অর্থনীতি

দেশে গ্রিন রেল পরিবহন ব্যবস্থা পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণের লক্ষ্যে সরকার ৯৩ কোটি ৫১ লাখ টাকার প্রকল্প বাস্তবায়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ রেলওয়ে এই ‘গ্রিন রেলওয়ে পরিবহন প্রস্তুতিমূলক কারিগরি সহায়তা’ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এই প্রকল্পে ব্যয় হবে আনুমানিক ব্যয় ৯৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা। ২০২৭ সালের মার্চ মাসের মধ্যে এই শেষ হবে।

মোট প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে ২৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা যোগান দেবে বাংলাদেশ সরকার এবং বাকি ৬৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা বিশ্বব্যাংকের আইডিএ থেকে প্রকল্প ঋণ হিসেবে নেওয়া হবে।

প্রকল্পটি সম্প্রতি একনেক সভায় অনুমোদন করা হয়েছে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম করিডরের অধীনে কমলাপুরের ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন এবং ঢাকা বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন, ফৌজদারহাট থেকে চট্টগ্রাম গুডস পোর্ট ইয়ার্ড (সিজিপিওয়াই) এবং তারপর সিজিপিওয়াই থেকে চট্টগ্রামের পতেঙ্গার বে টার্মিনাল এবং চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলা পর্যন্ত প্রকল্পটির অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

বিশ্বব্যাংক থেকে পাওয়া অর্থ বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে স্টেশন ভবন এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা সম্প্রসারণ ও পুনর্নির্মাণের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা, বিদ্যমান কার্যকরী ও রক্ষণাবেক্ষণ সুবিধা স্থানান্তরের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা, কমলাপুর স্টেশনে মাল্টিমডাল পরিবহন হাব তৈরির জন্য স্টেশন বিল্ডিং ইয়ার্ড পুর্ননির্মাণসহ প্রকল্পের জন্য ব্যয় করা হবে।

এছাড়াও, প্রকল্পের উদ্দেশ্য হচ্ছে, ফৌজদারহাট থেকে চট্টগ্রামের গুডস পোর্ট ইয়ার্ড এবং বে টার্মিনাল পর্যন্ত রেল সংযোগ স্থাপন এবং মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে উন্নত রেল সংযোগ স্থাপন।

বাসস’র সাথে আলাপকালে, পরিকল্পনা কমিশনের এক কর্মকর্তা বলেন, পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগ ২০২৫ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি বিশেষ প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির একটি সভা করে যেখানে পরিকল্পনা কমিশন কিছু শর্ত পূরণ সাপেক্ষে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য সুপারিশ করে।

ওই কর্মকর্তা বলেন, বিশ্বব্যাংক প্রাথমিকভাবে প্রকল্পের মূল ঋণ থেকে প্রকল্প প্রস্তুতিমূলক অগ্রিম (পিপিএ) হিসাবে ৬০ লক্ষ ডলার প্রদানে রাজি হয়েছে।

প্রকল্পের অংশ হিসেবে, কমলাপুর এবং ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশনে ‘মাল্টিমডাল ট্রান্সপোর্ট হাব’ নির্মাণের সুবিধার্থে বিদ্যমান পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ সুবিধাগুলো স্থানান্তরসহ স্টেশন বিল্ডিং ইয়ার্ডগুলো পুনর্নির্মাণের জন্য একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা হবে।

ফৌজদারহাট থেকে চট্টগ্রামের গুডস পোর্ট ইয়ার্ড এবং বে টার্মিনাল পর্যন্ত রেল সংযোগ উন্নয়নের জন্য একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা হবে।

মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে মালবাহী লোকোমোটিভ, ত্রাণ ট্রেন এবং পরিবহনের ক্রয় এবং রেল সংযোগ অবকাঠামোর উন্নয়ন মূল প্রকল্পের মাধ্যমে অর্থায়ন করা হবে। গ্রিন রেল পরিবহণ ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে চালু হলে, কার্বন নির্গমন কম হবে যা পরিবেশ দূষণ কমাতেও সাহায্য করবে।

পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তা বলেন, গ্রিন রেল পরিবহনের উদ্দেশ্য হচ্ছে, রেলওয়ে অবকাঠামোর যথাযথ উন্নয়ন ও আধুনিকীকরণের পাশাপাশি টেকসই ও পরিবেশবান্ধব পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে রেল ব্যবস্থাপনার সামগ্রিক সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং পরিষেবার মান উন্নত করা।

উন্নত রেল পরিবহন ব্যবস্থা সহজ যোগাযোগ নিশ্চিত করবে, পরিবহন খরচ বহুগুণ কমাবে, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারে সহায়তা করবে এবং এর ফলে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।

এর আগে, বিশ্বব্যাংক ইস্যুকৃত এক পত্রে বলা হয়েছে, তারা মূল বিনিয়োগ প্রকল্পের পাশাপাশি প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রকল্পের অর্থায়নের পরিকল্পনা করছে।

চলতি অর্থবছরের (২৫ অর্থবছর) জন্য সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির অধীনে বিদেশি অর্থায়নে অপ্রকাশিত প্রকল্পগুলোর নতুন তালিকায় প্রকল্পটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই প্রকল্পের অধীনে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা হবে।

অর্থনীতি

বাংলাদেশ সরকার এবং বিশ্বব্যাংক গ্রুপের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (আইডিএ) মধ্যে দুটি অর্থায়ন চুক্তি সই হয়েছে।

বুধবার ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশের পক্ষে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী এবং বিশ্বব্যাংকের পক্ষে ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর গেইল এইচ. মার্টিন চুক্তিপত্রে সই করেন।

এদিন বে টার্মিনাল মেরিন ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (বিটিএমআইডিপি) বাস্তবায়নে ৬৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং সামাজিক সুরক্ষা জোরদার প্রকল্প (এসএসপিআইআরআইটি) বাস্তবায়নে ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের চুক্তি হয়।

প্রকল্প দুটি যথাক্রমে নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে সমাজসেবা অধিদপ্তর ও অর্থ বিভাগ বাস্তবায়ন করবে।

বে টার্মিনাল মেরিন ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে চলতি মাস থেকে ২০৩১ সালের জুন পর্যন্ত এবং এসএসপিআইআরআইটি প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল এ বছরের জুলাই থেকে ২০৩০ সালের জুন পর্যন্ত।

ঋণ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের (এসএআর) ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রেইজারসহ বিশ্বব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

চট্টগ্রামে বে টার্মিনাল নির্মাণে গত ২০ এপ্রিল একনেক সভায় ১৩ হাজার ৫২৫ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ব্যয়ে বে টার্মিনাল মেরিন ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (বিটিএমআইডিপি) অনুমোদন হয়।

ওই দিন সভায় সুরক্ষা জোরদার প্রকল্পও (এসএসপিআইআরআইটি) অনুমোদন পায়। মোট অনুমোদন দেওয়া হয় ১৬টি প্রকল্প। যার মোট ব্যয় ধরা হয় ২৪ হাজার ২৪৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা।

এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন তিন হাজার এক কোটি ৩৪ লাখ টাকা, প্রকল্প ঋণ ১৬ হাজার ৭১৯ কোটি ৭৩ লাখ টাকা এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন চার হাজার ৪২৬ কোটি ১৭ লাখ টাকা ব্যয় হবে।

অনুমোদিত ১৬টি প্রকল্পের মধ্যে ১৩টি নতুন এবং তিনটি সংশোধিত প্রকল্প রয়েছে।

অর্থনীতি

রিজার্ভ চুরির ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের যে সকল কর্মকর্তা জড়িত ছিলেন তাদের শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান উপদেষ্টা।

উপদেষ্টা বলেন, ‘সিআইডির তদন্ত যখন ম্যাচিউর পর্যায়ে চলে গিয়েছিল (আওয়ামী লীগ আমলে) তখন আগেই সিআইডিকে সুনির্দিষ্টভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, (রিজার্ভ চুরিতে) বাংলাদেশ ব্যাংকের যারা ইনভলভ আছে, তাদের নাম যেন অভিযোগপত্রে না দেওয়া হয়।’

‘এভাবে ইনস্ট্রাকশন দেওয়া হয়েছিল বলে আজকে সিআইডি থেকে আমরা জেনেছি। বাংলাদেশের যারা অপরাধের জন্য দায়ী ছিল তাদের বিচারের সম্মুখীন করার জন্য করণীয় ঠিক করা হচ্ছে,’ বলেন তিনি।

এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফরাসউদ্দিনের রিপোর্টে যাদের নাম এসেছে তাদের ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক কী ব্যবস্থা নিয়েছে, এটা আমরা জানতে চেয়েছি। কী ব্যবস্থা নিতে হবে সেটাও বলেছি।’

এ বিষয়ে পরবর্তী কার্যক্রমের বিষয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘রিজার্ভ চুরির বিষয়ে নিউইয়র্কে বিচার চলমান। বাংলাদেশে তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে কোনো ব্যবস্থা নিলে নিউইয়র্কের বিচারের কোনো সমস্যা হবে কিনা, এই বিষয়টা আমরা নিশ্চিত হতে চাচ্ছি।’

এ বিষয়ে ড. কামাল হোসেনের ল’ ফার্মের মতামত নেওয়া হবে এবং তাদের পরামর্শের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

কাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে, এমন প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনারা

ফরাসউদ্দিনের রিপোর্টে অনেকের নাম পাবেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর আতিউর রহমান সঠিক সময়ে সঠিক তথ্য না দিয়ে দু-চার সপ্তাহ দেরি করেছিলেন। এগুলো তখন পত্রিকার রিপোর্টে এসেছে। আরও বেশ কয়েকজনের নাম বিভিন্ন রিপোর্টে এসেছে।’

‘এটা তদন্ত করতে গিয়ে তৎকালীন সরকারের আমলে সীমাহীন রাজনীতি করা হয়েছে,’ বলেন তিনি। দুই সপ্তাহ পর এ সংক্রান্ত দ্বিতীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে পারে।

অর্থনীতি

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, নির্ধারিত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা সময়সাপেক্ষ। এ জন্য প্রয়োজনে পাচারকারীদের সঙ্গে আপসের মাধ্যমে এই অর্থ ফেরত আনার চেষ্টা করা হবে।

এস আলম ও বেক্সিমকোসহ বেশ কয়েকটি গ্রুপ দেশ থেকে আড়াই থেকে তিন লাখ কোটি টাকা পাচার করেছে বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর।

শুক্রবার বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম কার্যালয়ে ‘অর্থ পাচার প্রতিরোধ ও সমসাময়িক ব্যাংকিং’ বিষয়ে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

গভর্নর বলেন, পৃথিবীর সব দেশেই ‘আউট অব কোর্ট সেটেলমেন্ট’ বলে একটা কথা আছে। সব জিনিসে সবসময় মামলায় দীর্ঘসূত্রিতায় যাওয়ার মানে হয় না। বিশ্বের অন্য দেশও আইনি প্রক্রিয়ার বাইরে গিয়ে কিছু উদ্যোগ নিয়ে থাকে। আপসের মাধ্যমে হলে অনেক সময় পাচার হওয়া অর্থ দ্রুত ফেরত আনা যায়। তবে সবার আগে আমাদের দেশ থেকে কোন দেশে কী পরিমাণ অর্থ-সম্পদ পাচার হয়েছে তার বিস্তারিত তথ্য আগে সংগ্রহ করতে হবে। যত বেশি সুনির্দিষ্ট তথ্য থাকবে ততবেশি দর কাষাকষি করার সুযোগ থাকবে।

বড় অর্থপাচারকারীদের বিষয়ে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

গভর্নর বলেন, অর্থপাচারকারীদের খোঁজ নিতে কিছু বেসরকারি ফার্মের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। তারা সেই সম্পদ খুঁজে পেতে সহায়তা করবে। তারপর তথ্য নিয়ে সে দেশের সরকারি সংস্থার সঙ্গে আলোচনায় বসব। অর্থ ফেরত আনতে হলে সে দেশের আইনি বিষয়টিও আমাদের মেনে চলতে হবে। তবে ইতোমধ্যে তাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হয়েছে এবং ভালোভাবে সহযোগীতাও করছে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ড. আহসান বলেন, চট্টগ্রামের একটি বড় গ্রুপ (এস আলম) দেশে থেকে প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি থেকে দেড় লাখ কোটি টাকার মতো পাচার করেছে। বেক্সিমকো গ্রুপসহ আরও কয়েকটি বড় গ্রুপের হিসাব করলে তার পরিমাণ প্রায় আড়াই থেকে তিন লাখ কোটি টাকা হবে। তাছাড়া দেশের নন পারফর্মিং প্রায় ৫ লাখ কোটি টাকার বড় অংশই পাচার হয়েছে বলে বাকি টাকা পাচার না হলেও আদায় করা সম্ভব হয়নি।

পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার পাশাপাশি আদায় না হওয়া এসব ঋণ অর্থঋণ আদালতের মাধ্যমে আদায় করা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজশ ছাড়া এভাবে বিপুল অর্থ পাচার হওয়ার সুযোগ ছিল না। এর সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে গভর্নর বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ধারণা থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। যদি দুদক বা রাষ্ট্রের কোনো সংস্থা প্রমাণসহ আমাদের কাছে কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ দেয় তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হয়।

তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতির অবস্থা এখন ভালো। আমাদের রিজার্ভ, মুদ্রাস্ফীতি, রপ্তানি আয় সব কিছুই ইতিবাচক অবস্থানে রয়েছে। রিজার্ভ স্থিতিশীল রয়েছে। ইসলামী ব্যাংকসহ যেসব বেসরকারি ব্যাংক অনিয়ম ও লুটপাটের কারণে দুর্বল হয়ে পড়েছিল সেসব ব্যাংকও ঘুরে দাঁড়িয়েছে।

বলা যায়, ব্যাংকগুলো সংকট কাটিয়ে গ্রাহকদের আস্থার জায়গায় ফিরতে পেরেছে।

ড. আহসান এই মনসুর বলেন, মানি লন্ডারিংয়ে বাংলাদেশ একটা বড় ভিকটিম। এই দেশের ব্যাংকিং খাতে কতিপয় পরিবার বা গোষ্ঠী মানি লন্ডারিং করে সম্পদ চুরি করে বাইরে নিয়ে গেছে। আমরা সেই সম্পদ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি। ‘প্রিভেনশন ইজ বেটার দ্যান কিউর’ রোগের উৎপত্তি রোধ করা প্রধান দায়িত্ব। রোগ সারানোর দায়িত্ব হচ্ছে পরে। চুরি হওয়ার পরে বুদ্ধি বাড়িয়ে লাভ নেই। চুরি হওয়ার আগেই ঠেকানোর ব্যবস্থা করতে হবে। ভবিষ্যতে যেন আর কোনোভাবে অর্থ পাচার না হয় সেই ব্যবস্থা করতে হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার যে উদ্যোগ বাংলাদেশের জন্য তা একেবারেই নতুন। পদ্ধতিগতভাবে এ ধরনের সমস্যা আগে মোকাবেলা করিনি। সেজন্য আমাদের অনেক শিখতে হচ্ছে। এটা তো দেশের আইনে হবে না। বিদেশিদের সঙ্গে আমাদের সংযোগ স্থাপন করতে হবে। তাদের আইনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে কাজ করতে হবে।

গভর্নর বলেন, আমাদের রিজার্ভ স্থিতিশীল আছে। রপ্তানি বাড়ছে। বিভিন্ন রকমের গোলযোগ আন্দোলন সত্ত্বেও রপ্তানি মুখ থুবড়ে পড়েনি, বাড়ছে। ডাবল ডিজিট গ্রোথ দেখতে পাচ্ছি। রেমিট্যান্সের প্রবাহ উৎসাহব্যঞ্জক। এর ধারাবাহিকতা থাকবে বলে আশা করছি। সব মিলিয়ে ম্যাক্রো ইকোনমিক এক্সটারনাল সেক্টরে একটা স্বস্তির জায়গায় আমরা চলে এসেছি।

অর্থনীতি

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ ব্যাংককে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী হরিণী আমারাসুরিয়ার সাথে বৈঠক করেছেন।

এসময় দুই নেতা পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার বন্ধু প্রতিম দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও সহযোগিতা সম্প্রসারণের অঙ্গীকার করেছেন।

শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী চুরি হওয়া অর্থ উদ্ধারে তার দেশের প্রচেষ্টার কথা বর্ণনা করেন।

তিনি বলেন, শ্রীলঙ্কার সংসদ পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার জন্য একটি নতুন আইন অনুমোদন করেছে।

প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া কোটি কোটি ডলার ফিরিয়ে আনার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রচেষ্টায় শ্রীলঙ্কার সমর্থন চেয়েছেন।

দুই নেতা জুলাইয়ের বিদ্রোহের বিভিন্ন দিক নিয়েও আলোচনা করেন এবং দুই দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগের গুরুত্বের উপর জোর দেন।

অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার এজেন্ডা এবং আগামী ডিসেম্বর থেকে আগামী বছর জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানে তার প্রশাসনের পরিকল্পনা বর্ণনা করেন।

বৈঠকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, এসডিজি সমন্বয়কারী লামিয়া মোরশেদ এবং পররাষ্ট্র সচিব জসিম উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।

অর্থনীতি

সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারগুলোতে শাক, সবজি ও মুরগির দাম কমেছে। একই সঙ্গে আলু আগের দামে বিক্রি হলেও পেঁয়াজের দাম কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়েছে।

তবে সপ্তাহ ব্যবধানে মাছের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে।

শুক্রবার (০৪ এপ্রিল) রাজধানীর তালতলা ও শেওড়াপাড়া বাজার ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।

সবজি-মুরগির দাম কমার কারণ হিসেবে ক্রেতা-বিক্রেতারা বলছেন, প্রথমতো, এবার রমজানে ও ঈদে বাজার ছিল বেশ স্থিতিশীল। তার ওপর গত সোমবার (৩১ মার্চ) ছিল ঈদুল ফিতর। ঢাকা থেকে লাখ লাখ মানুষ দেশের বিভিন্ন জেলায় ঈদ উদযাপন করতে গেছেন। তাদের অনেকেই এখনো ফেরেননি। এ কারণে এখন ঢাকার বাজারগুলোতে নিত্যপণ্যের চাহিদা কিছুটা কম।

রাজধানীর বাজারগুলোতে গিয়ে দেখা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে গ্রীষ্মকালীন সব ধরনের সবজি কেজিতে ২০ থেকে ৪০ টাকা কমেছে।

এসব বাজারে গ্রীষ্মকালীন সবজি কেজি প্রতি বেগুন প্রকারভেদে ৬০ থেকে ৮০ টাকা, করলা ৭০ থেকে ৮০ টাকা, বরবটি ৯০ টাকা, পটল কেজিতে ৪০ টাকা কমে ৬০ টাকা, ধুন্দল ৭০ টাকা, চিচিঙ্গা কেজিতে ২০ টাকা কমে ৬০ টাকা, কচুর লতি কেজিতে ৪০ টাকা কমে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এসব বাজারে সজনে কেজিতে ২০ টাকা কমে ১৪০ টাকা ঝিঙ্গা ৭০ টাকা, কাঁচা আম ১৪০ টাকা এবং কাঁচা মরিচ ৬০ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে পেঁপের দাম কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি ৭০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।

এসব বাজারে শিম ৬০ টাকা কেজি, ফুলকপি ৬০ টাকা পিস, বাঁধা কপি ৫০ টাকা পিস, প্রতিটি লাউ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে। তবে পাকা টমেটো কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, গাজর ৫০ টাকা, মুলা ৬০ টাকা, শসা কেজিতে ৪০ টাকা কমে ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।

এসব বাজারে লেবুর হালি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, ধনে পাতা ১৪০ টাকা কেজি, কাঁচা কলা হালি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়, চাল কুমড়া ৬০ টাকা পিস, ক্যাপসিকাম ১২০ টাকা এবং মিষ্টি কুমড়া ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এসব বাজারে সব ধরনের শাকের দাম কমেছে। বাজারগুলোতে লাল শাক ১০ টাকা আঁটি, লাউ শাক ৩০ থেকে ৪০ টাকা, পালং শাক ১০ টাকা, কলমি শাক ৩ আঁটি ২০ টাকা, পুঁই শাক ৩০ টাকা এবং ডাটা শাক দুই আঁটি ৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে সপ্তাহ ব্যবধানে বাজারগুলোতে মুরগির দাম কেজিতে ১০ টাকা কমেছে। এসব বাজারে সোনালি কক মুরগি কেজিতে ১০ টাকা কমে ৩২০ এবং সোনালি হাইব্রিড ২৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লাল লেয়ার মুরগি ৩০০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৯০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি ২১০ টাকা এবং দেশি মুরগি ৬৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এসব বাজারে আলুর দাম স্থিতিশীল রয়েছে। আলু ২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারগুলোতে দেশি পেঁয়াজ কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়ে ৪৫ টাকা এবং ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ ৩৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

বাজারগুলোতে আদা ১২০ থেকে ২৮০ টাকা, রসুন দেশি ১০০ টাকা এবং ইন্ডিয়ান ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা, দেশি মসুর ডাল ১৪০ টাকা, মুগ ডাল ১৮০ টাকা, ছোলা ১১০ টাকা, খেসারির ডাল ১৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এসব বাজারে মিনিকেট চাল প্রকারভেদে ৮২ থেকে ৯২ টাকা এবং নাজিরশাইল ৮৪ থেকে ৯০ টাকা, স্বর্ণা ৫৫ টাকা এবং ২৮ বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা দরে।

অন্যদিকে সপ্তাহ ব্যবধানে মাছের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। এসব বাজারে এক কেজি শিং মাছ চাষের (আকারভেদে) বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকায়, প্রতি কেজি রুই মাছের দাম বেড়ে (আকারভেদে) ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকায়, দেশি মাগুর মাছ ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা, মৃগেল ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়, চাষের পাঙ্গাস ২০০ থেকে ২৩০ টাকায়, চিংড়ি প্রতি কেজি ৭৫০ থেকে ১২০০ টাকায়, বোয়াল মাছ প্রতি কেজি ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায়, বড় কাতল ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকায়, পোয়া মাছ ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়, পাবদা মাছ ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায়, তেলাপিয়া ২২০ টাকায়, কৈ মাছ ২২০ থেকে ২৩০ টাকায়, মলা ৫০০ টাকা, বাতাসি টেংরা ১৩০০ টাকায়, টেংরা মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাচকি মাছ ৫০০ টাকায়, পাঁচমিশালি মাছ ২২০ টাকায়, রূপচাঁদা ১২০০ টাকা, বড় বাইন মাছ ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা, দেশি কৈ ১২০০ টাকা, শোল মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, আইড় মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, বেলে মাছ ৮০০ টাকা, কুড়াল মাছ ৭০০ টাকা, কাজলি মাছ ৮০০ টাকা এবং কাইক্ক্যা মাছ ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এসব বাজারে গরুর মাংস কেজি প্রতি ৭৮০ টাকা, গরুর কলিজা ৮০০ টাকা, গরুর মাথার মাংস ৪৫০ টাকা, গরুর বট ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা এবং খাসির মাংস কেজি প্রতি ১১৫০-১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজারগুলোতে এক ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়, হাঁসের ডিম ২২০ টাকায়, দেশি মুরগির ডিমের হালি ৯০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।

অর্থনীতি

সরকার যেসব সংস্কার কমিশন করেছে, সেখানে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর সঠিক প্রতিনিধিত্ব নেই বলে মন্তব্য করেছেন ‘এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের’ আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

তিনি বলেছেন, আগামী নির্বাচনের আগে পিছিয়ে পড়া মানুষের ভোটার লিস্টে অন্তর্ভুক্ত হওয়া এবং তাদের ভোটের নিশ্চয়তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে না।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে এক সংলাপে তিনি এসব কথা বলেন। নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়কের দপ্তর এবং জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) বাংলাদেশ যৌ0থভাবে ‘জাতীয় এসডিজি রিপোর্ট (ভিএনআর) ২০২৫: পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রত্যাশার অন্তর্ভুক্তি’ শীর্ষক এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ।

এছাড়াও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত রেতো রেংগলি, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার, জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর কার্যালয় ঢাকার জ্যেষ্ঠ মানবাধিকার বিষয়ক উপদেষ্টা হুমা খান প্রমুখ।

ড. দেবপ্রিয় বলেন, স্বৈরাচার ও একনায়কতন্ত্রের কারণে আমাদের কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হয়েছে। আমাদের টুটি চেপে ধরা হয়েছিল। উন্নয়নের বয়ানের বিপক্ষে আমরা সঠিক তথ্য তুলে ধরার জন্য কাজ করছি। মোকাবেলা করেছি নানা রকম প্রতিবন্ধকতা। সে সময় আমরা সম্মিলিত সমস্যার মোকাবেলা করেছি। জাতিসংঘ আমাদের সঙ্গে ছিল।

ড. দেবপ্রিয় বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে কিছু লোক নৈতিক খবরদারি করার দায়িত্ব নিয়েছে। তাদের সংখ্যা বড় না। কিন্তু তারা কাজটা করছে বড়ভাবে।’

তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনি ইশতেহার তৈরি শুরু হয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতিসহ সব ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য প্রতিশ্রুতি আলাদা ভাবে না থাকলে তারা ইশতেহার গ্রহণ করবেন না।’

তিনি আরও বলেন, আমরা সবাই বললাম এই পরিবর্তন বৈষম্যবিরোধী। কিন্তু সব বৈষম্য নিয়ে কি কথা হয়? লিঙ্গ বৈষম্য, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বৈষম্য ও সুরক্ষা, নারীর বৈষম্য নিয়ে কি কথা হচ্ছে? হচ্ছে না।’

জনগণ এতদিন বিভ্রান্তিকর উন্নয়নের বয়ানে ছিল উল্লেখ করে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘এখন প্রকৃত তথ্য তুলে ধরার সময় এসেছে। বাংলাদেশের গড়ে উন্নতি হলেও পার্থক্য রয়ে গেছে। উন্নয়নের মধ্যে সবাই সমানভাবে অংশগ্রহণ করতে পারেনি। সমাজের কোন অবস্থান থেকে, কোন গোত্র থেকে এসেছে তার ওপর নির্ভর করেছে কে উন্নয়নের সুবিধা পাবে, আর কে পাবে না।’

তিনি বলেন, গড় আয়ু বেড়েছে কিন্তু গরিবদের গড় আয়ু বাড়ে নাই। স্কুলের অন্তর্ভুক্তি শতভাগ হয়েছে কিন্তু গরিবদের সবাই স্কুলে যায় না। এজন্য সঠিক পরিসংখ্যান দরকার সঠিক পরিসংখ্যান না হলে সবাইকে নীতির মধ্যে আনা যাবে না।

দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা নাগরিক প্ল্যাটফর্মের সহযোগী সংগঠনের প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।

অর্থনীতি

পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা সম্ভব। এই অর্থ ফিরিয়ে আনতে অনেকেই প্রস্তাব দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী।

মঙ্গলবার (১১ মার্চ) দুপুরে সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে তিনি এসব কথা জানান। নিজের প্রথম কর্মদিবসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।

পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা সম্ভব কি না, সাংবাদিকরা এমনটি জানতে চান। জবাবে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী বলেন, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা সম্ভব। আমাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ হলেন প্রধান উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, যেসব দেশে টাকা গিয়েছে, সেসব দেশ উপকারভোগী। যেহেতু উপকারভোগী, সেহেতু সহজে তারা ছাড়বে না। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টাকে তারাই অফার করছে এ বিষয়ে সহযোগিতা করার জন্য। আমরা অতি দ্রুত কাজ করছি। আশা করছি আমরা সফল হব।

কারা অফার করেছে, জানতে চাইলে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী বলেন, বলা সম্ভব নয়। বললে কাজে সমস্যা হবে। কিছু তো গোপনীয়তা মানতে হবে। যারা টাকা নিয়ে গেছে তারা তো বসে নেই। এজন্যই একটা গোপনীয়তা রক্ষা করতে হবে। যতটা বলা সম্ভব, ততটাই বলছি। এর বেশি বললে আমাদের কাজটা বন্ধ হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, এখানে আইনের ইস্যু আছে, প্রপার আইন করতে হবে সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে মিল রেখে। আপনি ধরলেই তো টাকা ফেরত আনতে পারবেন না। এখানে কতগুলো মাধ্যম আছে। এসব বিষয়ে আমরা আন্তর্জাতিক সহযোগিতা পাচ্ছি। বিশ্বব্যাংকসহ অনেকেই কাজ করছে।

অর্থনীতি

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২১ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার বাড়ার পর এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) বিল পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আকুর জানুয়া‌রি-ফেব্রুয়ারি মাসের আমদানি বিল বাবদ ১৭৫ কোটি ডলার পরিশোধ করার পর ফের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যায়।

এখন রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৯৬৪ কোটি বা ১৯ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলারে।

রোববার (৯ মার্চ) সন্ধ্যায় বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি জানান, গত বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) আকুর জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসের বিল বাবদ ১৭৫ কোটি ডলার পরিশোধ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ ছিল দুই হাজার ১৩৯ কোটি ৯৭ লাখ ৩০ হাজার ডলার। একই সময়ে বৈদেশিক মুদ্রায় গঠিত বিভিন্ন তহবিলসহ মোট রিজার্ভের পরিমাণ ছিল দুই হাজার ৬৬০ কোটি ১ লাখ ৪০ হাজার ডলার।

বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) আকুর বিল পরিশোধের পর নিট রিজার্ভের পাশাপাশি মোট রিজার্ভও দুই হাজার ৪৮৫ কোটি এক লাখ ৪০ হাজার ডলারে নামে।

চলতি বছরের দুই দফায় আকুর বিল পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ। এর আগে গত ৯ জানুয়ারি আকুর নভেম্বর ও ডিসেম্বর দুই মাসের আমদানি বিল বাবদ ১৬৭ কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়। তখনো ২১ বিলিয়ন ডলার থেকে রিজার্ভ কমে। এরপর যথারীতি ‍বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সংগ্রহ করা রেমিট্যান্সের নির্দিষ্ট অংশ বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বিক্রি, রপ্তানি আয় ও বৈদেশিক ঋণ রিজার্ভে যোগ হয়ে রিজার্ভ ২১ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে।

আকু হলো আন্তঃদেশীয় একটি লেনদেন নিষ্পত্তি ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল ও পাকিস্তান মধ্যকার লেনদেনের দায় পরিশোধ করা হয়। ইরানের রাজধানী তেহরানে আকুর সদর দপ্তর। এ ব্যবস্থায় সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতি দুই মাস অন্তর আমদানির অর্থ পরিশোধ করে।

অর্থনীতি

বিগত বছরের তুলনায় এবারের রমজানে মানুষ কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছে। এ বছর তারা বেশিরভাগ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, বিশেষ করে কাঁচাবাজার ও মুদিখানার জিনিসপত্র সুলভ ও সাশ্রয়ী মূল্যে পাচ্ছে।

আজ সকালে কারওয়ান বাজার, খিলগাঁও তালতলা বাজার, ফকিরাপুল বাজার, মতিঝিল এজিবি কলোনি কাঁচা বাজার ও শান্তিনগর বাজারসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কাঁচা বাজার পরিদর্শন করে বাসস প্রতিবেদক দেখতে পেয়েছে যে, ক্রেতারা সাধারণত তাদের ক্রয়ক্ষমতা অনুযায়ী তাদের যা প্রয়োজনীয়, সেসব দ্রব্য ও পণ্য পাচ্ছেন। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যেই রয়েছে।

সরকারের বিভিন্ন সংস্থার কঠোর বাজার তদারকি এবং বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে চিনি, ডাল, খেজুর, পেঁয়াজ, শসা, আলু, টমেটো, ডিম, রসুন, কাঁচা মরিচ, শুকনো মরিচ, আদা ও ইসবগুলসহ বেশিরভাগ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ২০২৪ সালের রমজানের তুলনায় অনেক সাশ্রয়ী মূল্যে পাওয়া যাচ্ছে।

পবিত্র রমজান মাসে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা নিশ্চিত করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বেশ কিছু নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ওপর থেকে ভ্যাট তুলে নিয়েছে।

তালিকাভুক্ত পণ্যের মধ্যে রয়েছে- সরিষার তেল, ময়দা, সুজি, মসুর ডাল, এলপিজি, বিস্কুট, লবণ ও গরম মশলা।

এই পণ্যগুলোর উৎপাদন পর্যায়ে এবং কিছু ক্ষেত্রে ব্যবসায়িক পর্যায়ে ভ্যাট রেয়াত দেওয়া হয়েছে।

রাজস্ব বোর্ড খেজুর, চাল, ডাল, চিনি ও তেলের মতো প্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি শুল্ক শূন্যে নামিয়ে এনেছে।

সরকারি পদক্ষেপের প্রশংসা করে খিলগাঁও এলাকার বাসিন্দা আবু সুফিয়ান বলেন, সরবরাহ প্রচুর থাকায় বেশিরভাগ মুদি পণ্যের দাম সন্তোষজনক।

তিনি বলেন, ‘আমি সব সময় আমার বাড়ির কাছে তালতলা বাজার থেকে কেনাকাটা করি। গত কয়েক বছরের তুলনায় এই রমজানে সবজির দাম কম থাকায় সবাই স্বস্তি পেয়েছে।’

সুফিয়ান আরো বলেন, মাছ, মাংস ও মুরগির দাম স্থিতিশীল রয়েছে।

শহরের বিভিন্ন বাজার পরিদর্শনকালে দেখা গেছে, খামারের মুরগি প্রতি কেজি ১৮০-১৯০ টাকা, সোনালী ৩০০-৩১০ টাকা ও দেশি মুরগি ৫৫০-৫৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে- যা গত বছরের তুলনায় যথাক্রমে ১০-৩০ টাকা কম।

খাসি (মাংস) প্রতি কেজি প্রায় ১১০০ টাকা ও গরুর মাংস ৭৫০-৮৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে- যা আগের বছরের তুলনায় ৩০-৫০ টাকা কম।

অন্যদিকে, চিনি প্রতি কেজি ১২০-১২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে- যা গত বছর ছিল ১৪০-১৫০ টাকা।

সাধারণ খেজুরের দাম ২২০-২৫০ টাকা থেকে কমে ১৮০-২০০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে মাঝারি মানের ও প্রিমিয়াম মানের খেজুর যথাক্রমে ৪৫০-৮০০ টাকা ও ১,০০০-১,৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে- যা গত বছরের তুলনায় ৩০-২০০ টাকা কম।

স্থানীয় পেঁয়াজ এখন ৪০-৪৫ টাকায় প্রতি কেজি পাওয়া যাচ্ছে- যা গত বছরের ১০০-১২০ টাকার তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম।

আলু ২০-৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে- যা গত বছর ছিল ২৫-৩৫ টাকা ।

এছাড়াও, শীতকালীন সবজির দাম গত রমজানের তুলনায় ৫-২০ টাকা কেজি কমেছে।

মতিঝিল এজিবি কলোনির কাঁচা বাজারের মুরগি বিক্রেতা মহসিন বলেন, সরকারের যথাযথ ও সক্রিয় তদারকি কার্যক্রমের কারণে দাম আগের বছরের তুলনায় কম।

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এখানে ক্রয়-বিক্রয় করি। খুব বেশি লাভ করার সুযোগ নেই। কৃষকরাও মোটা অঙ্কের মুনাফা পাচ্ছে না। মূলত, বড় সিন্ডিকেট মুরগির ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে। যারা দিন বয়সী বাচ্চা উৎপাদন করে ও মুরগির খাবার দেয়, তারা বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। সরকার যদি সিন্ডিকেটগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে, তাহলে মুরগির দাম আরও কমার সুযোগ রয়েছে।’

স্থানীয় রুই (১.৫ থেকে ২ কেজি জীবিত) ৩০০-৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে আমদানি করা রুই (২ থেকে ৩ কেজি) ৩০০-৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ফকিরাপুল বাজারের মাছ ব্যবসায়ী রফিক মিয়া বলেন, বাজারে মাছের সরবরাহ স্বাভাবিক। তবে রমজান আসার সাথে সাথে মাছের চাহিদা বেড়েছে।

তালতলা বাজারে সেনবাগ স্টোরের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ তারেক বলেন, সরবরাহ প্রচুর হওয়ায় বেশিরভাগ মুদি পণ্যের দাম সন্তোষজনক।

মতিঝিল এলাকার ব্যবসায়ী মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, এ বছর পেঁয়াজ, আলু, টমেটো, কাঁচা মরিচ ও ডিমের দাম ন্যায্য ও যুক্তিসঙ্গত।

সরকারের কঠোর নজরদারি পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল করতে ভূমিকা রেখেছে বলে মত প্রকাশ করেন তিনি।

পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে সরকার নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার পর্যবেক্ষণ জোরদার করেছে। সরকারের তিনটি নিবেদিতপ্রাণ দল ঢাকা মহানগর জুড়ে সর্বক্ষণ বাজার পর্যবেক্ষণ করছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জেলা ও ঢাকা মহানগর প্রশাসনের মাধ্যমে নিয়মিতভাবে পণ্য বাজার পর্যবেক্ষণ করছে।

এছাড়াও, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর (ডিএনসিআরপি) বাজারের ওপর কড়া নজর রাখছে, যাতে করে অতিমুনাফার জন্য অসাধু ব্যবসায়ী ও মজুদদাররা নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারকে অস্থির ও অস্থিতিশীল করে তুলতে না পারে।