অর্থনীতি

সকল দপ্তরে বিদ্যুতের ব্যবহার ২৫ শতাংশ কমানোর পাশাপাশি ব্যয় সাশ্রয়ে এবং দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ৮টি সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

ব্যয় সাশ্রয়ে কার্যকর কর্মপন্থা ঠিক করতে বুধবার (২০ জুলাই) বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবদের নিয়ে সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

পরে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউস এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব জনাব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সচিবদের বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো হলো:
১. বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে আনতে সকল মন্ত্রণালয় (মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সকল অফিস) প্রয়োজনীয় কর্মপন্থা নিরুপণ করবে। সরকারি সকল দপ্তরে বিদ্যুতের ২৫% ব্যবহার হ্রাস করতে হবে।

২. জ্বালানিখাতের বাজেট বরাদ্দের ২০ শতাংশ কম ব্যবহারের লক্ষ্যে অর্থ বিভাগ প্রয়োজনীয় পরিপত্র জারি করবে। অর্থাৎ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী যারা তেল ব্যবহার করেন, এখন তাদের বরাদ্দ ২০ শতাংশ কম হবে।

৩. অনিবার্য না হলে শারীরিক উপস্থিতিতে সভা পরিহার করতে হবে এবং অধিকাংশ সভা অনলাইনে আয়োজন করতে হবে।

৪. অত্যাবশ্যক না হলে বিদেশ ভ্রমণ যথাসম্ভব পরিহার করতে হবে।

৫. খাদ্যদ্রব্যসহ নিত্যপণ্যের মূল্য সহনীয় রাখতে বাজার মনিটরিং, মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে মজুদদারির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াসহ অন্যান্য পদক্ষেপ জোরদার করতে হবে।

৬. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী পরিবহনে ব্যক্তিগত যানবাহনের ব্যবহার যৌক্তিকীকরণের লক্ষ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে।

৭. অভ্যন্তরীণ সম্পদ সংগ্রহ বৃদ্ধিকল্পে অর্থ-বছরের শুরু থেকেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে এবং লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এনবিআরকে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

৮. প্রতিটি মন্ত্রণালয় নিজস্ব ক্রয় পরিকল্পনা পুনঃপর্যালোচনা করে রাজস্ব ব্যয় হ্রাসের উদ্যোগ নেবে।

সিদ্ধান্তগুলো তুলে ধরার পাশাপাশি ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, আমার কাছে মনে হচ্ছে, অনেকে আতঙ্কগ্রস্ত হচ্ছে। আসলে আতঙ্কগ্রস্থ হওয়ার কোনো কারণ নেই। ভবিষ্যতে যাতে আমাদের কোনো খরায় (সংকট) পড়তে না হয়, সেজন্য সংযমী হতে এখন থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব জনাব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, পুরো ব্যবস্থাগুলো কিন্তু আমাদের অবস্থা খারাপ, এ রকম কোনো বিষয় নয়। কিন্তু আমরা দেখছি, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মন্দা যাচ্ছে, খাদ্য সংকট দেখা দিচ্ছে, বিভিন্ন দেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আমরা আগেই পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে রাখছি, যাতে এ জাতীয় সমস্যায় না পড়ি।

বৈঠকে কোডিড পরবর্তী অর্থনৈতিক অভিঘাত এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলশ্রুতিতে বিশ্বব্যাপী জ্বালানিসহ নিত্যপণ্যের অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধির কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে সরকারের ব্যয়-সাশ্রয় নীতি কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, তা নিয়ে সচিবরা আলোচনা করেন।

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউস রাজস্ব ব্যয় সংকোচন, উন্নয়ন ব্যয়ের সর্বোত্তম ব্যবহার, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বৃদ্ধি, নিত্যপণ্যের মূল্য সহনশীল পর্যায়ে রাখতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সচিবদের অনুরোধ জানান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মিতব্যয়ী হওয়ার আহ্বানের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি মন্ত্রণালয়গুলোকে অনাবশ্যক ব্যয় পরিহারসহ সব ক্ষেত্রে ব্যয় হ্রাসের নির্দেশনা দেন।

বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আলী আজম, অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব ফাতেমা ইয়াসমিনসহ সংশ্লিষ্ট সচিবরা আলোচনায় অংশ নেন।

