অর্থনীতি

পয়লা ফাল্গুন ও বসন্তবরণ উৎসব বুধবার। এছাড়া এদিনই ‘বিশ্ব ভালোবাসা দিবস’।

একই দিনে দুই দিবস ঘিরে বাজারে বেড়েছে ফুলের চাহিদা।
ফুলের রাজ্যখ্যাত যশোরের গদখালীর পাইকারি বাজারে গাঁদা ও গোলাপ ফুলের বাজার জমজমাট হয়ে উঠেছে। চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় অন্যান্য ফুলের পাশাপাশি গাঁদা ফুলের দামও বাড়ছে হু হু করে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে এই ফুলের দাম বেড়েছে পাঁচ থেকে সাতগুন পর্যন্ত।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে এই ফুলের দাম আরও বাড়বে। বসন্ত উৎসবের দিনে বিশ্ব ভালবাসা দিবস হওয়ায় এদিন গোলাপের চাহিদাও থাকে সর্বোচ্চ।

ফুলচাষিরা বলছেন, রেকর্ড সর্বোচ্চ দামে এ বছর গোলাপ বিক্রি হয়েছে। তবে বৈরী আবহাওয়ায় কম ফুল উৎপাদন এবং চড়া বাজারে ইন্ডিয়ান গোলাপের আগমনে তাদের মনে লোকসানের আশঙ্কা।

সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) রেকর্ড সর্বোচ্চ দামে গদখালী বাজারে গাঁদা ফুল কেনা-বেচা হয়েছে। প্রতি হাজার গাঁদা ফুল ৩০০ থেকে ৭০০ টাকা দরে কেনা-বেচা হয়েছে। গত সপ্তাহে এ পরিমাণ ফুল ১০০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। গাঁদা ফুলের এমন দামে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা ভীষণ খুশি।

একই দিনে গোলাপের রেকর্ড দাম থাকলেও গতদিনের তুলনায় দাম কিছুটা কমেছে। এদিন গোলাপ বিক্রি হয়েছে ২০-২৫ টাকা। অথচ একদিন আগে রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) গোলাপ বিক্রি হয়েছিল মানভেদে ২৫-৩০ টাকা পর্যন্ত। চায়না গোলাপের দাম ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা।

এদিন প্রতিটি রজনীগন্ধা বিক্রি হয়েছে ১২ থেকে ১৫ টাকা, রঙিন গ্লাডিউলাস প্রতিটি বিক্রি হয়েছে (মানভেদে) ২০ থেকে ২৫ টাকা, জারবেরা বিক্রি হয়েছে ১৫ থেকে ২০ টাকা ও চন্দ্রমল্লিকা ৩ থেকে ৫ টাকা। ফুল বাঁধাইয়ের জন্য কামিনীর পাতা বিক্রি হয়েছে প্রতি আঁটি ৩০ টাকায়। জিপসির আঁটি বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকায়।

মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে গদখালী ফুলের বাজারে গিয়ে দেখা যায়, কাকডাকা ভোর থেকেই কৃষকরা বড় বড় ঝুড়ি ও বস্তায় ভরে ভ্যানে করে গাঁদা ফুল নিয়ে এসেছেন মোকামে। যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের পাশের ফুলের আড়তে তারা গাঁদা বিক্রি করছেন। কেউ কেউ ভ্যানের ওপর থেকে নিজেরাই গাঁদা ফুল বিক্রি করছেন। একদিকে চলে ফুলের বেচাকেনা অন্যদিকে নারীরা সুঁই সুতো দিয়ে শুরু করেন মালা গাঁথার কাজ। তাদের গাথা মালা বিভিন্ন পরিবহনে করে ঢাকাসহ দেশের জেলায় জেলায় পাঠানো হয়। এদিন গাঁদা ফুলের ভালো দাম পেয়ে অধিকাংশ কৃষকের মুখে চওড়া হাসি ফুটেছে। কৃষকরা বলছেন, এবার গাঁদা ফুলের দাম আরও বাড়বে।

পানিসারা গ্রামের কৃষক আরিফ হোসেন বলেন, সাড়ে ছয় হাজার গাঁদা নিয়ে হাটে এসেছি। প্রতি হাজার ফুল বিক্রি হয়েছে ৬৫০ টাকা দরে। সপ্তাহখানেক আগে এই ফুল বিক্রি করেছি প্রতি হাজার ১৫০ টাকা দরে।

হাঁড়িয়া গ্রামের গাঁদা ফুলচাষি বাবু জানান, গতকাল (সোমবার) ও আজ (মঙ্গলবার) ভালো দামে গাঁদা ফুল বিক্রি হয়েছে। তিনি হাজার প্রতি ৪৫০ টাকা দরে ৪ হাজার ফুল বিক্রি করেছেন।

বেনেয়ালি গ্রামের শহিদুল গাজী বলেন, দশ হাজার গাঁদা ফুল নিয়ে এসেছি। প্রতি হাজার বিক্রি হয়েছে ৬০০ টাকা। এসব ফুল ক্রেতারা বসন্ত উৎসবের জন্য কিনছেন। ২১ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে এই ফুলের দাম আরও বাড়বে।

ফুল ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান বলেন, এ বছর সর্বোচ্চ দামে গাঁদাফুল বিক্রি হচ্ছে। রোববার ও সোমবার ৩০০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত প্রতি হাজার ফুল বিক্রি হয়েছে।

যশোর ফুল উৎপাদক ও বিপণন সমবায় সমিতির সভাপতি আবদুর রহিম বলেন, এই অঞ্চলে অন্তত ৩০০ হেক্টর জমিতে গাঁদা ফুলের চাষ হয়। বসন্তবরণ উৎসব ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে গাঁদা ফুলের চাহিদা বাড়ে। ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গাঁদা ফুলের দাম সর্বোচ্চ থাকবে।

আড়তদারের মাধ্যমে কৃষকের কাছ থেকে ব্যাপারীরা গাঁদা ফুল কিনে স্থানীয় নারীদের দিয়ে মালা তৈরি করিয়ে নেন। ওই মালা বস্তায় ভরে সারা দেশের খুচরা ফুলের দোকানে পাঠানো হয়। গদখালী বাজার লাগোয়া সদিরালী গ্রামের অন্তত ২০০ নারী বাড়ির আঙিনায় বসে গাঁদা ফুলের মালা গাঁথার কাজ করেন। প্রতিপিস মালা গাথা বাবদ তারা মজুরি নেন ২০ টাকা। এখন প্রতিদিন তারা ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা আয় করছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, নুপুর বেগমের বাড়ির বাড়ির উঠান ও বারান্দায় মালা গাথার কাজ করছেন দীপা, সামসুন্নাহার, সুমাইয়া, তহুরন, কোহিনুরসহ অন্তত দশ নারী। নুপুর বলেন, সংসার বাচ্চা সামাল দিয়ে আমরা গাঁদা ফুলের মালা গাঁথার কাজ করি। এখন কাজের চাপ অনেক বেশি। ব্যাপারীরা আমার কাছে ফুল ও সূতা দিয়ে যান। যে যত বেশি মালা গাঁথতে পারবে সে ততো টাকা পাবে।

দীপা বলেন, প্রতিটা মালার জন্য ব্যাপারীরা ২০ টাকা মজুরি দেন। এখন কাজের চাপ বেশি, প্রতিদিন ২০টা মালা গাঁথতে পারি। এখন ৪০০ টাকা আয় হচ্ছে।

গাঁদা ফুল গাঁথার কাজে ব্যস্ত বৃদ্ধা কোহিনুর বেগম বলেন, এ বয়সে এসে মালা গাঁথার কাজ করে আয় করতে পারছি এটাই বড় পাওয়া।

এদিকে সোমবার সকালে অনেক কৃষক তাদের উৎপাদিত গোলাপ বিক্রি না করতে পেরে ফিরে গেছেন। অনেকেই কাঙ্ক্ষিত দাম না পেয়ে কম দামে বিক্রি করেছেন। তাদের অভিযোগ, ভারত থেকে আনা গোলাপ বাজারে সয়লাবের কারণে সোমবার কৃষকদের গোলাপ বিক্রি কম হয়েছে।

হাঁড়িয়া নিমতলা গ্রামের কৃষক রাসেল হোসেন বলেন, সোমবার বাজারে প্রচুর পরিমাণ গোলাপ উঠেছে। আমার গোলাপ বিক্রি না করতে পেরে বাড়ি ফেরত এনেছি। তিনি দাবি করেন, এদিন বাজারে প্রচুর পরিমাণ ভারত থেকে আনা গোলাপ উঠেছে। এ জন্য বিক্রি কমে গেছে।

নীলকণ্ঠনগর গ্রামের কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, অনেক চাষি তাদের গোলাপ বিক্রি করতে পারেননি। ভোরের বাজারে ২০-২২ টাকা বিক্রি হলেও পরে দাম কমে যায়। সবাই বলছে ইন্ডিয়ান গোলাপ আমদানির কারণে গোলাপের দাম পড়ে গেছে।

এ বিষয়ে যশোর ফুল উৎপাদক ও বিপণন সমবায় সমিতির সভাপতি আবদুর রহিম বলেন, এ বছর বৈরী আবহাওয়ার কারণে গোলাপের উৎপাদন কম হয়েছে। দাম বেশি পাওয়ায় কৃষকরা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারতেন। সোমবার হঠাৎ কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ভারত থেকে গোলাপ আমদানি করেন। ফলে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

ঢাকার ফুল ব্যবসায়ী ইমামুল হোসেন বলেন, আমরা ভারত থেকে সারা বছরই চায়না গোলাপ আমদানি করি। এটার দাম স্বাভাবিক গোলাপ থেকেও অনেক বেশি। এটা আমদানি করলে দেশের চাষিদের ক্ষতি হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই।

গদখালি বাজারের ফুল ব্যবসায়ী ইমামুল হোসেন বলেন, আমি কোনো ফুল আমদানির সঙ্গে জড়িত না। দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যবসায়ীদের চাহিদার ভিত্তিতে আমদানিকারকের কাছ থেকে ফুল কিনে সরবরাহ করি।

অর্থনীতি

ভূমি সচিব মো. খলিলুর রহমান বলেছেন, ভূমি পিডিয়াকে ভূমি মালিকের জন্য ভূমিবিষয়ক একটি নির্ভরযোগ্য ডিজিটাল সহযোগী হিসেবে তৈরি করা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত ‘ইন্টেলিজেন্ট ল্যান্ড নলেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ তথা ‘স্মার্ট ভূমি পিডিয়া’ এর ওপর এক প্রশিক্ষণে সভাপতির বক্তব্যে ভূমি সচিব এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

প্রশিক্ষণে ভূমি মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন।

গত বছরের ২৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রী ভূমি মন্ত্রণালয়ের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ভিত্তিক ভূমিবিষয়ক জ্ঞানকোষ ‘স্মার্ট ভূমি পিডিয়া’ উদ্বোধন করেন। এখন এই সিস্টেমকে উন্নত করে এর দ্বিতীয় সংস্করণ বাস্তবায়নের কাজ চলছে।

ভূমি সচিব বলেন, ভূমি পিডিয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে কথোপকথনের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ যেন ভূমিবিষয়ক প্রয়োজনীয় তথ্য এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে যেন পরামর্শ পেতে পারেন তা নিশ্চিত করা। এ ছাড়া ভূমি ব্যবস্থাপনায় সুশাসন নিশ্চিত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ভূমির ‘প্রাতিষ্ঠানিক স্মৃতি’ গড়ে তুলতেও অবদান রাখবে এই সিস্টেম।

খলিলুর রহমান আরও বলেন, দক্ষ, স্বচ্ছ ও জনবান্ধব ভূমি ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠা করা এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওপেন ডাটা গভার্নেন্স নীতি ও সরকারের তথ্য অধিকার বিষয়ক নীতি বাস্তবায়নেও ভূমি পিডিয়া ভূমিকা রাখবে।

এ সময় সচিব জানান, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক স্বতন্ত্র মডেলের ভূমি পিডিয়াকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া সক্রিয় শিখনের জন্য ভূমিসেবা প্রদানকারী কর্মকর্তা ও ভূমিসেবা গ্রহীতাদের ভূমি পিডিয়া ব্যবহার করার জন্য উৎসাহিত করা হবে।

প্রাথমিক অবস্থায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক সিস্টেমকে প্রশিক্ষণ দেওয়া বহুমুখী এবং সময়সাপেক্ষ ব্যাপার উল্লেখ করে সচিব আশা প্রকাশ করে বলেন, একবার স্থিতিশীল হয়ে গেলে ভূমি পিডিয়া সবার ভূমিবিষয়ক নির্ভরযোগ্য সহযোগী হিসেবে কাজ করবে।

এ সময় বাংলায় লেখা ও বলার বৈশিষ্ট্যসহ ভূমি পিডিয়ার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক চ্যাটবট ‘ভূমি অ্যাডভাইজার’ ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মার্ট ভূমিসেবা উদ্যোগের অন্যতম ভিত্তি বলে উল্লেখ করেন ভূমি সচিব।

প্রসঙ্গত, আইন, অধ্যাদেশ, রাষ্ট্রপতির আদেশ, বিধিমালা, নীতিমালা, নির্দেশিকা, পরিপত্র, প্রজ্ঞাপন, ম্যানুয়াল, গেজেট ও অন্যান্য সব ধরনের ভূমিবিষয়ক ডকুমেন্ট ভূমি পিডিয়ায় পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়া পরবর্তীতে এখানে আলোচনার জন্য থাকবে ফোরাম এবং ব্লগ। ভূমিবিষয়ক বিবিধ বাস্তব সমস্যা এবং এর থেকে উত্তরণের উপায়ও জানা যাবে ভূমি পিডিয়া থেকে।

অর্থনীতি

উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু করার পর এ রুটে যাত্রী সংখ্যা বাড়তে থাকে। সকাল সাতটা ১০ মিনিট থেকে রাত ৮টা ৪০ মিনিটে এ পথ চালুর পর থেকে যাত্রী সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।

বর্তমান পরিস্থিতি এমন, পিকটাইমে কয়েকটি স্টেশনে যাত্রীদের লাইন লেগেই থাকছে। অতি ব্যস্ত সময় পার করছেন কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

মেট্রোরেল চলাচলের সময় সাড়ে ১৩ ঘণ্টা। এ সময়ে বহু যাত্রী মেট্রো ব্যবহার করছেন। অফপিক টাইমেও ভিড় লেগে থাকে স্টেশনগুলোয়। কর্তৃপক্ষ বলছে, যাত্রীদের সুবিধা বাড়াতে তারা কাজ করছেন। এক সপ্তাহের মধ্যে ট্রেনের মধ্যবর্তী সময় কতটা কমিয়ে আনা যায় সেটিও ভেবে দেখা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) মেট্রোরেলের কয়েকটি স্টেশন ঘুরে যাত্রী ও কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে। এ প্রতিবেদকের মাধ্যমে সরকারের কাছে মেট্রোর ট্রেন ও কোচ সংখ্যা বাড়ানোর দাবি করেছেন বহু যাত্রী। ১০ মিনিটের স্থলে প্রতি ৫ মিনিট পর পর ট্রেনের দাবিও করেছেন তারা।

সকালে উত্তরা উত্তর থেকে, বিকেলে মতিঝিল ও বাংলাদেশ সচিবালয় থেকে যাত্রীদের ঢল ছিল উল্লেখযোগ্য।

বিকেলে বাংলাদেশ সচিবালয় স্টেশনে কথা হয় যাত্রীদের সঙ্গে। এ সময় মুহাম্মদ শহীদুল ইসলাম নামে এক যাত্রী বলেন, মতিঝিল থেকে মিরপুরে যাতায়াত আমার জন্য খুবই সহজ হয়েছে। মেট্রোয় ভিড় বাড়ছে। তাই সরকারের উচিৎ ট্রেন ও কোচ সংখ্যা বাড়ানো। ট্রেনে ছাড়া সময়ও কমিয়ে আনা প্রয়োজন। শুনেছি ৬টি কোচের পরিবর্তে আটটি করা হবে। সেটি করলে যাত্রীদের প্রচণ্ড ভিড় কমতো।

শামীমা ইয়াসমিন বলেন, সকালে মিরপুর থেকে মতিঝিল অফিস সময়ে অতিরিক্ত ভিড়ে যাত্রীদের ট্রেনে উঠতে কষ্ট হয়। কাজিপাড়া, শ্যাওড়াপাড়া, মিরপুর ১০ থেকে অনেক সময় যাত্রীরা টেনে উঠতেও পারে না। যাত্রীদের সুবিধার্থে ৫ মিনিট পরপর ট্রেন দেওয়ার সময় হয়ে গেছে। এটি সরকারের জন্য লাভজনকও বটে।

আবদুল্লাহ আরেফিন নামে বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা বলেন, প্রতিদিন উত্তরা থেকে মতিঝিল ও মতিঝিল থেকে উত্তরা যাতায়াত করছি। সকালে ট্রেনে ওঠা আমার জন্য সহজ। যাওয়ার বেলায় কিছুটা সমস্যা ভোগ করি। এত সুন্দর ও সহজ যাতায়াত এ রুটের সব যাত্রীর জন্য প্রয়োজন। এ জন্য ট্রেন ও কোচ সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন।

অন্যান্য যাত্রীরা বলেছেন, এমআরটি বা র‌্যাপিড কার্ড যারা নিয়েছেন, তাদের জন্য ট্রেনে ওঠা সহজ। বিপদ শুধু সাধারণ যাত্রীদের। যারা এ দুটি কার্ড করতে পারছেন না বা যারা মাত্র একবার ভ্রমণ করতে চান তাদের সমস্যা হচ্ছে। টিকিটের জন্য দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে সময় পার হয়ে যায়। যে কাজের জন্য স্বল্প সময়ে গন্তব্যে যাওয়ার ইচ্ছা থাকে সেটি পূরণ হচ্ছে না। মেট্রো এখন জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। তাই সরকারের উচিত এ দিকটায় আরও ভালোভাবে নজর দেওয়া। আমাদের দাবি, দ্রুত মেট্রোর ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো হোক। অথবা কোচ সংখ্যা বাড়ানো হোক।

যাত্রীদের এমন দাবির প্রসঙ্গে কথা হলে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইন্টেন্যান্স) নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের চিন্তাভাবনা রয়েছে। তবে টেকনিক্যাল সব বিষয় ঠিকঠাক করে সুবিধা নিশ্চিতে আরও বছরখানেক সময় লাগবে।

একই ধরণের কথা বলেছেন ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার (অপারেশন) মোহাম্মদ ইফতিখার হোসেন। তিনি বলেন, আমরা নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছি। কোচ আর ট্রেন চলাচল বৃদ্ধির বিষয়ে আমরা কাজ করছি। এটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার, তারপরও অন্যান্য দেশের আগে আমরা দীর্ঘ সময়ের জন্য চালু করেছি।

ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের পরিচালক মোহাম্মদ আবদুর রউফ বলেছেন, এক সপ্তাহের মধ্যে মেট্রো ট্রেন চলাচলের মধ্যবর্তী সময়টা কতটা কমিয়ে আনা যায় সেটা নিয়ে আমাদের টিম কাজ করছে। সার্ভে করে আমরা দেখবো কী করা যায়।

অর্থনীতি

দ্রুততম সময়ের মধ্যে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের উপায় বের করতে এক জরুরি সভায় বসেছেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীরা। রোববার (২১ জানুয়ারি) অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বিকেল ৫টা ১৫ মিনিটের দিকে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের এ জরুরি সভা শুরু হয়।

অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সভাপতিত্বে সভায় রয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, কৃষিমন্ত্রী আব্দুস শহীদ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মো. আব্দুর রহমান, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, এনবিআর চেয়ারম্যানসহ রাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা।

জানা গেছে, দেশের খোলা বাজারের নিত্যপণ্যের সরবরাহ বাড়ানোর কৌশল নির্ধারণ, মজুতদার ও সিন্ডিকেটের কারসাজি রোধ এবং প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের উপায় বের করা হবে।

এ ছাড়া সভায় বিভিন্ন পণ্যের উৎপাদন ও আমদানি পরিস্থিতির সঙ্গে চাহিদা বিশ্লেষণ করে ঘাটতি চিহ্নিত করা এবং রমজানের আগে ঘাটতি মেটাতে পণ্য আমদানি সহজ করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে।

ঘোষিত মুদ্রানীতি ও রাজস্ব নীতির মধ্যে সমন্বয় ঘটিয়ে সভায় মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের উপায় নির্ধারণ করা হবে। একইসঙ্গে চাল, আটা, তেল, চিনি, আলু, পেঁয়াজ, গরুর মাংস, ডিম ও পোলট্রি পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করা কারসাজির হোতাদের চিহ্নিত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। এ ছাড়া পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের স্বার্থে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আইনানুগ ব্যবস্থার কঠোর দৃষ্টান্ত স্থাপনের সিদ্ধান্ত সভা থেকে আসতে পারে বলে জানা গেছে।

অর্থনীতি

ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ কেন্দ্রীভূত হয়ে যাচ্ছে। কয়েকটি বড় খেলাপির কাছেই যেমন আটকে রয়েছে মোটা অঙ্কের ঋণ। তেমনি সরকারিসহ কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকেই রয়েছে খেলাপি ঋণের সিংহভাগ। ব্যাংক খাতের মোট খেলাপি ঋণের ৬৫ শতাংশই রয়েছে শীর্ষ ১০ ব্যাংকের কাছে।

খেলাপি ঋণে শীর্ষ ৫ ব্যাংকের কাছে রয়েছে মোট খেলাপির ৪৮ শতাংশ। একইভাবে সম্পদের দিক থেকেও মোট সম্পদের ৩১ শতাংশ রয়েছে শীর্ষ ৫ ব্যাংকের কাছে। মোট সম্পদের ৪২ শতাংশ রয়েছে শীর্ষ ১০ ব্যাংকের কাছে।

মঙ্গলবার প্রকাশিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘আর্থিক স্থিতিশীলতা মূল্যায়ন রিপোর্ট’ শীর্ষক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। গত বছরের জুন পর্যন্ত তথ্যের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ওই প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে। প্রতি তিন মাস পরপর আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা নিয়ে এ ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আগে এসব প্রতিবেদন কোনো প্রান্তিক শেষ হওয়ার পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে প্রকাশ করত। এবার তা প্রকাশ করল সাড়ে ৬ মাস পর।

প্রতিবেদনে দেশের আর্থিক খাতের সার্বিক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এতে ঝুঁকির বিষয়গুলো যেমন রয়েছে, তেমনি সম্ভাবনার বিষয়গুলোও তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়, গত মার্চের তুলনায় জুনে ব্যাংকগুলোর সম্পদের গুণগত মান কমেছে। তবে মুনাফার প্রবণতা বেড়েছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্পদ কিছুটা বাড়লেও মুনাফা কমেছে। ব্যাংক ও আর্থিক দুই খাতেই খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈশ্বিক মন্দার প্রভাব দেশে আর্থিক খাতে আরও স্পষ্ট হচ্ছে। এর প্রভাবে ডলার সংকট বেড়েছে। আমদানি কমেছে। সব মিলে বৈশ্বিকভাবে দেশের আর্থিক খাত চাপের মধ্যে রয়েছে।

প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, গত জুন পর্যন্ত ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়ে ১ হাজার ৫৬০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। যা মোট ঋণের ১০ দশমিক ১১ শতাংশ। এর মধ্যে ৪৮ শতাংশ খেলাপি ঋণই রয়েছে ৫টি ব্যাংকে। এসব ব্যাংকের সবগুলোই সরকারি খাতের। বাকি ৫২ শতাংশ অন্য ব্যাংকে। এ হিসাবে মোট খেলাপি ঋণের প্রায় অর্ধেকই শীর্ষ ৫ ব্যাংকের কাছে। খেলাপি ঋণের শীর্ষ ১০ ব্যাংকের কাছে আটকে রয়েছে মোট খেলাপির ৬৫ শতাংশ। অন্য ব্যাংকে রয়েছে ৩৫ শতাংশ। আগে এ হার আরও কম ছিল। বর্তমানে কিছু ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় একদিকে যেমন এর পরিমাণ বেড়েছে। অন্যদিকে খেলাপি ঋণ বেশি মাত্রায় কেন্দ্রীভ‚ত হয়ে পড়েছে।

একইভাবে মোট সম্পদের ৩১ শতাংশই রয়েছে শীর্ষ ৫ ব্যাংকের হাতে। বাকি ব্যাংকের কাছে রয়েছে ৬৯ শতাংশ। শীর্ষ ১০ ব্যাংকের কাছে সম্পদ রয়েছে ৪৫ শতাংশ। অন্য ব্যাংকের কাছে রয়েছে ৫৫ শতাংশ। ২ শতাংশের কম খেলাপি ঋণ রয়েছে মাত্র ৭টি ব্যাংকের কাছে। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ২ শতাংশের কম খেলাপি ছিল ১০টি ব্যাংকের কাছে। এ হিসাবে ৩টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ২ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। ২ শতাংশের বেশি থেকে ৩ শতাংশের কম খেলাপি ঋণ রয়েছে ৪টি ব্যাংকে। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ছিল ৮টি ব্যাংকে। অর্থাৎ ছয় মাসে ৪টি ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বেড়েছে। ৩ শতাংশের বেশি থেকে ৫ শতাংশের কম খেলাপি ঋণ রয়েছে ১৭টি ব্যাংকে। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ছিল ২০টি ব্যাংকে।

আন্তর্জাতিকভাবে ৩ শতাংশের বেশি খেলাপি ঋণ থাকলে ওই ব্যাংককে ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে ধরা হয়। বাংলাদেশে ৫ শতাংশের বেশি খেলাপি ঋণ থাকলে ওই ব্যাংককে ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে ধরা হয়। এ হিসাবে ৫ শতাংশের বেশি খেলাপি ঋণ রয়েছে ৩৩টি ব্যাংকের। দেশের ৬১টি ব্যাংকের মধ্যে ৩৩টি ব্যাংকই খেলাপি ঋণের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ। অর্থাৎ অর্ধেকেরও বেশি ব্যাংক ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায়।

এদিকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর খেলাপি ঋণ বেড়ে গত জুনে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা। মোট ঋণের ২৭ দশমিক ৬৫ শতাংশই খেলাপি।

অর্থনীতি

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ২০২৩ সালের জন্য বছর সমাপ্তি রপ্তানি তথ্য প্রকাশ করেছে। এই ক্যালেন্ডার বছরে আমাদের পোশাক রপ্তানি ৪৭ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে, যা ২০২২ সালের তুলনায় এক দশমিক ৬৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বেশি।

অর্থাৎ বছরওয়ারি প্রবৃদ্ধি হয়েছে তিন দশমিক ৬৭ শতাংশ।

এ বছরে বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয় দুই শতাংশ বেড়েছে, যার অর্থ হলো এই প্রবৃদ্ধির বেশিরভাগই এসেছে পোশাক রপ্তানি থেকে।

পোশাক রপ্তানির এই প্রবৃদ্ধিতে কেবলমাত্র নিটওয়্যার রপ্তানি অবদান রেখেছে; নীটওয়্যার রপ্তানি সাত দশমিক ৪৭ শতাংশ বেড়েছে, যেখানে ওভেন রপ্তানি শূন্য দশমিক ৮১ শতাংশ কমেছে।

২০২৩ সালের মাসভিত্তিক রপ্তানি পারফরম্যান্স দেখায় যে, বছরের জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারিতে মোটামুটি প্রবৃদ্ধি সহকারে বছরটি ভালোভাবে শুরু হয়েছিল। মার্চ ও এপ্রিলে টানা কমার পর, মে থেকে সেপ্টেম্বর সময়ে প্রবৃদ্ধি পুনরায় ইতিবাচক ধারাতে ফিরে আসে এবং তা বজায় থাকে। বছরের শেষ প্রান্তিকে রপ্তানি পারফরম্যান্স ২০২২ সালের শেষ প্রান্তিকের তুলনায় নিচে নেমে আসে।

যদিও বছরটি ডিসেম্বরে দুই দশমিক ৩৫ শতাংশ কম সহকারে শেষ হয়েছে। এই একক মাসে রপ্তানি হয়েছিল চার দশমিক ৫৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। নভেম্বর ও ডিসেম্বরে পতন ঘটেছিল মূলত ২০২২ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বরে অস্বাভাবিকভাবে বেশি রপ্তানির কারণে।

দেশভিত্তিক রপ্তানি পারফরম্যান্সের বিস্তারিত তথ্য এখনও প্রকাশ করা হয়নি।

এদিকে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের (জুলাই থেকে ডিসেম্বর) মধ্যে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ২৩ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে এবং প্রবৃদ্ধি এক দশমিক ৭২ শতাংশে নেমে এসেছে।

বছরওয়ারি পোশাক রপ্তানি টার্নওভার হিসাব করলে ২০২৩ সাল পোশাক শিল্পের জন্য একটি ঐতিহাসিক বছর ছিল। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক সংকট বিবেচনা করলে বাংলাদেশ মোটামুটি ভালো করেছে। তবে, বাংলাদেশের প্রধান বাজারগুলোর আমদানি কমেছে। কারণ, বেশিরভাগ উন্নত অর্থনীতি তাদের উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে লড়াই করছে। এছাড়া মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার লক্ষ্যে গৃহীত বিভিন্ন আর্থিক নীতি সংক্রান্ত পদক্ষেপগুলো ভোক্তাদের চাহিদার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে।

যেহেতু বিশ্বব্যাপী পোশাক বাণিজ্যের প্রবৃদ্ধি প্রতিবছর ওঠানামা করে, তাই ধারণা করা হচ্ছে ২০২৪ একটি পরিবর্তনের বছর হবে। কারণ, ২০২৩ সালটি সারা বিশ্বজুড়েই পোশাক শিল্পের জন্য একটি দুর্বল বছর ছিল। ২০২৪ সালে ভোক্তাদের চাহিদা এবং ব্যয় পুনরায় বাড়তে পারে বলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।

ইতিবাচক দিক হলো, সব চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও শিল্পটি সাসটেইনেবিলিটি এর প্রতি তার প্রতিশ্রুতি এবং প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করা হয়েছে, যা ১ ডিসেম্বর ২০২৩ থেকে কার্যকর হয়েছে; সবুজ শিল্পায়নের দিকে শিল্পের রূপান্তরের অগ্রযাত্রা আরও জোরালোভাবে অব্যাহত থেকেছে। এছাড়া কার্বন নির্গমন কমাতে শিল্পের অগ্রগতিও উল্লেখযোগ্যভাবে দৃশ্যমান। বাজার, পণ্য ও ফাইবারের দিক থেকে রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণের প্রচেষ্টা শিল্পের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে।

এ বিষয়ে বিজিএমইএর পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, আমরা আশা করি ২০২৪ সালে শিল্পে আরও কৌশলগত বিনিয়োগ হবে এবং আরও উদ্ভাবনী ও প্রযুক্তি-ভিত্তিক শিল্পের দিকে একটি গুণগত পরিবর্তন দৃশ্যমান হবে।

তিনি বলেন, আমাদের অর্থনীতি বর্তমানে কিছু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। আমি বিশ্বাস করি ২০২৪ সাল আমাদের জন্য সুবাতাস বয়ে নিয়ে আসবে। কারণ, আমরা শিল্পের একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আশা করছি। আমাদের সামনে নতুন সুযোগ রয়েছে, যা কাজে লাগানোর উপায়গুলো শিল্প অন্বেষণ করছে এবং আমাদের সামনে নতুন চ্যালেঞ্জও রয়েছে। চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করে সুযোগগুলো কাজে লাগানোর জন্য সরকার, উন্নয়ন অংশীদার এবং অন্যান্য সব স্টেকহোল্ডারের কাছ থেকে অব্যাহত সহযোগিতা ও সমর্থন আমাদের প্রয়োজন।

অর্থনীতি

জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে এলেই দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে প্রথমে শুরু হয় ছন্দপতন। নির্বাচন অনুষ্ঠানের ১ বছর বা ৬ মাস আগে থেকে শুরু হয় এই ছন্দপতন। একটি নির্বাচনের পর টানা ৪ বছর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ার যে গতি থাকে নির্বাচনি বছরে বা নির্বাচনের ১ বছর বা ৬ মাস আগে থেকে এটি কমতে থাকে।

একপর্যায়ে রিজার্ভ বাড়ার গতি থেমে গিয়ে নিম্নমুখী হয়। কখনো বাড়লেও তা খুবই সামান্য। চূড়ান্ত হিসাবে নির্বাচনের ৬ মাস আগের পরিমাণে রিজার্ভ নির্বাচনি মাসে থাকে না। তা বেশ কমে যায়। নির্বাচনের পর আবার রিজার্ভ বাড়তে থাকে। সব মিলে নির্বাচনি বছরে রিজার্ভে চলে উত্থান-পতন।

অথচ নির্বাচনি বছরে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়ে। ঋণ প্রবৃদ্ধির হারও কমে যায়। তারপরও রিজার্ভ কমাকে ভালো চোখে দেখছেন না দেশের শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদরা। তাদের মতে নির্বাচনের আগে দেশের রাজনীতিতে যে অনিশ্চয়তা দেখা দেয় তাতে করে অনেকে বিদেশে টাকা পাচার করে দেন। আমদানি-রপ্তানির আড়ালে বা হুন্ডির মাধ্যমে এসব টাকা পাচার হয়। যে কারণে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে চাপ পড়ে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০০১, ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে ও পরে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে উত্থান-পতন হয়েছে। নির্বাচনের বছরের শুরুর দিকে রিজার্ভ বেড়ে রেকর্ড পরিমাণ উচ্চতা ছুঁয়েছে। কমপক্ষে ৬ মাস আগে থেকে কমতে শুরু করে। কোনো কোনো মাসে বাড়লেও পরিমাণে তা খুব কম। নির্বাচনি বা তার আগের মাসে রিজার্ভ কমে যায় বেশ। নির্বাচনের পর আবার বাড়তে শুরু করে। আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখেও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমছে। তবে এবার গত ২ বছর ৪ মাস ধরে রিজার্ভ কমছে। এবার রিজার্ভ কমার অন্যতম কারণ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া ও বৈশ্বিক মন্দার প্রভাব। এছাড়া দেশ থেকে নানা ভাবে টাকা পাচার হচ্ছে। এ কারণেও রিজার্ভ কমছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, দুর্নীতির মাধ্যমে যেসব টাকা অর্জিত হয় সেগুলো নির্বাচনি বছরে একটি চক্র বিদেশে পাচার করে দেয়। কারণ নির্বাচনে ক্ষমতার পালাবদল হলে একপক্ষ নানাভাবে নাজেহাল হবেন। এ আশঙ্কায় তারা টাকা বিদেশে পাচার করে সেখানে বিলাসবহুল জীবনযাপন করেন। যে কারণে নির্বাচনি বছরে আমদানি ব্যয় অস্বাভিকভাবে বেড়ে যায়। রপ্তানি আয়ের মূল্য দেশে না আসার প্রবণতা বাড়ে। একই কারণে কার্ব মার্কেটে ডলারের দামে বড় ধরনের ওঠানামা করে। এবারের নির্বাচনের আগে থেকে ডলার সংকটের কারণে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। টাকা পাচারের বাকি সবই হচ্ছে। ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই নির্বাচনের অনেক আগে থেকে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমছে। তবে এবারের রিজার্ভ কমার সঙ্গে বৈশ্বিক কারণের সঙ্গে অভ্যন্তরীণ নানা কারণ জড়িত। এর মধ্যে নির্বাচনের কারণে এক ধরনের অনিশ্চয়তাও দেখা দিয়েছে। এ কারণে অনেকেই টাকা পাচার করছেন। নির্বাচনের ২ বছর ৪ মাস আগে ২০২১ সালের আগস্টে দেশের রিজার্ভ বেড়ে রেকর্ড ৪ হাজার ৮০৬ কোটি ডলারে ওঠেছিল। এরপর থেকে তা কমছে। কমার গতি এখনও অব্যাহত রয়েছে। জুলাইয়ে রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৯৭৩ কোটি ডলার। আগস্টে তা কমে ২ হাজার ৯২৬ কোটি ডলারে নামে। সেপ্টেম্বরে আরও কমে দাঁড়ায় ২ হাজার ৬০৮ কোটি ডলারে। অক্টোবরে ২ হাজার ৬৪৮ কোটি ও নভেম্বরে ২ হাজার ৪৮৯ কোটি ডলারে নামে। আইএমএফ ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের ঋণের কিস্তি ছাড় হওয়ায় সম্প্রতি রিজার্ভ কিছুটা বেড়ে ২ হাজার ৬০৫ কোটি ডলারে ওঠে। নির্বাচনের পর এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) দেনা শোধ করলে রিজার্ভ আবার কমে যাবে।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদের একাদশ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সময়ে রিজার্ভ সাশ্রয় ও আমদানি ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ সংকোচন নীতি গ্রহণ করে। তারপরেও আমদানি ব্যয় কমেনি। বরং আরও বেড়েছে। শুধু সেপ্টেম্বরই আমদানি ব্যয় বেড়েছিল ২৪ শতাংশের বেশি। আমদানি ব্যয়সহ অন্যান্য খাতে বৈদেশিক মুদ্রার ব্যয় বাড়ার কারণে রিজার্ভে গিয়ে চাপ পড়ে। ওই বছরের ৩০ জুন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩ হাজার ৩১৭ কোটি ডলার। ২৯ আগস্ট তা কমে ৩ হাজার ২৮০ কোটিতে দাঁড়ায়। ৩১ অক্টোবর আরও কমে ৩ হাজার ২০৮ কোটিতে নেমে যায়। নভেম্বরে তা আরও কমে ৩ হাজার ১০৫ কোটি ডলারে নেমে যায়। ডিসেম্বরের শেষে তা বেড়ে ৩ হাজার ২০২ কোটি ডলারে ওঠে। নির্বাচনের পর জানুয়ারিতে রিজার্ভ কিছুটা কমে ফেব্রুয়ারি থেকে আবার বাড়তে শুরু করে।

এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশে সহনশীল রাজনৈতিক পরিবেশ না থাকলে অনিশ্চয়তা বাড়ে। ফলে অনেকের মধ্যে আস্থার সংকট দেখা দেয়। এ কারণে নির্বাচনি বছরে দেশ থেকে টাকা পাচার বাড়ে। ফলে রিজার্ভেও চাপ পড়ে। সুস্থ ও সহনশীল রাজনৈতিক চর্চা গড়ে উঠলে ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা হলে এই প্রবণতা কমে আসবে।

প্রাপ্ত্য তথ্যে দেখা যায়, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় সংসদের দশম নির্বাচন। এর আগে পরে রিজার্ভে বেশ উঠানামা ছিল। ওই সময়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতিও ছিল বেশ উত্তপ্ত। ওই নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালের আগস্টে রিজার্ভ বেড়ে ১ হাজার ৬২৫ কোটি ডলারে ওঠে। সেপ্টেম্বরে আবার কমে ১ হাজার ৬১৫ কোটি ডলারে নেমে যায়। অক্টোবরে আবার বেড়ে ১ হাজার ৭৩৪ কোটি ডলারে ওঠে। নভেম্বরে আবার ১ হাজার ৭১০ কোটি ডলারে নেমে যায়। ডিসেম্বরে বেড়ে ১ হাজার ৮০৯ কোটি ডলারে দাঁড়ায়। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর এটি আবার বাড়তে থাকে । ওই মাস শেষে রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৮১২ কোটি ডলারে। ওই বছরে নির্বাচন বেশিরভাগ বিরোধী দল বর্জন করেছিল। ফলে নির্বাচনি উত্তাপ ছিল না মাঠে। উলটো রাজনৈতিক পরিস্থিতি বেশ উত্তপ্ত ছিল। আমদানি-রপ্তানি ও রেমিট্যান্স কার্যক্রম ছিল কম। ফলে রিজার্ভে খুব বেশি প্রভাব পড়েনি।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর শান্তিপূর্ণভাবে সংসদের নবম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে সব দল অংশ নেয়। রাজনৈতিক উত্তাপের পরিবর্তে ছিল নির্বাচনি উত্তাপ। ২০০৮ সালের জুনে রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়ায় ৬১৫ কোটি ডলার। জুলাইয়ে তা কমে ৫৮২ কোটি ডলার, আগস্টে সামান্য বেড়ে ৫৯৬ কোটি ডলারে ওঠে। সেপ্টেম্বরে তা আবার কমে ৫৮৬ কোটি ডলার নেমে যায়। অক্টোবরে তা আরও কমে দাঁড়ায় ৫৫৫ কোটি ডলারে। নভেম্বরে আরও কমে ৫২৪ কোটি ডলারে দাঁড়ায়। নির্বাচনের পর ওই মাসে রিজার্ভ কিছুটা বেড়ে ৫৭৯ কোটি ডলারে ওঠে। জানুয়ারিতে আবার কমে ৫৫৮ কোটি ডলারে দাঁড়ায়। ফেব্রুয়ারিতে আবার বেড়ে ৫৯৫ কোটি ডলার ওঠে।

২০০১ সালের ১ অক্টোবরে অনুষ্ঠিত হয় অষ্টম সংসদ নির্বাচন। ওই নির্বাচনের আগে-পরেও রিজার্ভে উত্থান-পতন হয়েছিল। ওই সময়ে ক্ষমতাসীন সরকার ক্ষমতা ছাড়ার আগে রিজার্ভ আগের ১০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে ৯৯ কোটি ডলারে দাঁড়ায়। পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা নিলে রিজার্ভ আবার বাড়তে থাকে। ২০০১ সালের জুলাইয়ে রিজার্ভ ছিল ১১৪ কোটি ডলার। আগস্টে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১২৫ কোটি ডলারে। সেপ্টেম্বরে আবার কমে ১১৫ কোটি ডলারে নেমে যায়। অক্টোবরে আরও কমে ১০৮ কোটি ডলারে দাঁড়ায়। নভেম্বর থেকে রিজার্ভ আবার বাড়তে থাকে। নভেম্বরে এর পরিমাণ বেড়ে ১১১ কোটি ডলার এবং ডিসেম্বরে তা আরও বেড়ে ১৩০ কোটি ডলারে দাঁড়ায়।

অর্থনীতি

নিরবিচ্ছিন্ন ও মানসম্মত বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে বিদ্যুৎ উৎপাদন আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করা হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

আজ বুধবার রাজধানীর হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহার ঘোষণাকালে তিনি এই প্রতিশ্রুতি দেন।

শেখ হাসিনা বলেন, বিদ্যুৎ খাতে আমরা গত ১৫ বছরে যুগান্তকারী ও বৈপ্লবিক উন্নয়ন ঘটিয়েছি। নিরবচ্ছিন্ন ও মানসম্মত বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত, এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার ও ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, পরিবেশবান্ধব জ্বালানি থেকে ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। নবায়নযোগ্য ও পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুৎ সঞ্চালনের জন্য গ্রিড যুগোপযোগী করার কাযক্রম শুরু হয়েছে।

এছাড়াও দেশের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গ্যাস ও এলপিজির সরবরাহ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করা হবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

অর্থনীতি

গত অর্থবছরে বিদেশি ঋণের সুদ বাবদ বেশি গুনতে হয়েছে ৪৪ কোটি মার্কিন ডলার, দেশীয় মুদ্রায় চার হাজার ৮৪০ কোটি টাকা। মূলত ডলারের ঊর্ধ্বমুখীর কারণে টাকার অবমূল্যায়ন এবং ঋণ পরিশোধের চাপ বৃদ্ধির ফলে এটি ঘটেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে ৩০ শতাংশের মতো। এর প্রভাব গিয়ে পড়ছে বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধের ওপর। গেল (২০২২-২৩) অর্থবছরে বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধে মোট ব্যয় হয় ৯৪ কোটি মার্কিন ডলার। এর আগের অর্থবছরে এ খাতে ব্যয়ের অঙ্ক ছিল ৫০ কোটি ডলার। অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে পাওয়া গেছে এ তথ্য।

সূত্রমতে, সুদ পরিশোধ ব্যয়ের চাপ চলতি (২০২৩-২৪) অর্থবছরে থাকবে। অর্থবছরের শুরুতে বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধে যে বরাদ্দ রাখা হয়, তার চেয়ে কমপক্ষে চার হাজার কোটি টাকা বেশি গুনতে হবে। অর্থনৈতিক অঞ্চলে কয়েকটির মধ্যে সুদ পরিশোধ ব্যয় মোকাবিলাও একটি চ্যালেঞ্জ হিসাবে দেখছে অর্থ বিভাগ। সম্প্রতি অর্থনৈতিক কো-অডিনেন্স কাউন্সিল বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনায় উঠে আসে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, বিদেশি ঋণ পরিশোধে যে ব্যয় বাড়ছে, তার বড় অংশই বিনিময় হারের সমন্বয় করতে হচ্ছে বলে এটা এড়ানো সম্ভব নয়, আবার এ কারণে খুব উদ্বিগ্ন হওয়ারও কারণ নেই। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বিদেশি ঋণ পরিশোধে ব্যয় বৃদ্ধির প্রবণতা নিয়ে উদ্বেগের কারণ রয়েছে। বিদেশি ঋণ পরিশোধে ডলারের প্রয়োজন রয়েছে, সমস্যাটা সেখানে। কারণ ডলার কিনতে টাকার দরকার; কিন্তু সরকারের রাজস্ব আহরণে সীমাবদ্ধতার কারণে এই কাজটিও চ্যালেঞ্জিং।

অর্থ বিভাগের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ঋণ পরিশোধে ব্যয় হয় ২৬৭ কোটি ডলার। এর আগের অর্থবছরে এ অঙ্ক ছিল ২০৮ কোটি ডলার। ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে এক বছরের ব্যবধানে বেশি গুনতে হয় ৫৯ কোটি ডলার। সেখানে আরও বলা হয়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণ ও সুদ পরিশোধে বরাদ্দ ছিল ২৭৯ কোটি ডলার।

সরকার দুটি খাত থেকে ঋণ করে ব্যয় পরিচালনা করে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে বিদেশি ঋণ, অপরটি অভ্যন্তরীণ ঋণ (ব্যাংক ও সঞ্চয়পত্র)। ফলে বিদেশি ঋণ এবং ঋণের বিপরীতে যে সুদ আরোপিত হচ্ছে দুটোই পরিশোধ করতে হয় মার্কিন ডলারে। ফলে ডলারের মূল্য অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় বৈদেশিক লেনদেনে খরচ বাড়ছে সরকারের। কারণ ডলার কিনতে সরকারকে বেশি টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে।

জানতে চাইলে অর্থনীতিবিদ এম কে মুজেরী শুক্রবার জানান, বর্তমান বিভিন্ন মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। পাশাপাশি অনেক দ্বিপাক্ষিক ঋণ নেওয়া হয়েছে। অধিকাংশ ঋণই দীর্ঘমেয়াদি নয়, স্বল্পমেয়াদি। অনেক ঋণ পরিশোধ শুরু হয়েছে। ফলে আগামী বছরগুলোতে বিদেশি ঋণ ও ঋণের সুদ পরিশোধ ব্যয় বাড়বে। ঋণ পরিশোধে কখনোই ব্যর্থ হয়নি সরকার। এসব ঋণের সুদ শোধ দিতে গিয়ে ব্যয় বাড়ছে। জানা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়ন করা হয় ২০২২ সালের মার্চ ও এপ্রিলে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, ওই সময় এক ডলারের বিনিময় দর ছিল ৮৬ টাকা। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে বাড়তে থাকে এই দর। বর্তমানে যা ২৮ শতাংশ বেড়ে, ১১০ টাকায় পৌঁছেছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, টাকার মান কমার ফলেই বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের খরচ বাড়ছে। তাছাড়া বৈশ্বিক নানান কারণে বাজারভিত্তিক ঋণের সুদহারও বাড়ছে। এই ডলারের মূল্য ওই বছর অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পায়। আর এর প্রভাব গিয়ে পড়ে বৈদেশিক ঋণ ও ঋণের সুদ পরিশোধের ক্ষেত্রে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, এসব কারণ ছাড়াও সহজ শর্তের ঋণের ছাড় কম হওয়া এবং বেশি সুদের ঋণ নেওয়ার পরিমাণ বৃদ্ধির কারণেই এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ঋণ পরিশোধ শুরু হওয়ায় বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপ বেশি বাড়ছে। পাশাপাশি আছে চীন ও ভারত থেকে নেওয়া ঋণ পরিশোধের চাপ।

ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, ২০১২-১৩ অর্থবছরে সব মিলিয়ে ১১০ কোটি ডলার ঋণ পরিশোধ করেছিল বাংলাদেশ। পরের ১০ বছরে অর্থাৎ ২০২১-২২ অর্থবছরে তা বেড়ে ২০১ কোটি ডলারে উন্নীত হয়। মূলত চীনের ঋণ পরিশোধ শুরু হওয়ায় গত দু-তিন বছর ঋণ পরিশোধের পরিমাণ বাড়ছে। এর সঙ্গে এখন যুক্ত হয়েছে রাশিয়ার ঋণ। আর এই চাপ সামনে আরও বাড়বে। কেননা চলতি অর্থবছরেই চট্টগ্রামের কর্ণফুলী টানেল প্রকল্প ও পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের ঋণের কিস্তি পরিশোধ শুরু হবে।

এদিকে ডলারের বিপরীতে টাকার মান দুর্বল হওয়ায় চলতি অর্থবছরে বিদেশি ঋণের আসল ও সুদ পরিশোধে বাজেট বরাদ্দের চেয়ে সরকারের ব্যয় প্রায় ১১ শতাংশ বাড়বে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধে অতিরিক্ত ৪ হাজার ২০ কোটি টাকার প্রয়োজন হবে এমনটি হিসাব করা হচ্ছে। এতে চলতি অর্থবছরে সরকারের বিদেশি ঋণ পরিশোধের অঙ্ক দাঁড়াচ্ছে ৪১ হাজার ৯৬ কোটি টাকায়, অর্থাৎ আগের অর্থবছরের চেয়ে বাড়বে ৫২ শতাংশ। এর মধ্যে সুদ পরিশোধ করা হবে ১৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা, বাকিটা বরাদ্দ থাকবে আসল পরিশোধে। আগের অর্থবছরে বিদেশি ঋণ পরিশোধে ২৬ হাজার ৯২৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।

অর্থনীতি

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন বা ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি অনুমোদন হয়েছে। আইএমএফ বোর্ডের এ অনুমোদনের ফলে ৬৮২ মিলিয়ন বা ৬৮ দশমিক ২ কোটি ডলার পাচ্ছে বাংলাদেশ।

সোমবার (১২ ডিসেম্বর) রাতে বিষয়টি জানান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। রাত সাড়ে ১২টায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা গাজী তৌহিদুল ইসলাম বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন।

আইএমএফ চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন করে। অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় এ ঋণ দেওয়া হয়। ঋণ অনুমোদনের পরপরই প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার ছাড় দেয় সংস্থাটি। ২০২৬ সাল পর্যন্ত সাড়ে তিন বছরে সাত কিস্তিতে পুরো অর্থ দেওয়ার কথা রয়েছে।

ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের জন্য জুনভিত্তিক বিভিন্ন সূচকে শর্ত পালনের অগ্রগতি দেখতে ৪ অক্টোবর আইএমএফের একটি মিশন ঢাকায় আসে। মিশনের নেতৃত্ব দেন এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের প্রধান রাহুল আনন্দ।

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মিশনকে জানানো হয়েছিল, অন্যান্য শর্তের ক্ষেত্রে অগ্রগতি হলেও বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ নানা কারণে রিজার্ভ এবং রাজস্ব আয় সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হয়নি। দেশের জাতীয় নির্বাচনের পর এ বিষয়ে জোরালো উদ্যোগ নেওয়া হবে। মিশনটি সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দপ্তরের সঙ্গে টানা ১৬ দিন বৈঠক করে।

বৈঠক শেষে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের বিষয়ে ইতিবাচক ইঙ্গিত দিয়ে যায় আইএমএফ প্রতিনিধিদল। বলা হয়, আইএমএফের পরবর্তী বোর্ড সভায় কিস্তি অনুমোদন হবে। অর্থমন্ত্রী জানান, মঙ্গলবার সে অনুযায়ী দ্বিতীয় কিস্তির অনুমোদন করে আইএমএফ।