অর্থনীতি

গত বছর ডিসেম্বরে মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে কর্মী পাঠানোর বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সই করে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়।

প্রায় চার বছর বন্ধ থাকার পর আবারও মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো শুরু করছে বাংলাদেশ।

সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ৫৩ জন কর্মী নিয়ে প্রথম ফ্লাইট ঢাকা থেকে রওনা হবে বলে জানিয়েছেন জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) মহাপরিচালক শহীদুল আলম।

তিনি বলেন, “ভালো খবর হচ্ছে, আজকে (সোমবার) রাতে প্রথম ফ্লাইট যাচ্ছে। মালয়েশিয়ান এয়ার এশিয়ার ফ্লাইটে যাবেন তারা।”

মালয়েশিয়া সরকার তাদের পাঁচটি খাতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে ‘জিটুজি প্লাস’ পদ্ধতিতে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে রাজি হওয়ার পর ২০১৬ সালে ঢাকায় দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়।

পাঁচ বছর মেয়াদী এই সমঝোতা স্মারকের আওতায় লোক পাঠানোর অনুমতি দেওয়া হয় ১০টি জনশক্তি রপ্তানিকারক এজেন্সিকে।

কিন্তু অভিযোগ ওঠে প্রবাসী এক বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর নেতৃত্বে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগসাজশে এজেন্সিগুলোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট’ করে দুই বছরে শ্রমিকদের ২০০ কোটি রিঙ্গিত হাতিয়ে নিয়েছে।

এরপর ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে নতুন করে বাংলাদেশি কর্মীদের আর ভিসা দেয়নি মালয়েশিয়া। তবে আগে যারা ভিসা পেয়েছিলেন, তারা পরেও মালয়েশিয়া যাওয়ার সুযোগ পান।

সরকারের তরফে নানা দেন-দরবার আর করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে শ্রমিক সঙ্কটের প্রেক্ষাপটে গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়ার সিদ্ধান্ত অনুমোদন দেয় মালয়েশিয়া।

এরপর গত বছরের ডিসেম্বরে মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে কর্মী পাঠানোর বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সই করে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়।

গত জুনের শুরুতে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী এম সারাভানান ঢাকা সফরের সময় প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেছিলেন, জুনের মধ্যেই কর্মী যাবে মালয়েশিয়ায়। কিন্তু তার কথা শেষ পর্যন্ত রক্ষা হয়নি।

মালয়েশিয়ায় মোট কত কর্মী যেতে পারে- এ প্রশ্নের উত্তরে ওই সময় ইমরান আহমদ বলেছিলেন, সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী পাঁচ বছরে ৫ লাখ কর্মী নেওয়ার কথা। এর মধ্যে এ বছরই ২ লাখ নেওয়ার কথা।

সেসময় তিনি মন্তব্য করেন, “আমাদের তো মনে হচ্ছে, এই বছরের মধ্যেই পাঁচ লাখ যাবে।”

অর্থনীতি

বর্তমানে বিশ্বের প্রায় সব দেশে জ্বালানি তেলের দামের ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে। বাস্তবতার কারণে বাংলাদেশেও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। হঠাৎ করে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি নিয়ে নানা সমালোচনা চলছে।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ৮০ টাকা থেকে ১৩৯ টাকা ছাড়িয়ে যায়। মার্চে তা বেড়ে ১৫৬ দশমিক ৩ ডলারে গিয়ে পৌঁছে। তেলের এ দাম বৃদ্ধি ছিল ১৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। তখন আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গেই দেশে তেলের দাম বাড়ানো হয়নি।

ফলে ছয় মাসে (ফেব্রুয়ারি-জুলাই) জ্বালানি তেল বিক্রয়ের (সব পণ্য) আট হাজার ১৪ কোটি ৫১ লাখ টাকা লোকসান দিয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। আন্তর্জাতিক তেলের বাজারের এমন পরিস্থিতির কারণে বিপিসির আমদানি কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে মূল্য সমন্বয় করা হয়। শুধু বাংলাদেশে নয়, আমাদের আশপাশের প্রতিবেশী দেশগুলোতেও দাম বাড়ানো হয়েছে।

বাংলাদেশে নতুন ঘোষণায় ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ৮০ থেকে ১১৪ টাকা করা হয়েছে। অকটনের লিটার ৮৯ টাকা থেকে ১৩৫ টাকা এবং পেট্রলের লিটার ৮৬ টাকা থেকে ১৩০ টাকা করা হয়েছে। ২২ মে ভারতে ডিজেলের মূল্য প্রতি লিটার ১১৪ দশমিক ৯ টাকা এবং পেট্রলের লিটার ১৩০ দশমিক ৪২ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

ভারতের তুলনায় বাংলাদেশে ডিজেলের দাম লিটারপ্রতি ৩৪ দশমিক ৯ টাকা এবং পেট্রল লিটারপ্রতি ৪৪ দশমিক ৪২ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছিল। এ ছাড়া ভারতের তুলনায় বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের মূল্য কম থাকায় পাচারেরও আশঙ্কা ছিল।

বর্তমানে হংকংকে লিটারপ্রতি ডিজেলের দাম (বাংলাদেশি টাকায়) ২৬০ দশমিক ৭৫ টাকা ও অকটেনের দাম ২৮৪ দশমিক ৭২ টাকা, সিঙ্গাপুরে ডিজেলের লিটারপ্রতি দাম ১৮৯ দশমিক ৮৭ টাকা ও অকটেনের লিটারপ্রতি দাম ১৯০ দশমিক ৪৫ টাকা, পাকিস্তানের ডিজেলের লিটারপ্রতি দাম ১০৩ দশমিক ৭১ টাকা ও অকটেনের দাম ১০৬ দশমিক ৬৪ টাকা, নেপালের ডিজেলের লিটারপ্রতি দাম ১২৭ দশমিক ৮২ টাকা ও অকটেনের লিটারপ্রতি দাম ১৩৪ দশমিক ৫৫ টাকা, চীনে ডিজেলের লিটারপ্রতি দাম ১১৮ দশমিক ৬৩ টাকা ও অকটেনের দাম ১৩১ দশমিক ৯৯ টাকা, ভারতে ডিজেলের লিটারপ্রতি দাম ১১০ দশমিক ৯৫ টাকা ও ১২৩ দশমিক ৬৫ টাকা।

জ্বালানি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছর বাংলাদেশে ১৭ বার ডিজেলের দাম সমন্বয় করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৩ বার বেড়েছে আর চারবার কমেছে। এর মধ্যে বিএনপির শাসনামলে বেড়েছে (২০০১-২০০৬ মেয়াদ) বেড়েছে ৯ বার। তবে বর্তমান সরকারের সময়ে জ্বালানি তেলের দাম একাধিকবার কমানোর নজির রয়েছে।

২০১৬ সালের ২৪ এপ্রিল জ্বালানি তেলের দাম কমানো হয়েছিল। এর আগে ২০০৯ সালের ১৩ জানুয়ারি ডিজেল ও কেরোসিনের দাম কমানো হয়েছিল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সে অনুযায়ী জ্বালানি তেলের মূল্য পুনঃবিবেচনা করা হতে পারে।

অর্থনীতি

দেশে অস্থির হয়ে উঠেছে ডলারের বাজার। খোলা মার্কেটে তা সর্বোচ্চ ১১২ টাকা করে বিক্রি হতে দেখা গেছে।

ডলারের এই বাজার নিয়ন্ত্রণে ও স্বাভাবিক রাখতে এবার মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ১০টি পরিদর্শক দল বাণিজ্যিক ব্যাংক, মানি এক্সচেঞ্জ হাউস ও খোলাবাজার পরিদর্শন শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম।

জানা গেছে, দিনের শুরুতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তদন্ত শুরু করলে বাজারের পরিস্থিতি পাল্টে যায়। মানি এক্সচেঞ্জগুলোতে হিসাবের বাইরে খোলাবাজারের মতো আগে ডলার বেচাকেনা হতো। সেটি বন্ধ হয়ে যায়। তারা ক্যাশ রেজিস্টারের মাধ্যমে ডলার বেচাকেনা করেছে। ফলে বেশির ভাগ মানি এক্সচেঞ্জই ১০৫ টাকায় ডলার কিনে ১০৮ টাকার মধ্যে বিক্রি করেছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম জানান, সম্প্রতি ডলারের বিনিময় হার নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় বিষয়টি সরেজমিনে দেখবে বাংলাদেশ ব্যাংক। মানি চেঞ্জাররা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়মকানুন মানছেন কিনা, তা জানতে অভিযান চালানো হচ্ছে। এজন্য নির্ধারিত টিম কাজ করছে। বাজার স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এই পরিদর্শন চলবে।

জানা গেছে, ডলার কারা কিনছে, কোনো যৌক্তিক কারণ আছে কিনা, প্রতিদিন কেমন ডলার কেনা হচ্ছে, এর বিপরীতে বিক্রি কেমন, দর কত—এসব তথ্য সংগ্রহ করছে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শক দল। একইসঙ্গে ডলার বেচাকেনায় নিয়ম মানা হচ্ছে কিনা, সে বিষয়গুলোও খতিয়ে দেখছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এদিকে ব্যাংক ও মানি এক্সচেঞ্জগুলোকে নগদ ডলার বিক্রিতে কড়াকড়ি আরোপ করতে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এখন সরকারি অনুমোদন ও বিদেশে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছাড়া কাউকে নগদ ডলার দিচ্ছে না। বেশির ভাগ ব্যাংকেই নগদ ডলারের প্রবাহ কম। ফলে অনেকেই চাহিদা অনুযায়ী ডলার পাচ্ছেন না।

উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমছে কিছুদিন ধরেই। এক মাসের ব্যবধানে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে ৫ শতাংশের বেশি। আর এক বছরের ব্যবধানে কমেছে ১০ দশমিক ৮০ শতাংশ। আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে এক ডলারের জন্য খরচ করতে হয়েছে ৯৪ টাকা ৭০ পয়সা, তবে সব ব্যাংকেই নগদ ডলারের দাম বেড়ে ১০০ টাকার ওপরে উঠেছে। ১০৫ থেকে ১০৮ টাকায় বিক্রি করছে কোনো কোনো ব্যাংক। গত মঙ্গলবার কার্ব মার্কেট বা খোলাবাজারে ডলারের দর সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ১১২ টাকায় বেচাকেনা হয়।

অর্থনীতি

মোংলা বন্দর দিয়ে বিদেশে রপ্তানি শুরু হয়েছে ঢাকার গার্মেন্টস পণ্য। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর, এই প্রথম বারের মতো ঢাকার বিভিন্ন গার্মেন্টস থেকে কনটেইনারে করে মোংলা বন্দরে আসা গার্মেন্টস পণ্যের একটি চালান আজ বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) সকাল ১১ টায় পোল্যান্ডের উদ্দেশ্যে মোংলা বন্দর ত্যাগ করেছে।

মোংলা বন্দর কতৃপক্ষের সচিব কালাচাঁদ সিংহ এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ঢাকা, গাজীপুর, সাভার ও নারায়ণগঞ্জের ফকির এপ্যারেলস লি:, উইন্ডি এপ্যারেলস লি:, কে.সি লিনজেরিয়া লি:, আর্টিস্টিক ডিজাইন লি., নিট কনসার্ন লি., মেঘনা নিট কম্পোসিট লি., শারমিন এপ্যারেলস লিমিটেডসহ মোট ২৭ টি কারখানার ১৭ কনটেইনার গার্মেন্টস পণ্য পদ্মা সেতু হয়ে মোংলা বন্দর জেটিতে আসে। পণ্যগুলো মোংলা বন্দরের ৮ নম্বর জেটিতে অবস্থানরত পানামা পতাকাবাহী এমভি মার্কস নেসনা জাহাজে তোলা হয়। এসব গার্মেন্টস পণ্যের মধ্যে রয়েছে বাচ্চাদের পোশাক, জার্সি ও কার্ডিগান, টি-শার্ট, ট্রাউজারসহ বিভিন্ন সমগ্রী। এসব পণ্য বোঝাই বিদেশি জাহাজ মার্কস নেসনা আজ বৃহস্পতিবার সকালে মোংলা বন্দর থেকে পোল্যান্ডের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছে।

মোংলা বন্দরের পরিচালক (ট্রাফিক) মোস্তফা কামাল বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর সবচেয়ে বড় চালান হিসেবে পোল্যান্ডে যাচ্ছে ঢাকার এসব গার্মেন্টস পণ্য। এর আগে পদ্মায় ফেরি সার্ভিসকালে যৎসামান্য পণ্য বিদেশে রপ্তানি হয়েছে এ বন্দর দিয়ে।

মূলত পদ্মার ফেরি জটিলতার কারণে ঢাকার এসব গার্মেন্টস পণ্যের বেশিরভাগই চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা হতো।

পদ্মা সেতুর সুবাদে মোংলা বন্দর দিয়ে গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানিতে ঢাকার ব্যবসায়ীরা আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর, ঢাকা থেকে মোংলা বন্দরের দূরত্ব এখন ১৭০ কিলোমিটার। আর ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের দূরত্ব ২৬০ কিলোমিটার। মোংলা বন্দরে জাহাজ হ্যান্ডেলিং দ্রুত ও নিরাপদ হওয়ায় এবং ঢাকার সঙ্গে দূরত্ব কমে যাওয়ায় সময় ও অর্থ সাশ্রয়ে গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা মোংলা বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানীতে আগ্রহী হচ্ছেন।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ মুসা বলেন, মোংলা বন্দর হয়ে এসব গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানির বিষয়টি স্মরণীয় ঘটনা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর, এক মাসের মধ্যে এ সেতু হয়ে মোংলা বন্দরের মাধ্যমে গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানির নবযাত্রা শুরু হলো। ভবিষ্যতে আমদানি-রপ্তানির এ ধারা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

অর্থনীতি

এর মধ্যে আইএমএফের কাছ থেকেও ৪৫০ কোটি ডলার চেয়েছে সরকার।

কোভিড-১৯ মহামারী অভিঘাতের পর ইউক্রেইন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে অস্থির হয়ে উঠা অর্থনীতি সামাল দিতে বিশ্ব ব্যাংক এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের কাছে ২০০ কোটি ডলার চেয়েছে সরকার।

এর মধ্যে এডিবির কাছ থেকে ১০০ কোটি ডলার এবং বিশ্ব ব্যাংকের কাছে ৭৫ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা হিসেবে চাওয়া হয়েছে। বাকি ২৫ কোটি ডলার বিশ্ব ব্যাংকের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য গঠিত তহবিল থেকে পাওয়ার আশা করা হচ্ছে।

এর মধ্যে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফের কাছ থেকেও ৪৫০ কোটি ডলার চেয়েছে সরকার।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) বিশ্ব ব্যাংক অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. আব্দুল বাকী বলেন, ইউক্রেইন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক অস্থিরতা কাটিয়ে উঠতে বিশ্ব ব্যাংকের কাছে বাজেট সহায়তা চাওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, “আমরা আগামী তিন অর্থবছরে ২৫ কোটি টাকা করে এই সহায়তা পাওয়ার পরিকল্পনা বিশ্ব ব্যাংকের কাছে প্রস্তাব দিয়েছি। বিশ্ব ব্যাংক জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবেলায় সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য একটি তহবিল গঠন করেছে। সেই তালিকায় বাংলাদেশও প্রায় ২৫ কোটি ডলারের মতো সহয়তা পেতে পারে।”

আগামী অক্টোবরে বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে। সেই বৈঠকেই নতুন বাজেট সহায়তার আকার ঠিক হতে পারে।

এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে কোভিড-১৯ মহামারীর অভিঘাত মোকাবেলায় ৫০ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তা পেতে বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি করেছিল সরকার। তার মধ্যে ২৫ কোটি ডলার ছাড় হয়েছে। আর বাকি ২৫ কোটি ডলার চলতি অর্থবছরে ছাড় হবে।

ইআরডির এডিবি উইংয়ের অতিরিক্ত সচিব পিয়ার মোহাম্মদ বলেন, যুদ্ধের কারণে বিশেষ করে বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতে সম্ভাব্য অভিঘাত মোকাবেলায় এডিবির কাছ থেকে ১০০ কোটি ডলার চাওয়া হয়েছে।

গত এপ্রিল মাসেই এই সহায়তা চাওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এখনও এডিবি আমাদের চূড়ান্ত কিছু জানায়নি। আশা করছি, শিগগির এডিবি এ বিষয়ে আমাদের কিছু জানাবে।”

এই ঋণের অর্থ প্রতি অর্থ বছরে ৫০ কোটি অথবা ২৫ কোটি ডলার ছাড় পেতে আলোচনা করবে সরকার।

এর আগে এডিবি কোভিড-১৯ মহামারীর অভিঘাত মোকাবেলায় ৯৪ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা দিয়েছিল।

পিয়ার বলেন, ওই বাজেট সহায়তার আর ২৫ কোটি ডলার ছাড় হওয়া বাকি আছে। চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে ওই অর্থ ছাড় হওয়ার কথা রয়েছে।

অর্থনীতি

খোলাবাজারে ডলারের বিপরীতে টাকার মান আরও কমেছে। একদিনের ব্যবধানে ডলারের দাম বেড়েছে পাঁচ টাকা।

প্রতি ডলার ১১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে বলে জানা গেছে।

মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) ঢাকার মানি চেঞ্জার ও খোলাবাজার থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, মার্কিন ডলারের দাম ঈদের আগে ও পরে ১০০ থেকে ১০২ টাকার মধ্যে বেচাকেনা চলছিল। কিন্তু এখন সেটি বেড়ে ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১১০ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হচ্ছে।

মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ডলারের দাম ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

জামান মানি এক্সচেঞ্জ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী মো. জামান বাংলানিউজকে বলেন, আমরা ডলার ১০৮ টাকা ৮০ পয়সায় কিনে ২০ পয়সা ব্যবধানে ১০৯ টাকা দরে বিক্রি করেছি। তবে সংকটের কারণে ডলারের দাম আজ ১১০ টাকাতেও বিক্রি হয়েছে বলেও তিনি জানান।

মঙ্গলবার সকালে ডলার ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা করে কিনে ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা দরে বিক্রি হয়েছে। দুপুরের পর ডলার ১১০ টাকা থেকে ১১০ টাকা ৫০ পয়সা দরে বিক্রি করেছি বলে জানান রেইনবো মানি এক্সচেঞ্জের পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম।

তিনি জানান, ডলারের সংকটের কারণে কেনা সম্ভব হচ্ছে না। যাও পাওয়া যাচ্ছে, বিক্রেতারা বেশি দাম চাচ্ছেন।

আমদানি পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকিং চ্যানেলেও ডলারের দাম বেড়ে গেছে বলে জানা গেছে। রপ্তানি বাড়লেও প্রবাসী আয় কমেছে। আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে গত বৃহস্পতিবার থেকে প্রতি ডলারের জন্য খরচ করতে হচ্ছে ৯৪ টাকা ৪৫ পয়সা।

গত এক মাসের ব্যবধানে আন্তঃব্যাংকে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে পাঁচ শতাংশের বেশি। আর এক বছরের ব্যবধানে কমেছে ১০ দশমিক ৮০ শতাংশ।

খোলাবাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুই সপ্তাহ আগে ৯৮ টাকা ডলার প্রতি বিক্রি হলেও গত সপ্তাহের শুরুতে এর দাম ওঠে ১০০ টাকা। গত বুধবার ডলার বিক্রি হয় ১০২ টাকা ৬০ পয়সা পর্যন্ত।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২০ সালের জুলাই থেকে গত বছরের আগস্ট পর্যন্ত আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের দাম ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায় স্থিতিশীল ছিল। কিন্তু এরপর থেকে বড় ধরনের আমদানি ব্যয় পরিশোধ করতে গিয়ে ডলার সংকট শুরু হয়। যা এখনও অব্যাহত রয়েছে।

অর্থনীতি

আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার কারণে স্বর্ণের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। দেশের বাজারে ভালো মানের স্বর্ণের দাম ভরিতে ১৩৪১ টাকা বাড়িয়ে ৭৮ হাজার ৫৫৭ টাকা করা হয়েছে।

বুধবার (২৭ জুলাই) থেকে নতুন এই দাম কার্যকর হবে।

মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এম এ হান্নান আজাদের স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, স্বর্ণের দামের পাশাপাশি স্বর্ণের অলংকার কেনার ক্ষেত্রে নূন্যতম মজুরিও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। স্বর্ণের অলংকার বিক্রির সময় ক্রেতাদের কাছ থেকে প্রতি গ্রামে সর্বনিম্ন ৩০০ টাকা (এক ভরিতে ১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) মজুরি নিতে হবে। সে হিসাবে এক ভরি স্বর্ণের অলংকারের মজুরি পড়বে সাড়ে ৩ হাজার টাকা।

বাজুস নির্ধারিত স্বর্ণের নতুন দাম অনুযায়ী, দেশে সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম বেড়ে হবে ৭৮ হাজার ৫৫৭ টাকা। সবশেষ এই মানের স্বর্ণের দাম ছিল প্রতি ভরি ৭৭ হাজার ২১৬ টাকা। সে হিসাবে প্রতি ভরিতে এই মানের স্বর্ণের দাম বেড়েছে ১ হাজার ৩৪১ টাকা।

এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ১ হাজার ২৮৪ টাকা বাড়িয়ে ৭৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ১ হাজার ৩৪১ টাকা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৬৪ হাজার ৫৬০ টাকা। তবে সনাতন পদ্ধতির স্বর্ণের দামের বিষয়ে কোনো তথ্য জানায়নি বাজুস। ফলে মঙ্গলবার পর্যন্ত সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণ ৫২ হাজার ৭২১ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

এদিকে রুপার দামে কোনো পরিবর্তন আসেনি। ফলে ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি রুপার মূল্য এক হাজার ৫১৬ টাকা। ২১ ক্যারেটের রুপার দাম এক হাজার ৪৩৫ টাকা, ১৮ ক্যারেটের এক হাজার ২২৫ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির রুপার দাম ৯৩৩ টাকা করা হয়েছে।

এর আগে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমার পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৭ জুলাই সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম ১ হাজার ১৬৬ টাকা কমিয়ে করা হয়েছে ৭৭ হাজার ২১৬ টাকা। এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ১ হাজার ১৬৭ টাকা কমিয়ে ৭৩ হাজার ৭১৬ টাকা করা হয়েছে। ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরির দাম ৯৩৩ টাকা কমিয়ে ৬৩ হাজার ২১৯ টাকা করা হয়েছে। আর সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৭৫৮ টাকা কমিয়ে করা হয়েছে ৫২ হাজার ৭২১ টাকা। মঙ্গলবার পর্যন্ত এ দামেই দেশের বাজারে স্বর্ণ বিক্রি হয়েছে।

তার আগে গত ৭ জুলাই স্বর্ণের দাম কমিয়েছিলো বাজুস। সে সময় সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম ১ হাজার ১৬৬ টাকা কমিয়ে করা হয় ৭৮ হাজার ৩৮২ টাকা। এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ১ হাজার ৫০ টাকা কমিয়ে ৭৪ হাজার ৮৮৩ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৯৩৩ টাকা কমিয়ে ৬৪ হাজার ১৫২ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৭৫৯ টাকা কমিয়ে ৫৩ হাজার ৪৭৯ টাকা করা হয়।

অর্থনীতি

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন জানিয়েছেন, বাংলাদেশের প্রয়োজন অনুযায়ী ‘যথেষ্ট পরিমাণ ভোজ্যতেল’ পাঠানোর আশ্বাস দিয়েছে ইন্দোনেশিয়া সরকার।

শুক্রবার সুপ্রিমকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি একথা জানান। বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও বৈশ্বিক জ্বালানি সংকটে আমাদের নাগরিক দায়িত্ব’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সংগঠনের সভাপতি ড. মোমেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং এর জেরে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার ফলে খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তায় সমস্যা দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন দেশে খাদ্যের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। আমাদের দেশেও মাঝখানে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ে। আমরা যে সমস্ত দেশ থেকে ভোজ্যতেল আনি… আমি ইন্দোনেশিয়ায় গিয়েছিলাম, তারা আমাদেরকে এখন যথেষ্ট তেল দেবে। সুতরাং ঝামেলা হবে না।’

যুদ্ধের মধ্যে রাশিয়ার ওপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে ‘দূরের দেশ’ হয়েও বাংলাদেশ বিপাকে আছে জানিয়ে ড. মোমেন বলেন, ‘এই নিষেধাজ্ঞার ফলে আমরা খুব ঝামেলায় আছি। সব দেশ, যারা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তারাও কিন্তু ঝামেলায় আছে।’

এ সময় মন্ত্রী বিদ্যুৎ নিয়েও কথা বলেন।দেশে বিদ্যুতের ‘অভাব নেই’, আগাম সতর্কতা হিসেবে সরকার সাশ্রয়ের দিকে গেছে বলে মন্তব্য করেন ড. মোমেন।

তিনি আরও বলেন, ‘আগামীতে যাতে অসুবিধা না হয়। আমাদের সক্ষমতা আছে, তবুও আমরা ইচ্ছা করে নিজেদের সংযম করার জন্য একটা উদ্যোগ নিয়েছি। এই উদ্যোগটা আমাদের সব সদস্যদেরও নেওয়া উচিত।আমাদের সাশ্রয়ী হওয়া দরকার। কারণ আগামীতে কতদিন যুদ্ধ হবে, এর ফলে কী অবস্থা হবে- সেটা আমরা জানি না।’

উল্লেখ্য, চলতি বছরের এপ্রিলের শেষে নিজেদের চাহিদা মেটানোর জন্য অপরিশোধিত পাম অয়েল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয় ইন্দোনেশিয়া। বাংলাদেশে আমদানি করা পাম অয়েলের ৯০ শতাংশই আসে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটি থেকে।অবশ্য কৃষকদের ক্ষতির কথা বিবেচনা করে এক মাস পরে রপ্তানির ওই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় দেশটি।

অর্থনীতি

সকল দপ্তরে বিদ্যুতের ব্যবহার ২৫ শতাংশ কমানোর পাশাপাশি ব্যয় সাশ্রয়ে এবং দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ৮টি সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

ব্যয় সাশ্রয়ে কার্যকর কর্মপন্থা ঠিক করতে বুধবার (২০ জুলাই) বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবদের নিয়ে সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

পরে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউস এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব জনাব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সচিবদের বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো হলো:
১. বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে আনতে সকল মন্ত্রণালয় (মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সকল অফিস) প্রয়োজনীয় কর্মপন্থা নিরুপণ করবে। সরকারি সকল দপ্তরে বিদ্যুতের ২৫% ব্যবহার হ্রাস করতে হবে।

২. জ্বালানিখাতের বাজেট বরাদ্দের ২০ শতাংশ কম ব্যবহারের লক্ষ্যে অর্থ বিভাগ প্রয়োজনীয় পরিপত্র জারি করবে। অর্থাৎ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী যারা তেল ব্যবহার করেন, এখন তাদের বরাদ্দ ২০ শতাংশ কম হবে।

৩. অনিবার্য না হলে শারীরিক উপস্থিতিতে সভা পরিহার করতে হবে এবং অধিকাংশ সভা অনলাইনে আয়োজন করতে হবে।

৪. অত্যাবশ্যক না হলে বিদেশ ভ্রমণ যথাসম্ভব পরিহার করতে হবে।

৫. খাদ্যদ্রব্যসহ নিত্যপণ্যের মূল্য সহনীয় রাখতে বাজার মনিটরিং, মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে মজুদদারির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াসহ অন্যান্য পদক্ষেপ জোরদার করতে হবে।

৬. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী পরিবহনে ব্যক্তিগত যানবাহনের ব্যবহার যৌক্তিকীকরণের লক্ষ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে।

৭. অভ্যন্তরীণ সম্পদ সংগ্রহ বৃদ্ধিকল্পে অর্থ-বছরের শুরু থেকেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে এবং লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এনবিআরকে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

৮. প্রতিটি মন্ত্রণালয় নিজস্ব ক্রয় পরিকল্পনা পুনঃপর্যালোচনা করে রাজস্ব ব্যয় হ্রাসের উদ্যোগ নেবে।

সিদ্ধান্তগুলো তুলে ধরার পাশাপাশি ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, আমার কাছে মনে হচ্ছে, অনেকে আতঙ্কগ্রস্ত হচ্ছে। আসলে আতঙ্কগ্রস্থ হওয়ার কোনো কারণ নেই। ভবিষ্যতে যাতে আমাদের কোনো খরায় (সংকট) পড়তে না হয়, সেজন্য সংযমী হতে এখন থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব জনাব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, পুরো ব্যবস্থাগুলো কিন্তু আমাদের অবস্থা খারাপ, এ রকম কোনো বিষয় নয়। কিন্তু আমরা দেখছি, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মন্দা যাচ্ছে, খাদ্য সংকট দেখা দিচ্ছে, বিভিন্ন দেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আমরা আগেই পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে রাখছি, যাতে এ জাতীয় সমস্যায় না পড়ি।

বৈঠকে কোডিড পরবর্তী অর্থনৈতিক অভিঘাত এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলশ্রুতিতে বিশ্বব্যাপী জ্বালানিসহ নিত্যপণ্যের অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধির কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে সরকারের ব্যয়-সাশ্রয় নীতি কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, তা নিয়ে সচিবরা আলোচনা করেন।

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউস রাজস্ব ব্যয় সংকোচন, উন্নয়ন ব্যয়ের সর্বোত্তম ব্যবহার, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বৃদ্ধি, নিত্যপণ্যের মূল্য সহনশীল পর্যায়ে রাখতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সচিবদের অনুরোধ জানান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মিতব্যয়ী হওয়ার আহ্বানের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি মন্ত্রণালয়গুলোকে অনাবশ্যক ব্যয় পরিহারসহ সব ক্ষেত্রে ব্যয় হ্রাসের নির্দেশনা দেন।

বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আলী আজম, অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব ফাতেমা ইয়াসমিনসহ সংশ্লিষ্ট সচিবরা আলোচনায় অংশ নেন।

অর্থনীতি

পদ্মা সেতু দিয়ে গত ২৬ জুন আনুষ্ঠানিক ভাবে গাড়ি পারাপার শুরুর পর অর্ধশত কোটি টাকার বেশি টোল আদায় হয়েছে। ২৬ জুন থেকে ১৫ জুলাই শুক্রবার পর্যন্ত ২০ দিনে টোল আদায় হয়েছে ৫২ কোটি ৫৫ লাখ ৩৫ হাজার ৬৫০ টাকা।

এ সময় মাওয়া ও জাজিরা প্রান্ত হয়ে যানবাহন পারাপার হয়েছে ৪ লাখ ৫০ হাজার ৩১২টি গাড়ি।

এদিকে স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে প্রথম দিনে টোল আদায় হয়েছে ২ কোটি ৭৪ লাখ ৬৬ হাজার ৮৫০ টাকা। প্রথম দিনে দুই প্রান্ত থেকে যান পারাপার হয়েছে ৬১ হাজার ৮৩১টি। এর মধ্যে মাওয়া প্রান্ত থেকে ৩১ হাজার ১৯৭টি যানবাহন, আর জাজিরা প্রান্ত থেকে ৩০ হাজার ৬৩৯টি যানবাহন সেতু অতিক্রম করে।

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, সেতু চালু হওয়ার পর দিন অর্থাৎ ২৭ জুন টোল আদায় হয় ২ কোটি ১৯ লাখ ২৬ হাজার ৯৫০ টাকা, ২৮ জুন টোল আদায় হয়েছে ১ কোটি ৯৪ লাখ ৫৮ হাজার ১০০ টাকা, ২৯ জুন আদায় হয়েছে ১ কোটি ৯২ লাখ ৯২ হাজার ৮০০ টাকা, ৩০ জুন টোল আদায় হয়েছে ১ কোটি ৯৭ লাখ ৯২ হাজার ৪৫০ টাকা। জুলাই মাসের ১ তারিখে টোল আদায় হয়েছে ৩ কোটি ১৬ লাখ ৫৩ হাজার ২০০ টাকা, ২ জুলাই টোল আদায় হয়েছে ২ কোটি ৩২ লাখ ৭১ হাজার ৬৫০ টাকা, ৩ জুলাই টোল আদায় হয়েছে ১ কোটি ৯১ লাখ ৯৬ হাজার ৩৫০ টাকা, ৪ জুলাই টোল আদায় হয়েছে ১ কোটি ৯৯ লাখ ৬৪ হাজার ৩০০ টাকা, ৫ জুলাই টোল আদায় হয়েছে ২ কোটি ২৬ লাখ ৭৬ হাজার ৭০০ টাকা, ৬ জুলাই টোল আদায় হয়েছে ২ কোটি ৪২ লাখ ৩হাজার ৭৫০ টাকা, ৭ জুলাই টোল আদায় হয়েছে ৩ কোটি ১৬ লাখ ৫১ হাজার ৬৫০ টাকা, ৮ জুলাই টোল আদায় হয়েছে ৪ কোটি ১৯ লাখ ৩৯ হাজার ৬৫০ টাকা, ৯ জুলাই টোল আদায় হয়েছে ২ কোটি ৭৩ লাখ ৮৮ হাজার ৩০০ টাকা, ১০ জুলাই টোল আদায় হয়েছে ১ কোটি ৪৬ লাখ ১০ হাজার ৮৫০ টাকা, ১১ জুলাই টোল আদায় হয়েছে ৩ কোটি ৬০ লাখ ৫৫ হাজার ৪০০ টাকা, ১২ জুলাই টোল আদায় হয়েছে ৩ কোটি ৫৩ লাখ ৬৩৪ হাজার ৪৫০ টাকা, ১৩ জুলাই টোল আদায় হয়েছে ৩ কোটি ৪ লাখ ২৮ হাজার ৪৫০ টাকা, ১৪ জুলাই টোল আদায় হয়েছে ২ কোটি ৯১ লাখ ৪৮ হাজার ৫০ টাকা এবং ১৫ জুলাই ৩ কোটি ৬৫ লাখ ৮১ হাজার ৫০ টাকা টোল আদায় করা হয়েছে।

তবে ৮ জুলাই সর্বোচ্চ রেকর্ড পরিমাণ টোল আদায় হয়েছে ৪ কোটি ১৯ লাখ ৩৯ হাজার ৬৫০ টাকা। এদিকে ওই দিন গাড়ি পারাপার হয়েছে ৩১ হাজার ৭২৩টি। সব থেকে কম টোল আদায় হয়েছে ঈদের দিন ১০ জুলাই। মোট ১ কোটি ৪৬ লাখ ১০ হাজার ৮৫০ টাকা। ওই দিন গাড়ি পারাপার হয়েছে মোট ১১ হাজার ৯৫৪টি।

এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে মাওয়া টোল প্লাজায় দায়িত্বে থাকা পদ্মা সেতুর সাইট অফিস নির্বাহী প্রকৌশলী ড. মাহমুদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ঈদের সময় চাপ ছিল, তবে সে চাপ আমরা সফলভাবে সামলাতে পেরেছি।