অর্থনীতি

পদ্মা সেতু দিয়ে গত ২৬ জুন আনুষ্ঠানিক ভাবে গাড়ি পারাপার শুরুর পর অর্ধশত কোটি টাকার বেশি টোল আদায় হয়েছে। ২৬ জুন থেকে ১৫ জুলাই শুক্রবার পর্যন্ত ২০ দিনে টোল আদায় হয়েছে ৫২ কোটি ৫৫ লাখ ৩৫ হাজার ৬৫০ টাকা।

এ সময় মাওয়া ও জাজিরা প্রান্ত হয়ে যানবাহন পারাপার হয়েছে ৪ লাখ ৫০ হাজার ৩১২টি গাড়ি।

এদিকে স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে প্রথম দিনে টোল আদায় হয়েছে ২ কোটি ৭৪ লাখ ৬৬ হাজার ৮৫০ টাকা। প্রথম দিনে দুই প্রান্ত থেকে যান পারাপার হয়েছে ৬১ হাজার ৮৩১টি। এর মধ্যে মাওয়া প্রান্ত থেকে ৩১ হাজার ১৯৭টি যানবাহন, আর জাজিরা প্রান্ত থেকে ৩০ হাজার ৬৩৯টি যানবাহন সেতু অতিক্রম করে।

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, সেতু চালু হওয়ার পর দিন অর্থাৎ ২৭ জুন টোল আদায় হয় ২ কোটি ১৯ লাখ ২৬ হাজার ৯৫০ টাকা, ২৮ জুন টোল আদায় হয়েছে ১ কোটি ৯৪ লাখ ৫৮ হাজার ১০০ টাকা, ২৯ জুন আদায় হয়েছে ১ কোটি ৯২ লাখ ৯২ হাজার ৮০০ টাকা, ৩০ জুন টোল আদায় হয়েছে ১ কোটি ৯৭ লাখ ৯২ হাজার ৪৫০ টাকা। জুলাই মাসের ১ তারিখে টোল আদায় হয়েছে ৩ কোটি ১৬ লাখ ৫৩ হাজার ২০০ টাকা, ২ জুলাই টোল আদায় হয়েছে ২ কোটি ৩২ লাখ ৭১ হাজার ৬৫০ টাকা, ৩ জুলাই টোল আদায় হয়েছে ১ কোটি ৯১ লাখ ৯৬ হাজার ৩৫০ টাকা, ৪ জুলাই টোল আদায় হয়েছে ১ কোটি ৯৯ লাখ ৬৪ হাজার ৩০০ টাকা, ৫ জুলাই টোল আদায় হয়েছে ২ কোটি ২৬ লাখ ৭৬ হাজার ৭০০ টাকা, ৬ জুলাই টোল আদায় হয়েছে ২ কোটি ৪২ লাখ ৩হাজার ৭৫০ টাকা, ৭ জুলাই টোল আদায় হয়েছে ৩ কোটি ১৬ লাখ ৫১ হাজার ৬৫০ টাকা, ৮ জুলাই টোল আদায় হয়েছে ৪ কোটি ১৯ লাখ ৩৯ হাজার ৬৫০ টাকা, ৯ জুলাই টোল আদায় হয়েছে ২ কোটি ৭৩ লাখ ৮৮ হাজার ৩০০ টাকা, ১০ জুলাই টোল আদায় হয়েছে ১ কোটি ৪৬ লাখ ১০ হাজার ৮৫০ টাকা, ১১ জুলাই টোল আদায় হয়েছে ৩ কোটি ৬০ লাখ ৫৫ হাজার ৪০০ টাকা, ১২ জুলাই টোল আদায় হয়েছে ৩ কোটি ৫৩ লাখ ৬৩৪ হাজার ৪৫০ টাকা, ১৩ জুলাই টোল আদায় হয়েছে ৩ কোটি ৪ লাখ ২৮ হাজার ৪৫০ টাকা, ১৪ জুলাই টোল আদায় হয়েছে ২ কোটি ৯১ লাখ ৪৮ হাজার ৫০ টাকা এবং ১৫ জুলাই ৩ কোটি ৬৫ লাখ ৮১ হাজার ৫০ টাকা টোল আদায় করা হয়েছে।

তবে ৮ জুলাই সর্বোচ্চ রেকর্ড পরিমাণ টোল আদায় হয়েছে ৪ কোটি ১৯ লাখ ৩৯ হাজার ৬৫০ টাকা। এদিকে ওই দিন গাড়ি পারাপার হয়েছে ৩১ হাজার ৭২৩টি। সব থেকে কম টোল আদায় হয়েছে ঈদের দিন ১০ জুলাই। মোট ১ কোটি ৪৬ লাখ ১০ হাজার ৮৫০ টাকা। ওই দিন গাড়ি পারাপার হয়েছে মোট ১১ হাজার ৯৫৪টি।

এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে মাওয়া টোল প্লাজায় দায়িত্বে থাকা পদ্মা সেতুর সাইট অফিস নির্বাহী প্রকৌশলী ড. মাহমুদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ঈদের সময় চাপ ছিল, তবে সে চাপ আমরা সফলভাবে সামলাতে পেরেছি।

অর্থনীতি

চলমান ডলার সংকটের মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদের ওপর চাপ কমাতে বিভিন্ন উদ্যোগের অংশ হিসেবে নতুন তিনটি নীতি পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

অর্থনীতি

দেশের সর্ববৃহৎ স্থাপনা পদ্মা সেতুতে টোল আদায়ের রেকর্ড হয়েছে। একদিনে ৩ কোটি ১৬ লাখ টাকারও বেশি টোল আদায় হয়েছে।

শুক্রবার এই টোল আদায় করা হয়। ২৬ জুন পদ্মা সেতুতে যান চলাচল চালুর পর এটাই টোল আদায়ের রেকর্ড। এদিন সেতু দিয়ে যানবাহন পারাপার করেছে ২৬ হাজার ৩৯৮টি।

এর আগে ২৬ জুন চালুর পর ১ দিনে ৬১ হাজারের বেশি যানবাহন চলাচল করেছিল। আর টোল আদায় হয়েছিল প্রায় পৌনে তিন কোটি টাকা। তবে ওই দিন পার হওয়া যানবাহনের ৭৫ শতাংশ ছিল মোটরসাইকেল। ২৭ জুন থেকে সেতু দিয়ে মোটরসাইকেল পারাপার বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এদিকে পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়কে শুক্রবার থেকে টোল আদায় শুরু হয়েছে। সড়ক ও জনপথ সূত্র জানায়, প্রথম দিনে ৬৯ লাখ ৮১ হাজার ৮৮০ টাকা টোল আদায় হয়েছে। এর মধ্যে যানবাহন পারাপার করেছে মোট ৪১ হাজার ৭১৪টি।

এর মধ্য ধলেশ্বরী সেতুর কাছের টোল প্লাজা দিয়ে যানবাহন পারাপার হয়েছে ২৬ হাজার ৬৪। টোল আদায় হয়েছে ৪৫ লাখ ৭৭ হাজার ২৪০ টাকা। আর ভাঙা দিয়ে যানবাহন পারাপার করেছে ১৫ হাজার ৬৫০টি। টোল আদায় করা হয়েছে ২৪ লাখ ৪ হাজার ৬৪০ টাকা।

পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্ত দিয়ে যানবাহন পারাপার হয়েছে ১৩ হাজার ৮০১টি। টোল আদায় হয়েছে ১ কোটি ৬৫ লাখ ৪২ হাজার ১০০ টাকা। জাজিরা দিয়ে যানবাহন পারাপার হয়েছে ১২ হাজার ৫৯৭টি। টোল আদায় করা হয়েছে ১ কোটি ৫১ লাখ ১১ হাজার ১০০ টাকা।

অর্থনীতি

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার মধ্যে মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে বাজারে নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ বাড়াতে অগ্রাধিকার নির্ধারণে জোর এবং উচ্চ ব্যয়ের কিছু দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পে অর্থ খরচে ‘সংযত’ হতে পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

কোভিড মহামারীর সংক্রমণ কমলে অর্থনীতিতে দ্রুত চাহিদা তৈরির সময়কালে ইউক্রেইন যুদ্ধের প্রভাবে জ্বালানি ও তেলসহ আন্তর্জাতিক পণ্য বাজার চড়তে থাকে; যাতে বাড়তে থাকা মূল্যস্ফীতি ভোগান্তি তৈরি করছে বাংলাদেশের জনজীবনেও।

অর্থনীতির এ সংকটের মধ্যে চাহিদার তুলনায় ডলার সরবরাহ কমে গেলে দেশের মুদ্রাবাজারে প্রধান এ বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়েও অস্থিরতা আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে খারাপ অবস্থায় পৌঁছেছে। ডলারের বিপরীতে টাকার মান দ্রুত কমছে। এ নিয়ে সরকারের নীতি নির্ধারক ও অর্থনীতিবিদরা দুশ্চিন্তার কথাই বলছেন।

এমন প্রেক্ষাপটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং ডলারের চলমান সংকট সামাল দিতে কৌশল নির্ধারণে সরকারকে এমন পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ‘সরকারের অভ্যন্তরীণ ঋণ’ নিয়ে এপ্রিলের মাসওয়ারি এ প্রতিবেদন গত ২৬ জুন প্রকাশ করা হয়।

এতে ২০২১-২২ অর্থবছরের শেষ দিকে সরকারের ব্যাংক ঋণ বাড়ায় অর্থনীতিতে এর প্রভাব সম্পর্কে পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়। একই সঙ্গে ঋণ নেওয়ার প্রবণতাও বিশ্লেষণ করা হয়।

এতে বলা হয়, ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ নেওয়া বেড়ে যাওয়া মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির জন্য সহায়ক হলেও তা সামনের দিনগুলোতে মূল্যস্ফীতি ও ‘ব্যাংক ‍ঋণের সুদহার’’ বাড়ানোর প্রবণতাকে উসকে দিতে পারে। এর প্রভাবে ইতোমধ্যে ট্রেজারি বিল ও বন্ডের সুদহার অনেক বেড়েছে।

এমন প্রেক্ষাপটে বৃহস্পতিবার ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ঘোষিত ‘সংকোচনমুখী’ মুদ্রানীতি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আর মূল্যস্ফীতির চাপ সামাল দিতে অর্থের জোগান আরও কমানো এবং রেপো (পুনঃক্রয় চুক্তি) সুদহার আরও এক দফা বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক এমন পদক্ষেপের ঘোষণা দিলেও সরকারকে রাজস্ব নীতির মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের ‘সমাধান খোঁজার’ পরামর্শ দিয়েছেন অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ জায়েদ বখত।

তিনি বলেন, ‘‘আমদানি পর্যায়ে শুল্ক সমন্বয়ের মাধ্যমে, অর্থের প্রবাহ ঠিক রাখতে ঋণের বিশেষ স্কিম গঠন করা যেতে পারে। এদিকেই বেশি নজর দেওয়া দরকার।’’

অপরদিকে প্রকল্পের অর্থায়ন নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুপারিশের বিষয়ে আগেই পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছে সরকার। গত ১৭ মে একনেক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার নির্ধারণে নির্দেশনা দেন।

ফাইল ছবিফাইল ছবিওই দিনের বৈঠক শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, “কোন প্রকল্প দেশ এবং জনগণের জন্য আগে প্রয়োজন, সেটা আগে আনতে বলেছেন। তিনি নির্দেশনা দিয়েছেন, ‘বাড়াবাড়ি করবেন না, ঘরে বাইরে, সরকারের ভিতরে অপচয় বন্ধ করতে হবে’।”
প্রধানমন্ত্রী এখনই জরুরি নয় এমন প্রকল্প কিছুটা ধীর গতিতে বাস্তবায়নের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, বৈশ্বিক এ মন্দার সময়ে’ বেছে বেছে প্রকল্প নিতে হবে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে অর্থনীতির উপর চাপ কমাতে এমন পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানান তিনি।

দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্পের ব্যয় বুঝে শুনে করা নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্যবেক্ষণের বিষয়ে সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘‘বাংলাদেশ ব্যাংক যে আশঙ্কা করে সরকারি প্রকল্পের ব্যয়ে সংযত হওয়ার কথা বলছে, তার কিছু উদ্যোগ সরকার ইতোমধ্যেই নিয়েছে।

“বেশ কিছু প্রকল্পের বেলায় দেখা গিয়েছে। এখন বিকল্প হিসেবে বৈদেশিক উৎস থেকে নেওয়া ঋণের পরিমাণ বাড়িয়ে তা ব্যবহারে আরও যত্নবান হওয়া উচিত সরকারের।’’

ব্যাংক থেকে সরকার নিয়েছে কত ?

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসে ব্যাংক থেকে সরকার ঋণ নেয় ৩৪ হাজার ৪৭৩ কোটি টাকা; যা জাতীয় বাজেটে নেওয়া লক্ষ্যমাত্রার ৩৯ দশমিক ৫ শতাংশ।

তবে গত ২৬ জুন পর্যন্ত তা বেড়ে হয়েছে প্রায় ৪৮ হাজার কোটি টাকা হয়েছে। অর্থাৎ পর্যবেক্ষণটি দেওয়ার পরও আরও সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ নিয়েছে সরকার।

সরকারের ব্যাংক ঋণ বেড়ে যাওয়া নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, ‘‘মূল্যস্ফীতির হার আরও বেড়ে যাওয়া সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতার দিক দিয়ে কাঙিক্ষত নয়। আর এটি সুদহারকে বাড়িয়ে দেওয়ার প্রবণতাকে উসকে দিচ্ছে। ইতোমধ্যে সরকারের ট্রেজারি বিল ও বন্ডের সুদহার অনেক বেড়েছে।’’

ফাইল ছবিফাইল ছবিএ প্রতিবেদন তৈরির মাস এপ্রিলে দেশে মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক ২৯ শতাংশ। পরের মাস অর্থাৎ মে মাসে তা ৭ দশমিক ৪২ শতাংশে উঠেছে, যা গত ৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরে তা ৫ দশমিক ৩ শতাংশে বেঁধে রাখার লক্ষ্য ঠিক করেছিল সরকার।

বিদায়ী অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করে সরকারের লক্ষ্য ব্যাংক থেকে ৮৭ হাজার ২৮৭ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া। আর ব্যাংক বর্হিভূত খাত থেকে নেওয়ার লক্ষ্য ছিল ৩৭ হাজার কোটি টাকা; এর মধ্যে নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি ৩২ হাজার কোটি টাকা।

গত এপ্রিল পর্যন্ত সরকার নিট সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নিয়েছে ১৭ হাজার ৫১৮ কোটি টাকা। এটি লক্ষ্য মাত্রার ৫৪ দশমিক ৭ শতাংশ।

এ হিসাবে এপ্রিল শেষে সরকার অভ্যন্তরীণ উৎস মোট ঋণ নিয়েছে ৫৫ হাজার ৮৩৮ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার ৪৪ দশমিক ৯ শতাংশ। গত অর্থবছরের এসময়ে (জুলাই-এপ্রিল) মোট অভ্যন্তরীণ ঋণের পরিমাণ ছিল ৩২ হাজার ৫০৮ কোটি টাকা, যা ওই অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার ২৮ দশমিক ৩ শতাংশ ছিল।

করোনাভাইরাস পরবর্তী অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের অংশ হিসেবে অর্থনীতিতে ঋণ চাহিদা বাড়ার ফলে সরকারি ও বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধিও ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। সেপ্টেম্বর থেকে মূলত সরকারি ঋণ বাড়তে থাকে। অর্থবছরের শেষের দিকে তা আরও বেড়ে যায়। এপ্রিল শেষে প্রবৃদ্ধি ছিল ৩৫ দশমিক ৯৯ শতাংশ এবং মে মাসে যা ছিল ২৭ দশমিক ২০ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরের মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১৪ দশমিক ৮০ শতাংশ। মুদ্রানীতিতে সরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয় ৩৬ দশমিক ৬ শতাংশ। এ ‍দুই মিলে মোট অভ্যন্তরীণ ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ১৭ দশমিক ৮০ শতাংশ।

সরকারের এ ব্যাংক ঋণে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে আগের চেয়ে গতি বাড়বে বলে মনে করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, এতে অর্থবছর শেষে জিডিপিতে কাঙিক্ষত উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক হবে। তবে সামষ্টিক স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে তা নেতিবাচক।

এরকম পরিস্থিতিতে সরকারি ব্যয়ের অগ্রাধিকার নির্ধারণে এমন কৌশল নেওয়া প্রয়োজন যাতে আবশ্যকীয় নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ স্বল্প সময়ের মধ্যে বাড়ানো যায়। একই সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি উচ্চ ব্যয়ের প্রকল্পের খরচ ‘মেপে মেপে’ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন পর্যবেক্ষণের সঙ্গে একমত পোষণ করে সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান  বলেন, ‘‘বৈশ্বিক কারণ ও বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বেড়ে যাওয়া এবং স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের উপরে রয়েছে।

‘‘ব্যাংকের সুদহার তো এখন বাস্তবিকভাবে মূল্যস্ফীতির বিবেচনায় ঋণাত্বক হয়ে গিয়েছে অর্থাৎ মূল্যস্ফীতির চেয়ে সুদহার কম। মানুষের সঞ্চয়ের প্রবণতা কমে যাচ্ছে। সেখানেও তো বিবেচনার বিষয় আছে। সঞ্চয় না পেলে ব্যাংকগুলো ঋণ দিবে কিভাবে?’’

অর্থনীতি

পদ্মা সেতু প্রকল্পের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নিরলসভাবে যুক্ত একমাত্র দেশীয় প্রতিষ্ঠান আব্দুল মোনেম লিমিটেড।
ঐতিহাসিক এই যাত্রায় জাতির স্বপ্ন বাস্তবায়নের গর্বিত অংশীদার।

পুরো প্রকল্পে সেতুর গুণগত মান ঠিক রাখতে প্রায় এক কোটি মার্কিন ডলার খরচ করে জার্মানি থেকে দুটি মেশিন নিয়ে আসার পাশাপাশি অন্যান্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতেও আব্দুল মোনেম লিমিটেড বিনিয়োগ করেছে। পদ্মা সেতুর ৫টি প্রকল্পের ৩টিই করেছে তারা। পদ্মা প্রকল্পে একনিষ্ঠভাবে কাজ করতে গিয়ে তারা তাদের সক্ষমতা সম্পর্কে আরও একবার নিশ্চিত হয়েছে এবং ভবিষ্যতে দেশের আরও যেকোনো বড় প্রকল্পে আরও দক্ষতার সঙ্গে অবদান রাখতে পারবে বলে বিশ্বাস করেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন তারা। তাদের ওপর আস্থা রাখার জন্য এবং জাতির স্বপ্ন বাস্তবায়নের ঐতিহাসিক মাইলফলক অর্জনের গর্বিত অংশীদার হওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য।

প্রসঙ্গত, ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা বহুমুখী সেতু রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য বড় শহরের সঙ্গে দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার সড়ক ও রেল যোগাযোগ স্থাপন করেছে। পদ্মা সেতু দক্ষিণ এবং পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার উন্নয়নের সঙ্গে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

অর্থনীতি

নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর নির্মাণকে বাংলাদেশের জন্য ‘বিশাল অর্জন’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন বিশ্ব ব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি মার্সি টেম্বন।

শনিবার সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “বিশ্ব ব্যাংক বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন অংশীদার। আমরা এই সেতুর গুরুত্ব বুঝতে পারি। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষ ‍ব্যাপকভাবে অর্থনৈতিক সুবিধা পাবে।

“পদ্মা সেতুর ফলে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। ভ্রমণের সময় কমে আসবে। কম সময়ে কৃষক তার খামারে উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণ করতে পারবেন। সবমিলে পদ্মা সেতু এই অঞ্চলের সমৃদ্ধি বয়ে আনবে, দারিদ্র্যও কমিয়ে আনবে।”

পদ্মা সেতুতে অর্থায়নে বিশ্ব ব্যাংক চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পর দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে পিছু হটেছিল। এ নিয়ে দীর্ঘ টানাপড়েনের পর সরকার নিজস্ব অর্থায়নে এই সেতু নির্মাণের পথে এগিয়ে যায়। ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকার নির্মিত সেই সেতুর উদ্বোধন হচ্ছে শনিবার।

বিশ্ব ব্যাংক দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের যে অভিযোগ তুলেছিল, তারা তা প্রমাণ করতে পারেনি। এ নিয়ে কানাডার আদালতে মামলাও হয়েছিল, কিন্তু তা টেকেনি।

পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের অতিথিদের আসনে বিশ্ব ব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধিকে হাস্যোজ্জ্বল দেখাচ্ছিল।

বাংলাদেশ এই সেতু থেকে লাভবান হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আমরা খুবই খুশি, এই সেতুর নির্মাণ শেষে উদ্বোধন করা হচ্ছে। দীর্ঘ দিনের উন্নয়নের বন্ধু হিসেবে আমরা উচ্ছ্বসিত।”

অর্থনীতি

আগামী ২৫ জুন পদ্মা বহুমুখী সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

পদ্মা সেতু সম্পূর্ণরূপে বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত হয়েছে। এটি কোনো বিদেশি তহবিলে নির্মিত হয়নি।
শুক্রবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানায়।

বিবৃতিতে বলা হয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নজরে এসেছে পদ্মা বহুমুখী সেতু বিদেশি তহবিল ও বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের একটি অংশ হিসেবে নির্মিত হয়েছে বলে কোনো কোনো মহল দেখানোর চেষ্টা করছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সুস্পষ্টভাবে দাবি করে, পদ্মা বহুমুখী সেতু সম্পূর্ণরূপে বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত হয়েছে। এটি অন্য কোনো বিদেশি দ্বিপাক্ষিক বা বহুপাক্ষিক তহবিল সংস্থা নির্মাণে আর্থিকভাবে অবদান রাখেনি। তবে বাংলাদেশি ও বিদেশি উভয় নির্মাণ প্রতিষ্ঠান প্রকল্পটি বাস্তবায়নে নিয়োজিত ছিল।

এ সেতু হওয়ায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৯টি জেলাকে দেশের অন্যান্য অংশের সঙ্গে সংযুক্ত করার দীর্ঘকালের লালিত স্বপ্ন পূরণ হল। এতে করে বাংলাদেশের সামষ্টিক সমৃদ্ধি, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন বৃদ্ধি পাবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আন্তরিকভাবে আশা করে, বাংলাদেশের সব বন্ধুরা এ যুগান্তকারী প্রকল্পের সমাপ্তি উদযাপনে হাত মেলাবে। এর বিশেষ কারণ হলো- এটি সম্পূর্ণরূপে বাংলাদেশ সরকারের অবদানে সম্পন্ন হয়েছে।

অর্থনীতি

অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল বলেছেন, আসন্ন জাতীয় বাজেটে কোভিড-১৯ এর প্রভাব ও রাশিয়া- ইউক্রেন যুদ্ধে সৃষ্ট অনিশ্চয়তা ও ঝুকি থেকে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার অধিক গুরুত্ব পাবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমি অর্থনীতিতে গতিশীলতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করব।’ সরকারি ক্রয় কমিটি সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি এ কথা বলেন। আগামী ৯ জুন জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থ বছরের জাতীয় বাজেট পেশ করা হবে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ সংক্রমনের পর অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা করা হয়েছিল। তবে রাশিয়া – ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বব্যাপী অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে। বিশ্বের প্রতিটি দেশ এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে এবং সকলেই চাপের মধ্যে রয়েছে। তবে এই অনিশ্চয়তা এবং ঝুঁকি সুযোগও সৃষ্টি করবে।

জাতীয় বাজেটের মূল খাত সম্পর্কে কিছু বলতে অস্বীকার করলেও সাংবাদিকদেও তিনি বলেন, ‘অপেক্ষা করেন, সংসদে বাজেট উপস্থাপন করা হলে সব জানতে পারবেন।’ অবশ্য আসন্ন বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাত অধিক গুরুত্ব পাবার ইঙ্গিত দেন তিনি।

অর্থনীতি

ডলারের উচ্চ মূল্য ও সংকটের মধ্যে মাসের প্রথম দিকে ইতিবাচক ধারা থাকলেও মে মাস শেষে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে সুখবর মেলেনি; আগের বছরের একই মাসের চেয়ে কম এসেছে ১৩ শতাংশ।

আগের মাস এপ্রিলের চেয়েও ব্যাংকিং চ্যানেলে পাঠানো রেমিটেন্সের পরিমাণ কমেছে ৬ দশমিক ২৩ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, মে মাসে প্রবাসীরা মোট ১৮৮ কোটি ৫৩ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। ২০২১ সালের একই সময়ে যা ছিল ২১৭ কোটি ১০ লাখ ডলার।

দেশে ডলারের দামে রেকর্ড হলে আগের চেয়ে বিদেশ থেকে পাঠানো অর্থের বিপরীতে বেশি টাকা পাচ্ছিলেন প্রবাসীদের স্বজনরা। এরপরও রেমিটেন্সের ঋণাত্মক ধারা কাটেনি। শতকরা হারে গত মাসে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে রেমিটেন্স কম এসেছে ১৩ দশমিক ১৫ শতাংশ।

আগের মাসে রোজা ও ঈদকে ঘিরে প্রবাসী আয় দুই বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। সরকারি প্রণোদনা বাড়ানোর কারণে এবং ডলারের দাম আগের মাসের চেয়ে আরও বেড়ে যাওয়ায় মে মাসে রেমিটেন্সে গতি আসবে বলে অনেকেই ধারণা করেছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত তা হয়নি, প্রবাসীদের পাঠানো আয়ে ধাক্কা লেগেছে।

এপ্রিলে রেমিটেন্স এসেছিল ২০১ কোটি ১০ লাখ ডলার। এক মাসের ব্যবধানে কমেছে ১২ কোটি ৫৪ লাখ ডলার বা ৬ দশমিক ২৩ শতাংশ।

মে মাসে আসা প্রবাসী আয়সহ চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মে পর্যন্ত ১১ মাসে মোট রেমিটেন্স এসেছে ১ হাজার ৯১৯ কোটি ৪৪ লাখ ডলার।

গত অর্থবছরের এ সময়ে এসেছিল ২ হাজার ২৮৩ কোটি ৬৯ লাখ ডলার। এ হিসাবে এখন পর্যন্ত ১৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ (৩৬৪ কোটি ২৪ লাখ ডলার) কম এসেছে রেমিটেন্স।

গত ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে রেমিটেন্স এসেছিল দুই হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ ডলার, প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ।

এবার চলতি অর্থবছরে দেশে প্রবাসী আয় আনার ক্ষেত্রে সরকার বাজেটে ৩৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলেও ১১ মাসে শেষে ঋণাত্মক ধারা থেকে বের হতে পারেনি। বাকি এক মাসে সে সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। বর্তমান ধারা বিশ্লেষণের পর গত এপ্রিলে সরকার প্রবৃদ্ধির এ লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ১ শতাংশ করে; এটি অর্জন করাও দূরূহ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বরাবরের মত এবারও রেমিটেন্স বেশি এসেছে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে।

মে মাসে মোট ১৫৬ কোটি ৮৪ লাখ ডলার এসেছে বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে, যা গত মাসের মোট রেমিটেন্সের ৮৩ দশমিক ১৯ শতাংশ।

আর রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক ও বিডিবিএল ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ২৮ কোটি ৩৮ লাখ ডলার, যা মে মাসের মোট রেমিটেন্সের ১৫ শতাংশ।

আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ার চাপে বৈদেশিক মুদ্রার সংকটে পড়েছে বাংলাদেশ। দেশের আমদানি দায়ের বড় একটি অংশ পূরণ করে থাকে প্রবাসীদের রেমিটেন্স। কিন্তু চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই এ খাতে ঋণাত্বক প্রবৃদ্ধি রয়েছে।

ডলারের সঞ্চয় নিয়ে উদ্বেগের এ সময়ে রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়াতে ইতোমধ্যে নীতিমালাতেও কিছু ছাড় দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এর আগে বৈধ উপায়ে দেশে রেমিটেন্স পাঠানো উৎসাহিত করতে সরকার নগদ প্রণোদনার হার ২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে আড়াই শতাংশ করেছিল। এরপরও নেতিবাচক ধারা রয়েই গেছে।

গত ২৫ মে পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ ছিলো ৪২ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার, যা দিয়ে বর্তমান আমদানির ধারা অনুযায়ী ৬ মাসের ব্যয় মেটানো সম্ভব।

গত ২৩ মে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, রেমিটেন্স পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রবাসীদের অর্থের উৎস জানতে চাওয়া হবে না।

কাগজপত্রের বাধ্যবাধকতা তুলে দেওয়ায় সামনের দিনগুলোতে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্সের প্রবাহ আরও বাড়বে বলে আশার কথা জানিয়েছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম।