অর্থনীতি

কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রকাশিত আর্থিক স্থিতিশীলতা মূল্যায়ন প্রতিবেদনে ব্যাংক খাতে অস্থিরতার আশঙ্কা প্রকাশ করে তা মোকাবিলার ক্ষেত্রে পাঁচটি চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলো হলো-মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি, সুদের হারে স্থিরতা, ডলার সংকট, বৈশ্বিক পরিস্থিতি এবং ঋণ আদায়ে স্থবিরতা।

ইতঃপূর্বে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন সংস্থা আগামী বছর বিশ্বব্যাপী ভয়ানক মন্দার আশঙ্কা প্রকাশ করে ব্যাংক খাতেও এর প্রভাব পড়ার ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি রোধে সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণ, সুদের হার বৃদ্ধি, মুদ্রা বিনিময় হারে অস্থিরতা প্রভৃতি কারণে ব্যাংক খাতে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।

এটি দেশের ব্যাংক তথা আর্থিক খাতের জন্য একটি সতর্ক বার্তা। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ব্যাংক খাতের এসব সমস্যা বা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করি আমরা।

বস্তুত ব্যাংক খাতে এসব সমস্যা নতুন নয়। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহদ্দিন আহমেদের বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন, ব্যাংক খাতে সমস্যা আগে থেকেই ছিল, বৈশ্বিক মন্দায় ডলারের সংকট তা প্রকট আকারে প্রকাশ করে দিয়েছে। ঋণ আদায় কমে যাওয়াটা এখন বড় শঙ্কার। গত ৩ বছর ধরে ঋণ আদায় হচ্ছে না, বিশেষ করে বড় গ্রাহকরা ঋণ পরিশোধ করছেন না। তাদের ছাড় দেওয়া হচ্ছে। বাংক শুধু ঋণ দিয়েই যাচ্ছে। এটি হতে পারে না। ঋণ আদায় বাড়াতে না পারলে ভবিষ্যতে বড় ধাক্কা আসবে।

মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি জনসাধারণের মতো ব্যাংকগুলোর জন্যও বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। ঋণের সুদের হারের চেয়ে মূল্যস্ফীতির হার বেশি হওয়ায় ব্যাংকের প্রকৃত আয় কমে গেছে। ফলে ব্যাংকগুলো এখন সুদবহির্ভূত আয়ের দিকে বেশি নজর দিয়েছে। এক্ষেত্রে তারা গ্রাহকদের কাছ থেকে নানা ধরনের ফি আদায়ের পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছে।

এদিকে মূল্যস্ফীতির কারণে গ্রাহকদেরও আমানতের বিপরীতে প্রকৃত আয় কমে যাচ্ছে। এসব কারণে গ্রাহকরা সঞ্চয়ে নিরুৎসাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণেও গ্রাহকরা ব্যাংকে সঞ্চয় করতে পারছে না। সব মিলে আগামী দিনে ব্যাংকগুলো বড় ধরনের সংকটের সম্মুখীন হতে পারে বলে যে আশঙ্কা করা হচ্ছে, তা অমূলক নয়।

বলার অপেক্ষা রাখে না, ব্যাংক খাত বিপর্যস্ত হলে তা অর্থনীতির জন্য আরও খারাপ পরিণতি বয়ে আনবে, যার প্রভাব পড়বে মূলত দেশের শিল্প খাত ও সাধারণ মানুষের ওপর। এজন্য ব্যাংক খাতে সম্ভাব্য অস্থিরতা মোকাবিলায় সংশ্লিষ্টদের এখনই সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। ঋণখেলাপিদের ছাড় দেওয়ার প্রবণতা পরিহার করে ব্যাকগুলোকে ঋণ আদায়ে জোর দিতে হবে। নজর দিতে হবে গ্রাহকস্বার্থের দিকে।

সরকার ব্যাংকিং কমিশন গঠনের যে উদ্যোগ নিয়েছিল, তার দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। তবে কেবল কমিশন গঠন করলেই হবে না; স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষমতাও থাকতে হবে সেই কমিশনের। আসন্ন বিপর্যয় মোকাবিলায় ব্যাংক ও আর্থিক খাতে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ও আইনি সংস্কারের পাশাপাশি এ খাতে শৃঙ্খলা, জবাবদিহিতা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠাসহ আদর্শ ও নৈতিকতা প্রতিষ্ঠার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে, এটাই কাম্য।

অর্থনীতি

তিন পাত্তি গোল্ডসহ বিভিন্ন অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা দেশের বাইরে সরিয়ে নেওয়া চক্রের মূলহোতা ও উল্কা গেমস লিমিটেডের সিইও জামিলুর রশিদসহ সাত জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।

রোববার রাজধানীর মহাখালী ও উত্তরায় অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।

রোববার রাতে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে দেশের বাইরে টাকা পাঠানোর মূল হোতা উল্কা গেমস লিমিটেডের সিইও জামিলুর রশিদসহ সাত জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

গ্রেফতার ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। সোমবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার মিডিয়া সেন্টারে এ বিষয়ে বিস্তারিত সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিস্তারিত জানানো হবে বলে জানান র‌্যাবের এই কর্মকর্তা।

অর্থনীতি

আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি অনুসরণ করে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের হিসাব করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও আইএমএফের প্রতিনিধি দল নীতিগতভাবে একমত হয়েছে। ঋণ পেতে হলে আইএমএফের পরামর্শ অনুযায়ী রিজার্ভের হিসাব করতে হচ্ছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে। বিভিন্ন খাতে ব্যবহার করা রিজার্ভের অর্থ বাদ দিলে (রিজার্ভ) প্রায় সাড়ে ৮ বিলিয়ন ডলার কমে যাবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সূত্র জানিয়েছে, ডলার সংকটের কারণে এই মুহূর্তে আইএমএফের ঋণ বাংলাদেশের জন্য খুবই প্রয়োজন। আইএমএফ যে হিসাব পদ্ধতি বলছে সেটিও ঠিক আছে। ঋণ পাওয়ার জন্য তাদের হিসেব মতোই রিজার্ভের হিসাব করা হবে। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে রিজার্ভের বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর বলে আইএমএফের পদ্ধতিতে রিজার্ভ গণনা শুরু হতে একটু সময় লাগবে। তবে বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় সরকারের উচ্চপর্যায়ে আলোচনা করে কবে নাগাদ শুরু করা হবে, তা সিদ্ধান্ত হবে। আইএমএফের পদ্ধতি অনুসরণের পাশাপাশি শুরুতে বিদ্যমান পদ্ধতির হিসাবও প্রকাশ করা হবে।

আইএমএফ দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছে, রিজার্ভ থেকে অর্থ নিয়ে আলাদাভাবে বিভিন্ন তহবিল গঠন ও সেখান থেকে ঋণ দেওয়া হচ্ছে। আবার ঐ সব অর্থ রিজার্ভে দেখানো হচ্ছে। এতে রিজার্ভ বেশি দেখানো হচ্ছে। যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এক ধরনের বিভ্রান্তি তৈরি করছে। এভাবে রিজার্ভের হিসাব দেখানো ঠিক হচ্ছে না। আইএমএফ মনে করে এতে দেশের প্রকৃত রিজার্ভের চিত্র ফুটে উঠছে না। রিজার্ভের প্রকৃত চিত্র আড়াল করায় বাংলাদেশেরই বরং ঝুঁকি বাড়ছে। আইএমএফের দৃষ্টিতে এই গরমিলে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার সংকট দেখা দিতে পারে। বাংলাদেশের স্বার্থেই এ হিসাব আন্তর্জাতিকমান অনুযায়ী করা উচিত। তারা আরো বলেছেন, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কাসহ আইএমএফের সদস্য সব দেশই আইএমএফের প্রচলিত আন্তর্জাতিকমান মেনে রিজার্ভের হিসাব করে এবং তা প্রকাশ করে। কিন্তু বাংলাদেশ রিজার্ভের হিসাবের ক্ষেত্রে আইএমএফের মানদণ্ড মানছে না। নিজেদের মতো করে হিসাব করে বেশি রিজার্ভ দেখাচ্ছে।

এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সাবেক কর্মকর্তা ও বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পিআরআই-এর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর ইত্তেফাককে বলেন, আইএমএফ যে হিসাব পদ্ধতির কথা বলছে তা হচ্ছে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের কথা। আমরা চাইলে আমাদের রিজার্ভের হিসাব যে কোনোভাবে করতে পারি না। রিজার্ভকে আন্তর্জাতিক মাপকাঠিতে আমাদেরকে মাপতে হবে। আমরা এতোদিন সেটি করিনি। এখন আইএমএফ যেভাবে চাচ্ছে সেভাবে করা উটিত। যে জিনিসটি আমার কাছে নেই সেটা ধরে রেখে তো লাভ নেই। তবে সেটি আমার মালিকানায় আছে ঠিকই। কিন্তু এটি প্রকৃত রিজার্ভ নয়। সব সম্পদ রিজার্ভের সম্পদ নয়। এ সংশোধনটি দরকার ছিল। আইএমএফের যেভাবে রিজার্ভের হিসাব চাচ্ছে যেভাবে করে নেওয়া উচিত বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ।

তবে এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন সাবেক গভর্নর ইত্তেফাককে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে পদ্ধতিতে বর্তমানে হিসাব রাখছেন তা ঠিকই আছে। বাংলাদেশ ব্যাংক দুটো হিসাব রাখছে। একটি বাংলাদেশের হিসাব। আরেকটি আইএমএফের হিসাব। একটি গ্রস হিসাব। আরেকটি নিট হিসাব। আইএমএফের হিসাব হচ্ছে নিট হিসাব, মানে নগদ। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ধরা যাক আমার কাছে ২৭ টাকা নগদ আমার পকেটে আছে। কিন্তু আরো ৫ টাকা আমার একটি সঞ্চয়ী হিসেবে আছে। এই সঞ্চয়ী হিসেবের টাকাটা আমি যখন খুশি তখন তুলতে পারব। সেটাও এক ধরনের নগদ টাকা। তিনি বলেন, আমার তো ২৭ বিলিয়ন ডলার কালকেই লাগছে না। বিশেষ করে ইডিএফের যে অংশটি যা ডলারে দেওয়া হয় টাকাটাও ডলারেই নেওয়া হয়। সুতরাং এর মধ্যে কোনো ঝুঁকি নেই।

তবে এ নিয়ে তর্ক করার কোনো সুযোগ নেই বলে মনে করেন তিনি। সারা পৃথিবী একভাবে যাবে আর আমরা আরেকভাবে যাব সেটা ঠিক নয়। সাময়িকভাবে আইএমএফের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ ব্যাংক মেনে নিচ্ছে। আমাদের অবস্থান এবং আইএমএফের অবস্থান সমানভাবে রাখা যায়। তবে চূড়ান্তভাবে আইএমএফের হিসাব পদ্ধতিই মানতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র জি এম আবুল কালাম আজাদ বলেন, আইএমএফের সঙ্গে বৈঠকে রিজার্ভ নিয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে। এ নিয়ে যার যার অবস্থান থেকে যুক্তি উপস্থাপন করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে তাদের বলা হয়েছে, রিজার্ভের হিসাব বাংলাদেশ দুই ভাবে করছে। গ্রস ও নিট হিসাব। গ্রস হিসাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে থাকা সব বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভে দেখানো হচ্ছে। নিট হিসাবে বিভিন্ন তহবিলের অর্থ বাদ দেওয়া হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আইএমএফের সফররত মিশনের বৈঠক হয়। জানা গেছে, রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের (ইডিএফ) সরবরাহ করা ৭ বিলিয়ন ও শ্রীলঙ্কাকে দেওয়া ২০ কোটি ডলার রিজার্ভে দেখাচ্ছে। এছাড়া গ্রিন ট্রান্সফরমেশন ফান্ড (জিটিএফ) ২০ কোটি, লং টার্ম ফিন্যান্সিং ফ্যাসিলিটি (এলটিএফএফ) তহবিলে ৩ কোটি ৮৫ লাখ, সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিমানকে ৪ কোটি ৮০ লাখ এবং ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ট্রেড ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইটিএফসি) আমানত রিজার্ভে দেখাচ্ছে। সবমিলিয়ে বর্তমানে রিজার্ভে যে অর্থ দেখানো হচ্ছে, সেখান থেকে ৮ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার বাদ যাবে বলে মনে করে আইএমএফ। আইএমএফের প্রতিনিধি দল বলেছে, এগুলো রিজার্ভে দেখানো যাবে না। গত বুধবার রিজার্ভ ছিল ৩৫ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলার বা ৩ হাজার ৫৮৫ কোটি ডলার। আইএমএফের হিসাবে রিজার্ভ কমে হবে ২৭ বিলিয়ন ডলার বা ২ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের কিছু বেশি।

উল্লেখ্য, ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ চেয়ে গত জুলাইয়ে আইএমএফের কাছে যে চিঠি পাঠিয়েছিল বাংলাদেশ, সে ব্যাপারে আলোচনা করতেই দলটি এখন ঢাকায়। আইএমএফের ১০ সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সংস্থাটির এশীয় ও প্যাসিফিক বিভাগের প্রধান রাহুল আনন্দ। ৩০ ও ৩১ অক্টোবর এবং আগামী ২ ও ৮ নভেম্বর আবারও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে সভার সূচি রয়েছে।

অর্থনীতি

চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২০৭১ কোটি টাকা। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ একই সময়ে ২৭৩২ কোটি টাকা খেলাপি কমিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। শুধু তাই নয়, খেলাপি কমানোর লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সঙ্গে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) স্বাক্ষর করেছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। কিন্তু সর্বশেষ হিসাবে দেখা গেছে গত জুলাই-সেপ্টেম্বর এ তিন মাসে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে খেলাপি ঋণ কমেনি, উলটো বেড়েছে। একই সময়ে ঋণখেলাপিদের কাছ থেকে আদায়ের হারও হতাশাজনক। ফলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ প্রথম প্রান্তিকের খেলাপি ঋণ কমানো ও আদায়ে লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

সূত্র আরও জানায়, খেলাপি ঋণের এই অবনতিতে ব্যাংকগুলোর ওপর অসন্তোষ প্রকাশ করেছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। কারণ ব্যাংকগুলোই খেলাপি ঋণ কমাতে এবং আদায় করতে পারেনি। ফলে আগামীতে খেলাপি ঋণ কমানো ও আদায়ে আরও মনোযোগী হতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইওদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, এপিএ’র আওতায় প্রথম প্রান্তিকে অন্যান্য আর্থিক সূচকের অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু একমাত্র নেতিবাচক হয়েছে খেলাপি ঋণের ক্ষেত্রে। তার মতে, করোনাভাইরাসে সৃষ্ট দুর্যোগ থেকে ঋণ গ্রহীতাদের সুরক্ষা দিতে নীতি ছাড় দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০২০ সালে ঋণের কোনো কিস্তি পরিশোধ না করেই খেলাপি হওয়া থেকে নিষ্কৃতি পেয়েছেন গ্রাহকরা। আবার ২০২১ সালজুড়েও ছিল নীতিছাড়ের ছড়াছড়ি। ঋণ গ্রহীতারা নীতিছাড়ের সুফল উপভোগ করছেন চলতি বছরও। অন্যদিকে খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলের নীতিমালাও অনেক সহজ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ঋণ বিতরণকারী ব্যাংকের হাতেই পুনঃতফসিলের সব ক্ষমতা তুলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ঋণ পরিশোধের বাধ্যবাধকতা ফিরে আসায় চলতি বছরের প্রথম থেকেই খেলাপি ঋণ বাড়তে শুরু করেছে। জুন শেষে খেলাপি ঋণের যে পরিমাণ দাঁড়িয়েছে, সেটি বাংলাদেশের ইতিহাসেই সর্বোচ্চ। আর জুলাই-সেপ্টেম্বরে এসে এটি আরও বেড়ে গেছে অস্বাভাবিক হারে।

গত জুন পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের অঙ্ক ছিল ৫৫ হাজার ৪২৯ কোটি টাকা। এরপর আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ চলতি (২০২২-২৩) অর্থবছরে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের অঙ্ক ৪৪ হাজার ৫শ কোটি টাকায় নামিয়ে আনার ঘোষণা দেয়। এটি উল্লেখ করেছে এপিএ’তে। এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে পুরো বছরে খেলাপি ঋণ ১০ হাজার ৯২৯ কোটি টাকা কমাতে হবে এবং প্রতি প্রান্তিকে কমাতে হবে ২৭৩২ কোটি টাকা। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে প্রথম প্রান্তিকে অর্জন সম্ভব হয়নি।

জানতে চাইলে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি অনুযায়ী আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ খেলাপি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি। কিন্তু এসব চুক্তি করার পর কোনো ফলোআপ করা হয় না কিংবা ব্যর্থতার জন্য কারও দায়-দায়িত্ব নিরূপণ হয় না। কোনো জবাবদিহিতাও নেই। এটি বড় সমস্যা। তিনি আরও বলেন, এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্ব নয় ব্যাংকগুলোর পারফরম্যান্স উন্নতি করার। মন্ত্রণালয়কে নিতে হবে দায়-দায়িত্ব।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘অর্থনীতি জানা-বোঝা ও নীতিনিষ্ঠ ব্যক্তিরা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর পর্ষদে থাকলে সমস্যা সৃষ্টিই হতো কম। অনেক ক্ষেত্রেই এর ঘাটতি দেখা যায়। আবার রাষ্ট্র মালিকানাধীন ছয় ব্যাংকের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনেকটা নীরব থাকে। ভাবটা এমন যে আমাদের কী? এ মনোভাব থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বের হয়ে আসা উচিত।’

এদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ও আদায়, অবলোপনকৃত ঋণ ও আদায়, শীর্ষ ২০ খেলাপি থেকে আদায় নিয়ে সম্প্রতি বৈঠক করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এতে সব ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরাই (এমডি) উপস্থিত ছিলেন। সার্বিক কৃতিত্বের (পারফরম্যান্স) মূল্যায়ন করে বৈঠকে ব্যাংকগুলোর ওপর অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়। সেখানে বিভিন্ন সূচকে ব্যাংকগুলোতে দৃশ্যমান পরিবর্তন আনতে নির্দেশনাই দেওয়া হয়েছে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রতিবেদনে খেলাপি ঋণ ও আদায়ের অঙ্ক, কৃষি এবং এসএমই ঋণ বিতরণ, শিল্প ঋণ, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে লেনদেনের অঙ্কসহ অন্যান্য সূচকের অগ্রগতি তুলে ধরা হয়। সেখানে দেখানো হয় কৃষিঋণ বিতরণ করা হয়েছে প্রথম প্রান্তিকে ৫২৪০ কোটি টাকা, এসএমই খাতে ঋণ বিতরণ করা হয় ৬২ হাজার ১৩০ কোটি টাকা। তবে এসএমই খাতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ঋণ গেছে।

এছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে পুরো অর্থবছরে ৪ হাজার ২০০ কোটি টাকার শিল্প ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সেখানে প্রথম তিন মাসে বিতরণ করা হয় ১১৭৮ কোটি টাকা। এছাড়া ৫১৮ কোটি টাকা বিতরণ করা হয় নারী উদ্যোক্তাদের মধ্যে।

অর্থনীতি

প্রবাসী আয় ও রপ্তানিতে সব ব্যাংকে ডলারের দর নতুন করে নির্ধারণ করা হয়েছে। ১ নভেম্বর থেকে প্রবাসী আয়ে ডলারের নতুন দর সব ব্যাংকে কার্যকর হবে। তবে রপ্তানি নগদায়ন বিল কার্যকর হবে সোমবার থেকে।

এখন প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সে প্রতি ডলারের সর্বোচ্চ দর হবে ১০৭ টাকা, আগে যা ছিল ১০৭ টাকা ৫০ পয়সা। তবে রপ্তানির ক্ষেত্রে ডলারের দর ৫০ পয়সা বাড়িয়ে ৯৯ টাকা ৫০ পয়সা করা হয়েছে।

রোববার অ্যাসোসিয়েশন অফ ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ অথরাইজড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এবিবি ও বাফেদার সভা শেষে বাফেদার চেয়ারম্যান ও সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফজাল করিম সাংবাদিকদের এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।

তিনি বলেন, বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে প্রবাসী আয়ে ডলারের দাম ৫০ পয়সা কমানো হয়েছে। আর রপ্তানি বিল নগদায়নে ৫০ পয়সা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এবিবির পক্ষে সংগঠনটির চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সেলিম আর এফ হোসেন, বাফেদার পক্ষে সংগঠনটির চেয়ারম্যান ও সোনালী ব্যাংকের এমডি আফজাল করিমসহ দুই সংগঠনের কমিটির সদস্যরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।

প্রবাসী আয়ে ডলারের দর ৫০ পয়সা কমানোর কারণ হিসেবে আফজাল করিম বলেন, `বর্তমানে ডলারের ওপর চাপ কমে আসায় নতুন দর নির্ধারণ করা হয়েছে৷ ১ নভেম্বর থেকে নতুন দর কার্যকর হবে। যেসব ব্যাংকে ডলার কেনা রয়েছে তারা ডলারের দর এই সময়ের মধ্যে সমন্বয় করবে।’

নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এটাই হবে আন্তঃব্যাংক ডলার বিনিময় হার। এতে আমদানিকারকের খরচ কমবে বলে মনে করছেন ব্যাংক কর্মকর্তারা।

ডলার নিয়ে প্রায় এক মাস পর বৈঠক করল এই দুই সংগঠন। এর আগে সবশেষ ২৬ সেপ্টেম্বর বৈঠকে প্রবাসী আয়ে ডলার প্রতি ৫০ পয়সা কমিয়ে ১০৭ টাকা ৫০ পয়সা করা হয়। ওই বৈঠকে প্রবাসী আয় ছাড়া রপ্তানি ও আমদানির ক্ষেত্রে ডলারের দরে কোনো পরিবর্তন করা হয়নি।

অর্থনীতি

বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের ফ্লাইওভারের একাংশ পরীক্ষামূলক চালু হচ্ছে চলতি সপ্তাহে। উত্তরার হাউজ বিল্ডিং এলাকা থেকে টঙ্গী রেল স্টেশন পর্যন্ত দুই কিলোমিটার অংশ যান চলার জন্য প্রস্তুত। আর ওই ফ্লাইওভারের টঙ্গীর চেরাগ আলী পর্যন্ত অংশ আগামী বছরের মে মাসে চালু করা হতে পারে।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গাজীপুরের জয়দেবপুর পর্যন্ত ২০ দশমিক ৫০ কিলোমিটার পথ। এটি উত্তরা, টঙ্গী, গাজীপুর এবং বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের সব জেলার মানুষের চলাচলের প্রধান সড়ক। এ ছাড়া কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও বৃহত্তর সিলেট অঞ্চল এবং উত্তরবঙ্গের কিছু যানবাহন এ সড়ক ব্যবহার করে। এ সড়কের যানজট কমিয়ে নির্বিঘ্নে চলাচল নিশ্চিত করতে বিআরটি প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয় সরকার। পরিকল্পনায় ছিল, হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে গাজীপুরের জয়দেবপুর পর্যন্ত সড়কের মাঝ দিয়ে জোড়া লাগানো বিশেষায়িত বাস চলাচল করবে। এসব বাসে ঘণ্টায় ২০ হাজার যাত্রী পরিবহণের চিন্তা থেকে এত আয়োজন করা হয়। ২০১২ সালে শুরু হওয়া এ প্রকল্পের উদ্বোধনের লক্ষ্য ছিল ২০১৬ সালে।

কিন্তু তখন উদ্বোধন তো দূরের কথা, পুরোপুরিভাবে কাজই শুরু করতে পারেনি ঢাকা বিআরটি কর্তৃপক্ষ। এরপর কেটে গেছে ৬ বছর। এ সময়ে প্রায় ৮২ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। এর মধ্যে আসন্ন ডিসেম্বরে প্রকল্পের পুরো কাজ শেষ করে বিশেষায়িত বাস চালুর ঘোষণা দেয় বিআরটি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এখন এসে দেখা যাচ্ছে, প্রকল্পের চার কিলোমিটারের একটি ফ্লাইওভারের কাজই ঘোষিত সময়ে শেষ করতে পারছে না তারা। এখন অর্ধেক পরীক্ষামূলক চালু করতে চাইছে। এ প্রকল্পে এটি ছাড়াও ৫টি ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হচ্ছে-সেগুলোর মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ১ কিলোমিটার। অবশ্য, প্রত্যাশা পূরণ না করলেও ‘ঢাকা-গাজীপুরের দুঃখ খ্যাত’ ফ্লাইওভারের অংশবিশেষ চালু বিআরটি প্রকল্পের এক ধাপ অগ্রগতি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে ঢাকা বিআরটি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, এই সপ্তাহে উত্তরার হাউজ বিল্ডিং থেকে টঙ্গীর রেল স্টেশন পর্যন্ত ২ কিলোমিটার ফ্লাইওভারের পরীক্ষামূলক চালু করা হবে। এ বিষয়টি নিয়ে ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে আলোচনা চলছে। পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করেই এটি চালু করা হবে, ইতোমধ্যে পুলিশের পক্ষ থেকে এটি চালু হলে সড়কে বিশৃঙ্খলা বাড়তে পারে বলে শঙ্কার কথা জানানো হয়েছে। সে বিষয়গুলো বিবেচনা করেই আমরা পরীক্ষামূলকভাবে ফ্লাইওভারের একাংশ চালু করব।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গণপরিবহণ বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) সাবেক নির্বাহী পরিচালক ড. এসএম সালাহ উদ্দিন বলেন, যেহেতু বিআরটি প্রকল্পের ফ্লাইওভারের অর্ধেক অংশের কাজ শেষ হয়েছে। সেটা চালু করা যেতে পারে। তাহলে কোনো অসুবিধা থাকলে সেটা সংশোধন করে নিতে পারবে কর্তৃপক্ষ, ফেলে রেখে তো লাভ নেই। ফ্লাইওভারের ওপরে বাস থেকে নেমে র‌্যাম দিয়ে যাত্রীরা নিচে নেমে যেতে পারবে। তবে ফ্লাইওভার চালুর পাশাপাশি নিচের সড়কগুলোও ভালোভাবে সংস্কার করতে হবে। তাহলে কার্যকর সুফল মিলবে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, সংশোধিত সময় অনুযায়ী আসন্ন ডিসেম্বরে এ বিআরটি প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা। যদিও প্রকল্পের কাজ এই সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য বিআরটি প্রকল্পের মেয়াদকাল ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করার জন্য প্রস্তাব পাঠিয়েছে ঢাকা বিআরটি কোম্পানি। সরকার বিআরটি প্রকল্প অনুমোদন দেয় ২০১২ সালে। প্রথম ব্যয় ধরা হয়েছিল ২ হাজার ৪০ কোটি টাকা। এখন ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থায়ন করছে-বাংলাদেশ সরকার, গ্লোবাল এনভায়রনমেন্টাল ফ্যাসিলিটি, ফরাসি উন্নয়ন সংস্থা-এএফডি, এশীয় উন্নয়ন সংস্থা-এডিবি। বিআরটি প্রকল্পে দুটি বিশেষায়িত রুটে ১০০টি আধুনিক বাস চলাচল করবে। ৭০টি রুটকে ৭টি রুটে এনে একটি কোম্পানির অধীনে এসব বাস পরিচালনার পরিকল্পনা রয়েছে। বাসের বিষয়টি নিয়ে এখন ধূম্রজাল তৈরি হয়েছে। কোন বাস কেনা হবে, কবে কেনা হবে নাকি বিআরটিসির বাসে চলবে সেসব নিয়ে রয়েছে মিশ্র আলোচনা। বিআরটির এ ধরনের কার্যক্রমে হতাশ নগরবাসী ও সংশ্লিষ্টরা।

অর্থনীতি

বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবার ৩৬ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে গেছে, যা ২৮ মাসের মধ্যে যা সর্বনিম্ন।

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ব্যাংকগুলোর কাছে ৬০ মিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হয়েছে। আর এতেই রিজার্ভ কমে দাঁড়িয়েছে ৩৫ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলারে।

এ নিয়ে চলতি অর্থবছর মোট সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।এর আগে ২০২০ সালের জুনে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩৬ বিলিয়ন ডলার।

দেশের মধ্যে ডলার সংকট চরমে। এ সংকট দূর করতে রিজার্ভ থেকে ডলার সরবরাহ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর এতেই টান পড়ছে রিজার্ভে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩২ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার। এরপর তা ধারাবাহিকভাবে বেড়ে ২০২১ সালের জুনে ৪৬ দশমিক ৩৯ বিলিয়নে উন্নীত হয়। একই বছরের আগস্টে রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়ায় রেকর্ড ৪৮ বিলিয়ন ডলার।

এরপর করোনা মহামারির লকডাউন উঠে দেশে দেশে অর্থনীতি গতিশীল হতে শুরু করলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বাড়তে থাকে, যা বাড়িয়ে দেয় পণ্যমূল্যও। এর সঙ্গে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি জাহাজ খরচ বাড়লে পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী হতে থাকে। এরমধ্যে গত ফেব্রয়ারিতে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরু হলে বাংলাদেশেও বৈশ্বিক বাণিজ্যের দায় মেটাতে চাপে পরে।

আমদানি ব্যয় বাড়ার বিপরীতে রপ্তানি ও রেমিটেন্স সেভাবে না বাড়লে ডলারের মজুদে টান পড়ে। এতে করে যুদ্ধ শুরুর চার মাস পর গত জুনে রিজার্ভের পরিমাণ ৪১ দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ৫৬৭ কোটি ২৭ লাখ ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছরের একই সময়ে (প্রথম তিন মাস) যেখানে এসেছিল ৫৪০ কোটি ৮৩ লাখ ডলার।

তারও আগে ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে রেমিট্যান্সে এসেছে ৬৭১ কোটি ৩২ লাখ ডলার। করোনার মধ্যেও ২০২০-২১ অর্থবছরে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।

অর্থনীতি

ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা রক্ষায় আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক খেলাপি ঋণের ক্ষেত্রে বিশেষ ছাড় দেওয়ার নীতি থেকে সরে আসার সুপারিশ করেছে। একই সঙ্গে ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে শিথিলতা থেকেও সরে আসার প্রস্তাব দিয়েছে। এসব খাতে অব্যাহত ছাড় দিলে একটি পর্যায়ে ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা হারাবে উদ্যোক্তারা।

আর ব্যাংকে তারল্য কমে যাবে। এতে ব্যাংকগুলো ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়বে। আর্থিক সংকটে পড়ে কোনো কোনো দুর্বল ব্যাংক আমানতকারীদের টাকা পরিশোধেও ব্যর্থ হতে পারে।

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (ইন্টারন্যাশনাল মনিটারি ফান্ড বা আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংক পৃথক প্রতিবেদনে এসব কথা বলেছে। বিশ্বব্যাংকের সম্প্রতি প্রকাশিত দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক প্রতিবেদন এবং গত জুলাইয়ে বাংলাদেশে সফরে আসা আইএমএফের প্রতিনিধি দল দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে যে প্রতিবেদন পাঠিয়েছে তা থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

এদিকে আইএমএফ মিশনের একটি অংশ আগামী ২৭ অক্টোবর রাতে ঢাকায় আসছে। মিশনের বাকি সদস্যরা ২৯ অক্টোবরের মধ্যে আসবেন। তারা ৩০ অক্টোবর থেকে বৈশ্বিক মন্দা মোকাবিলায় সরকারকে ঋণ দেওয়ার ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করবে। এ আলোচনা চলবে আগামী ৮ নভেম্বর পর্যন্ত। ৯ নভেম্বর মিশনের ঢাকা ত্যাগের কথা রয়েছে। ওই সময়ে মিশনটি অর্থ মন্ত্রণালয়, অর্থনৈতিক সম্পদ বিভাগ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে আলোচনা করবে। এবারে তাদের আলোচনার প্রধান বিষয় হচ্ছে-ভর্তুকি কমানো, রাজস্ব খাত সংস্কার, ব্যাংকিং খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, খেলাপি ঋণের নীতিতে পরিবর্তন, মুদ্রার বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া।

ইতোমধ্যে সরকার আইএমএফের ঋণ পেতে বড় একটি শর্ত পালন করেছে। সেটি হচ্ছে জ্বালানি তেল ও সারের দাম বাড়িয়ে ভর্তুকি কিছুটা কমিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার আংশিকভাবে হলেও বাজারের ওপর ছেড়ে দিয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে দুই ধরনের হিসাব তৈরি করছে। সাধারণ বা গ্রস ও প্রকৃত বা নিট হিসাব।

এর মধ্যে গ্রস রিজার্ভের হিসাব প্রকাশ করছে। কিন্তু নিট হিসাব প্রকাশ করছে না। তবে খেলাপি ঋণ নীতিতে পরিবর্তন ও ঋণ পরিশোধে ছাড়ের বিষয়ে নতুন কোনো সিন্ধান্ত নেয়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদের হার চলতি বছরে তিন দফা বাড়ালেও বাজারে ঋণের সুদের হার বাড়ায়নি। আইএমএফ ঋণের সুদের হারের সীমা তুলে নেওয়ার সুপারিশ করেছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণের সর্বোচ্চ সীমা ৯ শতাংশ ও আমানতের সীমা ৬ শতাংশ বেঁধে দিয়েছে। ব্যাংকগুলোও এ সীমা তুলে দেওয়ার দাবি করেছে।

বৈশ্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় আইএমএফের কাছে ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ চেয়েছে। এ বিষয়ে প্রাথমিক আলেঅচনা করতে গত ১২ জুলাই আইএমএফের একটি মিশন ঢাকায় আসে। তারা ২২ জুলাই ঢাকা ত্যাগ করে। ওই সময়ে তারা অর্থ মন্ত্রণালয়, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক ও এনবিআরের সঙ্গে বৈঠক করে। ওই আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আইএমএফ একটি প্রতিবেদন পাঠিয়েছে ঢাকায়। ওই প্রতিবেদনে ব্যাংকিং খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় খেলাপি ঋণের নীতিতে পরিবর্তন আনার কথা বলা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মান অনুয়ায়ী কোনো ঋণের কিস্তি পরিশোধের শেষ দিন থেকে তিন মাস অতিক্রম হলেই তাকে খেলাপি হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশে এটি ছয় মাস করা হয়েছে। এতে খেলাপি ঋণ কম হচ্ছে। খেলাপিদের ছাড় দেওয়া হচ্ছে, যা ব্যাংকিং খাতের জন্য স্বস্তিদায়ক নয়। একই সঙ্গে ঋণ পরিশোধেও ছাড়ও দেওয়া হচ্ছে। এতে ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট দেখা দিতে পারে। যা ব্যাংকগুলোকে দুর্বল করে দিতে পারে বলে তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।

এদিকে বিশ্বব্যাংকের সম্প্রতি প্রকাশিত এশিয়া বিষয়ক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে নিয়েও একই ধরনের মন্তব্য করা হয়েছে। এতে তারা বলেছে, ব্যাংকের ঋণ পরিশোধে গ্রাহকের অব্যাহতভাবে ছাড় দেওয়া হলে ব্যাংকর সম্পদের বা ঋণের মান কমে যাবে। গ্রাহকরা ঋণ পরিশোধের অনাগ্রহী হয়ে উঠবেন। এতে কোন কোন ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা অতিমাত্রায় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। আর্থিক খাতে সম্পদের মানে বড় ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে, যা আর্থিক খাতকে বড় দুর্বলতার দিকে নিয়ে যাবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে। এ কারণে বাংলাদেশে আর্থিক খাতে ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের পরিমাণ বেড়ে গেছে, যা আর্থিক খাতকে ঝুঁকিতে ফেলেছে। এছাড়া ঋণ আদায় কিছু খাতে স্থগিত থাকায়ও খেলাপি ঋণ বাড়ছে। খেলাপি ঋণের প্রকৃত তথ্য প্রকাশ পাচ্ছে না। অনেক তথ্য আড়ালে থেকে যাচ্ছে। বিশেষ বিবেচনায় পুনর্গঠন করা ঋণও এখন খেলাপি হয়ে পড়েছে, যা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সূত্র জানায়, করোনার পর ২০২০ সাল থেকে ঋণ পরিশোধে ছাড় দেওয়া হচ্ছে। ২০২১ সাল পর্যন্ত ছাড় দেওয়া হয়। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে বৈশ্বিক মন্দা আরও প্রকট হয়। ফলে উদ্যোক্তাদের দাবির মুখে ঋণ পরিশোধে বিভিন্ন খাতে ছাড় দেওয়া হয়, যা আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বহাল থাকবে। ফলে তিন বছর ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কাছ থেকে ঋণ আদায় করতে পারছে না। গ্রাহকদের মধ্যে ঋণ পরিশোধে চাপ না থাকার কারণে গ্রাহকও অনেকটা শিথিলতা দেখা পারেন, যা পরবর্তী ঋণ পরিশোধে গ্রাহকদের সক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে।

এদিকে ব্যাংক ও নন-ব্যাংকিং আর্থিক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে। গত জুন পর্যন্ত ব্যাংকে খেলাপি ঋণ ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে আদায় অযোগ্য ঋণ ৮৯ শতাংশ। নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে খেলাপি ঋণ ১৬ হাজার কোটি টাকা।

অর্থনীতি

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব মোকাবিলা করতে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে দুই ধরনের ঋণ সহায়তা পাবে বলে আভাস দেওয়া হয়েছে। এর একটি হচ্ছে, মন্দার শুরুতে আইএমএফ’র কাছে সরকার যে ৪৫০ কোটি ডলারের ঋণ চেয়েছে সেটি এবং অন্যটি আইএমএফ’র নতুন গঠিত সহনশীল ও টেকসই ট্রাস্ট ফান্ড থেকে।

শুক্রবার প্রকাশিত আঞ্চলিক অর্থনীতিবিষয়ক আইএমএফ’র প্রতিবেদনে এ আভাস দেওয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এই দুটি ঋণই বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বৈশ্বিক মন্দার ধাক্কা মোকাবিলা করতে দৃঢ়ভাবে সহায়তা করবে। রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের প্রভাব এবং পণ্যের উচ্চমূল্য করোনা মহামারি থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের গতি ম্লান করে দিয়েছে। এ কারণে সংকটের শুরু থেকেই সরকার আইএমএফ’র কাছে আগাম ঋণ সহায়তা চেয়েছে। আইএমএফ’র এ ঋণ সরকারের বৈদেশিক ভারসাম্যকে শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যাবে। একইসঙ্গে দেশটি বৈশ্বিক মন্দা মোকাবিলায় সহনশীল ও টেকসই ট্রাস্ট ফান্ড থেকেও ঋণ সুবিধা পাবে। ফলে দেশের বৈদেশিক ভারসাম্য মোকাবিলা করা অনেকটা সহায়ক হবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের জন্য এখন বড় আকারের জলবায়ুর নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলা করার জন্য তহবিল দরকার। কেননা এ খাতে দেশটির অনেক বিনিয়োগ প্রয়োজন। আরও বলা হয়, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশে নেমে আসবে। প্রতিবেশী দেশ ভারতের হবে ৬ দশমিক ১ শতাংশ। দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি হারও বাংলাদেশের নিচে থাকবে।

দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনে অর্থনীতিতে বড় মন্দা আসবে। কেননা তাদের হাউজিং খাত ব্যাপকভাবে বিকশিত হয়েছিল। এখন এতে মন্দার টান পড়েছে। ফলে হাউজিংয়ে মন্দার ঢেউ চীনের সব খাতেই পড়বে। এ কারণে তাদের প্রবৃদ্ধিও কমে যাবে।

মালদ্বীপের উন্নয়নে নেওয়া উচ্চ ঋণের কারণে দেশটি ঝুঁকিতে পড়বে। শ্রীলংকা এখন গুরুতর একটি অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা করছে। এই সংকট থেকে উত্তরণে তারা আইএমএফ’র সঙ্গে একটি ঋণ চুক্তিতে পৌঁছেছে। ফলে অর্থনীতি ২০২৪ সাল থেকে স্থিতিশীল হবে বলে প্রতিবেদনে উল্লে­খ করা হয়।

অর্থনীতি

জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া নরসিংদীর পলাশের ঘোড়াশাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫ নাম্বার ইউনিটটিতে ৭ দিন পর বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে বলে জানায় বিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ।

সোমবার (১০ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৭টা থেকে ইউনিটটির যান্ত্রিক সমস্যা সমাধান করে বিদ্যুৎ উৎপাদন চালু করা হয়েছে বলে জানান ঘোড়াশাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম।

গত ৪ অক্টোবর দুপুর ২টা ৫ মিনিটে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ বিপর্যয় দেখা দিলে হঠাৎ করে ঘোড়াশাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৪ ও ৫ নাম্বার ইউনিট দুটি বন্ধ হয়ে যায়। পরে এক ঘণ্টার মধ্যে ৩৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৪ নাম্বার ইউনিটটি চালু করা গেলেও ২১০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৫ নাম্বার ইউনিটটি চালু করা যায়নি।

বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী আরও জানান, ৫ নাম্বার ইউনিটটির সেফটি ভাল্ব ফেটে যাওয়ায় ইউনিটটি চালু করা সম্ভব হয়নি। যান্ত্রিক সমস্যা নিরসন করে সোমবার সন্ধ্যার পর থেকে এর বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে।

এদিকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণ খুঁজতে ৫ অক্টোবর ঘোড়াশাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিদর্শনে যান পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) ৬ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি। পিজিসিবির নির্বাহী পরিচালক ইয়াকুব এলাহী চৌধুরীর নেতৃত্বে ৬ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি ঘোড়াশাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কন্ট্রোল রুম প্রায় ৩ ঘণ্টা পরিদর্শন করে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিভিন্ন মেশিনারি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন।