অর্থনীতি

ডলার বাঁচাতে আর্থিক লেনদেনের বার্তা আদান-প্রদানকারী আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম সুইফটের বাইরে নতুন কোনো ‘পেমেন্ট সিস্টেমে’ যুক্ত হওয়ার কথা ভাবছে সরকার।

অর্থনীতি

বাংলাদেশ সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ বা ফরেন ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট (এফডিআই) আকর্ষণের জন্য নানামুখী উদ্যোগ নিয়ে যাচ্ছে। কর অবকাশ থেকে শুরু করে ব্যাংক ঋণ, প্রণোদনা, অবকাঠামোগত সুবিধার ছড়াছড়ি। তার পরও প্রত্যাশিত হারে সাম্প্রতিক সময়ে এফডিআই বাড়ছে না।

বিদেশ থেকে দেশে এফডিআই না বাড়লেও বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের বিদেশে বিনিয়োগের হার বেড়েই চলেছে। ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে বিদেশে দেশের উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ ছয় কোটি ২৭ লাখ ডলার বেড়ে স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৩৯ কোটি ডলারে। বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তৈরি একটি প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত তথ্যের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। এতে শুধু উপস্থান করা হয়েছে বাংলাদেশ থেকে দেশি উদ্যোক্তাদের বৈধভাবে নেওয়া বিনিয়োগের তথ্য। এর বাইরে অবৈধভাবে বা পাচারের মাধ্যমে আরও অনেক পুঁজি নেওয়া হয়েছে যেগুলো বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগ করেছে।

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিবেদনে দেখা যায়, বৈধভাবে দেশ থেকে পুঁজি নেওয়ার চেয়ে পাচারের মাধ্যমে নেওয়া হয়েছে অনেক বেশি। বিনিয়োগ থেকে অর্জিত মুনাফা দেশে আনা হয়েছে খুবই কম। বরং নেওয়া হচ্ছে বেশি।

এদিকে গত ২৬ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটি নীতিমালা জারি করে দেশের সচ্ছল রপ্তানিকারকদের বিদেশে পুঁজি বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। অনেকে বিদেশে বিনিয়োগের আবেদনও করেছে। এগুলো এখন পর্যালোচনাধীন রয়েছে। দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হু হু করে বাড়ছিল।

গত অক্টোবরে তা বেড়ে চার হাজার ৭০০ কোটি ডলারে উঠেছিল। যা দিয়ে ওই সময়ে নয় মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব ছিল। অথচ তিন মাসের আমদানি ব্যয়ের সমান রিজার্ভ থাকলেই যথেষ্ট। রিজার্ভকে অনেক বেশি উদ্বৃত্ত মনে করে দেশ থেকে পুঁজি বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। ওই নীতিমালার আওতায় এখনো বিদেশে পুঁজি বিনিয়োগ শুর্নু হয়নি।

তারপর্ ির্থাৎ নীতিমালা জারির এক মাস পরই গত মার্চ থেকে বাজারে ডলার সংকট বাড়তে থাকে। এ মাসের শুরুতে সংকট প্রকট আকার ধারণ করে। এখন রিজার্ভ রক্ষায় বিদেশ ভ্রমণ, বিলাসী পণ্য আমদানি, অন্য পণ্য আমদানিতে লাগাম টানা হয়েছে। দেশ থেকে বিদেশে ডলার নিয়ে বিনিয়োগ স্থগিত করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, রিজার্ভ হচ্ছে বিপদে ব্যবহারের জন্য। সুসময়ে ব্যবহারের জন্য নয়। কিন্তু রিজার্ভকে সুসময়ে ব্যবহার করেই যত বিপত্তি লেগেছে। রিজার্ভ থেকে ডলার নিয়ে উন্নয়ন প্রকল্পে ঋণ দেওয়া হয়েছে। অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশে বিনিয়োগের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ফলে বৈশ্বিক একটু ধকল এখন সহ্য করা যাচ্ছে না। অর্থনীতিকে প্রচণ্ড চাপে ফেলেছে।

মূল্যস্ফীতির হার বাড়ছে। যার খেসারত দিতে হচ্ছে দেশের স্বল্প ও মধ্য আয়ের মানুষকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২১ সালে বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে এফডিআই বেড়েছে ১৩ শতাংশ। এর বিপরীতে একই সময়ে বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের স্থিতি বেড়েছে ১৯ দশমিক ২ শতাংশ। অর্থাৎ দেশে বিদেশিদের বিনিয়োগ বাড়ার চেয়ে বিদেশে বাংলাদেশিদের বিনিয়োগ ৬ দশমকি ২ শতাংশ বেশি বেড়েছে।

বিনিয়োগের এই চিত্রকে অর্থনীতিবিদরা মোটেই স্বস্তিদায়ক মনে করেন না। তাদের মতে, দেশের চেয়ে বিদেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর মতো পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ এখনো পৌঁছেনি। এখন দেশেই বিদেশি বিনিয়োগ দরকার। একই সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রায় স্থানীয় উদ্যোক্তারাও দেশে বিনিয়োগ করতে পারেন। এতে কর্মসংস্থান বাড়বে, দরিদ্রতা কমবে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আরও প্রসারিত হবে। দেশি উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের বিষয়ে বিদেশমুখী না করে দেশমুখী করাটা জরুরি। এ জন্য সরকারি নীতিতে পরিবর্তন আনতে হবে। তা না হলে ভুলের মাশুল দিতে হবে দেশের মানুষকে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ সালে বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন দেশে এফডিআইয়ের স্থিতি ছিল ৩২ কোটি ৭১ লাখ ৪০ হাজার ডলার। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় তিন হাজার বা দুই হাজার ৮২৮ কোটি টাকা। ২০২১ সালে এ স্থিতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৯ কোটি ডলার। যা স্থানীয় মুদ্রায় তিন হাজার ৪৩২ কোটি টাকা বা প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে বিদেশে বিনিয়োগ বেড়েছে ছয় কোটি ২৭ লাখ ডলার বা ৫৫২ কোটি টাকা। আলোচ্য বিনিয়োগ থেকে ২০২০ সালে দেশে মুনাফা হিসাবে এসেছে এক কোটি ৯৫ লাখ ডলার।

২০২১ সালে এসেছে ২৯ লাখ ১৭ হাজার ডলার। করোনার কারণে বৈশ্বিক পরিস্থিতি নেতিবাচক হওয়ায় মুনাফা আসার হার বেশ কমেছে। ২০২০ সালে দেশি উদ্যোক্তারা বিদেশে বিনিয়োগ করেছিলেন তিন কোটি ১১ লাখ ডলার। ২০২১ সালে করেছেন ৯ কোটি ৪৭ লাখ ডলার। ওই সময়ে বিনিয়োগ বেড়েছে ছয় কোটি ৩৬ লাখ ডলার। মোট বিনিয়োগের স্থিতির মধ্যে গত বছর মূলধন হিসাবে নেওয়া হয়েছে ৫৮ লাখ ডলার, আয় থেকে পুনরায় বিনিয়োগ করা হয়েছে দুই কোটি ৩৩ লাখ ডলার এবং এক কোম্পানি অন্য কোম্পানি থেকে ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করেছে ছয় কোটি ২৬ লাখ ডলার।

২০২১ সালে দেশ থেকে বিদেশে যাওয়া মোট বিনিয়োগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি যুক্তরাজ্যে চার কোটি ৮৩ লাখ ডলার। এর পরেই গেছে হংকংয়ে দুই কোটি ডলার, নেপালে এক কোটি ১৩ লাখ ডলার। এ ছাড়া ভারতে ৬৬ লাখ ডলার, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২৪ লাখ ডলার, যুক্তরাষ্ট্রে ২১ লাখ ডলার, ইতালিতে ১১ লাখ ডলার, সিঙ্গাপুরে ৯ লাখ ডলার, দক্ষিণ আফ্রিকায় সাত লাখ ডলার, কেনিয়া ও শ্রীলংকায় পাঁচ লাখ ডলার করে বিনিয়োগ গেছে। এ ছাড়া ওমান, মালয়েশিয়া, চীন, গ্রিস ও পাকিস্তানেও বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ রয়েছে।

দেশি উদ্যোক্তাদের বিদেশে বিনিয়োগ বাড়তে থাকে ২০০০ সাল থেকে। ওই বছরে স্থিতি ছিল ছয় কোটি ৭৯ লাখ ডলার, ২০০১ সালে আট কোটি ৫২ লাখ, ২০০২ সালে আট কোটি ৮২ লাখ, ২০০৩ সালে ৯ কোটি ৫১ লাখ, ২০০৪ সালে ৯ কোটি ৪৭ লাখ ডলার স্থিতি ছিল। ২০০৬ সালে তা বেড়ে ১০ কোটি ৫০ লাখ ডলারে উন্নীত হয়।

২০১১ সাল থেকে টানা বাড়তে থাকে। মধ্যে শুধু ২০১৮ সালে ২০১৭ সালের চেয়ে সামান্য কমেছিল। ২০১০ সালে স্থিতি ৯ কোটি ৮৩ লাখ ডলার, ২০১১ সালে ১০ কোটি ৬২ লাখ, ২০১২ সালে ১০ কোটি ৭২ লাখ, ২০১৩ সালে ১৪ কোটি ২৫ লাখ ও ২০১৪ সালে ১৬ কোটি ডলারে উন্নীত হয়। ২০১৫ সালে তা আরও বেড়ে ১৮ কোটি ৮৩ লাখ ডলার, ২০১৬ সালে ২১ কোটি ২৯ লাখ, ২০১৭ সালে ৩৩ কোটি ১০ লাখ, ২০১৮ সালে ৩১ কোটি পাঁচ লাখ ও ২০১৯ সালে ৩২ কোটি ৩৬ লাখ ডলার স্থিতি ছিল।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেন, দেশ থেকে বিদেশে পুঁজি বিনিয়োগ করলে দেশের ব্র্যান্ডিং হবে। কিন্তু দেখতে হবে বিদেশে বিনিয়োগের সক্ষমতা আছে কিনা? বর্তমানে ডলারের বাজারে যে সংকট, তা তো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে বিদেশে পুঁজি বিনিয়োগের সক্ষমতা দেশের নেই। আগে অর্জন করতে হবে। ঝুঁকি মোকাবেলার জন্য রিজার্ভ থাকতে হবে। তা না করে বিদেশি বিনিয়োগের অনুমোদন দেওয়াটাও যুক্তিযুক্ত নয়।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া বৈধভাবে বিদেশে কোনো পুঁজি নেওয়ার সুযোগ নেই। বৈধভাবে যারা বিদেশে বিনিয়োগ করেছেন তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে করেছেন। রিজার্ভ বাড়ায় বিদেশে বিনিয়োগের সীমিত অনুমোদন দেওয়া হয়। এছাড়া প্রবাসীরাও বিদেশে বিনিয়োগ করেছে।

২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়তে থাকে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রিজার্ভ বেড়েছে। বৈশ্বিক কারণে আমদানি ব্যয় বাড়ায় ও রেমিট্যান্স কমায় এখন আবার কমছে। রিজার্ভ বাড়ার কারণে সরকার বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পুঁজি বিনিয়োগের পক্ষে অবস্থান নেয়। ফলে কেন্দ ীয় ব্যাংক থেকেও বিদেশে পুঁজি বিনিয়োগের জন্য ২০১৫ সাল থেকে অনুমোদন দেওয়া শুরু হয়। এর আগে বিদেশে বিভিন্ন ব্যাংকের শাখা, এক্সচেঞ্জ ও সীমিত কিছু বেসরকারি উদ্যোক্তা বিনিয়োগ করেছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গবেষক আউয়াল সরকারের এক গবেষণায় বলা হয়, দেশ থেকে প্রতি বছর গড়ে ১১০ থেকে ২২০ কোটি ডলার পাচার হচ্ছে। গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর গড়ে ৮০০ থেকে ৮৫০ কোটি ডলার পাচার হচ্ছে। বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের তদন্তে আর্থিক খাতের বহুল আলোচিত জালিয়াত পিকে হালদারের ভারত ও কানাডায় বিনিয়োগের তথ্য পাওয়া গেছে। বিসমিল্লাহ গ্রুপ দুবাইয়ে বিনিয়োগ করেছে। তারা অর্থ পাচার করে বিদেশে বিনিয়োগ করেছে।

অর্থনীতি

আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর (এডিপি) আকার সংশোধিত এডিপির চেয়ে ১৭ শতাংশ বাড়িয়ে প্রায় দুই লাখ ৪৭ হাজার কোটি টাকা করার প্রস্তাব চূড়ান্ত হয়েছে; যার ৩০ শতাংশ বরাদ্দ থাকছে একক খাত পরিবহন ও যোগাযোগে।

দেশের উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনায় নতুন এডিপির প্রস্তাবিত এই বরাদ্দ অনুমোদনের জন্য আগামী মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় উপস্থাপন করার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী।

তিনি বলেন, “আগামী অর্থবছরের জন্য এডিপির এই আকার পরিকল্পনা কমিশনের বর্ধিত সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।“

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের সভাপতিত্বে ১১ মে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়; যেখানে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য প্রায় দুই লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকার এডিপির প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হয়।

বরাদ্দের এ পরিমাণ চলতি অর্থবছরের মূল এডিপির বরাদ্দের চেয়ে ২০ হাজার ৭৪২ কোটি টাকা বা ৯ দশমিক ২০ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছরে মূল এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা, যা পরে সংশোধন করা হয়।

আর নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বরাদ্দ চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বরাদ্দের তুলনায় ৩৮ হাজার ৫১৬ কোটি টাকা বা প্রায় ১৭ শতাংশ বেশি। বরাবরের মত বাস্তবায়নের মাঝপথে চলতি অর্থবছরের এডিপি সংশোধন করে এর আকার কমিয়ে ২ লাখ ৭ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা করা হয়।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, প্রস্তাবিত এডিপির অর্থায়নে দেশি সম্পদ থেকে যোগান দেওয়া হবে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৬৬ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৬২ শতাংশ। আর ৯৩ হাজার কোটি টাকা প্রায় ৩৮ শতাংশ বৈদেশিক অর্থায়ন পাওয়ার প্রাক্কলন করা হয়েছে।

বরাদ্দের শীর্ষে পরিবহন ও যোগাযোগ খাত

একক খাতে বরাদ্দের বেলায় গত কয়েক বছরের মত এবারও এডিপিতে সর্বোচ্চ প্রায় ৭১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে। বিপুল এ অর্থ সড়ক, রেল, আকাশ পথসহ যোগাযোগ অবকাঠামো খাতের উন্নয়ন, রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারে ব্যয় করা হবে।

আগামী অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দের পরিমাণ শতাংশের হিসেবে চলতি অর্থবছরের বরাদ্দের চেয়ে বাড়ানো হয়েছে। প্রস্তাবিত এডিপিতে এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে মোট বরাদ্দের প্রায় ৩০ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের মূল এডিপির তুলনায় এ খাতে বরাদ্দ ছিল ২৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরের মূল এডিপিতে এ খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল ৬১ হাজার ৬৩১ কোটি টাকা। তবে সংশোধিত এডিপিতে তা কমিয়ে ৫৫ হাজার ৮২৭ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। সে হিসাবে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতের জন্য নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বরাদ্দ ২১ শতাংশ বেশি।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম বিভাগের প্রধান খন্দকার আহসান হোসেন বলেন, “সরকার পরের অর্থবছরের জন্য অগ্রাধিকার খাত ও বরাদ্দের নকশা তৈরি করে আমাদের কাছে পাঠান; সেই নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা বরাদ্দ সাজাই।

“প্রত্যেক বছর অর্থ মন্ত্রণালয় এডিপির আকার ও খাতভিত্তিক বরাদ্দের একটা সিলিং আমাদের কাছে পাঠান। সেই সিলিং অনুযায়ী খাতভিত্তিক বরাদ্দগুলো আমরা মন্ত্রণালয়ভিত্তিক প্রকল্পগুলোতে ভাগ করে দেই।”
পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে বরাদ্দের বিষয়ে বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে পারলে ভ্রমণ সময় কমে আসবে। মানুষের কর্মঘণ্টা বাড়বে এবং দেশে বিনিয়োগের ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি হবে।

সার্বিক বিষয়ে তিনি বলেন, “সরকার ইতিমধ্যেই আমদানি নির্ভর উন্নয়ন প্রকল্পের তুলনায় অভ্যন্তরীণ সম্পদ ব্যয় করে বাস্তবায়ন করা যাবে এমন প্রকল্প বাস্তবায়নে জোর দেওয়ার কৌশল নিয়েছে।

“এই কৌশলে যেসব প্রকল্পে বৈদেশিক সহায়তা রয়েছে সেগুলোর জন্য আমদানি করতে হলেও সমস্যা নেই। কারণ সেই আমদানি বিল বৈদেশিক সহায়তা দিয়েই পরিশোধ করা যাবে।”

এই অর্থনীতিবিদ মনে করেন সরকারের এ সিদ্ধান্ত দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি ব্যবস্থাপনায় ‘গুরুত্বপূর্ণ’ ও ‘সঠিক’।

দেশের যোগাযোগ অবকাঠামো বিশেষ করে রাস্তা ঘাট তৈরিতে প্রায় সবকিছুই এখন দেশি পণ্য দিয়ে হচ্ছে। তাই সামষ্টিক অর্থনীতি বিশেষ করে রিজার্ভ ঠিক রাখতে সরকারের এ পদক্ষেপ সঠিক, যোগ করেন তিনি।

খাতওয়ারী সর্বোচ্চ বরাদ্দের প্রস্তাব

>> পরিবহন ও যোগাযোগ; সর্বোচ্চ ৭০ হাজার ৬৯৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা; মোট বরাদ্দের প্রায় ২৯ শতাংশ।

>> বিদ্যুৎ ও জ্বালানি; দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৯ হাজার ৪১২ কোটি টাকা; মোট বরাদ্দের ১৬ শতাংশ।

>> শিক্ষা; তৃতীয় সর্বোচ্চ ২৯ হাজার ৮১ কোটি টাকা ৩৮ লাখ টাকা; মোট বরাদ্দের প্রায় ১২ শতাংশ।

>> গৃহায়ণ ও গণপূর্ত; ২৪ হাজার ৪৯৭ কোটি টাকা; মোট বরাদ্দের প্রায় ১০ শতাংশ।

>> স্বাস্থ্য; প্রায় ১৯ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা; মোট বরাদ্দের প্রায় ৮ শতাংশ।

>> স্থানীয় সরকার; ১৬ হাজার ৪৬৫ কোটি টাকা; মোট বরাদ্দের ৬ দশমিক ৬৯ শতাংশ।

>> কৃষি; ১০ হাজার ১৪৩ কোটি টাকা; মোট বরাদ্দের ৪ দশমিক ১২

শতাংশ।

>> পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন ও পানি সম্পদ; ৯ হাজার ৮৫৯ কোটি

টাকা; মোট বরাদ্দের ৪ শতাংশ।

>> শিল্প; ৫ হাজার ৪০৭ কোটি টাকা; মোট বরাদ্দের ২ দশমিক ২০ শতাংশ। >> বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি; ৪ হাজার ১৬৭ কোটি টাকা; মোট বরাদ্দের ১ দশমিক ৭০ শতাংশ।

অর্থনীতি

দেশ থেকে যে অর্থ পাচার হয়েছে, তা ফিরে আসবে বলে বলে আশায় আছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

তবে কী পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে, তার কোনো হিসাব তার কাছে নেই বলে জানিয়েছেন তিনি।

দেশ থেকে অর্থ পাচার বরাবরই্‌ আলোচনার বিষয় হয়ে থাকছে। হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে বলে বিরোধী রাজনীতিকরা বলে আসছেন।

গত বছর ওয়াশিংটনভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ২০০৯ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত বৈদেশিক বাণিজ্যের আড়ালেই বাংলাদেশ থেকে ৪ হাজার ৯৬৫ কোটি ডলার পাচার হয়।

বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ দাঁড়ায় সোয়া ৪ লাখ কোটি টাকা, যা জাতীয় বাজেটের দুই-তৃতীয়াংশ।

বৃহস্পতিবার প্রবাসীদের সম্মাননা দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০১৯-২০ প্রদান অনুষ্ঠানে অর্থ পাচারের প্রসঙ্গটি আসে।

ব্যবসায়ী ক্যাটেগরিতে সম্মাননা পাওয়া সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রবাসী ওমর ফারুক অনুষ্ঠানে বলেন, “বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে সংযুক্ত আরব আমিরাতে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার যাচ্ছে, বিনিয়োগ হচ্ছে। এসব অর্থ ব্যাংকিং চ্যানেলে নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হোক।”

তার পরিপ্রেক্ষিতে অর্থমন্ত্রী বলেন, “আমাদের কাছে কোনো প্রমাণ নেই অর্থ নিয়ে চলে যাওয়ার। আমরাও শুনছি। পৃথিবীর কয়েকটি দেশ আছে যারা অন্যায় কাজকে প্রশ্রয় দেয়, সংযুক্ত আরব আমিরাতও সেরকম। সেখানে শুধু বাংলাদেশ নয়, অন্যান্য দেশ থেকেই অর্থ যায়।

“আমরা এগুলো শুনি। কিন্তু কোনো প্রমাণ নেই আমাদের কাছে। ফরমাল চ্যানেলের বাইরে (ব্যাংকিং ব্যবস্থার বাইরে) অর্থ লেনদেন কোনো এক সময়ে প্রশ্ন তৈরি করবে। তবে আমরা একটা আশা নিয়ে আছি। সেটা বড় আশা। টাকা যেগুলো যাচ্ছে ..তা আবার ফিরে আসবে। আমরা এমনভাবে সুবিধা দেব, সবাই ফিরে আসবে বাংলাদেশে।”

প্রবাসীরা প্রস্তাব করেন, ওয়েজ আর্নার বন্ড কেনার সীমা তুলে দিয়ে এর অর্থ বিনিয়োগ শেষে ফেরত নিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেওয়ার। বর্তমানে একেজন প্রবাসী সর্বোচ্চ এক কোটি টাকার ওয়েজ আর্নার বন্ড কিনতে পারেন।

এক্ষেত্রে আশ্বাস দিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, “আমরা ধীরে ধীরে ডলার হিসাব ওপেন করছি। ওয়েজ আর্নার বন্ডের অর্থ ফেরত নিয়ে যাওয়া আর সীমা তুলে নেওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করব।”
প্রবাসীদের রেমিটেন্স ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, “ব্যাংকের বাইরে পাঠানো রেমিটেন্স কিন্তু নিরাপদ নয়। রেমিটেন্স পেতে আমরা সবকিছু করব। এখন আমাদের রেমিটেন্স বড় প্রয়োজন।”

মূল্যস্ফীতি ও সরকারের ঋণ নিয়ে মুস্তফা কামাল বলেন, “মূল্যস্ফীতি আন্তর্জাতিকভাবে হচ্ছে। সারা বিশ্বে একই অবস্থা। কিন্তু আমরা সফল হব। বর্তমানে ঋণ-জিডিপির অনুপাত ৩৪ শতাংশ। সবই সহজ শর্তের ঋণ। আমাদের কোনো হার্ড ঋণ নেই। তাই সমস্যা হবে না।”

কোভিড মহামারীতে ২০১৯ সালে রেমিটেন্স পাঠানো প্রবাসীদের সম্মাননা দিতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। এবার ২০১৯ ও ২০২০ সালের জন্য পেশাজীবী, বিশেষজ্ঞ পেশাজীবী ও ব্যবসায়ী ক্যাটেগরিতে ৫৩ জন ও প্রতিষ্ঠানিক পর্যায়ে এক্সচেঞ্জ হাউস এবং ব্যাংক মিলিয়ে ৬৭টি পুরস্কার দেওয়া হয়।

প্রবাসীদের বৈধ পথে রেমিটেন্স পাঠানোয় উৎসাহ দিতে ২০১৪ সাল থেকে রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১৮ সাল পর্যন্ত ১৯৯ জনকে সম্মাননা দেওয়া হয়।

ঢাকার ফার্মগেইট কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনের এই অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী ছিলেন প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির।

গভর্নরও প্রবাসীদের রেমিটেন্স ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠানোর আহ্বান জানান। তিনি আরও বলেন, “প্রবাসীদের জন্য ডলার ইনভেস্টমেন্ট ও প্রিমিয়ার ডলার বন্ড রয়েছে বিনিয়োগ করার। সেখানে বিনিয়োগ করতে পারেন। যা দেশীয় ব্যাংকের সুদহারের চেয়ে বেশি।”

অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শামস্‌-উল ইসলাম বলেন, “রেমিটেন্স আহরণে অগ্রণী ব্যাংক তৃতীয় অবস্থানে। এক সময়ে দ্বিতীয় ছিলাম। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালার কারণে রেমিটেন্স আনতে পারছি না।

“প্রতিযোগিতার বাজারে সকলের জন্য এক রেট বা আমদানি-রপ্তানি রেটের বাইরেও ডলার আনার সুযোগ দেওয়া উচিৎ।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু ফারাহ মো. নাছেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সচিব শেখ মোহম্ম্মদ সলীম উল্লাহও বক্তব্য রাখেন।

অর্থনীতি

পণ্য রপ্তানিতে সুবাতাস বইছে। ধারাবাহিকভাবে আয় ও প্রকৃদ্ধি দুটোই বাড়ছে। সর্বশেষ এপ্রিল মাসে ৪৭৩ কোটি ৮৬ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে।

আয়ের লক্ষমাত্র ধরা হয়েছিলো ৩৩৬ কোটি ৯০ লাখ ডলার। সে তুলনায় আয় বেশি হয়েছে ৪০ দশমিক ৬৬ শতাংশ। এছাড়া গত বছর একই সময় আয় হয়েছে ৩১৩ কেটি ৪৩ লাখ ডলার। সেক্ষেত্রে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় আয় ৫১ দশমিক ১৮ শতাংশ বেশি রপ্তানি হয়েছে।

এদিকে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) রপ্তানি আয়ের লক্ষমাত্র ধরা হয়েছিল ৩৫৯৬ কোটি ৩০ লাখ ডলার। এর বিপরীতে আয় হয়েছে ৪৩৩৪ কোটি ৪৩ লাখ ডলার। সেক্ষেত্রে লক্ষমাত্রার তুলনায় আয় ২০ দশমিক ৫২ শতাংশ বেশি হয়েছে।

এছাড়া গত অর্থবছরের একই সময় আয় হয়েছিল ৩২০৭ কোটি ২৭ লাখ ডলার। গত বছর একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি বেশি হয়েছে ৩৫ দশমিক ১৪ শতাংশ। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

সংস্থাটির তথ্য বিশ্লেষণে আরও দেখা যায়, তৈরি পোশাকের পাশাপাশি হিমায়িত খাদ্য, কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, হোম টেক্সটাইল, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, প্রকৌশল ও রাসায়নিক পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে। বড় খাতের মধ্যে পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি কমেছে।

ইপিবি বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২ হাজার ৯০৫ কোটি ডলার। আয় হয়েছে ৩ হাজার ৫৩৬ কোটি ডলার। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আয় ২১ দশমিক ৭১ শতাংশ বেড়েছে।

এছাড়া গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৫ দশমিক শূন্য ৯৮ শতাংশ। হিমায়িত খাদ্য খাতে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪১ কোটি ডলার। আয় হয়েছে ৪৬ কোটি ডলার। আয় বেড়েছে ১০ দশমিক ৩৯ শতাংশ।

গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ১৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ। কৃষি পণ্য রপ্তানিতে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৯১ কোটি ডলার। আয় হয়েছে ১০৪ কোটি ডলার। আয় বেড়েছে ১৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ২৬ দশমিক ২৯ শতাংশ।

উৎপাদিত পণ্য খাতে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩ হাজার ৪৬২ কোটি ডলার। আয় হয়েছে ৪ হাজার ১৮৩ কোটি ডলার। এ খাতে আয় বেড়েছে ২০ দশমিক ৮৩ শতাংশ। গত বছর একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ৩৫ দশমিক ৬১ শতাংশ। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৮৫ কোটি ২৩ লাখ ডলার। আয় হয়েছে ১০১ কোটি ১৭ লাখ ডলার। আয় বেশি হয়েছে ১৮ শতাংশ। প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ৩২ দশমিক ৯৭ শতাংশ।

অন্যদিকে পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি আয়ের লক্ষমাত্র অর্জন হয়নি। এ খাতে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১১৭ কোটি ৩৯ লাখ ডলার। আয় হয়েছে ৯৬ কোটি ৬৫ লাখ ডলার। আয় কম হয়েছে ১৭ দশমিক ৬৭ শতাংশ। পাশাপাশি গত বছরের তুলনায় ৬ দশমিক ৬৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি কম হয়েছে।

অর্থনীতি

আমদানি থাকলেও খুচরা বাজারে সরবরাহ সঙ্কটের মধ্যে সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৪০ টাকা বাড়িয়েছেন মিল মালিকরা।

নতুন দর অনুযায়ী, খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৮০ টাকা, যা এতদিন ১৪০ টাকা ছিল। বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৬০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৯৮ টাকা করা হয়েছে। ৫ লিটারের বোতলের দাম হবে ৯৮৫ টাকা।

আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে মিল মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করে ভোজ্যতেলের দাম ঘোষণা করা হলেও এবার মিল মালিকরা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে পরামর্শ করে নিজেরাই মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছেন।

ঈদের পর বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফাচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের এক বার্তায় ভোজ্যতেলের নতুন দর ঘোষণা করা হয়।

নতুন মূল্য তালিকা অনুযায়ী, পরিশোধিত পাম সুপার তেল প্রতি লিটারের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য হবে ১৭২ টাকা, যা এতদিন ছিল ১৩০ টাকা।

সেই হিসাবে পাম তেলের দাম বেড়েছে ২৪ শতাংশ। আর সয়াবিনের দাম খুচরায় বেড়েছে ২৮ শতাংশ, বোতলজাতের ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ।

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে ইউক্রেইন যুদ্ধ শুরুর পর  পর সয়াবিনসহ ভোজ্য তেলের দর বিশ্ববাজারে চড়তে থাকায় দেশের ব্যবসায়ীরাও দাম বাড়ানোর পক্ষে বলছিলেন।

এর মধ্যে রোজার ঈদের আগে হঠাৎ করেই খুচরা বাজার থেকে সয়াবিন তেল উধাও হয়ে যায়, যদিও আমদানিতে কোনো সঙ্কট ছিল না।

সর্বশেষ গত ফেব্রুয়ারিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ভোজ্যতেলের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল। বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৬৭ টাকা ও খোলা সয়াবিন তেল ১৪৩ টাকা করে নির্ধারণ করা হয়েছিল।

এরপর আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম বৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে মিল মালিকরা দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে মন্ত্রণালয়ে গেলেও সরকার সায় দেয়নি। গত মার্চের মাঝামাঝিতে তেলের আমদানি, পরিশোধন ও বিক্রয় পর্যায়ে ভ্যাট প্রত্যাহারের পর ঈদের আগে লিটারে ৭ টাকা করে দাম কমানো হয়েছিল।

এই পরিস্থিতিতে এপ্রিল ও মে মাসে ধীরে ধীরে বাজারে সরবরাহ কমিয়ে দিতে থাকেন মিল মালিকরা। দাম বৃদ্ধির আশায় ডিলার ও পাইকারি বিক্রেতারাও তেলের মজুদ শুরু করেন। এসব ঘটনা ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযানে ধরা পড়ে।

কারওয়ান বাজারের একটি মুদি দোকানে বিভিন্ন ধরনের বোতলে খোলা সয়াবিন তেল ভরে সাজিয়ে রাখা হয়েছে বিক্রির জন্য। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

মিল মালিকদের ভাষ্য, বিশ্ববাজারে সয়াবিন তেলের নিয়মিত মূল্য প্রতিটন ১২০০ ডলার থেকে বেড়ে ১৮০০ ডলারে উঠেছে। পরে সেটা কিছুটা কমে ১৬০০ ডলারে থিতু হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটেই দেশের বাজারে তেলের দাম বাড়াতে হচ্ছে।

টিকে গ্রুপের পরিচালক শফিউল আতহার তসলিম মূল্য বৃদ্ধির নতুন সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে বৃহস্পতিবার বলেন, “মিল মালিকরা বাণিজ্য সচিবের সঙ্গে আলাপ করেই তেলের মূল্য বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছেন। আগামী কাল থেকে এই মূল্য কার্যকর হবে।”

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি তেলের বাজার পরিস্থিতি নিয়ে বলেন, “আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়েছে সেটা আমরাও বুঝতে পারছি। ভারতে লিটার ২০৫ টাকা করেছে। ইংল্যান্ডে তেলের বিক্রি সীমিত করে দেওয়া হয়েছে। জার্মানে আরও খারাপ অবস্থা। ব্রাজিল সবচেয়ে বড় সরবরাহকারী, তারাও দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। ইন্দোনেশিয়া রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে, বিশ্বব্যাপী সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এখন বাজারে তেল পাওয়া যাচ্ছে না। বিভিন্ন স্তরের ব্যবসায়ীরা ইচ্ছে করে সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। এখন দেখা যাক তারা কী করে।”

তিনি বলেন, “মিল মালিকরা আমাদেরকে জানিয়েছে। তারা কাল থেকে কার্যকর করবে। দীর্ঘ দেড় মাস বাড়ানো হয়নি। এর মধ্যে দাম অনেক বেড়ে গেছে। তাদের অনেক লস হচ্ছিল। লস হলে তো তারা মার্কেটে তেল দেবে না। আগামী সপ্তাহে আমরা হিসাব করে দেখবো, তারা সঠিকভাবে দাম বাড়ালো কি না?

বাজারে তেল সঙ্কট সম্পর্কে তিনি বলেন, “আমরা সরবরাহ সঙ্কটের জন্য নিয়মিত অ্যাকশন নিচ্ছি। অবৈধ মজুদের জন্য ভোক্তা অধিকার থেকে নিয়েমিত অভিযান করা হচ্ছে, জরিমানা করা হচ্ছে। আশা করছি, মূল্য সমন্বয়ের ফলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।”

অর্থনীতি

আগামী জুন মাসের যেকোনো দিন পদ্মাসেতু চালু হবে। ঈদের ছুটি শেষে দিন-তারিখ নির্ধারণ করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মঙ্গলবার (৩ মে) সকালে মাদারীপুর পৌর ঈদগাহ মাঠে ঈদের নামাজ শেষে মাদারীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খান এ কথা জানান।

শাজাহান খান বলেন, ‘দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ জুনের মধ্যেই পদ্মাসেতু দিয়ে যাতায়াত করতে পারবেন। তবে পদ্মাসেতু চালুর সময় রেল লাইন চালু করা সম্ভব হবে না। পদ্মাসেতু চালুর পরে রেল লাইন চালু হবে। সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। এছাড়া পদ্মাসেতু চালুর আগেই সেতুর টোল নির্ধারণ করা হবে।

তিনি আরও বলেন, ১৯৯৩ সালের ২৫ অক্টোবর প্রথম পদ্মাসেতু নির্মাণের কথা জাতীয় সংসদে প্রস্তাব দিলেও তৎকালীন সরকার তা বাস্তবায়ন করতে পারেননি। দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা ছিল এই সেতু নির্মাণ। নিজেদের অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ করতে পেরে আমরা গর্বিত, এজন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ।

মাদারীপুর পৌরসভার আয়োজনে সকাল ৮টায় ঈদগাহ মাঠে ঈদুল ফিতরের জামাত পড়ান জেলা জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা ইলিয়াস হাবিবুল্লাহ। নামাজে অংশ নেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মাদারীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য শাজাহান খান, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পাভেলুর রহমান শফিক খান, মাদারীপুর পৌরসভার মেয়র খালিদ হোসেন ইয়াদ, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাহান্দার আলী জাহানসহ কয়েক হাজার ধর্মপ্রাণ মুসল্লি। নামাজ আদায় শেষে একে অপরে কোলাকুলি করে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেন তারা।

অর্থনীতি

বর্ষীয়ান রাজনীতিক ও সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ী ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

রোববার দুপুরে মুহিতকে নিয়ে অতীতের স্মৃতি রোমন্থন করে ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি স্ট্যাটাস দেন।

স্ট্যাটাসে ড. মুহাম্মদ ইউনূস লিখেছেন, ‘মুহিত ভাইয়ের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় ওয়াশিংটন ডিসিতে। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে। বাংলাদেশ স্বাধীনতা ঘোষণা করেছে এটা রেডিওতে শুনে আমরা ন্যাশভিলের ছয়জন বাঙালি তাৎক্ষণিকভাবে একত্র হয়ে বাংলাদেশ সিটিজেনস কমিটি গঠন করলাম। প্রত্যেকে এক হাজার ডলার জমা করে একটা তহবিল বানালাম। আমি ওয়াশিংটনে পাকিস্তান দূতাবাসের দ্বিতীয় উচ্চতম ব্যক্তি এনায়েত করিমকে ফোন করলাম। বললাম আমি ওয়াশিংটন রওনা হচ্ছি। সবার সঙ্গে আলাপ করে কর্মসূচি তৈরি করতে হবে। তিনি আমাকে উৎসাহ দিলেন চলে আসার জন্য। ছয় হাজার ডলারের তহবিল সঙ্গে নিয়ে পরদিন ওয়াশিংটনে গিয়ে সোজা উঠলাম এনায়েত করিমের বাসায়, যার সঙ্গে কোনোদিন আমার পরিচয় ছিল না।’

‘এর পর ওয়াশিংটনে প্রায় রাতে মুহিত ভাইয়ের বাসায় সবাইকে নিয়ে বসা আমাদের নিয়মিত কাজ হয়ে দাঁড়ালো। নানা সংবাদ দেওয়া নেওয়া। নানা উত্তেজনাপূর্ণ বিতর্ক। হাতাহাতি। সব কিছুই এই বৈঠকের অংশ হয়ে দাঁড়ালো। যারা ওয়াশিংটনের লোক তারা সারাদিন তাদের অফিস নিয়ে ব্যস্ত থাকে। আমরা কয়েকজন যারা অন্য শহর থেকে এসেছি তারা সার্বক্ষণিক কর্মী হয়ে কাজ করতে থাকলাম। একদিন মুহিত ভাই বললেন- একটা ওয়্যারলেস সেটের জন্য কিছু টাকার দরকার। আমি ন্যাশভিলের ছয় হাজার ডলার তার হাতে দিয়ে দিলাম। আমরা কয়েকজন আরেকটা দায়িত্ব নিলাম। এটা হলো- বিভিন্ন দেশের দূতাবাসগুলোতে গিয়ে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি জানানোর জন্য অনুরোধ জানানো। মুহিত ভাই আমাদের সঙ্গে দূতাবাসগুলোর পরিচয় করিয়ে দিতেন এবং আমাদের ব্রিফ দিতেন কার কাছে কীভাবে আমাদের প্রস্তাবটি উত্থাপন করতে হবে।’

তিনি লেখেন, ‘দেশে ফিরে আসার পর আবার মুহিত ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ হলো তারই উদ্যোগে। তিনি আমার কর্মসূচি সম্পর্কে জানতে চান। তিনি সরকারি চাকরিতে বিরক্ত হয়ে গেছেন। বললেন, তিনি আমার কর্মকাণ্ড চাক্ষুষ দেখতে চান। আমি সানন্দে ব্যবস্থা করলাম। তাকে নিয়ে পুরো একটা দিন টাঙ্গাইলের হাঁটুভাংগা শাখায় কাটালাম। তার হাজারও প্রশ্নের জবাব দিলাম। ঢাকা ফেরার পথে অনেক কথা বললেন। তিনি চাকরি ছেড়ে দেবেন। আমার সঙ্গে গ্রামের মানুষের জন্য কাজ করবেন। তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের শাখা স্থাপন করবেন সিলেটে। পরবর্তীতে শুনলাম তিনি সরকারি চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। তারপর মনে হয় বিদেশ চলে গেছেন। আবার দেখা হলো- ১৯৮২ সালের মার্চ মাসে। কুমিল্লা একাডেমিতে এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে। আমরা দুজনেই সম্মেলনের বক্তা। আগের দিন সন্ধ্যায় অনেক আলাপ হলো। বিশেষ করে গ্রামীণ ব্যাংকের ভবিষ্যৎ নিয়ে। এনিয়ে আমি একটা কনসেপ্ট পেপার লিখেছিলাম। সেটা তাকে দিলাম এবং মুখে সবিস্তারে বুঝালাম। সম্মেলনের পরের দিন সকাল বেলায় আমাদের সবার ঢাকায় ফেরার কথা। কিন্তু হঠাৎ সারা দেশে কারফিউ ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা কুমিল্লায় আটকে গেলাম। দুজনে আরও বহু কথা বলার সুযোগ পেলাম। কারফিউ প্রত্যাহারের পর সন্ধ্যায় ঢাকা ফিরলাম। পরদিন ঘোষণা শুনলাম- মুহিত ভাই নতুন সরকারে অর্থমন্ত্রী হিসেবে যোগ দিয়েছেন। আমি অভিনন্দন জানালাম। তিনি দেখা করার জন্য খবর পাঠালেন। মনে মনে খুশি হলাম এই ভেবে যে, এবার গ্রামীণ ব্যাংককে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার সুযোগ পাবো।’

ড. ইউনূস লেখেন, ‘দেখা করলাম। তারপর ঘটনা এগুতে থাকলো। এক পর্যায়ে এসে গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ জারি হলো। মন্ত্রণালয় থেকে বলা হলো- নতুন ব্যাংকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে। আমরা অনুষ্ঠানের জন্য এক পায়ে খাড়া। কিন্তু মন্ত্রণালয় চায় এটা ঢাকায় করতে। আমরা বেঁকে বসলাম। আমরা বললাম গ্রামীণ ব্যাংকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান গ্রামে হবে। মন্ত্রণালয় কিছুতেই এতে রাজি হবে না। আমি মুহিত ভাইকে ফোন করলাম। তিনি সোৎসাহে বললেন- অবশ্যই এটা গ্রামে হবে এবং আমি সেখানে যাবো।’

‘১৯৮৩ সালের ৩ অক্টোবর টাঙ্গাইলের জামুর্কী গ্রামে ভূমিহীন নারীদের এক বিরাট সমাবেশের মাধ্যমে মুহিত ভাইয়ের উপস্থিতিতে গ্রামীণ ব্যাংকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হলো। তার সঙ্গে আমার দীর্ঘদিনের বহু আনন্দময়, স্বপ্নময়, গৌরবময় স্মৃতিগুলি স্মরণ করে মুহিত ভাইকে আজ বিদায় জানাচ্ছি। আল্লাহ তার রূহের মাগফেরাত দান করুন।’

প্রসঙ্গত, শুক্রবার রাত ১২টা ৫৬ মিনিটে রাজধানীর একটি হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন মুহিত। তিনি ক্যান্সারসহ বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। রোববার তাকে সিলেটে দাফন করা হয়।

অর্থনীতি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন গর্বিত শিক্ষার্থী ও সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের মৃত্যুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

শনিবার (৩০ এপ্রিল) এক শোক-বাণীতে উপাচার্য বলেন, আবুল মাল আবদুল মুহিত ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী।

শিক্ষা, সাহিত্য, অর্থনীতি, পরিবেশ, প্রশাসনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁর অসাধারণ দখল ছিল। বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী বয়োজ্যেষ্ঠ এই রাজনীতিবিদ ছিলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও সমাজ সংস্কারক। অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন বিজ্ঞ এই রাজনীতিবিদ মহান ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। বিশ্ব ব্যাংকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে তিনি অত্যন্ত নিষ্ঠা, সততা ও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন।

স্বাধীনতা পদকে ভূষিত আবুল মাল আবদুল মুহিত একজন খ্যাতিমান লেখকও ছিলেন। সদা হাস্যোজ্বল, সৎ, সাহসী, সজ্জন, সরল এই বিজ্ঞ রাজনীতিবিদের মৃত্যুতে দেশ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্নেহধন্য একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, প্রকৃত দেশপ্রেমিক এবং অর্থনীতিবিদকে হারালো। দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়ন ও রাজনীতিতে অনবদ্য অবদানের জন্য তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন বলে উপাচার্য উল্লেখ করেন।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং তাঁর পরিবারের শোক-সন্তপ্ত সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

আবুল মাল আবদুল মুহিত ২৯ এপ্রিল শুক্রবার দিবাগত রাতে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর।

অর্থনীতি

দেশের অর্থনীতিতে আবারও পাটের সম্ভাবনা বাড়ছে। গার্মেন্টসনির্ভর রপ্তানি খাতকে বহুমুখী করতে সামনে আসছে এক সময়ের গৌরবের সোনালি আঁশ পাট। পাশাপাশি বিশ্বে পরিবেশবান্ধব শিল্প হিসাবেও বাড়ছে পণ্যটির চাহিদা।

আগ্রহ বাড়ছে দেশি বিদেশি উদ্যোক্তাদের। ফলে দায়গ্রস্ত শিল্পটি নিয়ে নতুন করে চিন্তা করছে সরকার। বাংলাদেশে পাটের জীবনরহস্য আবিষ্কারের পর নতুন করে সম্ভাবনা কাজে লাগাতে নানা উদ্যোগের কথা বলছে সরকার।

তবে সাম্প্রতিক সময়ে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে পাট খাতের চাহিদায়। এ কারণে পাট নিয়ে ধীরগতিতে আগানোর পরিকল্পনা রয়েছে সংশ্লিষ্টদের।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এ খাতে সম্ভাবনা কাজে লাগাতে কার্যকর উদ্যোগ জরুরি। জানতে চাইলে তত্ত্বাধবায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, জন্মরহস্য আবিষ্কার হওয়ায় পাটের সম্ভাবনার দ্বার খুলেছে। বিশ্ববাজারেও পাটপণ্যের চাহিদা রয়েছে। ফলে এসব সম্ভাবনা কাজে লাগাতে এ খাতে বিনিয়োগ জরুরি। তিনি বলেন, এ খাতে গবেষণা আরও বাড়াতে হবে।

জানা গেছে, বর্তমানে অর্থনীতির অন্যতম দায় দেশের পাট খাত। মুনাফাতো দূরের কথা, এ খাতকে বাঁচিয়ে রাখতে ১০ বছরে প্রায় আট হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়েছে সরকার। এ সময়ে লোকসান দিয়েছে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা।

দুর্নীতি অনিয়মসহ নানা সীমাবদ্ধতায় এ অবস্থা তৈরি হয়েছে। গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের আওতায় ২০২০ সালের ৩০ জুন রাষ্ট্রায়ত্ত ২৫টি পাটকল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর মধ্যে বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনের (বিজেএমসি) বন্ধ হয়ে যাওয়া ১৭টি জুট মিল ইজারার মাধ্যমে সচলের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

ইতোমধ্যে দুটি চালু হয়েছে। চালু হওয়ার পথে আরো দুটি। বাকি ১৩টি মিল ইজারায় নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে ১৮টি দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে দুটি ভারতীয় প্রতিষ্ঠানও রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাট খাতের এই দুরবস্তার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ চিহ্নিত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সীমাহীন দুর্নীতি, অদক্ষতা, আধুনিক প্রযুক্তির অভাব, শ্রমিক ইউনিয়নের স্বেচ্ছাচারিতা, সুস্থ প্রতিযোগিতার অভাব এবং সরকারের অবহেলা। তবে সম্ভাবনাও কম নয়। কারণ বিশ্বে পাট ও পাটজাত পণ্যের বাজার পাঁচ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের।

এর মধ্যে চীনের দখলে অধিকাংশ বাজার থাকলেও বাংলাদেশের অবস্থান আছে ছোট আকারে। তবে ২০১৮ সালে ইউরোপের বাজারে সিনথেটিক পণ্য নিষিদ্ধ হয়েছে। পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী বাড়ছে বায়োডাইবারসিফিকেশন ব্যাগ ও পণ্যের চাহিদা যা বাংলাদেশের জন্য নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

জানা গেছে, ২০১৩ সালে দেশীয় পাটের জন্মরহস্য আবিষ্কার করেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা। ফলে জীবাণু প্রতিরোধক পাট উৎপাদন করা সম্ভব হবে। আর এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতেই নানা উদ্যোগ। এদিকে পলিথিনের মোড়ক ব্যবহার করে পণ্য বাজারজাত করে এমন কোম্পানির ওপর এক শতাংশ ইকো ট্যাক্স আরোপ করা হয়। অবৈধ পলিথিন নির্মূল ও পলিথিন রি-সাইক্লিংয়ের জন্য এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো সূত্র জানায়, পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করে ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ ১১৬ দশমিক ১৪ লাখ ডলারের সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করেছে। আর চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৪২ কোটি ডলারের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে যা গত অর্থবছরের চেয়ে ২৬ কোটি ডলার বেশি। পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে প্রতি বছর ১২ দশমিক ৩৫ লাখ একর জমিতে পাট চাষ হয়। মোট উৎপাদনের ৭৫ শতাংশই দেশে ব্যবহার হয়।

জানা গেছে, ২০০টি পাটকল রয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনের (বিজেএমসি) আওতায় ২২টি, বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজেএসএ) আওতায় ৮১টি এবং বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশনের আওতায় ৯৭টি। সরকারি হিসাবে তিন খাতে মোট শ্রমিক এক লাখ ৫৬ হাজার ৫৪৯।

১৯৫১ সালে প্রতিষ্ঠা হয়েছিল আদমজী পাটকল। পরে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনা অঞ্চলে গড়ে ওঠে অনেক পাটকল যার বেশির ভাগই ছিল লাভজনক। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে প্রথমে ৬৭টি পাটকলকে সরকারি নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়। পরে আরও ৮২টি পাটকল সরকারি করে বিজেএমসির আওতায় আনা হয়। কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর নেতৃত্ব ও কর্মপরিকল্পনায় কার্যকর কোনো পদক্ষেপ কখনো নেওয়া হয়নি, যা ক্রমশ পাটকলগুলোকে দুর্বল করেছে।

সূত্র আরও জানায়, দেশে পাট খাতে এখন বেশ সাড়া মিলেছে। এ জন্য প্রায় এক দশক পরে নীতিমালা তৈরি হয়েছে। এই নীতিতে বন্ধ হওয়া সরকারি পাটকলগুলো ক্রমান্বয়ে চালুর ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার এবং পাটপণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে আইনগত প্রতিবন্ধকতা দূর করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

পাটবীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনায় বিএডিসির সক্ষমতা বাড়ানো, পাটচাষিদের অর্থ সংকট লাঘবে সহজ শর্তে ঋণ প্রদান, বিক্রয়ের সঙ্গে সঙ্গে পাটচাষিরা অর্থ পেয়ে যান-এসব বিষয় পাটনীতিতে স্পষ্ট করে তুলে ধরা হচ্ছে।

বর্তমানে ভারত, পাকিস্তান, আইভোরি কোস্ট, ব্রাজিল, ইথিওপিয়া, জার্মানি, স্পেন, ইংল্যান্ড, মিসর, চীন, জাপানসহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের কাঁচা পাট ও পাটজাত পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। দেশের ভেতরেও পাটজাত পণ্যের বাজার সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখছে বেসরকারি পাটকলগুলো। তবে সম্ভাবনার পাশাপাশি এ খাতে সমস্যাও কম নেই।

উন্নত জাতের বীজ, আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার, দক্ষ শ্রমিক, পণ্য বৈচিত্র্যকরণ ও বিপণন কৌশলের অভাব রয়েছে পাটশিল্পে। সহযোগিতাও নেই পাট গবেষণায়। এসব দিকে এখনই নজর না দিলে বিশ্ববাজারে অবস্থান ধরে রাখা কঠিন হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতকেও এগিয়ে আসতে হবে। এ জন্য গুরুত্ব দিতে হবে বীজ উৎপাদনে। কারণ মানসম্মত বীজের অভাব রয়েছে।

জানা গেছে, স্থানীয়ভাবে সাড়ে ১২শ টন উৎপাদন হলেও পাটবীজের বার্ষিক চাহিদা প্রায় পাঁচ হাজার টন। ফলে ভারত বা চীন থেকে প্রতি বছর বীজ আমদানিতে চলে যাচ্ছে বড় অঙ্কের অর্থ। তবে পাট খাতে সরকারি বিনিয়োগে অসন্তোষ অবস্থানে রয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।

এ সংস্থার মতে, অদক্ষতা, লুটপাট, শ্রমিক অসন্তোষের কারণে লোকসানি মিলগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে নতুন করে পাটের পুনর্জাগরণের ফলে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়েছে।