অর্থনীতি

আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কিছুটা নিম্নমুখী হওয়ায় দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম কমিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)।

বুধবার থেকে দেশের বাজারে ভা‌লো মানের স্বর্ণের দাম ভরিতে এক হাজার ১৬৬ টাকা ক‌মি‌য়ে সোনার নতুন দাম নির্ধারণ করেছে বাজুস।

ফলে দে‌শের বাজা‌রে ভা‌লো মা‌নের স্বর্ণ প্রতি ভ‌রির দাম ক‌মে দাঁড়াচ্ছে ৭৮ হাজার ১৫৯ টাকা। বুধবার থেকে স্বর্ণের এই নতুন দাম কার্যকর হবে।

মঙ্গলবার বাজুসের মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এম এ হান্নান আজাদ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বাজুসের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণ কিনতে বুধবার থেকে খরচ পড়বে ৭৮ হাজার ১৫৯ টাকা। মঙ্গলবার পর্যন্ত এই মানের স্বর্ণ প্রতি ভরি বিক্রি হচ্ছিল ৭৯ হাজার ৮২৫ টাকায়।

২১ ক্যারেটের স্বর্ণের দাম ১০৫০ টাকা ক‌মি‌য়ে ৭৪ হাজার ৬৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা মঙ্গলবার পর্যন্ত ৭৫ হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল।

এছাড়া ১৮ ক্যারেটের ৯৩২ টাকা ক‌মে প্রতি ভরির দাম দাঁড়িয়েছে ৬৪ হাজার ৩৫ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরির দাম ৭০০ টাকা ক‌মি‌য়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৩ হাজার ৩৬৩ টাকা।

স্বর্ণের দাম কমালেও রূপার দাম অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। ক্যাটাগরি অনুযায়ী ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি রূপার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫১৬ টাকা। ২১ ক্যারেটের রূপার দাম ১৪৩৫ টাকা, ১৮ ক্যারেটের ১২২৫ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির রূপার দাম ৯৩৩ টাকায় অপরিবর্তিত রাখা হ‌য়েছে।

এর আগে গত ৮ মার্চ স্বর্ণের দাম বাড়িয়েছিল বাজুস।

অর্থনীতি

পটুয়াখালীর পায়রার তীরে দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হতে যাচ্ছে এ মাসে, যে কেন্দ্র ঘিরে বিদ্যুৎ উৎপাদনের একটি ‘হাব’ গড়ে তোলার লক্ষ্য রয়েছে সরকারের।

আসছে ২১ মার্চ ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেদিন তিনি দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়নেরও ঘোষণা দেবেন।

সেই আয়োজন সামনে রেখে সোমবার বিদ্যুৎ ভবনে মিট দ্যা রিপোর্টার্স অনুষ্ঠানে হাজির হন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি বলেন, “দেশের সর্বপ্রথম এবং বিশ্বের দশম দেশ হিসেবে আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির বিদ্যুতকেন্দ্র উদ্বোধন হতে যাচ্ছে।”

বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ মালিকানার কয়লাভিত্তিক এ কেন্দ্রটির ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার প্রথম ইউনিট থেকে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ শুরু হয়েছিল ২০২০ সালের মে মাসে। ওই বছরের শেষ দিকে চালু হয় দ্বিতীয় ইউনিট। এখন এর উদ্বোধনের আনুষ্ঠানিকতা সারা হবে।

দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে সরকার এক দশক আগে বেশ কয়েকটি কয়লা ও পরমাণু জ্বালানিভিত্তিক বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরের সময় ২০১৪ সালে বাংলাদেশের নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার কোম্পানি ও চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশনের (সিএমসি) মধ্যে চুক্তি হয়। পরে গঠিত হয় বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড।
যৌথ উদ্যোগের ওই কোম্পানির ব্যবস্থাপনায় পায়রার এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ পায় চীনের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এনইপিসি ও সিইসিসি কনসোর্টিয়াম।

কেন্দ্রটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় আড়াইশো কোটি মার্কিন ডলার। নির্মাণ ব্যয়ের সিংহভাগ অর্থায়ন করেছে চীনের এক্সিম ব্যাংক।

পদ্মা সেতুর মাধ্যমে ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি এবং দক্ষিণাঞ্চলের শিল্পোন্নয়নে পায়রাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের হাব গড়ে তোলার ঘোষণা এর আগেই সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে।

পটুয়াখালীর কলাপাড়ার ধানখালীতে প্রায় এক হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করে উন্নয়ন করা হয়েছে, যেখানেই নির্মীত হয়েছে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র।

প্রথম কেন্দ্রের কাজ শেষে ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরেকটি কয়লাবিত্তিক আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কেন্দ্রের নির্মাণ চলছে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এএম খোরশেদুল আলম। ওই কেন্দ্র নির্মাণে ২০০ কোটি ডলারের বেশি ব্যয় ধরা হয়েছে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, “পায়রাতে আমরা বিভিন্ন ধরনের জ্বালানির ১২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করব। এছাড়া আমরা গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণ করতে যাচ্ছি। এখানে একটা ভাসমান টার্মিানলও নির্মাণ করা হবে।”

বিদ্যুতের দাম ও বিপুল ক্যাপাসিটি চার্জ

নির্মাণ শুরুর সময় বলা হয়েছিল, পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম পড়বে ৬ টাকা ৬৫ পয়সা। কিন্তু বর্তমানে এর চেয়ে অনেক বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।

ইন্সটিটিউট অব এনার্জি ইকোনমিক্স অ্যান্ড ফ্যাইন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিসের (আইইএফএ) সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পায়রা কেন্দ্র থেকে সরকার প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ কিনছে ৮ টাকা ৬০ পয়সা দরে।

আইইএফএ-র প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছর (২০২০-২০২১) বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়ার হার বেড়ে ১৫০ কোটি মার্কিন ডলার হয়েছে। আর পিডিবির লোকসান হয়েছে ১৪০ কোটি মার্কিন ডলার।
বিদ্যুৎকেন্দ্রের উদ্যোক্তাদের যাতে লোকসান না হয়, সে জন্য অন্যান্য ব্যয়ের সঙ্গে বিনিয়োগ করা অর্থ হিসাব করে একটি নির্দিষ্ট হারে ক্যাপাসিটি চার্জ নির্ধারণ করা হয়। বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ থাকলেও উদ্যোক্তারা এ অর্থ পান। রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল কেন্দ্রের মেয়াদ কম থাকে বলে ক্যাপাসিটি চার্জও হয় বেশি।

ইনডিপেনডেন্ট বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ কেনার হার বেড়ে যাওয়ায় লোকসান যেমন বাড়ছে, তেমনি বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানোর ফলে ক্যাপাসিটি চার্জও বেড়ে যাচ্ছে বলে আইইএফএ এর প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে।

ক্যাপাসিটি চার্জ বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে প্রতিমন্ত্রীকে বলেন, “ক্যাপাসিটি চার্জ হচ্ছে বিনিয়োগের অংশ। আমরা যদি এটিই সরিয়ে দিই, তাহলে কেউ তো আর বিনিয়োগ করতে আসবে না। পিডিবিকেও কিন্তু দিতে হচ্ছে (ক্যাপাসিটি চার্জ)। তার থেকে যদি বিদ্যুৎ নাও নিই, তাও দিতে হচ্ছে।”

পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এএম খোরশেদুল আলম বলেন, কয়লার দামের ওঠানামার ওপরেও তার কেন্দ্রের বিদ্যুতের দাম নির্ভর করবে।

বাংলাদেশে সোলার ও ক্যাপটিভ মিলিয়ে বিদ্যুতের উৎপাদনক্ষমতা প্রায় ২৫ হাজার মেগাওয়াট। সরকারের মহাপরিকল্পনায় এই উৎপাদন ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াটে নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে।

নসরুল হামিদ বলেন, “ক্যাপাসিটি রেখেই আমাকে কাজ করতে হবে। কোনো কারণে কোনো প্ল্যান্ট বন্ধ হয়ে গেলে তখন কী করব? সবসময় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বেশি ক্যাপাসিটি রাখতে হয়। জাপানে ১০০ শতাংশ। ক্যাপাসিটি রাখলেইতো নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ।”

প্রতিমন্ত্রী বলেন, “ক্যাপটিভ বাদ দিলে আমাদের এখানে অতিরিক্ত ক্যাপাসিটি ৩০ শতাংশও নেই। কাজেই যারা বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে ক্যাপাসিটি চার্জের কথা বলেন, আমাদের ওইদিকে না গিয়ে বলতে হবে বিনিয়োগের পার্ট।”
সরকার এখানে বিনিয়োগ না করলে, ভর্তুকি না দিলে শতভাগ বিদ্যুতায়ন হত না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

পায়রায় পূর্ণ সক্ষমতায় উৎপাদন কবে?

পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের স্থাপিত উৎপাদনক্ষমতা ১৩৪৪ মেগাওয়াট হলেও উৎপাদন হচ্ছে এর এক তৃতীয়াংশ। পিডিবির তথ্য অনুযায়ী, সোমবার পিক আওয়ারে পায়রায় ৫৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হতে পারে।

মূলত সঞ্চালন লাইন সম্পূর্ণ না হওয়ায় কেন্দ্রটি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো যাচ্ছে না বলে জানান এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক খোরশেদুল আলম।

তিনি বলেন, কেন্দ্র নির্মাণ হলেও পদ্মা সেতুর কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত ঢাকার সঙ্গে সঞ্চালন লাইন সংযুক্ত করা যাচ্ছে না। এজন্য পূর্ণ উৎপাদন ক্ষমতাও কাজে লাগানো যাচ্ছে না।

বর্তমানে পায়রায় যে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে, তা দিয়ে আশপাশের জেলার চাহিদা মেটানো হচ্ছে এবং এপ্রিলে এই কেন্দ্রের বিদ্যুৎ খুলনা ও যশোরেও পৌঁছানো যাবে। তখন কেন্দ্রের ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ বিদ্যুৎ ব্যবহার করা যাবে।

সঞ্চালন লাইন নির্মাণে সমস্যার কথা তুলে ধরে নসরুল হামিদ বলেন, “সঞ্চালন একটা দুরূহ ব্যাপার হয়ে গেছে। জায়গার অভাব। নদী, নালা। কারো জায়গার ওপর দিয়ে গেলে মামলা মোকদ্দমায় পড়তে হয়। তারপরও কোভিডের মধ্যে আমাদের কাজ কিন্তু বন্ধ থাকেনি।

এ বছর ডিসেম্বরেই পায়রায় পূর্ণ ক্ষমতায় বিদ্যুৎ উপাদন করা যাবে বলেন জানান তিনি।

কয়লা আসছে কীভাবে

১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুতকেন্দ্র চালানোর জন্য প্রতিদিন প্রায় ১২ হাজার মেট্রিক টন কয়লার প্রয়োজন। ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে ১০ বছরের চুক্তি অনুযায়ী সেখান থেকেই কয়লা কেনা হচ্ছে।

বিদ্যুতকেন্দ্রের কয়লা ওঠানামা করার জন্য কেন্দ্রের সঙ্গেই জেটি করা হয়েছে। সেই জেটি থেকে কনভেয়ার বেল্টে করে স্টোরেজে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কয়লা।

বিদ্যুতকেন্দ্রের জন্য জাহাজ থেকে কয়লা খালাস করতে পায়রা বন্দর ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই বলে জানান খোরশেদুল আলম।

অর্থনীতি

আসন্ন রোজা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির অজুহাতে নিত্যপণ্যের দাম লাগামহীনভাবে বেড়েই চলছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে ভোজ্যতেল, চিনি ও ছোলার ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়েছে।

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে এলসি মার্জিন প্রত্যাহার করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এসব পণ্য আমদানির বিপরীতে এলসি কমিশন ন্যূনতম পর্যায়ে রাখার জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এতকিছুর পরও বাজার লাগামহীন।

নিত্যপণ্যের অগ্নিমূল্যে মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে জীবনযাত্রার অন্যান্য সেবা, খাদ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা ব্যয়ও। প্রায় সব খাতেই বাড়তি ব্যয় সামাল দেওয়ার মতো আয় বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে কমাতে হচ্ছে খাদ্য, বিনোদন ও অন্যান্য চাহিদা।

সূত্র জানায়, করোনার সংক্রমণ কমার পর হঠাৎ করে চাহিদা বৃদ্ধি ও সরবরাহ সংকটের কারণে আন্তর্জাতিকসহ দেশীয় বাজারে প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ছে। আসন্ন রমজান ঘিরে ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফার প্রবণতায় পণ্যের দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে।

গত এক মাসের ব্যবধানে মোটা চালের দাম বেড়েছে সাড়ে ৪ শতাংশ, চিকন চালের দাম সোয়া ৩ শতাংশ, আটার দাম ৯ শতাংশ, মসুর ডালের দাম ৯ শতাংশ, পেঁয়াজের দাম প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে।

ভোজ্যতেলে দাম লিটারে সর্বোচ্চ বেড়েছে ১৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ। প্রতিকেজি আদা ১৫ শতাংশ ও রসুন ১৪ শতাংশ, গরু ও খাসির মাংসের দাম প্রায় ৬ শতাংশ বেড়েছে। পাশাপাশি প্রতিকেজি চিনির দাম ৩ দশমিক ২৭ শতাংশ বেড়েছে।

প্রতিহালি ডিমের দাম বেড়েছে ২ দশমিক ৭৮। এছাড়া জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধিতে পরিবহণ খরচ ও সেচ খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় সবজির দাম বেড়েছে গড়ে ৪ শতাংশ।

এভাবে সব পণ্য ও সেবার দাম বেড়েছে। গত এক মাসের ব্যবধানে তো আয় বাড়েইনি। গত এক বছরের ব্যবধানেও বাড়েনি। উলটো অনেকের আয় কমেছে। ফলে ভোক্তাদের জীবনযাত্রার মানের সঙ্গে আপস করে খাদ্য ও অন্যান্য ক্ষেত্রে ছাড় দিতে হয়েছে।

এর মধ্যে খাদ্যে বাজেট কমছে। একই সঙ্গে শিক্ষা ও চিকিৎসা ও যাতায়াত ভাড়া খাতে ব্যয় কমছে। ফলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ভালো শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। একই সঙ্গে খাদ্য বাজেটে কাটছাঁট করায় পুষ্টি গ্রহণের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়ার শঙ্কা আছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপেও পুষ্টিকর খাদ্যের অভাবে অপুষ্টিতে ভোগার তথ্য উঠে এসেছে। পণ্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে মানুষ যে কতটা অসহায় তা একজন ভোক্তার বক্তব্য থেকে পষ্ট হয়ে ওঠে।

রাজধানীর কাওরান বাজারে কথা হয় একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা মো. শফিউদ্দিনের (ছদ্মনাম) সঙ্গে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, দুই ছেলে, স্ত্রী ও বৃদ্ধ মাকে নিয়ে আমার পরিবার।

সেগুনবাগিচা এলাকায় থাকি। চাকরি করে বেতন পাই ৫৫ হাজার টাকা। এই বেতন দিয়ে গত দুই বছর আগেও পরিবার নিয়ে বেশ ভালো ছিলাম। কিন্তু এখন ভালো নেই।

এখন সংসারের চাহিদা মেটাতে পারছি না। অভাব কাটছে না। এই আয় দিয়ে ব্যয় সামলাতে পারছি না। প্রতিমাসেই ধারদেনা করে চলতে হচ্ছে। তিনি বলেন, যে বাসায় থাকি তার ভাড়া ২০ হাজার টাকা।

বড় ছেলে অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র। প্রতি সেমিস্টারে (৪ মাস) তার পড়ার খরচ ৩৫ হাজার টাকা। সেমিস্টারে ফি’র জন্য প্রতিমাসে সাড়ে ৮ হাজার টাকা করে রাখতে হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াতসহ ছেলেকে হাতখরচ দিতে হয় মাসে সাড়ে ৪ হাজার টাকা। ছোট ছেলে নবম শ্রেণিতে পড়ে। মাসে যাতায়াত খরচসহ স্কুল ফি ৬ হাজার টাকা।

এর পর পরিবারের ৫ সদস্যের জন্য মাসে চাল দরকার ৩৫-৪০ কেজি। ৬৫ টাকা কেজি ধরলেও প্রায় ২৬০০ টাকা হয়। মাসের শুকনা বাজারসহ মাছ-সবজিসহ অন্যান্য পণ্য কিনতে যায় ১০ হাজার টাকা।

গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির বিল চার হাজার টাকা। এতেই বেতনের টাকা শেষ। এরপর আছে আমার নিজের অফিসে যাতায়াত খরচ, চিকিৎসা, ছেলেদের বইখাতা-কলমসহ অন্যান্য ব্যয়।

এক সময় ভালো খাওয়ার অভ্যাস ছিল। এখন সব ভুলে গেছি। বাজারে সবকিছুর দাম বাড়তি। চাল থেকে শুরু করে ডাল এমনকি চিনি-লবণ পর্যন্ত বাড়তি দরে কিনতে হয়। পেঁয়াজ ও তেলের দাম আকাশচুম্বী। মাংস তো কেনাই যায় না। সবজির দামও অনেক। তাই যা জুটছে তা কিনে খেয়েপরে বাঁচতে হচ্ছে। এসব দেখার কেউ নেই।

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, পণ্যের বেসামাল দামে মধ্যবিত্ত অসহায়। তার চেয়ে বেশি অসহায় হয়ে পড়েছে নিুআয়ের মানুষ। সব মিলে এই দুই শ্রেণির

মানুষের আয়ের সঙ্গে পরিবারের সব ব্যয় সামলাতে

পারছে না। প্রতিনিয়ত হিমশিম খাচ্ছে। অনেকেই ব্যয় সামলাতে খাবার কেনার বাজেট কাটছাঁট করছেন।

কম করে পণ্য কিনছেন। এতে পুষ্টির অভাব হচ্ছে। এই পরিস্থিতি থেকে মানুষকে বের করে আনতে হবে। পণ্যের দাম কমাতে সঠিক উদ্যোগ নিতে হবে।

কঠোর বাজার তদারকির পাশাপাশি যেসব পণ্য আমদানি করে চাহিদা মেটাতে হয়, সেসব পণ্যের সব ধরনের ভ্যাট/শুল্ক প্রত্যাহার করতে হবে। মজুত বাড়াতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে বেশি করে পণ্য ভর্তুকি মূল্যে খোলাবাজারে ছাড়তে হবে।

ব্যবসায়ীদের একটি নিয়মের মধ্যে আসতে হবে। এসবের পাশাপাশি যেসব পণ্য উৎপাদন করা হয়, কৃষি খাত থেকে বাজার পর্যন্ত সার্বিক তদারকির আওতায় আনতে হবে।

এছাড়া জীবনমান ভালো রাখতে জ্বালানি, পানি ও গ্যাসের দাম কমাতে হবে। তিনি আরও বলেন, মধ্যবিত্ত মানুষের এখন আর স্বাদ আহ্লাদ বলতে কিছু নেই। পরিবার নিয়ে আয়ের সঙ্গে ব্যয় সামলিয়ে চলাই দায় হয়ে গেছে। এখন এসব বিষয়ে ভাবার সময় এসেছে। কারণ দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।

সূত্র জানায়, জ্বালানি তেলকে অর্থনীতির লাইফ লাইন হিসাবে অভিহিত করা হয়। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে ও মানুষের জীবনযাপনে সবকিছুতেই জ্বালানি তেলের ভূমিকা রয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম হু-হু করে বাড়ছে।

গত আগস্টে ছিল প্রতি ব্যারেল ৬০ ডলার। এখন তা বেড়ে ১১২ ডলারে উঠেছে। জ্বালানি তেলের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্য পরিবহণ ব্যয় ৬০ শতাংশ বেড়েছে। ফলে সব ধরনের পণ্যের আমদানি ব্যয় বেড়েছে।

দেশে ডলারের দাম বেড়েছে প্রায় ৯ শতাংশ। এর সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধি তো আছেই। বিশ্ববাজারে এক মাস আগে প্রতিটন গমের দাম ছিল ২৩৫ ডলার। এখন তা বেড়ে হয়েছে ২৭৮ ডলার।

ফলে দেশের বাজারেও মনপ্রতি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা বেড়েছে। খুচরা বাজারে কেজিতে ৩৫ থেকে বেড়ে ৪৫ টাকা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিনের দাম প্রতিটন ছিল ১ হাজার ১০০ ডলার। এখন তা বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৮৩০ ডলার। দাম আরও বাড়ছে। এদিকে বাজারে সয়াবিনের লিটার বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকার বেশি দামে।

বিশ্ববাজারে এসব পণ্যের দাম বাড়লেও দেশে এখনই এর প্রভাব পড়ার কথা নয়। কারণ এখন যেসব পণ্য বাজারে আছে সেগুলো আমদানি হয়েছে ৪ থেকে ৫ মাস আগে। যেসব পণ্য আসছে সেগুলোর এলসি খোলা হয়েছে কমপক্ষে ২ মাস আগে।

ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লেও দেশের বাজারে এখনই এসব পণ্যের দাম বাড়ার কথা নয়। বাড়তি দামে যেসব এলসি খোলা হয়েছে সেগুলো দেশে আসতে আরও দুই মাস সময় লাগবে। এগুলো পরিশোধন করে বাজারে আসতে লাগবে কমপক্ষে এক মাস।

ফলে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে দাম বৃদ্ধির কথা নয়। কিন্তু ব্যবসায়ী এখনই দাম বাড়ানোর জন্য সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। সরকার দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব নাকচ করে দিলে সয়াবিন তেলের কৃত্রিম সংকট করে দাম বাড়ানো হয়েছে।

বাজার তদারকি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, রমজানসহ ধর্মীয় উৎসবে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী পণ্যের দাম বাড়িয়ে অতিমুনাফা করার চেষ্টা চালায়।

এবারও একই ঘটনা ঘটানোর পাঁয়তারা চলছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে বেশকিছু পণ্যের দাম বেড়েছে। এছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধকে হাতিয়ার করে পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। এতে ক্রেতার নাভিশ্বাস বাড়ছে।

তবে ভোক্তার স্বস্তি ফেরাতে আমরা বসে নেই। বিশেষ তদারকি টিম করে বড়-ছোট সব স্থানে অভিযান পরিচালনা করছি। যেখানে অনিয়ম সেখানেই পৌঁছে গিয়ে আইনের আওতায় আনছি। গত কয়েকদিনের তুলনায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। আশা করি পরিস্থিতি আরও স্বাভাবিক হয়ে আসবে।

সূত্র জানায়, চালের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে সামান্য বেড়েছে। আমদানি করা চালের চেয়ে বাজারে দেশি চালই বেশি। দেশে ধানের বাম্পার ফলন হচ্ছে। মজুত ও সরবরাহও বেশি। তারপরও এর দাম কেজিতে ৪ থেকে ৭ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম কমতে শুরু করেছে। যুদ্ধ শুরুর পর প্রতিটন চিনি ৪০৯ ডলারে উঠেছিল। এখন তা কমে ৩৯৬ ডলারে নেমেছে। আগে ছিল ৩৫০ ডলার। আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম কমলেও খুচরা বাজারে কমেনি। প্রতিকেজি ৮৫ টাকা দরেই বিক্রি হচ্ছে।

ফার্মের মুরগি ও ডিমের দাম শীতে কম থাকে। কারণ এ সময়ে উৎপাদন বেশি হয় এবং মুরগির আয়ুষ্কাল কম থাকে বলে ব্যবসায়ীরা তা বাজারে দ্রুত বিক্রি করে দেন।

গত বছর এই সময়ে প্রতিকেজি ফার্মের মুরগি ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এখন বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা কেজি। ডিসেম্বরে এক ডজন ডিম ৮৫ টাকা থেকে বেড়ে ১১৫ টাকা হয়েছে। এছাড়া ডাল, ছোলা, মসলা, মাছ, মাংসের দামও বেড়েছে।

এদিকে বেসরকারি বিভিন্ন গবেষণা সংস্থার হিসাবে দেখা যায়, করোনার কারণে গত দুই বছরে মানুষের আয় কমেছে। এতে আড়াই কোটি লোক নতুন করে দারিদ্র্যের আওতায় নাম লিখিয়েছিল।

অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রমের ফলে কিছু মানুষের আয় বাড়ায় নতুন দারিদ্র্যের আওতা থেকে বেরিয়ে এসেছে। এখনো ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে রয়ে গেছে।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ভোগ্যপণ্যের মধ্যে বিশেষ করে চালের দাম বাড়লে স্বল্প আয়ের প্রায় ১ কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যায়। এ কারণে চালসহ ভোগ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে দারিদ্র্য বিমোচন প্রক্রিয়াটি টেকসই হবে না।

অর্থনীতি

ইউক্রেনে হামলা করার কারণে রাশিয়ার তেল, গ্যাস ও অন্যান্য জ্বালানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইউরোপের দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, তারাও যেন রাশিয়ার জ্বালানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেন।

বিশেষ করে ইউরোপের সবচেয়ে বড় জোট ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি আহ্বান জানান বাইডেন।

তবে বাইডেনের এ আহ্ববান প্রত্যাখান করে দিয়েছে ইউরোপের বেশিরভাগ দেশ।

শুক্রবার হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওরবান সরাসরি জানিয়েছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার জ্বালানির ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা দেবে না।

ফ্রান্সে ইউরোপীয়ান নেতাদের একটি আলোচনায় সভা চলার সময় এমন কথা জানান ভিক্টর ওরবান।

রাশিয়ার তেল ও গ্যাসের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার বিষয়টি ইউরোপের জন্য অবাস্তব। কারণ ইউরোপের বেশিরভাগ দেশ রুশ জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল।

হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে বলেন, আমাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুর সিদ্ধান্ত আমাদের অনুকূলে গেছে। (রাশিয়ান) গ্যাস ও তেলের ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা থাকবে না। তার মানে হাঙ্গেরির জ্বালানির বিষয়টি সামনের দিনগুলোতে নিশ্চিত থাকল।

অর্থনীতি

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে রোজার মাসে ক্রেতাদের ন্যায্যমূল্যে পণ্য সরবরাহ নির্বিঘ্ন রাখতে ছোলা, ডাল, চিনি এবং সয়াবিন তেলের সংগ্রহ বাড়াচ্ছে সরকারি বিপণন সংস্থা (টিসিবি)।

বৃহস্পতিবার সরকারি ক্রয় ও অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য দেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

ওই বৈঠকে টিসিবির মাধ্যমে বিতরণের জন্য ১ কোটি ৭১ লাখ লিটার ভোজ্যতেল, ১৪ হাজার মেট্রিক টন চিনি, ১৯ হাজার মেট্রিক টন মশুর ডাল ও ১০ হাজার মেট্রিক টন ছোলা ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। মানুষের কষ্ট রোধে ইউনিয়ন পর্যায়ে টিসিবির কার্যক্রম ছড়িয়ে দেওয়া হবে।

বৈঠক শেষে সংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, রজমান মাসে যেসব পণ্যের চাহিদা বেশি সেগুলো থেকেই ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়েছে। পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে সরকারের পক্ষ থেকে যে পরিমাণ সহযোগিতা দরকার- তা পূর্ণমাত্রায় দেওয়া হচ্ছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, ভোজ্যতেলের ওপর উৎপাদন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ এবং ভোক্তা পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট রয়েছে। সেটি আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত মওকুফ করা হয়েছে। এ ছাড়া চিনি ও ছোলারও ওপর আরোপিত ভ্যাট তুলে নেওয়া হয়েছে।

অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত হয় দু’টি বৈঠক। টিসিবির পণ্য কেনার ক্ষেত্রে সরকারের পরিকল্পনা কী জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, টিসিবি অর্থনীতির মেরুদণ্ড। অর্থনীতিতে পণ্যের মজুদ দরকার, পাশাপাশি ভোক্তার কাছে সময় মতো ন্যায্যমূল্যে পৌছানো গুরুত্বপূর্ণ। আপনারা জানেন জিনিসপত্রের অভাবে কোনো বিপদ ঘটে না। বিপদ ঘটে যদি বিতরণ ব্যবস্থায় ব্যত্যয় হয়। সময়মতো বিতরণ করতে না পারলে দেশে বা বিদেশে যেখানের গুদামে পণ্য থাকুক কোনো লাভ হয় না।

তিনি আরও বলেন, টিসিবিকে আরও কার্যকর করে গড়ে তোলা হচ্ছে। প্রতিটি ইউনিয়ন পর্যায়ে টিসিবিকে নিয়ে যাব। যাতে কোনো মানুষ কষ্ট না পায়। এক কোটি পরিবারকে টিসিবির আওতায় আনা হচ্ছে। ভোজ্যতেল দিয়ে শুরু করছি। এরপর অন্যান্য পণ্য দেওয়া হবে।

ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে টিসিবিকে মেঘনা সুগার রিফাইন্ড লিমিটেডের কাছ থেকে ৫৫ কোটি ৩০ লাখ টাকায় ৭ হাজার মেট্রিক টন চিনি কেনার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সিটি সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কাছ থেকেও ৭ হাজার মেট্রিক টন চিনি ৫৫ কোটি ৩০ লাখ টাকায় কিনতে বলা হয়েছে। অর্থাৎ মোট ১৪ হাজার মেট্রিক টন চিনি সর্বমোট ১১০ কোটি ৬০ লাখ টাকায় সরাসরি কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ভ্যাটসহ প্রতিকেজি চিনির ক্রয়মূল্য হবে ৭৯ টাকা। টিসিবিকে ৮১ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে ১০ হাজার মেট্রিক টন ছোলা ক্রয়ের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সেনা কল্যাণ সংস্থা, মেসার্স ব্লু স্কাই এন্টারপ্রাইজ এবং রুবি ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেডের কাছ থেকে এই ছোলা কেনা হবে।

এদিকে ২১১ কোটি ৫৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে ১৯ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন মশুর ডাল কেনা হবে। প্রতি কেজি ডালের মূল্য ১০৮.৫০ টাকা। এ ছাড়া ১ কোটি ৭১ লাখ ১৫ হাজার ৬৫২ লিটার সয়াবিন তেল কেনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ২৮৭ কোটি ৫৪ লাখ ২৯ হাজার ৫৩৬ টাকা। প্রতি লিটার সয়াবিনের মূল্য হবে ১৬৮ টাকা।

অর্থনীতি

দরপতনের লাগাম টানায় ঘুরে দাঁড়িয়েছে শেয়ারবাজার। বুধবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) লেনদেনকৃত অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে। আর দিনশেষে মূল্যসূচক ১৫৫ পয়েন্ট বেড়েছে। এর ফলে একদিনে ডিএসইর বাজারমূলধন বাড়ল ১১ হাজার কোটি টাকা। লেনদেনও আগের দিনের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে।

জানা গেছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও শেয়ারবাজারে টানা পতন শুরু হয়। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল, পুরো বাজারে এক ধরনের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে ও দরপতনের লাগাম টানতে মঙ্গলবার বড় দুটি সিদ্ধান্ত নেয় শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এগুলো হলো- সার্কিট ব্রেকারের (একদিনে শেয়ার দাম বৃদ্ধি বা কমার সর্বোচ্চ সীমা) সীমা কমিয়ে আনা এবং বাজার স্থিতিশীলতায় গঠিত নতুন তহবিল থেকে ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ। এর ফলে মঙ্গলবারই পতন বন্ধ হয়। বুধবার পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়ায় বাজার।

একক দিন হিসেবে ডিএসইতে বুধবার ৩৭৮টি কোম্পানির ২০ কোটি ৫২ লাখ শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যার মোট মূল্য ৭৭৩ কোটি ১ লাখ টাকা। এরমধ্যে দাম বেড়েছে ৩৬৫টি কোম্পানির শেয়ারের, কমেছে ৩টি এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১০টি কোম্পানির শেয়ারের দাম।

ডিএসইর ব্রড সূচক আগের দিনের চেয়ে ১৫৫ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ৬৩০ পয়েন্টে উন্নীত হয়েছে। ডিএসই-৩০ মূল্যসূচক ৪১ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ৪১৫ পয়েন্টে উন্নীত হয়েছে। ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৩০ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৪২৯ পয়েন্টে উন্নীত হয়েছে। ডিএসইর বাজারমূলধন আগের দিনের চেয়ে বেড়ে ৫ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে।

অর্থনীতি

চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) সংশোধনকালে সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া প্রকল্পের মধ্যে ছয়টিতে কাটছাঁট এবং চারটির বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে।

এগুলোর মধ্যে দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় প্রকল্প রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে বরাদ্দ ৩ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা কমিয়ে ১৪ হাজার ৮৩৬ কোটি টাকা করা হয়েছে।

মূল এডিপির চেয়ে ১৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ বরাদ্দ কমানোর পরও এটিই সংশোধিত এডিপিতে (আরএডিপি) সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পাওয়া প্রকল্প। মূল এডিপিতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল ১৮ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা।

বুধবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠকে সংশোধিত এডিপি অনুমোদন দেওয়া হয়।

বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে বেশি বরাদ্দ পাওয়া ১০ প্রকল্পের তথ্য জানানোর সময় পরিকল্পনা সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী বরাদ্দ কাটছাঁট এবং বাড়ানোর তথ্য তুলে ধরেন।

এসময় পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক ড. শামসুল আলমসহ অন্যান্য কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।

দুই ইউনিটে ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রায় ১ লাখ ১৩ হাজার ৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০২৫ সালের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্যে সরকার রূপপুর পারমাণিব্ক বিদ্যুৎ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। এতে প্রকল্প সহায়তা হিসেবে রাশিয়ার মোট ৯১ হাজার কোটি টাকা যোগান দেওয়ার কথা রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধে রাশিয়ার ওপর বিভিন্ন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের কারণে প্রকল্পটিতে সমস্যা হবে কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, “গরম হলে কিন্তু তাঁতানো- হিট লাগবেই। তবে সেই হিটে আমার চামড়া পুড়ে কিনা সেটা দেখার বিষয়।

“আমি এখনও মনে করি সেই (ক্ষতি হওয়ার) পর্যায়ে আমরা পৌঁছায়নি। কেননা রূপপুরে আমরা যেই প্রকল্পটা করছি সেটা সম্পূর্ণভাবে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি। যন্ত্রপাতি, নলেজ, টাকা সবই রাশিয়ার। এরসঙ্গে তৃতীয় কোনও পক্ষ জড়িত নয়।”

“কোভিডের সময়কাল যুদ্ধের চেয়ে কম ছিল না। সকল কিছু বন্ধ ছিল দুই তিন দিন। তখন রাশিয়ানরা প্লেন উড়িয়ে যন্ত্রপাতি লোক লস্কর নিয়ে এসেছে। সুতরাং এখনও না আসতে পারার কোনও কারণ নেই” যোগ করেন তিনি।

মন্ত্রী বলেন, “আমার জানা মতে, ওই ধরনের হাওয়া এখনও লাগে নাই।”

“তবে যদি ইউক্রেইন যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হয় তাহলে নানা ধরনের বাইপ্রডাক্ট প্রভাব আসবে কি না তখন দেখা যাবে। এখন এটি সকল বিবেচনায় স্থিতিশীল রয়েছে, মন্তব্য করেন মান্নান।

পরিকল্পনা সচিব জানান, সংশোধিত এডিপিতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ রয়েছে মাতারবাড়িতে ৬০০ মেগাওয়াটের দুই ইউনিটের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে। এটিতে মূল এডিপির বরাদ্দ ৬ হাজার ১৬২ কোটি টাকা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।

তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ থাকা ‘চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচিতে (পিইডিপি-৪)​’ প্রায় ২১ শতাংশ বাড়িয়ে ৬ হাজার ১৩৮ কোটি টাকা করা হয়েছে। মূল এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ৫ হাজার ৫৪ কোটি টাকা।

পরীক্ষামূলক যাত্রায় রোববার সকালে ঢাকার শেওড়াপাড়ায় লাইনের উপরে চলছে মেট্রোরেল। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভিপরীক্ষামূলক যাত্রায় রোববার সকালে ঢাকার শেওড়াপাড়ায় লাইনের উপরে চলছে মেট্রোরেল। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভিএছাড়া পদ্মা সেতু রেল সংযোগ (১ম সংশোধিত) প্রকল্পে বরাদ্দ প্রায় ২ হাজার ৩১৪ কোটি টাকা বাড়িয়ে ৬ হাজার ১৩৭ কোটি টাকা করা হয়েছে।

বেশি বরাদ্দ পাওয়া শীর্ষ ১০ প্রকল্পের আরেকটি মেটোরেল প্রকল্প (ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট, লাইন-৬) থেকে ৫৬৭ কোটি টাকা কমিয়ে ৪ হাজার ২৩৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

অপরদিকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ (প্রথম পর্যায়) (১ম সংশোধিত) প্রকল্পে ৬৪৫ কোটি টাকা বাড়িয়ে প্রায় ৩ হাজার ৪৭৩ কোটি টাকা করা হয়েছে।

​পদ্মা বহুমূখী সেতু নির্মাণ (২য় সংশোধিত) প্রকল্পে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

বেশি বরাদ্দের ‘সাসেক সড়ক সংযোগ প্রকল্প: এলেঙ্গা-হাটিকামরুল-রংপুর​মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্পে ২০৬ কোটি টাকা কমিয়ে ২ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্পে প্রায় ১ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা কমিয়ে ২ হাজার ১৭৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

আর​ভূমি অধিগ্রহণ ও ইউটিলিটি স্থানান্তর প্রকল্প: সাপোর্ট টু ঢাকা ​(কাঁচপুর)-সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ ​এবং উভয় পার্শ্বে পৃথক সার্ভিস লেন নির্মাণ​ প্রকল্পে প্রায় ৪৭৫ কোটি টাকা বাড়িয়ে সংশোধিত এডিপিতে ২ হাজার ১৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

অর্থনীতি

করোনার সময়ে দেশ-বিদেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড যখন স্থবির ছিল তখন ব্যাংকে আমানত প্রবাহ বেড়েছিল অস্বাভাবিক গতিতে। করোনার প্রকোপ কমায় দেশ-বিদেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।

এই অবস্থায় ব্যাংকে আমানত প্রবৃদ্ধি আগের চেয়ে বাড়ার কথা। কিন্তু ব্যাংকে প্রবৃদ্ধি না বেড়ে অস্বাভাবিক গতিতে কমতে শুরু করেছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে আমানতের প্রবৃদ্ধি কমেছে ৪৬ দশমিক ৫৯ শতাংশ বা ৫১ হাজার ৪৬৬ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে আমানত প্রবাহ বেড়েছিল ৫১ শতাংশের বেশি।

আমানতের প্রবৃদ্ধির হার বাড়া বা কমার এ গতিকে দেশের শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদ ও গবেষকরা অস্বাভাবিক বলে মন্তব্য করেছেন। তাদের মতে, ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি বাড়লে মানুষের আয় বাড়ে। আয়ের একটি অংশ সঞ্চয় করে। ফলে ব্যাংকে আমানত প্রবাহও বাড়ে। কিন্তু এখন ঘটছে উলটো ঘটনা। আমানত প্রবাহ না বেড়ে বরং কমছে। এটি অস্বাভাবিক। যে সময়ে আমানত কমার কথা তখন কেন বেড়েছে, এখন বাড়ার কথা, কেন কমছে?

গ্রাহকদের এসব টাকা কোথায় যাচ্ছে? প্রতিষ্ঠানিক খাতে বিনিয়োগ হলে সেটি ঘুরেফিরে ব্যাংকেই আসত। কিন্তু ব্যাংকে আসছে না। তার মানে এসব অর্থ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে চলে যাচ্ছে। হুন্ডির মাধ্যমে দেশ থেকে পাচার হচ্ছে কিনা সেটাও দেখার বিষয়? এ বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা উচিত।

এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গবেষকরা বলেছেন, করোনার কারণে ২০২০ সালে মানুষের চলাচল যেমন কম ছিল, তেমনি টাকার চলাচল ছিল স্তিমিত। ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগে ছিল স্থবিরতা। যে কারণে গ্রাহকদের টাকা ছিল ব্যাংকমুখী। করোনার প্রভাব কমার কারণে এখন মানুষের চলাচল বেড়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্য কিছুটা হলেও ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বিনিয়োগ হচ্ছে। এসব কারণে টাকা এখন ব্যাংক থেকে বের হচ্ছে। এছাড়া মুনাফার হার কম হওয়ায় মানুষ ব্যাংকে টাকা না রেখে বিভিন্ন স্থানে লগ্নি করছে। এসব কারণে আমানত প্রবাহ অস্বাভাবিকভাবে কমেছে। করোনার প্রভাব চলে গেলে এ অস্বাভাবিকতা স্বাভাবিক হতে কমপক্ষে ১ থেকে ২ বছর সময় লাগবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আমানতের প্রবৃদ্ধি কমলেও ব্যাংকগুলোতে অতিরিক্ত তারল্য রয়েছে ২ লাখ ১৭ হাজার কোটি টাকা। গ্রাহকদের আমানতের নিরাপত্তার স্বার্থে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রাখার কথা ২ লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু রাখা আছে ৪ লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকা।

গত অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে ব্যাংকিং খাতে আমানত বেড়েছিল ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৫১ শতাংশের বেশি। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে বেড়েছে ৫৮ হাজার ৫৩৪ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি কমেছে ৪৬ দশমিক ৫৯ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে আমানত কম বেড়েছে ৫১ হাজার ৪৬৬ কোটি টাকা। আগে আমানত বেড়েছে গড়ে ৯ থেকে ১৫ শতাংশ বা তারও বেশি। ৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেলেও আমানত বাড়ত ১ লাখ ২৭ হাজার কোটি টাকা। সেখানে বেড়েছে মাত্র সাড়ে ৫৮ হাজার কোটি টাকা। সর্বনিম্ন প্রত্যাশার চেয়ে সাড়ে ৬৮ হাজার কোটি টাকা কম বেড়েছে। এসব টাকা ব্যাংকেই আসার কথা। কিন্তু ব্যাংকে না এসে কোথায় গেল।

এদিকে ব্যাংকে আমানত কম আসার কারণ হিসাবে রেমিট্যান্সের নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির কথা বলা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, গত অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারির তুলনায় চলতি অর্থবছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স কমেছে প্রায় ২০ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে বেড়েছিল প্রায় ৩৫ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে রেমিট্যান্স কমেছে ২৯৭ কোটি ডলার। স্থানীয় মুদ্রায় ২৫ হাজারর ৫৪২ কোটি টাকা। অর্থাৎ এই টাকাও আমানত হিসাবে যোগ হতো। কিন্তু রেমিট্যান্স কমায় ওই অর্থ আমানতের হিসাবে আসেনি।

করোনার কারণে ব্যবসায় মন্দা থাকায় উদ্যোক্তারা টাকা খরচ করতে পারেনি। ফলে গত অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বরে সাধারণ সঞ্চয়ী হিসাবে চলতি আমানত বেড়েছিল সাড়ে ৩ হাজার শতাংশ। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় বিনিয়োগ কিছুটা বেড়েছে। ফলে ওই হিসাবে আমানত বাড়ার পরিবর্তে কমেছে ৮২ শতাংশ। তবে মোট আমানতের মধ্যে চলতি আমানত মাত্র ২০ শতাংশ। বাকি ৮০ শতাংশই মেয়াদি আমানত। এ কারণে চলতি আমানত বাড়া বা কমা খুব বেশি মোট আমানতকে প্রভাবিত করে না।

মেয়াদি আমানত গত অর্থবছরের আলোচ্য সময়ে বেড়েছিল ৩৪ শতাংশের বেশি। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে কমেছে ৪২ শতাংশ।

অর্থনীতিবিদরা প্রশ্ন তুলেছেন, করোনার সময়ে মানুষের আয় কম ছিল। ওই সময়ে ব্যাংকের সঞ্চয় ভেঙে খরচ করার কথা। কিন্তু তা না করে সে সময়ে মানুষ আরও বেশি সঞ্চয় করেছেন। এটা কি করে হয়? এখন আয় কিছুটা বেড়েছে। আর সঞ্চয় তুলে নিয়ে খরচ করছেন। এটা কিভাবে সম্ভব?

ব্যাংকে আমানত কমলে সেগুলো যায় শেয়ারবাজার বা সঞ্চয়পত্রে। কিন্তু দুই জায়গায় টাকার প্রবাহ কমেছে। গত অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল ২০ হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে বিক্রি হয়েছে ৯ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা। এ খাতে বিনিয়োগ কম হয়েছে ১০ হাজার ৮৯৭ কোটি টাকা। শেয়ারবাজারে মন্দা অব্যাহত রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে তাহলে আমানতের টাকা গেল কোথায়?

গবেষকরা বলেছেন, ব্যাংকিং খাতের ওই তথ্য-উপাত্ত দুই ধরনের বার্তা দিচ্ছে। এক. ব্যাংক খাতের সেবা নিচ্ছে শুধু সচ্ছলরাই, অসচ্ছলরা ব্যাংকে আসতে পারছে না। মানুষ দুঃসময়ে সঞ্চয় করে, সুসময়ে সঞ্চয় ভাঙে। দুই. পরিস্থিতি ক্রমেই উন্নতি হওয়ায় টাকা ব্যাংকের বাইরে চলে যাচ্ছে। টাকা দেশে থাকলে কোনো না কোনো একটি পর্যায়ে ব্যাংকে আসতই। কিন্তু তা আসছে না। ফলে টাকা হুন্ডির মাধ্যমে দেশের বাইরে পাচার হয়ে যাচ্ছে। করোনায় বিশ্বব্যাপী যোগাযোগ বন্ধ থাকায় টাকা ব্যাংকে ঢুকেছে। এখন সব খোলায় টাকা ব্যাংক থেকে বেরিয়ে তার গন্তব্যে বা পাচার হয়ে যাচ্ছে।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, গবেষক ও পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, আমানত হচ্ছে ব্যাংকের রক্ত সঞ্চালনের মতো। দীর্ঘ সময় ধরে আমানত কমতে থাকলে ব্যাংকগুলোতে তারল্যে ঘাটতি দেখা দিতে পারে। সে বিষয়ে এখনই সতর্ক হতে হবে। আমানত বাড়ানোর পদক্ষেপ নিতে হবে। আমানতকারীরা ব্যাংক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে যে কি পরিস্থিতি হয় কয়েক দফায় দেশের ব্যাংক খাত অনুভব করেছে। পরিস্থিতি যাতে সেদিকে না যায় সে বিষয়ে নজর দিতে হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, আমানত কমার পাশাপাশি বৈদেশিক সম্পদও কমছে। করোনার সময়ে গত অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বরে নিট বৈদেশিক সম্পদ বেড়েছিল ৬০ হাজার কোটি টাকা। বৃদ্ধির হার ছিল সাড়ে ৩ হাজার শতাংশ। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে বৈদেশিক সম্পদ বাড়ার পরিবর্তে কমেছে ১৩ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ ১২২ শতাংশ নেতিবাচক। অথচ এ সম্পদ এখন বাড়ার কথা। রেমিট্যান্স কমা ও আমদানি বাড়ায় এতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ভাবে দেশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশে চলে যাচ্ছে।

সূত্র জানায়, করোনার সময়ে খোলা বাজারে ডলারের দাম ছিল তলানিতে। নভেম্বরে তা বেড়ে সর্বোচ্চ ৯৫ টাকায় উঠেছিল। এখন কিছুটা কমেছে। ওই সময়ে ব্যাংকে দাম ছিল ৮৭ থেকে ৯০ টাকা। ব্যাংকের চেয়ে খোলা বাজারে প্রতি ডলারের দাম ৫ থেকে ৮ টাকা বেশি ছিল। যা অতীতে কখনো হয়নি। ব্যাংক থেকে সাধারণত ১-২ টাকা বেশি থাকে খোলা বাজারে। কখনও ব্যাংকের চেয়ে কম থাকে। সাধারণত চাহিদা বেশি থাকলেই খোলা বাজারে ডলারের দাম বাড়ে। করোনার পরে হঠাৎ করে খোলা বাজারে ডলারের দাম কেন এত বাড়ল তা খতিয়ে দেখা দরকার বলে অনেকে মনে করেন। ভ্রমণ, শিক্ষা বা চিকিৎসা খাতেই ডলার যাচ্ছে। নাকি অন্য কাজেও পাচার হচ্ছে।

মহামারি বা দুর্যোগের সময় মানুষ ব্যাংক থেকে টাকা তুলে হাতে রাখে। স্বাভাবিক সময়ে ব্যাংকে রাখে। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যাচ্ছে উলটো চিত্র। অর্থাৎ গত অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বরে ব্যাংক থেকে মানুষের হাতে আসা টাকার প্রবাহ কমেছিল ৩০৩ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা বেড়েছে ১২৬ শতাংশ। অর্থাৎ মহামারির সময়ের চেয়ে এখন মানুষের হাতে টাকা বেশি।

আমানত প্রবাহ বাড়ায়, ব্যাংক থেকে মানুষ টাকা কম তোলায়, রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ায় এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকার জোগান বাড়ানোর কারণে করোনার মন্দায়ও ব্যাংক খাতে টাকার প্রবাহ বেড়েছিল। কিন্তু চাহিদা না থাকায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে উদ্যোগ নিয়েও ঋণ প্রবাহ বাড়ানো সম্ভভ হয়নি। ফলে গত অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বরে ব্যাংকে টাকার প্রবাহ বেড়েছিল ৪০ শতাংশের বেশি। কিন্তু ঋণ প্রবাহ কমেছিল সাড়ে ৪১ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরের ওই সময়ে টাকার প্রবাহ কমেছে ৪৩ শতাংশ। এদিকে ঋণ প্রবাহ বেড়েছে ৬৫ শতাংশ। আমানত ও মানুষের হাতে টাকা চলে যাওয়ার হার বাড়ায় ব্যাংকে কমেছে টাকার প্রবাহ। অন্যদিকে করোনার পরে সব খাতে ঋণের চাহিদা বেড়েছে। ফলে বিতরণও বাড়ছে।

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যাংক খাতে ঋণ ও আমানতের মধ্যে সব সময়ই একটি ভারসাম্য রাখতে হয়। ঋণ বৃদ্ধির চেয়ে আমানত বাড়তে হয় বেশি। কেননা ব্যাংক ১০০ টাকা আমানত নিয়ে পুরো টাকাই বিনিয়োগ করতে পারে না। ১৬ টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রাখতে হয়। বাকি ৮৪ টাকা বিনিয়োগ করতে পারে। এখন যদি আমানতের চেয়ে ঋণ বেশি বাড়ে এবং এটি দীর্ঘ সময় চলে তাহলে তারল্য সংকট আবার বেড়ে যাবে। এ জন্য আমানত কেন কেমছে, তা যেমন দেখা উচিত। তেমনি ঋণের টাকা কোথায় যাচ্ছে সেদিকেও নজর দেওয়া দরকার।

গত অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারিতে রপ্তানি আয় কমেছিল ১ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে বেড়েছে ৩০ দশমিক ৩৪ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে রপ্তানি আয় বেড়েছে ৬৮৮ কোটি ডলার। টাকার অঙ্কে ৪৬ হাজার ৭৮৪ কোটি টাকা। এ অর্থ ব্যাংকে তারল্যের জোগান বাড়িয়েছে। কিন্তু রপ্তানির এ অর্থ আমদানিতে ব্যয় হয়ে গেছে। উলটো রেমিট্যান্স থেকে আরও অর্থ নিয়ে আমদানি ব্যয় মেটাতে হয়েছে।

গত অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বরে আমদানিতে খরচ হয়েছিল ২ হাজার ৭২৭ কোটি ডলার। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে খরচ হয়েছে ৪ হাজার ২১২ কোটি ডলার। গত অর্থবছরের চেয়ে এবার বেশি খরচ হয়েছে ১ হাজার ৪৮৫ কোটি ডলার। এ খাতে ব্যয় বেড়েছে ১ লাখ ২৭ হাজার ৭১০ কোটি টাকা। রপ্তানিতে যে টাকা বেশি এসেছে তার চেয়ে বেশি খরচ বেড়েছে ৮০ হাজার ৯২৬ কোটি টাকা। যা রেমিট্যান্স থেকে জোগান দেওয়া হয়েছে।

অর্থনীতি

চাল, ডাল, তেলসহ বেশ কিছু নিত্যপণ্যের দামে ঊর্ধ্বগতির মধ্যে দেশে ভরা মৌসুমেও গত এক মাসের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।

শুক্রবার রাজধানীর খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে দেশি মুড়িকাটা পেঁয়াজ। এক মাস আগে জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে যার দাম ছিল ২৮ থেকে ৩০ টাকা।

ক্রেতা-বিক্রেতারা জানান, এক সপ্তাহ আগেও দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরে। সপ্তাহের ব্যবধানে গড়ে দাম বেড়েছে ১০ টাকা।

নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে পেঁয়াজের এমন দামে অসন্তোষ জানিয়ে রামপুরার বাসিন্দা ইজাজুল ইসলাম বলেন, “বাজারে সবকিছুর দাম বেশি, এর মধ্যে পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমে কয়েক দিনের মধ্যে আবার বেড়ে গেল।

“আমরা বিগত বছরগুলোতে দেখে এসেছি যে, এই সময়ে পেঁয়াজের কেজি থাকত ২০ থেকে ২৫ টাকার মধ্যে, কিন্তু এবার যেন অস্বাভাবিকভাবে দাম বেড়েছে।”

তিনি বললেন, “সামনে রোজা আসছে, এখন থেকে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। অন্যথায় আমাদের মত স্বল্প আয়ের মানুষগুলোর কষ্ট আরও বেড়ে যাবে।”

ব্যবসায়ীরা জানান, পেঁয়াজের মৌসুমে আমদানি কম থাকে বলে চাহিদার চেয়ে সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বেড়েছে। আমদানি বাড়ানো গেলে দাম কমতে পারে।

শুক্রবার নগরীর খুচরা বাজারে দেখা যায়, দোকানিদের কাছে তুরস্ক ও ভারতের পেঁয়াজ থাকলেও পরিমাণে কম। দেশি পেঁয়াজের চেয়ে আমদানি করা পেঁয়াজের দামও কিছুটা কম।

এদিন ভারতীয় পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৪৫ টাকা এবং তুরস্কের বড় আকারের পেঁয়াজ ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা যায়।

মালিবাগ বাজারের খুচরা বিক্রেতা আশিকুর রহমান জানান, নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসার পর জানুয়ারির শুরু থেকে দাম কমতে থাকে এবং মাসের শেষ সপ্তাহে প্রতি কেজি ২৫-৩০ টাকায় নেমে যায়।

ঊর্ধ্বগতির বাজারে টিসিবির ট্রাকের পেছনে বাড়ছে মানুষের সারিঊর্ধ্বগতির বাজারে টিসিবির ট্রাকের পেছনে বাড়ছে মানুষের সারিতিনি জানান, গত কয়েক দিন ধরে আবারও দাম বাড়তে শুরু করেছে। বাজারে এখন ভালো মানের প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকায়।
“এই সময়ে দেশি পেঁয়াজ ওঠার মৌসুম বলে বিদেশি পেঁয়াজ আমদানি কমে যায়। কিন্তু বাজারে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ হঠাৎ করে কমে গেছে। এদিকে আমদানি করা পেঁয়াজও কম।”

এই দুই সংকটের কারণে দাম বেড়েছে জানালেও ‘এত বেশি’ বাড়ার পেছনে বড় ব্যবসায়ীদের ‘কারসাজি’ থাকতে পারে বলে মনে করেন এই খুচরা ব্যবসায়ী।

ঢাকায় পেঁয়াজের বড় আড়ত শ্যামবাজারের ব্যবসায়ী আব্দুল কুদ্দুস বলেন, “এখন আড়তে যে পেঁয়াজ আছে সবই মুড়িকাটা, কিন্তু পেঁয়াজের আমদানি (সরবরাহ) কমে গেছে, যে কারণে দাম বেড়ে গেছে।”

তিনি জানান, প্রতি কেজি মুড়িকাটা পেঁয়াজের পাইকারি দর ৩৯ থেকে ৪০ টাকা এবং দেশের বাইরে থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩২ থেকে ৩৫ টাকা।

বেড়েছে চাল, ভোজ্যতেল, ডালের দাম

বাজারে গত এক মাস ধরে বেড়েছে চাল, ভোজ্য তেল, মশুর ডালসহ আরও বেশ কিছু নিত্যপণ্যের দাম।

ব্যবসায়ীরা জানান, খুচরা বাজারে প্রতি কেজি মিনিকেট এবং নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭২ টাকা, গত সপ্তাহে ছিল ৬২ থেকে ৭০ টাকা।

মাঝারি আকারের চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা, এক সপ্তাহ আগে ছিল ৫২ থেকে ৫৫ টাকা। এছাড়া মোটা জাতের স্বর্ণা চাল এখন ৪৬ থেকে ৫০ টাকা, এক সপ্তাহ আগে ছিল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা।

ভোজ্য তেলের মধ্যে খোলা সয়াবিন তেল এবং পাম অয়েলের দাম তুলনামূলক বেশি বেড়েছে।

প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৬০ থেকে ১৬৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৫৫ থেকে ১৬৫ টাকা। কোম্পানি ভেদে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৬৮ টাকায়, যা গত সপ্তাহেও একই দামে বিক্রি হয়।

পাঁচ লিটারের সয়াবিন তেলের বোতল বিক্রি হচ্ছে ৭৬০ থেকে ৭৯০ টাকায়,গত সপ্তাহে ছিল ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকা। প্রতি লিটার সুপার পাম অয়েলের দাম ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা, যা আগের সপ্তাহে ছিল ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা।

এদিকে বড় দানার মশুর ডালের দাম কিছুটা কমলেও ছোট দানার ডালের দাম বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

বড় দানার মশুর ডাল কেজিতে ২ টাকা কমে ১০০ থেকে ১০৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ছোট দানার মশুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১২৫ থেকে ১৩৮ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১২৫ থেকে ১৩৫ টাকা।

তবে দাম কমেছে রসুনের। দেশি রসুন কেজিতে ৫ থেকে ৮ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে, আর আমদানি করা রসুন বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়। গত সপ্তাহ আমদানি করা রসুন বিক্রি হয়েছে ১২৫ থেকে ১৪০ টাকা।

অর্থনীতি

দেশে ফাইভজি চালুর প্রস্তুতির অংশ হিসেবে উপজেলা পর্যায়ে ইন্টারনেটের গতি অন্তত ১০০ জিবিপিএসে নেওয়ার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার, যেজন্য তিন হাজার কিলোমিটারের বেশি অপটিক্যাল ফাইবার স্থাপন করা হবে।