অর্থনীতি

বন্যা এলাকায় আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করাসহ আট প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। সেই সঙ্গে আরও চার প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়াই মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। অনুমোদিত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ হাজার ১৬৭ কোটি ১৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে তিন হাজার ৯৭ কোটি ৯১ লাখ টাকা, বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৮ হাজার ৯১২ কোটি ৭৭ লাখ টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ১৫৬ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।

রোববার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী এবং একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা।

বৈঠক শেষে ব্রিফিং করেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড.শামসুল আলম এবং পরিকল্পনা সচিব সত্যজিত কর্মকার। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন, আইএমইডির সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সচিব) ড.কাউসার আহাম্মদ, পরকল্পনা কমিশনের সদস্য আবদুল বাকি, একেএম ফজলুল হক প্রমুখ।

বিফিংয়ে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী জানান, একনেক বৈঠকে বরাবরের মতোই প্রধানমন্ত্রীর সামনে দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার একটি চিত্র উপস্থাপন করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়, করোনা মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব বিশ্ববাজারে অস্থিরতা তৈরি করে। এ কারণে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়। তবে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ায় গত সেপ্টেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত ক্রমান্বয়ে মূল্যস্ফীতি কমছে। বিশেষ করে হতদরিদ্রদের আর্থিক সহায়তা, অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধি ও টিসিবির পণ্য বিক্রির কারণে মূল্যষ্ফীতির চাপ কমে এসেছে।

প্রতিমন্ত্রী আরও জানান, সরকারের নানা প্রণোদনামূলক কর্মসূচি ও নীতিকৌশলের কারণে রেমিটেন্স প্রবাহ বেড়েছে। বিলাস পণ্যের রাশ টেনে ধরায় আমদানি ব্যয় কমেছে এবং রপ্তানি বেড়েছে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে। ভুতর্কি ব্যয় মেটাতে সরকারি ঋণ বাড়লেও বেসরকারি খাতে জানুয়ারি মাসে ঋণপ্রবাহ বেড়েছে ১৩ শতাংশ, যা গত বছর একই সময়ে ছিল ১১ শতাংশ। সার্বিকভাবে অভ্যন্তরীণ ঋণ প্রবাহ বেড়েছে, যা অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে সহায়তা করছে। এছাড়া জুলাই-জানুয়ারি মাসে চলতি এ্যকাউন্টে ঘাটতি কমে দাঁড়িয়েছে ৫ বিলিয়ন ডলারে। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ ঘাটতি ছিল ১০ বিলিয়ন ডলার। এভাবে অর্থনীতি বেশ কিছু সুচকের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

একনেকে অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পগুলোর অন্যতম ‘রেজিলিয়েন্ট ইনফ্রাসট্রাকটার ফর অ্যাডাপশন অ্যান্ড ভারনাবিলিটি রিডাকশন প্রজেক্ট (রিভার)’ প্রকল্প। এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ৪ হাজার ৩২৩ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংক তাদের সহজ শর্তের তহবিল ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইডিএ) থেকে ঋণ দেবে ৪ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা। বাকি ৪৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা খরচ করা হবে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে।

চলতি বছর থেকে শুরু করে ২০২৮ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়ন করবে স্থাণীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। এটির আওতায় ৫০০টি বহুমুখী বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র, অ্যাকসেস রাস্তা এবং জলবায়ূ সহনশীল অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। এর মাধ্যমে নদী ও আকস্মিক বন্যার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করবে বলে আশা করছেন সংশ্লিস্টরা।

স্বাভাবিক সময় বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রগুলো প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা হবে। এসব অবকাঠামোতে সৌরশক্তি ব্যবস্থা, পানি, স্যানিটেশন এবং নানান স্বাস্থ্য সুবিধা থাকবে। নারী ও দুর্বল জনগোষ্ঠীর জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে।

অন্যান্য অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হলো- দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় ট্রান্সমিশন-গ্রিড সম্প্রসারণ, প্রমোটিং জেন্ডার রেসপন্সিভ ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড টিভিইটি সিস্টেমস এবং কাস্টমস আধুনিকায়ন ও অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প। আরও আছে আরবান রেজিলিয়েন্স প্রজেক্ট (ইউআরপি): প্রজেক্ট কো অর্ডিনেশন অ্যান্ড মনিটরিং ইউনিট, দক্ষিণ চট্টগ্রাম আঞ্চলিক উন্নয়ন (এসডিআরডি), ময়মনসিংহ জেলার গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন এবং মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের পুনর্বাসন ও নদী তীর সংরক্ষণ প্রকল্প।

ব্যয় ছাড়া মেয়াদ বাড়ানো চার প্রকল্প হলো- জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ক গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট স্থাপন, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিপ মডেল টেস্টিং সেন্টার স্থাপন, গোপালগঞ্জ এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের তৃতীয় শাখা কারখানা স্থাপন এবং খুলনা হতে মোংলা পোর্ট পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প।

অর্থনীতি

রপ্তানি আয় দেশে আনার নিয়ম অনুযায়ী নির্ধারিত শেষ দিনে ডলারের যে দাম থাকবে সেই দর অনুযায়ী সমপরিমাণ টাকা পাবেন রপ্তানিকারকরা।

কোনো কারণে নির্ধারিত দিনের পর রপ্তানি আয় দেশে এলেও যেদিন আসবে সেদিনের দর রপ্তানিকারক পাবেন না। তিনি নির্ধারিত শেষ দিনের দরই পাবেন। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ওই হিসাবেই রপ্তানিকারকদের ডলারের বিপরীতে নগদ টাকা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটি সার্কুলার জারি করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে।

এতে বলা হয়, এ নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর হবে। একই সঙ্গে বিষয়টি রপ্তানিকারকদের জানানোর জন্যও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। রপ্তানি আয় দেশে আসার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠানোর কথাও বলা হয়েছে।

সূত্র জানায়, সম্প্রতি ডলারের দাম বাড়ছে। পর্যায়ক্রমে আরও বাড়ানো হবে। এ কারণে রপ্তানিকারকদের একটি অংশ আয় সময়মতো দেশে আসছে না। ডলারের বাড়তি দাম পাওয়ার জন্য তারা রপ্তানি আয় দেরিতে দেশে আনছে। এতে বাজারে ডলারের প্রবাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

রপ্তানিকারকরা যাতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই রপ্তানি আয়ের অর্থ দেশে আনেন সেটি উৎসাহিত করার জন্যই কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ পদক্ষেপ নিয়েছে। বিদ্যমান ডলার সংকট নিরসনে এ উদ্যোগে সুফল বয়ে আনবে বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

সার্কুলারে বলা হয়, প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী পণ্য রপ্তানি করার চার মাসের মধ্যে রপ্তানি আয় দেশে আনার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আর ওই সময়ের মধ্যেই তা নগদায়ন করার নিয়ম। কিন্তু অনেক রপ্তানিকারক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ডলার দেশে আনতে পারেন না। দেরিতে আনেন।

বর্তমান নিয়মে তিনি যে সময়ে ডলার দেশে আনেন সেই সময়ের দামই পান। নতুন নিয়মে তা পাওয়া যাবে না। রপ্তানি আয় দেশে আনার সর্বশেষ সময়ে ডলারের যে দাম ছিল সেই দাম পাবেন।

একই সঙ্গে রপ্তানি আয় দেশে আনার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ডলার নগদায়ন না করে পরে করলেও যে সময়ের মধ্যে রপ্তানি আয় দেশে আসার কথা ছিল, ওই সময়ের শেষ দিনের ডলারের দাম অনুযায়ী তার আয় নগদায়ন হবে। অর্থাৎ ডলারের দাম হ্রাস-বৃদ্ধি যাই হোক, গ্রাহক নির্দিষ্ট ওই দিনের বিনিময় হার অনুযায়ী তার রপ্তানি আয়ের বিপরীতে টাকা পাবেন।

এতে আরও বলা হয়, প্রতিটি ব্যাংককে রপ্তানি আয় দেশে আসার সর্বশেষ তারিখ ও নগদায়নের তারিখে থাকা ডলারের দাম একটি অনলাইনে লিপিবদ্ধ রাখতে হবে। প্রতি মাস শেষে পরবর্তী ১০ দিনের মধ্যে তা বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাতে হবে।

এসব তথ্য পাঠানোর বিষয়ে একটি নির্ধারিত ছকও দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে রপ্তানির তারিখ, কত দিনের মধ্যে আয় দেশে আসার কথা, কবে এলো এসব তথ্য দিতে হবে।

বর্তমানে রপ্তানি আয়ের বিপরীতে প্রতি ডলারে ১০৪ টাকা করে দেওয়া হয়। ১ মার্চ থেকে এই দর কার্যকর হয়েছে। এর আগে ছিল ১০৩ টাকা।

অর্থনীতি

সদ্য সমাপ্ত ফেব্রুয়ারি মাসে ১৫৬ কোটি ১২ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্র‌তি ডলার ১০৭ টাকা ধরে) ১৬ হাজার ৭০ কোটি টাকা। গত বছরের এই মাসে ১৪৯ কোটি ৪৫ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল।

বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

চল‌তি বছ‌রের জানুয়া‌রিতে রেমিট্যান্স এ‌সে‌ছিল ১৯৫ কোটি ৮৮ লাখ মার্কিন ডলার। তবে জানুয়া‌রির তুলনায় ফেব্রুয়ারিতে রেমিট্যান্স কম আসলেও চলতি অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেশি রেমিট্যান্স এসেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম (জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত) আট মাসে মোট ১ হাজার ৪০১ কোটি ৩৩ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল ১ হাজার ৩৪৩ কেটি ৮৫ লাখ মার্কিন ডলার। সে হিসাবে ৫৭ কোটি ৪৮ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স বেশি এসেছে চলতি অর্থবছরে।

অর্থনীতি

বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় আবারও শীর্ষে উঠে এসেছেন বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলা এবং টুইটারের সিইও ইলন মাস্ক। এর মধ্য দিয়ে দুই মাসের বেশি সময় পর ধনকুবেরদের এ তালিকায় শীর্ষে উঠেছেন তিনি।

ব্লুমবার্গের ধনকুবেরের তালিকায় গত বছরের ডিসেম্বরে মাস্ককে ছাড়িয়ে শীর্ষে উঠে এসেছিলেন বার্নার্ড আর্নল্ট। তিনি বিলাসপণ্যের কোম্পানি এলভিএমএইচের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)।

ব্লুমবার্গের হিসাব অনুযায়ী, গতকাল ইলন মাস্কের মোট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৭১০ কোটি ডলারে। আর বার্নার্ড আর্নল্টের সম্পদের পরিমাণ ১৮ হাজার ৫৩০ কোটি ডলার। টেসলার শেয়ারের দাম বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ইলন মাস্কের সম্পদ বেড়েছে।

গতকাল সোমবার বার্নার্ড আর্নল্টকে ছাড়িয়ে আবারও নিজের হারানো অবস্থান ফিরে পেলেন ইলন মাস্ক। গত বছর টেসলার শেয়ারের ব্যাপক দরপতনের ফলে ধনকুবেরের তালিকায় শীর্ষ অবস্থান হারিয়েছিলেন তিনি।

টেসলা, টুইটার ছাড়াও রকেট কোম্পানি স্পেসএক্স ও নিউরালিংকের প্রধান হিসেবে রয়েছেন ৫১ বছর বয়সি ইলন মাস্ক। নিউরালিংক স্টার্টআপ মানুষের মস্তিষ্ককে কম্পিউটারের সঙ্গে সংযুক্ত করার জন্য অতি উচ্চ ব্যান্ডউইথের ব্রেন মেশিন ইন্টারফেস তৈরি করছে।

অর্থনীতি

আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে ঝুঁকিমুক্ত থাকলেও সর্বশেষ হিসাবে দেশে মোট ঋণের পরিমাণ প্রায় সাড়ে ১৩ লাখ কোটি টাকা। এটি জাতীয় বাজেটের প্রায় দ্বিগুণ। এই ঋণের বিপরীতে গেল অর্থবছরে ৭৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে সুদ পরিশোধে।

চলতি অর্থবছরেও সুদ খাতে গুনতে হবে ৭৩ হাজার কোটি টাকার বেশি। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব ও ডলারের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি। ফলে বৈদেশিক ঋণের কিস্তি ও সুদ ব্যয় আরও উসকে দিয়েছে। যা এক ধরনের চাপের মুখে ফেলছে অর্থনীতিকে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঋণসংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে ঋণ ও সুদ ব্যয়ের তথ্য।

সূত্রমতে, মোট ঋণের মধ্যে বৈদেশিক ঋণ ৪ লাখ ৯৫ হাজার ৭৯৪ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ ঋণ ৮ লাখ ৪৭ হাজার ৯৩০ কোটি টাকা।

এদিকে প্রতিবছরই ঋণের আকার বাড়ছে। অর্থাৎ ২০২০-২১ অর্থবছরে মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ১১ লাখ ৪২ হাজার ৯৪৮ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে ২ লাখ ৭৭৬ কোটি টাকা বেড়েছে ঋণ। এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ঋণের অঙ্ক ছিল ১০ লাখ ৬ হাজার ২০২ কোটি টাকা। এখানেও এক বছরের ব্যবধানে ঋণ বেড়েছে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৭৪৬ কোটি টাকা।

কোভিড-১৯ আঘাত হানার পর ঋণের বহর বেড়েছে বেশি। কোভিডের ফলে রাজস্ব আদায় কমে যাওয়া, অতিরিক্ত খরচ, আর্থিক বৃদ্ধির গতি শ্লথ হওয়াও এর অন্যতম একটি কারণ।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) মানদণ্ডে একটি দেশ তার মোট জিডিপির ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ নিতে পারবে। সেটি ঝুঁকি মুক্ত হিসাবে গণ্য হবে। সে হিসাবে বাংলাদেশের ঋণের পরিমাণ মোট জিডিপির ৩৩ দশমিক ৭৯ শতাংশ।

একইভাবে বৈদেশিক ঋণের ক্ষেত্রে জিডিপির ৫৫ শতাংশ ঋণ নেওয়া নিরাপদ। সেখানে বৈদেশিক ঋণের অনুপাত জিডিপির ১২ দশমিক ৪৭ শতাংশ। ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে এখনও ঝুঁকিমুক্ত বাংলাদেশ এমনটি বলা হয় সেখানে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাবেক সিনিয়র অর্থ সচিব মাহবুব আহমেদ বলেন, ঋণের মোট অঙ্কের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে মোট জিডিপির বিপরীতে ঋণের অনুপাত কত। তাহলে প্রকৃত চিত্র পাওয়া যাবে। তবে সমপর্যায়ের দেশগুলোর তুলনায় এখনো ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে দেশের অবস্থান ভালো।

এই মুহূর্তে ভারত সরকারের ঋণের পরিমাণ জিডিপির ৫৪ দশমিক ৩ শতাংশ, পাকিস্তানের ৭৪ দশমিক ৯ শতাংশ। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের ঋণের পরিমাণ জিডিপির ৩৫ দশমিক ৫ শতাংশ। এরপরও কিছু বিষয় আছে তা হচ্ছে ঋণ ও সুদসহ পরিশোধের অঙ্ক। কারণ ইতোমধ্যে ঋণের বড় কিস্তিগুলো পরিশোধ শুরু হয়েছে। আগামীতে আরও বাড়বে। ফলে এখন হুট করে যে কোনো ক্ষেত্রে ঋণ নেওয়া যাবে না। এক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। যেসব প্রকল্পে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হবে সেখানেই ঋণ নেওয়া যুক্তিযুক্ত হবে।

সারা বছরের আয় ও ব্যয় করতে বাজেট প্রণয়ন করে সরকার। এই বাজেটের একটি অংশ ঘাটতি থাকে। এই ঘাটতি পূরণে দেশের ভেতর ব্যাংকিং খাতসহ অন্যান্য উৎস ও বিদেশ থেকে ঋণ গ্রহণ করা হয়। ঋণ গ্রহণ ও পরিশোধের পর যে পরিমাণ অর্থ সরকারের কাছে পাওনা আছে সেটি নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে অর্থ বিভাগ।

মূলত ২০২১-২২ অর্থবছরের হিসাব ধরে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়। চলতি অর্থবছরের গত ৭ মাসে আরও ঋণ গ্রহণ ও পরিশোধ করা হয়েছে। তবে প্রকৃত ঋণের হিসাবটি করা হয় অর্থবছরের শেষে। যে কারণে চলতি অর্থবছরের প্রকৃত হিসাব পেতে জুন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। ফলে আগস্ট থেকে দেশের অভ্যন্তরীণ ও আইএমএফসহ বৈদেশিক ঋণ এখানে যুক্ত হয়নি।

ঋণ হিসাবে দেখা গেছে, ব্যাংকিং খাত থেকে এ পর্যন্ত যে পরিমাণ ঋণ গ্রহণ এবং বিপরীতে পরিশোধ করা হয়েছে এরপরও ঋণ আছে ৪ লাখ ১৯ হাজার ৬২৭ কোটি টাকা। এটি দেশের মোট ঋণের ৩১ শতাংশ। দ্বিতীয় ঋণের খাত হচ্ছে সঞ্চয়পত্র। এ খাত থেকে ৩ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ নেওয়া আছে। এটি মোট ঋণের ২৭ দশমিক ২০ শতাংশ।

ঋণের তৃতীয় খাত হচ্ছে ট্রেজারি বন্ড। এখান থেকে নেওয়া হয় ৩ লাখ ২৪ হাজার ৬০৩ কোটি টাকা। এভাবে পর্যায়ক্রমে ট্রেজারি বিল থেকে ৭৭ হাজার কোটি টাকা, সুকুক বন্ডের ঋণের পরিমাণ ১৮ হাজার কোটি টাকা এবং সরকারি চাকরিজীবীদের সাধারণ ভবিষ্যৎ তহবিল (জিপিএফ) থেকে নেওয়া হয়েছে ৬২ হাজার ৭৭০ কোটি টাকা। এসব ঋণ আগামীতে সরকারকে পরিশোধ করতে হবে।

সূত্র জানায়, কোভিড-১৯ মোকাবিলায় জরুরিভাবে স্বাস্থ্য খাতের ব্যবস্থাপনা, টিকা দেওয়া কার্যক্রমসহ অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে একদিকে প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। অপরদিকে বৈদেশিক সহায়তা পাওয়ার বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করে সরকার। ফলে ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিদেশ থেকে ২৪০ কোটি মার্কিন ডলার, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৬৫৫ কোটি ডলার এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে ঋণ পাওয়া গেছে ৪৫৯ কোটি ডলার।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারের ঋণের বিপরীতে প্রতিবছরই বড় অঙ্কের সুদ পরিশোধ করা হচ্ছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ব্যাংক ঋণের বিপরীতে সুদ পরিশোধে গেছে ২৪ হাজার ৩৮৮ টাকা, সঞ্চয়পত্রের বিপরীতে সুদ পরিশোধ ব্যয় হয় ৪০ হাজার ৮ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয় হয় ৪২৩৫ টাকা। সাধারণ ভবিষৎ তহবিলের ঋণের বিপরীতে ৭ হাজার ১২৮ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।

অর্থনীতি

ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন প্রভিশন ঘাটতি থাকলে আমানতের ঝুঁকি বাড়ে ।

ব্যাংক খাতে খেলাপিসহ ঋণমান অনুযায়ী নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়েছে ৮ ব্যাংক। বিদায়ি বছরের শেষ প্রান্তিকে এসব ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৪৬ কোটি ২৩ লাখ টাকা।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঘাটতিতে থাকা ব্যাংকে আমানতের নিরাপত্তা কম। খেলাপি ঋণ, পুনঃতফশিল, প্রভিশন ঘাটতি সমস্যা সমাধানে একটি ব্যাংক কমিশন গঠন করা উচিত।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ডিসেম্বর শেষে সরকারি চার ব্যাংক, বেসরকারি তিন এবং বিশেষায়িত এক ব্যাংকের সামষ্টিক প্রভিশন ঘাটতির অঙ্ক ১৯ হাজার ৪৬ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। গত সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ব্যাংকগুলোর প্রভিশন ঘাটতি ছিল ১৯ হাজার ৮৩৩ কোটি টাকা। কয়েকটি ব্যাংক প্রয়োজনের তুলনায় বেশি প্রভিশন সংরক্ষণ করায় পুরো ব্যাংক খাতের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৯ কোটি টাকা।

রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘাটতি রয়েছে সরকারি বেসিক ব্যাংকের। ডিসেম্বরে ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৫৩৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এরপরই রয়েছে অপর একটি সরকারি ব্যাংক। ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতি ৪ হাজার ৪২২ কোটি ১৫ লাখ টাকা। তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে রূপালী ব্যাংক। ২ হাজার ৮১৪ কোটি ৬১ লাখ টাকা প্রভিশন ঘাটতিতে পড়েছে ব্যাংকটি। এছাড়া বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ৩৪৩ কোটি ৭২ লাখ টাকা। বেসরকারি ৩টি ব্যাংকের মধ্যে নানা সমস্যায় জর্জরিত ন্যাশনাল ব্যাংকের ঘাটতি সবচেয়ে বেশি। ডিসেম্বরে ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতির অঙ্ক ৬ হাজার ৬১৭ কোটি ৭১ লাখ টাকা। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ১৭১ কোটি ১৬ লাখ টাকা, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ১৩৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এছাড়া বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের (বিকেবি) প্রভিশন ঘাটতির অঙ্ক ৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও অর্থনীতিবিদ ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রভিশন ঘাটতি থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারে না। ব্যাংক যদি প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়, তবে তাদের মূলধন ঘাটতিতে পড়ার শঙ্কা থাকে। এতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে ব্যাংকের ওপর। ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায় আমানত। এসব সমস্যা সমাধানে একটি ব্যাংক কমিশন গঠন করা উচিত। এ ধরনের কমিশনের মাধ্যমে এর আগেও বিভিন্ন সমস্যার সমাধান হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ব্যাংক খাতে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণের অঙ্ক ছিল ১৪ লাখ ৭৭ হাজার ৭৮৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে শ্রেণিকৃত বা খেলাপি ঋণের অঙ্ক ১ লাখ ২০ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ৮ দশমিক ১৬ শতাংশ। গত সেপ্টেম্বর শেষে যা ছিল ১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা। বিতরণ করা ঋণের ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ। আর ২০২১ সাল শেষে ১৩ লাখ এক হাজার ৭৯৭ কোটি টাকা ঋণ স্থিতির বিপরীতে খেলাপি ছিল ১ লাখ ৩ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা। মোট ঋণের ৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ ছিল খেলাপি।

অর্থনীতি

বাজারে আসছে ১০০০ টাকার নতুন নোট। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার স্বাক্ষরিত ১০০০ টাকা মূল্যমানের ব্যাংক নোট বৃহস্পতিবার থেকে ব্যাংকের মতিঝিল অফিস থেকে ইস্যু করা হবে। এটি পরবর্তীতে বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্যান্য অফিস থেকেও ইস্যু করা হবে।

নতুন মুদ্রিত নোটের রং, আকৃতি, ডিজাইন ও সব নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য অপরিবর্তিত থাকবে। নতুন মুদ্রিত বর্ণিত নোটের পাশাপাশি বর্তমানে প্রচলনে থাকা ১০০০ টাকা মূল্যমানের অন্যান্য নোটও বৈধ নোট হিসেবে যুগপৎ চালু থাকবে।

অর্থনীতি

দুর্নীতির মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া সরকারি অর্থের ৪৭ হাজার কোটি টাকা উদ্ধার করেছে বাংলাদেশ মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) কার্যালয়। গত ১৩ অর্থবছরে দ্বিপক্ষীয়-ত্রিপক্ষীয়, পিএ কমিটির সভা, বিভাগীয় ও দুদকের মামলার মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের এ টাকা উদ্ধার করা হয়। এসব অর্থ ব্যাংকিং খাত, জ্বালানি খাত, সামাজিক নিরাপত্তা খাত, বিদ্যুৎ, টেলিকম, সরকারি চাকরিজীবী ও রাজস্ব খাতসহ বিভিন্ন উৎস থেকে উদ্ধার করা হয়।

ফেরত আনা অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হয়েছে। নিজস্ব অনুসন্ধানে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, উদ্ধারকৃত অর্থ একই সময়ে (১৩ বছর) সরকারি ব্যয়ের অনিয়ম সংক্রান্ত অডিট আপত্তির আর্থিক পরিমাণের ৩৩ শতাংশ। এ সময়ে অডিট আপত্তি পড়েছে ১ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকার বেশি। সর্বশেষ ২০২২ সালের অডিট আপত্তির ৪৪ শতাংশের সমান। ওই বছর জাতীয় সংসদে ১ লাখ ৬ হাজার ৪৭৯ কোটি টাকার অডিট রিপোর্ট উত্থাপন করা হয়।

উদ্ধারকৃত অর্থের পরিমাণ কম হওয়ার কারণ জানার জন্য সাবেক কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল মাসুদ আহমেদের সঙ্গে রোববার কথা হয়। তিনি বলেন, অডিট আপত্তির অর্থ উদ্ধারের জন্য অভিযুক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে পূর্ণ আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিয়ে শেষ পর্যন্ত মামলা করা হয়। ওই মামলার রায় অভিযুক্তের বিপক্ষে গেলেই শুধু অডিট আপত্তির টাকা দিতে রাজি হয়। এর আগ পর্যন্ত সহজে দিতে রাজি হয় না।

এ ছাড়া একজন চাকরিজীবীর বিরুদ্ধে অডিট আপত্তি হলে সে পেনশনে না যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। এজন্য টাকা আদায়ে বিলম্ব হয়। তিনি আরও বলেন, অনেক ক্ষেত্রে তদন্ত শেষে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিভাগীয় মামলা করেন। এসব মামলা নিষ্পত্তি হতে সময় লেগে যায়। তিনি আরও বলেন, প্রতিবছরই বাজেটের আকার বাড়ছে। ফলে অডিট আপত্তির অঙ্কও সে হারে বাড়ছে। এখন আদায় বাড়াতে হলে সিএজি কার্যালয়ে লোকবল বাড়াতে হবে। পর্যাপ্ত লোকবলের অভাবে সরকারের সবগুলো উইংয়ে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না।

সূত্র মতে, বর্তমান সরকারি মোট ব্যয়ের মাত্র ৭ শতাংশের ওপর অডিট করা সম্ভব হচ্ছে। বাকি ৯৩ শতাংশ ব্যয় অডিটের বাইরে থাকছে। এর একমাত্র কারণ সিএজির লোকবলসহ সক্ষমতার অভাব। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড হচ্ছে, সরকারি মোট ব্যয়ের ২০ শতাংশের ওপর অডিট করা। এটি করতে পারলে অনিয়মের প্রকৃত তথ্য বোঝা যাবে এমনটি মন্তব্য করেছেন সিএজি কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা।

সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী সরকার ঘোষিত বাজেটের অর্থ প্রতিবছর বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থা ব্যয় করে থাকে। এ ক্ষেত্রে অনিয়ম ও দুর্নীতি শনাক্ত করে নিরীক্ষার মাধ্যমে সিএজি কার্যালয়। অনিয়ম ধরার পর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বিভাগ ও সংস্থার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করে সিএজি। ওই বৈঠকে সমাধান না হলে সিএজি, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অভিযুক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হয়।

সেখানেও সমাধান না হলে এটি অডিট রিপোর্ট আকারে পাঠানো হয় রাষ্ট্রপতির কাছে। এরপর সেগুলো জাতীয় সংসদে উত্থাপন করা হয়। সেখান থেকে নিষ্পত্তির জন্য চলে যায় সরকারি হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির (পিএ) কাছে। সেখানে আলোচনায় আপত্তি যদি নিষ্পত্তি না হয় সেক্ষেত্রে বিভাগীয় মামলা হয়।

আর যেসব ঘটনা সরাসরি দুর্নীতি ঘটে উদাহরণস্বরূপ যেমন-দরপত্র ছাড়াই কোনো কার্যাদেশ দেওয়া, ভ্যাট ফাঁকি এসব ঘটনার ক্ষেত্রে তা পাঠানো হয় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাছে। দুদক সংশ্লিষ্ট অপরাধীর বিরুদ্ধে মামলা করে। এরপর আদালতের রায় নিয়ে টাকা আদায় করা হয়। তবে মামলা আসার আগে অন্যান্য স্তরে আপত্তিগুলো নিষ্পত্তি হয়ে থাকে। সেখান থেকে উদ্ধারের টাকাও কোষাগারে জমা হয়।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সরকারি হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির (পিএসি) সভাপতি রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, অডিট রিপোর্টগুলো পিএ কমিটিতে আসার পর পর্যালোচনা হয়। কমিটির বৈঠকে অডিট আপত্তি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবদের ডাকা হয়। এতে অনেক অনিয়মের অর্থ উদ্ধার সম্ভব হয়। অর্থ আদায়ের আরও একটি বড় সমস্যা হচ্ছে অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী অবসর জীবনে চলে যান। যদিও আর্থিক অনিয়মের সঙ্গে তারা জড়িত। তবে আমি যদি দেখি আপত্তি সঠিক তবে সেখানে যে কেউ হোক টাকা আদায় করে থাকি। পাশাপাশি দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেও নির্দেশ দেওয়া হয়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০০৯-২০১১ পর্যন্ত এই দুই অর্থবছরে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার কাছ থেকে অডিট আপত্তিজনিত প্রায় ২২৫৯ কোটি টাকা উদ্ধার করা হয়। একইভাবে ২০১১-২০১৩ পর্যন্ত এই দুই অর্থবছরে অর্থ ফেরত আনা হয়েছে ২৬৫৬ কোটি টাকা। পরবর্তী ২০১৩-২০১৫ অর্থবছরে টাকা ফেরত আনার অঙ্ক ২৮৪৩ কোটি টাকা। এছাড়া ২০১৫-২০১৭ অর্থবছর পর্যন্ত টাকা আদায়ের পরিমাণ ২৪১৯ কোটি টাকা।

এর পরবর্তী বছরগুলোতে অর্থ আদায়ের পরিমাণ দ্বিগুণের বেশি আদায় হয়। সিএজির সূত্র মতে, ২০১৭-২০১৯ এই দুই অর্থবছরে আদায়ের অঙ্ক ১৮ হাজার ৫০ কোটি টাকা। আর ২০১৯-২০২১ অর্থবছরে ১৬ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে আদায় হয়েছে ২ হাজার ৬৩৭ কোটি টাকা।

অর্থ উদ্ধার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অব বাংলাদেশ (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, প্রতিবছর যে অঙ্কের অডিট আপত্তি হয় সে তুলনায় অর্থ আদায় বা ফেরত আনার অঙ্ক কম। কেন এটি হচ্ছে তা খতিয়ে দেখা দরকার।

তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, অডিট আপত্তিগুলো প্রতিবেদনে উঠে আসার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে পারছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। অডিট আপত্তির ব্যাপারে প্রতিকারমূলক বড় ধরনের পদক্ষেপ নেই। তিনি আরও বলেন, যে অর্থ উদ্ধার করেছে সেটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। আমরা পর্যবেক্ষণ করে দেখছি অনিয়ম সংক্রান্ত বিষয়গুলো চিহ্নিত করছে সিএজি অফিস। যে কারণে অর্থ উদ্ধারের মতো ইতিবাচক ঘটনা ঘটছে।

তিনি আরও বলেন, শুধু সিএজি অফিসের দায়িত্ব এখানেই শেষ নয়। মন্ত্রণালয়গুলোর উচিত এসবের বিরুদ্ধে আইনগত যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া। অনিয়মের ক্ষতিগ্রস্ত অর্থ আরও উদ্ধার করা। এর সঙ্গে জড়িতদের জবাবদিহিতা ও শাস্তি নিশ্চিত করা।

উদ্ধারকৃত অর্থের মধ্যে উল্লেখ্য ঘটনা হচ্ছে স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রণালয় প্রায় ৪৭ কোটি টাকা ও ব্যাংকিং খাত থেকে ২৮ কোটি টাকা আদায় হয়েছে। একইভাবে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে প্রায় ১১ কোটি টাকা, জ্বালানি মন্ত্রণালয় থেকে ৪৮ কোটি টাকা, স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে ৩৩ কোটি টাকা ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে আদায় হয় ১৩ কোটি টাকা।

আরও জানা গেছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে জ্বালানি খাত থেকে ৬৩৯ কোটি টাকা আদায় করা হয়। একই বছরে ব্যাংকিং খাত থেকে ৩৯ কোটি টাকা, টেলিকম খাত থেকে ১৫ কোটি টাকা, বিদ্যুৎ খাত থেকে ১৬ কোটি টাকা আদায় করা হয়।

২০১৬-১৭ অর্থবছরে শুধু টেলিকম খাত থেকে আদায় করা হয় ১৬২৯ কোটি টাকা, স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে ৩৮ কোটি টাকা আদায় করা হয়। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, সিভিল সার্ভিসের অসংখ্য কর্মকর্তা ঘন ঘন বদলি, পদোন্নতি ও নতুন কর্মকর্তাদের আগমনের কারণে আর্থিক ব্যবস্থাপনার ধারাবাহিকতা ক্ষুণ্ন হয়। ফলে সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র যথাযথভাবে হস্তান্তর হয় না। এ সংক্রান্ত বিষয় কার্যকরভাবে মনিটরিং হয় না। এসব কারণেই অনিয়মের সংখ্যা বাড়ছে।

অর্থনীতি

লিড সার্টিফাইড সবুজ কারখানার তালিকায় বিশ্বের সবচেয়ে পরিবেশবান্ধব ১০০ কারখানার মধ্যে ৫০টিই এখন বাংলাদেশের। সোমবার (৬ ফ্রেব্রুয়ারি) বিজিএমইএ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এদিন নতুন করে কেডিএস আইডিআর লিমিটেড নামে আরও একটা কারখানা প্লাটিনাম ক্যাটাগরিতে ‘গ্রিন ফ্যাক্টরি’ স্বীকৃতি পেয়েছে। এটিসহ বিশ্বের সেরা পরিবেশবান্ধব ১০০ কারখানার তালিকায় অর্ধেকই এখন বাংলাদেশের। নতুন স্বীকৃতি পাওয়া কারখানাটি নিয়ে বাংলাদেশে সবুজ কারখানার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮৭টিতে।

নতুন স্বীকৃতি পাওয়া কেডিএস আইডিআর লিমিটেড চট্টগ্রামের কালুরঘাট এলাকার মোহরায় অবস্থিত। কারখানাটি রেটিং পয়েন্ট ৮৪ নিয়ে প্ল্যাটিনাম ক্যাটাগরিতে স্বীকৃতি পেয়েছে।

এ বিষয়ে বিজিএমইএর পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, গ্রিন ফ্যাক্টরি নিয়ে বর্তমানে যে সচেতনতা বা অর্জন, এই বীজ বপন করা হয়েছিল অনেক আগে। সেই প্রচেষ্টার ফল আমরা এখন পাচ্ছি। চলমান অর্থনৈতিক খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে এটি অত্যন্ত আনন্দের সংবাদ। মেশিন সবার কাছে আছে, মানুষও সবার কাছে। কিন্তু কে কী ভ্যালু অ্যাড করল আগামী দিনে সেটিই আসলে সামনে ভূমিকা রাখবে।

বিজিএমইএর এই পরিচালক আরও বলেন, আপাতদৃষ্টিতে যদি মনে হয়েও থাকে আমরা এই খাতে বেশি বিনিয়োগ করছি, ভবিষ্যতে কিন্তু সেটি কমে আসবে। পরিবেশগতভাবেও আমরা উপকৃত হব। বহির্বিশ্বের সঙ্গে যদি আমরা প্রতিযোগিতা করে চলতে চাই, প্রতিযোগিতায় টিকে থাকলে হলে আমাদের এ ধরনের ভ্যালু অ্যাড করেই চলতে হবে।

অর্থনীতি

২০১৯ সাল থেকে এ কোম্পানিতে কাজ করছেন তিনি।

ইউনিলিভার বাংলাদেশে নতুন ফাইন্যান্স ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন জিনিয়া হক।

এর মাধ্যমে তিনি ইউনিলিভার বাংলাদেশের ম্যানেজমেন্ট কমিটিতে যোগ দিলেন এবং কোম্পানির প্রথম নারী ফাইন্যান্স ডিরেক্টর হলেন বলে বুধবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে কোম্পানিটি।

এদিন থেকেই তার এ নিয়োগ কার্যকর হচ্ছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। তিনি জাহিদুল ইসলাম মালিতার স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন। মালিতা একই সময়ে সিঙ্গাপুরে প্রকিউরমেন্ট ফাইন্যান্স ডিরেক্টরের দায়িত্ব গ্রহণ করছেন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০১৯ সালে ইউনিলিভারে যোগ দেওয়া জিনিয়ার করপোরেট ইন্ডাস্ট্রিতে ব্যবসা খাতের আর্থিক-বিষয়াদি, আঞ্চলিক কার্যক্রম এবং ম্যানুফ্যাকচারিং বিষয়ে তার ২২ বছরেরও বেশি অভিজ্ঞতা রয়েছে। তিনি গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন (জিএসকে) কোম্পানিটিকে নির্বিঘ্নে ইউনিলিভারের প্রক্রিয়া এবং সিস্টেমে অন্তর্ভুক্তিতে অবদান রাখেন। এছাড়া দুই হাজার কোটি টাকা লেনদেনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন, যা ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সর্বোচ্চ ট্রেড ভ্যালু।

ইউনিলিভার বাংলাদেশের ‘ডাইভারসিটি ও ইনক্লুসন’ নিশ্চিতেও জিনিয়ার অবদান রয়েছে বলে জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে।

তার নতুন দায়িত্বে ইউনিলিভারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) জাভেদ আখতার বলেন, “নতুন ফাইন্যান্স ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করায় এবং ম্যানেজমেন্ট কমিটিতে যুক্ত হওয়ায় জিনিয়া হককে আমি অভিনন্দন জানাচ্ছি। ইউনিলিভারের সিস্টেমে জিএসকের একীভূতকরণ এবং দক্ষতার সাথে ব্যয় প্রশমনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। আমি আত্মবিশ্বাসী, জিনিয়া ইউবিএলের কর্মপরিধিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে সক্ষম হবেন।”

ইউনিলিভারে যোগদানের আগে জিনিয়া ২০১৪ সাল থেকে জিএসকেতে ফাইন্যান্স ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি বিএটি বাংলাদেশের করপোরেট ফাইন্যান্স এবং ইন্টারন্যাশনাল অডিট বিভাগে বিভিন্ন পদে কর্মরত ছিলেন। তিনি সাপ্লাই চেইন ফাইন্যান্সে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের হয়ে সিঙ্গাপুরে ‘রিজিওনাল ফাইন্যান্স প্রজেক্ট লিড’ হিসেবে ভূমিকা রাখেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসা প্রশাসন ইনস্টিটিউট থেকে ফাইন্যান্স বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রিধারী জিনিয়া, দ্য চার্টার্ড ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টস (সিআইএমএ) ইউকের একজন ফেলো সার্টিফাইড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউনট্যান্ট (এফসিএমএ)। তিনি ইনস্টিটিউট অব ইন্টারনাল অডিটরস বাংলাদেশ এবং দ্য ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টস অব বাংলাদেশরও সদস্য।