অর্থনীতি

আসন্ন জাতীয় রাজস্ব বাজেটে এমন করব্যবস্থা নেওয়া হবে, যাতে সরকার ও ব্যবসায়ী—উভয়ই জিতবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেছেন, আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট এমনভাবে প্রণয়ন করা হবে, যাতে বাজেট হবে ব্যবসা সহায়ক। করব্যবস্থায় কেউ যেন না ঠকে, সে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এর ফলে সরকার দেশ পরিচালনা ও উন্নয়নের স্বার্থে প্রয়োজনীয় রাজস্ব সংগ্রহ করতে পারবে এবং একই সঙ্গে ব্যবসায়ীরা ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে কোনো রকম ক্ষতির সম্মুখীন হবেন না।

গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর ইন্টার কন্টিনেন্টালে হোটেলে জাতীয় বাজেট ২০২২-২৩ বিষয়ে আয়োজিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পরামর্শক কমিটির ৪২তম সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

kalerkanthoএনবিআর ও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই এই সভার আয়োজন করে। সভায় এনবিআরের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম সভাপতিত্ব করেন। এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা বাজেট প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।

ব্যবসায়ীদের কর প্রদানের আহ্বান জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের কর দিতে হবে; আপনারা যদি কর না দেন, তাহলে পদ্মা সেতু বা বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যাবে না। আপনাদের দেশ ও নিজের স্বার্থে কর দিতে হবে। ’

শুল্ক-কর কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়ে কাজ করাতে হয়—ব্যবসায়ীদের এমন অভিযোগের প্রেক্ষাপটে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা ঘুষ দিচ্ছেন কেন? আপনাদের কাছে অনুরোধ, ঘুষ দেবেন না। ’ এ সময় হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘ঘুষ দেওয়া যাবে না। যারা ঘুষ দেয়, তাদের জায়গা হবে জাহান্নামে। ’

অর্থমন্ত্রী জানান, গত ১৩ বছরে দেশে রাজস্ব আয় বেড়েছে আট গুণ। সর্বশেষ ২০২০-২১ অর্থবছরে এনবিআরে রাজস্ব আয় দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ৫৯ হাজার কোটি টাকা। আর এক যুগের ব্যবধানে কর-জিডিপির অনুপাত ৯.১ শতাংশ থেকে বেড়ে ১০.৩ শতাংশ হয়েছে।

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের নজরদারি চান ব্যবসায়ীরা

দ্রব্যমূল্যের ক্রমবর্ধমান ঊর্ধ্বগতিতে ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক কার্যক্রমে ব্যাঘাত সৃষ্টির শঙ্কা দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। এ জন্য দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেছে সংগঠনটি। পরামর্শক কমিটির সভার সূচনা বক্তব্যে সংগঠনটির সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠান নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম কমানোর উদ্যোগ, কর ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আনাসহ আগামী বাজেটে বাস্তবায়ন করতে একাধিক প্রস্তাব দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

জসিম উদ্দিন বলেন, রোজা সামনে রেখে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখার জন্য সুলভে বর্ধিত নিত্যপণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করে বাজারমূল্যের ভারসাম্য রক্ষা করার অনুরোধ জানাচ্ছি। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা প্রয়োজন।

এ ছাড়া ব্যক্তি শ্রেণির করদাতার ন্যূনতম কর তিন লাখ থেকে বাড়িয়ে চার লাখ টাকা করা, কম্পানি কর ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৭.৫০ শতাংশ করাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে করছাড়ের প্রস্তাব করেন তিনি।

অর্থনীতি

যারা ঘুস দেয়, তাদের জায়গা জাহান্নামে হবে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

শুল্ক ও কর কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা ঘুস দিচ্ছেন কেন? আপনাদের কাছে অনুরোধ, ঘুস দেবেন না।’

মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে আসন্ন বাজেট উপলক্ষে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই আয়োজিত পরামর্শক সভায় তিনি এসব মন্তব্য করেন।

সভায় শুল্ক ও কর কর্মকর্তাদের সর্তক করে দিয়ে অর্থমন্ত্রী হাদিসের উদ্ধৃতি দেন। তিনি বলেন, ‘ঘুস দেওয়া যাবে না। যারা ঘুস দেয়, তাদের জায়গা হবে জাহান্নামে।’

আগামী (২০২২-২৩) অর্থবছরের বাজেটেও ব্যবসায়ীরা জিতবেন বলে সভায় মন্তব্য করেন অর্থমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘এবারের বাজেটের মূল থিম হচ্ছে ‘উইন উইন সিচুয়েশন (সবার জন্য সমান সুযোগ)’। অর্থাৎ আগামী বাজেটে আপনারা কেউ হারবেন না, জিতবেন। পাশাপাশি আপনাদের সঙ্গে আমাদের সরকারও জিতবে। আমরা সবাই জিতব।সরকার সব ক্ষেত্রে বেশি নিল, ব্যবসায়ীরা কিছু পেল না— এ অভিযোগ সরকার শুনতে চায় না।’

ব্যবসায়ীদের প্রশংসা করে মুস্তফা কামাল বলেন, ‘গত ১৩ বছরে রাজস্ব আটগুণ বেড়েছে। এতে ব্যবসায়ীদের অবদান রয়েছে। তবে ব্যবসায়ীদের এটাও মনে রাখতে হবে আগামীতেও কর পরিশোধ করতে হবে। তা না হলে পদ্মা সেতুর মতো বড় প্রকল্প কীভাবে বাস্তবায়ন হবে অথবা মেগাপ্রকল্প সরকার কীভাবে শেষ করবে!’

ব্যবসায়ীদের আশ্বস্ত করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘করোনার কারণে গত দুই বছরে আমরা অনেক পিছিয়েছি। এখন আপনাদের সহযোগিতা প্রয়োজন। আপনারা ঠকবেন না। আমরা আপনাদের ঠকতে দেবো না। আপনারা যদি ঠকেন তাহলে দেশ পিছিয়ে যাবে।’

অর্থনীতি

ব্যবসায়ী ও সরকার উভয়কে ‘জেতানোর’ বাজেট নিয়ে আসছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তার ভাষ্যে, ব্যবসায়ীরা ‘ঠকলে’ দেশ পিছিয়ে যাবে।

অর্থমন্ত্রী মঙ্গলবার ঢাকার একটি হোটেলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও এফবিসিসিআই আয়োজিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের পরামর্শক কমিটির সভায় ব্যবসায়ীদের আশ্বস্ত করেন অর্থমন্ত্রী।

রাজস্ব বাজেট প্রণয়নে ব্যবসায়ীদের বিপুল দাবির প্রেক্ষাপটে মুস্তফা কামাল বলেন, “আজকের দিনে আমি বলতে চাই, আপনারা কেউ ঠকবেন না। আপনারা আগেও ঠকেন নাই, এখনও ঠকবেন না। আপনাদেরকে ঠকতে দেওয়া যাবে না।”

ব্যবসা থেকে রাজনীতিতে আসা মুস্তফা কামাল বলেন, “আমাদের দেশ পিছিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা এখানে আসিনি। আমরা সবাই মিলে, আমি অনুরোধ করব আপনাদেরকে, আপনারা মেহেরবানি করে বিরক্ত না হয়ে যতবার ইচ্ছা আমাদেরকে জানাবেন, অবহিত করবেন।

“এবং আমরা চেষ্টা করব, আগামী দিনের বাজেটটি আমরা প্রণয়ন করব, সেখানে এনবিআর রিলেটেড ইস্যুজ যেগুলো আছে, এগুলো বাস্তবমুখী হবে এবং সেখানে আপনাদের কষ্টের লাঘব যেন হয়, সেটি সবসময় আমাদের চিন্তায় থাকবে।”

ব্যবসায়ীদের ‘কষ্ট’ লাঘবের পাশাপাশি রাজস্ব আহরণের প্রবৃদ্ধিও সঠিক ধারায় রাখতে ২০২২-২৩ বাজেটে নির্দেশনা থাকার কথা বলেন অর্থমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “কষ্টের লাঘব করব এবং আমাদের কর আহরণটি কীভাবে আপনাদেরকে কষ্ট না দিয়ে সঠিক রাখা যায়, এবং আমাদের ‍উন্নয়নের সাথে মিল রাখা যায়, সেই চেষ্টাটি আমরা অবশ্যই করব। আমি আবারও বলছি, আপনাদের দিকে তাকিয়ে আছে সারা দেশ। যারা আজকে পিছিয়ে আছে, তাদের প্রতি আপনাদের দায়িত্ব আছে।”

যেসব প্রস্তাব পরামর্শ সভায় ব্যবসায়ীরা দিয়েছেন, তার প্রতিফলন বাজেটে থাকবে বলে তাদের আশ্বস্ত করেন মুস্তফা কামাল।

তিনি বলেন, “সব প্রস্তাবনাই আমাদের উন্নয়ন পরিকল্পনার সাথে মিল করে আগামী বাজেটটি উপস্থাপন করব। তবে, এর মূল থিম আমাদের আছে। সেটা হচ্ছে উইন-উইন সিচুয়েশন। উইন-উইন সিচুয়েশন মানে হচ্ছে আগামী বাজেটে এনবিআর রিলেটেড ইস্যুজ নিয়ে আপনারা কেউ হারবেন না, আপনারা জিতবেন।

“পাশাপাশি আপনাদের সাথে আপনাদের সরকারও জিতবে। সবাইকে আমরা জিতাব ইনশাআল্লাহ। আপনারা জিতবেন এবং সরকারও জিতবে।”

নিজের বক্তব্য আরও বিস্তৃত করে আর্থমন্ত্রী বলেন, “আমরা বেশি নিয়ে নিলাম, আপনারা কিছুই পাচ্ছেন না, এ ধরনের অভিযোগ আমরা শুনতে চাই না।”

বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের জন্যই করের আওতা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন তিনি।

এখানেও ব্যবসায়ীদের টেনে মুস্তফা কামাল বলেন, “জনগণের করের টাকায় নির্মিত হচ্ছে পদ্মা সেতু এবং নানাবিধ মেগা প্রকল্প। দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে ও বিনিময় বৃদ্ধিতে ব্যবসায়ীদের সুযোগ অবারিত করতে শতভাগ বিদ্যুতায়ন সম্ভব হয়েছে।”

গত ১৩ বছরে রাজস্ব আদায়ে ব্যাপক প্রবৃদ্ধি হওয়ার কথা বলেন তিনি, সেখানেও ব্যবসায়ীদের অবদানের কথা বলেন।

“গত ১৩ বছরে ৮ গুণ বেড়ে এটা ২ লাখ ৬৯ হাজার কোটি টাকা হয়েছে। এই বৃদ্ধির পেছনে আপনাদের ভূমিকা রয়েছে এবং আমাদের এনবিআর চেয়ারম্যান ও তার টিম যথেষ্ট কষ্ট করেছে। এজন্য আপনাদেরকে ধন্যবাদ জানাই।”

করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে অর্থনীতির যে ক্ষতি গত দুই বছরে হয়েছে, সেটার ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার পথনির্দেশও আগামী বাজেটে রাখার কথা বলেন অর্থমন্ত্রী।

মাঠ পর্যায়ে কর আদায়কারী কর্মীদের বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতি ও হয়রানির অভিযোগ অনুষ্ঠানে করেন একাধিক ব্যবসায়ী নেতা।

এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, “দুর্নীতি, স্পিডমানির কথা বলেছেন এবং না দিলে কাজ হয় না। আমার অনুরোধ থাকবে, পাশাপাশি আমি চেয়ারম্যান সাহেবের সাথে আলাপ করলাম– তার অভিমত একটাই, আপনারা দিচ্ছেন কেন? আপনারা যদি না দেন তাহলে এই বিষয়টি, যা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক, আমাদের শুনতে হত না।”

ব্যবসায়ীদের দাবিগুলো ‘যতদূর সম্ভব’ বাজেটে সন্নিবেশিত করার আশ্বাস দেন এনবিআর আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমও।

করদাতাদের কথা বিবেচনায় নিয়ে ও হয়রানি রোধের জন্য রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে বিভিন্ন অটোমেশন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

ব্যবসার প্রবৃদ্ধি চলমান রাখার জন্য কর সংক্রান্ত অনেক বিরোধ আদালতের বাইরে নিষ্পত্তির চেষ্টা এনবিআর করছে জানিয়ে চেয়ারম্যান রহমাতুল মুনিম বলেন, “আদালতের দ্বারস্ত হয়ে আমার রাজস্ব পেন্ডিং রাখা বা আমার ব্যবসার উন্নয়ন বা বিস্তৃতির সক্ষমতাকে মামলার মধ্যে নিবদ্ধ রাখা, মামলার পেছনে এমনভাবে ব্যস্ত রাখা এই ফাঁকে আমার সময় ও শ্রম ক্ষয় হবে, সেটা হলে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।”

ব্যবসায়ীদের ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, “কষ্ট হয়, অল্প সংখ্যক বিপথগামী কর আহরণকারী ও অল্প সংখ্যক বিপথগামী করদাতা পরিবেশ নষ্ট করে, সেই পরিবেশের দায় সাধারণভাবে সবার উপরে এসে পড়ে।”

কমপ্লায়েন্সের জায়গা ঠিক করতে গিয়ে অনেক সময় সঠিক করদাতাদের ওপরও চাপ পড়ে বলে উল্লেখ করেন এনবিআর চেয়ারম্যান।

বাজারমূল্য যখন বেড়ে যায়, তখন কর শিথিল করে সেটা নিয়ন্ত্রণ করা দুরূহ বলেই মনে করছেন তিনি।

তিনি বলেন, “কোনো জিনিসের দাম যখন আন্তর্জাতিক বাজারে আসে (বাড়ে), তখন অনেকের কাছ থেকে এই দাবিটি আসে যে, দেশীয় বাজারে মূল্য কমিয়ে রাখার জন্য কর ছাড় দেওয়া হোক, রেভিনিউ ছাড় দেওয়া হোক।

“এটা দিয়ে কিন্তু সবসময় দেশীয় বাজার কমিয়ে রাখা যাবে না। বাজার যে রকম বাড়ে, সেই তুলনায় রেভিনিউ কিন্তু কমই থাকে। আমার মনে হয়, এটার জন্য অন্যান্য ম্যাকানিজমগুলো ব্যবহার করতে হবে। পাশাপাশি রেভিনিউজ সাপোর্ট যতটুকু দেওয়া যায় আমরা দিই, দিয়ে যাব।”

ভোক্তাদেরও মানসিক প্রস্তুতি থাকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ভোক্তাদের মানসিক প্রস্তুতি থাকতে হবে, মার্কেট প্রাইস বাড়ার সাথে সাথে অতিরিক্ত মূল্য দিয়ে পণ্য কিনতে হবে।”

পরামর্শসভায় ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন। বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারাও নিজেদের দাবির বিষয় তুলে ধরেন।

অর্থনীতি

গ্যাসের দাম বাড়ানোর সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) গঠিত কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি।

সোমবার রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে বিইআরসির গণশুনানিতে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সুপারিশ করেন কারিগরি মূল্যায়ন কমিটির আহ্বায়ক পরিচালক (গ্যাস) দিদারুল আলম।

পেট্রোবাংলা গ্যাসের দাম যে পরিমাণ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছিল তার চেয়ে কম হলেও দাম বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে।

বর্তমানে প্রতি ঘনমিটার গ্যাস বিক্রি হচ্ছে ৯ টাকা ৩৬ পয়সায়। সেই দাম প্রতি ঘনমিটারে ৩ টাকা ১১ পয়সা বাড়ানোর সুপারিশ করেছে কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি।

এর আগে পেট্রোবাংলা বিইআরসির কাছে মিশ্রিত গ্যাসের পাইকারি ব্যয় (২০২২ সালে প্রতি ঘনমিটার) ১৫ দশমিক ৩০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ দশমিক ৩৫ টাকা করার প্রস্তাব দেয়।

তবে মূল্যায়ন কমিটি যাচাই-বাছাই করে দেখেছে এই ব্যয় বেড়ে দাঁড়াতে পারে ১২ দশমিক ৪৭ টাকা। একই সঙ্গে কমিটি মূল্যায়ন রিপোর্টে পেট্রোবাংলাকে অনুদান দেওয়ারও সুপারিশ করেছে।

এর আগে সবশেষ গ্যাসের দাম বৃদ্ধির আদেশে (২০১৯ সালে) পাইকারি দর প্রতি ঘনমিটার ১২ দশমিক ৬০ টাকা করা হয়। এর মধ্যে ইউনিট প্রতি ভর্তুকি দিয়ে ৯ দশমিক ৩৭ টাকায় বিক্রির নির্দেশ দেয় বিইআরসি।

চলতি বছরে সরবরাহ ব্যয় ১৫ দশমিক ৩০ টাকা বেড়ে দাঁড়াবে বলে জানিয়েছে পেট্রোবাংলা। এ জন্য পেট্রোবাংলা ভোক্তা পর্যায়ে ২০ দশমিক ৩৫ টাকা করার দাবি জানায়।

কারিগরি কমিটি তাদের রিপোর্টে দেখিয়েছেন স্পট মার্কেট থেকে দৈনিক ৯৯ দশমিক ৪৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস আমদানি করা হচ্ছে। যা মোট গ্যাসের মধ্যে প্রায় ৩ শতাংশ। বিদায়ী অর্থবছরে গ্যাসের মিশ্রিত ব্যয় ২ দশমিক ৪০ টাকা কমে ১০ দশমিক ১২ টাকায় নেমে এসেছে।

অর্থনীতি

দেশের দক্ষিণাঞ্চলকে শতভাগ বিদ্যুতায়নের আওতায় আনার এ প্রচেষ্টা আলোর মুখ দেখেছে আগেই; এবার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পালা ওই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বাস্তবায়িত দেশের সর্ববৃহৎ বিদ্যুৎকেন্দ্রটির।

অর্থনীতি

দেশে কোটিপতির সংখ্যা বাড়ছে। গত এক বছরে কোটিপতি আমানতকারী ৮ হাজারের বেশি বেড়ে ১ লাখ ১ হাজার ৯৭৬ জনে দাঁড়িয়েছে। আর দেশে করোনার ২১ মাসে (মার্চ-২০২০ থেকে ডিসেম্বর-২০২১) এমন আমানতকারী বেড়েছে ১৯ হাজার ৩৫১ জন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতে কোটি টাকার বেশি আমানতের হিসাব (অ্যাকাউন্ট) ছিল ৯৩ হাজার ৮৯০টি। ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক লাখ এক হাজার ৯৭৬টিতে। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে কোটিপতি হিসাব (অ্যাকাউন্ট) বেড়েছে ৮ হাজার ৮৬টি।

প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, ২০২০ সালের মার্চে দেশে যখন করোনা ছড়িয়ে পড়ে তখন ব্যাংক খাতে কোটি টাকার বেশি আমানত রাখা হিসাবের (অ্যাকাউন্ট) সংখ্যা ছিল ৮২ হাজার ৬২৫টি। মহামারি চলাকালে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরেই কোটিপতি হিসাবের ওই অংক ১ লাখ ছাড়ায়। ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে তা দাঁড়ায় এক লাখ এক হাজার ৯৭৬ টিতে। সে হিসাবে মহামারির ২১ মাসে দেশে কোটিপতি হিসাব (অ্যাকাউন্ট) বেড়েছে ১৯ হাজার ৩৫১টি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে ১২ কোটি ৪৮ লাখ ৯৬ হাজার ৯৩৪টি ব্যাংক হিসাব (অ্যাকাউন্ট) খোলা হয়। যেখানে জমা ছিল ১৫ লাখ ১২ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। এর মধ্যে কোটি টাকার বেশি হিসাবে (অ্যাকাউন্ট) জমা ৬ লাখ ৫৩ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা। ২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে কোটিপতি ব্যাংক হিসাবগুলোতে জমা ছিল ৫ লাখ ৯৫ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা। ওই সময় মোট আমানতের স্থিতি ছিল ১৩ লাখ ৭৯ হাজার ১৫০ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, এক কোটি এক টাকা থেকে পাঁচ কোটি টাকার আমানতকারীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৭৯ হাজার ৮৮৩টি। যাদের হিসাবে জমা টাকার অংক এক লাখ ৬৬ হাজার ৪৪৩ কোটি টাকা। পাঁচ কোটি থেকে ২০ কোটির মধ্যে রয়েছে ১৭ হাজার ৯টি অ্যাকাউন্ট। তাদের অ্যাকাউন্টে টাকার অংক এক লাখ ৫৮ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা। এ ছাড়া ২০ কোটি থেকে ৫০ কোটির উপরে মোট হিসাবধারীর সংখ্যা ৫ হাজার ৮৪টি। এই হিসাবগুলোতে জমার অংক তিন লাখ ২৮ হাজার ৭১৯ কোটি টাকা।

ব্যাংকাররা জানান, কোটি টাকার হিসাব মানেই কোটিপতি ব্যক্তির হিসাব নয়। কারণ ব্যাংকে এক কোটি টাকার বেশি অর্থ রাখার তালিকায় ব্যক্তি ছাড়া অনেক প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। আবার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান কতটি ব্যাংক হিসাব খুলতে পারবে, তার কোনো নির্দিষ্ট সীমা নেই। ফলে এক প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির একাধিক হিসাবও রয়েছে। এর মধ্যে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার কোটি টাকার হিসাবও রয়েছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে দেশে কোটিপতি আমানতকারী ছিল ৫ জন। ১৯৭৫ সালে তা ৪৭ জনে উন্নীত হয়। ১৯৮০ সালে কোটিপতি হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল ৯৮টি। এরপর ১৯৯০ সালে ৯৪৩টি, ১৯৯৬ সালে ২ হাজার ৫৯৪টি, ২০০১ সালে ৫ হাজার ১৬২টি, ২০০৬ সালে ৮ হাজার ৮৮৭টি এবং ২০০৮ সালে ছিল ১৯ হাজার ১৬৩টি। ২০২০ সালে ডিসেম্বর শেষে দাঁড়ায় ৯৩ হাজার ৮৯০টিতে।

অর্থনীতি

বাংলাদেশে সরকার যে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলেছে, সেখানে বিনিয়োগ করতে সৌদি আরবকে আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সফররত সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদ বুধবার গণভবনে দেখা করতে গেলে তাকে তিনি এই আহ্বান জানান বলে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম জানিয়েছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, “আমি বাংলাদেশে সৌদি আরবের বিনিয়োগকে স্বাগত জানাই। বিশেষ অর্থনৈতিক জোনে সৌদি বিনিয়োগকারীদের জন্য জমি বরাদ্দ করাসহ তাদের সহযোগিতা জোরদারে প্রস্তুত বাংলাদেশ।”

সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী নতুন খাত খুঁজে বের করে অর্থনৈতিক সহযোগিতা আরও বাড়ানোকে ‘সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার’ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বলে প্রেস সচিব জানান।

শেখ হাসিনা সৌদি আরবের সঙ্গে বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, অনেক ক্ষেত্রে এই সহযোগিতা জোরদার করা হয়েছে।

সহযোগিতা জোরদারের ক্ষেত্র হিসেবে অর্থনীতি, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, জ্বালানি, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও প্রতিরক্ষার কথা বলেন তিনি।

সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তার দেশের অনেক কোম্পানি বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে বিশেষ করে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী।
বৈশ্বিক তথা সৌদি আরবের অর্থনীতিতে বাংলাদেশিদের অবদানের কথাও বলেন তিনি।

ফয়সাল বিন ফারহান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের এবং বাংলাদেশের অপ্রতিরোধ্য অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রশংসা করেন বলেও প্রেস সচিব জানান।

বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের সম্পর্ককে একটি ‘বন্ধুত্বের শক্ত বন্ধন’ অভিহিত করে তিনি বলেন, আগামী দিনগুলোতে এই বন্ধন আরও মজবুত হবে বলে তিনি আশাবাদী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সৌদি আরব বাংলাদেশের জনগণের হৃদয়ের একটি বিশেষ স্থানে রয়েছে।
শেখ হাসিনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মা্ধ্যমে সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদ ও যুবরাজ মোহাম্মাদ বিন সালমান আল সৌদকে শুভেচ্ছা জানান।

মুসলিম বিশ্বের দুই পবিত্র মসজিদের খাদেম হিসেবে সৌদি বাদশাহ সালমানের অবদানের প্রশংসাও করেন তিনি।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনীর আরবি ভাষায় অনূদিত গ্রন্থটি সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে উপহার হিসেবে দেন প্রধানমন্ত্রী।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, অ্যাম্বাসাডর অ্যাট লার্জ মো. জিয়াউদ্দিন, মুখ্য সচিব আহমেদ কায়কাউস, সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জাভেদ পাটোয়ারি, বাংলাদেশে নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত ইসা ইউসাফ ইসা আল দুলাইহান বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

অর্থনীতি

ভোজ্যতেল নিয়ে সারা দেশে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যেই অব্যাহত রয়েছে আমদানি। চট্টগ্রাম বন্দরে ৩২ হাজার টন অপরিশোধিত সয়াবিন তেল নিয়ে এসেছে দুটি জাহাজ। প্রায় ৪৩ হাজার টন অপরিশোধিত সয়াবিন নিয়ে কয়েক দিনের মধ্যে আসছে আরও একটি জাহাজ। অর্থাৎ মোট ৭৫ হাজার টন সয়াবিন তেল খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে।

আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই মুহূর্তে দেশে ভোজ্যতেলের সংকট নেই। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যটির দাম বাড়ায় আগের চেয়ে বেশি দামে আমদানি করতে হচ্ছে। সরকার পণ্যটিতে আমদানিসহ বিভিন্ন পর্যায়ে ভ্যাট মওকুফের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় আমদানিকারকরা এলসি (লেটার অব ক্রেডিট) খুলতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। তাই সহসাই সংকটের আশঙ্কা নেই।

চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, একটি জাহাজ ১০ মার্চ ১২ হাজার টন অপরিশোধিত সয়াবিন তেল নিয়ে বন্দর সীমায় এসেছে। ২০ হাজার টন তেল নিয়ে ১২ মার্চ এসেছে আরও একটি জাহাজ। এদিকে ৪২ হাজার ৮৫০ টন সয়াবিন তেল নিয়ে ১৯ মার্চ আসছে আরও একটি জাহাজ।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জাহাজ থেকে অপরিশোধিত সয়াবিন তেল রিফাইনারিতে নিয়ে পরিশোধের পর আমদানিকারকরা বাজারজাত করেন। খালাস ও পরিশোধন শেষে আমদানি করা তেল বাজারে ছাড়তে ১৫ দিন থেকে ১ মাস লেগে যেতে পারে।

দেশের অন্যতম বৃহৎ ভোজ্যতেল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান টিকে গ্রুপের পরিচালক তারিক আহমেদ বলেন, দেড় দুই মাস আগেও প্রতি টন অপরিশোধিত সয়াবিন ১ হাজার ৪০০ ডলারে আমদানি করা যেত। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে বুকিং রেট বেড়ে যাওয়ায় এখন ১ হাজার ৯০০ ডলারে এলসি করতে হচ্ছে।

চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় পাইকারি ভোগ্যপণ্যের বাজার চাকতাই-খাতুনগঞ্জের পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, সয়াবিন তেলের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে।

এখানকার পাইকারি ব্যবসায়ী আবদুর রাজ্জাক যুগান্তরকে বলেন, দেশে সয়াবিন তেলের সংকট নেই। ৬ মাসেও কোনো সংকট হবে না। তবে পাম অয়েলের মজুত তুলনামূলক কম। গ্রীষ্মে পাম অয়েলের চাহিদা বেড়ে যায়। সেই অনুযায়ী এই তেল আমদানি হচ্ছে না।

তিনি জানান, সয়াবিন তেলের বুকিং রেটও বেড়েছে। এখন যে রেটে এলসি হচ্ছে, সেই তেল দেশে এলে প্রতি মন পাম অয়েল ৮ হাজার টাকায় বিক্রি করতে হবে। বর্তমানে প্রতি মন পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ৫ হাজার ৮০০ টাকায়।

অর্থনীতি

আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কিছুটা নিম্নমুখী হওয়ায় দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম কমিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)।

বুধবার থেকে দেশের বাজারে ভা‌লো মানের স্বর্ণের দাম ভরিতে এক হাজার ১৬৬ টাকা ক‌মি‌য়ে সোনার নতুন দাম নির্ধারণ করেছে বাজুস।

ফলে দে‌শের বাজা‌রে ভা‌লো মা‌নের স্বর্ণ প্রতি ভ‌রির দাম ক‌মে দাঁড়াচ্ছে ৭৮ হাজার ১৫৯ টাকা। বুধবার থেকে স্বর্ণের এই নতুন দাম কার্যকর হবে।

মঙ্গলবার বাজুসের মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এম এ হান্নান আজাদ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বাজুসের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণ কিনতে বুধবার থেকে খরচ পড়বে ৭৮ হাজার ১৫৯ টাকা। মঙ্গলবার পর্যন্ত এই মানের স্বর্ণ প্রতি ভরি বিক্রি হচ্ছিল ৭৯ হাজার ৮২৫ টাকায়।

২১ ক্যারেটের স্বর্ণের দাম ১০৫০ টাকা ক‌মি‌য়ে ৭৪ হাজার ৬৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা মঙ্গলবার পর্যন্ত ৭৫ হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল।

এছাড়া ১৮ ক্যারেটের ৯৩২ টাকা ক‌মে প্রতি ভরির দাম দাঁড়িয়েছে ৬৪ হাজার ৩৫ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরির দাম ৭০০ টাকা ক‌মি‌য়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৩ হাজার ৩৬৩ টাকা।

স্বর্ণের দাম কমালেও রূপার দাম অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। ক্যাটাগরি অনুযায়ী ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি রূপার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫১৬ টাকা। ২১ ক্যারেটের রূপার দাম ১৪৩৫ টাকা, ১৮ ক্যারেটের ১২২৫ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির রূপার দাম ৯৩৩ টাকায় অপরিবর্তিত রাখা হ‌য়েছে।

এর আগে গত ৮ মার্চ স্বর্ণের দাম বাড়িয়েছিল বাজুস।

অর্থনীতি

পটুয়াখালীর পায়রার তীরে দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হতে যাচ্ছে এ মাসে, যে কেন্দ্র ঘিরে বিদ্যুৎ উৎপাদনের একটি ‘হাব’ গড়ে তোলার লক্ষ্য রয়েছে সরকারের।

আসছে ২১ মার্চ ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেদিন তিনি দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়নেরও ঘোষণা দেবেন।

সেই আয়োজন সামনে রেখে সোমবার বিদ্যুৎ ভবনে মিট দ্যা রিপোর্টার্স অনুষ্ঠানে হাজির হন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি বলেন, “দেশের সর্বপ্রথম এবং বিশ্বের দশম দেশ হিসেবে আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির বিদ্যুতকেন্দ্র উদ্বোধন হতে যাচ্ছে।”

বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ মালিকানার কয়লাভিত্তিক এ কেন্দ্রটির ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার প্রথম ইউনিট থেকে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ শুরু হয়েছিল ২০২০ সালের মে মাসে। ওই বছরের শেষ দিকে চালু হয় দ্বিতীয় ইউনিট। এখন এর উদ্বোধনের আনুষ্ঠানিকতা সারা হবে।

দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে সরকার এক দশক আগে বেশ কয়েকটি কয়লা ও পরমাণু জ্বালানিভিত্তিক বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরের সময় ২০১৪ সালে বাংলাদেশের নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার কোম্পানি ও চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশনের (সিএমসি) মধ্যে চুক্তি হয়। পরে গঠিত হয় বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড।
যৌথ উদ্যোগের ওই কোম্পানির ব্যবস্থাপনায় পায়রার এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ পায় চীনের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এনইপিসি ও সিইসিসি কনসোর্টিয়াম।

কেন্দ্রটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় আড়াইশো কোটি মার্কিন ডলার। নির্মাণ ব্যয়ের সিংহভাগ অর্থায়ন করেছে চীনের এক্সিম ব্যাংক।

পদ্মা সেতুর মাধ্যমে ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি এবং দক্ষিণাঞ্চলের শিল্পোন্নয়নে পায়রাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের হাব গড়ে তোলার ঘোষণা এর আগেই সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে।

পটুয়াখালীর কলাপাড়ার ধানখালীতে প্রায় এক হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করে উন্নয়ন করা হয়েছে, যেখানেই নির্মীত হয়েছে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র।

প্রথম কেন্দ্রের কাজ শেষে ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরেকটি কয়লাবিত্তিক আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কেন্দ্রের নির্মাণ চলছে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এএম খোরশেদুল আলম। ওই কেন্দ্র নির্মাণে ২০০ কোটি ডলারের বেশি ব্যয় ধরা হয়েছে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, “পায়রাতে আমরা বিভিন্ন ধরনের জ্বালানির ১২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করব। এছাড়া আমরা গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণ করতে যাচ্ছি। এখানে একটা ভাসমান টার্মিানলও নির্মাণ করা হবে।”

বিদ্যুতের দাম ও বিপুল ক্যাপাসিটি চার্জ

নির্মাণ শুরুর সময় বলা হয়েছিল, পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম পড়বে ৬ টাকা ৬৫ পয়সা। কিন্তু বর্তমানে এর চেয়ে অনেক বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।

ইন্সটিটিউট অব এনার্জি ইকোনমিক্স অ্যান্ড ফ্যাইন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিসের (আইইএফএ) সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পায়রা কেন্দ্র থেকে সরকার প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ কিনছে ৮ টাকা ৬০ পয়সা দরে।

আইইএফএ-র প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছর (২০২০-২০২১) বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়ার হার বেড়ে ১৫০ কোটি মার্কিন ডলার হয়েছে। আর পিডিবির লোকসান হয়েছে ১৪০ কোটি মার্কিন ডলার।
বিদ্যুৎকেন্দ্রের উদ্যোক্তাদের যাতে লোকসান না হয়, সে জন্য অন্যান্য ব্যয়ের সঙ্গে বিনিয়োগ করা অর্থ হিসাব করে একটি নির্দিষ্ট হারে ক্যাপাসিটি চার্জ নির্ধারণ করা হয়। বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ থাকলেও উদ্যোক্তারা এ অর্থ পান। রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল কেন্দ্রের মেয়াদ কম থাকে বলে ক্যাপাসিটি চার্জও হয় বেশি।

ইনডিপেনডেন্ট বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ কেনার হার বেড়ে যাওয়ায় লোকসান যেমন বাড়ছে, তেমনি বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানোর ফলে ক্যাপাসিটি চার্জও বেড়ে যাচ্ছে বলে আইইএফএ এর প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে।

ক্যাপাসিটি চার্জ বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে প্রতিমন্ত্রীকে বলেন, “ক্যাপাসিটি চার্জ হচ্ছে বিনিয়োগের অংশ। আমরা যদি এটিই সরিয়ে দিই, তাহলে কেউ তো আর বিনিয়োগ করতে আসবে না। পিডিবিকেও কিন্তু দিতে হচ্ছে (ক্যাপাসিটি চার্জ)। তার থেকে যদি বিদ্যুৎ নাও নিই, তাও দিতে হচ্ছে।”

পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এএম খোরশেদুল আলম বলেন, কয়লার দামের ওঠানামার ওপরেও তার কেন্দ্রের বিদ্যুতের দাম নির্ভর করবে।

বাংলাদেশে সোলার ও ক্যাপটিভ মিলিয়ে বিদ্যুতের উৎপাদনক্ষমতা প্রায় ২৫ হাজার মেগাওয়াট। সরকারের মহাপরিকল্পনায় এই উৎপাদন ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াটে নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে।

নসরুল হামিদ বলেন, “ক্যাপাসিটি রেখেই আমাকে কাজ করতে হবে। কোনো কারণে কোনো প্ল্যান্ট বন্ধ হয়ে গেলে তখন কী করব? সবসময় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বেশি ক্যাপাসিটি রাখতে হয়। জাপানে ১০০ শতাংশ। ক্যাপাসিটি রাখলেইতো নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ।”

প্রতিমন্ত্রী বলেন, “ক্যাপটিভ বাদ দিলে আমাদের এখানে অতিরিক্ত ক্যাপাসিটি ৩০ শতাংশও নেই। কাজেই যারা বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে ক্যাপাসিটি চার্জের কথা বলেন, আমাদের ওইদিকে না গিয়ে বলতে হবে বিনিয়োগের পার্ট।”
সরকার এখানে বিনিয়োগ না করলে, ভর্তুকি না দিলে শতভাগ বিদ্যুতায়ন হত না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

পায়রায় পূর্ণ সক্ষমতায় উৎপাদন কবে?

পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের স্থাপিত উৎপাদনক্ষমতা ১৩৪৪ মেগাওয়াট হলেও উৎপাদন হচ্ছে এর এক তৃতীয়াংশ। পিডিবির তথ্য অনুযায়ী, সোমবার পিক আওয়ারে পায়রায় ৫৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হতে পারে।

মূলত সঞ্চালন লাইন সম্পূর্ণ না হওয়ায় কেন্দ্রটি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো যাচ্ছে না বলে জানান এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক খোরশেদুল আলম।

তিনি বলেন, কেন্দ্র নির্মাণ হলেও পদ্মা সেতুর কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত ঢাকার সঙ্গে সঞ্চালন লাইন সংযুক্ত করা যাচ্ছে না। এজন্য পূর্ণ উৎপাদন ক্ষমতাও কাজে লাগানো যাচ্ছে না।

বর্তমানে পায়রায় যে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে, তা দিয়ে আশপাশের জেলার চাহিদা মেটানো হচ্ছে এবং এপ্রিলে এই কেন্দ্রের বিদ্যুৎ খুলনা ও যশোরেও পৌঁছানো যাবে। তখন কেন্দ্রের ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ বিদ্যুৎ ব্যবহার করা যাবে।

সঞ্চালন লাইন নির্মাণে সমস্যার কথা তুলে ধরে নসরুল হামিদ বলেন, “সঞ্চালন একটা দুরূহ ব্যাপার হয়ে গেছে। জায়গার অভাব। নদী, নালা। কারো জায়গার ওপর দিয়ে গেলে মামলা মোকদ্দমায় পড়তে হয়। তারপরও কোভিডের মধ্যে আমাদের কাজ কিন্তু বন্ধ থাকেনি।

এ বছর ডিসেম্বরেই পায়রায় পূর্ণ ক্ষমতায় বিদ্যুৎ উপাদন করা যাবে বলেন জানান তিনি।

কয়লা আসছে কীভাবে

১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুতকেন্দ্র চালানোর জন্য প্রতিদিন প্রায় ১২ হাজার মেট্রিক টন কয়লার প্রয়োজন। ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে ১০ বছরের চুক্তি অনুযায়ী সেখান থেকেই কয়লা কেনা হচ্ছে।

বিদ্যুতকেন্দ্রের কয়লা ওঠানামা করার জন্য কেন্দ্রের সঙ্গেই জেটি করা হয়েছে। সেই জেটি থেকে কনভেয়ার বেল্টে করে স্টোরেজে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কয়লা।

বিদ্যুতকেন্দ্রের জন্য জাহাজ থেকে কয়লা খালাস করতে পায়রা বন্দর ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই বলে জানান খোরশেদুল আলম।