অর্থনীতি

খেলাপিতে জর্জরিত ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। এছাড়া নানা অনিয়মের বৃত্তে আটকে আছে এ খাতের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন গোষ্ঠীর কাছে জিম্মি হয়ে আছে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান।

এ কারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে ঋণ বিতরণ কার্যক্রম। সুশাসনের অভাবেই এমনটা হচ্ছে। তাই নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে চাঙা করতে উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নীতি সহায়তার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে বৈঠক করবেন গভর্নর।

সমস্যা চিহ্নিত করে দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর খেলাপি ঋণ কমাতে কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে সহায়তা করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকে আয়োজিত এক বৈঠকে এই নির্দেশনা ও সহায়তার আশ্বাস দেওয়া হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার। উপস্থিত ছিলেন সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, গভর্নর আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জোর দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে পূর্ণ সহায়তা দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপরে প্রভাবশালী মহলের চাপ নিরসনে সহায়তা দেওয়া হবে।

এছাড়া খেলাপি ঋণ কমাতে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। খেলাপি ঋণ আদায়ে সার্বিক সহায়তার আশ্বাসও দিয়েছেন গভর্নর।

বৈঠকে অংশ নেওয়া একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, এটি রুটিন বৈঠক ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর সবার কাছ থেকে সমস্যার কথা শুনেছেন। প্রতিষ্ঠানগুলো কিভাবে চলছে, কিভাগে ভালোভাবে আগানো যায় এসব বিষয় জানতে চেয়েছেন। পাশাপাশি তিনি সার্বিক সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। এখন থেকে গভর্নর আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এমডিদের সঙ্গে প্রতি তিন মাস পর বসবেন।

বৈঠকে অংশ নেওয়া আরেক কর্মকর্তা জানান, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে কিছু নীতিগত সহায়তা চাওয়া হয়েছে। অর্থঋণ আদালতের মামলা জটিলতা নিরসনে সহায়তা চাওয়া হয়েছে। অন্যদিকে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সঙ্গে কিছু সমস্যা রয়েছে, বর্তমানে রাজউকের অধীনে সম্পত্তি মর্টগেজ (জামানত) রাখা যাচ্ছে না। এতে ঋণ বিতরণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এসব সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এর আগে বছরের পর বছর আটকে থাকা খেলাপি ঋণ গ্রাহকদের সঙ্গে সম্পর্কের ভিত্তিতে আদায়ে জোর দিয়ে নির্দেশনা দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করে, প্রতিষ্ঠানগুলো ইচ্ছা করলে মামলাধীন ঋণ আদায় করতে পারবে না, কারণ কোর্টের বিভিন্ন ধাপ রয়েছে। এ ধাপ বা প্রক্রিয়াগুলোকে কীভাবে মনিটরিং করা যায়, সে বিষয়ে তাদের বলা হয়েছে। কোর্টে মামলা চলছে, কিন্তু গ্রাহকদের সম্পর্কের ভিত্তিতে আদায় হয়ে যায়, তাহলে সে মামলাগুলো নিষ্পত্তি হয়ে যাবে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, ঋণ আদায়ের জন্য মামলা করা হলেও অর্থঋণ আদালতে বিচার প্রক্রিয়ার মধ্যেই সময়ক্ষেপণের সুযোগ রয়েছে। এ আদালতে রায় হওয়ার পরও খেলাপি গ্রাহকরা উচ্চ আদালতে আপিল করেন। বছরের পর বছর পার হলেও সেই প্রক্রিয়া শেষ হয় না। এজন্য দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির জন্য আদালতের সংখ্যা বাড়াতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালে ৩৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ৪ হাজার ৭০২টি মামলার বিপরীতে ১১ হাজার ৫৫২ কোটি টাকা আটকে রয়েছে। যা ২০২১ সালে ছিল ৩ হাজার ৯১৯টি মামলার বিপরীতে ৮ হাজার ৫১৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে মামলা বেড়েছে ৭৮৩টি। এসব মামলার বিপরীতে গত এক বছরে ৩ হাজার ৩৪ কোটি টাকার দাবি বেড়েছে।

অন্যদিকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর খেলাপি ঋণের চিত্রও উদ্বেগজনক। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঋণস্থিতি ছিল ৭১ হাজার ২৬৫ কোটি টাকা। যা গত ডিসেম্বরে ছিল ৭০ হাজার ৪৩৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ শেষ তিন মাসে ঋণ বেড়েছে ৮২৯ কোটি টাকা। এ সময়ে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১ হাজার ৩৩ কোটি টাকা।

মার্চে খেলাপি ঋণ ছিল ১৭ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা। যা গত বছরের ডিসেম্বরে ছিল ১৬ হাজার ৮২১ কোটি টাকা। এক বছর আগে অর্থাৎ ২০২২ সালের মার্চে খেলাপি ঋণ ছিল ১৪ হাজার ২৩২ কোটি টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩ হাজার ৬২২ কোটি টাকা।

অর্থনীতি

বাজার নিয়ন্ত্রণ ও মজুদ ধরে রাখতে সেদ্ধ চাল রপ্তানির ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে ভারত। শুক্রবার (২৫ আগস্ট) আরোপ করা এ রপ্তানিশুল্ক আগামী ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।

এক বিজ্ঞপ্তিতে ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যেসব চাল রপ্তানির জন্য ২৫ আগস্টের আগে বৈধ ঋণপত্র (এলসি) খোলা হয়েছে এবং যেসব চাল ইতিমধ্যে কোনো ভারতীয় বন্দরে রয়েছে তা নতুন আরোপিত শুল্কের আওতার বাইরে থাকবে।

খবর ইকোনমিক টাইমস।
গত ২১ জুলাই অবাসমতী সাদা চাল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল দেশটি। ভারতের বাজারে সরবরাহ বাড়ানো ও  চালের খুচরা দাম নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে এই নিষেধাজ্ঞার দেওয়া হয়েছিল। ভারত যে চাল রপ্তানি করে তার প্রায় ২৫ শতাংশ অবাসমতী সাদা চাল।

২০২২-২৩ সালে ভারত ৪৫ লাখ ৬০ হাজার টন বাসমতী এবং ১ কোটি ৭৭ লাখ ৯০ হাজার টন অবাসমতী চাল রপ্তানি করে। গত এক বছরে আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতীয় চালের বিক্রি বেড়েছে ৩৫ শতাংশ। এটি গত ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

রপ্তানি বাড়ার পাশপাশি দেশটিতে খাদ্যপণ্যের দামও বেড়েই চলেছে। গত জুলাই মাসে ভারতে খুচরা পর্যায়ে মূল্যস্ফীতি ছিল ৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এটি গত ১৫ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। ভারতের খাদ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এক বছরে দেশটিতে চালের দাম ১১ দশমিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

বিশ্ববাজারে ভারতের চাল রপ্তানির পরিমান ৪০ শতাংশের বেশি। ফলে এই নিষেধাজ্ঞা অন্য আমদানিকারক দেশে চালের দাম বৃদ্ধির উদ্বেগ বাড়তে পারে। বাংলাদেশও ভারত থেকে সেদ্ধ চাল আমদানি করে।

আভ্যন্তরীন  সংকট মোকাবেলায় সম্প্রতি পেঁয়াজের ওপর ৪০ শতাংশ রপ্তানি শুল্ক আরোপ করে ভারত আর আজ অবাসমতী চাল রপ্তানিতে শুল্ক আরোপ করলো।

অর্থনীতি

এক বিলিয়ন সিঙ্গাপুর ডলার অর্থপাচারের তদন্তে অন্তত ১০টি ব্যাংককে কাগজপত্র জমা দিতে বলেছে সিঙ্গাপুর কর্তৃপক্ষ।

তদন্তে এখন পর্যন্ত দুটি ব্যাংকের নাম প্রকাশ করা হয়েছে।

ব্যাংক দুটি হলো— সিটি গ্রুপের সিঙ্গাপুর সাবসিডিয়ারি এবং মালয়েশিয়ার সিআইএমবি। বাকি ৮ ব্যাংকের নাম জানানো হয়নি।
তবে এই অর্থপাচারে কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নাম এখন পর্যন্ত শোনা যায়নি।

ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে।

তদন্তে নাম আসা একটি ব্যাংকের পরিচালক পক্ষ সিটি গ্রুপ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা ‘অর্থ পাচার ঠেকাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং সরকারের নীতি বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে। অন্যদিকে সিআইএমবি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হয়নি।

একাধিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রায় ৪০০ কর্মকর্তার যুগপৎ অভিযানে ১০ জনকে আটক করা হয়েছে। আটকদের বিরুদ্ধে স্ক্যাম এবং অনলাইন জুয়ার পাশাপাশি নথি জালিয়াতিসহ বিদেশে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে।

আটকদের মধ্যে চীন, সাইপ্রাস, তুরস্ক ও ভানুয়াতুর নাগরিক রয়েছেন। তাদের সবার কাছেই চীন থেকে ইস্যু করা পাসপোর্ট ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এ বিষয়ে ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারি আইনজীবীরা বুধবার (২৩ আগস্ট) আদালতকে জানিয়েছেন, তারা সিঙ্গাপুরের সবচেয়ে বড় মানিলন্ডারিংয়ের ঘটনায় গত সপ্তাহে গ্রেপ্তার ও অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে সম্পর্কিত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে কাগজপত্র চেয়েছেন।

এ বিষয়ে সিঙ্গাপুরের মনিটারি অথরিটি (এমএএস) জানিয়েছে, সন্দেহজনক অর্থের প্রবাহ এবং ডকুমেন্টেশনের সঙ্গে অন্যান্য অসঙ্গতির কারণে ব্যাংকগুলো কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করেছিল, যার ফলে এই তদন্ত শুরু হয়।

গেল সপ্তাহে কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘এমএএস’ বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে এবং যেসব আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এমন দুর্নীতির তহবিলের সন্ধান পাওয়া গেছে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সম্ভাব্য তহবিলগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে ৷ এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে নজরদারির মধ্যে রাখার প্রক্রিয়া চলমান আছে।

এদিকে দ্য স্ট্রেইটস টাইমস জানিয়েছে যে, সন্দেহভাজন অর্থপাচারকারীদের সঙ্গে যুক্ত ২০ সংস্থার মধ্যে ১১টি ‘সচল’ হিসেবে তালিকাভুক্ত হওয়া সত্ত্বেও নিবন্ধিত ঠিকানায় তাদের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।

এগুলোর মধ্যে আছে— গোল্ডেন ঈগল এসেস্টস এবং গোল্ডেন ঈগল ফ্যামিলি অফিস। দুটি প্রতিষ্ঠানই ৪৪ বছর বয়সি ঝ্যাং রুইজিনকে পরিচালক হিসেবে দেখিয়েছে। যিনি সেন্ট কিটস ও নেভিস আইল্যান্ডের নাগরিক বলা হলেও ধারণা করা হচ্ছে তিনি চীনের ফুজিয়ানের বাসিন্দা। তার বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়েছে।

সিঙ্গাপুরের আইন অনুযায়ী, কোম্পানিগুলোকে তাদের নিবন্ধিত অফিস সাধারণ দিনে ব্যবসায়িক কর্মঘণ্টায় কমপক্ষে তিন ঘণ্টা জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত এবং সেবা দিতে বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুর বিজনেস স্কুলের অধ্যাপক লরেন্স লোহ বলেন, ‘ব্যবসা শুরু করা এবং কোনো লেনদেনে না যাওয়া সহজ। তবে নিষ্ক্রিয় কোম্পানিকে অবশ্যই অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড করপোরেট রেগুলেটরি অথরিটির কাছে তা জানাতে হবে বলে যোগ করেন তিনি।

অর্থনীতি

উন্নত যোগাযোগব্যবস্থা স্থাপনের মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম থেকে উত্তর-পূর্ব এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত অর্থনৈতিক করিডরে ব্যাপক বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। সম্ভাবনা কাজে লাগানো গেলে ২০৫০ সালনাগাদ এ দেশে সাত কোটির বেশি কর্মসংস্থান হবে। একই সঙ্গে বিনিয়োগের পরিমাণ ২৮৬ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়াবে বলে মনে করে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)।

বুধবার (২৩ আগস্ট) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘বাংলাদেশ ইকোনমিক করিডর ডেভেলপমেন্ট হাইলাইটস’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরে এডিবি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, অর্থনৈতিক করিডরের সুবিধা কাজে লাগানো গেলে বাংলাদেশে ২০২৫ সালের মধ্যে ১ কোটি ২৭ লাখ কর্মসংস্থান হবে। এ ছাড়া ২০৪০ সালের মধ্যে হবে ৪ কোটি ৬২ লাখ কর্মসংস্থান। আর ২০৫০ সাল নাগাদ কর্মসংস্থান হবে ৭ কোটি ১৮ লাখ। পাশাপাশি বাংলাদেশের বাণিজ্য সুবিধা বাড়বে ২৮৬ বিলিয়ন ডলার। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ৩১ লাখ ৪৬ হাজার টাকা।

এ ছাড়া যদি করিডর সুবিধা ব্যবহার করা না যায়, তাহলে ২০২৫ সাল নাগাদ কর্মসংস্থান হবে ১ কোটি ৩৪ লাখ, ২০৪০ সালে ২ কোটি ৪৮ লাখ এবং ২০৫০ সালে কর্মসংস্থান হবে ৩ কোটি ১১ লাখ।

প্রতিবেদনে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল পিছিয়ে রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। এতে বাংলাদেশকে সামগ্রিক এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ ইকোনমিক করিডরকে (বিইসি) দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চল (খুলনা বিভাগ) থেকে উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে (সিলেট) পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার ধারণা দেওয়া হয়েছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ও আলোচক ছিলেন এডিবির পরিচালক সব্যসাচী মিত্র। এ ছাড়া বিশেষ অতিথি ছিলেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) অতিরিক্ত সচিব মোস্তাফিজার রহমান ও বাংলাদেশ ইকোনমিক জোনের (বেজা) চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিন্টিং।

অর্থনীতি

বাংলাদেশে চলমান আর্থিক সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নে কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।

মঙ্গলবার বিকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে সংস্থার ঢাকা সফররত প্রতিনিধি দলের সমাপনী বৈঠকে বিষয়টি জানানো হয়।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, আইএমএফ প্রতিনিধিরা চলমান আর্থিক সংস্কারের বিষয়গুলোর অগ্রগতি ও পদ্ধতি পরীক্ষার পাশাপাশি এর দীর্ঘমেয়াদি ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখেছেন। এর মধ্যে রয়েছে- ব্যাংক পরিচালনা কাঠামো পর্যবেক্ষণ, রিজার্ভের পর্যাপ্ততা যাচাই, তারল্য পরিস্থিতির পূর্বাভাস ও ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি যাচাই এবং আমদানি এলসি ও ফরেক্স মার্কেট পর্যবেক্ষণ। পরীক্ষা-নীরিক্ষা শেষে সংস্কার কার্যক্রমের ত্রুটি চিহ্নিত করে তা সমাধানে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা জানিয়েছেন আইএমএফ প্রতিনিধিরা। এ সংক্রান্ত একটি প্রোগ্রাম শিডিউল নিয়ে গভর্নরের পরামর্শ চাওয়া হয়েছে। কারা ওই প্রশিক্ষণে অংশ নেবে তাও জানতে চেয়েছে সংস্থাটি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ‘আইএমএফের মিশন মনিটারি অপারেশনসহ সার্বিক বিষয়ে কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রস্তাব করেছে। তাই বিভিন্ন বিষয় পরীক্ষা করে দেখেছে কোন কোন বিষয়ে প্রশিক্ষণের প্রয়োজন আছে। এ সংক্রান্ত একটি প্রোগ্রাম শিডিউল তৈরি করার বিষয়ে গভর্নরের পরামর্শ চেয়েছে প্রতিনিধিদল।’

তবে আইএমএফ প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেওয়া কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামটি মূলত আর্থিক কাঠামো সংস্কারকে কেন্দ্র করে। তারল্য পরিস্থিতি, ফরেক্স মার্কেটসহ বিভিন্ন বিষয় পরীক্ষা করে দেখার পর তারা সিদ্ধান্ত নিচ্ছে কোন কোন বিষয়ে ঘাটতি রয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দক্ষতা উন্নয়নের ক্ষেত্রগুলো যাচাই করে দেখেছে আইএমএফের কারিগরি টিম।

আইএমএফ থেকে নেওয়া ঋণের শর্ত হিসাবে বেশ কিছু কাঠামোগত সংস্কারে সম্মত হয় বাংলাদেশ। যদিও একে আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড অনুসরণের প্রতিশ্র“তি হিসাবে ব্যাখ্যা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অর্থাৎ অর্থনৈতিক মৌলিক কাঠামোগত যেসব বিষয় আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের বাইরে রয়েছে সেসব বিষয়ে সংস্কারের শর্তে আইএমএফ থেকে ঋণ নিয়েছে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে বেশ কিছু সংস্কার শুরু হয়েছে। আর এসব সংস্কারের অগ্রগতি খতিয়ে দেখতে দফায় দফায় বাংলাদেশ সফর করছে আইএমএফ প্রতিনিধি দল।

বৈঠকের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, এটি আইএমএফের নিয়মিত সফরের অংশ। তারা মুদ্রানীতির বাস্তবায়নের বিষয়ে জানতে চেয়েছে। নতুন করে ইন্টারেস্ট রেট করিডোরে গিয়েছি। এটা কি পদ্ধতিতে বাস্তবায়ন করব বা এর প্রভাব কি হবে তার বিষয়ে আলোচনা করেছে। এছাড়া তারল্য ব্যবস্থাপনার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।

এর আগে ১৩ আগস্ট আইএমএফের চার সদস্যের কারিগরি সহায়তা কমিটির সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন গভর্নর।

অর্থনীতি

বাংলাদেশে বিশাল বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে জাপানিজ বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান কামেদা।

সম্প্রতি ব্যবসায়িক সফরের অংশ হিসেবে তিনি দ্বীপ জেলা ভোলায় যান। সেখানে বেসরকারি এনজিও গ্রামীণ উন্নয়ন সংস্থার সঙ্গে কৃষিতে যৌথভাবে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেন। এ ছাড়া বাংলাদেশের খাদ্য বাজারেও বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে কোম্পানিটি।

জাপানিজ বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান কামেদা সেইকা কোম্পানি লিমিটেডের প্রধান ড. লেক রাজ জুনেজা জানান, আমি বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী, আমি বাংলাদেশে বারবার আসতে চাই। ফু-ওয়াং ফুডস ও এমারাল্ড অয়েলের ফ্যাক্টরি ঘুরে দেখেছি। প্রতিষ্ঠান দুটি আমার পছন্দ হয়েছে। আমি চাল নিয়েই কাজ করি। বাংলাদেশে চাল দিয়ে বিস্কুট তৈরির বিষয়টি আমার মাথায় আছে।

গত বৃহস্পতিবার সাত দিনের ব্যবসায়িক সফরে বাংলাদেশে আসেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান।

বুধবার একটি অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানিয়েছেন ড. লেক রাজ জুনেজা। এর আগে অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশেও আমি চাল নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী।

তিনি বলেন, এমারাল্ড অয়েল ও মিনোরী বাংলাদেশে লিমেটেড দুটি পরিদর্শন করে আমার ভালো লেগেছে। তারা ধান-চাল নিয়ে কাজ করে। এতে আমার বিনিয়োগের আগ্রহ আছে।

মিনোরী বাংলাদেশ ও ফু-ওয়াং ফুডস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিয়া মামুন বলেন, ইউরোপ, আমেরিকা, চীন, জাপান, ভারত, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের বাজারে চালের ব্যবসা করে

জাপানের বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান কামেদা সেইকা কোম্পানি লিমিটেড। বাংলাদেশ সফরে সেই কোম্পানির প্রধান ড. লেক রাজ জুনেজা এমারাল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও ফু ওয়াং ফুডসের ফ্যাক্টরি পরিদর্শন করেছেন। তিনি শেয়ারবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানি এমারাল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডে বিনিয়োগ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে পাশাপাশি তারা মিনোরী বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে চান।

তিনি বলেন, জাপান থেকে অনেক বিনিয়োগকারী আমার সঙ্গে বাংলাদেশে এসেছেন। তারা অনেকেই বাংলাদেশে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তবে তাদের মধ্যে কামেদা সেইকা অন্যতম।

তারা ইউরোপ-আমেরিকাসহ এশিয়ার অনেক দেশে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। তারা চালকে প্রক্রিয়াজাত করে প্রতি কেজি ১ হাজার টাকায়ও বিক্রি করে। বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণে চাল উৎপাদন হয়। ফলে আমি চাই বাংলাদেশে তারা বিনিয়োগ করুক। তারা আমাকে আশ্বস্ত করেছেন বাংলাদেশে বিনিয়োগ করবেন।

অর্থনীতি

বাজারে প্রায় সব পণ্যের দাম বাড়তি। আদা, রসুন, মসলার মতো নিত্যপণ্যের পাশাপাশি লাগামহীন ছুটছে অন্য ভোগ্যপণ্যের দামও। ব্যবসায়ীরা প্রধানত দায়ী করছেন ডলার সংকট ও এলসি খোলার সমস্যাকে। এর মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ফেলেছে বাড়তি চাপে। চলতি বছর দেশের পণ্য আমদানিও কমেছে উল্লে­খযোগ্য হারে। যার একটি বড় প্রভাব পণ্যের দামে পড়ছে বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, পণ্য আমদানি কমার কারণে স্বাভাবিকভাবে যতটুকু সংকট তৈরি হয়েছে, এর চেয়ে কয়েকগুণ বেড়েছে পণ্য মূল্যস্ফীতি। আমদানি সংকটের অজুহাতে অনৈতিকভাবে পণ্যের দাম বাড়ানোর প্রবণতা রয়েছে ব্যবসায়ীদের। এ ছাড়া আছে সিন্ডিকেটের প্রভাব।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত অর্থবছর (২০২২-২৩) দেশে ৬ হাজার ৯৫০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে, যা এর আগের অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ১৬ শতাংশ কম। আগের অর্থবছর (২০২১-২২) আমদানির পরিমাণ ছিল ৮ হাজার ২৫০ কোটি ডলার।

কাস্টম হাউস ও শুল্ক স্টেশনগুলোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্য আমদানি হয়েছে ১৩ কোটি ৩১ লাখ টন। যেখানে ২০২১-২২ অর্থবছরে আমদানি হয়েছিল ১৩ কোটি ৮২ লাখ টন। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে আমদানি পণ্যের পরিমাণ কমেছে ৫১ লাখ টন বা ৩ দশমিক ৭১ শতাংশ।

দেশে সবচেয়ে বেশি পণ্য আমদানি হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। ২০২১-২২ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি হয় ৯ দশমিক ২১ মেট্রিক টন পণ্য। ২০২২-২৩ অর্থবছরে আমদানি কমেছে ৩ দশমিক ৮৬ শতাংশ। তবে আমদানি কম হলে ব্যয়ও কমার কথা। কিন্তু উল্টো খরচ বা আমদানি ব্যয় বেড়েছে ১০ দশমিক ০৫ শতাংশ।

২০২২-২৩ অর্থবছরে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৬১ হাজার ৬৩২ দশমিক ৬৬ কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ৫৯ হাজার ১৫৯ দশমিক ৮৩ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৪ দশমিক ১৮ শতাংশ।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস দিয়ে শুল্কায়নের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে আমদানি হয় ৮ দশমিক ৮৫ কোটি মেট্রিক টন পণ্য।

জানা যায়, গত বছর বেশি কমেছে শিল্পের কাঁচামাল, বিলাসবহুল পণ্য ও ভোগ্যপণ্য আমদানি। এ তিন খাতের ব্যবসায়ীরাই যার প্রধান কারণ হিসেবে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও সংকটের কথা বলেছেন। এ ছাড়া গত অর্থবছরের বেশ কিছু সময় বিলাসীপণ্য ও অপ্রয়োজনীয় পণ্যের করভার বাড়ানো, আমদানি নিয়ন্ত্রণ এবং ৩০ লাখ ডলারের বেশি ঋণপত্র খোলার বিষয়ে তদারকির কারণে আমদানি কমেছে।

বাজারের তথ্য বলছে, আমদানি সংকটে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে খাদ্যপণ্যের। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, গত এক বছরের ব্যবধানে আমদানিনির্ভর চিনির দাম বেড়েছে ৫১ শতাংশ। এ সময় ৮৫ থেকে ৯০ টাকার চিনি হয়েছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা। এ ছাড়া বাজারে গুঁড়া দুধের দাম ১৭ শতাংশ, ধনে, জিরা, লবঙ্গের মতো গরম মসলার দাম ৫১ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।

এছাড়াও আদা-রসুনের দাম রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে। আদার দাম প্রায় সাড়ে ৩শ শতাংশ এবং রসুনের দাম ৮৭ শতাংশ বেশি। একশ টাকার মধ্যে বিক্রি হওয়া এসব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেজিতে এখন ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায় ঠেকেছে।

আবার কাঁচামাল আমদানি কম হওয়ায় বাজারে মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব ছিল রড ও ইস্পাত পণ্যের। তথ্য বলছে, গত এক বছরে প্রতি টন রডের দাম প্রায় ২৫ হাজার পর্যন্ত বেড়ে লাখ টাকা ছাড়িয়েছে। একই অবস্থা লেখার কাগজের ক্ষেত্রেও। গত এক বছরে লেখার কাগজের দাম বেড়েছে ৪৪ শতাংশ।

এ ছাড়া গত এক বছরে প্রাণী খাদ্যশিল্পের কাঁচামাল, খাদ্যপণ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্পের কাঁচামাল, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস, ডিজেল ও ফার্নেস অয়েল, প্লাস্টিক পণ্য ও ইলেক্ট্রনিক্স পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসেবে আমদানি সংকটের কথা জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

অর্থনীতি

নিয়মনীতির শিথিলতার সুযোগ নিয়ে গত বছর ব্যাংকিং খাতে রেকর্ড পরিমাণ খেলাপি ঋণ নবায়ন করা হয়েছে। এতে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের ঊর্ধ্বগতি কিছুটা কমেছে। কিন্তু রেকর্ড পরিমাণ ঋণ নবায়ন করেও খেলাপি ঋণের ঊর্ধ্বগতিতে লাগাম টানা যাচ্ছে না। গত এক বছর ব্যাংকিং খাতে ৬৩ হাজার ৭২০ (প্রায় ৬৪ হাজার) কোটি টাকার খেলাপি ঋণ নবায়ন করা হয়েছে। এত বিপুল অঙ্কের ঋণ নবায়নের পরও খেলাপি ঋণ বেড়ে ১ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। মার্চ পর্যন্ত তা আরও বেড়ে ১ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। ২০২১ সালে বিশেষ ছাড়ের আওতায় ২৬ হাজার ৮১০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ নবায়ন করা হয়েছিল। এক বছরের ব্যবধানে আড়াই গুণের বেশি খেলাপি ঋণ নবায়ন করা হয়েছে। বিশেষ ছাড়ের আওতায় নবায়ন করা ঋণের একটি অংশ পুনরায় খেলাপি হয়ে যাচ্ছে। গত বছর নবায়ন করা পুনরায় খেলাপি হওয়ার স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৪০ হাজার ৮৬০ (প্রায় ৪১ হাজার) কোটি টাকা।

রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত মেনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে। আইএমএফ-এর শর্ত ছিল-বছরে কী পরিমাণ খেলাপি ঋণ নবায়ন করা হয়, এর তথ্য প্রকাশ করা। ওই শর্তের আলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই প্রথমবারের মতো এসব তথ্য প্রকাশ করল। একই সঙ্গে আইএমএফ-এর শর্ত ছিল খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনা।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক প্রধান ড. মইনুল ইসলাম বলেন, খেলাপি ঋণ নবায়নের প্রক্রিয়ার ব্যাপকভাবে অপব্যবহার হচ্ছে। প্রণোদনা বা বিশেষ ছাড়ের আওতায় খেলাপি ঋণ একবার নবায়ন করা হচ্ছে, শর্ত অনুয়ায়ী কিস্তি দিচ্ছে না। ফলে আবার সেগুলো খেলাপি হচ্ছে। আরও ছাড় দিয়ে পুনরায় নবায়ন করা হচ্ছে। এভাবে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ নবায়নের খেলা চলছে। ব্যাংক খাতকে স্বচ্ছ রাখতে এসব খেলা অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত। তা না হলে সামনে বড় সমস্যা হবে। তিনি আরও বলেন, ঋণ নবায়নের নামে প্রলেপ দিয়ে খেলাপি ঋণ কমিয়ে রাখা হচ্ছে। যেগুলো পুনঃতফশিল করা হয়, সেগুলো মূলত খেলাপি ঋণ। পুনঃতফশিলের পরও তা খেলাপি থেকে মুক্ত থাকতে পারে না। তিন-ছয় মাস পরই আবার খেলাপি হচ্ছে। এভাবে খেলাপি ঋণের তথ্য আড়াল করে রাখা মোটেই সুখকর নয়। বরং খেলাপি ঋণকে প্রকাশ করে খেলাপিদের ও ব্যাংকের ওপর চাপ সৃষ্টি করা উচিত। এতে খেলাপি ঋণ আদায় বাড়ানো সম্ভব হবে। লুকিয়ে রাখলে আদায় করা যাবে না। বরং খেলাপিদের আরও সহায়তা করা হবে।

ড. মইনুল ইসলাম বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক খেলাপি ঋণের যে হিসাব দিচ্ছে, তা সঠিক নয়। প্রকৃত খেলাপি ঋণ ৪ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। মোট ঋণের কমপক্ষে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ এখন খেলাপি হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেখাচ্ছে খেলাপি ঋণ ৮ শতাংশ।

প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, ২০২২ সালে বিশেষ ছাড়ের আওতায় ব্যাংকগুলোর ঋণখেলাপি গ্রাহকরা ৬৩ হাজার ৭২০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ নবায়ন করেছেন। ২০২১ সালে বিশেষ ছাড়ের আওতায় নবায়ন করা ঋণের পরিমাণ ছিল ২৬ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ নবায়নের প্রবণতা বেড়েছে আড়াই গুণের বেশি। এর মাধ্যমে খেলাপি ঋণ কমানো হয়েছে প্রায় ৬৪ হাজার কোটি টাকা। গত চার বছরের মধ্যে ২০২০ সালে সবচেয়ে কম ঋণ নবায়ন করা হয়েছে। কারণ ওই বছরে করোনার কারণে বিশেষ ছাড়ের আওতায় ঋণ পরিশোধ না করলেও তা খেলাপি করা হয়নি। ওই বছর ১৯ হাজার ৮১০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ নবায়ন করা হয়। করোনার আগে ২০১৯ সালে রাজনৈতিক কারণে খেলাপি ঋণ নবায়নে আরও বড় ছাড় দেওয়া হয়েছিল। ওই সময়ে ৫২ হাজার ৩৭০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ নবায়ন করা হয়েছিল।

এদিকে নবায়ন করা ঋণের মধ্যে বেশকিছু ঋণের কিস্তি নিয়মিত গ্রাহকরা পরিশোধ করছেন না। ফলে ওইসব নবায়ন করা ঋণ আবার খেলাপি ঋণে পরিণত হচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে এসব ঋণ পুনরায় খেলাপি হওয়ার কারণে এর স্থিতির পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বছরে যা নবায়ন হচ্ছে, এর চেয়ে বেশি নবায়ন করা ঋণের স্থিতির পরিমাণ বেশি হচ্ছে। ২০২২ সালে নবায়ন করা ঋণ পুনরায় খেলাপি হওয়ার স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৪০ হাজার ৮৬০ কোটি টাকা। অর্থাৎ এসব ঋণ খেলাপি থেকে নবায়ন করা হয়েছিল। নবায়নের শর্ত অনুযায়ী কিস্তি পরিশোধ না করায় সেগুলো পুনরায় খেলাপি হয়েছে। ২০২১ সালে এ ঋণের স্থিতি ছিল ৩২ হাজার ৯৬০ কোটি, ২০২০ সালে ২৯ হাজার ৯৩০ কোটিা এবং ২০১৯ সালে ২৯ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা।

প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, চার বছর ধরে খেলাপি ঋণ নবায়ন করার প্রবণতা যেমন বেড়েছে, তেমনই নবায়ন করা ঋণ পুনরায় খেলাপি হওয়ার প্রবণতাও বেড়ে যাচ্ছে। এতে ব্যাংকিং খাতে একদিকে প্রলেপ দিয়ে খেলাপি ঋণ কমানো হচ্ছে, অন্যদিকে ছাড়ের সুবিধার অপব্যবহার করায় পুনরায় খেলাপি ঋণ বেড়ে যাচ্ছে।

প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নবায়ন করা ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে খেলাপি ঋণের চেয়েও বেশি। গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকা। একই সময়ে নবায়ন করা ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা। ২০২১ সালে এ ঋণের স্থিতি ছিল ১ লাখ ৬৮ হাজার ৪১০ কোটি, ২০২০ সালে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৬৩০ কোটি এবং ২০১৯ সালে ১ লাখ ৩৬ হাজার ২৪০ কোটি টাকা।

প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, খেলাপি ঋণ নবায়নের স্থিতি বেড়ে যাচ্ছে। চার বছরের ব্যবধানে নবায়নের স্থিতি বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। অর্থাৎ বিশেষ ছাড় দিয়ে খেলাপি ঋণকে নিয়মিত করে রাখা হচ্ছে। নবায়ন করা ঋণের মধ্যে নিয়মিত থাকা ঋণের স্থিতি খুব বেশি বাড়ছে না। ২০১৯ সালে নবায়ন করা ঋণের মধ্যে নিয়মিত ঋণের স্থিতি ছিল ১ লাখ ৬ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা। ২০২০ সালে তা বেড়ে ১ লাখ ২৫ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা হয়েছে। ২০২১ সালে তা আরও বেড়ে ১ লাখ ৩৫ হাজার ৪৩০ কোটি এবং ২০১৯ সালে তা আরও বেড়ে ১ লাখ ৭১ হাজার ৯২০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।

প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ২০২১ সালে মোট ঋণের ৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ ছিল খেলাপি। গত বছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ১৬ শতাংশ। এর মধ্যে আদায় অযোগ্য ঋণই ৮৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ। ২০২১ সালে ছিল ৮৮ দশমিক ১৭ শতাংশ। অর্থাৎ খেলাপি ঋণ নবায়নের মধ্যেও আদায় অযোগ্য ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। ব্যাংকিং খাতে প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার কোটি টাকা।

ব্যাংকিং খাতে মোট খেলাপি ঋণের ৪৬ শতাংশই রয়েছে শীর্ষ ৫ ব্যাংকে। যার পরিমাণ ৫৫ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা। অন্যান্য ব্যাংকে আছে ৫৪ শতাংশ, যার পরিমাণ ৬৫ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। শীর্ষ ১০ ব্যাংকে আছে ৭৮ হাজার ১৩০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ, অর্থাৎ ৬৪ দশমিক ৮ শতাংশ। অন্যান্য ব্যাংকে আছে ৪২ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা বা ৩৫ দশমিক ২ শতাংশ।

মোট আমানতের মধ্যে শীর্ষ ১০ ব্যাংকের কাছে রয়েছে ৪৬ দশমিক ৪ শতাংশ। অন্যান্য ব্যাংকে আছে ৫৩ দশমিক ৬ শতাংশ। মোট সম্পদের ১০ ব্যাংকেই রয়েছে ৪৪ দশমিক ৬ শতাংশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, শীর্ষ তিনজন ঋণগ্রহীতা খেলাপি হলে মোট খেলাপি ঋণ বেড়ে ১০ দশমিক ১১ শতাংশে দাঁড়াবে।

১০ শতাংশের কম মূলধন রয়েছে ১১টি ব্যাংকের। কম মূলধন থাকায় এসব ব্যাংক ঝুঁকিতে। ১০ শতাংশের বেশি থেকে সাড়ে ১২ শতাংশের কম মূলধন আছে ৫টি ব্যাংকের। বাকি ব্যাংকগুলোর মূলধন সাড়ে ১২ শতাংশের বেশি।

অর্থনীতি

রপ্তানির আড়ালে অর্থ পাচারের প্রবণতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। প্রায় সময়েই এ ধরনের তৎপরতা প্রতিহত করছে কাস্টমস। সরকারি প্রণোদনা হাতিয়ে নিতেও রপ্তানিতে জালিয়াতি করা হচ্ছে। এসব অপকর্ম সম্পন্ন করতে অসাধু ব্যবসায়ীরা মূলত সাতটি পন্থা বা কৌশল অনুসরণ করছেন, যা চিহ্নিত করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। এগুলো হচ্ছে-আমদানি পণ্যের মূল্য বেশি-কম (ওভার ইনভয়েসিং, আন্ডার ইনভয়েসিং) দেখানো, কম ঘোষণায় বেশি পণ্য রপ্তানি, বেশি ঘোষণায় কম পণ্য রপ্তানি, কাগজপত্র জালিয়াতির মাধ্যমে রপ্তানি, ভুয়া রপ্তানি এবং শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা পণ্য রপ্তানিতে জালিয়াতি।

সম্প্রতি রপ্তানি আড়ালে অর্থ পাচারের তথ্য-প্রমাণসহ এ সাত কৌশল তুলে ধরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) একটি প্রতিবেদন দিয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। ওই প্রতিবেদনে অর্থ পাচার রোধে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণসহ ৬টি সুপারিশ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শুল্ক গোয়েন্দার মহাপরিচালক ফখরুল আলম বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে কাস্টমস রপ্তানির আড়ালে অর্থ পাচারের বেশকিছু তৎপরতা প্রতিহত করেছে। দুষ্কৃতকারীরা প্রণোদনার অর্থ আত্মসাতে এবং অর্থ পাচার করতে যত পন্থা অবলম্বন করেছে, পূর্ণাঙ্গ তথ্যসহ তার বিস্তারিত তুলে ধরে সুপারিশসহ এনবিআরকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আমদানি-রপ্তানির আড়ালে অর্থ পাচার হচ্ছে, এটা সর্বজনবিদিত। শুল্ক গোয়েন্দা রপ্তানির আড়ালে অর্থ পাচারের পদ্ধতিগুলো শনাক্ত করতে পেরেছে, এজন্য তারা সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। যারা অর্থ পাচার করছে তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা না নেওয়া গেলে এই প্রবণতা থামানো সম্ভব হবে না।

আর শুল্ক গোয়েন্দার প্রতিবেদন সার্থকও হবে না। তিনি আরও বলেন, অসৎ ব্যবসায়ী, কাস্টমস কর্মকর্তা ও ব্যাংক কর্মকর্তা-এই ত্রিপক্ষীয় যোগসাজশ ছাড়া কোনোভাবেই অর্থ পাচার সম্ভব নয়। ইতোমধ্যে অর্থ পাচারের যেসব ঘটনা শনাক্ত হয়েছে, সেসব ঘটনায় জড়িত কাস্টমস ও ব্যাংক কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা উচিত।

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরে প্রতিবেদনে বলা হয়, অর্থ পাচারের পাশাপাশি রপ্তানিতে জালিয়াতিতে করা হচ্ছে মূলত সরকারি প্রণোদনা হাতিয়ে নিতে। বর্তমানে সরকার রপ্তানি বহুমুখী করতে পণ্যভেদে ১ থেকে ২০ শতাংশ নগদ প্রণোদনা দিচ্ছে। ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে পণ্যের মূল্য ও ওজন বাড়িয়ে দেখিয়ে প্রণোদনার অর্থ আত্মসাৎ করা হচ্ছে।

যেমন গত বছরের মার্চে সাগর জুট ডাইভারসিফাই ইন্ডাস্ট্রিজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান কাস্টমসে ১৮ হাজার পিস (২ হাজার ৩১২ কেজি) পাটের তৈরি ডোর ম্যাট রপ্তানির ঘোষণা দেয়, যার রপ্তানি মূল্য দেখানো হয় ৮১ লাখ ৩১ হাজার টাকা। কিন্তু কায়িক পরীক্ষায় ৬ হাজার ১১৬ পিস (২৪৪ কেজি) পাটের তৈরি ন্যাপকিন পাওয়া যায়, এর মূল্য হচ্ছে এক লাখ ৫ হাজার টাকা। এ চালানটি রপ্তানি করতে প্রতিষ্ঠানটি ১৬ লাখ টাকা প্রণোদনা দাবি করতে পারত।

আবার আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমেও অর্থ পাচার হচ্ছে। যেসব পণ্যের রপ্তানি প্রণোদনা নেই বা কম, সেইসব পণ্যে আন্ডার ইনভয়েসিং করা হয়। ২ ফেব্রুয়ারি জি ফ্যাশন ট্রেডিং এক্সপোর্ট অ্যান্ড ইমপোর্ট নামে একটি প্রতিষ্ঠান বিদেশে টি-শার্ট রপ্তানির জন্য কাস্টমসে বিল অব এক্সপোর্ট জমা দেয়, যাতে টি-শার্টের মূল্য ১২ টাকা (১২ সেন্ট) ঘোষণা দেওয়া হয়। সাধারণত এত মূল্যে বাংলাদেশ থেকে টি-শার্ট রপ্তানি হয় না। মূলত অবৈধভাবে অর্থ বিদেশে রেখে দিতেই এই পন্থা অবলম্বন করা হচ্ছে।

অন্যদিকে কম ঘোষণায় বেশি পণ্য রপ্তানির ঘটনাও ঘটছে। গত বছরের জানুয়ারিতে এসআর ফ্যাশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান কাস্টমসে ৬০ হাজার পিস তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে বিল অব এক্সপোর্ট জমা দেয়।

কায়িক পরীক্ষায় এক লাখ ২৭ হাজার পিস তৈরি পোশাক পাওয়া যায়। অতিরিক্ত এই ৬৭ হাজার পিস তৈরি পোশাকের মূল্য প্রায় ১০ লাখ টাকা। ক্ষেত্রবিশেষে বেশি ঘোষণা দিয়ে কম পণ্য পাঠানোর ঘটনাও ঘটছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, নমুনা ঘোষণায় বিদেশে পুরো কনটেইনার বোঝাই পণ্য পাঠানো হচ্ছে।

এক্ষেত্রে বিভিন্ন নামকরা রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের ই-এক্সপি জাল করা হচ্ছে। নমুনা পণ্য পাঠানোর ক্ষেত্রে কাস্টমসে মূল্য, এক্সপোর্ট এলসি, কন্ট্রাক্ট ও সেলস অর্ডার উল্লেখ থাকে না। এক্ষেত্রে কোনো অর্থই দেশে প্রত্যাবাসন না হয়ে পুরোটাই বিদেশে পাচার হয়ে থাকে। যেমন সাবিহা সাকি নামে একটি প্রতিষ্ঠান ৩৭৯ কোটি টাকা, এশিয়া ট্রেডিং করপোরেশন ২৮২ কোটি টাকা এবং ইমু ট্রেডিং করপোরেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান ৬২ কোটি টাকার নমুনা পণ্য বিদেশে পাঠিয়েছে। কিন্তু কোনো অর্থই দেশে প্রত্যাবাসন হয়নি।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পণ্য বিদেশে রপ্তানি না করেও শুধু কাগজ জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে সরকারি প্রণোদনার অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটছে। আহনাফ করপোরেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান ১১১টি চালান বিদেশে রপ্তানি করে, এই রপ্তানির বিপরীতে ৩১ কোটি ৮১ লাখ টাকা ব্যাংকিং চ্যানেলে বাংলাদেশে আসে।

কিন্তু কাস্টমসের তদন্তে উঠে আসে, এই প্রতিষ্ঠান কখনো পণ্য রপ্তানি করতে অফডকে বা বন্দরে কনটেইনার পাঠায়নি, এমনকি কোনো কনটেইনার রপ্তানিও হয়নি। শুধু বিল অব এক্সপোর্ট, এলসি, ইনভয়েস ও প্যাকিং লিস্ট জালিয়াতির মাধ্যমে বানিয়ে প্রণোদনার ৬ কোটি ২০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে। একই কায়দায় জান্নাত করপোরেশন ১৭৫টি বিল অব এক্সপোর্টের বিপরীতে ৫ কোটি ৮২ লাখ টাকা এবং ফাতিমা করপোরেশন ৬৮টি বিল অব এক্সপোর্টের বিপরীতে ৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা প্রণোদনা হাতিয়ে নিয়েছে।

শুল্ক গোয়েন্দার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বন্ড সুবিধাপ্রাপ্ত রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানও জালিয়াতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। এ ধরনের প্রতিষ্ঠান কম ঘোষণায় বেশি পণ্য বিদেশে রপ্তানি করছে। অনেক সময় শুল্কমুক্ত সুবিধায় কাঁচামাল আমদানি করে তা খোলা বাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে, আর রপ্তানি করছে নিুমানের বা ভিন্ন পণ্য। এতে রাষ্ট্র রাজস্ব হারাচ্ছে এবং দেশীয় বস্ত্র শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যেমন সোয়ান নিট কম্পোজিট নামে একটি বন্ডের প্রতিষ্ঠান চলতি বছরের এপ্রিলে মহিলাদের ড্রেস রপ্তানির জন্য বিল অফ এক্সপোর্ট জমা দেয়। অথচ কায়িক পরীক্ষায় টি-শার্ট ও পোলো শার্ট ঘোষণার চেয়ে বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়।

জালিয়াতি ঠেকাতে ৬ সুপারিশ : রপ্তানি জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ পাচার ও নগদ প্রণোদনা আত্মসাৎ রোধে প্রতিবেদনে শুল্ক গোয়েন্দা ৬টি সুপারিশ করেছে। এগুলো হচ্ছে-রপ্তানি পণ্য চালান পরীক্ষা ও শুল্কায়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ; ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করার মাধ্যমে পণ্যের মূল্য ও সঠিকতা যাচাইয়ের মাধ্যমে রপ্তানির অনুমতি দিতে কাস্টমস হাউজগুলোকে নির্দেশ দেওয়া। এছাড়া রপ্তানি পণ্যের ব্যবহৃত উপকরণের মূল্য, মজুরি, কারখানার ব্যয় ও উৎপাদন খরচ বিবেচনায় ক্যাটাগরিভিত্তিক পণ্যের ন্যূনতম রপ্তানিমূল্য নির্ধারণ করা যেতে পারে। পাশাপাশি রপ্তানি পারমিট ইস্যুর আগে বিবরণ ও পরিমাণের ভিত্তিতে পণ্যের প্রকৃত মূল্য প্রদর্শন করা হয়েছে কিনা তা ব্যাংক বা রপ্তানি পারমিট ইস্যুকারী কর্মকর্তার মাধ্যমে যাচাইয়ের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

Advertisement
353Shares
facebook sharing button
অর্থনীতি

বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের বিদেশে পুঁজি বিনিয়োগের স্থিতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০ কোটি ডলার বা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৪ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। ২০২১ সালে এ স্থিতি ছিল ৩৮ কোটি ৯৮ লাখ ডলার বা ৩ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে ডলারের হিসাবে স্থিতি বেড়েছে ২ দশমিক ৫৬ শতাংশ, টাকার হিসাবে বেড়েছে ২০ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

গত এক বছরের ডলারের বিপরীতে টাকার বড় ধরনের অবমূল্যায়নের কারণে টাকার হিসাবে বিনিয়োগ বেশি মাত্রায় বেড়েছে, ডলারের হিসাবে তুলনামূলক কম বেড়েছে। গত এক বছর আগে প্রতি ডলারের দাম ছিল ৯৩ টাকা। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১০ টাকায়। আলোচ্য সময়ে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে ২১ শতাংশ। বাংলাদেশ থেকে টাকা দিয়ে ডলার কিনে তা বিদেশে পাঠানো হয়েছে বলে টাকার হিসাবে বিনিয়োগই দেশীয় প্রেক্ষাপটে সঠিক।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশ থেকে বিদেশে বিনিয়োগের এ হিসাব শুধু বৈধভাবে নেওয়া পুঁজির ভিত্তিতে করা। দেশ থেকে বিদেশে পুঁজি নিতে হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে বিদেশে যারা পুঁজি বিনিয়োগ করেছেন এতে শুধু তাদের তথ্য রয়েছে। এর বাইরে আরও বিপুল পরিমাণ পুঁজি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়াই অবৈধভাবে বিদেশে পাচার করে নেওয়া হয়েছে। সেগুলো দিয়ে বিভিন্ন দেশে হোটেল, গার্মেন্টসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। যার হিসাব এতে নেই। আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) হিসাবে বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর গড়ে ৯১ হাজার কোটি টাকা পাচার হচ্ছে।
পাচারের এসব অর্থের একটি বড় অংশ দিয়েই বিদেশে বিনিয়োগ করা হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে পুঁজি নিয়ে কানাডা, সংযুক্ত আরব আমীরাত, মরিশাস, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, নেপালে বিনিয়োগ করা হয়েছে। যা বৈধভাবে বিনিয়োগের চেয়ে কয়েক হাজার গুণ বেশি।

ডলার সংকটে দেশের অর্থনীতি যখন নিদারণ ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে, তখনও দেশ থেকে পুঁজি নেওয়া কমেনি। বরং বেড়েছে। এর বিপরীতে বিদেশ থেকে দেশে আসা সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) প্রবাহ কমে গেছে।

এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশে বিদেশি বিনিয়োগের জন্য পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। যেটি তুলনামূলকভাবে অনেক কম। যে কারণে বিদেশি বিনিয়োগ কম আসছে। বিপরীতে দেশি উদ্যোক্তারাও দেশে বিনিয়োগ না করে পুঁজি সরিয়ে ফেলছেন। একদিকে বিদেশি বিনিয়োগ কমছে, অন্যদিকে দেশ থেকে বিদেশে বিনিয়োগ বাড়ছে। এটি বেশি চলতে থাকলে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় ভারসাম্যহীনতা আরও প্রকট হবে।

তিনি আরও বলেন, দুই ধরনের বিনিয়োগ বাড়াতেই সুশাসন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে হবে। মুদ্রার মানে ও কর কাঠামোতেও স্থিরতা ফেরাতে হবে। তা না হলে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে। আর বিনিয়োগ না হলে অথনীতিতে গতি আসবে না। কর্মসংস্থান বাড়বে না।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা গেছে, ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে দেশ থেকে বিদেশে পুঁজি নেওয়ার পরিমাণ বেড়েছে ১০১ দশমিক ৭২ শতাংশ। তবে বিদেশে অর্জিত মুনাফা ও এক কোম্পানি থেকে অন্য কোম্পানির ঋণ মিলে মোট পুঁজি বিনিয়োগ কমেছে ৪১ দশমিক ৩০ শতাংশ। এর বিপরীতে বিদেশ থেকে দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) পুঁজি হিসাবে অর্থ আসার পরিমাণ কমেছে ১০ দশমিক ২০ শতাংশ। তবে এক কোম্পানি থেকে অন্য কোম্পানির ঋণ ও মুনাফাসহ বিনিয়োগ বেড়েছে ২০ দশমিক ২০ শতাংশ।

২০২১ সালে বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের বিদেশে পুঁজি বিনিয়োগের স্থিতি ছিল প্রায় ৩৯ কোটি ডলার বা ৩ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা। গত বছর তা বেড়ে হয়েছে ৪০ কোটি ডলার বা ৪ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে বিনিয়োগ বেড়েছিল ১৯ দশমিক ২ শতাংশ। ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে তা বেড়েছে ২ দশমিক ৬০ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে বিনিয়োগের স্থিতি কমেছে। কিন্তু দেশ থেকে নিট পুঁজি নেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। মূল পুঁজির স্থিতি ২০২১ সালে ২২ কোটি ৫৯ লাখ ডলার। গত বছর তো বেড়ে হয়েছে ২২ কোটি ৯১ লাখ ডলার। বিদেশে অর্জিত মুনাফা থেকে পুনরায় বিনিয়োগের স্থিতি ২০২১ সালে ছিল ৫ কোটি ২৬ লাখ ডলার। গত বছর তা বেড়ে হয়েছে ৬ কোটি ৯ লাখ ডলার। ২০২১ সালে এক কোম্পানি থেকে অন্য কোম্পানির ঋণের স্থিতি ছিল ১১ কোটি ১৩ লাখ ডলার। গত বছর তা কমে ১০ কোটি ৯৯ লাখ ডলারে দাঁড়িয়েছে।

২০২১ সালে বিদেশে বিনিয়োগ থেকে মুনাফা বাবদ এসেছিল ৩০ লাখ ডলার। ২০২২ সালে বিদেশ থেকে মুনাফা এসেছে ১ কোটি ২১ লাখ ডলার। এ খাতে মুনাফা আনার প্রবণতা বেড়েছে। বৈশ্বিক অস্থিরতায় অনেকেই পুঁজির একটি অংশ আবার দিশে নিয়ে আসছেন যে কারণে এ খাতে হঠাৎ করে ডলারের প্রবাহ বেড়েছে।

দেশ থেকে সবচেয়ে বেশি পুঁজি নেওয়া হয়েছে হংকংয়ে ১ কোটি ৬৬ লাখ ডলার। দ্বিতীয় অবস্থানে ভারতে ১ কোটি ৫৭ লাখ ডলার। তৃতীয় অবস্থান নেপাল ৮৩ লাখ ডলার। চতুর্থ অবস্থান সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৭০ লাখ ডলার। এছাড়া যুক্তরাজ্যে ৬৬ লাখ ডলার, সিঙ্গাপুরে ২৩ লাখ ডলার, দক্ষিণ আফ্রিকায় ১৬ লাখ ডলার, মালয়েশিয়ায় ১৫ লাখ ডলার, যুক্তরাষ্ট্রে ১২ লাখ ডলার, কেনিয়ায় ১২ লাখ ডলার, ওমানে ১১ লাখ ডলার নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি নেওয়া হয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান গঠন করতে ৫ কোটি ৫৫ লাখ ডলার। খনিজ সম্পদ খাতে ৭১ লাখ ডলার, রাসায়নিক পণ্য খাতে ১২ লাখ ডলার ও মেশিনারিজ উৎপাদনে ৬ লাখ ডলার।

২০২১ সালে দেশ থেকে পুঁজি হিসাবে নেওয়া হয়েছে ৫৮ লাখ ডলার। গত বছর নেওয়া হয়েছে ১ কোটি ১৭ লাখ ডলার। এক বছরে পুঁজি নেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে ১০১ দশমিক ৭২ শতাংশ। ডলার সংকটের মধ্যেও এসব পুঁজি নেওয়া হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, এ পুঁজির একটি বড় অংশ নেওয়া হয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান গড়তে। যার মাধ্যমে প্রবাসীদেও রেমিট্যান্স আহরণ করা হবে।

এছাড়া বিদেশে অর্জিত মুনাফা পুনরায় বিনিয়োগ করা হয়েছে ২০২১ সালে ২ কোটি ৩৩ লাখ ডলার। গত বছর করা হয়েছে ৩ কোটি ৪৮ লাখ ডলার। এক কোম্পানি থেকে অন্য কোম্পানির ঋণ ২০২১ সালে নেওয়া হয়েছে ৯ কোটি ১৭ লাখ ডলার। গত বছর নেওয়া হয়েছে ৬১ লাখ ডলার।

নিট পুঁজি, বিদেশে অর্জিত মুনাফা ও এক কোম্পানি থেকে অন্য কোম্পানির ঋণ এসব মিলে ২০২১ সালে বাংলাদেশ থেকে বিনিয়োগ করা হয়েছিল ৯ কোটি ১৭ লাখ ডলার। গত বছর তা কমে হয়েছে ৫ কোটি ২৬ লাখ ডলার। কমেছে ৪১ দশমিক ৩০ শতাংশ। এক কোম্পানি থেকে অন্য কোম্পানির ঋণের প্রবাহ কমে যাওয়ায় গত বছর বিনিয়োগ কমেছে।

গত বছরের আগস্টে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে আরও পাঁচটি কোম্পানির বিদেশি বিনিয়োগ করার প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, ওষুধ কোম্পানি রেনেটা ও খাদ্য প্রস্তুতকারক কোম্পানি প্রাণ ফুডস। বাকি তিনটি গার্মেন্ট প্রতিষ্ঠান। এগুলো হচ্ছে, এমবিএম গার্মেন্টস, নাসা গ্রুপের এজে সুপার গার্মেন্টস ও কলাম্বিয়া গার্মেন্টস।

এদিকে দেশে ডলার সংকট মোকাবিলা ও কর্মসংস্থান বাড়াতে সরকার বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। বিদেশে রোডশো করছে। তারপরও দেশে বিনিয়োগ বাড়ছে না। অথচ দেশি উদ্যোক্তাদের একটি অংশ বিদেশি পুঁজি বিনিয়োগে উৎসাহিত হচ্ছে। এতে দেশের পুঁজি বিদেশে চলে যাচ্ছে। অন্যদিকে দেশ বঞ্ছিত হচ্ছে কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি থেকে।

২০২১ সালে মূলধন হিসাবে দেশে এফডিআই এসেছে ১১৪ কোটি ডলার। গত বছর এসেছে ১০২ কোটি ডলার। এক বছরের ব্যবধানে এফডিআই কমেছে ১০ দশমিক ২০ শতাংশ। তবে মুনাফা থেকে পুনরায় বিনিয়োগ ও এক কোম্পানি থেকে অন্য কোম্পানির ঋণ মিলে এফডিআই বেড়েছে ২০ দশমিক ২ শতাংশ।