অর্থনীতি

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, বঙ্গোপসাগরে মিথেন গ্যাসের (গ্যাস হাইড্রেট) সন্ধান মিলেছে। সমুদ্রে এক গবেষণা সমীক্ষায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

বুধবার (৫ জানুয়ারি) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের তিনি এ তথ্য জানান।

বঙ্গোপসাগরে গ্যাস হাইড্রেট এবং সামুদ্রিক জেনেটিক সম্পদের ওপর গবেষণার ফলাফল নিয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (মেরিটাইস অ্যাফেয়ার্স ইউনিট) মোহাম্মাদ খুরশেদ আলম।

অর্থনীতি

করোনা ও ওমিক্রন পরিস্থিতির মধ্যে নতুন বছরের অর্থনীতির গতি পর্যালোচনা করে দেখছেন রাষ্ট্রের আর্থিক খাতের নীতিনির্ধারকরা। সেখানে আর্থিক অবস্থার দুধরনের চিত্র দেখতে পান তারা। একদিকে করোনায় আয়-রোজগার কমা, বেকার ও ছাঁটাই হওয়া মানুষগুলো খরচ করতে হিমশিম খাচ্ছে। এরসঙ্গে চোখ রাঙাচ্ছে বাজারদর।

জ্বালানি ও খাদ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যা মূল্যস্ফীতিকে উত্তপ্ত করে তুলছে। রেমিট্যান্স নিয়েও উদ্বেগ বাড়ছে। অন্যদিকে- সরকারের রাজস্ব আয় ভালোই হচ্ছে। বাড়ছে ব্যাংক ঋণের অঙ্ক। রপ্তানি ও আমদানিতে ইতিবাচক ধারা বইছে। সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পুরোদমে শুরু হয়েছে। কৃষি উৎপাদন সন্তোষজনক পর্যায়ে আছে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, এটা স্পষ্ট যে অর্থনীতি করোনার ধাক্কা যথেষ্ট মাত্রায় কাটিয়ে উঠছে। গেল সপ্তাহে আর্থিক খাতের চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে ‘আর্থিক মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময় হারসংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল’ সভায় বসেছিলেন অর্থমন্ত্রী নিজেই। ওই বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন-বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সি, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আবদুর রউফ তালুকদার এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তারা।

কাউন্সিলের সদস্যরা মনে করছেন, টিকার কারণে অর্থনীতিতে গতি বাড়ছে। নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন অর্থনীতির জন্য হুমকি মনে করছেন না। কারণ বুস্টার ডোজ ইতোমধ্যে চলে আসছে। মার্চ পর্যন্ত দেশের ৮০ শতাংশ মানুষ টিকার আওতায় চলে আসবেন। করপোরেট খাত অনেকটাই ঘুরে দাঁড়িয়েছে। রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ও আমদানিতে রের্কড সৃষ্টি হয়েছে। বাড়ছে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন হারও। রাজস্ব আয়ে আশার সঞ্চার তৈরি হয়েছে। এসব কারণে নতুন বছরের অর্থনীতির গতি আরও বাড়বে বলে আশার আলো দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

সবকিছু ঠিক থাকলে গত অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি সংকোচের তুলনায় চলতি অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ২ শতাংশ অর্জন হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে অর্থ বিভাগ। শুধু তাই নয়, পরের অর্থবছরেও ৭ দশমিক ৫ শতাংশ হবে এমনটি ধরেই হিসাব-নিকাশ শুরু হয়েছে।

তবে অর্থনীতির আকাশে কিছু ঘন কালো মেঘও দেখছেন অর্থনীতিবিদরা। তাদের মতে, শঙ্কা মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বমুখী। রেমিট্যান্স প্রভাব নিুমুখী ও ব্যালেন্স অব পেমেন্টে বড় ঘাটতি দেখা দিয়েছে। খোলা বাজারে ডলারের অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বমুখী ভাবিয়ে তুলছে।

জানতে চাইলে সাবেক সিনিয়র অর্থ সচিব মাহবুব আহমেদ বলেন, বিশ্বব্যাপী পণ্য ও জ্বালানি তেলের মূল্য বেড়েছে। যে কারণে দেশে জ্বালানি তেল ও নিত্যপণ্যের দাম বাড়াতে হয়েছে। এর প্রভাব গিয়ে পড়ছে পণ্য ও সেবা খাতে। এ বছর মূল্যস্ফীতি বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করছে। যে কোনো মূল্যে এটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। এটি সম্ভব না হলে মুদ্রার বিনিময় হার, আমদানি ও রপ্তানি খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

তার মতে, বিশ্ব অর্থনীতির সবকিছু খুলে দিয়েছে। বাংলাদেশেও অন্যান্য সূচক কিছুটা ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। রপ্তানি আয় কিছুটা বেড়েছে। রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি ও বাজেট বাস্তবায়ন আগের বছরের তুলনায় ভালো হয়েছে। এখন নজর মূল্যস্ফীতির দিকে।

এ প্রসঙ্গে পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউট অব বাংলাদেশ (পিআরআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, অর্থনীতি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। ব্যাংকিং খাতে ঋণ ও সঞ্চয় দুটোর পরিমাণই বাড়ছে। আমদানির চাহিদা অনেক বেড়েছে। রপ্তানিও বাড়ছে। তবে রেমিট্যান্স কমছে। আমদানি বেড়ে যাওয়ায় ব্যালেন্স অব পেমেন্টে ঘাটতি বেড়েছে। এটি কমানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এটির কারণেই মুদ্রা বিনিময় হারে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। ডলারের মূল্য বেড়েছে। তবে খোলা বাজার ও ব্যাংকিং এর মধ্যে ডলারের মূল্য ব্যবধান অনেক বেশি। সেটি আরও কমিয়ে আনতে হবে। না হলে ইনফরমাল চ্যানেলে বেশি টাকা চলে যাবে।

তিনি আরও বলেন, আগীম বছরে পদ্মাসহ আরও কিছু বড় প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। মেট্রোরেল আংশিক হয়ে যাবে। এর প্রভাব ২০২২ সালের অর্থনীতিতে পড়বে। এসব দিক বিবেচনায় নতুন বছরের অর্থনীতি ভালো অবস্থায় যাবে। তবে কিছু পুরোনো চ্যালেঞ্জ আছে। এরমধ্যে রয়েছে করোনাভাইরাসের প্রভাব। সরকারের ব্যয় করার সক্ষমতা কমছে। কারণ রাজস্ব আহরণ সেভাবে বাড়ছে না। সেদিকে নজর দিতে হবে।

এদিকে করোনা ধকল কাটিয়ে দেশের শিল্পকারখানা উৎপাদন শুরু করেছে। ফলে আমদানিতে রের্কড সৃষ্টি হয়েছে। অক্টোবরে ৭১১ কোটি ডলারের আমদানি হয়েছে। আগের বছরের একই মাসের তুলনায় বেশি ২৭৪ কোটি ডলার বা ৬২ দশমিক ৫০ শতাংশ। জুলাই-অক্টোবরে মোট ২ হাজার ৫৮৩ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে। আগের বছরের একই সময়ে ছিল এক হাজার ৭০৬ কোটি ডলার। আমদানি বেশি হয়েছে ৮৭৭ কোটি ডলার বা ৫১ দশমিক ৩৯ শতাংশ

এদিকে জুলাই-নভেম্বরে রপ্তানি বাণিজ্য থেকে ১ হাজার ৯৭৯ কোটি ডলার আয় হয়েছে। এ সময় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৪ দশমিক ২৯ শতাংশ। গতবছর একই সময়ে আয় হয় ১ হাজার ৫৯২ কোটি ডলার।

অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন হয়েছে ৪৪ হাজার ৬১ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৩৮ হাজার ৪৭৩ কোটি টাকা। পরিকল্পনা বিভাগ মনে করছে করোনার ধাক্কা সামলে গতি ফিরছে উন্নয়ন কার্যক্রমে। এদিকে ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি ফেরায় রাজস্ব খাতেও আদায়ের পরিমাণ গত বছরের তুলনায় বেড়েছে। গত পাঁচ মাসে মোট রাজস্ব আয় হয়েছে ১ লাখ ২৩ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্টদের মতে, নতুন বছরে অর্থনীতিতে নতুন চ্যালেঞ্জ হচ্ছে দ্রুত ব্যালেন্স অব পেমেন্টকে স্থিতিশীল করা। প্রয়োজনে টাকার অবমূল্যায়ন করে হলেও করতে হবে। তা না হলে মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না। বিদ্যমান মূল্যস্ফীতি এখন উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি বেড়ে গেলে গরিব মানুষের ওপর বেশি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। আর ধনী মানুষকে আরও ধনী করবে। মূল্যস্ফীতি বাড়লে সঞ্চয়ের সুদ হার ৬ থেকে ৭ শতাংশ করতে হবে। এতে ব্যাংক ঋণের সুদ হার ৯ শতাংশে রাখা সম্ভব হবে না। ফলে শিল্পসহ উৎপাদনশীল খাত ধ্বংস হয়ে যাবে।

জানা গেছে, চলতি বাজেটে ভর্তুকি ধরা হয়েছে ৪৮ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু অর্থ বিভাগ হিসাব করে দেখছে এর পরিমাণ আরও বাড়বে। বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে দেশে জ্বালানি তেল, সার, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের ভর্তুকি বেড়ে ৭০ হাজার কোটি টাকার বেশি হবে। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমলেও আগামীতে দেশের ভেতর এ মূল্য কমানোর সম্ভাবনা নেই। ভর্তুকির পরিমাণ কমিয়ে আনতে নতুন করে গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য বাড়তে পারে।

অর্থনীতি

বর্তমান প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ ২০৩৫ সালে বিশ্বের ২৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির।

বুধবার (২৯ ডিসেম্বর) সকালে হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে বণিক বার্তার দ্বিতীয় বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্মেলন ২০২১ এ মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় এসব কথা বলেন তিনি।

মুল প্রবন্ধে গভর্নর ফজলে কবির বলেন, গত পাঁচ দশকের অর্থনীতির উন্নয়ণে বাংলাদেশ ব্যাংকের রয়েছে বড় ভূমিকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের মূল কাজ হলো মুদ্রানীতি প্রণয়ন, রিজার্ভ সংরক্ষণ করা।

তিনি বলেন, বিশ্বের শীর্ষ ৪১তম বড় অর্থনীতির দেশের মধ্য বাংলাদেশ রয়েছে। দেশের প্রবৃদ্ধি বাড়লেও সামনের দিনগুলোত আমাদের অর্থনীতিতে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং করোনা ভাইরাসের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ভূমিকা পালন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। করোনার কারণে বিশ্ব অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে, নতুন করে দারিদ্রসীমা বেড়েছে। তবে আশার দিক হলো করেনায় বিশ্বের অন্যসব দেশের তুলনায় বাংলাদেশের অর্থনীতি তেমন একটা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েনি। কোভিডের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে অর্থনৈতিক নেতৃত্ব দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

ড. ফজলে কবির বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার দ্রুত বাড়ছে। দেশের মাঝারি ও ক্ষুদ্র মাঝারিখাতকে অর্থনীতির প্রাণ। অথচ মোট ঋণের ২০ শতাংশ যায় এমএসএমএফ খাতে। যা ২০২৪ সালের মধ্যে ২৫ শতাংশে উন্নিত করতে চায় বাংলাদেশ ব্যাংক। এরমধ্যে ১০ শতাংশ ঋণ নারী উদ্যোক্তাদের জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়েছে। এছাড়া সরকারি বেসরকারি ব্যাংকের প্রতিটি শাখা থেকে কমপক্ষে ৩ জন নারী উদ্যোক্তাকে ঋণ দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে।

অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, ড. আতিউর রহমান ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার। অনলাইনে যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। দি সিটি ব্যাংক লিমিটেডের এমডি ও সিইও মাসরুর আরেফিনের স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে এ সম্মেলন শুরু হয়।

অর্থনীতি

দুই বছরেরও বেশি সময় বন্ধ থাকার পর বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খুলল। দুই দেশের মধ্যে রোববার এ সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। দেশটির রাজধানী কুয়ালালামপুরে স্থানীয় সময় বেলা ১১টায় এ স্মারক সই হয়। নতুন চুক্তির ফলে শ্রমিকদের দেশটিতে যাওয়ার খরচ আগের চেয়ে অনেক কমবে। বাংলাদেশের পক্ষে স্মারকে সই করেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ ও মালয়েশিয়ার পক্ষে দেশটির মানবসম্পদমন্ত্রী দাতুক সেরি এম সারাভানান। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সমঝোতা স্মারকের আওতায় বাংলাদেশি কর্মীদের মালয়েশিয়া প্রান্তের সব খরচ নিয়োগকর্তা বহন করবেন। যেমন রিক্রুটমেন্ট এজেন্সি নিয়োগ, মালয়েশিয়ায় নিয়ে যাওয়া, তাদের আবাসন, কর্মে নিয়োজিত করা এবং কর্মীর নিজ দেশে ফেরত পাঠানো। নিয়োগকর্তা নিজ খরচে মালয়েশিয়ান রিক্রুটিং এজেন্ট নিযুক্ত করতে পারবেন। মালয়েশিয়ায় আসার পর বাংলাদেশি কর্মীর ইমিগ্রেশন ফি, ভিসা ফি, স্বাস্থ্য পরীক্ষার খরচ, ইন্স্যুরেন্স সংক্রান্ত খরচ, করোনা পরীক্ষার খরচ, কোয়ারেন্টিন সংক্রান্ত খরচসহ সব ব্যয় মালয়েশিয়ার নিয়োগকর্তা বা কোম্পানি বহন করবে। নিয়োগকর্তা কর্মীর মানসম্মত আবাসন, বিমা, চিকিৎসা ও কল্যাণ নিশ্চিত করবেন। মন্ত্রণালয় আশা করছে, এই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের পর বাংলাদেশি কর্মীদের অভিবাসন খরচ অনেক কমে যাবে।

২০১৮ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ স্থগিত করে মালয়েশিয়া সরকার। পরে নতুন করে কর্মী নিয়োগ শুরুর লক্ষ্যে উভয় দেশের মধ্যে বেশ কয়েকটি সভা হয়। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় পরামর্শ এবং কুয়ালালামপুরের বাংলাদেশ হাইকমিশনের কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় মালয়েশিয়া সরকার সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের অনুমোদন দেয়। এই সমঝোতার ফলে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ, কর্মসংস্থান এবং প্রত্যাবাসনের আদর্শ কাঠামো প্রতিষ্ঠার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। চুক্তির সময়ে দুই দেশের মন্ত্রী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন, মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. গোলাম সারোয়ার এবং মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল দাতু মুহাম্মদ খাইর আজমান বিন মোহামেদ আনুয়ার, বিএমইটির মহাপরিচালক মো. শহীদুল আলমসহ উভয় দেশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

অর্থনীতি

বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার আবারও খুলে দেওয়ার সুখবরের মধ্যেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চলতি অর্থবছরে আট লাখ লোকের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যের কথা বলছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।

শুক্রবার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে ২০২১-২২ অর্থবছরে বিদেশে কর্মী পাঠানোর হিসাব তুলে ধরে এমন আশার কথা বলেন সচিব আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন।

করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে অন্যান্য খাতের মত বৈদেশিক কর্মসংস্থান খাতে যে বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে, তা কাটিয়ে উঠতে বাংলাদেশের চেষ্টার কথাও তিনি তুলে ধরেন।

সচিব বলেন, সংক্রমণ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসার সঙ্গে সঙ্গে ২০২১-২২ অর্থবছরের  প্রথম চার মাসেই আড়াই লক্ষাধিক কর্মীর কর্মসংস্থান হয়েছে। এর মধ্যে গত নভেম্বর মাসে ১ লক্ষ ২ হাজার ৮৬৩ জন কর্মী বিদেশে গেছেন।

“আমাদের প্রত্যাশা, বিদেশ গমনের এই ধারা অব্যাহত থাকলে এ অর্থবছরে সাত থেকে আট  লাখ লোকের বিদেশে কর্মসংস্থান হবে।”

দীর্ঘ তিন বছর পর মালয়েশিয়া আবারও বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়া শুরু করবে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের মন্ত্রীর নেতৃত্বে, আমাদের অক্লান্ত প্রচেষ্টার ফলে শ্রমবাজারটি পুনরায় উন্মুক্ত হতে যাচ্ছে। শিগগিরই দুই দেশের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবে বলে আমরা আশা করছি।”

এই সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় বিভিন্ন খাতে বহু বাংলাদেশি কর্মীর কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে বলে আশা প্রকাশ করেন সচিব আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন।

এর আগে গত ১১ ডিসেম্বর মালয়েশিয়ার মন্ত্রিসভার বৈঠকে বাংলাদেশ থেকে আবারও শ্রমিক নেওয়ার সিদ্ধান্তে অনুমোদন দেওয়ার কথা জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমেদ।

মালয়েশিয়া সরকার তাদের পাঁচটি খাতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের সমন্বয়ে ‘জিটুজি প্লাস’ পদ্ধতিতে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে রাজি হওয়ার পর ২০১৬ সালে ঢাকায় দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়।

পাঁচ বছর মেয়াদী এই চুক্তির আওতায় লোক পাঠানোর অনুমতি দেওয়া হয় ১০টি জনশক্তি রপ্তানিকারক এজেন্সিকে।

কিন্তু প্রবাসী এক বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর নেতৃত্বে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগসাজশে একটি চক্র ওই ১০ এজেন্সিকে নিয়ে সিন্ডিকেট করে শ্রমিকদের কাছ থেকে দুই বছরে ২০০ কোটি রিঙ্গিত হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে।

এরপর ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে নতুন করে বাংলাদেশি কর্মীদের আর ভিসা দেয়নি মালয়েশিয়া। তবে আগে যারা ভিসা পেয়েছিলেন, তারা পরেও মালয়েশিয়া যাওয়ার সুযোগ পান।

সংবাদ সম্মেলনে আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন বলেন, সম্প্রতি মাননীয় মন্ত্রী গ্রিসের সঙ্গে একটি আগ্রহপত্র স্বাক্ষর করেছেন। একইভাবে আলবেনিয়া, মাল্টা ও বসনিয়ার সঙ্গেও কর্মী পাঠানোর জন্য চুক্তি স্বাক্ষরের অপেক্ষায় রয়েছে।

নতুন শ্রমবাজার হিসেবে কম্বোডিয়া, উজবেকিস্তান, পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি, রোমানিয়া, ক্রোয়েশিয়াসহ আফ্রিকা মহাদেশের কয়েকটি দেশ এবং জাপান, সেনেগাল, বুরুন্ডি, সেশেলস, মালয়েশিয়ার সারওয়াকে কর্মী পাঠানো শুরু হয়েছে।

আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস ২০২১ উপলক্ষে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

প্রতিবছর ১৮ ডিসেম্বর বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস পালন করা হয়। ‘শতবর্ষে জাতির পিতা, সুবর্ণে স্বাধীনতা/ অভিবাসনে আনব মর্যাদা ও নৈতিকতা’ প্রতিপাদ্য নিয়ে এদিন দেশেও নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।

শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসের মূল ও জাতীয় অনুষ্ঠান হবে। অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন প্রধান অতিথি থাকবেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী

আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ অতিমারী ও ভূ-রাজনৈতিক নানা কারণে অভিবাসনের কঠিন চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেছেন।

তিনি বলেন, “অভিবাসীদের অধিকার ও স্বার্থ রক্ষায় বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইন, কনভেনশন ও সনদসমূহে বর্ণিত বিধানাবলির যথাযথ প্রতিপালন আবশ্যক।

“অভিবাসী শ্রমিকরা যেন কোনো রূপ শোষণ, বঞ্চনা ও হয়রানির শিকার না হয় তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সকলে সচেষ্ট থাকবেন- এ প্রত্যাশা করি।”

‘আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস-২০২১’ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণীতে বলেছেন, “৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় আমরা ৫ মিলিয়ন নতুন বৈদেশিক কর্মসংস্থানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি।

“এজন্য উপজেলা পর্যায়ে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনসহ বিশ্ব চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ কোর্স চালু, আন্তর্জাতিক সনদায়নের মতো নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”

যুবসমাজকে এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে দক্ষ হওয়ার মধ্য দিয়ে বিশ্ব শ্রমবাজারে বাংলাদেশের সুনাম সমুন্নত রাখার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছরে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসের প্রতিপাদ্য অত্যন্ত অর্থবহ ও সময়োপযোগী হয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

অর্থনীতি

মুসলিম বিশ্বে অনন্য ‘মসজিদ স্থাপত্য শিল্পে’র অন্যতম শ্রেষ্ঠ নান্দনিক নিদর্শন হিসেবে বিজয়ী হয়েছে বাংলাদেশের কেরানীগঞ্জে অবস্থিত ‘লাল মসজিদ’। মদিনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-সালাম সম্মেলন হলে আয়োজিত এক রাজকীয় জমকালো সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিজয়ী স্থপতি কাশেফ চৌধুরীর পক্ষে ক্রেস্ট ও সম্মাননাপত্র গ্রহণ করেন সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী।

বৃহস্পতিবার (১৬ ডিসেম্বর) রিয়াদের বাংলাদেশ দূতাবাস এ তথ্য জানায়।

আবদুল লতিফ ফৌজান আন্তর্জাতিক ‘মসজিদ স্থাপত্য শিল্প বিষয়ক অ্যাওয়ার্ড’ এর তৃতীয় সেশনে এবারের আয়োজনে গোটা মুসলিম বিশ্ব থেকে সাতটি মসজিদ স্থাপত্য শিল্পের অনন্য সাধারণ নিদর্শন হিসেবে নির্বাচিত হয়। বাংলাদেশ ছাড়াও অন্যান্য মুসলিম রাষ্ট্রগুলো হচ্ছে সৌদি আরব, মিশর, লেবানন, ইন্দোনেশিয়া, মালে ও তুরস্ক।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের হাতে সম্মাননাপত্র ও ক্রেস্ট তুলে দেন অ্যাওয়ার্ড ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রিন্স সুলতান বিন সালমান এবং মদিনা রিজিওনের গভর্নর প্রিন্স ফয়সাল বিন সালমান।

অর্থনীতি

স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপন করছে বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালের আজকের এ দিনে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী বিকাল ৪টা ৫৫ মিনিটে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (রেসকোর্স ময়দান) আত্মসমর্পণের দলিলে সই করে।

আত্মসমর্পণের দলিলের প্রতিটি শর্তই বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বাহিনী ঠিক করেছিল। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের প্রধান জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজী এসব শর্তের বেশ কিছু বিষয়ে আপত্তি করলেও তা মানা হয়নি।

পাকিস্তান চেয়েছিল আত্মসম্পর্ণের অনুষ্ঠান গোপনে আয়োজন করতে। কিন্তু ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের চিফ অফ স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল জে এফ আর জ্যাকব জানিয়ে দেন, অনুষ্ঠান হবে প্রকাশ্যে।

জ্যাকব জানান, আত্মসম্পর্ণের দলিলটি যেন অসম্মানজনক না হয়, সেদিনে নজর রাখা হয়েছিল।

এতে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বাহিনীর পক্ষে সই করেন কমান্ডার-ইন-চিফ লে. জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা, আর যুদ্ধরত পাকিস্তানি বাহিনীর পক্ষে পূর্বাঞ্চলীয় সামরিক কমান্ডের কমান্ডার লে. জেনারেল আমির আব্দুল্লাহ খান নিয়াজী।

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ছিলেন তখনকার বিমান বাহিনীর প্রধান ও মুক্তিবাহিনীর উপপ্রধান এয়ার কমোডর এ কে খন্দকার।

আত্মসমর্পণের দলিলে যা লেখা ছিল—

পূর্ব রণাঙ্গনে ভারতীয় ও বাংলাদেশি যৌথ বাহিনীর জেনারেল অফিসার কমান্ডিং ইন চিফ, লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কাছে, পাকিস্তান পূর্বাঞ্চলীয় সামরিক কমান্ড বাংলাদেশে অবস্থানরত পাকিস্তানের সব সশস্ত্র বাহিনী নিয়ে আত্মসমর্পণে সম্মত হলো।

পাকিস্তানের সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীসহ সব আধা-সামরিক ও বেসামরিক সশস্ত্র বাহিনীর ক্ষেত্রে এই আত্মসমর্পণ প্রযোজ্য হবে। এই বাহিনীগুলো যে যেখানে আছে, সেখান থেকে লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কর্তৃত্বাধীন নিয়মিত সবচেয়ে নিকটস্থ সেনাদের কাছে অস্ত্রসমর্পণ ও আত্মসমর্পণ করবে।

এই দলিল স্বাক্ষরের সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় সামরিক কমান্ড লেফটেন্যান্ট জেনারেল অরোরার নির্দেশের অধীন হবে। নির্দেশ না মানলে, তা আত্মসমর্পণের শর্তের লঙ্ঘন বলে গণ্য হবে এবং তার প্রেক্ষিতে যুদ্ধের স্বীকৃত আইন ও রীতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আত্মসমর্পণের শর্তাবলীর অর্থ অথবা ব্যাখ্যা নিয়ে কোনো সংশয় দেখা দিলে লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার সিদ্ধান্তই হবে চূড়ান্ত।

লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা আত্মসমর্পণকারী সেনাদের জেনেভা কনভেনশনের বিধি অনুযায়ী প্রাপ্য মর্যাদা ও সম্মান দেওয়ার প্রত্যয় ঘোষণা করছেন এবং আত্মসমর্পণকারী পাকিস্তানি সামরিক ও আধা-সামরিক ব্যক্তিদের নিরাপত্তা ও সুবিধার অঙ্গীকার করছেন। লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার অধীন বাহিনীগুলোর মাধ্যমে বিদেশি নাগরিক, সংখ্যালঘু জাতিসত্তা ও জন্মসূত্রে পশ্চিম পাকিস্তানি ব্যক্তিদের সুরক্ষাও দেওয়া হবে।

অর্থনীতি

বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য আরও বাড়াতে ভারতের আগ্রহের কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ সফররত দেশটির রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোবিন্দ।

বুধবার (১৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে বৈঠককালে এ আগ্রহের কথা জানান ভারতের রাষ্ট্রপতি।

পরে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন ব্রিফ করেন।

স্ত্রী সবিতা কোবিন্দ ও মেয়ে স্বাতী কোবিন্দকে নিয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বঙ্গভবনে যান ভারতের রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোবিন্দ। বঙ্গভবনে পৌঁছালে তাদের স্বাগত জানান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও তার স্ত্রী রাশিদা হামিদ। এরপর বঙ্গভবনের ক্রেডেনশিয়াল হলে বৈঠকে বসেন ভারত এবং বাংলাদেশের দুই রাষ্ট্রপ্রধান।

বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ও প্রকল্প সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোবিন্দ।

বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতে তার দেশের আগ্রহের কথা জানিয়ে রাষ্ট্রপতি রাম নাথ বলেন, দুদেশের বাণিজ্য যাতে আরও বাড়ে, সে ব্যাপারে তার দেশ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে আগ্রহী।

বাণিজ্য বাড়াতে যৌথ উদ্যোগের ওপর জোর দেন রাম নাথ কোবিন্দ।

দুই দেশের ক্রমবর্ধমান বাণিজ্যের কথা তুলে ধরে ভারতের রাষ্ট্রপতি রাম নাথ আরও বলেন, দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ আগের চেয়ে বেড়েছে। এতে ব্যবসা-বণিজ্যের সুযোগও বেড়েছে।

দুই দেশের পারস্পরিক সহযোগিতামূলক সুসম্পর্কের কথা তুলে ধরে ভারতের রাষ্ট্রপতি রাম নাথ বলেন, মহামারির মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার যে নজির দুই দেশ গড়েছে, এর মাধ্যমে দুই দেশ একযোগে কাজ করে পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটাতে পারবে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তী, বঙ্গবন্ধু জন্মশতবার্ষিকী এবং ভারত-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপনে বাংলাদেশে আসতে পেরে গর্বিত বলে জানান ভারতের রাষ্ট্রপতি রাম নাথ।

তিনি বলেন, মৈত্রী দিবস উদযাপন দুদেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে বড় টেস্টিমনি।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে ‘ওয়ার হিরো’ হিসেবে বর্ণনা করেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোবিন্দ।

তিনি বলেন, দুই দেশের সম্পর্ক দিন দিন বাড়ছে। ‘বঙ্গবন্ধু ও বাপু ডিজিটাল’ প্রদর্শনীর কারণে দুদেশের জনগণের মধ্যে সম্পর্ক সম্প্রসারিত হচ্ছে। ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী এবং বাংলাদেশের বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজে ভারতীয় বাহিনীর সদস্যদের অংশগ্রহণ সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে মাইলফলক।

বৈঠকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদও দুই দেশের বাণিজ্য বাড়াতে যৌথ উদ্যোগের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

ভারতকে বাংলাদেশের খুব কাছের ও বিশ্বস্ত বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে মন্তব্য করেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ভারতের জনগণ ও সরকারের সার্বিক সহযোগিতার কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন তিনি।

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের গোড়াপত্তন হয়েছিল, তা এখন ‘অনন্য উচ্চতায়’ পৌঁছেছে।

তিনি বলেন, গত এক দশকের বেশি সময় ধরে নিরাপত্তা, সীমান্ত সমস্যার সমাধান, বিদ্যুৎ-জ্বালানি, ব্যবসা-বাণিজ্য, অবকাঠামো, যোগাযোগ খাতে দুদেশের সম্পর্ক অনেক সম্প্রসারিত হয়েছে। দুদেশের জনগণের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কের প্রসার ঘটেছে।

তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বাণী পাঠিয়ে এবং এ বছর স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কূটনৈতিক সম্পর্কের ‘নতুন অধ্যায়ের’ সূচনা করেছেন।

আবদুল হামিদ বলেন, দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিতে ‘মৈত্রী উৎসব’ পালন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে আরও দৃঢ় করেছে। বাংলাদেশে ও ভারতের বিভিন্ন শহরে ‘বঙ্গবন্ধু-বাপু ডিজিটাল’ প্রদর্শনীর কারণে দুদেশের জনগণ একে অপরের ইতিহাস আরও গভীরভাবে উপলব্ধি করেছে।

২০২১ সাল বাংলাদেশের জন্য একটি স্মরণীয় বছর উল্লেখ করে আবদুল হামিদ বলেন, এ বছর বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং বাংলাদেশ-ভারত কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন চলছে।

দুদেশের মধ্যেকার এখনো অমীমাংসিত বিষয়গুলো আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।

বৈঠক শেষে ভারতের রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোবিন্দ মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত একটি টি-৫৫ ট্যাংক এবং একটি মিগ-২১ যুদ্ধ্ববিমানের রেপ্লিকা রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে উপহার হিসেবে দেন।

পরে রাম নাথ কোবিন্দ বঙ্গভবনের পরিদর্শন বইয়ে সই করেন এবং তার সম্মানে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের দেওয়া নৈশভোজে অংশ নেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা, স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনসহ মন্ত্রিসভার কয়েকজন সদস্য নৈশভোজে যোগ দেন।

নৈশভোজের আগে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন অতিথিরা।

অর্থনীতি

অতুলনীয় স্বাদ ও গন্ধের জন্য দেশ ও বিদেশে ইলিশের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। মোহনীয় স্বাদের জন্য ইলিশকে মাছের রাজা বলা হয়, অনেকের মতে এটি পৃথিবীর মজাদার মাছ। এই ইলিশ মাছ দিয়ে বিশেষ কায়দায় স্যুপ ও নুডুলস বানিয়েছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) গবেষক দল।

ইলিশের শরীরে বিদ্যমান চর্বির বিন্যাসই জন্য মাছটি এতো সুস্বাদু। চর্বি বাতাসের সংস্পর্শে এসে জারণের ফলে খাবারে দুর্গন্ধ তৈরি করে। ইলিশের চর্বির সংরক্ষণ সক্ষমতা খুবই কম বলে ইলিশ-পণ্য তৈরি করে কক্ষ তাপমাত্রায় (২৫-৩০ডিগ্রি সে.) কিংবা ফ্রিজে -২০০ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা যায় না। চর্বিকে সরিয়ে ফেললে স্বাদ ও গন্ধ দুটোই চলে যাবে।

তিন বছরের অধিক সময় গবেষণা করে ইলিশের স্বাদ অক্ষুণ্ণ রেখে দীর্ঘদিন সংরক্ষণযোগ্য পণ্য তৈরির প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) গবেষক অধ্যাপক ড. একেএম নওশাদ আলম ও তার গবেষক দল। তিনি ইলিশ মাছ থেকে পাউডার ও কিউব তৈরি করেছেন; যা দিয়ে তিনি পরবর্তীতে স্যুপ ও নুডুলস বানিয়েছেন।

মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য বিজ্ঞান অনুষদে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দেন প্রধান গবেষক ড. একেএম নওশাদ আলম।

ইউএসএআইডির অর্থায়নে গবেষণাটি পরিচালিত হয়। গবেষক দলের অন্য সদস্যরা হলেন- আল শাহরিয়ার ও মো. সাজেদুল হক।

গবেষণা সম্পর্কে ড. নওশাদ আলম বলেন, ইলিশ অধিক আমিষ ও চর্বির মাছ। তবে ইলিশের চর্বি মোটেও ক্ষতিকর নয়। চর্বিতে বিদ্যমান ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড যা ইলিশের স্বাদের জন্য দায়ী। এই অসম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমিয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় এবং শরীরকে সুস্থ ও সতেজ রাখে।

তিনি বলেন, ইলিশের চর্বিকে স্থিতিশীল করার জন্য গাজর থেকে আহরিত ক্যারোটিনয়েড বা বিটা-কেরোটিনকে ভেষজ এন্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। উদ্ভাবিত ইলিশ-পণ্য দিয়ে সারা বছর ক্রেতারা ইলিশের স্বাদ পূরণ করতে পারবেন।

উদ্ভাবিত পণ্য সম্পর্কে গবেষক বলেন, নতুন পণ্যে আমিষ, অসম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন ও অন্যান্য খনিজসহ ইলিশ মাছের সব পুষ্টি উপাদান ও ভিটামিন অক্ষুণ্ণ রয়েছে। এক হাজার টাকা দামের একটি ইলিশ মাছ থেকে ছোট আকৃতির প্রায় ২০০ কিউব তৈরি করা সম্ভব। প্রতিটি কিউবের বাজারমূল্য ২০ টাকা। একটি কিউব দিয়ে ইলিশের হুবহু স্বাদের এক বাটি স্যুপ তৈরি করা সম্ভব। ইলিশের স্বাদ অপরিবর্তিত রেখে কিউবগুলোকে রেফ্রিজারেটরে ১ বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যাবে।

অর্থনীতি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সফটওয়্যার তৈরীতে ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের সাফল্যে আশা ব্যক্ত করে বলেছেন, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জ্ঞান নিয়ে ‘২০৪১ এর সৈনিকরা’ প্রস্তুত।

তিনি উল্লেখ করেন, তাঁর সরকার ডিজিটাল ডিভাইস রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্রে তৈরি পোশাক খাতকে ছাড়িয়ে যাওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আজকে থেকে বলতে পারি আর কোন দুশ্চিন্তা নাই। প্রযুক্তি শিক্ষায় এবং জ্ঞান ভিত্তিক যে সমাজ আমরা গড়তে চাই- আমাদের দেশটা সে পথে অনেকদূর এগিয়ে গেছে এবং ইনশাল্লাহ অবশ্যই বাংলাদেশ ২০৪১ সালের উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তোলার সৈনিকরা প্রস্তুত হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ দুপুরে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস-২০২১’ উদযাপন এবং ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ পুরস্কার’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন।

তিনি গণভবন থেকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আইসিটি মন্ত্রণালয় আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের সাহায্যে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন। ভার্চুয়ালি আইসিটি মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন প্রকল্পেরও উদ্বোধন করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। অর্থাৎ রূপকল্প ২০২১ এর যে চিন্তা চেতনাগুলো ছিল, লক্ষ্যগুলো ছিল সে লক্ষ্য আমরা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের ভবিষ্যতে এগিয়ে যেতে হবে। আর সেই ভবিষ্যতের জন্য আমাদের যারা নতুন প্রজন্ম তাদেরকেও প্রস্তুতি নিতে হবে।

অনুষ্ঠানে অ্যাপ বানিয়ে ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা পুরস্কার পাওয়ায় আনন্দ প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন,আমাদের দেশের ছোট ছোট ছেলে মেয়েরাও কিন্তু তাদের উদ্ভাবনী শক্তি দিয়ে অনেক কিছু আজকে তৈরি করছে। বাংলাদেশের জনগণ সেই সেবাটা পাবে,পাচ্ছে এবং তাদের সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার একটা সুযোগ হচ্ছে।

তিনি বলেন, আজকের শিশুদের মেধা ও মনন বিকাশে তাঁর সরকার যে সুযোগ করে দিয়েছে, ডিজিটাল বাংলাদেশ না হলে তা সম্ভব ছিলনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছেলে-মেয়েদের মধ্যে যে মেধা রয়েছে সেটাকে বের করে নিয়ে আসা এবং সেটাকে দেশের কাজে লাগানোই তাঁর সরকারের লক্ষ্য । সেক্ষেত্রে সরকার সত্যিই অনেক বেশি সাফল্য অর্জন করতে পেরেছে।

অনুষ্ঠানে আইসিটি খাতে অবদান রাখার জন্য ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ পুরস্কার’ প্রদান করা হয়। সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে আলাদাভাবে তিনটি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার দেওয়া হয়। জাতীয় পর্যায়ে এবং স্থানীয় পর্যায়ে মোট চব্বিশটি পুরস্কার প্রদান করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। পুরস্কার হিসেবে ক্রেষ্ট, সম্মাননা সনদ এবং নগদ অর্থের চেক বিজয়ীদের হাতে তুলে দেয়া হয়।

অনুষ্ঠানে অনলাইন কুইজ প্রতিযোগিতার বিজয়ীদেরকেও পুরস্কৃত করা হয়।

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ম্যানেজমেন্ট সিষ্টেম সুরক্ষা’র (সুরক্ষা অ্যাপ) প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে সেরা দলের দলনেতা হিসেবে পুরস্কার গ্রহণ করেন।

পুরস্কার প্রাপ্তদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশেষ করে এই ছোট্ট শিশুদেরকে পুরস্কার পেতে দেখে আমার মনটা ভরে গেল এইজন্য যে, ২০৪১ সালের বাংলাদেশ উন্নত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হবে। কাদের দিয়ে সেই বাংলাদেশটা হবে আজকে এই পুরস্কার দেওয়ার মধ্য দিয়ে তা সুস্পষ্ট হয়েছে। আমাদের নতুন প্রজন্মের অনেকে পুরস্কার পেল এবং তাদের মেধা বিকাশের একটা সুযোগ হলো, আমার এখন আর কোন দুশ্চিন্তা নাই।

ডিজিটাল ডিভাইস রপ্তানি করে অর্থ আদায়ের বিপুল সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের একটা লক্ষ্য আছে। আমরা গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি করছি। এখাত থেকে আমাদের সব থেকে বড় রপ্তানির অর্থ আয় হয়। কিন্তু এখন একটা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে যে, আমাদের ডিজিটাল ডিভাইস উৎপাদন এবং রপ্তানি। সেখানেও আমাদের যে মেধাবী ছেলে-মেয়ে রয়েছে, তাদেরও মেধা বিকাশের সুযোগ হবে।

আর এই ডিজিটাল পদ্ধতিতেই তাঁর সরকার আমাদের রপ্তানি ক্ষেত্রটা সব থেকে সমৃদ্ধ করতে সক্ষম হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় যে, এটা সকল খাতকে ছাড়িয়ে যাবে।এই ডিজিটাল ডিভাইস আমরা রপ্তানি করতে পারি।

আর তার জন্য একটা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে যে, ২০২৫ সাল নাগাদ এই ডিজিটাল ডিভাইস খাতে রপ্তানি আয় ৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে।’

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস এবং আইসিটি মন্ত্রণালয়ের সচিব এন এম জিয়াউল আলম অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

অনুষ্ঠানে ডিজিটাল বাংলাদেশ থিম সং এবং ‘ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণ’ শীর্ষক আইসিটি মন্ত্রণালয়ের কর্মকান্ড বিষয়ক একটি ভিডিও চিত্র পরিবেশিত হয়।

এছাড়া, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণ’ শীর্ষক আইসিটি মন্ত্রণালয় প্রকাশিত একটি বইয়ের মোড়কও উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী যেসব প্রকল্পের উদ্বোধন করেন সেগুলো হচ্ছে-

বীর মুক্তিযোদ্ধা লেফটন্যান্ট শেখ জামাল সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক’ চট্টগ্রাম,‘বঙ্গবন্ধু ম্মৃতি অঙ্গন ও আইটি বিজসেন সেন্টার এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্ক’ সিলেট, শেখ কামাল আইটি ইনকিউবেশন এন্ড ট্রেনিং সেন্টার, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয় (কুয়েট), দুই হাজার ৬শ’ ইউনিয়নে উচ্চগতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট কানেক্টিভিটি-ইনফো সরকার (৩য় পর্যায়ের প্রকল্প)।

প্রকল্পগুলোর ওপর ভিডিও চিত্র অনুষ্ঠানে পরিবেশিত হয়।

যুদ্ধববিধ্বস্থ দেশ পুনর্গঠনকালেই এদেশে ‘প্রযুক্তির যাত্রা জাতির পিতার হাতেই শুরু হয়’, উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল টেলি-কমিউনিকেশন ইউনিয়নের সদস্য হয় এবং তিনি ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন বেতবুনিয়ায় স্যাটেলাইট আর্থ স্টেশনের উদ্বোধন করেন।

প্রধানমন্ত্রী এ প্রসংগে বলেন, দুর্ভাগ্য, ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার ফলে একটি বিজ্ঞানমনস্ক জাতি গঠনের স্বপ্ন অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়।

’৭৫ পরবর্তী হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের রাজনীতির গোড়াপত্তনের প্রসংগ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, এর পর দীর্ঘ ২১ বছর তথ্য-প্রযুক্তির উন্নয়নে কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। বরং, উন্নয়নকে কিভাবে বাধাগ্রস্ত করা যায় বারবার সে চেষ্টাই করা হয়েছে। ১৯৯১-৯৫ বিএনপি’র আমলে বাংলাদেশকে বিনামূল্যে সাবমেরিন কেবল লাইন- সাউথ ইস্ট এশিয়া-মিডল ইস্ট-ওয়েস্টার্ন ইউরোপে সংযোগ দিতে চাইলে তারা প্রত্যাখান করেছিল। এর ফলে, দেশ আন্তর্জাতিক তথ্য-প্রযুক্তি মহাসড়ক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়।

তিনি বলেন, তখনকার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বলেছিল এতে করে দেশের তথ্য নাকি বের হয়ে যেতে পারে (তথ্য পাচার)।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে আমরা সরকারে এসে এই খাতের উন্নয়নে নতুন নীতিমালা গ্রহণ করি। সফ্টওয়্যার, ডাটা-এন্ট্রি, ডাটা-প্রসেসিং এর উন্নয়নে আইটি-ভিলেজ এবং হাইটেক-পার্ক গড়ে তোলার উদ্যোগ নিই। শুল্কমুক্তভাবে কম্পিউটার, কম্পিউটার যন্ত্রাংশ এবং সফ্টওয়্যার আমদানির অনুমোদন দিই। এ কাজে তাঁর পুত্র এবং সরকারের তথ্য প্রযুক্তি উপদেষ্টা সচিব ওয়াজেদ জয়’র সহযোগিতার কথাও তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে দিন বদলের সনদ ‘রূপকল্প ২০২১’ ঘোষণা করি, যার মূল উপজীব্য ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশ। আজ সেই ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা হয়েছে।

তিনি বলেন, সে সময়েই তাঁর সরকার মোবাইল ফোন এবং ভি-স্যাট স্থাপনায় মনোপলি ভেঙে দিয়ে তথ্য-প্রযুক্তি খাত বিকাশের পরিবেশ সৃষ্টি করে। মোবাইল ফোন জনগণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সরকারে আসার আগে প্রতি এমবিপিএস ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের দাম ছিল ৭৮ হাজার টাকা, যা বর্তমানে ৪শ’ টাকার নীচে নামিয়ে এনেছি। এখন দেশে প্রায় ১৮ কোটি ১৩ লক্ষ মোবাইল সিমের ব্যবহার হচ্ছে এবং ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ১৩ কোটি। আইসিটি বিভাগের মাধ্যমে ২০ লাখ মানুষকে প্রশিক্ষণ দেয়ার ফলে তাদের তথ্য-প্রযুক্তি নির্ভর কর্মসংস্থান হয়েছে।

তিনি বলেন, ৩৯টি হাই-টেক পার্ক ও ইনেকিউবেশন সেন্টারের মধ্যে ৯টিতে দেশি-বিদেশী বিনিয়োগকারীরা ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করেছে। আমরা স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম গড়ে তুলেছি।

উল্লেখ্য, গত পাঁচ বছর ধরে এ দিবসটি পালন করা হলেও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণার ১২ বছর উপলক্ষে ব্যাপক পরিসরে বিভিন্ন অনুষ্ঠান হাতে নেওয়া হয়েছে। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশের অর্জন, উপকৃত সব জনগণ’- এ প্রতিপাদ্য নিয়ে এবার দিবসটি পালন করা হচ্ছে। ২০০৮ সালে ১২ ডিসেম্বর ডিজিটাল বাংলাদেশ: রূপকল্প ২০২১-এর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐতিহাসিক ঘোষণাকে স্মরণীয় এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতের অর্জন ও তাৎপর্য জনগণের মাঝে উপস্থাপনের নিমিত্ত মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ১২ ডিসেম্বর দিনটিকে জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি দিবস হিসেবে পালনের প্রজ্ঞাপন জারী করেন। সে মোতাবেক গত ১২ ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখ দেশব্যাপী ১ম বারের মত বর্ণাঢ্যভাবে জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি দিবস পালিত হয়। ২০১৮ সালে মন্ত্রিসভা বৈঠকে দিবসটির নতুন নামকরণ করা হয় ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস।