অর্থনীতি

মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের সমন্বয়, ব্যবস্থাপনা ও আইন-শৃঙ্খলা সম্পর্কিত জাতীয় কমিটি গঠন করেছে সরকার। বুধবার এ তথ্য জানা গেছে।

গত ১৪ ডিসেম্বর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কমিটি বিষয়ক অধিশাখা থেকে এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে জাতীয় কমিটির আহবায়ক করা হয়েছে। এছাড়াও আরো ১৬ জনকে কমিটির সদস্য করা হয়েছে। এতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীও রয়েছেন।

সদস্যদের মধ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সচিব ছাড়াও রয়েছেন- পুলিশের আইজি, এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক, সামরিক গোয়েন্দা মহাপরিদফতরের (ডিজিএফআই) মহাপরিচালক, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা অধিদফতরের (এনএসআই) মহাপরিচালক, চট্টগ্রাম বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার এবং শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার।

প্রজ্ঞাপনে কমিটির কাজের বিষয়ও উল্লেখ করা হয়েছে। কার্যপরিধিতে বলা হয়েছে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের (রোহিঙ্গা) ক্যাম্প এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, ব্যবস্থাপনা ও প্রত্যাবাসনসহ সব কার্যক্রমের সমন্বয় সাধন করা। প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত জাতীয় টাস্কফোর্স (এনটিএফ) ভাসানচরে স্থানান্তরের লক্ষ্যে গঠিত জাতীয় নির্বাহী কমিটির কার্যক্রম, নিরাপত্তা প্রদান ও রোহিঙ্গা নাগরিকদের বিষয়ে গৃহীত সব কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ, মূল্যায়ন পুনঃনিরীক্ষণ ও পরামর্শ প্রধান করাসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়গুলো তদারকি করা।

কমিটি প্রয়োজনে যেকোনো কর্মকর্তা ও ব্যক্তিকে সভায় উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ জানাতে পারবে। প্রতি তিন মাসে কমিটি কমপক্ষে একটি সভা এবং প্রয়োজন অনুসারে যেকোনো সময় সভার আয়োজন করবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের রাজনৈতিক ও আইসিটি অনুবিভাগ এই কমিটিকে সার্বিক সহায়তা করবে। এই কমিটি অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়।

অর্থনীতি

‘গ্রিন ব্যাংকিং’ বা ‘সবুজ অর্থায়নের’ বিষয়ে ব্যাংকগুলোকে সচেতন করতে দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সচেতনতামূলক কাজ শেষ হয়েছে। ব্যাংকগুলো এখন তা বাস্তবায়ন করছে। ব্যাংকগুলোর মোট বিতরণ হওয়া ঋণের মধ্যে এ জাতীয় অর্থায়নের পরিমাণ ৬ শতাংশ। এর আওতায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) ৭৩ শতাংশ ঋণ পেয়েছে।

অবশ্য নারীরা ঋণ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে এখনো পিছিয়ে রয়েছে। সবুজ অর্থায়নের ৭৯ শতাংশই পেয়েছেন পুরুষ উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্রিন ব্যাংকিং বিষয়ে ত্রৈমাসিক পর্যালোচনা প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

‘সবুজ অর্থায়ন’ : মূলত পরিবেশবান্ধব উপায়ে কারখানা নির্মাণ অথবা স্থাপিত কারখানায় দেওয়া ঋণ এই নামে পরিচিত। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জানা গেছে, গ্রিন ব্যাংকিংয়ের আওতায় তিন ধরনের অর্থায়ন করা হয়। যা হলো—গ্রিন ফাইন্যান্স, ক্লাইমেট রিস্ক ফান্ড এবং মার্কেটিং অ্যান্ড ক্যাপাসিটি বিল্ডিং ফর গ্রিন ব্যাংকিং। কেন্দ ীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যাংকগুলোকে একটি অংশ গ্রিন ব্যাংকিংয়ের জন্য বরাদ্দ রাখতে হয়।

