েছে। তবে তিস্তা নিয়ে সরকার একটি মহাপরিকল্পনা চূড়ান্ত করে যাবে বলে তিনি উল্লে­খ করেন।

এর আগে সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আব্দুল লতিফ, বেন-এর বৈশ্বিক সমন্বয়কারী খালেকুজ্জামান, বাপার সহসভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, শহীদুল ইসলাম ও খুশী কবির, বাপা সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির প্রমুখ।

শনিবার সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে ‘স্থায়িত্বশীল নগরায়ণ’, ‘জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও জলবায়ু পরিবর্তন’ এবং ‘বন, পাহাড়, উপকূল ও আদিবাসী অধিকার’ শীর্ষক তিনটি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। এরপর সবার মতামতের ভিত্তিতে সম্মেলনের প্রস্তাব গৃহীত হবে।

অর্থনীতি

চীনসহ উপমহাদেশের বিভিন্ন দেশে ‘হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস’ (এইচএমপিভি)-এর প্রাদুর্ভাব এবং এর তীব্রতা উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। ১৪ বছরের কম বয়সি শিশু এবং ৬৫ বছর বা এর বেশি বয়সি ব্যক্তিদের মধ্যে এ রোগের সংক্রমণ বেশি দেখা যাচ্ছে।

বিশেষ করে ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, কিডনি রোগ, সিওপিডি, অ্যাজমা, ক্যানসারের মতো জটিল রোগীদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি বেশি। ফলে কোমরবিডিটি (বিভিন্ন ধরনের দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত) রোগীদের বিশেষভাবে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

দেশে এইচএমপিভি আক্রান্ত একজনের মৃত্যু হওয়ায় ভাইরাসটি নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। যদিও চিকিৎসকদের দাবিÑএইচএমপিভি নয়, অন্য রোগের কারণে ওই রোগী মারা গেছেন।

চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা জানান, এইচএমপিভি একধরনের ‘আরএনএ’ ভাইরাস, যা সাধারণত মানুষের শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণ ঘটায়। এটি নতুন কোনো ভাইরাস নয়। অন্যসব ফ্লু যেমন: ইনফ্লুয়েঞ্জা রেস্পিরেটরি সিনসাইশিয়ালের মতো একটি ভাইরাস। সাধারণত শীত ও বসন্তকালে এ রোগের সংক্রমণ বেশি দেখা যায়। আক্রান্তদের সাধারণ ফ্লুর মতো লক্ষণ প্রকাশ পায়, যা ৫ থেকে ৭ দিনের মধ্যে এমনিতেই সেরে যায়। তবে কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে যেমন: বয়স্ক, ক্যানসার আক্রান্ত, একসঙ্গে একাধিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে ক্ষতিকর হতে পারে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ আরাফাত বলেন, এইচএমপিভি আক্রান্ত ব্যক্তি সাধারণত জ্বর, কাশি, নাক বন্ধ, গলাব্যথার লক্ষণ নিয়ে চিকিৎসকের কাছে আসে। চামড়ায় র‌্যাশ এবং কখনো কখনো শ্বাসকষ্ট হতে পারে। শিশু, বয়স্ক এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়Ñএমন কোনো ওষুধ সেবনকারীদের (কেমোথেরাপি, স্টেরয়ড সেবনকারী) আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্ক বেশি থাকে। হাঁপানি বা ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ, গর্ভবতী নারী এবং দুর্বল রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তির জন্য উচ্চঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে।

অধ্যাপক ডা. আরাফাত আরও বলেন, ভাইরাসটি সাধারণত আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি ও কাশির ড্রপলেটের মাধ্যমে ছড়ায়। তাই কিছু নিয়ম মেনে চললে সহজে এর বিস্তার রোধ করা সম্ভব। যেমন: বাইরে গেলে মুখে মাস্ক ব্যবহার করা, সাবান, পানি দিয়ে ঘনঘন হাত ধোয়া, হাঁচি-কাশি দেওয়ার সময় টিসু দিয়ে মুখ ঢেকে রাখা, টিসু না থাকলে হাতের কনুই ভাঁজ করে সেখানে মুখ গুঁজে হাঁচি-কাশি দেওয়া। আক্রান্ত ব্যক্তির কাছ থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা এবং জনসমাগম বা ভিড় এড়িয়ে চলা।

বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শাহিনুল আলম বলেন, এইচএমপিভি নিয়ে অনেকে ভয় পান। মনে করেন, কোভিড চলে এসেছে কি না! কিন্তু ভাইরাসটি আগে থেকেই দেশে ছিল, এখনো আছে। কিছুটা হয়তো বেড়েছে। এর ভয়াবহতা ও মৃত্যুহার করোনাভাইরাসের চেয়ে কম। তাই আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকতে হবে। ভাইরাসটি শনাক্তকরণের পরীক্ষা ও আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসার জন্য বিএসএমএমইউর সব রকমের প্রস্তুতি রয়েছে। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাদের সিজনাল ভ্যাকসিন বা ইনফ্লুয়েঞ্জা ও নিউমোনিয়ার ভ্যাকসিন দেওয়া যেতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা জানান, এখন পর্যন্ত এ ভাইরাসের কোনো সুনির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ বা ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত হয়নি। অন্যসব সাধারণ সর্দিজ্বরের মতো হওয়ায় আলাদা কোনো চিকিৎসার দরকারও নেই। শুধু লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা নিলেই আক্রান্তরা সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যায়। যেমন: জ্বর হলে প্যারাসিটামল, সর্দিকাশি হলে অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ সেবন করতে হয়। পাশাপাশি রোগীকে পর্যাপ্ত পরিমাণে তরল খাবার (পানি, ফলের রস) ও পুষ্টিকর খাবার দেওয়া এবং রোগীকে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নিতে হবে।

অর্থনীতি

ভারত থেকে আমদানীকৃত ২৬ হাজার ৯৩৫ মেট্রিক টন চাল বহনকারী এমভি এসডিআর ইউনিভার্স জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেছে।

এক তথ্য বিবরণীতে এ কথা জানানো হয়।

উন্মুক্ত দরপত্র চুক্তির আওতায় ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের কাকিনাডা বন্দর থেকে ২৬ হাজার ৯৩৫ মেট্রিক টন চাল নিয়ে এমভি এসডিআর ইউনিভার্স জাহাজটি আজ রাত ৭টা ১৫ মিনিটে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছায়। এটি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে ভারত থেকে আমদানিকৃত চালের দ্বিতীয় চালান।

জাহাজে আসা চালের নমুনা সংগ্রহপূর্বক ভৌত পরীক্ষা শেষে দ্রুত খালাসের কাজ শুরু হবে।