গ্রিন ব্যাংকিং কার্যক্রমের মধ্যে কাগজের ব্যবহার কমানোর লক্ষ্যে পুরোপুরি অনলাইন কার্যক্রম শুরু, নিজস্ব শাখায় সোলার প্যানেল প্ল্যান্ট, পরিবেশবান্ধব খাতে বিনিয়োগ ও ভবিষ্যত্ বিনিয়োগ পরিকল্পনায় পরিবেশকে অগ্রাধিকার, পরিবেশ ঝুঁকির রেটিং খাত দেখে বিনিয়োগ, মোবাইল ও এসএমএস ব্যাংকিংসহ বিভিন্ন বিষয়ে সবুজ অর্থায়ন করা হয়। পরিবেশবান্ধব পণ্য উত্পাদন ও শিল্প প্রতিষ্ঠায় ২০১১ সাল থেকে তহবিল গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সেপ্টেম্বর শেষে সবুজ অর্থায়নে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৮ হাজার ৫২৯ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে যা ছিল ২৫ হাজার ৯৫৭ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। এ হিসাবে গত ৯ মাসের ব্যবধানে এ খাতে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ বেড়েছে ২ হাজার ৫৭১ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সবুজ অর্থায়ন গ্রহণকারী উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫২৫ এ। এর মধ্যে ১০৬টি বড় প্রতিষ্ঠান ঋণ নিয়েছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের ৩৩২ প্রতিষ্ঠান ঋণ নিয়েছে। এছাড়া কুটির ও অতিক্ষুদ্র ২৭টি এবং অন্যান্য ১০টি প্রতিষ্ঠান ঋণ নিয়েছে। জানা গেছে, গত জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ব্যাংকগুলো নতুন করে সবুজ অর্থায়ন বা বিনিয়োগ করেছে ২ হাজার ৩২০ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। যা ব্যাংকের মোট বিতরণকৃত ঋণের ছয় শতাংশ। ব্যাংকগুলোর সঙ্গে ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও ৮২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, সবুজ অর্থায়নের জন্য ব্যাংকগুলোকে বিভিন্নভাবে উত্সাহিত করা হচ্ছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ঋণ দিলে তা দেশের অর্থনীতির জন্য বেশি সুফল বয়ে আনে। এজন্য এ খাতের দিকে বেশি নজর রাখার জন্য ব্যাংকগুলো বলা হয়েছে।

অর্থনীতি

করোনার কারণে এবার বাণিজ্যমেলা জানুয়ারিতে হচ্ছে না। তবে ১৭ মার্চ শুরু হবে বাণিজ্যমেলা। এছাড়া প্রথমবারের মতো পূর্বাচলে এই মেলা হবে।

রবিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) বোর্ডসভায় আগামী বাণিজ্যমেলা নিয়ে আলোচনা হয়। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সভায় সভাপতিত্ব করেন।

ইপিবি সূত্র জানায়, সবকিছু বিবেচনা করে মার্চে পূর্বাচলে স্থায়ী প্রদর্শনী কেন্দ্রে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা অনলাইন ও শারীরিক উপস্থিতি আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার।

ইপিবি মহাপরিচালক মাহবুবুর রহমান বলেন, করোনার জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবারের বাণিজ্যমেলা আয়োজনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে মেলার আয়োজন করা হবে। এজন্য স্টল বা প্যাভিলিয়নের অনলাইন ব্যবস্থাপনা রাখা হবে।

এতো দিন ধরে ১ জানুয়ারি রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অস্থায়ী জায়গায় ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিলো।

অর্থনীতি

রাজধানী ঢাকাকে সুন্দর ও আধুনিক নগরী গড়ে তোলার লক্ষ্যে ১৫ জানুয়ারির মধ্যে সামগ্রিক বিষয়ে প্রতিবেদন তৈরি করতে দুই মেয়রসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেন, নিজস্ব অর্থায়নে যদি পদ্মাসেতু নির্মাণ করতে পারি তাহলে ঢাকাকেও সুন্দর শহর হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব।

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী আজ রবিবার সকালে ডিটিসি’র বোর্ড সভায় এসব কথা বলেন। তিনি তার বাসভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সভায় যুক্ত হন।

দেশের উন্নয়ন ও অর্জনের সাথে ঢাকা শহরের চেহারার কোনো মিল নেই উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ঢাকাকে গ্রিন এন্ড ক্লিন সিটিতে দেখতে চাই, এর জন্য যা যা করার সবই করবে সরকার।

ওবায়দুল কাদের ঢাকার দুই মেয়রকেও এ বিষয়ে বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানান।

নিউমার্কেট মোড়,পল্লবীসহ শহরের বিভিন্ন এলাকায় ইজিবাইক, ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধে ডিএমপির সহযোগিতা নিয়ে দুই মেয়রকে কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশনা দিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ফুটপাত উদ্ধারের কার্যক্রমও জোরদার করতে হবে।

মন্ত্রী রুট পারমিটের বিষয়ে বিদ্যমান আইন-বিধি পর্যালোচনা করে নতুন প্রস্তাব তৈরির জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়ে বলেন, নির্মাণাধীন বিআরটির কাজ দ্রুত শেষ করে জনভোগান্তি কমাতে হবে।

মোটরসাইকেলে হেলমেট যারা পড়বে না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে এবং কোনোভাবেই রাজনৈতিক বিবেচনা এক্ষেত্রে আনা যাবে না বলেও জানান ওবায়দুল কাদের।

গাড়িতে অবৈধ ভাবে যারা হুটার ব্যবহার করে তাদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন মন্ত্রী।

এসময় ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, দক্ষিণের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরের মেয়রদ্বয়, সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলাম, সেতু সচিব বেলায়েত হোসেনসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

অর্থনীতি

আমদানি বিকল্প ফসল চাষে ৪ শতাংশ সুদে একরপ্রতি বিদ্যমান ঋণ যথেষ্ট নয় বলে মনে করেন কৃষকরা। একইসঙ্গে ঋণের অংক বাড়ানোর পক্ষে মত দিয়েছেন ৭৫ শতাংশ কৃষক। সার্বিক বিবেচনায় ঋণের পরিমাণ পুনঃনির্ধারণ এবং বিদ্যমান সুদহার কমিয়ে ২ শতাংশ করার সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবেই কাক্সিক্ষত ঋণ এবং পণ্যের উৎপাদন বাড়বে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক পরিচালিত এক জরিপ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য।

এতে বলা হয়েছে, আমদানি বিকল্প ফসল চাষে তুলনামূলক বেশি ঋণ বিতরণ হয়েছে এমন ২৩টি জেলা নির্বাচন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর এসব জেলার বিভিন্ন ব্যাংকের ৫৬টি শাখার মোট ৫৩৫ জন ঋণগ্রহীতা কৃষকের ওপর জরিপ পরিচালিত হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক (ইডি) ড. হাবিবুর রহমানের তত্ত্বাবধানে মাঠ পর্যায়ে তিনটি টিমে নয়জন কর্মকর্তা জরিপ পরিচালনা করেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর সচিবালয়ের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) রোকেয়া খাতুনের নেতৃত্বে একটি টিমে ছিলেন ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক (জেডি) রেজওয়ানুল হক ও আসমা আক্তার। দ্বিতীয় টিমে উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) নাজিম উদ্দিনের নেতৃত্বে ছিলেন যুগ্ম পরিচালক (জেডি) রুবেল ইসলাম ও আতাউর রহমান। তৃতীয় টিমে যুগ্ম পরিচালক (জেডি) সামির আশরাফের নেতৃত্বে ছিলেন উপপরিচালক (ডিডি) হাসান চিশতী ও নাজমুল হুদা।

ডাল, তৈলবীজ, মসলা জাতীয় ফসল ও ভুট্টা চাষে ২০১০-১১ অর্থবছর থেকে সরকারের সুদ ভর্তুকির আওতায় ঋণ দিয়ে আসছে সরকারি-বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। শুরুর দিকে কয়েক বছর এ ঋণের সুদহার ছিল ২ শতাংশ। পরে বাড়িয়ে ৪ শতাংশ করা হয়। এতদিন অন্য কৃষি ঋণের সুদহার গ্রাহক পর্যায়ে ৯ শতাংশ ছিল। করোনাভাইরাসের কারণে আগামী জুন পর্যন্ত সব ধরনের শস্য ও ফসল চাষে ঋণের সুদহার ৪ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে আমদানি বিকল্প ফসল অর্থাৎ বিশেষ কৃষিঋণে সুদহার কমিয়ে ২ বা ৩ শতাংশ নির্ধারণ করা যেতে পারে বলে সুপারিশ করা হয়েছে জরিপ প্রতিবেদনে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষিঋণ নীতিমালায় একরপ্রতি ঋণ বিতরণের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করা হয়। চলতি অর্থবছরের জন্য ঘোষিত নীতিমালার আলোকে মসলা জাতীয় ফসল ভেদে একরপ্রতি ২৯ হাজার থেকে ১ লাখ ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ দিতে পারবে ব্যাংক। মসলা জাতীয় ফসল হল- আদা, রসুন, পেঁয়াজ, মরিচ, হলুদ ও জিরা। ডাল জাতীয় ফসলে একরপ্রতি ১৭ হাজার থেকে ২১ হাজার টাকা ঋণ দেয়া যায়। এর আওতায় রয়েছে- মুগ, মসুর, খেসারি, ছোলা, মটর, মাষকলাই ও অড়হর। তৈলবীজ তথা- সরিষা, তিল, তিসি, চীনাবাদাম, সূর্যমুখী ও সয়াবিন চাষে ২৩ হাজার থেকে সাড়ে ২৬ হাজার টাকা ঋণ দেয়া যায়। এছাড়া ভুট্টা চাষে একরপ্রতি ৩৫ হাজার ২৫০ টাকা ঋণ দিতে পারে ব্যাংক। তবে বর্তমানে মজুরি, সেচ, সার, ঘরে তোলাসহ অন্যান্য খরচ বিবেচনায় এ খরচ যথেষ্ট নয় বলে মনে করেন বেশিরভাগ কৃষক। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা পরিবর্তন করে একরপ্রতি ঋণের পরিমাণ বাড়ানোর সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে।

বাংলাদেশ ব্যাংক পরিচালিত জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়, ভর্তুকি সুদে বিতরণ করা এই কৃষিঋণ অন্য খাতে ব্যবহার করেছেন মাত্র ৯ শতাংশ গ্রাহক। আর খেলাপি হচ্ছে খুব সামান্য ঋণ। এ ধরনের ফসলে বিতরণ করা ঋণের মাত্র ৭ শতাংশ খেলাপি হয়েছে। প্রসঙ্গত, চলতি বছরের অক্টোবর শেষে মোট ৬ হাজার ৬৩০ কোটি টাকার কৃষিঋণ বিতরণ করেছে সব ব্যাংক। দুই হাজার ৮০৭ কোটি টাকা বিতরণ করেছে সরকারি ব্যাংক। বাকি তিন হাজার ৮২৩ কোটি টাকা বিতরণ হয়েছে বিদেশি এবং বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে। ২০২০-২১ অর্থবছরে ব্যাংকিং খাতের মাধ্যমে ২৬ হাজার ২৯২ কোটি টাকা কৃষি ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে প্রথম চার মাসে ২৫ দশমিক ২২ শতাংশ অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে ব্যাংকিং খাত। এই খাতে অন্যান্য ঋণের তুলনায় খেলাপি ঋণের হার অনেক কম।

অর্থনীতি

সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামীকাল বৃহস্পতিবার ( ১০ ডিসেম্বর) বসতে পারে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর সর্বশেষ স্প্যানটি। এরফলে ৪১ স্প্যানে দৃশ্যমান হবে পুরো পদ্মা সেতু। এরই মধ্যে পদ্মা সেতুর শেষ স্প্যানটিকে ১২ ও ১৩ নম্বর খুঁটির কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ৪১তম স্প্যানটি পৌঁছানোর মধ্য দিয়ে ইয়ার্ডে সেতুর স্প্যান সংশ্লিষ্ট কাজ শেষ হলো।

২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর জাজিরা প্রান্তের ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটিতে বসানো হয় সেতুর প্রথম স্প্যান। আর ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার মাওয়া প্রান্তের ১২ ও ১৩ নম্বর খুঁটির ওপর সেতুর সর্বশেষ তথা ৪১তম স্প্যান বসানো হবে বলে জানান পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালক সফিকুল ইসলাম।

করোনার কারণে আনুষ্ঠানিকতা নেই, তবু এর মধ্যে মাওয়ার কুমারভোগ ইয়ার্ডে সাজিয়ে তোলা হয়েছে স্বপ্নের সেতুর সবশেষ স্প্যানটি। চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানি করছে সেতুর কাজ। স্প্যানের দুই পাশে তাই বাংলাদেশ ও চীনের জাতীয় পতাকা সেটে দেওয়া হয়েছে। দুদেশের সুসর্ম্পকের কথা উল্লেখ করা হয়েছে বড় একটি অংশ জুড়ে। স্প্যানের গায়ে লিখে রাখা হয়েছে, যে শ্রমিকদের শ্রমে-ঘামে কাজের এত অগ্রগতি, তাদের কীর্তিগাথা।

স্প্যানটির নিরাপত্তায় সেনাবাহিনী টহল দিচ্ছে। স্প্যানটি স্থাপন পর্যন্ত পদ্মা সেতুর ১২ ও ১৩ নম্বর খুঁটি ও আশপাশ এলাকায় ফেরিসহ সব ধরনের নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। পুরো এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার ও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

স্প্যানটি বাংলাদেশ ও চীনের পতাকার রঙে সাজানো ছিল। তবে নিরাপত্তার কারণে কোনো রকম অনুষ্ঠান উদযাপন করা হয়নি।

মাওয়া প্রান্তে এখন ১১টি স্প্যান পাড় ছুঁয়ে দৃশ্যমান, জাজিরা প্রান্তে ২৯টি। মধ্যখানে একটি শূন্যস্থান। সেখানে ৪১তম স্প্যান বসে যাওয়ার পর মাওয়া থেকে জাজিরা একই সূতোয় মিলিত হবে।

অর্থনীতি

করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় আগামী জানুয়ারি থেকে বাংলাদেশ পাচ্ছে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি করোনার ভ্যাকসিন। এ লক্ষ্যে জরুরি প্রয়োজনে ও জনস্বার্থে করোনা মোকাবিলায় অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি ভ্যাকসিন ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া থেকে প্রথম ধাপে তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিন কেনার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

এতে সরকারের খরচ হবে এক হাজার ৫৮৯ কোটি ৪৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। ফলে প্রতি ডোজ ভ্যাকসিনে খরচ হবে ছয় দশমিক ২৫ ডলার (প্রায় ৫৬০ টাকা)।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে বেক্সিমকো ও ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে বাংলাদেশে করোনার ভ্যাকসিন আনা হচ্ছে। আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে এ ভ্যাকসিন দেশে আসা শুরু হতে পারে। প্রথমে তিন কোটি ডোজ আনা হবে। ভ্যাকসিন রাখা হবে বেক্সিমকোর গুদামে। ভারত যে দামে ভ্যাকসিন পাবে সিরাম ইনস্টিটিউট বাংলাদেশকেও একই দামে তা দেবে বলে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ভ্যাকসিন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করেছে। ইংল্যান্ডের বিভিন্ন স্থানে এটি পরীক্ষামূলক প্রয়োগে সফল হয়েছে। বর্তমানে এটি তৃতীয় ধাপে প্রয়োগ শুরু হয়েছে, যার কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই বলে প্রমাণিত হয়েছে। এ ভ্যাকসিন প্রত্যেক মানুষের জন্য দু’টি করে ডোজ দেওয়া হবে। দেড় কোটি মানুষকে ২৮ দিন পর পর এ ডোজ দেওয়া হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন সাপেক্ষে বাংলাদেশে আমদানি করতে চুক্তিতে শর্ত রয়েছে।

জানা গেছে, সিরামের সঙ্গে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের (এমওইউ) আলোকে সিরাম ইনস্টিটিটিউট অব ইন্ডিয়া এর প্রস্তুতকৃত ভ্যাকসিনের পরিবহন ব্যয়সহ প্রতি ডোজের মূল্য পাঁচ ইউএস ডলার নির্ধারণ করা হয়। ভ্যাকসিনের অন্যান্য আনুষাঙ্গিক উপকরণের জন্য এক দশমিক ২৫ ইউএস ডলার ধার্য করা হয়। এতে প্রতি ডোজ ভ্যাকসিন বাবদ মোট খরচ দাঁড়ায় ছয় ডলার ২৫ সেন্ট। প্রাথমিক পর্যায়ে তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিন ক্রয়ের নীতিগত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সে পরিপ্রেক্ষিতে তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিনের মোট মূল্য দাঁড়ায় এক হাজার ৫৮৯ কোটি ৪৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।

এদিকে গত বুধবার (২ ডিসেম্বর) পিপিএ-২০০৬ এর ধারা ৬৮ (১) অনুযায়ী জরুরি প্রয়োজনে ও জনস্বার্থে করোনা মোকাবিলায় ভ্যাকসিন (অক্সফোর্ড এস্ট্রোজিঙ্কা ভ্যাকসিন, সার্স-কভ-২ এজেডডি ১২২২) সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন ক্রয়ের নীতিগত অনুমোদন দেয় অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ভ্যাকসিন কেনার প্রস্তাবের সার-সংক্ষেপে বলা হয়েছে, প্রতিটি মানুষের মধ্যে করোনা আতঙ্ক বিরাজমান। মানুষ এ আতঙ্ক থেকে পরিত্রাণ পেতে ভ্যাকসিনের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। বিশ্বে অনেক প্রতিষ্ঠান করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কারের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। ভ্যাকসিনের প্রাপ্যতার নিশ্চয়তা, গুণগতমান, কার্যকারিতা এবং সংরক্ষণের জন্য তাপমাত্রা ইত্যাদি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং এস্ট্রোজিঙ্কা কোম্পানির যৌথ উদ্যোগে তৈরি ভ্যাকসিনের প্যাটেন্ট নিয়ে কাজ করা সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া থেকে ভ্যাকসিন ক্রয়ের নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। প্রতিষ্ঠানটি ভ্যাকসিন সরবরাহের নিমিত্তে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস এর মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারকে সরবরাহের আগ্রহ প্রকাশ করে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নীতিগত অনুমোদন দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে গত ৫ নভেম্বর স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া ও বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস এর মধ্যে ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হয়।
চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশকে অক্সফোর্ডের তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিন সরবরাহ করবে সিরাম ইনস্টিটিউট। এছাড়া করোনা প্রাপ্তির সব বিষয় বিবেচনায় ইতোমধ্যে সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ নভেম্বর অর্থ বিভাগে ভ্যাকসিন ক্রয় ও আনুষাঙ্গিক ব্যয়সহ মোট এক হাজার ৫৮৯ কোটি ৪৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা বরাদ্দ চাওয়া হলে অর্থ বিভাগ থেকে ১৫ নভেম্বর প্রাথমিক বরাদ্দ হিসাবে ৭৩৫ কোটি ৭৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ পাওয়া যায় যা রাজস্ব বাজেটে অন্তর্ভূক্ত। অর্থের উৎস জিওবি। ভ্যাকসিন ক্রয়ে ক্রয় কার্যালয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রধান মহাপরিচালক কৃর্তক ক্রয় পরিকল্পনা অনুমোদন করা হয়েছে।

অর্থনীতি

শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের ১৫টি চিনিকলের নয়টিতে এবার আখ মাড়াই করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। চলতি আখ মাড়াই মৌসুমের মধ্যে ওই চিনিকলগুলোকে পরবর্তী কার্যক্রম শুরু করতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

গত রোববার অনলাইনের মাধ্যমে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের সার্বিক বিষয় পর্যালোচনার জন্য এক আন্তমন্ত্রণালয় সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের সভাপতিত্বে সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান এবং সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের সংসদ সদস্যরা অংশ নেন।

সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১৫টি চিনিকলের মধ্যে বাকি ছয়টিতে আখ মাড়াই না করে সেসব মিল সংলগ্ন এলাকায় উৎপাদিত ও কৃষকের সরবরাহ করা আখ কিনে ফেলা হবে। যেসব মিলে চলতি মৌসুমে আখ মাড়াই করা হবে সেগুলোতে এগুলোও মাড়াই করা হবে।

চালু থাকা চিনিকলগুলো হলো- কেরু অ্যান্ড কোং (বিডি), মোবারকগঞ্জ সুগার মিলস, ফরিদপুর চিনিকল, রাজশাহী চিনিকল, নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলস, নাটোর সুগার মিলস, ঠাকুরগাঁও সুগার মিলস, জয়পুরহাট চিনিকল ও জিলবাংলা সুগার মিলস।

চিনি উৎপাদন বন্ধ থাকবে কুষ্টিয়া চিনিকল, পাবনা চিনিকল, পঞ্চগড় চিনিকল, শ্যামপুর সুগার মিলস, রংপুর চিনিকল ও সেতাবগঞ্জ চিনিকলে। এসব চিনিকল এলাকায় উৎপাদিত ও কৃষকের সরবরাহ করা আখ কিনে নেবে চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন।

বন্ধ থাকা চিনিকলের কোনো কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিককে ছাঁটাই করা হবে না, বরং সমন্বয় করার জন্য সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সভায় আরও জানানো হয়, রাষ্ট্রায়ত্ত সব চিনিকলের আধুনিকায়নের মাধ্যমে বহুমুখী খাদ্যপণ্য উৎপাদন করে লাভজনক করতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করা হবে। মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ইতোমধ্যে চিনিকল আধুনিকায়নের জন্য বিভিন্ন পর্যায়ে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

এদিকে রাষ্ট্রয়াত্ত্ব ছয়টি চিনিকলে আখ মাড়াই বন্ধে ‘আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত’ বাতিল করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ চিনিকল আখচাষি ফেডারেশন ও বাংলাদেশ চিনিশিল্প করপোরেশন শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন। এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা না হলে ১৫ ডিসেম্বর থেকে বৃহত্তর আন্দোলনে যাবেন বলে জানান সংগঠন দুটির নেতারা। গত শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনের হুমকি দেন আখচাষি ও চিনিকলের শ্রমিকরা।

অর্থনীতি

প্রতিনিয়ত বাণিজ্যঘাটতি বাড়ছিল। ফলে অর্থনীতিতে একধরনের অস্বস্তি তৈরি হচ্ছিল। করোনাকালীন সময়ে রপ্তানি কমে যাওয়ায় বাণিজ্যঘাটতি আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হয়েছিল। তবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে রপ্তানি বাণিজ্য। অন্যদিকে করোনার সময়ে আমদানি কম হওয়ায় বাণিজ্যঘাটতি কমেছে। চলতি অর্থবছরের (২০২০-২১) প্রথম চার মাস জুলাই থেকে অক্টোবরে বাণিজ্যঘাটতি ৪৩ শতাংশ কমে এসেছে। অপরদিকে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যের ঘাটতি থেকে এখন উদ্বৃত্ত হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাবে দেখা গেছে, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় আমদানি ব্যয় কমেছে। কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার কারণে বৈদেশিক বাণিজ্য প্রায় বন্ধ ছিল। ফলে বিলাসী ও প্রয়োজনীয় কোনো পণ্যই তেমন আমদানি হয়নি। আবার অভ্যন্তরীণ বাজারে বিনিয়োগের চাহিদা ছিল না বললেই চলে। এতে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিও কমেছে। এর সঙ্গে অর্থবছরের প্রথম থেকেই রপ্তানি বাণিজ্য ঘুরে দাঁড়িয়েছে। করোনার শুরুতে যেভাবে রপ্তানি কমতে শুরু করেছিল তাতে সবাই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল যে, বাণিজ্যঘাটতি আরো বাড়বে। তবে তেমনটা হয়নি। অন্যদিকে এ সময়ে দেশে রেমিট্যান্সের পরিমাণও আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় বেড়েছে; যা দেশের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছে।

প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে বাণিজ্যঘাটতি কমে দাঁড়িয়েছে ৩২৩ কোটি ৬০ লাখ ডলার বা ২৭ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে বাণিজ্যঘাটতি ছিল ৫৭২ কোটি ৯০ লাখ ডলার। অর্থাত্ এ সময়ে বাণিজ্যঘাটতি আগের অর্থবছরের চেয়ে ২৪৯ কোটি ৩০ লাখ ডলার কমেছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ হলো ২১ হাজার ১৯০ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) আমদানিতে ১২ দশমিক ৯৯ শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এ সময়ে ১ হাজার ৫৭৮ কোটি ৪০ লাখ ডলারের আমদানি হয়েছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা। আলোচ্য চার মাসে রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১ দশমিক ১০ শতাংশ। এসময়ে ১ হাজার ২৫২ কোটি ৮০ লাখ ডলারের রপ্তানি হয়েছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ১ লাখ ৬ হাজার ৪৮৮ কোটি টাকা।

এদিকে আলোচ্য সময়ে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সও বেড়েছে। রপ্তানি বাড়ায় এবং আমদানিজনিত চাপ কম থাকায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে গেছে। সম্প্রতি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। লেনদেন ভারসাম্যের ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের মাসিক প্রতিবেদনের তথ্য মতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত দাঁড়িয়েছে ৪০৫ কোটি ৪০ লাখ ডলার। ২০১৯-২০ অর্থবছরের একই সময়ে চলতি হিসাবের ঘাটতি ছিল ১৫২ কোটি ১০ লাখ ডলার।

আরো পড়ুন: ভ্যাকসিন :বাংলাদেশের প্রস্তুতি কতটুকু?

অন্যদিকে সেবা খাতের বাণিজ্যঘাটতিও কমেছে। গত অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে এ খাতের ঘাটতি ছিল ১১১ কোটি ৩০ লাখ ডলার। চলতি বছরে তা কমে ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলারে নেমে এসেছে। মূলত বিমা, ভ্রমণ ইত্যাদি খাতের আয়-ব্যয় হিসাব করে সেবা খাতের বাণিজ্যঘাটতি পরিমাপ করা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে আরো দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে কোটি ডলারের প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) বাংলাদেশে এসেছে। তবে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে কমেছে। গত বছরের একই সময়ে এসেছিল ১০৪ কোটি ডলার। এ হিসেবে চার মাসে এফডিআই কমেছে ৩০ দশমিক ৭৭ শতাংশ।

উল্লেখ্য, রপ্তানি আয়ের চেয়ে আমদানি ব্যয় যেটুকু বেশি, তার পার্থক্যই বাণিজ্যঘাটতি। আর চলতি হিসাবের মাধ্যমে দেশের নিয়মিত বৈদেশিক লেনদেন পরিস্থিতি বোঝানো হয়। আমদানি-রপ্তানিসহ অন্যান্য নিয়মিত আয়-ব্যয় এতে অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে। এখানে উদ্বৃত্ত হলে চলতি লেনদেনের জন্য দেশকে কোনো ঋণ করতে হয় না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়।

অর্থনীতি

একবারে পাঁচ লাখ টাকার বেশি রেমিট্যান্সের বিপরীতে প্রণোদনার ক্ষেত্রে শর্ত শিথিল করলো বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন থেকে রেমিট্যান্স প্রেরণকারীর পরিবর্তে এখানকার সুবিধাভোগী প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিলেই চলবে। আর রেমিট্যান্স প্রেরণকারী ও আহরণকারী ব্যাংক একই হলে ওই ব্যাংককই রেমিটারের কাগজপত্র সংগ্রহ ও যাচাইয় সম্পন্ন করে সুবিধাভোগিকে প্রণোদনা দেবে।

বুধবার এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করে ব্যাংকগুলোতে পাঠানো হয়।

সার্কুলারে বলা হয়েছে, পাঁচ হাজার মার্কিন ডলার বা ৫ লাখ টাকার বেশি রেমিট্যান্সে ২ শতাংশ প্রণোদনার ক্ষেত্রে বিদেশি এপচেঞ্জ হাউজ থেকে রেমিটারের কাগজপত্র পাঠানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এই নিয়ম শিথিল করে এখানকার সুবিধাভোগি ব্যাংক শাখায় রেমিটারের কাগজপত্র জমা দেওয়ার বিধান করা হলো। ব্যাংক দ্রুত নগদ সহায়তার অর্থ ছাড় করার জন্য নিজ দায়িত্বে ওই কাগজপত্র যাচাই করে রেমিট্যান্স বিদেশি ব্যাংকের কাছে কনফার্মেশন পাঠাবে। উক্ত কনফার্মেশনের ভিত্তিতে এখানকার ব্যাংক দ্রুত নগদ সহায়তা ছাড় করবে।

বৈধ পথে রেমিট্যান্সে উৎসাহিত করতে ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে যেকোনো পরিমাণ রেমিট্যান্সে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। তবে একবারে কেউ পাঁচ লাখ টাকা বা ৫ হাজার ডলার সমপরিমাণ অর্থ পাঠালে ওই দেশে আয়ের উৎসসহ কিছু কাগজ দিতে হয়। এখন সেসব শর্ত শিথিল করা হলো।

প্রণোদনার পর থেকে রেমিট্যান্স আসা বেড়েছে। করোনার এ সময়েও চলতি অর্থবছরের পাঁচ মাসে রেমিট্যান্স এসেছে এক হাজার ৯০ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় যা ৪১ দশমিক ৩২ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছর রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ।